দরিয়া-ই-নুর – ১৩

অধ্যায় ১৩

মির্জা আশেকের আর্তনাদটা বেশ জোরেই শোনা যাচ্ছে ফোনের ওপাশ থেকে।

“বায়ার আমার লগে বেঈমানি করছে! আমি ট্র্যাপে পইড়া গেছি, পাভেল!”

“হইছে কী?” শান্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো। ঘটনা কী, বুঝতে পারছে না সে।

“আমারে আটকায়া ফালাইছে! বুঝবার পারি নাই এইরকম করবো…” আশেকের কণ্ঠটা ধরে এলো। “ট্যাকাগুলা ওগোরে না দিয়া দিলে আমারে জানে মাইরা ফালাইবো, দোস্ত!”

পাভেল কিছু বলার আগেই আরেকটা কণ্ঠ বলে উঠল ফোনে। সেই কণ্ঠটা যেমন শীতল তেমনি কঠোর। সম্ভবত এটাই সেই বায়ার।

“বন্ধুকে জীবিত দেখতে চাইলে টাকাগুলো আমার লোকজনকে দিয়ে দেবে। তোমার লোকজন যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে তাহলে আশেক শেষ!”

পাভেল এবার বুঝতে পারছে, বায়ার কেন তার অফিসে আসেনি। বেঈমানি করবে বলে আগেই ঠিক করে রেখেছিল, উপরে এসে নিজের চেহারাটা তাই দেখায়নি।

“দোস্ত!” ফোনে আবারো আশেকের কণ্ঠ শোনা গেল। “ট্যাকাগুলা ওগোরে না দিলে আমারে জানে মাইরা ফালাইবো!”

গভীর করে শ্বাস নিয়ে নিলো পাভেল। মির্জা আশেক আবারো ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু এবারের ভুলের মাশুল জেলে গিয়ে নয়, প্রাণ খুইয়ে দিতে হবে তাকে।

“সিচুয়েশনটা বুঝবার চেষ্টা করো, আশেক,” বলল পাভেল। “ট্যাকাগুলা দিলেও ওরা তোমারে মাইরা ফালাইবো!”

এ কথা শুনে ফোনের ওপাশে কয়েক মুহূর্তের জন্য নীরবতা নেমে এলো।

“সিচুয়েশনটা এক্কেবারে দুদুর মতোন, না?” অবশেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল মির্জা আশেক। তার কণ্ঠ যেমন শান্ত তেমনি নিরুদ্বেগ।

ভুরু কুঁচকে গেল পাভেলের, যেন বজ্রাহত হয়েছে এইমাত্র। “কী বললা!

“দুদু ট্যাকাগুলান দিলেও মরতো, না দিলেও মরতো!”

পাভেলের চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল। এমন সময় একটা শোরগোল শুনতে পেয়ে অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকালো সে।

বাইরে থেকে আসছে সেটা। কাচের দরজাটা নিচ থেকে বুক পর্যন্ত ঘোলাটে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজাটার উপরের অংশ দিয়ে দেখলো ডিবির ভেস্ট পরা কয়েকজন এগিয়ে আসছে তার অফিসের দিকে!

“তুই আমারে ট্র্যাপে ফালাইছোস!” দাঁতে দাঁত পিষে বলল সে। “মনে রাখিস, এই কাজে তুই-ও আছিলি!”

পাভেলের অফিসের দরজা খুলে ঢুকে পড়লো ডিবি’র লোকগুলো।

ফোনের ওপাশ থেকে আশেক কিছুই বলল না আর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *