পথের কাঁটা – ৩

পরদিন সন্ধ্যায় বুড়ো-কর্তার নিভৃত-কক্ষে যখন আবার ওঁরা দু-জন মুখোমুখি বসলেন তখন জগদানন্দ বললেন, ব্যারিস্টার সাহেব, আজ আপনার জন্যে আমি একটি ‘সারপ্রাইজ’ নিয়ে বসে আছি! সেটা দেখলে আপনি চমকে উঠবেন

বাসু উৎসাহ দেখিয়ে বলেন, চমকিত হওয়া একটা দুর্লভ সৌভাগ্য! তাহলে আগে সেটাই দেখি। কাজের কথা পরে হবে।

ছোট ছেলের মতো মাথা দুলিয়ে জগদানন্দ বলেন, ওটি হচ্ছে না। চমকিত হওয়া যখন দুর্লভ সৌভাগ্য তখন প্রতিশ্রুতিমত আপনি আগে আমাকে চমকিত করুন! কথা ছিল, আজ সন্ধ্যায় আপনি আমাকে জানাবেন রহস্যটা কী! মানে আমার রহস্যটা।

বাসু-সাহেব বলেন, সে-সব কথা থাক!

—তাহলে তো হবে না ব্যারিস্টার সাহেব। সে-ক্ষেত্রে আগে হার স্বীকার করুন।

—করলাম!

খুশিয়াল হয়ে ওঠেন জগদানন্দ। বলেন, লয়েডস্ ব্যাঙ্ক কোনো খবর দিতে পারল না!

—লয়েডস্ ব্যাঙ্কে আমি আদৌ যাইনি।

—তাহলে আপনি অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করছেন, মহেন্দ্র কী ব্যাপারে আমাকে ব্ল্যাকমেল করছে তা আপনি জানতে পারেননি।

বাসু বিরক্ত হয়ে বলেন, একই কথা আমাকে দিয়ে বারে বারে কেন বলাচ্ছেন মিঃ সেন?

জগদানন্দ ঈষৎ লজ্জিত হয়ে বলেন, কিছু মনে করবেন না বাসু-সাহেব! এতে আপনার লজ্জিত হবার কিছু নেই। যে খবর বার করতে মহেন্দ্রের পঁচিশ বছর লাগল তা যে আপনি চব্বিশ ঘণ্টায় জানতে পারবেন না তা আমিও জানতাম। তবে আপনাকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিতে হচ্ছে একটি বিশেষ কারণে। এই নিয়ে ইতিমধ্যে আমি বাজি ধরে বসে আছি কিনা। আপনার অসাফল্যে আমি একশ টাকা বাজি জিতলাম।

বাসু-সাহেব পাইপে অগ্নি সংযোগ করছিলেন। হঠাৎ থেমে পড়ে বলেন, মানে? এ নিয়ে বাজি ধরেছেন? কার সঙ্গে? নাতনি?

—না আপনার গুরু ব্যারিস্টার এ.কে.রে!

বাসু-সাহেবের হাতের দেশলাইয়ের কাঠিটা নিভে গেল। মুখ থেকে পাইপটা সরিয়ে বলেন, সেটা কী রকম?

—কাল আপনি চলে যাবার পরেই আমি রে-সাহেবকে টেলিফোন করেছিলাম। ওঁকে বললাম, আপনি বলেছেন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমার একটা রহস্য উদ্ঘাটন করে দেবেন। শুনে রে-সাহেব বললেন—বাসু যদি কথা দিয়ে থাকে তবে নিশ্চয়ই করবে! তারপর যা হয়ে থাকে। দুই বুড়োয় কথায় কাটাকাটি! শেষমেশ একশ টাকার বাজি!

বাসু এবার দেশলাই থেকে দ্বিতীয় একটি কাঠি বার করে পাইপটা ধরালেন। গম্ভীর হয়ে বললেন, সে-ক্ষেত্রে, সেন-মশাই, আমার উক্তি আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। গুরুর আর্থিক লোকসান আমি হতে দিতে পারি না। আপনার রহস্য আমি উদ্ঘাটন করেছি!

জগদানন্দ মিটিমিটি হাসছেন। বলেন, বটে! তবে সেটাই শোনান আগে।

বাসু ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন একবার। ঘরে ওঁরা তিনজনই মাত্র আছেন। জগদানন্দ, তিনি আর কৌশিক। তবু উঠে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে এলেন। বললেন, সেন-মশাই, কথাটা অপ্রিয়, তাই সব জেনেশুনেও আমি হার স্বীকার করছিলাম। বিশ্বাস করুন, আমি ব্যাপারটা জানি।

জগদানন্দ ঘন ঘন মাথা নাড়ছেন। বলেন, ও ভাবে ফাঁকি দিতে পারবেন না!

বাসু যেন নিরুপায় হয়ে ঝুঁকে পড়েন। অস্ফুটে বলেন, আমি জানি—মহেন্দ্র এতদিনে প্রমাণ সংগ্রহ করে এনেছে যে, নীলিমা আপনার পৌত্রী নয়!

প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলেন জগদানন্দ। কৌশিকও চমকে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ দম ধরে থেকে জগদানন্দ বলেন, আর একটু খুলে বলুন, কী বলতে চাইছেন।

—বলছি যে, আপনার পুত্র সদানন্দ সেন নীলিমার বাবা নয়—এ তথ্যটা মহেন্দ্ৰ আবিষ্কার করেছে। হয়তো সে অনেকদিন ধরেই এটা জানত—সম্প্ৰতি অকাট্য প্রমাণ সংগ্রহ করে এনেছে!

মাথাটা নিচু হয়ে গেল জগদানন্দের। অনেকক্ষণ নির্বাক বসে রইলেন তিনি। তারপর মুখ তুলে বললেন, আপনি কেমন করে জানলেন?

—সে প্রশ্ন অবান্তর! এখন দেখান আপনি কী দেখাতে চাইছিলেন যেন?

তবু উৎসাহ ফিরে পেলেন না জগদানন্দ। বললেন, আপনি জানাবেন না—কী সূত্রে এ তথ্যটা আবিষ্কার করেছেন?

—না! সে শর্ত তো ছিল না।

আরও মিনিটখানেক গুম মেরে বসে রইলেন জগদানন্দ। তারপর উঠে গেলেন এবং আলমারি থেকে একটি দলিল নিয়ে এসে নীরবে বাড়িয়ে ধরলেন বাসু-সাহেবের দিকে। কাগজটা খুলে বাসু-সাহেব দেখেন সেটি একটি উইল। অত্যন্ত পাকা মুনশিয়ানার সঙ্গে জগদানন্দ স্বহস্তে একটি উইল লিখেছেন। তাতে তাঁর যাবতীয় অস্থাবর সম্পত্তির খতিয়ান আছে। ওঁর গুরুদেব পাবেন দশ হাজার, নীলিমার এক মামা দশ হাজার, আর একজন কে যেন পাবেন পাঁচ হাজার, এইভাবে প্রত্যেকেই কিছু কিছু পাবে। নীলিমা পাবে নগদ পঁচিশ হাজার। জগদানন্দের বৈমাত্রেয় ভাই যোগানন্দ পাবেন পঞ্চাশ হাজার এবং ওঁর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বসত বাড়িটা নির্ব্যঢ় শর্তে উনি দিয়ে যাচ্ছেন মহেন্দ্ৰকে!

দীর্ঘ উইলটি পাঠ শেষ করে মুখ তুললেন বাসু-সাহেব। বলেন, পড়লাম।

—পড়লেন তা তো দেখতেই পেলাম। এবার আপনার অভিমত?

বাসু-সাহেব হেসে বললেন, আমার বিশ্বাস এত সহজে মহেন্দ্র আর বিশ্বম্ভরকে বোকা বানাতে পারবেন না। এ উইল পাল্‌টে যাতে আপনি আবার উইল করতে না পারেন সে ব্যবস্থা তারা করবে। প্রথমত এটি রেজিস্ট্রি করাবে; দ্বিতীয়ত আপনি যাতে তারপর আর দ্বিতীয় উইল না করতে পারেন, সে জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করবে।

—কী ব্যবস্থা?

—চব্বিশ ঘণ্টা আপনাকে নজরবন্দি করে রাখবে!

জগদানন্দ বলেন, আমি জানি। তাই এই ব্যবস্থাটিও করে রেখেছি। দ্বিতীয় উইল আমি আদৌ করব না।

উনি আর একটি কাগজ বের করে দেন—বসত বাড়িটি দান বিক্রয় করার অধিকার দিয়ে বাসু-সাহেবকে একটি স্পেশাল পাওয়ার অফ্ অ্যাটর্নি। বললেন, আপনি আমার আমমোক্তার-নামা নিয়ে আমার বসত বাড়িটি আমার তরফে নীলিমাকে দান করে দিন। কালই। তারপর পরশু আমি আমার উইলটা অপরিবর্তনীয় শেষ উইল হিসাবে রেজিস্ট্রি করাব এবং একটি কপি মহেন্দ্রকে দেব। আমার বিশ্বাস ও মেনে নেবে। তিনটি কারণে—প্রথমত ও জানে, এ বাড়ির দাম দু-আড়াই লাখ টাকা। দ্বিতীয়ত আমি আর কদিন? তৃতীয়ত আমার এই ডবল-ক্রসিংটা ও সন্দেহ করবে না—ভাববে, আমার জীবদ্দশায় যাতে সে পুনরায় ঝামেলা করতে না আসে তাই এই ব্যবস্থা আমি করেছি। আমার মৃত্যুর পরে ও যখন উইল মোতাবেক এ বাড়ি দখল নিতে আসবে তখন সে জানতে পারবে যে, উইল করার আগেই বাড়ির মালিকানা হস্তান্তরিত হয়েছে!

বাসু-সাহেব বলেন, পরিকল্পনটা ভাল। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না; কিন্তু তাহলে নাতনিকে মাত্র পঁচিশ হাজার টাকা দিচ্ছেন কেন? ওটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে একটু বাড়িয়ে দেওয়া ভাল নয়?

জগদানন্দ হেসে বলেন, সেটা সম্পূর্ণ অন্য জিনিস। আমি দেখতে চাই এই উইল পড়ার পরেও ঐ ছোকরা—কী যেন নাম?—হ্যাঁ জয়দীপ, এ-বাড়িতে আর মাথা গলায় কি না। জয়দীপকে আমি উইলে সাক্ষী করব।

—এ বুদ্ধিটা ভাল করেছেন! এ ঢিলে দু-পাখি!

.

বাড়িতে ফিরে এসে কৌশিক চেপে ধরল বাসু-সাহেবকে, এবার বলুন, কেমন করে জানলেন জগদানন্দের ঐ গোপন রহস্য?

ইজিচেয়ারে বসে পাইপ ধরাচ্ছিলেন বাসু-সাহেব। বলেন, বুঝলে না? পিওর অ্যান্ড সিম্পল ম্যাথমেটিক্স! অঙ্ক রে বাবা, অঙ্ক!

—অঙ্ক মানে? কিসের অঙ্ক?—রুখে ওঠে কৌশিক।

—অ্যাস্ট্রনমির। গণিত জ্যোতিষ! শিবপুর বি.ই. কলেজে অ্যাস্ট্রনমি পড়ানো হয়?

–হয় না; কিন্তু বি. এস্-সিতে আমার অঙ্কে অনার্স ছিল। ওটা বুঝি। ও-ভাবে আমাকে ব্লাফ দিতে পারবেন না। অ্যাস্ট্রনমির অঙ্কে কে কার বাপ তো কখনও বোঝা যায় না।

—যায় রে বাপু, যায়। শোনো বুঝিয়ে দিচ্ছি। কথা প্রসঙ্গে জগদানন্দ নীলিমার জন্ম সম্বন্ধে কী কী বলছিলেন বলো দিকিন!

—আমার ঠিক ঠিক মনে নেই, আপনিই বলুন।

—উনি বলেছিলেন, এক নম্বর—ওর জন্মরাশি সিংহ, দু-নম্বর ও লগচাদা মেয়ে, তিন-নম্বর ওর জন্ম লগ্নে রবি, চার নম্বর ওর নবমে শনি। কেমন?

—তা হবে। তাতে কী হল? তাতে কখনও প্রমাণ হয় তার বাপ সদানন্দ নয়?

—হবে রে বাপু, হবে। অঙ্কটা আগে কষতে দাও। প্রথম কথা—’জন্মলগ্ন’ কাকে বলে জান? জন্মের সময় যে রাশি পূর্বগগনে উদয় হচ্ছে। তাই তো!

—হ্যাঁ, তাই।

—ওর লগ্নে রবি আছেন, অর্থাৎ জন্ম মুহূর্তে সূর্যও গুটি গুটি উঠছেন। অর্থাৎ ওর জন্ম সূর্যোদয় মুহূর্তে! কেমন?

—তাতে কী হল?

—তাতে প্রমাণ হল ওর জন্মমাস ভাদ্র!

—তা কেমন করে প্রমাণ হল?

—হল না? ওর জন্মরাশি হচ্ছে ‘সিংহ’। জন্মরাশি কী? জন্ম মুহূর্তে চন্দ্র যে রাশিতে আছেন! অর্থাৎ চন্দ্র ছিলেন সিংহে। যেহেতু ও লগন্-চাঁদা এবং ওর লগ্নে আছেন রবি—ফলে জন্মমুহূর্ত চাঁদ ও সূর্য দুজনেই সিংহ রাশিতে নয়? এখন ‘সিংহরাশিস্থে ভাস্করে’ মানেই ‘এ ভরা বাদর মাহ ভাদর!’ ওর জন্মমাস ভাদ্র!

কৌশিক একটু ভেবে নিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়। বাসু বলেন, শুধু ভাদ্র মাসই নয়, ভাদ্রের অমাবস্যায়!

—কেন? অমাবস্যা কেন?

—যেহেতু সূর্য ও চন্দ্র একই রাশিতে! অ্যাস্ট্রনমি পেপারে কত নম্বর পেয়েছিলে? রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে কৌশিক বললে, ও ইয়েস!

—তাহলে এ পর্যন্ত জেনেছি যে, নীলিমা কোনো একটি ভাদ্রমাসের অমাবস্যায় সূর্যোদয়ের মুহূর্তে জন্মেছে। এগ্রিড? নাউ! আমাদের চার নম্বর হাইপথেসিস্ ছিল ‘নবমে শনি’।

কৌশিক স্বীকার করে, ঐ ব্যাপারটা আমি বুঝিনি। ‘নবমে শনি’ মানে কী?

—বাসু বলেন, তোমার বুঝতে না পারাই স্বাভাবিক। ওটা অ্যাস্ট্রনমির এক্তিয়ারভুক্ত নয়, অ্যাস্ট্রলজির ব্যাপার। ‘লগ্ন’ থেকে নয়-ঘর গুণে যে রাশি পাওয়া যাবে সেখানে জন্ম সময়ে শনি ছিলেন এটাই বুঝতে হবে। যেহেতু ওর লগ্ন ছিল সিংহ তাই জন্মসময়ে দেখা যাচ্ছে শনি আছেন মেষ রাশিতে। ওর জন্ম-ছকটায় যেটুকু জানা গেল তার সাঙ্কেতিক চেহারা এই রকম—সিংহ রাশিতে আছেন রবি (র), চন্দ্র (চ) এবং লগ্ন (লং) আর মেষরাশিতে শনি (শ)। মজা হচ্ছে শনিগ্রহ এক এক রাশিতে থাকেন আড়াই বছর। মানে গোটা রাশিচক্র পাক মারতে তাঁর সময় লাগে আড়াই ইন্টু-বারো, ত্রিশ বছর! বর্তমান বছরে, এই 1975 সালে শনি আছেন মিথুনে। দেখছি, নীলিমার জন্ম সময়ে তিনি ছিলেন দু-রাশি পিছনে। তার অর্থ ওর জন্ম সময়টা আজ থেকে পাঁচ বছর, অথবা ত্রিশ-প্লাস-পাঁচ পঁয়ত্রিশ বছর, কিম্বা ত্রিশ-দুগুণে-ষাট- প্লাস-পাঁচ পঁয়ষট্টি বছর আগে—কেমন তো? যেহেতু নীলিমাকে পাঁচ বছরের খুকি অথবা পঁয়ষট্টি বছরের বুড়ি বলে মনে হচ্ছে না তাই ওর বয়স পঁয়ত্রিশ! এগ্রিড? সিদ্ধান্তটা একটা বিকল্প পদ্ধতিতেও প্রমাণ করা যায়— নীলিমা প্রথম সাক্ষাতে বলেছিল তার বয়স চৌত্রিশ; অন্তত একটা বছর হাতে না রেখে কোনো যৌবনোত্তীর্ণা অনূঢ়া নিজের বয়স বলে না। ফলে চৌত্রিশ প্লাস এক পঁয়ত্রিশ! সংক্ষেপে নীলিমার জন্ম বৎসর 1940।

কৌশিক এতক্ষণে একটা মস্ত ফাঁক বার করেছে হিসাবে। বললে, তা কেন? শনি মেষরাশির প্রথমদিকে আছেন কিম্বা শেষ দিকে আছেন তা তো জানেন না। আপনি নিজেই বললেন এক রাশি পার হতে শনির আড়াই বছর লাগে। ফলে সালটা 1941 অথবা 1939 ও তো হতে পারে।

—কারেক্ট! ভেরি কারেক্ট! ভেরি ভেরি কারেক্ট। বরং তোমার বলা উচিত ছিল সে-হিসাবে 1938 থেকে 1942 যে-কোনো সাল হতে পারে।

রাশি

—পারেই তো!

—না, পারে না। কেন পারে না জানো? খুব সহজ কারণে। ঐ পাঁচটা বছরে পাঁচ-পাঁচটা ভাদ্রের অমাবস্যা এসেছে। তার ভেতর শুধুমাত্র 1940-এর ভাদ্রের অমাবস্যা পড়েছে সোমবারে— যেটা নীলিমার স্বীকৃতি অনুসারে ওর জন্মবার! ফলে সন্দেহাতীতরূপে প্রমাণ হল— নীলিমার জন্ম 1940 সালের ভাদ্র অমাবস্যায় সূর্যোদয়ের মুহূর্তে। বাংলা হিসাবে সেটা সতেরই ভাদ্র ১৩৪৭ ইংরাজি, দোসরা সেপ্টেম্বর 1940

—বেশ তাও না হয় মেনে নিলাম; কিন্তু তা থেকে তার পিতৃপরিচয়-

—ধীরে রজনী, ধীরে! ব্যাঙ্ক অব বর্মার ড্রাফট্-এর তারিখ ছিল 18.5.1940। জগদানন্দের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সদানন্দ মাসখানেক বর্মায় ছিল। যদি ধরে নিই একেবারে প্রত্যাবর্তনের শেষ দিনে সে ড্রাফটটা নিয়েছে তাহলে সদানন্দের বর্মামুলুকে পদার্পণের তারিখটা হচ্ছে 14.4.1940। যদি ধরে নিই রেঙ্গুনে পদার্পণের দিনই নীলিমার মায়ের সঙ্গে সদানন্দের সাক্ষাৎ ঘটে থাকে তবে দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ সময়ে নীলিমার মায়ের গর্ভে ভ্রূণের বয়স অন্তত পাঁচ মাস! Q.E.D.!

কৌশিক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বলে, আপনাকে একটা প্রণাম করব বাসুমামা?

বাসু-সাহেব ইজিচেয়ারে হাতলে ঠ্যাঙ জোড়া তুলে দিয়ে বলেন, ভাগনে মামাকে প্রণাম করবে—এতে আবার তিথি নক্ষত্র দেখার কী আছে? করো!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *