চতুর্থ অধ্যায় : অবিভক্ত স্বাধীন বঙ্গভূমি গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা ও মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা

চতুর্থ অধ্যায়
 অবিভক্ত স্বাধীন বঙ্গভূমি গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা ও মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা

স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সোহরাওয়ার্দি জিন্নার সমর্থনলাভে সচেষ্ট হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দি ও মোহম্মদ ইসমাইল খান নয়াদিল্লিতে জিন্নার সঙ্গে দেখা করেন। সম্ভবত তখন সোহরাওয়ার্দি বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর মতামত জিন্নাকে জানান।৫৪ অবশ্য অবিভক্ত বাংলাদেশ গঠনের বিষয়টি মহাত্মা গান্ধীর কলকাতা আগমনের পর থেকেই ও তাঁর উপস্থিতিতে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে মহাত্মা গান্ধী কলকাতায় আসেন এবং সোদপুরে খাদি আশ্রমে অবস্থান করেন। ওইদিন শরৎচন্দ্র বসু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।৫৫ ১০ মে আবুল হাশেম মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এই সাক্ষাৎকারের সময় শরৎচন্দ্র বসুও উপস্থিত ছিলেন। ১১ মে সোহরাওয়ার্দি রাজস্বমন্ত্রী ফজলুর রহমানকে নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ বিভাগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।৫৬ পুনরায় ১২ মে সোহরাওয়ার্দি সোদপুরে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। এই আলোচনার সময় অর্থমন্ত্রী মোহম্মদ আলি ও আবুল হাশেম উপস্থিত ছিলেন। এই সময়ে সোহরাওয়ার্দি, ফজলুর রহমান ও মুসলিম লিগের অন্যান্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে শরৎচন্দ্র বসুর বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র নিয়ে ঘন ঘন আলোচনা হয়। ১১ মে সোহরাওয়ার্দির বাড়িতে সোহরাওয়ার্দী ও শরৎচন্দ্র বসুর মধ্যে যখন আলোচনা হয় তখন কংগ্রেস অ্যাসেম্বলি পার্টির নেতা কিরণশঙ্কর রায়, ফজলুর রহমান ও আবুল হাশেমও উপস্থিত ছিলেন। ১২ মে সোদপুরে সোহরাওয়ার্দি এই আলোচনার বিষয়বস্তু মহাত্মা গান্ধীকে বলেন। একই সময়ে শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে রুদ্ধদ্বার কক্ষে শরৎচন্দ্র বসু ও কিরণশঙ্কর রায় এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এই নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত করেন, দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস ও লিগ হাইকমাণ্ডের নিকট এই আলোচনার ফলাফল ব্যক্ত করবেন।৫৭

এই আলোচনায় মহাত্মা গান্ধী এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যেহেতু মহাত্মা গান্ধী কখনোই ভারত বিভাগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাননি, সেজন্য তিনি কোনো প্রদেশ বিভাগেরও পক্ষপাতী ছিলেন না। ১০ মে সোদপুর খাদি আশ্রমে প্রার্থনা সভায় মহাত্মা গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি মনে করেন বাংলাদেশ বিভাগের পক্ষে ক্রমবর্ধমান হিন্দু জনমত পরিহার করা সম্ভব? মহাত্মা গান্ধী এই মনোভাবের গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, তাঁর পক্ষে এই বিষয় কোনো মত প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি নির্ভয়ে এই কথা বলতে পারেন, যদি দেশভাগ হয়, তা হলে সংখ্যাগুরু মুসলমানরাই তার জন্য দায়ী হবেন, আরও বলতে গেলে ক্ষমতাসীন মুসলিম সরকার। যদি তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হতেন, তা হলে তিনি হিন্দু ভাইদের নিকট অতীতের ঘটনাবলি ভুলতে আবেদন করতেন। তাঁদের তিনি বলতেন, তিনি তাঁদের মতোই বাঙালি, ধর্মের পার্থক্য তাঁদের আলাদা করতে পারে না। তাঁরা একই ভাষায় কথা বলেন এবং উত্তরাধিকার সূত্রে একই সংস্কৃতির অধিকারী। বাংলার সব কিছুই তাঁদের সম্পদ এবং তার জন্য তাঁরা সমভাবে গর্বিত। বাংলা বাংলাই। তা পাঞ্জাব অথবা বোম্বে অথবা অন্য কিছু নয়।৫৮

মহাত্মা গান্ধী বলেন, যদি মুখ্যমন্ত্রী এই মনোভাব গ্রহণ করতে সম্মত থাকেন তা হলে তিনি নিজে তাঁর সঙ্গে একস্থান থেকে আর এক স্থানে যাবেন এবং হিন্দু জনসাধারণকে বোঝাবেন। তিনি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখেন, একজনও হিন্দু বাংলার ঐক্যের বিরুদ্ধতা করবেন না। বিশেষ করে ঐক্যের জন্য একদা হিন্দু ও মুসলমান উভয়েই একসঙ্গে সংগ্রাম করে শক্তিশালী ভাইসরয় লর্ড কার্জনের ব্যবস্থাকে নাকচ করে দেন। যদি তিনি নিজে সোহরাওয়ার্দি হতেন, তা হলে তিনি হিন্দুদের আমন্ত্রণ জানাতেন বাংলাদেশ দ্বিখন্ডিত করার চিন্তা করার পূর্বে তাঁর দেহকে দ্বিখন্ডিত করতে।৫৯ যদি সোহরাওয়ার্দির হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাংলা ও বাঙালির প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকে, সেই ভালোবাসা কঠিন হিন্দু হৃদয়কেও গলিত করবে। কারণ ভীতি ও সন্দেহ হিন্দু-মনকে আচ্ছন্ন করে আছে।৬০

মহাত্মা গান্ধী বলেন, তিনি কলকাতা ও নোয়াখালির ঘটনা ভুলতে পারেননি, বিশেষ করে তিনি যেসব ঘটনা শুনেছেন তা যদি সত্যি হয়ে থাকে। তেমনি বিহারের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের অবস্থা একইরকম হয়। তাই তিনি দ্বিধাহীনচিত্তে বিহারের হিন্দুদের বলেন, তাঁদের উচিত মুসলমানদের মন থেকে ভীতি ও সন্দেহ দূর করা। মহাত্মা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে ভালোবাসার নীতিতে বিশ্বাসী। কারণ ভালোবাসা জাতি, বর্ণ ও ধর্মের কোনো পার্থক্য মানে না। তিনি খুশি এই দেখে যে, কায়েদে আজম জিন্নাও এই নীতিতে বিশ্বাসী।৬১

আর একটি প্রশ্ন মহাত্মা গান্ধীকে করা হয় : যে তিক্ততা ও বিদ্বেষ হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে কি তিনি বিশ্বাস করেন এই দুটো সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্ব সম্ভবপর? মহাত্মা গান্ধী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, শত্রুতা চিরকাল চলতে পারে না। এই দুটো সম্প্রদায় পরস্পর ভ্রাতৃত্বসূত্রে আবদ্ধ ছিল এবং সাময়িক পাগলামি সত্ত্বেও আবার তাই থাকবে।৬২ এক গভীর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গার মধ্যেও মহাত্মা গান্ধী অবিচল থেকে হিন্দু-মুসলিম মিলনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর মূল নীতি থেকে এতটুকু সরে যাননি। সম্ভবত মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে এসে এবং জিন্না ও অন্যান্য প্রভাবশালী মুসলিম লিগ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য হওয়ায় সোহরাওয়ার্দির চিন্তাধারার এক পরিবর্তন ঘটে। তাই মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতিতে কয়েকজন হিন্দু ও মুসলিম নেতার উদ্যোগে এক নতুন যুক্ত বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে শরৎচন্দ্র বসু যে ছয় দফা প্ল্যান ঘোষণা করেন, তা হল: (ক) বাংলাদেশ একটি সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক হবে, (খ) এই রিপাবলিকের শাসনতন্ত্র রচিত হবার পরে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ও যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনসভা নির্বাচিত হবে, (গ) এই নির্বাচিত বাংলাদেশের আইনসভা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতবর্ষের বাদবাকি অঞ্চলের সম্পর্ক নির্ধারণ করবে, (ঘ) বর্তমানের মুসলিম লিগ মন্ত্রীসভাকে ভেঙে দিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাবিনেট (Interim Cabinet) গঠন করতে হবে, (ঙ) বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিসে বাঙালিদের নিয়োগ করতে হবে এবং তাতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের সমান সমান অংশ থাকবে, এবং (চ) শাসনতন্ত্র রচনার জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ থেকে ৩০ বা ৩১ জন সদস্য নিয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে হবে। যত শীঘ্র সম্ভব এই কমিটি বাংলাদেশের রিপাবলিকের শাসনতন্ত্র রচনা করবে।

শরৎচন্দ্র বসু লিখিত মূল ইংরেজি দলিল Six-point Programme এখানে উদ্ধৃত করা হল :

(1) Bengal to be a socialist republic ; (2) The Bengal Legislature to be elected after the Constitution of the republic is framed, should be elected on the basis of adult franchise and joint electorate ; (3) The Bengal Legislature selected should decide the relations of Bengal with the rest of India; (4) The present Muslim League Ministry should be dissolved and a representative interim cabinet formed without delay; (5) The public services in Bengal should be manned by Bengalis, and Hindus and Muslims should have an equal share in it; and (6) An ad-hoc Constitution-making body consisting of 30 or 31 members should be set up by the Congress and the Muslim League in Bengal. It should frame the Constitution of the republic of Bengal as soon as possible.৬৩

১২ মে শরৎচন্দ্র বসু রচিত এই ছ-দফা প্ল্যান নিয়ে আলোচনা অনেকটা অগ্রসর হয়। ১৩ মে সোহরাওয়ার্দি নয়াদিল্লিতে যান এবং প্রায় তিনদিন থেকে জিন্নাকে ও লিগ হাইকমাণ্ডকে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন।৬৪ ১৪ মে মহাত্মা গান্ধী কলকাতা থেকে পাটনা যাত্রা করেন। সুতরাং ৯ মে থেকে ১৩ মে (১৯৪৭ খ্রি.) সোদপুরে মহাত্মা গান্ধীর অবস্থানকালে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা সুস্পষ্ট হয়।৬৫

মহাত্মা গান্ধী চলে যাবার পরেও নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা চলে। অবশেষে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শরৎচন্দ্র বসুর বাসভবনে নেতৃবৃন্দ মিলিত হয়ে কয়েকটি শর্ত সংবলিত স্বাধীন বঙ্গভূমি গঠনের দলিল রচনা করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত থেকে যাঁরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাঁরা হলেন : মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দি, ফজলুর রহমান (মন্ত্রী), মোহম্মদ আলি (মন্ত্রী), আবুল হাশেম, আবদুল মালেক (এমএলএ) কিরণশঙ্কর রায়, সত্যরঞ্জন বক্সী ও শরৎচন্দ্র বসু। এই দলিলে স্বাক্ষর করেন শরৎচন্দ্র বসু ও আবুল হাশেম। এই সভায় এই দলিল অনুমোদনের জন্য কংগ্রেস ও লিগ সংগঠনের নিকট পেশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়।৬৬

এখানে এই দলিলের শর্তসমূহ উল্লেখ করা হল : (ক) বাংলাদেশ একটি মুক্ত রাষ্ট্র (Free State) হবে। এই মুক্ত রাষ্ট্র ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। (খ) এই মুক্ত বাংলার শাসনতন্ত্রে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার ও যুক্ত নির্বাচন প্রথার মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনসভার নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে। অবশ্য হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা অনুপাতে আসন সংরক্ষণ করা হবে। হিন্দু ও তপশিলি সম্প্রদায়ের হিন্দুদের আসনও জনসংখ্যা অনুপাতে সংরক্ষিত থাকবে অথবা উভয়ের সম্মতি অনুযায়ী ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে। নির্বাচকমন্ডলী এমনভাবে গঠিত হবে যে, একজন নির্বাচনপ্রার্থী যদি তাঁর নিজ সম্প্রদায়ের প্রদত্ত ভোটের বেশিরভাগ পান এবং অন্য সম্প্রদায়ের প্রদত্ত ভোটের শতকরা ২৫ শতাংশ ভাগ পান, তা হলে তাঁকে নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। যদি কোনো প্রার্থী এই শর্ত পূরণ করতে না পারেন তাহলে যে প্রার্থী নিজ সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ ভোট পাবেন, তাঁকে নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। (গ) ব্রিটিশ সরকার কতৃক এই মুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গ্রহণের পরে এবং বাংলাদেশ বিভক্ত হবে না এই ঘোষণার পরে বর্তমান মন্ত্রীসভা ভেঙে দেওয়া হবে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রীসভা গঠন করতে হবে। এই মন্ত্রীসভায় নতুন সমানসংখ্যক মুসলিম ও হিন্দু (তপশিলি সম্প্রদায়ের হিন্দু-সহ) সদস্য থাকবেন। আর মুখ্যমন্ত্রী হবেন একজন মুসলিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন একজন হিন্দু। (ঘ) নতুন শাসনতন্ত্র অনুযায়ী আইনসভা ও মন্ত্রীসভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত হিন্দু (তপশিলি সম্প্রদায়ের হিন্দুসহ) এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের মিলিটারি ও পুলিশসহ সমস্ত চাকরিতে সমান অংশ থাকবে। আর এইসব চাকরিতে বাঙালিদেরই নিয়োগ করা হবে। (ঙ) ৩০ জন সদস্য নিয়ে একটি গণপরিষদ (Constituent Assembly) গঠন করা হবে। তার মধ্যে ১৬ জন মুসলিম ও ১৪ জন হিন্দু হবে। তাঁরা আইনসভার ইউরোপিয়ান সদস্যদের বাদ দিয়ে মুসলিম ও অমুসলিম সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।৬৭

২০ মে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে) শরৎচন্দ্র বসু ও আবুল হাশেম স্বাক্ষরিত, সোহরাওয়ার্দি ও অন্যান্য উপস্থিত নেতৃবৃন্দ সমর্থিত মুক্ত অবিভক্ত বাংলার প্ল্যানের ইংরেজি ভাষায় রচিত পূর্ণ দলিলটি এখানে উদ্ধৃত করা হল :

(1) Bengal will be a free state. The free state of Bengal will decide its relations with the rest of India. (2) The Constitution of the free state of Bengal will provide for elections to the Bengal Legislature on the basis of joint electorate and adult franchise; with reservation of seats proportionate to the population among Hindus and Muslims. The seats as between Hindus and Scheduled Caste Hindus will be distributed among them in proportion to their respective population or in such manner as may be agreed among them. The Constituencies will be multiple Constituencies and the votes will be distributive and not cumulative. A candidate who gets the majority of votes of his own community cast during the elections and 25 per cent of votes of other communities so cast will be declared elected. If no candidate satisfies these conditions, that candidate who gets the largest number of votes of his own community will be elected. (3) On announcement by His Majesty’s Government that the proposal of the free state of Bengal has been accepted and that Bengal will not be partitioned, the present Bengal Ministry will be dissolved and a new interim Ministry brought into being, consisting of an equal number of Muslims and Hindus (including Scheduled Caste Hindus), but excluding the Chief Minister. In this Ministry the Chief Minister will be a Muslim and the Home Minister a Hindu. (4) Pending the final emergence of a Legislature and a Ministry under the new Constitution, the Hindus (including Scheduled Caste Hindus) and the Muslims will have an equal share in the services, including the military and police. The services will be manned by Bengalees. (5) A Constituent Assembly composed of 30 persons, 16 Muslims and 14 Hindus, will be elected by the Muslim and Non-muslim members of the Legislature respectively, excluding the Europeans.৬৮

এই প্ল্যান রচিত হওয়ার সংবাদ প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দেশে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো মহল থেকে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করা হয়, আবার কোনো কোনো মহল পুরোপুরি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। খবরের কাগজেও এই প্রস্তাব নিয়ে নানা আলোচনা চলে।৬৯ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে শরৎচন্দ্র বসু কলকাতা থেকে মহাত্মা গান্ধীর পাটনার ঠিকানায় একটি চিঠিতে ২০ মে-র সিদ্ধান্তের কথা বিশদভাবে লিখে জানান এবং এই ব্যাপারে তাঁর সাহায্য ও পরামর্শ কামনা করেন। এই পত্রে শরৎচন্দ্র বসু এই অভিমতও ব্যক্ত করেন, এই প্ল্যান বাংলার সমস্যা যেমন সমাধান করবে, তেমনি অসমের সমস্যারও সমাধান হবে। আর সারা ভারতে এই প্ল্যান এক সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ২৩ মে (১৯৪৭ খ্রি.) শরৎচন্দ্র বসু লিখিত পত্রখানি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই তাঁর পত্রখানি এখানে উদ্ধৃত করা হল :৭০

May 23, 1947

My Dear Mahatmaji,

Since you left Calcutta I have had several Conferences which were attended by some Muslim League leaders and Kiran and Satya Babu and important developments have taken place. Last Tuesday evening (20th instant), there was a Conference at my house which was attended by Suhrawardy, Fazlur Rahman (Minister), Mohamed Ali (Minister), Abul Hashim, Secretary, Bengal Prov. Muslim League (now on leave), Abdul Malek (member, Bengal Legislative Assembly representing labour), Kiran and Satya Babu. We arrived at a tentative agreement, copy of which is enclosed herewith for your consideration. For purposes of identification it was signed by Abul Hashim and myself in the presence of the others. It will, of course, have to be placed before the Congress and Muslim League Organisations. From the trend of the discussions we had, it seems to me that so far as the Congress and Muslim League Organisations in Bengal are concerned, the tentative agreement will be ratified by them, possibly with some modifications here and there.

I am most anxious to have your reactions and also your help, advice and guidance in giving final shape to the tentative agreement arrived at. I need not repeat what I told you at Sodepur. I still feel that if, with your help, advice and guidance, the two organisations can arrive at a final agreement on the lines of the tentative agreement, we shall solve Bengal’s problems and at the same Assam’s. It may also have a very healthy reaction on the rest of India. If you want me to come to Delhi to discuss matters further with you, I need hardly say that I shall come as soon as I get your message.

Things are moving very rapidly and, speaking for myself, I feel that further discussions with you are most necessary.

I trust your Bihar tour is not putting your health to too great a strain. I am feeling somewhat better.

With pronams,

Yours affectionately,

Sarat Chandra Bose

মহাত্মা গান্ধী পাটনা থেকে ২৪ মে (১৯৪৭ খ্রি.) শরৎচন্দ্র বসুর পত্রের উত্তরে তাঁকে লেখেন, কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে না এমন কোনো শর্ত এই প্ল্যানে নেই। সরকারের প্রতিটি কাজে মন্ত্রীসভার ও আইনসভার দুই-তৃতীয়াংশ হিন্দু সদস্যের সমর্থন থাকতে হবে। একথাও স্বীকার করতে হবে, বাংলার একই সংস্কৃতি এবং একই মাতৃভাষা বাংলা। কেন্দ্রীয় মুসলিম লিগ যাতে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এই প্রস্তাব নিয়ে আমি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করব। মহাত্মা গান্ধীর পত্রখানি এখানে মুদ্রিত করা হল :৭১

Patna

24.5.47

My dear Sarat,

I have your note. There is nothing in the draft stipulating that nothing will be done by mere majority. Every act of Government must carry with it the co-operation of at least two-thirds of the Hindu members in the executive and legislature. There should be an admission that Bengal has common cultural and common mother-tongue—Bengali. Make sure that the Central Muslim League approves of the proposal notwithstanding reports to the contrary. If your presence is necessary in Delhi I shall telephone or telegraph. I propose to discuss the draft with the Working Committee.

Yours,

Sd/- Bapu

কিন্তু মহাত্মা গান্ধী এই বিষয় নিয়ে আর বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি। কেন পারেননি তা আমরা যথাস্থানে আলোচনা করব।

.

৫৪. Statesman 29 April, 1947, p. 5.

৫৫. Ibid, 10 May, 1947, p. 1.

৫৬. Ibid, 11 May, 1947, p. 9; 12 May, 1947, p. 1.

৫৭. Ibid, 13 May 1947, p. 1.

৫৮. Speech by Mahatma Gandhi, in Statesman, Sunday, 11, May 1947, pp. 1, 9.

৫৯. Ibid.

৬০. Ibid.

৬১. Ibid.

৬২. Ibid, See Appendix B.

৬৩. Sarat Chandra Bose’s Six-point Programme, in Statesman, Tuesday, 13 May 1947, p. 1.

৬৪. Statesman, Wednesday, 14 May, 1947, p. 1.

৬৫. Ibid, Thursday, 15 May, 1947, p. l.

৬৬. S C Bose’s Letter to Mahatma Gandhi, in The Nation, Sunday, 30 January, 1949, p. 1.

৬৭. Plan for free, united Bengal, in Statesman, Friday, 23 May. 1947, p. l.; The Nation, 30 January, 1949, p. 1.

৬৮. Ibid.

৬৯. The Nation, 30 January, 1949, p. 8.

৭০. Ibid, p. 1.

৭১. Ibid, p. 8.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *