৭. বাংলা উপন্যাসে গণিকা নারীদের ভাষাবৈচিত্র্য

বাংলা উপন্যাসে গণিকা নারীদের ভাষাবৈচিত্র্য

ভাষা মানুষের জন্মসূত্রে পাওয়া৷ সাধারণত মানুষের উচ্চারিত, অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে৷ এর মধ্য দিয়ে সুস্পষ্টভাবে ভাবের আদান-প্রদান ঘটে৷ আর এই ভাষার মূল কথাই হল বৈচিত্র্য৷ একভাষী ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে, বিভিন্ন ধর্মীয় মতাবলম্বী ভাষীর মধ্যে বিভিন্ন জাত বা বর্ণের মধ্যে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভাষার যে ভেদ পরিলক্ষিত হয় তাই ভাষা বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করে৷ নানা কারণে ভাষায় বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়৷ যেমন—রীতির পার্থক্যের জন্য ভাষায় ভেদ দেখা দেয়, অঞ্চলভেদে ভাষা হয় ভিন্ন; সামাজিক শ্রেণীভেদে, নৃগোষ্ঠী, ধর্ম, জাত-পাত, লিঙ্গ, বয়স ইত্যাদির নানা ভেদে ভাষায় রূপভেদ হয়৷ যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সাহিত্যরূপের মধ্যেও এই রূপভেদ সুস্পষ্টরূপে পরিলক্ষিত হতে দেখা যায়৷

সাহিত্যের অন্যান্য প্রকরণের মতোই বাংলা উপন্যাসও বাকপ্রতিমা—অর্থাৎ ভাষার সুষম সমন্বয়েই তার অবয়ব গঠিত৷ এর ভাষার মাধ্যম গদ্যরীতি; ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে যা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে বিষয় ও সময়ের যথার্থ অনুসারী হয়ে উঠেছে৷ উপন্যাস জীবনের কথা বলে—যে জীবন মানুষের বিচিত্র কর্মকাণ্ডে, বিচিত্র অনুভবের ব্যঞ্জনায় ব্যঞ্জিত৷ আর সে কারণেই উপন্যাসের ভাষাও জীবনের বিচিত্র রূপের প্রয়োজনে সর্বার্থসাধক হয়ে ওঠে৷ তাই বাংলা উপন্যাসের জগতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছে চরিত্রগুলির ভাষা৷ বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ঔপন্যাসিকেরা যে পরিবেশে, যে প্রেক্ষাপটে, যে ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তাদের মুখে আরোপ করেছেন ঠিক সেই পরিবেশ উপযোগী ভাষা৷ নানা শ্রেণীর চরিত্রের ভিড় পরিলক্ষিত হয় উপন্যাসের কায়া মধ্যে৷ উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, ধনী, গরিব, চোর, লম্পট বেশ্যা, সতী-সাধ্বী, স্বৈরিণী আরও কত শ্রেণী৷ তন্মধ্যে গণিকা চরিত্রগুলি তাদের কথায়-বার্তায়, হাব-ভাব-কটাক্ষে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে উপন্যাসের ভাষার অঙ্গনে৷ সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে এই চরিত্ররা ঘৃণ্য-পতিত৷ শিক্ষা-সংস্কারবিবর্জিত এই শ্রেণীর নারীরা দেহ-ব্যবসার যন্ত্রণাময় পেশাকে অবলম্বন করে বসবাস করে সমাজের প্রান্তসীমায়৷ নানা শ্রেণীর ইতর-ভদ্র-লম্পট, চোর, বদমাশ, গুণ্ডাগোত্রীয় মানুষেরা হয় এদের দেহের খদ্দের৷ ফলে তাদের বাকভঙ্গিতেও এই শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে সংযোগকারী ইতর-অশ্লীল-স্ল্যাং ভাষার প্রয়োগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে৷ যৌনতা, অশ্লীলতা, নানা ধরনের গালিগালাজবাচক শব্দ এবং পুরুষের কামনা উদ্রেককারী নানারকম বাকভঙ্গি গণিকা সমাজের মুখের ভাষার ক্ষেত্রে নতুন বৈচিত্র্য নিয়ে আসে৷

কিন্তু সমাজে গণিকারা যে ধরনের বাকভঙ্গিই অবলম্বন করুক না কেন সাহিত্য বিশেষ করে বিশ শতকের পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত উপন্যাসে হুবুহু সেই ধরনের চরিত্রপোযোগী ভাষার বাস্তব প্রয়োগ ঘটানো সেই সময়কার ঔপন্যাসিকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি৷ নীতিবাগীশ পাঠকের রক্ত চক্ষুর ভয়ে সেই সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চরিত্রমুখে মার্জিত বাকরীতিই স্থান পেত৷ আর গণিকারা যেহেতু নারী শ্রেণীর প্রতিনিধি তাদের ভাষা বৈশিষ্ট্যে মেয়েলি সুরটিকেই আরোপ করেছেন তাদের সৃষ্টি কর্তারা৷ তারপরেও গণিকাদের ভাষার স্বতন্ত্রতা কিন্তু একেবারে চাপা পড়েনি৷ সেই মার্জিত ভাষার ভিতর থেকেও তাদের নিজস্ব ভাষা বৈশিষ্ট্যকে সহজেই অনুমান করা যায়৷

উপন্যাসের এই বারবনিতারা নিজস্ব ভাষাভঙ্গিমায় তাদের নিজেদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য কখনো অশ্লীল ইতর শব্দের প্রয়োগ করেছে, কখনো খদ্দের ধরার জন্য প্রয়োগ করেছে তাদের নিজস্ব হাব-ভাব ও বাকরীতি৷ কখনো বা বিগত যৌবনের আক্ষেপপূর্ণ অভিমান জানিয়ে প্রেম প্রত্যাশা করেছে প্রেমিকের কাছে আবার কখনো মৃত্যুর কথা তুলে খদ্দের বা প্রেমিককে বশে রাখার চেষ্টা করেছে৷ তাদের প্রণয় সম্ভাষণও সাধারণ প্রেমের থেকে স্বতন্ত্র এবং তা অবশ্যই ব্যবসায়িক৷ কখনো তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে নিজেদের বৃত্তির জন্য স্পর্ধিত গর্ববাণী আবার কখনো সেই দেহ বেচা-কেনাই তাদের জীবনে গুরুভার হয়ে চরম যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট করেছে তাদের, যা চরম হতাশাব্যঞ্জক হয়ে প্রকাশ পেয়েছে৷ এছাড়া গণিকাদের বিভিন্ন কায়দা কানুন, মেয়েলি বাক্যরীতি-ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, শাপ-শাপান্ত, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদির মধ্য দিয়েও তাদের ভাষা আলাদা ব্যঞ্জনা লাভ করেছে৷

গণিকাদের বাচনভঙ্গি সামাজিক ও অর্থনৈতিক মানের উপর অনেকটা নির্ভরশীল৷ একজন পতিতার বাচনভঙ্গি নির্ভর করে সমাজের কোন স্তরে সে অবস্থান করছে; এমন কি তাদের আচার-ব্যবহার এবং বাকরীতি বহুলাংশেই নির্ভর করে তাদের পুরুষ অতিথি-অভ্যাগতদের শ্রেণী সংস্কৃতির উপর৷ সামাজিক মানের ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভাষারও পরিবর্তন হয়৷ তাদের ভাষায় ধ্বনিবৈষম্য নির্ভর করে জন্মস্থানের ভাষা, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বহু কিছুর উপর৷

গণিকাদের ভাষায় বহুল পরিমানে ইতর বা অশ্লীল শব্দের ব্যবহার রয়েছে৷ তাদের বহু খদ্দেরই অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত৷ যদিও গণিকারা অপরাধী নয় তথাপি অপরাধ জগতের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগ থাকাটাও বিচিত্র নয় তাদের ক্ষেত্রে৷ অনেক সময় দেখা যায় অপরাধের অকুস্থলে রয়েছে এই শ্রেণীর নারীদের কেউ৷ এছাড়া কোনো অপরাধী কোনো অপরাধ কার্য সম্পন্ন করে আশ্রয় নিতে পারে তাদের ঘরে৷ যেখানে নেশা ভাঙ করে স্ত্রীলোকের সংস্পর্শে মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়৷ ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’য় হরিদাসের জবানিতে এমন দৃশ্যেরই বর্ণনা রয়েছে৷ খুনি জয়হরি বড়াল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা একে একে গ্রেপ্তার হয়েছে বিভিন্ন বেশ্যালয় থেকে৷ যেমন কৃষ্ণনগরের এক বেশ্যালয় থেকে ধরা পড়ে ঘনশ্যাম বিশ্বাস৷ অন্য আরেক বেশ্যাপল্লী থেকে জয়হরি৷ সমাজের এই বাস্তবদিকগুলিই সাহিত্যে স্থায়ীরূপ পায়৷ অর্থাৎ গণিকাদের সঙ্গে অপরাধ জগত বা সেই জগতের ভাষাও বিশেষভাবে সম্পৃক্ত বলা যেতে পারে৷

বাররামারা যে ইতর বা অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে তার পিছনে নানা সামাজিক কারণের সন্ধান করেছেন ভাষাতাত্ত্বিকেরা৷ তার আগে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন ইতরশব্দ বা অশ্লীল শব্দ কি? ইতর বা অশ্লীল শব্দ সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়৷ ইংরেজিতে যাকে Slang বলে তার সাধারণত দুটি অর্থ৷ প্রথমটি সমাজে বিশেষ কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত অমান্য বা অশিষ্ট ভাষা৷ যেমন ড্রাইভার, মাঝিমাল্লা, রাজমিস্ত্রী, পতিতা, রিক্সাওয়ালা ইত্যাদির গোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ শব্দ ব্যবহৃত হয় সেগুলিও একধরনের স্ল্যাং৷ এই স্ল্যাং অমান্য হলেও ততটা অশ্লীল নয়৷ এগুলিকে অশিষ্ট পেশাগত বুলি’ও বলা হয়৷ দ্বিতীয়টি পথে-ঘাটে আড্ডায় যে অশিষ্ট বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকেও স্ল্যাং বলা হয়৷ ইংরেজি ‘Slang’ শব্দটিকে বাংলায় কি বলা হবে তা নিয়ে নানা ভাষাবিদ নানা কথা বলেছেন৷ সুকুমার সেন বলেছেন ‘ইতর শব্দ’, পবিত্র সরকার বলেছেন ‘অপভাষা’, ‘অপশব্দ’, কুমারেশ ঘোষ বলেছেন ‘জনবুলি’, সুভাষ ভট্টাচার্য বলেছেন ‘অশিষ্ট পেশাগত বুলি’ এবং ‘অশিষ্ট বুলি’৷ আবার সত্রাজিৎ গোস্বামী একে বলেছেন ‘অকথ্যভাষা’৷ ‘‘প্রকৃতপক্ষে স্ল্যাং হল কথ্যবাকরীতির (Colloquialism) অব্যবহিত নীচের বাকরীতি৷ বিভিন্ন পেশাগত বা সামাজিক গোষ্ঠীর ভাষা যখন গোষ্ঠীর সীমা অতিক্রম করে ব্যাপকতর গ্রাহ্যতা লাভ করে অথচ কথ্যভাষায় ব্যবহৃত হবার উপযুক্ত শিষ্টতা অর্জন করে না, তখন তা স্ল্যাং হিসেবে গণ্য হতে পারে৷’’ সুকুমার সেন স্ল্যাং এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘ইতর শব্দ’-এর সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন—‘‘যে শব্দ বা পদ ভদ্রলোকের কথ্যভাষায় ও লেখ্য ভাষায় প্রয়োগ হয় না এবং যাহার উৎপত্তি কোন ব্যক্তিবিশেষের অথবা দলবিশেষের হীন ব্যবহার হইতে তাহাই ইতর শব্দ (Slang)৷’’ ইতর শব্দ কালক্রমে ভদ্রভাষায় স্থান পেতে পারে আবার বিলুপ্ত হতে পারে৷

এই ইতর শব্দের ব্যবহার মানুষ করে অনেকটা সচেতনভাবেই এবং এর পেছনে কাজ করে সামাজিক প্রথা বা সমাজ-সংস্কারের বিরুদ্ধে এক প্রকার বিরোধী মনোভাব৷ যেখানে মনের আবেগ, ক্রোধ, যন্ত্রণাকে আরও বেশি জ্বালাময় করে প্রকাশ করা যায়৷ ইতর শব্দের কিছু কিছু লক্ষণ নির্ধারণ করা যায়৷ যেমন—

১. এটি মান্যভাষা বহির্ভূত৷

২. এই শব্দ অনাচারিক (Informal) পরিবেশে ব্যবহৃত হয়৷

৩. অশ্লীল বা অশালীন না হলেও তথাকথিত ভদ্র রুচি বিরোধী৷

৪. শব্দগুলি স্থায়ী নয়৷ কখনো তা লুপ্ত হতে পারে বা কখনো মান্য ভাষার সঙ্গে মিশে যেতে পারে৷

৫. নানারকম শব্দের (বিদেশী, মুণ্ডমাল, খণ্ডিত) সমবায়ে গঠিত হতে পারে এই শব্দ৷

বিভিন্ন কারণে গণিকারা এই ইতর শব্দের ব্যবহার করে থাকে৷ যেমন—

হইহুল্লোড় বা স্ফূর্তি গণিকালয়ের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার৷ আর এক্ষেত্রে ইতর শব্দ প্রয়োগ বেশ জমকালো হয়৷

কিছু কিছু ইতর শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বারবনিতাদের স্বতন্ত্রতা বা নিজস্বতা ফুটে উঠে৷ যেমন—‘গণদেবতা’-য় পাতুর সঙ্গে কলহ প্রসঙ্গে দুর্গাকে নালিশ করে পাতুর মা যখন বলে—‘‘শুনলি দুগগা, বচন শুনলি ‘খালভরার’?’’ বাক্যমধ্যে এই ইতর শব্দ প্রয়োগ তাকে স্বতন্ত্রতা দান করে৷ আবার এই উপন্যাসেই দেবু দুর্গার খোঁজ করতে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলে দুর্গার মায়ের মুখে ইতর শব্দের ব্যবহার দেখা যায়৷ যেমন—‘‘সে নচ্ছারীর কথা আর বলো না বাবা!’’

‘জঙ্গম’ উপন্যাসে শঙ্করকে মুক্তো ঘরের মধ্যে শুইয়ে রেখে পাশের ঘরের জানালার ফুটো দিয়ে নির্নিমেষ নয়নে তাকে দেখতে থাকলে টিয়া তার খোঁপায় টান মেরে খোঁপা খুলে দেয়৷ মুক্তো পুনরায় তা বেঁধে দিতে বললে টিয়া বলে—‘‘এমনিতেই গলে পড়েছে, কিছু করতে হবে না, যা৷’’ এই ‘গলে পড়া’ শব্দটি বিশেষ গভীর অনুরাগের প্রকাশক ইতর শব্দবিশেষ৷

আঙ্গুরের ঘরে বড়লোক বাবু বন্ধু সমভিব্যাহারে এলে নাচের মজলিশ বসে৷ সেই নাচের মজলিশে অন্ধকার বারান্দার কোণে বসে কালোজামের সহায়তায় শঙ্কর আড়াল থেকে দেখতে থাকে মুক্তোদের নাচ৷ বাবুদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রয়োজন হয়েছে দশ-বারোজন নর্তকীর৷ শঙ্কর কিছুক্ষণ সেই দৃশ্য দেখার পর পুনরায় কালোজাম তার সামনে উপস্থিত হয়৷ তাকে মুক্তোর ঘরে বসতে বলে কালোজাম বলে—‘‘আমি যাই, আমার লোক এসেছে৷’’

এই ‘লোক আসা’ শব্দটি গণিকাদের একান্তই নিজস্ব৷ ‘লোক’ শব্দটি ‘খদ্দের’ অর্থে ব্যবহৃত৷

বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে বা চাঁচাছোলা ধরনের কথা বলার জন্য গণিকাদের ভাষা ব্যবহারে ইতর শব্দ বিশেষ মাত্রা গ্রহণ করে৷ যেমন—‘অসীম’-এ সরস্বতী বৈষ্ণবীর সঙ্গে অনিন্দ্যসুন্দরী মনিয়াকে দেখে নবীন নরসুন্দর বিস্ময়বিস্ফারিত নেত্রে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে সরস্বতী তার স্বভাবজ সুস্পষ্ট বাক্যভঙ্গিতে তাকে বিদ্ধ করে—‘‘আ মর মিনসে, মেয়েটাকে যেন হাঁ করিয়া গিলিতেছে,—একটু লজ্জাও করে না?’’ এখানে ‘মিনসে’, ‘হাঁ করিয়া গিলিতেছে’ ইত্যাদি ইতর শব্দ৷

দুর্গার প্রণয়ী দুর্গার ভাই পাতুকে অপমানিত করে নারীসঙ্গ উপভোগ করতে আবার তাদের গৃহেই যখন উপস্থিত হয় তখন শ্রীহরির তাদের বাড়ি আসা-যাওয়া সম্পর্কে পাতু বিরুদ্ধাচারণ করলে ‘গণদেবতা’-র স্বৈরিণী দুর্গার মুখে উচ্চারিত হয় তার পেশা সম্পর্কিত চাঁচাছোলা বক্তব্য—‘‘ঘর আমার, আমি নিজের রোজগারে করেছি, আমার খুশি যার উপর হবে—সে-ই আমার বাড়ি আসবে৷ তোর কি? তাতে তোর কি? তু আমাকে খেতে দিস, না দিবি? আপন পরিবারকে সামলাস তু৷’’

তারপর ছিরুপালের দ্বারা তাদের মুচি পাড়াটা ধূলিসাৎ হয়ে যায়৷ ঘরপুড়ে যাওয়ার দুঃখে এবং সমস্ত রাত্রি কষ্টভোগের ফলে স্বামীর শাসনের প্রতিবাদ করে পাতুর স্ত্রীর কন্ঠে ধ্বনিত হয় প্রতিবাদী স্বর৷—‘‘ক্যানে, ক্যানে আমার হাড় ভেঙে দিবে শুনি?… নিজের ছেনাল বোনকে কিছু বলবার ক্ষমতা নাই—’’ এখানে পাতুর বৌ-এর বক্তব্যও ভাষার মান্যদিককে অনুসরণ করেনি৷

বিভূতিভূষণের ‘অথৈ জল’-এ মাসির বাক্যপীড়নে অতিষ্ট ডাক্তার শশাঙ্ক মাসি সম্পর্কে আশঙ্কিত হলে পান্না তার পৌরুষকে বিদ্ধ করে ধমক দিয়ে বলে—‘‘আপনি না পুরুষমানুষ? ভয় কিসের৷ আমি আছি৷’’১০ এই স্বচ্ছ খোঁচার মধ্যেও গণিকার আত্মপ্রত্যয়ের দিকটি পরিস্ফুট৷

বেশ্যা ও খদ্দেরদের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে বোঝাতে নানা ধরনের ইতর শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে উপন্যাসের গণিকাচরিত্রগুলির মুখে৷ এর মধ্য দিয়ে তাদের নিজস্ব স্বরূপ খদ্দেরকে জানিয়ে দিতে পারে অত্যন্ত সহজভাবে৷ যেমন—

ডাক্তার শশাঙ্ক খেমটাওয়ালি পান্নার মোহে আবিষ্ট হয়ে তার সঙ্গে তারই বাসাবাড়িতে উপস্থিত হলে তার বাড়িউলি মাসির মুখে উচ্চারিত হয় এমন বাকভঙ্গি যা গণিকা ও খদ্দেরের সম্পর্ককে সুস্পষ্টরূপে চিহ্নিত করে৷—‘‘একটা কথা বলি৷ স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই৷ এ ঘরে তুমি থাকতে পারবে না৷ ওকে রোজগার করতে হবে, ব্যবসা চালাতে হবে৷ ওর এখানে লোক যায় আসে, তারা পয়সা দেয়৷ তুমি ঘরে থাকলে তারা আসবে না৷’’১১

পরে আবার তাকে একা পেয়ে মাসি বলে—‘‘পান্না তোমার ঘরের বৌ নাকি যে, যা বলবে তাই করতে হবে তাকে? ওর কেউ নেই? অত দরদ যদি থাকে পান্নার ওপর, তবে মাসে ষাট টাকা করে দিয়ে ওকে বাঁধা রাখো৷ ওর গহনা দেও, সব ভার নাও—তবে ত তোমার সঙ্গে যেখানে খুশি যাবে৷ ফেলো কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর?’’১২

গণিকার সঙ্গে খদ্দেরের সম্পর্ক যে সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক এবং সেখানে যে কোনো রকমের প্রথাবদ্ধতা নেই তাও মাসির এই বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়েছে৷ পান্নার বাড়িউলি মাসি সেখানেই থেমে যায়নি৷ প্রবল বাক্যবাণে বিদ্ধ করে পান্নার সঙ্গ ছাড়াতে ডাক্তারকে বলেছে—‘‘তুমি বাপু কি রকম ভদ্দর নোক? বয়েস দেখে মনে হয় নিতান্ত তুমি কচি খোকাটি তো নও—এখানে এলেই পয়সা খরচ করতে হয় বলি জানো সে কথা? বলি এনেচ কত টাকা সঙ্গে করে? ফতুর হয়ে যাবে বলে দিচ্চি৷’’১৩

যেখানে অর্থ, যেখানে রোজগার সেখানেই গণিকাদের প্রেম—অর্থ-প্রতিপত্তি শেষ হয়ে গেলে তাদের প্রেমেও ভাঁটা পড়ে৷ বারবনিতাদের ভাষা ব্যবহারে এমন দিকেরই উদ্ঘাটন করেছেন দুর্গাচরণ রায় তাঁর ‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ৷ দেবতারা বর্ধমানে এলে সেখানে দেখে গণিকা তোষণে সর্বস্বান্ত হওয়া এক বাবুর তারই রক্ষিতার দ্বারা অপদস্ত হওয়ার চিত্র৷ রক্ষিতা তার হৃতসর্বস্ব বাবুকে ইতর ভাষায় বলে—‘‘তোর আর আছে কি? নীলামে যথাসর্ব্বস্ব বিক্রী ক’রে নিয়েছি৷ তুই দূর হ’’১৪

প্রায় একই ধরনের বাক্যভঙ্গির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘শুভদা’-র কাত্যায়নীর মুখে—‘‘আমাদের যেখানে পেট ভরে সেইখানে ভালবাসা৷ এ কি তোমার ঘরের স্ত্রী যে গলায় ছুরি দিলেও ভালবাসতে হবে? তোমা ছাড়া কি আমার গতি নেই? যেখানে টাকা সেইখানে আমার যত্ন, সেইখানে আমার ভালবাসা৷ যাও, বাড়ি যাও—এত রাত্তিরে বিরক্ত ক’রো না৷’’১৫

 ‘জঙ্গম’ উপন্যাসে পান্নার কথাতেও প্রথাবদ্ধহীন সম্পর্কের বাইরে ব্যবসায়িক সম্পর্কের একটা দিক ফুটে উঠেছে তাদের নিজস্ব ভাষাভঙ্গিমায়৷ শঙ্কর মুক্তোর পতিতাপল্লীর নির্দিষ্ট কক্ষে বসে যখন জানতে চায় যে সে তার কোনো অসুবিধা করছে কি না তখন অনায়াসে মুক্তো তাকে জানায়—‘‘কিছুমাত্র না৷ ঘন্টা পিছু দু-টাকা করে লাগবে, এই আমার রেট৷’’১৬ মুক্তোর এই রেট তার শরীর বিক্রির নির্ধারিত মূল্য৷ তবুও সে শঙ্করের কাছে পয়সা নিতে পারে না কারণ শঙ্কর তার কাছে খদ্দের নয় অতিথি৷ কিন্তু সে জানে একদিন না একদিন শঙ্করকে তার কাছে খদ্দের হতেই হবে কারণ তার মতে—‘‘রোজগার করতে বসেছি, দানছত্র তো খুলিনি৷’’১৭

অপমান, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বা খোঁটা দিতে এমন বিশেষ শব্দ ব্যবহার দেখা যায় যা তাদের ভাষাগত স্বাতন্ত্র্যকে সহজেই চিনিয়ে দেয়৷ যেমন—

বৈদ্যবাটীতে এক কালীমন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেবগণ দেখেন একদল বেশ্যার হাতে এক যুবকের অপদস্ত হওয়ার চিত্র৷ সেখানে মস্তকহীন পাঁঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে দেখে তার কাছে পাঁঠার অর্ধেকাংশ দাবি করে দেহপসারিণীরা৷ যুবক তা দিতে অস্বীকৃত হলে তাদের মুখে উচ্চারিত অশিষ্ট ভাষা—‘‘দূর গুয়োটা, একটা পাঁটা দিতে পারলিনি?’’১৮

শ্রীরামপুরে বামী নাম্নী রক্ষিতা তার পোষক বাবুকে তিরস্কার করে বলে—‘‘পোড়ারমুখো! কাল রাত্রে ছিলি কোথায়? আমি তোর জন্যে রুটি আর বেগুনভাজা ভেজে এক বোতল মদ এনে সমস্ত রাত্রি ব’সে ব’সে কাটিয়েছি৷’’১৯ বারাঙ্গনা কথিত এই বাক্যবন্ধ শিষ্টভাষার সীমাকে লঙ্ঘন করেছে৷

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘করুণা’ উপন্যাসে গোবিন্দগুপ্ত মহারাজাধিরাজ কুমারগুপ্তের গণিকাকন্যার পাণিগ্রহণ পণ্ড করে দিতে নগরনটী ইন্দ্রলেখার বাসভবনে উপস্থিত হলে ইন্দ্রলেখা তাকে চরম অপমান করে ইতর ভাষায় বলে—‘‘তুই কে? কোন সাহসে, বিনা অনুমতিতে আমার গৃহে প্রবেশ করিয়াছিস? জানিস, এখনই তোকে কুকুর দিয়া খাওয়াইতে পারি?’’২০

ইন্দ্রলেখা তার সখি মদনিকা পরবর্তীকালে কন্যার দৌলতে আর্যপট্টের শাসনকর্ত্রী হয়ে বসে৷ সেই সুযোগের সৎব্যবহার তারা করতে থাকে নিজেদের বিচিত্র খেয়াল-খুশি চরিতার্থ করে৷ সুরাসক্ত মদনিকা রাজপথ অবরুদ্ধ করে পুরনো পানওয়ালা বন্ধুর সঙ্গে রহস্যালাপে রত হলে সেই পথরুদ্ধ করা নিয়ে মহানায়ক গুল্মাধিকৃত দেবধরের সঙ্গে বচসা বাঁধে৷ সেখানে মদনিকার ইতর বাক্য ব্যবহার তার রুচিবোধহীন মন মানসিকতাকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে—‘‘তুই কি মনে ভাবিয়াছিস? তোর কি প্রাণের ভয় নাই? জানিস তোকে কুক্কুর দিয়া খাওয়াইতে পারি?’’২১ দেবধর তাকে গণিকা সম্বোধন করে সাবধান হতে বললে সে আরও উগ্রস্বরে জবাব দেয়—‘‘তোর মাতা বেশ্যা, পিতামহী বেশ্যা, প্রপিতামহী বেশ্যা৷’’২২ বারবনিতা ইন্দ্রলেখার সখি মদনিকাও একজন পণ্যাঙ্গনা৷ তাদের মুখের কথায় বেশ্যাসুলভ ভঙ্গিটিই প্রবল৷

সঙ্ঘস্থবির হরিবল ইন্দ্রলেখার সঙ্গে রসবাক্য জুড়ে দিলে সেই নগরনটীর কন্ঠে ধ্বনিত হয় গণিকাসুলভ প্রশ্রয় তিরস্কার—‘‘মরণ আর কি, বুড়ার রকম দেখ! বলি যম তোমায় ভুলিয়াছে কেন?’’২৩

শরৎচন্দ্রের ‘শুভদা’-য় দেহজীবী কাত্যায়নী হারাণচন্দ্রকে খোঁটা দিয়ে বলে—‘‘যখন রেখেছিলে তখন টাকা দিয়েছিলে, তা বলে তোমার দুঃসময়ে কি সে সব ফিরিয়ে দেব?’’২৪ হারাণচন্দ্র তাকে ভালোবাসার কথা শোনালে তেলেবগুনে জ্বলে উঠে সে তাকে অপমান করতে বলে—‘‘ছাই ভালবাসা৷ মুখে আগুন অমন ভালবাসার৷ আজ তিনমাস থেকে একটি পয়সা দিয়েচ কি যে ভালোবাসব?’’২৫

‘অথৈ জল’-এ পান্নার বাড়িউলি মাসি ডাক্তারকে পান্নার পিছনে টাকা না দিয়ে ঘোরার জন্য খোঁচা দিয়ে বলে—‘‘তুমি বাপু কি রকম ভদ্দর নোক?’’২৬ তারপর তাকে সাবধান করে দিতে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে বলে—‘‘শহুরে বাবুদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে টাকা খরচ করতে গিয়ে একেবারে ফতুর হয়ে যাবে, এখনো ভালয় ভালয় বাড়ি চলে যাও—৷’’২৭ ‘ভদ্দর নোক’, ‘টেক্কা’, ‘ফতুর’ শব্দগুলি এই বারনারীদের মুখে সহজেই মানিয়ে যায়৷

পান্নার সারল্য ও ভালোবাসায় এবং রোজগারে শশাঙ্ক নির্বিঘ্নে জীবন কাটাতে থাকলে তাকে ব্যঙ্গ করে পান্নার খেমটাদলের সঙ্গী নীলিমা বলেছে—‘‘পান্নাকে গেঁথেচেন ভাল মাছ’’২৮—অর্থাৎ সুন্দরী তন্বী মোহময়ী পান্না নিজের লাস্যভঙ্গি দিয়ে খেমটাদলের প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছিল৷ তার উপার্জনও প্রচুর৷ সে সরল মনে ভালোবাসার স্রোতে ভেসে মধ্যবয়সি ডাক্তারের ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছে উল্টো কিছু প্রত্যাশা না করে৷ আর এই উদ্দেশ্যেই নীলিমার ব্যঙ্গোক্তি৷

পুত্রবধুর দেহবিক্রির টাকার অংশ না পেয়ে দুর্গার মা যখন তা নিয়ে মেয়ের কাছে আক্ষেপ করে তখন দুর্গা শরীর বিক্রির পয়সা তাকে ছুঁতে নিষেধ করলে তার মায়ের কন্ঠে ধ্বনিত হয় চরম ব্যঙ্গোক্তি—‘‘ওলো সীতের বেটি সাবিত্তিরি আমার৷’’২৯ মায়ের এই ব্যঙ্গের লক্ষ্য দুর্গা৷ সে নিজেও দেহজীবী এবং দেহজীবী হয়েও অন্যের দেহজীবিকার অর্থ স্পর্শ করতে কুন্ঠা প্রকাশ করলে তার মা উক্ত মন্তব্যটি করে৷

বারাঙ্গনা মুক্তোর সহবাসী টিয়া শঙ্করের প্রেম নিয়ে ঠাট্টা-মস্করা করলে মুক্তো মুচকি হেসে তার জবাব দেয়—‘‘সবাই তো আর তোর মালবাবু নয়৷’’৩০ এই উক্তির মধ্যে প্রচ্ছন্ন আছে ব্যঙ্গরস৷ মালবাবু অর্থাৎ যে প্রভূত সম্পদের অধিকারী এবং রক্ষিতাকেও প্রচুর অর্থ দেয়৷ মুক্তো এই ক্ষুদ্র বাক্যের মধ্য দিয়ে গণিকার ভাষাগত স্বতন্ত্রতাকে যেমন ধরে রেখেছে তেমনি শঙ্কর ও মালবাবুর তুলনার দিকটিকেও প্রতিভাত করেছে৷

বিরক্তি, ক্ষোভ, ধিক্কার বা অসন্তোষ প্রকাশের মাধ্যমরূপেও গণিকারা বহুল ইতর শব্দের ব্যবহার করে৷ ‘অসীম’ উপন্যাসে মনিয়া কসবিবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী জীবন শুরু করলে তার মা মেয়ের সেই মানসিক পরিবর্তনে ভীত হয়ে তাকে স্ববৃত্তিতে ফেরানোর জন্য জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হয়৷ জ্যোতিষী মেয়ের কিছু হয় নি বলে আশ্বস্ত করে তাকে ঘরে ফিরে যেতে বললে চরম বিরক্তিতে মতিয়া তাকে বলে—‘‘আরে পাগল, ঘরেই যদি ফিরিয়া যাইবে, তবে তোর নিকট মরিতে আসিয়াছি কেন?’’৩১ আর এ বিষয়ে গণক যখন তাকে বলে যে তার কন্যা একজন হিন্দুর প্রেমে পড়ে সন্ন্যাস জীবন শুরু করেছে তখন সেই না দেখা হিন্দু ব্যক্তির প্রতি তার সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিয়ে সে বলে—‘‘তোবা, তোবা! তাহার মুখে হাজার ঝাড়ু মারি৷’’৩২

অসীম এবং তার হিতার্থী দুর্গার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে সরস্বতী তাদের নতুন ঠিকানায় উপস্থিত হলে তার মুখে ‘নাম’ (কীর্তন) শুনতে চায় দুর্গা৷ সরস্বতীর উদ্দেশ্য কীর্তন নয় গল্পগুজব করে ভেতরের সত্য উদ্ঘাটন৷ তাই দুর্গার সেই প্রস্তাবকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য চরম বিরক্তির সঙ্গে বলে ওঠে—‘‘রাধেকৃষ্ণ, রাধেকৃষ্ণ, এমন পোড়ার দেশে মানুষ আসে! একটা ঠাকুরবাড়ি নাই, আখড়া নাই, পোড়া কপাল দেশের! খেংরা মারি, খেংরা মারি৷’’৩৩

সংঘস্থবির হরিবল ইন্দ্রলেখাকে তার মঠে রাত্রিবাস করতে বললে ইন্দ্রলেখা তাকে মৃদু তিরস্কার করে বলেছে—‘‘মরণ আর কি, যৌবন ত অনেক দিন গিয়াছে, মহাবিহার-স্বামীর পাপকার্যে মতি এখনও যায় নাই?’’৩৪ এবং এ নিয়ে বাদানুবাদ দীর্ঘ হলে সেই বিগতযৌবনা বারনারীর কন্ঠে ধ্বনিত হয় ‘‘তুমি মর, তোমার মুখে আগুন৷’’৩৫—এই প্রণয়-তিরস্কার৷

শ্রীহরির সঙ্গে ‘ফষ্টিনষ্টি’ করার জন্য পাতু ও দুর্গার মধ্যে বিরোধ হলে শ্রীহরি পাতুকে নির্মম প্রহার করে৷ ভাইয়ের ক্ষতবিক্ষত শরীর দেখে দুর্গার হৃদয় দ্রবীভূত হলে তা পাতুর স্ত্রীর আর সহ্য হয় না৷ সে জানে দুর্গার জন্যই তার স্বামীর এই অবস্থা৷ তাই তার স্বভাবজ ভঙ্গিতে স্বৈরিণী সেই নারী মনের সমস্ত ক্ষোভ ও অসন্তোষকে উগরে দেয় ইতরভাষায়—‘‘হারামজাদী আবার ঢং করে ভাইয়ের দুঃখে ঘটা করে কানতে বসেছে গো! ওগো আমি কি করব গো!’’৩৬

মুচিপাড়া আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেলে সেখানে গরু-ছাগল ক্রয় করার জন্য নানা ধরনের পাইকারদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়৷ কারণ বিপর্যস্ত মানুষেরা পুনরায় গৃহনির্মাণের জন্য গবাদি পশু বিক্রি করতে বাধ্য হয়৷ দুর্গার বলদী বাছুরের জন্য হামদু শেখ বহুদিন থেকেই লালায়িত৷ সেই দুর্দিনে সে গোপনে তার মাকে চার আনা বকশিশ দিয়ে দুর্গাকে বাছুর বিক্রি করানোর ভার দেয়৷ সেই অনুসারে মা মেয়েকে বাছুর বিক্রি করে গৃহ নির্মাণ করার কথা বললে দুর্গা অস্বীকার করে৷ মা টাকার সংস্থান কীভাবে হবে জানতে চাইলে দুর্গা ইতর শব্দ প্রয়োগ করে বলে—‘‘তোর বাবা টাকা দেবে, বুঝলি হারামজাদী?’’৩৭

ছেলে এবং মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে দুর্গার মা কাঁদতে বসলে দুর্গা রূঢ়স্বরে বলে—‘‘বলি, রান্নাবান্না করবি, না প্যান প্যান করে কাঁদবি? পিণ্ডি গিলতে হবে না?’’৩৮

‘পঞ্চগ্রাম’-এ দুর্গার খোঁজে আসা দেবুকে মেয়ের সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করে দুর্গার মা বলে—‘‘কাল আবার কামার মাগীর ঘরে শুতে যায় নি৷ উঠেই সেই ভাবী-সাবির লোকের বাড়ীই যেয়েছে৷’’৩৯

বনফুলের ‘বৈতরণীর তীরে’ উপন্যাসের বারবনিতা বিন্দি দেহজীবীকার মর্মপীড়া সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল৷ কিন্তু মৃত্যুর পরেও তার শরীরলোভী পুরুষেরা তার পিছু ছাড়েনি৷ মৃত্যুলোকে উত্তীর্ণ হয়েও সে তখন তার দেহভোগকারী পুরুষের একজনকে দেখতে পায় তখন চরম বিরক্তির সঙ্গে বলে—‘‘এখানেও মুখপোড়ারা সঙ্গ ছাড়বে না—’’৪০ বিন্দি বা বিনোদিনী তার পুরুষ খদ্দেরদের বিশেষিত করছে ‘মুখপোড়া’ বিশেষণে৷

মাসির কথার খোঁচায় আহত হয়ে ‘অথৈ জল’-এর ডাক্তার পান্নাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলে পান্না ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে—‘‘কেন? কেন? ওই বুড়ীর কথায়! তুমি—’’৪১ পান্না রেগে গিয়ে মাসির পরিবর্তে ‘বুড়ী’ শব্দ ব্যবহার করছে৷ এক্ষেত্রে শব্দটি অ-শিষ্ট৷

‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ বেশ্যা ও মাতাল লম্পটদ্বয়ের কথোপকথনে উঠে এসেছে নানা ইতর শব্দ৷ তাদের ভালোবাসায় জ্বালায় অস্থির হয়ে বেশ্যা বলে—‘‘ওরে গুয়োটা! থাম তোদের জ্বালাতেই প্রেতশিলায় যাচ্চি৷’’৪২ এখানে বারবধূ তার প্রণয়ীকে সম্বোধন করছে ‘গুয়োটা’ বলে৷

গণিকাদের মুখে উচ্চারিত হয় বিভিন্ন গালিগালাজবাচক ইতর শব্দ৷ সাধারণ নারী চরিত্রের মুখে যে সংলাপ অশোভন বা বেমানান তা অনায়াসেই গণিকার মুখে আরোপ করা যায়৷ উনিশ-বিশ শতকের বহু উপন্যাসে গণিকাদের মুখে এধরনের শব্দ ব্যবহার দেখিয়েছেন রচনাকারেরা যা তাদের বিশেষভাবে বিশেষায়িত করেছে৷ ‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ তাদের প্রেমিক খদ্দেরদের গালিগালাজ করেছে ‘গুয়োটা’, ‘মিন্সে’, ‘পোড়ারমুখো ইত্যাদি নানা বিশেষণে৷

সাধারণত গালিগালাজের ক্ষেত্রে উদ্দীষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষায়িত করেই নানা শব্দ বাণ বর্ষিত হয় এবং তার বেশিরভাগই যে শিষ্টভাষা নয় তার সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই৷

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘করুণা’ উপন্যাসে ব্যবহৃত হয়েছে নানা ইতর শব্দ, ঝগড়ার বা অপমান করার নানা ইতর ইঙ্গিত৷ যেমন—‘‘সম্মার্জনী (ঝাড়ু) নিয়ে তেড়ে যাওয়া, নিষ্ঠীবন (থুথু) ছিটানো ইত্যাদি৷ সেখানেও মুখপোড়া, কুকুর দিয়ে খাওয়ানো, গোবিন্দগুপ্তকে ‘বুড়া শেয়াল’ নামে বিশেষায়িত করা ইত্যাদি বহুল শব্দ রয়েছে৷

‘অসীম’ উপন্যাসে ভিখারিনির ছদ্মবেশী মনিয়া অসীমের উদ্দেশ্যে গুপ্ত সংকেত দিলেও যখন সে তা বুঝতে পারে না তখন তাকে বোঝানোর জন্য সে আশ্রয় নেয় গালিগালাজের৷ সে অসীমের উদ্দেশ্যে বলে—‘‘কাফের, হারামখোর, হারামজাদ, নিমকহারাম, আমি কি শূকর যে পথের ময়লা তুলিয়া খাইব? তুই হারাম তোর রুটীও হারাম, তুই নরকে গিয়া তোর হারাম খা৷’’৪৩

‘গণদেবতা’-য় গ্রামে আগুন লাগার পরদিন পাতু যখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন পাতুর মা ছেলে সেই সিদ্ধান্তে বিহ্বল হয়ে ছেলে উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করে শাপ-শাপান্ত করতে থাকে—‘‘মরুক, মরুক ড্যাকরা—এই অঘ্রাণের শীতে সান্নিপাতিকে মরুক!’’৪৪ দুর্গার মায়ের এই বচনে উঠে এসেছে নানা অমান্য শব্দ৷

‘পঞ্চগ্রাম’-এ শ্রীহরির লাঠিয়াল কালু যৌন আবেদন নিয়ে দেহপোজীবিনী দুর্গার হাত ধরে টানলে দুর্গা তাকে সশব্দে চড় বসিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলে—‘‘আমার হাত ধরে টানিস, বদমাস—পাজী!’’৪৫

গ্রামে বানের জল ঢোকা শুরু করলে সকলে যখন আপন-আপন জিনিসপত্র সামলাতে ব্যস্ত তখন দুর্গা পরম আলস্যে বুকের নীচে বালিশ দিয়ে জানালা দিয়ে বান দেখতে থাকে এবং কন্ঠে গুনগুন গানের কলি৷ তাতে তার মা রেগে গিয়ে গালি দিতে শুরু করে৷ মেয়েকে সাবধান করে সে বলে—‘‘যা-না তু দীঘির পাড়ে৷ মরণের ভয়েই গেলি হারামজাদী!’’৪৬

‘শুভদা’-য় হারাণচন্দ্র কাত্যায়নীর কাছে টাকা চাইলে রাগে-বিরক্তিতে সে বলে উঠে—‘‘মিছে ভ্যানভ্যান করচ কেন?’’৪৭

‘রামেশ্বরের অদৃষ্ট’-তে বহুদিন সাজা কাটিয়ে ফিরে আসা রামেশ্বর তার স্ত্রীর বয়সি এক বারাঙ্গনাকে দেখে স্ত্রী ভেবে ছেলের খোঁজ চাইলে গণিকা তার স্বভাবজ ভঙ্গিতে বলে—‘‘মরণ আর কি! তোমার দড়ি কলসী জোটে না?’’৪৮ তারপরও রামেশ্বর যখন বার বার ছেলের সন্ধান চাইতে থাকে তখন রাগে বিরক্তিতে অশিষ্ট বাক্য প্রয়োগ করে সেই বারবনিতা বলে—‘‘চুলায় পাঠাইয়াছি—নদীর ধারে তারে পুতিয়া আসিয়াছি—তাহার ওলাওঠা হইয়াছিল—সে গিয়াছে, এক্ষণে তুমি যাও৷’’৪৯

‘অথৈ জল’-এ এক জমিদারপুত্রের বেশ্যাসক্তির বাড়াবাড়ি স্বরূপ নববধূর গহনা খুলে এনে তার বিনিময়ে পান্নাকে রক্ষিতা করতে চাইলে তার প্রতি ঘৃণায় পান্নার মতো এক নিম্নশ্রেণীর বারাঙ্গনাও শিউড়ে উঠে৷ পরম ঘৃণায় তাকে ও তার দেওয়া অর্থকে অবজ্ঞা করে সে বলে—‘‘অমন টাকার মাথায় মারি সাত ঝাড়ু৷ একটা নতুন বৌ, ভাল মানুষের মেয়ে, তাকে ঠকিয়ে তার গা খালি করে টাকা রোজগার?’’৫০

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শহরবাসের ইতিকথা’-য় গণিকা চাঁপা শ্রীপতিকে তার ঘরে একা দেখে রাগে ফুলে উঠে৷ সে ঝাঁঝের সঙ্গে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয় অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করে—‘‘বেরিয়ে যা ঘর থেকে মুখপোড়া বজ্জাত কোথাকার৷’’৫১

এভাবে নানা অনুসঙ্গে গণিকা চরিত্রগুলির মুখে ইতর শব্দ বসিয়ে তাদের ভাষাকে সাধারণ নারীর ভাষা থেকে স্বতন্ত্রমণ্ডিত করেছেন রচনাকারেরা৷ এই ধরনের শব্দের ব্যবহার তাদের ভাষায় বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে৷

দেহব্যবসা বা যৌনতা এই শ্রেণীর নারীদের জীবনধারণের প্রধান মাধ্যম৷ দীর্ঘদিন দেহব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থেকে বা সমাজের মানুষগুলির কাছে অপমানিত হতে হতে সেই বৃত্তি নিয়ে তাদের যেন সাহসের ক্ষেত্রটা আরও অনেক বেশি বিস্তৃত হয়ে পড়ে৷ জীবনে সবকিছু হারিয়ে এই একটা জিনিস নিয়েই গণিকারা স্পর্ধা দেখাতে পারে৷ বিভিন্ন উপন্যাসে বিভিন্ন চরিত্রের মুখে এইধরনের দেহব্যবসা নিয়ে স্পর্ধাপূর্ণ বাক্য উচ্চারিত হতে দেখা যায়৷

‘অসীম’-এর মনিয়া কসবির কন্যা হয়েও কসব ছেড়ে প্রেমিকা হয়েছিল৷ তার অতুলনীয় রূপ দেখে বার বার পুরুষেরা পতঙ্গবৎ আকৃষ্ট হয়েছে তার দিকে৷ সে পরিণত হয়েছে পাটনা শহরের বুলবুল রূপে৷ কিন্তু তার একান্ত সাধনা অসীমের প্রেম৷ অসীম হিন্দু-ব্রাহ্মণ আর সে হিন্দুবেশ্যামাতা ও যবন পিতার ঔরসে পৃথিবীর মুখ দেখেছে, তাই অসীমের অস্পৃশ্য৷ জীবনে নানা ঘাটে ঠোকর খেয়ে খেয়ে তার মুখে বার বার উচ্চারিত হয়েছে নিজের গণিকা পরিচয়৷ সমাজের সকলের সামনে স্পর্ধার সঙ্গে সেই পরিচয় সে প্রকাশ করেছে৷ যেমন রূপ নষ্ট করতে গিয়ে হাকিমকে বলেছে—‘‘জনাব, আমি কসবী; শুধু কসবী নহি; কসবীর বেটি কসবী৷’’৫২ সে মুজরা করলেও জীবনে কোনোদিন কোনো পুরুষের অঙ্কশায়িনী হয়নি তথাপি সমাজের চরম বঞ্চনায় নিজেকে গণিকা পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছে এবং সে পরিচয়ের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে কাজ করেছে তার স্পর্ধা৷ গণিকামাতার কন্যা বলে এই স্পর্ধা দেখানো তার সহজ হয়েছে৷

‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ নামহীনা বারবনিতাদের মধ্যেও উচ্চারিত হয় দেহজীবিকার দরুণ গৌরবময়ভাষা৷ মানুষের যৌনতার গোপনাচারকে তারা যেন তাদের ভাষা ব্যবহারে সর্বপ্রকাশ্যে নিয়ে আসে৷—‘‘আমরা বেশ্যা, বেশ্যাবৃত্তি করি বটে, কিন্তু তোদের মত সাতটা কেরাণীকে পুষতে পারি৷ এই ত সমস্ত দিন কলম পিষে এলি—কি আনলি? আমরা ঘরে ব’সে ঘন্টায় আট দশ টাকা উপায় করি৷… তোরা আমাদের চাকর হবি? অফিসে যে মাইনে পাস—দেব৷’’৫৩

বঙ্কিমচন্দ্রের রোহিণী বিধবা হলেও রূপমুগ্ধ৷ গোবিন্দলালের প্রতি আকর্ষিত হয়ে সে যেমন তার সঙ্গে বিবাগী হয়েছে তেমনি পরবর্তী সময়ে তার আকর্ষণ তীব্র হয়েছে নিশাকর দাসের প্রতি৷ সে সেই স্পর্ধাবাক্য অকপটে নবপ্রণয়ীর কাছে ব্যক্ত করেছে—‘‘একজনকে ভুলিতে না পারিয়া এদেশে আসিয়াছি; আর আজ তোমাকে না ভুলিতে পারিয়া এখানে আসিয়াছি৷’’৫৪ রোহিণীর এই বাক্য তার গণিকাসুলভ মনোভঙ্গিকে স্পষ্ট করে৷

তারাশঙ্করের ‘কবি’-তে দেহজীবি নারীরা দেহব্যবসায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় যখন ব্যবসায় মন্দা বা ভাটা পড়ে তখন নিজেরাই যেন অস্থির হয়ে যায়৷ তাদের সেই কর্মহীন জীবনের অভিব্যক্তি ফুটে উঠে ললিতা, নির্মলা বসন ইত্যাদিদের কথার মাধ্যমে৷—‘‘দূর, দূর, রোজগার নাই, পাতি নাই, লোক নাই, জন নাই—কিছু নাই৷ সব ভোঁ ভোঁ৷’’৫৫ সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন বলে—‘‘ঠিক বলেছিস, ভাই, ভাল লাগছে না মাইরি৷’’৫৬ অর্থাৎ যে পরিবেশ বা পরিস্থিতিতেই দেহজীবীরা যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত হোক না কেন ক্রমে ক্রমে অনেকের কাছেই তা যেন অভ্যাস হয়ে যায়৷ স্পষ্টভাষার মধ্য দিয়ে তা ব্যক্ত করেছেন রচনাকার৷

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে৷ সেখানে পিয়ারীবাই রাজলক্ষ্মী হয়ে শ্রীকান্তকে নিয়ে সব ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে সুখী ঘর কন্নায় মেতে উঠলেও একসময় দেখা যায় সে শ্রীকান্তের উদাসীন উপেক্ষার জবাব দিতে মুজরা করতে বের হয়৷ শ্রীকান্ত তার গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আহত ফণিনীর ন্যায় গর্জে উঠে বলে—‘‘আমি কারও কেনা বাঁদী নই যে, কোথায় যাবো, না যাবো, তারও অনুমতি নিতে হবে !’’৫৭ তার এই ব্যবহার সম্পর্কে শ্রীকান্ত তাকে জানায় সে যে টাকার লোভ এবং সেই টাকা দিয়ে কর্তৃত্ব করার লোভ পেয়েছে তা সহজ ছাড়তে পারবে না৷ অর্থাৎ এখানেও রাজলক্ষ্মী যেন পিয়ারীর খোলস থেকে বেড়িয়ে আসতে চেয়েও অভ্যাস বশে বেরোতে পারে না৷

‘গণদেবতা’-র দুর্গা অনেক বেশি সাহসী ও স্পষ্টবাদী৷ তার ভাষায়-ভঙ্গিমায় যেন সর্বদাই একটা রহস্যের চমক কাজ করে৷ পুরুষ মানুষ দেখলেই তার মন লাস্যের চমক দিয়ে যায়, কেউ তোয়াক্কা না করলেও হেসে গা দুলিয়ে রহস্যালাপ করে যায়৷ পাড়ার রমণীকুল তার প্রতি সর্বদা সন্ত্রস্ত থাকে৷ সে তার পেশা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে যেমন ঝগড়া করে তেমনি অনিরুদ্ধ কামারের বৌ পদ্মর উপেক্ষা ও ঘৃণাকে উস্কে দিয়ে নিজে মজা উপভোগ করে৷ পদ্মকে রাগাতে বলে—‘‘যদি বলি আমি তোমার সতীন! তোমার কর্তা তো আমাকে ভালবাসে হে!’’৫৮

অনিরুদ্ধর মামলার তদন্ত সাপেক্ষে ইন্সপেক্টর দুর্গাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাকে দাগি আসামিদের সঙ্গে মেলামেশার অভিযোগ করলে সে অকপটে বলে—‘‘আজ্ঞে হুজুর, আমি নষ্ট-দুষ্ট—এ কথা সত্যি৷…’’৫৯ এখানেও সে তার নিজের স্বরূপকে ঢেকে রাখেনি৷

ছিরু পালকে জব্ধ করতে সে অকপটে তার জীবনের ব্যভিচারের চিত্রকে বর্ণনা করেছে ‘পঞ্চগ্রাম’ উপন্যাসে ‘‘লোকটি যে এককালে আমার ভালবাসার লোক ছিল, তখন পাল বলেছি, তুমি বলেছি, মাল খেয়ে তুইও বলেছি৷ অনেক দিনের অভ্যেস কি ছাড়তে পারি জমাদারবাবু?’’৬০ তারপর বড় গলায় বলে—‘‘ঘোষ মশায়—ছিরে পাল গো, যে এককালে মুচীর মেয়ের এঁটো মদ খেয়েছে, মুচীর মেয়ের ঘরে রাত কাটিয়েছে, মুচীর মেয়ের পায়ে ধরেছে৷’’৬১

এভাবে ‘গণদেবতা’ ‘পঞ্চগ্রাম’-এ দুর্গা স্পর্ধিত কন্ঠে নিজে যৌনাচারকে ব্যক্ত করেছে৷ সেই ভাষা, সেই বক্তব্য একজন স্বৈরিণী নারীর মুখেই সম্ভব৷

‘বৈতরণী তীরে’-তে বিন্দি তার দেহজীবিকার পসার বোঝাতে বলেছে—‘‘এই মর্ত্যলোকই আমার কাছে নরক হয়ে উঠেছিল আর সে নরক আমি গুলজার করেও তুলেছিলাম! কি করে আমার এই সামান্য দেহটা দিয়ে যে এত লোককে আমি মুগ্ধ করেছিলাম তাই ভাবি৷ সে কি এক আধটা লোক? প্রতিদিন প্রতি বেলা নূতন লোক!’’৬২ ‘শুভদা’-র কাত্যায়নী তার বাবুকে বলে—‘‘আমাদের যেখানে পেট ভরে সেইখানে ভালবাসা৷… যেখানে টাকা সেইখানে আমার যত্ন,’’৬৩ এই উপন্যাসেই মালতী যে কি না সুরেন্দ্রবাবুর রক্ষিতা হয়ে নবপরিচয় লাভ করেছে তার মুখেও উচ্চারিত হয় সেই স্পর্ধাবাণী—‘‘আমি বেশ্যা—বেশ্যায় সব পারে৷’’৬৪

‘অথৈ জল’-এ মাসি, নীলিমার দিদির মুখেও অর্থের বিনিময়ে পান্না বা নীলিকে নিয়ে যা খুশি করার অভয়বাণী শোনা যায়৷ ডাক্তার শঙ্কর পান্নার পরামর্শে নীলির ঠিকানায় উপস্থিত হয় তাকে পান্নার কাছে নিয়ে আসার জন্য৷ নীলির দিদির কাছে তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করলে সে স্পষ্ট করেই বলে—‘‘সে আপনি নিয়ে যান না? তবে দু’টো টাকা দিয়ে যাবেন৷ খরচপত্তর আছে তো?’’৬৫

সমাজ তাদের শরীরকে উপভোগ করেও তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করে না৷ তাদের পরিণত করেছে প্রান্তিক মানুষে৷ তাই তারা তাদের স্পর্ধা যতটা পারে ততটাই যেন সমাজের সামনে নিঙড়ে দেয়—অন্তরে যতই দুঃখ-বেদনা থাকুক না কেন৷ সেই স্পর্ধিত ব্যবহারে পুরুষের কাছ থেকে শোষণ করতেও তাদের বাধে না৷

গণিকাদের প্রণয় সম্ভাষণের মধ্যেও বৈচিত্র্য রয়েছে৷ বাইজিরা গণিকাদের মধ্যে উচ্চশ্রেণীর হওয়ায় তারা প্রেমিককে যে ধরনের প্রণয় সম্ভাষণ করে, নিম্ন শ্রেণীর গণিকা—যারা কোনো পল্লীতে থাকে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে খদ্দের ধরে তাদের প্রণয় সম্ভাষণের ধরন আলাদা৷ রাখালদাসের মনিয়া, শরৎচন্দ্রের পিয়ারী, চন্দ্রমুখী এরা বাইজি৷ মনিয়া মুজারাওয়ালি৷ সে প্রেমিককে প্রণয় সম্ভাষণ করে ‘জানি’, ‘জান’, ‘দিলের’, ‘পিয়ার’, ‘দুনিয়ার দৌলত’, ‘কলিজা’, ‘দিলদার’ ইত্যাদি সম্বোধনের দ্বারা৷ যেমন—

‘‘দিলের, একবার বসিবে চল!’’৬৬

‘‘জানি, পাটনা সহরের প্রসিদ্ধা মনিয়াবাঈ কেমন করিয়া এক মুহূর্তে পিতা, মাতা, নাম, যশঃ, প্রথম যৌবনের রোজগার ছাড়িয়া আসিয়া, তোমার দুয়ারে কুক্কুরের মত পড়িয়া আছে, তাহা কি বুঝিতে পার নাই?’’৬৭

‘‘আমার দুনিয়ার দৌলৎ, তুমি কাঁদিতেছ কেন!’’৬৮

‘‘মেরা জান, আমার কলিজা, আমি কি তোমায় এমনি সাদা কথায় ছাড়িয়া দিতে পারি৷’’৬৯

‘‘তোমাকে ছাড়িলে মনিয়ার জানে আর কি থাকিবে পিয়ার?’’৭০

‘‘ও-হোঃ, অমন কথা বলিও না দিলদার!’’৭১

‘করুণা’-র ইন্দ্রলেখা গোবিন্দগুপ্তকে প্রণয় সম্ভাষণ করে বলে—‘‘মহারাজপুত্র,… আর একবার তেমন করিয়া তোমার মুখখানি দেখিব৷’’৭২

‘বৈতরণীর তীরে’-র দেহব্যবসায়িনী বিন্দি পুরুষের শরীরে উষ্ণতার তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করতে বলে—‘‘আমার পিছনে এই সেফটিপিনট লাগিয়ে দাও না—এই পিঠের দিকে—’’৭৩ এও গণিকাদের একধরনের প্রণয় সম্ভাষণ৷

‘জঙ্গম’-এ পতিতাপল্লীর বারবনিতারা তাদের সম্মুখে শঙ্করকে উপস্থিত দেখে হাব-ভাব কটাক্ষে তাকে ঘরে নিতে চায়৷ তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তাদের একজন বলে—‘‘আমার খোঁপাটা একটু ঠিক করে দে তো, বার বার এলিয়ে যাচ্ছে৷’’৭৪ অথবা সরাসরিই জিজ্ঞেস করে—‘‘আপনি কাউকে খুঁজছেন?’’৭৫ এও পুরুষের সঙ্গে বাররামাদের আলাপ করার এক রকম ধরন৷

‘অথৈ জল’-এ পান্না নানাভাবে প্রণয় সম্ভাষণ করেছে রাসভারী নীতিবান প্রসিদ্ধ মধ্যবয়সি ডাক্তার শশাঙ্কর কাছে৷ সে অযাচিতভাবে তার চেম্বারে এসে তাকে খেমটার আসরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে৷ ডাক্তার তাতে আপত্তি করলে সে বলেছে—‘‘কেন যাবেন না? আমি মাথা কুটবো আপনার সামনে এখুনি৷ আসুন৷’’৭৬ এভাবে মাথা কুটার কথা বলে পান্না তাকে আসরে নিয়ে যায়৷ পুনরায় গভীর রাত্রে ডাক্তারের চেম্বারের দরজায় ঘা পড়ে৷ অযাচিত ভাবে উপস্থিত হয়েছে পান্না৷ সে ডাক্তারের প্রশ্নের উত্তরে সহজ ভাবে বলে—‘‘দেখতে এসেছি, মাইরি বলছি৷’’৭৭ সে মাথার দিব্যি দিয়ে শেষের দিনের গানের আসরে থাকতে বলে—‘‘আপনাকে থাকতে হবে৷ আমার মাথার দিব্যি৷ আমি আসবো আবার৷ কখনো যাবেন না৷’’৭৮ এভাবে দেখা যায় তার লাস্য-কথাবার্তার প্রণয়পাশে শেষ পর্যন্ত ডাক্তার সম্পূর্ণরূপে তার কাছে ধরা দেয়৷

ডাক্তারের কাছে তার নিজেকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের মধ্যেও উঠে আসে সুগভীর প্রণয় বাক্য—‘‘মেরে ফেলো আমাকে৷ তোমার হাতে মেরো৷ টু’ শব্দটি যদি করি তবে বোলো পান্না খারাপ মেয়ে ছিল৷’’৭৯

‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’ উপন্যাসে লক্ষিত হয়েছে এক ব্যভিচারী গৃহবধূর প্রেমিকে উদ্দেশ্যে প্রণয়বাক্য—‘‘ভাই! আজি অবশ্য আসিবে৷ আজ আসিলে বিফল হইবে না৷… তুমি অনায়াসে নিশা যাপন করিতে পারিবে৷’’৮০

সিন্দুরেপটি অঞ্চলের দুই-চার পয়সা সস্তা মূল্যের পণ্যাঙ্গনারা খদ্দের ধরে ‘ও মানুষ’, ‘ও মানুষ’ ‘আমার বাড়ী চল’ ‘আমার বাড়ী চল’ বলে হাত ধরে টানাটানি করে৷ এদের প্রাথমিক খদ্দের সংগ্রহের সম্ভাষণ এই শব্দগুলিই৷

এভাবে বিভিন্ন উপন্যাসে বিভিন্ন শ্রেণীর গণিকারা বিবিধ বাক্য, শব্দ, হাব-ভাব দ্বারা খদ্দের সংগ্রহ করে, পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷

পুরুষদের কাছে শরীর বিক্রয় করে সেই উপার্জনেই তাদের সম্পূর্ণ জীবন পরিচালিত হয়৷ তাই খদ্দের না পেলে বা তাদের সঙ্গিনীদের কেউ খদ্দের পেলে অন্যদের মন হতাশায় ডুবে যায়৷ তাই দেখা যায় ‘জঙ্গম’-এ মুক্তো শঙ্করকে নিয়ে ঘরে চলে গেলে বাকি মেয়েদের মধ্যে একজন বলে—‘‘মুক্তোটার কপাল ভাল৷ আমাদের আর কতক্ষণ ভোগান্তি আছে, কে জানে বাপু!’’৮১

‘কবি’ উপন্যাসে ঝুমুর দলের নর্তকী বেশ্যাদের যৌনবৃত্তির মন্দা সময়ে বলতে শোনা যায়—‘‘রোজগার নাই, পাতি নাই, লোক নাই, জন নাই—কিছু নাই৷ সব ভোঁ ভোঁ৷… ঠিক বলেছিস, ভাই, ভাল লাগছে না মাইরি৷

—ললিতে!

—কি?

—এ কেমন জায়গা বল তো?

—কে জানে ভাই৷ পাঁচটি টাকা রেখেছিলাম নাকছাবি গড়াব বলে, চার টাকা খরচ হয়ে গেল৷’’৮২

প্রেমিককে বশে রাখার জন্য নানা ধরনের বাক্য ব্যবহার করে তারা৷ কখনো মৃত্যুর কথা বলে প্রেমিককে বশ করার চেষ্টা৷ যেমন মহামন্ত্রী দামোদরদেবকে ইন্দ্রলেখার কন্যা অনন্তা বন্দি করার আদেশ দিলে মহামন্ত্রী যখন সেই আদেশ কুমারগুপ্তের মুখে শুনতে চান তখন নতশীর সম্রাটকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে অনন্তা বলে—‘‘বল, নতুবা আমি আত্মহত্যা করিব৷’’৮৩

‘পঞ্চগ্রাম’-এ স্বৈরিণী দুর্গা ঠাকুর মশাইয়ের স্বদেশপ্রেমী পুত্র বিশ্বনাথের সঙ্গেও রহস্যালাপ ফাঁদতে ভয় করে না৷ বিশ্বনাথ চিরতরে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে দেশ মাতৃকার সেবার জন্য৷ দুর্গা তাকে শেষবারের জন্য প্রণাম করতে চায়৷ সে তার সঙ্গে আলাপের সূত্রে তার সমবেদনা লাভের আশায় বলে—‘‘আপনি তো এখানকার বিপদ আপদ ছাড়া আসবেন না৷ তার আগে যদি মরেই যাই আমি৷’’৮৪

‘অথৈ জল’-এর পান্না ডাক্তারকে প্রণাম করে বলে—‘‘বলো যেন শিগগির করে মরে যাই৷’’৮৫

গণিকাদের এই মৃত্যু কামনা বা মৃত্যুর কথা বলার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ করে প্রণয়ীর বেশি বেশি ভালোবাসা প্রাপ্তির প্রত্যাশা৷

যৌবন গত হয়ে গেলে ভালোবাসায় ভাটা পড়ে৷ গণিকাদের মধ্যে যেহেতু সম্পর্কের কোনো স্থায়ী ভিত্তি নেই তাই তাদের জীবনে প্রেমিকের আনাগোনা যৌবনের ফাগুনবেলাতেই৷ তারপরে শুধুই বিগত যৌবনের গ্লানি৷ তাই বহু গণিকার মধ্যে লক্ষিত হয় বিগত যৌবনের প্রতি আক্ষেপ; অভিমান প্রকাশ করে প্রেমিককে করায়ত্ত রাখার চেষ্টা৷

ইন্দ্রলেখা অভিমান করে হরিবলকে বলে—‘‘যাও তোমার মিষ্টি কথায় কাজ নাই৷ আমি কুৎসিতা, আমি বুড়া, আমার নিকট কেন? নবযৌবনভারে অবনমিতদেহা তন্বীর নিকটে যাও৷’’৮৬

আবার সখি মদনিকাকে বলে—‘‘মদনিকে, উহার সহিত বাক্যালাপ করিও না, আমি কুৎসিতা, বৃদ্ধা, আমার অনুরোধ কেন রাখিবে?’’৮৭

সরস্বতী নবীনকে বিদ্ধ করতে বলে—‘‘তোমরা পুরুষ মানুষ, ভোমরার জাতি৷ যতক্ষণ মধু থাকে, ততক্ষণ তোমরা থাক৷ আমার যৌবনের মধু ফুরাইয়াছে; সুতরাং এখন আর তোমরা আসিবে কেন?’’৮৮

গণিকাবৃত্তি এমন একটা পেশা যেখানে নারী জীবনকে সবচেয়ে বেশি নিষ্পেষণ করা হয়৷ অনেক বারবধূই চায় সে পেশা থেকে সরে আসতে বা তাদের উত্তরসূরীদের সেই পেশা থেকে দূরে রাখতে৷ বাংলা উপন্যাসে কোনো কোনো বারবনিতার মুখে এই পেশার জন্য তীব্র আক্ষেপবাণী ধ্বনিত হতে শোনা যায়৷ ‘করুণা’-য় তাই ইন্দ্রলেখা বলে—‘‘আমি যাহা করিয়াছি তাহা করিয়াছি, অনন্তাকে যেন আর তাহা করিতে না হয়৷’’৮৯ ইন্দ্রলেখা দেহপসারিণী৷ সে অনন্তার জন্মদাত্রী৷ তাই সে কোনোভাবেই চায় না তার মেয়েও দেহপসারিণী হয়ে বেঁচে থাকুক৷

‘গণদেবতা’-‘পঞ্চগ্রাম’-এর দুর্গার ভালোমানুষগুলোর সংস্পর্শে থাকতে থাকতে ঔদ্ধত স্বৈরিণীসুলভ চপলতা স্তিমিত হয়ে এসেছে৷ সে তাই অভিসারে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে৷ তার মুখে শোনা যায় সেই পেশা থেকে সরে যাওয়ার অভীপ্সা—‘‘ওতে আমার অরুচি ধরেছে ভাই৷ তবে কি করি, পেটের দায় বড় দায়!’’৯০

বৃত্তি থেকে সরে গিয়েও দেহজীবিকার গ্লানি নিয়ে উপন্যাসের শেষে সে দেবুকে প্রশ্ন করে—‘‘আমাদের মত পাপীর কি হবে জামাই? আমরা কি নরকে যাব?’’৯১ দুর্গার এই কথা তার জীবনের চূড়ান্ত আক্ষেপকে সামনে নিয়ে আসে৷

বিন্দি বাইজি ‘বৈতরণী তীরে’ উপন্যাসে দেহব্যবসার মধ্যে থেকেও প্রেমকে পেতে চেয়েছিল৷ তার সেই তৃষ্ণা পবিত্র ঝরণাধারার কিন্তু জীবনভর সে পান করেছে নর্দমার জল অর্থাৎ পুরুষের উগ্র যৌনতা৷ তাই প্রেম না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে সে উপন্যাসের কথকের কাছে জানতে চেয়েছে—‘‘ছাপা কেতাবে যে সব প্রেমের গল্প লেখা থাকে সে সব কি সত্যি? ওরকম কি হয়! আমার জীবনে আমি তো দেখেছি পুরুষগুলো আমাকে নিয়ে লোফালুফি করেছে! আমি যেন একটা ফুটবল—আমায় ঘিরে সুদক্ষ একদল খেলোয়াড়;’’৯২ তারপর সে আবার বলেছে—‘‘দেখুন আমার আকন্ঠ পিপাসায় ভরে আছে৷ সারা জীবনটা একবিন্দু ভাল ঠাণ্ডা জল পেলাম না৷… জীবনে একটাও নদী দেখতে পাই নি—খালি নর্দমা৷ কেবল দুর্গন্ধ পচা জল৷’’৯৩ দেহবৃত্তির এই গ্লানি মুক্ত হতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে৷ সত্যকার প্রেমের জন্য তার এই আক্ষেপ মর্মস্পর্শী৷

গণিকারা শুধু যে খদ্দের এনে ঘরে বসায়, তা নয়৷ অনেক সময় নিজস্ব ভাষারীতিতে খদ্দেরকে দরজা থেকে ফিরিয়েও দেয় তারা৷ সেখানেও বারাঙ্গনাদের ভাষাগত স্বতন্ত্রতা ফুটে উঠে৷ যেমন ‘দেবদাস’ উপন্যাসে চন্দ্রমুখী দেবদাসের প্রেমে শুদ্ধচারিণী হয়ে সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে৷ পরে যখন জানতে পারে যে তার প্রণয়ী কলকাতায় ছন্নছাড়া জীবন কাটাচ্ছে এবং বাড়িতে তার কোনো খোঁজ খবর নেই, চিঠি দিলে চিঠি ফেরত আসে তখন পুনরায় কলকাতা গিয়ে চন্দ্রমুখী দেহের পসরা সাজায়৷ যখন অপরিচিত পুরুষ কন্ঠ তার দরজায় এসে প্রেম প্রার্থনা করে তখন সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে জানায় ‘‘এখানে নয়৷’’ ৯৪

‘জঙ্গম’-এর শঙ্করকে খোঁটা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলে মুক্তোর দরজায় দাঁড়ায় কাঁচাপাকা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি৷ তার সতৃষ্ণ কামনাকে উপেক্ষা করতে তাকে প্রত্যাখ্যান করে তিক্ত কন্ঠে বলে—‘‘এখন এখানে হবে না৷’’৯৫

‘এখানে নয়’, ‘এখন এখানে হবে না’ এগুলি গণিকাদের প্রত্যাখ্যানের জন্য ব্যবহৃত বাক্যবন্ধ৷

কখনো কখনো এই প্রত্যাখ্যানের ভাষা জোরালো হয়ে খদ্দেরের কাছে অপমানকর হয়ে উঠে৷ ‘শহরবাসের ইতিকথা’-য় জ্যোতির বিশ্বাসঘাতক বন্ধু শ্রীপতিকে একা তার সঙ্গ উপভোগে আসতে দেখে গালিগালাজ দিয়ে তার ঘর থেকে বের করে দেয়৷ সে বলে—‘‘বেরিয়ে যা ঘর থেকে মুখপোড়া বজ্জাত কোথাকার৷’’৯৬ তার এই প্রত্যাখ্যান প্রেমিককে রুঢ় প্রত্যাখ্যান৷

গণিকারা যেহেতু নারী শ্রেণীর প্রতিনিধি তাই তাদের ভাষা বৈশিষ্ট্যে মেয়েলি সুরটিকে সহজেই চিনে নেওয়া যায়৷ সমাজভাষাবিজ্ঞানীরা শুধু যে নারীপুরুষের ভাষার মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ করেছেন তা নয়, যথার্থ প্রামাণিকতার সঙ্গে সেই ভিন্নতার স্বরূপ ও কারণেরও অনুসন্ধান করেছেন৷ ভাষার এই লিঙ্গগত ব্যবধানকে ভাষাবিদ ট্রাডগিল সামাজিক তফাত বা Social difference বলে অভিহিত করেছেন৷

কথায় কথায় প্রবাদের ব্যবহার, সম্বোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ শব্দ প্রয়োগ, বাগধারা, বাগার্থ, প্রত্যয়-উপসর্গ, কিছু কিছু নিজস্ব রীতির শব্দ ব্যবহার গণিকাদের ভাষার ক্ষেত্রে মেয়েলি সুরের সংযোজন ঘটিয়েছে৷ এই নারীর ভাষার বৈচিত্র্যের কারণ অবশ্যই তার শরীরবৃত্তীয় গঠন যা তার মানসিক বিকাশেরও ভিত্তি৷ সমাজে পুরুষের প্রাধান্য, পুরুষের কাছে নারীর অধীনতা, নারীর প্রকৃতি ও অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে তার ভাষাকেউ করে তোলে অনুদ্ধত, কুন্ঠাপূর্ণ ও কোমল৷ যদিও বর্তমান কালে শিক্ষার দৌলতে নারীর ভাষাগত পার্থক্য অনেক কমে গিয়েছে৷

নারীর ভাষাবৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক হল প্রবাদ-প্রবচনের বহুল ব্যবহার৷ প্রবাদ মানুষের প্রাজ্ঞমনস্কতার ফসল৷ জগৎ ও জীবন সম্পর্কে সুগভীর দার্শনিক প্রত্যয়ের ফলশ্রুতি প্রবাদের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে৷ আর গ্রামীণ মানুষ সুদীর্ঘকাল ধরে নিজের সমাজ পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাই হল প্রবচন৷ মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে প্রবাহিত হতে হতে প্রবাদ লাভ করে তার সংক্ষিপ্ত নিটোল অবয়বকে৷ প্রবাদ-প্রবচনের মধ্যে থাকে যৌথ জীবনের কথা, জীবনের শত শত দুঃখ-আনন্দ বেদনার কথা, ঘর-পরিবার-কৃষি ও কর্মের কথা—সমস্ত মননক্রিয়ার নির্যাস হয়ে প্রবাদ আত্মপ্রকাশ করে৷

গণিকা নারীরা তাদের জীবনে দুঃখ, যন্ত্রণা, বঞ্চনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ সর্বোপরি তাদের বৃত্তির স্বরূপ প্রকাশ করতে নানা রকমের প্রবাদের আশ্রয় নিয়েছে৷

‘অসীম’ উপন্যাসে নবীন নরসুন্দরের বিদ্যালঙ্কারের কন্যা ও পুত্রবধূকে অপহরণ করাকে কেন্দ্র করে সরস্বতী তিক্ত বিরক্ত হয়ে নবীনকে উদ্দেশ্য করে বলে—‘‘বুড়ার যেন ভীমরতি ধরিয়াছে৷ দুই-দুইটা ব্রাহ্মণের মেয়ে খামকা ধরিয়া আনিল’’৯৭ এখানে ‘বুড়ার যেন ভীমরতি’ বাক্যাংশটি ‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরা’ প্রবাদের সমতুল৷ ভীমরতি মতিভ্রষ্ট অর্থে ব্যবহৃত৷ একটি ছোট্ট বাক্যের মধ্যে দিয়ে অনেক কিছুই যেন বলে দিয়েছে সরস্বতী বৈষ্ণবী৷

গণিকা ইন্দ্রলেখা ‘করুণা’ উপন্যাসে তার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বৃদ্ধ অপরিণামদর্শি রাজা কুমারগুপ্তের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দেয়৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে জামাতার অকর্মণ্য, ব্যক্তিত্বহীন আচরণে তার আর আক্ষেপের সীমা থাকে না৷ সে হরিবলকে ‘আফসোস’ করে বলে—‘‘কি জন্য বৃদ্ধ বানরের কন্ঠে শুভ্র মুক্তাহার পরাইয়া দিয়াছি৷’’৯৮ ইন্দ্রলেখার এই আক্ষেপবাণী প্রচলিত ‘বানরের গলায় মুক্তার মালা’ প্রবাদটিকে মনে করিয়ে দেয়৷ অর্থাৎ অসমঝদারের হস্তে মূল্যবান জিনিস অর্পণ করার সামিল৷

শরৎচন্দ্রের ‘শুভদা’-য় বারাঙ্গনা কাত্যায়নী নিজের পতিত জীবনের মর্মান্তিক পরিণতির কথা বোঝাতে তার বাবু হারাণচন্দ্রকে বলে—‘‘লোকে বলে, ‘যার কেউ নেই, তার ভগবান আছেন’, আমাদের সে ভরসাও নেই৷’’৯৯ তার এই কথার মধ্যে দিয়ে গণিকাজীবনের নিদারুণ সত্য স্বরূপ উপস্থাপিত হয়েছে৷ সমাজের মানুষজনের সঙ্গে ভগবানও যেন এই নারীদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে থাকেন৷

‘গণদেবতা’ উপন্যাসে স্বৈরিণী দুর্গা, পাতুর স্ত্রী, দুর্গার মা ইত্যাদি চরিত্রগুলির মুখে বহু প্রবাদ উচ্চারিত হয়েছে৷

দুর্গার সঙ্গে পাতুর কলহ বাঁধলে দুর্গা তীক্ষ্ণ কন্ঠে তার অবস্থান জানিয়ে বলে—‘‘ভাত দেবার ভাতার নয়, কিল মারার গোসাঁই৷… হাজার নোক আসবে আমার ঘরে, তোর কি? তোর ভাত আমি খাই?’’১০০ অর্থাৎ দরিদ্র মুচি পরিবারে ভাই পাতুর স্বামী পরিত্যাগ করে আসা বোন দুর্গার ভরণপোষণের সামর্থ নেই৷ তাকে শরীর বেঁচে নিজের অন্নসংস্থান নিজেকেই করতে হয়৷ সেখানে সে ভাই-এর শাসন মানবে কেন! তাই দুর্গা প্রবাদের মধ্য দিয়ে নিজের প্রকৃত অবস্থান এবং ভাইয়ের সামর্থ অল্পকথার মধ্যে প্রকাশ করে৷

শ্রীহরি ঈর্ষাবশত সকলের অলক্ষ্যে মুচিপাড়ায় আগুন ধরিয়ে দিলে পরে দুর্গার সচেতন দৃষ্টিতে তা ধরা পড়ে যায়৷ তাই শ্রীহরিকে সে কথা জানিয়ে সে প্রবাদ আওড়ায়—‘‘ঠাকুর ঘরে কে রে? না, আমি তো কলা খাই নাই! সে বৃত্তান্ত৷’’১০১

হামদু স্যাখের কাছ থেকে টাকা খেয়ে দুর্গার মা বার বার তাকে গরু বেচার জন্য প্ররোচিত করলে সে তার মাকে বলে—‘‘আমি কিছু বুঝি না, মনে করেছিস! ধান-চালের ভাত আমি খাই না, লয়?’’১০২ আর এ প্রসঙ্গে হামদু স্যাখকে বলে—‘‘ও বলদের নামে তুমি হাত ধোও হামদু ভাই৷ ও আমি এখন দু’বছর বেচব না৷’’১০৩ এখানে ‘হাত ধোও’ অর্থাৎ দুর্গা তাকে বলতে চাইছে যে আশা ছেড়ে দাও৷

দুর্গা অনিরুদ্ধকে চার দিনের জন্য দুই টাকা ধার দেয়৷ সময়ের মধ্যে অনিরুদ্ধ সেই টাকা ফেরত দিলে সে তাকে বলে—‘‘সোনার চাঁদ খাতক আমার!’’১০৪

‘পঞ্চগ্রাম’-এ রাখাল বালকের মনের উল্লাসে প্রেমের গান গাইতে শুনলে দুর্গা তাকে বলে—‘‘মরণ তোমার! গলা টিপলে দুধ বেরোয়, একবার গানের ছিরি দেখ!’’১০৫ এখানে ‘গাল টিপলে দুধ বেরোয়’ অর্থাৎ কম বয়সকে চিহ্নিত করা হয়েছে; যার বাল্য দশা কাটেনি৷ সেই রকমের বালকের মুখে গভীর প্রেমের গান শুনে দুর্গার এই প্রবাদবাক্যের ব্যবহার যথোপযুক্ত হয়েছে৷

দেবুকে ভালোবেসে সে দেহব্যবসা ছাড়তে চায়৷ কিন্তু দরিদ্র পরিবারে অন্ন সংস্থানই বা হবে কি করে৷ তার ও তার ভ্রাতৃবধূর রোজগারেই মা-ভাই-এর খুন্নিবৃত্তি নিবারণ হয়৷ তাই কামার বউকে সে বলে—‘‘ওতে আমার অরুচি ধরেছে ভাই৷ তবে কি করি, পেটের দায় বড় দায়!’’১০৬

দুর্গার ভ্রাতৃবধূ অর্থাৎ পাতুর বৌও স্বৈরিণী৷ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে তার মুখেও উচ্চারিত হয় প্রবাদ বাক্য৷ যেমন তার স্বামী মেরে তার হাড় ভেঙে দিতে চাইলে সে হিংস্র ভঙ্গিতে ফ্যাঁস করে উঠে বলে—‘‘ক্যানে, ক্যানে আমার হাড় ভেঙে দিবে শুনি? বলে ‘দরবারে হেরে, মাগকে মারে ধরে’—সেই বিত্তান্ত৷’’১০৭ পারিবারিক কলহ, মজলিশে অপমান, অগ্নিদাহে গৃহ ভস্মীভূত হওয়া ইত্যাদি নানা কারণে পাতুর অস্থির মন স্ত্রীর উপরে বিদ্বেষী হয়ে উঠে৷ দরবারে হেরে স্ত্রীকে মেরে সে যেন তার যন্ত্রণার ভার লাঘব করতে চায়৷ যা পূর্বের কোনো গল্পের অনুরূপ৷ যেখানে কোনো স্বামী ভরা দরবারে চরম অপমানিত হয়ে সেই অপমানের জ্বালা ভুলেছিল স্ত্রীকে প্রহার করে৷ পাতুর একই আচরণে পাতুর বৌ এর মুখে যথার্থ বাক্য হয়ে প্রবাদ রূপে বেড়িয়ে আসে৷

দুর্গার মা পুত্রবধূর দেহব্যবসার রোজগার থেকে কোনরকম সাহায্য না পেয়ে মেয়ের কাছে আক্ষেপ করলে মেয়ে সেই পাপের পয়সা তাকে স্পর্শ করতে নিষেধ করে৷ তাতেই দুর্গার মায়ের মুখে উচ্চারিত হয় প্রবাদ যা তাকে বিদ্ধ করতে যথেষ্ট৷—‘‘ওলো সীতের বেটি সাবিত্তিরি আমার৷’’১০৮ দুর্গা দেহজীবী৷ একজন দেহজীবিনীর পক্ষে অপর দেহজীবিনীকে পাপী ভাবা হাস্যকর৷ দুর্গা তাই করেছে৷ যার প্রেক্ষিতে দুর্গার মায়ের সেই জবাব৷ সীতা, সাবিত্রী, দুই পৌরাণিক চরিত্র৷ তারা পঞ্চসতীর দুজন৷ কেউ কারও মেয়ে নয়৷ দুর্গার মায়ের শিক্ষা-সংস্কারহীন অজ্ঞ মনস্কতায় দুজনের সম্পর্কের ভেদরেখা উল্লিখিত না হলেও তাঁরা যে সতীত্বের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ছিলেন তা অজানা নয়৷ মা তার প্রবাদ বাক্যের মধ্য দিয়ে দুর্গার কৃত্রিম সতীত্বকে চরম ব্যঙ্গে বিদ্ধ করেছে৷ পুত্রবধূরও সেই পুরোনো সতীত্ববোধকে বিদ্ধ করে বলে—‘‘বউ হারামজাদী সাবিত্তির, তখন ফণা কত? কত বলেছিলাম, তা নাক ঘুরিয়ে তখন বলত—ছি! এখন তো সেই ‘ছি’ তপ্তভাতে ঘি হইছে৷ সেই রোজগারে প্যাট চলছে, পরন চলছে!’’১০৯ গরমভাতে ঘি যেমন উপাদেয় পাতুর বৌ এক কালে ছি ছি করলেও পরবর্তী সময়ে দেহব্যবসাই তার কাছে পরম উপাদেয় হয়েছে গরমভাতে ঘি-এর মতো৷ মায়ের কথায় সেই দিকটিই প্রতিভাত৷

মানুষের হিতকারী দেবু পণ্ডিতকে আশীর্বাদ করে দুর্গার মা বলেছে—‘‘মাথার চুলের মত পেরমাই হবে, সোনার দোতকলম হবে,’’১১০ মাথার চুলের মতো পরমায়ু হল আয়ুরেখাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেওয়ার আশীর্বাদ যা প্রবাদ- বাক্যেরই সামিল৷

দেবু দুর্গার খোঁজ নিতে এলে মা তার উদ্দেশ্যে বলে—‘‘সে নচ্ছারীর কথা আর বলো না বাবা! বানের আগে কুটো৷’’১১১ এই ‘বানের আগে কুটো’ কথাটিও প্রবাদবাক্য৷ বন্যার সময় যেমন খড়-কুটো আগে ভেসে আসে দুর্গাও তেমনি কারও কোনো কিছু হলে সকলের আগে ছুটে যায়৷ এর মধ্য দিয়ে দুর্গার স্বভাবজ বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে৷

এছাড়া প্রবচন ব্যবহার করে নিজের মনের অস্ফুট উদ্দেশ্য কেউ ব্যক্ত করেছে দুর্গা৷ যেমন দুর্গা কামারবউ-এর সঙ্গে দেবুর বাড়িতে এসে বিলুদিদির বোন হিসেবে আপ্যায়িত হতে চাইলে সে ভার দেবু তার স্ত্রী অর্থাৎ দুর্গার বিলুদিদির উপরই ছেড়ে দেয়৷ সে ঠাট্টা করে বলে আপনার জন থাকতে পরের আদর কি কখনো ভালো লাগে৷ তখন তার উত্তরে দুর্গা ছড়া কেটে কেটে প্রবচনের মধ্য দিয়ে নিজের মনের ভাবকে প্রকাশ করে দেয়—‘‘টাকার চেয়ে সুদ মিষ্টি; দিদির চেয়ে দিদির বর ইষ্টি, আদর আরও মিষ্টি৷ আমার কপালে মেলে না!’’১১২

প্রবল বানে ময়ুরাক্ষী যখন ফুসতে থাকে তখন দেবু দুর্গাকে বলে সে বাঁধের কি অবস্থা তা দেখতে যাবে৷ তাতে দুর্গা গালে হাত দিয়ে এক প্রবচন বলে—‘‘কাঁদি-কাঁদি মন করছে, কেঁদে না আত্মি মিটছে, রাজাদের হাতী মরেছে, একবার তার গলা ধরে কেঁদে আসি’’১১৩ অর্থাৎ যখন কাঁদার জন্য মন অস্থির হয়ে উঠে তখন রাজার হাতী মারা গেলেও তার গলা ধরে কাঁদা যায়৷ তেমনি দেবু গ্রামের মানুষজনের জন্য চিন্তায় এত বেশি অস্থির যে সামান্য বানেই তার বাঁধ দেখতে ছোটে৷ কারণ দুর্গা তার জীবনে কোনোদিন শোনেনি যে ময়ুরাক্ষীর বাঁধ ভেঙ্গে জল ঢোকে৷ সেই প্রবচন জেরে সে তাই বলে—‘‘আচ্ছা, বাঁধ ভেঙে বান কোন কালে ঢুকেছে শুনি?’’১১৪

‘জঙ্গম’ উপন্যাসে মুক্তো ‘খদ্দের’-এর সংজ্ঞা বোঝাতে গিয়ে শঙ্করকে একটি প্রবাদ শোনায়৷—‘‘ফেল কড়ি মাখ তেল, তুমি কি আমার পর’—এই কথা যাকে বলতে পারা যায়, সেই হল খদ্দের৷’’১১৫ অর্থাৎ গণিকাদের শরীর ভোগ করার পেছনে অর্থনৈতিক একটা যোগসূত্র বর্তমান৷ গণিকাদের যে কড়ি দেবে সে-ই তার ভালোবাসা পাবে বা আপনজন হবে৷

জগদীশগুপ্তের ‘লঘুগুরু’-তে পরিতোষের রক্ষিতা সুন্দরী টুকীকে স্বামী সম্পর্কে মন বিষিয়ে দিতে বলে—‘‘পেট ভরাবার সোয়ামী নয়; পিঠ পাতাবার কত্তা!’’১১৬ আবার অনিন্দ্যসুন্দরী টুকীকে দিয়ে দেহব্যবসা করাতে পারলে যে একসময় প্রচুর অর্থ উপার্জন ঘটবে সেই আশায় টুকীর স্পর্ধিত বাক্য সহ্য করেও সুন্দরী মনে মনে ভাবে—‘‘যে গরু দুধ দেয়, তার চাঁট খাওয়া যায়;’’১১৭

এই উপন্যাসেই টুকী স্বামী পরিতোষের ব্যবহারে মর্মাহত হলে তার ভয়কে আরও বাড়িয়ে স্বামীর প্রতি মনোভাবকে বিরূপ করতে সুন্দরী বলে—‘‘এই ত কেবল কলির সুরু’’১১৮ প্রবচনটি৷ অর্থাৎ লম্পট অত্যাচারী স্বামীর পীড়ন শুরু হয়ে গেছে তার উপর৷ টুকীর মা উত্তম সম্পর্কিত কটূক্তির জবাব দিতে টুকী যখন স্বামীকে সুন্দরীর সঙ্গে তুলনা করতে বাধা দেয় তখন রক্ষিতা দেহজীবী পতিতা আরেক দেহজীবির প্রতি সম্মান দেখে মনে রাগ রেখেও শান্ত সুরে বলে—‘‘হাতের পাঁচটা আঙুল সমান করে’ ত’ ভগবান গড়েননি৷৷’’১১৯

‘অথৈ জল’-এ পান্নার প্রণয়ী হয়ে কপর্দকহীন অবস্থায় ডাক্তার শশাঙ্ক তার বাসাবাড়িতে উপস্থিত হলে বাড়িউলি মাসি তাকে বিদেয় করার জন্য প্রবাদ আওড়ে বলে—‘‘একটা কথা বলি৷ স্পষ্ট কথার কষ্ট নেই৷ এ ঘরে তুমি থাকতে পারবে না৷’’১২০ মাসির সমস্ত আদেশ উপদেশ অনুরোধকে উপরোধকে উপেক্ষা করে সে যখন সেখানেই পড়ে থাকে, নড়তে চায় না তখন পান্নার ব্যবসায়িক দিকটাকে তুলে ধরে মাসি আরও বলে—‘‘ফেলো কড়ি মাখো তেল, তুমি কি আমার পর?’’১২১ অর্থাৎ সে যদি কড়ির বিনিময়ে পান্নার সঙ্গপ্রার্থী হয় তাতে সে-ও মাসির পরম আপন হয়ে উঠবে৷

তারাশঙ্করের ‘নীলকন্ঠ’ উপন্যাসে শ্রীমন্তর জেল হয়ে গেলে নিম্নশ্রেণীর নারী (যারা সময়ে-অসময়ে দেহব্যবসাও করে থাকে) পাঁচুর মা শ্রীমন্তের সাধ্বী স্ত্রী গিরিকে বলে—‘‘রাজাতে কাটিয়ে শির, কি করিবে কোন বীর৷’’১২২ এখানে ইংরাজ সরকারের আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে৷

গ্রামের মোটামোড়ল নামে পরিচিত বিপিন তার লোলুপ বাসনায় আত্মীয় সেজে গিরির সাহায্য করতে এলে পাঁচুর মায়ের মুখে উচ্চারিত হয় এই ব্যঙ্গাত্মক প্রবচনটি—‘‘গাঁ সম্পক্কে মুচি মিন্সে মামা হয়৷’’১২৩

এছাড়া গণিকাচরিত্রগুলির কথার মধ্যে বাগধারার ব্যবহারও লক্ষ করা যায়৷ যেমন—ভ্রাতৃবধূর প্রতি ক্ষিপ্ত দুর্গা ভাইয়ের দ্বারা বৌকে প্রহৃত হতে দেখে ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে—‘‘হ্যাঁ বউকে একটুকুন শাসন কর, মাথায় তুলিস না৷’’১২৪ এখানে ‘মাথায় তুলিস না’ শব্দটি ‘মাথায় তোলা’ অর্থাৎ প্রশ্রয় দেওয়া বাগ্ধারার অন্তর্ভূক্ত৷

‘পঞ্চগ্রাম’-এ ভূপাল ঈষৎ শ্লেষ ভরে দুর্গার সাহসিকতাকে বিদ্রুপ করলে দুর্গা বলে—‘‘বুকের পাটা না থাকলে থানাদার, রাত-বিরেতে প্রেসিডেনবাবুর বাংলোতে নিয়ে যাবার জন্য কাকে পেতে বল দেখি?’’১২৫ ‘বুকের পাটা’ শধটি অত্যধিক সাহস অর্থে বোঝানো হয়েছে৷

শঙ্কর বেশ্যা মুক্তোর প্রতি অনুরক্ত হয়ে বহুসময় নিষিদ্ধপল্লীতে মুক্তোর ঘরে সময় কাটাতে থাকে৷ কিন্তু মুক্তোকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তার নেই৷ মুক্তো এ বিষয়ে সতর্ক করতে তাকে বলে—‘‘গরিবের ছেলের এসব ঘোড়ারোগ কেন বাপু?’’১২৬ ‘গরিবের ঘোড়ারোগ’ কথাটি সামর্থের বাইরে বেশি ব্যয় করার প্রবণতাকে ব্যক্ত করে৷

করালীচরণের প্রণয়াকাঙ্খিনী বিগতযৌবনা কুৎসিত বারাঙ্গনা তার প্রতি করালীর বিরূপ মনোভাবকে বোঝাতে বলে—‘‘আমি ওঁর দুচক্ষের বিষ ছিলুম৷’’১২৭ দুচক্ষের বিষ অর্থাৎ যাকে সহ্য করা যায় না৷ করালীর অনুপস্থিতিতে তার ঘরবাড়ি ও পোষ্য দাঁড়কাক ও পাগলের দেখাশোনা করেও ভল্টুকে জানায় করালী আসার আগেই যেন তাকে খবর দেওয়া হয় কারণ—‘‘আমাকে এখানে দেখলে তেলে-বেগুনে জ্বলে যাবে৷’’১২৮ ‘তেলে-বেগুনে জ্বলে যাওয়া’ কথাটি অত্যধিক রাগ প্রকাশ অর্থে বোঝানো হয়েছে৷

‘অথৈ জল’-এ মাসি ডাক্তারকে ব্যঙ্গ করে বলেছে—‘‘ও! আমার ভারী নবাবের নাতি রে৷’’১২৯ নাবাবের নাতিরা আয়েশি-বিলাসী হয়৷ ডাক্তার পান্নাকে কানাকড়ি না দিয়েও মহাস্ফূর্তিতে তাকে উপভোগ করে চলেছে৷ তারই খোঁচা দিতে মাসির এ বক্তব্য৷

‘‘তোমার সঙ্গে জোড়-পায়রা হয়ে বসে থাকলে তো ওর চলবে না৷’’১৩০ এ কথাটিও ডাক্তারকে মাসি বলেছে৷ ‘জোড়-পায়রা’ অর্থাৎ সবসময় একত্রে থাকা৷ পান্না মুজরা দেহব্যবসা বাদ দিয়ে ডাক্তারকে নিয়ে মেতে উঠলে মাসি এ কথা বলে৷

‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ এক বেশ্যা বলে—‘‘অনেক ছেলের মাথা খেয়ে গহনাগুলি ক’রেছিলাম, জুয়াচোর বেটারা আমার মাথা খেলে৷’’১৩১ ‘মাথা খাওয়া’ অর্থাৎ ভুলিয়ে ভালিয়ে নেওয়া৷

গণিকাদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে যেমন মেয়েলি বাক্যরীতির ছায়াপাত ঘটেছে তেমনি ইতর শব্দ প্রয়োগও অনুপস্থিত নয়৷ যেমন—‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ সেবাদাসীরা বলে—‘‘ওগো তোমরা এস৷’১৩২

বারবনিতার দল পাঁঠা স্কন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবককে দেখে বলে—‘‘ও শালা! পাঁটাটা কি একলা খাবি?’’১৩৩

একজন রক্ষিতা তার বাবুকে বলে—

‘‘পোড়ারমুখো! কাল রাত্রে ছিলি কোথায়?’’১৩৪ স্বৈরিণী গৃহবধূ তার অবৈধ প্রণয়ীকে সম্বোধন করে লেখে ‘‘ভাই! আজি অবশ্য আসিবে৷’’১৩৫

এক গণিকা তার মাতাল লম্পট প্রেমিককে সম্বোধন করে—‘‘ওরে গুয়োটা! থাম…৷’’১৩৬

ম্যাজিট্রেট-এর কাছে বিচার চাইতে আসা এক বারবধূর সম্বোধন—‘‘হুজুর আমি কোন অপরাধ করি নাই,’’১৩৭

সিদুরেপটির দেহব্যবসায়িনীরা খদ্দের ধরে ‘ও মানুষ’ ‘ও মানুষ’১৩৮ সম্বোধন করে৷

বৃন্দবনের সেবাদাসীরা দেবতাদের সম্বন্ধে বলে—‘‘ও মা! মিন্সেরা বলে কি—’’১৩৯

‘অসীম’ উপন্যাসে মনিয়া উচ্চশ্রেণীর শিক্ষিত গণিকা৷ সে প্রণয়ীকে সম্বোধন করেছে জান, জানি, দিলের, পিয়ার, দিলদার, হুজুর, বাবুসাব ইত্যাদি সম্বোধনের দ্বারা৷ মনিয়ার মা মতিয়া গণককে সম্বোধন করেছে ‘কাফের’ বলে৷

‘পঞ্চগ্রাম’-এ দেবুর বানের তোরে ভেসে যাওয়ার খবর শুনে দুর্গার মা দুর্গাকে সম্বোধন করে বলেছে—‘‘ওলো, জামাই-পণ্ডিত ভেসে যেয়েছে লো!’’১৪০

‘জঙ্গম’-এ মুক্তোর সঙ্গিনীরা শঙ্করকে নিয়ে মুক্তো ঘরে গেলে বলেছে—‘‘ওলো, মুক্তো, শুধু জল দিসনি, একটু মিষ্টিমুখ করিয়ে দিস বাবুকে৷’’১৪১

মাসি ‘অথৈ জল’ উপন্যাসে ডাক্তারকে বলে—‘‘বলি ওগো ভালোমানুষের ছেলে, একটা কথা তোমায় শুধুই বাপু—’’১৪২

পান্না ডাক্তারকে বলে—‘‘নাও ওগো গুরুঠাকুর, কাল সকালে যখন খুশি তুমি কৃপা করে আমায় উদ্ধার কোরো—’’১৪৩ পান্না তার রোজগারের গল্প শোনালে তার সারল্য দেখে নির্বাক হয়ে যায় ডাক্তার৷ তাকে চুপ করতে থাকতে দেখে সে বলে—‘‘হ্যাঁগো, চুপ করে রইলে কেন?’’১৪৪

‘কবি’-তে বসন্তর ক্ষুরধার হাসিতে মাসি বিরক্ত প্রকাশ করলে বসন্ত বলে—‘‘ওলো মাসি লো—কয়লামাণিকেরও মনের মানুষ আছে লো৷’’১৪৫ মাসি তার দলের মেয়েদের আহ্বান করে—‘‘ওলো বসন, নির্মলা ইদিকে আয়৷’’১৪৬

সম্বোধনের ক্ষেত্রে এই যে শব্দ প্রয়োগ বা মেয়েলি ভাষারীতির অনুসরণ তা গণিকাদের ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ৷

গণিকারা সাধারণ নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যে শাপ-শাপান্ত করে৷ এমন নিদর্শনও পাওয়া যায় বহু উপন্যাসে৷ মাঝি-মল্লাদের টিপ্পনীর জবাবে ‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ দেহব্যবসায়িনীরা বলে—‘‘তুমি নৌকো ডুবি হয়ে মর—৷’’১৪৭ ‘গণদেবতা’-য় পাতু গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চাইলে তার মায়ের শাপ শাপান্ত—‘‘মরুক, মরুক ড্যাকরা—এই অঘ্রাণের শীতে সান্নিপাতিকে মরুক!’’১৪৮

গ্রামে কলেরা হয়েছে শোনামাত্রই দুর্গা নিজের ভালো-মন্দ ভুলে যখন রোগী দেখতে দৌড়ে চলে যায় তখন তার উদ্দেশ্যে তার মায়ের শাপ-শাপান্ত—‘‘রাক্ষস, প্যাটে আগুন নাগুক—আগুন নাগুক—আগুন নাগুক! মরুক, মরুক, মরুক! আর হারামজাদী, নচ্ছারী, বানের আগে কুটো,—সববাগ্যে তোর যাওয়ার কি দরকার শুনি?’’১৪৯

উপমা, অব্যয়, প্রত্যয়, বিশেষণ ইত্যাদিরও প্রয়োগ রয়েছে পণ্যাঙ্গনাদের ভাষায়৷ মুক্তো শঙ্করের ভালোবাসাকে জাপানী ফানুষের সঙ্গে তুলনা করেছে ‘জঙ্গম’ উপন্যাসে৷—‘‘আপনারা জাপানি ফানুস, দুদিন একদিনই দেখতে বেশ৷’’১৫০ তার প্রতি শঙ্করের মোহ জাপানী ফানুষের সঙ্গে উপমিত৷ ‘কবি’-তে নিতাই-এর নিকষ কালো রূপ দেখে তাকে কয়লার সঙ্গে উপমিত করে বসন্ত বলেছে—‘‘ওহে কয়লা-মানিক!’’১৫১ এখানে কয়লার কালো এবং নিতাই-এর কালো একাকার হয়ে গেছে৷

নানা শ্রেণীর অব্যয়ের ব্যবহারও দেখা যায়৷ যথা—দুর্গার কথায়—‘‘ওরে বাস রে! বসে বসে কি এত ভাবছ গো?’’১৫২ ঝুমুর দলের নেত্রী নিতাইকে তার গান শুনে বলে—‘‘পদখানি তো বড় ভাল বাবা৷’’১৫৩ ‘দেবদাস’-র চন্দ্রমুখীর কথায় একাধিক অব্যয়ের ব্যবহার ‘‘যেদিন তুমি এখানে প্রথম এলে, সেইদিন থেকেই তোমার উপর আমার দৃষ্টি পড়েছিল! তুমি ধনীর সন্তান তা জানতাম; কিন্তু ধনের আশায় তোমার পানে আকৃষ্ট হইনি৷’’১৫৪ রাখাল বালকের মুখে প্রেমের গান শুনে দুর্গা বলে—‘‘মরণ আর কি ছোঁড়ার!’’১৫৫ ডাক্তার পান্নার হাত ধরে গভীর রাত্রে ঘরে আসার কারণ জানতে চাইলে সে বসে—‘‘ছুঁলেন যে বড়?’’১৫৬

বাংলা প্রত্যয়ের নিখুঁত প্রয়োগ মেলে মুক্তো, পান্না, টুকী, পিয়ারীর কথায়৷ মুক্তো শঙ্করকে বলে—‘‘আপনার মত গঙ্গাজলমার্কা ছেলে দেখলে আমার গায়ে জ্বর আসে৷’’১৫৭ বেশ্যালয়ের মাসি মুক্তোকে সাবধান করে দিতে বলে—‘‘ওসব কাব্যিমার্কা ছোঁড়াকে যেন আমল না দেয় সে৷’’১৫৮ পরিতোষের রক্ষিতা সুন্দরী টুকীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় প্রয়োগ করে প্রত্যয়যুক্ত শব্দের—‘‘ওরে আমার সোয়ামী-উলি, বেরো বলছিস কাকে তুই?’’১৫৯ শ্রীকান্তকে তার সামাজিক মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন করে পিয়ারীবাই তার হিতার্থে বলে—‘‘বাবু শিকারে এসে একটি বাইউলি সঙ্গে করে দুপুর রাত্রে ভূত দেখতে গিয়েছিলেন৷’’১৬০

গণিকারা তাদের ভাষাব্যবহারের প্রসঙ্গে শ্লীল-অশ্লীল নানা ধরনের বিশেষণের প্রয়োগ করেছে যা তাদের ভাষায় বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে৷

‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ গণিকারা তাদের প্রণয়ী খদ্দের বাবুদের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত বিশেষণ প্রয়োগ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—‘মিন্সে’, ‘শালা’, ‘গুয়োটা’, ‘পোড়ারমুখো’৷

‘করুণা’য়—‘বুড়া’, ‘বুড়াশেয়াল’, ‘মন্দমলয়ানিল,’ ‘বিষধর সর্প,’ ‘বৃদ্ধশৃগাল’ ইত্যাদি বিশেষণ ইন্দ্রলেখা গোবিন্দগুপ্তের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে৷ ‘বৃদ্ধ বানর’ বলে বিশেষায়িত করেছে বৃদ্ধ কুমারগুপ্তকে৷

‘অসীম’ উপন্যাসে মনিয়া অসীমের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে প্রয়োগ করেছে যে সমস্ত বিশেষণ পদের তা হল—‘জান’, ‘জানি’, ‘দুনিয়ার দৌলত’, ‘দিলের’, ‘মেরিজান’, ‘পিয়ার’, ‘হুজুর’, ‘বাবুসাহেব’, ‘হারামখোর’, ‘কাফের’, ‘হারামজাদা’, ‘নিমকহারাম’৷

সরস্বতী বৈষ্ণবী নবীনকে বিশেষায়িত করেছে ‘মিন্সে’, ‘পোড়ারমুখো’—(তার প্রাক্তন গোঁসাই পিতাম্বরের উদ্দেশ্যে)

‘গণদেবতা’-য় দুর্গার মা ছেলে পাতুর উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে ‘ড্যাকরা’, ‘খালভরার’ ইত্যাদি বিশেষণ৷ মেয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে—‘নচ্ছারী’, ‘হারামজাদী’, ‘দুগগাবিবি’ ইত্যাদি৷ এছাড়া ‘কামারমাগী’ বলেছে কামারবৌকে৷ পাতুর বৌ দুর্গার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে ‘পোড়ারমুখী’, ‘ছেনাল’, ‘কলঙ্কিনী’ ইত্যাদি৷ দুর্গা রাগ করে তার মাকে বলেছে ‘হারামজাদী’, পঞ্চগ্রাম-এ শ্রীহরির অনুচর কালুর উদ্দেশ্যে বলেছে—‘বদমাস’, ‘পাজী’, রাখাল বালককে ‘মুখপোড়া’ পদ্মকে বলেছে ‘খালভরি’, ফুল্লরার বারমাস্যার গান শুনে তার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে ‘মাগী’ বিশেষণ৷

বিন্দি তার খদ্দেরদের বিশেষিত করেছে ‘মুখপোড়া’ বলে৷ ‘অথৈ জল’-এ পান্না মাসিকে রাগ করে বলেছে ‘বুড়ি’৷

‘শহরবাসের ইতিকথা’-য় গণিকা চাঁপা জ্যোতির বিশ্বাসঘাতক বন্ধু শ্রীপতিকে গালিগালাজ করে যে সমস্ত বিশেষণ ব্যবহার করে তা শ্রুতি সুখকর নয়৷ যেমন—‘মুখপোড়া’, ‘বজ্জাত’ ইত্যাদি অপশব্দ তার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে৷

নারীভাষার সহজ সুরটি তো এই শ্রেণীর নারীদের প্রায় প্রতিটি কথার মধ্যে৷ ‘দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন’-এ রেলগাড়িতে বসে পরপুরুষের প্রণয়পাশে আবদ্ধ হয়ে স্বামীকে অস্বীকার করে পুরুষটিকে আপান করে নিয়ে বলে—‘‘মর মিন্সে—তুই আমার স্বামী, না ইনি আমার স্বামী?’’১৬১ এই বাক্যে ফুটে উঠেছে নারীভাষার সহজ সুরতান৷ নবীন নরসুন্দরকে ছদ্মবেশে পাটনা শহরে দেখে সহজ নারীসুলভ ভঙ্গিমায় সরস্বতী বলে উঠে—‘‘ওমা, নবীন দাদা বুঝি! এ আবার কি ঢং?’’১৬২ ইন্দ্রলেখা যখন কপট শাপ-শাপান্ত করে প্রণয় আকর্ষণের চেষ্টা করে সংঘস্থবির হরিবলের কাছ থেকে ‘‘তুমি মর, চিতায় আরোহণ কর, আমার রাত্রিবাসের সাধ অনেকদিন মিটিয়াছে,’’১৬৩ তখন তার মধ্যেও ধ্বনিত হয় নারীর নিজস্ব ভাষারীতি৷

‘গণদেবতা’য় পাতুর স্ত্রীর বিলাপ—‘‘ওগো, বাবুমশায়গো! খুন করলে গো!’’১৬৪ দুর্গার মায়ের মেয়েকে বলা কথা—‘‘মরণ! গেলি ক্যানে তবে ঢং করে?’’১৬৫ দুর্গার বিলুকে বলা—‘‘মরণকালে তোমরা কেউ আমাকে স্বামী ধার দিয়ো ভাই কিন্তুক!’’১৬৬ সবই যেন নারীভাষার সহজসুরে বাঁধা৷

‘অথৈ জল’-এ পান্না অযাচিত প্রেম প্রত্যাশায় ডাক্তারের চেম্বারে এলে ডাক্তার যখন তাকে রূঢ় কথা না বলে বসতে বলে তখন নারীসুলভ ভঙ্গিমায় সে বলে উঠে—‘‘ওমা কি ভাগ্যি! আমাকে আবার বসতে বলা! কক্ষনো তো শুনি নি৷’’১৬৭ অথবা—‘‘ভাল, ভাল৷… ওমা, কার মুখ দেখে না জানি আজ উঠেছিলুম, রোজ রোজ তার মুখই দেখবো৷’’১৬৮

‘জঙ্গম’ উপন্যাসে শঙ্করের দ্বারা বিপদমুক্ত হয়ে মাসি সরল কন্ঠে তাকে আশীর্বাদ করে বলে—‘‘বেঁচে থাক তুমি বাবা৷… তুমি না থাকলে কি যে বিপদ হত আজ আমার!’’১৬৯ মুক্তোর ঘরে একটা কবিতার লাইন দেখে সে প্রসঙ্গে শঙ্কর তাকে জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয়—‘‘জানি না বাবু, কত লোক আসে যায়, কে কখন লিখেছে, অত খেয়াল করিনি৷’’১৭০ এর মধ্যেও ধ্বনিত হয় নারীর ভাষার সহজ বৈশিষ্ট্য৷

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসে ঝুমুরদলের কর্ত্রী মাসি যখন বসন্তকে বলে যে তার ওস্তাদ নিতাই কবিয়ালকে পছন্দ হয় কি না তখন বসন্ত বলে—‘‘মা গো! ও যে বড্ড কালো; মা—গ৷’’১৭১ আবার ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে শ্রীকান্তকে তিরস্কার করে পিয়ারীবাই যখন বলে—‘‘চাকর-বাকরের সামনে আর ঢলাঢলি কোরো না—তোমার পায়ে পড়ি একবার উঠে এসো—’’১৭২ তখন মেয়েলি কথার চিরন্তন সুরটিকে অনুধাবন করে নিতে অসুবিধা হয় না৷ ‘লঘুগুরু’-তে টুকীর স্বামীর রক্ষিতা সুন্দরী যখন পরিতোষকে বলে—‘‘তোমায় নিয়ে আমার চিরকালই দুঃখে গেল৷ দুঃখে ভাজা হয়ে গেছি৷’’১৭৩ তখন তার মুখে ধ্বনিত হয় চিরকালীন নারীভাষার ভাষ্যরূপ৷

রূপাজীবাদের ভাষার মধ্যে শব্দদ্বৈত বা দ্বৈত শব্দের ব্যবহারও কম নয় যেমন—‘গণদেবতা’-য়—দুর্গা তার মাকে বলে—‘‘রান্নাবান্না করবি, না প্যান প্যান করে কাঁদবি?’’১৭৪

ইন্সপেক্টরকে বলে—‘‘আজ্ঞে হুজুর, আমি নষ্ট-দুষ্ট—এ কথা সত্যি৷’’১৭৫

কামারবউকে বলে—‘‘কচি-কাঁচা দেখলে আমার তো গা ঘিন-ঘিন করে ৷ মা গো!’’১৭৬ ‘‘সেই ট্যা-ট্যা করে কাঁদবে,’’১৭৭

‘শুভদা’য় কাত্যায়নী তার বাবুকে বলে—‘‘মিছে ভ্যানভ্যান করচ কেন?’’১৭৮

এছাড়াও রূপোপজীবিনীদের ভাষায় আরও নানারকম শব্দ প্রয়োগ দেখা যায়৷ যেমন—অপভাষা, মিশ্রভাষার ব্যবহার৷ সুকুমার সেন অপভাষার সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন—‘‘এক ভাষাগোষ্ঠীর (অথবা উপভাষা সম্প্রদায়ের) ব্যক্তি যদি ভালো করিয়া না শিখিয়া অপর ভাষা (অথবা অপর উপভাষা) ব্যবহার করে তবে উচ্চারণে ও শব্দপ্রয়োগে বিকৃতি ও ভ্রমপ্রমাদ অবশ্যম্ভাবী৷ এমন অবস্থায় বিকৃত ও ভ্রমপ্রমাদপূর্ণ বাগব্যবহার অপভাষা (অথবা অপ-উপভাষা) বলা যায়৷’’১৭৯ যেমন বসন্ত মরে গেলে দলনেত্রী প্রৌঢ়া আক্ষেপ করে বলে—‘‘আমার অদেষ্ট দেখ বাবা৷ আমিই হলাম ওয়ারিশান!’’১৮০ ইংরেজি ওয়ারিশিয়ান মাসির অজ্ঞতার কারণে ওয়ারিশান অপভাষা হয়েছে৷ ‘‘যাই, শুকনো কাপড় পরে আসি৷ ‘নিমুনি’ হলে কে করবে বাবা!’’১৮১ বসন্ত এই বাক্যে ‘নিমুনি’ শব্দটি বিকৃত উচ্চারণ করেছে৷ তাই তা অপভাষা৷ মূল শব্দ হল ‘নিউমোনিয়া’৷

‘গণদেবতা’য় দুর্গা বলে—‘‘উকিল ব্যালেস্টার—সাত-সতেরো বলা ক্যানে শুনি?’’১৮২ ব্যালেস্টার শব্দটির প্রকৃত উচ্চারণ ব্যারিস্টার; দুর্গার মুখে উচ্চারিত হয়েছে বিকৃতভাবে৷

এছাড়া মিশ্র শব্দের ব্যবহার দেখা যায় নিম্নোক্ত উদাহরণে৷

‘‘বলি, বাড়িতে কি একেবারে আউট হয়ে গেছ নাকি?’’১৮৩

‘‘শেষে তামাসার মত কিছু দিয়ে গেলে৷’’১৮৪ পিয়ারীর কথায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার এবং চন্দ্রমুখী বলেছে বাংলা ও আরবির মিশ্র বাক্য৷ দুর্গার মুখে উচ্চারিত হিন্দি শব্দের মিশ্র প্রয়োগের উদাহরণ হল—‘‘গতর থাকতে ভিখ মাঙব ক্যানে?’’১৮৫

নানা সময়ের নানা শ্রেণীর গণিকাচরিত্র সম্বলিত উপন্যাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে গণিকাচরিত্রগুলির নামকরণের ক্ষেত্রেও রচনাকারেরা ভিন্ন ধরনের শব্দ চয়ন করেছেন৷ প্রায় প্রত্যেকটা নামের মধ্যেই রয়েছে তাদেরকে উপভোগ করার ব্যঞ্জনা যা উপন্যাসের ভাষা আলোচনার ক্ষেত্রে তাৎপর্যবাহী৷ তাদের নামগুলির সঙ্গে সাধারণ নারীচরিত্রের নামের বিস্তর ফারাক৷ উদাহরণ দিলেই তা সুস্পষ্ট হবে৷ যেমন—

মনিয়া—(অসীম) পাখি বিশেষ৷ খাঁচায় বন্দি করে পোষা হয়৷

ইন্দ্রলেখা—(করুণা) বাইজির নাম৷

মদনিকা—(করুণা) মদন বা মন্মথর সঙ্গে সম্পৃক্ত৷

হীরা (বিষবৃক্ষ)—রত্ন বিশেষ৷ অঙ্গে ধারণ করা হয়৷ (সৌন্দর্যবৃদ্ধি)৷

স্বর্ণবাই (স্বর্ণবাই)—বাইজির নাম৷

চন্দ্রমুখী (দেবদাস)—চাঁদের সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনীয়৷

পিয়ারীবাই (শ্রীকান্ত)—প্রেম উদ্রেককারী৷

পান্না (অথৈ জল)—রত্ন বিশেষ৷ অঙ্গে ধারণ করা হয় (সৌন্দর্যবৃদ্ধি)৷

মুক্তো (জঙ্গম)—রত্ন বিশেষ৷ অঙ্গে ধারণ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়৷

কালোজাম (জঙ্গম)—ফল বিশেষ৷ খাওয়া হয়৷

আঙ্গুর (জঙ্গম)—ফল বিশেষ৷ খাওয়া হয়৷

টিয়া (জঙ্গম)—পাখি বিশেষ৷ খাঁচায় পোষা হয়৷

আসমানী (বৈতরণীর তীরে)—রঙ বিশেষ৷

সুন্দরী (লঘুগুরু)—সৌন্দর্যজ্ঞাপক৷

উত্তম (লঘুগুরু)—শ্রেষ্ঠ অর্থে৷

এই নামকরণের মধ্যেও যেন তাদের চারিত্রিক স্বতন্ত্রতা উজ্জ্বল হয়ে উঠে৷

এভাবে বিভিন্ন উপন্যাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বারবনিতারা তাদের বাচনিক স্বতন্ত্রতায় বিশেষ বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছে অন্যান্য চরিত্রগুলির চেয়ে; তাদের এই ভাষা ব্যবহার তাদের নিজস্ব স্বরূপ ও অবস্থান বোঝাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷

তথ্যসূত্র :

 ১. অভ্র বসু, বাংলা স্ল্যাং সমীক্ষা ও অভিধান, পৃ-২৪৷

 ২. সুকুমার সেন, ভাষার ইতিবৃত্ত, পৃ-২৩৷

 ৩. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-১৬০৷

 ৪. তদেব, পৃ-২১৭৷

 ৫. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৯৫৷

 ৬. তদেব, পৃ-২১১৷

 ৭. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-১৮৬৷

 ৮. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৩৬৷

 ৯. তদেব, পৃ-৩৬৷

 ১০. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৪৭৷

 ১১. তদেব, পৃ-৪৩৭৷

 ১২. তদেব, পৃ-৪৩৯৷

 ১৩. তদেব, পৃ-৪৪৪৷

 ১৪. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-১৯৭৷

 ১৫. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শুভদা, পৃ-২২৷

 ১৬. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৭৯৷

 ১৭. তদেব, পৃ-১৯৫৷

১৮. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-২৪২৷

১৯. তদেব, পৃ-২৫৭৷

২০. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-৩২৩৷

২১. তদেব, পৃ-৫৩৫৷

২২. তদেব, পৃ-৫৩৫৷

২৩. তদেব, পৃ-৫১৭৷

২৪. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শুভদা, পৃ-২২৷

২৫. তদেব, পৃ-২২৷

২৬. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৪৪৷

২৭. তদেব, পৃ-৪৪৪৷

২৮. তদেব, পৃ-৪৫৭৷

২৯. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-১৬২৷

৩০. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৯৫৷

৩১. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-১৪৩৷

৩২. তদেব, পৃ-১৪৪৷

৩৩. তদেব, পৃ-১৪৫৷

৩৪. তদেব, পৃ-৪৮৩৷

৩৫. তদেব, পৃ-৪৮৩৷

৩৬. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-২২৷

৩৭. তদেব, পৃ-৪২৷

৩৮. তদেব, পৃ-৪২৷

৩৯. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-১৩০৷

৪০. বনফুলের রচনা সমগ্র (১ম খণ্ড), পৃ-৩০২৷

৪১. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৩৮৷

৪২. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-১০২৷

৪৩. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-২৯৩৷

৪৪. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৪২৷

৪৫. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-৪১৷

৪৬. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-১৪৬৷

৪৭. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শুভদা, পৃ-২২৷

৪৮. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, (সম্পাদিত) সঞ্জীব রচনাবলী, পৃ-১২৷

৪৯. তদেব, পৃ-১২৷

৫০. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৬৪৷

৫১. মানিক উপন্যাস সমগ্র (১ম খণ্ড), পৃ-৭৫৯৷

৫২. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-২৫৭৷

৫৩. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগম, পৃ-২৯৪৷

৫৪. বঙ্কিম উপন্যাস সমগ্র, পৃ-৮১৯৷

৫৫. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-১৩৪৷

৫৬. তদেব, পৃ-১৩৪৷

৫৭. শরৎ রচনা সমগ্র, পৃ-১১৮৷

৫৮. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-১০৪৷

৫৯. তদেব, পৃ-২১০৷

৬০. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-৭৬৷

৬১. তদেব, পৃ-৭৯-৮০৷

৬২. বনফুলের রচনা সমগ্র (১ম খণ্ড), পৃ-২৮৫৷

৬৩. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শুভদা, পৃ-২২৷

৬৪. তদেব, পৃ-৯০৷

৬৫. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৫৭৷

৬৬. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-১০৮৷

৬৭. তদেব, পৃ-১০৮৷

৬৮. তদেব, পৃ-২৪৫৷

৬৯. তদেব, পৃ-৯৭৷

৭০. তদেব, পৃ-৯৭৷

৭১. তদেব, পৃ-৯৭-৯৮৷

৭২. তদেব, পৃ-৩৭৭৷

৭৩. বনফুলের রচনা সমগ্র (১ম খণ্ড), পৃ-৩১৫৷

৭৪. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৭৮৷

৭৫. তদেব, পৃ-১৭৮৷

৭৬. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪২৯৷

৭৭. তদেব, পৃ-৪৩১৷

৭৮. তদেব, পৃ-৪৩২৷

৭৯. তদেব, পৃ-৪৩৬৷

৮০. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-২৭৩৷

৮১. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৭৮৷

৮২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-১৩৪-১৩৫৷

 ৮৩. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-৪৭১৷

 ৮৪. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-১৯১৷

 ৮৫. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৫৫৷

 ৮৬. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-৫১৬৷

 ৮৭. তদেব, পৃ-৫১৬৷

 ৮৮. তদেব, পৃ-১০৪৷

 ৮৯. তদেব, পৃ-৪৮২৷

 ৯০. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-১২৬৷

 ৯১. তদেব, পৃ-২৫৩৷

 ৯২. বনফুলের রচনা সমগ্র (১ম খণ্ড), পৃ-২৮৩৷

 ৯৩. তদেব, পৃ-৩০২৷

 ৯৪. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেবদাস, পৃ-৮৫৷

 ৯৫. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৯৬৷

 ৯৬. মানিক উপন্যাস সমগ্র (১ম খণ্ড), পৃ-৭৫৯৷

 ৯৭. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-২১১৷

 ৯৮. তদেব, পৃ-৪৮২৷

 ৯৯. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শুভদা, পৃ-২৩৷

১০০. জগদীশ গুপ্ত, লঘুগুরু ও অসাধু সিদ্ধার্থ, পৃ-৩২৷

১০১. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৪০৷

১০২. তদেব, পৃ-৪২৷

১০৩. তদেব, পৃ-৪৩৷

১০৪. তদেব, পৃ-৯৯৷

১০৫. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-৮১৷

১০৬. তদেব, পৃ-১২৬৷

১০৭. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৩৬৷

১০৮. তদেব, পৃ-১৬২৷

১০৯. তদেব, পৃ-১৬২৷

১১০. তদেব, পৃ-১৮০৷

১১১. তদেব, পৃ-২১৭৷

১১২. তদেব, পৃ-৮৯৷

১১৩. তদেব, পৃ-১৩৬৷

১১৪. তদেব, পৃ-১৩৬৷

১১৫. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৯৫৷

১১৬. জগদীশ গুপ্ত, লঘুগুরু ও অসাধু সিদ্ধার্থ, পৃ-৬৭৷

১১৭. তদেব, পৃ-৫৭৷

১১৮. তদেব, পৃ-৬১৷

১১৯. তদেব, পৃ-৫৭৷

১২০. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৩৭৷

১২১. তদেব, পৃ-৪৩৯৷

১২২. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-২২৭৷

১২৩. তদেব, পৃ-২২৮৷

১২৪. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৩৬৷

১২৫. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-৪০৷

১২৬. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-২১২৷

১২৭. তদেব, পৃ-২৭১৷

১২৮. তদেব, পৃ-২৭১৷

১২৯. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৪৫৷

১৩০. তদেব, পৃ-৪৪৫৷

১৩১. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-৩১২৷

১৩২. তদেব, পৃ-৩৯৷

১৩৩. তদেব, পৃ-২৪১

১৩৪. তদেব, পৃ-২৫৭৷

১৩৫. তদেব, পৃ-২৭৩৷

১৩৬. তদেব, পৃ-১০২৷

১৩৭. তদেব, পৃ-৩১১৷

১৩৮. তদেব, পৃ-৩৬৫৷

১৩৯. তদেব, পৃ-৩৯৷

১৪০. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-১৪৬৷

১৪১. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-১৭৮৷

১৪২. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৩৯৷

১৪৩. তদেব, পৃ-৪৪৭৷

১৪৪. তদেব, পৃ-৪৭৮৷

১৪৫. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-৮২৷

১৪৬. তদেব, পৃ-১৩৫৷

১৪৭. দুর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-৩২৫৷

১৪৮. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৪২৷

১৪৯. তদেব, পৃ-২১৬৷

১৫০. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-২১২৷

১৫১. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-৭০৷

১৫২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৬৫৷

১৫৩. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-৬৮৷

১৫৪. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেবদাস, পৃ-৬৯৷

১৫৫. তারাশঙ্কর রচনাবলী (৫ম খণ্ড), পৃ-৮১৷

১৫৬. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৩১৷

১৫৭. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-২১২৷

১৫৮. তদেব, পৃ-১৯৫৷

১৫৯. জগদীশ গুপ্ত, লঘুগুরু ও অসাধু সিদ্ধার্থ, পৃ-৬৯৷

১৬০. শরৎ রচনাসমগ্র, পৃ-৩৭৷

১৬১. দূর্গাচরণ রায়, দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, পৃ-২৩৮৷

১৬২. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী (উপন্যাস, ২য় খণ্ড), পৃ-১৮৬৷

১৬৩. তদেব, পৃ-৪৮৩৷

১৬৪. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-২০৷

১৬৫. তদেব, পৃ-৪১৷

১৬৬. তদেব, পৃ-৭৩৷

১৬৭. বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (২য় খণ্ড), পৃ-৪৩৪৷

১৬৮. তদেব, পৃ-৪৩৪৷

১৬৯. বনফুল, জঙ্গম, পৃ-২৪৷

১৭০. তদেব, পৃ-১৯৩৷

১৭১. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-৭০৷

১৭২. শরৎ রচনাসমগ্র, পৃ-৪৭৷

১৭৩. জগদীশ গুপ্ত, লঘুগুরু ও অসাধু সিদ্ধার্থ, পৃ-৪১৷

১৭৪. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৪২৷

১৭৫. তদেব, পৃ-২১০৷

১৭৬. তদেব, পৃ-৭৯৷

১৭৭৷ তদেব, পৃ-৮০৷

১৭৮. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শুভদা, পৃ-২২৷

১৭৯. সুকুমার সেন, ভাষার ইতিবৃত্ত, পৃ-২২৷

১৮০. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি, পৃ-১৩৬৷

১৮১. তদেব, পৃ-৭০৷

১৮২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৩৯৷

১৮৩. শরৎ রচনাসমগ্র, পৃ-৩৭৷

১৮৪. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেবদাস, পৃ-৬৯৷

১৮৫. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গণদেবতা, পৃ-৩৯৷

.

গ্রন্থপঞ্জি

ক. আকর গ্রন্থ :

১. কয়াল, অক্ষয়কুমার (সম্পাদিত) – ধর্মমঙ্গল রূপরাম চক্রবর্তী বিরচিত,ভারবি, কলকাতা, জানুয়ারি,২০১১৷

২. দেবী, কুমারী শ্রীমতী মানদা, – শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত, অরুণা প্রকাশন, কলকাতা, জুলাই,২০১৩৷

৩. গাঙ্গুলী, শাশ্বতী, – সঞ্জয় ভট্টাচার্য : একটি পরিক্রমা, পুস্তক বিপণি, জানুয়ারী, কলকাতা, ২০১৫৷

৪. ঘোষ, উত্তম (সম্পাদনা) – বাৎস্যায়ণ প্রণীত কামসূত্র, সাহিত্য তীর্থ, কলকাতা, বইমেলা, জানুয়ারি,২০০৩৷

 ৫. চট্টোপাধ্যায়, তপনকুমার – গোপীচন্দ্রের গান : পাঠকের চোখে, প্রজ্ঞাবিকাশ, কলকাতা, জুলাই ২০১৪৷

৬. চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র -উপন্যাস সমগ্র, সাহিত্যম, কলকাতা, ১৪০৯৷

 ৭. চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র -দেবদাস, গীতাঞ্জলী, কলকাতা, ১৪০৯ বঙ্গাব্দ৷

 ৮. চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র – শরৎ রচনাসমগ্র (৩), বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৯৷

 ৯. চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র – শুভদা, ইউনাইটেড পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৪০৮৷

১০. দাশ, নির্মল, – চর্যাগীতি পরিক্রমা, দে’জ পাবলিশিং,তৃতীয় সংস্করণ, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০০৫৷

১১. দেবশর্ম্মা, শ্রী তারাপ্রসন্ন কর্ত্তৃক অনুদিত ও সম্পাদিত – বাল্মীকি রামায়ণ (সরল বাংলা সার অনুবাদ), ওরিয়েন্টাল পাবলিশিং কোং, কলকাতা, ১৪ই মার্চ, ১৯৯৬৷

১২. নাগ, অরুণ (সম্পাদিত) -সটীক হুতোম প্যাঁচার নকশা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, আশ্বিন, ১৩৯৮৷

১৩. বনফুল – জঙ্গম, বাণীশিল্প, কলকাতা, জুলাই, ২০১০৷

১৪. বনফুল – বনফুলের রচনা সমগ্র (প্রথম খণ্ড ও ষষ্ঠ খণ্ড), বাণীশিল্প, কলকাতা, আগষ্ট, ২০১২৷

১৫. বনফুল – বনফুলের রচনাসমগ্র (চতুর্থ খণ্ড), বাণীশিল্প, আগস্ট, কলকাতা, ২০১২৷

১৬. বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিতকুমার ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় (সম্পাদিত)- রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাবলী, (উপন্যাস) দ্বিতীয় খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, সেপ্টেম্বর ১৯৯৩, কলকাতা৷

১৭. বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিতকুমার, – সঞ্জীব রচনাবলী (সম্পূর্ণ), মণ্ডল বুক হাউস, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩, কলকাতা৷

১৮. বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাদাস, – বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড) শুভম, কলকাতা, দ্বিতীয় পরিমার্জিত সংস্করণ, জানুয়ারী, ২০১২৷

১৯. বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর – কবি, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, শ্রাবণ, ১৪২০৷

২০. বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর – গণদেবতা, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, কার্তিক, ১৪২০৷

২১. বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর – রচনাবলী (চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ড), মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, অগ্রহায়ণ, ১৪১৭৷

২২. বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ, – বিভূতিভূষণ উপন্যাস সমগ্র, (১ম-২য় খণ্ড), শুভম, জানুয়ারী, ২০১২, কলকাতা৷

২৩. বন্দ্যোপাধ্যায়, মানবেন্দু(সম্পাদিত) – কলহণ পণ্ডিত বিরচিত রাজতরঙ্গিণী, সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার, কলকাতা, বইমেলা, ২০১৩৷

২৪. বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক – মানিক উপন্যাস সমগ্র, (১ম ও ২য় খণ্ড), কামিনী প্রকাশালয়, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১৭৷

২৫. বন্দ্যোপাধ্যায়, রঞ্জন (সম্পাদনা) – ইন্দ্রনাথ গ্রন্থাবলী (১-২ খণ্ড), দীপ প্রকাশন, ২০০৮, কলকাতা৷

২৬. বিনোদিনী দাসী – আমার কথা ও অন্যান্য রচনা, সুবর্ণরেখা, ১৩১৯৷

২৭. বিশী, প্রমথনাথ (সম্পাদিত) – ভূদেব রচনা সম্ভার, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, তৃতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণ, ভাদ্র, ১৩৭৫৷

২৮. ভট্ট, মহাকবি সোমদেব – কথাসরিৎসাগর, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০১২৷

২৯. ভট্ট, মহাকবি সোমদেব বিরচিত – কথাসরিৎসাগর, পুনঃকথন অদ্রীশ বর্ধণ,পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০১২৷

৩০. ভট্টাচার্য, ডক্টর দেবীপদ, (সম্পাদিত) – গিরিশ রচনাবলী, (পঞ্চম খণ্ড), সাহিত্য সংসদ, তৃতীয় মুদ্রণ, এপ্রিল, ২০০২, কলকাতা৷

৩১. ভট্টাচার্য, মৌ (সম্পাদিত) – বেশ্যাপাড়ার পাঁচটি দুর্লভ সংগ্রহ, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, জানুয়ারি, ২০১১৷

৩২. মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাস বিরচিত – মহাভারত (১ম খণ্ড), আদিপর্ব, বর্ধমান রাজবাটী বঙ্গানুবাদ ভারবি, ১৩/১ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রীট, কলকাতা-১২

৩৩. মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাস বিরচিত – মহাভারত (২য় খণ্ড), বনপর্ব ও সভাপর্ব, বর্ধমান রাজবাটী বঙ্গানুবাদ ভারবি, ১৩/১ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রীট, কলকাতা-১২৷

৩৪. মাইতি, ড. খগেন্দ্রনাথ (সম্পাদিত) – আলালের ঘরের দুলাল এবং মদ খাওয়া বড় দায়/জাত থাকার কি উপায়, প্যারীচাঁদ মিত্র, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, ১লা বৈশাখ, ১৪১৩৷

৩৫. মিস, শেফালি – সন্ধ্যারাতের শেফালি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড কলকাতা, ডিসেম্বর, ২০১৪৷

৩৬. মুখোপাধ্যায়, শ্রীভুবনচন্দ্র – হরিদাসের গুপ্তকথা, সটীক সংস্করণ, সম্পাদনা অর্ণব সাহা, সপ্তর্ষি প্রকাশন, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১৪৷

৩৭. মুখোপাধ্যায়, সুখময় (সম্পাদিত) – চণ্ডীমঙ্গল পরিক্রমা, প্রজ্ঞাবিকাশ, কলকাতা, ২০১৬৷

৩৮. রায়, শ্রীদুর্গাচরণ – দেবগণের মর্ত্ত্যে আগমন, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০০১৷

৩৯. রোজারিও, বকুল – ম্যলেন্স হান্না ক্যাথেরিন ফুলমণি ও করুণার বিবরণ, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৩৷

৪০. সরকার, সৌমেন্দ্রনাথ – ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলা সাহিত্য, বর্ণালী, কলকাতা, জুলাই, ২০০১৷

৪১. সেন, দীনেশ চন্দ্র – মৈমনসিংহ-গীতিকা, প্রজ্ঞাবিকাশ, কলকাতা, মে, ২০১৬৷

৪২. সেন, সুকুমার (সম্পাদক) – শরৎসাহিত্যসমগ্র, দে’জ পাবলিকেশন, অষ্টম মুদ্রণ, শ্রাবণ ১৪২৩, কলকাতা৷

৪৩. সেন, সুকুমার (সম্পাদিত) – চণ্ডীমঙ্গল, সাহিত্য অকাদেমি, কলকাতা, ষষ্ঠ মুদ্রণ, ২০১৩৷

৪৪. সেনগুপ্ত, ডঃ সুবোধচন্দ্র, দেবীপদ ভট্টাচার্য (সম্পাদিত) – শরৎরচনাবলী, জন্মশতবার্ষিক সংস্করণ শরৎ সমিতি, (পঞ্চম খণ্ড); স্নানযাত্রা, ১৪ আষাঢ়, ১৩৮৭৷

৪৫. হালদার, শ্রী গোপাল (প্রধান সম্পাদক) শ্রী বারিদবরণ ঘোষ (সম্পাদক) – শিবনাথ রচনাসংগ্রহ, সাক্ষরতা প্রকাশন/পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দুরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ৩রা নভেম্বর, ১৯৭৫৷

৪৬. হালদার, শৈলেন্দ্র (সম্পাদিত) – মন্দমেয়ের উপাখ্যান, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০১৩৷

খ. সহায়ক গ্রন্থ :

১. আচার্য, অনিল ও অর্ণব সাহা

 (সম্পাদিত) – যৌনতা ও বাঙালি, অনুষ্টুপ, কলকাতা, বইমেলা, ২০০৯৷

২. আজাদ, হুমায়ুন – নারী, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, আগষ্ট, ২০১২৷

৩. আহমেদ, শামিম – মহাভারতে যৌনতা, গাঙচিল, কলকাতা, জুলাই, ২০১৩৷

৪. কর, অরবিন্দ – আধুনিক বাংলা সাহিত্য ও জগদীশ গুপ্ত,বইওয়ালা, কলকাতা, বইমেলা, ২০০৮৷

৫. গুপ্ত, ক্ষেত্র – বাংলা উপন্যাসের ইতিহাস, (১-৬ খণ্ড) গ্রন্থনিলয়, কলকাতা, ডিসেম্বর, ২০০৫৷

৬. ঘোষ, ড. জয়তী – বাংলা থিয়েটারের অভিনেত্রী সংগ্রাম ও সৃজনশীলতা, বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা বইমেলা, ২০১২৷

৭. ঘোষ, ড. মীরা – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমকালীন বাংলা কথাসাহিত্য, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪৷

৮. ঘোষ, দেবযানী – আয়নায় সারি সারি মুখ, সোনালিয়া, কলকাতা, বইমেলা, ২০১৫৷

৯. ঘোষ, বারিদবরণ (সম্পাদিত) – শিবনাথ শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, নিউ এজ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০৯৷

১০. ঘোষ, যতীন্দ্রমোহন – বঙ্গসাহিত্যে নকশা, পঞ্চপুষ্প, কলকাতা,আশ্বিন, ১৩৩৭ সন৷

১১. ঘোষ, শ্রীঈশানচন্দ্র, (অনুদিত) – জাতক, (১-৬ খণ্ড) করুণা প্রকাশনী, চতুর্থ মুদ্রণ, বৈশাখ, ১৪১১, কলকাতা৷

১২. চক্রবর্তী, বামনদেব – উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ, অক্ষর মালঞ্চ, কলকাতা, মার্চ, ২০১৩৷

১৩. চক্রবর্তী, সুমিতা, উপন্যাসের বর্ণমালা, পুস্তক বিপণি আগস্ট, ২০১৬, কলকাতা৷

১৪. চট্টোপাধ্যায়, তপনকুমার – আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রজ্ঞাবিকাশ, কলকাতা, জুন, ২০১৫৷

১৫. চট্টোপাধ্যায়, দেবীপ্রসাদ – নিষিদ্ধ কথা আর নিষিদ্ধ দেশ, নিউ এজ পাবলিশার্স, কলকাতা, ২০০৯৷

১৬. চট্টোপাধ্যায়, হীরেন, – উপন্যাসের রূপরীতি, দে’জ পাবলিশিং, জুন ২০১৭, কলকাতা৷

১৭. চন্দ, বীরেন, (সম্পাদিত), – বিষয় : বাংলা উপন্যাস সময়ের দর্পণে সমাজের প্রতিবিম্ব (সংযোজন খণ্ড), উত্তরধ্বনি, জানুয়ারী, ২০০৪, কলকাতা ও শিলিগুড়ি৷

১৮. জানা, স্মরজিৎ – জীবন, যৌনতা ও যৌনকর্মী, দুর্বার প্রকাশনী, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি, ২০০৮৷

১৯. জানা, স্মরজিৎ (সম্পাদিত) – ভাঙে যেন…, দুর্বার প্রকাশনী, কলকাতা, অক্টোবর, ২০০৮৷

২০. জানা, স্মরজিৎ, মৃণালকান্তি দত্ত (সম্পাদিত) – কখনও জিত কখনও হার, দুর্বার প্রকাশনী, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১২৷

২১. দত্ত রায়চৌধুরী, প্রজ্ঞাপারমিতা – ‘ফুলমণি’ এল কলকাতা, উনিশ এবং বিশ শতকের নারী ও গণিকা সমাজ, গাংচিল, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১৩৷

২২. দত্তগুপ্ত, শর্মিষ্ঠা ও অহনা বিশ্বাস (সম্পাদিত) – এগারোয় পা মেয়েদের অন্তরঙ্গ কথা, গাঙচিল, কলকাতা, এপ্রিল, ২০১৪৷

২৩. দাশ, শ্রীশচন্দ্র, – সাহিত্য সন্দর্শন, প্রজ্ঞাবিকাশ, ১৩৪৭, কলকাতা৷

২৪. দাস, জয়িতা – অন্তঃপুরের স্বর আত্মকথনের স্ত্রী-পর্ব, গাংচিল, কলকাতা, আগষ্ট, ২০১৪৷

২৫. দাস, বেলা – বাংলা উপন্যাসের উন্মেষ পর্ব বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, মহালয়া, ১৪২৩, কলকাতা৷

২৬. দাস, বেলা (সম্পাদিত) – সমাজ ও সাহিত্যে নারী অবস্থান ও নির্মাণ, একুশ শতক, কলকাতা, জুন, ২০১৩৷

২৭. নন্দী, রতনকুমার, – কর্তাভজা ধর্ম ও সাহিত্য, বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা বইমেলা, ২০১৮৷

২৮. নাগ, মণি, ভট্টাচার্য, স্বাতী – দেবদাসী থেকে যৌনকর্মী ভারতে বারাঙ্গনাদের জীবন, দ্বীপ প্রকাশন, কলকাতা, ডিসেম্বর, ২০০৭৷

২৯. নাথ, মৃণাল, – ভাষা ও সমাজ, নয়া উদ্যোগ, জানুয়ারি, ১৯৯৯, কলকাতা৷

৩০. পাল, ড. মোহন – সংস্কৃত সাহিত্যের কয়েকটি দিক, প্রজ্ঞবিকাশ, কলকাতা, জানুয়ারি, বইমেলা, ২০১৩৷

৩১. প্রামাণিক, প্রতিমা – বিংশ শতাব্দীর উপন্যাসে পারিবারিক জীবন, প্রজ্ঞাবিকাশ, কলকাতা, আগষ্ট, ২০১২৷

৩২. বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজিত (সম্পাদিত) – বাই-বারাঙ্গনা গাথা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১৬৷

৩৩. বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্রনাথ – সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা,সেপ্টেম্বর, ২০১৫৷

৩৪. বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীকুমার – বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা, মর্ডাণ বুক এজেন্সি প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৪৫৷

৩৫. বন্দ্যোপাধ্যায়, সরোজ – বাংলা উপন্যাসের কালান্তর, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, মাঘ, ১৪১৮৷

৩৬. বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিচরণ – বঙ্গীয় শব্দকোষ, প্রথম খণ্ড৷৷ অ-ন, দ্বিতীয় খণ্ড৷৷ প-হ, সাহিত্য অকাদেমি,২০১১৷

৩৭. বড়পণ্ডা, ড. দীপক – নাচনির কথা, দুর্বার প্রকাশনী, কলকাতা, (পরিবেশক, পুস্তক বিপণি, কলকাতা) ১লা এপ্রিল,২০০৭৷

৩৮. বসু, অভ্র – বাংলা স্ল্যাং সমীক্ষা ও অভিধান, প্যাপিরাস, কলকাতা, ডিসেম্বর, ২০১২৷

৩৯. বসু, স্বপন – সংবাদ-সাময়িক পত্রে উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ, দ্বিতীয় খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, অক্টোবর, ২০০৩৷

৪০. বসু, স্বপন, হর্ষ দত্ত (সম্পাদিত) – বিশ শতকের বাঙালি জীবন ও সংস্কৃতি, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, আগষ্ট, ২০১৫৷

৪১. বাগচি, যশোধরা – নারী ও নারীর সমস্যা, অনুষ্টুপ, কলকাতা, মার্চ, ২০১২৷

৪২. বিশ্বাস, অদ্রীশ ও আচার্য, অনিল (সম্পাদিত) – বাঙালীর বটতলা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), অনুষ্টুপ, জানুয়ারি, ২০১৩৷

৪৩. বিশ্বাস, বনানী – যৌনকর্মীর জীবন, বাংলাপ্রকাশ, ঢাকা, ফাল্গুন, ১৪১৯৷

৪৪. ভট্টাচার্য, কাজল – কলগার্লের দুনিয়া, গাংচিল, জানুয়ারি, কলকাতা, ২০১০৷

৪৫. ভট্টাচার্য, দেবীপদ – উপন্যাসের কথা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ডিসেম্বর, ২০০৩৷

৪৬. ভট্টাচার্য, ধীরেশচন্দ্র – মহাভারতের নারী, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, জানুয়ারি, ২০১০৷

৪৭. ভট্টাচার্য, শ্রী আশুতোষ – বাংলা মঙ্গল কাব্যের ইতিহাস, এ মুখার্জী অ্যান্ড কোং প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, মে, ২০১৫৷

৪৮. ভট্টাচার্য, সুভাষ, – ভাষার তত্ত্ব ও বাংলা ভাষা, বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, ২০১২, কলকাতা৷

৪৯. মজুমদার, সমরেশ – বাংলা উপন্যাসের পঁচিশ বছর, বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা বইমেলা, ২০০৮৷

৫০. মজুমদার, সমীরণ – গণিকা মুক্তি ও মর্যাদা, নিউ হরাইজন বুক ট্রাস্ট, বইমেলা, ২০০৬৷

৫১. মনিরুজ্জামান – উপভাষা চর্চার ভূমিকা, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, মে, ১৯৯৪, ঢাকা৷

৫২. মল্লিক, ভক্তিপ্রসাদ – অপরাধ জগতের ভাষা ও শব্দকোষ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, নভেম্বর, ২০১১৷

৫৩. মাইতি, ড. খগেন্দ্রনাথ – ঊনবিংশ শতাব্দীর গদ্য নকশা সমাজ সমালোচনা ও গদ্য রীতির বিশিষ্টতা, করুণা প্রকাশনী, জানুয়ারি, ১৯৯৫৷

৫৪. মাসুদুজ্জামান – নারী যৌনতা রাজনীতি, বেঙ্গল পাবলিকেশনস লিমিটেড, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৩৷

৫৫. মিত্র, রাধারমণ – কলিকাতা দর্পণ, (প্রথম পর্ব ও দ্বিতীয় পর্ব), সুবর্ণরেখা, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১৪৷

৫৬. মুখার্জী, তরুণ – যৌনকর্মীদের আইনবন্ধু, সোনাগাছি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনসটিটিউট, কলকাতা, ডিসেম্বর, ২০১৩৷

৫৭. মুখোপাধ্যায়, অরুণকুমার – কালের প্রতিমা, (বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর : ১৯২৩-১৯৯৭), দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, এপ্রিল, ২০১০৷

৫৮. মুখোপাধ্যায়, অরুণকুমার – বাংলা কথাসাহিত্য জিজ্ঞাসা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, জ্যৈষ্ঠ, ১৪১১৷

৫৯. মুখোপাধ্যায়, ড. প্রার্থনা – গণিকাপুরাণ, মৌসুমী প্রকাশনী, কলকাতা, বইমেলা ২০০১৷

৬০. মুরশিদ, গোলাম – নারী প্রগতির একশো বছর রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া, অবসর, ঢাকা, বইমেলা, ২০১৩৷

৬১. মৈত্র, অমিত – রঙ্গালয়ে বঙ্গনটী, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, জানুয়ারি, ২০০৪৷

৬২. রায়, নীহাররঞ্জন – বাঙালীর ইতিহাস (আদি পর্ব), দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৩৫৬৷

৬৩. রায়, সত্যেন্দ্রনাথ – বাংলা উপন্যাস ও তার আধুনিকতা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, আগষ্ট, ২০০৯৷

৬৪. রায়চৌধুরী, গোপিকানাথ – দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন বাংলা কথা সাহিত্য, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, আগষ্ট, ২০১০৷

৬৫. শ’ রামেশ্বর – আধুনিক বাংলা উপন্যাসের পটভূমি ও বিবিধ প্রসঙ্গ, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪১৫৷

৬৬. শ’ রামেশ্বর – সংস্কৃত ও প্রাকৃত সাহিত্য সমাজচেতনা ও মূল্যায়ন, পুস্তক বিপণি, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ, ৯ই ফাল্গুন, ১৪১১৷

৬৭. শ’, রামেশ্বর, – সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা, পুস্তক বিপণি, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪০৩, কলকাতা৷

৬৮. শ্রীকর্ণ – বাবুদের অন্দরমহল, দুর্বার প্রকাশনী, কলকাতা, নভেম্বর, ২০০১৷

৬৯. শ্রীপান্থ – দেবদাসী, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, অগ্রহায়ণ, ১৪১৪৷

৭০. শ্রীপান্থ – বটতলা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০১০৷

৭১. সিকদার, অশ্রুকুমার – আধুনিকতা ও বাংলা উপন্যাস, অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা, নভেম্বর, ২০০৮৷

৭২. সিংহ, কঙ্কর – ধর্ম ও নারীঃ প্রাচীন ভারত র‍্যাডিক্যাল কলকাতা, জানুয়ারি, ২০০৯৷

৭৩. সুর, ড. অতুল – দেবলোকের যৌনজীবন, জ্যোৎস্নালোক, কলকাতা, আশ্বিন, ১৩৯৬৷

৭৪. সেন, অরুণ – কোনারক যৌবন-মন্দির, প্রতিক্ষণ, কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১১৷

৭৫. সেন মজুমদার, জহর – উপন্যাস সময় সমাজ সংকট, বুকস স্পেস, কলকাতা, জুলাই, ২০১০৷

৭৬. সেন, শ্রীসুকুমার – বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (১-৫ খণ্ড), আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৭৷

৭৭. সেন, সুকুমার – ভাষার ইতিবৃত্ত, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৩৯৷

৭৮. সেনগুপ্ত, ড. প্রদ্যোত (সম্পাদিত) – নকশা: সেকাল একাল (প্রথম পর্ব), অঞ্জনা প্রকাশনী, কলকাতা, অক্টোবর, ১৯৮২৷

৭৯. হোসেন, মিতালী, ইরাজ হায়দার -নারী সতীদাহ ও পর্দাপ্রথা, জিৎ ইন্টারন্যাশনাল, কলকাতা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৪৷

ইংরেজী সহায়ক গ্রন্থ :

1. Basham A.L, – The Wonder that was India, Picador, 2004.

2. Das, Sisir Kumar – A History of Indian literature (1800-1910 and 1911-1956), Sahitya Akademi, 2015.

3. Durbar Mahila Samanwaya Committee – Durbar a brief profile, Durbar Prakashani, Kolkata, December, 2011.

4. Durbar Mahila Samanwaya Committee – Community, led antitrafficking and child protection program, Durbar Prakashani, Kolkata, December, 2013.

5. Durbar Mahila Samanwaya Committee – Only rights can stop the wrong, Durbar Prakashani, Kolkata, January, 2013.

6. Murthy, Laxmi, -Meena Saraswathi Seshu, The Business of Sex, ZUBAAN, First published, 2013, New Delhi.

7. Rizvi, S.A.A – The Wonder that was India II, Picador India, 2005.

8. Sahni, Rohini, V. Kalyan Shankar, Hemant Apte, – Prostitution and Beyond An analysis of sex work in India, sage, New Delhi, 2008.

গ. পত্র-পত্রিকা :

১. আনন্দবাজার পত্রিকা,

 (দৈনিক পত্রিকা) -১৭.০৯.১৪ (রাজ্য-পৃ: ৩),

 ২৬.০৯.১৪ (আনন্দ প্লাস-পৃ: ৬),

 ২৮.০৯.১৪ (পৃ: ১০),

 ১২.১০.১৪ (রাজ্য-পৃ: ৪),

২৬.১০.১৪ (পৃ: ১৩),

 ২৮.১০.১৪ (বিদেশ পৃ: ৬),

২২.১১.১৪ (উত্তরবঙ্গ-পৃ: ২),

 ২৪.১১.১৪ (পৃ: ১),

 ০৫.১২.১৪ (পৃ: ৫),

 ২৮.১২.১৪ (পৃ: ৪),

 ২৩.১১.১৪ (রবিবাসরীয়-পৃ: ১)৷

২. উত্তরবঙ্গ সংবাদ,

 (দৈনিক পত্রিকা) -০৩.০৯.১২ (পৃ: ৪),

 ২১.১২.১২ (পৃ: ৪),

 ১০.০১.১৩ (পৃ: ৪),

 ২৫.০১.১৩ (পৃ: ৪),

 ২৬.০১.১৩ (শ্রীমতী পৃ: ১৩),

 ৩১.০৮.১৩ (শ্রীমতী পৃ: ১৩),

 ২৮.০৮.১৩ (পৃ ৪),

 ০৫.০৯.১৩ (পৃ: ৭),

 ১৮.০৯.১৩ (পৃ: ৩),

 ০৭.০৮.১৪ (পৃ: ৩),

 ২৩.০৯.১৪ (পৃ: ৬),

 ০১.১১.১৪ (পৃ: ৩),

 ১০.০১.১৫ (পৃ: ৯),

 ১৯.০৮.১৪ (পৃ: ৩)৷

৩. ঘোষ, অনিল, – অশেষ দাস (সম্পাদক) স্বদেশচর্চালোক, সমাজ ও সংস্কৃতির ষান্মাসিক গবেষণাপত্র, আদিরস সেকাল-একাল, শারদ, ২০১৬৷

৪. ঘোষ, অনিল, অশেষ দাস

 (সম্পাদিত) – স্বদেশচর্চা লোক, সমাজ ও সংস্কৃতির ষান্মাসিক গবেষণাপত্র, নানারূপে নারী সেকাল-একাল, জানুয়ারী, ২০১৮, মাঘ, ১৪২৪ বইমেলা সংখ্যা৷

 ৫. জানা, স্মরজিৎ (সম্পাদিত) – দুর্বার ভাবনা, (বিভিন্ন সংখ্যা)৷

৬. ধর, প্রসূন (সম্পাদক) – সংবর্তক, জন্মদ্বিশতবর্ষে প্যারীচাঁদ মিত্র বিশেষ সংখ্যা, জানুয়ারী, ২০১৬৷

 ৭. পুরকাইত, উত্তম (সম্পাদক), – জগদীশ গুপ্ত সংখ্যা, উজাগর,সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ষান্মাসিক, চতুর্থ বর্ষ, প্রথম ও দ্বিতীয় সংখ্যা, ১৪২৪, উজাগর প্রকাশন, হাওড়া৷

 ৮. ফুয়াদ, আফিফ, (সম্পাদক) – দিবারাত্রির কাব্য, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যা, দ্বাবিংশ বর্ষ, তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যা, কলকাতা৷

 ৯. বসু, সত্রাজিৎ (সম্পাদক) – স্বপ্নকল্পক, বিষয়বিশেষ: উনিশ শতকের বাংলা ও বাঙালী, প্রথম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর, ২০১২৷

১০. মুখার্জী, উদয় রতন,

 রঞ্জনা ভট্টাচার্য, – বাংলা উপন্যাসের দেরশো বছর (প্রথম পর্ব), হেমন্ত, ১৪২২, ডিসেম্বর, ২০১৫৷

১১. মুখার্জী, উদয় রতন, ভট্টাচার্য,

 রঞ্জনা (সম্পাদিত) – সাহিত্য তক্কো, চতুর্থ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, ডিসেম্বর, ২০১৫৷

১২. মুখার্জী, উদয় রতন,

 রঞ্জনা ভট্টাচার্য (সম্পাদিত) -সাহিত্য তক্কো, বাংলা উপন্যাসের দেরশো বছর (দ্বিতীয় পর্ব) গ্রীষ্ম, ১৪২৩ (মে, ২০১৬)৷

১৩. সরকার, পুলক কুমার

 (সম্পাদক ও প্রকাশক) – শুভশ্রী, অভিনব সৃষ্টি: বাংলা কথাসাহিত্য, ৪৯ বর্ষ, ১৪১৭: ২০১০-১১৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *