দশম অধ্যায় : ভারত ও বাংলা বিভাগের পরিকল্পনা গ্রহণ

দশম অধ্যায়
 ভারত ও বাংলা বিভাগের পরিকল্পনা গ্রহণ

অবশেষে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশদের হাত থেকে ক্ষমতা ভারতীয়দের হাতে অর্পণ করা হবে। এই ঘোষণায় ভারত বিভাগের কথা বলা হয়। তা ছাড়া বাংলার ও পাঞ্জাবের সমস্যা উল্লেখ করে বলা হয়, এই দুটো প্রদেশের আইনসভার সদস্যরা দুটো অংশে বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে বসবেন। যেসব জেলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার সদস্যরা একটি অংশে বসবেন, আর বাকি অঞ্চলের সদস্যরা আর একটি অংশে বসবেন। এই দুটো অংশের সদস্যরা পৃথকভাবে বসে ভোট দেবেন—তাঁরা প্রদেশ ভাগের পক্ষে না বিপক্ষে। কোনো একটি অংশের বেশিরভাগ সদস্য চাইলেই প্রদেশকে বিভক্ত করা হবে।১৬৩

এই ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ার পর শরৎচন্দ্র বসু কংগ্রেস ও লিগ নেতাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে নিষেধ করেন।১৬৪ কিন্তু কংগ্রেস ৩ জুনের ঘোষণা গ্রহণ করে। মহাত্মা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে ৩ জুনের ঘোষণার বিরোধী হলেও ৭ জুন তিনিও তা গ্রহণ করেন। ৯ জুন মুসলিম লিগও এই ঘোষণাকে গ্রহণ করে। এইভাবে ৯ জুনের মধ্যে কংগ্রেস ও লিগের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব ভারত বিভাগের এবং পাঞ্জাব ও বাংলা বিভাগের প্রস্তাবের প্রতি তাঁদের সম্মতি জ্ঞাপন করেন।১৬৫

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের বিরোধী ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতিতে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলায় কংগ্রেসের প্রভাবশালী মহল অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ৮ জুন নয়াদিল্লিতে মহাত্মা গান্ধী প্রার্থনা সভায় যে ভাষণ দেন তাতেই এই তথ্য উদঘাটিত হয়। অবিভক্ত সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মহাত্মা গান্ধী বলেন, কেউ কেউ এই পরিকল্পনাকে দুরভিসন্ধিমূলক বলেন। হিন্দুরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁরা পশ্চিমবঙ্গকে পূর্ববঙ্গ থেকে পৃথক করতে চান। বাংলার মুসলিম লিগও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনাকে পরিত্যাগ করেছে। তা সত্ত্বেও কিছু লোক এখনও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য তৎপর আছেন। একথা বলা হয়, মহাত্মা গান্ধীর জন্যই তা সম্ভব হচ্ছে। মহাত্মা গান্ধী পরিষ্কার করে বলেন, সংশয়পূর্ণ কোনো ব্যবস্থাকেই তাঁর পক্ষে সমর্থন করা সম্ভব নয়। তাঁকে বলা হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ বাংলার পক্ষে ভোট সংগ্রহের জন্য জলের মতো অর্থব্যয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তিনি ঐক্যবোধকে মূল্যবান মনে করলেও তা সম্মান ও ন্যায়নীতি বিসর্জন দিয়ে অর্জন করার পক্ষপাতী নন। শরৎবাবুকে সমর্থন করার জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। নি:সন্দেহে শরৎবাবু তাঁর বন্ধু। তাঁর সঙ্গে তাঁর পত্রালাপও হয়েছে। ৮ জুন মহাত্মা গান্ধী প্রদত্ত ভাষণ খবরের কাগজে যেভাবে প্রকাশিত হয় তা এখানে উদ্ধৃত করা হল :

Referring to the move for United Sovereign Bengal, Gandhiji in his post-prayer speech said, some people had told him that the move was a sinister one. The Hindus were fed up and wanted to divide the Western from the Eastern Bengal. The Bengal Muslim League had also rejected the unity plan, but some people were still persisting with it and it was said to be due to the fact that he (Gandhiji) was behind the move.

He wanted to make it clear that he could never support any questionable practice. He was told that money was being spent like water to buy votes in favour of United Bengal. He appreciated unity but not at the cost of honour and justice. He was taken to task for supporting Sarat Babu. He was undoubtedly his friend. He was in correspondence with him. But he would never be guilty of supporting anything that could not be publicly and honestly defended. That was his universal practice. He did not believe in questionable means even to secure a worthy end.১৬৬

ঐক্যবদ্ধ বাংলার সমর্থনে জলের মতো অর্থব্যয় করা হচ্ছে, এই খবরের প্রতিবাদ করে ৯ জুন শরৎচন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধীকে এক তারবার্তা পাঠান এবং এই খবরের সত্যতা যাচাই করতে তিনি তাঁকে প্রকাশ্যে তদন্ত করতে অনুরোধ করেন।১৬৭ তা ছাড়া ৮ জুন মহাত্মা গান্ধী লিখিত যে পত্র শরৎচন্দ্র বসু পান তাতে তিনি জানতে পারেন, জওহরলাল নেহরু ও বল্লভভাই প্যাটেল অবিভক্ত সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের বিরোধী। ১৪ জুন শরৎচন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধীর নিকট একটি পত্রে লেখেন, তাঁর বিশ্বাসের প্রতি তিনি এখনও অবিচল আছেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তিনি ঐক্যবদ্ধ বাংলার জন্য কাজ করে যাবেন। তখন মহাত্মা গান্ধী নয়াদিল্লির ভাঙ্গি কলোনিতে অবস্থান করেন। ১৪ জুন শরৎচন্দ্র বসু যে পত্রখানি মহাত্মা গান্ধীকে লেখেন, তা একটি মূল্যবান দলিল।১৬৮ তাই সম্পূর্ণ পত্রখানি এখানে উদ্ধৃত করা হল :

June 14, 1947

My dear Mahatmaji,

Your kind letter of the 8th instant was to hand yesterday afternoon. I note that both Jawaharlal and Vallabhbhai are dead against the proposal. As regards their opinion that it is merely a trick for dividing Hindus and Scheduled Caste leaders. I cannot suscribe to it. Having had conversations with some Muslim League leaders in and from January last and Subsequently with some Congress leaders, I can say definitely and emphatically that there was nothing in the nature of trickery. I am unable to understand what Jawaharlal and Vallabhbhai mean by saying that they feel that money is being lavishly expended in order to secure Scheduled Caste votes. It is possible to deal with facts, but not with mere feeling or suspicion. I must say, however that the feeling or suspicion that money is being expended to secure Scheduled Caste votes is entirely baseless.

My faith remains unshaken and I propose to work in my own humble way for the unity of Bengal. Even after the raging and tearing campaign that has been carried on in favour of partition, I have not the slightest doubt that if a referendum were taken, the Hindus of Bengal by a large majority would vote against partition.

The voice of Bengal has been stifled for the moment. but I have every hope that it will assert itself.

With Pronams,

Yours affectionately,

Sd/-Sarat Chandra Bose

শরৎচন্দ্র বসু জিন্নার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। ৯ জুন শরৎচন্দ্র বসু একজন বিশেষ ব্যক্তিকে প্লেনে নয়াদিল্লিতে জিন্নার নিকট তাঁর পত্র পৌঁছে দেবার জন্য পাঠান। ৯ জুনের পত্রে শরৎচন্দ্র বসু জিন্নাকে ঐক্যবদ্ধ বাংলা বজায় রাখার জন্য লিগ সদস্যদের নিকট নির্দেশ পাঠাতে অনুরোধ করেন। এই পত্রখানিও উদ্ধৃত করা হল :১৬৯

1, Woodburn Park, Calcutta,

9 June, 1947.

My dear Jinnah,

I have to thank you most sincerely for your courtesy and cordiality towards me and for the consideration you gave to my suggestions. Bengal is passing through the greatest crisis in her history, but she can yet be saved. She can be saved if you will kindly give the following instructions to Muslim members of the Bengal Legislative Assembly :

(1) At the meeting to be held of all members of the Legislative Assembly (other than Europeans) at which a decision will be taken on the issue as to which Constituent Assembly the province as a whole would join if it were subsequently decided by the two parts to remain united, to vote neither for the Hindustan Constituent Assembly nor for the Pakistan Constituent Assembly, and to make it clear by a statement in the Assembly or in the press or otherwise, that they are solidly in favour of Bengal having a Constituent Assembly of her own.

(2) At the meetings of the members of the two parts of the Legislative Assembly sitting separately and empowered to vote whether or not the province should be partitioned, to vote solidly against partition.

The request I am making to you is in accordance with the views you expressed to me when we met. But it seems to me that if you merely express your views to your members and not give them specific instructions as to how to vote, the situation cannot be saved. I hope you will do all in your power to enable Bengal to remain united and to make her a free and independent state.

If Muslim members of the Bengal Legislative Assembly vote solidly as suggested in paragraphs (1) and (2) above, I think Lord Mountbaten will be compelled to convene another meeting of all members of the Assembly (other than Europeans) at which a decision can be taken on the issue as to whether the province as a whole desires to have a Constituent Assembly of her won.

I shall be coming to Delhi again on the 13th or 14th and shall call on you on the 14th or 15th.

Thanking you and with kind regards,

Yours Sincerely,

Sarat Chandra Bose

কিন্তু জিন্নার সঙ্গে শরৎচন্দ্র বসুর আর কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ ইতিমধ্যে কংগ্রেস হাইকমাণ্ড শরৎ বসুর অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে, এবং মহাত্মা গান্ধী প্রকাশ্যেই বলেন, শরৎবাবুকে সমর্থন করার জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।১৭০

অবশেষে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন শুক্রবার বাংলার আইনসভার সদস্যরা বাংলাদেশকে দুটো অংশে বিভক্ত করবার পক্ষে ভোট দেন। এইভাবে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের আবির্ভাব হয়।১৭১ ২১ জুন মহাত্মা গান্ধী শরৎচন্দ্র বসুর পত্রের উত্তর দেন। পত্রখানি উদ্ধৃত করা হল :১৭২

Hardwar

21.6.47

My Dear Sarat,

I have a morning to myself here. I use it for writing two or three over-due letters. This is one to acknowledge yours of 14th instant. The way to work for unity. I have pointed out when the geographical is broken,

Hoping you are all well,

Love

Bapu

এই পত্রের উত্তরে শরৎচন্দ্র বসু ২৭ জুন মহাত্মা গান্ধীকে লিখে জানান, যা ঘটেছে তা সত্ত্বেও আমাদের ঐক্যের মনোভাব বজায় রাখার জন্য কাজ করতে হবে। তিনি লেখেন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ঘটনাবলি তাঁকে খুবই বিচলিত করেছে। তা ছাড়া কংগ্রেসের মতো একটি মহান জাতীয় সংগঠন দ্রুত হিন্দু সংগঠনে পরিণত হওয়ায় শরৎচন্দ্র বসু বেদনা প্রকাশ করেন। ২৭ জুনের পত্রই অবিভক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের বিষয় নিয়ে মহাত্মা গান্ধী-শরৎ বসু পত্রালাপের শেষ পত্র বলা চলে। এই পত্রখানি এখানে উদ্ধৃত করা হল :১৭৩

June 27, 1947.

My Dear Mahatmaji,

I have to thank you for your kind letter of the 21st instant which was to hand on the 25th.

We have all to work for unity in spite of all that has happened. God alone knows whether our work will bear fruit.

I feel very upset over what is happening in the Frontier. You may remember I told you at Sodepore that I was afraid that the Frontier would pass into the hands of the Muslim League. It grieves me to find that the Congress which was once a great national organisation is fast becoming an organisation of Hindus only.

I trust you are keeping well. I am so so.

With Pronams,

Yours affectionately,

Sarat Chandra Bose

এইভাবে মুসলিম লিগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশেমের পক্ষে যেমন বেশিদূর এগোনো সম্ভব হয়নি, তেমনি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ফলেও শরৎচন্দ্র বসু তাঁর কল্পনাকে রূপ দিতে পারেননি।১৭৪

.

১৬৩. His Majesty’s Govt. Plan, 3 June, 1947, Statesman, Wednesday, 4 June, 1947 : C H Philips, op. cit.

১৬৪. Statesman, Monday, 9 June, 1947, p. 5.

১৬৫. Ibid, 10 June, 1947, p. 1 : Amrita Bazar Patrika, 8 June, 1947 p. 1, 9 and 10 June, 1947.

ভারতের অর্থনৈতিক জীবনের ওপর ভারত বিভাগের ফলাফল কী হতে পারে, এই বিষয় নিয়ে জি ডি বিড়লা একখানি পুস্তিকা রচনা করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তা প্রকাশ করেন। ভারতের এক বৃহৎ শিল্পপতি কীভাবে বিষয়টি দেখেন তা এই পুস্তিকা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। এই পুস্তিকাখানি ভারতীয় নেতাদের নিকট বিড়লা পাঠিয়ে দেন। ভারত বিভক্ত হলে অর্থনৈতিক জীবন বিপর্যস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কার যে কারণ নেই, লেখক সে-চিত্রই এখানে তুলে ধরেন। (vide G D Birla, Basic Facts Relating to Hindustan and Pakistan, New Dellhi, 1947.)

বাংলাদেশ বিভাগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পরে হিন্দু সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পূর্ব ও উত্তরবঙ্গের হিন্দুপ্রধান অঞ্চলগুলো পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য চেষ্টা করেন। এই বিষয়ে স্যার যদুনাথ সরকার ও ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার কয়েকটি বিবৃতি দেন। স্যার যদুনাথ রাজশাহি ও মালদহ জেলা সম্পর্কে ও ড. মজুমদার ফরিদপুর জেলা সম্পর্কে যেসব মতামত ব্যক্ত করেন তা উল্লেখ করা যেতে পারে। (Vide Hindusthan Standard, 19 July, 1947, p. 7; 7 August, 1947, p. 2; Bengal Partition Committee, Jessore, Khulna, Boundary Demarcation, Bengal, Jesesore Calcutta, 1947 (?), pp. 1-17; S.N. Haldar, Partition of Bengal, Bulletin No-4; other factors, natural boundary, economic relationship, religious associations, cultural affinities, social customs and manners, Jessore, 1947.) অন্যদিকে মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকেও কলকাতাসহ অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চল পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবি করা হয়। (দ্রঃ দৈনিক আজাদ পত্রিকার ফাইল, জুন-আগস্ট, ১৯৪৭)।

১৬৬. Gandhiji ‘Taken to Task’, in The Nation; 30 January, 1949, Amrita Bazar Patrika, 9 June, 1947.

১৬৭. Sarat Bose’s wire to Gandhiji, in Amrita Bazar Patrika, Tuesday, 10 June, 1947, p. 1.

১৬৮. Sarat Bose’s letter to Gandhiji, in The Nation, 30 January, 1949, p. 8.

১৬৯. Sarat Bose’s letter to Jinnah, in The Nation, Monday, 13 September, 1948, p. 1.

১৭০. Ibid. See Editorial Note.

১৭১. Amrita Bazar Patrika, Saturday, 21 June, 1947.

পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গ দুটো স্বতন্ত্র অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পরে মুসলিম লিগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচনের প্রশ্ন ওঠে। আইনসভার মুসলিম সদস্যদের মধ্যে প্রচার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের ও কলকাতার অধিবাসী সোহরাওয়ার্দির হাতে পূর্ববাংলার নেতৃত্ব দেওয়া সমীচীন হবে না। ৫ আগস্ট (১৯৪৭ খ্রি.) মওলানা আকরম খাঁ-র প্রচেষ্টায় খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ববাংলা মুসলিম লিগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। নাজিমুদ্দিন সোহরাওয়ার্দিকে পরাজিত করেন। নাজিমুদ্দিন পান ৭৫ ভোট, আর সোহরাওয়ার্দী ৩৯ ভোট। সোহরাওয়ার্দি সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিমবাংলা মুসলিম লিগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা মনোনীত হন। পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ গঠনের পরে নাজিমুদ্দিন ওই প্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন। সোহরাওয়ার্দি কলকাতায় থেকে সাম্প্রদায়িক বিরোধ প্রশমিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনিও পাকিস্তানে চলে যান। (vide Hindusthan Standard, 6 August, 1947, p. 1; K A Kamal, op. cit., আবদুর রব, সোহরাওয়ার্দি)

১৭২. Ghandhiji’s letter to Sarat Bose, in The Nation, 3 January, 1949, p. 8.

১৭৩. Ibid.

১৭৪. Statesman and Amrita Bazar Patrika, April-June, 1947, The Nation 30 June, 1949.

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের পরে যখন বারে বারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঢেউ লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তখন শরৎচন্দ্র বসু বঙ্গভঙ্গের সমর্থকদের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। (vide Speech by Sarat Bose, in The Nation, Sunday, 6 February, 1949, p. 8) তিনি এই ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কয়েক মিনিট পূর্বে একটি আবেদনপত্র রচনা করেন এবং এই রচনাটি ‘Appeal to India and Pakistan’ এই শিরোনামায় ন্যাশন কাগজে সম্পাদকীয় প্রবন্ধ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি পূর্ববাংলার স্বতন্ত্র রাষ্ট্রিক অস্তিত্ব বজায় রেখে, ভারতীয় ইউনিয়নের সযত্ন লালনে দুই বাংলায় বসবাসকারী বাঙালি জীবনের এক সুস্থ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেন (vide The Nation, 21 February, 1950)। শরৎচন্দ্র বসু ২০ ফেব্রুয়ারি (১৯৫০ খ্রি.) সোমবার রাত ১১-৪০ মিনিট সময়ে মারা যান। এই সম্পাদকীয় প্রবন্ধটি রচনার সময় হল রাত ১১-১০ মি. সময়। (See Appendix L)

হয়তো তাঁর চিন্তাধারার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না। কিন্তু একথা স্বীকার করতেই হবে, সেদিন জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যে শরৎচন্দ্র বসুই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি প্রায় নি:সঙ্গ অবস্থায় বঙ্গভঙ্গের বেদনা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ রূপটিকে বজায় রাখার জন্য অবিচল নিষ্ঠার সঙ্গে সংগ্রাম করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *