১৩-১৫. মেজর রিকের ভয়ঙ্কর শর্ত

১৩. মেজর রিকের ভয়ঙ্কর শর্ত

তখনো সুর্য ওঠে নি। পুব আকাশের এক কোণে অন্ধকার কেটে গিয়ে কুয়াশার মতো ঘোলাটে আভা ফুটে উঠেছে। বনের ভেতর একটা-দুটো পাখি ভোরের অপেক্ষায় আড়ষ্ট গলায় ডাকছে। হেডমাস্টারের ডাকে ঘুম ভাঙলো টুটুলের। শেষরাতের দিকে ওর ঘুম এলেও গাঢ় হতে পারে নি। হেডমাস্টার একবার ডাকতেই উঠে বসলো।

টুটুলের চোখে ভয়ের ছায়া দেখে হেডমাস্টার বললেন, তোমার বাবা আমাদের ডাকছেন।

দরজার কাছে ক্যাপ্টেন বিক্রমকে দেখতে পেলো টুটুল। ওদের জন্যেই অপেক্ষা করছে।

ক্যাপ্টেন কোনো কথা না বলে টুটুলদের নিয়ে বাবার ঘরে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো। বাবা বললেন, আমাদের এখনি বেরুতে হবে।

বাবার চোখে-মুখে রাত জাগার ক্লান্তি। টুটুল বললো, তোমার গাড়ি কোথায় বাবা?

গেটের কাছে।

একজন প্রহরী এসে ঘরে দরজার সামনে দাঁড়ালো। টুটুলরা ওর সঙ্গে বেরুলো।

গাড়িতে উঠে বাবা প্রহরীকে জিজ্ঞেস করলেন, গোলাবাড়ির পথে যাবো কীভাবে?

সামনে পথ ধরে পশ্চিমে যাবেন এক মাইল। রাস্তা এর পর দুভাগ হয়ে একভাগ উত্তরে, একভাগ দক্ষিণে গেছে। দক্ষিণের পথই এঁকেবেঁকে সাত-আট মাইল ঘুরে গোলাবাড়ি গেছে।

বাবা আর কোনো কথা না বলে গাড়িতে স্টার্ট নিলেন। টুটুল পেছনের সীটে তাকিয়ে দেখলো নতুন কেনা রাইফেলটা সেখানে শোয়ানো রয়েছে।

কিছুদূর যাবার পর হেডমাস্টার বললেন, টুটুল, গাড়ি চালাতে পারো না?

পারি। জবাব দিলো টুটুল–তবে আঠারো বছর না হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবো না।

এখানে ট্রাফিক পুলিশের হাঙ্গামা নেই। গাড়িটা বরং তুমিই চালাও। তোমার বাবা ভীষণ ক্লান্ত।

টুটুল একবার ভেবেছিলো কথাটা বাবাকে বলবে। তবে বাবা ওর গাড়ি চালানো পছন্দ করেন না। হেডমাস্টারের কথায় সাহস পেয়ে বললো, বাবা, আমাকে দেবে চালাতে?

ঠিক আছে। বাবা গাড়ি থামালেন। ওরা সীট বদল করলো। বড় মাথা ধরেছে।–বলে বাবা সীটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলেন। জানতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিলো কোন শর্তে বাবা মুক্তি পেলেন। কিন্তু তাঁর ক্লান্তি দেখে টুটুল চুপ করে রইলো। হেডমাস্টারেরও একই অবস্থা।

নির্দেশমতো মাইলখানেক গিয়ে দক্ষিণে মোড় নিলো টুটুল। কোনো বাঁধানো রাস্তা নয়। জঙ্গলের ভেতর লোকজন চলাফেরা করে এই রাস্তা তৈরি করেছে। আঁকাবাঁকা, কোথাও ঘন জঙ্গল, কোথাও ছোটখাটো ঝোপে ভরা ফাঁকা জায়গা, কোথাও উঁচু-নিচু টিলার ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছিলো টুটুলকে। একেবার পাহাড়ের ছোট একটা ফাটলের ভেতর পড়ে বেশ ঝাঁকুনি খেলো। বাবা চমকে চোখ মেলে তাকালেন। বললেন, কদ্দূর এসেছি?

মাইল ছয়েক হবে। জবাব দিলেন হেডমাস্টার।

ঘড়ি দেখে বাবা টুটুলকে বললেন, বেশ আস্তে চালাচ্ছিস দেখি! রাস্তা খারাপ বুঝি!

রাস্তা কোথায় দেখলে বাবা! টুটুল হালকা গলায় বললো, ল্যাণ্ড রোভার ছাড়া এখান দিয়ে যাওয়াই যেতো না!

বাবা মৃদু হাসলেন–হাত মক্‌শো করার ভালো জায়গাই পেয়েছিস।

বাবার মুখে হসি দেখে হেডমাস্টার ভরসা পেলেন। আস্তে-আস্তে বললেন, মেজর কী শর্ত দিলো আপনাকে?

শর্তের কথা আপনি জানলেন কোত্থেকে? বাবা অবাক হলেন।

আমি ওদের ভাষা জানি। মৃদু হেসে হেডমাস্টার বললেন, কাল রাতে মেজর আর ক্যাপ্টেনের কথা শুনে মনে হলো ওরা যদি আপনাকে ছাড়ে তাহলে কঠিন কোনো শর্ত চাপিয়ে দেবে। শর্ত না মানলে নিশ্চয়ই আপনি বেরুতে পারতেন না?

শর্তটা শুধু কঠিন নয়, অত্যন্ত ভয়ঙ্করও বটে। চিন্তিত গলায় বললেন বাবা–মেজর রিক কথা বলতে চায় জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে। আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা। আলোচনা হতে হবে এদের এলাকায়। সদিচ্ছা দেখানোর জন্য এদের দুজন বন্দি নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। আরও আছে। মঞ্জুরের সঙ্গে কথা বলে ওকে বোঝাতে হবে আমাকে।

বলেন কী! ঘাবড়ে গিয়ে বললেন হেডমাস্টার, জেনারেল মঞ্জুর ওদের জায়গায় গিয়ে কথা বলবেন, এ কি কখনো হতে পারে? সরকারের চোখে ওরা দেশদ্রোহী। সরকারের পলিসির বাইরে কিছু করা একজন জিওসির পক্ষে কীভাবে সম্ভব?

সম্ভব করতে হবে। কাষ্ঠ হেসে বাবা বললেন, ক্যাপ্টেন বিক্রম চেয়েছিলো আমাকে জিম্মি হিসেবে আটকে রেখে ওদের নেতাদের মুক্তি আর দশ লাখ টাকা চাইবে। আমি বলেছি, মঞ্জুর আমার পরিচিত হতে পারে, কিন্তু এ ধরনের প্রস্তাব সে পছন্দ করবে না। আমার জীবন সরকারের কাছে এত মূল্যবান কিছু নয়। চাকরিতে থাকলে না হয় কথা ছিলো। ওদের বলেছি, মঞ্জুরের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমি কথা বলে দেখতে পারি রাজি করানো যায় কি না। এই অঞ্চলে শান্তির ব্যাপারে আমিও আগ্রহী।

রাজি না হলে?

আমাকে বন্দি হতে হবে, ওদের ক্ষতি করার দায়ে। পরে ইচ্ছে হলে ওরা জিম্মি হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে।

আর কোনো কথা বললেন না হেডমাস্টার। টুটুলও চুপ করে রইলো। বাবা পাইপ ধরিয়ে কিছুক্ষণ টানলেন। তারপর টুটুলকে বললেন, বাড়িতে কাউকে এসব কথা বলার দরকার নেই। বলবি, যতীন লারমার চিঠি পেয়ে ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। তোকে নামিয়ে দিয়ে আজই চিটাগাং যাবো। মঞ্জুরের সঙ্গে কথা বলে কাল ফিরবো। যতীন বাবুর হাতে চিঠি দিয়ে কাল এদের জানাতে হবে।

এত বড় একটা ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে টুটুলের রোমাঞ্চ হলো। কোনো কথা না বলে এক মনে গোলাবাড়ির পথে গাড়ি চালালো।

হেডমাস্টারকে তার বাসায় নামাতে গিয়ে টুটুলদেরও নামতে হলো। কিছুতেই ওদের নাশতা না করিয়ে ছাড়বেন না তিনি। বিদ্যুৎ বললো, জানো টুটুলদা, আমার মন বলছিলো আজ সকালেই তোমরা ফিরবে। যতীন স্যার কাল রাতে মাকে এসে তাই বলে গেছেন। নাকি খুব শক্ত চিঠি লিখেছেন তিনি।

টুটুল মনে-মনে হাসলো। যতীন লারমার চিঠি শুধু ওদের পরিচয়ের জন্য লেগেছে। বাবার ব্যাপারে যে তার কোনো সুপারিশ কাজে লাগে নি–এ কথা বলা যাবে না বিদ্যুৎকে। বললো, সত্যি বিদ্যুৎ, ওঁর চিঠি না হলে বাবাকে ওরা ছাড়তো না। আসল কথা বলতে না পেরে টুটুলের পেট ফুলে ঢোল হলো।

বিদ্যুতের মা ওদের দুধ, মুড়ি আর গুড় খেতে দিলেন। বাবাকে দেখে মনে হলো বেশ খিদে পেয়েছে তার। এমনি যা খান, তার চেয়ে অনেক বেশি খেলেন অনেক কম সময়ে। খেয়েই বললেন, গাড়িতে স্টার্ট দে টুটুল। চা বাড়ি গিয়ে খাবো। ভাবি, কিছু মনে করবেন না। ভীষণ তাড়া আছে।

বাবা উঠতেই গাড়ি ছাড়লো টুটুল। ওকে গাড়ি চালাতে দেখে বিদ্যুতের গর্ব হলো। ভাবলো, টুটুলদার কাছ থেকে গাড়ি চালানোটা শিখাতে হবে।

হাটের দিন হওয়াতে রাস্তা একেবারে ফাঁকা ছিলো। বেশ স্পীডেই গাড়ি চালালো টুটুল। বাড়ির কাছে এসে কয়েকবার হর্ন দিলো। ও চাইছিলো, সবাই একসঙ্গে দেখুক বাবাকে।

হর্ন শুনে বাড়ির সবাই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি দেখতে পেয়ে করমালি আর আসিফ এগিয়ে গেলো। গাড়ির স্পীড না কমিয়ে ওদের কাছে এসে ব্রেক কষলো টুটুল। ওর দুষ্টুমি দেখে হাসতে-হাসতে গাড়ি থেকে নামলেন বাবা। দিদা ছুটে এসে ওঁকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন–তোকে ওরা মারধর করে নি তো হাবু? শুকিয়ে তো আধখানা হয়েছিস।

বাবার নতুন রাইফেলটা নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো টুটুল । আসিফকে বললো, সেদিন এটা থাকলে তুমি আর আমি দুজনে মিলে ডাকাতগুলোকে রামধোলাই দিতাম।

আসিফ বললো, ওরা কাল রাতেও এসেছিলো।

বলো কী! বাবা শুনেছো, কালও নাকি ডাকাত এসেছিলো।

বাবা অবাক হয়ে বললেন, সে কী আসিফ!

দিদা বাবাকে ধরে একটু কাঁদবেন ভেবেছিলেন। এই সময় ডাকাতের প্রসঙ্গটা তাঁর মোটেই ভালো লাগলো না। খরখরে গলায় আসিফকে বললেন, এ্যাদ্দিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে কোথায় ছিলো–বাড়ি ফিরে দুদণ্ড বিশ্রাম তো আগে নিতে দাও! তা না, শুরু করলে ডাকাতের গল্প। কীসের ডাকাত! ছিঁচকে চোরের চেয়েও ভীতু সব।

কিছু চুরি করেছে নাকি মা? বাবা উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলেন।

সে মুরোদ আছে নাকি? দেখেছি তো সাহস! ওই শুটকো কিতিঙ্গে না মিতিঙ্গেটাকে নিয়ে ভেগেছে। করমালি আগে টের পেলে তাও পারতো না।

করমালি তড়বড় করে বললো, হারা রাইত জাগনে কাইল রাইত ঘুম এ্যানো বেশি আইছিলো। হইলা বুজি ন। হরে জিরার মায় কইল মাইনষের কতা হুইনছে। আঁই লগে লগে জিরার মা হুদ্দা দা লই বাইর ওইছি। দেই ডাকাইত অগল দৌড় দিছে–বদ্দা বন্দুক লই বাইর ওইতে-ওইতে ব্যাকগুন ব্যাড়া হারই গেছে। কাইলঅ কন–

ওই শুরু হলো! দিদা হতাশ হয়ে বললেন, আচ্ছা, ওকে কি তোরা একটু বিশ্রাম নিতে দিবি না?

করমালি জিব কেটে ছুটে পালালো। বাবা হাসলেন–আজ আর বিশ্রাম হবে না মা। চাটুকু খেয়ে এক্ষুনি চাটগাঁ যেতে হবে। জরুরি কাজ আছে। এই বলে মিতুল-ঝুমাকে কোলে তুলে আদর করলেন।

বুঝি না বাছা কী এমন কাজ! একদিন বিশ্রাম না নিলে বুঝি কেয়ামত হয়ে যাবে! দিদা গজগজ করে ঘরে ঢুকলেন।

মা বাবাকে বললেন, যেখানেই যাও, দাড়ি কেটে গোসলটা সেরে যাও। নইলে তোমাকেই লোকে ডাকাত ভাববে।

শুনে বাবা মৃদু হেসে গালে হাত বুলোতে-বুলোতে বাথরুমের দিকে গেলেন। আসিফ চুপি-চুপি বললো, বাবা চিটাগং কেন যাবেন টুটুল?

আমাকে তো কিছু বলেন নি। অম্লান বদনে মিথ্যে কথা বললো টুটুল।

ওরা বাবাকে কী জন্য আটকেছিলো কিছু শুনেছো টুটুল?

ঘরে চলো, বলছি।

ঘরে গিয়ে শর্তের কথা বাদ দিয়ে বাবার সঙ্গে মেজর রিকের কী কথা হয়েছে, আসিফকে সব খুলে বললো টুটুল। শেষে বললো, যতীন লারমার সুপারিশের জন্যই বাবাকে ওরা ছেড়ে দিয়েছে। আসলে বাবা যে ওদের অনেক দাবি সমর্থন করেন, এটা তিনি ওদের বোঝাতে পেরেছেন। বাবাকে ওরা তোমাদের দলের লোক ভেবেছে।

বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুলেন বাবা। চায়ের কাপ হাতে টুটুলের ঘরে ঢুকলেন। আড়চোখে একবার টুটুলের দিকে তাকালেন। টুটুল চোখের ইশারায় জানালো, আসিফকে আসল কথা কিছু বলে নি। বাবা খুশি হলেন। আসিফকে বললেন, আপাতত এখানেই থাকছো আসিফ। ইকবাল সাহেব তোমাকে চিঠি দিয়েছেন।

হোমিওপ্যাথির পুরিয়া দেয়ার ছোট একটা সাদা খাম পকেট থেকে বের করে বাবা আসিফকে দিলেন। চিঠি পড়ে আসিফের মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। বাবা আস্তে আস্তে বললেন, সব ঠিক হয়ে যাবে আসিফ। আমি চাটগাঁ থেকে ফিরে তোমার সঙ্গে কথা বলবো।

বাবা যখন বেরুতে যাবেন, তখন দিদা ভীষণ গম্ভীর মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন, একা না গিয়ে ছেলেদের কাউকে সঙ্গে নিলে নিশ্চয়ই জরুরি কাজ মাটি হবে না!

না মা, আমি একাই যাবো। আর কোনো ভয় নেই মা।

কেন, ডাকতারা সব ভালোমানুষ হয়ে গেছে বুঝি! নাকি বনের বাঘেরা গরুদের সঙ্গে ঘাস খাচ্ছে?

বাবা সামান্য অধৈর্য হয়ে বললেন, আমি দিনে যাবো, দিনে আসবো। ডাকাত বলো আর বাঘ বলল, ওদের উৎপাত হচ্ছে রাতে। দিনে ওরা বেরোয় না।

ডাকাত আর বাঘের ওরকম বিবেচনা থাকলেই বাঁচি।

বাবা আর কোনো কথা না বলে হেসে গাড়িতে উঠলেন। সবাই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলো। বাবা হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে বললেন, কাল বিকেল নাগাদ ফিরবো। না হলে পরশু।

দিদা কোনো কথা না বলে বিড়বিড় করে দোয়াদরুদ পড়তে লাগলেন।

.

১৪. জেনারেল মঞ্জুরের বিড়ম্বনা

পথে কোথাও না নেমে কমলছড়ি থেকে একটানা গাড়ি চালিয়ে চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্টে এলেন বাবা। মেজর জেনারেল মঞ্জুর আহমদ জিওসি হয়ে এসেছেন বেশি দিন হয় নি। চেকপোষ্টে বাবার নাম আর কার সঙ্গে দেখা করবেন জিজ্ঞেস করে ছেড়ে দিলো। অফিসে গিয়ে তিনি জেনারেলের দেখা পেলেন না। শুনলেন, কোয়ার্টারে গেছেন। পথ জেনে নিয়ে যখন বাবা জেনারেলের বাংলোয় এলেন, তখন ঘড়িতে বেলা একটা। ঝোঁকের মাথায় এত দূর এসে কলিং বেল টিপতে গিয়ে বাবার মনে হলো, এভাবে অসময়ে না এসে টেলিফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে এলে ভালো হতো। তবু এসেই যখন পড়েছেন তখন সামান্য হতস্তত করে বেলটা টিপেই দিলেন। একটু পরেই দরজা খুলে গেলো। বাবা দেখলেন, সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জেনারেল মঞ্জুর। পরনে সামরিক পোশাক। শুধু মাথায় টুপি নেই।

বাবাকে দেখে ভীষণ অবাক হলেন জেনারেল-–হাবিব ভাই, আপনি? হঠাৎ আসুন, ভেতরে আসুন।

ভেতরে গিয়ে বসলেন বাবা। বললেন, কিছু মনে করো না মঞ্জুর, অ্যাপয়েন্টমেন্ট না করে হঠাৎ এসে গেলাম বলে। তুমি বোধহয় জানো না আমি কমলছড়ি আছি?

না, আপনি তো বলেন নি আগে।

চাকরি ছেড়ে কমলছড়ি আসা থেকে শুরু করে শান্তিবাহিনীর মেজর রিকের সঙ্গে কথা বলা পর্যন্ত সব জেনারেল মঞ্জুরকে খুলে বললেন বাবা। শুধু বাদ রাখলেন আসিফের প্রসঙ্গ। মেজর রিকের কথা শুনে জেনারেল মঞ্জুর এত গম্ভীর হয়ে গেলেন যে, বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা বললেন না। মঞ্জুরকে বিষয়টা ভালোভাবে ভেবে দেখার জন্য বাবাও আর কথা না বাড়িয়ে পাইপ ধরালেন।

ক্যান্টনমেন্ট এলাকাটা ভীষণ শান্ত। বাবা জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, বাগানে মালি গাছের পাতা ছাটছে। চৈত্রের ঝলসানো আকাশে একটা-দুটো চিল উড়ছে। ঢাকার জীবনের কথা ভাবলেন বাবা। মনে হয় বহু পুরোনো কোনো অতীতের ঘটনা। এখন কমলছড়ি তার সবকিছু।

জেনারেল মঞ্জুরের হঠাৎ খেয়াল হলো, বাবা লম্বা পথ গাড়ি চালিয়ে এসেছেন। বললেন, হাবিব ভাই, চলুন আগে খেয়ে নি। তারপর কথা বলা যাবে।

বাবা কোনো কথা না বলে বাথরুমে গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে খাবার টেবিলে বসে গেলেন। খেতে বসে মঞ্জুর শুধু বললেন, নিজে তুলে নিন, যেটা আপনার পছন্দ। বৌ ঢাকা গেছে। বাড়িতে আমি একা।

একদিন সবাই মিলে কমলছড়ি এসে বেড়িয়ে যাও। খেতে খেতে বললেন বাবা–-জায়গাটা ভারি সুন্দর!

জায়গা তো সুন্দর! মানুষদের নিয়েই যতো বিপদ। জেনারেল মঞ্জুর আবার চিন্তায় ডুবে গেলেন।

খেয়ে উঠে ড্রইং রুমে বসে বাবা পাইপ ধরালেন। মঞ্জুর বললেন, আপনাকে খুবই কঠিন শর্ত দিয়েছে শান্তিবাহিনী।

বাবা ম্লান হাসলেন–সেটা আমি বুঝতে পারি মঞ্জুর। 

হিলট্র্যাক্টের প্রব্লেম নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কয়েক বারই কথা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট খুবই বিরক্ত। বলেছেন প্রতি ইঞ্চি জায়গা ক্যান্টনমেন্টের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে।

শুনে কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বাবা বললেন, আমার মনে হয় মঞ্জুর, গায়ের জোরে এদের দমানো যাবে না। প্রব্লেমটা পলিটিক্যালি সত্ করা যায় কি না ভাবো।

এ কথাটাই আমি প্রেসিডেন্টকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম। ওদের সঙ্গে আপোসের একটা ফর্মুলাও বের করেছি আমি। আসলে ওদের প্রতি একটু বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। সব দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছে ওরা। এই বলে জেনারেল মঞ্জুর গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন।

বাবা আবার পাইপ ধরিয়ে চুপচাপ টানতে লাগলেন। হঠাৎ তার মনে হলো ঢাকা যাবার পথে তিনি আসিফদের পার্টির যে লোকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার। আসিফ তাঁর কাছে আছে। কোনো অঘটন ঘটলে আগে থাকতে ওর পার্টির জানা উচিত। চোখ তুলে জেনারেল মঞ্জুরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, এখনও তিনি ভাবছেন। বাবা বললেন, মঞ্জুর, আমি একটু পাঁচলাইশ যাবো।

যাবেন! চিন্তায় হঠাৎ বাধা পড়াতে চমকে উঠলেন মঞ্জুর। ঠিক আছে, আমি দেখি ঢাকার সঙ্গে কথা বলা যায় কি না। আপনি কাজ সেরে চলে আসুন। রাতে এখানে খাবেন। রাতে না ফিরলে ভাবী নিশ্চয়ই ভাববেন না?

না, বলে এসেছি। দেরি না করে বাবা বেরিয়ে পড়লেন।

তালুকদার সাহেবকে বাড়িতেই পাওয়া গেলো। বাবাকে দেখে অবাক হলেন তিনি। ভাবলেন, আসিফের কোনো বিপদ হয় নি তো! বাবা বুঝতে পেরে বললেন, একটা ব্যাপারে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করতে এলাম।

ড্রইং রুমে বসে শান্তিবাহিনীর পুরো ঘটনা বাবা খুলে বললেন। তালুকদার সাহেব বললেন, আমাদের সঙ্গে যে আপনার যোগাযোগ আছে এ কথা মেজর রিককে বলেন। নি?

বাবা মাথা নাড়লেন–না। বলাটা কি উচিত হতো! তা ছাড়া আপনাদের সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছুই জানি না।

 জানার দরকার হয় না। আমাদের সংগঠনটা গোপন। কর্মীরাও যতটুকু জানার তার বেশি জানে না।

আমি সংগঠন জানার কথা বলছি না। আপনাদের রাজনীতিও আমি পুরোপুরি জানি না।

সেটা না হয় জানানো যাবে। তবে এক্ষত্রে আপনি আমাদের লোক, এটা বললে কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।

কী রকম?

শান্তিবাহিনীর সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। আমরা ওদের কাজে বাধা দেবো না। ওরাও আমাদের কোনো কাজে বাধা দেবে না। আমাদের কাউকে ওরা এভাবে জিম্মি করতে পারে না।

আমাকে এভাবে আপনাদের লোক বলা কি ঠিক হবে! বাবাকে চিন্তিত মনে হলো।

কেন হবে না? আপনি কি আমাদের কর্মীকে আশ্রয় দেন নি? তার বিপদের সময় আপনি ওকে যেভাবে রক্ষা করেছেন, অন্য কোনো রাজনীতিতে আপনার বিশ্বাস থাকলে করতেন না।

আসিফকে আমি মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি।

তালুকদারের সঙ্গে ঘন্টা দুয়েক কথা বলে বাবা আবার ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গেলেন। দেখলেন, সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে জেনারেল মঞ্জর লনে বসে আছেন। বাবাকে দেখে বললেন, আসুন হাবিব ভাই, বসুন।

সামনের বেতের চেয়ারটায় বসে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলে?

মাথা নেড়ে সায় জানালেন জেনারেল। বড় বেশি চিন্তিত মনে হলো তাঁকে। বললেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দুদফা কথা হয়েছে। প্রথম দফা আলোচনার সময় মনে হলো সমস্যাটা তাকে আমি বোঝাতে পেরেছি। পরের বার প্রেসিডেন্ট অন্যরকম বললেন। আগের মতো গায়ের জোরের কথা।

বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, তোমার কী ধারণা? প্রেসিডেন্টকে কি কেউ অন্য পরামর্শ দিচ্ছে?

তিক্ত হেসে জেনারেল বললেন, ঢাকায় কি তার পরামর্শদাতার অভাব আছে?

বেয়ারা এসে চা দিয়ে গেলো। চায়ে চুমুক দিয়ে জেনারেল বললেন, মনে হচ্ছে। মেজর রিকের সঙ্গে কথা বলতে হলে তার পুরো দায় আমাকে বইতে হবে। ডিএফআই চীফের সঙ্গেও কথা বলেছি। ওরা বললো, একজন তথাকথিত মেজরের সঙ্গে আমি কেন কথা বলবো, একজন জুনিয়র অফিসার গেলেই তো পারে। তৈরি হয়ে যাবে, অ্যারেস্ট করে নিয়ে আসবে। আমি বলেছি এতে হিলট্র্যাক্টের সমস্যা দূর হবে না, বরং ওদের ভেতর ঘৃণা আরো বাড়বে। এর রাজনৈতিক চরিত্রটা ওরা কেউ বুঝতে চাইছে না।

জেনারেল মঞ্জুরের কথাগুলো শুনতে বাবার খুবই ভালো লাগলো। কিছু করতে না পারুন, অন্তত সমস্যাটা তাঁরা দুজন একইভাবে দেখছেন। বললেন, তুমি কী ঠিক করলে?

মেজর রিকের সঙ্গে আমি কথা বলবো। তবে ওদের ঘাঁটিতে নয়, আপনার বাড়িতে। পরিচয় গোপন করেই যাবো।

ঝুঁকিটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না মঞ্জুর?

এ ছাড়া আর কোনো পথও তো দেখছি না!

এটা কি শুধু আমার মুক্তিপণ হিসেবে করছো?

জেনারেল মৃদু হাসলেন–আপনার বদলে অন্য কেউ এ প্রস্তাব দিলে হয়তো রাজি হতাম না। তবে দেখা করার ব্যাপারটাকে শুধু আপনার মুক্তিপণ হিসেবে আমি দেখছি না। রিকের সঙ্গে কথা বলে যদি শান্তির পথে একধাপ এগুতে পারি, মন্দ কি?

এ ধরনের শান্তি কি আমাদের সরকার চায়?

একটু চিন্তিত হয়ে জেনারেল বললেন, রিকের সঙ্গে কথা বলে ওদের অবস্থাটা একটু বুঝে নি। পরে আমি ঢাকা গিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ডিটেল আলাপ করবো।

ঘরের ভেতর টেলিফোন বাজলো। জেনারেল উঠে গেলেন ধরার জন্য। ওঁর কথা শুনে বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন। এত বড় একটা বিপদের ঝুঁকি নেয়া মঞ্জুরের উচিত হবে না, মনে-মনে ভাবলেন তিনি। দরকার হলে মেজর রিকের সঙ্গে কথা বলে মঞ্জুরের অবস্থাটা বুঝিয়ে বলবেন। সমতল থেকে যারা ওখানে গিয়ে বসত বানিয়েছে, ওদেরও বোঝাবেন। এমনিতরো সাত-পাঁচ ভাবছিলেন বাবা, বেশ কিছুক্ষণ পর জেনারেল মঞ্জুর এলেন গম্ভীর মুখে। চেয়ারে বসে বাবাকে বললেন,  ডিএফআই চীফ ফোন করেছিলেন। বন্দি দুজন বণ্ড দিতে রাজি হয়েছে। ওদের ছেড়ে দেয়া হবে।

তোমার ব্যাপারে কী হলো?

একই কথা। দেখা যদি করি, সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে করতে হবে।

বন্দিমুক্তির ব্যাপারে বাবা খুশি হলেও মঞ্জুরের নিজ দায়িত্বে দেখা করাটা তিনি ভালো মনে করলেন না। বললেনও। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন মঞ্জুর। বাবাকে তার পরিকল্পনার কথা বললেন। কোথাও ফোক নেই, তবু বাবার মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগলো।

এরপর অনেক কথা হলো মঞ্জুরের সঙ্গে। বহু ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম। তবু পরদিন বাড়ি ফেরার সময় বাবার মনে হলো, বুকের ভেতর কোথায় যেন খচখচ করছে। যেন কাটার মতো কিছু বিধে আছে সেখানে।

.

১৫. ছদ্মবেশীদের সমাবেশ

জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে কথা বলার সময় বাবার মনে হয়েছিলো, প্রেসিডেন্টের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শান্তিবাহিনীর একজন মেজরের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে মঞ্জুর বড় রকমের ঝুঁকি নিচ্ছেন। মেজর রিকের আলোচনার ফলাফল জানিয়ে তাঁকে কমলছড়ির বাড়িতে আসার জন্য চিঠি পাঠিয়ে মনে হলো তিনি নিজেও কম ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ব্যাপারটা জানাজানি হলে তার পেছনে গোয়েন্দা লাগবে। সেটা আর যাই হোক, আসিফের জন্য ভালো হবে না। আসিফের সঙ্গে কথা বলার জন্য একই দিনে তালুকদারকেও তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ব্যাপারটা হবে গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে ছোটখাটো উৎসবের মতো। তাহলে কারো সন্দেহের কোনো কারণ থাকবে না।

যদি এমন হয়, মঞ্জুরদের আলোচনায় কোনো ফল হলো না–তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে? মঞ্জুর নিশ্চয়ই দলবল নিয়ে আসবে না। ফেরার পথে যদি ওর বিপদ হয়? জিম্মি হিসেবে একজন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে একজন জেনারেল যে হাজার গুণ বেশি দামি, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। মঞ্জুরের বিচারবুদ্ধির ওপর অবশ্য তাঁর যথেষ্ট আস্থা আছে। তিনি যেসব বিপদের কথা ভাবছেন, মঞ্জুরও নিশ্চয়ই এখানে আসার আগে ভেবে দেখবে, তবু বুকের ভেতর কাঁটার খোঁচাটা রয়েই গেলো।

বাড়িতে এসে বাবা বলেছেন, রোববার দিন তার কয়েকজন বন্ধু রাতে খাবেন। আসার পথে হেডমাস্টারকেও বলে এসেছিলেন, তাঁরা সবাই যেন সকালেই চলে আসেন। শান্তিবাহিনীর ঝামেলা দূর হয়েছে জেনে দিদাও ভারি খুশি। মাকে বললেন, শোন বৌমা, বেশি লোকের জন্য রাঁধতে বললে তো তুমি মাথা ঠিক রাখতে পারো না। গত ঈদে তোমার তেহারি রান্না দেখে লজ্জায় মরেছি আমি।

মা লাল হয়ে বললেন, এবার বেশি লোক কোথায় মা? বিদ্যুত্রা তিনজন আর ওঁর বন্ধু চার-পাঁচজন, এই তো! সেবার তো ষাটজনের রান্না করতে হয়েছিলো, তাও গ্যাসের চুলোয়।

চুলোয় যাক তোমার গ্যাস। আম আর কাঁঠালের লাকড়ির রান্নার ওপর আর কিছু হতে পারে না। এবার আমি রাঁধবো।

রোববারের আর দুদিন বাকি। দিদা আর মা একটা দিন পুরো লাগালেন কি রান্না হবে সেটা ঠিক করতে। বাবা একবার নাক গলাতে গিয়ে দিদার বকুনি খেলেন। টুটুলকে বললেন, চল, আমরা বরং বাগানটা ঠিক করে ফেলি।

টুটুল, আসিফ আর করমালিকে নিয়ে দুদিন খেটে বাবা চমৎকার একটা রক গার্ডেন বানিয়ে ফেললেন। লনের এক পাশে ঢাকা থেকে আনা রকমারি পাতাবাহারের বাগান করলেন। বড় গাছ কাটার সময় গুঁড়িগুলো করাত দিয়ে সমান করে কেটে রেখেছিলেন। বেশি মোটাগুলো ছিলো কোনোটা দেড় ফুট, কোনোটা দুই ফুট উঁচু। কম মোটাগুলো ছিলো এক ফুট উঁচু-এগুলোকে বানানো হলো বসার জায়গা। উঁচুগুলো হলো টেবিল। বাবা বললেন, রোববার দিন বসার জায়গায় একটা করে সোফার ফোম বিছিয়ে দেবো। চা দিতে এসে মা বললেন, তোমাদের কাজ দেখে মনে হচ্ছে এক শ। জনের গার্ডেন পার্টি দিচ্ছো বুঝি।

বাবা একটু অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলেন, বাহ্ রে, পার্টি না হলে বুঝি বাগান সাজাতে নেই!

বাবা মিতুলকেও বাগানে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। লনের শুকনো পাতা বাছতে-বাছতে রিনরিনে গলায় ও চেঁচিয়ে বললো, মা, তুমি তোমার কাজে যাও। দেখছো না আমরা কাজ করছি!

যাচ্ছি বাবা, যাচ্ছি।–বলে মা হেসে কুটিকুটি হলেন।

টুটুলের মনে হলো আস্তে-আস্তে ওদের জীবনটা আবার ঢাকার মতো আনন্দময় হয়ে উঠছে।

রোববার দুপুরের একটু আগে বিদ্যুত্রা এলো পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে। বাগান দেখে ওদের চোখ কপালে উঠলো। বিদ্যুৎ বললো, এই চার-পাঁচ দিনের ভেতর এত সুন্দর বাগান সাজিয়েছে টুটুলদা!

টুটুল মুখ টিপে হাসলো–চার-পাঁচ দিন নয়, মাত্র দুদিন।

হেডমাস্টার বললেন, ঢাকা চিটাগঙে কারো বাড়িতে আমি এত সুন্দর বাগান দেখি নি।

বাবা লাজুক হেসে বললেন, আসলে বাগান সাজাবার কিছু নিয়ম আছে। নিয়মগুলো ঠিকমতো মানলে যে-কোনো বাগানকেই সুন্দর করা যায়।

হেডমাস্টার-গিন্নি বললেন, আপনার বাগান দেখে মনে হচ্ছে বাগানমাত্রেই সুন্দর হয় না। সুন্দর আলাদা জিনিস।

বিদ্যুৎদের দেখে দিদা আর মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। দিদা বললেন, বাগানের ব্যাখ্যান অনেক হয়েছে। হাবুর বন্ধুরা নিশ্চয়ই বাগান খেতে আসবে না। আমি ভেবে মরি, আমাদের বৌমা রান্নাটি না মাটি করে বসে!

দিদার কথা শুনে মা তড়িঘড়ি রান্নাঘরের দিকে ছুটলেন। হেডমাস্টার বললেন, এটা মা আপনার অন্যায় হলো। ওঁর মতো রান্না খুব কম লোকেই পারে। এ কথা বিদ্যুতের মাও আমাকে বলেছে।

তা কি আর জানি না ভেবেছো! একগাল হেসে দিদা চোখ মটকে চাপা গলায় বললেন, বোঝে না কেন, কারো সামনে প্রশংসা করতে নেই!

দিদার কথার ভঙ্গি দেখে সবাই একসঙ্গে হেসে উঠলো। হাসি থামিয়ে দিদা বললেন, হাবুটার কাণ্ড দেখো! বেহায়ার মতো দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে বৌয়ের প্রশংসা শুনছে!

এবার বাবা পালালেন ঘরের ভেতর।

বিকেলে জেনারেল মঞ্জুর এলেন নিজে জীপ চালিয়ে। সঙ্গে একজন তরুণ অফিসার। অবশ্য পোশাক দেখে বোঝার উপায় নেই কে কি। দুজনের পরনেই সাধারণ প্যান্ট-শার্ট। গাড়িও আর্মির নয়। হেডমাস্টারের সঙ্গে ওঁদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় বাবা বললেন, আমার স্কুলের বন্ধু সামাদ চৌধুরী আর ওর ছোট ভাই। চিটাগঙে ব্যবসা করে।

হেডমাস্টারের চেহারা দেখে মনে হলো ঠিকই বুঝতে পেরেছেন কার সঙ্গে তিনি হাত মেলাচ্ছেন। টুটুল লক্ষ্য করলো, জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে হাত মেলাবার সময় হেডমাস্টার সামান্য ঝুঁকলেন। কিসের ব্যবসা করেন আপনি? বলার সময়ও হেডমাস্টারের গলায় ম মেশানো ছিলো।

জেনারেল মঞ্জুর নির্বিকার জবাব দিলেন, এই টুকটাক সাপ্লাই, ঠিকেদারি এইসব।

শুনে মৃদু হাসলেন বাবা। সাফারি শার্ট আর গাঢ় সানগ্লাসে মঞ্জুরকে দিব্যি ঠিকেদার মনে হচ্ছিলো।

মিনিট বিশেক পরে এলেন তালুকদার। তাঁকে বাবা পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর মামাতো ভাই বলে, পোর্টে চাকরি করেন।

আসিফ দিব্যি তাঁকে ঘরে নিয়ে গেলো–চাচা, চলুন দিদার সঙ্গে দেখা করবেন–বলে।

জেনারেল মঞ্জুর বা হেডমাস্টার কেউ বুঝতে পারলেন না এর ভেতর যে কোনো রহস্য আছে। এমনকি টুটুলও নয়। কারণ, তালুকদার টুটুলের পিঠ চাপড়ে বলেছেন, কত বড় হয়ে গেছে টুটুল! তোমাকে আমি কোলে দেখেছিলাম।

সবার শেষে এলেন মেজর রিক। চেহারা অনেকখানি বদলে ফেলেছেন। চুল সাদা করে বয়স বাড়িয়েছেন। সরু নিকেলের ফ্রেমের চশমা পরে বেশ নিরীহ ভাবে এনেছেন মুখে। বাবা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ইনি সুপ্রকাশ বড়ুয়া। আমার বন্ধুর বড় ভাই। তরুণ অফিসারললো তুমি বসে আসা তরুণটি মাস্টার এক জানিয়ে গেলো।

সামাদ আসবে বলে ওঁকে আসতে বলেছি। আমাকে সেদিন বলছিলেন ওঁর একটা কাঠের চালানের বিল নিয়ে এমইএস খুব ভোগাচ্ছে। সামাদের তো ক্যান্টনমেন্টে জানাশোনা আছে। যদি কাউকে বলতে পারো, তাহলে ওঁর বড় উপকার হয়।

চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মঞ্জুর আহমেদ ওরফে সামাদ চৌধুরী হাত মেলালেন শান্তিবাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক মেজর রিক ওরফে সুপ্রকাশ বড়ুয়ার সঙ্গে। মঞ্জুর বললেন, বৈষয়িক আলাপ পরে হবে। আগে চা-তো হোক।

টুটুল ছুটে গেলো চা আনতে। মা চায়ের সঙ্গে খাবার জন্য মাংসের পুর দেয়া আলুর চপ ভেজেছেন। হেডমাস্টার-গিন্নি নারকেলের চিড়া ভেজে এনেছিলেন। ঘরে এসে টুটুল শুনলো বাবার মামাতো ভাই চপ খেতে-খেতে দিদাকে বলছেন, আসিফ আমার কাছে ভালোই থাকবে ফুপু, আপনি ভাববেন না। হাবুকে আমি বলবো। এবার বি.এ. পরীক্ষাটা প্রাইভেটে দিয়ে দিক। তারপর যা খুশি একটা করুক। সামনের বছর টুটুলকেও নিয়ে যাবো।

টুটুল বাইরের মেহমানদের জন্য ট্রেতে করে খাবার সাজিয়ে নিয়ে গেলো। দেখলো, বাবা, জেনারেল মঞ্জুর মেজর রিক আর হেডমাস্টার এক জায়গায় বসেছেন। দূরে বিদ্যুতের সঙ্গে জেনারেলের সাথে আসা তরুণটি কথা বলছে। টুটুল ওদের খাবার এনে দিতেই বিদ্যুৎ বললো তুমি বসো টুটুলদা। চা-টা আমিই আনছি।

তরুণ অফিসারটি মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে টুটুলকে বললো, আমার নাম শাহেদ।

টুটুল হাত মিলিয়ে নিজের নাম বললো। বয়সে শাহেদ আসিফের সমান কিংবা বছর খানেকের ছোট হবে। বললো, বিদ্যুতের কাছে শুনছিলাম, তুমি তোমার বাবাকে উদ্ধার করতে শান্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে গিয়েছিলে?

টুটুল মৃদু হেসে বললো, বিদ্যুৎ আর হেডমাস্টার কাকা সাহায্য না করলে নিশ্চয়ই যেতে পারতাম না। আমরা তো এই এলাকায় একবারেই নতুন।

ওদের সম্পর্কে তোমার কী ধারণা হলো বলল। আমি অবশ্য তোমার বন্ধু হিসেবেই জানতে চাইছি। কীভাবে গেলে তুমি?

কয়েক মুহূর্ত ভাবলো টুটুল। ফণীর কথা বলা উচিত হবে না। যতীন লারমার নামও বলা যাবে না। বললো, হেডমাস্টার কাকার পরিচিত এক লোক আমাদের নিয়ে গিয়েছিলো। ও খবর পেয়েছিলো বাবাকে কোথায় রেখেছে। বাবা ওদের খাজনা দেবে না বলাতেই যত রাগ। এমনিতে কোনো অত্যাচার করে নি।

শান্তিবাহিনী সম্পর্কে খারাপ কোনো কথাই টুটুল বললো না। শাহেদ (কে জানে ওর আসল নাম কি!) খুব মন দিয়ে শুনলো টুটুলের কথা। বিদ্যুৎ চা নিয়ে এলে টুটুল বললো, আমার চেয়ে বিদ্যুৎ ওদের সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।

এখানে তোমরা কদিন ধরে আছো? জানতে চাইলো শাহেদ।

আট বছরেরও বেশি।

তাহলে তো সবই জানো।

মোটামুটি জানি। টুটুল দেখলো, বাবা আর হেডমাস্টার চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আরো দূরে গিয়ে বসেছেন। বাবার জন্য রীতিমতো গর্ব অনুভব করলো টুটুল।

বিদ্যুৎ শাহেদকে বলছিলো শান্তিবাহিনীর কথা। বাঙালিদের অত্যাচারের কথা বলার সময় ওর গলায় ক্ষোভের ঝাঁঝ লক্ষ্য করলো টুটুল। শাহেদের চেহারায় দেখলো সেই ক্ষোভের সমর্থন। বললো, আপনার কী মনে হয় শাহেদ ভাই? এভাবে কদ্দিন চলবে?

শাহেদ ম্লান হেসে বললো, আমার মনে করাতে কি কিছু আসে-যায়? আমাদের নেতারা যদি উপজাতিদের সমস্যা বুঝতে না চান, তাহলে আমরা কী করতে পারি? আমার এক বন্ধু ছিলো, সুবিমল নাম। ক্যাডেট কলেজে আমরা একসঙ্গে পড়েছি। লেখাপড়া, খেলাধুলা সবকিছুতে তুখোড় ছেলে ছিলো। আমরা শিওর ছিলাম ও আর্মিতে জয়েন করলে শাইন করবে। এখন শুনি ও নাকি শান্তিবাহিনীর বড় নেতা।

টুটুল বললো, আমরা আর কিছু না পারি, এখানে যারা আছি তারা বাঙালিদের তো বোঝাতে পারি! ক্ষতি কি কারো কম হচ্ছে?

মেজর রিককে ঠিক একই ধরনের কথা বললেন জেনারেল মঞ্জুর,–আমাদের ক্ষতিটাকে আমরা ছোট করে দেখছি। দুপক্ষই এর জন্য কম-বেশি দায়ী। আমি নিজে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি তাকে বোঝাতে পারবো। অন্তত একটা প্রতিশ্রুতি আপনি আমাকে দেবেন বলুন। মেজর রিকের সঙ্গে কথা বলে জেনারেলের মনে হলো, ওদের অবস্থা খুব ভালো নয়।

কী প্রতিশ্রুতি চান, বলুন। শান্ত গলায় বললেন মেজর রিক। এই প্রথম একজন আর্মি অফিসারকে দেখলেন, যিনি ওদের সমস্যার আসল রূপটি বুঝতে পেরেছেন। খুবই আন্তরিক মনে হলো এই বাঙালি জেনারেলকে। অনেক খোঁজখবর রাখেন।

এখানকার বাঙালিরা যাতে আপনাদের ওপর কোনোরকম জুলুম না করে সেটা আমি দেখবো। তার বদলে আপনি বলুন, ওদের ওপর আপনারা কোনো জুলুম করবেন না। বলে মৃদু হাসলেন জেনারেল।

আপনি কি আর্মি অপারেশনও বন্ধ রাখবেন? জানতে চাইলেন মেজর রিক।

আমি আক্রমণ করবো না। আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা করবো। তবে ইণ্ডিয়াকে কোনো সুযোগ নিতে দেবো না।

আমার গ্রুপের সঙ্গে ইণ্ডিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনারা আর্মি অপারেশন বন্ধ করলে আমিও আমার ছেলেদের বলতে পারি, গায়ে পড়ে লড়াই করতে যেও না। আপনি আমাদের জমির ব্যাপারে কী করবেন?

জমি আপনারা পাবেন। আপনারা পরিবারপিছু এক শ বিঘা চেয়েছেন। অত জমি হিলট্রাক্টে নেই। তবে জমি যা-ই পান না কেন, সেখানে যাতে স্থায়ীভাবে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা করবো। চাষের জন্য যা দরকার তারও ব্যবস্থা হবে।

আরালিয়া ঝোঁপের পাশে গাছের গুঁড়িতে বসে দ্বিতীয় দফা চা খেতে-খেতে হেডমাস্টার বললেন, ওদের দেখে তো মনে হচ্ছে আলোচনা ভালোভাবেই এগুচ্ছে।

বাবা মৃদু হেসে বললেন, ভালো হলেই বাঁচি।

মা হ্যাঁজাক দুটো বাগানে রেখে গেছেন। ছোট দুটো ঝোঁপের আড়ালে এমনভাবে রেখেছেন যাতে কারো চোখে আলো না লাগে, অথচ গোটা বাগানে আলোটা ছড়িয়ে পড়ে। দেখে শাহেদ টুটুলকে বললো, তোমার বাবার রুচির প্রশংসা না করে পারছি না।

টুটুল গর্বের সঙ্গে বললো, শীতকালে আসুন, গোলাপ দেখাবো, এখন যে সাইজ দেখছেন এর ডবল হবে।

সন্ধ্যার আলো অন্ধকারে মিলিয়ে যাবার আগে বাবার মামাতো ভাই চলে গেছেন। নাকি রামগড়ে জরুরি কাজ আছে। দিদা ওঁকে জোর করে রাতের খাবার খাইয়ে দিয়েছেন।

আসিফ এসে টুটুলদের সঙ্গে বসেছে। টুটুলের বড় ভাই হিসেবে সমবয়সী অতিথিটির সঙ্গে দিব্যি জমিয়ে ফেলেছে। কখন যে রাত দশটা বেজে গেছে কারোই খেয়াল নেই। মা যখন টুটুলদের খেতে ডাকলেন, শাহেদ ঘড়ি দেখে আঁতকে উঠলো। আসিফ হেসে বললো, ফিরে যাবার কথা ভাবছো বুঝি! দিদা যেতে দিলে তো!

বাগানেই খাবার দেয়া হলো। শেষ বসন্তের নরম বাতাসে মা আর দিদার অপূর্ব রান্না খেতে-খেতে টুটুলের আবার মনে হলো, দুঃস্বপ্নের দিন বুঝি শেষ হতে চলেছে।

সবাই একবাক্যে রান্নার প্রশংসা করলেন। দিদা লাল হয়ে মেজর রিককে বললেন, কিছু মনে কোরো না বাড়ুই, তোমাদের মগের মুলুকে এর চেয়ে ভালো জিনিসপত্তর জোগাড় করা গেলো না।

মেজর রিক লাজুক হেসে বললেন, বাড়ুই না মা, বড়ুয়া।

ঠিক আছে বড়ুয়া, তুমি যদি না জানো, তোমার গিন্নিকে জিজ্ঞেস করো–জায়ফল, আলু বোখারা আর জাফরান ছাড়া বিরিয়ানির আসল স্বাদ কি পাওয়া যায়! ভাগ্যিস গরম মশলা সঙ্গে এনেছিলাম!

খাওয়া শেষ হতে হতে রাত এগারটা। মেজর রিক পান চিবুতে-চিবুতে জেনারেল মঞ্জুরকে বললেন, আপনারা তো চাটগাঁ ফিরে যাবেন। আমাকে গোলাবাড়ি পর্যন্ত একটা লিফট দিলে খুশি হতাম।

দিদা চোখ কপালে তুলে বললেন, তুমি কি ক্ষেপেছো বাড়ুই! শান্তিবাহিনীর খপ্পরে পড়তে চাও নাকি! কদিন আগে হাবুর দুর্ভোগ দেখেও তোমার এত সাহস কী করে হয় শুনি! এত রাতে যাওয়াটাওয়া হবে না। বাগানে বসে গপ্পো করো। চাইলে পরে হেডমাস্টারের বৌ গানও শোনাতে পারে। যাওয়ার কথা মুখে এনো না।

মেজর রিক অসহায়ভাবে বাবার দিকে তাকালেন। বাবা মুখ টিপে হেসে আকাশে তারা দেখতে লাগলেন। জেনারেল মঞ্জুরও বেশ উপভোগ করছিলেন মেজর রিকের বিড়ম্বনা। দিদা এবার তাকে নিয়ে পড়লেন–তুমি তো বাবা বলতে গেলে ঘরের ছেলে। তুমিই বলো, বাড়ুইকে এতো রাতে কী করে যেতে দিই? তুমি বাপু ওর কথায় তাল দিও না।

মেজর রিক আবার দিদাকে ভুল শুধরে দিলেন, বাড়ুই না মা, বড়ুয়া। আমি বলছিলাম কি…….

ঠিক আছে বড়ুয়া, মা বলে যখন ডেকেছে বুড়ো মায়ের একটা কথা রাখলে কি হয়! হঠাৎ দিদার গলাটা ভিজে এলো-হাবুর চাকরি ছাড়ার পর আজ প্রথম ওর মনটা ভালো দেখলাম। ভেবেছিলাম বিরান বনে কীভাবে দিন কাটাবো। কদিন তো ডাকাতের ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম। তোমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেখে মনে যে কত জোর পেয়েছি, কীভাবে বোঝাবো বলো! আর অমত কোরো না বাবা বাড়ুই। এই বলে দিদা মেজর রিকের পিঠে হাত রাখলেন।

শান্তিবাহিনীর এই দুর্দান্ত অধিনায়কটি এর আগে কোনো বাঙালি পরিবারে এ ধরনের আপ্যায়ন পান নি। দিদার কথা শুনে তাঁরও মনটা নরম হয়ে গেলো। মৃদু হেসে জেনারেল মঞ্জুরকে বললেন, আমাদের কারোরই তাহলে আজ যাওয়া হচ্ছে না! তারপর দিদাকে বললেন, রাতে গপ্পো করতে হলে আমার যে চা খেতে ইচ্ছে করে মা। আর কী যেন গানের কথা বলছিলেন?

দিদা হেসে বললেন, আজ কি কাউকে চা খেতে বারণ করতে পারি! বৌমা, চায়ের কেতলিটা চাপিয়ে দিয়ে এসো। টুটুল, যা তো বাছা, আমার শানু মাকে হারমোনিয়মটা এনে দে।