১৭. মণিপুর-দুহিতা চিত্রাঙ্গদা

মণিপুর-দুহিতা চিত্রাঙ্গদা

ইন্দ্রপ্রস্থে দেবর্ষি নারদ কর্তৃক পাণ্ডবদের দাম্পত্য জীবনের রীতি প্রতিষ্ঠার প্রথম বৎসরেই এক ব্রাহ্মণের গোধন রক্ষার প্রয়োজনে অর্জুনকে সেই নিয়ম লঙ্ঘন করতে হয়। অস্ত্রাগারে তখন যুধিষ্ঠির-দ্রৌপদী ছিলেন। অস্ত্র গ্রহণের প্রয়োজনে অর্জুনকে সেই অস্ত্রাগারে প্রবেশ করতে হয়। ব্রাহ্মণের গোধন উদ্ধার হয়। কিন্তু অন্য ভ্রাতার সঙ্গে দ্রৌপদী থাকাকালীন সেই কক্ষে প্রবেশের কারণে অর্জুনকে বনবাসে যেতে হয়। তপস্বীগণ পরিশোভিত মহেন্দ্রপর্বত দর্শন করে, সমুদ্রের তীর দিয়ে ধীরে ধীরে অর্জুন মণিপুরে প্রবেশ করেন। এইখানে রাজকুমারী চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে।

অর্জুন-চিত্রাঙ্গদা সংবাদ আলোচনার পূর্বে বিশ্বকবির চিত্রাঙ্গদা নাট্যকাব্যটি পাঠকের স্মরণে আসে। নাট্যকাব্যের চিত্রাঙ্গদা রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব সৃষ্টি। কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে রবীন্দ্রনাথ এক নূতন চিত্রাঙ্গদা রচনা করেছেন। নারীর রমণীয়তা যাঁর মধ্যে অনুপস্থিত, পুরুষালি বীর্য তেজে যিনি অনন্যা। ব্যাসদেবের চিত্রাঙ্গদা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের চরিত্র।

মণিপুরের সমস্ত তীর্থ ও পবিত্র স্থানগুলিতে উপস্থিত হয়ে ক্রমে তিনি চিত্ৰবাহন নামক মণিপুরের ধার্মিক রাজার কাছে উপস্থিত হলেন। সেই রাজার চিত্রাঙ্গদা নাম্নী পরমসুন্দরী একটি কন্যা ছিল। সেই চিত্রাঙ্গদা বাড়ির ভিতরে বিচরণ করছিল। এমন অবস্থায় ঈশ্বরের ইচ্ছানুক্রমে অর্জুন তাকে দেখতে পেলেন, দেখতে পেয়েই তিনি তার প্রতি অভিলাষী হলেন। তারপর অর্জুন রাজা চিত্ৰবাহনের কাছে গিয়ে নিজের আগমনের প্রয়োজন বললেন, “মহারাজ, আমি ক্ষত্রিয় এবং সকুলোৎপন্ন; অতএব আমাকে আপনার এই কন্যাটি দান করুন।” তা শুনে রাজা বললেন, “তুমি কার পুত্র? তোমার নাম কী?” তখন অর্জুন বললেন, “আমি পাণ্ডব, কুন্তীর পুত্র; আমার নাম ধনঞ্জয়।”

তারপর রাজা শান্তভাবে বললেন, “এই বংশে প্রভঞ্জন নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি অপুত্রক বলে সন্তানার্থী হয়ে গুরুতর তপস্যা করেন, তাঁর সেই ভয়ংকর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে এই বর দেন যে, ‘তোমাদের বংশে এক-এক পুরুষের একটি করে সন্তান হবে।’ সেইজন্যই বহুদিন যাবৎ এই বংশে একটি করে সন্তান জন্মে আসছে। তবে আমার সকল পূর্বপুরুষের পুত্রই জন্মেছিল। কিন্তু আমার এই কন্যাটি জন্মেছিল এবং এই আমার বংশরক্ষা করবে। সুতরাং এইটিই আমার পুত্র এইরূপই আমার ধারণা চলে আসছে। কারণ, আমি পুত্রিকাপুত্র করবার বিধান অনুসারে যজ্ঞানুষ্ঠান করেছি। তাতেই এর ‘পুত্র’ সংজ্ঞা হয়েছে। সুতরাং অর্জুন, তোমার দ্বারা এর গর্ভে যে একটি পুত্র জন্মাবে, সেই আমার বংশধর হবে, এইরূপ শপথ করাই এর পাণিগ্রহণে তোমার শুল্ক হোক এবং এই শপথ করেই তুমি একে গ্রহণ করো।” “তাই হবে” এই শপথ করে অর্জুন চিত্রাঙ্গদাকে গ্রহণ করে তিন বৎসর এই রাজবাড়িতে বাস করলেন। তারপর চিত্রাঙ্গদার গর্ভে পুত্র জন্মালে, অর্জুন তাকে আলিঙ্গন করে এবং রাজার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দেশভ্রমণের জন্য চলে গেলেন।

পঞ্চতীর্থকে নিরুপদ্রব করে এবং অপ্সরাদের প্রস্থানের অনুমতি দিয়ে অর্জুন চিত্রাঙ্গদাকে দেখার জন্য পুনরায় মণিপুর গেলেন। সেখানে গিয়ে অর্জুন চিত্রাঙ্গদার গর্ভে বভ্রুবাহন নামে পুত্রকে দেখে রাজা চিত্ৰবাহনকে বললেন, “মহারাজ, চিত্রাঙ্গদাকে গ্রহণ করার শুল্কস্বরূপ এই বভ্রুবাহনকে গ্রহণ করুন, এর দ্বারাই আমি আপনার ঋণ থেকে মুক্তি হব।” অর্জুন আবার চিত্রাঙ্গদাকে বললেন, “ভদ্রে, তুমি এখানেই থাকো। তোমার মঙ্গল হোক, বভ্রুবাহনকে বড় করতে থাকো। পরে আমাদের ইন্দ্রপ্রস্থে গিয়ে আনন্দিত হবে এবং সেখানে কুন্তী, যুধিষ্ঠির, ভীম, আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা নকুল-সহদেব ও অন্যান্য বান্ধবগণকে দেখতে পাবে এবং সেই সকল বান্ধবগণের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দ লাভ করবে।

“মহারাজ যুধিষ্ঠির ধর্মপথেই রয়েছেন এবং তাঁর ধৈর্যও অক্ষুণ্ণ আছে। সুতরাং তিনি পৃথিবী জয় করে রাজসূয় যজ্ঞ করবেন। সেই যজ্ঞে পৃথিবীর ক্ষত্রিয় নৃপতিরা বহুতর রত্ন নিয়ে আসবেন এবং তোমার পিতাও যাবেন। তুমি তখন তোমার পিতার আনুকূল্যে একসঙ্গে সেখানে যাবে, সেই যজ্ঞেই আমি তোমাকে আবার দেখব। তুমি পুত্রটিকে পালন করতে থাকো, শোকার্ত হয়ো না। এটি আমার বভ্রুবাহন নামক বাইরের প্রাণ এবং এই পুরুষটি বংশবর্ধক; সুতরাং পুত্রটিকে তুমি পালন করতে থাকো। এই পুত্রটি পুরুবংশের আনন্দজনক, পাণ্ডবগণের প্রিয়তম এবং ন্যায় অনুসারে মহারাজ চিত্ৰবাহনের উত্তরাধিকারী হবে, সুতরাং তুমি একে সর্বদাই পালন করবে। আর সুন্দরী! তুমি আমার বিরহে দুঃখ কোরো না।” চিত্রাঙ্গদাকে এই কথা বলে অর্জুন শিবের অধিষ্ঠান ভূমি গোকর্ণ তীর্থের দিকে গমন করলেন।

রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের চিত্রাঙ্গদাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা অপরূপা সুন্দরী, রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদার তাদৃশ মনোহর রূপ ছিল না। রূপ লাভ করে অর্জুনকে পাবার জন্য তিনি কামদেবের পূজা করেছেন। তিনি বীর নারী। অর্জুন তাঁর বীরত্বের বিবরণে মুগ্ধ। তাই শেষ পর্যন্ত চিত্রাঙ্গদাকে লাভ করে অর্জুন বলেছেন, ‘ধন্য আমি’। ব্যাসদেবের চিত্রাঙ্গদা কখনওই চাননি যে, পুত্র বভ্রুবাহন পিতা অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। বিমাতা উলূপীর জন্য পুত্রের সঙ্গে অর্জুনের যুদ্ধ হয়, চিত্রাঙ্গদা নিহত স্বামীর মৃতদেহের পাশে প্রায়োপবেশনে বসেন। ব্যাসদেবের কাহিনিতে সামঞ্জস্য বেশি। ভীষ্মকে অন্যায়ভাবে বধের প্রায়শ্চিত্ত ঘটিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাসদেব।

এরপর দীর্ঘকাল পাঠকের সঙ্গে চিত্রাঙ্গদার আর সাক্ষাৎ হয় না। ইতিমধ্যে হস্তিনাপুরে কপট দ্যূতক্রীড়ায় পরাজিত হয়ে পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদীর সঙ্গে বনবাস চলে যান। বনবাস ও অজ্ঞাতবাসের শর্ত পূরণ করে পাণ্ডবরা হৃত রাজ্য পুনরায় দাবি করলে দুর্যোধন তা প্রদান করতে অস্বীকার করেন। কুরুক্ষেত্রের মহারণে কৌরবপক্ষ পরাজিত ও ধ্বংস হলে যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরের রাজচক্রবর্তী হয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরূঢ় হয়ে যুধিষ্ঠির পুরোহিত ব্রাহ্মণ ও ব্যাসদেবের আদেশে অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যজ্ঞীয় অশ্ব নিয়ে অর্জুন অশ্বের অনুসরণ করতে থাকেন। বহুদেশ পার হয়ে, সমস্ত রাজন্যবর্গকে পরাজিত করে অর্জুন উপস্থিত হন মণিপুর রাজ্যে। অর্জুন-চিত্রাঙ্গদার পুত্র বভ্রুবাহন তখন মণিপুরের রাজা। পিতার আগমন সংবাদ শুনে বভ্রুবাহন তাঁকে বরণ করতে রাজদ্বারে উপস্থিত হন। এই ঘটনায় অর্জুন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। তিনি পুত্রকে রূঢ় ভর্ৎসনা করে তার পৌরুষকে ধিক্কার দেন। বভ্রুবাহন অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একদিকে পিতা চাইছেন বভ্রুবাহন তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করে শৌর্যের পরিচয় দিন। অন্যদিকে বভ্রুবাহনেরও এই প্রথম পিতৃসাক্ষাৎ। তাঁর এই দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় পাতাল থেকে বিমাতা উলূপী আবির্ভূতা হন এবং তিনি বভ্রুবাহনকে ক্রমাগত যুদ্ধের জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন। বভ্রুবাহন যুদ্ধের জন্য উদ্যোগ করেন। পিতা পুত্রে ভয়ংকর যুদ্ধ হয় এবং শেষ পর্যন্ত বভ্রুবাহন নিক্ষিপ্ত শরে অর্জুন পতিত ও নিহত হন। এই সংবাদ শুনে চিত্রাঙ্গদা রণস্থলে প্রবেশ করেন।

তখন ভর্তাকে নিহত ও দুঃখকাতর পুত্রকে ভূতলে পতিত দেখে, পরিত্ৰস্তা চিত্রাঙ্গদা রণাঙ্গনে প্রবেশ করলেন।

ভর্তারং নিহতং দৃষ্ট্বা পুত্ৰঞ্চ পতিতং ভূবি।

চিত্রাঙ্গদা পরিত্ৰস্তা প্রবিবেশ রণাজিরে।। আশ্বমেধিক : ১০১ : ২৬ ৷৷

ক্রমে বভ্রুবাহনের মাতা চিত্রাঙ্গদা শোকসন্তপ্ত হয়ে রোদন করতে থেকে অত্যন্ত কম্পিতকলেবরে নিহত পতিকে দর্শন করলেন।

তারপর পদ্মনয়না চিত্রাঙ্গদা দুঃখে সন্তপ্ত হয়ে বহুতর বিলাপ করে মূৰ্ছিত ও ভূতলে পতিত হলেন। পরে অলৌকিক সুন্দরী চিত্রাঙ্গদা চৈতন্যলাভ করে নাগদুহিতা উলূপীকে দেখে এই কথা বললেন, “উলূপী! দেখো, তোমার জন্যই আমার পুত্র কর্তৃক বাণ দ্বারা নিহত যুদ্ধবিজয়ী ভর্তা রণস্থলে শয়িত রয়েছেন। উলূপী! তুমি আর্যধর্ম জানো এবং পতিব্রতাও বটে। যেহেতু তোমার জন্যই তোমার পতি নিহত হয়ে রণস্থলে পতিত রয়েছেন, সেই হেতু এঁর জীবনের উপায় করা তোমারই উচিত। কিন্তু মূঢ়ে! যদি তোমার এই পতি তোমার কাছে অপরাধী হয়ে থাকেন, তবু তুমি ক্ষমা করো। আমি প্রার্থনা করছি, তুমি এঁকে জীবিত করো। তুমি ত্রিভুবন বিদিত হয়েও ধর্ম জানো না, যেহেতু পুত্র দ্বারা ভর্তাকে নিহত করিয়েও তুমি শোক করছ না। নাগনন্দিনী! আমি নিহত পুত্রের জন্য শোক করি না; কিন্তু এরূপ মৃত্যুদ্বারা যাঁর আতিথ্য করলাম, সেই পতির জন্যই শোক করি।”

নাগতনয়া উলূপীদেবীকে এই কথা বলে যশস্বিনী চিত্রাঙ্গদা তখন ভর্তার কাছে গিয়ে বলতে থাকলেন, “কৌরবপ্রধান ধর্মরাজের প্রিয়জন শ্রেষ্ঠ! এবং আমার প্রিয় মহাবাহু! উঠুন, আমি আপনার এই অশ্ব মুক্ত করলাম। প্রভু! আপনি ধর্মরাজের যজ্ঞীয় অশ্বের অনুসরণ করবেন, সেই আপনি কী জন্য ভূতলে শয়ন করে রয়েছেন। কৌরবনন্দন! আমার ও কৌরবগণের প্রাণ আপনার অধীন। অন্যের প্রাণদাতা সেই আপনি কেন প্রাণত্যাগ করবেন?

“উলূপী! বেশ, তুমি দেখো—এই পতি ভূতলে পতিত হয়ে আছেন। তুমি এই পুত্রকে উৎসাহিত করে এর দ্বারা পতিকে বধ করিয়ে শোক করছ না। এই বালক মৃত অবস্থায় ভূতলে শায়িত থাকুক, এ আমার বরং অভীষ্ট কিন্তু এই রক্তনয়ন অর্জুন সম্যক জীবনলাভ করুন। সুভগে! পুরুষগণের বহুভার্যতা দোষ নয়, কিন্তু স্ত্রীগণের বহুপতিকতা দোষই বটে; তোমার এরূপ বুদ্ধি যেন না হয়। কারণ, স্বয়ং বিধাতাই চিরকালীনভাবে ও অনশ্বররূপে এই নিজের নিয়ম করেছেন। এইজন্যই অর্জুনেরও বহুভার্যত্ব বিধাতার অভীষ্ট বলেই অবগত হও। সে যাই হোক, পতির সঙ্গে তোমার সম্মেলন সত্য হোক। উলূপী! তুমি পুত্র দ্বারা এই পতিকে বিনাশ করিয়ে আবার যদি আজ আমাকে জীবিত অবস্থায় তাঁকে না দেখাও, তা হলে আমি আজই জীবন ত্যাগ করব। দেবী! সেই আমি পতিপুত্রহীনা হয়ে অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছি। অতএব তোমার সাক্ষাতেই এই রণস্থলে আমি প্রায়োপবেশন করব, এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।” চিত্ৰবাহনতনয়া সপত্নী উলূপীকে এই কথা বলে সেই স্থানেই প্রায়োপবেশন করে নীরব হলেন। তারপর চিত্রাঙ্গদা বিলাপ করতে করতে ভর্তার চরণযুগল ধারণ করে নিশ্বাস ত্যাগের সঙ্গে পুত্রকে দর্শন করতে থেকে শোকার্ত অবস্থায় উপবিষ্ট হলেন।

তখন রাজা বভ্রুবাহন পুনরায় চৈতন্যলাভ করে রণাঙ্গনে মাতাকে দেখে বলতে লাগলেন, “এর থেকে গুরুতর দুঃখের আর কী আছে? যেহেতু সুখে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত আমার মাতা ভূতলে নিপতিত মৃত বীর পতিকে ধারণ করে আছেন। ইনি যুদ্ধে শত্ৰুহন্তা সর্বশস্ত্রধারীশ্রেষ্ঠ সমরে আমার দ্বারা নিহত অসম্ভাব্যমৃত্যু স্বামীকে দর্শন করছেন।” বভ্রুবাহন দীর্ঘ বিলাপ করছিলেন, তখন উলূপী বভ্রুবাহনকে আশ্বস্ত করে মৃত সর্পগণের জীবনদানকারী সঞ্জীবন মণি স্মরণ করলেন। সেই সঞ্জীবন মণি বভ্রুবাহন অর্জুনের বক্ষে স্থাপন করতেই অর্জুন পুনরায় জীবিত হলেন এবং অর্জুন দেখলেন বভ্রুবাহনের কিছু দূরে উলূপীর সঙ্গে শোকাকুলা চিত্রাঙ্গদা রয়েছেন। অর্জুন চিত্রাঙ্গদা ও উলূপীকে সান্ত্বনা দিয়ে, তাঁদের অনুমতি নিয়ে যজ্ঞীয় অশ্বের সঙ্গে প্রস্থান করলেন।

অর্জুনের নির্দেশে অনুষ্ঠানে যথাসময়ে বভ্রুবাহন মাতা উলূপী ও চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে মিলিত হয়ে হস্তিনাপুর উপস্থিত হলেন। তিনি যথাবিধানে বৃদ্ধ কৌরবগণ ও অন্য রাজগণকে অভিবাদন করে এবং তাদের কাছে আদৃত হয়ে পিতামহী কুন্তীর উত্তম ভবনে গিয়ে প্রবেশ করলেন। অতি সুন্দর ও কোমলবাক্য বলে তিনি পিতামহী কুন্তীদেবীকে নমস্কার করলেন। তারপর চিত্রাঙ্গদা ও উলূপী মিলিত হয়ে কুন্তী, দ্রৌপদী, সুভদ্রা ও অন্য যে-সকল কৌরব-স্ত্রী ছিলেন, তাদের সবিনয়ে ও যথানিয়মে নমস্কার করলেন। তখন কুন্তী, দ্রৌপদী, সুভদ্রা ও অন্য সকল নারী উলূপী ও চিত্রাঙ্গদাকে নানাবিধ রত্ন দান করলেন। স্বয়ং কুন্তীদেবী অর্জুনের হিতকামনায় উলূপী ও চিত্রাঙ্গদাকে বিশেষ আদর করলেন। সেই অবস্থায় তারা মহামূল্য শয্যা ও আসনে অবস্থান করলেন।

অর্জুন যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে মহাপ্রস্থান যাত্রা করা পর্যন্ত চিত্রাঙ্গদা হস্তিনাপুরেই ছিলেন। অর্জুনের মহাপ্রস্থানের পর তিনি বভ্রুবাহনের সঙ্গে মণিপুরেই ফিরে যান।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *