চিন্তাবিপ্লব

চিন্তাবিপ্লব

চিঠির তারিখ ২৫ এপ্রিল, ১৮৩১, আর ডিরোজিওর মৃত্যুর দিন ২৩ ডিসেম্বর, ১৮৩১। মাত্র আট মাসের ব্যবধান।

উইলসনকে ডিরোজিও লিখেছিলেন, শিক্ষকের কাজই যে ভবিষ্যতে করব, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। বিচিত্র কর্মস্রোতে ভাসতে ভাসতে জীবনতরি কোথায় কোন অজানা বন্দরে ভিড়বে তা—ও তিনি জানেন না। মনে হয়, শিক্ষকের কাজ করার আর তাঁর ইচ্ছা ছিল না। প্রথম যৌবনে, শিক্ষকতার সাধনার ফলে, অমৃতের বদলে যে গরল ঠেলে উঠবে সমাজের বুকে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তা ছাড়া এই অপমান, এ আঘাত সহ্য করার পর কোথায় বা তিনি শিক্ষকের কাজ করতে যাবেন? করতে গেলেও, মাথা তুলে কাজ করবেন কী করে? আর হিন্দু কলেজ ছাড়া তেমন বিদ্যালয়ই বা কোথায় তখন যেখানে তিনি তাঁর মনের মতো ছাত্র পাবেন এবং স্বাধীনভাবে তাদের শিক্ষা দিতে পারবেন? কবি ও সাংবাদিকের স্বাধীন জীবনযাপন করাই তাঁর ইচ্ছা ছিল। তাঁর পরবর্তী কাজকর্ম দেখে এই কথাই মনে হয়। বয়সের চেয়েও মনের তারুণ্য তাঁর এত বেশি উদ্দাম ছিল যে, চাকরির চিন্তা তাঁর মনে বিশেষ জাগেনি। স্বাধীন সাহিত্যিকবৃত্তির যে বাসনা দীপশিখার মতো তাঁর মনে জ্বলে উঠেছিল তা যে নিয়তির ফুৎকারে এত দ্রুত দৈবাৎ নিভে যাবে, তা—ও তাঁর জানবার কথা নয়।

My sceptre from my hand is riven,
Save Honour, all is lost!

কলেজ থেকে পদত্যাগের চার বছর আগে ১৮২৭ সালে রচিত তাঁরই কবিতায় এই দুটি লাইনে হয়তো তখন তিনি তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করতে পারতেন। তাঁর হাত থেকে যে রাজদণ্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তা কেবল একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের রাজদণ্ড নয়, বাংলা দেশের নবযুগের শিক্ষাগুরুর রাজদণ্ড।

কিন্তু এক্ষেত্রে কি তিনি তাঁর সম্মানটুকু রক্ষা করতে পেরেছিলেন? তা—ও পারেননি। তাঁর মতো আত্মাভিমানী তরুণের আত্মসম্মানই বড়ো সম্পদ, সামাজিক সম্মানও কম কাম্য নয়। আত্মসম্মানের ঔজ্জ্বল্য অভিমানের উত্তাপে হয়তো আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছিল, কিন্তু সেই সামাজিক সম্মান সাময়িকভাবে অন্তত ধুলোয় লুণ্ঠিত হয়েছিল। তাঁর স্বল্পায়ুর দিক থেকে এই সাময়িক ক্ষতিটাই চূড়ান্ত ক্ষতি বলে আদ্যোপান্ত সমস্ত ঘটনাটা এত বেশি মর্মান্তিক। কীসের জন্য তাঁকে এই দুঃসহ অপমান ও কলঙ্কের বোঝা যে বহন করতে হল তা কে বলবে? দৈত্যাকার মিথ্যার তাণ্ডবনৃত্যের দাপটে একজন তরুণ শিক্ষকের জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ইতিহাসের পাতায় শুধু এটুকুই কি লেখা থাকবে?

অতীত যদি কথা বলতে পারত তাহলে সমাজকেই দায়ী করত এই নিষ্ঠুরতার জন্য। বহুকাল ধরে এই নিষ্ঠুরতার নাটক অভিনীত হচ্ছে সমাজের রঙ্গমঞ্চে, স্থিতস্বার্থের চক্রান্তে। কেবল রাজনীতির স্বার্থ নয়, অর্থের স্বার্থ নয়, তার চেয়েও বৃহত্তর স্বার্থ ধর্মের স্বার্থ, শাস্ত্রের স্বার্থ, প্রথা ও সংস্কারের স্বার্থ। সাধারণ মানুষকে অজ্ঞতার গহন অন্ধকারে নির্বাসিত করে মুষ্টিমেয় একদল স্বার্থান্ধ মানুষ চিরকাল ঈশ্বরের পৌরোহিত্য, পরকালের দৌত্য এবং সমাজের নেতৃত্বের একচ্ছত্র অধিকার ভোগ করে এসেছে। এই সহজ অথচ সাংঘাতিক সত্য কথাটার সঙ্গে যখন কেউ সরল সাধারণ মানুষের মুখোমুখি পরিচয় করে দিতে চেয়েছে, তখনই ঘোর বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার জীবনে ও বাইরের সমাজে। বিজ্ঞানের অগ্রদূতকে পিশাচ বলে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে, স্বাধীনতার শহিদকে বলা হয়েছে স্বেচ্ছাচারী দানব, সত্যের পূজারিকে বলা হয়েছে পাষণ্ড প্রতারক, জ্ঞানের সাধককে বলা হয়েছে ভণ্ড বিড়ালতপস্বী। এই কারণে আমাদের দেশে নবযুগপ্রবর্তক রামমোহন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন, বিদ্যাসাগর উপেক্ষিত হয়েছেন, সমাজজীবনে নির্বাসনদণ্ড ভোগ করেছেন এবং আজও পর্যন্ত লোকচিত্তকে কৃতজ্ঞতায় উদবুদ্ধ করতে পারেননি। ডিরোজিও একই কারণে কলঙ্কিত হয়েছেন এবং আজও বিস্মৃতির অন্ধকারে লুপ্ত হয়ে রয়েছেন। তাঁর সান্ত্বনা এই যে, তিনি জাতিতে বাঙালি হিন্দু নন, মুসলমান নন, একজন ফিরিঙ্গি।

হঠাৎ যে ঝড় উঠে তাঁর প্রকাশোম্মুখ জীবনকে ছিন্নভিন্ন করে দিল, তার উৎস কোথায়? বাংলার তরুণ ছাত্রদের কেবল কলেজের ছাত্র মনে না করে, নবযুগের রূপকার মনে করে তিনি গড়তে চেয়েছিলেন, এই কি তাঁর অপরাধ, এবং এই কি ঝড়ের কারণ? অগণিত চাকরের মতো তিনি নিশ্চিন্তে চাকরি করতে পারেননি, এবং চক্রবৎ রুটিনের চাকায় ঘুরতে ঘুরতে জীবনটাকে আরও দশজনের মতো বিকৃত বিজৃম্ভণে কাটিয়ে দিতে পারেননি, এইটাই কি তাঁর অপরাধ এবং ঝড়ের কারণ? নবীন বাংলার তরুণ ছাত্রদের তিনি নবযুগের নির্মল যুক্তি ও শানিতবুদ্ধির বলে বলীয়ান নির্ভীক সমাজসেনা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, এই তাঁর অপরাধ, এবং এইটাই তাঁকে ঘিরে ঝড় ওঠার কারণ।

ডিরোজিও নিজেই বা কোথা থেকে ঝড়ের এই উৎসটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন? কী সেই জীবনমন্ত্র, কী সেই অমূল্য জ্ঞানের রত্ন, কী—ই বা সেই বিদ্যা, যার জাদুস্পর্শে এ দেশের অচল—অটল সমাজের বড়ো—বড়ো পাথুরে স্তম্ভগুলি পর্যন্ত পড়ে উঠল?

যে যুক্তি ও বুদ্ধির জ্যোতিতে ডিরোজিও বাংলার তরুণদের জীবনের পথ আলোকিত করতে চেয়েছিলেন, তার বিকাশ হয় আঠারো শতকে। এই সময় মানবসমাজে এক অত্যাশ্চর্য বুদ্ধিবিপ্লব ঘটে এবং তমসার সমুদ্রগর্ভ থেকে আলোকোজ্জ্বল যুক্তির উদ্ভব হয়। সতেরো শতকে বেকন (Bacon) ও লক (Locke) সংস্কার—শৃঙ্খল থেকে মোহাচ্ছন্ন মানববুদ্ধির মুক্তির বাণী ঘোষণা করেন। আরিস্ততলের অনুমান—ন্যায়ের পথ ছেড়ে বেকন অনুসন্ধান পরীক্ষার দ্বারা কার্যকারণসম্বন্ধ নির্ণয়ের ও সত্যানুসন্ধানের নতুন পথ নির্দেশ করেন। জনশ্রুতি, কুসংস্কার, আপ্তবাক্য প্রভৃতি নানা রকমের ভূতেরা দৌরাত্ম্য করে এই সত্যের পথে। তাদের সাহস করে বিদায় করতে না পারলে সত্যের আলোকসন্ধান অবশেষে আলেয়ার পশ্চাদ্ধাবনে পরিণত হয়। লক বলেন যে, প্রাচীন দার্শনিকদের মতামত অধিকাংশই অর্থহীন বাক্যের পসরা ছাড়া কিছু নয়। মানসপ্রত্যক্ষ ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের অতীত যা কিছু তা আমাদের জানবার কোনো উপায় নেই।

আঠারো শতকে বেকন ও লক প্রদর্শিত এই যুক্তিবাদ ও মুক্তচিন্তা আরও কয়েকজন মনীষী ধর্মের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন, তাঁদের একেশ্বরবাদী বা ডিয়িস্ট (Deist) বলা হয়। তাঁরা ছাড়াও ফ্রান্সের এনসাইক্লোপিডিস্টরা যুক্তিবাদের পথে দুর্দান্ত অভিযান শুরু করেন। তাঁদের প্রধান সমালোচনার পাত্র হলেন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকরা। স্বনামধন্য হলেন ভলটেয়ার, দিদেরো, হেলভিটিয়াস, দা’লেমবের, হলব্যাথ, কন্ডের্সে, রুশো ও ভলনি। কেউ ছিলেন নাস্তিক জড়বাদী, কেউ ঘোর সংশয়বাদী এবং কেউ—বা অদ্বৈতবাদী! ভলটেয়ার, রুশো ও ভলনি একেশ্বরবাদী। হলব্যার্থ, হেলভিটিয়াস, লা মেত্রি ও দিদেরো ছিলেন নাস্তিক। এঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব, আত্মার অমরত্ব এবং পাপপুণ্যের পারলৌকিক দণ্ড—পুরস্কারে বিশ্বাস করতেন না। দার্শনিক ডেভিড হিউম ছিলেন সংশয়বাদী, অলৌকিক ক্রিয়ায় (miracles) তাঁর আস্থা ছিল না। স্বাভাবিক ও বৈজ্ঞানিক প্রণালিতে তিনি ধর্মের উৎপত্তি ও ইতিহাস ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। ধর্মের বাহ্য অনুষ্ঠান ও নানা মতকে হিউম চতুর যাজক—পুরোহিতদের স্বার্থজনিত সৃষ্টি বলে প্রচার করেন। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে পাশ্চাত্য সমাজে এই বৈপ্লবিক চিন্তালোড়ন চলতে থাকে। নবযুগের বাংলার নতুন বিদ্যামন্দিরে, বিশেষ করে কলকাতা শহরে হিন্দু কলেজে, এই নব্যচিন্তার বার্তা স্বাভাবিকভাবেই পৌঁছোয়। প্রতিষ্ঠাতাদের মতে হিন্দু কলেজ ছিল : ‘The main channel by which real knowledge may be transferred from its European sources into the intellect of Hindusthan.’ কলেজ প্রতিষ্ঠার এই উদ্দেশ্যের কথা মনে রাখলে পাশ্চাত্য ভাবধারার ঘাতপ্রতিঘাতে আশ্চর্য হবার কিছু থাকে না। কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ড. টাইটলার ও ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসন প্রমুখ দু’চারজন সাহিত্যদর্শন—বিজ্ঞানে পণ্ডিত ইংরেজও ছিলেন। পাশ্চাত্য জীবনাদর্শের ভগীরথ হয়তো তাঁদেরই হওয়া উচিত ছিল। তাঁরা যে একেবারেই তা হননি তা নয়। কিন্তু ডিরোজিওর মতো বিষাণ বাজিয়ে ঘুমন্ত সমাজকে কেউ এমনভাবে জাগিয়ে তুলতে পারেননি। ডিরোজিওকে কোনোমতেই বিদেশি ইংরেজ বলা যায় না, এবং জাতিতে পোর্তুগিজ ফিরিঙ্গি হলেও ভারতীয়ই তাঁকে বলতে হয়। এ কথাও স্বীকার করতে হয় যে, ভারতীয় ডিরোজিও, তাঁর পূর্বসূরি রামমোহনের মতো নবযুগের পাশ্চাত্য আদর্শের প্রবাহকে বাংলার তথা ভারতের জীবনগঙ্গার সঙ্গে মিলিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এরকম সক্রিয় ও দুঃসাহসিক চেষ্টা তাঁর আগে আর কেউ করেননি।

হিন্দু কলেজের আগে ড্রামন্ডের ধর্মতলা অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেখানে এ দেশি ও বিদেশি ছাত্ররা একসঙ্গে বিদ্যাশিক্ষা করত। প্রাচ্য—পাশ্চাত্য ভাবধারার তীর্থসংগম স্কচ শিক্ষক ড্রামন্ড আগেই ধর্মতলাতে রচনা করেছিলেন। হিন্দু কলেজের মতো তার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি ছিল না বটে, কিন্তু এ দেশের ইয়োরোপীয় জ্ঞানবিদ্যার ‘channel’ হিসেবে তার গুরুত্বও কম ছিল না। কলকাতা শহরে ধর্মতলায় পূর্ব—পশ্চিমের এই মিলনতীর্থে ডিরোজিও শিক্ষালাভ করেছিলেন। শিক্ষক ড্রামন্ড শুধু যে স্কটল্যান্ডের একজন বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন তা নয়, ঘোর সংশয়বাদী ও যুক্তিবাদী স্কচ দার্শনিক ডেভিড হিউমের গোঁড়া ভক্ত ও শিষ্য ছিলেন। কুসংস্কার ও ধোঁয়াটে আধ্যাত্মিকতাকে তিনি ঘৃণা করতেন এবং জীবনটাকে মনে করতেন জ্যামিতির মতো প্রমাণসাপেক্ষ ব্যাপার। সম্যক বিষয়জ্ঞানকে তিনি ঈশ্বরজ্ঞান মনে করতেন এবং বন্ধনহীন বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তিকে বলতেন নবযুগের যাজক। জ্ঞানাতীত যুক্তি বহির্ভূত যেসব বিষয়, তাঁর মতে তা মানুষের বিবেচ্য নয়। অ্যাকাডেমিতে এই যুগচিন্তার বীজ ড্রামন্ড তাঁর ছাত্র ডিরোজিওর মনে বপন করেছিলেন। ডিরোজিওর মানসভূমিতে সেই বীজ অল্পদিনের মধ্যে সোনা ফলিয়েছিল। সেই সোনার ফসলের বীজ ডিরোজিও নিজে আবার হিন্দু কলেজে তাঁর ছাত্রদের মানসক্ষেত্রে আবাদ করেছিলেন। মাত্র দশ—বারো বছর পরের কথা। তাঁর ফসলের ঐশ্বর্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল বাঙালি—সমাজ। নব্যবঙ্গের তরুণদের ক্ষুরধার বৃদ্ধি ও শানিত যুক্তির তরবারি যখন ধর্ম, আচার—অনুষ্ঠান, কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার আবরণ ছিন্ন করে জ্ঞানের আলোকে বিচ্ছুরণের জন্য উদ্যত হয়ে উঠল, তখন শোরগোল পড়ে গেল রক্ষণশীল সমাজে। তাঁরা শিউরে উঠলেন, রাষ্ট্রবিপ্লবের ভয়ে নয়, চিন্তাবিপ্লবের আতঙ্কে।

সমাজে যত রকমের বিপ্লব আছে, তার মধ্যে চিন্তাবিপ্লবই সবচেয়ে ভয়ংকর। সেই বিপ্লবের মারাত্মক লক্ষণ দেখে প্রবীণেরা সন্ত্রস্ত হলেন। ত্রাস থেকে ক্রোধের উৎপত্তি হল এবং সমস্ত ধূমায়িত আক্রোশ বজ্রের মতো কীভাবে তরুণ শিক্ষক ডিরোজিওর মাথার উপর ফেটে পড়ল তা আমরা দেখেছি।

স্বভাবতই সকলে বলবেন যে কলকাতার হিন্দুসমাজের ‘বর্তমান মানসিক উত্তেজনার কাছে’ একজন যুবকের জীবন এইভাবে নিঃসংকোচে উৎসর্গ করা যুক্তিহীন ও হৃদয়হীন। কিন্তু যুক্তি ও হৃদয়ের দু’পায়ে ভর দিয়ে মানুষের সমাজ সবসময় সোজা হয়ে এগিয়ে চলে না। তা যদি চলত তাহলে সামাজিক জীবনে যুগে—যুগে সংকটের প্রলয়মেঘ ঘনিয়ে উঠত না। যুক্তি ও হৃদয়ের শক্তি ক্ষয় হয়ে—হয়ে যখন নিঃশেষ হয়ে যায়, তখনই সমাজ পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মতো ভেঙে পড়ে, তার আর চলার শক্তি থাকে না। বাংলার সমাজের এরকম এক সংকটকালে ডিরোজিওর জীবন জনশ্রুতির পূজায় নিবেদন করেছিলেন হৃদয়হীনেরা, কারণ পঙ্গু সমাজের দেহে চলচ্ছক্তি সঞ্চারের স্বপ্ন দেখেছিলেন ডিরোজিও।

জনতার উত্তেজনা নয় শুধু, স্মৃতিশক্তি অস্থায়ী। হিন্দু কলেজ ও ডিরোজিওমুখী প্রবল উত্তেজনার স্রোত দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়নি বটে, কিন্তু তারই আবর্তে ডিরোজিওর জীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেল, আর তা আত্মপ্রতিষ্ঠা পেল না। ঝড়ের পর নতুন সূর্যোদয় দেখার জন্য ডিরোজিও জীবিত ছিলেন না। তাঁর ‘Morning after a Storm’ কবিতাটি মনে হয় যেন তাঁর জীবনের এই ভাঙনেরই প্রতিধ্বনি।

I wandered forth, and saw the great nature’s power.
The Hamlet was in desolation laid
By the strong spirits of the storm; there lay
Around me many a branch of giant trees
Scattered as leaves are by the southern breeze,
Upon a brook, on an autumnal day;
Cloud piled on cloud was there, and they did seem
Like the fantastic figures of a dream,
Till morning brighter grow, and then they rolled away.

‘অবাক হয়ে আমি দেখেছিলাম প্রকৃতির বিচিত্র লীলা, উন্মত্ত ঝড়ের দাপটে কেমন করে ধূলিসাৎ হয়ে গেল কুঁড়েঘরটি। আমার চারিদিকে বড়ো বড়ো মহিরুহের ডালপালা ছড়ানো, নদীতটে দক্ষিণে হাওয়া হেমন্তে যেমন পাতা ছড়ায় তেমনি। মেঘের উপরে মেঘ জমে আছে, দেখে মনে হয় যেন স্বপ্নঘোরের ভয়ংকর প্রেতমূর্তি সব। ভোরের আলো যখন উজ্জ্বলতর হল, তখন আলোয় মিলিয়ে গেল সেইসব দৈত্যাকার মেঘ।’

ঝড়ের পরে সমাজের আকাশে এই দৈত্যাকার মেঘপুঞ্জকে ডিরোজিও উদার আলোর বুকে বিলীন হতে দেখেননি।

To India–My native land

My country in the day of glory past
A beauteous halo circled round thy borw,
And worshipped as a deity thou wast,
Where is that glory, where that reverence now,
Thy eagle pinion is chaired down at last,
And grovelling in the lowly dust art thou :
Thy minstrel hath no wreath to weave for thee
Save the sad story thy misery!
Well––let me dive into the depths of time,
And bring from out the ages that have rolled
A few small fragments of those wrecks sublime,
Which human eye may never more behold :
And let the guerdon of my labour be
My fallen country! one kind wish from thee!

1827

ডিরোজিওর কবিতা

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *