৬. হুইস্কির সঙ্গে এ্যাসপিরিন

০৬.

আমি হোটেল থেকে বেরোই পরদিন বেলা এগারোটা নাগাদ। গরমের জন্যে রাতে ঘুম হয়নি। শেষ রাত্রের দিকে হুইস্কির সঙ্গে এ্যাসপিরিন গেলার পর ঘুমাই। সেই ঘুম ভাঙে বেলা নটায়।

কারমান বলে মাথায় আঘাত পেলে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। যথেষ্ট স্নান আর কালো কফি পান করে নিজেকে সুস্থ মনে হয়।

লুইয়ের ফটোর দোকানে যাবার আগে প্রয়োজন অনিতা কার্ফ সম্পর্কে ব্রাস রেল থেকে খবর সংগ্রহ করা।

পুলিশের কাছে রাস্তায় ব্রাস রেল সম্পর্কে খোঁজ করি। পুলিশটি নিশানা জানায়।

ব্রাস রেল অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ছবি দেখতে থাকি। একটা সুইংডোর ঠেলে এক নোংরা পোশাকের লোক বেরিয়ে এলো।

আমি প্রশ্ন করি এই দপ্তর কে পরিচালনা করে?

আপনি কী নতুন এসেছেন?

হ্যাঁ।

নিক নেডিক, ওপরে উঠে যান। দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি একটা লোক দু’ আঙুলে দ্রুত টাইপ করছে। ঘরটার কোনায় জানালার ধারে একটি অদ্ভুত চেহারার মেয়ে বসে।

কেউ কিছু বলছেনা দেখে আমি লোকটার কাঁধে হাতের চাপ দিই। লোকটা টাইপনা থামিয়ে বলে, কী চান?

নিক নেডিকের সঙ্গে দেখা বলতে চাই।

এগিয়ে যান।

এগিয়ে একটা ঘরে ঢুকি। একটা লোক চেয়ারে বসে খবরের কাগজের আড়ালে মুখ ঢাকা। ওর আঙুলে কড়ে বেশ বড় একটা হীরের আংটি। একটু দূরে বসা বয়স্কা মহিলাটি আমার দিকে তাকায়।

মাথার টুপি নামিয়ে বলি, মিঃ নেডিকের সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমার নাম ডিক ম্যালয়।

মহিলাটি বলে, মিঃ মেডিক এখন খুব ব্যস্ত…জানিনা, উনি আপনার সঙ্গে দেখা করবেন কিনা।

আপনি ব্যস্ত হবেন না। মিঃ নেডিকের সঙ্গে আমি আলাপের ব্যাপারটা ঠিক করে নিচ্ছি…কি বলেন মিঃ নেডিক?

খবরের কাগজের আড়াল থেকে একটা গোল মুখ উঁকি মারে। আপনার সঙ্গে আলাপ করে সুখী হবো। ইয়ংম্যান, শুধু কোন কিছু বিক্রির ধান্দায় না এলেই চলবে।

মোটা লোকটার দিকে কার্ড এগিয়ে দিলাম। চোখ বুলিয়ে নেডিক বলে, অর্কিড শহরে আপনি থাকেন? মশায়, ওটা হল লক্ষপতিদের জায়গা।

আমার প্রতিষ্ঠান ওখানে। আমি একজন যুবতী মহিলা সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। মনে হয় আপনি তাকে জানেন ওর নাম অনিতা গে।

কি ধরনের তথ্য জোগাড় করছেন?

সব কিছু নেডিককে সিগারেট দিয়ে বলি, অনিতা গে’র অতীত জানতে চাই। আপনি যা। জানেন বলুন। কাজে লাগতে পারে।

নেডিক বলে, আমি জানি না। শুনুন, এখন আমি ব্যস্ত।

খবরের কাজের জন্য আপনি কিছু পাবেন। ভাববেন না, ফালতু আপনার সময় নষ্ট করতে এসেছি।

খাঁটি কথা বলেছেন। আপনার মত যারা সরাসরি কাজের কথা বলেন, আমি তাদের পছন্দ করি। নেডিক মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে, মিস ফেডাকার, আপনি এখন ব্যাঙ্কে যেতে পারেন। জুলিকে বলবেন, আধ ঘণ্টা কেউ যেন আমাকে বিরক্ত না করে।

নেডিক প্রশ্ন করে, খবরের জন্যে কত অর্থ আমি আশা করতে পারি?

পঞ্চাশ ডলার পেলে আপনি খুশি? অবশ্য আপনার খবরের গুরুত্বের ওপর নির্ভর করছে।

তাই নাকি? পঞ্চাশ ডলারের বিনিময়ে আপনি অনেক খবর পাবেন। অনিতা গে কী কোন বিপদে পড়েছে?

এখন নয়। অনিতা গে বিপদে পড়েছিল। আমার মক্কেল অনিতা গে’র অতীত জানতে চাই।

নেডিক টেবিলের ওপর হাত বাড়িয়ে বলে, ছাড়ুন পঞ্চাশ ডলার।

পঞ্চাশ ডলার নেডিকের হাতে দিয়ে বললাম, এবার বলুন–শেষ কোন সময়ে আপনার সঙ্গে অনিতা গে ছিল।

অনিতা গে আমার সঙ্গে দু’বছর ছিল। জুনের তিন তারিখে ও আমাদের কাছে এসে কাজ চেয়েছিল। নাম বলেছিল অনিতা ব্রোদা। ও নাকি হলিউডে নাইট ক্লাবে নাচগান করতো। ওর চেহারায় খুব চটক ছিল। পরে দেখেছি কাজে ওর নৈপুন্য ছিল প্রশ্নাতীত।

অনিতা গে কাজ ছেড়ে গেল কেন?

বিমর্ষ মুখে সে বলে, অনিতা বিয়ে করলো। কোন মেয়েকে কাজে লাগিয়ে যখন ভাল রোজগার হচ্ছে–সে দুম করে বিয়ে করে বসল।

বিয়ের পর ওকে আর দেখেন নি?

শুনেছি থেলারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় থেলারকে ত্যাগ করে চলে যায়। কোথায় যায়, জানি না?

থেলার কে?

অনিতার স্বামী।

কখন থেলারকে বিয়ে করে অনিতা, জানেন কী?

কেন জানবো না? গত বছর নভেম্বরের আট তারিখে ওদের বিয়ে হয়।

থেলারের কী হয়? সে কী মারা যায়?

উঁহু থেলার এখানেই আছে। লুই নামে একজনের সঙ্গে ফটোর দোকান চালায়।

 মাথার যন্ত্রণায়, মাথা টিপে বলি, থেলার সম্পর্কে যা জানেন, সব বলুন।

নেডিক বলে, একটু হুইস্কি চলবে? মাথার যন্ত্রণা কমে যাবে।

ব্যবস্থা করুন।

আমরা হুইস্কি পান করি।

নেডিক বলে, লী থেলার আমাদের সঙ্গে কাজে যোগদান করে। ও ট্রিক শোতে ওস্তাদ ছিল।

কি ধরনের ট্রিক শো?

 যে কোন ধরনের রাইফেলের সাহায্যে ট্রিক শো। বন্দুক চালাতে ওর জুড়ি ছিল না।

তারপর থেলার অনিতাকে বিয়ে করেছিল?

হ্যাঁ, ওরা চলে যায় বিয়ের পর।

থেলারকে ছেড়ে দেয় অনিতা কিছুদিন পর?

 শুনেছি তাই। কিছুই জানি না। থেলার সাংঘাতিক লোক।

ডিভোর্স হয়েছিল ওদের?

শুনিনি আমি।

নেডিক হুইস্কি ঢালে। পানের আগে গ্লাসে ঠোকাঠুকি করি। চমৎকার।

আমি বলি, থেলারের কোন ছবি আছে কি আপনার কাছে?

নিশ্চয়ই। নেডিক আলমারির দিকে দেখিয়ে বলল, আপনি বয়সে আমার ছোট। ঐ ফাইলটা খুলুন। হ্যাঁ, ওইটি। দেখুন, খামে ফটো রয়েছে। নিয়ে আসুন এখানে।

ও ফটো বাছতে থাকে। তারপর একটা ফটো এগিয়ে দেয়। বলে, এই নিন।

মুখের ভঙ্গি এমন যে কখনও হাসেনা। যে ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না। একজন জুয়াড়ির মুখ। জীবন যার কাছে হেলাফেলার বস্তু।

আমি বলি, ফটোটা রাখতে পারি?

সম্মতি জানায় নেডিক। বলে, অনিতার একটা ফটো দেখাচ্ছি। দেখা হলে বলবেন যে, আমার ব্যাবসায় আবার ওকে পেলে আনন্দিত হবে। এই ফটোটা আপনাকে দিতে পারছি না–কেন না মাত্র একটাই আছে।

নেডিক থেলারের আর একটা ফটো দেখায়। থেলারের পরনে মস্তানের পোশাক, একটা মেয়ের মুখ ক্যামেরার দিকে তাক করা। মেয়েটার পরনে নামমাত্র পোশাক। ফটোটি মিস বোলাসের।

***

একটা লোক ঘরে ঢুকে টেবিলের ওপর কিছু কাগজ রাখে। লোকটা নেডিককে বলে, গাউনারের কনট্রাক্ট। তাড়াতড়ি সই করুন নইলে ভদ্রলোকের মত পাল্টে যেতে পারে।

লোকটা চলে গেলে বলি, ফটোর এই মেয়েটা সম্পর্কে বলুন, ওর নাম কী?

ওর নাম গেইল বোলাস। ওর সম্পর্কে কী আপনি উৎসাহী?

যে মেয়ে এধরনের পোশাক পরতে পারে তার সম্পর্কে আমার উৎসাহ থাকে। মেয়েটি কী এখানে থাকে?

ওর সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানি না। থেলার ওকে আমাদের এখানে এনেছিল।

থেলারের সঙ্গে মেয়েটাও বুঝি ভেগে যায়?

না। তার আগেই মেয়েটা ভেগে গিয়েছিল যখন থেলার আসনাই সুরু করেছিল অনিতার সঙ্গে।

থেলারের সঙ্গে মিস বোলাসের কোন সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল কী?

আমার তাই ধারণা। কিন্তু মিস বোলাস বেশ কড়া ধাতের। সে অনিতাকে সহ্য করতে না পেরে ভেগে যায়।

ছ’ মাস আগে মিস বোলাস কী ভেগে গিয়েছিল?

 প্রায় সেরকম।

এরপর মিস বোলাস সম্পর্কে কিছু শুনেছেন কী?

ওর হদিশ আর পাইনি।

আপনি কী কাইজর মিলস্ নামে কাউকে চেনেন?

একটু ভেবে নেডিক বলে, না, এই নামে কাউকে জানি না।

লুই সম্পর্কে কিছু জানেন কী?

 ইয়ংম্যান, আর সময় নষ্ট করতে পারবো না। আমার জরুরী কাজ আছে।

যদি আরও পঁচিশ ডলার চান তাহলে আমাকে আরও কিছু সময় দিন।

নেডিক হাত বাড়িয়ে দেয়। বলুন, কী জানতে চান?

লুই কিরকম মানুষ?

ভাল ছবি তুলতে পারে। খুব খেলো ধরনের মানুষ।ও আমাদের ব্যবসার অনেক কাজ করে।

ওর কিরকম চেহারা?

লম্বা, মুখে দাড়ি। অপরাধের জন্য দুবার জেল খেটেছে।

পুলিশের সঙ্গে ওর কিরকম সম্পর্ক?

মোটেই ভাল নয়। পুলিশের ধারণা লুই গোপনে মানুষের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। জানি না কতদূর সত্য।

থেলারও কী লুইয়ের অবৈধ কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত?

থেলার এমন প্রকৃতির মানুষ যে সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। ওর অদ্ভুত উচ্চাশা কিন্তু তেমন মনোবল নেই। থেলার সাংঘাতিক মানুষ। ও চলে যাওয়ায় আমি খুশি।

করমর্দন করে বলি, আজকের মত যথেষ্ট। দরকার হলে আবার দেখাকরবো। সাহায্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

ঠিক আছে। একটা কথা মনে রাখবেন। থেলার বড় সাংঘাতিক মানুষ। ওর কাছ থেকে দূরে থাকবেন।

***

ব্রাস রেল থেকে বেরিয়ে সোজা হোটলে ফিরে আসি। বেয়ারাকে দেখে বলি–চার বোতল বিয়ার আর স্যান্ডউইচ আমাদের কামরায় পাঠাতে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কারমান ঘরে ঢুকল পেছনে বেয়ারা।

কারমান বিরক্তির সঙ্গে বলে, স্যান্ডউইচ দিতে বললে কেন? একটা রেস্তোরাঁয় যাওয়ার মত অর্থ কী আমাদের নেই?

খাবার ও বিয়ার রেখে বকশিস নিয়ে বেয়ারা বিদেয় হয়।

নাও শুরু কর। এখানে গোপনে আলোচনা করতে চাই।

কারমান বলে, তুমি ওই বাড়ির মধ্যে অনেকক্ষণ ছিলে। আর একটু হলে তোমার উদ্ধারের জন্য ব্যবস্থা নিতাম।

কারমানকে সবকিছু বলি।

উঃ, এসবের অর্থ কী?

খবরগুলি একসূত্রে গাঁথতে হবে। ধারণাই ছিল না যে মিস বোলাসও এ ব্যাপারে জড়িত।

থেলারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কী মিস বোলাস…।

জানি না। মিস বোলাসের অর্কিড শহরে যাওয়ার পেছনেও কোন কারণ থাকতে পারে। বড় আবিষ্কার হল, যখন মিঃ কার্ফকে অনিতা বিয়ে করে–তার আগেই ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আর থেলার বন্দুক চালাতে ওস্তাদ। হয়ত থেলারই সব কটা খুন করেছে।

তোমার কী ধারণা বেনিকেও থেলার…?

হয় থেলার অথবা লুই। অথবা দুজনে মিলে।

আর মিলসও কী খুনের ব্যাপারে জড়িত?

জানি না। মনে হয় মিস কার্ফের সঙ্গে মিলস্ এর কোন ব্যাপার আছে। ওরা খুনের ব্যাপারে জড়িত কিনা বলতে পারব না। তবে লুইকে কজা করার পক্ষে অনেক খবর সংগ্রহ করেছি।

স্যুটকেস খুলে লেখার প্যাড বের করে বড় বড় অক্ষরে লিখি : আজ দোকান বন্ধ।

 কারমান বলে, ব্যাপারটা কী? আর কোন কাজে অগ্রসর হবো না?

আরে আমাদের কথা হচ্ছে না। লুইয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করতে যাচ্ছি। দোকানে ঢোকার আগে এই বিজ্ঞপ্তি বারে লটকে দেব।

দোকানের দরজা ঠেলতেই লুকানো বেল বেজে ওঠে। দোকানের বাইরে আলো জ্বলে।

যদি দোকানে কেউ থাকে, তার সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে।কারমান সঙ্গে রিভলবার এনেছে। লুই যতক্ষণ না রিভলবার বের করছে চিন্তার কারণ নেই।

ভেতর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে বলে, কী চান?

ফটো তুলতে চাই। আপনি তুলবেন?

মিঃ লুই এখন খুব ব্যস্ত। আপনারা বরং অন্যদিন আসুন।

অপেক্ষা করা অথবা অন্যদিন আসার উপায় নেই।

কারমান মেয়েটির দিকে রিভলবার তুলে বলে, সাবধান, একদম মুখ খুলবে না।

মেয়েটি চিৎকার করার আগেই ওর মাথায় আঘাত করি। মেয়েটি ঢলে পড়ে।

মেয়েটির হাত পা বেঁধে কাউন্টারের নিচে শুইয়ে রাখি।

কারমানকে বলি, চলে এসো। তোমার চমৎকার কাজ।

কারমান বলে, হঠাৎ কোন পুলিশ এসে যদি আমাকে এ অবস্থায় দেখে–ভাববে আমি একজন বন্দুকবাজ। এ ব্যাপারটা কী চিন্তা করেছে?

বেশ বড় স্টুডিও। কালো কাপড়ের দিকে মুখ করা কাঠের স্টান্ডে রাখা ক্যামেরা। দুপাশে হাই পাওয়ারের আলো। একটা লোক চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর ঝুঁকে একগুচ্ছ ফটো দেখছে। লোকটা বেশ লম্বা, গালে দাড়ি।

লোকটা আমাদের দেখে দ্রুত ড্রয়ারের দিকে হাত বাড়ায়।

কারমান রিভলবার তাক করে কর্কশ গলায় বলে, সাবধান, হাত গুটিয়ে নাও।

 আমি এগিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা ছোট অটোমেটিক রিভলবার বের করে হিপ পকেটে রাখি।

হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি লোকটার ঘাড়ের মাঝখানে প্রচণ্ড জোরে ঘুষি মারি। লোকটা ছিটকে পড়ে যায়। লোকটাকে টেনে দাঁড় করিয়ে ওরনাকে আর একটা জোর ঘুষি লাগাই। লোকটা ছিটকে পড়ে কামেরার ওপর।

কারমান বলে, ডিক, একটু সতর্ক হও। ওকে একদম রক্তাক্ত কর না।

ক্যামেরা তুলে আছড়ে ভেঙ্গে ফেলি তারপর লুইয়ের বুকে জোর আঘাত করি পায়ের জুতো। দিয়ে। লুই তাতে আর্তনাদ করে ওঠে।

কারমান বলে, বেচারীর ক্যামেরাটা কী দোষ করল?

ওর সব জিনিস ভেঙ্গে চুরমার করে দেব।

লুই মেঝের ওপর শুয়ে দুহাতে মুখ ঢাকা। অতি কষ্টে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।

লুইয়ের কাছে গিয়ে বলি, বেনিকে খুন করেছে কেন?

লুই ফিসফিস্ করে বলে, কি বলছেন, আপনারা, বুঝতে পারছি না।

আমি লুইকে লাথি মেরে বলি, বল, কেন বেনিকে খুন করেছে?

লুই গোঙায়, আবার লাথি মারি।

কারমান বলে, ও হয়ত ভাবছে আমরা খেলা করতে এসেছি। মুখ খোলার জন্যে ভাল ওষুধ দরকার।

লুইকে টেনে তুলি। লুই পড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আমি ধরে থাকি যাতে কারমান ওর ব্যবস্থা করতে পারে।

কারমান টেবিলের নিচ থেকে একটা ব্লো-ল্যাম্প নিয়ে এলো।

ভালই হলো এটা পেয়ে। কাজ শুরু করা যাক।

সোফার ওপরে লুইকে বসাই। কারমান ব্লো-ল্যাম্পে দ্রুত কয়েকবার পাম্প করে। মুহূর্তে আগুনের শিখা লকলক করে ওঠে। আমি লুইয়ের বুকের ওপর বসি।বলি, দ্যাখ লুই, ফালতু সময় নষ্ট করতে চাই না। বেনির কি হয়েছে জানতে চাই। আমি জানি তুমি, থেলার আর অনিতা গে একসঙ্গে খুনের ব্যাপারে জড়িত। বেনি কাল এখানে এসেছিল। মুখ না খুললে অনেক দুঃখ আছে। বেনি আমার বন্ধু ছিল। কথা বল, কেন বেনিকে খুন করেছে?

শপথ করে বলছি, বেনিকে আমি চিনি না।

শুনলে ওর কথাও নাকি বেনিকে চেনেই না।

 ব্লো-ল্যাম্প তুলে কারমান বলে, এটার সাহায্যে ওর স্মৃতিকে চাঙ্গা করে তুলি।

তুমি কি আগুনের ছ্যাকা খাবে?

বেনি কে, জানি না। তোমাদের কথা বুঝতে পারছি না।

এবার দ্যাখ, চিনতে পার কি না। বলে লুইয়ের জুতোর ওপর আগুনের নীল শিখা কারমান প্রয়োগ করে।

লুইয়ের সমস্ত দেহ কাঁপতে থাকে। ওর আর্তনাদে কানে তালা লাগে।

ইশারায় কারমানকে থামতে বলে, লুইকে বলি, তুমি বেনিকে খুন করেছে কেন?

আমি খুন করিনি..শপথ করে বলছি, আমি কিছুই জানি না।

 আমি ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলি, কারমান, এবার জোরে লাগাও।

কারমান অনেকক্ষণ সেই আলোর শিখা লুইয়ের জুতোর ওপর প্রয়োগ করে বলে, এই লোকটাকে চিরদিনের জন্যে পঙ্গু করলে কী খুব ক্ষতি হবে?

বল, কেন তুমি বেনিকে খুন করেছে?

ফিসফিস করে লুই বলে, থেলার..বেনিকে থেলার খুন করেছে।

মনে হচ্ছে এবার লুই কথা বলবে। কারমান ল্যাম্প প্রস্তুত রেখ। এবার বল, কী হয়েছে?

বেনি গতকাল বিকেল পাঁচটার আগে দোকানে এসেছিল। বেনি বিপদ সম্পর্কে সজাগ ছিল না। লুইকে অনিতার ছবি দেখিয়ে বেনি জানতে চেয়েছে ওকে চেনে কিনা।

লুই বলে,’ থেলার পর্দার আড়ালে সব শুনছিল।ও রিভলবার বের করে বেনিকে জিজ্ঞেস করে কোথা থেকে এসেছ। ইতিপূর্বেই ইউনিভার্সাল সার্ভিস সম্পর্কে অনিতা থেলারকে সবকিছু জানিয়েছে। পেছন থেকে বেনিকে মাথায় আঘাত করে থেলার ওকে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এরপর ওর কি হয় জানি না।

থেলার এখন কোথায়?

লুই কি বলে বুঝতে পারি না।

এই ব্যাটাকে মদ খাইয়ে চাঙ্গা করা দরকার।

কারমান স্টুডিওর মধ্যে কি যেন খুঁজতে খুঁজতে বলে, ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। খোঁজাখুঁজির পর এক বোতল হুইস্কি পায়। তিনটে গ্লাসে মদ ঢালে। আমাকে এক গ্লাস, নিজে এক গ্লাস নেয়। তৃতীয় গ্লাসের মদ লুইয়ের মুখে ছুঁড়ে দেয়।

গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে বলি, এখন থেলার কোথায়?

লুই কোনক্রমে বলে, অনিতাকে দেখতে গেছে।

কখন গেছে?

গতকাল রাত দশটার প্লেন ধরেছে।

তোমাকে মুখ খুলতেই হবে। তুমি কী জান যে, বেনির হাত পা বেধে থেলার ওকে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে।

উঁহু…।

থেলার ও অনিতা বিয়ে করেছিল কী?

লুই সম্মতি জানায় ঘাড় নেড়ে।

তুমি কী জান অনিতা দু মাস আগে মিঃ কার্ফ নামে একজনকে বিয়ে করেছে?

হ্যাঁ। এটা থেলারের পরিকল্পনা। থেলারের মতে মিঃ কার্ফের অনেক অর্থ অনিতা বাগাতে পারবে।

অনিতা কি থেলারকে ভয় করতে?

থেলারকে ভয় করবার মত কোন কারণ ছিল না।

ওদের মধ্যে ঝগড়া ছিল…তারপর ওরা পরস্পরের কাছ থেকে দূরে চলে যায় তাই না?

ওটা কিছু নয়। ওরা সবসময় ঝগড়া করতো। মিঃ কার্ফের সঙ্গে পরিচিত হবার পর অনিতা ফিরে এসে থেলারের কাছে জানতে চায়, সে কোন দিকে অগ্রসর হবে। মিঃ কাকে বিয়ে করতে বলে থেলার। তারপর মিঃ কার্ফকে শোষণ করার পরামর্শ দেয়। থেলার মুখ খুলবেনা যদি অনিতা নিয়মিত তাকে অর্থ জোগায়।

গেইল বোলাস সম্পর্কে কী জান?

অনিতার সঙ্গে দেখা হবার আগে থেলারের ট্রিক শোতে গেইল বোলাস সাহায্য করতো। ওকে আমি দেখিনি।

গেইল বোলাস কী এই ব্ল্যাকমেইলের সঙ্গে জড়িত?

জানি না।

থেলার কী এই প্রথম অর্কিড শহরে যায়?

লুই চুপ করে থাকে। কারমান আগুনের নীল শিখা এগিয়ে আনতেই লুই বলে, উঁহু..দু’রাত আগে থেলার অর্কিড শহরে গিয়েছিল। ট্রাঙ্ককলে অনিতা জানিয়েছিল যে, ওকে কে যেন নজর বন্দী করছে। ফলে থেলার অনিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু ওর দেখা পায়নি।

থেলার বুঝি এখানে ফিরে আসে?

হ্যাঁ। ওকে অত্যন্ত নার্ভাস মনে হয়। ও জানিয়েছে অনিতাকে যে মেয়েটা নজরবন্দী করার কাজে নিযুক্ত ছিল, তাকে খুন করা হয়েছে। ফলে থেলার তাড়াতাড়ি এখানে ফিরে আসে।

যাওয়ার আগে কী অনিতাকে থেলার জানায় নি?

উঁহু।

থেলার এখানে কখন ফিরবে?

জানায় নি থেলার।

অনিতা কাল রাত্রে খুন

খুন?

হ্যাঁ, খুন! থেলার কোন ধরনের বন্দুক ব্যবহার করে?

জানি না। হয়ত বড় বন্দুক। বন্দুক সম্পর্কে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই।

কারমানকে বলি, কিছু ভাবতে পারছি না।

 কারমান বলে, এই হারামজাদাকে নিয়ে কী করবো?

ওর ব্যবস্থা আমি করছি। ডেক্সের ওপর থেকে ওই ফটোগুলি নিয়ে এসো।

কারমান চোখ মুখ কুঁচকে এক গুচ্ছ ফটো আমার হাতে তুলে দেয়।

লুইকে বলি, এই নাও। প্রত্যেকটা ফটোর উল্টো পিঠে তোমার নাম লেখ।

 লুই নাম সই করে দিলে ফটোগুলি খামে পুরে তার ওপরে ডানিংহামের নাম লিখে পকেটে গুজি।

এই ফটোগুলি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওরা তোমাকে জেলে পোরার জন্যে অপেক্ষা করছে।

কারমানকে বলি, চলে এসো।

কারমান লুইয়ের কাছে এগিয়ে বলে, বেনি ছিল আমার বন্ধু। এই নাও…।

 কারমান লুইয়ের মুখে নীল আলোর শিখা চেপে ধরে।