ঘরে ও বাইরে
দেশে ফিরলেন ১৯২২ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই মেধাবী ছাত্রের কৃতিত্ব ও সার্থকতাকে সম্মানিত করল তাঁকে ভাষাতত্ত্বের ‘খয়রা’ অধ্যাপকের পদে বরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব-সম্পর্কিত যে সব ভাষায় পাঠ দেওয়া হত তার সব কটি বিভাগেই তিনি নিয়মিত অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘকাল ধরে। অবেস্তায় চর্চা গভীরতর করবার জন্যে তিনি পারসিকের অধ্যাপক তারাপোরেওয়ালার সঙ্গে নিয়মিত অবেস্তা পড়তেন। ক্লাসে বৈদিক সংস্কৃত ও অবেস্তার তুলনামূলক পাঠ দিতেন।
রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে ১৯২৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মালয়, যবদ্বীপ, সুমাত্রা, বালিদ্বীপ ও শ্যামদেশ ভ্রমণ করেন। ভারতীয় সংস্কৃতি একটা যুগে নৌপথে এই অঞ্চলে পৌঁছয় এবং স্থানীয় সংস্কৃতিকে কতকটা প্রভাবিত করে। এ ভ্রমণকাহিনি ‘প্রবাসী’তে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ও পরে গ্রন্থাকারে দ্বীপময় ভারত নামে এবং আরও পরে শ্যামদেশ ভ্রমণ কাহিনির সংযোগে রবীন্দ্র সংগমে দ্বীপময় ভারত ও শ্যামদেশ নামে প্রকাশিত হয়। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব হয়তো রচয়িতার দৃষ্টিকে কতকটা আচ্ছন্ন করেছিল বলেই এ দেশগুলির আদিম সংস্কৃতির বিবরণ যথোচিত প্রাধান্য পায়নি। তথাপি ঘরের পাশেই এই এক মিশ্র সংস্কৃতির রূপকে সুনীতিকুমার যে পরিমাণ আগ্রহ ও কৌতূহল নিয়ে দেখেছিলেন ও শ্রদ্ধার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর মননের ইতিহাসে এক নতুন পরিচ্ছেদের সূচনা; বিশেষত এর আগে কোনও ভারতীয় এ দেশগুলি সম্বন্ধে এত উৎসাহী হননি।
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ধ্বনিবিজ্ঞান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৫ সালে লন্ডনে। সেখানে সুনীতিকুমার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরূপে যোগ দেন এবং ভারতীয় ভাষাতত্ত্ব বিভাগে সভাপতিত্ব করেন। সে বারে আমন্ত্রিত হয়ে যান চেকোশ্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি ও ফ্রান্স। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্যবিদ্যাকেন্দ্রে বক্তৃতাও দেন। পরের বৎসরে বাংলার রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি সুনীতিকুমারকে ‘ফেলো’ নির্বাচিত করেন। ওই বছরেই ব্রহ্মদেশের রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গসাহিত্যসম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
তৃতীয় আন্তর্জাতিক ধ্বনিবিজ্ঞান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গেন্ট-এ ১৯৩৮ সালে। সেখানেও সুনীতিকুমার আমন্ত্রিত হয়ে যান এবং ওই যাত্রাতেই কোপেনহাগেনে আন্তর্জাতিক নৃতত্ত্ব সম্মেলনে ও ব্রুসেলসে আন্তর্জাতিক প্রাচ্য বিদ্যাসম্মেলনে যোগ দেন। প্যারিসে আন্তর্জাতিক ভাষাতত্ত্বের সংস্থা তাঁকে স্থায়ী সদস্যরূপে নির্বাচিত করেন, পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্য বিদ্যাকেন্দ্র তাঁকে সাম্মানিক সভ্যরূপে মনোনীত করেন।
এ ক’বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তাঁকে তাঁদের সারস্বত সাধনার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেন। কারণ শুধু এই নয় যে, তখনও তিনি এ সব ক্ষেত্রে একক পথিকৃৎ। এর কারণ তাঁর বহুধাবিকশিত জ্ঞান আগ্রহ ও অধ্যবসায় পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের কাছে এই ভারতীয় অধ্যাপকটিকে শ্রদ্ধাভাজন করে তুলেছিল।
পরবর্তী কয়েক বছরে দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বিদ্বৎ গোষ্ঠীতে বক্তৃতা দিতে ও সভাপতিত্ব করতে আহুত হন। আমেরিকান ওরিয়েন্টাল সোসাইটি তাঁকে সাম্মানিক সদস্য পদ দেন ১৯৪৭ সালে। ওই বছরেই আসাম সরকারের আমন্ত্রণে ‘প্রতিভা দেবী’ বক্তৃতায় ভারতীয় সংস্কৃতির বিবর্তনে মোঙ্গোলজাতির অবদান সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন; মণিপুর ও ইম্ফলে ভ্রমণ করে ওই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি প্রণিধানসহকারে লক্ষ করেন। এই সুযোগে যে নবধারার মননের সূত্রপাত, ১৯৫১ সালে তাই রূপপরিগ্রহ করে কিরাতজনকৃতি নামে ইংরেজি গ্রন্থে। এই-ই ছিল তাঁর দস্তুর। প্রাক্-প্রস্তুতি থাকত দীর্ঘকালের অধ্যয়নে লব্ধ জ্ঞানে, পরে ঘটনাচক্রে তাঁকে পৌঁছে দিত এমন স্থানে যার সম্বন্ধে তাঁর কতক স্পষ্ট কতক বা অস্পষ্ট ধারণা ছিল। প্রত্যক্ষ পরিচয়ে ভরে উঠত ফাঁক, বাড়ত জ্ঞান; আর জেগে উঠত নবতর তথ্য আহরণের উদ্দীপনা। অবচেতনে চলত একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়া; পরে এক দিন তুলে নিতেন লেখনী, বিষয়টি স্পষ্ট রূপ নিত একটি গ্রন্থে। প্রাক্-প্রস্তুতির পর্বে বারবার দেখা গেছে কোনও নতুন জায়গায় আমন্ত্রণ এসেছে আর অমনই সুনীতিকুমার সে দেশের বা অঞ্চলের ভূগোল ইতিহাস সংস্কৃতি সাহিত্য শিল্প সব নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়ছেন। যেমন করে ছাত্র পড়ে আসন্ন পরীক্ষার জন্যে। সুনীতিকুমারের ক্ষেত্রে সমীক্ষা হল চক্ষুষ্মানের মতো নতুন স্থানের পরিচয় নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় সে স্থান তার আদ্যন্ত পটভূমিকা নিয়ে তাঁর জ্ঞানভাণ্ডারে স্থায়ী সম্পদ হয়ে উঠত।
১৯৪৮-এ আবার ইউরোপ। এ বার প্যারিসে আন্তর্জাতিক ভাষাতত্ত্বের সম্মেলনে আহ্বানের সঙ্গেই এল ব্রুসেলসে আন্তর্জাতিক নৃতত্ত্ব সম্মেলনের আমন্ত্রণ। এ দুটি সেরে এক সপ্তাহের সফর করলেন মিশরে। ফিরে এলাহাবাদে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে পেলেন ‘সাহিত্য-বাচস্পতি’ উপাধি। পরের বছর হানয়, সায়গন ও প্যারিসের পক্ষ থেকে দূর প্রাচ্যের ফরাসি সংস্থার সাম্মানিক সদস্যপদ (এ কোল ফ্রসেজ দ্য লেকস্ত্রেম ওরিয়ঁ) লাভ করেন। ১৯৫০-এ পুনর্বার ইউরোপে— ইটালি, ইংল্যান্ড, হল্যান্ড এবং ইস্তাম্বুলে। এটা ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরূপে ওই সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থার তথ্যসন্ধানের যাত্রা।
সুনীতিকুমারের রচিত গ্রন্থসংখ্যা ও সে সব গ্রন্থের বিষয়বৈচিত্র্য ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর বহু দেশে তাঁকে যশস্বী করে তুলল, তাঁরা তাঁদের উচ্চতম সারস্বত সংস্থায় তাঁকে সদস্য করে নিলেন। ১৯৫১-৫২ সালে পাঁচ মাসের জন্য ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ-এ অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হন। এই সময়েই কলাম্বিয়া, ইয়েল ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন। ১৯৫২ সালে রকেফেলার ফাউন্ডেশনের আনুকূল্যে এক মাস মেক্সিকোয় কাটান এবং সেখানে রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন। বিভিন্ন বিষয়ের পণ্ডিতদের সান্নিধ্যে এসে প্রচুর লাভবান হন। ১৯৪৯, ‘৫১ ও ‘৫২তে প্যারিসে জাতিসঙ্ঘের আয়োজিত অন্ধদের জন্য ব্রেল লিপির সম্মেলনে যোগ দেন।
দেশে ফেরেন জুন মাসে এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদে নির্দলীয় প্রার্থীরূপে স্নাতক-কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন এবং সকল পক্ষের সদস্যই একযোগে তাঁকে সভাপতিরূপে বরণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শেষ হয়; আটত্রিশ বছরের গৌরবময় অধ্যাপনার স্মরণে বিশ্ববিদ্যায় তাঁকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের এমেরিটাস’ অধ্যাপকের সম্মান দেয়। ১৯৫৩ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতির পদে বৃত হন এবং দু’ বছর ওই দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর সুনীতিকুমারকে তাঁর বিদ্যাবত্তা ও কৃতিত্বের স্বীকৃতিরূপে অসলোতে নরওয়ের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসে সাম্মানিক সভ্যপদ দেওয়া হয়। এই বছরেই পশ্চিম আফ্রিকায় আমন্ত্রিত হয়ে গোল্ডকোস্ট (ঘানা), নাইজেরিয়া ও লাইবেরিয়ায় ভ্রমণ করেন তিন সপ্তাহের জন্যে। আফ্রিকার বিশিষ্ট কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই বছরেই কেম্ব্রিজে আন্তর্জাতিক প্রাচ্যবিদ্যা সম্মেলনে যোগ দেন ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রকের প্রতিনিধিরূপে। ওই অক্টোবর-নভেম্বরেই ভারতের প্রতিনিধি হয়ে উত্তর সুমাত্রায় ইন্দোনেশীয় ভাষা সম্মেলনে গেলেন। ফিরে বোম্বাইতে উইলসন স্মারক পাঁচটি বক্তৃতা: বিষয় মধ্য-ইন্দো-আর্য (অর্থাৎ পালি প্রাকৃত) ভাষার বিবর্তন। এত যে ঘোরাঘুরি সভা-সমিতিতে যোগদান, নানা গুরুদায়িত্ব পালন, ঘরে বাইরে, এতে কিন্তু তাঁর প্রাথমিক অধ্যেতব্য বিষয়টি আচ্ছন্ন হয়নি— ভাষাতত্ত্বে অন্তঃস্রোতা একটি চর্চার ধারা অব্যাহতই ছিল।
১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়র ফ্যাকালটি অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড মিউজিক-এর ডীন পদে বৃত হন সুনীতিকুমার। বালক বয়সেই অবনীন্দ্রনাথের ছবি দেখার পর থেকে চিত্রশিল্পে অনুরাগ বিকাশপ্রাপ্ত হয়। সংগীতেও অনুরাগ আশৈশব। সুনীতিকুমারের যখন আট বছর বয়স তখন কলকাতায় প্লেগের প্রকোপ হওয়ায় তাঁরা সপরিবারে মামারবাড়ি হাওড়ার শিবপুর গ্রামে যান। মাতুলকুল সংগতিপন্ন ও কতকটা শৌখিন ছিলেন। তাঁদের একটা বড় শখ ছিল গানের জলসা, নামী সুরকার ও গায়কদের এনে মজলিশ বসাতেন। সেই তখন থেকেই বালক সুনীতিকুমারের ধ্রুপদে রুচি। সংগীত বরাবরই তাঁর প্রিয় ব্যসন ছিল, শিল্পের অন্যান্য নানা ধারারই মতো। বিদেশে গিয়ে সে সব দেশের ধ্রুপদী সংগীত শুধু শুনতেনই না, সাধ্যমতো রেকর্ড সংগ্রহ করে আনতেন। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় উপযুক্ত ব্যক্তিকেই এ পদটি দেন।
১৯৫৫-র জানুয়ারি মাসে ভারত সরকার সুনীতিকুমারকে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করেন। ওই বছর মে-জুন মাসে পুণায় ভাষাতত্ত্বের গ্রীষ্মকালীন পাঠচক্রে নিয়মিত দু’ মাস বক্তৃতা করেন। সেপ্টেম্বর মাসে নয়া চিন সরকারের আমন্ত্রণে ভারতবর্ষের দশটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে দশ জন প্রতিনিধি চিন সফরে গিয়েছিলেন তাঁর মধ্যে কলকাতা থেকে যান সুনীতিকুমার; প্রায় মাস দেড়েক চিন দেশে ছিলেন। ন’টি প্রদেশ দেখার সুযোগ ঘটে, সেখানে কোথাও কোথাও বক্তৃতাও করেন।
১৯৫৫-৫৬ সালে সরকারি ভাষা কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন; এই সময়ে পুনর্বার বিধান পরিষদে সদস্য ও সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া সংস্কৃত কমিশনেরও চেয়ারম্যানের পদে বৃত হন; ‘৫৭ সালে সংস্কৃত কমিশনের সর্বসম্মত রিপোর্ট পেশ করা হয়। ১৯৫৮ সালে সোভিয়েট অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর আতিথিরূপে সোভিয়েট রাশিয়ায় আমন্ত্রিত হয়ে তিন মাসের পরিক্রমা— মস্কোতে স্লাভ ভাষা সম্বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠ। আবার এক বার চিনে যান তিন সপ্তাহের জন্যে, ইন্দো-চিন মৈত্রী সঙ্ঘের অতিথিরূপে। এ বছরের শেষে আমেরিকার ভাষাতত্ত্ব সভার সাম্মানিক সভ্যপদে বৃত হন। ১৯৫৯-এর অক্টোবরে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সভায় আমন্ত্রিত হয়ে ক্যানবেরা যান ভারতের প্রতিনিধিরূপে। এই বছরে পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশ পরিক্রমা সম্পূর্ণ হয় অস্ট্রেলিয়া যাত্রায়। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিস্তৃত ভূখণ্ডে আগেই গিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া যাত্রায় ভূপরিক্রমা সম্পূর্ণ হল। ফেরবার পথে ব্যাঙ্কক হয়ে ফেরেন ও কিছু উল্লেখযোগ্য পণ্ডিতের সাহচর্য লাভ করেন।
১৯৬০-এর জুনে প্রকাশিত হল ইন্দো-আরিয়ান অ্যান্ড হিন্দি, এবং অ্যাফ্রিকানিজম: দি আফ্রিকান পার্সোনালিটি গ্রন্থ দুটি। একটি তাঁর গবেষণার বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত, অন্যটি তাঁর ভ্রমণ ও মননের ফসল। জুলাই অগাস্টে মস্কোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রাচ্যবিদ্যা সম্মেলনে ভারতীয় দলের নেতারূপে যান। এখানে তাঁর প্রবন্ধের বিষয় ছিল ভারত ও চীনের প্রাচীন সংযোগসূত্র: ভারত চীনের কাছে কী পেয়েছে’। দেশে ফেরার পরেই এটি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বহু প্রামাণ্য তথ্য ও সুচিন্তিত অভিমতে ঋদ্ধ এই প্রবন্ধটির মূল্য এখনও অবিকৃত। ফেরবার পথে বহির্মোঙ্গলিয়ায় উলানবাটোর ও আরও দুটি স্থান দেখে আসেন। উলানবাটোরে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মোঙ্গলীয়দের গন্দম মঠে একটি সপ্তম শতকের ব্রঞ্জ বুদ্ধমূর্তি ও কিছু গ্রন্থাদি উপহার দিয়ে আসেন। এটি যেন বিভিন্ন জাতির মানুষের কাছে সাংস্কৃতিক দূত রূপে গিয়ে রাখিবন্ধনের একটি সূত্র পরিয়ে আসা।
১৯৬১ সালে রোমে তাঁর সারস্বত মিত্র জুসেপ্পে তুচ্চির আমন্ত্রণে রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত হন। উপাধি গ্রহণের পরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ল্যাটিন ভাষায়। এপ্রিলে গেলেন তেহরানে, ইরানীয়তা সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন সেখানে। এটি পরে ১৯৭২ সালে ইরানিয়ানিজম নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ওই বছর জুন মাসে ইটালির ‘দূর ও নিকট প্রাচ্য সংস্থা’র সাম্মানিক সভ্য নির্বাচিত হন। জুলাই মাসে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি পদে বৃত হন। অক্টোবরে স্থায়ী আন্তর্জাতিক ধ্বনিতত্ত্ববিজ্ঞান সংস্থার সাম্মানিক সভ্যপদ লাভ করেন।