মৃতেরা কথা বলে না – ১১

১১.

 রঞ্জন-মধুমিতার এপিসোড় মাত্র এক মিনিট দেখেই কর্নেল বললেন, স্টপ ইট প্লিজ! দ্যাটস এনাফ।

ক্যাসেট থামিয়ে চন্দ্রনাথ বললেন, এই ছবির রঞ্জন রায়কেই আমি দেখেছিলাম। সিওর।

কর্নেল ঘড়ি দেখে বললেন, স্বীকার করছি আপনি দুঃসাহসী মানুষ মিঃ দেববর্মন! কিন্তু রঞ্জন এখন মরিয়া। আপনি আপনার ফায়ারআর্মসের ওপর বড্ড বেশি নির্ভর করছেন। সে রাতে রঞ্জন তৈরি হয়েই আসছিল। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তার হাতে গুলিভরা পয়েন্ট আটত্রিশ ক্যালিবারের ফায়ারআর্মস রেডি ছিল। কিন্তু আপনি দুটো কারণে বেঁচে গেছেন। প্রথম কারণ, সে আপনাকে হঠাৎ ১০ নং অ্যাপার্টমেন্টের সামনে লিফটের মুখোমুখি দেখার আশা করেনি। দ্বিতীয় কারণ, কুকুরের চেঁচামেচি। সে পোশাদার খুনী নয়। তাই হকচকিয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া তখন তার দিকে আপনার ফায়ারআর্মসের নল। আত্মরক্ষার সহজাত বোধে সে সেই মুহূর্তে সিঁড়ির দিকে ঝাঁপ দিয়েছিল। আপনি দৈবাৎ বেঁচে গেছেন। হ্যাঁ- এখানে গুলির লড়াই করার হিম্মত রঞ্জনের ছিল না। এটা একটা অ্যাপার্টমেন্ট হাউস। নিচে সিকিউরিটি গার্ডরা টহল দিয়ে বেড়ায়।

চন্দ্রনাথ শীতল কণ্ঠস্বরে বললেন, আপনি কী বলতে চান?

রঞ্জন এখন মরিয়া এবং এই ক্যাসেটটাই আপনার পক্ষে ভীষণ বিপজ্জনক। এটা আপনি আমাকে দিতে না চান, এখনই পুলিশকে দিন। আমি পুলিশকে ডাকছি।

পুলিশ আমাকে ফাঁসাবে। আপনি জানেন, এ সব ক্যাসেট বে-আইনি।

কর্নেল হাসলেন। বে-আইনি! কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জঘন্য বে-আইনি কাজ নরহত্যা। আফটার অল, আপনি আসলে পুলিশকে সহযোগিতা করছেন। তাই না? মিঃ দেববর্মন! আপনার গায়ে আঁচড় লাগতে আমি দেব না। সব দায়িত্ব আমার। আমার ওপর নির্ভর করুন।

একটু ভেবে নিয়ে চন্দ্রনাথ বললেন, ও কে। বাট ফার্স্ট লেট মি টক টু সিকিউরিটি অফিসার।

চন্দ্রনাথ সিকিউরিটিতে ফোন করে রণধীরকে এখন আসতে বললেন। কর্নেল বুঝতে পারছিলেন, এই লোকটি পোড়খাওয়া এবং নানা ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। তাই খুব সাবধানী।

কিছুক্ষণ পরে দরজায় কেউ নক করল। চন্দ্রনাথ উঠে গিয়ে আইহোলে দেখে নিলেন। তারপর দরজা খুলে রণধীরকে ভেতরে ঢোকালেন। রণধীর উদ্বিগ্নমুখে বললেন, এনিথিং রং স্যার!

চন্দ্রনাথ বললেন, এই ভদ্রলোককে আপনি চেনেন?.

রণধীর ঢুকেই কর্নেলকে দেখে স্যালুট ঠুকেছিলেন। বললেন, হ্যাঁ। উনি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার।

উনি পুলিশকে ফোন করতে চান।

পুলিশ চিফরা ওঁকে সম্মান করেন স্যার! এমন কি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের বহু ডিপার্টমেন্টের চিফরাও ওঁর হেল্প নেন।

চন্দ্রনাথ কর্নেলকে বললেন, ও কে! আপনি ফোন করুন। মিঃ সিনহা! আপনি একটু বসুন।

কর্নেল ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ির কোয়ার্টারে ফোন করলেন। লালবাজার গোয়েন্দা দফতরের অফিসাররা এগারোটার পর অফিসে যান। ফোনে সাড়া পেয়ে বললেন, অরিজিৎ! আমি সানশাইন থেকে বলছি।

হাই ওল্ড বস! নতুন কিছু বাধালেন নাকি? গতরাতে আবার এক কেলো নিউ আলিপুরে–

রঞ্জন রায়?

হ্যাঁ। সাম ডাক্তার অনির্বাণ মুখার্জিকে তার বসার ঘরে শুইয়ে দিয়ে পালিয়েছে। মাথায় গুলি। ওঁর মেড সারভ্যান্ট প্রত্যক্ষদর্শী। সে রঞ্জনকে চেনে। গুলির শব্দ শুনে ছুটে এসেছিল মেয়েটি। রঞ্জনকে পালিয়ে যেতে দেখেছে। তাকে সে চেনে।

ডাঃ অনির্বাণ মুখার্জি কি ডেড?

স্পট ডেড।

অরিজিৎ! আমি সানশাইনে মিঃ চন্দ্রনাথ দেববর্মনের ঘরে আছি। একটা ভিডিওক্যাসেট তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই। ওতে রঞ্জনের ছবি আছে। এই ক্যাসেটটা নিতে আমার চেনা কোনও রেসপনসিবল অফিসার পাঠাও। কুইক ডার্লিং! রঞ্জন মরিয়া, মাইন্ড দ্যাট! বিশেষ করে নিউ আলিপুরের ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে, সে চূড়ান্ত ডেসপারেট হয়ে উঠেছে। আর একটা কথা। ক্যাসেট নিতে যাকে পাঠাবে, তিনি যেন পুলিশ ড্রেসে আসেন। উইথ আর্মস।

কর্নেল ফোন রাখলে চন্দ্রনাথ আস্তে বললেন, আপনি কার সঙ্গে কথা বললেন?

ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ি।

নিউ আলিপুরের ডাক্তার মুখার্জিকে আমি চিনি। নাইস ম্যান। তাকে বাস্টার্ড রঞ্জন খুন করল কেন?

কর্নেল সে-প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রণধীরকে বললেন, তুমি এখনই কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড এই ব্লকের সামনে মোতায়েন করো। দুজন গার্ড নিচে লিফটে সামনে থাকে যেন। পুলিশ আসবে উর্দিপরে। সাদা পোশাকের কেউ যেন পুলিশ পরিচয় দিয়ে এই ব্লকে ঢুকতে না পারে।

রণধীর সিকিউরিটি অফিসে ফোন করে বললেন, আমি নিজে বরং লিফটের সামনে থাকছি।

বাট উইথ আর্মস!

 ইয়েস স্যার! আই হ্যাভ মাই আর্মস।

স্যালুট করে বেরিয়ে গেলেন সিকিউরিটি অফিসার রণধীর সিংহ। তারপর চন্দ্রনাথ ভি সি পি থেকে ক্যাসেটটা বের করলেন। কর্নেল বললেন, ক্যাসেটটা একটু দেখতে চাই মিঃ দেববর্মন!

চন্দ্রনাথ ক্যাসেটটা দিলেন। কর্নেল সেটা দেখেই বলেন, মাই গুডনেস্!

চন্দ্রনাথ জিজ্ঞেস করলেন, কী?

ক্যাসেটটার নাম ডেডস ডু নট স্পিক! আশ্চর্য তো!

মোটেও অশ্চর্য নয় কর্নেল সরকার! সব বু ফিল্মের ক্যাসেটের এ রকম অদ্ভুত নাম হয়। হরর ফিল্মের সঙ্গে মানানসই নামই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়। প্রথমে কিছু সেই রকম ঘটনা থাকে। তারপর সেক্স সিন এসে পড়ে। আমি একটা ব্লু ফিল্ম দেখেছিলাম দা নেকেড আই নামে। অর্থহীন নাম। কিন্তু চমক। আছে। কিংবা ধরুন, দা ফ্লাইং কার্পেট অর্ধেকটা অব্দি দেখেও বোঝা যায় না সেক্স সিন আছে।

কর্নেল বললেন, আমি একটা ফোন করতে চাই। আর্জেন্ট!

করুন।

কর্নেল শান্তশীলের নম্বার ডায়াল করলেন। সাড়া এলে বললেন, আমি কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছি।

বলুন!

 আপনি বলেছিলেন আমাকে ডেডস ডু নট স্পিক। তাই না?

হ্যাঁ। কী ব্যাপার?

কথাটা আপনি কোথাও পড়েছিলেন, নাকি—

মে বি ইটস আ ফ্রেজ। মনে পড়ছে না।

একটু ভেবে বলুন। দিস ইজ আর্জেন্ট মিঃ দাশগুপ্ত!

 সময় লাগবে।

আচ্ছা মিঃ দাশগুপ্ত, কথাটা আপনার স্ত্রীর মুখে শোনেননি তো?

অ্যাঁ?..হ্যাঁ, হ্যাঁ। দ্যাটস রাইট। এক দিন রাতে আমি কম্পিউটাররুম থেকে বেরিয়ে আসছিলাম। সেই সময় মউ টেলিফোনে কথা বলছিল। ওই কথাটা তারই মুখেই শুনেছিলাম। তবে আপনাকে বলেছি, মউকে আমি–

থ্যাঙ্কস। রাখছি। বলে টেলিফোন রেখে কর্নেল একটা চুরুট ধরালেন। একটু হেসে চন্দ্রনাথ বললেন, এটাই একটা পয়েন্ট মিঃ দেববর্মন! অনেক সময় আমরা জানি না যে আমরা কী জানি। বাই দা বাই, আপনি তো অনেক ভিডিও ক্যাসেট দেখেছেন। এই ক্যাসেটের প্রিন্ট সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

এটা ওরিজিন্যাল প্রিন্ট নয় তবে ভাল প্রিন্ট। প্রথম অংশটা-ইয়াঙ্কি বয় এবং তার গার্লফ্রেন্ডের এপিসোড ওরিজিন্যাল প্রিন্ট নয়। হংকংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ডে ভোলা। লোকেশানটা আমার চেনা।

হংকং গিয়েছিলেন নাকি?

ইয়া। চন্দ্রনাথ সিগারেট ধরিয়ে বললেন, কজওয়ে বের ধারে তোলা ছবি। টাইগার বাম গার্ডেনসের একটা অংশ দেখা যায়। এই গার্ডেনসের মালিক অ বুন হ। মলম বেচে কোটিপতি হওয়া লোক। ওকে ইউরোপীয়ানরা বলে টাইগার বাম কিং। বি এ এল এম বাম। অ্যান্ডারস্ট্যান্ড? ছবিতে উল্টেটাদিকের হ্যাপি ভ্যালি রেসকোর্স দেখেছি। লোকেশানটা আমার পরিচিত। অবশ্য সেক্স সিন স্টুডিওতে তোলা।

মিঃ রঙ্গনাথনের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন?

ইয়া। আপনি শুনে থাকবেন আমার মার্কেটিং রিসার্চের কারবার আছে। একটা কোম্পানির কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম। রঙ্গনাথনের বাড়িতে ছিলাম। শেক-ও বিচের ধারে ওর বাড়ি। রঙ্গনাথন ওয়াজ এ বিলিওনেয়ার। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা আছে ওর।

কর্নেল হাসলেন। কাজেই তিনি কাউকে দশ হাজার টাকার জন্য ব্ল্যাকমেল করতে কলকাতা আসবেন কেন?

চন্দ্রনাথ তাকালেন। ব্ল্যাকমেল? রঙ্গনাথন ব্ল্যাকমেল করবে কোন দুঃখে? তবে সে ছিল হাড়ে হাড়ে ব্যবসায়ী। আরব দেশগুলোতে ভারতীয় যুবক-যুবতাঁকে নিয়ে তোলা ব্লু ফিল্মের চহিদা আছে। এ কথা সে আমাকে বলেছিল। আপনি জানেন ভারত থেকে আরব কাছে এবং হংকং থেকে দূরে। কিন্তু ব্যবসার ব্যাপারে আরব হংকং থেকে খুবই কাছে। নেডোর নেবার।

কথা বলে সময় কাটাতে চেয়েছিলেন কর্নেল। চন্দ্রনাথকে যতটা শীতল দেখায়, তিনি তত শীতল নন। ইংরেজিতে যাদের বলা হয় গুড টকার সেই রকম মানুষ। কর্নেলের মনে হচ্ছিল, তবু লোকটির জীবনে কোথাও একটা ক্ষত আছে। সেই ক্ষত তাকে নিঃসঙ্গ এবং শীতল করে ফেলে মাঝে মাঝে।

প্রায় আধঘণ্টা পরে ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর মিঃ হাজরা এলেন পুলিশের। পোশাকে। সঙ্গে দুজন আর্মড কনস্টেবল। ডেডস ডু নট স্পিক নামের ভিডিও ক্যাসেটটা নিয়ে গেলেন।

চন্দ্রনাথকে সাবধানে থাকতে বলে কর্নেল তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরলেন ট্যাক্সি চেপে। ড্রয়িংরুমে ফ্যান চালিয়ে ইজিচেয়ারে বসেই বললেন, ষষ্ঠী! কফি!

টুপি খুলে টাকে হাওয়া খেতে খেতে কর্নেল ভাবলেন, শুভ্রাংশুর কথায় চন্দ্রনাথ দেববর্মনের দিকে আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছিলেন। ঢিলটা লেগে গেছে। শুভ্রাংশু সত্যিই বুদ্ধিমান। তার হিসেব কাঁটায় কাটায় মিলে গেল।

শুভ্রাংশুকে এখন বাড়িতে পাওয়া যাবে না। কিন্তু ওর বোনকে জানিয়ে রাখা উচিত, সে বাড়ি ফিরলেই যেন কর্নেলকে রিং করে কিংবা সোজা চলে আসে।

কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর সাড়া এল। কর্নেল বললেন, সুস্মিতা?

হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?

 কর্নেল নীলাদ্রি সরকার।

দাদার সঙ্গে কথা বলবেন তো? দাদা অফিস থেক একটু আগে ফিরে এসেছিল। ওকে ডিমাপুরে ট্রান্সফার করেছে। সব গুছিয়ে নিয়ে চলে গেল। আপনাকে রিং করেছিল। পায়নি।

ও! আচ্ছা! কীসে গেল? প্লেনে নিশ্চয়?

হু, কোম্পানি ওকে অত টাকা দেবে, তা হলে হয়েছে। ট্রেনে যাবে, কোন ট্রেন আমি জানি না। রাখছি।…

ষষ্ঠী কফি আনল। কর্নেল বললেন, আমাকে কেউ ফোন করেছিল?

 ষষ্ঠী নড়ে উঠল। কাঁচুমাচু মুখে বলল, ওই যাঃ। বলতে ভুলে গেছি। একটা ফোং এয়েছিল বটে। কিন্তু নাম বলল না। আপনি নেই শুনেই ছেড়ে দিল।…

তা হলে শুভ্রাংশু ট্রান্সফার অর্ডার ঠেকাতে পারল না! মউ বেঁচে থাকলে কর্নেল কফিতে চুমুক দিয়ে উচ্চারণ করলেন, ডেডস ডু নট স্পিক। মৃতেরা কথা বলে না।

ষষ্ঠী যেতে যেতে ঘুরে বলল, আজ্ঞে বাবামশাই?

কর্নেল চোখ কটমটিয়ে বললেন, তোর মুণ্ডু!

ষষ্ঠীচরণ বেজার হয়ে চলে গেল কিচেনের দিকে। কর্নেল চুপচাপ কফি খাওয়ার পর চুরুট ধরালেন। রঞ্জন তার চালে একটা গুরুতর ভুল করল কেন? একটা ব্যাপার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রঙ্গনাথনকে সে ওই ভি ডি ও ক্যাসেটটা আগেই বিক্রি করেছিল। রঙ্গনাথন বিদেশে তার প্রিন্ট বিক্রি করেছেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। একটা প্রিন্ট রঞ্জনের প্রাপ্য ছিল। হোটেল কন্টিনেন্টালের ম্যানেজারের বিবরণ অনুসারে রঙ্গনাথন এবার কলকাতা আসেন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায়। প্রিন্টটা রঞ্জনের জন্যই এনেছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে রঞ্জন যাওয়ার আগেই রঙ্গনাথন প্রিন্টটা তার বন্ধু চন্দ্রনাথকে দেখার জন্য দেন। চন্দ্রনাথ থাকেন সানশাইনে, যেখানে মৌ থাকে। এবার রঙ্গনাথন রঞ্জনকে বলে থাকবেন–নিশ্চয় বলেছিলেন, ওটা একজনকে একদিনের জন্য দেখতে দিয়েছেন। রঞ্জন জানতে চাইতেই পারে, কাকে ওটা দেওয়া হয়েছে। কারণ কলকাতার তার সেক্স সিন দেখানোর ঝুঁকি আছে। দৈবাৎ এমন। কারও চোখে পড়তে পারে, যে রঞ্জনেকে চেনে। কাজেই রঞ্জন রঙ্গনাথনের কাছে কাকে ক্যাসেট দেওয়া হয়েছে, তার নাম জানতে চাইবে এটা স্বাভাবিক। রঙ্গনাথন অত ভাবেননি। চন্দ্রনাথের নাম ঠিকানা দেন! রঞ্জন শোনামাত্র উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। বি ব্লকের পেছনেই ই ব্লক!

হ্যাঁ। এই ডিডাকশনের যুক্তি স্বতঃসিদ্ধ।

আর একটা ব্যাপার স্পষ্ট। মউকে যখন সে ব্ল্যাকমেল করত, তখন ক্যাসেট তার হাতে ছিল না। এবার ক্যাসেট এসে গেছে। অতএব টাকার অঙ্ক বাড়ানো যায়। রঞ্জন ২৮ মার্চ সন্ধ্যা থেকে শান্তশীল ফিরে না আসা পর্যন্ত মউয়ের কাছে ছিল। পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করতেই গিয়েছিল এবং ক্যাসেট যে পাশের ই ব্লকে চন্দ্রনাথের কাছে আছে, তা-ও বলেছিল। চন্দ্রনাথের জবানবন্দিতে এটা জানা গেছে। মউ বুঝতে পেরেছিল। রঞ্জন তার কাছে টাকা না পেয়ে রুষ্ট এবং চন্দ্রনাথের কাছ থেকে ক্যাসেটটা যে-কোনও ভাবে আদায় করে এবার উল্টেট শান্তশীলকেই ব্ল্যাকমেল করবে। শান্তশীল স্ত্রীর সম্মান রক্ষার জন্য বাধ্য হবে রঞ্জনের দাবি মেনে নিতে। কিন্তু মউ নিজের সম্মান বাঁচাতে নিজেই তৎপর হয়ে উঠেছিল। চন্দ্রনাথকে ফোনে সাবধান করিয়ে দিয়ে শেষে ঝুঁকি নিয়েই ই ব্লকে ছুটে গিয়েছিল। বেগতিক দেখে মরিয়া রঞ্জন তাকে মেরে মুখ বন্ধ করে দেয়। ডেডস ডু নট স্পিক। এবার তার ব্ল্যাকমেলের শিকার হতো শান্তশীল দাশগুপ্ত।

কর্নেল তাঁর এই তত্ত্বে নিশ্চিত হলেন। কোনও ফঁক নেই ঘটনার এই ছকে। রঞ্জন জানত না চন্দ্রনাথ কেমন প্রকৃতির লোক এবং তাঁর হাতে ফায়ার আর্মস রেডি! প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ার পর রঞ্জন একটা মারাত্মক ভুল করে ফেলেছিল।

মরিয়া এবং দিশেহারা রঞ্জনের পক্ষে এই ভুল স্বাভাবিক। ভুলটা হলো রঙ্গনাথনকে হত্যা।

চন্দ্রনাথ রঞ্জনকে দেখে ফেলেছিলেন। রঞ্জন আশঙ্কা করেছিল, চন্দ্রনাথ তার হংকংবাসী বন্ধু রঙ্গনাথনকে জানিয়ে থাকবেন, তাঁর দেওয়া ক্যাসেটের পুরুষচরিত্র সশরীরে তাকে খুন করার জন্য হানা দিয়েছিল এবং সে তার ফিমেল পার্টনারকে হত্যাও করেছে। কর্নেলের মনে পড়ল, হোটেল কন্টিনেন্টালে রঙ্গনাথনের সুইটে দুটো মদের গ্লাস উল্টেট পড়েছিল কার্পেটের ওপর। তার মানে, তর্কাতর্কি থেকে একটু হাতাহাতি, তারপর

রঙ্গনাথন কি তর্কাতর্কির সময় রঞ্জনকে শাসিয়েছিলেন, তাই রঞ্জন ক্রোধোন্মত্ত হয়ে তাকে গুলি করে?

আবার সেই কথাটা এসে পড়ছে, মৃতেরা কথা বলে না।

 কিন্তু কার্পেটে পড়ে থাকা দুটো মদের গ্লাস কথা বলছে। বলছে হাতাহাতি হয়েছিল।

কর্নেল টেলিফোন তুলে অরিজিৎ লাহিড়িকে অফিসে ফোন করলেন। অরিজিৎ! একটা কথা জানতে চাইছি।

বলুন বস্। সি পির ঘরে কনফারেন্স। একটু তাড়া আছে।

হোটেল কন্টিনেন্টালে রঙ্গনাথনের সুইটে নাইটেক্স থ্রি নামে কোনও ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল পাওয়া গেছে?

রঙ্গনাথনের বডির পাশে ইজিচেয়রের তলায় দশটা ক্যাপসুলের একটা ফাইল পড়ে ছিল। আমাদের ড্রাগ এক্সপার্টরা বলেছেন ঘুমের ওষুধ।

ফোরেন্সিক ল্যাবে পাঠাও। ওটা ঘুমের ওষুধ নয়। আর ক্যাসেটটা…

পেয়ে গেছি।

ক্যাসেট থেকে রঞ্জন রায়ের একটা ছবি প্রিন্ট করিয়ে– শুধু মুখের ছবিই যথেষ্ট, ছবিটা সব দৈনিক কাগজে ওয়ান্টেড-এ হেডিং ছাপানোর ব্যবস্থা করো। কালকের কাগজেই যেন বেরোয়।

ও কে বস্।…

ফোন রেখে কর্নেল নিভে যাওয়া চুরুট ধরালেন। তা হলে নিশ্চিত হওয়া গেল। নাইটেক্স থ্রি রঞ্জনকে যোগাতেন রঙ্গনাথন। তাকে মেরে রঞ্জন তাড়াহুড়োয় যতটা পারে হাতিয়ে নিয়ে গেছে।

বিকেলে কর্নেল ছাদের বাগান পরিচর্যা করছিলেন। ষষ্ঠীচরণ গিয়ে বলল, বাবামশাই ফোং।

অন্য সময় হলে বিরক্ত হয়ে ভেংচি কাটতেন। এখন একটা ঘটনার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন। দ্রুত নেমে এসে সাড়া দিলেন। চন্দ্রনাথ দেববর্মন ইংরেজিতে বললেন, আপনাকে বলার দরকার মনে করিনি। এখন বলতে হচ্ছে। নিউ আলিপুরের ডাঃ অনির্বাণ মুখার্জির স্ত্রী ঋতুপর্ণা আমার পরিচিত। এইমাত্র সে আমাকে জানাল, সেই জারজসন্তান রঞ্জন টেলিফোনে তাকে হুকুম দিয়েছে। তার মেয়ে টিনার একটা ব্লু ফিল্ম নাকি রঞ্জনের কাছে আছে। এক লাখ টাকা নগদ পেলে সে ক্যাসেটটা ফেরত দেবে। আর নমুনা-স্বরূপ একটা সেক্স সিনের স্টিল ছবি ইতিমধ্যেই লেটার বক্সে রেখে এসেছে। ঋতুপর্ণা আমাকে বলল, লেটার বক্সে সত্যিই খামের ভেতর টিনার ছবি পেয়েছে। তবে মেলপার্টনারের পেছন দিক দেখা যাচ্ছে। তাই তাকে চেনা যাচ্ছে না।

মিসেস মুখার্জি তাঁর মেয়েকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি?

করেছে। টিনা শুধু কাঁদছে। খুলে কিছু বলছে না। কাজেই ব্যাপারটা সত্য।

 কখন কোথায় টাকা দিতে হবে রঞ্জন বলেছে?

বলেছে। একটা ঠিকানা দিয়েছে। বেলসুইচ টিপলে একটি মেয়ে দরজা খুলবে। তার পরনে থাকবে জিনসব্যাগি শার্ট। ঘরে ঢুকে তাকে টাকা গুনে দিতে হবে। সে ক্যাসেটটা ফেরত দেবে। ইচ্ছে করলে ক্যাসেট চালিয়ে দেখে নিতে পারে ঋতুপর্ণা। কিন্তু মেয়েটিকে পুলিশের হাতে দিয়ে লাভ হবে না। মেয়েটি কলগার্ল। সে-ও জানে না রঞ্জন কোথায় আছে এবং কখন টাকা নিতে আসবে। হ্যাঁ। রঞ্জন আরও বলেছে, মেয়েটিকে ধরিয়ে দিয়েও লাভ নেই। কারণ ক্যাসেটের আরও প্রিন্ট রঞ্জনের কাছে আছে। সে কথা দিচ্ছে, টাকা পেলে সে সেই প্রিন্টগুলো এদেশে বেচবে না। বিদেশে যাওয়ার জন্যই তার টাকাটা দরকার।

কর্নেল আস্তে বললেন, কখন টাকা নিয়ে যেতে হবে?

 রাত নটায়।

 ঠিকানাটা কী?

ঋতুপর্ণা ফোনে বলেনি। আমাকে পরামর্শের জন্য ডেকেছে। তো আমার মনে হলো, ব্যাপারটা আপনাকে জানোনো উচিত। পুলিশ হঠকারী, আমি জানি। তা ছাড়া আজকাল পুলিশের মধ্যে আগের দিনের দক্ষতা দেখি না। মনে রাখবেন আমার বয়স ষাট পেরিয়েছে। আমার যৌবনে পুলিশের যে দক্ষতা

মিঃ দেববর্মন! আপনি কি ঋতুপর্ণার সঙ্গে যাবেন, যদি উনি টাকা দিতে রাজি হন?

আমি একটু দূরে গাড়িতে অপেক্ষা করলে অসুবিধে কী?

 আপনি যাবেন না প্লিজ। মিসেস মুখার্জির বাড়িতে অপেক্ষা করবেন।

আমি ওই জারজসন্তানের পরোয়া করি না।

 প্লিজ মিঃ দেববর্মন! রঞ্জন চূড়ান্ত মরিয়া। আমার কথা শুনুন। বাকিটা আমার হাতে ছেড়ে দিন।

একটু পরে চন্দ্রনাথ বললেন, ও কে। ঋতুপর্ণার বাড়ি থেকে রিং করে আপনাকে ঠিকানাটা জানিয়ে দেব বরং।

কর্নেল হাসলেন। রঞ্জনের দেওয়া ঠিকানাটা আমি সম্ভবত জানি মিঃ দেববর্মন! রাখছি।

চন্দ্রনাথকে আর কথা বলার সুযোগ দিলেন না কর্নেল। পোশাক বদলে এলেন। প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। বেরুনোর আগে ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ীকে ব্লিং করলেন। পেলেন না। ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টে নরেশ ধরকে পাওয়া গেল। নরেশবাবু কর্নেলের কথা শোনার পর মন্তব্য করলেন, হালা ঘুঘু দ্যাখছে, ফা দ্যাখে নাই।…

বড় রাস্তার মোড়ে ট্যাক্সি পেতে একটু দেরি হয়েছিল। পাঁচটা বেজে গেছে। সারাপথ জ্যাম। পৌঁছোতে এক ঘণ্টা লেগে গেল। সংকীর্ণ রাস্তায় দূরে দূরে ল্যাম্পপোস্ট এবং জোট-বাঁধা-উঁচু-নিচু ফ্ল্যাটবাড়ি। সেই বাড়িটার তলায় সারবদ্ধ দোকান। পানের দোকানে নরেশ ধর পানের অর্ডার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পান, মুখে দিয়েই কর্নেলকে দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ মুখ ঘুরিয়ে আরও একটু চুন চাইলেন। মিঠাপাতা দিবার কইছিলাম না? তোমাগো কারবার!

কর্নেল দোতলায় উঠে কলিংবেলের সুইচ টিপলেন। ঘরের ভেতর থেকে মেয়েলি গলায় কেউ বলল, কে?

আমার নাম কর্নেল নীলাদ্রি সরকার।

দরজা একটু ফাঁক হলো। ব্যাগি শার্ট-জিনস পরা আঠারো-ঊনিশ বছরের একটি শ্যামবর্ণ মেয়ে, ঠোঁটে রঙ, নকল ভুরু, চোখের পাপড়ি গোনা যায়, দ্রুত বলল, দাদা তো ডিমাপুরে চলে গেছে।

কর্নেল দরজা ঠেলে ঢুকে রিভলভার বের করলেন। শুভ্রাংশু সোম ওরফে রঞ্জন রায়! চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো। একটু নড়লেই ঠ্যাং ভেঙে দেব। আমার পেছনে পুলিশ আছে।

মেয়েটি দরজা দিয়ে পালাতে যাচ্ছিল। ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর নরেশ ধরের গাঢ় আলিঙ্গনাবদ্ধ হলো। ফান্দে পড়ছ খুকি! হাঃ হাঃ হাঃ! খুব যে সেন্ট মাখছ দেখি! এইটুকখানি বডিতে কয় গ্যালন সেন্ট ঢালছ? না–না! কান্দে না! অ জগদীশ! মাইয়াডারে লইয়া যাও!

নরেশ ধর ভেতরে ঢুকে আসামির জামার কলার ধরলেন। কর্নেল তার প্যান্টের পকেট হাতড়ে পয়েন্ট আটত্রিশ ক্যালিবারের রিভলভারটা বের করে বললেন, রঙ্গনাথনের উপহার মনে হচ্ছে!

রিভলভারের বুলেটকেস খুলে কর্নেল দেখলেন তিনটে গুলি আছে। বাকি তিনটে যথাক্রমে মধুমিতা, রঙ্গনাথন এবং ডাঃ মুখার্জির মাথার ভেতর ঢুকেছে।

.

 সকালে কর্নেল নীলাদ্রি সরকার কফি খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। রঞ্জনের ছবিটা ওয়ান্টেড শিরোনামে আর ছাপার দরকার হয়নি। তাকে গ্রেফতারের খবর ছাৈট করে ছাপা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর। দৈনিক সত্যসেবক অবশ্য বিশ্বস্তসূত্রে বিখ্যাত রহস্যভেদী কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের কৃতিত্ব উল্লেখ করেছে। গত রাতে ওদের রিপোর্টার ফোন করেছিল। কর্নেল বলেছিলেন, নো কমেন্ট। সেই রিপোর্টারের অভিমানী কণ্ঠস্বর কানে লেগে আছে। জয়ন্তদা হলে স্যার অনেক কমেন্ট করতেন এবং একটা এক্সক্লসিভ স্টোরিও আমরা পেতাম।

জয়ন্ত চৌধুরি ফিরবে জুন মাস। বোকা! বোকা! পুরো গরমটা ইওরোপে কাটিয়ে আসা ওর উচিত।

টেলিফোন বাজল। কর্নেল সাড়া দিলেন।

 কর্নেল সরকার। আমি শান্তশীল বলছি।

 মিঃ দাশগুপ্ত! কাগজে দেখেছেন কি আপনার স্ত্রীর খুনী ধরা পড়েছে?

দেখেছি। কিন্তু যেজন্য আপনাকে ফোন করলাম, বলি। আমাদের কাজের মেয়ে ললিতা এসেছে। খুব কান্নাকাটি করল। আমি ওকে পুলিশের ভয় দেখালাম। চুপ করল তখন। তারপর আমার জেরার জবাবে যা বলল, ভারি অদ্ভুত ব্যাপার! ২৮ মার্চ বিকেল থেকে আমার কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ শুভ্রাংশু সোম এখানে ছিল। ললিতা বাড়ি ফেরে ছটায়। ললিতা বলল, দুজনে খুব তর্কবিতর্ক হচ্ছিল। তাছাড়া শুভ্রাংশু প্রায়ই আমার অ্যাপার্টমেন্টে এসেছে। ললিতা মউয়ের নিষেধ থাকায় আমাকে বলেনি। আই মাস্ট ডু সামথিং!

মিঃ দাশগুপ্ত! রঞ্জন রায় আপনার স্ত্রীর খুনী।

 হ্যাঁ, কাগজে তা তো দেখলাম।

 রঞ্জন রায় এবং শুভ্রাংশু সোম একই লোক।

হোয়াট?

ডঃ জেকিল অ্যান্ড মিঃ হাইড মিঃ দাশগুপ্ত! আপনি মধুমিতা দেবীর মুখে দৈবাৎ শুনেছিলেন, তোমার এই জেকিল অ্যান্ড হাইড গেমটা–যাই হোক, সে আমার হেল্প নিতে গিয়েছিল। আপনার ওপর যাতে সন্দেহ জাগে এবং সে সেফসাইডে থাকে। অনেক কেসে এভাবে অপরাধীরাই সাধু সাজার জন্য আমার দ্বারস্থ হয়।

মাই গড!

 ফিল্মমেকার হিসেবে শুভ্রাংশু রঞ্জন রায় ছদ্মনাম নিয়েছিল। দুরকম পেশার জন্য দুটো নাম। বাই দা বাই, ডাঃ অনির্বাণ মুখার্জির সঙ্গে তার পরিচয় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে। শুভ্রাংশু স্বীকার করেছে, তার মেয়ে টিনাকে দেখার পর সে ডাঃ মুখার্জিকে তার ফিল্মি নামটা জানিয়েছিল। ক্লিকে ফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ দেবে বলেছিল। তাই ডাঃ মুখার্জি শুভ্রাংশুকে রঞ্জন রায় বলেই স্ত্রীর এবং মেয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। টিনা ইজ এ প্রবলেম-চাইল্ড। টিনার ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে তাঁর দুশ্চিন্তা থাকা স্বাভাবিক। তাই ভেবেছিলেন, ফিল্মকেরিয়ার টিনার পক্ষে ভালই হবে।

কিন্তু শুভ্রাংশু ডাঃ মুখার্জিকে মারল কেন?

একমাত্র তিনিই জানতেন শুভ্রাংশুর আর এক নাম রঞ্জন রায়। তাই শুভ্রাং শু যখন জানল, রঞ্জন রায়ই দু-দুটো খুন করেছে বলে পুলিশ তাকে খুঁজছে, তখন ডাঃ মুখার্জির মুখ বন্ধ করতে তাকেও মারল। সে ভেবেছিল, ডেডস ডু নট স্পিক।

.

লাইন কেটে গেল। কর্নেল বুঝলেন, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালসের নবীন চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শান্তশীল দাশগুপ্ত আবার এতক্ষণে ইয়াপ্পি হয়ে গেল। মৃতদের কথা শুনতে তার আর আগ্রহ থাকার কথা নয়। তার কাছে যারা মৃত, তারা মৃতই এবং মৃতেরা কথা বলে না।…