নবম অধ্যায় : কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য

নবম অধ্যায়
 কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য

কমিউনিস্ট পার্টির মতে, ‘‘ভারত বিভাগ ও বঙ্গভঙ্গ ধ্বনি স্বাধীনতার ধ্বনি নয়, ইহা হতাশা, বিক্ষোভ ও মৃত্যুর আলিঙ্গন।’’১৫২ কমিউনিস্ট পার্টি দাবি করে, মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ ভারতের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।১৫৩ শান্তিপূর্ণভাবে যদি বাংলার ঐক্যকে রাখতে হয় তা হলে বাংলাদেশকে স্বেচ্ছামূলক ভারতীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংযুক্ত রাখতে হবে। ভারতীয় ঐক্য ও বাংলার ঐক্য বজায় রাখাই ছিল কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট ও ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভায় কমিউনিস্টরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিতে স্বেচ্ছামূলক ভারতীয় ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব তা প্রত্যাখ্যান করেন।১৫৪ কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে, ভারতবর্ষ হল সতেরোটি স্বাধীন জাতির এক পরিবার। ‘ভারতবর্ষ হল একটি জাতি’, কংগ্রেসের এই চিন্তাকে যেমন কমিউনিস্ট পার্টি গ্রহণ করেনি, তেমনি মুসলিম লিগের তত্ত্ব ‘মুসলমানেরা একটি পৃথক জাতি’, এই তত্ত্বও কমিউনিস্ট পার্টি গ্রহণ করেনি। কমিউনিস্ট পার্টির মতে, আত্মনিয়ন্ত্রণের পূর্ণ অধিকারসহ এই সতেরোটি সার্বভৌম জাতির স্বেচ্ছামূলক ভারতীয় ইউনিয়ন গঠন করলে ভারতের ঐক্যবদ্ধ রূপ বজায় রাখা সম্ভব হবে। কমিউনিস্ট পার্টি অভিযোগ করে, কংগ্রেস সমগ্র ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করলেও এবং সমগ্র ভারতের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবি করলেও, আত্মনিয়ন্ত্রণের এই অধিকার ভারতের বিভিন্ন জাতিসমূহের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে প্রস্তুত নয়। অন্যদিকে মুসলিম লিগ মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবি করলেও, তাদের স্বতন্ত্র বাসভূমিতে (অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্রে) এমন সব অঞ্চল দাবি করে যেখানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তা ছাড়া, ভারতের বাকি অঞ্চলের সঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সম্পর্ক নির্ধারণ করতেও লিগ অস্বীকার করে।১৫৫ কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের স্বাধীনতার প্ল্যান সম্বন্ধে যে-বক্তব্য রাখে তা এখানে উদ্ধৃত করা হল :

1. Immediate declaration of Indian independence by the British Government.

Transfer of power to a real All-India Constituent Assembly which will draft the terms of the Quit India Treaty and ask the British Government to accept the Treaty or to face the united struggle of all the Indian peoples.

2. The delegates of the All-India Constituent Assembly shall be elected by 17 Sovereign National Constituent Assemblies based on the natural homelands of various Indian peoples. viz. Baluchistan, Pathanland, Sind, Western Punjab, Central Punjab, Hindustan, Rajasthan, Gujarat, Maharashtra, Karnatak, Andhra, Kerala, Tamilnadu, Orissa, Bengal, Assam and Bihar, and carved out of the existing artificially-made British provinces.

These Seventeen National Constituent Assemblies shall be elected by universal adult franchise.

3. The right of full self-determination shall also extend to the peoples of Indian States not only as their inalienable right, but as an essential part of the plan of real Indian freedom for the final liquidation of British rule and its Princely agents.

Exercise of this right will enable the people of every state to decide their destiny and to rejoin their own brother people of British India in their own free homelands.

The delegates of All-India Constituent Assembly shall have no more authority than that of plenipotentiaries.

Full and real sovereignty shall reside in the National Constituent Assemblies which will enjoy the unfettered right to negotiate, formulate and finally to decide their mutual relations within an independent India, on the Basis of complete equality.

Theirs shall be the final responsibility to raise and construct the constitutional structure of a free India through their own free will, in the atmosphere of their own creation and as they desire to realise their own and the common interest best.

The Communist Party guarantees to the Sikh people that in regard to the territory in which their own historic homelands lie, they would be able to exercise their right of self-determination together with the rest of the population of that territory.

The Communist Party stands for a united and free Bengal in a free India. Bengal as the common homeland of the Bengali Muslims and Hindus should be free to exercise its right of self- determination through a severeign Constituent Assembly based on adult franchise and to define its relation with the rest of india.১৫৬

এই উদ্ধৃত অংশ থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য পরিষ্কার বোঝা যায়। এই মূল বক্তব্যকে অপরিবর্তিত রেখে পরে কমিউনিস্ট পার্টি যে সতেরোটি জাতীয় ইউনিট সুনির্দিষ্ট করে তা এখানে উল্লেখ করা হল : তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থান, সিন্ধু, বেলুচিস্তান, পাঠানস্তান, কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হিন্দুস্থান, বিহার, অসম, বাংলা এবং ওড়িশা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে যখন সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশেম ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন অবিভক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের কথা বলেন, তা কমিউনিস্ট পার্টির নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ তাঁরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম মিলিত রাষ্ট্রের কথা বললেও, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই নীতি মানতে প্রস্তুত নন। প্রশ্ন হল : সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরা যে নীতি মানেন না তা তাঁরা বাংলায় হিন্দুদের ওপর কীভাবে চাপাতে পারেন? আর ভারত থেকে বিচ্ছেদ যদি বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে বঙ্গভঙ্গ ঠেকানো কী করে সম্ভব? পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য লিগের দাবি হল এই যে, হিন্দু ও মুসলমান দুটো আলাদা জাতি। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দি, আবুল হাশেমের প্রস্তাব অনুযায়ী উভয়েই একজাতি। মুসলিম লিগ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগ দাবি করে, অথচ ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গবিভাগ চায় না। কমিউনিস্ট পার্টি অভিযোগ করে, এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশেমের বক্তব্যে পাওয়া যায় না। উভয়েই ভারতীয় ইউনিয়নের কোনো প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি। তাঁরা ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংযোগবিহীন হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাংলাদেশ গঠনেই প্রয়াসী হন।১৫৭

কমিউনিস্ট পার্টি এই অভিযোগও করে, আবুল হাশেম ভারতীয় ও ইঙ্গ-মার্কিন মূলধনের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট পার্থক্যের সীমারেখাও টানেননি। তিনি উভয় মূলধনকেই সমপর্যায়ে ফেলে উভয় মূলধনকে বাংলাকে দুর্বল ও অক্ষম রাখবার জন্য দায়ী করেন। অথচ বাংলায় নিযুক্ত সমস্ত মূলধনের শতকরা ৮৬ ভাগ হল ইঙ্গ-মার্কিন এবং ইউরোপীয় মূলধন। মাড়োয়ারি ও গুজরাতি মূলধনের পরিমাণ অনেক কম, অর্থাৎ শতকরা ১৪ ভাগ। তা ছাড়া সারা ভারতে যত ইঙ্গ-মার্কিন মূলধন আছে তার শতকরা ৭৬ ভাগ রয়েছে বাংলাদেশে। সুতরাং বাঙালির সঙ্গে অবাঙালির সংঘাত থাকলেও এটাই মূল সংঘাত নয়। আসল সংঘাত হল ভারতবাসীর সঙ্গে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সংঘাত। যদি বাংলাদেশ ভারতীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে তা হলে ইঙ্গ-মার্কিন ‘‘মূলধনের শতকরা ৭৬ ভাগ ভারতীয় জনগণের অধিকাংশের আক্রমণের পাল্লার বাহিরে আসিয়া পড়িবে, তখন শুধু বাংলাদেশের উপর নজর রাখিলেই তাহার প্রভাব বজায় থাকিবে।’’১৫৮

কমিউনিস্ট পার্টি একথাও মনে করে : ‘‘বাংলাদেশকে ভারতীয় ইউনিয়ন হইতে বিচ্ছিন্ন করিলে মাড়োয়ারি এবং গুজরাতির মূলধন হয়তো জব্দ করিতে পারিবেন। কিন্তু বাংলার শতকরা ৮৬ ভাগ মূলধন ইঙ্গ-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীর, আর ইহাদের হাতেই পৃথিবীর শক্তিশালী সামরিক যন্ত্র রহিয়াছে। সুতরাং তাহাদের হটাইবার কথা আগে চিন্তা করিতে হইবে। সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রধান কথা হইতেছে বাংলার ইঙ্গ-মার্কিন মূলধন বাজেয়াপ্ত ও বাংলা হইতে ব্রিটিশ ফৌজ অপসারণ করা। একমাত্র এই ভিত্তিকেই স্বতন্ত্র বাংলার কোনো অর্থ হয়।’’১৫৯

আর একটি কথা বলা হয়, বাংলার হিন্দুরা সংখ্যায় এমন নয় যে, তাঁরা মুসলমান মেজরিটির চাপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবেন। এর জবাবে কমিউনিস্ট পার্টি বলে, কংগ্রেসও সারা ভারতের ক্ষেত্রে একই যুক্তি প্রয়োগ করতে পারে।১৬০ সোহরাওয়ার্দি যে বৃহত্তর বঙ্গের ঐক্যের কথা বলেন, সে-বিষয়ে কমিউনিস্ট পার্টি একটি প্রশ্ন করে : বৃহত্তর বঙ্গ ভারতীয় ইউনিয়নের ভেতরে থাকবে, না বাইরে যাবে, তার মীমাংসার ভার বৃহত্তর বঙ্গের জনগণের স্বাধীন ভোটের ওপর ছেড়ে দিতে তিনি সম্মত আছেন কি না? কিন্তু লিগ নেতারা তাতে রাজি না থাকায় কমিউনিস্ট পার্টি তার সমালোচনা করে। সোহরাওয়ার্দি-আবুল হাশেমের বক্তব্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে কমিউনিস্ট পার্টি তাঁদের বক্তব্যের দুর্বলতা উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত করে, ‘স্বাধীন ভারতেই স্বাধীন বাংলা সম্ভব।’১৬১

কিন্তু ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে থেকে ১৩ মে-র মধ্যে যখন মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দি, আবুল হাশেম, শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতা বাংলাদেশে এক ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের জন্য আলোচনা করেন, তখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক পি সি যোশী ও কমিউনিস্ট পার্টির বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক ভবানী সেন একটি যুক্ত বিবৃতিতে এই বিষয়ে কমিউনিস্ট পার্টির মনোভাব ব্যক্ত করেন। সম্পূর্ণ বিবৃতিটি এখানে উদ্ধৃত করা হল : ‘‘ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠনের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনার জন্য মহাত্মা গান্ধী ও শরৎবাবুর সহিত মি শহিদ সোহরাওয়ার্দি ও মৌ. আবুল হাশেমের যে কথাবার্তা চলিতেছে, তাহাতে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তকে পরাস্ত করার নতুন পথ উন্মুক্ত হইয়াছে। আমাদের মাথার উপর একটি নতুন ব্রিটিশ রোয়েদাদ ঝুলিতেছে। আমাদের ধারণা, লণ্ডনে ভারত বিভাগের ষড়যন্ত্র চলিতেছে। এই পরিকল্পনা যদি কার্যকরী হয় তাহা হইলে ইহা দ্বারা ভারতের সমস্ত সম্প্রদায় ও সমগ্র জনসাধারণের ভাগ্যে এক মহাবিপর্যয় ঘটিবে। কংগ্রেস ও লিগের চুক্তিতে ঐক্যবদ্ধ বাংলা ব্রিটিশ পরিকল্পনাকে বানচাল করিয়া দিবে।

ঐক্যবদ্ধ বাংলা সম্বন্ধে সংবাদপত্রে প্রকাশিত আলোচনা সাফল্যলাভ করিবে যদি উভয়পক্ষের নেতারা কমপক্ষে এই কয়টি বিষয়ে একমত হন : সার্বজনীন ভোট, যুক্ত নির্বাচন প্রথা, জমিদারি প্রথার অবসান, বিদেশি মূলধনকে জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করা, ভারতের সঙ্গে এই বাংলার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক স্থির করিবার জন্য গণভোট, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংযুক্ত ফ্রন্ট বা মোর্চা এবং সম্মিলিত মন্ত্রীসভা গঠন। এই বিষয়গুলিতে কংগ্রেস-লিগ একমত হইলে এই ‘সার্বভৌম’ বাংলা নামতঃ ভারতবর্ষের বাকি অংশ হইতে বিচ্ছিন্ন হইলেও তাহা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন ভারতেরই অংশ হইবে।

এইভাবে কংগ্রেস-লিগ আপোশ না হইলে বাংলাদেশ শুধু নামেই ‘সার্বভৌম’ হইবে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য অংশের সহিত এই ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশও কোনো-না-কোনো আকারে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুত্বের অধীনে থাকিয়া যাইবে; বাংলাদেশ বিভক্ত হইয়া যাইবে এবং বাংলার জাতীয় জীবন এমনভাবে বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইবে যাহা পূর্বে কখনো দেখা যায় নাই। এই উপলক্ষ্যে যদি আপোশ-আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহা হইলে সমূহ বিপদ ঘনাইয়া উঠিবে।

সুতরাং লিগ মন্ত্রীমন্ডলীর দায়িত্ব হইতেছে—হিন্দুদের ভয় ও সন্দেহ দূর করিবার জন্য তাঁহারা যে সকল রকমে চেষ্টা করিবেন সে সম্পর্কে হিন্দু জনসাধারণের মনে বিশ্বাস জন্মাইয়া দেওয়া এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের দায়িত্ব হইতেছে এই যে, তাঁহারা যেন যুক্তফ্রন্ট গঠন করিবার এই শেষ সম্ভাবনাকেও না হারান।

আমরা কমিউনিস্টরা আশা করি যে, এই আলাপ-আলোচনা সফল হউক। কারণ, বাংলায় এই সম্মিলিত মন্ত্রীসভার প্রতিষ্ঠা ভ্রাতৃসংঘর্ষের অবসান করিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও শান্তির পথ খুলিয়া দিবে। সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ নাগরিক স্বাধীনতা অনতিবিলম্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হইবে এবং জনসাধারণের আন্দোলন সুস্থ ও সবল পথে পরিচালিত হইবে। ইহার ফলে বাংলার মন্ত্রিত্ব কংগ্রেস, লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও সমস্ত গণসংগঠনের ঐক্যবদ্ধ জনসমর্থন অর্জন করিয়া কায়েমি স্বার্থের কবল হইতে বাংলার অর্থনীতিকে বাঁচাইবার জন্য বলিষ্ঠ পন্থা অবলম্বন করিতে সমর্থ হইবে এবং খাদ্য, নিরাপত্তা, রুজি-রোজগার ও মানুষের উপযুক্ত মজুরির জন্য সংগ্রাম পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে পারিবে।

বাংলার প্রশ্নে কংগ্রেস ও লিগের আপোশ ভারতের রাজনীতিক জীবনে সুদূরপ্রসারী সাফল্য আনিয়া দিবে। ভারতের একটি পার্টির বিরুদ্ধে অন্য পার্টির বিরোধ সৃষ্টি করিয়া ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে যত কম ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়—সাম্রাজ্যবাদের এই চক্রান্তের মূলে বাংলার কংগ্রেস-লিগ মিলিত চুক্তি চরম আঘাত হানিবে। বাংলার সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে কংগ্রেস ও লিগের এই যুক্ত পরিকল্পনা সাম্রাজ্যবাদের মোক্ষম জবাব। ইহা ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের ভিতরেই সাম্রাজ্যবাদকে পরিপূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরিত করিতে বাধ্য করিবে।১৬২

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কমিউনিস্ট পার্টি এই মনোভাবই ব্যক্ত করে।

.

১৫২. ভবানী সেন, বঙ্গভঙ্গ ও পাকিস্তান, পৃষ্ঠা : ১৯

১৫৩. ড. জি অধিকারী, পাকিস্তান ও জাতীয় ঐক্য, কলিকাতা, ১৯৪৪, পি সি যোশী, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অভিযোগের উত্তরে কমিউনিস্টদের জবাব, কলিকাতা, ১৯৪৫, পি সি যোশী, কংগেস-লিগ মিলনের পথে স্বাধীন হও, কলিকাতা ১৯৪৬, ক্যাবিনেট মিশনের নিকট পার্টির মেমোরেণ্ডাম, কমিউনিস্ট পার্টির পুস্তিকা, কলিকাতা, ১৯৪৬, জি অধিকারী, সাম্রাজ্যবাদের অভিনব ষড়যন্ত্র, কলিকাতা, ১৯৪৬, রজনীপাম দত্ত, বিভেদ নীতির নতুন পালা, কলিকাতা ১৯৪৬। এইসব গ্রন্থে ও পুস্তিকায় কমিউনিস্ট পার্টির যুদ্ধকালীন নীতি ও কর্মসূচির ও যুদ্ধোত্তর যুগের বিস্তৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

১৫৪. ভবানী সেন, বঙ্গভঙ্গ ও পাকিস্তান, পৃষ্ঠা : ১০

১৫৫. P C Joshi, For the Final Bid for Power, Freedom Programme of Indian Communists, Bombay, December, Year (?), pp. 8-11, 105-106.

১৫৬. Ibid, pp. 105-106.

১৫৭. ভবানী সেন, বঙ্গভঙ্গ ও পাকিস্তান, পৃষ্ঠা : ৩৬-৪০

১৫৮. ওই, পৃষ্ঠা : ৪৫-৪৭

১৫৯. ওই, পৃষ্ঠা : ৪৭

১৬০. ওই, পৃষ্ঠা : ৩৮-৩৯

১৬১. ওই, পৃষ্ঠা : ৪৯-৫১

১৬২. ওই, পরিশিষ্ট।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *