প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব

উদাসী রাজকুমার – ২.১২

১২

রাজকুমার তীক্ষ্ণ আর বাহুক নামে লোকটির কথার মাঝখানে একটা বাধা পড়ল। কয়েকজন সন্ন্যাসী গান গাইতে গাইতে এসে পড়ল সেই জঙ্গলে। কাছেই একটা নদী, সন্ন্যাসীরা সেই নদীতে স্নান করতে যাচ্ছে। 

সন্ন্যাসীদের সঙ্গে রয়েছে একটি বাচ্চা ছেলে। তার বয়েস আট-ন’ বছর। কিন্তু তাকেও দেখতে একেবারে সন্ন্যাসীর মতন। তার মাথা ন্যাড়া। গায়ে গেরুয়া রঙের কাপড়। 

সেইদিকে তাকিয়ে রাজকুমার তীক্ষ্ণ বাহুককে জিজ্ঞেস করল, “আপনি যে বললেন, বাবা-মায়ের অনুমতি ছাড়া কেউ সন্ন্যাসী হতে পারে না? তা হলে ওইটুকু ছেলে সন্ন্যাসী হল কী করে? ওর বাবা-মা কি অনুমতি দিয়েছেন?” বাহুক হেসে বলল, “আপনি ওকে চেনেন না? ওর নাম রাহুল। স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের ছেলে।” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ অবাক হয়ে বলল, “গৌতম বুদ্ধ বিবাহ করেছেন?” 

বাহুক বলল, “হ্যাঁ। বিয়ে করার পরই তো উনি সন্ন্যাসী হয়েছেন। তারপরেও উনি একবার নিজের রাজ্য কপিলাবস্তুতে ফিরে গিয়েছিলেন। তখন ওঁর স্ত্রী ছেলেকে বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তুমি বাবার কাছে কিছু চেয়ো! গৌতম বুদ্ধ আর ছেলেকে কী দেবেন! ওঁর তো ধন-রত্ন কিংবা রাজমুকুট নেই। তাই ছেলেকে দীক্ষা দিয়েছেন।” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ বলল, “ওইটুকু বাচ্চা, তবু ওর মুখে ঠিক যেন আলোর মতন আনন্দ ফুটে বেরুচ্ছে। আমিও দীক্ষা নিয়ে ওই আনন্দ পেতে চাই!” 

সন্ন্যাসীদলের একেবারে শেষে যিনি ছিলেন, তিনি রাজকুমার তীক্ষ্ণকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। তাঁর চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে গেল। 

সেই সন্ন্যাসীর মুখ ভর্তি দাড়ি, মাথার চুলে জট পাকিয়ে গেছে। রাজকুমার তীক্ষ্ণকে দেখে তিনি কয়েক মুহূর্ত বিস্ময়ে চুপ করে রইলেন। তারপর দৌড়ে এসে বললেন, “রাজকুমার দৃঢ়! রাজকুমার দৃঢ়! আপনি বেঁচে আছেন? আমি কত খুঁজেছি আপনাকে! আজ বড় আনন্দের দিন!” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ বাহুকের দিকে ফিরে বলল, “ইনি কে? আমাকে দৃঢ় বলছেন কেন? আমার নাম তো দৃঢ় নয়!” 

সেই সন্ন্যাসী রাজকুমার তীক্ষ্ণর হাত চেপে ধরে বললেন, “কুমার, আমাকে চিনতে পারছেন না? আমরা দু’জনে একসঙ্গে নদীতে লাফ দিলাম!” 

বাহুক বলল, “কুমার, ইনি হচ্ছেন শিল্পী শ্রমণ জয়পাল। ইনি এখানে ছবি আঁকেন, মূর্তি গড়েন। ইনি গৌতম বুদ্ধের একটা মূর্তি গড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু গৌতম বুদ্ধ রাজি হননি। তাই গৌতম বুদ্ধ যেসব গল্প বলেন, উনি তার ছবি আঁকেন।” 

সন্ন্যাসী বললেন, “আমি একসময় অহিচ্ছত্রপুরের দুর্ভেদ্য কারাগারের প্রহরী হয়েছিলাম। তখন একদিন আপনাকে নিয়ে পালাতে গিয়ে পড়ে গেলাম প্রহরীদের সামনে। দু’জনেই উঠে গেলাম এক গম্বুজে। সেখানেও তাড়া করে এল প্রহরীরা। বাঁচার আর কোনও আশা ছিল না বলে দু’জনেই অত উঁচু থেকে ঝাঁপ দিলাম নদীতে। আমার একটা পা ভেঙে গিয়েছিল। ভাসতে ভাসতে গিয়ে উঠলাম এক অচেনা দেশে। তারপর আপনাকে কত খুঁজেছি। অনেক দেশে ঘুরেছি। কোথাও আপনাকে পাইনি! আজ আপনাকে দেখে আমার বুক আনন্দে ভরে যাচ্ছে!” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ আবার বলল, “আপনি ভুল করছেন। আপনার সঙ্গে আমি কোনওদিন নদীতে লাফ দিইনি!” 

বাহুক বলল, “মনে হচ্ছে আপনাদের দুই ভাইয়ের চেহারার মিল আছে খুব। নিশ্চয়ই শিল্পী জয়পাল আপনার দাদার কথা বলছেন!” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ বলল, “আমার দাদা কারাগারে ছিলেন?” 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “সেই কারাগারে আপনার মাও ছিলেন। রানি তলতাদেবী সেই অন্ধকার কারাগারে ছিলেন বছরের পর বছর। তিনি কি মুক্ত হয়েছেন?” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ বলল, “আমার মা? আমি জানতাম, আমার মা, বাবা, দাদা কেউ বেঁচে নেই!” 

বাহুক বলল, “কুমার, এবার আমার কাহিনীটা শুনুন! অনেক বছর আগে আমি যখন বেশ ছোট ছিলাম, আমার বাবার সঙ্গে একদিন জঙ্গলে ভেড়া চরাতে গিয়েছিলাম। আমরা খুব গরিব ছিলাম, ভেড়া চরানোই ছিল আমাদের পেশা। বাবা রোজ সকালে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। একদিন পাহাড়ে একটা গাছের পাশে গেছি, হঠাৎ দেখি একজন বিশাল চেহারার পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন একটা পাথরের ওপর। একজন শীর্ণকায়, লম্বামতন লোক পেছন থেকে ঠেলে তাঁকে ফেলে দিলেন খাদের মধ্যে!” 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “মহারাজ মহাচূড়ামণি! তিনি ওই পুরোহিতকে দারুণ বিশ্বাস করতেন। কিন্তু ওই পুরোহিতই সাঙ্ঘাতিক বিশ্বাসঘাতক!”

বাহুক বলল, “আমার কথা সবটা শুনুন। তখন তো আমি মহারাজকে চিনতাম না। তাঁর মাথায় মুকুটও ছিল না। শুধু দেখলাম, একজন মানুষ আর একজন মানুষকে ঠেলে ফেলে দিল। মহারাজ কিন্তু প্রথমেই খাদের একেবারে নীচে পড়ে যাননি। একটা গাছের ডাল ধরে ঝুলছিলেন। আর চিৎকার করে বলছিলেন, গুরুদেব, আমাকে বাঁচিয়ে দিন। আমি সিংহাসন চাই না। তখন সেই পুরোহিত তলোয়ার দিয়ে গাছের ডালটা কেটে মহারাজকে নীচে ফেলে দিলেন! তিনি তলিয়ে গেলেন অতল অন্ধকারে।” 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “ইস, মানুষ এত নিষ্ঠুর হতে পারে!”

বাহুক বলল, “আরও শুনুন। আমি আর বাবা ওই দৃশ্য দেখে ফেলেছিলাম বলে পুরোহি, ছটা আমাদের কাছে ডাকলেন। তারপর তলোয়ারের এক কোপে আমার বাবার মুণ্ডু কেটে ফেললেন। তিনি আমাকে মারবার জন্যও অস্ত্র তুলেছিলেন, কিন্তু আমি দৌড়ে পালিয়ে গেলাম। উনি তাড়া করেও আমাকে ধরতে পারলেন না। পরের দিন রাত্তিরে উনি সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এলেন আমাদের গ্রামে। ওঁর ওই পাপের সাক্ষী রাখতে চাননি। আমি সে রাতে বোবা সেজে ছিলাম। ছম্ভী আমার গায়ে কয়েক জায়গায় আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, আমি সত্যি বোবা কি না। আমি কিছুতেই মুখ দিয়ে শব্দ করিনি। এই দেখুন, আজও আমার শরীরে সেই পোড়া দাগ রয়েছে।” 

সে তার একটা পা তুলে দেখাল, পায়ের তলাটা একেবারে কালো। 

বাহুক বলল, “সে রাতে ছম্ভী আমাদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দিলেন। আমি কোনওক্রমে পালালাম। প্রাণের ভয়ে আর কখনও ফিরে যাইনি। ছম্ভীর গুপ্তচরেরা সব সময় ঘুরে বেড়ায় সেখানে। কিন্তু দেশের টান কি ভোলা যায়? দূর থেকে আমি দেশের সব খবর রাখার চেষ্টা করি।’ 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “ছম্ভীই মহারাজকে হত্যা করেছেন। তারপর ষড়যন্ত্র করে মহারানির নামে দোষ চাপিয়েছেন। চম্পকের কাছে ছম্ভীই মিথ্যে কথা বলে মহারানিকে পাঠিয়েছিলেন, যাতে লোকে মনে করে, চম্পক আর মহারানি দু’জনেই বিশ্বাসঘাতক, এরা দু’জনেই মহারাজকে মেরে সিংহাসন দখল করতে চায়।” 

বাহুক বলল, “লোকেও তাই বিশ্বাস করেছিল। আমার এক কাকার কাছে শুনেছি, চম্পক আর মহারানি তলতাদেবীকে সবাই একসঙ্গে ঘোড়া ছুটিয়ে আসতে দেখেছিল।” 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “আমি পরে শুনেছি, মহারানি আসলে তখন চম্পকের কাছে বন্দিনী ছিলেন। চম্পক যাতে কিছু বলে দিতে না পারে সেইজন্য সে এসে পৌঁছনোমাত্র তার মুখ বেঁধে ফেলে তাকে শূলে চড়িয়ে মেরে ফেলা হল ছম্ভীর আদেশে। আর মহারানি তলতাদেবীকে কালাঘর নামে দুর্গে অন্ধকার কুঠুরিতে আটকে রাখা হল। তাঁর খবর বাইরের কেউ জানতও না!” 

এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল রাজকুমার তীক্ষ্ণ। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, “আপনি তাঁকে নিজের চোখে দেখেছেন?” 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “অবশ্যই। তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্যই আমি কালাঘর দুর্গে প্রহরীর কাজ নিয়েছিলাম। আপনার মনে নেই, কুমার, আপনি তখন খুব ছোট ছিলেন, আপনার মা আমাকে রাজবাড়ির উদ্যানে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমি সেখানে মূর্তি গড়তাম। ছম্ভী সব মূর্তি ভেঙে ফেলেছেন। কিন্তু আমি অকৃতজ্ঞ হতে পারি না। আমি অতবড় কারাগারের সেই এক নির্জন কুঠরিতে মহারানিকে ঠিক খুঁজে বার করেছিলাম।” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ জিজ্ঞেস করল, “তিনি আপনাকে কী বললেন?” শিল্পী জয়পাল বললেন, “আমি নিজের জীবন তুচ্ছ করে মহারানিকে সেই কারাগার থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলাম। তিনি রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আমি কারাগার থেকে বেরুলেই আমার দুই ছেলের ক্ষতি হবে। ছম্ভী প্রতিশোধ নেবেনই। ছম্ভী আমার দুই পুত্রকে হত্যা করবেন। আমার জীবনের চেয়ে কুমার দৃঢ় আর কুমার তীক্ষ্ণর জীবনের দাম বেশি। তুমি এক এক করে আমার পুত্রদের উদ্ধার করার চেষ্টা করো বরং।” 

“আমার দাদাও ওই কারাগারে ছিলেন?” 

“হ্যাঁ। কিন্তু বিশাল কারাগার। তার অনেক কক্ষ। কুমার দৃঢ় তাঁর মায়ের খবর জানতেন না।” 

“তারপর কী হল বলুন!”

“কুমার দৃঢ়কে আমি সব কথা জানালাম। বড় রাজকুমার প্রথমে ভয় পাচ্ছিলেন। জীবনের ভয় নয়, যন্ত্রণার ভয়। একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর থাকতে থাকতে তাঁর চোখে আর আলো সহ্য হত না। চোখে রোদ পড়লেই খুব কষ্ট হতো। তাই আমরা ঠিক করলাম, রাত্তিরবেলা বেরোবো। রাজকুমার দৃঢ়কে নিয়ে আমি অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছিলাম, তবু ধরা পড়ে গেলাম শুম্ভ-নিশুম্ভ নামে দু’জন সাঙ্ঘাতিক প্রহরীর কাছে।” 

“শুম্ভ-নিশুম্ভ? ওদের তো চিনি আমি! ওদের সঙ্গে এক সময় আমি তলোয়ার লড়েছি। ওরা আমার দাদাকে চিনল না?” 

“না। ওরা কোনও কিছু চিন্তা করে না, শুধু হুকুম মানতে জানে। আমি ওদের বললাম, তোমরা কাকে মারতে যাচ্ছ? ইনি আমাদের রাজকুমার। তা শুনে তারা বলল, আমাদের রাজকুমার তীক্ষ্ণ, তা ছাড়া এ রাজ্যে আবার রাজকুমার কে? ছম্ভী রটিয়ে দিয়েছিলেন যে, বড় রাজকুমার বেঁচে নেই!” 

“শুম্ভ-নিশুম্ভ আমার দাদাকে ধরে রেখে আপনাকে ছেড়ে দিল?” 

“না, না, শেষ পর্যন্ত আমরা কেউই ধরা দিইনি। আমরা দু’জনেই উঠে গেলাম একটা গম্বুজের মাথায়। শুম্ভু-নিশুম্ভও সেখানে তেড়ে এল। আরও প্রহরীরা এল। তাদের সঙ্গে লড়াই করে জয়ের আশা ছিল না। আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়লাম। কিন্তু ওদের হাতে ধরা দেওয়ার চেয়ে মৃত্যুবরণ করাই ভাল মনে করে আমরা লাফিয়ে পড়লাম বহু নীচের নদীতে। পড়ার সময়েই আমার জ্ঞান চলে গিয়েছিল। পরে চোখ মেলে আমি আর বড় রাজকুমারকে দেখতে পাইনি। আমরা দুজনে ভেসে গিয়েছিলাম দু’দিকে। 

“আমার দাদা জলে ভেসে গেছে? সাঁতার জানত?” 

“তা জানতেন। কিন্তু কোথায় যে গেলেন তা আমি জানি না। অনেক খুঁজেছি তাঁকে। কোনও সন্ধান পাইনি। আমি ঘুরতে ঘুরতে একদিন গৌতম বুদ্ধের দেখা পেলাম। তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়েছি। তাঁর সঙ্গে-সঙ্গেই ঘুরে বেড়াই।” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ কয়েক মুহূর্ত এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শিল্পী জয়পালের দিকে। 

তারপর দু’ হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে তীব্র স্বরে বলল, “এখন আমি কী করি? আমার জীবনের সব মিথ্যে হয়ে গেল? এতদিন আমি জানতাম, পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। আমার মা বিশ্বাসঘাতিনী হয়ে আমার পিতাকে হত্যা করেছেন। সেইজন্য আমি মায়ের মুখ মনে করতেও চাইতাম না! আমার দাদার কথাও আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম, রাজপুরোহিত ছম্ভী আমাকে পিতার মতন স্নেহ করেন। আমার সঙ্গে তিনি কোনওদিনও খারাপ ব্যবহার করেননি। এখন দেখছি, ছম্ভীই আমার সবচেয়ে বড় শত্ৰু।” 

বাহুক বলল, “কুমার, এই ছম্ভীর মতন কুচক্রী আর পাপী এই দুনিয়ায় আর দুটি নেই।” 

শিল্পী জয়পাল বললেন, “আপনার মায়ের ওপর ছম্ভীর এত রাগ কেন জানেন? মহারানি তলতাদেবী দারুণ বুদ্ধিমতী, তাঁর বুদ্ধিতেই মহারাজ মহাচূড়ামণি রাজ্য চালাতেন। ছম্ভী বারবার হেরে যেতেন মহারানির কাছে। সেইজন্যই ছম্ভী ওরকম প্রতিশোধ নিলেন।” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ মাথার চুল মুঠি করে টেনে চিৎকার করে বলল, “এখন আমি কী করি? আমার মাথায় আগুন জ্বলছে। আমার ইচ্ছে করছে ছম্ভীর ওপর চরম প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু আমি তলোয়ার ছুঁড়ে ফেলেছি। আমি ঠিক করেছি আর যুদ্ধ করব না। বুদ্ধদেবের অনুগত হব!” 

পাথর থেকে নেমে সে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল আর চিৎকার করতে লাগল, “আঃ! আঃ!” 

বাহুক আর শিল্পী জয়পাল স্তব্ধ হয়ে রইল। কী বলবে বুঝতে পারল না।

রাজকুমার তীক্ষ্ণর সর্বাঙ্গ ধুলোয় মাখামাখি হয়ে গেল। তার চিৎকার শুনে বোঝা যায়, তার খুবই কষ্ট হচ্ছে। বুকখানা যেন ফেটে যাচ্ছে। তার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। 

সেই চিৎকার শুনে আরও অনেক লোক জড়ো হল সেখানে। মল্লপাল আর তার সঙ্গীরাও এসে গেল। 

রাজকুমারকে ওরকম ধুলোয় গড়াতে দেখে মল্লপাল ব্যাকুলভাবে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, “কুমার, কুমার, এ আপনি কী করছেন? উঠে বসুন। শান্ত হোন।”

রাজকুমার তীক্ষ্ণ কান্না থামিয়ে রক্তাভ চোখে মল্লপালের দিকে তাকিয়ে ক্রুদ্ধস্বরে জিজ্ঞেস করল, “মল্লপাল, তুমি জানতে যে আমার মা কারাগারে বন্দিনী? ছম্ভী তাঁকে আটকে রেখেছেন?” 

মল্লপাল অপরাধীর মতন মাথা নিচু করে বলল, “জানতাম!” 

রাজকুমার আবার জিজ্ঞেস করল, “জানতে? তা হলে এতদিন বলোনি কেন?” 

মল্লপাল বলল, “ছম্ভীর ভয়ে বলিনি। ছম্ভীর বিরুদ্ধে কিছু বললে তিনি আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের হত্যা করবেন!”

এবার উঠে বসে রাজকুমার তীক্ষ্ণ প্রায় হাহাকার করে বলল, “যে পুরুষ তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয় না, সে কি পুরুষ?” 

সবাই চুপ করে রইল। 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ আবার বলল, “যে সন্তান তার মায়ের অপমানের কথা শুনেও সহ্য করে যায়, সেই সন্তানের কি জন্মটাই ব্যর্থ নয়?” 

এবারও সবাই চুপ করে রইল। 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ এবার সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখন আমি কী করি? এখন আমি কী করি?” 

এবারেও কারও কাছ থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে সে ভূমি থেকে লাফিয়ে উঠল। তারপর হুঙ্কার দিয়ে উঠল, “আমার অশ্ব? আমার অশ্ব কোথায়?” 

রাজকুমার তীক্ষ্ণ এক দৌড়ে বেরিয়ে এল অরণ্য থেকে। ছুটতে ছুটতে এল নিজেদের শিবিরের কাছে। মাটি থেকে তুলে নিল তার তলোয়ার। সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সাদা ঘোড়া। 

সেই ঘোড়ার পিঠে চেপে রাজকুমার তীক্ষ্ণ ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *