৩. ওস্তাদের মার

০৩. ওস্তাদের মার

ম্যালমেইসঁর একটা প্রকাণ্ড পুরনো বাড়ির গেটের ভেতর অ্যাম্বুলেন্স ঢুকে যায়। আলো জ্বলে, সিঁড়ি ভেঙ্গে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে সোভিয়েত মহিলা স্পাই মারনা ডোরিনস্কা।

পরনে কালো সূতীর প্যান্টে গোঁজা পুরুষের উপযোগী লাল রঙের শার্ট। বয়স তিরিশ থেকে। চল্লিশের মধ্যে, ছফুট লম্বা, কালো চুল যেন মাথায় প্লাস্টার করে সাঁটা, এবড়ো খেবড়ো শক্ত চেহারা। প্রকাণ্ড হাত দুটো আর পেশীবহুল শরীর দেখলে মনে হয়, মদ্দা না মেয়েমানুষ। মারনা ডোরিনস্কা মালিকের মতো। ওদের সাফল্যের কারণ কমিউনিস্ট আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা, প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতা ও ক্ষুরধার বুদ্ধি।

ওকে ভেতরে নিয়ে যাও, তোমাদের কেউ ফলো করেনি তো? মারনা বলে।

তার মানে? মালিক খিঁচিয়ে ওঠে। এই মেয়ে মানুষটাকে সে দেখেছে, পুরুষ এজেন্টদের ওপরে টেক্কা দেয়।

মারনাকে দেখেই মনে হচ্ছে মালিককে সে ঘেন্না করে। সে বলে, ডোরিকে অত বোকা ভাবা উচিৎ নয়, তোমরা গাড়ি সরিয়ে ফেলো, কারও নজরে পড়বে।

সে আমি বুঝবো। তোমার কাজ ওই মেয়েটাকে দেখাশোনা করা।

 মারনা চলে যায়।

স্মারনফ, গাড়িটা সরাতে হবে। কোরোক ছাড়া আর কে এখানে পাহারা দেবে?

আমার তিনজন সেরা এজেন্ট, ও নিরাপদেই থাকবে।

এখন মালিক প্যারীতে যাবে, দূতাবাসে রিপোর্ট দেবে, কাল সকালে এসে সুইডিস মেয়েটার কাছে কথা আদায় করবে।

স্মারনফ অ্যাম্বুলেন্সে স্টার্ট দেওয়ার পর মালিক বলে, বোকা গারল্যান্ড শেষে আমার সঙ্গে দর কষাকষি করছিল

মালিক আর স্মরনফের গাড়ি চলে যাওয়ার পর জাগুয়ার গাড়িটার ভেতরে গারল্যান্ড কারম্যানকে বলে :

এবার ওস্তাদের মার… ।

গাড়ির ভেতরে টেলিফোন বেজে ওঠে।

গারল্যান্ড। ডোরির গলা সপ্তমে চড়েছে। তুমি করছেটা কি? মেয়েটাকে তুমি কুজা করতে পারলেনা? আমি এখন ওয়াশিংটনকে কি বলবো?

জাহান্নামে যেতে বলল। তুমি কাজ দিয়েছে, কাজ করলে টাকা পাবো তো? ব্যস, ঠিক আছে। ফোন রেখে কারম্যানের দিকে তাকিয়ে, বুড়োর অনেক আগেই রিটায়ার নেওয়া উচিত ছিল। চলল, জ্যাক। কাল সকালে আমাকে এজ-এ পৌঁছতে হবেই।

বাস্টার্ড,জ্যাক হেসে ওঠে, ওখানে ঢুকে আমরা এক ডজন শক্ত সমর্থ সোভিয়েত স্পাইকে গুলি করে খতম করবো নাকি?

তুমি-আমি তা পারি। রাশিয়ানরা মারদাঙ্গার কি বোঝে?

ঝামেলায় কাজ নেই,ড্যাশবোর্ডের প্যানেল খোলে কারম্যান, ভেতরে দুটো গ্যাসগান আর গ্যাস মাস্ক আছে।

এক ইঞ্চি চওড়া ফুটোওলা গ্যাস বন্দুক গারল্যান্ডের হাতে তুলে দিয়ে কারম্যান বলে, সাবধানে কিন্তু। এতে যা গ্যাস আছে এক ব্যাটালিয়ান ফৌজকে বেহুশ করার পক্ষে যথেষ্ট।

মুখে গ্যাস-মাস্কের মুখোশ আঁটতে আঁটতে গারল্যান্ড জিনিকে বলে, বেবী চুপচাপ বসো। আমরা তোমার পেসেন্টকে নিয়ে আসছি।

গারল্যান্ডের সম্বন্ধে জিনির মত বদলে গেছে। সাবধানে থেকো, ও বলে।

সামনের বাড়ীটার ওপর তলার জানালায় আলো। মেয়েটা নিশ্চয়ই ওই ঘরে আছে।

গারল্যান্ড বলে, সামনে দিয়ে তুমি ঢুকবে।

একটা জানালা খুলে আমার দু মিনিট পরে ঢুকবে। আমি পেছন দিয়ে ঢুকবো।

গারল্যান্ড লনের ঘাসের ওপর দিয়ে নিঃশব্দে ছুটছে। গ্যাস মাস্কের দরুন ভালো দেখতে পাচ্ছে না বলে সে মুখোশটা মাথার উপর তুলে দেয়। হঠাৎ বাড়িটার কোনায় এসে গারল্যান্ড নিশ্চল হয়ে যায়।

দশ গজ দূরে একটা লোক। মাথা নীচু করে সে ছুটে যায়। লোকটা ছিটকে পড়ে যেতে যেতে চাপা চিৎকার করে। ভিজে ঘাসের মধ্যে ধস্তাধস্তি করছে দুজন। গারল্যান্ডের হাত দুটো লোকটার গলায়। লোকটা ছটফট করছে। গারল্যান্ডের মুখে ঘুষি মারছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লোকটার শরীর শিথিল হয়ে যায়।

এবার সাবধানে অন্ধকারের মধ্যে বাড়ির পেছন দিকে যায় গারল্যান্ড।

সামনে ফ্রেঞ্চ উইন্ডো। প্রচণ্ড জোরে জানালায় লাথি মারে গারল্যান্ড। জানালার পান্না খুলে যায়। দূরে চিৎকার, গুলির শব্দ। সাঁ করে ঘরের মধ্যে লাফিয়ে পড়েছে গারল্যান্ড। আবার গুলির শব্দ। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গারল্যান্ড। গ্যাসমাস্কের জন্যে সে ভালো দেখতে পাচ্ছে না। গ্যাস বন্দুকের নলটা তুলে সে ট্রিগার টেপে।

হিসস….,

বন্দুকের গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে হিস, হিস, গ্যাস বেরোয়। গোটা ঘরটা ধোঁয়ায় ভরে যায়।

রাশিয়ান স্পাই কোরডাক বন্দুক হাতে নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। গ্যাসের মধ্যে অচেতন শরীরটা সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে গড়তে কাপেৰ্টের ওপর পড়ে।

গারল্যান্ড ওপরে উঠে যায়। সামনে একটা দরজা। সাবধানে উঁকি দিয়ে দেখে গারল্যান্ড, কেউ নেই।

মার্ক?

নীচের তলায় ডাকছে সিয়া এজেন্ট কারম্যান।

ওপরে উঠে এসো।

নীচে ওদের দুটো লোক অজ্ঞান হয়ে গেছে।

 সিঁড়ি দিয়ে ছুটে আসছে কারম্যান।

কোন ঝুঁকি নিও না। আমি শেষের ঘরটা আর তুমি এই ঘরটা দেখো।

গারল্যান্ড দোতলার শেষ ঘরটার দরজার হ্যাঁন্ডেল ঘোরায়। নিজের নাকের ওপরে জল ভেজা। রুমাল চেপে ধরে মাংসল শরীরটাকে দেয়ালে ঠেকিয়ে পিস্তল উঁচিয়ে অপেক্ষা করছে সোভিয়েত মেয়ে স্পাই মারনা।

দরজা খুলতেই গ্যারল্যান্ডের আগে ছুঁয়ে যায় গ্যাসের সাদা ধোঁয়া। নাকে চাপা সত্ত্বেও অস্থির : হয়ে ওঠে মারনা। মারনার কাশির শব্দে সাবধান হয়ে গারল্যান্ড হিংস্র চিতার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওর কব্জিটা চেপে ধরেছে গারল্যান্ড। অন্য হাতে ওর মুখের রুমালটা টানছে।

দ্রাম।

পিস্তলের গুলি ছুটে ছাদে বেঁধে।

হোয়াক!

 মারনার ডান হাতের ঘুষি গারল্যান্ডের ঘাড়ে এসে পড়তেই সে ছিটকে পিছিয়ে পড়ে।

ততক্ষণে রুমাল আর পিস্তল মেঝেতে পড়ে গেছে। গ্যাসের ঘ্রাণে সে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে।

গারল্যান্ড আলো জ্বেলে দেখে বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে এরিকা ওলসেন। সুইডিস মেয়েটাকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়ি বেয়ে গারল্যান্ড ছুটতে ছুটতে নামছে পেছনে। কারম্যান।

গাড়িতে ঘুমন্ত মেয়েটাকে পেছনের সীটে শুইয়ে দিয়ে গারল্যান্ড বলে, বেবী, এই নাও তোমার পেসেন্ট। জাগুয়ার গাড়ি এবার দক্ষিণের দিকে ছুটে চলে।

*

স্পাইয়ের প্রেমের ফাঁদে

 রাত দশটা দশ। সিয়ার চাইনিজ এক্সপার্ট নিকোলাস উলফার্ট–যে সুইডিস মেয়েটার পাছায় উল্কির দাগ তিনটে দেখে বলেছিল, এগুলো চীনা রকেটবিজ্ঞানী কুং-এর সই করা নামের তিনটে আদ্যাক্ষর–সে এখন রু সিগেয়ারের সাজানো গোছানো দামী ফ্ল্যাটে বসে দামী হাই ফি সেটে মাহলারের, সেকেন্ড সিমফনির রেকর্ড শুনছে।

তার বাবা জোউলফার্ট ব্যবসায়ী ছিল। চিয়াং কাইশেকের আমলে চীনেদের ইয়াঙ্কি মাল বেচে মালকড়ি অনেক কামিয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী সূত্রে বাবার সব সম্পত্তি পেয়েছে একমাত্র ছেলে নিকোলাস। নিকোলাস নিজে চীনা জেড পাথরের গুণাগুণ সম্বন্ধে পৃথিবীর সেরা এক্সপার্টদের একজন। অনেকগুলো চীনা উপভাষা সে বলতে, পড়তে ও লিখতে পারে। কোথাও জেডপাথর নীলামে বিক্রী হলেই বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার ডাক পড়ে। ম্যাগাজিনে সে জেডপাথর সম্বন্ধে প্রবন্ধ লেখে এবং সীয়ার প্যারী শাখার চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কম্যুনিস্ট চীন সংক্রান্ত ব্যাপারে জন ডোরিকে উপদেশ দেয়।

তার অসাধারণ প্রতিভা দেখে অভিভূত হয়ে ইয়াঙ্কিদের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মচারীরা তাকে সীয়ার চাইনিজ এক্সপার্ট হিসাবে নিয়োগ করে। নিকোলাস উলফার্টের বৈচিত্র্যময় যৌনজীবনের সব তথ্য জানলে ডিভিসন্যাল ডাইরেক্টর জন ডোরির চুল খাড়া হতো।

কলিংবেল বেজে ওঠে। দামী পারস্য গালিচার ওপরে পা ফেলে দরজা খুলতে যায় উলফার্ট। দরজার বাইরে মেয়েটাকে দেখে চমকে ওঠে পার্ল কুও, তুমি? এতো রাতে? বৃষ্টিতে ভিজে গেছে যে, এসো ভেতরে

কম্যুনিস্ট চীনের উত্তর ভিয়েনামী এজেন্ট পার্ল কুও ভেতরে আসে।

না চাহিতে যারে পাওয়া যায়—

 বৃষ্টি ভেজা রাতে সুন্দরী মেয়ে ঘরে, উলফার্ট খুশীতে ডগমগ।

কয়েকমাস আগে এক সন্ধ্যায়, চুং-উর চীনে রেস্তোরাঁয় পার্ল টেবিলে একা বসেছিল। উলফার্টকে দেখে হাসে। ফুলের মত সুন্দর মেয়েটাকে দেখে উলফার্ট অভিভূত হয়। খাওয়ার পর মেয়েটা বলে, তোমার মতো পুরুষের সঙ্গেই আমি শুতে চাই। যাবে তো?

উলফার্ট নিজের সৌভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। রু্য ক্যাসতিলানির ছোট্ট একটা হোটেলে পার্ল তাকে নিয়ে গেছে। ঘরের চাবি নেওয়ার সময় দৃষ্টি বিনিময় উলফার্টের নজরে আসেনি।

একঘণ্টা ভিয়েৎনামী মেয়েটার সঙ্গে শুয়ে…বসে..দাঁড়িয়ে…নানা টেকনিক শিখে ও শিখিয়ে… ক্লান্ত, পরিতৃপ্ত উলফার্ট বুঝলো পশ্চিমী মেয়েরা কামনা বোঝে না। পুরুষ ও রমনী শরীরের মিলনে বিস্ফোরণ কেমন করে হয় জানতে গেলে…এশিয়ার মেয়েদের সঙ্গে যেতে হবে। আরও তিনবার সে পার্লের সঙ্গে সেই ঘরে শুয়েছে।

জীবনে আর শয়নে বৈচিত্র্য পছন্দ করে উলফার্ট। ইতিমধ্যে ওরলিতে এক জাপানী এয়ার হোস্টেসের সঙ্গে তার আশনাই জমেছে। মেয়েটার টেকনিক একেবারে মার কাটারি।

তারপরে সরবোনের সেই ভারতীয় ছাত্রী যে ফ্রান্সে ফরাসী ভাষা পড়তে এসে ফরাসীদের বাৎসায়ন শেখাচ্ছে—

তারও পরে থাইল্যান্ডের সেই যুবতী যার কথা ভাবলেই তার খারাপ লাগে।

পেছনে চাবুক না মারলে মেয়েটার নাকি ভালোবাসা জাগে না।

পার্ল, আমি যে এখানে আছি, তুমি জানলে কি করে? পার্ল রেনকোর্ট খুলে আর্ম চেয়ারে বসেছে।

এরিকা ওলসেন কোথায় আছে আমি জানতে চাই।

হোয়াট?

আমেরিকান হাসপাতালের সেই সুইডিস মেয়েটাকে ইয়াঙ্কিরা কোথায় নিয়ে গেছে? তুমি ডোরির হয়ে কাজ করো। তোমাকেই খবরটা জোগাড় করতে হবে।

গেট আউট। নইলে পুলিশ ডাকবো।

হ্যান্ডব্যাগ খুলে পাঁচটা চকচকে ফটোর প্রিন্ট পার্ল ওর হাতে দেয় :

এগুলো যদি বন্ধুরা বা.মিস্টার ডোরি দেখে?

ফটোর উলঙ্গ মেয়ে পুরুষ, নানা ভঙ্গিমায়। মোটা ভুড়িদার উলফার্ট। সে যে এত বিশ্রী। মোটা সেটা জানলে এতদিনে। মেয়েটা নিঃসন্দেহে পার্ল কুও।

ডোরি আমাকে বলবে কেন? উলফর্ট বলে।

 হ্যান্ডব্যাগ থেকে পার্ল একটা ছোট্ট কৌটো বার করে।

কাল সকাল দশটার আগে এই লিমপেট মাইক্রোফোনটা তুমি ডোরির ডেস্কের নীচে সেটে

ফ্রেজকটু আগে ডেফোনটা রয়েন্টি খেয়ে ডো দিও। নইলে ফটোগুলো আমরা বিলি করবো

পার্ল চলে গেল।

পরের দিন সকালে

দশটা বাজতে এখনও পাঁচ মিনিট বাকি…

এতো সকালে উলফার্টকে অফিসে দেখে ডোরির পি. এ. মার্সিয়া ডেভিস অবাক হয়।

লোকটার এতে নামডাক। টাক মাথায় ঘাম চকচক করছে, লোকটার কল্পনায় মার্সিয়া ডেভিসের জামা কাপড় খুলে, যেভাবে ওকে ধর্ষণ করছে, মার্সিয়া জানে। মিস্টার উলফার্ট, ফোনে ডোরিকে মার্সিয়া বলে। ভেতরে পাঠাও।

উলফার্ট তিনটে ডবল পেগ ব্রান্ডি খেয়ে ডোরির অফিসে এসেছে। দরদর করে ঘামছে। পকেটে সেই মাইক্রোফোনটা রয়েছে।

একটু আগে ডোরি মার্ক গারল্যান্ডের ফোন পেয়েছে। গারল্যান্ড এখন সুইডিস মেয়েটাকে নিয়ে ফ্রেজী অটোরুট দিয়ে এজ-এর ভিলার দিকে গাড়ি চালাচ্ছে। খবরটা ওয়াশিংটনে দিতে হবে।

উলফার্ট জানে, তার কুৎসিৎ যৌন জীবনের এই ছবিগুলো তার বন্ধুরা দেখলে তার সুসভ্য জীবনের বুনিয়াদ ভেঙ্গে যাবে। চীনেদের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করা উচিত, আমেরিকা কোনদিনই বোঝেনি। এখন নিজের চামড়া বাঁচাবার জন্যে উলফার্ট ইয়াক্তিদের সঙ্গে বেইমানী করতে তৈরী।

আমার কালেকশনে চীনা রকেট বিজ্ঞানী ফেং হো কুং-এর কয়েকটা জেডপাথর আছে। ব্রিফকেশ থেকে অনেকগুলো ফটোর প্রিন্ট বার করে সে সামনে মেলে ধরে ডোরির।

ও, কুং-এর পাথর সংগ্রহের বাতিক আছে বুঝি?

ওর কালেকশন খুব দামী, কিছু পাথর আর জড়োয়া গয়না আছে, বলতে বলতে হঠাৎ তার ব্রিফকেশটা যেন হাত ফসকে মেঝেতে পড়ে যায়। ব্রিফকেশটা তোলার সময় লিমপেট মাইক্রো ফোনটায় অ্যাডহেসিভ লাগানো চটচটে জায়গাটা ডোরির ডেস্কের নীচে সেটে দেয় উলফার্ট।

থ্যাঙ্কস, উলফার্ট, আমি এখন ব্যস্ত আছি

আমি আঁবোয়াসে যাচ্ছি। তাই এতো সকালে

আশা করি, উইক এভটা তোমার ভালই কাটবে।

উলফার্ট যাবার পরে ডোরি একটু ভাবে কি ব্যাপার। শুধু কি এই পাথরগুলোর সংবাদ দিতেই

ঠিক তখনই কিন্তু

মার্কিন এমব্যাসীর বাইরে যে সান্ত্রী টহল দিচ্ছিল, সে খেয়াল করলো, গেটের কুড়ি মিটার দূরে, একটা রেনো আর্ট মডেলের গাড়ি দাঁড়িয়ে।

ড্রাইভারটি লম্বা, রোগা, কিন্তু চোখ দুটো চীনাদের মতো। ও ইঞ্জিনের ঢাকনা খুলছে। ভেতরে বসে আছেচিওংসা পরা এক ভিয়েৎনামীযুবতী।ফর্সা, সুন্দর মুখ। মেয়েটির কানের পাশেহীয়ারিং এড। বেচারা বোধ হয় কানে ভালো শুনতে পায় না।

সান্ত্রীকে দেখে কম্যুনিস্ট চীনের স্পাই সাদু মিচেল হেসে

আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে

মঁসিয়ে এখানে তো গাড়ি রাখার নিয়ম নেই—

প্লাগগুলো খারাপ হয়ে গেছে

হঠাৎ গাড়ির ভেতর থেকে ঝুঁকে পড়ে পার্ল সান্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি হাসে। যেন তরুণ সান্ত্রীর রূপ দেখে সে অভিভূত।

মঁসিয়ে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যাবেন–সাদুকে কথাটা বলে চলে যায় সান্ত্রী।

ঘামেভেজা মুখ রুমালে মুছে ইঞ্জিনের দিকে ঝুঁকে পড়ে সাদু মিচেল। পার্ল কুও-এর ওই হীয়ারিং এডের সঙ্গে একটা খুব ছোট অথচ দারুণ শক্তিশালী রিসিভিং সেটের যোগাযোগ রয়েছে। নিকোলাসের সেই ছোট্ট লিস্পেট মাইক্রোফোনের সাহায্যে পার্ল এখন সব কিছু শুনতে পাচ্ছ। এখন ওয়াশিংটনের সিয়া-অফিসের সঙ্গে ডোরি কথা বলছে।

পার্ল বলে, এবার আমরা যেতে পারি।

ইঞ্জিনের হুড বন্ধ করে সাদু মিচেল গাড়িতে স্টার্ট দেয়। সুইডিশ মেয়েটা এজ-এ ডোরির ভিলায় আছে, পার্ল জানায়। ইয়েৎ সেনকে খবর দাও। আজ সন্ধ্যেয় এজ-এ যাবো।

রু দ্য রিভোলিতে সাদু মিচেলের দোকান আজ বন্ধ। ভেতরের ঘরে কম্যুনিস্ট চীনের স্পাইচক্রের প্যারী শাখার সর্বেসর্বা ইয়েৎ সেনের মুখে চাপা রাগ, চেয়ারে বসে পার্ল কুও, এক কোনে বসে পেশাদার খুনী জো জো চ্যাডি, নতুন এজেন্ট সাদু মিচেল আরও নার্ভাস।

গত রাতেই এরিকা ওলসেন খুন হওয়া উচিত ছিল।

ইয়েৎ সেন বলছে।

পিকিং অসন্তুষ্ট হবে। আমরা অসন্তুষ্ট। এবার যেন ভুল না হয়। তোমরা কখন যাবে?

রাত দুটোর প্লেনে নিস্-এ যাবো

গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছে?

হার্জ কোম্পানীর ভাড়া করা গাড়ি ওখানে আমার জন্যে অপেক্ষা করবে।

পার্ল, খুব শীগগিরই মাইক্রোফোনটা খুঁজে পাবে ডোরি। ও উলফার্টকে বললে উলফার্ট তোমার কথা বলবে। ঠিক আছে বলে ইয়েৎ সেন চীনা দূতাবাসে ফিরে গিয়ে ফোন তোল। সে ক্যান্টনীজ উপভাষায় নরম উচ্চারণে কথা বলছিল–যার সম্বন্ধে কথা বলছিল,…সে তখন লোয়ার নদীর ধারে ইন দ্য অ-এ তার ছোট্ট বাগানবাড়ির বন্ধ দরজার আড়ালে ককটেল ক্যাবিনেট থেকে ব্রান্ডির বোতল বার করছে।

উলফার্টের এই বাগানবাড়িটা গায়ের একটা মেয়ে পরিস্কার করে রাখে। উইক এন্ডে কখনো একটাকখনো দুটো মেয়েকে এনেকামশাস্ত্র শেখায় উলফার্ট।তাই ঝিয়ের উইকএন্ডে আসাবারণ।

উলফার্ট ভাবলো রবিবার অফিস বন্ধ, সোমবার সকালে যে কোন অজুহাতে ডোরির অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলতে লিম্পেট মাইক্রোফোনটা খুলে নেবে।

এখন সময়টা কি করে কাটানো যায়? হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে নজর যেতেই দেখে তার দরজার সামনে একটা ভাঙাচোরা ফিয়াট গাড়ি থেকে এক রূপসী যুবতী নামছে। হাতে হোন্ড অল, পরনেকালোটাইটফিটিং সোয়েটারের আড়ালে স্তনের আদল দেখা যাচ্ছে। সাদা প্যান্ট এতো টাইট যে না পরলেও ক্ষতি নেই, কালো চুল ঘাড়ে এসে পড়েছে। মেয়েটা কলিং বেল বাজাচ্ছে।

 দরজা খুলে দেখে চীনা মেয়ে, মাই প্রেটি এখানে কি চাও? ক্যান্টনের মেয়ে, ঠিকই আন্দাজ করে ক্যান্টনিজ উপভাষায় কথা বলে উলফার্ট।

তুমি আমাদের ভাষা জানো?নীচু হয়ে হোন্ডঅল খোলে সুন্দরী মেয়ে, একটা ওড়ো সাবানের প্যাকেট বার করে। ব্রান্ডের নাম পিক হোয়াইট-খবরের কাগজে উলফার্ট অনেকবার নামটা দেখেছে। আমার কাজ এই কোম্পানীর ফ্রী স্যম্পল বিলি করা। এটা আপনি রাখুন।

কিন্তু ওটা তো আমার কাজে আসবে না।

সব প্যাকেটগুলো বিলি না করলে কোম্পানী আমাকে পয়সা দেবে না

আচ্ছা, ঠিক আছে। ভেতরে এসো, না হয় সব প্যাকেটগুলোই আমাকে দিয়ে যাও।

মেয়েটা খিলখিল করে হাসে।

 ভেতরে এসো। আমরা ফুর্তি করবো। তোমাকে একশো ফ্রাঁ দেবো

হোল্ডঅল বন্ধ করে ঘৃণাভরা চোখে তাকিয়ে মেয়েটা গাড়িতে উঠে বসে।

কপাল মন্দ, উলফার্ট কি ভেবে রান্নাঘরের টেবিলে প্যাকেটটা রাখে। রান্নাঘর থেকে বসার ঘরের দিকে চলেছে…তখনই প্যাকেটের ভেতরে লুকানো টাইম বোমাটা ফাটলো৷ ভিলার সবকটা জানালা ভাঙলো এবং উলফার্টের শরীরে এবড়ো থেবড়ো কয়েকটা টুকুরো ভেঙে পড়লো।

সেদিনই বিকেলে..

প্যারীতে সীয়ার ডিভিসন্যাল ডাইরেক্টর ডোরির ঘরে ক্যাপ্টেন ও হ্যালোরান ঢুকলো। তার সঙ্গে ওর সেরা ইনভেস্টিগেটর জো ড্যানব্রিজ।

স্যার, ড্যানব্রিজ টেস্ট করে বলছে, আপনার ঘরে কেউ আড়ি পেতেছে

 অসম্ভব। আমি অফিসে আসার আগে তোমরা চেক করেছ।

তখন কোন গোলমাল ছিল না। আপনার অফিসে আজ কে কে ঢুকেছে?

নিকোলাস উলফার্ট, স্যাম বেন্টলি আর মারল জ্যাকসন।

বেন্টলি আর জ্যাকসন বিশ্বস্ত এজেন্ট, তার মানে উলফার্টই বেইমান।

ডেস্কের নীচে লিস্পেট মাইক্রোফোনটা পেয়েছে ড্যানব্রিজ।

টিম, কাছেই রিসিভিং সেট নিয়ে কেউ নিশ্চই ছিলো, তুমি খোঁজ নাও। ওয়াশিংটনে ফোন করে জানিয়েছি, এরিকা ওলসেন আর মার্ক গারল্যান্ড আমার ভিলায় গেছে। খবরটা শত্রুরা জানতে পেরেছে। ভিলায় তোমার ছজন এজেন্ট পাহারা দিচ্ছে। তবুও

মার্ক গারল্যান্ডকে দুঃসংবাদটা জানায় ডোরি।

উলফার্ট ওর বাগান বাড়িতে গেছে। ওকে অ্যারেস্ট করো, ডোরি অর্ডার দেয়, ইনস্পেক্টর ডুশেকে খবর দাও।

সকাল নটায় দূতাবাসের বাইরে একটা গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ড্রাইভারের চোখ চীনাদের মতো। মেয়েটার কানে হীয়ারিং-এড ছিল

ইনস্পেক্টর।

গাড়িটা কার?

রুদ্য রিভোলির একটা দোকানের মালিক সাদু মিচেলের। কিন্তু নিস্-এর পুলিশ খবরটা পাওয়ার অনেক আগেই সাদু মিচেল, পার্লকুও ও জো জো চ্যানডি পৌঁছে গেছে। এখন কম্যুনিস্ট চীনের তিনজন স্পাই এজ-এর দিকে চলেছে।