তার চোখের তারায় – ১০

দশম অধ্যায়

ভোরের একটা সময় থাকে যখন সূর্যের আলোর ঘুমও ঠিক করে ভাঙে না। ঘুমমাখা ঢুলুঢুলু অলস চোখে সে তাকায় পৃথিবীর মাটির দিকে। কোনোরকমে একটুখানি আলো দিয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে চায়।

বিরাট জমিদারবাড়ির উপরেও তেমনই আলো এসে পড়েছে এখন। তবে পুরোটা জুড়ে পড়েনি। জমিদারবাড়ির প্রাসাদগুলো পূর্বদিকে। ফলে সেগুলোর উপরে আলো এসে পড়ে প্রথমে। তার ছায়াতেই পিছনের অন্দরমহলগুলো ঢাকা পরে যায়। সেগুলোতে বেলা গড়িয়ে যাবার আগে আলো পড়ে না। আজ তেমনই অর্ধেক বুক আলো করে দাঁড়িয়ে ছিল জমিদারবাড়ি অন্দরমহলের সামনে পুরনো কাঠগোলাপের গাছের উপরে ছায়া, দীঘির অর্ধেকটা জুড়ে গাছপালার ছায়া। হালকা ঢেউ উঠে পাড় অবধি এলোচুলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। দূর থেকে অনেকবার মোরগের ডাক শোনা গেছে। সমস্ত এস্টেট জেগে উঠছে একটু একটু করে।

অনেক কথা কাটাকাটির পর তুলিকে সঙ্গে নেওয়া হয়েছে আজ। পায়েলকে একা যেতে দিতে রাজি নয় সুনন্দা। আবার তুলিকে ফেলে যেতেও ভরসা হচ্ছে না। পরশুর ঘটনার পরে এটুকু বুঝেছে এ বাড়িতে সাপের থেকে ভয়ঙ্কর আরও কিছু আছে। তাছাড়া এখন দিনের আলো আছে পরিষ্কার। সাপখোপ যদি কিছু থাকেও তার গায়ে একমাত্র পা না তুলে দিলে সে আক্রমণ করবে না। তাছাড়া আজ বেলার দিকে নীলাদ্রি এসে পড়লে পায়েলকে তেমন সঙ্গও দিতে পারবে না সুনন্দা। ফলে এখনই যতটুকু ঘোরার ঘুরে নেওয়া দরকার। তুলির উৎসাহের শেষ নেই। মালতীর কাছে থাকতে সে মোটেই পছন্দ করে না।

কাঠের বেড়াটা পেরনোর আগেই আগের দিনের সেই সাপের খোলসটার কথা মনে পড়ল সুনন্দার। এখন সেটা আর নেই। এর মধ্যেই কেউ সরিয়ে নিয়েছে হয়তো। আজ শাড়ির বদলে সালওয়ার পড়েছে সুনন্দা। তুলির গলা থেকে তার হাতের ব্যাগটা ঝুলছে। পায়েলের রোজকার মতো কাঁধে কাপড়ের ঝোলা নেই। তেরচা করে পরা একটা ব্যাগ ঝুলছে কাঁধ থেকে

সে আগে গিয়ে কোলে করে তুলে নিল তুলিকে। তারপর সুনন্দা বেড়া ডিঙিয়ে ভিতরে ঢুকে এল।

বাইরে থেকে যতটা মনে হত ভিতরে ঢুকলে ঝোপঝাড় তার থেকে খানিকটা বেশি মনে হয়। তাছাড়া এদিকের মাটি এখনও আগের দিনের বৃষ্টিতে নরম হয়ে আছে। তার উপর দিয়ে হাঁটতে বেশ ভয় লাগে। তবে আজ তিনজনেই বেশ বড় জুতো পড়েছে। ফলে পোকামাকড় ঢুকে পায়ে কামড়ে দেওয়ার সম্ভবনা কম।

পিছন ঘুরে একবার বাড়ির দিকে দেখে নিল সুনন্দা। এখন সবে ঘুম ভেঙেছে হয়তো সবার। কারও এদিকে দেখার সময় নেই। দেখলেও তেমন একটা সমস্যা হবার কথা নয়। এদিকটা মানুষ নিজের প্রাণের ভয়ে আসে না। নিষেধ তো নেই।

“কাল রাতে একটা কথা মনে হচ্ছিল, জানো?”

‘তোমার বড্ড বেশি মনে হয়।” সুনন্দা মুখ বাঁকাল।

“বেশ, শুনতে হবে না।”

“আরে তা নয়, বল না।”

অভিমানটা ঝেড়ে ফেলে পায়েল বলল, “এ বাড়িতে থাকতে থাকতে একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি। এখানে তেমন মন্দির টন্দির নেই। বা ধর কোনো ঠাকুরঘর। এরা কি নাস্তিক ছিল নাকি?”

সুনন্দা দেখে শুনে পা ফেলতে ফেলতে বলল, “হতে পারে কোনো ঠাকুরঘর আগে ছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়েছে।”

“কোথায়? যেখানে একটা ইমারত ছিল সেখানে অন্তত কিছু চিহ্ন তো থেকে যাবে। নাথিং।”

“আলাদা করে ইমারত বানাবে তার কি মানে আছে? এতগুলো যে ঘর তার মধ্যেই একটা ঘরে ধরো ঠাকুর থাকতো।”

“ধুর, তা হয় না। সেকালের মানুষের কাছে ধর্ম একটা পায়াভারী জিনিস ছিল। এত বড় বাড়ি কিন্তু তার জন্য একটা আলাদা দেখার মতো কিছু নেই। সেটাই অবাক কাণ্ড। “

“তো তুমি কী ভাবছ? এই অন্দরমহলে ঠাকুরঘর খুঁজে পাবে?”

“পাওয়া যেতে পারে। মানে অন্য কোথাও নেই যখন এখানে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।”

“আগে বললে ফুল বেল পাতা নিয়ে আসতাম না হয়। পুজো দিয়ে তোমার মাথাটা ঠান্ডা করার একটা চেষ্টা করতাম।”

“হুঃ….. কফিন ভাঙাভাঙি করে যে পাপ করেছি তাতে দেবতা আর এজন্মে আমার উপর সন্তুষ্ট হবেন বলে তো মনে হয় না।”

অন্দরমহলের সামনে এসে দাঁড়ায় দু’জনে। এখানে মাটিতে ঘাসের পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের উচ্চতাও বেড়েছে। প্রায় গোড়ালি অবধি ঢেকে গেছে সবুজ ঘাসে। সুনন্দা একবার তুলিকে টোকা দিয়ে বলল, “কিরে, ভয় করছে না তো?”

ভয় অবশ্য লাগার কথা। অন্দরমহলটা বহুকাল হতে চলল পরিত্যক্ত হয়ে

পড়ে আছে। দেখাশোনার অভাবে প্রায় সমস্ত বাইরেটা জুড়েই লতাগুল্মের আস্তরণ পড়েছে। ভিতরে যতদূর দেখা যায় একটা লম্বা প্যাসেজ চলে গেছে। তার শেষ প্রান্তে একটা সিঁড়ির শুরুর দিকটা আছে। তবে দরজা দিয়ে তাকালে যেটা সব থেকে বেশি চোখে পড়ে সেটা হল বটের ঝুরির মতো নেমে আসা ছাদ থেকে মাটি পর্যন্ত লম্বা ঝুল। গোটা প্যাসেজটাকে যেন আলাদা আলাদা ঘরে ভাগ করেছে তারা।

কিছু ভাঙা জিনিসপত্রও চোখে পড়ল ভিতরে। একটা চেয়ারের হাতল, একটা ভাঙা ইট, এমন কি পেতলের ফেলে দেওয়া বাসন অবধি।

মহলটা বেশ বড়। সিঁড়ি যখন আছে তখন দোতলা আছে। তবে উচ্চতা দেখে তিনতলাটাও আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। সেখানে একটা ত্রিভুজের মতো জানালা আছে। সেই জানালা থেকেও গুল্মের সারি নেমে এসে আবার একতলার সদর দরজার উপরে ঝুলছে।

হাত দিয়ে সেগুলো খানিকটা পাশে সরিয়ে দিল পায়েল। তারপর ভিতরে তাকিয়ে বলল, “এখানে যা ঝুল আছে তাতে সাবধানে না গেলে আজ এখানে থেকে বেরবো যখন ভাল্লুক মনে হবে।”

“আমি তো ভাবছি অন্য কথা।” চিন্তিত গলায় বলল সুনন্দা, “এত ধুলো এখানে। নাকে গিয়ে তুলির না শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।”

“সেটাতো আগে ভাবা উচিৎ ছিল। ইনহেলার এনেছ?”

“হ্যাঁ। ওটা ওর কাছেই থাকে। ওর ব্যাগে।”

“এখন আছে দেখে নিয়েছ?”

“হ্যাঁ। কাল সন্ধেবেলাই দেখে নিয়েছি।”

“তাহলে আর কিছু করার নেই। এখন আবার ওকে রেখে আসতে গেলে কেউ দেখে ফেলবে।”

“বেশ, চল তাড়াতাড়ি, বাইরে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক না।”

বাইরে একটা বড় দরজা হয়তো ছিল একসময়। তার একদিকের পাল্লাটা খোলা। সেটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। আর একটা পাল্লা হয়তো ভেঙে পড়েছে। সেটা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে আসতেই একটা কাশির দমক এসে চেপে ধরল ওদেরকে। কাশির আওয়াজ মহলের ভিতরে বেশ কয়েকবার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল।

ভিতরে ঢুকলে গোটা একতলাটা চোখে পড়ে। এখানে দাঁড়িয়ে বাড়িটাকে সত্যিকারের জমিদার বাড়ি মনে হয়। দরজা দিয়ে ঢুকেই প্রায় একখানা বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের সমান ডাইনিং। তার শেষ প্রান্ত থেকে চওড়া সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। সিঁড়ির দু’ধারে নকশা রেলিং। সিঁড়ি যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে বড় একটা প্যাসেজ। তার দু’দিকে ছোট ছোট ঘরের সারি। ডানদিক বাঁদিকে খানিক দূর গিয়ে প্যাসেজটা পিছনের দিকে চলে গেছে। সেদিকে গেলে হয়তো পিছনের বারান্দাটা দেখা যাবে।

সিঁড়ির নিচে দু’পাশে আরও দুটো ঘর। জমিদারবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী এখানে হয়তো চারক-বাকররা থাকত। উপরের সিঁড়ির পাশের ঘরে মূল পরিবারের লোকেরা।

এখন অংশ্য সমস্তটাই অযত্নে পড়ে আছে। কোথাও কাঠের উঁচু স্তম্ভ ঠেকনা দিয়ে রাখা আছে দরজার গায়ে। কোথাওবা পড়ে আছে মাটিতে।

“লুকোচুরি খেলার আদর্শ জায়গা।” বিড়বিড় করে বলল পায়েল। “তুমি ম্যানেজারকে একবার জিজ্ঞেস করে আসতে পারতে জায়গাটা ঠিক কোনখানে হতে পারে।”

“কারণ জিজ্ঞেস করলে কী বলতাম? আপনার বন্ধু যেখানে লুকাত সেখানটা আমরা একবার খুঁজে দেখতে চাই? “

“তুমিই তো বলেছিলে তোমাকে দেখেই নাকি সব হুড়হুড় করে বলে দেবে, তাহলে?”

একটু আহত হল পায়েল। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “বুড়োটারও আর অন্য রোগ হতে পারল না। সব ছেড়ে এলঝাইমারস। এখন এত বড় মহলে কোথায় খুঁজি….

“সহজ কোনো জায়গা হবে না। তাহলে হরিনাথের বন্ধুরা সহজেই খুঁজে পেয়ে যেত তাকে। টর্চটা দাও তো।”

ব্যাগের ভিতর থেকে টর্চটা বের করে দিল পায়েল। কাল রাতেই দোকান থেকে কিনে রেখেছে সেটা। মহলের ভিতরে কিছু কিছু জায়গা হয়তো দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে থাকে। তাছাড়া সামনে হুট করে কিছু এসে পড়লে লম্বা বাঁটের ঘা বসিয়ে দেওয়া যাবে।

টর্চটা জ্বালিয়ে আগে উপরের দিকে ধরল সুনন্দা। উপরে সিমেন্টের উপরে মোজাইকের নকশা করা কড়িকাঠ। সেখান থেকে কয়েকটা বাদুড় ঝুলছে। তাদের চোখে আলো পড়তেই আলোটা সরিয়ে নিল সুনন্দা। তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে বলল, “ওগুলো কী বলতো?”

“বাদুড়। ওরা রক্ত খায়।” তুলি ধরা গলায় জবাব দিল।

সুনন্দা হাসল, “সব বাদুড় রক্ত খায় না। খালি ভ্যাম্পায়ার বাদুড় খায়। এগুলোতে ভয় পাবার কিছু নেই।”

তুলির ভয়টা কিন্তু সহজে কাটতে চায় না। ওরকম উলটো হয়ে ঝুলে থাকা ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে না তার। চোখগুলোও আলো পড়তে কীরকম জ্বলজ্বল্ করে উঠেছিল। সে দু’জনের মাঝখানে নেমে হাঁটতে লাগল।

পায়েল সিঁড়ির কাছ অবধি এগিয়ে গেছিল। সুনন্দা তাকে পিছু ডেকে বলল, “শোন না, বলছি তিনজনে একসঙ্গে দাপাদাপি করে লাভ নেই। তুমি উপরের তলাটা দেখো। আমি তুলিকে নিয়ে নিচটা দেখছি।”

“বেশ দেখো। আমার যতদূর মনে হয় একটা সুড়ঙ্গ আছে এখানে কোথাও। তার মুখটা বাড়ির কোনো ঘরের মেঝেতে। সেরকম যদি হয় তাহলে একতলাতে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তা যদি না হয় তাহলে মাটি থেকে বেশ খানিকটা উপরে কিছু আছে হয়তো।”

“দেখা যাক। কিছু পেলে আমাকে ফোন করে জানিও। চিৎকার কোরো না। এমনিতেই গলার আওয়াজ ইকো করছে। লোকে শুনতে পেয়ে যাবে।”

সুনন্দা আর তুলি নিচের দিকে এগিয়ে যেতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল পায়েল। সিঁড়িটা এত বড় যে দুটো মানুষ তাতে দিব্যি আড়াআড়ি শুয়ে পড়তে পারে। রেলিংগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায় ইংরেজ আমলে পুরনো রেলিং পালটে আবার নতুন রেলিং লাগানো হয়েছিল। কারণ ব্রিটিশ আসার আগে ভারতীয় স্থাপত্যে ফুল লতাপাতার নকশা দেখা যায়। ইংরেজ আমলে ভারতের জমিদারদের সেই দাপট আর ছিল না। ফলে কম নকশার লম্বা গরাদের মতো রেলিং রীতি হয়েছিল। এখানেও সেরকমই রেলিং। সেগুলোর উপরে হাত রাখতেই পায়েলের হাত ধুলোতে ভরে গেল। বিশ্রীরকম নোংরা হয়ে আছে জায়গাটা।

সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে এসে প্যাসেজে একটা ঘরের সামনে দাঁড়াল পায়েল। দক্ষিণের মহলের সঙ্গে এ মহলের বেশ অনেকটা তফাত আছে। মনে হয় যেন এ মহলটা কেউ আলাদা করে তৈরি করেছিল বিশেষ কিছু লোকের থাকার জন্যে। জমিদারবাড়িতে অবশ্য সেটা অস্বাভাবিক কিছু না।

প্যাসেজের বারান্দা দিয়ে একটা ছেঁড়া মাদুর ঝোলানো আছে। মেঝেতে পাতা আছে একটা কার্পেট। ধুলোয় ঢেকে সেটার রং আর বোঝা যায় না। দেওয়ালে একসময় ছবি ঝোলানোর জন্যে কিছু আংটা লাগানো ছিল। ছবিগুলো আর নেই, আংটাগুলো রয়ে গেছে।

এইতলার ঘরগুলোর সামনে কিছু বর্গাকার ষ্টীলের বাক্স রাখা আছে। অনেকটা ব্যাংকের ভল্টের মতো দেখতে। একসময়ে এগুলোর ভিতরে তাদের দরকারি জিনিসপত্র রাখতেন জমিদারবাড়ির লোকেরা। তাদের প্রত্যেকের জন্যে আলাদা লকার ছিল। বহু বছর আগে লকারের ভিতরের জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে মিউজিয়ামে। লকারগুলো শুধু তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে এখানে। পায়েল সেগুলোর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে একটা ঘরের দিকে সরে এল।

ঘরের দরজা খোলা। দরজার সামনে একটা কাঠের খাম্বা আড় হয়ে পড়ে আছে। সেটা পা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে একটু অবাক হল পায়েল। প্রাসাদের ঘরগুলোর তুলনায় এ ঘরটা বেশ বড়সড়। শুধু তাই নয়, দেওয়ালে যত্ন করে শ্বেতপাথরের কারুকাজ করা আছে।

এবাড়িতে শ্বেতপাথর এতদিন চোখে পড়েনি খুব একটা। এ ঘরে যেন রঙবেরঙের পাথরের ছড়াছড়ি। এখন যদিও ফাঁকা তাও বোঝা যায় একসময় রীতিমতো ঝলমলে করে সাজানো থাকত এই ঘর। দেওয়ালের কিছু জায়গায় রত্ন পর্যন্ত গাঁথা ছিল। এখন অবশ্য তার চিহ্ন নেই। এগিয়ে গিয়ে পিছনের জানলাটা খুলে দিল পায়েল।

এখান থেকে পিছনের দীঘিটা পরিষ্কার চোখে পড়ে। রোদ মেখে চিকচিক্ করে বয়ে চলেছে জল। তার আলো যেন এই জানালাতেও এসে পড়ছে। সেই সঙ্গে একটা উদাস নরম হাওয়া। পায়েলের মনটা শান্ত হয়ে এল।

সে ঘরটা থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরটাও দেখে নিল পায়েল। আলাদা কিছু নেই এর মধ্যে। মাটিতে একটা খাটের পায়ার দাগ চোখে পড়ল। চারটে দাগের দূরত্ব দেখে বোঝা যায় এ ঘরে যে খাটটা ছিল সেটা আয়তনে বিরাট। অর্থাৎ এইটা ছিল শোবার ঘর। হয়তো ভূপতি দত্ত আর তার স্ত্রী থাকতেন এই ঘরে।

এঘরের জানালাটাও খুলে দিল পায়েল। আর খুলতেই তার মুখ হাঁ হয়ে গেল। মুহূর্তের জন্যে এতক্ষণের জমাট উত্তেজনা আর কৌতূহল মুগ্ধতায় বিলীন হয়ে গেল।

এঘরে ঢোকার দরজাটা এখন খোলা আছে। উপরের কড়িকাঠের ফাঁক দিয়ে আলো আসছে ঘরের ভিতরে। একটুকরো আলোর রেখা যেন বাড়িটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে ফেলেছে। সেই আলো এসে পড়েছে জানালায়।

এখন পায়েল জানালায় দাঁড়িয়ে আছে বলে তার ছায়াটুকুনি সেই আলোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্ত বাড়ির ছায়াটা গিয়ে পড়েছে পুকুরের জলে। ফলে পুকুরের জলে দেখা যাচ্ছে একটা বাড়ির ছায়া। আর সেই বিরাট ছায়ার ঠিক মাঝখানে চৌক একটুখানি আলোর মাঝে পায়েলের ছায়া।

বেশ কিছুক্ষণ একটানা তাকিয়ে থাকল পায়েল। দিনের ঠিক এই সময়ে ছাড়া দেখা যাবে না অদ্ভুত দৃশ্যটা। একসময় হয়তো জমিদার গিন্নি এসে দাঁড়াতেন এখানে। তারপর প্রায় দু’শো বছর কেটে গেছে। অথচ এখনও একই ভাবে ছায়া পড়ে জানালায়।

ঘর থেকে বেরিয়ে প্যাসেজের একপ্রান্তে চলে এল সে। এদিকটায় আরও কয়েকটা ঘর আছে। সেগুলো হয়তো অন্য ভাই বোনেদের থাকবার ঘর। আকারে আগেরগুলোর মতো হলেও দেওয়ালের নকশা একটু কম। এখানেও কয়েকটা ছেঁড়া মাদুর পড়ে আছে। সেগুলো তুলে দেখল পায়েল। নাঃ নিচে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই।

একটু ভেবে দেখল পায়েল। হরিনাথ যখন যেতে পারত তখন নিশ্চয় জায়গাটা তার নাগালের মধ্যে ছিল। একটা ওইটুকু বয়সের ছেলের পক্ষে উঁচু কোনো জায়গায় ওঠা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ জায়গাটা মাটি থেকে খুব বেশি উঁচুতে নয়। বরঞ্চ কাছাকাছি।

কড়িকাঠের দিকটায় উপরের দিকে তাকাতে একটা আশ্চর্য জিনিস চোখে পড়ল তার। দেওয়ালের প্রায় ছাদের দিকে একটা ছোট চৌকো খোপ করা খাছে। ভালো করে না তাকালে সেটা চোখে পড়বে না এতটাই উপরে। ওটাই কি তাহলে সেই জায়গাটা? কিন্তু তাহলে হরিনাথ কী করে…

প্রশ্নটা মনে ভেসে ওঠার আগেই উত্তরটা পেয়ে যায় পায়েল। খোপটার ঠিক নিচেই সিমেন্টের উপরে কয়েকটা চাঙড় খসে পড়েছে। সেখানে পা দিয়ে একটা বাচ্চা ছেলের পক্ষে দিব্যি সেখানে উঠে যাওয়া সম্ভব।

মনঃস্থির করে নিল পায়েল। এখানে যখন একবার আসা গেছে তখন না দেখে সে ফিরবে না। খুব বেশি হলে পা হড়কে মাটিতে এসে পড়বে। তাতে গায়ে হাতে পায়ে দুইদিন ব্যথা থাকতে পারে বড়োজোর।

কাঁধের ব্যাগটা মাটিতে রেখে ডানহাত দিয়ে দরজার একটা পাল্লার উপর প্রান্তটা ধরল পায়েল। তারপর বাঁহাতে ধরল পুরনো বেরিয়ে থাকা ছবির একটা হুক। উত্তেজনায় সুনন্দাদের ডাকার কথা ভুলেই গেল সে।

খসে যাওয়া চাঙড়ের ফাটলে একটা পা রাখতেই অসুবিধাটা বুঝতে পারল সে। একটা বাচ্চাছেলের তুলনায় তার পাটা খানিকটা বড়। ফাটলের বাইরে বেশ খানিকটা বেরিয়ে আছে পায়ের অনেকটা। ধীরে ধীরে স্লিপ খেতে খেতে নিচের দিকে নামছে সেটা। এই অবস্থায় যদি আর একটা পা মাটি থেকে তুলে নেয় তাহলে পড়ে যাবার প্রবল সম্ভাবনা আছে।

নিচে নেমে আবার ফাটলে পা দিয়ে, একটা হাত ছেড়ে কোমরের জোরে, লাফ মারল পায়েল। খোপের নিচের দিকটা তার হাতের একটা নখ ভেঙে বেরিয়ে গেল। সে এসে পড়ল নিচে। মাথাটা কোনোরকমে ধাক্কা লাগার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিল সে। কোমরটায় জোরদার ব্যথা লেগেছে। হালকা যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল সে। তারপর কোমরে হাত বোলাতে বলাতেই মোবাইলটা বের করে সুনন্দার নম্বরটা ডায়াল করতে ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে গলা শোনা• গেল–

“পেলে কিছু?”

“হ্যাঁ। ব্যথা। কোমরে। একবার উপরে এসো তো।”

সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলায় এসে পায়েলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করল সুনন্দা, “পড়ে গেছিলে নাকি?”

তুলির দিকে তাকিয়ে পায়েল বলল, “কীরে অসুবিধা হচ্ছে?”

তুলি দু’পাশে মাথা নাড়ল। সুনন্দা বলল, “বড্ড ধুলো। কাশি হচ্ছে ওর, বেশিক্ষণ থেকো না। যা করার তাড়াতাড়ি করে ফেলো।”

আঙুল দিয়ে উপরের খোপটা দেখিয়ে পায়েল বলল, “এটাই জায়গাটা মনে হচ্ছে। আমাকে একটু তুলে ধরতে পারবে? আমার ওজন ঠিক চুয়াল্লিশ কেজি।”

এবারে একটু হাসল সুনন্দা, বলল, “সে পারব। তবে হাত ফসকে পড়ে গেলে জানি না।”

“বেশ তো, পড়ে আমার মাথা ফাটলে শুধু আমার খুনই নয় অতীনের খুনের জন্যেও তোমাকেই ধরবে পুলিশ।”

আর কথা বাড়াল না সুনন্দা। পায়েলের কোমরের দু’দিকটা দু’হাতে ধরে উঁচু করে তুলে ধরল তাকে। পায়েল এবার উপরের খাঁজে পা দিল। এই খাঁজটা বেশ গভীর। একটা হাত দিয়ে খোপের নিচের দিকটা ধরে উপরে উঠে এল। প্রথমে একটা পা খোপের ভিতরে রেখে মাথাটা ঢুকিয়ে পরে আর একটা পা তুলে নিল ভিতরে। তুলি হাঁ করে তাকিয়েছিল সেদিকে। সে দু-একবার বায়না করল সুনন্দার কাছে যে সেও ওইভাবে উপরে উঠতে চায়। সুনন্দা তেমন কান দিল না। মাথা তুলে জিজ্ঞেস করল, “কিছু কি দেখতে পাচ্ছ ভিতরে?”

“আজ্ঞে না। সব অন্ধকার। জায়গাটা বেশি বড় না।”

“তাও কত বড় হবে?”

“আমাকেই ঘাড় নিচু করে বসতে হচ্ছে। হাত ছড়ানোর জায়গা নেই তেমন।”

“তাহলে?”

“মনে হচ্ছে কেবলই স্বপন করেছি বপন বাতাসে। টর্চটা দাও দেখি একবার।”

নিচ থেকে ছুঁড়ে টর্চটা খোপের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল সুনন্দা। সেটা কুড়িয়ে নিয়ে চারপাশে একবার ঘোরাল পায়েল। তারপর গলা তুলে বলল, “জায়গাটা সিমেন্টের নয়। কাঠের। কাঠের উপরে তিন জায়গায় পেরেক মারা আছে। আশ্চর্য।”

“এতে আশ্চর্যের কী আছে? কাঠে পেরেক মারা থাকতে পারে না?”

“উঁহু… পেরেকগুলোর অবস্থান দেখে আবার একটা জিনিসের কথা মনে পড়ছে।”

“কী জিনিস?”

“কিস না ক্রুশ, যাকে গ্রামের দিকের ছেলেপুলে কুস বলে। বুড়োর জিভে সেটা জড়িয়ে কিস হয়েছে। যিশুর ছড়ান দুই হাতে দুটো পেরেক ছিল আর পায়ে একটা। এখানে পেরেকগুলো একদম সেইভাবে আছে।”

একটুক্ষণ চুপ করে থেকে সুনন্দা বলল, “বেশ, যিশু হল না হয় তারপর?”

দোতলায় ধুলো আগের থেকে একটু বেড়ে উঠেছে। কয়েকবার কাশি হল তুলির। সুনন্দাও মুখের উপরে হাত চাপা দিল।

“আমার ব্যাগে মার্কার আছে, ছুঁড়ে দাও তো।” উপর থেকে আবার গলা শোনা গেল। মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে পায়েলের ব্যাগটা খুল ফেলল সুনন্দা তারপর মার্কার খুঁজে নিয়ে ছুঁড়ে দিল উপরের দিকে।

সেটা কুড়িয়ে নিয়ে পায়েল পেরেকগুলোকে দুটো রেখা দিয়ে জয়েন করল। সব মিলিয়ে একটা ইংরিজি ‘টি’-এর মতো অক্ষর ফুটে উঠল কাঠের উপর সেটার দিকে তাকিয়েই পায়েল অবাক হয়ে গেল।

ক্রসের দুটো লাইন যেখানে একে অপরকে ছেদ করেছে সেখান থেকে একটা ছোট সুতো বেরিয়ে আছে। সুতোটার রং একদম কাঠের রঙ্গের মতোই। ধুলোয় ঢেকে আছে বলে কালি না লেগে থাকলে বোঝাই যায় না সুতোটা।

একটা আঙুল সুতোর উপরে রাখতেই পায়েল বুঝল সুতোটা সাধারণ নয়। বেশ শক্ত সেটা। টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব নয়। টর্চের হাতলটা মুখে ভিতরে ঢুকিয়ে সুতোটা শক্ত করে ধরে জোরে টান দিল পায়েল।

বিস্ময়ে প্রায় একটা সার্ত চিৎকার বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে। এতক্ষণ যে কাঠের পাটাতনটা তার মুখের সামনে ছিল সেটার একধার একটুখানি সরে গেছে। ঠিক একটা স্লাইডিং জানালার মতো। আর মুখে ধরা টর্চের আলো গিয়ে পড়েছে সেই ফাঁকের ভিতরে। উত্তেজনায় পায়েলের হাতের টর্চ কেঁপে উঠল কয়েকবার। কী থাকতে পারে ভিতরে? আর একটা কফিন?

বেশ কিছুটা ভিতর দিকে গিয়ে একটা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়েছে আলোটা একটা ঘর। তার ভিতরের বেশিরভাগটাই এখন অন্ধকার। সম্ভবত বহুবছর পরে আলো পড়ছে তাতে

পায়েলের মুখ দিয়ে একটা চেনা বাক্য বেরিয়ে এল, “ওয়েল, দিস ইজ স্পুকি…”

একটা জমাট বাঁধা হাওয়া একছুটে বাইরে বেরিয়ে এসে পায়েলের মুখে ধাক্কা মারতেই মুখ সরিয়ে নিল সে।

হাত দিয়ে টেনে বাকিটুকুনি সরিয়ে ফেলল পায়েল। ঘরঘর করে একটা শব্দ করে ফাঁকটা আরও খানিকটা বড় হল। নিচের ঘরটার অনেকটা অংশ দেখা যাচ্ছে এখন

নিচ থেকে সুনন্দার গলা শোনা গেল, “এবার ফিরতে হবে পায়েল। তুলির অসুবিধা হচ্ছে ধুলোয়।”

“জাস্ট একটু ওয়েট কর। আমি একটা জিনিস পেয়েছি।”

উত্তরের অপেক্ষা না করে মাটির দিকে টর্চ ফেলে একবার দেখে নিয়ে একটা লাফ দিয়ে ঘরটায় নেমে এল সে। তার চোখ থেকে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি এখনও। এ ঘরে কোনো জানালা নেই। এই বিরাট প্রাসাদের ভিতরে মিটার পাঁচেক বর্গক্ষেত্রের এক গুপ্তকক্ষ।

ঘরটা ফাঁকা। ভিতরে ধুলোর সঙ্গে আরও নানারকম গুঁড়ো পড়ে আছে। তবে তার থেকে বড় কিছুই নেই।

দেওয়ালের দিকে আলো ফেলতে একটু থমকে গেল পায়েল। কি আশ্চর্য! দেওয়ালগুলোর রং কিন্তু এবাড়ির অন্য দেওয়ালগুলোর মতো নয়। ঘন মিশমিশে কালো রঙের দেওয়াল। পরক্ষণেই ব্যাপারটা বুঝতে পারল। ওগুলো রং নয়। আগুনের দাগ। একসময় হয়তো আগুনের পুড়ে গিয়েছিল ঘরটা। কিন্তু কেন? কীভাবে?

সব থেকে বড় কথা অন্দরমহলের ভিতরে এভাবে লুকিয়ে ঘর বানালোই বা কে? কী লুকিয়ে রাখত সে এখানে।

এবড়ো খেবড়ো কিছুর উপরে পা পড়তে নিচের দিকে আলো ফেলল পায়েল। মেঝেতে কিছু একটা পড়ে আছে। একটা ছোট দেশলাই কাঠি। নিচু হয়ে হাত দিয়ে সেটা তুলে নিল পায়েল। টর্চের আলোয় বোঝা যায় সেটা স্ফটিকের মতো কিছু একটা। সাদা নিলের মাঝামাঝি রঙের গুড়ো। সম্ভবত বহুযুগ আগে এঘরে কেউ মোমবাতি জ্বালিয়েছিল। কিন্তু কেন? এই লুকানো ঘরে এত বছর আগে কী হয়েছিল?

দেওয়ালের দিকে এগিয়ে আসতে দেওয়াল জুড়ে কয়েকটা সরু সরু দাগ দেখতে পেল পায়েল। খুব ক্ষীণ, যেন কয়েক শতাব্দী আগে কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে দেওয়ালে লম্বা দাগ দিয়েছিল কেউ।

পায়েলের পায়ের আওয়াজ ঘরময় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সেটা মন দিয়ে শুনলে মনে হয় মাটির নিচ থেকে যেন আঙ্গুল দিয়ে আঁচড়াচ্ছে কিছু একটা।

ঘরের ঠিক মাঝে দাঁড়িয়ে একবার চোখ বন্ধ করল পায়েল। কিছু একটা ঘটেছিল এই ঘরে। সময়ের পথ ধরে দু’শো বছর আগে ফিরে গেলেই জানা যাবে ঘটনাটা। চোখ খোলার আগে একবার থমকে গেল সে। মনে হল কেউ যেন এসে দাঁড়িয়েছে চোখের ঠিক সামনে। চোখ খুললেই দেখতে পাওয়া যাবে তাকে। একবারের জন্যে ভয়ে পায়েলের বুক কেঁপে উঠল। মনে হল একটা অন্ধকার ধোঁয়া এসে একটু একটু করে জড় হচ্ছে তার শরীরের চারপাশে। একটা জীবন্ত ঘন ধোঁয়া।

একটা গুনগুন আওয়াজ শুনতে পেল সে। যেন বহুদূর থেকে কথা বলছে কেউ। সে কি কিছু বলতে চাইছে? নাকি সব ফাঁকা ঘরের দেওয়ালেই এমন কিছু আওয়াজ ধরা থাকে। যা বয়ে চলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। একটা হালকা বাঁশির আওয়াজ। জমাট খানিকটা ধোঁয়া লুকিয়ে আছে এই ঘরের ভিতরে। আর কেউ আছে কি?

সুনন্দার গলা যেন বহুদূর থেকে আসছে। খোপের দিকে সরে আসে পায়েল। মাটি থেকে বেশ খানিকটা উপরে সেটা। কী বলছে সুনন্দা? পায়েল দেরি করছে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছে?

টর্চটা আবার দাঁতের ফাঁকে মুখে ধরে শেষবারের মতো ঘরের চারিদিকে চোখে বুলিয়ে নেয় পায়েল। দু’হাতে খোপের নিচের দিকটা ধরে উপরে উঠে আসে পায়েল। পাল্লাটা আবার বন্ধ করে। যেই ঘরটা বানিয়ে থাকুক শে ঘরটাকে গোপন রাখতে চেয়েছিল। হয়তো গোপন থাকাই ভালো।

পাল্লাটা বন্ধ করতেই সুনন্দার গলা শোনা যায়। কোনো একটা কারণে চিৎকার করছে সে। মুখ বাড়িয়ে পায়েল বলে, “আরে আছি আমি এখানে। এত চিৎকার করলে লোক ছুটে আসবে। ভালো হবে সেটা?”

“প্লিজ নিচে এসো পায়েল। সর্বনাশ হয়ে গেছে।”

খোপের ভিতর থেকে বাইরে মুখ বাড়াতেই পায়েলের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।

বাইরে মেঝের উপরে শুয়ে শ্বাসকষ্টে ছটফট করছে তুলি। তার বুকটা খুব দ্রুত ওঠানামা করছে। সমস্ত মুখটা ভরে উঠেছে ঘন লাল রঙে। সুনন্দা হাঁটু মুড়ে বসেছে তার পাশে। কিছু যেন খোঁজার চেষ্টা করছে।

“আশ্চর্য! শ্বাসকষ্ট হচ্ছে যখন ইনহেলারটা দাও ওকে।” উপর থেকেই চিৎকার করে ওঠে পায়েল। কিছু একটা সন্দেহ করে তার গলা কেঁপে যায়।

কী যেন খুঁজতে খুঁজতে তুলির গলায় ঝোলানো ব্যাগটা তুলে ধরে সুনন্দা। তারপর আগের মতোই হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “ইনহেলার নেই– কেউ সরিয়ে নিয়েছে।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *