চতুর্থ কাণ্ড। সপ্তম প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নাবিষ্ণু সজোষসেমা বর্ধন্তু বাং গিরঃ। মৈৰ্ব্বাজেভিরা গতম্। বাজশ্চ মে প্রসব মে প্রতিশ্চ মে প্রসিতিশ্চ মে ধীতিশ্চ মে ক্রতুশ্চ মে স্বরস্ট মে শ্লোকশ্চ মে শ্রাবণ্ট মে শ্রুতিশ্চ মে জ্যোতিশ্চ মে সুবশ্চ মে প্রাণশ্চ মেহপানঃ চ মে ব্যানশ্চ মেহসুশ্চ মে চিত্তং চম আধীতং চ মে বাক চ মে মনশ্চ মে চক্ষুশ্চ মে শ্রোত্রং চ মে দক্ষশ্চ মে বলং চ ম ওজশ্চ মে সহশ্চম আয়ুশ মে জরা চ ম আত্মা চ মে তনুশ্চ মে শৰ্ম চ মে বৰ্ম্ম চ মেহঙ্গানি চ মেহস্থানি চ মে পরূংষি চ মে শরীরাণি চ মে ॥১॥
[এই প্রপাঠকের দ্বাদশ অনুবাকের সূচনায় আচার্য সায়ণ বলেন–এতৈরেকাদশভিরনুবাকৈর্বসো ধাররাহোমঃ উক্তঃ। সেই অনুসারে এই প্রথম অনুবাক থেকে একাদশ অনুবাক পর্যন্ত বসোর্ধারা হোমের বিষয় উক্ত হয়েছে, ধরা যায়।]
মর্মার্থ- হে অগ্নাবিষ্ণু (অর্থাৎ অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব)! আপনারা সমান প্রীতিসম্পন্ন হোন। আপনাদের উদ্দেশে নিবেদিত এই স্তুতিরূপ বাক্যসমূহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক। আপনারা ধন ও অন্নের যুক্ত হয়ে এই স্থানে আগত হোন।-(অতঃপর একাদশ অনুবাক পর্যন্ত অনুবাকভেদে সংযুক্ত পৃথক মন্ত্র কথিত হচ্ছে। তারমধ্যে প্রথম অনুবাকের মন্ত্র)–আপনারা আমার অন্ন সম্পাদন করুন (সম্পদ্যতা); আপনারা আমার অন্নের অনুজ্ঞান সম্পাদন করুন (প্রসবো অর্থাৎ অন্নের অনুজ্ঞান); আপনারা আমার শুদ্ধি (প্রতিঃ) সম্পাদন করুন; আপনারা আমার অন্নবিষয়ক ঔসুক্যবর্ধন (প্রসিতি) সম্পাদন করুন; আপনারা আমার অন্নধারণ (ধীতিঃ) সম্পাদন করুন; আপনারা আমার অন্নহেতু যজ্ঞ (ক্রঃ) সম্পাদন করুন; আপনারা আমার মন্ত্রগত উদাত্ত ইত্যাদি স্বর সম্পাদন করুন; আপনারা আমার স্তুতি (শ্লোকঃ) সম্পাদন করুন। এইভাবে আপনারা আমার শ্রবণ-করাবার সামর্থ্য (শ্রাবঃ); আমার শ্রবণ করার সামর্থ্য (শ্রুতিঃ); আমার প্রকাশ (জ্যোতিঃ); আমার স্বর্গ (সুবঃ), আমার প্রাণ-অপান-ব্যানরূপ বায়ুবৃত্তিবিশেষকে (মে প্রাণশ্চ মেহপানং চ মে ব্যানশ্চ মেহসুশ্চ); আমার মনোজন্য জ্ঞান (তিত্তং), সেই জ্ঞানের দ্বারা সর্বদা বিষয়ীকৃত দ্রব্য (আধীতং); আমার বাক্য-মর্ম-চক্ষু-শ্রোত্র, আমার জ্ঞানেন্দ্রিয়গত কৌশল (দঃ), আমার কর্মেন্দ্রিগত সামর্থ্য (বলং), আমার বলের হেতুকারক অষ্টম ধাতু (ওজঃ), বৈরিবিষয়ক অভিভব করার শক্তি (সহঃ), আমার আয়ু, আমার বলীপলিত ইত্যাদি পর্যন্ত আয়ু অর্থাৎ পূর্ণ আয়ু (জরা), আমার শাস্ত্রপ্রসিদ্ধ পরমাত্মা (আত্মা), আমার শোভনসন্নিবেশ বপু (তনুঃ), আমার সুখ (শর্ম), আমার? শরীররক্ষক কবচ ইত্যাদি (বর্ম), আমার সম্পূর্ণ অবয়ব (অঙ্গানি), আমার অস্থিসমূহ যথাস্থানে স্থিতি (অস্থানি), আমার অঙ্গুলি ইত্যাদির পর্ব বা সন্ধিসমূহ (পরূংষি) এবং পূর্বে অনুক্ত হস্ত, পদ, ইত্যাদি আমার শরীরের অবয়বগুলি আপনারা সম্পন্ন করুন ॥১॥
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- জ্যৈষ্ঠ্যং চ ম আধিপত্যং চ মে মোশ মে ভামর্শ মেহমশ্চ মেহন্তশ্চ মে জেমা চ মে মহিমা চ মে বরিমা চ মে প্রথিমা চ মে বৰ্মা চ মে দ্রাঘুয়া চ মে বৃদ্ধং চ মে বৃদ্ধিশ্চ মে সত্যং চ মে শ্রদ্ধা চ মে জগচ্চ মে ধনং চ মে বশশ্চ মে বৃষিশ্চ মে ক্রীড়া চ মে মোশ্চ মে জাতং চ মে জনিষ্যমাণং চ মে সূক্তং চ মে সুকৃতং চ মে বিত্তং চ মে বেদ্যং চ মে ভূতং চ মে ভবিষ্যচ্চ মে সুগং চ মে সপথং চ ম ঋদ্ধং চ ম ঋদ্ধিশ্চ মে কুপ্তং চ মে কুপ্তিশ্চ মে মতিশ্চ মে সুমতিশ্চ মে ॥২৷৷ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র।]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব! আপনারা সমান প্রীতিসম্পন্ন হোন। আপনাদের উদ্দেশে নিবেদিত এই স্তুতিরূপ বাক্যসমূহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক)। আপনারা আমার প্রশস্ততমত্ব (জৈষ্ঠ্যঃ) সম্পাদন করুন। সেইভাবে আপনারা আমার স্বামিত্ব (আধিপত্যং); আমার বাহ্যিক ক্রোধ (মন্য); আমার অন্তরস্থ বিশেষ ক্রোধ বা ক্ষোভ (ভাম); আমার অপ্রমেয়ত্ব (অমঃ); আমার শৈত্য ও মাধুর্যোপেত জল (অম্ভঃ); আমার জয়সামর্থ্য (জেমা); আমার মহত্ব অর্থাৎ জয়ের দ্বারা লব্ধ ধন ইত্যাদি সম্পত্তি (মহিমা); আমার বরণীয়ত্ব বা পূজ্যত্ব; আমার গৃহ ক্ষেত্র ইত্যাদির বিস্তার (প্রথিমা); আমার পুত্র পৌত্র ইত্যাদি বিষয়ক অবিচ্ছিন্ন সন্ততি, অর্থাৎ দীর্ঘকালস্থায়ী বংশধরগণের উৎপত্তি (দ্রাঘুয়া); আমার প্রভূত অন্ন ও ধন (বৃদ্ধং); আমার বিদ্যা ইত্যাদি গুণসমূহের উৎকর্ষ (বৃদ্ধিঃ); আমার যথার্থ ভাষণ (সত্যং); আমার পরলোকের অস্তিত্ব সম্পর্কিত বুদ্ধি বা অস্তিকতা (শ্রদ্ধা); আমার জঙ্গম ও অজঙ্গম বা স্থাবরাত্মক জগৎ; আমার সুবর্ণ ইত্যাদি (ধনং); আমার সর্বরকমের স্বাধীনত্ব (বশঃ), আমার শরীরকান্তি (ত্বিমিঃ); আমার অক্ষ বা দুত ইত্যাদি ক্রীড়া; ঐ ক্রীড়া সম্পর্কিত আমার হর্ষ (মোদস্তজ্জনন্যা); আমার পূর্বসিদ্ধ পূর্বজাত. অপত্য (জাতং); আমার ভাবীকালের অর্থাৎ ভবিষ্যতে জন্মগ্রহণ করবে এমন অপত্য (জনিয্যমাণং); আমার ঋক্ বা মন্ত্ৰসমূহ (সূক্তং); আমার সেই ঋমুদায়ের অপূর্বত্ব (সুকৃতং); আমার পূর্বলব্ধ ধন (রিত্তং); আমার পরে লন্ধব্য দ্রব্যজাত (বেদ্যং); আমার পূর্বসিদ্ধ অর্থাৎ পুর্বে লব্ধ ক্ষেত্র ইত্যাদি (ভূতং); আমার ভবিষ্যতে লব্ধব্য সম্পদ (ভবিষ্যৎ); আমার সুষ্ঠু গন্তব্য বন্ধুজনযুক্ত গ্রামান্তর ইত্যাদি (সুগং), অর্থাৎ গ্রামান্তরে যে বন্ধুজন আছেন তাদের নিকট সুষ্ঠুভাবে গমনের উপযযাগিতা; চোর ইত্যাদি রহিত বা শূন্য মার্গ (সুপথং); আমার ধন ইত্যাদি বা অনুষ্ঠিত কর্মফলের বৃদ্ধি, (ঋদ্ধং); আমার অনুষ্ঠাস্যমান (অর্থাৎ পরে অনুষ্ঠিত হবে, এমন) যজ্ঞের ফল (ঋদ্ধি); আমার সমর্থ বা স্বকার্যক্ষম দ্রব্য, অর্থাৎ কোন দ্রব্যের সাহায্যে কর্মসাধনে সমর্থ হওয়া (ক্লপ্তং); আমার স্বকীয়? সামর্থ্য; আমার পদার্থমাত্র নিশ্চয় (মতিঃ), অর্থাৎ যে কোন পদার্থ নির্ণয়ের দক্ষতা; এবং আমার দুর্ঘটরাজকার্যাদিনিশ্চয় (সুমতি), অর্থাৎ রাজকার্য ইত্যাদি নির্ণয়রূপ দুঃসাধ্য বিষয় সম্পর্কে সুবুদ্ধি আপনারা সম্পাদিত করুন ॥২॥
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- শং চ মে ময়শ্চ মে প্রিয়ং চ মেইনুকামশ্চ মে কামশ্চ মে সৌমনসর্শ মে ভদ্রং চ মে শ্ৰেয়শ্চ মে বস্যশ্চ মে যশ মে ভগশ্চ মে দ্রবিণং চ মে যা চ মে ধৰ্তা চ মে ক্ষেমশ্চ মে ধৃতিশ্চ মে বিশ্বং চ মে মহশ্চ মে সচ্চি মে জ্ঞাত্রং চ মে সুশ্চ মে প্রসূ মে সীরং চ মে লয়শ্চ ম ঋতং চ মেহমৃতং চ মেহং চ মেহনাময় মে জীবাতুশ্চ মে দীর্ঘায়ুত্বং চ মেহনমিত্রং চ মেহভয়ম্ চ মে সুগং চ মে শয়নং চ মে সুষা চ মে সুদিনং চ মে ॥৩॥ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!)–আপনারা আমার শং অর্থাৎ ঐহিক বা ইহলোকের সুখ ও ময়ঃ অর্থাৎ আমুষ্মিক বা পরলোকের সুখ সম্পাদন করুন। আপনারা আমার প্রীতিকারক বস্তু (প্রিয়ং); আমার অনুকুলের নিমিত্ত ঐহিক কাম্যমান পদার্থ (অনুকামঃ); আমার আমুষ্মিক স্বর্গ ইত্যাদি (কামঃ), আমার মনের পক্ষে স্বাস্থ্যকর অর্থাৎ মনের উপযুক্ত বন্ধুবর্গ (সৌমনসো); আমার এই লোকে যা কল্যাণরূপ রমণীয় (ভদ্রং); আমার পরলোকে যা হিতকর (শ্রেয়ঃ), আমার নিবাসহেতু গৃহ ইত্যাদি; আমার কীর্তি (যশঃ); আমার সৌভাগ্য (ভগঃ); আমার ধন (দ্রবিণং); আমার আচার্য ইত্যাদি নিয়ামক (যা); আমার পিতা ইত্যাদি পোষক (ধর্তা); আমার বিদ্যমান ধনের রক্ষণশক্তি (ক্ষেমঃ); আমার বিপদে-আপদে নিশ্চলতা বা ধৈর্য (ধৃতিঃ); আমার সর্বজনের আনুকুল্য (বিশ্বং); আমার পূজা (মহঃ); আমার বেদ-শাস্ত্র ইত্যাদি বিজ্ঞান (সম্বিৎ); আমার জ্ঞাপয়িতৃত্ব অর্থাৎ অপরকে জ্ঞাত করার সামর্থ্য (জ্ঞাত্ৰং); আমার পুত্র ইত্যাদি প্রেরণের সামর্থ্য (সু); আমার ভৃত্য ইত্যাদি প্রেরণের সামর্থ্য (প্রসুঃ); আমার লাঙ্গল ইত্যাদি কৃষিসাধন সম্পত্তি (সীরং); ঐ কৃষিকার্যের প্রতিবন্ধের নিবৃত্তি (লয়ঃ); আমার যজ্ঞ ইত্যাদি কর্ম (ঋতং); আমার সেই যজ্ঞ ইত্যাদির ফল (অমৃতং); আমার রাজযক্ষ্মা ইত্যাদি প্রবল ব্যাধির রাহিত্য (অযক্ষ্মং); আমার জ্বর ইত্যাদি অল্প ব্যাধির রাহিত্য (অনাময়ঃ); আমার জীবনরক্ষার প্রয়োজনে ব্যাধি পরিহারের নিমিত্ত ঔষধ (জীবাতুঃ); আমার অপমৃতুরাহিত্য (দীর্ঘায়ুত্বং); আমার বৈরিরাহিত্য (অনমিত্রং); আমার ভয়রাহিত্য (অভয়ং); আমার শোভনগমন তথা সকলের অঙ্গীকৃত আচরণ (সুগং); আমার শয্যা-উপধান ইত্যাদি সম্পত্তি (শয়নং); আমার স্নান-সন্ধ্যাবন্দনা ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত শোভন প্রাতঃকাল (সুষা) এবং আমার যজ্ঞ-দান-অধ্যয়ন ইত্যাদি যুক্ত সম্পূর্ণ দিন (সুদিনং)–আপনারা সম্পাদিত করুন ॥৩॥
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- উক্ মে সুনৃতা চ মে পয়শ্চ মে রসশ্চ মে ঘৃতং চ মে মধু চ মে সন্ধিশ্চ মে সপীতিশ্চ মে কৃষিশ্চ মে বৃষ্টিশ্চ মে জৈত্রং চ ম ঔদ্ভিদাং চ মে রয়িশ্চমে রায়শ মে পুষ্টং চ মে পূষ্টিশ্চ মে বিভু চ মে প্রভু চ মে বহু চ মে ভূয়শ্চমে পূর্ণং চ মে পূর্ণতরং চ মেহক্ষিতিশ্চ মে কুষবশ্য মেহন্নং চ মেইক্ষুচ্চ মে ব্ৰহয় মে যবাশ্চ মে মাষাশ্চ মে তিলাশ্চ মে মুদগাশ্চ মে খাশ মে গোধূমাশ্চ মে মসুরাশ্চ মে প্রিয়ঙ্গবশ মেহণবশ মে শ্যামাকাশ মে নীরাশ্চ মে ॥৪॥
[বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!) আপনারা আমার ঊর্ক অর্থাৎ অন্নসামান্য সম্পাদন করুন। এইভাবে আপনারা আমার প্রিয় উক্তি (সুনৃতা); আমার পয়ঃ প্রভৃতি অন্নবিশেষ, যথা–দুগ্ধ বা ক্ষীর (পয়ঃ); সেই দুগ্ধের সার (রসঃ); ঘৃত; আমার মধু; আমার বন্ধুগণের সাথে ভোজন। (সন্ধি); তথা আমার সেই বন্ধুগণের সাথে পান (সপীতি); আমার অন্নের হেতুত্বে কৃষিকর্ম (কৃষি); আমার কৃষির হেতুত্বে বৃষ্টিপাত (বৃষ্টি); আমার জয়শীল সুক্ষেত্র (জৈত্রং), অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে প্রভূত শস্য লাভ করা যায় আমার এমন সুফলা কৃষিক্ষেত্র; আমার তরু-গুল্ম ইত্যাদির উৎপত্তি (ঔদ্ভিদ্যং); আমার সুবর্ণ (রয়িঃ); আমার মণিমুক্তা ইত্যাদি (রায়ঃ); পূর্বোক্ত সুবর্ণ ইত্যাদির সমৃদ্ধি (পুষ্টং); আমার শরীরে পোষণ বা পুষ্টি; আমার ধান্য বিষয়ে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি (বিভু); কেবল আমার ধান্যের প্রবৃদ্ধিই নয়, আমার ব্রীহি, যব, মাষকলাই, তিল, মুগ, গম (গোধুম), মসুর, প্রিয়ঙ্গব, সুশালী ধান্য (অণবঃ), শ্যামাক নামক গ্রাম ধান্য এবং আমার আরণ্য ধান্য (নীবারা) এগুলি সম্পাদন করুন ॥৪॥
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- অশ্ম চ মে মৃত্তিকা চ মে গিয়শ্চ মে পৰ্বতাশ্চ মে সিকতা মে বনস্পতয়শ্চ মে হিরণ্যং চ মেয়শ্চ মে সীসং চ মে পুশ্চ মে শ্যামং চ মে লোহং চ মেহগ্নিশ্চম আপশ্চ মে বীরুধশ্চম ওষধয়শ্চ মে কৃষ্টপচ্যং চ মেহকৃষ্টপচ্যং চ মে গ্রাম্যাশ মে পশৰ আরণ্যাশ্চ যজ্ঞেন কল্পভাং বিত্তং চ মে বিত্তিশ্চ মে ভূতং চ মে ভূতিশ্চ মে বসু চ মে বসতিশ্চ মে কৰ্ম্ম চ মে শক্তিশ্চ মেহর্থস্ট ম এম ম ইতিশ্চ মে গতিশ্চ মে ॥৫৷৷ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!) আপনারা আমার অশ্ম অর্থাৎ প্রস্তরগুলি সম্পাদন করুন। এইভাবে আপনারা আমার মৃত্তিকা, আমার গিরি (গিরয়ঃ), আমার পর্বত, আমার বালুকায় (সিকতাঃ), আমার বনস্পতি, আমার হিরণ্য, আমার লৌহ নির্মিত দ্রব্য (অয়ঃ), আমার সীসা, আমার শোধিত সীসা, আমার রঙ্গ (পু), আমার কৃষ্ণলৌহ অর্থাৎ কাংস্য-তাষ ইত্যাদি (শ্যামং), আমার লৌহ, আমার অগ্নি, আমার জল, আমার লতা (ধীরুধঃ), আমার ওষধী, আমার কৃষিক্ষেত্রে পক্ক ধান ইত্যাদি (কৃষ্টপচ্য), আমার কৃষিক্ষেত্রে এপক ধান ইত্যাদি (অকৃষ্টপচ্য), আমার যজ্ঞের নিমিত্তভূত গ্রাম্য ও আরণ্য পশু (পশব) (অর্থাৎ যজ্ঞের নিমিত্ত কল্পিত হোক, এমন পশু), আমার পূর্বলব্ধ ধন (বিত্তং), আমার ভবিষতে লব্ধব্য ধন (বিত্তিঃ), আমার ঐশ্বর্যোপেত পুত্র ইত্যাদি (ভূতং), আমার স্বকীয় ঐশ্বর্য ইত্যাদি (ভূতঃ), আমার নিবাসসাধন গো-ইত্যাদি (বসু); আমার নিবাসাধার গৃহ ইত্যাদি (বসতিঃ), আমার অগ্নিহোত্র ইত্যাদি (কর্ম), আমার সেই কর্মানুষ্ঠানের সামর্থ্য (শক্তিঃ), আমার প্রয়োজন বিশেষ (অর্থঃ), আমার প্রাপ্তব্য সুখ (এমঃ), আমার ইষ্টপ্রাপ্তির উপায় (ইতিঃ) এবং আমার ইষ্টপ্রাপ্তি (গতিঃ)–এগুলি সম্পাদন করুন ॥৫॥
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নিশ্চম ইন্দ্ৰশ্চ মে সোমশ্চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে সবিতা চ মে ইন্দ্ৰশ্চ মে সরস্বতী চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে পূষা চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে বৃহস্পতিশ্চ মে মিত্ৰশ্চম ইন্দ্ৰশ্চমে বরুণশ্চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে ত্বষ্টা চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে ধাতা চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে বিষ্ণুশ্চম ইন্দ্ৰশ্চ মেহশ্বিনৌ চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে মরুতশ্চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে বিশ্বে চ মে দেবা ইন্দ্ৰশ্চ মে পৃথিবী চ ম ইন্দ্র মেহন্তরিক্ষং চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে দ্যেশ্চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে দিশৰ্শ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে মূর্ধা চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে প্রজাপতিশ্চ ম ইন্দ্ৰশ্চ মে ৬৷৷ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- সমান ভাগোপেত (অর্থাৎ যজ্ঞীয় হবিঃতে সমান ভাগযুক্ত হয়ে অগ্নির সাথে ইন্দ্র, সোমের সাথে ইন্দ্র, সবিতার সাথে ইন্দ্র, সরস্বতীর সাথে ইন্দ্র, পুষার সাথে ইন্দ্র, বৃহস্পতির সাথে ইন্দ্র, মিত্রের সাথে ইন্দ্র, বরুণের সাথে ইন্দ্র, ত্বষ্টার সাথে ইন্দ্র, ধাতার সাথে ইন্দ্র, বিষ্ণুর সাথে ইন্দ্র, অশ্বিযুগলের সাথে ইন্দ্র, মরুত্বর্গের সাথে ইন্দ্র, বিশ্বদেবগণের সাথে ইন্দ্র, পৃথিবীর সাথে ইন্দ্র, পূর্ব ইত্যাদি চারিটি দিকের সাথে ইন্দ্র, ঊর্ধ্ব দিকের সাথে ইন্দ্র (মূর্ধ অর্থে ঊর্ধ্ব দিক; মুখত্ব নির্দেশের অভিপ্রায়ে পৃথরূপে উল্লেখিত), এবং প্রজাপতির সাথে ইন্দ্র আমাদের কর্মসমুহ সম্পাদন করুন। (অগ্নি ইত্যাদি প্রসিদ্ধ দেবতা। মন্ত্রে তাদের সকলের সাথে সমান ভাগপেতত্ব হয়ে ইন্দ্রকে এইভাবে একে একে উল্লেখ করা কর্তব্য) ॥৬৷৷
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- অংশুশ্চ মে রশ্মিশ্চ মেহদাভ্যশ্চ মেহধিপতিশ্চ ম উপাং শুশ্চ মেহন্তর্যামশ্চ ম ঐন্দ্রয়ব মে মৈত্রাবরুণশ্চ ম আশ্বিনশ্চ মে প্রতিপ্রস্থানশ্চ মে শুক্রশ্চ মে মন্ত্রী ৮ ম আগ্রয়ণশ্চ মে বৈশ্বদেবশ্চ মে ধ্রুবশ মে বৈশ্বানর ম ঋতুগ্রহাশ্চ মেহতিগ্রাহ্যাশ্চ ম ঐন্দ্রাগ্নশ্চ মে বৈশ্বদেবশ্চ মে মরুতীয়াশ্চ মে মাহেন্দ্ৰশ্চম আদিত্যশ্চ মে সাবিত্র মে সারস্বতশ্চ মে পৌষ্ণশ্চ মে পাত্নীবতশ্চ মে হারিযোজনশ্চ মে ॥৭॥ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!) অংশু (সোমের অংশু সমূহ সোমগ্রহবিশেষ, সোমপ্রকরণে প্রসিদ্ধ), রশ্মি (গ্রহের গৃহ্যমাণত্বের কারণে পৃথক নির্দেশিত), ইত্যাদি যজ্ঞের দ্বারা আমার যজ্ঞ সম্পাদিত হোক। (অধিপতি শব্দের দ্বারা দধিগ্রহ বিবক্ষিত। প্রথমে উক্ত বৈশ্বদেব প্রাতঃসবনগত, পরে উক্ত বৈশ্বদেব তৃতীয়সবনগত। ইত্যাদি।) [এই মন্ত্রগুলির অর্থ শুক্লযজুর্বেদের ১৮শ অধ্যায়ের ১৯শ ও ২০শ মন্ত্রে প্রাপ্তব্য] ॥৭॥
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- ইরাশ্চ মে বহির্শ মে বেদিশ্চ মে ধিফিয়াশ্চ মে সুশ্চ মে চমসাশ্চ মে গ্রাবাণশ্চ মে স্বরবঞ্চ মে উপবাশ্চ মেহধিষণে চ মে দ্ৰোণকলশ মে বায়ব্যানি চ মে পুতভূ ম আধবনীয় ম আগ্নীপ্রং চ মে হবির্ধানং চ মে গৃহাশ্চ মে সদশ্চ মে পূরোডাশাশ্চ মে পচতাশ্চ মেহৰভৃথশ্চ মে স্বগাকারণ্ট মে ॥৮॥ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!) আপনারা আমার ইয়াদীনি অর্থাৎ যজ্ঞাঙ্গ-দ্রব্যসমূহ সম্পাদন করুন। (যজ্ঞাঙ্গদ্রব্য-যজ্ঞপ্রকরণে প্রসিদ্ধ দ্রব্যসম্ভার; যথা–) আমার অগ্নি প্রজ্জ্বলনের কাষ্ঠ (ই), আমার যজ্ঞীয় কুশ (বহিঃ), আমার যজ্ঞীয় বেদি, আমার যজ্ঞীয় আসন (ধিষ্ণ), আমার সুক (যজ্ঞে ঘৃত প্রক্ষেপণের নিমিত্ত পাত্রবিশেষ), আমার চমস (যজ্ঞীয় চামচ বা চামচে), আমার গ্রাবাণ (যজ্ঞপাত্রবিশেষ), আমার স্বরব আমার উপরব, আমার অধিষবণ (যজ্ঞস্নান), আমার দ্রোণকলশ (ক্ৰমময় যজ্ঞপাত্রবিশেষ), আমার বায়ব্য (যজ্ঞীয় গোরজঃ স্নান), আমার পূতভৃৎ, আমার আধবনীয়, আমার আগ্নী (অগ্নিরক্ষণে নিযুক্ত ঋত্বি), আমার হবিধান (হবির ধারক ঋত্বিক), আমার গৃহা (যজ্ঞীয় পত্নীশালা ইত্যাদি), আমার সদঃ (যজ্ঞসভা), আমার পুরোডাশ, আমার পশুবন্ধন স্থান ইত্যাদি (পচতাঃ অর্থাৎ শামিত্র ইত্যাদি), আমার অবyথ (যজ্ঞান্তে স্নান বা প্রধান যজ্ঞের অঙ্গীভূত যজ্ঞ) এবং আমার কল্যাণযুক্ত বাক্য (স্বগাকারঃ বা শংযুবাকঃ) সম্পাদন করুন। এগুলির দ্বারা যথাযথ দেবতাগণের উদ্দেশে হবিঃপ্রদান করা হয় (তেন হি যথাস্বং দেবতানাং হবির্গমনং ক্রিয়তে) । ৮।
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নিশ্চ মে ঘর্ম মেহর্কশ্চ মে সূৰ্য্যশ্চ মে প্রাণশ্চ মেহশ্বমেধশ্চ মে পৃথিবী। চ মেহদিতিশ্চ মে দিতিশ্চ মে দৌশ্চ মে শকৃরীরঙ্গুলয়ো দিশ মে যজ্ঞেন কল্পতামৃক মে সাম চ মে স্তোমর্শ মে যজু মে দীক্ষা চ মে তপশ্চম ঋতুশ্চ মে ব্রতং চ মেহতোরাত্ৰয়োৰ্বষ্টা বৃহদ্রথরে চ মে যজ্ঞেন কম্লেতাম্ ॥৯॥ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!) আপনারা চীয়মান বহ্নি (অগ্নি), প্রবর্গ (ঘর্ম), যাগ (অর্ক, অর্থাৎ ইন্দ্রকে অবৎ পুরোডাশ বিহিত যাগ), সুর্য (সূর্যের উদ্দেশে চরু বিহিত যাগ), প্রাণ (প্রাণের উদ্দেশে স্বাহা বিহিত যাগ), অশ্বমেধ যজ্ঞ, পৃথিবী দেবতার উদ্দেশে যাগ, অদিতি দেবতার উদ্দেশে যাগ, দিতির উদ্দেশে যাগ, দ্যুলোক দেবতার উদ্দেশে যাগ, আমার শক্কর্যের উদ্দেশে যাগ, অঙ্গুলিবৎ বিরাট পুরুষের অবয়ববিশেষের উদ্দেশে যাগ, পূর্ব ইত্যাদি দিকের উদ্দেশে যাগ–এই সবগুলি আমার দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়ে আপন আপন ক্রিয়ায় (ব্যাপারে) সমর্থ হোক। (এই অংশ শুক্লযজুর্বেদের ১৮শ অধ্যায়ের ২২শ মন্ত্রেও প্রাপ্তব্য)।আমার ঋক্-মন্ত্র, আমার সাম-মন্ত্র, আমার স্তোম অর্থাৎ সাম-আবৃত্তিরূপ স্তোত্র, আমার যজমান-সংস্কার (দীক্ষা), আমার পাপক্ষয়ের নিমিত্ত অনশন ইত্যাদি (তপঃ), আমার যজ্ঞের অঙ্গভূত কাল (ঋতু); আমার ব্রত (একস্তন ইত্যাদি), অহোরাত্র সম্বন্ধিনী যে বৃষ্টি ও সেই বৃষ্টির দ্বারা আমার অভীষ্ট শস্যপ্রাপ্তি, ইত্যাদি সম্পাদিত করুক। এইভাবে বৃহৎ ও রথযুর নামক সাম দুটি আমার যজ্ঞের দ্বারা আপন আপন ক্রিয়ায় সমর্থ হোক (স্বস্বব্যবহারসমর্থে ভবেত্যম্ ॥৯॥
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- গর্ভাশ্চ মে বসাশ্চ মে বিশ্চ মে বী চ মে দিত্যবাই চ মে দিতৌহী চ মে পঞ্চাবিশ্চ মে পঞ্চবী চ মে ত্রিবৎসর্শ মে ত্রিবৎসা চ মে তুৰ্য্যবা চ মে তুৰ্যেীহী চ মে পষ্ঠবাচ্চ মে পষ্ঠৌহী চম উক্ষা চ মে বসা চ ম ঋষভশ্চ মে বেহচ্চ মেহনড্রাঞ্চ মে ধেনুশ্চ ম আয়ুৰ্যজ্ঞেন কল্পতাং প্রাণো যজ্ঞেন কল্পতাম পানো যজ্ঞেন কল্পং ব্যানো যজ্ঞেন কল্পতাং চক্ষুর্যজ্ঞেন কল্পতাং শ্রোত্রং যজ্ঞেন কল্পতাং মনো যজ্ঞে কল্পতাং বাগ্যজ্ঞেন কল্পতামাত্মা যজ্ঞেন কল্পতাং যজ্ঞো যজ্ঞে কল্পতা৷৷ ১০৷৷ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্র]
মর্মার্থ- (হে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব!) আপনারা আমার (গাভীর) গর্ভ, বৎসমূহ (বসা), দেড় বৎসর বয়স্ক পুরুষ-গোবৎস (এ্যবি), তথাবিধা অর্থাৎ দেড় বৎসর বয়স্কা স্ত্রী-গোবৎসা (ত্রবী), দুবৎসর বয়স্ক ঋষভ (দিত্যবাট), তথাবিধা অর্থাৎ দু বৎসর বয়স্কা গাভী (দিতৌহী), আড়াই বৎসর– বয়স্ক ঋষভ (পঞ্চাবি), তথাবিধা অর্থাৎ আড়াই বৎসর বয়স্কা গাভী (পঞ্চাবী), তিনবৎসরোপেত ঋষভ (ত্রিবৎস), তথাবিধা অর্থাৎ তিনবৎসর বয়স্কা গাভী (ত্রিবৎসা), সাড়ে তিন বৎসর বয়স্ক ঋষভ (তুর্যবাট), তথাবিধা অর্থাৎ সাড়ে তিন বৎসর বয়স্কা গাভী (তুর্যৌহী), চারবৎসর বয়স্ক ঋষভ (পাষ্ঠবাৎ), তথাবিধা গাভী (পষ্ঠোহী), সেচনসমর্থ ঋষভ (উক্ষা), বন্ধ্যা গাভী (বশা), সেচনসমুর্থ, অপেক্ষা অধিক বয়স্ক (ঋষভ), গভর্ঘাতিনী গাভী (বেহৎ), শকটের বাহক (অনড়া), নবপ্রসূতা গাভী (ধেনু), ইত্যাদি সম্পাদন করুন। এইভাবে আমার আয়ু, আমার প্রাণ, আমার অপান, আমার ব্যান, আমার চক্ষু, আমার শ্রোত্র, আমার মন, আমার বাক, আমার আত্মা (শরীর) এবং আমার যজ্ঞ–এই যজ্ঞের দ্বারা সম্পাদিত হোক। [আয়ুজ্ঞেন কল্পতাং থেকে যজ্ঞে যজ্ঞেন কল্পতাম পর্যন্ত অংশটুকু শুক্লযজুর্বেদের ১৮শ অধ্যায়ের ২৯শ মন্ত্রেও প্রাপ্তব্য] ১০।
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- একা চ মে তিশ্চ মে পঞ্চ চ মে সপ্ত চ মে নব চ ম একাদশ চ মে এয়োদশ চ মে পঞ্চদশ চ মে সপ্তদশ চ মে নবদশ চ ম একবিংশতিশ্চ মে ত্রয়োবিংশতিশ্চ মে পঞ্চবিংশতিশ্চ মে সপ্তবিংশতিশ্চ মে নববিংশতিশ্চ ম একত্রিংশচ্চ মে ত্রয়স্ত্রিংচ্চ মে চতশ্চ মেহষ্টো চ মে দ্বাদশ চ মে ষোড়শ চ মে বিংশতি মে চতুর্বিংশতিশ্চ মেহষ্টাবিংশতিশ্চ মে দ্বাত্রিংশচ্চ মে ষট্ত্রিংশচ্চ মে চত্বারিংশচ্চ মে চতুশ্চত্বারিশ মেহষ্টাচত্বরিংশ মে বাজশ্চ প্রসবশ্যাপিজশ্চ ক্রতুশ্চ সুব মূৰ্দ্ধা চ ব্যশ্লিয়শ্চাত্যায়নশ্চাত্য ভৌবনশ্চ ভুবনশ্চাধিপতি ॥১১৷ [বসোর্ধারা হোমমন্ত্রের অবশিষ্ট অংশ]
মর্মার্থ- [সায়ণাচার্য বলেন-একাদিশাঃ সংখ্যাপরাঃ। বাজাদয়ঃ সর্বে মম সত্ত্বিতি শেষ। বাজোহন্ন। ইত্যাদি। অর্থাৎ এই মন্ত্রে এক ইত্যাদি শব্দগুলি সংখ্যার বা সংখ্যাবাচক। বাজ ইত্যাদি শব্দগুলি অন্নপর অর্থাৎ অন্নবাচক। অর্থাৎ অন্ন ইত্যাদি সব আমার হোক–এমনই অর্থ এক, তিন, পাঁচ সাত, নয়, এগারো, তেরো, পনেরো, সতেরো, উনিশ, একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ, উনত্রিশ, একত্রিশ–এই অযুগ্ম স্তোমমন্ত্রগুলি এবং চার, আট, বারো, ষোলো, কুড়ি, চব্বিশ, আটাশ, বত্রিশ ছত্রিশ, চল্লিশ, চুয়াল্লিশ, আটচল্লিশ–এই যুগ্ম স্তোমমন্ত্রগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার অন্ন, অন্নের উৎপত্তি, অন্নের পুনঃ পুনঃ উৎপত্তি, আমার সঙ্কল্প ভোগ ইত্যাদি বিষয় বা যাগ (ক্রঃ) সম্পাদিত করুক। আদিত্য এই ভূমিতে আমাকে অবস্থান করান এবং ভুবনের অধিপতি করুন। [বসোর্ধারা হোমমন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৮ম অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥১১।
[সায়ণাচার্য বলেন–অথ দ্বাদশে বাজপ্রসবীয়হোম উচ্যতে। অর্থাৎ-অতঃপর এই দ্বাদশ অনুবাকে বাজপ্রসবীয় হোমের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
দ্বাদশ অনুবাক
মন্ত্র- বাজো নঃ সপ্ত প্রদিশশ্চতম্রো বা পরাবতঃ। বাজো নো বিশ্বৈৰ্দেবৈৰ্ধনতাবিহাব। বিষে অদ্য মারুতো বিশ্ব উতী বিশ্বে ভবনগ্নয়ঃ সমিষ্কাঃ। বিশ্বে নো দেবা অবসাহগমন্তু বিশ্বমস্তু দ্রবিণং বাজো অম্মে। বাজস্য প্রসবং দেবা রথ্যৈা হিরণ্যয়ৈঃ। অগ্নিরিন্দ্রো বৃহস্পতিৰ্ম্মরুতঃ সোমপীতয়ে।। বাজেবাজেহবত বাজিনো নো ধনেষু বি অমৃতা ঋতজ্ঞা। অস্য মঃ পিবত মাদয়ং তৃপ্তা যাত পথিভিৰ্দেবানৈঃ। বাজঃ পুরস্তাদূত মধ্যতো নো বাজো দেবান ঋতুভিঃ কল্পয়াতি। বাজস্য হি প্ৰসবো নন্নমীতি বিশ্ব আশা বাজপতিৰ্ভবেয়ম। পয়ঃ পৃথিব্যাং পয় ওষধীষু পয়ো দিব্যন্তরিক্ষে পয়ো ধাম। পয়স্বতীঃ প্রদিশঃ সন্তু মহং। সম্ মা সৃজামি পয়সা ঘৃতেন সং মা সৃজাম্যপঃ ওষধীভিঃ। সোহহং বাজং সনেয়মগ্নে। নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকং সমীচী। দ্যা ক্ষামা রুন্নো অন্তৰ্বি ভ্যতি দেবা অগ্নিং ধারয়বিনোদাঃ। সমুদ্ৰোহসি নভদানাদানুঃ শৰ্ম্ময়োড়রভি মা বাহি স্বাহা । মারুততাসি মরূতাং গণঃ শৰ্ম্ময়োভূরভি না বাহি স্বাহাইব্যুরসি দুবস্বাঞ্ছ্যুৰ্ম্ময়োভুরভি মা বাহি স্বাহা ॥১২।
মর্মার্থ- (বাজপ্রসবীয় হোমে সাতটি গ্রাম্য ও সাতটি আরণ্য হোমের মন্ত্র আছে। গ্রাম্যা মন্ত্রগুলি ১ম কাণ্ডের ৭ম প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকে প্রদত্ত। এই স্থলে আরণ্য হোম-মন্ত্ৰসমূহ কথিত হচ্ছে]।-(বেনুধান্যের দ্বারা কৃত হোমের প্রথমা ঋক)–পূর্ব ইত্যাদি চারটি দিক ও ঊর্ধ্ব-অপো-মধ্য এই তিন, মোট সাতটি প্রকৃষ্ট দিক্ আমাদের অন্নপ্রদা (বাজোহন্নস্বরূপা) হোক। তথা অত্যন্ত দুরবর্তী আগ্নেয় ইত্যাদি (অগ্নি-নৈঋত-বায়ু-ঈশান) চারটি দিক আমাদের অন্নপ্রদা হোক। সেই অন্নসমূহ এই ধনপ্রদেশে যজ্ঞে বিশ্বদেবগণ কর্তৃক প্রেরিত হয়ে আমাদের আমাদের রক্ষা করুক। (শ্যামাকধান্যের দ্বারা কৃত হোমের দ্বিতীয় ঋক)–অদ্য এই দিনে সকল মরুৎ ও সকল দেবতা আমাদের রক্ষণের নিমিত্ত প্রবর্তিত হোন। তথা সকল অগ্নিও সম্যক প্রজ্বলিত হোন। সেইভাবে সকল দেবতাও আমাদের রক্ষার নিমিত্তভূত হয়ে এই স্থানে আগত হোন। তথা সকল ধন আমাদের হোক।-(নীবার অর্থাৎ তৃণধান্য বা উড়িধানের দ্বারা কৃত হোমের তৃতীয় ঋক)-হে দেববর্গ। আমাদের অন্ন প্রেরণ বা সম্পাদনের নিমিত্ত অগ্নি,ইন্দ্র, ও বৃহস্পতি–এই তিন দেবতা ও মরুত্বর্গ, সোমপানের উদ্দেশে সুবর্ণনির্মিত রথের সাথে আমাদের এই যজ্ঞস্থান প্রাপ্ত হোন (যাগস্থান প্রাপ্লুত)।–(জর্তিলহোমের নিমিত্ত চতুর্থী ঋক)–হে অন্নসম্পাদক দেববর্গ! সেই সেই অন্নের নিমিত্ত ও ধনের নিমিত্ত আমাদের রক্ষা করুন। ব্রাহ্মণবৎ শুদ্ধ, মরণরহিত, সত্য-জ্ঞাত বা যজ্ঞ-জ্ঞাত, হে দেবগণ! আপনারা এই অন্ন ভক্ষণ পূর্বক হৃষ্ট হোন; তারপর তৃপ্ত হয়ে দেবযান পথ ধরে আপন আপন স্থানে গমন করুন (স্ব স্ব স্থানং প্রাপ্লুত)।–(গবীধুকের দ্বারা কৃত হোমের পঞ্চমী ঋক)–আমাদের পূর্ব-বয়সে (অর্থাৎ বাল্য ও কিশোর কালে) ও মধ্য-বয়সে (অর্থাৎ যৌবন ও প্রৌঢ় কালে) অন্ন হোক (অর্থাৎ আমরা যেন অন্নের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে থাকি)। অধিকন্তু এই অন্ন কালবিশেষে অর্থাৎ কালানুযায়ী দেবতাগণের যজ্ঞ সম্পাদিত করে; অর্থাৎ এই অন্ন যজ্ঞসাধনে সমর্থ। অন্নের প্রেরণ বা সমৃদ্ধি (প্রসবঃ) সকল দিককে অবনত করে (শয়েনাবনতাঃ করোতি), অর্থাৎ অন্নের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে সর্বদিতী প্রাণীগণ স্বাধীন হয় (অর্থাৎ অন্নের জন্য তাদের আর অপরের মুখাপেক্ষি হতে হয় না); সেই কারণে আমিও যেন অন্নপতি হই (বাজপতিৰ্ভবেয়)। (মর্কটকারব্য-ধান্যের হোমে ষষ্ঠী ঋক)–অন্নসমৃদ্ধির নিমিত্ত পৃথিবীতে জল স্থাপন করছি, সেইরকম ওষধীসমূহেও জল স্থাপন করছি, সেইরকম দ্যুলোকেও জল স্থাপন করছি, অন্তরিক্ষেও জল স্থাপন করছি। প্রকৃষ্টরূপে সকল দিক আমাদের নিমিত্ত জলময় হোক (জলবতত্যা ভবন্তু)।–(গামুর্তহোম বা কুলস্থ বা কলাইবিশেষের দ্বারা হোমের নিমিত্ত সপ্তমী ঋক)–হে অগ্নিদেব! আপনার প্রসাদে আমি দুগ্ধের দ্বারা (বা সাথে) যুক্ত হবো, ঘৃতের দ্বারা যুক্ত হবো, এবং জল ও ওষধীর দ্বারা যুক্ত হবো (সংসৃজামি)। এইভাবে দুগ্ধ ইত্যাদির দ্বারা যুক্ত হয়ে অদ্য আমি আপনার প্রদত্ত অন্ন লাভ করব।–(হোমান্তিক প্রার্থনা)–নক্তোষাসা সমনসা..ধারয়ন্দ্ৰবিনোদাঃ–এই মন্ত্রটি ৪র্থ কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকে, কিংবা বর্তমান প্রপাঠকের ৫ম অনুবাকে ব্যাখ্যাত। সমুদ্ৰোহসি…..মা বাহি স্বাহা মন্ত্র তিনটি শুক্লযজুর্বেদের ১৮শ অধ্যায়ের ৪৫শ মন্ত্রে ব্যাখ্যাত। [ এই অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৯ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥১২।
[সায়ণাচার্য বলেন-য়োদশেহগ্নিযোগোহভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই এয়োদশ অনুবাকে অগ্নিযোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে]।
.
ত্রয়োদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নিং যুনজ্জি শবসা ঘৃতেন দিব্যং সুপর্ণং বয়সা বৃহন্ত। তেন বয়ং পতেম ব্ৰধস্য বিষ্টপং সুবো রুহাণা অধি নাক উত্তমে। ইমৌ তে পক্ষাৰজরৌ পতত্রিণো যাভ্যাম রক্ষাংস্যপহংস্যগ্নে। তাভ্যাং পতেম সুকৃতামু লোকং যত্ৰষয়ঃ প্রথমজা যে পুরাণাঃ। চিদসি সমুদ্রযোনিরিক্ষঃ শ্যেন ঋতাবা। হিরণ্যপক্ষঃ শকুনো ভরণুৰ্ম্মহৎ সধন্থে ধ্রুবঃ আ নিষঃ। নমস্তে অস্তু মা মা হিংসীৰ্বিশ্বস্য মুম্নধি তিষ্ঠসি শ্রিতঃ। সমুদ্রে তে হৃদয়মন্তরায়ুৰ্দাবাপৃথিবী ভুবনেপিতে। উদ্রো দত্তোদধিং ভিন্ত দিবঃ পর্জ্যান্তরিক্ষাৎ পৃথিব্যস্ততো নো বৃষ্ট্যাহত দিবো মূৰ্দাহসি পৃথিব্যা নাভিৰ্গপামোষধীনাম। বিশ্বায়ুঃ শৰ্ম্ম সপ্রথা নমম্পথে।। যেনর্যয়পসা সত্ৰম আসতেখানা অগ্নিং সুবরাভরন্তঃ। মহং নিং দধে নাকে অগ্নিমেত যমাহুৰ্ম্মনবঃ স্তীণবহিষম। তং পত্নীভির গচ্ছেম দেবাঃ পুত্রোতৃভিরুত বা হিরণ্যৈঃ। নাকং গৃহানাঃ সুকৃতস্য লোকে তৃতীয়ে পৃষ্ঠে অধি নোচনে দিবঃ। আ বাচো মধমরুহঙুর«রয়মগ্নিঃ সৎপতিশ্চেকিতানঃ। পৃষ্ঠে পৃথিব্যা নিহিত দবিদ্যুতদধম্পদং কৃণুতে যে পৃতন্যবঃ। অয়মগ্নিৰ্ব্বীরতমো বয়োধাঃ সহস্ত্রিয়ো দীপ্যতামপ্রযুচ্ছন। বিভ্রাজমানঃ সরিরস্য মধ্য উপ প্র যাত দিব্যানি ধাম। সং প্র চ্যবধ্বমনু সং প্র যাতাগ্নে পথো দেবযানা কৃণুধ্বম্। অম্মিৎ সধস্থে অধত্তরস্মিন্বিশ্বে দেবা যজমানশ্চ সীদত। যেনা সহস্রং বহসি যেনাগ্নে সৰ্ব্ববেদসম্। তেনেমং যজ্ঞং নো বহ দেবযানো ষঃ উত্তমঃ। উদবুধ্যস্বাগ্নে প্রতি জাগৃহেনমিস্তাপুর্তে সংসৃজোময়ং চ। পুনঃ কৃম্বংস্তুা পিতরং যুবানমন্বংসীয়ি তমেতম। অয়ং তে যোনিঋত্বিয়ো যততা জাতো অরোচথাঃ। ঋতং জান্নগ্ন আ রোহাথা নো বদ্ধয়া রয়িম ॥১৩৷৷
মর্মার্থ- যেমন রথের সাথে অশ্বকে যোজিত করা হয়, সেইরকমে এই চিত (চয়িত) অগ্নিকে বলের দ্বারা ঘৃত ইত্যাদি দ্রব্যযুক্ত কর্মসকলের সাথে যুক্ত করছি। (কিরকম অগ্নি? না, সেই অগ্নি দিব্যং অর্থাৎ দ্যোতনাত্মক, সুপর্ণং অর্থাৎ পক্ষীর ন্যায় আকরসম্পন্ন, ও বৃহন্তং অর্থাৎ চিরকালস্থায়ী। সেই হেন অগ্নির সাথে আমরা যজমানগণ আদিত্যের তাপরহিত (বিষ্টপং) স্থান প্রাপ্ত হবো। (কিরকম আমরা? না,) আমরা অতি উৎকৃষ্ট (উত্তমে) স্বর্গলোকে সুখপ্রাপক স্থান প্রাপ্তির নিমিত্ত অধিরোহণে আকাঙ্ক্ষী।–পক্ষীর আকারবিশিষ্ট সেই অগ্নির পক্ষ দুটি কখনও জীর্ণ হয় না।–হে অগ্নি! যে পক্ষ দুটির দ্বারা রাক্ষসগণকে মারেন (মারয়সি), আমরা তার দ্বারা পুণ্যকর্মকারী (পুণ্যকৃতামেব) পুরুষগণের যোগ্য সেই লোক প্রাপ্ত হবে, যে লোকে সৃষ্টির আদিতে সৃষ্ট অনাদিসিদ্ধ মহর্ষিগণ বাস করে থাকেন।–হে অগ্নি! আপনি জগতের বা যজমানের চৈতন্য (চিৎ বা চেতনা বা জ্ঞান) সঞ্চারক; সমুদ্র যেমন সকল জলগ্রহণের (জলগ্রহাণং) স্থান, সেইরকম আপনিও সকল ক্রতুর (যজ্ঞের) স্থান। আপনি ই অর্থাৎ পরম ঐশ্বর্যযুক্ত, আপনি দক্ষ অর্থাৎ কর্মানিষ্পদনকুশল, আপনি শ্যেনঃ অর্থাৎ পক্ষীর আকারবিশিষ্ট, আপনি ঋতাবা অর্থাৎ সত্যবান, আপনি হিরণ্যপক্ষ অর্থাৎ সুবর্ণময় পক্ষদ্বয়যুক্ত, আপনি শকুনঃ অর্থাৎ কামনা ইত্যাদি ভেদে কঙ্ক (কক) ইত্যাদি পক্ষীর আকার, আপনি ভুরণু অর্থাৎ সকলের ভরণে (পোষণে) সক্ষম (ক্ষমঃ), আপনি মহাৎঅর্থাৎ বহু ইষ্টকায় চিত হওয়ায় (চিতত্বাৎ) প্রৌঢ়, আপনি সধস্থ অর্থাৎ আদিত্যের সাথে একত্রে স্থিতিযোগ্য মণ্ডলে স্থির হয়ে উপবিষ্ট।–হে অগ্নি! আপনাকে নমস্কার, আপনার যাগকর্মকারী আমাকে বিনাশ করবেন না। আপনি সকল জগতের শিরোবৎ উত্তম চিতিপ্রদেশে আশ্রিত হয়ে উত্তম হয়ে (অধিকো ভূত্ব) স্থিত আছেন। আপনার চিত্ত সমুদ্রে স্থিত; বৃষ্টির দ্বারা যে সমুদ্রসমান জল সম্পাদিত হয়, তা সর্বদা আপনারই অনুগ্রহ। সেইভাবে আপনার চিত্তের মধ্যে সকল প্রাণীর আয়ু অবস্থিত; অধিকন্তু সকল লোকের নিমিত্তভূত দারাপৃথিবী অর্থাৎ উপরে দুলোক (দৌঃ) এবং নিম্নে ভূমি (ভুলোক) দ্বারাই স্থাপিত হয়েছে; এরই মধ্যে সকল তোক অবস্থান করে থাকে, এমনই আপনার অনুগ্রহ।-হে অগ্নিগণ! (এখানে পূজার নিমিত্ত এক অগ্নিতে বহুত্ব আরোপিত)। আপনারা জলসমূহ প্রদান করুন। (উদক বা জলপ্রদানে বিভিন্ন উপায়ের কারণে অগ্নির বহুত্ব; যথা–) অন্তরিক্ষ হতে পৃথিবী ইত্যাদি তিন লোকের নিমিত্ত জলপূর্ণ মেঘের বিদারণ করুন এবং মেঘ বিদারণের পরে মেঘ-বিগলিত বৃষ্টির দ্বারা আমাদের রক্ষা করুন। (পুনরায় একত্বে সম্বোধন)–হে অগ্নি! আপনি দুলোকের মূর্ধ বা মস্তকস্থানীয় আদিত্যরূপ; আপনি পৃথিবীর নাভি অর্থাৎ নাভিবৎ মধ্যদেশে অবস্থিত। আপনি জলসমূহ ও ওষধিগণের রসরূপ, আপনার দ্বারা পাককর্ম সাধিত হলে সেখানে রস উৎপন্ন হয়ে থাকে। আপনি বিশ্বায়ুঃ অর্থাৎ সর্বজগতের আয়ুপ্রদ, আপনি শর্ম অর্থাৎ শরণভূত (রক্ষা বা আশ্রয়ভূত), আপনি সপ্রথা অর্থাৎ সবিস্তার বা বিস্তারসম্পন্ন, আপনি পথে অর্থাৎ পুণ্যলোকে গমনের পথস্বরূপ; আপনাকে নমস্কার করছি। (যেনর্যয়স্তপসা সত্ৰম থেকে নো বর্ধয়া রয়িম্ পর্যন্ত অবশিষ্ট আটটি মন্ত্র শুক্লযজুর্বেদের ১৫শ অধ্যায়ের ৪৯শ থেকে ৫৬শ মন্ত্রে ব্যাখ্যাত)। [এই অনুবাকের মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকের মন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥১৩।
[সায়ণাচার্য বলেন-চতুর্দশে বিহব্যাখ্যা ইষ্টকা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই চতুর্দশ অনুবাকে বিহব্য নামে আখ্যাত ইষ্টকার বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
চতুর্দশ অনুবাক
মন্ত্র- মমাগ্নে বর্পো বিহবেম্বস্তু বয়ং ব্ৰেন্ধানানুবং পুষেম। মহ্য নমস্তাং প্রদিশশ্চতভ্রস্তুয়াহধ্যক্ষেণ পৃতনা জয়েম। মম দেবা বিহবে সন্তু সৰ্ব্ব ইন্দ্রাবন্তো মরুততা বিষ্ণুরগ্নিঃ।। মমান্তরিক্ষমুরু গোপম মহং বাতঃ পবতাং কামে অস্মি। ময়ি দেবা দ্রবিণমা যজন্তাংমষ্যাশীর ময়ি দেবহুতিঃ দৈব্যা। হোতারা বনিষন্ত পর্বেরিষ্টাঃ স্যাম তনুবা সুবীরাঃ। মহং যজন্তু মম যানি হব্যাংকৃতিঃ সত্যা মনসো মে অন্তু। এনো মা নি গাং কতমঞ্চনাহং বিশ্বে দেবাশো অধি বোচতা মে। দেবীঃ ষডুৰ্ব্বীরুরু ণঃ কৃপোত বিশ্বে দেবাস ইহ বীরয়ধ্ব। মা হাম্মহি প্ৰজয়া মা তনুভিৰ্ম দাম দ্বিষতে সোম রাজ। অগ্নিৰ্মং প্রতিদন পুরস্তাৎ অদক্কো গোপাঃ পরি পাহি নম্। প্রত্যঞ্চো যন্তু নিগুতঃ পুনস্তেহমৈষাং চিত্তং প্রবুধা বি নেশৎ। ধাতা ধাতৃণাং ভুবনস্য যম্পতিৰ্দেবং সবিতারমভিমাতিষাহম। ইমং যজ্ঞমশ্বিনোভা বৃহস্পতিৰ্দেঃ পান্তু যজমানং ন্যর্থাৎ। উরুব্যচা নো মহিষঃ শৰ্ম্ম যংসদস্মিন্ হবে পুরুহুতঃ পুরু। স নঃ প্রজায়ৈ হৰ্য্যশ্ব মৃড়য়ে মা নো রীরিযো মা পরা দাঃ। যে নঃ সপত্না অপ তে ভবন্দ্ৰিাগ্নিভ্যামব বাধামহে তা।। বসবো রুদ্ৰা আদিত্যা উপরিস্পশং মোগ্রং চেত্তারমধিরাজমক্রন। অৰ্বাঞ্চমিমমৃতত হবামহে যো গোজিদ্ধনজিদশ্বজিদ্যঃ। ইমং নো যজ্ঞং বিহবে জুষশ্বাস্য কুৰ্ম্মো হরিবো মেদিনং ত্বা। ১৪।
মর্মার্থ- হে অগ্নি! যজ্ঞের (বিহবে) যে ফল, তা আমার (প্রাপ্য), হোক (তন্মমাস্তু)। আমরা ঋত্বিক ও যজমানগণ অগ্নিকে প্রজ্বলিত করে আপনার শরীরের পুষ্টি সাধন করছি। পূর্ব ইত্যাদি চারিদিকস্থ জনগণ আমারূপী যজমানের অধীন হোক। অধ্যক্ষরূপী (অর্থাৎ স্বামী বা প্রভুরূপী) আপনার সাথে আমরা বিরোধী সেনাগণকে জয় করব। সকল দেবতা আমার যজ্ঞে অবস্থিত হোন। (সকল দেবতা কারা? না,) ইন্দ্রযুক্ত মরুত্বর্গ, বিষ্ণু ও অগ্নি ইত্যাদি। এই বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষ আমার রক্ষক হোক। এই বায়ু আমাদের যজ্ঞফলের কামনায় নিমিত্তভূত হয়ে সেই কামনার সাধন করুক।–এই দেবগণ যজমানরূপী আমাকে ধন প্রদান করুন। আমরা আশানুরূপ ফল যজমানরূপী আমার সিদ্ধ (বা প্রাপ্ত) হোক; এবং এইভাবে দেববর্গের উদ্দেশে আমার আহ্বান সার্থক হোক (ময়ি ভবতু)। পূর্বতন অর্থাৎ আদিকালে সিদ্ধ দৈব হোতাগণ বা দেব-সম্বন্ধি ঋত্বিকগণ এই যজ্ঞে অবস্থিত হোন; এবং (তার ফলে) আমরা শরীরের দ্বারা (শরীরেণা) হিংসারহিত হয়ে শোভন পুত্রযুক্ত (সুবীরাঃ) হবো।আমার যত আহুতিসাধন দ্রব্য আছে, সেই সবগুলির দ্বারা দৈব্য ঋত্বিকগণ আমার নিমিত্ত (অর্থাৎ আমার পক্ষগত হয়ে) যাগ সম্পাদন করুন। আমার মনোগত (মন-সম্বন্ধী) যে সঙ্কল্প, তা সিদ্ধ হোক। আমি যেন কোনও পাপে লিপ্ত না হই। হে বিশ্বদেবগণ! আমি সকল যজমানের মধ্যে যে অধিক (অর্থাৎ উত্তম), এই কথা দেবতাগণের সম্মুখে আপনারা বলুন।–হে উর্বী-নান্নী ছয়সংখ্যকা দেবী! (দ্যেশ্চ পৃথিবী চাহপশ্চৌষধয়শ্চোর্ক চ সুনৃতা চ) আপনারা আমাদের এই কর্ম বিস্তৃত করুন। হে বিশ্বদেবগণ! আপনারা এই কর্মসমূহের বিঘ্নগুলি পরিহার করে দিন। আমরা পুত্র ইত্যাদিরূপ প্রজাগণ কর্তৃক যেন পরিত্যক্ত না হই, তথা আমাদের শরীর যেন পুষ্ট থাকে (অর্থাৎ আমরা যেন পুষ্টশরীরসম্পন্ন হই)। হে সোম রাজন! আমাদের বৈরিগণ যেন কার্যসিদ্ধি করতে না পারে।–এই অগ্নি বৈরিগণের কোপ নিরাকৃত করে আমাদের সম্মুখে আগত হোন। হে অগ্নি! অন্য কারও দ্বারা হিংসিত না হয়ে আপনি রক্ষণসমর্থরূপে আমাদের সর্বতো পালন করুন। আপনারা দ্বারা পালিত হলে বৈরিগণ বিপরীতমুখী হয়ে নিরন্তর পলায়ন করবে। এই বৈরিবর্গের অন্তরকরণ প্রবোধনের সাথে (জ্ঞান বা জ্ঞাপনের সাথে) বিনষ্ট হোক; (অর্থাৎ বৈরিগণ তাদের অন্তরে আমাদের প্রতি যে হিংসা পোষণ করে, তা যে অন্যায়, তা যেন তারা জ্ঞাপিত হতে পারে; তাহলে তাদের অন্তরস্থায়ী হিংসা দূর হয়ে যাবে)। যিনি জগকা, অর্থাৎ দক্ষ প্রজাপতি ইত্যাদিরও বিধাতা, সেই হেন হে ভুবনের পালক! হে অশ্বিযুগল, বৃহস্পতি ইত্যাদি দেবগণ! আপনারা এই যজ্ঞ ও যজমানকে ফলবৈগুণ্যলক্ষণবৎ বৈয় (অর্থাৎ ব্যর্থতা বা নিষ্ফলতা) হতে রক্ষা করুন। (কিরকম যজ্ঞ? না,) এই যজ্ঞ যে যে দেবতা সেই সেই দেবতার ব্যবহারযুক্ত মন্ত্র সমন্বিত, মহাফলজনক (অভিমাতিষাহং) ও পাপলক্ষণের নাশক (অভিভবিতার)।-পুরুহুত (অর্থাৎ বহু যজমান কর্তৃক আহূত) ইন্দ্র এই যজ্ঞে আমাদের সুখ প্রদান করুন। (কিরকম ইন্দ্র? না,) সেই ইন্দ্র উরুব্যচা অর্থাৎ অত্যন্ত ব্যাপ্ত বা বহু দেশের অধিপতি, মহিষো অর্থাৎ মহান্ বা শৌর্য ইত্যাদি গুণসম্পন্ন, পুরু অর্থাৎ বহু মন্ত্রে বা শব্দের দ্বারা প্রতিপাদিত, তিনি হশ্ব অর্থাৎ হরি-নামক অশ্বের অধিকারী। সেই হেন হে ইন্দ্র! পুত্র ইত্যাদি প্রজাসিদ্ধির নিমিত্ত আপনি আমাদের সুখী করুন; আপনি আমাদের হিংসা করবেন না, ও আমাদের তিরস্কার করবেন না।আমাদের যে কোনও যা শত্রু আছে, তারা অপনয়নযুক্ত (অর্থাৎ দুরীকৃত) হোক। আমরা সেই শত্রুগণকে ইন্দ্র ও অগ্নিদেবের অনুগ্রহে সর্বথা ব্যাঘাতপ্রাপ্ত বা পীড়িত করে তুলব। বসু, রুদ্র ও আদিত্য দেবতাগণ আমাকে এইরকম অক্রান্ত (যাকে আক্রমণ করা হয়নি, এমন) করুন। (কিরকম? না,) উপরিতনং স্বর্গং স্পশতীত্যুপরিস্পৃক্ত অর্থাৎ স্বর্গকে স্পর্শ করতে সক্ষম আমাকে এমন উন্নত করুন, উগ্রং অর্থাৎ আমি যেন শত্রুকে তিরস্কারক্ষম হই, চেত্তার অর্থাৎ চিহ্ন বা অনুসন্ধানের দ্বারা যেন বিদিত হই, ও অধিরাজমন্যেষাং অর্থাৎ সকলের অধিপতি হই, এমন করুন।–যে ইন্দ্রদেব পরকীয় অর্থাৎ শত্রুবর্গের গো-সমূহের জয়কর্তা, যিনি পরকীয় ধনরাশি লুণ্ঠনকারী, যিনি পরকীয় অশ্বসমুহের অপহরণকারী, তাঁকে অর্থাৎ সেই ইন্দ্রকে আমাদের অভিমুখী করার নিমিত্ত এই যজ্ঞে আহ্বান করছি।–হে ইন্দ্রদেব! বিবিধ আহ্বান সত্বেও (বিহবে) আপনি আমাদের এই যজ্ঞের দ্বারা সেবিত হোন (সেবস্ব)। হে হরিব (অর্থাৎ হরিত্বর্ণশালী অশ্বযুক্ত) ইন্দ্রদেব! আপনাকে এই যজমানের প্রতি স্নেহবন্ত করব। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ১১শ অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥১৪।
[সায়ণাচার্য বলেন-পঞ্চমদশেহশ্বমেধসম্বন্ধিনেন্যা যাজ্যানুবাক্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই পঞ্চদশ অনুবাকে অশ্বমেধ সম্বন্ধীয় যাজ্যা ও অনুবাক্য মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে ]।
.
পঞ্চদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নেৰ্মৰে প্ৰথমস্য প্রচেতসো যং পাঞ্চজন্যং বহবঃ সমিন্ধতে। বিশ্বস্যাং ৰিশি প্রবিবিশিবাং সমীমহে স নো মুঞ্চত্বংহসঃ।। যস্যেদং প্রণমিমিষদ্যদেজতি যস্য জাতং জনমানং চ কেবলম। তেঁম্যগ্নিং নাথিতো জোহবীমি স নো মুঞ্চত্বংহসঃ। ইন্দ্রস্য মন্যে প্রথমস্য প্রচেতসো বৃত্ৰয়াঃ স্তেমা উপ মামুপাগুঃ। যো দাশুষঃ সুকৃতো হমুপ গস্তা স নো মুঞ্চত্বংহসঃ। যঃ সগ্রামং নয়তি সং বসী যুধে যঃ পুষ্টানি সংসৃজতি ত্রয়াণি। স্তোমীং নাথিতো জোহবীমি স নো মুঞ্চত্বংহসঃ।। মন্ত্রে বাং মিত্রাবরুণা তস্য বিত্তং সত্যৌজসা দৃংহণা যং নুদেথে। যা রাজানং সরথং যাথ উগ্রা তা নো মুঞ্চমাগসঃ। যো ৰাং রথঋজু রশ্মিঃ সত্যধর্মং মিথু শুরন্তমুপতি দূষয়। স্তৌমি মিত্রাবরুণা নাথিতো জোহবীমি তৌ নো মুঞ্চতমাগসঃ। বায়োঃ সবিতুৰ্বিদথানি মন্মহে যাবাত্মম্বদ্বিভূত যৌ চ রক্ষতঃ। যৌ বিশ্বস্য পরিভূ বভূতুস্তৌ নো মুঞ্চতমাগসঃ উপ শ্ৰেষ্ঠা ন আশিষো দেবয়োৰ্দ্ধৰ্ম্মে অস্থির। ভৌমি বায়ুং সবিতারং নাথিত জোহবীমি তৌ নো মুঞ্চতমাগসঃ। রথীতমৌ রথীনামহু, উতয়ে শুভং গমিষ্ঠেী সুষমেভিরশ্বৈঃ। যমোঃ বাং দেবৌ দেবেম্বনিশিতমোজন্তৌ নো মুঞ্চমাগসাঃ। যদযাতং বহতুং সূর্যায়াস্তিচক্রেণ সংসদমিচ্ছমানী। ভৌমি দেবাশ্বিনৌ নাথিতে জোহবীমি তৌ নো মুঞ্চতমাগসঃ। মরুতাং মর্মে অধি নো ব্রুবন্তু প্রেমাং বাচং বিশ্বামবস্তু বিশ্বে। আশূ হুবে সুষমানূতয়ে তে নো মুঞ্চন্ত্রেনসঃ।। তিগমায়ুধং বীডিং সহস্বদিব্যং শৰ্দ্ধঃ পৃতানাসু জিষ্ণু। ভৌমি দেবারুততা নাথিতো জোহবীমি তে নো মুঞ্চন্ত্রেনসঃ। দেবানাং মন্ত্রে অধি নৌ ব্রুবন্তু প্রেমাং বাচং বিশ্বামবন্তু বিশ্বে। আশূ হুবে সুষমানূতয়ে তে নো মুঞ্চনেত্বনসঃ। যদিদং মাহভিশোচতি পৌরুষেয়ণ দৈব্যেন। ভৌমি বিশ্বাবোন্নাথিতে জোহবীমি তে নো মুঞ্চনেসঃ। অনু নোহদ্যানুমতিরনু ইদমতে ত্বং বৈশ্বানররা ন উত্যা পৃষ্টে দিবি। যে অপ্রথেমমিতেভিনরাজোভির্যে প্রতিষ্ঠে অভবতাং বসুনাম। ভৌমি দ্যাবাপৃথিবী নাথিতো জোহবীমি তে নো মুঞ্চতমংহসঃ। উৰ্ব্বী রোদসী বরিবঃ কৃপোতং ক্ষেত্রস্য পত্নী অধি নো ব্ৰয়াতম। ভৌমি দ্যাবাপৃথিবী নাথিতো জোহবীমি তে নো মুঞ্চমংহসঃ। যত্তে বয়ং পুরুষত্রা যবিষ্ঠাবিদ্বাংসশ্চকৃমা কচ্চন আগঃ। কৃধী স্বম্মা অদিতেরনাগা ব্যেনাংসি শিশ্ৰথো বিগয়ে। যথা হ তস গৌৰ্য্যং চিৎ পদি যিতামমুঞ্চতা যজত্রাঃ। এবা ত্বমম্মৎ প্র মুঞ্চা ব্যংহঃ প্ৰাতাৰ্য্যগ্নে প্রতরাং ন আয়ুঃ ॥১৫৷৷
মর্মার্থ- (পুরোনুবাক্যা)–পঞ্চজনা অর্থাৎ নিষাদের সাথে পঞ্চবর্ণের মানুষের হিতকারী পাঞ্চজন্য সদৃশ যে অগ্নিকে প্রথম অর্থাৎ সৃষ্টির আদিতে যজমানগণ সমিধের দ্বারা প্রদীপ্ত করেছিলেন, প্রচেতা অর্থাৎ প্রকৃষ্ট জ্ঞানবৎ সেই অগ্নিমূর্তিকে আমি মনে মনে চিন্তা করছি (চিন্তয়ামি)। সকল প্রজার মধ্যে জাঠরাগ্নিরূপে প্রবিষ্টবান সেই অগ্নিকে আমরা প্রাপ্ত হবে। সেই অগ্নি আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন।-(যাজ্যা)–প্রাণচ্ছাসোপেত অর্থাৎ প্রাণ ও শ্বাস যুক্ত, নিমিঘ ও উন্নিমেষ যুক্ত, এই জগৎ কম্পিত (চেষ্টত) হচ্ছে। জাত (অর্থাৎ পূর্বে উৎপন্ন) ও জনিষ্যমাণ (অর্থাৎ পরে উৎপাদিতব্য) এই জগৎ সদা যে অগ্নির অধীন, আমি সেই অগ্নির স্তুতি করছি। ফলকামনাযুক্ত হয়ে আমি (ফলাযুক্তেহহং) পুনঃ পুনঃ যাগ করছি; সেই অগ্নি আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। (পুরোনুবাক্যা)-সৃষ্টির আদিকালে উৎপন্ন প্রকৃষ্ট জ্ঞানবান ইন্দ্রের মূর্তিকে আমি মনে মনে চিন্তা করছি। সেই বৃত্রঘু (শত্রুঘাতী) ইন্দ্রের গুণকীর্তনযুক্ত যে স্তোত্রসমূহ তাঁরই নিকট হতে যজমানগণ প্রাপ্ত হয়েছেন, সেই স্তোত্রসমূহ আমার জিহ্বায় অবস্থিত হোক। যে ইন্দ্র হবিঃ-দানকারী ও সুষ্ঠুভাবে যজ্ঞকর্মে নিয়োজিত যজমানের আহ্বান শ্রবণ পূর্বক এই স্থানে আগমন করেন, সেই ইন্দ্র পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।–(যাজ্যা)-যে ইন্দ্র যুদ্ধের নিমিত্ত আপন পরিবারভুক্ত সদস্যের ন্যায় আপন সেনাগণকে সম্যক্ প্রাপ্ত হন, যে ইন্দ্র যজমানকে গো-অশ্ব-পুরুষরূপ তিনপ্রকার পুষ্টির সাথে সংযোজিত করেন, আমি সেই ইন্দ্রের স্তুতি করছি, ফলকামনাযুক্ত হয়ে আমি পুনঃ পুনঃ যাগানুষ্ঠান করছি; সেই ইন্দ্র আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। (পুরোনুবাক্যা)–হে মিত্র ও বরুণদেব! আমি মনে মনে আপনাদের ধ্যান করছি (ধ্যায়ামি)। আপনারা অকৃত্রিম বলযুক্ত হয়ে আমাদের যে শত্ৰুবর্গকে নিরাকরণ করেন, সেই বৈরিগণের দুষ্টবুদ্ধি (বিত্তং) জানেন (জানীতম)। দীপ্তিমন্ত আপনারা দুজনে লোকের উপকারের উদ্দেশে রথের সাথে আদিত্যের ন্যায় বৃষ্টি উৎপন্ন করুন। অনিষ্ট নিবারণে আপনারা অত্যন্ত তীক্ষ্ণ (উগ্র); সেই হেন যে আপনারা দুজন, আপনারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।–(যাজ্যা)–হে মিত্রদেব ও বরুণদেব! আপনাদের যে রথ ঋজুরশ্মি অর্থাৎ অকুটিল প্ৰগ্ৰহযুক্ত (অশ্বরশ্মিযুক্ত বা অনুগ্রহযুক্ত) ও সত্যধর্মা অর্থাৎ সত্যের (অবিতথের) ধারক, সেই রথ মিথ্যাচারী (বা অন্যায়কারী) শত্রুর নিকট বাধকরূপে প্রাপ্ত হয়। সেই মিত্রদের ও বরুণদেবকে আমি স্তুতি করছি; ফলযাঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ তাঁদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি।- (পুরোনুবাক্যা)-বায়ু ও সবিতা নামে যে দুই দেবতা, সেই দেবতাদ্বয়ের অভিপ্রায় বিশেষরূপে আমরা জানি। সেই বায়ু ও সবিতাদেবতা আপন শরীরের ন্যায় সকল জগৎকে ধারণ করে আছেন; অধিকন্তু তাঁরা জগৎকে রক্ষা বা পালনও করছেন; আবার, যে বায়ু ও সবিতাদেবতাকে সমগ্র জগৎ ব্যাপকভাবে প্রাপ্ত হয়েছে, সেই দেবদ্বয় পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।–(যাজ্য)–আমাদের শ্রেষ্ঠ বা প্রশস্ত ফলবিশেষ (আশীষাঃ) সেই বায়ু ও সবিতাদেবতার অধীন। আমি সেই দেবদ্বয়কে স্তুতি করছি; ফলঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ তাঁদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি; তারা আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন।-(পুরোনুবাক্যা)-রথীবৃন্দের মধ্যে শ্রেষ্ঠরথী, সুষ্ঠুভাবে নিয়মিত অশ্বে শুভ বা সমীচীন দেশে গমনকারী যে অশ্বিনীকুমার যুগল, আমরা তাদের আহ্বান করছি। হে দেব অশ্বিনীকুমারদ্বয়! দেববর্গের মধ্যে আপনাদের বল অন্য অপেক্ষা স্বভাবত নিশিত বা তীক্ষ্ণ। আপনারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।–(যাজ্যা)–যে কারণে আপন জননী সূর্যপত্নীকে বহনের নিমিত্ত তারা দুজন তিনচক্রযুক্ত রথে গমন করেছিলেন; সেই কারণে আমি তাদের স্তুতি করছি; ফলাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ আমি তাদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি; তারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।–(পুরোনুবাক্যা)-মরৎ নামে আখ্যাত দেবগণের মুর্তি আমি মনে মনে ধ্যান করছি এবং সেই মরুৎগণ আমাদের অধিক বলুন, (অর্থাৎ আমরা অপর সকল জন অপেক্ষা অধিক যজ্ঞকারী, সেই কথা ঘোষণা করুন) এবং আমাদের প্রার্থনা সর্বথা প্রকর্ষের সাথে রক্ষা করুন। আমরা আমাদের রক্ষণের নিমিত্ত শীঘ্রগামী সুষ্ঠু নিয়ামক মরুৎ নামে আখ্যাত সেই দেবগণের আহ্বান করছি; তাঁরা পাপ হতে আমাদের রক্ষা করুন।–(যাজ্য)-মরুৎ নামে আখ্যাত দেবগণের আয়ুধ তিগ্ম ইত্যাদি বিশেষণবিশিষ্ট অর্থাৎ অশ্বিনীরূপা সূর্যপত্নী সংজ্ঞার গর্ভে অশ্বিযুগলের জন্ম। সেগুলি তীক্ষ্ণ, দৃঢ়; অধিকন্তু বলযুক্ত, পরকে অভিভবে সক্ষম ও যথোচিত ব্যবহারযোগ্য; অতএব পরকীয় সৈন্যগণকে জয়শীল। আমি সেই হেন মরুৎ-দেবগণের স্তুতি করছি, ফলঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ তাঁদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি; তারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন। (পুরোনুবাক্যা)–বিশ্বদেব নামে অভিহিত দেবগণের মূর্তি আমি মনে মনে ধ্যান করছি এবং সেই দেবতাগণ আমাদের অধিক বলুন, এবং আমাদের প্রার্থনা সর্বৰ্থা প্রকর্ষের সাথে রক্ষা করুন। আমরা আমাদের রক্ষণের নিমিত্ত শীঘ্রগামী ও সুষ্ঠু নিয়ামক বিশ্বদেব নামে আখ্যাত সেই দেবগণকে আহ্বান করছি।–(যাজ্যা)-মনুষ্য ও দেবতার দ্বারা সম্পাদিত দুঃখে আমি অভিশাচিত ঋ(বা পীড়িত)। উভয়তঃ সেই দুঃখ অপনোদনের নিমিত্ত আমি সেই বিশ্বদেবগণের স্তুতি করছি; ফলাযাঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ আমি তাঁদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি; তারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন। (যাজ্যা ও পুরোনুবাক্যা)-অনু নোহদ্যানুমতির্যজ্ঞ–এটি পুরোনুবাক্যা এবং অন্বিদনুমতে ত্বং মন্যাসা–এটি যাজ্য। (এই উভয়ই ৩য় কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ১১শ অনুবাকে ব্যাখ্যাত)। সেই অনুমতি দেবী আমাদের এই যজ্ঞ অনুমোদন করুন। আমরা তার স্তুতি করছি; তিনি আমাদের সুখ দান করুন; তিনি আমাদের পুত্র ইত্যাদি যুক্ত ও অক্ষয় ধনের পোষণ করুন।–(পুরোনুবাক্যা ও যাজ্যা)-বৈশ্বানরা ন উত্যা প্র যাতু–এটি পুরোনুবাক্যা এবং পৃষ্টো দিবি পৃষ্টো অগ্নিঃ–এটি যাজ্য। (এই উভয়ই ১ম কাণ্ডের ৫ম প্রপাঠকের ১১শ অনুবাকে ব্যাখ্যাত)। সকলের হিতকারী বৈশ্বানর অগ্নিদেব আমাদের রক্ষার নিমিত্ত দূরবর্তী দেশ হতেও অবীষ্টবাহক স্তোত্রের দ্বারা আমাদের নিকট আগত হোন এবং আমাদের রক্ষা দান করুন। আমরা সেই অগ্নির স্তুতি করছি, যে অগ্নি দুলোকে আদিত্যরূপে, পৃথিবীলোকে দাহ পাক-প্রকাশ ইত্যাদি রূপে ও ওষধিতে ফলপাককারীরূপে অবস্থান করছেন, আমরা ফলঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ তার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি, তিনি পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।-(পুরোনুবাক্যা)–যে দ্যাবা পৃথিবী অমিত বলের নিমিত্ত প্রখ্যাত; অধিকন্তু, যে দ্যাবাপৃথিবী ধনের আশ্রয়ভূত, সেই দ্যাবাপৃথিবীর স্তুতি করছি। ফলঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ সেই দ্যুলোক ও পৃথিবীর উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি, তারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।–(যাজ্যা)–হে অত্যন্ত বিস্তৃতা দ্যাবাপৃথিবী (রোদসী)! আপনারা ধন বা পূজা সম্পন্ন করুন। ক্ষেত্রের পত্নী (পালয়িত্রী) হে দুলোক ও পৃথিবী! আপনারা আমাদের অধিক বলুন, (অর্থাৎ আমরা অপরজন অপেক্ষা অধিক যজ্ঞকারী বলে ঘোষণা করুন)। আমরা সেই হেন আপনাদের স্তুতি করছি; ফলঞ্চাযুক্ত হয়ে পুনঃ পুনঃ আপনাদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি; আপনারা পাপ হতে আমাদের মুক্ত করুন।- (পুরোনুবাক্যা)–হে যুবতম অগ্নিদেব! জ্ঞানরহিত আমরা আপনার পুরুষগণের (পূজকগণের) প্রতি যদি কোনও অপরাধ করে থাকি, (অর্থাৎ সেই কারণে যদি কোন পাপ করে থাকি), তাহলে অখণ্ডনীয় আপনি আমাদের সেই অপরাধ সুষ্ঠুভাবে রহিত করুন। হে অগ্নিদেব! আপনি আমাদের পাপসমূহকে সর্বথা বিশেষভাবে বিনাশ করুন। (যাজ্যা)–যাগকর্তা (যষ্টব্য) বসুগণ জগতের নিবাসহেতুকর অগ্নির সাথে বন্ধন স্থান হতে স্বকীয় গৌরবর্ণ গো-গণকে পাশমুক্ত করেছিলেন। (তথাবিধ) হে অগ্নিদেব! (অর্থাৎ যে প্রকারে আপনি উপযুক্ত বন্ধন মুক্ত করেছিলেন), সেইভাবে আপনি আমাদের নিকট হতে বিবিধ পাপ প্রকর্ষের সাথে মুক্ত করুন। আমাদের আয়ু যাতে অত্যধিক হয়, তেমন করুন ॥১৫
–– চতুর্থ কাণ্ড সমাপ্ত–