কড়ি দিয়ে কিনলাম ২.৩

—আরে চললি কোথায়, শোন্ শোন্–

লক্ষ্মীদির গলা। কেশব দরজাটা ভেতর থেকে খুলে কোথায় যাচ্ছিল, পেছনে লক্ষ্মীদির গলা পাওয়া গেল। কেশব আর লক্ষ্মীদি দুজনেই দরজার সামনে দীপঙ্করকে দেখে অবাক হয়ে গেছে।

—তুই? কী খবর? কিছু খবর আছে সতীর?

তারপর কেশবের দিকে চেয়ে লক্ষ্মীদি বললে—তুই যা কেশব, আটটা সোডার বোতল নিয়ে আসবি, আর দু’সের বরফ-যা, আর পান আনবি এক টাকার—সঙ্গে কুচো সুপুরি, চুন আর দোক্তা আনবি—যা দেরি করিসনি, খুব শিগগির

তারপর দীপঙ্করের দিকে ফিরে বললে—কী-রে, সতীর খবর কী? আর গিয়েছিলি সেখানে?

গলিটাতে ঢুকেই দীপঙ্করের যেন কেমন অন্যরকম লাগছিল। অনেক জোড়া জুতো পড়ে ছিল গলিটার শেষ প্রান্তে। দূর থেকে উঠোনটা আলোয় ঝলমল করছে। নানারকম মশলা দেওয়া রান্নার গন্ধ আসছে বাতাসে। যেন কোনও উৎসব এ-বাড়িতে। কীসের উৎসব? লক্ষ্মীদির ছেলের জন্মদিন? লক্ষ্মীদির ছেলে এসেছে বাড়ীতে? না-কি লক্ষ্মীদির বিয়ের বার্ষিকী!

লক্ষ্মীদি বলল—আয়, ভেতরে—

দীপঙ্কর বললে—তোমাদের বাড়িতে আজ যেন একটা কিছু আছে মনে হচ্ছে-

লক্ষ্মীদি বললে—আজ একটা কান্ড হয়েছে—

—কী কান্ড?

—চল, তোকে বলছি সব। তুই ওদের সঙ্গে বসবি গিয়ে? সুধাংশু, সুধাংশুর বন্ধুরা, তারপর চৌধুরীও তার দলবল নিয়ে এসে হাজির। ক’বোতল হুইস্কি এনেছে। আর নিউ মার্কেট থেকে ফাউল কিনে এনেছে। আমার বাড়িতে পরোটা আর মাংস খাবে সবাই—

দীপঙ্কর বললে—ওদের কাছে আর না-ই বা গেলাম—

—তাহলে চল, তোর দাতারবাবুর ঘরে বসবি। বসে বসে দাতারবাবুর সঙ্গে একটু গল্প কর না, ও তো একলাই বসে আছে ও-ঘরে। তোর কথা আমিও ভাবছিলুম!

দীপঙ্কর চলতে চলতে হঠাৎ বললে—তা হঠাৎ এমন পরোটা মাংসর ব্যবস্থা হলোই বা কেন লক্ষ্মীদি? অকেশানটা কী?

—অকেশান্ এমন কিছুই না। সুধাংশু আমাকে কিছু টাকা পাইয়ে দিয়েছে—এই শ’ পাঁচেকের মতন। ওদের অফিসে তো ওরা নানারকম মাল কেনে! এবার কিছু সুপুরি কেনার টেন্ডার ছিল, সেই টেন্ডার আমি দিলুম। তিন হাজার টাকার সুপুরি বিক্রী করে পাঁচশো টাকা আমি পেলাম! তা সেই উপলক্ষেই খাওয়াটা—

—কিন্তু এত সুপুরি তুমি কোত্থেকে কিনলে?

লক্ষ্মীদি হাসলো। বললে—আমি কিনবো কোত্থেকে। সবই সুধাংশু করলে। সুধাংশু নিজেই সুপুরির টেন্ডার দিলে, নিজেই বিল পাস করলে। আসলে সুধাংশুই তো সব। আমার কিছুই করতে হয়নি—

বাবের পাওয়ার বাড়ানো হয়েছে। রান্নাঘর থেকে ভুর ভুর করে মাংস রান্নার গন্ধ বেরোচ্ছে। উঠোনে জুতোর পাহাড় জমে গেছে। সবই সুধাংশুর খরচ। আসলে সুধাংশুই এ-বাড়ির মালিক। অনন্তবাবু চলে যাবার পর সুধাংশু এসেই তার সিংহাসন জুড়ে বসেছে। ছোট ঘরখানার মধ্যেই সবাই গুঁতোগুঁতি করে মাটিতে বসেছে। মেঝেতে মাদুর পাতা। গোল হয়ে বসে তাসের মধ্যে সবাই মশগুল। পাশে হুইস্কির গেলাস। পানের প্লেট, সিগারেটের কৌটো।

পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে লক্ষ্মীদি বললে—তুই দাতারবাবুর সঙ্গে গল্প কর, আমি আসছি—

এ-ঘরটা ছোট। এ-ঘরে উৎসবের কোনও ছোঁয়াচ লাগেনি। একটা তক্তপোশ, দুটো চেয়ার, একটা জামা-কাপড়ের আলনা। তারই মধ্যে দাতারবাবু ফরসা কোট-প্যান্ট পরে ভূতের মতন চুপ করে বসে আছে একটা চেয়ারে। অর্থাৎ লক্ষ্মীদি বসিয়ে রেখেছে।

দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে–আপনি ভাল আছেন দাতারবাবু?

দাতারবাবু মাথা নাড়লে। বললে—হ্যাঁ—

—আমাকে চিনতে পারছেন?

—দীপুবাবু!

অদ্ভুত স্মৃতিশক্তিই বটে। হয়ত সবই বুঝতে পারছে দাতারবাবু। হয়ত দেখতে পাচ্ছেও সব। হয়ত অনুভবও করতে পারছে। কিন্তু হয়ত উপায় নেই। উপায় না-থাকার লজ্জায় অধোবদন হয়ে পড়ে আছে এক পাশে। একই বাড়ির পাশের ঘরে হুইস্কি আর জুয়ার জোয়ার চলেছে। আর এখানে এই ঘরে চরম অক্ষমতার সজীব প্রতিমূর্তি! ক্ষোভ থাকলেও প্রকাশ করবার উপায় নেই। বিদ্রোহ করবার ক্ষমতা নেই। ভগ্ন দেহ, ভল্প স্বাস্থ্য নিয়ে সজীব সাক্ষী হয়ে দিন গুনছে।

—আপনি কিছূ ভাববেন না, আপনি ভাল হয়ে উঠবেন আবার। আবার আপনি ব্যবসা আরম্ভ করতে পারবেন, দেখবেন!

দাতারবাবু বললে—পারবো?

—হ্যাঁ পারবেন, আপনি তো ভালো হয়েই গেছেন। আগে যা দেখেছিলাম, তার চেয়ে অনেক ভালো। লক্ষ্মীদির জন্যেই এমন শিগগির শিগগির ভালো হলেন। এর পর আরো ভালো হয়ে উঠবেন। আর বেশিদিন ভুগতে হবে না আপনাকে।

দাতারবাবু অনেকক্ষণ চেষ্টা করে বললে—অনেক দিন…….

—কীসের অনেক দিন?

—অনেক দিন যে অসুস্থ—

দীপঙ্কর বুঝতে পারলে না দাতারবাবু কী বলতে চায়। বোঝা গেল অনেক কথা, অনেক দুঃখ, অনেক অভিযোগ জমে আছে বুকের ভেতর। তার কথা বলবার তার কথা বোঝাবার সময় নেই কারো। পাশের ঘর থেকে হাসি গল্পের শব্দ আসছে। বাড়িতে মাংস রান্নার গন্ধ ভাসছে।

দাতারবাবু হঠাৎ বললে—মাটন—

দীপঙ্কর বললে—হ্যাঁ মাটন রান্না হচ্ছে বাড়িতে, আপনিও মাটন খাবেন।

দাতারবাবু হয়ত বুঝতে পারলে। বললে—আমি খাবো না—

—কেন খাবেন না? মাটন্‌ খেলে দোষ কী? আপনি তো মাটন্‌ খেতেন আগে?

দাতারবাবু যেন হঠাৎ বড় অন্যমনস্ক হয়ে গেল। নিজের মনেই কী ভাবতে লাগলো। তারপর বললে—সিগারেট!

—আপনি সিগারেট খাবেন! আমি তো সিগারেট খাই না, ও-ঘর থেকে এনে দিতে বলছি—

লক্ষ্মীদি এলে তাকে দিয়ে সিগারেট আনিয়ে নেবার কথাটা ভাবলে দীপঙ্কর। দাতারবাবু আগে কী সিগারেটটাই না খেত। একটার পর একটা! সেই মানুষই এইরকম হয়ে গেছে। সুদূর বর্মা থেকে শুধু লক্ষ্মীদির জন্যে কলকাতায় এসেছে। নিজের কাজ কর্ম-ব্যবসা সব ছেড়ে শুধু লক্ষ্মীদির জন্যেই এসেছিল এই মানুষটা। কিন্তু এখন? কোথায় গেল লক্ষ্মীদি! কোথায় গেল তার ব্যবসা। কোথায় গেল সেই নিজে! সেই মানুষটা যে নিজেকেও হারালে শেষ পর্যন্ত।

—ওরা কে?

হঠাৎ পাগল দাতারবাবুর মুখে প্রশ্নটা শুনে দীপঙ্কর চমকে উঠলো। পাগলের মনেও প্রশ্ন জেগেছে। পাগলের চোখেও যেন ধরা পড়েছে সব। যেন অনেক দ্বিধার পর কথাটা দাতারবাবু বলে ফেলেছে দীপঙ্করকে।

—এই যে, এবার বল্ তোর কথা।

বলে লক্ষ্মীদি এসে ঘরে ঢুকে তক্তপোশের ওপর বসলো। বললে—এতক্ষণে কেশব এলো, মাংসটা সেদ্ধ হতে এখনও একটু দেরি আছে। এবার বল্, সতীর কাছে আর গিয়েছিলি?

দীপঙ্কর বললে—আমি আর যাইনি—তোমাকে জিজ্ঞেস করতে এলাম, তুমি কিছু জানো?

লক্ষ্মীদি বললে—আমি তো তারপরে এদিক নিয়ে ব্যস্ত, আর সময় কোথায় আমার বল্। রাত্রির বেলা তো আমার সময় হয় না—

দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—কাল সকালবেলা আর একবার যেতে পারবে?

লক্ষ্মীদি বললে—আমি আর যেতে পারবো না ভাই—

—তাহলে খবরটা কী করে পাওয়া যাবে?

লক্ষ্মীদি বললে—তুই-ই একবার যা না—

তারপর একটু থেমে বললে—আর গিয়ে দরকার নেই কিছু। তুই বাবাকে খবর দিয়েছিস তো!

দীপঙ্কর বললে— হ্যাঁ, টেলিগ্রাম করে দিয়েছি। আপিসে গিয়েই করে দিয়েছি—

লক্ষ্মীদি বললে—ভালোই হয়েছে। তাহলে আর কোনও ভাবনা নেই। দেখবি বাবা এসে সতীকে কিছুদিনের জন্যে নিয়ে যাবেন, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কিছু ভাবিসনি। আর তা ছাড়া শ্বশুরবাড়িতে আবার কোন্ শাশুড়ী কোনকালে বউকে আদর দিয়ে মাথায় তুলে রাখে! শ্বশুরবাড়িতে মানেই তো কষ্ট! ও-রকম কষ্ট একটু-আধটু সব মেয়েকেই সহ্য করতে হয়—

দীপঙ্করের তবু যেন কেমন অস্বস্থি হতে লাগলো। সারাদিন আপিসের ঝঞ্ঝাট গেছে। সারাদিন আত্মগ্লানিতে কেটেছে। তবু সতীর কথাটা ভুলতে পারছে না। সেই বারান্দায় সকলের সামনে অমন করে চূড়ান্ত শাস্তি দেখে এসেছে সতীর। তারপর থেকে কোনও কাজেই শান্তি পায়নি। বাড়িতে গিয়ে চিঠিও পায়নি মার। সমস্ত বুকটা যেন ফাঁপা হয়ে আছে। তাই বুঝি আপিসে কারো সঙ্গে কথা বলতে, কারো সঙ্গে দেখা করতেও ইচ্ছে হয়নি। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে হাজির হয়েছে প্রাণমথবাবুর বাড়িতে। আবার হাঁটতে হাঁটতে এখানে লক্ষ্মীদির বাড়িতে এসেছে। কিন্তু এখানেই বা কেন সে এল? দীপঙ্কর কি আশা করেছিল লক্ষ্মীদির কাছে খবরটা পাওয়া যাবে! অথচ বাড়িতেও তো সেই নিঃসঙ্গ শূন্যতা! বাড়িতে গিয়েও তো সেই হতাশ চিন্তার জাল বোনা! ভরসা তো কেবল সেই কাশী!

লক্ষ্মীদি আবার ভরসা দিলে—তুই মিছিমিছি অত ভাবছিস কেন?

দীপঙ্কর বললে—ভাবছি, আমরাই তো ওর এই অপমানের জন্যে দায়ী —

—তা কেন দায়ী হতে যাবো? আমরা তো ওর ভালোর জন্যেই করেছি। ও যাতে শ্বশুরবাড়িতে সুখে থাকে, সেই জন্যেই তো ওকে নিয়ে গিয়েছি। আর তা ছাড়া ওর নিজেরও তো শেষকালে যাবার ইচ্ছে হয়েছিল—

দীপঙ্কর তবু যেন সন্তুষ্ট হলো না। বললে—টেলিগ্রাম পেলেই তো তোমার বাবা চলে আসবেন, কী বলো?

লক্ষ্মীদি বললে—তা আসবেন বৈ কি! সতীকে বাবা খুব ভালবাসেন যে—

দীপঙ্কর বললে—তা হলে বাবা এলেই সব মিটে যাবে, কী বলো!

—হ্যাঁ হ্যাঁ সব মিটে যাবে। তুই মিছিমিছি ভাবছিস এত! আরে মেয়েদের মন পুরুষ মানুষদের মতন অত পলকা নয়। অত অল্পতে মেয়েমানুষেরা ভেঙ্গে পড়ে না। এই আমাকে দেখছিস না! আমি যদি অত নরম হতুম তো আমার এই সংসার এমন করে সামলাতে পারতুম!

দাতারবাবু দুজনের সমস্ত কথা মন দিয়ে শুনছিল। দীপঙ্কর সেদিকে চেয়ে দেখলে। তারপর দাঁড়িয়ে উঠলো।

তারপর সরু গলিটা দিয়ে সদর রাস্তায় গিয়ে পড়লো। লক্ষ্মীদি দরজা পর্যন্ত এসেছিল। হয়ত কিছু সান্ত্বনার কথাও শুনিয়েছিল। কিন্তু কিছুই কানে যায়নি তার। অন্ধকার জনহীন রাস্তার সমুদ্রে দীপঙ্কর গা ভাসিয়ে দিলে।

.

—লড়াই শুরু হো গিয়া—লড়াই শুরু হো গিয়া—টেলিগ্রাফ—টেলিগ্রাফ—

হাঁপাতে হাঁপাতে একটা লোক ছুটছে। সমস্ত বালিগঞ্জ যেন সেই শব্দে হঠাৎ চমকে উঠলো। প্রথমটা দীপঙ্করের কোনওদিকেই কান ছিল না। নিজের ভাবনাতেই আচ্ছন্ন হয়ে ছিল। হঠাৎ মনে হলো পৃথিবীর মাথার ওপর দিয়ে যেন বিদ্যুৎ-তরঙ্গ ছুটে গেল একটা!

আজো মনে আছে সেদিন রাত্রিবেলার অন্ধকারে সেই অখ্যাতনামা একটা হকার কেমন করে মহামারী ডেকে এনেছিল সারা-পৃথিবীতে। প্রথমে বালিগঞ্জের মোড়ে। বাতাসভেদী একটা কর্কশ গলার আর্তনাদ। টেলিগ্রাফ—টেলিগ্রাফ—

আরা কি দ্বারভাঙ্গা কিম্বা মুঙ্গের জেলা কোন্ অখ্যাত গ্রামের এক বাসিন্দা হয়ত। ছাতু আর ভেলিগুড খেয়ে ভোরবেলা সাইকেলে চড়ে খবরের কাগজ বেচে বেড়িয়েছে প্রত্যেক দিন। ফটুপাথে শুয়ে রাত কাটিয়েছে, আর দিনের বেলা কোন্ আপিসে পিওনের কাজ করেছে। সুদূর বেহার থেকে কলকাতা শহরের টাকার আকর্ষণে ছুটে এসেছিল বেচারী। যেমন করে হোক অর্থ উপায় করতে হবে। হঠাৎ সুযোগ এসে গেল সন্ধ্যেবেলা। পৃথিবীর কোথাকার কোন্ গোলার্ধের কোণে একজন মানুষ লড়াই বাধিয়ে দিলে নিজের কোন্ খেয়ালের বশে, আর এখানে কলকাতার একটা সাইকেল-পিওন হঠাৎ দুটো কাঁচা পয়সার লোভে কাঠফাটা আর্তনাদ করতে লাগলো—টেলিগ্রাফ টেলিগ্রাফ বলে।

আর মুড়ি-মুড়কির মত হাতে হাতে ছড়িয়ে গেল কাগজগুলো। স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার, অমৃতবাজার আরও সব কত নাম। বড়বড় মোটা-মোটা অক্ষর। অস্পষ্ট ইলেকট্রিক আলোর তলায় অক্ষরগুলো জ্বলজ্বল করতে লাগলো হাজার হাজার চোখের সামনে। জার্মানীর কারখানা থেকে বেরিয়ে লক্ষ লক্ষ বোমা বারুদ গোলা গুলী নিয়ে মোটরগাড়িগুলো ছুটতে আরম্ভ করেছে পোল্যান্ডের গ্রাম-প্রান্তর ভেদ করে। উনিশ শো উনচল্লিশ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর ভোর চারটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের সময়। তারপর সকাল গেছে, বিকেল গেছে, সন্ধ্যেও উতরে গেছে কলকাতার শহরে। প্রাণমথবাবু কংগ্রেসের ইলেকশন নিয়ে মিটিং করেছেন। দীপঙ্কর আপিসের বন্ধ ঘরে আত্মগ্লানিতে জর্জরিত হয়েছে। লক্ষ্মীদির বাড়িতে বোতাল-বোতল হুইস্কি শেষ হয়েছে। মিস্ মাইকেল হয়ত তখন হলিউডে যাবার তোড়জোড় শুরু করেছে নিজের ফ্রি-স্কুল স্ট্রীটের ফ্ল্যাট বাড়িতে। আর গাঙ্গুলীবাবুর স্ত্রী বোধহয় তখন বেনারসী শাড়ি পাট করে কাশ্মীরে যাবার ব্যবস্থা করছে। এমন সময় বেহারী সাইকেল পিওনের আর্তনাদে এক সঙ্গে সকলের সব ভাবনায় ছেদ পড়লো।

—কাশী, কাশী!

কাশী দরজা খুলে দিতেই দীপঙ্কর বললে—ওপরে আলো জ্বলছে কেন রে? তুই আলো জ্বেলে রেখেছিস?

কাশী বললে—না, মা এসেছে—

মা? মা কাশী থেকে এসে গেল এর মধ্যে! আর সবাই? সন্তোষকাকা, সন্তোষকাকার মেয়ে! দীপঙ্কর তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছিল।

কাশী বললে—মা’র খুব অসুখ দাদাবাবু—

দীপঙ্করের মাথার ওপরেই যেন বজ্রাঘাত হলো। দীপঙ্করের মনে হলো তার নিজের জীবনেই যেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *