৮. স্পাই ইন হংকং

০৮. স্পাই ইন হংকং

 মার্ক গারল্যান্ড পরের দিন সকালে ট্যাক্সিতে ওরলি বিমানবন্দরে এলো। পরনে নীল রঙের পুরনো ট্রপিক্যাল স্যুট। বয়স্ক পোর্টার তার সুটকেশ বইছে। সে সকাল ৯ টার প্লেনে রোম হয়ে হংকং যাবে। এয়ার ফ্রান্সের রিসেপশন ডেস্কের ক্লার্ক জানালো রোমে প্লেন কিছুক্ষণ থাকবে।

গারল্যান্ডের সুটকেশ বাহকের নাম জাঁ রেদু। লোকটা কম্যুনিষ্ট এবং সোভিয়েত স্পাইচক্রের একজন এজেন্ট। সোভিয়েত দূতাবাসে তার প্রতিটা খবর পাঠানোর জন্যে একশ ফ্রা পায়।

এর আগে গারল্যান্ড, জিনি ও এরিকাকে ডোরির ভিলায় পৌঁছে দিয়ে যখন সিয়ার এজেন্ট, জ্যাক কারম্যান নিস থেকে প্লেনে ওরলি বিমানবন্দরে আসে, খবরটা সোভিয়েত দূতাবাসে জাঁ বেঁদুই পৌঁছে দেয়। কারণ সে এমব্যাসীতে সিয়ার এজেন্টদের ফটো দেখেছে।

জাঁ রেদু এবারেও মার্ক গারল্যান্ড যে হংকং যাচ্ছে এই খবরটা ফোনে সোভিয়েত স্পাইচক্রের কোভস্কিকে জানালো।

গারল্যান্ড হংকং যাচ্ছে কেন? কোভস্কি ভাবছে এরিকা ওলসেন তো মরেই গেছে। আসলে যে ওটা নার্স জিনি এবং যাকে ও এরিকা ভাবছে সে যে কারলোটা এবং এরিকা যে হংকং আছে, এ খবর কোভস্কি জানে না। তবু সন্দেহ হয়। স্পাই মালিককে রোমে পাঠানো হয়েছে এরিকা সংক্রান্ত অপারেশন ব্যর্থতার পর। সেখানে এক বেইমান ব্রিটিশ এজেন্টকে খতম করতে হবে। একটু ভেবে রোমের সোভিয়েত দূতাবাসে মালিককে ফোন করে কোভস্কি।

মার্ক গারল্যান্ডের অন্যের পয়সায় ফুর্তি মারতে জুড়ি নেই। সে প্লেনের ফার্স্ট ক্লাশে যাচ্ছে। জুয়েলার জ্যাক ইউ প্রথমে বুঝতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত কালো মুক্তোর লোভে রাজি হয়।

গারল্যান্ডের এবারের সফর ভালো লাগছে। সুন্দরী হাসিখুশী এয়ার হোস্টেসের ধারণা, লোকটা কোন খেয়ালী মার্কিন কোটিপতি। সারা রাস্তা সে গারল্যান্ডকে ক্যাভিয়ের, শ্যাম্পেন আর কেক প্যাস্ট্রি নিয়ে সাধাসাধি করেছে। গারল্যান্ড রোমে পৌঁছে এয়ারপোর্টের বারে ঢুকে দুটো বড় পেগ স্কচ হুইস্কি খায়। তারপর জেমসহেডলী চেজের লেখা সাম্প্রতিক বেস্টসেলার পেপারব্যাক উপন্যাসটা কিনে প্লেনে ফিরে আসে।

মালিক হাঁফাতে হাঁফাতে ইকনমিক ক্লাস কম্পার্টমেন্টে ঢোকে, রোম থেকে প্লেন ছাড়তে আর মাত্র তিন মিনিট বাকী। কোভস্কি প্যারী থেকে ফোনে বলেছে, এরিকা নিশ্চয়ই মরার আগে জরুরী কিছু বলে গেছে। সেই ব্যাপারেই মার্ক হংকং যাচ্ছে। জরুরী খবরটা সোভিয়েত সিকিউরিটি জানতে চায়। হংকং-এর সোভিয়েত এজেন্টরা মালিককে মদৎ দেবে।

প্লেন উড়ে চলেছে হংকং-এর দিকে। তখনই

প্যারীর চীনা দূতাবাসে কনিষ্ট চীনের স্পাইচক্রের প্যারী শাখার হর্তাকর্তা ইয়েৎ সেন পিকিং-এ পাঠানোর জন্য রিপোর্ট লিখছে। তিনজন ভালো এজেন্টকে হারাতে হয়েছে। কিন্তু অপারেশন সাকসেস ফুল। এরিকা ওলসেন খুন হয়েছে। আসল খবর ইয়েৎ সেনও জানে না। রিপোর্টের শেষে সে গারল্যান্ডের নাম ও চেহারার বর্ণনা লেখে : এই লোকটা বিপজ্জনক, এর নাম ও ফটো আমাদের ফাইলে থাকা উচিৎ।

প্লেন হংকং-এ যাবার আঠারো ঘণ্টা আগে ইয়েৎ সেনের রিপোর্ট কেবল পিকিং-এ পৌঁছেছে। এশিয়ার প্রত্যেকটি বিমানবন্দরে গারল্যারে চেহারার বর্ণনা চীনা এজেন্টদের জানানো হয়েছে। চীনা শাইচ এসব ব্যাপারে কোন ঝুঁকি নেয় না।

গারল্যান্ড জানে না যে সে ভীমরুলের চাকে খোঁচা দিতে চলেছে। তারই প্লেনে সোভিয়েত রাশিয়ার সেরা স্পাই মালিক তাকে ফলো করছে। কাই তা বিমান বন্দরে এক চীনা কাষ্টমস অফিসারের কাছে তার নাম ও চেহারার বর্ণনা পৌঁছেছে।

গারল্যান্ড মুরগীর মাংস ও বর্দোর মদ খেয়ে মেজাজে আছে। সে ভাবছে সে বড়লোক হতে চলেছে। তার স্বপ্নের রামধনু এখন কাছে আসছে হংকং গারল্যান্ডের অচেনা না। এই নিয়ে সে চারবার হংকং-এ এলো। পৃথিবী ভ্রমণে বেড়িয়ে ধনী মার্কিন যুবতীর মনে হলো, মার্ককে তার বডিগার্ড নেওয়া উচিত।সেইমেয়ের সুন্দর শরীর পাহারা দিতে গারল্যান্ডের আপত্তি নেই।হংকং এ চার হপ্তা মেয়েটাকে কামশাস্ত্র শিখিয়েছিল গারল্যান্ড।

একবার টাকার বিনিময়ে সে, সি, আই, এ,কে হংকং-এর আফিমের চোরাকারবারীচক্র ভাঙতে সাহায্য করে। সে বার সিয়ার রেসিডেন্ট এজেন্ট হ্যারী কার্টিস-এর সঙ্গে পুলিশ বোটে কয়েকটা দিন কাটিয়েছে গারল্যান্ড। তাই পিয়াং ওয়ান, তাথং এবং ইস্ট লাম্মা চ্যানেলের দ্বীপগুলো তার চেনা।

এবার হ্যারীকার্টিসের সঙ্গে দেখা হলেই সর্বনাশ। মার্ক হংকং-এ এসেছে, শুনলেই ডোরি সন্দেহ করবে, গারল্যান্ডের ধান্দা খারাপ। কার্টিসের অভ্যাস, য়ুরোপ থেকে প্লেন এলে সে এয়ারপোর্টে থাকে। কার্টিসের ভারিক্কী চেহারাটা উঁকি মারছে কিনা তাই দেখতে ব্যস্ত রইলো গারল্যান্ড।

চীনা কাস্টমস অফিসার পাসপোর্ট দেখে গারল্যান্ডের দিকে একবার তাকালো। তখনই কাস্টমসের ইঙ্গিতে এক মোটা-সোটা চীনা ভদ্রলোক ফলো করছে।

মালিকের তীক্ষ্ণ চোখ মোটা-সোটা চীনা এজেন্টকে দেখেছে! ভিড় ভেঙ্গে হংকং-এর সোভিয়েত স্পাই ব্র্যানস্কা মালিকের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে। লোকটার মাথায় বালি রং চুল, দাগে ভরা মুখ, বেঁটে ও মোটা চেহারা।

ঠিক আছে। তিনজন এজেন্ট গারল্যান্ডের দিকে নজর রাখছে, হোটেলে চলুন।

এই ফাঁকে দেখে নিলেন,

রিক্সায় বসে আছে সুন্দরী চীনা মেয়ে। চিওংসামের সামনেটা কায়দা করে কাটা, ফাঁকা দিয়ে হাঁটুর চার ইঞ্চি ওপর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এর জন্যই হংকং ভালোবাসে গারল্যান্ড। এই শহর প্রাণশক্তিতে ভরপুর। এখানে সবকিছু ঘটে এবং মালকড়ি কামানোর জন্য জায়গাটা ভালো।

গারল্যান্ড ট্যাক্সি ছেড়ে অপেক্ষামান ফেরী নৌকায় চড়ে। সোভিয়েত পাই মালিকের দুজন এজেন্ট এবং সেই মোটাসোটা চীনা স্পাই উংলু, তারাও নৌকায় ওঠে।

গারল্যান্ড দশ মিনিট পরে ওয়ানচাই সমুদ্রসৈকতে পৌঁছে হোটেলে যাবে বলে ট্যাক্সিতে ওঠে। কেউ তাকে ফলো করলে সে বুঝতে পারে। মালিকের এজেন্টরা তার চোখে পড়েছে। কিন্তু মোটা চীনা ভদ্রলোকের দিকে নজর দেয়নি। গারল্যান্ড ট্যাক্সি থেকে নামতেই তার পাশ দিয়ে একটা গাড়ি পাশ কেটে বেরিয়ে গেল। গারল্যান্ড ভাবছিল, আমাকে সাবধানে থাকতে হবে। কিন্তু কালো স্যুট পরা মোটাসোটা চীনা ভদ্রলোক কাছেই সিগারেট কিনছেন। গারল্যান্ড তার দিকে খেয়ালই করছে না।

ওয়াং সি বুড়ো হোটেলের মালিক, মুখে একটু ছাগলদাড়ি আছে। গারল্যান্ড একজন সিয়ার এজেন্ট বলে ওয়াংসি জানে, আগেও সে এই হোটেলে থেকেছে, চেনা লোক ছাড়া কাউকে আমার ঘরে যেতে দিও না,মার্ক বলে। এবার বুথে ঢুকে কারলোটার দেওয়া নম্বর ডায়াল করে।

কে বলছেন?

প্যারীর এক বন্ধু।

আশা করি সফর ভালো কেটেছে।

কারলেটার দেওয়া কোড় পাশওয়ার্ড ও কাউন্টার পাশওয়ার্ড। একটু আশ্বস্ত হয় গারল্যান্ড।

তুমি আসবে না আমিই যাবো? আমি ওয়ানচাইয়ের লোটাস হোটেলে উঠেছি।

পরনে লাল চিওংসাম, বাঁ কানে হীরের ফুল–একটি মেয়ে আপনার ঘরে যাবে। আপনি ওর সঙ্গে চলে আসুন। গারল্যান্ড আবার হোটেলের মালিককে বলে, একটি মেয়ে আমার কাছে আসবে। আমি ওর সঙ্গে বাইরে যাবো। কেউ ফেলো করলে বিপদ হবে–

এই হোটলে আধঘণ্টা অন্তর মেয়ে আসে।

ওয়াং-সী খিলখিল করে হাসে, নীচের ঘরগুলোয় কাস্টমাররা মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করে। কেউ যেন না দেখে, ওরা তাই পেছনের সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যেয়ে দুটো ছাদ পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গলিতে নামে।

এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট পরে দরজায় টোকা পড়তে গারল্যান্ড দরজা খুলে দেখে, স্লিম সুন্দরী চীনা মেয়ে–পরনে লাল চিওংসান, বাঁ কানে হীরের ফুল।

তোমার নাম?

তান তয়। পয়সা দিলে আমি প্রেম করি।

গারল্যান্ড হাসে, তাই নাকি? এখন চলল।

সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে দুটো ছাদ পেরিয়ে গলিতে নেমে সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে অস্টিন কুপার। গাড়িতে গারল্যান্ড চড়ে। তান তয় গাড়ি ড্রাইভ করে।

তান তয় বলে, এরিকা এখানে নেই। হুং ইয়ান তোমাকে ডেকেছে।

তুমি এসব ব্যাপারে জড়িয়ে পড়লে কেন?

হুং ইয়ান আমার অসুখের সময় মদৎ দিয়েছিল। আমি উপকারীর উপকার ভুলি না।

মালিক-এর এজেন্ট এই গোপন পথেও নজর রেখেছিল তা গারল্যান্ড জানে না।

সেই মোটাসোটা চীনা ভদ্রলোকও জানিয়েছে মার্ক এখন শুং ইয়ানের ভিলায় যাচ্ছে।

পাহাড়ের ওপরে ছোট্ট ভিলা। গাড়ি থামিয়ে তান তয় বলে, কাজ মিটলে আমার সঙ্গে দেখা করো। ওয়াংসী আমার ঠিকানা জানে। ঘরে ছোট্ট টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। হুং ইয়ানের বয়স কম, পরনে ঢিলে ঢালা কোট আর ট্রাউজার, চোখ দুটো জ্বলছে।

হুং ইয়ান বলে, পাক কোকের কাছে একটা জাং-বোটে এরিকা লুকিয়ে আছে। আমি ওকে ভালবাসি। চীনাদের ধারণা এরিকা প্যারীতে পালিয়েছে। তোমর কাছে ওর পাসপোর্ট আছে?

হ্যাঁ। আমাকে কেউ ফলো করে থাকতে পারে–

হুং ইয়ান একটা ছোরা গারল্যান্ডকে দেয়। ওরা দুজনে ভিলার পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে কুয়াশাঢাকা পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে সাবধানে হাঁটতে থাকে। একটা নুড়ি পাথর গড়িয়ে পড়ে, কে যেন আসছে? হুং ইয়ান হাঁটতে থাকে। গারল্যান্ড ঝোঁপের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে বসে। একটা বেটেখাটো চীনা, এক লাফে লোকটার পা দুটো ধরে রাস্তার ওপরে গারল্যান্ড পড়ে যায়। লোকটার হাতের ছোরা ঝলসে ওঠে। ততক্ষণে হুং ইয়ান পেছন ফিরে লোকটার কব্জি ধরে ফেলেছে। গারল্যান্ডের জোরালো ঘুষি লোকটার চোয়ালে, সঙ্গে সঙ্গে হুং ইয়ানের ধারালো ছোরাটা নোকটার বুকে বিধে যায়। বড় রাস্তার ধারে একটা গ্যারেজ। পুরনো ভকসওয়াগনে গারল্যান্ড উঠে বসে। হুং ইয়ান ড্রাইভ করছে।

সোভিয়েত স্পাই মালিক ও চীনা স্পাই উংলুর এজেন্ট একই সঙ্গে খবর পাঠায়, গারল্যান্ড অ্যাবোরডিন বন্দরে যাচ্ছে। কালো জলে কি যেন নড়ে ওঠে, গারল্যান্ড ঝুঁকে দেখে : হাঙ্গরের তিনকোনা পাখনা জলে ফেনা ছড়াচ্ছে।

প্রকাণ্ড জাং বোট পাক কোকের সমুদ্রতীর থেকে আধমাইল দুরে নোঙর করে আছে। মোটরযোট থামিয়ে শিস দেয় হুং ইয়ান। মাথায় চীনা টুপি ঢিলেঢালা চীনা কোট ও ট্রাউজার পরা লম্বা মেয়েটা ওপরের ডেক থেকে উঁকি দেয়।

হুং ইয়ান ডেকেই অপেক্ষা করে। এরিকার পেছন পেছন গারল্যান্ড কেবিনে নামে। ঘোট লক্ষ্যের আলোয় মার্ক দেখে, এরিকা তার বোন কারলোটার চেয়ে সুন্দরী।

আমার কাছে তোমার পাসপোর্ট আর প্লেনের টিকিট আছে। কালো মুক্তোটা কোথায়?

কুং-এর মিউজিয়ামে সশস্ত্র সান্ত্রীর পাহারায়।

গারল্যান্ড চেঁচিয়ে ওঠে, ননসেন্স।

কালো মুক্তোর গল্প না ফাঁদলে আমার বাবা বা আমার বোন আমাকে পালাতে সাহায্য করত না। ওরা স্বার্থপর সুবিধেবাদী।

তোমার কাছে মুক্তো না থাকলে চীনা স্পাইরা তোমাকে খুন করতে চাইছে কেন?

কেন না রকেট বিজ্ঞানী কুং-এর নতুন ক্ষেপনাস্ত্রের ব্যাপারে আমি জরুরী একটা খবর জানি।

গারল্যান্ড ভাবে, ডোরিই ঠিক বুঝেছিল। তার বড়লোক হবার স্বপ্ন এখানেই শেষ। কালো মুক্তোর জন্যে নয়। ক্ষেপনাস্ত্র সংক্রান্ত গোপন খবরের জন্যে এরিকাকে খুন করতে চাইছে চীনা স্পাইরা।

গোপন খবরটা কি?

ওপরে চলো, প্লেনে ওঠার আগে আমি বলবো না। হং ইয়ান ওখানে অপেক্ষা করছে। আ আ-আ!

হঠাৎ এরিকা চিৎকার করে। গারল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ায়।

মালিক কেবিনের দরজায়, তার হাতে উদ্যত পিস্তল।ডোন্ট মুভ। আর একটি কথা বললে গারল্যান্ডআমি তোমাকে খুন করবো।মিসওলসেন, আমি আপনার বন্ধু। এই লোকটা প্যাসেনজার প্লেনে আপনাকে হংকং নিয়ে যাবে। প্লেনে ওঠার আগেই চীনা স্পাইরা আপনাকে খুন করবে। আমি আর্মির চার্টড প্লেনে আপনাকে টোকিও হয়ে মস্কো নিয়ে যাব। এই যে, প্লেনের কাগজপত্র আর লগবুক। কুং-এর ব্যাপারে খবর দিলে সোভিয়েত রাশিয়া আপনাকে অনেক টাকা দেবে

এরিকা গারল্যান্ডের দিকে একবার তাকিয়ে মনস্থির করে মালিককে বলে, আমি আপনার সঙ্গেই যাবো

এরিকাও হুং ইয়ানকে খুন করেছে। তুমি ওপরে সুটকেশ আনতে গেলে ও আমাকেও খুন করবে। গারল্যান্ড চেঁচিয়ে বলে।

মালিক বলে, হুং ইয়ান নৌকোয় বসে আছে। এই লোকটাকে আমি খুন করবো না। যান, মিস ওলসেন, আপনার সুটকেশ নিয়ে আসুন

এরিকা চলে যেতেই মালিকের সবুজ চোখ ঝলসে ওঠে: গারল্যান্ড তোমাকে বলেছিলাম, আমাদের ব্যাপারে মাথা গলালে তুমি খুন হবে

মালিক পিস্তল তোলে।

মেসিনগানের আওয়াজ। মোটরবোটের শব্দ! চমকে মালিক ঘুরে তাকাতেই গারল্যান্ড লাফিয়ে উঠে মালিকের হাতের মনিবন্ধে ক্যারেটেচ মারে, পিস্তল মেঝেতে পড়ে। গারল্যান্ড ওটাকে লাথি মেরে কোনের দিকে ঠেলে দেয়।

মেশিনগানের গুলিতে কেঁপে ওঠে জাংকবোট। মালিক সিঁড়ি বেয়ে ডেকের দিকে ছুটছে পেছনে গারল্যান্ড। মোটর বোট স্টার্ট দেওয়ার শব্দ।

এরিকা ওলসেনের লাশ ডেকে পড়ে আছে। মেশিনগানের গুলিতে মেয়েলী বুক ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।

মালিক গারল্যান্ডের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।

কাম অন্, কমরেড, গারল্যান্ডের হাতে ধারালো ছোরা, তোমার গলা কাটতে মন্দ লাগবে না।…আমরা যখন লড়ছি, তারই মধ্যে চীনারা কাম ফতে করল।

মালিক গর্জে ওঠে–আমাদের ব্যাপারে ফের যদি মাথা গলাও।

গারল্যান্ড হাসে, ভয় দেখাতে হয়, চীনাদের দেখাও।

জাংকের ধার থেকে নেমে মোটরবোটে ওঠে মালিক। সে বোট স্টার্ট দেয়। ব্র্যানস্কার লাশটা সমুদ্রে ফেলে দেয়।

হুং ইয়া কোথায়? কালো জলে হাঙর ঘুরছে।

 গারল্যান্ড ভাবে, মালিক ওকে মেরে জলে ফেলে দিয়েছে। বাকী কাজ হাঙররাই করেছে।

গারল্যান্ড মোটরবোটে তীরে পৌঁছে থানায় ফোন করে।

মার্ডার। পাক কোকের কাছে জাংকে নোঙর করা। মেয়েটার নাম এরিকা ওলসেন। চীনা স্পাইদের কাজ। সি. আই. এ.-কে খবর দাও :

তুমি কে?

গারল্যান্ড ততক্ষণে ফোন রেখে দিয়েছে।

সে হোটলে ফিরে প্যারীতে এরিকার বাবাকে ফোন করে।

ওলসেন, খবর ভাল নয়। চীনা শাইরা তোমার মেয়ে এরিকাকে খুন করেছে

 চুলোয় যাক। কালো মুচোট পেয়েছো?

এরিকার কাছে মুক্তো ছিল না।

ইউ চীপ ক্রুক! তার মানে মুক্তোটা তুমি নিয়েছ? তিন দিনের মধ্যে ওটা না পেলে তোমার সেই টেপ ডোরির কাছে পৌঁছে যাবে

গারল্যান্ড ভাবে, তবে এখন প্যারীতে যাওয়া বিপদ।

 এবার গারল্যান্ড টেলিফোন তুলে লোটাস হোটেলের মালিক ওয়া সীর সঙ্গে কথা বলে।

তান তয় মেয়েটাকে বলল হিল্টন হোটেলে আমি ওর জন্যে অপেক্ষা করছি।

 গারল্যান্ড বারে বসে মদের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে, জীবন বড় ছোট, উপভোগের এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করা উচিৎ নয়।

সে রূপসী চীনা বারবধু তান তয়ের জন্যে পায়ের ওপর পা রেখে অপেক্ষা করে।