১২
প্যালেস্-কোর্টের ফ্ল্যাট খুঁজে নিতে প্রথমে অসুবিধে হয়েছিল। কোথায় কোন্ ঘরে মিস্টার ঘোষাল থাকে এখানে, কত নম্বর, কোন্ তলা কিছুই জানতো না দীপঙ্কর। আলাদা ভাগ করা-করা ফ্ল্যাট্। সেলফ্-কন্টেইনড্। কারো সঙ্গে কারো সম্পর্ক নেই। কেউ কাউকে চেনে না। একটা ফ্ল্যাটে খুন হয়ে গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের লোক টের পায় না। পুরোপুরি ইওরোপীয়ান-কোয়ার্টার। দিশী লোকের এখানে থাকবার অসুবিধে। কলকাতা শহরের মধ্যেই একটা আলাদা জগৎ। এখানকার লোকেরাও কলকাতার বাসিন্দা। কলকাতার সিটিজেন্। কত জায়গাই দেখলে দীপঙ্কর। সেই ঈশ্বর গাঙ্গুলী লেন থেকে শুরু করে ফ্রি-স্কুল স্ট্রীট, গড়িয়াহাট, প্রিয়নাথ মল্লিক রোড, স্টেশন রোড- শেষকালে এই প্যালেস-কোর্ট! প্যালেসই বটে? মিস্টার ঘোষালের প্যালেস! আশ্চর্য, এখানে এসে উঠেছে শেষকালে। এখানে এনে তুলেছে! স্কাউন্ড্রেল্ কোথাকার।
দরজাটা খুলতেই চমকে উঠেছে সতী। মুখ দিয়ে তার কোনও কথা বেরোল না খানিকক্ষণ!
— তুমি?
দীপঙ্কর ভেতরে ঢুকবে কি না বুঝতে পারলে না। দুজনেই দুজনের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে রইল একদৃষ্টে! তারপর মাথা নিচু করলে সতী! দীপঙ্করও কিছু কথা বলতে পারলে না। বেদনায়, ঘৃণায়, লজ্জায় যেন নীল হয়ে উঠেছে দীপঙ্কর। এত সাহস মিস্টার ঘোষালের। এত বড় স্কাউন্ড্রেল!
দীপঙ্কর বললে—তুমি শেষ পর্যন্ত এখানে এসে উঠলে?
সতী কোনও কথা বললে না। তেমনি চুপচাপ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইল।
দীপঙ্কর বললে—আজকে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতেও আমার লজ্জা হচ্ছে সতী—তুমি এত নিচে নামতে পারো, এত ছোট হতে পারো আমি ভাবতেও পারিনি—
সতী বললে—তুমি যা বলবে বলো আমাকে, কিন্তু দয়া করে গালাগালি দিও না—
—তা তো বটেই—কথাগুলো গালাগালি বলে আজকে তো তোমার মনে হবেই—
সতী বললে—না, সে-জন্যে নয়, তোমার মুখে গালাগালি শোভা পায় না দীপু, —তুমি চরিত্রবান, তোমার চরিত্রের দাম আছে—পরস্ত্রীর সঙ্গে এক বাড়িতে বাস করলে তোমার চরিত্র নষ্ট হয়ে যায় বলেই বলছি—
—তা বলে আর কোনও জায়গা পেলে না, মিস্টার ঘোষালের ফ্ল্যাটে এসে উঠতে হল? এত অধঃপতন তোমার?
সতী সোজা কঠোর হয়ে উত্তর দিলে—অধঃপতন আমার, না তোমার?
—কেন?
সতী বললে—হ্যাঁ, যেদিন তোমাদের কথায় বাড়ির চাকর-ঝি-দারোয়ান সকলের চোখের সামনে অপমানের বোঝা মাথায় নিয়ে মুখ বুজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম, সেদিন তো তুমি এগিয়ে আসো নি আমাকে বাঁচাতে? সেদিন আমার অধঃপতন দেখে তোমাদের বুক তো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়নি? সেদিন তো আমার সেই অধঃপতন দেখে তোমরা সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বেঁচেছিলে! পালাও নি? চুপ করে রইলে কেন? জবাব দাও?
কথাগুলো বলে সতী সেইখানেই দাঁড়িয়ে হাঁফাতে লাগলো।
তারপর একটু থেমে আবার বললে—আর আজকে এসেছ তুমি তোমার সহানুভূতি দেখাতে—? আজকে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সেজে এখানে এসেছ চোখ রাঙাতে? কোথায় আমার অধঃপতনটা দেখলে? আমার কীসের অভাব এখানে? কীসের দুঃখ? আমার কীসের জ্বালা? কোনও দুঃখই তো নেই আমার আর! ওই দেখ আমার বিছানা, ওই দেখ আমার ড্রেসিং টেবল, ওই দেখ আমার সোফা-সেট্—ওইখানে বসে বসে আমার দিন কেটে যায় আরামে, এখানে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না আমাকে-রাত্রে আমার এখানে ঘুমের ব্যাঘাত করবারও কেউ নেই—জানো, আমি এখানে পরম নিশ্চিন্তে আছি—সুখে আছি শান্তিতে আছি—
দীপঙ্কর তখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে—
সতী আবার বলতে লাগলো—আর, এ না করে যদি প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের শ্বশুরবাড়ির সামনে ঘর ভাড়া নিয়ে মজলিস জমাতুম সেইটেই কি ভালো হতো? তাতেই কি তোমাদের সম্মান বাঁচতো? অথচ আমার কাছেই তো সে-জন্যে তোমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। সেদিনের সেই ঘটনার পর তাই করলেই তো আমার চরম প্রতিশোধ নেওয়া হতো—! আমাকেই তো তোমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যে, তোমাদের ভালবাসার মর্যাদা রেখেছি আমি। আর শুধু তোমার কেন, আমার শাশুড়ী, আমার স্বামী দেবতা—তাদেরও তো কৃতজ্ঞ থাকা উচিত আমার ওপর—
দীপঙ্কর নিরুত্তর হয়ে চেয়ে রয়েছে তখনও।
সতী বলতে লগলো—তুমি বলবে এ অবৈধ, এই ইল্লিসিট! বলতে তো তোমাদের ট্যাক্স লাগে না। বলতে তো তোমাদের পয়সা খরচ নেই! কিন্তু আমি যে এতদিন অকারণে এত অত্যাচার সহ্য করে এলুম, অকারণে এত ট্যাক্স দিয়ে এলুম, কই তার জন্যে তো সমাজ আমাকে এক পয়সাও রিবেট্ দিলে না—
তারপর হঠাৎ কী হলো, সতী হাসলো। যেন এতন কিছুই হয়নি। একেবারে মুখের ভাব বদলে গেছে এক নিমেষে। হঠাৎ দীপঙ্করের হাতটা ধরে ফেললে। বললে—যাক্ গে এ-সব বাজে কথা, এতদিন পরে তোমার সঙ্গে দেখা, আর আমি তোমাকে কড়া- কড়া কথা শোনাচ্ছি কেবল, এসো এসো বোস—
বলে সতী দীপঙ্করের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলে।
দীপঙ্কর বসলো। ঘরের চারদিকে চেয়ে দেখতে লাগলো।
সতী বললে—কী দেখছো?
দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে—মিস্টার ঘোষাল কোথায় থাকে?
সতী হাসলো। প্রথমে মুচকে মুচকে, তারপর খিল খিল করে হেসে উঠলো।
দীপঙ্কর জিজ্ঞেস করলে-হাসছো কেন?
সতী বললে—তবু ভাল, তোমার হিংসে হচ্ছে ঘোষালের ওপর! তা সে-ভয় তোমার নেই দীপু, মিস্টার ঘোষালের ফ্ল্যাট আলাদা-এর পাশের ফ্ল্যাটা! তোমার মতন তার চরিত্র অত দুর্বল নয়, অনেক স্ট্রং ক্যারেক্টারের লোক মিস্টার ঘোষাল—তাকে হিংসে করে লাভ নেই তোমার—
দীপঙ্কর বললে—আমি হিংসে করতে আসিনি, তাঁর সঙ্গে আমার হিংসের সম্পর্ক নয়—
সতী শুধরে দিলে। বললে—প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক—এই তো?
তারপর দীপঙ্করের মুখের চেহারা দেখে বলে উঠলো—তুমি আবার কথাটা শুনে রেগে যেও না যেন! নিজ চাকরি না-করলেও আমি জানি চাকরির ক্ষেত্রে এ-সম্পর্ক লজ্জারও নয়, অপমানেরও নয়,—অযোগ্য লোকের আন্ডারে কাজ করে অপমানবোধ করলে আখেরে তাকে পস্তাতেই হয়—তাতে রাগ করতে নেই—চাকরিক্ষেত্রে ওটাই নিয়ম—
দীপঙ্কর বাধা দিয়ে বললে—চাকরির কথা থাক্, আমি এসেছি অন্য কথা বলতে—
সতী বললে—তোমার চেহারা দেখে বুঝতে পারছি মাসীমা মারা গেছেন—তা ভালোই হয়েছে, বেঁচে থাকলে আমার এই ব্যাপার শুনে তিনি কষ্ট পেতেন—
দীপঙ্কর বললে—তিনি না-হয় বেঁচে গেছেন কষ্ট থেকে-কিন্তু আমি যে কষ্ট পাচ্ছি সতী—
সতী বললে—না, আর কষ্ট পেও না—! যে-কষ্ট থেকে আমি মুক্তি পেয়েছি, সেই কষ্টটার কথা মনে করেও তোমার আনন্দ পাওয়া উচিত!
দীপঙ্কর বললে—কিন্তু কথা তো তা নয়—তুমি জানো না, একটা সংসার আজ ভেঙে যেতে বসেছে তোমার জন্যে! তোমার জন্যেই একটা বংশ ছারখার হতে চলেছে— শম্ভুর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়েছিল, সে তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে চারদিকে—
সতী অবাক হলো। বললে—কেন? তারা এখনও জানে না আমি কোথায় আছি?
দীপঙ্কর বললে—শম্ভু অন্তত জানে না—
সতী বললে—ঠিক আছে, আমি কালকেই জানিয়ে দেব টেলিফোন করে, কিংবা চঠি লিখে। তাঁদের জানা উচিত যে, ঘোষ-বংশের কুললক্ষ্মীকে তাঁরা কোথায় ঠেলে ফেলে দিয়েছেন। এটা না-জানালে আজ রাত্তিরে আমার ঘুমই হবে না—
দীপঙ্কর বললে—তোমার কাছে এটা হাসির ব্যাপারই বটে—কিন্তু নিৰ্মল পালিত, তোমাদের বাড়ির ব্যারিস্টার, এর মধ্যে উস্কানি দিচ্ছে তোমার শাশুড়ীকে—তোমার নামে মামলা করবে বলছে—
—আমার নামে না মিস্টার ঘোষালের নামে? কিসের চার্জ?
দীপঙ্কর বললে—তুমি দশ হাজার টাকার গয়না চুরি করে পালিয়ে এসেছ, এই চার্জে—
তারপর একটু থেমে বললে—শুধু তাই-ই নয়, তোমার শাশুড়ীর সঙ্গে তোমার স্বামীর কথা বন্ধ—দুজনে দুজনের মুখদর্শন করে না, সমস্ত সংসারটা তোমার জন্যে ছারখার হয়ে যাচ্ছে জানো, আর তারই সুযোগ নিয়ে নির্মল পালিত তোমাদের সংসারে…..
সতী বাধা দিয়ে বললে—আমাদের সংসার বলছো কেন? আমি ও-সংসারের আর কেউ নই—
—কিন্তু তুমি এ-সময়ে না গেলে যে সমস্ত নষ্ট হয়ে যাবে। তোমার শাশুড়ী সমস্ত সম্পত্তি উইল করে দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাস্টের নামে—আর নির্মল পালিতই হবে সেই ট্রাস্টি- বোর্ডের চেয়ারম্যান।
সতী বললে—একবার তোমাদের কথা শুনে আমি যা-ভুল করেছি, আর সে ভুল করছি না দীপু, তুমি যদি এই কথা বলবার জন্যেই আমার কাছে এসে থাকো তো এবার তুমি যেতে পারো—আমি আর ফিরে যাবো না—
—কিন্তু সনাতনবাবুর কথাটা একবার ভাববে না? তিনি কী দোষ করলেন?
সতী রেগে উঠলো। বললে—তার নাম আর কোর না তুমি—তিনি মানুষ নন, জানোয়ার—
দীপঙ্কর বললে—তুমি জানো না বলেই এত কথা বলছো, জানো, তুমি চলে আসার পর তিনি কী করেছেন, অত যে শান্তশিষ্ট মানুষ, তাঁরও ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে, তিনিও আজ মা’র সঙ্গে ঝগড়া করে অসুখে পড়ে আছেন—
—অসুখ?
দীপঙ্কর বললে—হ্যাঁ, তাঁকেও ডাক্তার এসেছিল দেখতে! ভাবো তো তাঁর দশাটা একবার।
সতী হঠাৎ কৌতূহলী হয়ে উঠলো। জিজ্ঞেস করলে—কে তোমাকে বললে অসুখের কথা? তুমি নিজে গিয়েছিলে?
দীপঙ্কর বললে—না, নিজেই যাচ্ছিলুম তাঁকে দেখতে, কিন্তু শম্ভুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, সে-ই বললে—
—কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনও অসুখ তো হয়নি—অসুখ তো হতে দেখিনি কখনও তাঁর!
দীপঙ্কর বললে—সেই জন্যেই আমি তোমাকে এবার যেতে বলছি, তোমার একবার যাওয়া উচিত সেখানে, অন্তত সনাতনবাবুকে দেখতেও একবার যাওয়া উচিত—
—কিন্তু এর পরেও আমাকে তুমি যেতে বলছো? এত কান্ডের পরেও আমার যাওয়া উচিত? তুমি কি সব ভুলে গেলে?
দীপঙ্কর বললে—কিন্তু সে-ঘটনার পর যে সব কিছু বদলে গেছে, সে বাড়ি যে আর সে-রকম নেই, সেই সনাতনবাবুও যে আর সেই মানুষ নেই, তোমার সেই শাশুড়ীও যে এখন অন্যরকম হয়ে গেছেন,—সবাই অবাক হয়ে গেছে তাঁকে দেখে—জানো, তোমার শাশুড়ী কাঁদেন আজকাল?
—কেন?
—নিজের মনে তো সব বুঝছেন, নিজের মনে অনুতাপ এসেছে হয়ত। তার ওপর নির্মল পালিত এসে দিন-রাত তাঁর কানের কাছে মতলব দিচ্ছে নানারকম—এখন যদি না-যাও তুমি তাতে তোমারও ক্ষতি আর সনাতনবাবুরও ক্ষতি—সনাতনবাবু নিরীহ ভালো-মানুষ, ওই মা মারা যাবার পর, সনাতনবাবুকে হয়ত পথে বসাবে নিৰ্মল পালিত—। সনাতনবাবু তো সংসারে মা ছাড়া আর কাউকে জানতেন না—তাঁর দশা কী হবে তখন ভাবো!
সতী কিছু কথা বললে না। কী যেন ভাবতে লাগলো।
দীপঙ্কর বলতে লাগলো—তারপর তোমার বাবার কথা—
সতী হঠাৎ বললে—আমি বাবাকে চিঠি দিয়েছি একটা—
—কোনও রিপ্লাই পেয়েছ?
সতী বললে—না, প্রায় এক মাস হলো আমি চিঠি লিখেছি, কিন্তু কোনও উত্তর নেই, অথচ আমার চিঠি না-পেলে বাবা বড্ড ভাবনায় পড়েন—
দীপঙ্কর বললে—আমিও টেলিগ্রাম করেছিলাম, সে টেলিগ্রামও ফেরত এসেছে, লিখেছে, বি মিত্র বলে কোনও লোক সেখানে নেই—নির্মল বললে, ওয়ারের জন্যে ওঁর ফ্যাক্টরি বাড়ি সব বোধহয় মিলিটারিতে নিয়ে নিয়েছে, উনি বোধহয় ঠিকানা বদলিয়েছেন
—এদিকে বর্মা রোডও বন্ধ করে দিয়েছে ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট—
সতী তখনও চুপ করে ভাবছিল। বললে—বাবার চিঠি পেলে আমি তো সেখানেই চলে যেতাম—সেইজন্যেই তো চিঠি লিখেছিলাম—সে-ও হলো না—
—সেখানে গেলেই তোমার ভালো হতো সতী! সব দিক থেকেই ভালো হতো! তাহলে আজ আর এখানে এসে উঠে এই অবস্থায় তোমার থাকতে হতো না!
সতী হঠাৎ জিজ্ঞেস করলে—ওরা কি আমার খোঁজ করছে?
দীপঙ্কর বললে—ওদের ব্যারিস্টার তো খোঁজ পেয়েছে, নির্মল পালিত খোঁজ পেয়েছে, তা না-হলে আমি কী করে খোঁজ পেলুম। সেখান থেকেই তো শুনলুম তুমি এখানে আছো, মিস্টার ঘোষাল আমাকে কিছু বলেন নি তোমার সম্বন্ধে!
সতী বললে—কিন্তু আমি তো তোমার খোঁজ করতেই তোমার অফিসে গিয়েছিলুম—তোমাকে সেদিন পেলে তো আর মিস্টার ঘোষালের কাছে যেতুম না—
দীপঙ্কর বললে—আশ্চর্য, আমি সেই দিনই আপিসের কাজে বাইরে গিয়েছিলাম কয়েক ঘন্টার জন্যে, আর তারই মধ্যে সব ঘটে গেল, আর এতদিন মা মারা যাবার জন্যে ছুটিতে ছিলাম—আমি এ-সব কিছুই জানতে পারিনি। পারলে আমি আগেই সব মিট্-মাট্ করে দিতাম—
সতী বললে—আর মিট্-মাট্ হবে না দীপু, তুমি আর সে-চেষ্টা কোরও না—
—কিন্তু সনাতনবাবুর অসুখ শুনেও তুমি যাবে না? অসুখের ব্যাপারে এত রাগ থাকা কি ভাল?
—কিন্তু আবার যদি সেই রকম অপমান করে আমাকে?
দীপঙ্কর বললে—আর সে-রকম অপমান করবার অবস্থা নেই এখন ওদের, তোমাকে বলেছি তো, সব হাল-চাল বদলে গেছে ও-বাড়ির
সতী বললে—তাহলে মিস্টার ঘোষালকে একবার জিজ্ঞেস করে যাওয়া ভাল।
—কেন? তোমার কি সে-স্বাধীনতাটুকুও নেই?
—আমার বিপদের দিনে মিস্টার ঘোষালই আশ্রয় দিয়েছে, মিস্টার ঘোষাল না-হলে সেদিন আমি যে কী করতুম বলা যায় না—
মনে আছে দীপঙ্কর তখনই উঠে গিয়ে টেলিফোন করেছিল মিস্টার ঘোষালকে। আর টেলিফোনে দীপঙ্করের গলা শুনেই মিস্টার ঘোষাল একেবারে রেগে ক্ষেপে চিৎকার করে উঠলো। কেন? কেন তুমি আমার ফ্ল্যাটে গেছ? কার পারমিশন নিয়েছ? কে তোমাকে ঢুকতে দিয়েছে? আমার ফ্ল্যাট আর মিসেস ঘোষের ফ্ল্যাট্—ও তো একই কথা তুমি ওখান থেকে এখনি চলে যাও! দিস্ ইজ্ ট্রেস্পাস, দিস্ ইজ্ ক্রিমিন্যাল! মিস্টার ঘোষাল টেলিফোনের রিসিভারটা মুখে দিয়ে যেন যুদ্ধ করতে লাগলো! তুমুল ঝড় বয়ে গেল টেলিফোনের তারে। দীপঙ্করের মনে হলো যেন দীপঙ্করকে সামনে পেলে ছিঁড়ে- খুঁড়ে একেবারে গ্রাস করে ফেলবে মিস্টার ঘোষাল। শেষকালে রিসিভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললে-আমি এখুনি যাচ্ছি—ওয়েট্