অষ্টাদশ অধ্যায়
“কিন্তু কেন?” প্রায় চেঁচিয়ে উঠেছিলেন মধুবাবু। তার চোখে-মুখে এখন উগ্র অবিশ্বাসের সুর ঝরে পড়ছে।
“তাহলে অতীনকে খুন করল কে?” ক্ষেত্রমোহন এতক্ষণে প্রথম আগ্রহ দেখালেন, “আর কেন?”
বাকিদের মুখে কোনো কথা নেই। সবাই প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে পায়েলের দিকে।
“কেন?” ধীরে ধীরে কথাটা উচ্চারণ করল পায়েল, “এই একটা প্রশ্নই এই চেন অফ মার্ডারে সব থেকে বেশি ধাঁধায় ফেলছে আমাদের। যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে অ্যাপারেন্টলি কোনো যোগাযোগ নেই। তার থেকেও বড় কথা তাদের মধ্যে আছে একটি কিশোর। এবং পরের টার্গেট একটি বছর দশেকের মেয়ে। যার অন্তত আত্মহত্যা এবং খুন কোনোটাই হবার বয়স নয়।
কিন্তু এই ‘কেন’ ছাড়াও আর একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে এই মৃত্যুগুলোর মধ্যে। আমাদের সবার চোখের সামনেই জলের মতো ছিল সেটা। অথচ আমরা গুরত্ব দিয়ে ভাবিনি বলে বারবার খুনি পার পেয়ে গেছে। খানিকটা সেই উদ্দেশ্যেই জিনিসটাকে ঢাকা দেবার জন্যে প্রতিবার আলাদ পদ্ধতি অবলম্বন করে সে।
ব্যাপারটা আমার প্রথম মাথায় আসে আমার নিজেরই একটা ভাবনা থেকে। আমার বারবার মনে হচ্ছিল শশিভূষণ সরকারের বড়বাজারে গয়নার দোকান কিন্তু কেন? আমার অবচেতন মন কি বাকি ঘটনাগুলোর সঙ্গে এক লাইনে শশিভূষণের খুনটা রেখে কিছু একটা মেলাতে চাইছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি সবকটা খুন পরপর সাজিয়ে ভেৰে দেখার চেষ্টা করি। বর্ষাকালে সিঁড়িতে পা পিছলে প্রথমজন মারা যান, দ্বিতীয়জন মারা যায় দীঘির জলে ডুবে, তৃতীয়জন পরিত্যক্ত কুয়োর ভিতর পরে, চতুর্থজন ঘরের ভিতরে আত্মহত্যা করেন। শেষ পর্যন্ত অতীন মারা যায় রান্নাঘরে। কিন্তু কী করে?”
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করেছিলেন ক্ষেত্রমোহন। পায়েল দ্রুত তার দিকে এগিয়ে গিয়ে এক ঝটকায় ছিটকে ফেলে দিল সেটা। রাগ আর বিরক্তি একসঙ্গে মিলিয়ে মুখ তুললেন ক্ষেত্রমোহন, “তুমি নিজেকে কি…”
“রিফ্লেকশান…” জ্বলজ্বলে চোখে তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল পায়েল, “এই প্রত্যেকটা খুনের আগে ভিক্টীম কোনো না কোনো ভাবে নিজের মুখ দেখতে পেয়েছে। কখনও জলে, কখনও আয়নায়, কখনও রান্নাঘরের চকচকে বাসনে…. গয়নার দোকানে দেওয়াল জুড়ে আয়না থাকে, সেই কারণেই আমার বারবার মনে হচ্ছিল শশিভূষণের গয়নার দোকান।”
“তা কী করে হয়।” এতক্ষণ পর ভুরু কুঁচকে বলে সুনন্দা, “এ কথাটা আমারও মাথায় এসেছিল কিন্তু প্রথমজন মারা যায় সিঁড়ি থেকে পড়ে… সে কীভাবে…”
“কোন সময়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়? বর্ষাকালে। তুমি নিজেও দেখেছ বর্ষাকালে উপরের খোলা ছাদ দিয়ে জল পড়ে একতলার চাতালটা জলে ভরে যায়। রাতে আলো জ্বেলে কেউ যদি নিচে তাকায় তাহলে নিজের মুখের ছায়া দেখতে পাবে সে।
তৃতীয় খুনের সময় কুয়োটা পরিত্যক্ত ছিল। কিন্তু মনে করে দেখো সেটাও ছিল বর্ষাকাল। এবং তখন কুয়োর মাথায় ঢাকনা ছিল না। ফলে নিচে গোড়ালি সমান জল জমে যাওয়াটা বিচিত্র না।
নলিনী ঘোষ যে ঘরে আত্মহত্যা করেন সেখানে একটা আয়না রাখা ছিল এবং অতীনের ক্ষেত্রে এ কারণেই বেছে নেওয়া হয়েছিল রান্নাঘর।”
“কিন্তু প্রথম আর দ্বিতীয় খুনের সময় মতীন তো জন্মায়নি। তাহলে সেগুলো করল কে?”
“মতীনের বাবা কাশীনাথ। মতীনের আগে সেই এ বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড ছিল। দীঘির জলে ডুবে যিনি মারা যান তার নাম মহীতোষ দাস। পুরনো কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে তার নাম কাশিনাথ নিজেই সুপারিশ করেছিল। সে এতদিনের গার্ড বলে তার সুপারিশটা স্যাংশান হয়ে যায়।”
“তার মানে তুমি বলছো নানা অছিলায় এরাই কিছু লোককে এ বাড়িতে টেনে এনে খুন করত? কিন্তু কীভাবে? আর এরা তো কেউ দত্ত বংশের সঙ্গে জড়িত নয়।”
সুনন্দাকে এই প্রথম একটু উত্তেজিত দেখায়। পায়েল কপালের ঘাম মুছে বলে, “সেটাই বলছি এবার।”
“আমরা কিন্তু এখনও কারণটা বুঝতে পারছি না। ওইটুকু ছেলেকে খুন করে কার কী লাভ হতে পারে?” কেশব শর্মা ঝুঁকে পড়ে প্রশ্ন করলেন। প্রজেক্টারের কাছে ফিরে গিয়ে সেটার উপরে হাত রাখল পায়েল। স্ক্রিনে একটা বদল এল। দত্ত বংশের ফ্যামিলি ট্রি দেখা যাচ্ছে সেখানে। কয়েকটা জায়গা ফাঁকা, কিছু জায়গায় সোজা লাইনের শেষে জিজ্ঞাসা চিহ্ন। এখন গোটা ফ্যামিলি ট্রিয়ের উপরে পায়েলের শরীরের ছায়া এসে পড়েছে।
ঘরের আলো এক পরত কমে এল। উপস্থিত সকলের দিকে একবার দেখে নিয়ে সে বলল, “এরপর আমি যা বলতে চলেছি সেটা আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা আপনাদের ব্যাপার। তার সমস্তটা আমার কাছেও পরিষ্কার নয়। কিছুটা পুরনো পুঁথি থেকে পেয়েছি কিছুটা নিজের মতো করে বানিয়ে নিয়েছি।”
“বেশ, তাই বল না হয়।”
পিছন ঘুরে ফ্যামিলি-ট্রির দিকে তাকিয়ে পায়েল বলল, “আমরা জানি ভূপতি দত্তরা চার ভাইবোন ছিলেন। বড় ভাই এর নাম জানা যায় না। তারপরে ভূপতি, সন্ধ্যারানি এবং নৃপতি। আমরা জানি বড় ভাই যুবক বয়সে ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায়। ব্যাপারটা খানিকটা ভুল। সে ইংরেজদের হাতেই মারা যায় কিন্তু সংঘর্ষে নয়। সে জমিদারবাড়ি ছেড়ে চন্দননগরের একটি গ্রামে গুপ্তবাহিনি তৈরি করে গোপনে লড়াই করার ষড়যন্ত্র সাজাচ্ছিল। এমন সময় পেয়াদাদের হাতে ধরা পড়ে এবং রাজদ্রোহিতার অপরাধে শাস্তি হিসেবে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাকে। এ হত্যাকাণ্ড যিনি পরিচালনা করেন তিনি সে সময়ের ব্রিটিশ আর্মির কমান্ডার জর্জ মসক্রপ। এর কয়েক বছর পরে ব্রিটেনের রাজ পরিবার থেকে জর্জ মসক্রপকে চিঠি দিয়ে কোনো কারণে ভৎর্সনা করা হয়। কেন করা হয় সেটা আর জানা যায় না, তবে অবশ্যই এই গাছে বেঁধে মানুষ পোড়ানোর জন্যে না।
যাই হোক, জর্জ মসক্রপ এ ঘটনার অনেক পরে এই কাণ্ডের জন্যে অনুতপ্ত বোধ করেন এবং তার মেয়ের অন্তিম পরিণতির জন্যে এই ঘটনাকেই দায়ি করে চার্চের তৎকালীন হেড প্রিস্টের কাছে একটি কনফেশান লেটার লেখেন। সেটা পরের কথা। এর আগের খানিকটা অজ্ঞাত ইতিহাস আছে। মধুদার মুখ থেকে আমি জানতে পারি ভূপতি প্রথমবার বিয়ে করেন বেশ কচি বয়সে। সে সময়ে ব্যাপারটা এবসারড়। তাছাড়া জমিদারী দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল তার ঘাড়ে। হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলেন কেন তিনি? বিশেষ কোনো দরকার ছিল? আমার খটকা লাগে।
কারণটা আপনাদের বলছি। দাদা মারা যাবার পর ভূপতি আবিষ্কার করেন দাদা চন্দননগরে থাকাকালীন শুধু যুদ্ধ করেই জীবন অতিবাহিত করেননি। তার একটি গুপ্তবাহিনি ছিল, এবং সেই বাহিনীরই একটি সাধারণ মেয়ের সঙ্গে তার প্রেম এবং বিবাহ দুটিই হয়। তবে ব্যাপারটা জানাজানি হয়নি। মেয়েটির নাম যতদূর সম্ভব সুনয়না। তার বয়স ছিল ঊনিশের কাছাকাছি।
জমিদারবাড়ির বড়ছেলের স্ত্রী, অর্থাৎ রীতিমতো অভিজাত ঘরের ব্যাপার। সেটা প্রায় আঠেরোশো দুই কি তিন নাগাদ। সতীদাহ তখনও রদ হয়নি সদ্যমৃত দাদার স্ত্রীকে জীবন্ত চিতায় নিক্ষেপ হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ভূপতি তাকে নিজের স্ত্রী সাজিয়ে জমিদারবাড়ি নিয়ে আসেন। জমিদারবাড়ির লোকজন ছাড়া বাইরের কাউকে মেয়েটির আসল পরিচয় জানানো হয় না। ভূপতির স্ত্রী হিসেবে সে সেখানেই থাকতে শুরু করে।
এর মাসখানেক পরেই নতুন এক সমস্যা এসে দেখা দেয়। স্বামী মারা যাবার সময় সেই মেয়েটি মাস চারেকের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। একমাস পরে তার শরীরে সন্তান ধারনের লক্ষন দেখা দেয়। ভূপতি প্রমাদ গোনেন। সন্তানটিকে যদি জন্ম দেওয়া হয় তাহলে সেটা যে তার নিজের নয় তা লোকে সময়ের হিসেব করলেই বুঝতে পারবে। এদিকে দাদার একমাত্র পূর্বসূরিকে গর্ভে নষ্ট করে ফেলতে মন চায়নি তার। একটিই পথ খোলা ছিল সামনে
মহাভারতে কুন্তি যা করেছিলেন ভূপতি দত্তও তাই করলেন, তবে ছেলেটিকে ভাসিয়ে দিলেন না তিনি। নায়েবকে দিয়ে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিলেন। সে বড় হল বটে তবে দত্তবংশের পরিচয়ে না। ছেলেটি জন্মানোর সময়ই তার মা সুনয়নাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার মৃত্যু হয়।”
এই পর্যন্ত বলে একটু থেমে ব্যাগের ভিতর থেকে কয়েকটা কাগজপত্র বের করে কি যেন দেখে নিল পায়েল। তারপর আবার বলতে শুরু করল, “এবার আমার বছর কয়েক এগিয়ে আসি। মানে ধরা যাক আঠেরোশো পাঁচ নাগাদ।
দত্ত বংশের বড় ছেলেকে যিনি হত্যা করেন অর্থাৎ জর্জ মসক্রপ, হুগলীতে এসে ততদিনে তিনি বাসা বেঁধেছেন। পাঁচ বছর আগে দুটি যমজ মেয়ে হয়েছে তার। এলিজাবেথ আর পারসিলা মসক্রপ। এই দুটি মেয়ের নাম ভালো করে মনে রাখুন। এরা আমাদের গল্পে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
এর মধ্যে একটা বিচিত্র কাণ্ড ঘটে গেছে। জমিদারবাড়ির উত্তরের অন্দরমহলে একটা গোপন ঘর আবিষ্কার করে ফেলেছেন ভূপতি দত্ত। যা বাইরে থেকে কারও পক্ষে সহজে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। এমন একটা ঘর যেখানে যে কোনো অপরাধের চিহ্ন লুকিয়ে রাখলে তা কারও হাতের নাগালে আসার কথা নয়।
এই বাড়িতে আগে যে জমিদার বংশ থাকত তারাই সম্ভবত বিশেষ কোনো কারণে ঘরটা বানিয়েছিল। সেখানে ঠিক কি হত তা ভূপতি দত্ত জানতেন না। মোট কথা ঘরটাকে তিনি একটা হিডেন চেম্বার বলেই ধরে নেন।
এর ঠিক পরপরই হুগলীতে বসবাসকারী মসক্রপের দুটি যমজ মেয়ের প্রতি তার নজর যায়। তাদের দু’জনের বয়সই সবে পাঁচ। হাসিখুশি, মা-বাবার আদরে বেড়ে ওঠা দুই-বোন। তাদের দেখে প্রতিশোধ স্পৃহা জ্বলে ওঠে ভূপতির।
এরপর একদিন সুযোগ বুঝে লেঠেল দিয়ে এলিজাবেথ মসত্রুপকে লুকিয়ে তুলে আনেন তিনি এবং অন্দরমহলের সেই গোপন ঘরে তাকে বন্দি করেন, অত্যাচার করেন এবং শেষ পর্যন্ত বন্ধ ঘরের ভিতরেই আটকে আগুনে ঝলসে দেন তাকে। মেয়েটি বন্ধ ঘরের ভিতর অত্যাচারিত ও দগ্ধ হতে হতে দেওয়ালে কিছু আঁচড় কাটে। এমন কিছু লিখে রেখে যায় যা বিশেষ একজন ছাড়া আর কারও পক্ষে পড়া সম্ভব নয়। গোপন কুঠুরিতে আগুনে পুড়েই মারা যায় সে। বদলে অন্য কিছুর জন্ম হয়। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
এভাবে ভূপতি দত্তের প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ হয়। জর্জ মসক্রপ বহু চেষ্টা করেও তার মেয়ের মৃতদেহ অবধি খুঁজে পান না। এ ঘটনার কয়েক বছরের মধ্যে জর্জ মসক্রপও মারা যান। তার স্ত্রীর খবর আর পাওয়া যায় না। সম্ভবত মারা গেছিলেন। শুধু এখানে থেকে গেছিলেন পারসিলা মসক্রপ।”
“কিন্তু এসব ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের খুনের সম্পর্ক কোথায়?”
শশাঙ্ক জিজ্ঞেস করে। এতক্ষণ মনে দিয়ে শুনতে শুনতে একটাও কথা বলেনি সে, “এলিজাবেথ মসত্রুপ নিশ্চয়ই ভূত হয়ে এ বাড়িতে ফিরে আসেনি?”
“ভূত মানে কিন্তু অতীতও হয় শশাঙ্কদা, আর অতীত বারবার ফিরে আসে আমাদের জীবনে। বিশেষ করে সে অতীত যদি অসমাপ্ত হয়। যদি কোথাও একটা গিয়ে তার তাল কেটে যায়, জোর করে তাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দত্ত বংশের ক্ষেত্রেও সে ফিরে এসেছে। আর তার জন্যেই এতগুলো খুন…”
শশাঙ্ক একটু নিরুৎসাহিত হয়ে আবার পিছিয়ে বসল। পায়েল সবার দিকে আর একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছিন্নসূত্র আবার হাতে তুলে নিল, “এলিজাবেথ মসক্রপের কথা কেউ জানতে পারেনি। এমনকি তার যমজ বোন অবধি না। বোনের খোঁজ করার চেষ্টা করেছিল হয়তো বহুবার। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন হাওয়ায় উবে গেছে মেয়েটা।
এখানে যমজদের সম্পর্কে দু-একটা কথা বলে নিই। আমিও সদ্য জানতে পেরেছি বইপত্র পড়ে। যমজ সন্তানদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায় মাঝে মাঝে। গর্ভে তারা একে অপরের উলটোদিকে থাকে বলে একে অপরের সিমেট্রিকালি অপোজিট হয়। মানে আয়নায় দাঁড়ালে আমারা যেমন আমাদের ছায়াটাকে দেখতে পাই, তারাও সেভাবেই একে অপরকে দেখে। এ জন্যে বেশিরভাগ টুইনের একজন ডানহাতি ও অপরজন বাঁহাতি হয়ে থাকে, একজনের মাথার ডানদিক বেশি সক্রিয় অপরজনের বাঁদিক। এছাড়া আর একটি আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য থাকে। এরা নিজেদের মধ্যে জন্মগত আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্যে অনেকসময় নিজেদের মধ্যে আকার-ইঙ্গিত ও বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে মনের ভাব আদান-প্রদান করতে পারে। এমনকি ভাষা অবধি বানিয়ে ফেলতে পারে। চলতি কোনো ভাষা শেখার আগেই এরা নিজেদের মধ্যে কমিউনিকেট করতে পারে। এমনকি মাতৃগর্ভে একে অপরকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে ভাব বিনিময় করে।
আমাদের এই দুই মসক্রপ বোনের মধ্যেও তেমনই কোনো একটা ভাষা চালু ছিল। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ভাষার একটি লিখিত রূপও দেয় তারা। অন্য কেউ দেখলেও বুঝতে পারবে না সেটা। এভাবেই দুই বোন একসঙ্গে বেড়ে উঠছিল। কিডন্যাপ, রেপড হবার পর এলিজাবেথ মসত্রুপ সেই ঘরে পুড়তে পুড়তে আঙুলের আঁচড়ে তার বোনের উদ্দেশ্যেই কিছু লিখে রেখে গেছিল। মনে রাখতে হবে তার বয়স যেহেতু তখন পাঁচ এবং একমাত্র নিজের বোনের সঙ্গেই তার আত্মিক টান। তাই তাকে কিছু বলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক! এদিকে বোনের উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই পারসিলার স্বভাব চরিত্র পালটে যায়। সে একটু একটু করে ভায়োলেন্ট হয়ে পড়তে থাকে। আপনি আয়নায় দাঁড়িয়ে যদি নিজের ছায়াটা না দেখতে পান তাহলে আপনি যেভাবে ক্ষেপে উঠবেন ঠিক তাই। তার অর্ধেক শরীরের অনুপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারে সে। আগুন তার ভিতরের কোনো চোরাকুঠুরিতেও জ্বলছিল। কিন্তু ভস্ম করার মতো কাউকে পাচ্ছিল না সে।
এরপর আরও বছর কুড়ি এগিয়ে আসুন। ভূপতি দত্তের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে কন্দৰ্প দত্ত তখন যুবক হয়ে উঠেছে। আমার ধারণা বাবার কাছ থেকেই কোনোভাবে সে ওই ঘরটার সন্ধান পায়। ঘরটা তাকে টানতে শুরু করে। কিছু যে আছে ঘরটায় সেটা বুঝতে পারে কন্দর্প। এঘরে যে তার বাবার আমলে ভয়ানক কিছু একটা ঘটেছিল সেটা সে ততদিনে ঝাপসা হয়ে আসা নখের আঁচড় আর আগুনের ছাপ দেখে বুঝতে পারে, এছাড়াও হয়তো প্রাচীন কিছু বইপত্র ঘরটা থেকে উদ্ধার করে সে। তাতে কিছু গোপন তন্ত্রের নির্দেশ দেওয়া ছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে সেই তন্ত্র ব্যবহার করার দরকার ছিল না তার তবে ঘরটা তাকে টানতে থাকে।
এই সময় কোনোভাবে তার বন্ধুত্ব হয় পারসিলা মসক্রপের সঙ্গে। বন্ধুত্ব গভীরতর হবার পরপরই পারসিলাকে উত্তর মহলের ঘরের কথা জানায় কন্দৰ্প। সেখানে তখনও এলিজাবেথের নখের আঁচড়ের দাগ ফুটে ছিল দেওয়ালে। নখের আঁচড়ের লেখা দেখে পারসিলা বুঝতে পারে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বোন এলিজাবেথকে। বাবা ও জমিদার বংশের প্রতি ঘৃণায় কন্দর্প দত্তের মনও বিষিয়ে ওঠে তখন। পারসিলা প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে ওঠে।
উত্তরের ওই ঘর দত্ত বংশের হাতে আসার আগে নবাবী আমলে একটি বিশেষ কাজে ব্যবহার হত। সে কাজটা ঠিক কি তা আমি জানি না। আজকের দিনে আর জানা সম্ভব নয়। তবে সেকালে চার্চের হেড প্রিস্টকে চিঠি লিখে জানানো হয় যে চকদীঘি জমিদারবাড়ির আড়ালে কোনো অকাল্ট রিচুয়াল পালন করা হচ্ছিল সেখানে যা সেই সময়ের অন্য যেকোনো ধর্মকে অস্তিত্ব শঙ্কটে ফেলতে পারে। বিশেষ করে মারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা এবং জিনের মাধ্যমে উত্তরপুরুষের সঙ্গে পূর্বপুরুষের স্মৃতির মেলবন্ধন ঘটানোর অলৌকিক ক্ষমতা তারা হস্তগত করেছিল। কোনো প্রাচীন বিলুপ্ত দেবতার উপাসক ছিল তারা।
“কিন্তু এসব তো গুজব। এরকম হাজারটা কথা মানুষ বলে বেড়াতো তখন।” মধুবাবু প্রতিবাদ করে ওঠেন।
“গুজব যে নয় তার প্রমাণ আমি পেয়েছি। তবে দেখাতে হয়তো পারব না। আমাদের মধ্যেই এমন একজন আছে যে সেই অবলুপ্ত বংশের রক্তবাহক…’
একবার মাথা তুলে পায়েলের দিকে তাকিয়েই মাথা নামিয়ে নেয় মালতী। পায়েল তার দিকে না তাকিয়ে আবার গল্পে ফিরে যায়, “কন্দৰ্প দত্ত ও পারসিলা মসক্রপ সেই অলৌকিক শক্তির সন্ধানে মেতে ওঠে। সে শক্তি একবার হস্তগত করতে পারলে ভূপতি দত্তের উপর প্রতিশোধ নেওয়া বিন্দুমাত্র কঠিন হবে না। তবে সেটুকুতেই তাদের প্রতিশোধস্পৃহা নিবৃত হবার নয়। তাদের রাগ গোটা জমিদারবংশের উপরে। এই কমন ইন্টারেস্ট ধীরে ধীরে দু’জনের মাঝে প্রেমের জন্ম দেয়।
এইসময়ে বেশ কিছু ঘটনা আমার কাছে ঝাপসা। তবে এটুকু ধারণা করতে পারি যে নায়েব দিনু রায়ের মেয়েকে খুন করে দীঘির ধারে ফেলে রাখার কাজটা সম্ভবত করেছিল কন্দর্প। কারণ ছিল একটাই, ছেলের অসমকক্ষ প্রেমিকার খুনের দায়টা নৃপতি বা ভূপতি দত্তের উপরেই যাবে। তাদের আইনত সাজা দেবার ক্ষমতা কারও না থাকলেও প্রজাদের চোখে তাদের সম্পর্কে ঘৃণার উদ্রেক হবে। কাজটা সফল হয়, এরপর থেকেই জনমানসে দত্ত জমিদারদের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়।
কিন্তু তার আগে গণ্ডগোলটা বাঁধে অন্য জায়গায়। মেয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ হিসেবে নায়েব দিনুরায় যে দত্তজমিদারবাড়ি আক্রমণ করবে সেটা আগে কন্দৰ্প ভাবতে পারেনি। ডাকাতরা দীঘির ধারে তাকে দেখতে পেয়ে খুন করতে যায়, এবং ঠিক এই সময়েই ঘটনাস্থলে আমাদের খুনির উদ্ভব হয়–কাপড়ে ঢাকা নারীমূর্তি।
উত্তরের অন্দরমহলের সেই গোপন ঘরে যে অলৌকিক দেবতা লুকিয়ে ছিল তাকে সত্যি হয়তো জাগিয়ে তুলতে পেরেছিল পারসিলা মসক্রপ। তাকে জাগিয়ে তোলার জন্যে ভয়ানক কোনো অভিশাপের প্রয়োজন হয়। দেবতা সুপারি কিলার নয়। সে শুধু ইতিহাসের একটা সুতোকে আর এক সুতোর সঙ্গে বুনে দেয়, অসম্পূর্ণ বৃত্তকে সম্পূর্ণ করে, অভিশাপ তার নৈবেদ্য। এলিজাবেথ মসক্রপ আগুনে ঝলসাতে ঝলসাতে যে অভিশাপের ছবি এঁকে গেছিল সে ঘরে, তাতেই জেগে ওঠে সেই আদি দেবতা। তাকে জাগিয়ে তোলার একটি বিশেষ রীতি আছে।
দুই মসক্রপ বোনই ছোট থেকে একটি বিশেষ স্বপ্ন দেখত। উত্তর মহলের সেই গোপন ঘরে ঢুকে পারসিলা মসক্রপ বুঝতে পারে তার স্বপ্নের সঙ্গে ঘরটার কিছু যোগাযোগ আছে।”
ঘরের মধ্যে চাপা গুনগুনটা বেড়ে উঠেছে। নীলাদ্রি হাই তুলতে শুরু করেছে এতক্ষণে। একবার আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে সে বলল, “যতসম আজগুবি গালগল্প। এত সহজে পারসিলা মসক্রপ আর কন্দর্প দত্ত মিলে বেমক্কা দেবতা নামিয়ে ফেলল!”
“পারসিলা মসক্রপের সম্পর্কে আরও কয়েকটা কথা বলার আছে আমার। তবে সেটা একটু পরে বলছি। এখন বললে সব গুলিয়ে যাবে আপনাদের।”
মধুবাবু মুখটা ভার করে আছেন। যেন এতক্ষণ কিছুই শুনতে পাননি তিনি। সনাতন মাটির দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। ঘরে একমাত্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে দু’জনের মধ্যে, মালতী আর মুকেশ খাসনবীশ। দ্বিতীয়জন একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, “কিন্তু আমি একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এদের যাই করার থাকুক না কেন সেটা আজ থেকে দুশো বছর আগেই মিটে গেছে। আজ তাহলে এঘরে এদের কথা আসছে কেন?”
“আসছে, কারণ শুধু ভূপতি দত্ত ও তার পরিবারকে খুন করা পারসিলার উদ্দেশ্য ছিল না। সে চেয়েছিল দত্ত বংশের শেষ রক্তটুকু শেষ করে দিতে। অর্থাৎ সমস্ত উত্তরপুরুষকে সমূলে বিনাশ করতে চেয়েছিল সে। শুধু সেই বংশধরই বেঁচে থাকবে যার গায়ে দত্তবংশ ছাড়াও পারসিলা মসক্রপের রক্ত আছে।”
“কিন্তু তার জন্যে তো তিন ভাইবোন আর তাদের ছেলেমেয়েকে খুন করলেই যথেষ্ট ছিল।
“ওমা! এর মধ্যেই ভুলে গেলেন!” অবাক হয়ে মুকেশের দিকে তাকাল পায়েল, “ভূপতি দত্তের সেই বড় বৌদি, তার সন্তানের গায়েও বইছে দত্ত বংশের রক্ত। অথচ সে যে কোথায় আছে কীভাবে মানুষ হচ্ছে সেটা কন্দর্প আর পারসিলার পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। তারা অন্য একটা পন্থা অবলম্বন করে।”
“কী পন্থা?” এবার সুনন্দা জিজ্ঞেস করে।
“হেরেডিটারি মিউটেশান। অভিশাপের বলে দেবতাকে জাগিয়ে এলিজাবেথ মসক্রপের মৃত্যুর প্রতিশোধ একমাত্র সেই নিতে পারবে যার গায়ে পারসিলা মসক্রপের রক্ত বইছে। সেই শুধু ডায়েরির নির্দেশ পড়ে জাগিয়ে তুলতে পারবে দেবতাকে। এক জন্মে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্মৃতি সঞ্চারিত হবে পরজন্মে। মিশরীয় দেবতা ওসাইরিসের পুনর্জন্মের মতো। পূর্বপুরুষের হত্যার প্রতিশোধ নেবে উত্তরপুরুষ। একে এক ধরনের পজেশান বলতে পারেন। অনেকটা ভর হওয়ার মতো… শুধু পার্থক্য হল ভর একজন মানুষের উপরে হয়। এক্ষেত্রে সেটা বংশানুক্রমিক।”
“তার মানে তুমি বলছ মতীন ছিল সেই পারসিলা মসক্রপ আর কন্দৰ্প দত্তের বংশধর? আর শশিভূষণ ছিল ভূপতি দত্তের অজ্ঞাত বংশধর?”
“প্রথমটা ঠিক, দ্বিতীয়টা ভুল। শশিভূষণ-এর কোনো পূর্বপুরুষ জমিদার বংশের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যে এই অভিশাপের কথা জানতে পারেন। তার কাছ থেকে জমিদারী দেখাশোনা সংক্রান্ত কাগজপত্র পান শশিভূষণ। তাকে খুন হতে হয় এই ইতিহাসের খানিকটা জেনে যাওয়ার জন্যে। একটি বিশেষ জিনের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সদস্যদের যে স্বাধীনতার আগে এবং পরে এই জমিদারবাড়িতে এনে খুন করা হচ্ছে সেটা তিনি বুঝতে পারেন। কিন্তু যারা করছে সেই পারসিলা মসক্রপের বংশধরদের চিহ্নিত করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মধুবাবুর কাছ থেকে শশিভূষণের কথাটা জানতে পেরে তাকে কলকাতায় গিয়ে খুন করে আসে মতীন। মনে করে দেখুন খুনের মাসখানেক আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল সে।”
এতক্ষণ একটানা কথা বলে হাঁপিয়ে গেছিল পায়েল। সে মেঝেতেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। একবার ঘড়ির দিকে তাকায়।
“কলকাতার খুনটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু নলিনী ঘোষকে কী করে খুন করবে মতীন? সেতো আমার সঙ্গে বসেই গল্প করেছিল সারারাত।” মধুবাবু একটু ভেবেচিন্তে দেন যুক্তিটা।
“খুনটা মতীনের নিজে হাতে করার দরকার ছিল না। দেবতাকে জাগিয়ে তোলার যে নির্দেশ বইতে লেখা আছে তার মধ্যে কোনো মন্ত্রের কথা বলা আছে। মতীন আপনার সামনে বসে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু কী বই পড়ছিল দেখেছেন কি?”
“না তা কেন দেখব?” অস্পষ্ট গলায় কথাটা বলেন মধুবাবু।
“দেবতা জেগে উঠলে ভিক্টীম যে কোনো রিফ্লেকশানে তার নিজের মুখের বদলে একটি ছায়া ঢাকা মানুষের মুখ দেখতে পায়। সেই সঙ্গে দুটো জ্বলজ্বলে চোখের তারা। সে আরও ভালো করে দেখে বোঝার চেষ্টা করে কেন ভার মুখটা বদলে গেছে। যত মন দিয়ে দেখতে থাকে তত সে নিজের আত্মার উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। অনেকটা হিপনোটিজমের মতো। তারপরে সে পুরোপুরি আচ্ছন্ন হয়ে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যায়। শশিভূষণের ক্ষেত্রে সে অভিশাপকে প্রয়োগ করতে পারেনি কারণ শশিভূষণ এ বাড়ির চৌহদ্দিতে ছিলেন না তাছাড়া উনি কোনোভাবেই দত্তবংশের জিনের বাহক নন। বললাম না দেবতা সুপারি কিলার নয়। কিন্তু অতীনের ক্ষেত্রে তা পেরেছে।”
“কিন্তু অতীন রান্নাঘরে গিয়েছিল কী করতে?” প্রশ্ন করেন কেশব শৰ্মা।
“নিজে যায়নি। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট হবার জন্যে সকালে ঘুম ভেঙে উঠে শুয়েছিল অতীন। তারপর ঘুম না আসাটা খুব স্বাভাবিক। কেউ জানালা দিয়ে কাগজের বল ছুঁড়ে ডাকে ওকে।”
“কিন্তু কে?” কেশব শর্মা প্রশ্ন করেন। চারপাশটা দেখে নিয়ে একবার ঘড়ির দিকে তাকায় পায়েল। তারপর রহস্যজনকভাবে বলে, “এর জবাব আমি ঠিক চার মিনিট পরে দেব।”
একটু অসন্তুষ্ট হন শর্মা। কিন্তু সেটা মুখে আসতে দেন না। মুকেশের কানে কানে কিছু একটা শলাপরামর্শ করেন তিনি।
সুনন্দা কি যেন ভেবে নিয়ে বলল, “তার মানে তুমি বলছ সেদিন ডাকাতের দল নারীমূর্তি বলতে সেই দেবতাকেই দেখেছিল?”
মাথা নাড়ে পায়েল, “না, সেদিন ডাকাতরা যে নারীমূর্তির কথা বলেছিল সে সম্ভবত পারসিলা মসক্রপ। তারা একটি অন্ধকারে ঢাকা নারীমূর্তির কথা বলেছিল। সেই যে তাদের খুন করেছে সেকথা বলেনি। দেবতা বাস্তবের মাটিতে আবির্ভূত হতে পারেন না। একমাত্র রিফ্লেকশানে ধরা পড়েন।”
“কিন্তু তাহলে তুলি যাকে দু’বার দেখল…
কথাটা বলতে গিয়ে আঁতকে ওঠে সুনন্দা। তুলির নাকের কাছে আঙুল চলে গেছে তার। মেয়েটার নিঃশ্বাস পড়ছে না। সবার অজান্তে বুকের স্পন্দন থেমে গেছে অনেকক্ষণ আগে। মুখটা রং হারাচ্ছে আস্তে আস্তে।
“তুলি… তুলি…” মেয়েটাকে চেপে ধরে চিৎকার করে ওঠে সুনন্দা।
“ও মরে গেছে সুনন্দাদি।” নিচু গলায় বলে পায়েল। তারপর মুখ ফিরিয়ে নেয়।
“কে… কে মারল ওকে?”
ঝোলা ব্যাগের ভিতর থেকে দুটো সবুজ বোতল বের করে টেবিলের উপরে রাখে পায়েল। দুটোই সবুজ। শুধু একটার মাথার কাছে একটু লাল রঙের দাগ লাগান। সুনন্দার দিকে এগিয়ে এসে চাপা অথচ দৃঢ় স্বরে পায়েল বলে,–“আমি।”