নবম অধ্যায়
“সে তো পুরনো কেস, নয় নয় করে বছর দশেক আগের, তা নিয়ে এখন মাথা ব্যথা কীসের?”
“একটা ছোট লিড দেখতে পাচ্ছি। মনে হয় কিছু লিঙ্ক আপ পেয়ে যাব।”“ “কী থেকে বলছ?”
“মানে প্যাটার্নটা দেখে মনে হচ্ছে।”
“মার্ডার?”
“না। প্রিজিউমড সুইসাইড। তবে আপনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলে বুঝতেন ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।”
একটা লম্বা শ্বাস নিলেন ও.সি. বিশ্বরূপ ঠাকুর। তারপর একটা ছোট চিঠি – সামনে ফেলে দিয়ে বললেন, “বেশ, গো এহেড। তবে দশ বছর আগের• কেস তো, যারা আই উইটনেস ছিল তারা কতটা মনে রাখতে পেরেছে সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট ডাউট আছে।”
“আমারও তেমন আশা নেই। তবে লোকটার বাড়িতে একবার ঢুঁ মারাটাই বড় কথা। সেই সঙ্গে অফিসের ক’জন কর্মচারীকে যদি নাগালে পাওয়া যায়।” আর কিছু না বলে চায়ে চুমুক দিলেন ঠাকুর। তারপর সামনে রাখা কম্পিউটারের উপরে ঝুঁকে পড়ে কিছু দেখতে লাগলেন।
হাতের ফাইলটা খুলে পাতা ওলটালো মুকেশ খাসনবীশ। তারপর মুখ তুলে বলল, “এই দোকানটা কি এখনও আছে?”
“হ্যাঁ। পার্টনারশিপ ব্যাবসা ছিল। ভদ্রলোক মারা যাবার পরে তার পার্টনার একাই হাল ধরে।”
“আর বাড়িটা কোথায়? “
“সে সময়ে বাড়ি একটা ছিল বটে, তবে ভদ্রলোক মারা যাবার পরে স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি বেচে দিয়ে কিছুদিনের জন্যে বাপের বাড়ি চলে যায়। মহিলা নাকি পুলিশের উপরে বেজায় খাপ্পা। তারা এখন কোথায় আছে না আছে জানাতে আমার বিকেল কাবার হয়ে যাবে।”
“তাই সই। সেরকম হলে আজকের দিনটা এখানে কাটিয়ে কাল ফিরব। আপনি দোকানের অ্যাড্রেসটা দিন।”
হোটেলের ঘরে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে দুপুর গড়াবার আগেই বেরিয়ে পড়ল খাসনবীশ। বড়বাজার তার মোটামুটি চেনা। না চিনলেও দোকানের নাম দেখে চিনে নেওয়া ঝামেলার কিছু হবে না। তবে মুশকিলটা হল তখনকার কর্মচারীদের ক’জনকে এখানে পাওয়া যাবে সেটা বলা মুশকিল। অন্তত ঘটনার সময় যারা উপস্থিত ছিল তাদের দু-একজনকে পাওয়া গেলেও ঢের।
সিভিলিয়ান ড্রেসেই ট্যাক্সি করে দোকানটার সামনে চলে এল মুকেশ। ট্যাক্সিওয়ালাকে দোকানের নাম বলতেই নিয়ে এল সে।
দোকানটা যতটা ভেবেছিল এখন তার থেকে বেশ খানিকটা বড় হয়েছে। মূলত মশলাপাতির দোকান। মাঝ দুপুর বলে লোকজনের ভিড় অন্য সময়ের তুলনায় খানিকটা কম। মুকেশ ভিতরে ঢুকে এল। গদিতে চড়াও হয়ে বসে থাকা মুশকো লোকটাকে পরিচয় দিতেই সে খানিক নড়েচড়ে বসল। ইনকাম ট্যাক্সের লোক ভেবে বিষম খেয়েছিল আর কি। শেষে মুকেশ অন্য কাজে এসেছে জেনে খানিক শান্ত হল। বিনয়ে গলে পড়ে বলল, “আপনার জন্যে কী করতে পারি স্যার? চা খাবেন?”
“কিছু খাব-টাব না। কয়েকটা প্রশ্ন আছে, তাড়াতাড়ি উত্তর দিন, আমি কেটে পড়ি।”
“বলুন না।”
“আপনিই মৃগাঙ্ক অধিকারী?”
লোকটা উপর নিচে মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, দোকানটা আমারই।”
“সে তো এখন, আগে পার্টনারশিপ ছিল, তাই না?”
“হ্যাঁ স্যার।” অধিকারী সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেন।
“শশিভূষণ সরকার ছিল আপনার পার্টনার, তাই তো?”
এবার মাথা নাড়লেন মৃগাঙ্কবাবু। উদাস গলায় বললেন, “আপনি বুঝি সেই কেসের জন্যেই আজ…”
“আঃ, যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন শুধু। সেই ভদ্রলোক যেদিন আত্মহত্যা করেন সেদিন আপনি কোথায় ছিলেন?”
“আমার বাড়িতে। আমাদের ব্যবসা তখন খানিকটা ঝিমিয়ে চলছে। দোকানটা ভালো করে দাঁড় করাতে পারি না। লসও হত খানিকটা। ফলে কর্মচারী ছিল না বেশি। রাতে দোকান খালি রেখে যেতে ভয় করত। ফলে একদিন আমি আর একদিন শশি রাতটা দোকানেই থেকে যেতাম।”
“আগের দিন রাতে দোকান ক’টা অবধি খোলা ছিল?”
“প্রায় দশটা। এখন অবশ্য ন’টায় বন্ধ হয়ে যায়।”
সেদিন মিস্টার সরকারকে দেখে আপনার আলাদা করে কিছু মনে হয়েছিল? মানে কোনো কারণে মন খারাপ বা ডিপ্রেসড লাগছে এই ধরনের কিছু?”
এইবার একটু ভেবে জবাব দিলেন মৃগাঙ্কবাবু, “আজ্ঞে না। বললুম যে ব্যবসাটা ভালো চলছিল না সেই সময়ে। তবে এমন কিছু ক্ষতিও হচ্ছিল না। মানে সুইসাইড করার মতো তো একেবারেই না। তবে বাড়িতে যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমার জানার কথা নয়।”
চেয়ারে বসা অবস্থাতেই একটু পিছিয়ে এল মুকেশ। এ লোকটার থেকে আর তেমন কিছু জানা যাবে না। তবে হাবভাব দেখে কিছু গোপন করতে চাইছে বলেও তো মনে হচ্ছে না। এখানে আসার আগে ভেবেছিল এর কাছ থেকে আত্মহত্যার কিছু মোটিভ পাওয়া যাবে। অথচ না, লোকটার যেন একদিন রাতে হঠাৎ খেয়াল হল আর টুক করে সিলিঙে ঝুলে পড়ল।
“আচ্ছা, আপনাদের শাটার নামিয়ে যদি তালা দেওয়া থাকে তাহলে বাইরে থেকে কোনো লোকের পক্ষে কি ভিতরে ঢোকা সম্ভব?”
একটু হাসলেন মৃগাঙ্কবাবু, “এখন সম্ভব নয়। কিন্তু তখন সেটা করা যেত। তবে ভিতর বলতে আপনি কী বোঝাতে চাইছেন তার উপর নির্ভর করছে। একটু আসুন এদিকে, বুঝিয়ে দিচ্ছি।”
গদি থেকে উঠে মুকেশকে নিয়ে একটু বাইরের দিকে এলেন মৃগাঙ্কবাবু। একটু দূরেই দোকানের বড়সড় শাটারটা। বাইরে থেকে কেউ দোকানে ঢুকতে চাইলে আগে তাকে শাটার পেরোতে হবে। তারপর একটা এক মিটারের বর্গক্ষেত্রের ফাঁকা জায়গা। এখন সেখানে কয়েকটা ডালের বস্তা আর দাঁড়িপাল্লা রাখা আছে। বোঝা যায় এ জায়গাটা দোকানে ডিসপ্লে আর ওজন মাপার আউটলেট। সেটাও পেরিয়ে এলে দোকানের ভিতরে একটা কাঠের পড়সড় দরজা। সেটা ভিতর থেকে ছিটকানি লাগিয়ে দেওয়া যায়।
দাঁড়িপাল্লা রাখা জায়গাটার উপরের দিকটা দেখিয়ে মৃগাঙ্কবাবু বললেন, “উপরটা এখন ছাদ দেখছেন। ওটা তখন ঢালাই করা ছিল না। ফলে খানিকটা ফাঁক হয়ে থাকত। এখন কারও যদি ভিতরে ঢোকার ইচ্ছা হয় তাহলে পাশের দোকানের বাইরের পাঁচিলের উপরে উঠে ওখান থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়তে পারে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না।”
“কেন?”
“কারণ এই কাঠের দরজাটা। এটা প্রতি রাতে ভিতর থেকে লোহার ছিটকানি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাফিয়ে কেউ যদি ওপাশে নামেও, এ দরজাটা না খুলে সে ভিতরে যেতে পারবে না। বড়োজোর একটা দাঁড়িপাল্লা আর একটা পাপোষ চুরি করতে পারবে।”
“সে রাতে এই কাঠের দরজাটা বন্ধ ছিল আপনি সিওর?”
“কোনো সন্দেহ নেই। এমনকি সকালে যারা দেহ উদ্ধার করে তাদের শাটারের তালা খুলে কাঠের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে হয়।”
“কাঠের দরজা দোকান খোলার পর থেকে সারাদিন খোলা থাকে, শুধু রাতে বন্ধ হয়, তাই তো?”
“হ্যাঁ স্যার। দিনে ওর সামনেটায় দাম লেখা বোর্ড আর বস্তা রাখা থাকে। চাইলেও বন্ধ করা যাবে না।”
“হুম…” দরজাটা দেখতে দেখতে ভিতরে ঢুকে আসে মুকেশ, তারপর বলে, “যারা বডি উদ্ধার করেছিল তাদের মধ্যে কাউকে এখন পাওয়া যাবে?”
মাথা নাড়েন মৃগাঙ্ক অধিকারী, “কেন পাওয়া যাবে না। পাশের দোকানের কয়েকজন ছিল। তবে বেশিরভাগই আমাদের দোকানের কর্মচারী। তারা – এখনও আছে। শশির নিজের দেখাশোনায় নিয়োগ করা লোক। আমি আর ছাঁটতে চাই না।”
“বেশ। তাদের কাউকে ডেকে দিন।”
গদির উলটোদিকের চেয়ারে বসে মন দিয়ে ভাবতে থাকে মুকেশ। মিলছে না, কিছুতেই উত্তর মিলছে না। যদি চেনা কারও গলা পেয়ে শশিভূষণ দরজা খুলে দেয় তাহলে খুন করার পর আগন্তুক দরজা আটকালো কী করে? ভিতরে তো তখন শশিভূষণের ঝুলন্ত শরীর ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাছাড়া চেনা কেউ দোকান বন্ধ হয়ে যাবার পর ছাদ টপকে দোকানে ঢুকছে দেখে সন্দেহ হল না শশিভূষণের? স্ট্রেঞ্জ!
একটু পরে একটা মাঝবয়সী লোক এসে দাঁড়াল মুকেশের সামনে। লোকটাকে দেখে বোঝা যায় সে সারাদিনই মশলাপাতি নিয়ে থাকে। সাদা স্ট্রাইপ শার্টের বেশ কিছু জায়গায় লাল হলুদের ছোপ। তবে মাথার চুল বেশ পরিপাটি করে আঁচড়ানো।
লোকটা মুকেশকে নমস্কার করে বসে পড়ল তার সামনে। মুকেশ দুটো হাত জড়ো করে নমস্কার করে বলল, “আপনার নাম? “
“সুধাংশু রায়।”
“শশিভূষণবাবুর দেহ আপনিই উদ্ধার করেন?”
“শুধু আমি না। অনেক লোকই তো ছিল।”
পকেট থেকে একটা টেপ রেকর্ডার বের করে রেকর্ডিংয়ের বাটানটা অন করে দেয় মুকেশ। তারপর একটু পিছনে সরে আসে, “সেদিনের ঘটনা যাঁ মনে আছে একটু বলুন তো, একেবারে আগের দিনের রাত থেকে। আমি থামাব না আপনাকে।”
প্রায় আধ মিনিট ভাবেন সুধাংশু। তারপর গোড়া থেকে বলতে শুরু করেন, “দোকানের শাটার নেমে যেত দশটায়। তবে আমাদের সব গোছগাছ করে বাড়ি যেতে বারোটা পার হয়ে যেত। আমার বাড়ি সামনেই। হেঁটে যেতে আধঘণ্টার বেশি লাগে না সেদিন বারোটার সময় আমি আর বদ্রিনাথ নামে আর একজন কর্মচারী বের হয়ে যাই। বদ্রিনাথের স্কুটার ছিল, তাতে করেই বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু …”
একটু থামলেন সুধাংশু। কি যেন ভেবে নিজেই অবাক হলেন একটু ধীরে ধীরে বললেন, “কিন্তু সেদিন বদ্রিনাথের সঙ্গে ফিরিনি। কেন ফিরিনি ঠিক মনে পড়ছে না।”
“বেশ, পরে ভেবে বলবেন। তারপর?”
“তারপর বাড়ি গিয়ে কিছু কাজকম্ম করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমি দোকানে আসতাম সকালে সাড়ে ন’টায়। শশিদা নাহলে মৃগাঙ্কদা ততক্ষণে ভিতরের ঘর খুলে দিতেন। আমি গিয়ে শাটার তুলতাম। সেদিন চাবি দিয়ে শাটার খুলে দেখি ভিতরের দরজা খোলেনি। প্রায় আধঘণ্টা কি পঁয়তাল্লিশ মিনিট ডাকাডাকি করলাম। বাইরের একটা ফোন থেকে ভিতরের ল্যান্ড লাইন নাম্বারে ফোন করলাম। সেটা বেজে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম কিন্তু কেউ দরজা খুলল না। তারপর শুরু হল ধাক্কাধাক্কি। ততক্ষণে আমার চেঁচামিচিতে আশেপাশের দোকানের লোক এসে জড়ো হয়েছে। কাস্টমাররাও ছিল। করাত দিয়ে দরজা চিরে ফেলা হয়। সেখান দিয়ে লোক ঢুকে দেখে সিলিং থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন শশিদা। তারপরেই পুলিশে আর ডাক্তারে খবর দেওয়া হয়।” কথাগুলো বলে একটু থামলেন সুধাংশু। মুকেশ গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর বলল, “আপনারা যখন ঘরে ঢোকেন তখন ঘরের আলো জ্বলছিল?”
“না।”
“জানালা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল?”
“হ্যাঁ। বড়ি নামানোর পর সন্দেহ হওয়াতে আমি নিজে দেখেছিলাম।”
“আর দরজার ছিটকিনিটা?”
“হ্যাঁ স্যার। ওটা তখনও আংটাতেই গলানো ছিল। পুলিশ এসেই সে ছিটকিনি খোলে।”
কয়েক সেকেণ্ড থেমে পরের প্রশ্নটা করে মুকেশ, “সেদিন আপনি বাড়ি যাবার আগে মিস্টার সরকারকে কেমন দেখেছিলেন?”
“কেমন বলতে?”
“মানে মন-মেজাজ খারাপ, কথা বলতে চাইছেন না কারও সঙ্গে বা ধরুন অন্য কোনো ভাবনায় ডুবে আছেন, এরকম কিছু?”
মাথা নাড়তে গিয়েও থেমে গেলেন সুধাংশু। কিছু যেন একটা মনে পড়েছে তার। খানিক ভেবে নিয়ে বললেন, “মন খারাপ নয়, তবে মাথাটা একটু গরম ছিল।”
“কেন?”
“সেদিন দুপুরে টিফিনবেলার দিকে আমরা খেতে গেছিলাম। বদ্রি যায়নি। সে কীসব পুজোআচ্চা করত বলে দুপুরে খেত না। ঘুমিয়ে পড়েছিল। এই সময়ে একটা ছোকরা দোকানে ঢুকে কীসব চুরি করছিল যেন। আমরা ফিরে তাকে দেখতে পেয়েই ধরতে যাই। সে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’
একটু নড়েচড়ে বসে মুকেশ, “কীরকম ছোকরা? তাকে দেখেছেন আগে?”
“না। এমনি দেখলেই চোর-চোর মনে হয়। ভেবেছিলাম ধরে খানিক শাসানি দিয়ে ছেড়ে দেব। কিন্তু সে তো পালিয়ে গেল। শশিদা বদ্রিকে খুব বকাবকি করলেন। তারপর থেকে সারাদিনই বোধহয় মাথাটা গরম ছিল। কিন্তু তার জন্যে আত্মহত্যা…”
“না না। সে কথা নয়। যাই হোক, আজ আপাতত চলি আমি। সেদিন আপনি কেন বদ্রিনাথের সঙ্গে ফেরেননি সেটা মনে পড়লে একটু জানাবেন আমাকে। কেমন?”
সুধাংশু বিনীত মাথা নেড়ে দিতে বেরিয়ে এল মুকেশ। তারপর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কেশব শর্মার নম্বরটা ডায়াল করল। ওপাশ থেকে গলা শোনা গেল।
-বলো মুকেশ।
-এদিকে কিছু সুবিধে হচ্ছে না স্যার। মোটিভ, খুনের থিওরি, কিছুই খাঁড়া করা যাচ্ছে না। বরঞ্চ মনে হচ্ছে একদিন রাতে লোকটা টুক করেই ঝুলে পড়েছে। কোনো লিড নেই। জাস্ট নাথিং।
-পুলিশ সুইসাইড বলার পরেও ওখানকার লোকেরা নাকি খুন বলছিল। কেন বলছিল জিজ্ঞেস করেছ?
-সরকার সুইসাইড করার মতো লোক ছিল না স্যার। ব্যবসাপাতি খানিকটা মন্দ গেলেও সামলে নিচ্ছিল ধীরে ধীরে। তবে দোকানে একটা ছিঁচকে চোর আসায় এক কর্মচারীর উপর মাথাটা সেদিন একটু গরম ছিল।
-রাগের মাথায় আত্মহত্যা!
-সেটা অ্যাবসারড। ভাবছি সন্ধ্যাবেলা ওর বাড়িতে একবার হানা দিয়ে আসব। যদি কিছু পাওয়া যায়।
-বেশ। কাল সকালে ফিরবে তাহলে?
-তেমনই তো দেখছি।
ফোনটা রেখে দিয়ে থানায় আর একবার ফোন করল সে। ও.সি. সাহেব এখনও পাঠাননি ঠিকানা। দোকানে জিজ্ঞেস করলে হয়তো পাওয়া যেত কিন্তু পুলিশের তত্ত্বাবধানে যাওয়ার একটা আলদা ভার আছে।
দোকানের বাইরে থেকে আর একবার পুরো জায়গাটা দেখল মুকেশ। মনে মনে কল্পনা করার চেষ্টা করল সেই রাতটা।
চতুর্দিক ঢেকে আছে অন্ধকারে। রাস্তার ধারগুলোতে শুধু সোডিয়াম ভেপারের আলো মিটমিট করে জ্বলছে। সমস্ত দোকান বন্ধ। হয়তো রাস্তায় একটা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। মনে মনে একবার হাসল মুকেশ। ভাবনাটা একটু বেশি খেলছে তার।
সেই অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে একটা লোক। বেশ শক্তসমর্থ চেহারা। ধরা যাক তিরিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে। সে একটু একটু করে এসে দাঁড়াল এই দোকানের সামনে। তখনও দোকানের ছাদটা তৈরি হয়নি। উপরের দিকে অনেকটা ফাঁক। পাশের দোকানের পাঁচিলের উপরে উঠে সেই ফাঁক গলে নিচে নামল সে। এখন আর তাকে বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। ঢেকে গেছে শাটারের পিছনে। কিন্তু তারপর? ছিটকানি না খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকল কী করে? বেরোলই বা কী করে? দূর থেকে গুলি করে বা ছুরি দিয়ে খুন না, গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া। এ কী করে সম্ভব?
নাঃ, আত্মহত্যাই করেছিলেন শশিভূষণ সরকার। শুধু জানা দরকার মোটিভটা। সেটা জানার জন্যে তার বাড়ি না গেলে চলবে না।
মোবাইলটা বের করে আবার চেক করে মুকেশ। একটা মেসেজ এসেছে তাতে।
রাজারহাট নিউটাউনের ঠিকানাতে যখন সে পৌঁছাল তখন সন্ধে গড়িয়ে সাড়ে আটটা বেজেছে। এদিকে রাস্তাঘাট এমনিতেই শুনশান থাকে। তার উপরে রাত বাড়লে একেবারেই জনমানবহীন হয়ে পড়ে। স্কাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্টের ছ’তলায় ছায়া সরকার লেখা নেমপ্লেটের পাশের কলিং বেলটা যখন বাজাল তখন তার নিজের শরীর ক্লান্ত হয়ে এসেছে। সারাদিন টোটো করে বেরিয়েও নতুন কিছু পাওয়া যায়নি। উলটে এখন মনে হচ্ছে শশিভূষণের সুইসাইড আর অতীনের মৃত্যুর মধ্যে আদৌ কোনো যোগসূত্র নেই।
“আসুন।” দরজা খুলে বললেন ছায়াদেবী। তাকে আগে থেকেই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল মুকেশ; তাই আর নতুন কোনো প্রশ্ন করলেন না।
মহিলার বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে। ছেলেমেয়ে আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অন্তত ঘরের ভিতর তো তেমন কোনো চিহ্ন নেই।
“অসময়ে বিরক্ত করছি বুঝতে পারছি কিন্তু বিশ্বাস করুন জরুরি দরকার না হলে…” মুকেশকে কথার মাঝেই থামিয়ে দিলেন ভদ্রমহিলা।
“আমার আপনাদেরকে জরুরি দরকার ছিল আজ থেকে দশ বছর আগে। বড্ড দেরি করে ফেললেন দাদা।” কঠিন গলায় কথাগুলো বলে একটা সোফার দিকে নির্দেশ করে দিলেন ছায়াদেবী। নিজে বসলেন উলটোদিকের চেয়ারে।
“তা হঠাৎ এতদিন পরে ওঁর কথা মনে পড়ল আপনাদের!”
মুকেশ বুঝল ভদ্রমহিলা কোনো কারণে পুলিশের উপরে খাপ্পা হয়ে আছেন। সেটা শুভ সংকেত। মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে যতটা কথা চেপে রাখতে পারে, ইমোশানালি ভালনারেবল থাকলে ততটা পারে না। সে একটা বিনয়ের হাসি হেসে বলল, “আসলে আমি কেসটার সময়ে এখানে ছিলাম না! মাঝে দশ বছর আগে আমি পুলিশে জয়েনই করিনি, তাই ঠিক জানি না…
“জানার মতো কিছু নেই। আমার স্বামী মারা গেছেন। আপনারা বলেছেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আর জানার কী থাকতে পারে?”
“আর আপনি কী বলছেন? আত্মহত্যা নয়?” ঠিক জায়গা মতো প্রসঙ্গটাকে নিয়ে যায় মুকেশ।
“আমি কেন? ওঁর সব কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করুন। সব বন্ধুবান্ধবকে জিজ্ঞেস করুন, আশেপাশের দোকানদারদের জিজ্ঞেস করুন। পুলিশ ছাড়া যাকে খুশি জিজ্ঞেস করুন, উত্তর পাবেন।”
“আজ সারাদিনই প্রায় তাদের জিজ্ঞেস করেছি। সত্যি কথা বলতে আমার নিজের মনে হচ্ছে এটা সুইসাইড নয়। কিন্তু খুন বললেই তো আর হয়ে গেল না। সেটা হল কীভাবে?”
“সেটা আপনারা বুঝবেন। আমি শুধু জানি সেই রাতে আত্মহত্যা করার ধারে কাছেও সে ছিল না।”
“উনি তো সারাদিন বাড়ি ফেরেননি। আপনি সেরকম নিশ্চিত হয়ে বলছেন কী করে? হয়তো সারাদিনে এমন কিছু ঘটেছিল যাতে উনি ডিপ্রেসড হয়ে গেছিলেন।”
‘সেটা আমাকে ফোনে বলতো না?”
“ফোন করেছিলেন? কখন?”
থেমে একটু দম নিলেন ছায়াদেবী। তার গলার পারদ কয়েক দাগ নিচে নেমে এল, “দু’বার করেছিল। একবার বিকেলে আর একবার রাতে। ওরা সবাই বেরিয়ে যাবার পর।”
“কখন?”
“তা প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ। ভিতরে বসেই কিছু হিসেবের কাজ করছিল। সেসব শেষ করে ঘুমোতে যাবার আগে আমাকে ফোন করে।”
অর্থাৎ সাড়ে বারোটা অবধি বেঁচে ছিলেন শশিভূষণ। মনে মনে কয়েকটা হিসেব গুছিয়ে নিল মুকেশ।
“তখন গলা শুনে কী মনে হয়েছিল আপনার?”
“কী আবার মনে হবে? যে অফিসার আমাকে জেরা করেছিলেন তিনি প্রকারন্তরে আমাকে বলিয়ে নিয়েছিলেন যে সে রাতে ওর গলাটা আমার অন্যরকম লেগেছিল।”
“সত্যি লেগেছিল?” এবার সোফায় সোজা হয়ে বসে মুকেশ। তার পুলিশি নাক কিছুর একটা গন্ধ পেয়েছে।
চেয়ার ছেড়ে এবার উঠে পড়েন ছায়াদেবী। তারপর থুতনিতে একটা হাত রেখে কয়েক পা এগিয়ে এসে বলেন, “দেখুন অন্যরকম লাগার দুটো মানে হয়। এক, গলায় এমন কিছু ইম্পালস থাকা যা অন্য সময়ে শুনতে পাওয়া যায় না। দুই, গলার আওয়াজটাই অন্যরকম। আমি একবার বলে ফেলার পর পুলিশকে আর কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারিনি যে আমার অন্যরকম লাগাটা দ্বিতীয় জাতের। সেদিন রাতে ওর গলাটা অচেনা লেগেছিল আমার।”
“আপনার সন্দেহ হয়নি তাতে? মানে হঠাৎ করে একটা মানুষের গলা অন্যরকম লাগবে কেন?”
“একেবারেই না। তখন ল্যান্ডফোন এসেছে বেশিদিন হয়নি। অনেকেরই গলার আওয়াজ পালটে যেত তাতে। তাছাড়া যেদিন রাতে ও দোকানে থাকত সেদিন ঠিক ওই সময়েই ফোন করত আমাকে।”
“বেশ, তা ফোন করে কী বলেছিলেন তিনি?” মুকেশ গালে হাত রাখে। “বলেছিলেন ওঁর একটা কাগজ উনি খুঁজে পাচ্ছেন না। সেটা কোথায় থাকতে পারে জিজ্ঞেস করছিলেন।”
“আপনি জানবেন কী করে?”
“আমাকে সব কথাই বলতো ও।”
“কীসের কাগজের কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন?”
“একটা জমিদার বাড়ির কীসব যেন কাগজ। ক’দিন ধরে খুব ছোটাছুটি করেছিল ওটা নিয়ে। আমি মনে করে ওকে জায়গাটা তখনই বলে দিই।
মুহূর্তে মুকেশের ক্লান্ত পিঠ সোজা হয়ে যায়। এই প্রথম এ খুনের সঙ্গে জমিদারবাড়ির একটা লিঙ্ক পাওয়া গেছে। আজ কলকাতায় আসা একেবারে বৃথা যায়নি তার মানে।
“সে কাগজ এখন কোথায়?”
মাথা নাড়েন ছায়াদেবী, “আমি জানি না। ও মারা যাবার পরে সেটাকে আর দেখতে পাইনি।”
“তার আগে দোকানেই ছিল?”
“দোকানের ড্রয়ারে ওর একটা পারসোনাল ফাইলের মধ্যে ওটাকে রাখত। বিশেষ হাতছাড়া করতে চাইত না।”
পকেট থেকে কাগজ বের করল মুকেশ। সেটা মহিলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “দেখুন তো, এটার কোনো মানে বুঝতে পারেন কিনা…
হাতে নিয়ে কাগজটা দেখলেন ছায়াদেবী। তিনটে শব্দে লেখা আছে কাগজে। পড়ে অচেনা ঠেকল তার। মাথা নেড়ে সেটা ফেরত দিতে দিতে তিনি বললেন, “আপনারা কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। আজ হঠাৎ এসবের কথা উঠছে কেন?”
“উঠছে কারণ আমার মনে হয় আপনার লেট হাসব্যান্ডের মৃত্যুর সঙ্গে একটা নতুন কেসের কোথাও একটা যোগাযোগ আছে।”
“কীরকম যোগাযোগ?” মহিলাকে উৎসাহিত দেখায়।
“একটি বাচ্চাছেলেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ফরেনসিক বলছে আত্মহত্যা কিন্তু আমাদের তা মনে হচ্ছে না।”
“এটুকুই মিল? ব্যস?”
“না। ছেলেটি সেই বাড়িতে মারা গেছে যার কাগজপত্র আপনার স্বামীর কাছে ছিল।”
“অতীন, আপনি কি অতীনের কথা বলছেন?’
আজ সন্ধের মধ্যে দ্বিতীয়বার ধাক্কা খেল মুকেশ, “আপনি চেনেন তাকে? মানে… চিনতেন?”
সোফার উপরেই বসে পড়লেন ছায়াদেবী, “মুখ চিনতাম না। তবে ওঁর মুখে কয়েকবার শুনেছি ছেলেটার কথা। শেষের দিকে তো মাঝে মাঝেই বলতো।”
“কী বলতো?” মুকেশের শিরদাঁড়ায় এতক্ষণে পিঁপড়ে দৌড়াতে শুরু করেছে।
“বলতো ছেলেটা নাকি বিপদে আছে। অথচ তখন ছেলেটার বয়স তি। কি চার মাত্র।”
“সে কি! ঠিক কীসের জন্যে বিপদে আছে সেকথা জানতে চাননি আপনি? মানে কৌতূহল হয়নি?”
“জানতে চেয়েছিলাম কয়েকবার। কিন্তু বলেনি। এই ব্যাপারটা নিয়ে ও বেশি কথা বলতে চাইত না। কিছু যেন গোপন করত।”
“ওঁর ডায়েরি বা ওই জাতীয় কিছু আছে আপনার কাছে? বা কোনো কাছের বন্ধু যাকে এসব কথা বলে থাকতে পারেন?”
“তেমন কেউ নেই। খাতাপত্র যা কিছু ছিল বহুদিন আগে হারিয়ে গেছে। বাড়ি বদলের পরে তো কিছুই নেই।”
টেবিলের উপর থেকে জলের গ্লাস তুলে এক ঢোঁক খেল মুকেশ, বলল, “আপনার হাসব্যান্ড দাবি করেছিলেন তার কাছে এমন কিছু কাগজপত্র আছে যা তাকে জমিদারবাড়ির দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়। কাগজখানা তিনি কীভাবে পেয়েছিলেন জানেন? মানে জমিদারবাড়ির সঙ্গে ওঁর পূর্বপুরুষের কীরকম সম্পর্ক ছিল?”
“বিয়ের আগে কয়েকবার বলেছিল জমিদারবাড়ির কথা। তখন কিছু বলে থাকলেও এখন আমার আর মনে নেই।”
আরও মিনিট দশেক নানা কথাবার্তার পর উঠে পড়ল মুকেশ। বেশ কিছুটা সমবেদনা জানালো মহিলাকে। যদিও তার মনের মধ্যে ঝড় বইছে। শশিভূষণ তাহলে জানতেন ছেলেটার কোনো কারণে বিপদ আসছে। হয়তো সেজন্যেই বাড়িটা দেখাশোনার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু কী বিপদ? একটা চার বছরের ছেলের প্রতি কার রাগ থাকতে পারে?
এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতেন বলেই তাহলে খুন করা যায় শশিভূষণকে। কিন্তু কে করল? কীভাবেই বা করল।
ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে সাড়ে বারোটা থেকে একটার মধ্যে আত্মহত্যা করেন শশিভূষণ। ঠিক সেই সময়েই তার বাড়িতে ফোন করে স্ত্রীয়ের কাছ থেকে কেউ কাগজের হদিস জানতে চায়। অর্থাৎ শশিভূষণকে শুধু খুন করলেই হবে না। পৃথিবী থেকে সেই কাগজের অস্তিত্বও সরিয়ে ফেলতে হবে। কাগজ খুঁজে না পেয়েই বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফোন করতে হয়।
এখান থেকে দুটো ব্যাপার পরিষ্কার হয়। এক, খুনি জানত শশিভূষণ ওইসময়ে বাড়িতে ফোন করে। দুই, খুনি এও জানত কাগজ বাড়িতে নেই। দোকানেই আছে।
এ থেকে আন্দাজ করে নেওয়া কঠিন নয় যে খুনি শশিভূষণের চেনা কেউ। এবং চেনা কেউ বলেই তাকে কোনো কারণে কাঠের দরজা খুলে দেয় শশিভূষণ। সেক্ষেত্রে আবার দুটো নতুন প্রশ্ন উদয় হয়।
এক, অতীন খুন হতে পারে সে কথা শশিভূষণ জানতো কিন্তু কে খুন করবে সেটা কি জানতো না? তাহলে দরজা খুলে দিল কেন?
দুই, যদি ধরেও নেওয়া যায় কোনো কারণে দরজা খুলে দেয় শশিভূষণ, তাহলে সেই দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালাল কী করে খুনি? হাউ ইজ অল দিস ড্যাম থিং পসিবল?
হোটেলে ফিরে কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বিছানার উপর ঝাঁপিয়ে শুয়ে পড়ল মুকেশ। ঘরের আলোটা নেভাতে গিয়েও নেভালো না। সকালে ও সির দেওয়া ফাইলটা টেনে নিয়ে দেখতে শুরু করল। এতে যা লেখা আছে তার, সবই একটু আগে নিজের কানে শুনেছে।
ঝুলন্ত শশিভূষণের মরদেহের বিবরণ, ফরেন্সিকের রিপোর্ট, যে ক’জন তাকে ঝুলতে দেখেছিল তাদের জবানবন্দী। কোথাও কোনো গণ্ডগোল নেই। এমন কি ছায়া সরকারের ‘অন্যরকম গলা’র কথা অবধি লেখা আছে। সেখান থেকেই পুলিশ ডিসাইফার করেছে যে কোনো কারণে ডিপ্রেসড ছিলেন ভদ্রলোক। সব কিছুই ঠিকঠাক মিলে যাচ্ছে, এবং সেইখানেই গণ্ডগোল। সবকিছু মিলে যাচ্ছে কী করে?
ফাইলে কয়েকটা পাতা উলটে মুকেশ দেখল ঘটনার দিন সকালে পুলিশের তোলা কয়েকটা ছবি পিন দিয়ে আটকানো আছে রিপোর্টের গায়ে। মরদেহ নামানোর তুরন্ত পরের ছবি, মরদেহের ছবি, দেওয়াল, ঘড়ি, মশলার বস্তা, ভাঙা দরজা, সিলিং…
সেগুলো পর পর দেখতে দেখতে আচমকা মুকেশের মনের ভিতরে একটা খচখচানি শুরু হল। একটা ছবি। ছবিটাকে যত ভালো করে সে দেখছে তত মনে হচ্ছে কিছু একটা গণ্ডগোল আছে ছবিতে। কোথায় একটা বড়সড় অসঙ্গতি আছে অথচ কিছুতেই চোখে পড়ছে না। ঘড়িতে কি তাহলে কিছু আছে? নাঃ ঠিক সকাল সাড়ে দশটা বেজে আছে তাতে। তাহলে?
ছবিটা ভালো করে দেখতে লাগল মুকেশ। এরকম খচখচানি তো সচরাচর হয় না তার। কী আছে ছবিতে?
কোথায়?
মুকেশ খাসনবীশ অস্থির হয়ে উঠল….