২৯. ঘটোৎকচ কর্ত্তৃক পাণ্ড্য রাজা বধ

মহাকোপে ঘটোৎকচ বায়ুবেগে ধায়।
রথ সৈন্য অশ্বগণে র্চূর্ণ করি যায়।।
লক্ষ লক্ষ পদাতিক করিল সংহার।
দেখি দুর্য্যোধন রাজা করে হাহাকার।।
আজি ঘটোৎকচ বীর করিল সংহার।
মম সৈন্যে বীর নাহি সমান ইহার।।
অভিমন্যু ঘটোৎকচ সম দুইজনা।
অন্য বীর নাহি এই দোঁহের তুলনা।।
ভীমের সমান বীর মহাপরাক্রম।
গদা হাতে করি ধায় যেন কাল সম।।

হেনকালে পাণ্ড্য রাজা রথে চড়ি এল।
দুর্য্যোধন প্রতি তবে ডাকিয়া বলিল।।
কি কারণে মহারাজ চিন্তা কর তুমি।
দেখ ঘটোৎকচ বীরে বিনামিব আমি।।
এত বলি ধনু ধরি যায় নৃপবর।
দেখি দুর্য্যোধন বীর হরিষ অন্তর।।
ঘটোৎকচে দেখি বীর ছাড়ে সিংহনাদ।
আজি তোর ঘুচাইব সমরের সাধ।।
স্থির হয়ে ঘটোৎকচ দেহ মোরে রণ।
এক বাণে পাঠাইব যমের সদন।।

এত শুনি ঘটোৎকচ মহাক্রুদ্ধ হৈল।
হাতে গদা করি বীর সমরে ধাইল।।
সন্ধান পূরিয়া পাণ্ড্য রাজা এড়ে বাণ।
গদায় ঠেকিয়া তাহা হৈল খান খান।।
তবে পাণ্ড্য রাজা কোপে এড়ে পঞ্চবাণ।
পঞ্চবাণে গদা কাটি করে খান খান।।
গদা কাটা গেল বীর অস্ত্র নাহি আয়।
চড় চাপড়েতে বীর করে মহামার।।
মহাকোপে ঘটোৎকচ ভীমের নন্দন।
রথখান সাপটিয়া ধরে সেইক্ষণ।।
এক টানে ফেলে বীর দ্বাদশ যোজন।
হেনমতে পাণ্ড্যরাজা ত্যজিল জীবন।।
এতেক দেখিয়া সবে লাগে চমৎকার।
কৌরবের সেনাগণ গণিল অসার।।

দুর্য্যোধন বলে শুন সর্ব্ব যোদ্ধাগণ।
সবে মেলি ঘটোৎকচে করহ নিধন।।
সর্ব্বনাশ কৈল মম ভীমের নন্দন।
কিরুপেতে জয় হবে আজিকার রণ।।
ইহার বিধান সবে কহ ত আমারে।
ঘটোৎকচ বধ করি কিমত প্রকারে।।
দুর্য্যোধনে কাতর দেখিয়া সর্ব্বজন।
রথে চড়ি ধায় সবে করিবারে রণ।।
প্রাণ উপেক্ষিয়া সবে করয়ে সমর।
নানা অস্ত্র ফেলে ঘটোৎকচের উপর।।
ভূষণ্ডী তোমর শক্তি শেল জাঠাজাঠি।
ত্রিশূল পট্টিশ নানা অস্ত্র কোটি কোটি।।
মুষলের ধারে যেন বৃষ্টি হয় নীর।
হেনমতে অস্ত্র ফেলে সব মহাবীর।।
দেখিয়া কুপিল বীর হিড়িম্বানন্দন।
কোপেতে লোহিত নেত্র সাক্ষাৎ শমন।।
শীঘ্রগতি ধনু করি করিল সন্ধান।
খণ্ড খণ্ড করি কাটে সবাকার বাণ।।
কাটিয়া সকল অস্ত্র ভীমের তনয়।
দশ দশ বাণে বিন্ধে সবার হৃদয়।।
বাণাঘাতে যোদ্ধাগণ হৈল অচেতন।
ভঙ্গ দিয়া পলাইয়া যায় সর্ব্বজন।।
তবে ক্রোধে ঘটোৎকচ যমের সমান।
নিমিষেকে মারিলেক লক্ষ সেনাগণ।।
দেখিয়া ব্যাকুল বড় হৈল দুর্য্যোধন।
রোদন করিয়া ধায় যত যোদ্ধাগণ।।
রথ ছাড়ি হয় ছাড়ি পথে সবে ধায়।
আতঙ্কেতে ভঙ্গ দিয়া পলাইয়া যায়।।
বিষম সমরে সেনা করিল নিধন।
বিমানে বসিয়া দেখে সর্ব্ব দেবগণ।।
শোকাকুল দুর্য্যোধন হইল মূর্চ্ছিত।
জ্ঞানহীন হৈল যেন নাহিক সম্বিত।।