দরিয়া-ই-নুর – ১৪

অধ্যায় ১৪

রুফটপ রেস্টুরেন্ট থেকে পাভেলকে গ্রেফতার করার পর তার অফিস থেকে উদ্ধার করা হয় দশ কোটি টাকার দুটো লাগেজ।

ডিবি অফিসে তাকে নিয়ে যাবার আগেই সে সব কিছু স্বীকার করে। বিখ্যাত হীরা দরিয়া-ই-নুর সরকারী ব্যাঙ্ক থেকে সরিয়েছে তার বন্ধু মির্জা আশেক। এই দশ কোটি টাকার বিনিময়ে সে হীরাটা বিক্রি করে দিয়েছে এক বায়ারের কাছে।

“যা বলছি সব সত্যি…একফোটাও মিথ্যা নাই! আশেকরে ধরলেই সব ক্লিয়ার হইয়া যাইবো।”

এ কথা শুনে ডিবির ইন্সপেক্টর মিটিমিটি হাসতে থাকে। “কিন্তু আমাদের কাছে খবর আছে, আপনি জাল টাকার ব্যবসা করেন।”

“জাল ট্যাকা!” ভুরু কুঁচকে গেছিল তার। “কী কন, স্যার!” এরপর ডিবির লোকজন টাকাগুলো পরীক্ষা করে দেখে, সবগুলোই জাল। হতভম্ব হয়ে পড়ে পাভেল। তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে আবারো জেরা করা হয়, কিন্তু বার বার একই কথা বলতে থাকে সে।

“আপনার প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এইসব নকল টাকা ছাপানোর একটি প্রিন্টারসহ আরো কিছু সরঞ্জাম।”

এ কথার কোনো জবাব দিতে পারেনি সে।

পর দিন তাকে কোর্টে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় ডিবি। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ততক্ষণে এই গ্রেফতারের খবর প্রায় সব পত্র-পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার হয়ে গেছে। পত্রিকায় আর টিভি নিউজে হাতকড়া পরিহিত পাভেল, দশ কোটি জাল টাকা আর নকল টাকা বানানোর সরঞ্জাম দেখানো হয়। থানা কমিটির সামান্য একজন নেতা থেকে কী করে এত বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছে সে প্রশ্ন তোলা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, কন্ট্রাক্টরি ব্যবসার আড়ালে জাল টাকার ব্যবসাই ছিল তার প্রধান আয়ের উৎস। তার ফ্ল্যাটে রেইড দিয়ে পুলিশ নগদ কয়েক কোটি টাকাও পেয়েছে—ওগুলো অবশ্য জাল নয়।

সংবাদে আরো জানানো হয়, তার আছে একটি রুফটপ রেস্টুরেন্ট, ঢাকায় তিন-চারটা ফ্ল্যাট আর একাধিক গাড়ি।

একদফা রিমান্ড শেষে আক্ষেপে মাথা দোলায় ডিবির ইন্সপেক্টর। “কী সব আশেক-ফাসেকের গল্প বলছেন! দরিয়া-ই- নুর…একজন বায়ার…জিম্মি নাটক! ডিম থেরাপির আগে মনে হয় না সত্যি কথা বলবেন।”

“বিশ্বাস করেন, আশেকরে ধরলেই সব বুঝবার পারবেন, ওয় সব নাটক সাজাইছে!”

“ওই লোক কেন এটা করবে আপনার সঙ্গে?”

এ প্রশ্নের জবাবে মাথা নীচু করে রাখে পাভেল।

ডিবি পুলিশ ততক্ষণে আশেকের খোঁজ নিয়ে ফেলেছে। তারা যা জানতে পেরেছে সেটা আরো বেশি বিস্ময়কর।

“আপনি কোন আশেকের কথা বলছেন?”

“ঐ যে, আ-আমার বন্ধু…প-পরীবাগের আশেক…” সামান্য তোতলায় পাভেল।

মুচকি হাসে ডিবি অফিসার। “যে আশেকের কথা বলছেন, সে তো জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে আজ সকালে! জেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই আমরা কনফার্ম হয়েছি।”

এ কথা শোনার পর পাভেল পুরোপুরি নির্বাক হয়ে যায়। আশেক কীভাবে কী করেছে বুঝতে পারে না, মাথায়ও ঢোকে না।

“আপনি আশেকের যে ফোন নাম্বারের কথা বলেছেন, সেটা আপনার এনআইডি কার্ড দিয়ে আপনার নামেই রেজিস্ট্রেশন করা।

বাঁকা হাসি ফুটে উঠেছিল পাভেলের ঠোঁটে। আশেকের চালাকিটা শুরু থেকেই ধরতে পারেনি। তাকে বিরাট বড় বিপদে ফেলে দিয়েছে সে। কিন্তু শেষ করে দিতে পারেনি! সে নিশ্চিত, কয়েক মাসের মধ্যেই সব সামলে উঠবে। জাঁদরেল এক ব্যারিস্টার ধরে জামিনে বেরিয়ে আসবে। মামলাটা চলবে দশ- পনেরো বছর ধরে, কিন্তু ততদিনে মির্জা আশেকের কঙ্কালও কেউ খুঁজে পাবে না!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *