ধাওয়া – ৭

সাত

রাত ফুরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জনির সেলুনে ভিড় না কমে বরং আরও বাড়ছে। বোধহয় কালকে ব্যাংকের টাকা পৌঁছুবে সেই খুশিতে প্রাণ ভরে গিলছে আজ শহরের লোক। ওদের অনেকেরই শেয়ার আছে ব্যাংকে। ক্লান্ত হয়ে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বার কাউন্টারের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে জনির বউ। ওখান থেকে ড্রিঙ্ক সার্ভ করছে। ঘর ধোঁয়ায় অন্ধকার। ঘাম আর সিগারেট, মদের বিকট গন্ধ আসছে বাতাসে। হঠাৎ ভেতরে ঢুকলে বমি এসে যাবে যে-কারও। অথচ সবাই নির্বিকার চেহারায় পান করছে, অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওদের নাক- অত্যাচার মেনে নিয়েছে।

ভিড়ের মধ্যে নানা ধরনের মানুষ। মাইনার, কাউবয়, ভবঘুরে। জনির বউয়ের চোখ আটকে গেল হালকা পাতলা গড়নের এক বুড়োর ওপর। বিরাট লম্বা নলের একটা বাফেলো গান হাতে এগিয়ে আসছে বুড়ো কাউন্টারের দিকে। দ্রুত পায়ে হেঁটে বুড়োর সামনে পৌঁছে গেল জনির বউ, ভ্রূ কপালে তুলে বলল, ‘আজ হঠাৎ পশ্চিমে সূর্য উঠল নাকি, লিয়ো!’

হাসিমুখে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান দেখাল লিয়ো। বলল, ‘আগের চেয়েও সুন্দরী হয়েছ, বার্থা। আমার বয়স আরেকটু কম হলে কবে তোমাকে নিয়ে ভেগে যেতাম!’

খুশিতে ঝিক করে উঠল বার্থার চোখ জোড়া। লিয়োর দাড়িভরা থুতনিতে হাত বুলিয়ে চিন্তার ভান করে বলল, ‘হঠাৎ যে? লবণ ফুরিয়ে গেছে, না তোমার হুইস্কি নামের বিষ বানানোর মালমশলা শেষ?’

‘হলো না,’ বার্থার কাঁধ চাপড়ে দিল লিয়ো। ‘আমি বোর্ডিঙ হাউসে যাচ্ছিলাম মিলার্ডের সঙ্গে দেখা করতে, পথে সেলুনটা পড়ায় ভাবলাম ঢু মেরে শহরের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে দেখে যাই।’

‘থাক্, থাক্, কিছু প্রশংসা অন্য মেয়েদের জন্যও রাখো,’ হাসল বার্থা। লিয়োনেলের কনুই ধরে টান দিয়ে বলল, ‘এসেছ যখন এক চুমুক না খেয়ে যেতে পারবে না।’

‘এক চুমুকে চলবে না, সুন্দরী, এক গ্লাস হলে আমি রাজি আছি।’

হাসিমুখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে ইশারা করল বার্থা। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে কাউন্টার সামলাচ্ছে জনি। বিশেষ একটা বোতল থেকে ঢেলে গ্লাস ভরা হুইস্কি বাড়িয়ে ধরল সে লিয়োর দিকে। লোকে বিষম খেয়ে মরবে এই ভয়ে ওই বোতলের মদ কাস্টোমারকে দেয়া হয় না।

গ্লাস ঠোঁটে ঠেকিয়ে চোখ বুজে আকাশের দিকে নাক তুলল লিয়ো। ঢোকের সঙ্গে সঙ্গে ছন্দ তুলে নড়তে লাগল তার কণ্ঠা। গ্লাস খালি করে কাউন্টারে ঠক করে নামিয়ে রাখল সে। দেখল স্বাদ কেমন কল্পনা করে বিকৃত মুখে অন্যদিকে চেয়ে আছে জনি।

‘আহ্!’ সশব্দে ঢেকুর তুলল লিয়ো। হাতের তালুতে ঠোঁট মুছে বলল, ‘আছে ভালই, তবে আমার হুইস্কির ধারে কাছে লাগে না এই জিনিস। ধক অনেক কম, মন চাঙা হয়ে ওঠে না।’

বারের আরেক প্রান্ত থেকে রক্তলাল চোখে জিঘাংসা নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ডারবি। এখনও বিরতিহীনভাবে মদ গিলছে সে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রাগ, সুন্দরী মালটাকে বুড়ো বাগিয়ে নিল নাকি! ওকে বাদ দিয়ে বুড়োর সঙ্গে অত ঢলাঢলি কীসের!

‘শালার বুড়ো খচ্চর!’ টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল ডারবি।

মাতাল সঙ্গী বাধা দেয়ার বদলে ওর রাগ উস্কে দেয়ার জন্য বলল, ‘বুড়োর আছে তেমন কিছু একটা বোধহয় তোমার নেই ভেবেছে ওই সুন্দরী, নাহলে তোমাকে পাত্তা দিল না কেন!’

‘দেখিয়ে দেব আমার কতটা কী আছে,’ জড়ানো কণ্ঠে বলে এগোল ডারবি ভীড় ঠেলে। শেষ মুহূর্তে ওকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো মাতাল আউট- ল। ডারবির জ্যাকেট আঁকড়ে ধরতে পারেনি সে। ঘোড়ার মত লম্বা চেহারায় সতর্কতা আর ভয় ফুটে উঠল তার। কোনও গোলমাল হলে ওকেও ছাড়বে না লোকো।

‘কাস্টোমারের সঙ্গে বলে খাও না?’ বার্থার কনুই ধরে টান মেরে জানতে চাইল ডারবি।

‘হ্যাঁ, খাই না।’ বরফ শীতল কণ্ঠে বলল বার্থা।

‘তা হলে এই বুড়ো শকুনের সঙ্গে এত খাতির কী জন্য?’

‘আমি বুড়ো শকুন হলে তুমি হচ্ছ নর্দমার গা ঘিন ঘিন করা কেঁচো,’ মুঠি করা হাত নাচিয়ে রাগে চেঁচাল লিয়োনেল।

বাফেলো গান কাউন্টারে ঠেস দিয়ে রেখে এক পা এগুতেই লিয়োর বুকে হাত দিয়ে বাধা দিল বার্থা। বলল, ‘লিয়ো আমার অনেক পুরানো বন্ধু বলেই গল্প করছি। তোমার তাতে কোনও অসুবিধা আছে, স্ট্রেঞ্জার?’

‘না,’ নোঙরা দাঁতগুলো বের করে হাসল ডারবি। ‘কোনও অসুবিধা নেই, তবে আমার মনে পড়ছে যে আমিও তোমার পুরানো বন্ধু।’ হাসি মিলিয়ে গেল তার ঠোঁট থেকে, হেঁচকা টানে বার্থাকে বুকের ওপর নিয়ে এল সে। ঠোঁটে চেপে বসল ঠোঁট। জনি লোকটা মেরুদণ্ডহীন, অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে না দেখার ভান করছে সে।

রাগে ছোটখাটো একটা গর্জন ছাড়ল লিয়ো। দু’পা এগিয়ে এসে প্রচণ্ড জোরে মুচড়ে ধরল আউট-লর হাত। চাপ বাড়াতেই ককিয়ে উঠল মাতাল লোকটা। বার্থাকে ছেড়ে দিল, ব্যথায় পাগল হয়ে গেছে। নিজেকে মুক্ত করার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করল। না পেরে মুক্ত হাতে ঘুসি মারল লিয়োর মুখ লক্ষ্য করে।

তৈরি হয়েই ছিল, ঘুসিটা আসতে দেখে মাথা সরিয়ে নিল লিয়ো। গায়ের জোরে ডানহাতি ঘুসি মারল সে ডারবিকে ছেড়ে দিয়ে। নীরব হয়ে গেছে সেলুনের লোকগুলো, লিয়োর মুঠির সঙ্গে আউট-লয়ের চোয়ালের হাড় ঠোকাঠুকি হলো। সংঘর্ষের শব্দ নিঃশব্দ পরিবেশে বিকট শোনাল। ঘটনা কী ঘটছে জানে না এমন যে কেউ শুনলে মনে করবে যে কাঠের কোনও আসবাবপত্র ভেঙেছে।

উড়ে গিয়ে চিত হয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়ল ডারবি। প্রচণ্ড আঘাতে কেঁপে উঠল পুরো বিল্ডিঙ। সেলুনে পিন পতন নীরবতা। সবাই মাটিতে পড়ে থাকা আউট-ল আর প্রস্তুত লিয়োকে দেখছে বিস্ফারিত চোখে। কেউ এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে বুড়ো কোনও লোকের গায়ে এত জোর থাকতে পারে। লিয়োর অবশ্য ধারণা মাত্র মধ্য যৌবনে পা দিয়েছে সে, পিটিয়ে দু’চারজনের হাড় এখনও গুঁড়ো করে দিতে পারবে। ওর ধারণা মিথ্যে নয় তা দেখা যাচ্ছে চিতপাত আউট-লর অবস্থা থেকে।

সবার অজান্তে মার্শালকে ডাকতে বেরিয়ে গেছে জনি। ওর বউ এতক্ষণে খেয়াল করল ব্যাপারটা।

ডারবিকে নড়তে দেখে ফিসফিস করে কথা বলে উঠল সেলুনে স্থাণুর মত দাঁড়ানো লোকগুলো। এর পরের ঘটনা কী হতে পারে সে-ব্যাপারে বাজি ধরছে জুয়াড়ীরা। কাঁচের শরীর, অসাবধানে নড়লে ভেঙে যাবে, এমন ভঙ্গিতে উঠে বসল আউট-ল। রক্তলাল চোখের ঘৃণা ঝরা দৃষ্টিতে লিয়োকে দেখল। ফুলে যাওয়া চোয়ালে হাত বুলিয়ে দাঁতের ফাঁকে বলল, ‘ভুল করলে, বুড়ো শকুন। জীবনে আর কোনও ভুল করার সুযোগ পাবে না তুমি।’

বসে থেকেই মাথা ঝাঁকাল সে, যেন আচ্ছন্নতা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। পরক্ষণেই তার হাত সাপের মত ছোবল মারল হোলস্টারে। কিন্তু লিয়ো অনেক বেশি দ্রুত, তাছাড়া তৈরি ছিল। কাউন্টারে ঠেস দিয়ে রাখা বাফেলো গান তুলে নিয়ে আউট-লর কব্জিতে নামিয়ে আনল সে গায়ের জোরে।

আর্তনাদ করে অন্য হাতে কব্জি চেপে ধরল ডারবি, পিস্তল ছিটকে মেঝেতে পড়ে পিছলে সরে গেল আওতার বাইরে। বেশি গালাগালি করছে দেখে আউট- লর বুকে অস্ত্রের নল ঠেকিয়ে ধমক দিল লিয়ো। বলল, ‘বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে তুমি হয়তো শিখে যাবে মহিলাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়। অবশ্য আমার মনে হয় না অতদিন তুমি বাঁচবে। ছেড়ে দিচ্ছি এবারের মত, এরপর বড়দের সঙ্গে আর লাগতে এসো না।’

বার্থার দিকে তাকিয়ে হাসল লিয়ো, ড্রিঙ্কের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এল সেলুন থেকে। বুড়ো ঘোড়াটাকে দরজার পাশেই বেঁধেছে সে। বাঁধন খুলে একবার চড়তে গিয়েও কী মনে করে মত পাল্টাল। স্যাডল বুটে বাফেলো গান গুঁজে ঘোড়ার দড়ি ধরে হাঁটতে শুরু করল। অনেক ঘুরেছে, আর সময় নষ্ট না করে এবার মিলার্ডের সঙ্গে দেখা করা উচিত।

সেলুনের ভেতরে আবার স্বাভাবিক হট্টগোল শুরু হয়েছে লিয়ো চলে যাওয়ায়। ডারবি উঠে দাঁড়াতেই তার সঙ্গী দ্রুত পায়ে এসে পাশে দাঁড়াল। নিচু গলায় বলল, ‘চলো, ডার্ব, চলে যাই এখান থেকে। কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত কোনও ঝামেলায় যেতে লোকোর মানা আছে। যা হওয়ার হয়েছে, ভুলে যাও।’

‘অসম্ভব!’ মাথা ঝাঁকিয়ে ঘড়ঘড়ে গলায় প্রতিবাদ করল ডারবি। টান দিয়ে সঙ্গীর হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করে নিয়ে উন্মত্তের মত ছুটল সেলুনের দরজা লক্ষ্য করে।

দশ-পনেরো পা এগিয়েছে এসময় সেলুনের ব্যাটউইঙ সজোরে খুলে বন্ধ হবার আওয়াজ পেল লিয়ো। এত তাড়া কার দেখার জন্য ঘুরে দাঁড়াল। উদ্যত পিস্তল হাতে আউট-লকে দেখেই বুঝতে পারল কী ঘটতে যাচ্ছে। টান মেরে স্যাডল বুট থেকে বাফেলো গান খসিয়ে আনল সে, সময় পেল না তুলে ধরে তাক করার। গর্জে উঠল ডারবির পিস্তল। বুকে গরম লোহার শিক ঢুকেছে বলে মনে হলো লিয়োর। পড়ে গেল মাটিতে, কিন্তু কোনও ব্যথা পেল না। মারা গেছে আগেই।

দৌড়ে সেলুন থেকে বেরিয়ে এল বার্থা আর কয়েকজন লোক। লিয়োকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে ফুঁপিয়ে উঠে ছুটে গেল বার্থা। ধুলোতে হাঁটু মুড়ে বসে লিয়োর মাথা কোলে তুলে নিল। গলায় হাত রেখে দেখল পালস নেই। চোখ দুটো ভিজে গেল, টপ টপ করে অশ্রুর ফোঁটা পড়তে লাগল মৃত লিয়োর খোলা চোখে।

‘আমার কিছু করার ছিল না, ও অস্ত্র তাক করেছিল,’ বোর্ডওয়াকে দাঁড়িয়ে জড় হওয়া লোকগুলোর ওপর চোখ বোলাল আধমাতাল ডারবি। পিস্তল এখনও হোলস্টারে ঢোকায়নি সে, প্রয়োজনে ব্যবহার করবে নির্দ্বিধায়।

‘তুমি ওকে খুন করেছ! জীবনে কোনদিন কারও ক্ষতি করেনি যে মানুষটা তাকে তুমি খুন করেছ।’ কান্নার দমকে পিঠ ফুলে ফুলে উঠছে বার্থার, কোলের ওপর লিয়োর মাথাটা একটু একটু নড়ে যেন সায় দিচ্ছে ওর কথায়। বাফেলো গান হাত দু’এক দূরে পড়ে আছে, লিয়োর মাথা কোল থেকে নামিয়ে হঠাৎ ওটার ওপর ঝাঁপ দিয়ে পড়ল বার্থা। অস্ত্র তুলে নিয়ে হ্যামার উঠিয়ে তাক করল আউট-লর দিকে। চোখের পলকে হুড়োহুড়ি করে ডারবির কাছ থেকে সরে গেল’ ভিড় করে দাঁড়ানো লোকগুলো। ওরা জানে ওই জিনিসের কার্তুজকে গুলি না বলে গোলা বলা উচিত, গায়ে লাগলে বাঁচার আশা নেই।

‘বার্থা, অস্ত্র নামাও,’ পেছন থেকে একসঙ্গে কথা বলে উঠল জনি আর মার্শাল উইলকার। এইমাত্র এসে পৌঁছেছে ওরা, পেছন পেছন এসেছে উৎসাহী কয়েকজন লোক। সবাই জানে প্রাক্তন মার্শালের বন্ধু ছিল লিয়ো, একজন ছুটল মিলার্ডকে খবর জানাতে। মাঝপথে গিয়ে তার মনে হলো মিলার্ড কোথায় আছে কে জানে, খামোকা কষ্ট করার দরকার নেই। বাড়ি ফিরে গেল সে।

‘ওই লোক লিয়োকে খুন করেছে,’ ফুঁপিয়ে উঠল বার্থা।

‘আমি জানি, বার্থা,’ কণ্ঠস্বরে শান্ত একটা ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করল উইলকার। আউট-লয়ের ওপর পিস্তল স্থির রেখে আরেক হাত বাড়াল সে বাফেলো গানের দিকে। ‘আমার হাতে অস্ত্রটা দিয়ে দাও, বার্থা।’

মার্শালের চোখে এক মুহূর্তের জন্য চোখ রাখল বার্থা, তারপর বাফেলো গান কাঁধে তুলে ট্রিগার টেনে দিল। ভয়ঙ্কর শব্দে গর্জে উঠল প্রাচীন অস্ত্র, কিন্তু লক্ষ্য ভেদ করতে পারল না। ভীষণ ধাক্কায় মাটিতে পড়ে গেছে বার্থা, হাত কেঁপে যাওয়ায় ওর ইচ্ছে পূরণ হলো না। আউট-ল যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ফুট তিনেক দূরে একটা কাঠের খুঁটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল প্রচণ্ড শক্তিশালী বুলেটে। চুনের মত সাদা চেহারায় জায়গাটা দেখল ডারবি, নড়তে ভুলে গেছে আতঙ্কে।

বার্থার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিল জনি, মার্শাল ডারবির উদ্দেশে বলল, ‘তোমারটাও জমা দিতে হবে।’

কিছুটা সামলে উঠেছে ডারবি, শীতল চোখে উইলকারকে মাপল সে। মার্শালের পোশাক আশাক, অস্ত্র ধরার কায়দা আর জোরে কথা বলার চেষ্টা— সবকিছুতে অনভিজ্ঞতা। ভয় লুকাচ্ছে লোকটা, পারছে না কিন্তু ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

‘আমি পিস্তল জমা দেব না, মার্শাল,’ বাঁকা হাসি ফুটে উঠল ডারবির ঠোঁটে। ‘যদি তোমার ইচ্ছা থাকে তা হলে গুলি করো, আমি মারা না গেলে পিস্তল দেব না।’

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শীতের মধ্যেও ঘেমে গেল উইলকার। পিঠ বেয়ে নামছে ঘামের ঠাণ্ডা ধারা। জীবনে এই প্রথম মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে সে। এই প্যাচ থেকে ছাড়া পাবার আর কোনও পথ নেই। এখন পিছিয়ে গেলে সবার চোখে ছোট হতে হবে তাকে, মার্শালের লোভনীয় চাকরি চলে যাবে, এই সমাজে মুখ দেখানো যাবে না। মনস্থির করে ফেলল উইলকার। হাঁটু ভয়ে কাঁপছে কাঁপুক, ডুয়েল ওকে লড়তেই হবে।

মার্শালের ভীত চেহারা লক্ষ করে হাসল ডারবি, টের পেল না নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ওর বস্- লোকো। পিস্তল বের করে নির্দেশ অমান্য করা স্যাঙাতের মাথায় নামিয়ে আনল সে। ডারবি বুঝতেও পারল না কীসের বাড়িতে জগৎ অন্ধকার হয়ে গেছে। হাসিমুখে ডারবির পিস্তলটা তুলে মার্শালের দিকে বাড়িয়ে ধরল লোকো।

উইলকার টের পেল এতক্ষণ দম বন্ধ করে রেখেছিল সে। বড় করে শ্বাস ফেলে ডারবির পিস্তল বেল্টে গুঁজল সে। লোকোর দিকে তাকিয়ে স্বস্তির হাসি হেসে বলল, ‘ধন্যবাদ, স্ট্রেঞ্জার। তুমি না ঠেকালে একটা জীবন ঝরে যেত।’

কিছুই করেনি এমন ভঙ্গিতে হেসে হাত ঝাপটাল লোকো। ‘তুমি বললে অজ্ঞান লোকটাকে জেলখানা পর্যন্ত নেয়ার ব্যাপারেও সাহায্য করতে পারি। আমি আবার সব সময় আইনের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করি। আজ কী সৌভাগ্য যে তোমার মত একজন কড়া মার্শালকে সাহায্য করতে পেরেছি!’

লোকো ঠাট্টা করছে বুঝতে পারল না উইলকার, মাথা নেড়ে তার কথায় সায় দিল। মনে মনে ভাবল, ‘আমি আসলেও বোধহয় দারুণ একজন মার্শাল। না হলে লোকটা অত দরদ দিয়ে বলছে তো আর খামোকা নয়!’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *