উলের কাঁটা – ৮

আট

কৌশিককে নিয়ে শ্রীনগর থেকে যখন রওনা হয়েছিলেন তখনও রাত কাবার হয়নি। হাড়-কাঁপানো শীত। পহেলগাঁওয়ে যখন পৌঁছালেন তখন সূর্যোদয় হচ্ছে। ফাঁকা রাস্তায় বুলেটের মতো গাড়িটা চলে এসেছে। বাসু-সাহেব গাড়িটা সেই মেথডিস্ট চার্চের পিছন দিকে দ্বিতীয় বাড়িটার সামনে দাঁড় করালেন। কৌশিককে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তৃতীয় বাড়িখানার সামনে এসে কলিং বেল বাজালেন।

গৃহস্বামিনী বোধ হয় তখনও শয্যাত্যাগ করেননি। একটু বিলম্ব হল তাঁর আসতে। এবারও ল্যাচ-কী দেওয়া দরজা অল্প ফাঁক করে বললেন, কী চাই? ও আপনারা! এত সকালে?

বাসু বললেন, হ্যাঁ রাত থাকতেই বেরিয়েছি। মিসেস কাপুর ফিরে এসেছেন ভেবেছিলাম; কিন্তু ওঁর দরজাটা তালাবন্ধ।

—না ও ফেরেনি। ভিতরে বসবেন?

বাসু ইংরাজী ছেড়ে বিশুদ্ধ হিন্দুস্থানীতে বললেন, না বসব না। আপনার বোধ হয় এখনও প্রাতঃকৃত্যাদিই সারা হয়নি, নয়?

মহিলা সসঙ্কোচে ইংরাজীতে বললেন, মাপ করবেন। আমি হিন্দি জানি না। কী বলছেন?

—ঐ ময়না পাখিটাকে আর একবার দেখতে চাই।

—ও! কিন্তু ওটা তো ও বাড়িতে আছে।

বাসু বলেন, তাহলে ও বাড়ির চাবিটাই বরং দিন। আমি একটু বাথরুমেও যাব। মিসেস কৃষ্ণমাচারীর মূর্তি অপসারিত হল। একটু পরে ফিরে এসে একটি চাবি দরজার ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দিয়ে বললেন, ওর বেডরুমের চাবিটা ও আমাকে দিয়ে যায়নি। এটা সদরের চাবি। ময়নাটা বারান্দায় টাঙানো আছে, আর ল্যাট্রিনও ব্যবহার করতে পারবেন।

—থ্যাঙ্কু সো মাচ।

সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেই কৌশিক বলল, ভদ্রমহিলা হিন্দি একেবারেই জানেন না, তাই মুন্নার ঐ ‘বোল’টার অর্থগ্রহণ হয়নি।

বাসু বললেন, একেবারেই জানেন না, তা নয়। সেদিন যখন মুন্না বলেছিল—’আইয়ে বৈঠিয়ে চা পিজিয়ে’ তখন উনি বুঝতে পেরেছিলেন।

কৌশিক বলে, তা তো বুঝলাম। এখন কি ময়না বদল করবেন?

—অফকোর্স! তুমি গাড়ি থেকে ঐ পাখিটাকে নিয়ে এস। আমি এ বাড়ির দরজাটা খুলি।

ময়না বদল করে, চাবিটা ঐ ভদ্রমহিলাকে ফেরত দিয়ে বাসু আবার এসে বসলেন গাড়িতে। বললেন, আমার ভয় ছিল, ইতিমধ্যেই পুলিসে এটাকে না সরিয়ে নিয়ে থাকে।

—সে আশঙ্কাও ছিল নাকি?

—নিশ্চয়! তাই তো রাত থাকতেই চলে এসেছি!

কৌশিক বলে, সতীশ বর্মন এ ভুল করল কেন? কাল তারা বিকালের দিকে নিশ্চয়ই এখানে এসেছিল। মিসেস কৃষ্ণমাচারীকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। পাখিটার অদ্ভুত ‘বোলটাও’ শুনেছে। তবু পাখিটাকে নিয়ে যায়নি কেন? আন্দাজ করতে পারেন?

—পারি। দুটো কারণে। প্রথমত ওরা রমাকে গ্রেপ্তার করতে চায়। ঐ পাখিটার টানেই রমা ফিরে আসতে পারে এটাই ওরা আশা করেছিল; ভেবেছিল, আমি এসে যদি জেনে যাই ‘মুন্নাকে’ পুলিসে ‘সীজ’ করে নিয়ে গিয়েছে তাহলে রমা আর তার বাড়িতে ফিরবেই না। দ্বিতীয়ত, ওদের থিওরি—রমাই হত্যাকারী। সেক্ষেত্রে পাখিটাকে রমা বাঁচিয়ে রাখবে কেন এটা ওরা বুঝে উঠতে পারেনি। পাখিটা যে ‘বোল’ পড়ছে তা শুনেও রমা ঘাবড়াচ্ছে না কেন এটা ওদের মাথায় ঢোকেনি। সে যাই হোক, আজ বিকালের মধ্যেই এখানে সতীশ বর্মন আসবে এবং পাখিটাকে ‘সীজ’ করবে।

— কেন?

—কাল রাত্রে ওরা জেনেছে মহাদেও প্রসাদ তাঁর স্ত্রীকে ‘রমা’ বলে ডাকতেন। সতীশ বর্মন সে-কথার গুরুত্ব না দিলেও শর্মাজীর অর্ডারে যোগীন্দর সিং পাখিটাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে।

পহেলগাঁও থেকে আবার শ্রীনগরে যখন এসে পৌঁছালেন তখন বেশ বেলা হয়েছে। দোকানপাট সব খুলেছে। বাসু-সাহেব গাড়িটাকে নিয়ে এলেন সেন্ট্রাল মার্কেটে। ইয়াকুব মিঞার দোকানে এসে বললেন, মিঞাসাব একটা উপকার করতে হবে। এই পাখিটাকে আপনার জিম্মাদারীতে দিন সাতেক রাখতে হবে। রাজি আছেন?

—আলবৎ। এ-আর বেশি কথা কি?

বাসু-সাহেব একটি পঞ্চাশ টাকার নোট বার করে বলেন, নিন ধরুন।

—এটা কেন স্যার?

—আমার পাখির খোরাকি?

—আমি কি ওকে সোনার দানা খাওয়াব?

—না, সেজন্য নয়। প্রথম কথা, দোকানে এটাকে রাখবেন না। আপনার বাড়িতে রাখবেন। আর এটা যে আপনার কাছে গচ্ছিত রেখে সে কথাটা যেন তৃতীয় ব্যক্তি জানতে না পারে। কেমন? কোন ক্রমেই যেন এ পাখিটা খোয়া না যায়।

ইয়াকুব বললে, ঠিক হ্যায় সা’ব। কিন্তু কেন বলুন তো?

ঠিক তখনই বোল পড়ল পাখিটা; রমা! মৎ মারো। পিস্তল নামাও। …দ্রুম…হায় রাম।

ইয়াকুবের চোখ দুটি ছানাবড়া হয়ে ওঠে!

বাসু বলেন, শুনলেন তো? এই হচ্ছে আমার একনম্বর সাক্ষী। সেদিন যে লোকটার ছবি দেখিয়েছিলাম তার নাম রমাপ্রসাদ। ডাকনাম ‘রমা’। লোকটা যখন হত্যা করে তখন এই ময়নাটা শুনে ফেলেছিল ঐ কথাগুলো। এখন বুঝছেন তো ময়নাটার দাম কত? ওর কিছু ভালমন্দ হয়ে গেলে পুলিস কিন্তু আপনাকেই সন্দেহ করবে। এজন্যই মাত্ৰ সাতদিনের খোরাকি বাবদ নগদ একশ’ টাকা দিচ্ছি। খুব সাবধান! ওকে এক্কেবারে লুকিয়ে রাখবেন। পঞ্চাশ টাকা এখন দিয়ে গেলাম, আবার পঞ্চাশ টাকা এই বাবু দেবেন দিনসাতেক পরে, যখন ময়নাকে ডেলিভারী নিতে আসবেন। ঠিক হ্যায়?

ইয়াকুব মস্ত সেলাম করে বললে, বেফিকর রহিয়ে সা’ব।

সেন্ট্রাল মার্কেট থেকে বেরিয়ে এলেন যখন তখন সূর্য মধ্যগগনে। বাসু বলেন, এ বেলার মতো খেল খতম; চল হাউসবোটে ফিরি।

হাউসবোটে চুপচাপ বসে আছেন রানী দেবী। নিতান্ত একা।

মধ্যাহ্ন-আহার শেষ হলে বাসু বলেন, কৌশিক এ-বেলায় তুমি রানীকে নিয়ে নৌকায় করে একটু ঘুরে এস। ইচ্ছা করলে গাড়িতেও যেতে পার, কারণ আমার গাড়ি লাগবে না।

—আপনি এ বেলা তাহলে কী করবেন?

—আমি এই হাউসবোটেই থাকব। একটু থিংক করব।

এই ‘থিংক্’-করা ব্যাপারটার সঙ্গে রানী দেবী ঘনিষ্ঠভাবেই পরিচিত। উনি এখন হুইস্কির বোতল নিয়ে বসবেন, পাইপ ধরিয়ে। বাইরে যদি সাইক্লোন হতে থাকে, পায়ের নিচে ভূমিকম্পে মাটি দু-ফাঁক হয়ে যায় উনি টের পাবেন না। কায়মনোবাক্যে উনি বুদ হয়ে থাকবেন ঐ ‘থিংক্’ করার ব্যাপারে। রানী দেবী লক্ষ করে দেখেছেন, প্রতিবারই রহস্য সমাধানের শেষাশেষি কয়েকঘণ্টা এইভাবে অন্তর্লীন চিন্তায় উনি মগ্নচৈতন্য হয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাগর-জগতে ফিরে এসে একটা স্বগতোক্তি করেন : লোকটা কে বুঝতে পারছি, কেন করেছে তাও বোঝা যাচ্ছে—কিন্তু প্রমাণ করব কী করে?

বেলা একটা নাগাদ কৌশিক আর রানী দেবী বেরিয়ে গেলেন, নৌকাতেই। বাসু বোতলটা টেনে নিলেন।

.

তন্ময়তা ভাঙলো খোদাবক্সের ডাকে। যখন সে ফুটখানেক দূরত্বে এগিয়ে এসে তৃতীয়বারের জন্যে বললে হজৌর?

চমকে জেগে উঠে বললেন, ক্যা বাৎ? ক্যা হুয়া?

একই আর্জি তৃতীয়বার পেশ করল খোদাবক্স, ছোটাহজৌর আয়ে হেঁ। আপকো সেলাম দিয়া।

বাসু হাত-ঘড়িতে দেখলেন বেলা চারটে। হাউসবোটের জানলা দিয়ে নজর পড়ল পড়ন্ত রৌদ্রে ঝিলাম ঝিমাচ্ছে। দূরে সারি সারি গাছের পাতায় সোনা-গলানো রোদ। মনকে গুটিয়ে আনলেন সেদিক থেকে। বললেন, ঠিক হ্যয়। ম্যয় আভি আতাহুঁ।

খেয়াল হল শীত করছে। দুপুরে শুধু পাঞ্জাবি গায়ে বসেছিলেন। হুইস্কির কল্যাণেই বোধ হয় টের পাননি, প্রখর রৌদ্রতাপ অপসৃত হয়েছে অপরাহ্ণের নিরুত্তাপ পদক্ষেপে ঘর ছেড়ে করিডোরে পা দিয়েই আবার ফিরে গেলেন। শালটা খুলে নিয়ে গায়ে জড়ালেন। বাইরের ঘরে এসে দেখেন সূরযপ্রসাদ এবং গঙ্গারামজী এসেছেন।

ওঁরা কিছু বলার আগেই নিজে থেকে বলে ওঠেন, আপনাদেরই ফোন করতে যাচ্ছিলাম। ইতিমধ্যে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করা গেছে। কাল রাত্রেই তোমাদের বলেছিলাম, আমি মুন্নার তল্লাস করছি। মুন্নাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। সে আছে রমা দাসগুপ্তার বাড়িতে—পহেলগাঁওয়ে। সে নাকি একটা অদ্ভুত ‘বোল’ পড়ছে : ‘রমা! মৎ মারো…পিস্তল নামাও…দ্রুম্…হায় রাম।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই, ময়নাটা এ-কথা কেন বলছে? তোমরা আন্দাজ করতে পার?

সূরয বলে, এর তো একটাই জবাব—লোকটা যখন পিতাজীকে গুলি করে তখন মুন্না সেখানে ছিল। আমি তো সেদিনই বলেছি, মুন্নার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে—একবার মাত্র শুনেই কখনও কখনও সে ‘বোল’ তুলে নিতে পারত। তা পুলিসে কি ‘মুন্না’কে সীজ করেছে?

—পুলিস এখনও খবরটা জানতে পারেনি। আমি রমার কর্মস্থল থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। পহেলগাঁওয়ে মেথডিস্ট চার্চের পিছনে পাশাপাশি তিনখানা বাড়ি, তার মাঝের বাড়িটাই রমার। কিন্তু ওর বাড়িতে তালা ঝুলছে। ওর প্রতিবেশিনী বললেন, রমা কোথায় গেছে কেউ জানে না।

সূরয বলে, তাহলে আপনি কেমন করে ‘মুন্না’কে দেখলেন?

—ওর বাড়ির পিছনের বারান্দায় খাঁচাটা ঝোলানো আছে। আমি দূর থেকে দেখেছি মাত্র। ওর বোল স্বকর্ণে শুনেও এসেছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ-ক্ষেত্রে ‘রমা’ কে? রমা দাসগুপ্তা, না সুরমা খান্না?

গঙ্গারামজী বললেন, রমা দাসগুপ্তা হতে পারে না, কারণ তাহলে সে ঐ পাখিটাকে এতদিন জিন্দা রাখত না।

তারপর সূরযের দিকে ফিরে বললেন, তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, খান্নাজী মিসেস খান্নাকে ‘রমা’ বলে ডাকতেন?

বাসু বলেন, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই যে সুরমা দেবীর একটা বজ্র-আঁটুনি ‘অ্যালেবাই’ রয়েছে।

গঙ্গারাম বলেন, তাই নাকি? সেটা কী?

—মিসেস খান্না প্লেনের টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে ছয় তারিখ ভোর দিল্লি থেকে রওনা হন। শ্রীনগরে এসে পৌঁছান ছয় তারিখ সন্ধ্যায়। বাসে ওঁর সহযাত্রী ছিলেন এমন একজন ভদ্রলোক যিনি সন্দেহের অতীত।

গঙ্গারাম বলেন, কে তিনি?

বাসু সে-কথা কানে না নিয়ে বললেন, ঐ দুজন ছাড়া ‘রমা’ নামের আর কাউকে তোমরা চেন?

দুজনেই জানালেন, তেমন কোন লোকের কথা ওঁরা মনে করতে পারছেন না।

বাসু বলেন, তাহলে পাখিটা ঐ বোল্ বলছে কেন?

সূরয বলে, ময়নাটার কথা মুলতুবি থাক। যে জন্য আমরা এসেছি সে কথাই বলি। পিতাজীর যে সিন্দুকটা আমাদের বাড়িতে আছে, তাতে কিছু কাগজপত্র ও গহনা ছিল বটে। কিন্তু ক্যাশ ছিল না। পিতাজীর যে সুটকেসটা লগ্‌-কেবিনে পাওয়া গেছে তাতে একটি গোদরেজের নম্বরী চাবি ছিল। ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল তাদের ভল্টের লকারের চাবি সেটা। এইমাত্র আমি সেখান থেকেই আসছি। ভল্টে ছিল কিছু দলিলপত্র, কিছু শেয়ারের কাগজ, একটা খামে 430 খানা একশ টাকার নোট আর ঐ উইলটা! এই দেখুন, বিশেষ করে এই প্যারাগ্রাফটা :

“যেহেতু আমি আমার স্ত্রী শ্রীসুরমা খান্নার সহিত গত বৎসর বাইশে অগস্ট তারিখে একটি চুক্তি করিয়াছি যে, আমার স্ত্রী সুরমা খান্না একতরফা বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন করিবেন এবং আমি কোনও আপত্তি পেশ করিব না; এবং আমার আপত্তি বা প্রতিবাদ না থাকায় তিনি একতরফা বিবাহ-বিচ্ছেদের ডিক্রি পাইবেন এবং সে-কারণে তাঁহার বাকি জীবনের ভরণ-পোষণ ও বিবাহ-বিচ্ছেদের খেসারৎ বাবদ তিনি উক্ত বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্পাদন-সাপেক্ষে আমার নিকট হইতে এককালীন পঞ্চাশ হাজার টাকা লাভ করিবেন, সেই হেতু আমি আমার উইলে উপযুক্ত স্ত্রী শ্রীসুরমা খান্নার জন্য কোনও সম্পত্তি রাখিয়া যাইতেছি না। যেহেতু আমি মনে করি তাঁহার বাকি জীবনের ভরণপোষণ বিবাহ-বিচ্ছেদ-খেশারত বাবদ ঐ 50,000 টাকা (পঞ্চাশ হাজার টাকা) যথেষ্ট, ন্যায্য এবং পর্যাপ্ত। উল্লেখ থাকে যে, বিবাহ-বিচ্ছেদ ডিক্রি আদালত কর্তৃক গ্রাহ্য হইবার পূর্বেই যদি কোন কারণে আমার দেহান্তর ঘটে তবে পূর্ব বৎসরের ঐ বাইশে অগস্টের চুক্তি অনুযায়ী আমার স্ত্রী শ্রীসুরমা খান্না আমার সম্পত্তি হইতে ঐ 50,000 টাকাই শুধু পাইবেন—তাঁহার আর কোনও দাবী-দাওয়া গ্রাহ্য হইবে না। সেই কারণে এই উইলে আমার সম্পত্তির আংশিক ওয়ারিশরূপে আমি তাঁহার উল্লেখ করি নাই। আমার মৃত্যুর পূর্বে অথবা পরে ঐ 50,000 টাকাই তিনি শুধু পাইবেন। তদ্ভিন্ন আমার শেয়ার, ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স, ফিক্সড-ডিপোজিট প্রভৃতি হইতে আমার একান্ত সচিব শ্রীগঙ্গারাম যাদব তাঁহার একনিষ্ঠ সেবা ও বন্ধুত্বের প্রতিদান স্বরূপ 10,000 (দশ হাজার টাকা) পাইবেন। তদ্ভিন্ন ‘ক’ বর্ণিত সূচী অনুসারে আমার ব্যক্তিগত ভৃত্য, ড্রাইভার, কর্মচারী নগদে হাজার হইতে পাঁচশ টাকা আমার স্নেহের দান স্বরূপ লাভ করিবেন। এই অর্থ প্রদান করার পর আমার যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আমি আমার একমাত্র পুত্র কল্যাণীয় শ্রীমান সূরযপ্রসাদ খান্নাকে নির্ব্যঢ়-স্বত্বে প্রদান করিয়া যাইতেছি। প্রকাশ থাকে যে, আমার স্বোপার্জিত সম্পত্তি ব্যতিরেকে আমার পৈতৃক সম্পত্তির অর্ধাংশ আমার পিতৃদেব আমার ভ্রাতা শ্রীমান প্রীতমপ্রসাদ খান্নাকে দান করিয়া গিয়াছিলেন এবং পরে আমার ভ্রাতা প্রীতম তাহার পৈতৃক সম্পত্তি আমাকেই নির্ব্যঢ়-স্বত্বে দান করিয়া সংসার ত্যাগ করে। আইন সে সম্পত্তি বর্তমানে আমার। তবু আমি একান্তভাবে আশা রাখি যে, যদি কোনদিন শ্রীপ্রীতম আমার পুত্রের সাক্ষাতে ফিরিয়া আসে তাহা হইলে শ্রীমান সূরয এমন ব্যবস্থা করিবে যাহাতে প্রীতম অর্থকষ্ট সহ্য করিতে বাধ্য না হয়। শর্তসাপেক্ষে নির্ব্যঢ়-স্বত্বে উইল সম্পাদন করা আইনত গ্ৰাহ্য নহে এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। ইহা আমার পুত্রের নিকট অনুরোধ মাত্র।”

পাঠ শেষ করে সূরয বলে, এখন বলুন স্যার, যদি প্রমাণিত হয় যে, বিবাহ-বিচ্ছেদের ডিক্রি লাভের পূর্বেই পিতাজীর দেহান্তর হয়েছিল, তাহলে কি বিমাতার সে সম্পত্তিতে কোনও অধিকার বর্তায়?

বাসু বললেন, না। উইলের বয়ান এমন নিখুঁত ছকা, যে সুরমা দেবী ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি কিছুই দাবি করতে পারেন না। তুমি বরং বল, তোমার চাচাজী প্রীতমপ্রসাদের কথা।

—কী বলব? আমি জীবনে তাঁকে কোনদিন দেখিনি। যতদূর জানি, পিতাজীর সঙ্গে ইদানীং তাঁর কোন যোগাযোগ ছিল না। অবশ্য তিনি যদি কোনোদিন সশরীরে এসে উপস্থিত হন এবং নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে পারেন তবে নিশ্চয় আমি তাঁকে সম্পত্তির অংশ দেব। শুধু তাই নয়, আমি আমার বিমাতাকেও স্বেচ্ছায় বেশ কিছু টাকা দেব।

রাসু সবিস্ময়ে বলেন, কাকে? সুরমা দেবীকে?

—আজ্ঞে না। রমা দেবীকে। তিনি কোথায় আছেন জানেন?

–না। এখনও জানি না।

সূরয বলে, আপনাকে একটা কথা খোলাখুলি জিজ্ঞাসা করি। আপনি কি মনে করেন রমা দেবী এই জঘন্য ব্যাপারটার সঙ্গে কোনভাবে জড়িত?

বাসু বললেন, না। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, সে জড়িত নয়। কিন্তু পুলিস যদি একবার তাকে ধরতে পারে, তাহলে তাকে বাঁচানোও খুব কঠিন।

—কেন? কঠিন কেন?

—আনুষঙ্গিক তথ্য, যাকে বলে ‘সারকাস্ট্যান্‌শিয়াল এভিডেন্স’ তা রমার বিরুদ্ধে অত্যন্ত জোরালো। হত্যাপরাধ প্রমাণ করতে তিনটি জিনিসের দরকার—উদ্দেশ্য, সুযোগ এবং অস্ত্র। আর হত্যাপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় ‘অ্যালেবাই’, অর্থাৎ হত্যার সময় সে যে অন্য কোথাও ছিল তার প্রমাণ আছে। বেচারীর অবস্থা দেখ—যশোদা কাপুরের ছদ্মনামে মহাদেও ওকে বিবাহ করেন। তিনি যে বিবাহিত এই তথ্যটা গোপন করে। এর চেয়ে অনেক সামান্য কারণে স্ত্রী স্বামীকে এবং স্বামী স্ত্রীকে খুন করেছে। অসংখ্য কেস-হিস্ট্রি আছে তার। দ্বিতীয়ত সুযোগ। রমা জানতো কোন লগ্‌-কেবিনে তাঁকে পাওয়া যাবে। তৃতীয় অস্ত্র। সেটা মন-বাহাদুর ওরই জিম্মায় রেখে গিয়েছিল। আর বেচারীর কোনও ‘অ্যালেবাই’ নেই। কী জানো সূরয, আইন যাকে বলে ‘সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স’ তার চেয়ে বড় মিথ্যাবাদী নেই। ফ্যাক্ট বা তথ্য হচ্ছে ঢেঁাড়া সাপ। যেভাবে তাকে ইন্টারপ্রেট করবে, যে-চোখে তাকে দেখবে তাতেই ফ্যাক্টের ফণায় বিষ জমে উঠবে!

গঙ্গারামজী বলেন, তাহলে কেন মনে করছেন রমা দেবী ও কাজটা করেননি?

—যেহেতু আমি প্রমাণ পেয়েছি। কী প্রমাণ তা আমি বলব না, কারণ রমা আমার ক্লায়েন্ট। তাছাড়া আমি নিশ্চিত, ঘটনার সময় ‘মুন্না’ ঐ কেবিনে ছিল না।

সূরয বলে, আমাদের কি উচিত নয় পুলিসকে জানানো যে, ‘মুন্না’ এখন কোথায় আছে তা আমরা জানতে পেরেছি?

—কী দরকার? ওরা ওদের পথে চলুক, আমরা আমাদের পথে অগ্রসর হব। আমি বরং তোমার মায়ের সঙ্গে আবার একবার কথা বলতে চাই।

—কিন্তু তিনি যে কোথায় আছেন তা তো আমরা জানি না। আপনি কাল চলে আসার পরেই ওঁরা দুজন মালপত্র নিয়ে চলে যান। ঘণ্টাদুয়েক পরে টেলিফোন করে জানতে পারি, ওঁরা ঐ হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন তা কিছু বলে যাননি!

এই সময়েই কৌশিক আর রানী দেবী ফিরে এলেন। সূরয ও গঙ্গারাম বিদায় হলেন। ওঁরা কিছু মার্কেটিং করে এসেছেন। সে সব দেখাতেই কিছু সময় গেল। তারপর খোশগল্প চলল কিছুক্ষণ।

.

আরও ঘণ্টাখানেক পরে বাসু-সাহেব বললেন, সূরযকে একবার ফোনে ধর তো? কৌশিক ফোন তুলে নিয়ে ডায়াল করল। একটু পরেই সাড়া দিল সূরয। বাসু তাকে বললেন, একটা কথা গঙ্গারামজীকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তোমার পিতাজী কি গঙ্গারামকে কোন নগদ টাকা দিয়েছিলেন–দিল্লি যাবার রাহাখরচ বাবদ?

সূরয বলল, ঠিক জানি না। কেন বলুন তো?

—তুমি গঙ্গারামজীকে একটু জিজ্ঞাসা করে আমাকে জানাবে? আমি টেলিফোনটা ধরে আছি।

—চাচাজী তো এখন নেই। ওঁর রাত্রে কোথায় নিমন্ত্রণ আছে। সেখানেই গেছেন। ফিরতে রাত হবে। কাল সকালে আপনাকে জানাব।

বাসু বললেন, না সূরয, তাহলে সারা রাত আমার ঘুম হবে না। আমি জেগে আছি। গঙ্গারামজী ফিরে এলে যেন আমাকে ফোন করে খবরটা জানান।

সূরয স্বীকৃতি ও শুভরাত্রি জানিয়ে লাইন কেটে দিল।

কৌশিক বলে, ঐ খবরটা সত্যিই এত জরুরী?

—না হলে আমি মিছামিছি ব্যস্ত হচ্ছি?

যাই হোক বাসু-সাহেবকে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে হল না। গঙ্গারাম রাত প্রায় পৌনে এগারোটায় টেলিফোন করে জানালো, দোসরা তারিখে তার মালিক গঙ্গারামজীকে দশখানি একশ টাকার নোট দিয়ে বলেছিলেন, যদি দিল্লি যেতে হয় তাই পথ-খরচটা রাখ। আমি টেলিফোনে নির্দেশ দিলেই তুমি ফিক্সড-ডিপজিটগুলি নিয়ে দিল্লি চলে যাবে।

বাসু বললেন, থ্যাঙ্কু!

গঙ্গারাম প্রশ্ন করেন, এ খবরটা হঠাৎ জানতে চাইছেন কেন?

—ডেবিট-ক্রেডিট মেলাতে। ও আপনি বুঝবেন না।

পরদিন সকালে প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে বাসু-সাহেব প্রাতরাশের টেবিলে এসে দেখেন ডাইনিং টেবিলে খোদাবক্স চারজনের চারখানা প্লেট সাজিয়েছে। রানী দেবী আর কৌশিকই শুধু নয়, প্রাতরাশের টেবিলে বসে আছে সুজাতাও।

—এ কী! তুমি! কোথা থেকে? কখন এসেছ?

সুজাতা বলে, এই মিনিট পনের। আমি ফেল্লু মেরেছি বাসু-মামু। আপনার পাহাড়ী ময়না আমার চোখে ধুলো দিয়ে সটকেছে।

বাসু সক্ষোভে বলেন, যেমন দেবা তেমনি দেবী! তোমরা দুজনেই সমান! এমন করলে তোমাদের ‘সুকৌশলী’ চলবে কেমন করে?

রানী ওঁকে ধমক দেন, তুমি আর ওকে বকো না। বেচারী এমনিতেই একেবারে ভেঙে পড়েছে।

বাসু-সাহেব জোড়া পোচের প্লেটটা টেনে নিয়ে বলেন, শিকল কাটল কী করে?

—আমরা একটা হোটেলে উঠেছিলাম। এই শ্রীনগরেই। নাম ভাঁড়িয়ে। ডব্‌ল্‌-বেড রুম। আমরা দুইবোন এই পরিচয়ে। কাল সারাদিন দুজনে একসঙ্গে ছিলাম। হোটেল ছেড়ে সারাদিনে একবারও বার হইনি। ও বেশ গল্পগুজব করছিল। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি—ও পালাবার তালে আছে। ও বরং ভাব দেখাচ্ছিল যেন আপনার ছত্রছায়ায় এসে ও নিশ্চিন্ত বোধ করছে। যশোদা কাপুরের সঙ্গে ওর প্রেম কী-করে হল সেই গল্পই শোনালো সারাদিন। রাত্রে দরজাটা বন্ধ করে চাবি আমি বালিসের নিচে রেখেছিলাম। তাই প্রথম রাত্রে ও পালাতে পারেনি। পরদিন যখন দেখলাম ওর পালাবার কোনও ইচ্ছাই নেই তখন আমি একটু অসাবধান হয়ে পড়ি। কাল রাত্রে দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে চাবি কী-হোলেই রেখে শুয়েছিলাম। আজ ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের বিছানাটা খালি। প্রথমে ভেবেছিলাম—ও বুঝি বাথরুমে আছে। তার পরই নজর হল টেবিলের উপরে চাবিটা রাখা আছে, আর তার নিচে একখণ্ড কাগজ চাপা দেওয়া। এই দেখুন :

এক লাইনের চিঠি : কিছু মনে করো না ভাই, চলে যাচ্ছি।

কৌশিক বলে, পালালো কেন? কোথায় যেতে পারে?

বাসু বলেন, ও গেছে পহেলগাঁও। তার দেরাজ থেকে একবাণ্ডিল চিঠি বার করে আনতে! নিতান্ত ছেলেমানুষী!

রানী বলেন, তা ছেলেমানুষ ছেলেমানুষী করবে না?

বাসু ধমক দিয়ে ওঠেন, ছেলেমানুষ! জানো, ওর বয়স কত?

রানী বলেন, বছর দিয়ে কি ছেলেমানুষী মাপা যায়?

***

বিকেলবেলা বাসু-সাহেব একটি টেলিফোন পেলেন। রিসিভারটা তুলে নিয়ে আত্মঘোষণা করা মাত্র ও-প্রান্ত থেকে শর্মাজী বলেন, দুঃসংবাদ আছে মিস্টার বাসু। মানে আপনার তরফে।

—বুঝেছি। আমার ক্লায়েন্টকে আপনারা খুঁজে পেয়েছেন।

—হ্যাঁ। শুধু খুঁজেই পাইনি। তাকে হাতে-নাতে ধরা গেছে।

—হাতে-নাতে মানে?

—পুলিস আজ সকাল দশটা নাগাদ ওকে ওর বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করেছে। ও তখন অর্গলবদ্ধ ঘরে বসে একরাশ এভিডেন্স পোড়াচ্ছিল। আর ওর বারান্দায় মরে পড়েছিল সেই ময়নাটা : মুন্না!

—মরে পড়েছিল? রমা মেরেছে?

—তাছাড়া আর কে?

বাসুর কণ্ঠস্বরে বিস্ময়। বলেন, সে কেন মারতে যাবে? –

—পাখিটা কি ‘বোল’ পড়ে তা নিশ্চয় অমনি ভুলে যাননি?

—সে কথা নয় মিস্টার শর্মা। আপনি কি কোনও যুক্তি-নির্ভর সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছেন–সেক্ষেত্রে এতদিন কেন ঐ মেয়েটি এমন একটা মারাত্মক এভিডেন্সকে খাইয়ে-দাইয়ে বাঁচিয়ে রাখল? কেন তাকে ঘটনাস্থলেই মেরে ফেলল না?

—মিস্টার বর্মন বলছেন, হয়তো পাখিটা এই নতুন বোলটা সম্প্রতি পড়তে শুরু করেছে। উনি ক্রিমিনোলজি বিষয়ে এক্সপার্ট—

—টু হেল্ উইথ্ বর্মন অ্যান্ড হিজ এক্সপার্ট ওপিনিয়ান! আপনি নিজে বিশ্বাস করতে পারেন—একটা ‘বোল পড়া’ পাখি একটা বাক্য একবার মাত্র শুনে দশ-বারোদিন সেটা স্মৃতিতে পুষে রাখল, তারপর হঠাৎ একদিন বোল পড়ল? যে কোনও প্রাণীবিজ্ঞানীকে জিজ্ঞাসা করলেই…

ওঁকে থামিয়ে দিয়ে শর্মাজী বলেন, বাই দ্য ওয়ে, মিসেস্ সুরমা খান্না কোথায় গেছেন আপনি জানেন?

না। আমরা কেউই জানি না। আপনি কি তাঁর অ্যালেবাইটা যাচাই করতে পেরেছেন?

—তাঁর কোনও ‘অ্যালেবাই’ আছে নাকি?

—সেটাই তো আমার প্রশ্ন।

—আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারছি না। আশ্চর্য মানুষ! স্বামী মারা গেছেন আর এখন উনি এমনভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন কেন?

—এবং সেটাও আমার প্রশ্ন।

—সে যাই-হোক, যে জন্য আপনাকে ফোন করছি সেই আসল কারণটা এবার বলি। ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন্ত্ জাজ আপনার সঙ্গে একবার দেখা করতে চান। কাল কখন আপনার সময় হতে পারে?

—সাক্ষাৎটা কোথায় হবে? পহেলগাঁওয়ে?

—না, শ্রীনগরেই। ধরুন যদি কাল সাড়ে নটা নাগাদ আপনাকে পিক্ আপ করে নিই? অসুবিধা আছে কিছু?

—তার আগে আমি আমার ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করতে চাই। সে কোথায় আছে? আই মীন, রমা দাসগুপ্তা?

—শ্রীনগরে জেল-হাজতে।

—তাহলে আপনি অনুগ্রহ করে ব্যবস্থা করে দেবেন যাতে কাল আটটার সময় আমি জেল-হাজতে ওর সঙ্গে দেখা করতে পারি। তারপর আপনার অফিসে নটায় যাব। গাড়ি পাঠাবার দরকার নেই। সূরযের গাড়িতেই যাব।

—দ্যাটস্ অল রাইট।

—একটা কথা, আপনাদের ডিস্ট্রিক্ট জাজের নামটা কী?

—জাস্টিস্ জে. পি. লাল।

—জাস্টিস্ জগদানন্দ প্রসাদ লাল কি?

—হ্যাঁ, আপনি চেনেন?

—নিশ্চয়ই। ভারতবর্ষের এমন কোনও প্র্যাকটিসিং ল’ইয়ার নেই যে তাঁর নাম জানে না। আইনের ওপর অনেকগুলি মৌলিক গ্রন্থ তিনি লিখেছেন। ইট উড বি রিয়াল অনার টু মীট হিম্।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *