পথের কাঁটা – ৭

—আদালত যদি অনুমতি করেন তাহলে বাদীপক্ষ একটি সংক্ষিপ্ত প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়ে এই মামলার উদ্বোধন করতে চান। বাদীপক্ষ আশা রাখেন যে, তাঁরা প্রমাণ করবেন এই মামলার আসামি বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী জগদানন্দ সেন একটি পারিবারিক রহস্য উদ্ঘাটনের হাত থেকে মুক্তি পাবার আশায় সুপরিকল্পিতভাবে তাঁর ভাইপো ব্ল্যাকমেলার যোগানন্দকে স্বহস্তে হত্যা করেন। আমরা আশা রাখি, প্রমাণ করব যে, এই হত্যা সংঘটিত হয়েছিল রাত বারোটা থেকে সওয়া বারোটার মধ্যে। যখন নিহত যোগানন্দ জগদানন্দের আশ্রয়েই নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছিলেন। আসামির বয়স এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে এক্ষেত্রে লঘু দণ্ডদান করার প্রশ্ন ওঠে না, যেহেতু হঠাৎ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এ হত্যাকাণ্ড করা হয়নি—বরং মৃত যোগানন্দকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লোভ দেখিয়ে নিশ্চিন্ত করে, তাকে ঘটনার রাত্রে একতলার বদলে দ্বিতলে নিয়ে এসে যেভাবে আসামি সুপরিকল্পিতভাবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন, তাতে তাঁকে চরমতম দণ্ড দিয়ে মাননীয় বিচারক এ আদালতের মর্যাদা রক্ষা করবেন বাদীপক্ষ এমনই আশা রাখেন।

সংক্ষিপ্ত প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটার নিরঞ্জন মাইতি আসন গ্রহণ করলেন। আদালতে জনসমাগম বেশ হয়েছে। আসামির কাঠগড়ায় একটি চেয়ারে বসে আছেন বৃদ্ধ জগদানন্দ। আসামির বার্ধক্যের কথা বিবেচনা করে বিচারক এটুকু সৌজন্য দেখিয়েছেন। আসামির মূর্তি ভাবলেশহীন। তিনি কী ভাবছেন বোঝা যাচ্ছে না।

বিচারক সদানন্দ ভাদুড়ী এবার প্রতিবাদীদের দিকে ফিরে বললেন, আপনারা কি কোনো প্রারম্ভিক ভাষণ দিতে চান?

সচরাচর বাসু-সাহেব প্রারম্ভিক ভাষণ দেওয়ার বিপক্ষে। আজ কিন্তু তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, আদালত যখন অনুমতি করছেন তখন প্রতিবাদীর তরফে একটি মাত্র কথাই আমরা বলব আমরা আশা রাখি, প্রমাণ করব—এ হত্যার সঙ্গে আসামির কোনো সম্পর্ক নেই। কে আসামির স্নেহভাজন ভ্রাতুষ্পুত্রকে হত্যা করেছে তা জানবার জন্য তিনি আমাদের চেয়েও উৎসুক। আমরা আশা রাখি, প্রমাণ করব— মৃত যোগানন্দ ব্ল্যাকমেলিং করেননি কোনদিনই এবং তাঁর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না আসামির তরফে। থ্যাঙ্ক মি লর্ড। বাদীপক্ষ এবার তাঁদের সাক্ষীদের ডাকতে পারেন।

বাদীপক্ষের প্রথম সাক্ষী অটোপ্সি-সার্জেন। তিনি মৃত্যুর কারণ ও সময় প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে যোগানন্দের মৃত্যু হয়েছে রাত সাড়ে এগারোটার পরে এবং সাড়ে বারোটার আগে। জগদানন্দের নামাঙ্কিত ছোরাটিকে তিনি শনাক্ত করলেন।

বাসু-সাহেব তাঁকে আদৌ ক্রস্-এগজামিন করলেন না।

দ্বিতীয় সাক্ষী ইনভেস্টিগেশান অফিসার ইন্সপেক্টার মণীশ বর্মণ। সে তার সাক্ষ্য ঘটনার দিন সকালে এসে যা যা দেখেছে তার বর্ণনা দিল। প্রতিটি লোকের প্রাথমিক জবানবন্দি যা লিখে নিয়েছে তা পড়ে শোনাল। মহেন্দ্রবাবু, বিশ্বম্ভরবাবু, শ্যামল এবং নীলিমার প্রাথমিক এজাহার। কৌশিকের নাম উল্লেখ করল না। তারপর দমদমে ভি.আই.পি. হোটেলের বাসিন্দা য়ু সিয়াঙ-এর জবানবন্দি যা নিয়েছে তাও পড়ে শোনাল। মাইতি ঐ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলেন, আপনার কাছে মিঃ য়ু সিয়াঙ কি স্বীকার করেছিলেন যে, ঘটনার দিন সকাল দশটার সময় বর্তমান মামলায় বাদীপক্ষের কাউন্সেল মিঃ পি. কে. বাসু দেখা করেন?

বাসু-সাহেব উঠে দাঁড়ান : অবজেকশন য়োর অনার! বর্তমান মামলার সঙ্গে এ প্রশ্ন সম্পর্ক-বিমুক্ত।

মাইতি একটি বাও করে বলেন, মি লর্ড, এ প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা আমার পরবর্তী প্রশ্নেই উদঘাটিত হবে—আই অ্যাশিয়োর য়ু!

—অবজেকশান ওভাররুলড!

মণীশ বর্মন বলেন, হ্যাঁ, স্বীকার করেছিলেন।

—মিস্টার য়ু সিয়াঙ কি বলেছিলেন যে, ব্যারিস্টার মিস্টার পি. কে. বাসু ছদ্ম পরিচয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন—

আবার উঠে দাঁড়ান বাসু : অবজেকশন মিঃ লর্ড! বর্তমান সাক্ষীর পক্ষে এ প্রশ্নের জবাব হেয়ার-সে। আসামির অনুপস্থিতিতে ব্যারিস্টার পি.কে. বাসুর সঙ্গে মিস্টার য়ু সিয়াঙ-এর কথোপকথন হয় বর্তমান সাক্ষীর কাছ থেকে তার থার্ডহ্যান্ড রিপোর্ট এ মামলায় গ্রাহ্য হওয়া উচিত নয়।

—অবজেকশান সাটেইন্ড!

মাইতি হেসে বলেন, ঠিক আছে। এ ক্ষেত্রে মামলার পারম্পর্য রক্ষার্থে আমি সাময়িকভাবে বর্তমান সাক্ষীকে অপসারণ করে মিস্টার য়ু সিয়াঙকে সাক্ষ্য দিতে ডাকতে চাই।

বাসু বলেন, আমাদের আপত্তি নেই। সে-ক্ষেত্রে বর্তমান সাক্ষীকে ক্রস্ করবার অধিকারও আমরা মজুত রাখলাম।

আদালতের অনুমতি পেয়ে মিস্টার য়ু সিয়াঙ সাক্ষীর মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন। মাইতি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করলেন—য়ু সিয়াঙ জগদানন্দের রেঙ্গুনস্থ অফিসের ম্যানেজার হিসাবে 1920 থেকে 1940 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত চাকরি করেছেন। এখন তিনি রেঙ্গুনে থাকেন। দেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তিনি সম্প্রতি ভারতবর্ষে এসেছেন। 1940 খ্রিস্টাব্দের আঠারই মে তারিখে তাঁর চাকরি শেষ হয়। ঐ দিন জগদানন্দের পুত্র তাঁর রেঙ্গুনস্থ যাবতীয় সম্পত্তি প্রায় একাত্তর হাজার টাকায় বিক্রয় করে দেন। এই প্রসঙ্গে মাইতি জানতে চান, সদানন্দ সেন তারপর কবে রেঙ্গুন ত্যাগ করেন।

— 20.5.40 তারিখে, মারুতি জাহাজ যোগে।

—ঐ সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও কি প্রত্যাবর্তন করেন?

—হ্যাঁ।

—আপনি কি জানেন, সদানন্দ কোন্ তারিখে বিবাহিত হন?

—হ্যাঁ জানি। বিবাহে আমার নিমন্ত্রণ ছিল। 13.5.40 তারিখে।

—সদানন্দ কত তারিখে রেঙ্গুনে পদার্পণ করেন?

—10.4.40 তারিখে। আমি জাহাজ-ঘাটায় এসেছিলাম তাঁকে রিসিভ করতে।

—এর আগে সাবালক হবার পর ঐ সদানন্দ সেন কি কখনও বর্মায় এসেছিলেন? বাসু-সাহেব আপত্তি তোলেন, অবজেকশান! এ প্রশ্নের জবাব সাক্ষী দিতে পারেন না। প্রশ্নটি অবৈধ!

জজসাহেব রুলিং দেবার আগেই মাইতি বলেন, ঠিক আছে, ঠিক আছে। মিস্টার সিয়াঙ, এটা কি স্বাভাবিক যে, আপনার নিয়োগকর্তার একমাত্র পুত্র রেঙ্গুনে যাবেন আর আপনি জানতে পারবেন না?

—না, স্বাভাবিক নয়। সদানন্দ ইতিপূর্বে রেঙ্গুনে এলে আমার তা জানার কথা।

—আপার জ্ঞাতসারে সদানন্দ সেন যৌবনে পদার্পণের পরে ঐ 10.4.40 তারিখের আগে বর্মায় আসেননি?

—না, আমার জ্ঞাতসারে নয়।

—আপনি তাঁর স্ত্রীকে কতদিন ধরে চিনতেন?

—তার বালিকা বয়স থেকে।

—সে-কি বিবাহের পূর্বে ভারতবর্ষে এসেছিল?

বাসু-সাহেব আসন ত্যাগ করার উপক্রম করতেই মাইতি বলেন, অল রাইট, অল রাউট! আই উইথড্র। আচ্ছা মিস্টার য়ু সিয়াঙ, বলুন তো, সদানন্দের স্ত্রী যদি কুমারী বয়সে বর্মা ত্যাগ করে ভারতবর্ষে আসত তা কি আপনার অজানা থাকতে পারত?

—অসম্ভব। কারণ বালিকা বয়স থেকে ও আমাদের বাড়িতেই অন্য ফ্ল্যাটে থাকত।

—তার মানে, আপনার জ্ঞাতসারে সদানন্দ সেনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ 10.4.40 -এর আগে কিছুতেই হতে পারে না?

—হ্যাঁ তাই!

—আচ্ছা মিস্টার সিয়াঙ এবার বলুন তো ঘটনার দিন, আই মীন যোগানন্দ সেনের হত্যার দিন, মঙ্গলবার সকাল প্রায় দশটার সময় এ মামলার প্রতিবাদী ব্যারিস্টার পি.কে. বাসু কি আপনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন?

—করেছিলেন।

—তিনি কি নিজেকে মহেন্দ্র বাবুর সলিসিটার হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন? সাক্ষী একটু ভেবে নিয়ে বলেন, না। কিন্তু তিনি এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন যাতে আমি মনে করি—তিনি মহেন্দ্রবাবুর সলিসিটার।

—কী ভাবে তিনি সেই পরিবেশ সৃষ্টি করেন?

—উনি তার পূর্ব রাত্রে রাত ঠিক বারোটা চল্লিশ মিনিটে একটি টেলিফোন করে আমাকে বলেন যে, আমাদের পথের কাঁটা দূর হয়েছে!

আদালতে একটা গুঞ্জন ওঠে। বিচারক তাঁর হাতুড়িটা পিটলেন। স্তব্ধতা ফিরে এল আদালতে।

—ঠিক কী কী কথাবার্তা হয়েছিল—মানে যতটা আপনার মনে আছে, বলে যান। সাক্ষী টেলিফোনে কথোপকথনের একটি বিবৃতি দিলেন এবং বললেন কী ভাবে পরদিন ব্যারিস্টার-সাহেবের পরিচয়পত্র পাওয়া মাত্র তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, তিনিই মহেন্দ্রবাবুর সলিসিটার।

তার মানে আপনি বলতে চান—ঐ দিন রাত বারোটা চল্লিশে প্রতিবাদী ব্যারিস্টার মিস্টার পি.কে. বাসু জানতেন যে, জগদানন্দ বাবুর বাড়িতে একটা খুন হয়েছে?

বিচারক বাসু-সাহেবের দিকে তাকালেন। তিনি কিন্তু কোনো আপত্তি জানালেন না। সাক্ষী চিন্তা করে জবাবে বলল, তা আমি জানি না। তিনি ‘পথের কাঁটা’ বলতে কী মীন করেছিলেন, তাও আমি জানি না। তবে রাত বারোটা চল্লিশে ঐ রহস্যময় টেলিফোন-কলে আমি খুব বিস্মিত বোধ করি!

—আপনি কী বোধ করেন, তা আমি শুনতে চাইছি না। আমি জানতে চাইছি—টেলিফোনে ঐ মধ্যরাত্রে আপনাদের যে কথোপকথন হয় তার একটি অনুলিপি কি তিনি আপনাকে পরদিন বেলা দশটায় দেখান?

—হ্যাঁ দেখান।

—য়ু মে ক্রস-এগজামিন—আসন গ্রহণ করেন মাইতি।

বাসু-সাহেবের প্রথম প্রশ্ন, মিস্টার সিয়াঙ, আপনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন কি এ মামলায় সাক্ষী দেবার জন্য?

সিয়াঙ একটু থতমত খেয়ে যায়। সামলে নিয়ে বলে, নিশ্চয় নয়। আমি ভারতবর্ষে এসেছি দেশ দেখতে—আমার পাসপোর্টেও তাই লেখা আছে।

—কলকাতায় পদার্পণের দিনেই আপনি আপনার প্রাক্তন নিয়োগ-কর্তা জগদানন্দের সঙ্গে দেখা করেন, তাই নয়?

—হ্যাঁ তাই।

—আচ্ছা মিস্টার সিয়াঙ, আপনি যখন দেশ দেখতেই এসেছেন তখন কলকাতার শহরটা না দেখে সর্বপ্রথমেই আপনি কেন জগদানন্দ সেনের সঙ্গে দেখা করেন?

—তাঁকে আমার শ্রদ্ধা জানাতে। হাজার হোক, তিনি আমার মনিব ছিলেন।

—ঠিক কথা। আচ্ছা এবার বলুন তো—মহেন্দ্রবাবুকে আপনি প্রথম কোথায় দেখেন এবং কবে?

—রেঙ্গুনে দেখি। মাসতিনেক আগে।

—ঠিক কত তারিখে?

—তারিখ আমার মনে নেই।

—উনি যেদিন ফিরে আসেন সেদিন আপনি মহেন্দ্রবাবুকে সি অফ করতে রেঙ্গুন এয়ারপোর্টে এসেছিলেন, তাই নয়?

— হ্যাঁ।

—সেটা কত তারিখ?

—তা আমার ঠিক মনে নেই।

—এবার বলুন তো মিস্টার সিয়াঙ—তিন মাস আগে ঠিক কত তারিখ আপনার সঙ্গে মহেন্দ্রবাবুর সাক্ষাৎ হয়, ঠিক কোন্ তারিখে তিনি ফিরে আসেন তা আপনার মনে নেই—অথচ পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার তারিখগুলো আপনার কেমন করে নিখুঁতভাবে মনে আছে?

মাইতি আপত্তি জানান। এ প্রশ্নের উত্তর সাক্ষী কেমন করে জানবেন?

বিচারক মৃদু হেসে বললেন, অবজেকশান সাসটেইন্ড।

বাসুও হেসে বললেন, প্রশ্নটা তাহলে অন্যভাবে পেশ করি। আপনি আগেই বলেছেন—এ মামলায় সাক্ষী দিতে হবে তা আপনি জানতেন না, দেশ দেখতে এসেছেন। সে ক্ষেত্রে আমার সহযোগীর প্রশ্নগুলির উত্তর আপনি কেমন করে দিলেন? স্মৃতির উপর নির্ভর করে?

সাক্ষী একটু ইতস্তত করে বললেন, না, আমার ডায়েরি দেখে তারিখগুলো ঝালিয়ে নিয়েছিলাম আজ সকালে।

—সে দ্যাট! কিন্তু দেশ দেখতে আসার সময় ডায়েরিতে পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার কতকগুলো ঘটনা আপনি কেন টুকে নিয়ে এলেন?

সাক্ষীকে নিরুত্তর দেখে মাইতি লাফিয়ে ওঠেন, অবজেকশান য়োর অনার। দ্য কোশ্চেন ইস ইররেলিভ্যান্ট, ইম্পার্টিন্যান্ট অ্যান্ড অ্যাবসার্ড।

ভাদুড়ী বললেন, অবজেকশান ওভাররুলড। আনসার দ্যাট কোশ্চেন।

রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে সাক্ষী বললেন, আই ডোন্ট নো।

—আই নো!—গর্জন করে উঠলেন বাসু। আপনি এসেছিলেন জগদানন্দকে ব্ল্যাকমেল করতে। মহেন্দ্রবাবু আপনাকে ঐ সব প্রশ্ন করেছিলেন, তা থেকে আপনি বুঝতে পারেন এই খবরগুলি দিয়ে জগদানন্দকে ব্ল্যাকমেল করা যায়। তাই কলকাতা পৌঁছেই আপনি ছুটেছিলেন তাঁর বাড়ি। অ্যাডমিট ইট!

সাক্ষী কাঁপতে কাঁপতে শুধু বললে, নো, নো!

বাসু এবার আক্রমণের পদ্ধতি বদলে অন্যদিক থেকে শুরু করেন, ঘটনার দিন, আই মীন যোগানন্দকে মৃত অবস্থায় যেদিন সকালে দেখা যায়, সেদিন বেলা দশটার সময় ব্যারিস্টার পি. কে. বাসু যখন আপনার সঙ্গে দেখা করেন তখন আপনি তাঁকে প্রথমেই প্রশ্ন করেছিলেন—মহেন্দ্রবাবুকে সঙ্গে করে আনলেন না কেন! ইয়েস অর নো?

— ইয়েস!

—তার মানে যোগানন্দ খুন হবার পর মহেন্দ্রবাবুকে নিয়ে তাঁর সলিসিটারের পক্ষে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসা আপনার কাছে প্রত্যাশিত ঘটনা।

—না তা নয়, মানে—

আপনি আপনার সাক্ষ্যে এখনই বলেছেন যে, পূর্বরাত্রে টেলিফোনে ‘পথের কাঁটা’ কথাটা শুনে অর্থ আপনি বুঝতে পারেননি, নয়?

–হ্যাঁ তাই।

–এ ক্ষেত্রে পরদিন যখন ব্যারিস্টার বাসু আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন তখন আপনি কি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন ‘পথের কাঁটা’ বলতে পূর্বরাত্রে তিনি কী মীন করেছিলেন?

—না, করিনি।

—করেননি, কারণ ‘পথের কাঁটা’ ব্যাপারটা কী, তা আপনি জানতেন, তাই নয়?

-–না না, তা নয়। আমার খেয়াল হয়নি।

—দ্যাটস অল, মিলর্ড—আসন গ্রহণ করেন বাসু

মাইতি উঠে দাঁড়ান। একটি বাও করে বলেন, আমার সহযোগীর জেরা যখন শেষ হয়েছে তখন আমি আদালতকে একটি প্রার্থনা জানাব। বর্তমান সাক্ষীর যে সাক্ষ্য এইমাত্র আদালতে লিপিবদ্ধ হল তার একটি অনুলিপি আমাকে দেওয়ায় হুকুম হোক। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রতিবাদী ব্যারিস্টার রাত বারোটা চল্লিশ মিনিটেই জানতেন যোগানন্দ খুন হয়েছেন; কিন্তু তিনি সে খবরটা পুলিশে দেননি। এ নিয়ে আমি বার অ্যাসোসিয়েশানে মুভ করতে চাই।

বিচারক একটু চিন্তা করে প্রতিবাদীকে প্রশ্ন করেন, এ সম্বন্ধে আপনার কোনও বক্তব্য আছে?

—নো মিলর্ড। আদালত বাদীর এ প্রার্থনা মঞ্জুর করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

তবু রুলিং দিলেন না জাস্টিস ভাদুড়ী। একটু ইতস্তত করে বাসু-সাহেবকে পুনরায় বললেন, আই উইশ টু আস্ক য়ু এ পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক কোশ্চেন কাউন্সেল! আপনি কি ঘটনার দিন রাত্রি বারোটা চল্লিশে জানতেন যে, একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে?

—নো, মিলৰ্ড!

—আপনি কি ঐ সময় কোনো ফোন করেছিলেন?

—নো, মিলর্ড। আমি ঐ সময় অঘোরে ঘুমোচ্ছিলাম।

মাইতি উঠে দাঁড়ান। কিছু একটা কথা বলতে যান। তারপর বসে পড়েন। জাস্টিস ভাদুড়ী বলেন, মিস্টার পি.পি. আপনি অনুলিপি পাবেন। প্লিজ প্রসিড। পরবর্তী সাক্ষী যোগানন্দের শ্যালিকাপুত্র শ্যামল। সে তার সাক্ষ্যে জানাল, কী ভাবে রাত বারোটা থেকে সওয়া বারোটার মধ্যে সে একটা ছায়ামূর্তি দেখেছিল।

মাইতি প্রশ্ন করেন, আপনার একথা কেন মনে হল না যে, কেউ হয়তো বাথরুমে যাচ্ছে?

—না। কারণ দোতলাতে এবং একতলাতে পৃথক বাথরুম আছে। সে প্রয়োজনে বাথরুমে যেতে কাউকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হয় না।

—আই সী। আচ্ছা শ্যামলবাবু, এ কথা কি সত্য যে, আপনার মেসোমশাই যোগানন্দবাবু আপনার সঙ্গে এক সময় নীলিমা দেবীর বিবাহের প্রস্তাব তুলেছিলেন?

—হ্যাঁ, সত্য কথা।

—তারপর সে বিবাহ-প্রস্তাব কেন ভেঙে যায়?

—আমি জানি না।

—আপনার আপত্তি ছিল?

— না।

—নীলিমা দেবীর আপত্তি ছিল?

—আমি জানি না।

আমার সওয়াল এখানেই শেষে—সহযোগী জেরা করতে পারেন।

বাসুসাহেব উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, শ্যামলবাবু, আপনি এইমাত্র বললেন, আপনাদের বাড়িতে রাত্রে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজনে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হয় না, তাই না?

—হ্যাঁ, তাই বলেছি।

—আচ্ছা এবার বলুন তো—দ্বিতলবাসী কোনো বাসিন্দা যদি দ্বিতলবাসী কোনো নিদ্রিত ব্যক্তিকে খুন করতে চান তবে কি সেই প্রয়োজনে তাঁকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে হয়?

—অবজেকশান য়োর অনার! আর্গুমেন্টেটিভ!

বাসু বাও করে বলেন, মিলর্ড, সহযোগী ডাইরেক্ট এভিডেন্সে প্রমাণ করেছেন- দ্বিতলে নিদ্রিত কোনও গৃহবাসী বাথরুমে যাবার প্রয়োজনে সিঁড়ির ব্যবহার করেন না, জেরায় আমি প্রমাণ করতে চাই, দ্বিতলে নিদ্রিত কোনও গৃহবাসী দ্বিতলে নিদ্রিত অপর কোনো ব্যক্তিকে খুন করতে চাইলে তাঁকে সিঁড়ির ব্যবহার করতে হয় না। এতে অপত্তির কী আছে? হংস যদি ডুবে ডুবে গুলি খেতে পারে, তবে হংসীও তা পারে। What’s sauce for the gander should be sauce for the goose বিচারক মৃদু হেসে বলেন, অবজেকশান ওভাররুলড।

শ্যামল বললে, না, দ্বিতলবাসী কেউ যদি রাত্রে দ্বিতলবাসী অপর কারও ঘরে ঢুকে খুন করতে চান তাহলে তাঁকে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে না।

—যেহেতু আসামি এবং যোগানন্দ দুজনেই সে রাত্রে দোতলায় শুয়েছিলেন, ফলে সিঁড়িতে আপনি যাকে দেখেছেন সে খুনি হলে অন্তত আসামি নয়?

—হ্যাঁ তাই।

পরবর্তী সাক্ষী মহেন্দ্র বোস। লোকটা মাইতির সওয়ালের জবাব দিতে গিয়ে অদ্ভুত এক আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে বসল। স্বীকার করল, সে পঁচিশ-ত্রিশ বছর আগে জগদানন্দের ম্যানেজার ছিল, তারপর তার চাকরি যায়। এরপর সে দীর্ঘদিন অন্যত্র ছিল। মাসছয়েক আগে তার সঙ্গে ঘটনাচক্রে যোগানন্দের সাক্ষাৎ হয়। যোগানন্দ নাকি বলেন, তিনি তাঁর শ্যালিকা-পুত্রের সঙ্গে নীলিমার বিবাহ দেবার চেষ্টা করছেন। তাতে মহেন্দ্র বলে, যোগানন্দবাবু আপনি কি জানেন, ঐ মেয়েটির জন্ম সম্বন্ধে একটা রহস্য আছে? যোগানন্দ বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি মহেন্দ্রকে যাবতীয় সংবাদ সংগ্রহ করতে বলেন। তাঁর নির্দেশে মহেন্দ্র রেঙ্গুনে যায়। নীলিমার জন্ম-রহস্য সম্বন্ধে যাবতীয় সংবাদ য়ু সিয়াঙ-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে ফিরে আসে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

সওয়াল শেষ করে মাইতি বাসু-সাহেবকে বলেন, আপনি এবার জেরা করতে পারেন।

বাসু-সাহেব বলেন, মহেন্দ্রবাবু, আপনার জবানবন্দি অনুযায়ী ছয় মাস আগেও যোগানন্দ নীলিমার জন্ম-রহস্য বিষয়ে কিছু জানতেন না, কেমন?

—আজ্ঞে হ্যাঁ।

—তাহলে আশৈশব জগদানন্দ যে যোগানন্দকে আশ্রয় দিয়েছেন, ভরণ-পোষণ করছেন তার কারণ এ নয় যে, যোগানন্দ একটি গোপন তথ্য জানেন, তাই নয়?

—আমি স্যার, প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

পারছেন না বুঝি? আচ্ছা বুঝিয়ে বলি। জগদানন্দ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র যোগানন্দকে এতদিন যে ভরণ-পোষণ করেছেন তার কারণটা কী?

—আমি জানি না।

—অন্তত সে কারণটা এই নয় যে, তিনি যোগানন্দকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে, —মানে আমি ছয় মাস আগের কথা বলছি—যোগানন্দ নীলিমার জন্ম-রহস্য বিষয়ে কোনও স্ক্যান্ডেল ছড়াতে পারত?

—আজ্ঞে হ্যাঁ। তা তো বটেই। কারণ যোগানন্দ এতদিন কিছু জানতেন না।

—তার মানে ছয়-মাস আগে পর্যন্ত যোগানন্দের আর্থিক অবস্থা ছিল হীন। শুধুমাত্র খাওয়া-পরার চিন্তা ছিল না। তাঁর নিজস্ব কোনো রোজগার ছিল না। ব্ল্যাকমেলিং থেকেও আয় ছিল না। হয়তো জগদানন্দ কিছু হাত-খরচ দিতেন। তাই নয়?

—তাই হবে বোধহয়, আমি তা কেমন করে জানব?

—বাস্তবে যাই হোক, আপনার ধারণাটা তাই ছিল। ঠিক নয়?

—আজ্ঞে হ্যাঁ। আমার ধারণায় তাই ছিল বটে।

—এবার বলুন তো মহেন্দ্রবাবু, প্লেনে করে রেঙ্গুনে গিয়ে তথ্যটা সংগ্রহ করে আনতে আপনার কত খরচ হয়েছে? আই মীন—রাফ হিসাব। চার-পাঁচ হাজার টাকা?

—অত নয় স্যার। হাজার তিনেক হবে।

—খরচটা কে করল? শ্যালিকা-পুত্রের বিবাহ-ব্যবস্থার তাগিদে নিঃস্ব যোগানন্দ, না আপনি? একটা ঢোক গিলে সাক্ষী বললে, আজ্ঞে যোগানন্দবাবু নন, আমিই।

—তাই বুঝি! তা নিঃসম্পর্কীয় যোগানন্দের শ্যালিকাপুত্রের বিবাহ হচ্ছে না দেখে আপনি উতলা হয়ে অত টাকা গ্যাটের কড়ি খরচ করে বসলেন কেন?

সাক্ষী রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে বললে, যোগানন্দবাবু আমাকে বলছিলেন যে, বিয়েটা হয়ে গেলে তিনি আমাকে ভালমত ঘটক-বিদায় দেবেন। জগদানন্দের অগাধ সম্পত্তি সবই তো পেত ঐ শ্যালিকাপুত্র।

বাসু একগাল হেসে বলেন, এটা বেফাঁস কথা হয়ে গেল মহেন্দ্রবাবু! গ্যাটের কড়ি খরচ করে যখন আপনি রেঙ্গুন যাচ্ছেন তখন তো আপনি নিশ্চিত জানতেন যে, বিয়েটা হবে না! নীলিমার জন্ম-রহস্য সম্বন্ধে যোগানন্দের সন্দেহ থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু আপনার তো কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিল না। বস্তুত আপনি তো বিয়েটা যাতে ভেঙে যায়—সেই তথ্যই সংগ্রহ করতে গেলেন। তাই নয়?

—আমি স্যার আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পারছি না!

—পারছেন না তার কারণ আপনি ন্যাকা সাজছেন। আদ্যন্ত মিথ্যা কথা বলছেন!

—কী মিথ্যা বলেছি?

—যোগানন্দের অনুরোধে আপনি গ্যাটের পয়সা খরচ করে বার্মা যাননি। গিয়েছিলেন ব্ল্যাকমেলিং-এর রসদ সংগ্রহ করতে। ফিরে এসেই জগদানন্দকে শোষণ করতে শুরু করেছিলেন, স্বীকার করুন?

—না স্যার! আমি…আমি কেন ব্ল্যাকমেলিং করতে যাব?

বাসু হেসে বলেন, আমি জেরা করব, আপনি উত্তর দেবেন, এটাই আদালতের রীতি। আপনি কেন ব্ল্যাকমেলিং করতে যাবেন সে কৈফিয়ত আমার দেবার নয়। যা জিজ্ঞাসা করছি তার জবাব দিন, তহবিল তছরুপ করেছিলেন বলে আপনার ম্যানেজারি খতম হয়েছিল একদিন?

—আজ্ঞে না!

—আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে জগদানন্দ যেদিন আপনাকে বাড়ির বার করে দেন সেদিন আপনি তাঁকে শাসিয়ে যাননি যে, এর প্রতিশোধ আপনি নেবেন?

—না স্যার, এসব কী বলছেন আপনি?

—ও! তবে আপনার চাকরি গেল কেন?

সাক্ষী একটু ভেবে নিয়ে বলে, সদানন্দ, মারা যাবার পর উনি ব্যবসা গুটিয়ে আনেন। তাই ম্যানেজারের আর কোনো দরকার ছিল না।

—তাই বুঝি! নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা! আচ্ছা, এবার বলুন তো মহেন্দ্ৰবাবু—তাহলে জগদানন্দ তাঁর শেষ উইলে আপনাকে কেন তাঁর বসত বাড়িটি দিয়ে যেতে চাইলেন?

মাইতি আপত্তি জানান। এ প্রশ্নের জবাব নাকি সাক্ষীর দেবার কথা নয়।

—অবজেকশন সাসটেইন্ড!

ঠিক আছে। আমার জেরা এখানেই শেষ।

বাদী পক্ষের শেষ সাক্ষী জয়দীপ রায়। নাম ধাম পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর মাইতি তাঁকে মাত্র কয়েকটি প্রশ্ন করলেন—আপনি কি নীলিমা দেবীকে বিবাহ করার প্রস্তাব নিয়ে কখনও জগদানন্দের দ্বারস্থ হয়েছিলেন?

—হয়েছিলাম।

—আপনি কি নীলিমা দেবীর জন্ম তারিখটা জানেন?

—হ্যাঁ জানি। দোসরা সেপ্টেম্বর, 1940।

—কেমন করে জানলেন?

—আমি ওর জন্ম-পত্রিকা দেখেছি।

—দ্যাটস্ অল মিলর্ড।

বাসু কিন্তু দীর্ঘ জেরা করলেন জয়দীপকে। তাঁর প্রথম প্রশ্ন, আপনি কি ঘটনার আগের রবিবার সন্ধ্যায় পার্ক হোটেলের চল্লিশ নম্বর ঘরটা নিজ নামে ভাড়া নেন?

—হ্যাঁ, নিই।

—আপনার কলকাতায় থাকার জায়গা আছে। তা সত্ত্বেও কেন হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন?

—ঐ হোটেলে আটত্রিশ নম্বর ঘরে উঠেছিলেন মিস্টার য়ু সিয়াঙ। তাঁর গতিবিধির উপর নজর রাখবার উদ্দেশ্যে।

—ঐ রবিবার রাত্রি নটা থেকে দশটা পর্যন্ত মিস্টার য় সিয়াঙ একজন দর্শনপ্রার্থীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার কক্ষে কথা বলেছিলেন কি না তা কি আপনি প্রত্যক্ষজ্ঞানে জানেন?

—জানি। আমি স্বচক্ষে দেখেছিলাম, মিস্টার মহেন্দ্র বোস এবং তাঁর উকিল ওঁর সঙ্গে ঐ সময় রুদ্ধদ্বার কক্ষে আলোচনা করতে থাকেন।

—তারপর কী হয় বলে যান—

জয়দীপ তার জবানবন্দিতে বলে যায় পরবর্তী ঘটনা। রাত দশটায় য়ু সিয়াঙ-এর হোটেল ত্যাগ। পরদিন সোমবার সকাল সাতটায় সেও পার্ক হোটেল থেকে চেক আউট করে চলে যায়। গিয়ে ওঠে দমদমের ভি.আই.পি. হোটেলে। রাত বারোটা চল্লিশে সে কীভাবে টেলিফোন-মেসেজটা লিখে নেয় এবং সকাল হলে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে এসে বাসু-সাহেবকে কাগজখানা দেয় সব বিশদভাবে জানায়।

বাসু-সাহেবের জেরা শেষ হবার আগেই আদালত বন্ধ হল।

বিচারক ঘোষণা করলেন—পরদিন যথারীতি বেলা দশটায় আদালত বসবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *