উল্কাপাত

উল্কাপাত

ডিরোজিও কবি ছিলেন, কিন্তু তাঁর কবিত্বশক্তির পূর্ণবিকাশের আগে তাঁর মৃত্যু হল। আঠারো বছর বয়সে তাঁর যে প্রথম কাব্যসংকলন প্রকাশিত হয় তার ভূমিকায় তিনি লেখেন :*

Born, and educated in India, and at the age of eighteen, he ventures to present himself as a candidate for public fame; and begs leave to premise, that only a few hours gained from laborious daily occupations have been devoted to these poetical efforts.

ভারতবর্ষে জন্ম ও শিক্ষালাভ করে আঠারো বছর বয়সেই ডিরোজিও সমাজের কাছে কবিখ্যাতি দাবি করেছিলেন। বাইশ বছর বয়সের মধ্যেই এই দাবিপূরণের জন্য যা কিছু প্রচেষ্টা তাঁর শেষ হয়ে গিয়েছিল। তা—ও সর্বক্ষণ তাঁর প্রাণমন যে তিনি কাব্যচর্চায় নিয়োগ করতে পেরেছিলেন তা নয়। দৈনন্দিন শ্রমসাধ্য কাজকর্মের ফাঁকে—ফাঁকে সামান্য যেটুকু কাব্যচর্চা করার সময় পেয়েছিলেন তিনি, তারই ফল হল তাঁর কাব্যসংকলনের কবিতাগুলি।

১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর কাব্যসংকলন মুদ্রিত হবার আগে তিনি ‘as a candidate for poetic fame’ আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ‘ইন্ডিয়া গেজেট’, ‘ক্যালকাটা লিটারারি গেজেট’ প্রভৃতি পত্রিকার পৃষ্ঠায়। ইয়োরোপীয় মহলে এবং তাঁর ইংরেজি—শিক্ষিত ছাত্রদের মধ্যে তাঁর কাব্যশক্তির কলগুঞ্জন তখনই শোনা গিয়েছিল। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ লন্ডনের প্রেসেও প্রশংসা লাভ করেছিল শোনা যায় (‘ক্যালকাটা গেজেট’, ২৯ ডিসেম্বর, ১৮৩১)। ‘ক্যালকাটা গেজেট’ লিখেছেন : “They evinced a vigour of thought, and originality of conception, a play of fancy, and a delicacy of tone, which occasioned the more surprise when the reader came to know that the author was an East Indian boy, whose peregrinations had never extended beyond limits of Bengal.”

বাংলা দেশে ফিরিঙ্গি—সমাজে জন্মগ্রহণ করে, তার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জীবন কাটিয়ে, কিশোর বয়সে এই কবিতা রচনা করা নিশ্চয় কাব্যশক্তির পরিচায়ক। কিন্তু অনুভূতির সঙ্গে অভিজ্ঞতার এমন সংমিশ্রণ ডিরোজিওর জীবনের স্বল্প পরিসরে সম্ভব হয়নি, যাতে তাঁর প্রত্যয় ও কল্পনায় মৌলিকতার স্বাক্ষর ফুটে উঠতে পারে। বস্তুত সেরকম স্বাক্ষর তাঁর কবিতায় বিশেষ নেই। ‘জঙ্গীরার ফকির’ কবিতা এবং সংকলনের ছোটো—ছোটো কবিতার মধ্যে সে যুগের ইংরেজ রোমান্টিক কবিদের প্রভাব অত্যন্ত স্পষ্ট, বিশেষ করে স্কট ও বায়রনের। কোনো—কোনো ক্ষেত্রে শিশুসুলভ অনুকরণ বলে মনে হয়। কিন্তু বয়সের দিক থেকে তাঁর এ ত্রুটি মার্জনীয়, এবং এ কথাও স্বীকার্য যে, কৈশোরেই ডিরোজিও বিস্ময়কর কবিত্বশক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর কবিখ্যাতির দাবিও কিছুটা পূর্ণ হয়েছিল, যদিও সর্বকালের মতো সেকালেও তাঁর কবিতার নিন্দুকের অভাব ছিল না। কেউ কেউ বলেছেন যে, ডিরোজিও আরও অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা লিখতে পারতেন, যদি বন্ধুবান্ধব ও স্তাবকদের ‘flattery’ ও ‘sugar-plums’ তাঁর কচি মাথাটিকে বিগড়ে না দিত। কেউ বলেছেন, তাঁর কবিতায় ‘oriental image’—এর ঝলমলানি এবং smart conceits’—এর কৌশল ছাড়া আর কিছু নেই।*

শোনা যায়, কবি হিসেবে ডিরোজিওর খ্যাতি হবার পর তাঁর অহমিকা ব্যক্তিগত আচারে—ব্যবহারে পর্যন্ত নাকি বেশ উগ্রভাবে প্রকাশ পেত। সাহিত্যক্ষেত্রে তিনি নিজেকে একজন ক্ষণজন্মা ‘প্রতিভা’ বলে মনে করতেন এবং নিজের মতামতকে সবসময় সকলের উপরে শ্রেষ্ঠ আসন দিতেন। তাঁর এই দম্ভের জন্য অনেকে তাঁকে পছন্দ করতেন না, এমনকী তাঁর ন্যায্য কবিসম্মানটুকুও দিতে কুণ্ঠিত হতেন। একদিন ডিরোজিও এক বন্ধুর বাড়িতে বোধহয় সাহিত্যের আড্ডায় যোগ দিতে যান। বাড়ি পৌঁছে ঘরের ভিতর থেকে তাঁর নামে আলোচনা শুনতে পেয়ে তিনি থমকে দাঁড়ান। ঘরের মধ্যে তাঁরই কবিতা নিয়ে তর্ক হচ্ছিল। কে—একজন বলছিলেন, ‘as for Derozio, I allow he possesses fancy, but my Khansamah possesses more judgement than he,’ এই কথা শোনার পর ডিরোজিও সেই বন্ধুর বাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন, তারপর আর কখনো তাঁর বাড়িমুখো হননি।

বিদ্বেষকানা নিন্দুকদের এই নিন্দা অথবা গুণমুগ্ধ স্তাবকদের অতিপ্রশংসা, কোনোটাই কবি হিসেবে ডিরোজিওর প্রাপ্য নয়। তবে অতি অল্প বয়সে কবিখ্যাতির জন্য সেকালের দিনে তিনি যদি দাম্ভিক হয়ে থাকেন তাহলে তা মার্জনীয়। প্রথম যৌবনের চাপল্য ও উদারতা তাঁর কর্মক্ষেত্রে যেমন, সাহিত্যক্ষেত্রেও তেমনি প্রকাশ পেয়েছিল। ডিরোজিও নিজেও ‘the imperfections of his litte work’—তাঁর কবিতাবলির দোষত্রুটি ও অপূর্ণতা স্বীকার করেছেন। কিন্তু সব ত্রুটি ও অপূর্ণতা সত্ত্বেও, যেটুকু সম্মান ও স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে তিনি দাবি করতে পারেন তা হল—নবযুগের নবচেতনার প্রথম ভারতীয় কবির সম্মান।

ডিরোজিওর আগে আর কোনো ভারতসন্তান, মাতৃভাষায় বা ইংরেজিভাষায়, নবযুগের কল্পনা ও চিন্তা কাব্যে প্রকাশ করেছেন কি না জানি না। যদি অন্য কেউ তা করে থাকেন (১৮২৭ খ্রিস্টাব্দের আগে) তাহলে নবযুগের প্রথমপর্বের কবিদের মধ্যে আমাদের দেশে ডিরোজিও অগ্রগণ্য বলে স্বীকৃত হবেন। এইটুকু স্বীকৃতিতেই তাঁর ঋণ শোধ হবে না। ব্রিটিশ যুগে পরাধীন ভারতবর্ষে, কোম্পানির আমলও শেষ হয়নি যখন, কিশোর কবি ডিরোজিও তখন ভারতের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন ও গান রচনা করেছিলেন। স্বাধীন ভারতের বেদনা ও কামনা তাঁরই কাব্যে স্বতঃস্ফূর্ত ছন্দের সর্বপ্রথম মূর্ত হয়ে উঠেছিল। কেবল এই কারণেও ডিরোজিও এ দেশের ইতিহাসে স্থায়ী শ্রদ্ধার আসন দাবি করতে পারেন।

তাঁর কবিতার একটা প্রধান সুর হল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং দাসত্ব থেকে মুক্তির আবেদন। ‘The Harp of India’, ‘Freedom to the Slave, ‘Thermopylae’, ‘To India, My Native Land’ প্রভৃতি কবিতায় এই সুর উচ্চগ্রামে ধ্বনিত হয়ে উঠেছে।* Harp of my country, let me strike the strain! অথবা ‘থার্মোপলি’র কবিতায়

Why they fought, and why they fell?
‘Twas to be free

How liberty in death is won.
What deeds with Freedom’s sword are done
In freemen’s hands!
They fought for free and hallowed graves
They scorned to breathe the breath of slaves

অথবা ক্রীতদাসের মুক্তি কবিতায়

 How felt he when he first was told
 A slave he ceased to be,…
 He knelt no more; his thoughts were raised.
 He felt himself a man
 

Blest be the generous hand that breaks
 The chain a tyrant gave,
 And feeling for degraded man
 Gives freedom to the slave.

মানবপ্রধান বা ‘হিউম্যানিস্ট’ নবযুগের এই মানবমুক্তির বাণী এর আগে কখনো কোনো ভারত—কবির কাব্যবীণায় এমন সুরে ঝংকৃত হয়ে ওঠেনি। তাঁর ‘হে ভারত!’, ‘স্বদেশ আমার’ কবিতার মধ্যেও পরাধীনতার এই গভীর বেদনার সুর গুমরে উঠেছে।

‘স্বদেশ আমার, কিংবা জ্যোতির মণ্ডলী!
ভূষিত ললাট তব; অস্তে গেছে চলি
সে দিন তোমার; হয়ে সেই দিন যবে
দেবতা সমান পূজ্য ছিলে এই ভবে!
কোথায় সে বন্দ্যপদ! মহিমা কোথায়!
গগনবিহারী পক্ষী ভূমিতে লুটায়।
বন্দীগণ বিরচিত গীত উপহার
দুঃখের কাহিনী বিনা কিবা আছে আর?
দেখি দেখি কালার্ণবে হইয়া মগন
অন্বেষিয়া পাই যদি বিলুপ্ত রতন
কিছু যদি পাই তার ভগ্ন অবশেষ
আর কিছু পরে যার না রহিবে লেশ।
এ শ্রমের এই মাত্র পুরস্কার গণি;
তবু শুভ ধ্যায় লোকে, অভাগা জননী।’*
—দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর—কৃত অনুবাদ

কাব্যিক মাধুর্য ও উৎকর্ষের দিক দিয়ে বিচার করলে উচ্চাঙ্গের কবিতা এগুলিকে নিশ্চয় বলা যায় না। ডিরোজিওর অধিকাংশ কবিতাতেই প্রকাশ পেয়েছে যৌবনসুলভ ক্ষিপ্রতা ও অস্থিরতা। জীবনের অভিজ্ঞতার মূলধনও তাঁর এত অল্প ছিল যে, প্রধানত শিক্ষালব্ধ ভাবধারা থেকেই তাঁকে কাব্যের প্রেরণা ও উপাদান দুইই সংগ্রহ করতে হয়েছে। অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির একাত্মতার ফলে কবিতায় যে অনবদ্য লাবণ্য ফুটে ওঠে, তা তাঁর কবিতায় বিশেষ ফুটে ওঠেনি। তবু তাঁর কাব্যের বিষয়বৈচিত্র্য ও কল্পনার ঐশ্বর্য দেখে মনে হয়, আরও কিছুকাল বেঁচে থাকলে হয়তো তাঁর কাব্যপ্রতিভার আরও সুপরিণত প্রকাশ হতে পারত।

১৮৩১, ২৩ ডিসেম্বর কয়েকদিনের অসুখে ডিরোজিওর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স তখন বাইশ বছর আট মাস।

অসুখের সময় তরুণ ছাত্ররা তাঁর রোগশয্যার পাশে বসে সেবাশুশ্রূষা করতেন। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত নাকি তাঁর অনুসন্ধানী মনের আকুলতা এতটুকু কমেনি। তরুণদলের অন্যতম মুখপাত্র মহেশচন্দ্র ঘোষ মৃত্যুক্ষণ পর্যন্ত তাঁর কাছে ছিলেন। ডক্টর টাইটলার, ডক্টর উইলসন, ডক্টর গ্র্যান্ট, ডেভিড হেয়ার এবং তাঁর গুণমুগ্ধ আরও অনেক ব্যক্তি তাঁকে দেখতে যেতেন, এবং রোগশয্যাতেও নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ—আলোচনা করার চেষ্টা করতেন। শোনা যায়, পাদরি হিল (যাঁর বক্তৃতার পরে ‘The whole town was literally in an uproar’) তাঁর সঙ্গে অসুখের সময় সাক্ষাৎ করে খ্রিস্টধর্ম বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চেয়েছিলেন। মহেশচন্দ্র বলেন, মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ডিরোজিও নিজেকে ‘খ্রিস্টান’ বলে স্বীকার করেননি। এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘ধর্ম বা ঈশ্বর সম্বন্ধে চূড়ান্ত সত্য কি তা আজও আমি জানি না। আমার অনুসন্ধান শেষ হয়নি এখনও।’ মহেশচন্দ্রর উক্তি এ বিষয়ে মিথ্যা না—হবারই সম্ভাবনা, কারণ ডিরোজিওর ছাত্রদের মধ্যে কৃষ্ণমোহনের আগে মহেশচন্দ্রই খ্রিস্টান হয়েছিলেন। ডিরোজিও নিজেকে খ্রিস্টান বলে স্বীকার করে গেছেন, এ কথা জানলে তিনি নিশ্চয় খুশি হয়ে তা প্রচার করতেন।

ডিরোজিও মৃত্যুর পর Indian Register পত্রিকা তাঁর ধর্মমত সম্বন্ধে লেখেন : “That he did not view Christianity as a communication from the divinity to fallen man is well-known; but it is perhaps impossible to say in what manner he came to fall into such an opinion.” (Calcutta Gazette, February 13, 1832) খ্রিস্টধর্মের নৈতিক আদর্শের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল, কিন্তু তাঁর ঈশ্বর—মাহাত্ম্য বা অলৌকিকতায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন না। কেবল খ্রিস্টধর্ম নয়, সব ধর্মের প্রতি তাঁর এই একই মনোভাব ছিল। ধর্মের আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও অলৌকিক ব্যাখ্যান যুক্তি দিয়ে তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। তাই ডিরোজিওকে ঠিক খ্রিস্টধর্মী না বলে, মানবধর্মী বলাই বোধহয় সংগত। রামমোহনের পরে এবং বিদ্যাসাগরের আগে এ দেশে নবযুগের হিউম্যানিস্ট চিন্তাধারার অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন ডিরোজিও।*

কলকাতা শহরে দক্ষিণ পার্ক স্ট্রিটের প্রাচীন গোরস্থানে বহু প্রখ্যাত ব্যক্তির সমাধি আছে। ডিরোজিও এই গোরস্থানেই সমাধিস্থ। তাঁর কীর্তির কোনো চিহ্ন নেই সেখানে। আজ তাঁর সমাধি খুঁজে বার করাও কঠিন। গোরস্থানের পশ্চিম সীমায় এক কোণে জনৈক মেজর মেলিঙের সমাধির পাশে ডিরোজিওর কবর। তাঁর মৃত্যুর পরে আনুমানিক আটশত টাকা চাঁদা উঠেছিল স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণের জন্য। কিন্তু সেই টাকার তহবিল পরে কোথায় যে উধাও হয়ে যায়, কেউ তা জানতে পারেননি।**

গোরস্থানে ডিরোজিওর স্মৃতিচিহ্ন না থাকলেও, বাংলার তরুণদের মানসলোকে তিনি অমর হয়ে থাকবেন।

মহানগরীর কোলাহলময় রাজপথের পাশে হয়তো তাঁর কবিচিত্ত সমাধি কামনা করেনি। স্বরচিত এই কবিতাটিতে হয়তো তাঁর যোগ্য সমাধির বাসনাই তিনি ব্যক্ত করেছেন :

 Be it beside the ocean’s foamy surge,
 On an untrodden solitary shore,
 Where the wind sings an everlasting dirge,
 And the wild wave, in its tremendous roar
 Sweeps o’er the sod!––There let his ashes lie
 Cold and unmourned––

ডিরোজিওর হঠাৎ—মৃত্যুতে তরুণরা বিচলিত ও বিষণ্ণ হলেও হতাশ হননি। দ্বিগুণ উদ্যমে তাঁরা আদর্শের সংগ্রাম আরম্ভ করলেন। পাশ্চাত্য বিদ্যাশিক্ষার জন্য এতদিন ইয়োরোপীয়দের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়েছিল, এখন আর তা থাকবার প্রয়োজন নেই। হিন্দু কলেজের কৃতবিদ্য ছাত্ররা বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে নিজেরাই ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠায় উদযোগী হয়ে উঠলেন। নবযুগের জ্ঞানের আলোকবর্তিকা বহন করার গুরুদায়িত্ব তাঁরা নিজেরাই গ্রহণ করলেন। তরুণদের মুখপত্র ‘এনকোয়ারার’ লিখলেন :

The spirit of liberalism has been widely diffused, and that the march of intellect will now be retorted, is far from probable. The rays that have emanated from the Hindoo College and that are now diverging to other places, must eventually dissipate the mists of ignorance and superstition… The liberal, although now persecuted by the brutal tyranny of priestcraft, will soon have occasion to seal his triumph in the overthrow of the ignorance

—India Gazette, 6 September, 1831

মৃত্যুর কিছদিন আগে তরুণদের ভবিষ্যৎ জীবনের এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে ডিরোজিও লিখেছিলেন :

Expanding, like the petals of young flowers;
I watch the gentle opening of your minds.
And the sweet loosening of the spell that binds
Your intellectual energies and powers,
That stretch (like young bird in soft summer hours)
Their wings to try their strength. O how that winds
Of circumstances, and freshening April showers
Of early knowledge, and unnumbered kinds
Of new perceptions shed their influence;
And how you worship Truth’s omnipotence!

What joyance rains upon me, when I see
Fame, in the mirror of futurity,
Weaving the chaplets you are yet to gain.
And then I feel I have not lived in vain.
–The Bengal Annual, 1831

ডিরোজিওর মৃত্যুকালে বাংলার তরুণরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলছিলেন ‘to try their strength’—শক্তি পরীক্ষার জন্য। তরুণদের উজ্জ্বল দৃষ্টির সামনে নবযুগের মুক্ত—জীবনের এক বলিষ্ঠ কল্পনা কায়া ধারণ করেছিল ধীরে—ধীরে। অবাধ চিন্তা, সত্য সুন্দর ও সবল নীতির যাত্রাপথে তাঁরা বহু বাধাবিঘ্ন আশঙ্কা করছিলেন বটে, কিন্তু যাত্রা যখন শুরু হয়েছে একবার, তখন তার বিরতি বা পশ্চাদগতি যে আর সম্ভব নয়, তা—ও তাঁরা উপলব্ধি করছিলেন। হিন্দু কলেজের শিক্ষার আলোক চারদিকে ভোরের আলোর মতো বিচ্ছুরিত হয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করছে দেখে তাঁরা আশান্বিত হয়েছিলেন। জ্ঞানের কাছে অজ্ঞানতার, সুশিক্ষার কাছে অশিক্ষা—কুশিক্ষার, বিদ্যার কাছে অবিদ্যার, যুক্তিবুদ্ধির কাছে জাদুমন্ত্রের, আলোর কাছে অন্ধকারের পরাজয় যে আগামীকালে অনিবার্য, এ সত্যও তাঁদের কাছে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল।

ডিরোজিওর মৃত্যুতে একটি তারা খসে গেল বাংলার আকাশ থেকে। উজ্জ্বল তারা। কিন্তু অগণিত তারার আলো তাতে কি ম্লান হবে কোনোদিন? তারুণ্যের মনের আকাশে যে দীপ ডিরোজিও জ্বেলেছেন, তা আর নিষ্প্রভ হবে না। মুক্তচিন্তার নির্মল হাওয়ায় তার শিখা ক্রমেই উজ্জ্বলতর হবে।

……….

* Poems : by H.L.V-Derozio, Printed for the author by the Baptist Mission Press, Calcutta, 1827.

* পরিশিষ্ট ‘ক’ দ্রষ্টব্য।

* ডিরোজিওর নিজের সংকলনে ‘The Harp of India’ প্রথম কবিতারূপে স্থান পেয়েছে। ব্র্যাডলে—বার্ট সম্পাদিত ডিরোজিওর কাব্যসংকলনে (Poems of Henry Louis vivian derozio––A Forgotten Anglo-Indian Poet, Oxford University Press 1923) এই কবিতাটির পরে ‘To India, My Native land’ কবিতাটি মুদ্রিত হয়েছে। ব্র্যাডলে—বার্ট তাঁর সংকলনের ভূমিকায় ডিরোজিওর কবিতা সম্বন্ধে বিশেষ কোনো আলোচনা করেননি। তাঁর সংকলন থেকে ডিরোজিওর নিজের সংকলনের কিছু কবিতা দেওয়া হয়েছে।

* মূল কবিতাটি ৬৬ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য

* বিনয় ঘোষ : বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ, প্রথম খণ্ড দ্রষ্টব্য। নবযুগের ‘humanism’ ও মধ্যযুগের ‘humanitarianism’—এর প্রভেদ অনেক। কবি এলিয়টের ভাষায় বলা যায়: “…the humanitarian has suppressed the properly human, and it left with the animal; the humanist has suppressed the divine and is left with a human element …” (T.S. Eliot, Selected Essays, p. 435)

** পরিশিষ্ট———’গ’ দ্রষ্টব্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *