১.৬ প্রথম কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

প্রথম কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- সং ত্বা সিঞ্চামি যজুষা প্ৰজামায়ুৰ্ধনং চ। বৃহস্পতিপ্ৰসূতো যজ্ঞমান ইহ মা রিষৎ। আজ্যমসি সত্যমসি সত্যস্যাধ্যক্ষমসি হবিরসি বৈশ্বানরং বৈশ্বদেবমুৎপূতশুষ্মং সতৌজাঃ। হসোহসি সহমানমসি সহস্বারাতীয়তঃ সহস্বারাতীয়তঃ সহস্ক পৃতনাঃ সহস্ব পৃতন্যতঃ। সহর্ষবীর্যমসি তম্মা জিহজ্যস্যাহজমসি সত্যস্য সত্যমসি সত্যায়ুঃ অসি সত্যশুষ্মমসি সত্যেন ত্বাহভি ঘারয়ামি তস্য তে ভক্ষীয়। পঞ্চানাং ত্বা বাতানাং যন্ত্রায় ধর্তায় গৃহ্নামি পঞ্চানাং ত্বনাং যন্ত্রায় গৃহ্নামি পঞ্চানাং ত্বা দিশাং যন্ত্রায় ধত্ৰায়গৃহ্নামি পঞ্চানাং ত্বা পঞ্চজনানাং যন্ত্রায় ধর্তায় গৃমি চরোস্ত্রা পঞ্চবিলস্য যন্ত্রায় ধর্তায় গৃহ্নামি ব্ৰহ্মণস্থা। তেজসে যন্ত্রায় ধর্তায় গৃহামি ক্ষত্রস্য বোজসে যন্ত্রায় ধায় গৃহামি বিশে ত্বা যন্ত্রায় ধর্তায় গৃমি সুবীৰ্য্যায় ত্বা গৃহূমি সুপ্রজ্যায় ত্বা গৃমি রায়ম্পোষায় ত্বা গৃহূমি ব্ৰহ্মবসায় ত্বা গৃহূমি ভূস্মাকং হবিৰ্দোনামাশিযো যজমানস্য দেবানাং বা দেবতাভ্যো গৃহূমি কামায় ত্বা গৃমি ॥১॥

 মর্মার্থ- হে শুষ্ক আজ্য! বৃহস্পতি কর্তৃক প্রেরিত হয়ে আমি তোমাকে প্রজা, আয়ু ও ধনের সাথে যজুঃ-মন্ত্রের দ্বারা পাত্রে সম্যভাবে সিঞ্চন করছি। এই কর্মের দ্বারা যজমান যেন কোন অপরাধে লিপ্ত না হন (ইহ কর্মণি যজমানঃ স্কন্দনাপরাধেন মা বিষন্মা হিংস্যতা। হে আজ্য! তুমি প্রাপক (ঘৃতেন হি হোমাধারো জ্বলন্নগ্নিঃ প্রাপ্যতে), তুমি সত্য, কর্মফলের সাধক (কর্মফলসাধনত্ব), সৎ-মানবের কর্মের অধ্যক্ষ(সত্যস্যাধ্যক্ষমসি)। তুমি প্রধান হবিঃ; তুমি সকল মানব-সম্বন্ধি বৈশ্বানর, সকল দেব-সম্বন্ধি বৈশ্বদেব (অর্থাৎ উদ্দীপিত বলস্বরূপ)। তোমার বল সত্য (আজস্য হি বলবিতথ), শত্রুগণের অভিভবে (পরাভাবে) সমর্থ (শত্ৰুণামভিভবনসমর্থ), নিরন্তর তাদের অভিভব করে বর্তমান; এই ভাবে তুমি আমাদের সেই শত্রুদের পরাজিত করো, যারা মনে মনেও শত্রুতা করতে ইচ্ছুক, শত্রুসেনাদের অভিভব করো। যে শত্রুগণ সেনা-সংগ্রহেচ্ছ সেই শত্রুগণকেও অভিভব করো। তুমি বহুরকম সামর্থোপেত (শক্তিযুক্ত), তোমাকে আমরা যাগের দ্বারা প্রীত করছি (ত্বং মাং যাগদ্বারেণ প্রাণয়)। তুমি লৌকিক ঘৃত অপেক্ষাও পূত ও বলপ্রদ বলে মুখ্য আজ্য; তুমি সত্য অপেক্ষাও সত্যস্বরূপ (সতাস্য সত্যমসি), তুমি সত্যায়ু (সত্যভূতমায়ুরস্মিনিতি সত্যায়ুঃ), সত্যবল (সত্যশুম্মমসি সত্যবলমসি); তোমাকে আমরা সত্যস্বরূপ চক্ষুর দ্বারা দর্শন করছি; এমন যে তুমি আমরা সেই তোমার সেবা করি। শরীরের মধ্যে প্রাণ-অপান-ব্যান-উদান-সমান এই পঞ্চ বায়ুর আপন আপন নিয়মে স্থির থাকবার নিমিত্ত ও জগৎকে ধারণের কুশলতায়, হে আজ্য! তোমাকে গ্রহণ করছি। পঞ্চ ঋতুর (ঐতরেয় ব্রাহ্মণে প্রতিপাদিত–দ্বাদশ মাসঃ পঞ্চৰ্তবো হেমন্তশিশিরয়োঃ সমাসেন অর্থাৎ হেমন্ত কালকে শীতকালের সাথে সংযুক্ত করে কার্তিক অগ্রহায়ণ পৌষ ও মাঘ মাসকে শীত কাল ধরে বৎসরে পাঁচটি ঋতুর অস্তিত্ব উল্লেখ করা হলো) নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। পঞ্চ দিকের (প্রাচ্যাদীনামূর্ধ্বান্তানাং দিশাং পঞ্চত্বং প্রসিদ্ধ অর্থাৎ পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ ও ঊর্ধ্ব ধরে পাঁচটি দিকের প্রসিদ্ধির কথা বলা হলো) নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। পঞ্চজনের, অর্থাৎ দেব মনুষ্য রক্ষ ও গন্ধর্বের (পঞ্চজনঃশব্দ সমস্তো দেবমনুষ্যাসুররক্ষোগন্ধর্বেষু রূঢ়ঃ) নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। পঞ্চ বিলের সাথে আকাশে (অথবা চরুর) নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। (পুরুষমেধযজ্ঞের অবসানে কল্পসূত্রকার বলেছেন-পঞ্চবিলস্য চরোর্বিজ্ঞায়ত আজ আগ্নেয়ঃ পূর্বস্মিন্বিলে, দধন্যৈন্দ্রো দক্ষিণে, শৃতে প্রতিদুহিনীতমিশে বা বৈশ্বদেবঃ পশ্চিমে, অসু মৈত্রাবরুণ উত্তরে, পয়সি বাৰ্হস্পতত্যা মধ্যমে)। ব্ৰহ্মণ্যে বা ব্রাহ্মণ জাতির ব্রহ্মতেজের নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। ক্ষত্রিয়জাতির যুদ্ধসামর্থ্যের (ক্ষত্রিয়জাতেরোজো যুদ্ধসামর্থ্যম) নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। বৈশ্যজাতির কৃষিবাণিজ্য ইত্যাদির নিয়মন ও ধারণের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। সুবীর্যশালী সকলের আপন আপন ব্যাপারে অতিশয় সামর্থ্যের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। শোভনঅপত্যের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। ধনপুষ্টির নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। শ্রুতি-অধ্যয়নরূপ সম্পত্তির দ্বারা শিষ্টাঙ্গীকৃত ব্ৰহ্মতেজের নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। হে আজ্য! ম আমাদের মঙ্গলকারক হও; তুমি আমাদের ত্যাগ করো না; তুমি আমাদের সাথে সম্বন্ধযু হও। দেবতাদের নিমিত্ত হবিঃস্বরূপ হও (দেবানাং হবির্ভব)। যজমানের আশীষ-রূপ হও (যজমানস্য যা আশিষস্তদ্রপং ভব)। দেবগণের তৃপ্তিবিধায়ক তোমাকে তাদের নিমিত্তই গ্রহণ করছি। হে আজ্য হবিঃ। হবির্ভাগী দেববর্গ যেমন যেমন ভাবে তোমাকে কামনা করেন, সেইরকম কামনার নিমিত্তই তোমাকে গ্রহণ করছি ॥১॥

[সায়ণাচার্য বলেন–প্রথমানুবাকে হবিগ্ৰহণানুমন্ত্রণমুক্তং, দ্বিতীয়ানুবাকে হবিহোমানুমন্ত্রণং বক্তব্য। অর্থাৎ–প্রথমানুবাকে হবিঃ গ্রহণের মন্ত্রগুলি কথিত, এবং এই দ্বিতীয় অনুবাকে হবিঃ-হোমের মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে ] 

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- ধ্রুববাহসি ধ্ৰুবোহহং সজাতেষু ভূয়াসং ধীরশ্চেত্তা। বসুবিদুগ্লোহ-অ্যাগ্রোহহং সজাতেষু ভূয়াসমুগ্ৰশ্চেত্তা বসুবিভিভূস্যভিড়রহং সজাতে ভূয়াসমভিড়শ্চেত্ত বসুবিৎ। যুনম্নিত্বা ব্ৰহ্মণা দৈব্যেন হব্যায়াস্মৈ বোঢ়বে জাতবেদঃ। ইন্ধানাস্তা সুপ্রজসঃ সুবীরা জ্যোগজীবেম বলিহৃত বয়ং তে। যন্মে অগ্নে অস্য যজ্ঞস্য রিষ্যাৎ যদ্বা স্কন্দাদাজ্যস্যোত বিষ্ণো। তেন হন্মি সপত্নৎ দুৰ্ম্মরায়ুমৈনং দধামি নিঋত্যা উপন্থে। ভূর্ভুবঃ সুবঃ। উচ্ছ্বমো অগ্নে যজমানায়ৈধি নিশুম্মো অভিদাসতে। অগ্নে দেবে মষিদ্ধ মজিহু। অমর্ত্যস্য তে হোতমূর্ধন্না জিঘর্মি রায়ম্পোষায় সুপ্রজাস্খায় সুবীৰ্য্যায়। মনোহসি প্রাজাপত্যং মনসা মা ভূতেহবিশ। বাগস্যৈন্দ্ৰী সপত্নক্ষয়ণী বাঁচা মেন্দ্রিয়েণাহবিশ। বসন্তমৃতুনাং প্রণামি স মা প্রীতাঃ প্রীণাতু গ্রীষ্মমৃতুনাং প্রণামি স মা প্রীতঃ গ্রীণাত বর্ষা ঋতনাং প্রণামি তা মা প্রীতাঃ গ্রীণন্তু শরদমৃতুনা প্রণামি সা মা প্রীতা গ্রীণাতু হেমন্তশিশিরাবৃত্নাং প্রণামি তৌ মা প্রীতৌ প্রণীতাম। অগ্নীষোময়োরহং দেবযজ্যয়া চক্ষুম্মা ভূয়াস। অগ্নেরহং দেবযজ্যযাহন্নাদো ভূয়াস। দব্ধিরস্যদা ভূয়াসমমুং দভেয়। অগ্নীযোমযোরহং দেবযজ্যয়া বৃত্ৰাহা ভূয়াস। ইন্দ্রাগ্নিয়োরহং দেব্যজ্যয়েন্দ্রিয়াব্যম্নদো ভূয়াস। ইন্দ্রস্যাহং দেবযজ্যয়েন্দ্রিয়াবী ভূয়াস। মহেন্দ্রস্যাহং দেবযজ্যয়া জেমানং মহিমানং গমেয়। অগ্নেঃ স্বিষ্টকৃতোহহং দেবযজ্যায়াইয়ুম্মন্যযজ্ঞেন প্রতিষ্ঠাং গমেয়ম্ ॥২॥

মর্মার্থ- হে মধ্যম পরিধি! তুমি ধ্রুবঃ অর্থাৎ স্থির হও; সেই স্থির তোমার অনুমন্ত্রণের দ্বারা আমিও সজাত অর্থাৎ জ্ঞাতিগণের মধ্যে স্থির, ধীর (অর্থাৎ ধৈর্যবা), জ্ঞাতা (রক্ষোপননস্য জ্ঞাতা) ও ধনলাভকারী হবো। হে দক্ষিণ পরিধি! তুমি উগ্র হও (রক্ষাংস্যপহমুগ্ৰোহসি), তোমার অনুমন্ত্রের দ্বারা আমিও উগ্র হবো; জ্ঞাতিগণ যাতে আমার প্রতিবাদী হতে না পারে, এবং বৈরিবর্গ যাতে আমাকে অভিভব করতে সক্ষম না হয়, তা সম্পাদিত করো। আমি বৈরিগণের প্রতি উগ্রচিত্তশালী ও ধনবান হবো। হে উত্তর পরিধি! তুমি রাক্ষসগণের অভিবকারী; তোমার মন্ত্রের দ্বারা আমি জ্ঞাতিবর্গ ও বৈরিগণের অভিভবকারী হবো; অভিবব-সক্ষম চিত্তশালী ও প্রভূত ধনের প্রাপক হবো। হে জাতবেদা (অগ্নি)! দৈব্যেন অর্থাৎ দেবতাদের উপযুক্ত (দেবযোগ্যেন) ব্রহ্ম-মন্ত্রের দ্বারা আমি তোমাকে এই কর্মে যুক্ত করছি। হে জাতবেদা! তোমাকে ইন্ধনের দ্বারা প্রজ্বলিত করে আমরা শোভন অপত্যবর্গ ও ভৃত্যবর্গের সাথে চিরকাল জীবিত থাকব। তোমাকে পূজা করছি (পূজামুহরন্তঃ)। হে অগ্নি! আমার এই যজ্ঞ-সম্বন্ধি বৰ্হি ইত্যাদি যে রাক্ষসগণ প্রভৃতির দ্বারা বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছে, আজ্যের যে সামান্য বিন্দু বিন্দুজাত) যা স্কন্দ হতে পতিত হয়ে যায়, হে বিষ্ণো (ব্যাপক দেবতা)! সেই ক্ষরিত বিন্দুর দ্বারা আমি বৈরিগণকে হনন করছি। যে সপত্ন অর্থাৎ শত্রুকে মারা অসাধ্য (মারয়িতুমশক), এমন দুর্মর আয়ুশালী শত্রুকে পাপদেবী নিঋতির উৎসঙ্গে স্থাপন করছি। আমি ভূলোক, অন্তরিক্ষলোক ও দ্যুলোক–এই তিন লোকের উদ্দেশ্যে ব্যাহৃতি হোম সম্পাদিত করছি। হে অগ্নি! আপনি যজমানের কর্মে (যজমানায়োচ্ছুম্ম) প্রভূত বল উদ্ভূত করুন; শত্রুবর্গকে নির্বল বা নিগৃহীত করুন। হে অগ্নি! দেবতা ও মনুষ্যবর্গ আপনাকে দীপ্ত করে, আপনার জিহ্বা হর্ষের কারণভূত হয়। হে দেববর্গের আহ্বানকারী অগ্নি! যজমানের ধনের পুষ্টির জন্য, তার শোভন অপত্যের জন্য ও শোভন বীর্যের জন্য আমি মরণরহিত আপনার মস্তকে গৃত ইত্যাদি নিক্ষেপ করছি (ক্ষারয়ামি)। হে সৌবাঘার (যজ্ঞপাত্রবিশেষ)! তুমি মনঃস্বরূপ, প্রজাপতি কর্তৃক সৃষ্ট যজ্ঞের সাধনের দ্বারা মনের সাথে আমার মধ্যে প্রবেশ করো। হে সুচ্যাঘার (যজ্ঞপাত্রবিশেষ)! তুমি বাস্বরূপ এবং ইন্দ্রিয়সম্বন্ধী (ঐন্দ্রিণে ব্যাকৃতত্বাৎ)। সেইভাবে বাক্য ও চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের সাথে, হে সুচ্যাঘার! আমাতে প্রবিষ্ট হও। ঋতুর মধ্যে বসন্তঋতুকে প্রীত করছি (বসন্তমৃতুনাং প্রণামি), তা আমার সন্তুষ্টি বিধান করুক। এইভাবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত-শিশির ঋতুকে আমি প্রীত করছি, সেগুলিও আমার প্রতি প্রীতিযুক্ত হয়ে আমার তুষ্টি সম্পাদিত করুক (তে চ তুষ্টা মাং তোষয়ন্তু)। অগ্নি ও সোমের সম্বন্ধিনী দেব্যাগ অনুষ্ঠিত করে আমি চক্ষুযুক্ত হবো। অগ্নির উদ্দেশ্যে দেবযাগ করে আমি অন্নের ভোক্তা হবো। হে উপাংশুযাগের দেবতা! আপনি অসুরবর্গের দমনকারী, আপনার প্রসাদে আমি যেন শত্রু কর্তৃক হিংসিত না হই; যারা যজমানকে দ্বেষ করে, তাদের যেন বিনাশ করি। অগ্নি ও সোমের উদ্দেশে দেবযাগ অনুষ্ঠিত করে আমি বৃহন্তা ইন্দ্রের সামর্থ্য লাভ করব এবং অন্নের ভক্ষক হবো। ইন্দ্রাগ্নির উদ্দেশ্যে দেবযাগ অনুষ্ঠিত করে আমি চক্ষুযুক্ত হবো। অগ্নির উদেশ্যে দেবযাগ করে আমি অন্নের ভোক্তা হবো। হে উপাংশু্যাগের দেবতা! আপনি অসুরবর্গের দমনকারী, আপনার প্রসাদে আমি যেন শত্রু কর্তৃক হিংসিত না হই; যারা যজমানকে দ্বেষ করে, তাদের যেন বিনাশ করি। অগ্নি ও সোমের উদ্দেশে দেবযাগ অনুষ্ঠিত করে আমি বৃহন্তা ইন্দ্রের সামর্থ্য লাভ করব এবং অন্নের ভক্ষক হবো। ইন্দ্রাগ্নির উদ্দেশ্যে দেবযাগ অনুষ্ঠিত করে আমি ইন্দ্রিয়শালী হবো। মহেন্দ্রের উদ্দেশ্যে দেবযাগ অনুষ্ঠিত করে আমি জয় ও মহিম প্রাপ্ত হবো। স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির উদ্দেশ্যে দেবযাগ অনুষ্ঠিত করে আমি আয়ুষ্মন হবে এবং যজ্ঞে ফলপ্রাপ্তিরূপ লক্ষণ লাভ করব ॥২॥

[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়ানুবাকে ভক্ষ্যস্যেড়াদিভাগস্যানুমন্ত্রণমুচ্যতে।]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নিশ্মা দুয়িষ্টাৎ পাতু সবিতাহঘশংসাৎ। যো মেহস্তি দূরেহরাতীয়তি তমেতেন জেষম। সুরূপবর্ষবর্ণ এহীমা ভদ্ৰাৰ্যাৎ অভ্যেহি মামনুব্রতা ন শীর্ষাণি মৃড়মিড় এহদিত এহি সরস্বত্যেহি বস্তিরসি রমতিরসি সুনৰ্য্যসি জুষ্টে জুষ্টিং তেহশীয়োপত উপহব তেহশীয় সা মে সত্যাহশীরস্য যজ্ঞস্য ভূয়াদরেড়তা মনসা তচ্ছকেয়ং যজ্ঞো দিবং রোহতু যজ্ঞো দিবং গচ্ছতু যো দেবযানঃ পন্থাস্তেন যজ্ঞো দেবান অপ্যেত্বস্মৃস্বিন্দ্র ইন্দ্রিয়ং দধাত্বশ্মায় উত যজ্ঞাঃ সচন্তামম্মাসু সন্ত্রাশিষঃ সা নঃ প্রিয়া সুপ্রভৃৰ্ত্তিৰ্মযোনী। জুষ্টিসি জুষস্ব নো জুষ্টা নোহসি জুষ্টিং তে গমেয়। মনো জ্যোতিৰ্জ্জুমাজ্যং বিচ্ছিন্নং যজ্ঞং সমিমং দধাতু। বৃহস্পতিশুনুতামিমং নো বিশ্বে দেবা ইহ মাদয়স্তাম্। ব্ৰধ পিন্বস্ব দদতে মে মা ক্ষায়ি কুর্বতো মে মোপ দসৎ। প্রজাপতের্ভাগগাহসজ্জা পয়স্বান্ প্রাণাপানৌ মে পাহি সমান-ব্যানৌ মে পাহাদ্যন-ব্যানৌ মে পাহক্ষিতোহস্যক্ষিত্যৈ ত্ব মা মে ক্ষেষ্ঠা অমুত্ৰামুষ্মিলোঁকে ॥৩

মর্মার্থ- মন্ত্ৰবৈকল্য বা ক্রিয়াবৈকল্যজনিত দোষপূর্ণ যাগ হতে অগ্নি আমাকে রক্ষা করুন। পাপরুচি (বা পাপমতি) হতে সবিতা আমাকে রক্ষা করুন। রাক্ষস ইত্যাদি যে সকল শত্রু আমার নিকটে অথবা দুরে অবস্থিত থেকে আমার শত্রুতা করতে ইচ্ছা করে, তাকে এই যজমানের ভাগের দ্বারা (যজমানভাগেন) জয় করব। গো-শরীর-ধারিণী হে ইড়া নামী দেবতা! তোমার শৃঙ্গ-পুচ্ছ ইত্যাদি শোভন রূপ, উদক ও ঘৃতরূপ শোভন বর্ষ ও শুকু-কৃষ্ণ-কলিপ ইত্যাদি শোভন বর্ণ সহ তুমি আমার এই শাস্ত্রোক্তযজ্ঞসাধনরূপ গৃহে আগমন করো, আমার অনুকূল হয়ে আমার সম্মুখে আগমন করো এবং আমাদের দোষশূন্য করো। হে ইড়া, অদিতি ও সরস্বতি (উড়ে রহেদিতে সরস্বতি)! তোমরা প্রিয়ভাবে অন্বিত হয়ে এই স্থানে আগমনপূর্বক আমার সকল দোষ ক্ষালিত করে দাও। হে ইড়া! তুমি ইহলোক ও পরলোকের সুখের কারণ-স্বরূপ, তুমি রমণীয়, তুমি মনুষ্যগণের পক্ষে সুখপ্রদানকর্তা ও তাদের প্রেরণকারক। তুমি সকলের দ্বারা সেবিত; আমরা যেন তোমার প্রীতি লাভে সক্ষম হই। হে অনুজ্ঞাকারি! আমরা যেন তোমার অনুজ্ঞা লাভে সমর্থ হই। এই যজ্ঞের ফলপ্রার্থনা যেন সত্য হয়। আদর সহকারে তোমার প্রসাদগুণে সেই ফল সাধনে সমর্থ হবো। আমাদের অনুষ্ঠিত এই যজ্ঞ স্বর্গবাসিগণের তৃপ্তি সাধন করুক। এই যজ্ঞ আমাদের স্বর্গপ্রদেশে গমন কারক। দেবতার নিকটে গমন করার যে পথ, সেই দেবমার্গে গমন করে এই যজ্ঞ দেববর্গকে প্রাপ্ত হোক। তোমার প্রসাদে ইন্দ্র আমাদের চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়সমূহের সামর্থ্য দান করুন; এবং পরবর্তী কালে আমরা যাতে যজ্ঞ সম্পাদন করতে পারি আমাদের তেমন ধন প্রদান করুন। আমাদের অভিমত ফল লব্ধ হোক, তা যেন আমাদের তৃপ্তিদায়ক ও দুঃখের নাশক হয়। হে ইড়া! তুমি প্রীতিরূপা হও; আমাদের প্রীতি সম্পাদন করো; তুমি আমাদের দ্বারা সেবিতা হও; আমরাও যেন তোমার প্রীতি প্রাপ্ত হতে পারি। মাননীয় এই অগ্নি আমাদের প্রদত্ত ঘৃত ইত্যাদি আহুতি বা আজ্য সেবন করুন, এই কোনরকম বৈকল্যের জন্য বিচ্ছিন্ন এই যজ্ঞকে সংযোজিত করুন, বৃহস্পতি স্বয়ং এই যজ্ঞকে বিস্তার দান করুন, বিশ্বলোকের দেবতাগণ এই যজ্ঞে তৃপ্তিলাভ করুন। হে ব্ৰধু (যজ্ঞপুরুষ)! আপনাতে যেন আমাদের মন সর্বদা আবদ্ধ থাকে; আমাদের ও ঋত্বিকবর্গকে তৃপ্ত করুন, ধনদানকারী আমার দেয় ধন যেন ক্ষীণতা প্রাপ্ত না হয়, যাগানুষ্ঠান করবার জন্য আমার সামর্থ্য যেন ক্ষীণ না হয়ে পুনরায় বর্ধিত হয়। আপনি প্রজাপতির ভাগ হন, সেই ভাগ বলযুক্ত ও ক্ষীরবৎ মিষ্ট। সেই আপনি আমার প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান বায়ুকে রক্ষা করুন। আপনি ক্ষয়হীন, ইহলোক ও পরলোকের অক্ষয়ত্বের নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করছি। পরলোকে আমার ভোগের নিমিত্ত যেন ক্ষয়প্রাপ্ত না হন; ইহলোকে আমি যেন আপনাকে ইচ্ছামতো অনুভবে সমর্থ হই ॥৩॥

[সায়ণাচার্য বলেন-তৃতীয়ে ভক্ষস্যেড়াদিভাগস্যানুমন্ত্রণমুক্ত। চতুর্থে শেষাহুতীনামনুজাদীনামনুমন্ত্রণ মুচ্যতে।]

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- বহিষোহহং দেবষজয়া প্রজাবান্ ভূয়াসং নরাশংসস্যাহম দেবযজয়া পশুমান্ ভূয়াসমগ্নেঃ স্বিষ্টকৃতোহহং দেব্যজ্যয়াহয়ুষ্মন্যজ্ঞেন প্রতিষ্ঠাং গমেয়। অগ্নেরহমুজ্জিতিমনুজ্জেষং সমস্যাহমুজ্জিতিমনুজ্জেমগ্নেরহ মুজ্জিতিমনুজ্জেষমগ্নীযোময়োরহমুজ্জিতিমনুজ্জেষমিন্দ্রাগ্লিয়োরহ মুজ্জিতিমনুজ্জেষমিস্যাহ উজ্জিতিমনুজ্জেষং মহেন্দ্রস্যাহমুজ্জিতি মনুজ্জেমশ্নেঃ স্বিষ্টকৃতোহহমুজ্জিতিমনুজ্জেষ। বাজস্য মা প্রসবেনোগ্রাভেণোদগ্রভীৎ। অথা সপত্না ইন্দ্রো মে নিগ্রাভেণাধরা অকঃ। উদগ্রাভং চ নিগ্রাভং চ ব্ৰহ্ম দেবা অবীবৃধন। অথা সপত্নানিদ্ৰায়ী মে বিষুচীনাৰ্য্যস্যতাম। এমা অগ্নশিযো দোহকামা ইন্দ্ৰবন্তঃ বনামহে ধুক্ষীমহি প্ৰজামিষ। রোহিতেন ত্বাইগ্নিৰ্দেবতাং গময়তু হরিভ্যাং জ্বেন্দ্রো দেবতাং গময়ত্বেতশেন ত্বা সূৰ্য্যো দেবতাং গময়তু। বি তে মুঞ্চামি শনা বি রশ্মীন্থি যোত্ৰা যানি পরিচৰ্ত্তনানি ধাদমাসু দ্রবিণং যচ্চ ভদ্রং প্র পো ৰূতাদ্ভাগধান্দেবতাসু। বিষ্ণোঃ শয়োরহং দেবযজ্যয়া যজ্ঞেন প্রতিষ্ঠাং গমেয়। সোমস্যাহং দেবযজয়া সুরেতা রেতো ধিষীয় ত্বরহম দেবযজ্যয়া পশুনাং রূপং পুষেয়ং দেবানাং পত্নীরগ্নিগৃহপতিযজ্ঞস্য, মিথুনং তয়োরহং দেবযজয়া মিথুনেন ও ভূয়াসম। বেদোহসি বিত্তিরসি বিদেয় কর্মাসি করুণমসি ক্রিয়াস সনিরসি সনিইসি সনেয়ং ঘৃতবস্তং কুলায়িং রায়ম্পোষং সহণিং বেদো দদাতু বাজিনম্ ॥৪৷৷

মর্মার্থ- বৰ্হি নামক অগ্নির দেবযাগের দ্বারা আমি প্রজাবান্ (বহু অপত্যবা) হবো, নরাশংস অগ্নির দেবযাগের দ্বারা আমি পশুমা হবো (অর্থ বহু পশু লাভ করব)। স্বিষ্টকৃৎ অগ্নিদেবের উদ্দেশ্যে দেবযাগের দ্বারা আমি আয়ুষ্মন হবো ও যজ্ঞে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হবো। পূর্বকালে আজ্যভাগী দেব অগ্নি হবিঃর দ্বারা সেবিত হয়ে পুষ্টিলাভ করে যেমন যজ্ঞবিরোধী অসুর ইত্যাদিদের অভিভবপূর্বক, উৎকৃষ্ট জয় প্রাপ্ত হয়েছিলেন, আমিও এই অগ্নিযুগের দ্বারা পাপরূপ বৈরিগণকে পরাভূত করে সেইরকম উৎকৃষ্ট জয় প্রাপ্ত হবো। সোম যেমন জয়লাভ করেছিল, আমিও তেমনই সোমযাগের দ্বারা ঊর্ধ্বলোক-সম্বন্ধি জয় প্রাপ্ত হবো। অগ্নির উদ্দেশ্যে দেবযাগের দ্বারা আমি উক্তৃষ্ট জয় প্রাপ্ত হবো। অগ্নি ও সোমের উদ্দেশ্যে দেব্যাগের দ্বারা আমিও তাদের ন্যায় জয় প্রাপ্ত হব। ইন্দ্রে উদ্দেশ্যে দেব্যাগের দ্বারা আমিও তার ন্যায় জয় প্রাপ্ত হবো। মহেন্দ্রের উদ্দেশ্যে দেবযাগের দ্বারা আমিও তার ন্যায় জয় ও ধন প্রাপ্ত হবো। স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির উদ্দেশ্যে দেবযাগের দ্বারা তার ন্যায় জয় প্রাপ্ত হবো। ইন্দ্র অন্নের (বাজস্যামস্য) প্রসূতি-নিমিত্তে সুচের (যজ্ঞাপাত্রবিশেষের) ঊর্ধ্বগ্রহণের দ্বারা আমাকে উৎকর্ষ প্রদান করেছেন, সুচের (যজ্ঞপাত্রবিশেষের) ন্যক্কারের দ্বারা (অর্থাৎ নীচকরণের দ্বারা) আমার শত্রুবর্গকে ন্যকৃত (অর্থাৎ তিরস্কৃত) করেছেন। দেবতাগণ সুচের ঊর্ধ্বকরণ ও নিম্নকরণরূপ কর্ম দুটিকে বর্ধিত করেছেন। ইন্দ্র ও অগ্নি আমার পলায়মান সপত্নদের (অর্থাৎ শত্ৰুবর্গকে) বিনাশ করুন। এই আশিষ আমাদের প্রতি প্রত্যাগত হোক (ইমা আশিযোহগন্মাং প্রত্যাগচ্ছন্তু)। আমরাও আয়ু ইত্যাদি কামনাপূর্বক তার ফলপ্রদানকর্তা ইন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে তার ভজনা করব। তাহলে কামধেনুসদৃশ ইন্দ্রদেবতার নিকট হতে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি প্রজা এবং অন্ন ও আয়ু ইত্যাদি দোহন (বা লাভ) করব। হে প্রস্তর! অগ্নি তার রোহিত নামক অশ্বের দ্বারা শব্দসহ তোমাকে দেবতাবর্গের নিকট নিয়ে যান; ইন্দ্র তাঁর হরি নামক অশ্ব দুটির দ্বারা তোমাকে দেবতাবর্গের সমীপে নিয়ে যান; সূর্য তার এতশ নামক অশ্বের দ্বারা তোমাকে দেবগণের সকাশে নিয়ে যান। হে অগ্নি! আপনার বন্ধনহেতুভূত পরিধি মোচন করে আপনার সকল যন্ত্রণা দূর করছি। অশ্ব যেমন তন্তুনির্মিত বা চর্মনির্মিত রশনা বা রশ্মি, রজ্জ্ব ইত্যাদির দ্বারা বন্ধনপ্রাপ্ত হয়ে কর্মসাধন করে এবং কর্মাবসানে সেগুলি উন্মোচিত করলে সুখে বিচরণ করে, সেইরকম এই অশ্ববৎ অগ্নির স্তুতি করা হচ্ছে –হে অগ্নি! আপনার দেহব্যাপক বন্ধনহেতুভূত পরিধিরূপ রশনা ইত্যাদি মোচিত করে দিচ্ছি। আপনি মুক্তি লাভ করে সন্তুষ্ট হোন এবং আমাদের ধন দান করুন। সেইসঙ্গে অন্ন, পানীয় ইত্যাদি অন্যান্য কল্যাণপ্রদ অভীষ্ট সামগ্রী প্রদান করুন। দেবতাবর্গের নিকটে হবিঃপ্রদানকারী আমাদের কথা উৎকৃষ্টরূপে বলুন (অম্মদীয়হবির্ভুক্ষু দেবতাসু ভাগধা হবিপ্রদানস্মান প্রকর্ষেন ব্রহি)। বহুঁকার্যে ব্যস্ত বৃহস্পতির পুত্র শংযুব পরিতোষের জন্য অনুষ্ঠিত দেবযাগ নিষ্পন্ন করে সেই যাগের ফল প্রাপ্ত হবো। সোমদেবতার উদ্দেশে দেব্যাগের দ্বারা আমরা অমোঘ বীর্য (সুরেতা রেতঃ) ধারণ করব; ত্বষ্টার দেবযাগের দ্বারা আমরা পশুগণকে (পশুগণের রূপ) পোষণ করব; দেবগণের পত্নীবর্গ ও গৃহপতি অগ্নি মিলিত হয়ে যজ্ঞসম্বন্ধি মিথুনসদৃশ, তাদের উদ্দেশ্যে দেব্যাগের দ্বারা আমরা প্রকৃষ্টরূপ পুত্ৰপুত্ৰী লাভ করব। হে দৰ্ভময়! আপনি বেদ-নামক হন, আপনি দ্রব্য লাভের সাধন, আপনার প্রসাদে আমরা ধন লাভ করব। আপনি কর্ম-নামক হন, আমি আপনার দ্বারা বেদি সংমার্জন ইত্যাদি কর্ম প্রাপ্ত হবে। আপনি সনি-নামক হন, আপনি ধনের দাতা (ধনস্য দাতাহসীত্যর্থঃ), আপনার প্রসাদে আমিও ধনের দাতা হবো। হে বেদ! আপনি আমাকে ধনপুষ্টি দান করুন, আমাকে ঘৃত ইত্যাদি ভোজ্য-সাধনে সমৃদ্ধ করুন, নিবাসের হেতুভূত বহু গৃহ দান করুন, সহস্র লক্ষ ইত্যাদি সংখ্যোপত ভোজ্য অন্নে সমৃদ্ধ করুন ॥৪॥

[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থেহনুযাজাদিশেহোমানুমন্ত্রণমুক্ত। পঞ্চমে ত্বপ্যায়নাদিমন্ত্র উচ্যন্তে। অর্থাৎ–চতুর্থ অনুবাকে অনুযাজ ইত্যাদি হোমের অনুমন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে। এই পঞ্চম অনুবাকে আপ্যায়ন ইত্যাদি মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে)

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- আ প্যায়তাং ধ্রুবা ঘৃতেন যজ্ঞং যজ্ঞং প্রতি দেবয়ত্ত্যঃ। সূৰ্য্যায়া উপোহদিত্যা উপস্থ উরুধারা পৃথিবী যজ্ঞে অম্মি। প্রজাপতেৰ্বিভান্নাম লোকস্তস্মিংস্তা দধামি সহ যজমানেন। সদসি সন্মে ভূয়াঃ সৰ্বমসি সৰ্ব্বং মে ভূয়াঃ পূর্ণমসি পূর্ণং মে ভূয়াঃ অক্ষিতমসি মা মে ক্ষোঃ । প্রাচ্যাং দিশি দেবা ঋত্বিজো মার্জয়াং দক্ষিণায়াং দিশি মাসাঃ পিতরো মার্জয়াং প্রতীচ্যাং দিশি গৃহাঃ পশবো মাৰ্জ্জয়ন্তামুদীচ্যাং দিশ্যাপ ওষধয়ো বনস্পতয়ো মার্জয়ামূয়াং দিশি যজ্ঞ সংবৎসরো যজ্ঞপতিৰ্মাৰ্জ্জয়ন্তা। বিষ্ণোঃ ক্রমোহস্যভিমাতিহা গায়ত্রণ ছন্দ পৃথিবীমনু বি ক্রমে নির্ভক্তঃ স যং দ্বিন্মো। বিষ্ণোঃ ক্রমোহস্যভিশস্তিহা ত্ৰৈভেন ছন্দসাহন্তরিক্ষমনু বি ক্রমে নির্ভক্তঃ স যং দ্বিঃ বিষ্ণোঃ ক্রমোহস্যরাতীয়তো হন্তা জাগতেন ছন্দসা দিবমনু বি ক্ৰমে নির্ভক্তঃ স যং দ্বিন্মো বিষ্ণোঃ ক্রমোহসি শয়তো হস্তাহনুফ্টভেন ছন্দ দিশোহনু বি ক্রমে নিভক্তঃ স যং দ্বিম্মঃ ॥৫॥

মর্মার্থ- যে ঋত্বিকবর্গ যজ্ঞে যজ্ঞে অর্থাৎ প্রতি যজ্ঞে প্রতি আহুতিতে দেবতাগণের উদ্দেশে হোম করতে ইচ্ছা করেন, তাঁদের ধ্ৰুবা (যজ্ঞপাত্রবিশেষ) পুনঃ পুনঃ ঘৃতে পূর্ণ হোক (অর্থাৎ যজ্ঞীয় ঘৃতাধার পাত্র যেন কখনও শূন্য না হয়)। গাভীর উধ (পয়োপূর্ণস্তন) যেমন দুগ্ধে পূর্ণ হয়ে থাকে, সেইভাবে এই ধ্ৰুবা ঘৃতপূর্ণ হোক। বেদিরূপা পৃথিবীর উৎসঙ্গে বর্তমানা সেই ধ্রুবার মহাধারা পুনঃ পুনঃ আজ্য বা ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা সিঞ্চিত হয় (সিচ্যমান্যাভিরাজ্যধারাভিরুপেতাহত), অতএব পৃথিবী বিস্তীর্ণা হয়ে সম্যভাবে সকল যজ্ঞ আপ্যায়িত করুন। প্রজাপতি-সম্বন্ধিনি বিভান নামক এই ভূলোকে বা কর্মভূমিতে যজমানরূপী আমার সাথে তোমাকে (ধ্রুবাকে) স্থাপন করছি। হে পূর্ণপাত্র! তুমি শোভনস্বরূপ হও। অতঃপর আমাকে যজ্ঞফল প্রদানের দ্বারা আমার পক্ষেও সংযমন ইত্যাদি কার্যকারী হও। তুমি প্রাচী ইত্যাদি সর্বদিকে ব্যাপ্ত আছ; তুমি পূর্ণরূপ, তাই আমার প্রয়োজন সম্পূর্ণ হোক; তুমি অক্ষয় হও, তাই আমার কার্য যেন কোন ক্ষয় প্রাপ্ত না হয়। পূর্বদিকে (প্রাচ্যাং দিশি) দেবগণ ও ঋত্বিকবর্গ আমার সোধন করুন (মার্জয়ান্তাং); দক্ষিণদিকে (দক্ষিণায়াং দিশি) মাস অভিমানী দেবগণ ও পিতৃবর্গ আমার সোধন করুন; পশ্চিমদিকে (প্রতীচ্যাং দিশি) গৃহ-অভিমানী দেবগণ ও পশুবৰ্গ আমার শোধন করুন, ও করুক; উত্তরদিকস্থ (উদীচ্যাং দিশি) জল (অপ), ওষধিসকল ও বনস্পতির অভিমানী দেবগণ আমার শোধন করুন; উধ্বদিকে সংবসর-অভিমাণী যজ্ঞপতিগণ আমার শোধন করুন। ত্রিবিক্রমরূপী (বামনাবতারে) বিষ্ণুর সকল লোক (ত্রিলোক, স্বর্গ-মত-পাতাল) আক্রমণরূপ পাদবিক্ষেপ যেমন সকল অশুভের বিনাশক হয়েছিল, আমার এই পাদবিক্ষেপও তেমনই সকল বাধা অতিক্রম করবে। পূর্বকালে দেবগণ গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দে পৃথিবীকে জয় করেছিলেন, তেমনই আমি গায়ত্রী ছন্দে পৃথিবীকে জয় করব। আমরা যে পাপকে বিদ্বেষ করি, তা এই পৃথিবী হতে নির্বাসিত হোক। বিষ্ণু যেমন ত্রিষ্টুপ ছন্দে তাঁর পাদবিক্ষেপে অন্তরিক্ষ-লোক আক্রমণ করেছিলেন, তেমনই আমার এই পাদবিক্ষেপ ত্রিষ্টুপ ছন্দে অন্তরিক্ষ লোক অতিক্রম করুক। আমরা যে নিন্দাকারী শত্রুদের বিদ্বেষ করি, তারা সমুদয়ে বিনাশপ্রাপ্ত হোক। বিষ্ণুর পাদবিক্ষেপ জগতী ছন্দে যেমন দুলোক আক্রমণ করেছিল, সেইভাবে আমার এই পাদবিক্ষেপ জগতী ছন্দে দুলোক আক্রমণে সমর্থ হবে। আমরা আমাদের দানকর্মে বাধা-প্রদানকারী যেসকল বিরোধিদের বিদ্বেষ করি, তারা বিনাশপ্রাপ্ত হোক। তুমি বিষ্ণুর ক্রম-স্বরূপ শত্রুগণের বিনাশকারী, আমার এই পাদবিক্ষেপ অনুষ্টুপ ছন্দে সকল দিক আক্রমণে সমর্থ হবে। আমাদের বিদ্বেষী ও আমরা যাদের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ, তারা বিনষ্ট হোক ॥৫॥

[সায়ণাচার্য বলেন–ষষ্ঠে সূর্যোপস্থানাদিমন্ত্র উচ্যতে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে সূর্যোপস্থান ইত্যাদি মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে।]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- অগন্ম সুবঃ সুবরগন্ম সদৃশস্তে মা ছিৎসি যত্তে তপস্তস্মৈ তে মাহবৃক্ষি। সুরসি শ্রেষ্ঠো রশ্মীনামায়ুৰ্দ্ধা অস্যায়ুৰ্ম্মে ধেহি বচেঁধা অসি বর্চো ময়ি ধেহি। ইমহমমুং ভ্রাতৃব্যমাডভ্যা দিগভভ্যাহস্যৈ দিবোহদন্তরিক্ষাদস্যৈ পৃথিব্যা অম্মাদমাধ্যামিভজামি নির্ভক্তঃ স যং দ্বিমঃ। সং জ্যোতিষাহভু। ঐন্দ্রীমাবৃতমম্বাবর্তে। সমহং প্রজয়া সং ময়া প্রজা সমূহঃ রায়পোষেণ সং ময়া রায়ম্পোষঃ।। সমিন্ধো অগ্নে মে দীদিহি সমো তে অগ্নে দীদ্যাস। বসুমা যজ্ঞো বসীয়া ভূয়াস। অগ্ন আয়ুংষি পবস আ সুবোৰ্জমিষং চ নঃ। আরে বাধশ্ব দুচ্ছুনা। অগ্নে পবস্ব স্ব অস্মে বর্ডঃ সুবীৰ্য্য। দধৎপোষং রয়িং ময়ি।। অগ্নে গৃহপতে সুগৃহপতিরহং ত্বয়া গৃহপতিনা । ভুয়াসং সুগৃহপতিৰ্ময়া ত্বং গৃহপতিনা। ভূয়াঃ শতং হিমাস্তামাশিষমা শাসে তবে জ্যোতিষ্মতীং তামাশিষমা শাসেহমুস্মৈ জ্যোতিষ্মতী। কত্ত্বা যুক্তি সত্বা বি মুঞ্চতু। অগ্নে ব্রতপতে ব্ৰতমচারিষং তদশকং তন্মেহরাধি। যজ্ঞে বভূব স আ বভূব স প্র জজ্ঞে স বাবৃধে। স দেবানামধিপতি ৰ্ব্বভূব সো অস্মন্ অধীপতী করোতু বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীণা। গোমা অয়েংবিমা অশ্বী যজ্ঞো নৃবসখা সদমিদপ্ৰমৃষ্যঃ। ইড়াবান্ এষো অসুর প্রজাবান্দীর্ঘো রয়িঃ পৃথুবুদ্ধঃ সভাবান্ ॥ ৬

মর্মার্থ- হে আহবনীয় (বেদীর পূর্বদিকে স্থাপিত যজ্ঞাগ্নি)! আপনার প্রসাদে সপুত্রপৌত্রা আমরা প্রথমে ফলভোগের স্থান স্বর্গে গমন করব। তারপর মোক্ষদ্বাররূপ অদিত্যলোকে গমন করব। সেই কারণে আপনার দর্শন (বা কৃপাদৃষ্টি) হতে যেন বিচ্ছিন্ন না হই। আপনার নিমিত্ত যে তপস্যা আমরা সম্পাদিত করেছি, তার ফলস্বরূপ আপনার অনুগ্রহ হতে যেন বিচ্ছিন্ন না হই। হে আদিত্য! আপনি সুষ্ঠুভাবে উদিত হয়ে থাকেন, রশ্মিযুক্ত চন্দ্র ইত্যাদির মধ্যে (গ্রহনক্ষত্রের মধ্যে) আপনিই শ্রেষ্ঠ। আপনি আয়ুর স্থাপনকর্তা হন (স্থাপয়িতাহসি), আমাতে আয়ু স্থাপন করুন (ময্যায়ুঃ স্থাপয়)। আপনি ব্ৰহ্মতেজের স্থাপনকর্তা, আমাতে ব্রহ্মতেজঃ সংযযাজিত করুন। যে ভীতৃব্য (অর্থাৎ শত্রু) পৃথিবী ইত্যাদি লোকয়ে (অর্থাৎ স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালে) পুর্ব ইত্যাদি দিকে আমার বিরোধ আচরণ করে, আমার অন্ন জোরপূর্বক অপহরণ করে, আমি তাকে এই পৃথিবী ইত্যাদি লোক হতে নিঃসারণ করব। ইদানীং বিরোধ-আচরণকারী এবং কালান্তরেও এইরকমই আচরণ করবে, এমনই আশঙ্কাজনক যে শত্রুকে আমরা বিদ্বেষ করি, তাকেও নিঃসারিত করি। আমি আদিত্যের জ্যোতিঃর সাথে সংগত অর্থাৎ মিলিত হবো। ইন্দ্রবৎ পরম ঐশ্বর্যযুক্ত আদিত্যের আবর্তনের আমি অনুবর্তন করছি (তদিয়মাবর্তনমন্বহমপি প্রাদক্ষিণ্যেনাহবর্তে)। আমি প্রজা অর্থাৎ সন্ততিজনের সাথে সংগত হবো; সেই সন্ততিজনেরাও আমার সাথে সংগত হোক। আমি ধনপুষ্টির সাথে মিলিত হবো (রায়পোষেহপ্যেবং যোজ্যম); ধনপুষ্টিও আমার সাথে যুক্ত হোক। হে অগ্নি! আপনি এই সমিধের দ্বারা প্রদীপ্ত হয়ে আমার নিমিত্ত দীপ্য হোন। আপনার দীপ্তকারী আমিও আপনার প্রসাদে দীপ্ত হবো। হে অগ্নি! এই যজ্ঞ আপনার প্রসাদে ধনযুক্ত হয়েছে; আমিও আপনার প্রসাদে তার অপেক্ষা অধিক ধনযুক্ত হবে। হে অগ্নিপুত্রপৌত্র ইত্যাদি গণের সাথে আমাদের আয়ুর শোধন করুন, যেন অপমৃত্যু না হয় (অস্মাকমায়ংষি পরসে শোধয়সি অপমৃত্যুং পরিহরসীত্যর্থঃ)। আমার বল ও অন্ন সর্বদিক হতে প্রেরণ করুন। বৈরিসেনাবর্গকে দুরে নিরাকৃত করুন। হে অগ্নি! আপনি শোভন কর্মে যুক্ত হয়ে আমাদের শোধন করুন; আমাতে ব্রহ্মতেজ ব্যবহারসামর্থ, পুষ্টি ও ধন স্থাপন করুন (ময়ি ব্রহ্মবৰ্চসং ব্যবহারসামর্থ্যং পুষ্টিং ধনং চ স্থাপয়)। হে গৃহপতি অগ্নি! আপনার দ্বারা অনুগৃহীত হয়ে আমি সুগৃহপতি হবো, আপনি আমারূপী গৃহপতির দ্বারা পূজিত হয়ে সুষ্ঠু গৃহপতি হোন। শতসংবসরব্যাপী অগ্নিযাগ সম্পাদিত করে অনুৎপন্ন (অর্থাৎ ভাবীকালে জাতব্য) বহু পুত্র ইত্যাদির নিমিত্ত আপনার সেই উৎপতি প্রকাশের সামর্থ্যরূপ আশিষ আকাঙ্ক্ষা করছি (তদুৎপত্তি প্রকাশনসমর্থাং তামাশিষমাশাসে)। আরও, দেবদত্ত ইত্যাদি নামক উৎপন্ন পুত্র ইত্যাদির নিমিত্ত ও আপনার বুদ্ধি প্রকাশের সামর্থ্যরূপ আশিষ আকাঙ্ক্ষা করছি। হে যজ্ঞ। পূর্বে যে প্রজাপতি তোমাকে যুক্ত করেছিলেন, এইবার তিনিই তোমাকে বিমুক্ত করুন (যঃ প্রজাপতিস্তাং যুনক্তি যুক্তবাক্স এবেদানীং ত্বাং বিমুঞ্চতু)। যজ্ঞরূপ ব্রতের পতি হে অগ্নিঃ আমি আপনার প্রসাদে ব্রতের (বা যজ্ঞের) অনুষ্ঠান করব; সেই ব্রত সমাপন করতে যেন সমর্থ হই। আমার সেই ব্রত সমৃদ্ধ হোক (ততমরাধি সমৃদ্ধমভূৎ)। ইদানীং আমার অনুষ্ঠিত এই যজ্ঞ সম্পূর্ণ হয়েছে; সেই যজ্ঞ পুনরপি সংঘটিত হোক (পুনরপ্যাবৃত্তো ভবতু)। সেই যজ্ঞ আমাদের আলস্য দুর করে প্রজ্ঞাতবান্ করে তুলেছে। অতঃপর আমাদের এই গৃহে পুনঃ পুনঃ অনুষ্ঠানের দ্বারা সেই যজ্ঞ বর্ধিত হোক। সেই যজ্ঞ আমাদের দ্বারা পূজিত দেববর্গের পালয়িতা হোক। সেই যজ্ঞ আমাদেরও অনুষ্ঠানের অধিপতি করুক এবং পালক করুক। আমরাও সেই যজ্ঞপুরুষের প্রসাদে যজ্ঞের সাধন ও ধনের পতি হবো। হে প্রাণবন্ত অগ্নি! আমাদের প্রার্থমান এই যজ্ঞ বহু গো, মেষ ও অশ্বযুক্ত হোক; নৃবৎসখা ঋত্বিকগণের সাথে যুক্ত দেববর্গের সখ্যতা হোক, এই যজ্ঞ কখনও যেন অভিভবনীয় না হয়; এই যজ্ঞ অন্নবান হোক, প্রজাবা অর্থাৎ বহু অপত্যপ্রদ হোক, দীর্ঘকালব্যাপী পুনঃ পুনঃ অনুষ্ঠানের কারণে অবিচ্ছিন্ন থাকুক, বহু ধনোপেত তোক মন্ত্র ইত্যাদিতে বৈকল্যরহিত থাকুক ও বিদ্বৎসভার সাথে যুক্ত হয়ে থাকুক ॥৬৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন-সপ্তমানুবাকে দেবতাপরিগ্রহাদিবিধীয়তে। অর্থাৎ-পূর্বোক্ত ছয়টি অনুবাকে যাজমান মন্ত্রগুলি বলা হয়েছে। এইবার পরবর্তী পাঁচটি অনুবাকে যাজমান-ব্রাহ্মণগুলি উক্ত হচ্ছে। তার মধ্যে এই সপ্তম অনুবাকে দেবতা-পরিগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ের বিধান কথিত হচ্ছে।

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- যথা বৈ সমৃতসোমা এবং বা এতে সমৃত্যজ্ঞা যদ্দর্শপূর্ণমাসৌ কস্য বাংহ দেবা যজ্ঞমাগচ্ছত্তি কস্য বা ন বহুনাং যজমানানাং যো বৈ দেবতাঃ পূর্ব পরিগতি স এনাঃ শ্বে ভূতে যজতে। এতদ্বৈ দেবানামায়তনং যদাহবনীয়োহস্তরাহয়ী পশুনাং গার্যপত্যো মনুষ্যাণামম্বাহাৰ্য্যপচনঃ পিতৃণা। অগ্নিং গৃহাতি স্ব এবাহয়তনে দেবতাঃ পরি গৃহাতি তাঃ খো ভূতে যজতে। ব্ৰতেন বৈ মেধধ্যাহগ্নিব্রতপতিব্রাহ্মণে ব্রতভৃন্দ। ব্ৰতমুপৈষ্যন ব্রুয়াদগ্নে ব্রতপতে ব্রতং চরিষ্যামীতি। অগ্নির্বৈ দেবানাং ব্রতপতিস্তম্মা এব প্রতিপোচ্য ব্ৰতমা লভতে। বহিষা পূর্ণমাসে ব্ৰতমুপৈতি বৎসৈরমাবস্যায়ামেদ্ধ্যেতয়োরায়তন। উপস্তীৰ্য্যঃ পূৰ্বশ্যাগ্নিরপরশ্চেত্যাহুঃ। মনুষ্যাঃ ইন্দ্ব উপস্তীর্ণমিচ্ছন্তি কিমু দেবা যেং নবাবসানমুপাস্মিথ্রো যক্ষ্যমাণে দেবতা বসন্তি য এবং বিদ্বানগ্নিমুপস্তৃতি। যজমানেন গ্রাম্যাশ্চ পাশবোহবরুধ্যা আরণ্যাশ্চেত্যাহুদগ্রাম্যানুপ বসতি তেন গ্রাম্যানব রুন্ধে যদারণ্যস্যাশ্নাতি তেনাহরণ্যান্যদনাশ্বানুপবসেৎ পিতৃদেবত্যঃ স্যাৎ। আরণ্যস্যাশ্নাতীন্দ্রিয়ং বা আরণ্যমিন্ট্রিয়মেহত্মন্ধত্তে। যদনাশ্বানুপবসেৎ ক্ষোধুকঃ স্যাদ্যশ্নীয়াজুদ্ৰোহস্য পশূনভি মন্যেত। অপোহশ্নাতি। তম্নেবাশিতং নেবানশিতং ন ক্ষোধুকো ভবতি নাস্য বৃদ্ৰঃ পশুনভি মন্যতে। বজ্রো বৈ যজ্ঞঃ ক্ষুৎ খলু বৈ মনুষ্যস্য ভ্রাতৃব্যো যদনাখানুপবসতি বজ্রেণৈব সাক্ষাৎক্ষুধং ভ্রাতৃব্যং হতি ॥৭৷৷

মর্মার্থ- একই সময়ে সংহতি প্রাপ্ত (একত্রিত) যজমানগণ যেমন সোমযাগ অনুষ্ঠিত করেন, সেইরকম একই পর্বে সংহতি প্রাপ্ত যজমানবর্গ দর্শপূর্ণ মাস যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে থাকেন। উভয় ক্ষেত্রেই দেবতা ও অগ্নি ইত্যাদি একই। সেইজন্য দেবগণের মনে সংকট উৎপন্ন হতে পারে, অর্থাৎ একটির পরিবর্তে অন্যটিতে গমন করলে অনুচিত পক্ষপাতিত্ব এসে পড়তে পারে। সেই জন্যই দেবগণ কোন্ যজমানের যজ্ঞে আসবেন, বা কোন যজ্ঞে আসবেন না, এমন সংকট (বা সংশয়) পরিহার করে বলছেন–বহু যজমানের মধ্যে যে যজমান ইতিপূর্বে প্রবৃত্ত হয়ে দেবতাবর্গকে স্বীকার করেছেন (..যো যজমান ইতরেভ্যঃ পূর্বঃ প্রবৃত্তো দেবতাঃ পরিগৃহ্নাতি…), তিনিই পরদিবস যাগ করবেন। পরিগ্রহ মন্ত্রের পাঠে এই দেবসঙ্কট পরিহৃত হয় এবং যাগের উদ্দেশ্য ত্যাগমাত্র দেবগণ সেই যজ্ঞানুষ্ঠানে আগমনে সমর্থ হন, কিংবা যোগসামর্থ্যের দ্বারা দেবগণ বহু শরীর স্বীকার (ধারণ) করে সর্বত্রই গমন করতে পারেন। আহবণীয় হলে বসুগণ, রুদ্রগণ, আদিত্যগণ সহ দেবতাগণের স্থান, আহবনীয় ও গার্যপত্যের মধ্যস্থায়ী স্থান পশুগণের স্থান, গার্হপত্য হলো মনুষ্যগণের স্থান, পিতৃগণের স্থান দক্ষিণাগ্নি। যে স্থানে পূর্বদিন দেবতা ও অগ্নি গৃহীত হন, সেইস্থানে পরদিন তাদের গ্রহণপূর্বক যাগ অনুষ্ঠান করতে হয়। যদি ব্ৰতাচরণকারী যজমান হন, তাহলে ব্রতপতি এই অগ্নি যাগের যোগ্য হন এবং ব্রাহ্মণ যজমান ব্রতধারী হন (ব্রাহ্মণশ্চ যজমানো ব্রতধারী ভবতি)। সমক ব্রতস্বীকার করে বলতে হয়–হে ব্রতপতি অগ্নি! আমি ব্ৰত আচরণ করব (ব্রতং চরিষ্যামীতি)। অগ্নিই দেবতাগণের ব্রতপতি, এইজন্য তাঁকে জানিয়েই ব্রত লাভ করতে হয়। বৰ্হি আহরণের পর পূর্ণমাস ব্রত এবং বৎসের চুরীকরণ কালে অমাবস্যা ব্রতের কাল; তিথিবিশেষগত এই দুটি কাল উক্ত ব্ৰত দুটি স্বীকারের উচিত স্থান। পূর্বদিবস আহবনীয় ও গার্হপত্য উভয় অগ্নির নিকটে দুর্ভের দ্বারা আস্তরণ করণীয়। অত্যন্ত দরিদ্র মনুষ্যগণও শীতবাতাদি পরিহারের জন্য তৃণ ইত্যাদি দ্বারা আচ্ছাদিত গৃহ ইচ্ছা করে, মহাপ্রভাবশালী দেবতাগণের কথা কি, যাঁদের গৃহ চিরনূতন নিম্পাদিত হয়। এইটি জ্ঞাত হয়ে বেদাবিৎ (বিদ্বান) যজমানের পক্ষে হবির্ভোক্তা অগ্নিদেবতার বিস্তার করণীয়। যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মে ডোক্তব্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে–গ্রাম্যধান্যের অন্ন কিংবা আরণ্যধান্যের অন্ন ভোক্তব্য, তা না হলে ভোজন বর্জনীয়। পশুও দুরকমের–গ্রাম্য ও আরণ্য। গো, অশ্ব, অজা ইত্যাদি গ্রাম্য এবং দ্বিখুর, শাপদ, পক্ষি ইত্যাদি আরণ্য। বুদ্ধিমান, যজমানের পক্ষে এই উভয়রকম পশু সম্পাদনীয়। (গবাশ্বাজাবিপুরুষগর্দভোষ্ট্ৰাঃসপ্তগ্রাম্যাঃ। দ্বিখুরশ্বাপদপক্ষিসরীসৃপহস্তিমর্কটনা দেয়াঃ সপ্তাহরণ্যাঃ)। যদি গ্রাম্য ব্রীহি (ধানবিশেষ, আশুধান্য) প্রভৃতির ভোজন বর্জন করা হয়। তাহলে গ্রাম্য পশুর সম্পাদন করা হয়। আরণ্য নীবার (তৃণধান্যবিশেষ) ইত্যাদির অন্ন ভোজন করলে অরণ্য পশুর সম্পাদন করা হয়ে থাকে। যদি উভয় রকম ভোজন বর্জন করে উপবাসপূৰ্ব্বক শ্রাদ্ধ ইত্যাদি ব্রতবিশেষ সাধন করা হয়, তবে পিতৃগণ তুষ্ট হয়ে থাকেন। আরণ্য ধান্যের ভোজনে ইন্দ্রিয়েরও সামথ্য বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় (ইন্দ্রিয়াভিবৃদ্ধিহেতুরারণ্যধান্য)। উপবাসে থাকলে, ক্ষুধার বৃদ্ধি হয় এবং রুদ্র পশুগণকে হত্যা করেন। এই দোষ দুটি পরিহারের নিমিত্ত জল পান করণীয়। জলপানে ভোজন হয়, আবার হয়ও না, সামান্য ক্ষুধা-শান্তি হওয়ায় সম্পূর্ণ উপবাসের মতো হয় না; এই জন্য দোষদুটি থাকে না (অতো না দোষদ্বয়)। নরকপাত ইত্যাদি অনিষ্টনিবারকত্ব হেতু যজ্ঞ বজ্রেণৈব অর্থাৎ বজ্রের মতো, ক্ষুধা মানুষের বৈরি বলে প্রসিদ্ধ, যজ্ঞাঙ্গভূত উপবাস লক্ষণে যজ্ঞরূপ বজ্র তার ক্ষুধারূপ মুখ্য শত্রুকে বিনাশ করে থাকে ॥৭॥

 [সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমে যজ্ঞায়ুধসংভৃতিরুচ্যতে।]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- যো বৈ শ্রদ্ধামনারভ্য যজ্ঞেন যজতে নাস্যেষ্টায় শ্রদ্ধতেহপঃ প্রণয়তি শ্রদ্ধা বা আপঃ শ্ৰদ্ধামেবাহরভ্য যজ্ঞেন যজত উভয়েহস্য দেবমনুষ্যা ইষ্টায় শ্রদ্ধতে। তদাহুতি বা এতা বর্জং বেদ্যতি বাচং মনো বাবৈতা নাতি ননদন্তীতি মনসা প্রণয়তীয়ং বৈ মনোহনয়ৈবৈঃ । প্রণয়ত্যহবির্ভবতি য এবং বেদ যজ্ঞায়ুধানি সং ভরতি যজ্ঞো বৈ যজ্ঞায়ুধানি যজ্ঞমেব তৎসং ভরতি। যদেকমেকং সংভরেৎ পিতৃদেবত্যানি সূর্যৎ সহ সৰ্বাণি মানুষাণি। দেদে সং ভরতি যাজ্যানুবাক্যয়োরেব রূপং করোত্যথো মিথুনমেব। যো বৈ দশ যজ্ঞায়ুধানি বেদ মুখতোহস্য যজ্ঞঃ কল্পতে। ফ্যশ্চ কপালানি চাগ্নিহোত্ৰহবণী চ শূর্পং চ কৃষ্ণাজিনং চ শম্যা চোলুখলং চ মুসলং চ দৃষচ্চ্যেপলা চৈতানি বৈ দশ যজ্ঞায়ুধানি। য এবং বেদ মুখতোহস্য যজ্ঞ কল্পতে। যো বৈ দেবেভ্যঃ প্রতিবোচ্য যজ্ঞেন যজতে জুষতেহস্য দেবা হব্যম হবির্নিরুপ্যমাণমভি মন্ত্রেয়েতাগ্নিং হোতারমিহ তং হু। ইতি দেবেভ্য এব প্রতিপোচ্য যজ্ঞেন যজতে জুষন্তেহস্য দেবা হব্যম্ এষ বৈ যজ্ঞস্য গ্রহো গৃহীত্বৈ যজ্ঞেন যজতে। তদুদিত্বা বাচং যচ্ছতি যজ্ঞস্য ধৃত্যা অথো মনসা বৈ প্রজাপতির্যজ্ঞমতনুত মনসৈব তদ্যজ্ঞং তনুতে রক্ষসামবচারায়। যো বৈ যজ্ঞং যোগ আগতে যুনক্তি যুক্তে যুঞ্জানে। কন্তুা যুক্তি সত্বা যুক্তিত্যাহ প্রজাপতির্বৈ কঃ প্রজাপতিনৈবৈনং যুক্তি যুক্তে যুঞ্জানেষু ॥ ৮৷

মর্মার্থ- যে যজমান মনে দেবতা ইত্যাদি বিষয়ে শ্রদ্ধা না রক্ষা করে যজ্ঞ আরম্ভ করেন, দেবতাবর্গ ও ঋত্বিকবর্গ তার যজ্ঞে বিশ্বাস করেন না (যো যজমানো মনসি দেবতাদি বিষয়াং শ্রদ্ধামসন্নিধাপ্য যষ্ট্র প্রযুক্ত তদীয়মিষ্টং দেবা ঋত্বিজশ্চ ন বিশ্বসন্তি)। প্রত্যক্ষভাবে স্নান আচমন ইত্যাদি সম্পন্ন করে দেবপূজা প্রভৃতি অনুষ্ঠানে একাগ্রতা দর্শিত হয়। জলের দ্বারাই পুণ্যকর্মে শ্রদ্ধা সঞ্জাত হয়। জলরূপ শ্রদ্ধা সহকারে যজ্ঞানুষ্ঠিত করলে দেবতাগণ ও ঋত্বিকগণ সেই যজ্ঞে বিশ্বাসযুক্ত হন। শাখাভেদে (বিশেষ বিশেষ দেশে) পৌরোডাশিককাণ্ডে অর্ধযু কর্তৃক নিবেদিত মন্ত্রের ক্রমপাঠের সাধন প্রণয়ন নামে কথিত। জলের দ্বারা অনুষ্ঠিত যজ্ঞ ইত্যাদির প্রণয়ন কোন কোন অভিজ্ঞ জন বলেন–এই জল শরীরের বৃত্তিকে অতিক্রম করে থাকে, বাক্যকেও অতিক্রম করে থাকে। প্রবহমান নদী ইত্যাদিগত জলের নিবারণ শরীর বা বাকের দ্বারা সাধনীয় নয় (ন খলু প্রবহস্তিনাং নদ্যাদিগনামপাং নিবারণং শরীরেণ বাঁচা বা কতুং শক্যতে)। মনরূপ ইন্দ্রিয়কেও এই জল অতিক্রম করে না। মন পৃথিবীর ন্যায় ব্যাপ্ত থাকে বলে মনই পৃথিবী, তার দ্বারাই প্রণয়ন কর্তব্য। নদী ইত্যাদিগত জল পৃথিবীকে অতিক্রমে সমর্থ নয়। অযু যজ্ঞের আয়ুধসমূহ পূর্ণ করবেন। স্ক্য, কপাল ইত্যাদি যজ্ঞের সাধন-সম্পন্নকারী বলে, সেগুলিকে আয়ুধ বলা হয়েছে; সাধ্য ও সাধনের অভেদরূপ বর্ণনা করে বলা হয়েছে-যজ্ঞই যজ্ঞের আয়ুধ (যজ্ঞস্যৈব তদায়ুধত্ব); সেই আয়ুধ সম্পাদনের দ্বারাই যজ্ঞ সম্পাদিত হয়। এই আয়ুধগুলির প্রয়োগ তিন রকম–একের সাথে একের প্রয়োগ,সকলে সাথে প্রয়োগ, দুটি সাথে দুটির প্রয়োগ। এর মধ্যে যেখানে এক একটির প্রয়োগ করা হয়, তা পিতৃদেবগণের; সবগুলির সাথে প্রয়োগ হলে, তা মনুষ্যগণের। দুটি দুটির সাথে প্রয়োগ সম্পাদিত হলে তা যাজ্যা ও অনুবাকের নিমিত্ত। যাজ্যা ও অনুবাক্যরূপ এই দ্বিত্ব সাম্যে এদের স্ত্রীপুরুষাত্মক মিথুন বলা হয়ে থাকে। যে যজমান যজ্ঞারম্ভের পূর্বেই এই দশরকম যজ্ঞায়ুধ অনুসন্ধান করে রাখে তাঁর যজ্ঞ নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানক্ষম হয়। আয়ুধগুলির বিশেষ স্বরূপ কথিত হচ্ছে–স্ফ, কপাল, অগ্নিহোত্ৰহবনী, শূর্প (কুলা), কৃষ্ণাজিন, শম্যা, উলুখল (পাত্রবিশেষ, উখরী), মুসল, দৃষদ (প্রস্তর, শিলা), উপল (শিলা)। [স্ফো নাম বাহুমাত্রঃ খঙ্গাকারঃ কাষ্ঠবিশেষঃ। কপালানি ভাণ্ডলেশসদৃশানি। অগ্নিহোহবনীয়লক্ষণং সূত্রকার আহ–বৈকত্যগ্নি ১ হোহবনী বাহুমারত্মিমাত্ৰী বা প্রস্তাবৃতিরিতি। শম্যা বাহুমাত্রো গদাকৃতিঃ কাষ্ঠবিশেষঃ]। যিনিঃ যজ্ঞের এই দশটি আয়ুধ বিদিত আছেন, তিনি প্রারম্ভেই এইগুলি যজ্ঞের নিমিত্ত সংগ্রহ করেন। যিনি দেবতাবর্গকে জ্ঞাত করে যজ্ঞে নিযুক্ত হন, দেবগণ প্রীতিভরে তাঁদের হব্য গ্রহণ করেন। হব্য হবি নির্ধারণপূর্বক নিম্নে উধৃত মন্ত্রের দ্বারা যায় করণীয়–হে দেবগণের আহ্বতা অগ্নি! এই যজ্ঞে আমি আপনাকে আহ্বান করছি (যজ্ঞেহহমাহুয়ামি)। যত দেবতা সুমনস্যমানা হয়ে এই যজ্ঞে আগমন করুন, আমার দ্বারা প্রদত্ত হবিঃ গ্রহণ করুন। এই মন্ত্রের প্রয়োগ যজ্ঞের স্বীকাররূপ (যজ্ঞস্বীকাররূপঃ), এর দ্বারা দেবতার উদ্দেশ্যে দ্রব্য ইত্যাদি ত্যাগের (সমর্পণের) সূচনা হয়। এই মন্ত্রবলে যজমান যজ্ঞের ধৃতির নিমিত মৌন ধারণ করেন। প্রজাপতি মনের দ্বারা সেই যজ্ঞতনুর বিস্তার করেছিলেন; অতএব অবিক্ষিপ্ত মনের দ্বারা যজ্ঞের বিস্তার কর্তব্য; তাহলে আদ্যযজ্ঞ হতে কোনরকম স্থলন ইত্যাদি হবে না এবং এখানে রাক্ষসগণের চলাচল ঘটবে না (প্রচারো ন ভবতি)। যে যজমান যথাকালে (যজ্ঞযোগকালে) অপ্রমত্ত হয়ে যাগানুষ্ঠান করেন, সেই স্থিরচিত্তশালী যজমানের যজ্ঞ সুসম্পন্ন হয়ে তাকে। কে আপনাকে যুক্ত করেছে,–তিনি প্রজাপতি–ইত্যাদি মন্ত্রে কথিত হয়েছে-যে প্রজাপতি সর্বদা সকলের যজ্ঞ যুক্ত করেন, সেই প্রজাপতি অদ্য আমার এই যজ্ঞ যুক্ত করুন। রথে অশ্বের যোজনার মতো আমাকেও এই যজ্ঞে যুক্ত করা হোক (রথেইশ্বমিব ময়ি যজ্ঞং সংবধাতু)। এই মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞে যুক্ত হওয়া বিধি ॥ ৮

[সায়ণাচার্য বলেন-নবমে দ্বাদশদ্বন্দ্বসম্পত্তিরুচ্যতে।]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতির্যজ্ঞানসৃজতাগ্নিহোত্রং চাগ্নিষ্টোমং চ পৌর্ণমাসীং চোথ্যং চামাবস্যাং চাতিরাং চ তানুদমিমীত। যাবদগ্নিহোত্রমাসীত্তাবানগ্নিষ্টোমো যাবতী পৌর্ণমাসী তাবানুকথথ্যা যাবত্যমাবাসা তাবানতিরাত্রঃ ষ এবং বিদ্বানগ্নিহোত্রং জুহোতি যাবদগ্নিষ্টোমেনোপাগ্নোতি তাবদুপাইগ্নোতি য এবং বিদ্বান্ পৌর্ণমাসীং যজতে যাদুকথ্যেনোপাপ্পেতি আবদুপাহপ্নোতি য এবং বিদ্বান মাস্যাং যজতে যাবতিরাত্রেণোপস্নাতি তাবদুপাহপরীতি। পরমেষ্টিননা বা এষ যজ্ঞোহগ্র আসীত্তেন স পরমাং কাষ্ঠামগচ্ছত্তেন প্রজাপতিং নিরবাসায়য়ত্তেন প্রজাপতিঃ পরমাং কাঠামগচ্ছত্তেনেট্রং নিরবাসায়য়ত্তেনেন্দ্রঃ পরমাং কাষ্ঠামগচ্ছত্তেনাগ্নীষোমৌ। নিরবাসায়য়ত্তেনাগ্নীষোমৌ পরমাং কাষ্ঠামগচ্ছতাং যঃ এবং বিদ্বান্দপূর্ণমাসৌ যজতে পরমামের কাষ্ঠাং গচ্ছতি। যো বৈ প্রজাতেন যজ্ঞেন যজতে প্ৰ প্ৰজয়া পশুভিৰ্মিথুনৈর্জায়তে : দ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরো দ্বাদশ দ্বানি দর্শপূর্ণমাসয়োস্তানি সম্পাদ্যানত্যাহুবৎসং চোপাবসৃজত্যুখাং চাধি শ্ৰয়ত্যব চ। হস্তি দৃষদৌ চ সমাহত্যধি চ বপতে কপালানি চোপ দধাতি পুরোডাশং চাধিশ্ৰয়ত্যাজ্যং চ স্তম্বযজুশ্চ হরত্যভি চ গৃহাতি বেদিং চ পরিগৃতি পত্নীং চ সং নহতি প্রোক্ষণীশ্চাহসাদয়ত্যাজ্যং চৈতানি বৈ দ্বাদশ দ্বানি দর্শপূর্ণমাসয়োস্তানি য এবং সম্পাদ্য যজতে প্রজাতেনৈব যজ্ঞেন যজতে প্ৰ প্ৰজয়া পশুভিৰ্ম্মির্থনৈর্জায়তে ॥ ৯।

মর্মার্থ- প্রজাপতি যজ্ঞসমূহের সৃষ্টি করেছিলেন; যথা–অগ্নিহোত্র, অগ্নিষ্টোম, পৌর্ণমাসী, উথ্য, অমাবস্যা ও অতিরাত্র। এইগুলির মধ্যে অগ্নিহোত্র, পৌর্ণমাসী ও অমাবস্যা নামক যাগ অল্প দ্রব্য, মন্ত্র ও ক্রিয়াবিশেষের দ্বারা সাধিত হয়, সেই কারণে এইগুলিতে অল্প ফল লাভ হয়; আর অগ্নিষ্টোম, উথ্য ও অতিরাত্র নামক যাগ বহু দ্রব্য, মন্ত্র ও ক্রিয়াবিশেষে সাধিত হয়, সেই কারণে এইগুলিতে অধিক ফল লাভ হয়। এই দুই রকমের যজ্ঞ সৃষ্টি করে প্রজাপতি কনিষ্ঠ পুত্রে পিতার ন্যায় (মমতাবান হয়ে) ক্ষুদ্রতর অগ্নিহোত্র ইত্যাদিকে অনুগ্রহপূর্বক দুই রকম যাগের একই ফল নির্ধারিত করেন। তাঁর সেই অনুগ্রহেই অগ্নিহোত্র ইত্যাদিরও অগ্নিষ্টোম ইত্যাদির সমান ফল সম্পন্ন হয়। এই কথা বিদিত হয়ে যিনি অগ্নিহোত্র যাগের অনুষ্ঠান করেন, তিনি অগ্নিষ্টোম যাগের ফল লাভ করেন; যিনি এইভাবে পৌর্ণমাসী যাগের অনুষ্ঠান করেন, তিনি উথ্যের সমান ফল লাভ করেন; যিনি এইভাবে অমাবস্যার যাগানুষ্ঠান করেন, তিনি অতিরাত্র যুগানুষ্ঠানের ফল লাভ করেন। সত্যলোকস্থায়ী পরমেষ্ঠী (চতুর্মুখ ব্ৰহ্মা) পূর্বকল্পে যজমানরূপে অবস্থিত থেকে দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন (দর্শপূর্ণমাসযজ্ঞঃ প্রবৃত্তা)। সেটি (অর্থাৎ সেই যজ্ঞ) ঈশ্বরে অর্পণ বুদ্ধিতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেই যজমান পরমা কাষ্ঠারূপ (পরম উৎকরূপ) পরমেণ্ঠিত্ব পদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পূর্বজন্মে (পরম উৎকরূপ) এই যজ্ঞের উত্তম ফল প্রাপ্ত হওয়ায় তিনি প্রজাপতি দক্ষকে এই যজ্ঞানুষ্ঠানে প্রেরণা দান করেন। প্রজাপতি দক্ষ এই যজ্ঞের অনুষ্ঠানের দ্বারা পরমা কাষ্ঠারূপ দক্ষত্ব পদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। প্রজাপতি দক্ষ ইন্দ্রকে এই যজ্ঞের অনুষ্ঠান সাধনে প্রেরণা দান করেন এবং ইন্দ্রও এই যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা পরমা কাষ্ঠারূপ ইন্দ্ৰত্ব পদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ইন্দ্র আবার অগ্নি ও সোমকে এই যজ্ঞ সাধনে প্রেরিত করেন, এবং তারাও (অগ্নি ও সোম) এই যজ্ঞানুষ্ঠানের দ্বারা পরমা কাষ্ঠারূপ যথাক্রমে অগ্নিত্ব ও সোমত্ব পদ লাভ করেন। এই তথ্য জ্ঞাত হয়ে যিনি দর্শপূর্ণমাস যাগের অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হন, তিনিও পরমা কাষ্ঠা লাভ করেন। এই দর্শপূর্ণমাস যাগ স্বৰ্গকামাৰ্থে অনুষ্ঠিতব্য। যিনি সর্বতোভাবে বিস্তৃত এই যজ্ঞের দ্বারা যাগ সম্পন্ন করেন, তিনি প্রজা প্রভৃতির দ্বারা বিস্তৃতি লাভ করেন। দ্বাদশ মাস ব্যাপ্ত সংবসরের ন্যায় দ্বাদশ দ্বন্দ্ব সংযুক্ত দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞের অনুষ্ঠান কর্তব্য (দ্বাদশমাসো পেতসম্বৎসরসাম্যেন দ্বাদশদ্বন্দ্বোপেতস্য যজ্ঞস্য প্রস্তত্বম)। দ্বন্দ্বগুলি সম্পর্কিত বহুজনসাধ্য যজ্ঞের কার্যাবলী; যথা–কেউ দুগ্ধ দোহনের জন্য গাং দোগ্মধ্বর্যবযক্ষ্মা ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করে বৎসের বন্ধন মুক্ত করছে, কেউ দুগ্ধকে পাক করার জন্য ক্ষীরং শ্ৰপয়িতুং মাতরিশ্বননা ঘর্ম এই মন্ত্র উচ্চারণ করে গাৰ্হপত্য অগ্নিতে স্থাপন করছে, কেউ অব রক্ষো দিব এই শাখার মন্ত্রের দ্বারা ব্রীহি (শস্য) উদুখলে (শিলে) পেষণ করছে, কেউ আহবনীয় অগ্নিতে ঘৃত স্থাপন করছে, কেউ পুরোডাশ প্রস্তুত করার নিমিত্ত ধ্রুবমসী ইত্যাদি মন্ত্রে অগ্নিতে কপাল (পাত্র) স্থাপন করছে, কেউ পৃথিবী দেব্যজনী ইত্যাদি মন্ত্রপাঠপূর্বক বেদীতে যজুমন্ত্র পাঠ করছে, কেউ অররুন্তে দিবমিতি মন্ত্রে অঞ্জলিভরে চতুর্দিকে তৃণ প্রক্ষেপণ করছে, কেউ বসবত্ত্বা পরিগৃহুন্তি ইত্যাদি মন্ত্রে বেদি আবৃত করছে,) কেউ আশাসানেতি মন্ত্রের দ্বারা পত্নীকে আনয়ন করছে, কেউ বা ঋতসধস্থেতি শাখান্তর মন্ত্রের দ্বারা প্রোক্ষণীপাত্র স্থাপন করছে, কেউ বা অগ্নেৰ্জিহ্বাহসীতি মন্ত্রের দ্বারা অগ্নিতে আজ্য অর্পণ করছে। এইগুলি দর্শপূর্ণমাস যাগে সাধিতব্য দ্বাদশ দ্বন্দ্ব সম্পর্কে উক্ত হয়েছে। এইগুলি যথাযথ সম্পন্নপূর্বক যিনি পুত্রপৌত্র ইত্যাদি সমভিব্যাহারে বিস্তৃত যজ্ঞসাধন করেন, তিনি পুত্রপৌত্র, পশুমিথুন প্রভৃতির দ্বারা যুক্ত হয়ে থাকেন ॥৯॥

[সায়ণাচার্য বলেন-নবমে দ্বন্দ্বসম্পাদনমুক্তং, দশমে হবিঃসাদনং বিধীয়তে। প্রথমং তাবন্দ্বিতীয়ানুবাকস্য পূর্বোভাগোক্তামাং মন্ত্রাণাং ব্যাখ্যান!]

.

দশম অনুবাক

মন্ত্র- ধ্রুবোহসি ধ্ৰুবোহহং সজাতেষু ভূয়াসমিত্যাহ ধ্ৰুবানেবৈনান কুরুত উগ্রোহস্যুগ্লোহহং সজাতেষু ভূয়াসমিত্যাহাপ্রতিবাদিন এবৈনা কুরুতেইভিভূরস্যভিভূরহং সজাতেষু ভূয়াসমিত্যাহ য এবং প্রত্যুংপিপীতে তমুপাস্যতে। যুনজ্ঞি ত্বা ব্ৰহ্মণা দৈব্যেনেতাহৈষ বা অগ্নেৰ্যোগস্তেনৈবেনঃ যজ্ঞস্য বৈ সমৃদ্ধেন দেবাঃ সুবৰ্গং লোকমায় যজ্ঞস্য ব্যনোসুরারাহভাবয়ন্যমে অগ্নে অস্য যজ্ঞস্য রিষ্যাদিত্যাহ যজ্ঞস্যৈব তৎসমৃদ্ধেন যজমানঃ সুবর্গং লোকমেতি যজ্ঞস্য বনে ভ্রাতৃব্যান্ পরা ভাবয়তি। অগ্নিহোত্ৰমেতাভিৰ্বাহৃতীভিরূপ সাদয়েৎ যজ্ঞমুখং বা অগ্নিহোত্রম্ ব্ৰহ্মৈতা ব্যাহৃতয়ো যজ্ঞমুখ এব ব্ৰহ্ম কুরুতে সম্বৎসরে পৰ্য্যাগত এভিরেবোপসায়েব্রহ্মণৈবোভয়তঃ সম্বৎসরং পরি গৃহ্লান্তি দর্শপূর্ণমাসৌ চাতুর্মাস্যান্যালভমান এভ্যিাহৃতীভিীবীংষ্যা সাদয়েদ যজ্ঞমুখং বৈ দর্শপূর্ণমাসৌ চাতুর্মাস্যানি ব্ৰহ্মৈতা ব্যাহৃতয়ো যজ্ঞমুখ এব ব্ৰহ্ম কুরুতে সম্বৎসরে পর্যাগত এভিরেবাহসাদয়েষ্ট্ৰহ্মণৈবোভয়তঃ সম্বৎসরং পরি গৃতি। যদ্বৈ যজ্ঞস্য সাম্বা ক্রিয়তে রাষ্ট্রং যজ্ঞস্যাহশীর্গচ্ছতি যদৃচা বিশং যজ্ঞস্যাহশীর্গচ্ছত্যথ ব্রাহ্মণোহনাশীর্কেণ যজ্ঞেন যজতে সামিধেনীরনুবক্ষ্যন্নেতা ব্যাহৃতীঃ পুরাদ্দধ্যান্ধৈব প্রতিপদং কুরুতে তথা ব্রাহ্মণঃ সাশীর্কেণ যজ্ঞেন যজতে। যং কাময়েত যজমানং ভ্রাতৃব্যমস্য যজ্ঞস্যাহশীৰ্গচ্ছেদিতি তস্যৈতা ব্যাহৃতীঃ পুরোনুবাক্যায়াং দধ্যাদ ভ্রাতৃব্যদেবত্যা বৈ পুরোনুবাক্যা ব্রাতৃব্যমেবাস্য যজ্ঞস্যহশীর্গচ্ছতি। যান কাময়েত যজমানাৎ সমাবত্যেনান্যজ্ঞস্যাশীৰ্গচ্ছেদিতি তেষামেতা ব্যাহৃতীঃ পুরোনুবাক্যায়া অৰ্ধৰ্চ একাং দধ্যাদ্যাজ্যায়ৈ পুরস্তাদেকাং যাজ্যায়া অৰ্ধৰ্চ একাং তথৈনাৎসমাবতী যজ্ঞস্যাহশীগচ্ছতি। যথা বৈ পজ্জন্যঃ সুবৃষ্টবষত্যেবং যজমানায় বৰ্ষতি স্থলয়োদকং পরিগৃহুত্যাশি ষজ্ঞং যজমানঃ পরি গৃতি। মনোহসি প্রাজাপত্যম মনসা মা ভূতেনাহবিশেত্যাহ মনো বৈ প্রাজাপত্যং প্রাজাপতত্যা যজ্ঞো মন এব যজ্ঞমাত্মন্ধত্তে বাগস্যৈন্দ্ৰী সপত্নক্ষয়ণী বাঁচা মেন্দ্রিয়েণাহবিশেত্যাহৈী বৈ বান্বাচমেবেন্দ্রীমাত্মন্ধত্তে । ১০।

মর্মার্থ- ধ্ৰুবোহসি ধ্রুবোহহং ইত্যাদি অর্থাৎ তুমি ধ্রুব (স্থির), তোমার প্রসাদে আমিও ধ্রুব (স্থির) হবো ইত্যাদি মন্ত্রে কেবল আপন স্থিরত্বের কথাই বলা হয়নি, কিন্তু সজাতীয়দেরও (অর্থাৎ জ্ঞাতিদেরও) স্থিরত্ব প্রার্থনা করা হয়েছে। বসুবিদুগ্লোহগরোহহং ইত্যাদি অর্থাৎ তুমি উগ্র হও, তোমার অনুমন্ত্রের দ্বারা আমিও উগ্র হবো ইত্যাদি মন্ত্রে নিজের উগ্র হবার জন্য প্রার্থনা জ্ঞাপিত হয়েছে, কারণ তা না হলে জ্ঞাতিবর্গের মধ্যে অশিক্ষিত কোন কোন জন প্রতিবাদী হলে তাদের নিবারণ করা যাবে না। বৈরিবর্গ যাতে আমাকে অভিভব করতে না পারে ইত্যাদি মন্ত্রে জ্ঞাতিবর্গের মধ্যে কোন কোন জন প্রতিকূল আচরণ করলে তাকে যাতে অভিভব করতে পারি–এই প্রার্থনা জ্ঞাপিত হয়েছে। যুনষ্মি ত্বা ব্ৰহ্মণা ইত্যাদি অর্থাৎ হে জাতবেদা! দেবতাগণের উপযুক্ত ব্ৰহ্ম-মন্ত্রের দ্বারা ইত্যাদি মন্ত্রে অগ্নির যজ্ঞ ইত্যাদি কার্যে সহায়তা প্রার্থনা করা হয়েছে। সমৃদ্ধ ও বৃদ্ধ-যজ্ঞের দুটি অংশ (যজ্ঞস্য হি দ্বাবংশৌ সমৃদ্বো বৃদ্ধ)। যথাযথ শাস্ত্রানুসারে অনুষ্ঠিত যজ্ঞকে সমৃদ্ধ বলা হয়, অন্যথায় অর্থাৎ শাস্ত্রানুসারে অনুষ্ঠিত না হলে সেই যজ্ঞেকে বৃদ্ধ বলা হয়। সমৃদ্ধ যজ্ঞ দেববর্গের স্বর্গপ্রাপ্তির হেতু, বৃদ্ধ যজ্ঞ অসুরবর্গের তিরস্কার প্রাপ্তির হেতু। এই মন্ত্রে বলা হয়েছে-হে অগ্নি! যে এই যজ্ঞের হিংসাকারী, তাকে আমি অভিভব করতে চাই। এই সব কথার মধ্যে বৈরির পরাভবের উদ্দেশ্য ব্যক্ত হয়েছে। ভূর্ভুব সুবঃ–এই ব্যাহৃতি মন্ত্রে মূলতঃ সকল যজ্ঞে অগ্নিহোত্রের প্রধানত্ব সূচিত হয়েছে। ব্যাহৃতি হলো ত্রৈলোক্যের মধ্যে বিরাটরূপধারী পরব্রহ্মে আরোপিত শরীরের বাচক ব্রাহ্মরূপ (বাচকত্বেন ব্রহ্মরূপাঃ)। সেইজন্য যজ্ঞমুখে অর্থাৎ যজ্ঞের প্রথমে তার প্রশংসা করার নিমিত্ত ব্রহ্মরূপ ব্যাহৃতি তিনটি করণীয়। অগ্নিহোত্রের আরম্ভের দিনের ন্যায় কালান্তরগতেও ব্যাহৃতি হোম করণীয়। সংবৎসরে পর্যাগত অন্যান্য যাগেও ব্যবহৃতি হোম সম্পাদনের বিধান আছে; যথা-দর্শপূর্ণমাস যাগে, চাতুর্মাস্য যাগে ব্রহ্মরূপ এই ব্যাহৃতি তিনটির দ্বারা যজ্ঞানুষ্ঠান করণীয়। সংবৎসরের অন্তেও এই ব্যাহৃতি তিনটির দ্বারা যাগ করণীয়। যজ্ঞে সামমন্ত্রের দ্বারা যে অঙ্গ সাধন করা হয়, তার পলে রাষ্ট্র প্রাপ্তি হয় (তত্র সামসাধ্যেনাঙ্গেন য়জ্ঞফলং তদ্ৰাষ্ট্রং প্রাপ্নোতি); এবং সেই রাষ্ট্রে শস্য ইত্যাদির অভিবৃদ্ধি ঘটে। ঋক্‌-মন্ত্রের দ্বারা যজ্ঞের যে অঙ্গ সাধ্য হয়, তার ফলে প্রজা প্রাপ্তি ঘটে; এবং তার মাধ্যমে আয়ু, আরোগ্য ইত্যাদির বৃদ্ধি হয়। এতৎসত্ত্বেও ব্রাহ্মণ যজমান যজুর্মন্ত্রের দ্বারা ফলহীন যাগ করে থাকেন। এই জন্য যজ্ঞরূপা ব্যাহৃতীয় প্রযুক্ত হয় এবং সেটি সামিধেনীর পূর্বে করণীয়। তার দেবতা ব্রহ্মরূপ হওয়ায় ব্যাহৃতি তিনটির দ্বারা সামিধেনীর পূর্বে কর্তব্য। যে যজমানের প্রতি হোতা দ্বেষবশত এমন কামনা করবেন, সেই যজ্ঞের ফল যজমানের শত্রুগণের প্রতি গমন করবে। পুরোনুবাক্যার দেবতা বৈরী, সেইজন্য তার ফল বৈরিগণের প্রাপ্ত হয় (পুরোনুবাক্যায়া বৈরী দেবতেতি তফলং বৈরিগাম্যেব ভবতি)। বহু যজমানের সাথে অহীনসত্ৰ সমূহের অঙ্গরূপ যাগে হোতা যদি এমন কামনা করে থাকেন যে, সকল যজমান এই যজ্ঞের ফল সমভাবে প্রাপ্ত হোক; তাহলে সেই যজমানদের যাগে ব্যাহৃতি এইভাবে দেওয়া হয়–পুরোনুবাক্যার অর্ধ ঋক অভিহিত হলে প্রথম ব্যাহৃতি (পুরোনুবাক্যায়া অর্ধচেঁহভিহিতে সতি প্রথমা ব্যাহৃতিঃ), যাজ্যার পরে দ্বিতীয় ব্যাহৃতি (যাজ্যায়াঃ পুরস্তাদ্বিতীয়া ব্যাহৃতি), যাজ্যার অর্ধ ঋক অভিহিত হলে তৃতীয়া ব্যাহৃতি হয় (যাজ্যায়াঃ অধচ্চৈহভিহিতে সতি তৃতীয়া ব্যাহৃতিঃ)। এর ফলে সকল যজমান সমভাবে ফল প্রাপ্ত হবে। মেঘ যেমন পক্ষপাতহীন ভাবে সর্ব দেশে বা স্থানে সমভাবে বৃষ্টি প্রদান করে, সেইরকম যথোক্তরূপ ব্যাহৃতি-উপেতো যজ্ঞ সর্ব যজমানসঙ্ঘকে সমভাবে সুফল প্রদান করে থাকে। প্রভূত বৃষ্টির দ্বারা নদী পূর্ণ হয়ে গেলে নদীকুলস্থ স্থলভাগের সকল জন যেমন সমভাবে জল প্রাপ্ত হয়, সেইভাবে এইরকম যজ্ঞের যজমানসঙ্ঘ সাধারণ ফলের সাথে যুক্ত এই যজ্ঞ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। মনোহসি প্রাজাপত্যং মনসা ইত্যাদি অর্থাৎ তুমি মনঃস্বরূপ, প্রজাপতি কর্তৃক সৃষ্ট যজ্ঞের সাধনের সাথে আমার মধ্যে প্রবেশ করো ইত্যাদি মন্ত্রে মনকে প্রজাপতির প্রথম সৃষ্টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজাপতির দ্বারা যজ্ঞ সৃষ্ট হয়েছিল–এই উক্তিতে যজ্ঞকে প্রজাপতি-সম্বন্ধীয় বলা যায়। এই মন্ত্রপাঠের দ্বারা মন ও যজ্ঞকে আপনাতে স্থাপন করা হয় (অনেন মন্ত্রপাঠেন তৌ মননযজ্ঞেী স্বস্মিস্থাপয়তি)। ইন্দ্র কর্তৃক ব্যাকৃত হওয়ায় বাকে ঐন্দ্রী বলা বলা হয় (ইন্দ্ৰেণ ব্যাকৃতত্বাঘাগৈন্দ্রী)। সেটিও মন্ত্রপাঠের দ্বারা আপনাতে স্থাপন করণীয় (তাং চ মন্ত্রপাঠেন স্থাপয়তি) ॥১০।

[সায়ণাচার্য বলেন–দশম অনুবাকে হবিঃসাদন বিহিত হয়েছে। অতঃপর একাদশে শ্রাবণাদিমন্ত্রা প্রাধান্যেন বিধীয়ন্তে। অর্থাৎ একাদশে হবিঃসাদনের আশ্রাবণ ইত্যাদি মন্ত্রগুলির প্রাধান্য কথিত হচ্ছে।]

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- যো বৈ সপ্তদশং প্রজাপতিং যজ্ঞমন্বয়ং বেদ প্রতি যজ্ঞেন তিষ্ঠতি ন যজ্ঞভ্রংশতে। আ শ্রাবয়েতি চতুরক্ষরমস্তু শ্ৰেীষ ডতি চতু ক্ষরং যজেতি স্ব্যক্ষরং যে যজামহ ইতি পঞ্চাক্ষরং স্ব্যক্ষাবষকার এষ বৈ সপ্তদশঃ প্রজাপতির্যক্তমন্বায়ত্তো য এবং বেদ প্রতি যজ্ঞেন তিষ্ঠতি ন যজ্ঞাদভ্রংশতে। যো বৈ যজ্ঞস্য প্রায়ণং প্রতিষ্ঠামুদয়নং বেদ প্রতিষ্ঠিতেনারিষ্টেন যজ্ঞেন সংস্থা গচ্ছতি আ শ্রাবয়া শ্ৰেীষড্যজ যে যজামহে বষট্‌কার এতদ্বৈ যজ্ঞস্য প্রায়ণমেষা প্রতিষ্ঠৈতদুদয়নং য এবং বেদ প্রতিষ্ঠিতেনারিস্টেন যজ্ঞেন সংস্থাং গচ্ছতি। যো বৈ সুনৃতায়ৈ দোহং বেদ দুহ এবৈনা যজ্ঞে বৈ সুনৃতাহশ্রাবয়েত্যেবৈনামহুদপ্ত শ্ৰেীড়িতুপাষাগ্যজেত্যুদনৈষীদ্যে যজামহ ইপাসদদ্বষট্‌কারেণ দোগধ্যে বৈ সুনৃতায়ৈ দোহো য এবং বেদ দুহ এবৈনাম দেবা বৈ সমাসত তেষাং দিশোহদস্যন্ত এমাদ্রাং পঙক্তিমপশ্যন্না শ্রাবয়েতি পুরোবাতমজনয়ন্নস্তু। শ্ৰেীযুডিত্যভ্রং সমপ্লাবয়ন্ যজেতি বিদ্যুত অজনয়ন্যে যজামহ তি প্রাবৰ্ষয়ম্নভ্যস্তনয়দ্বষট্‌কারেণ তততা বৈ তেভ্যো দিশঃ প্রাপ্যায়ন্ত য এবং বেদ প্রাস্মৈ দিশঃ প্যায়ন্তে। প্রজাপতিং তত্বাবেদ প্রজাপতিং বেদ যং প্রজাপতিৰ্বেদ স পুণ্যো ভবতি। এষ বৈ ছদস্যঃ প্রজাপতিরা শ্রাবয়া তু শ্ৰেীষড্যজ যে যজামহে। বষকারো য এবং বেদ পুণ্যো ভবতি। বসন্তমৃভূনাং প্রণামীত্যাহৰ্ত্তবো বৈ প্রজা ঋতুনেব প্রীতি তেহস্মৈ প্রীতা যথাপূৰ্ব্বৎ কল্পন্তে কল্পন্তেহষ্ম ঋতবো য এবং বেদ অগ্নীষোময়োরহম দেব্যজ্যয়া চক্ষুষ্মন্ ভূয়াসমিত্যাহাগ্নীষোমাভ্যাং বৈ যজ্ঞশ্চক্ষুন্মান্তাভ্যামেব চক্ষুরাত্মন্ধত্তে অগ্নেরহং দেবজ্যয়াহাদো ভূয়াসমিত্যাহাগ্নিব্বৈ দেবানামন্নাদস্তেনৈবান্নাদ্যমাত্মন্ধত্তে। দব্ধিরস্যদক্কো ভূয়াসমমুং দভেয়মিত্যাহৈতয়া বৈ দদ্ধ্যা দেবা অসুরানদনুবন্তয়ৈব ভ্রাতৃব্যাং দভোত্যষ্মীযোময়োরহং দেব্যজ্যয়া বৃত্ৰহা ভূয়াসমিত্যাহাগ্নীযোম্যভ্যাং বা ইন্ট্রো বৃত্রমহন্তাভ্যামেব ভ্রাতৃব্যাং সৃণুতে। ইন্দ্রাগ্নিয়োরহং দেব্যজ্যয়েন্দ্ৰিয়াব্যন্নাদো ভূয়াসমিত্যাহেন্দ্ৰিয়াব্যেবান্নাদো ভবতীন্দ্রস্যাহং দেবযজ্যয়েন্দ্রিয়াবী ভূয়াসমিত্যাহেন্দ্ৰিয়াব্যেব ভবতি। মহেন্দ্রস্যাহং দেবযজ্যায়া জেমানং মহিমানং গমেয়মিত্যাহ জেমানমেব মহিমানং গচ্ছতি অগ্নেঃ স্বিকৃতোহহং দেবযজ্যয়াইয়ুষ্মন্ যজ্ঞেন প্রতিষ্ঠাং গমেয়মিত্যাহাহহূরেবাহত্মন্ধত্তে প্রতি যজ্ঞেন তিষ্ঠতি ॥১১৷৷

মর্মার্থ- সপ্তদশ অক্ষরযুক্ত মন্ত্রসঙ্ঘ প্রজাপতি কর্তৃক সৃষ্ট হওয়ায় এগুলি প্রজাপতি নামে অভিহিত। এই মন্ত্রগুলি সকল যজ্ঞে অনুগত বলে যে যজমান বিদিত থাকেন, তিনি সম্পূর্ণ যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত হন, বৈকল্যের অভাব হওয়ার কারণে তিনি যজ্ঞ হতে ভ্রষ্ট হন না (বৈকল্যাভাবাচ্চায়ং যজ্ঞান্ন ভ্রষ্টো ভবতি)। সেই মন্ত্রগুলি যথা–আ শ্রাবয় ইত্যাদি। হে আগ্নী! যক্ষ্যমাণ দেবতার প্রতি তুমি প্রদান করছ (তুভ্যমিদং দীয়ত), তা শ্রবণ করাও–এই রকম অধ্যু উক্তি করলে আগ্নী তা অঙ্গীকৃত করে বলে থাকেন–হে দেবগণ! আপনারা আমার সেই হবির্দান বিষয় শ্রবণ করুন। হে হোতা! তোমরা যাজ্যা মন্ত্র পাঠ করো।–আমরা হোতাগণ অধ্বযু কর্তৃক প্রেরিত হয়ে যাজ্যা পাঠ করছি। বষটকার শব্দের দ্বারা হবিঃ প্রদত্ত হয়। যে যজমান যজ্ঞের প্রায়ণ (প্রারম্ভ), প্রতিষ্ঠা (মধ্যবর্তী কালের অনুষ্ঠান) ও উদয়ন (সমাপ্তি) বিদিত আছেন, তাঁর অনুষ্ঠিত যজ্ঞ প্রতিষ্ঠিত হয়, বৈকল্যরহিত হয় এবং এই যজ্ঞের ফল পর্যন্ত প্রাপ্ত হন। –আ শ্রাবয় ইত্যাদি মন্ত্রের প্রথমটি প্রারম্ভ (আদ্য মন্ত্রো মুখ্যঃ প্রারম্ভঃ) তিনটি মন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং শেষ মন্ত্র উদয়ন বা সমাপ্তি। কামধেনুবৎ সুনৃত বাক্যের দোহনপ্রকার যিনি জ্ঞাত আছেন, তিনি সমীচীনা বারূপা ধেনুর দোহন করেন। সত্য ও প্রিয়রূপ বাক্য সুনৃতা বা নামে অভিহিত। লোকে যেমন ভক্ষ্য দান করতে সাঙ্কেতিক নামে BAগাভীকে আহ্বান করে, সেইভাবে যজ্ঞে দেবতাগণকে সুনৃত বাক্যে দেবনাম উচ্চারণপূর্বক আহ্বান করা হয়–হে অদিতি, হে সরস্বতী, এখানে আগমন করুন ইত্যাদি। সেইরকম এই স্থলে আ শ্রাবয় মন্ত্রে পাঠের মাধ্যমে সুন্বত বাক্যে আহ্বান করা বোধিত হচ্ছে। (মন্ত্র–পাঠেনৈবৈনাং সুনৃতামহ্দাহুয়তি)। সত্রমাসী নামক যজ্ঞে দেবগণের প্রতি কোনরকম বৈকল্যের কারণে বৃষ্টির অভাবের জন্য শস্য শুষ্ক হয়ে গেলে তার পরিহার নিমিত্ত (অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য) আ শ্রাবয় মন্ত্রপঞ্চক পঠিতব্য। সপ্তদশাররূপ এই মন্ত্রের দ্বারা, যিনি প্রজাপতিকে জ্ঞাত হন, তিনি যজমানকে প্রজাপতি জ্ঞানে অনুগৃহীত করেন (প্রজাপতিজ্ঞতারং তমেকং যজমানং বেদ জানাত্যনুগৃহ্নাতি)। যিনি অনুগৃহীত হন, তিনি অন্য যজমান অপেক্ষা উস্কৃষ্ট হন। এই অক্ষররূপ প্রজাপতি বেদের সারত্বের দ্বারা নিষ্পন্ন (বেদেষু সারত্বেন নিষ্পন্নঃ)। যিনি বেদের সারভূত এই প্রজাপতিকে বিদিত, তিনি উৎকৃষ্ট হন (বেদ স উৎকৃষ্টো ভবতি)। ঋতুগুলির মধ্যে বসন্ত ঋতুর তুষ্টিসাধন করছি ইত্যাদি মন্ত্রে ঋতুদেবতার রূপক কল্পিত হয়েছে। বসন্তাভিমানী দেবতা প্রীত হয়ে যজমানকে যথাপূর্ব ফল দান করে থাকেন। অগ্নি ও সোমের উদ্দেশে দেবযাগ অনুষ্ঠানের দ্বারা আমি চক্ষুম্মান হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে আজ্য-ভাগে যজ্ঞের চক্ষুদুটি সম্যভাবে প্রতিপাদিত হয়েছে। ঐ দুই দেবতার দ্বারা যজ্ঞের চক্ষুষ্মত্ব এবং যজমান কর্তৃক তার ফলপ্রাপ্তির বিষয় বলা হয়েছে (অতস্তদীয়দেবতাভ্যাং যজ্ঞস্য চক্ষুষ্মত্তং যজমানস্য তৎফলং চোচ্যতে)। অগ্নির উদ্দেশে দেব্যাগের দ্বারা আমি অন্নের ভোক্তা হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে দেবগণ অপেক্ষা অগ্নি প্রভূত অন্নের ভক্ষণকারী, অপর দেবগণ অল্প অন্ন ভক্ষণকারী, এমন বোঝান হয়েছে। আপনি শত্রুবিনাশক, আপনার দ্বারা আমিও বৈরীঘাতী হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে দেবতাগণ অসুরবর্গকে পরাভূত করেছিলেন–এই কথা জ্ঞাপিত হয়েছে। অগ্নি ও সোমের দেবযাগের দ্বারা আমি বৃত্ৰনামক পাপশত্রুকে বিনাশ করব- ইত্যাদি মন্ত্রে বৃত্র নামক কোন অসুর অগ্নি ও সোম দেবতাকে দন্তের দ্বারা সম্যকভাবে দংশন করে রাখায় ইন্দ্র তার মুখগহুর হতে ঐ দুই দেবতাকে নিঃসারিত করে এনে বৃত্রাসুরে শীতজ্বরসন্তাপ প্রয়োগ করে যে হত্যা করেছিলেন–সেই কথা (দ্বিতীয় কাণ্ডে) স্পষ্টীকৃত হয়েছে। ইন্দ্র ও অগ্নির উদ্দেশে দেব্যাগের দ্বারা আমি আমার ইন্দ্রিয়ের শক্তি লাভ করব এবং অন্নের ডোক্তা হবো- ইত্যাদি মন্ত্রে ইন্দ্র ইন্দ্রিয়সমূহের রক্ষক এবং অগ্নি অন্নসমূহের ভক্ষক হওয়ায় তাঁদের নিকট হতে যথাক্রমে ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য ও অন্নের ভক্ষণ প্রার্থনা করা হয়েছে। ইন্দ্রের উদ্দেশে দেবযাগের দ্বারা আমি ইন্দ্রিয়সম্পন্ন হবো–এই মন্ত্রে ইন্দ্রের নিকট হতে (পুনঃ) ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য প্রার্থিত হয়েছে। মহেন্দ্রের উদ্দেশে দেবযাগের দ্বারা আমি প্রভূত ধন প্রাপ্ত হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে প্রভূত ধনলাভের মহিমার কথা ব্যক্ত হয়েছে। স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির উদ্দেশে দেবযাগের দ্বারা আমি যজ্ঞে প্রতিষ্ঠা ও আয়ু লাভ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে যজ্ঞে প্রতিষ্ঠারূপ ফললাভ ও দীর্ঘ আয়ুর প্রার্থনা করা হয়েছে ॥১১।

[দ্বাদশ অনুবাকে যাজ্যা ও পুরোনুবাক্যা কথিত হয়েছে।]

.

দ্বাদশ অনুবাক

মন্ত্র- ইন্দ্রং বো বিশ্বতস্পরি হবামহে জনেভ্যঃ। অম্মাকম কেবলঃ। ইন্দ্রং নরো নেমধিতা হবন্তে যৎপাৰ্য্যা যুনজতে ধিয়স্তাঃ। যবেদ শুরো নৃতা শসশ্চকান আ গোমতি ব্ৰজে ভজা ত্বং নঃ। ইন্দ্রিয়াণি শতক্রতো যা তে জনেষু পঞ্চসু। ইন্দ্র তানি ত আ বৃণে। অনু তে দায়ি মহ ইন্দ্রিয়ায় সত্ৰা তে বিশ্বমনু বৃত্ৰহত্যে। অনু ক্ষমনু সহ যজত্রে দেবেভিনু তে নৃহ্যে।। আ যস্মিসপ্ত বাসবাস্তিষ্ঠন্তি স্বারুহো যথা। ঋষি দীর্ঘত্তম ইন্দ্রস্য ঘৰ্ম্মো অতিথিঃ।। আমাসু পকৃমৈরয় আ সূৰ্য্যং রোহয়ো দিবি। ঘর্মং ন সামং তপতা সুবৃক্তিভিৰ্জ্জুষ্টং গির্বণসে গিরঃ। ইমিগাথিনো বৃহদিন্দ্রমর্কেভিরর্কিণঃ। ইন্দ্রং বাণীরনুষত। গায়ন্তি ত্বা গায়ত্রিশোহৰ্চন্ত্যকমর্কিণঃ। ব্ৰহ্মাণস্যা শতক্রতবুদ্বংশমিব যেমিরে। অংহোমুচে প্র ভরেমা মনীষামোষিষ্ঠদারে সুমতিং গৃণানাঃ। ইদমিন্দ্র প্রতিহব্যং গৃভায় সত্যাঃ সন্তু যজমানস্য কামাঃ। বিব্যে যম্মা ধিষণা জজান স্তবে পুরা পার্যাদিমঃ ।। অংহসো যত্র পীপাদ্যথা নো না েযান্তমুভয়ে হন্তে। প্র সম্রাজং প্রথমমধ্বরাণাম অংহোমুচং বৃষভং যজ্ঞিয়ানা। অপাং নপাতমশ্বিনা হয়তমস্মিন্নর ইন্দ্রিয়ং ধৰ্ত্তমোজঃ। বি ন ইন্দ্র মৃষো জহি নীচা যচ্ছ পৃতন্যতঃ। অধম্পদ মীং কৃধি যো অস্মন্ অভিদাসতি। ইন্দ্র ক্ষত্রমভি বামমোজোহজায়থা বৃষভ চৰ্ষণীনা। অপানুদো জনমমিত্রয়মুরুং দেবেভ্যো অকৃপোৰু লোক। মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ পরাবতঃ আ জাগামা পরস্যাঃ। স্কং সংশায় পবিমিন্দ্র তিগ্মং বি্‌্‌্‌্‌্‌্‌০০০০০০০০০০০ শ০.০ক্রন্তাটি বি মৃধো নুদ। বি শত্ৰুম্বি মৃধো নুদ বি বৃত্রস্য হনু রুজ। বি মমিন্দ্র মিতোহমিত্রস্যাভিদাসতঃ। ত্রাতারমিন্দ্রমবিতারমিনত্মরং হবেহবে সুহবং শারমিন্দ্র। হবে নু শক্রং পুরুতমিং স্বস্তি নো মঘবা ধাত্বিঃ । মা তে অস্যাং সহসাবল্পরিষ্টাবঘার ভূম হরিবঃ পরাদৈ। ত্রায়স্ব নোহবৃকেভিৰ্বরূথৈম্ভব প্রিয়াসঃ সরিষু স্যাম। অনবস্তে রথমশ্বায় তক্ষন্তুষ্টা বজ্রং পুরুত দুমন্ত। ব্রাহ্মণ ইং মহয়ন্তো অর্কৈরবর্ভয়হয়ে হস্তবা উ। বৃষ্ণে যত্তে বৃষপণা অর্কমচর্চানিন্দ্র গ্রাবাণো অদিতিঃ সজোষাঃ। অনশ্বাসো যে পবয়োহরথা ইন্দ্ৰেষিতা অভ্যবৰ্ত্তন্ত দন্ ॥১২৷৷ মর্মার্থ- হে ঋত্বিক-যজমানবর্গ! আপানাদের পুত্র-ভৃত্য ইত্যাদি জনসিদ্ধির নিমিত্ত আমরা সর্ব জগতের উপরে বর্তমান উৎকৃষ্ট ইন্দ্রের আহ্বান করছি। সেই ইন্দ্র অপর যজমান অপেক্ষা আমাদের অধিক অনুগ্রহ করুন (ইতর-যজমানেলভ্যাংপ্যাধিকমনুগ্রহমশ্বাসু করোত্বিত্যর্থঃ)। মনুষ্যগণ বহ্নি ইত্যাদি দেবগণের সাথে হবিঃর অর্ধভাবের প্রাপক ইন্দ্রের আহ্বান করে থাকে। যজ্ঞ উত্তীর্ণ হবার ইচ্ছায় যজমানগণ অগ্নিষ্টোম ইত্যাদির অনুষ্ঠান করে থাকেন। সেইরকম–হে ইন্দ্র! আপনি শূর, ধনের দাতা, বলের প্রদাতা, আমাদের বহু গাভী ইত্যাদি পশুযুক্ত স্থানে স্থাপন করুন (বহুগবাদিপশুযুক্তে ব্রজে সঙ্ আভজাহভিমুখ্যেন স্থাপয়)। হে শততু! নিষাদ সহ ব্রাহ্মণ ইত্যাদি পঞ্চ বর্ণে আপনার যে সামর্থ্য আছে, হে ইন্দ্র! আমি আপনার অনুগ্রহে তার সবগুলিই বা সমস্তই গ্রহণ করব (তানি সর্বানি তে তবানুগ্রহাদাবৃণে সমন্তাদগৃহূমি)। হে মহান ইন্দ্র! সকল যজ্ঞে সকল দেবতা অপেক্ষা আপনাকেই অধিক হবিঃ প্রদান করা হয়ে থাকে, কারণ আপনি বলসিদ্ধ, বৃত্রবধকারী, ধনশালী এবং বৈরিগণকে তিরস্কাররের যোগ্য শক্তিধারী। সুগতিসম্পন্ন সপ্ত অশ্বের দ্বারা বাহিত একচক্রযুক্ত রথে অবস্থানকারী, অতীন্দ্রিয়জ্ঞানসম্পন্ন, প্রথিতকীর্তি আদিত্যও যে ইন্দ্রের আতিথ্য গ্রহণ করেন, সেই ইন্দ্রের মহিমার কথা কি বলব? হে ইন্দ্র! আপনি ওষধিসমূহের পাকরহিত অর্থাৎ অপরিপক্ক ফলগুলি বৃষ্টির দ্বারা সম্যভাবে পাকযুক্ত (পরিপক) করে থাকেন, সপ্তাষে আরোহিত আদিত্যকে আকাশে বিচরণ করবার সামর্থ্যপ্রদানপূর্বক প্রেরণ করে থাকেন। হে যজমানগণ (হেতিভিৰ্যজমানা)! আপনারা ইন্দ্রের পুরোডাশরূপ প্রিয় হবির সুষ্ঠু সংস্কার করুন, শোভন ভক্তিযুক্ত সামের (অর্থাৎ মন্ত্রের) দ্বারা ইন্দ্রের স্তুতি করুন (স্তুতিরূপাঃ প্রযুক্তেতি)। উগাথিগণ বৃহৎ সাম মন্ত্রে ইন্দ্রের স্তুতি করেছিলেন, বহুচগণ ঋক্‌-মন্ত্রে ইন্দ্রের স্তুতি করেছিলেন এবং অন্যেরাও যজুর্মন্ত্রে ইন্দ্রের স্তুতি করেছিলেন। হে শতক্রতু! উদ্গাতা গায়ত্রীসামে আপনার গান করেন, বহুগণ ঋমন্ত্রে আপনার গান করেন, অধ্বযুগণও কুলাচারের দ্বারা আপন বংশোদ্ভূতের বর্ধনের ন্যায় আপনাকে উন্নত করেন (উত্থাপয়ন্তি)। আমি গ্রীষ্মের দাবাগ্নি হতে দগ্ধ ভূপ্রদেশে বৃষ্টিপ্রদানকারী, নরকহেতু নিষিদ্ধ আচরণরূপ পাপের মোচনকারী ইন্দ্রের স্তুতি করছি। হে ইন্দ্র! এই ত্যজ্যমান হব্য প্রতিগ্রহ করুন, তাতে যজমানের কামনা সত্য হোক (সত্যাঃ সন্তু)। ইন্দ্রের স্তুতি করণের সুবুদ্ধি আমি অর্জন করেছি, মরণদিবস পর্যন্ত তার স্তব করব, তার ফলে ইন্দ্র আমাদের পাপ হতে উত্তারিত করবেন। যেমন উভয় কুলবর্তী লোক নদী উত্তরণের নিমিত্ত নাবিককে আহ্বান করে, তেমনই আমরা পাপ হতে উদ্ধার প্রাপ্তির নিমিত্ত ইন্দ্রকে আহ্বান করছি। হে নর (ঋত্বিকবর্গ)! সম্যক দীপ্যমান ইন্দ্রের প্রকৃষ্টরূপে ভজনা করো, সেই ইন্দ্র অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি যাগের মুখ্য দেবতা (মুখ্যদেব), পাপের মোচনকর্তা (পাপান্মোচয়িতারম), যজ্ঞ-সম্বন্ধি ফলের বর্ষণকারী (বর্ষিতায়), বৃষ্টির বর্ধনকারী, ঐশ্বর্যের প্রাপক (হয়ন্তমৈশ্বর্যস্য গময়িতার)। হে অশ্বিযুগল! আপনারা এই যজমানের চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের দক্ষতা ও বল স্থাপন করুন (চক্ষুরাদিপাটবমোজো বলং চ ধং স্থাপয়ত)। হে ইন্দ্র! আমাদের শত্রুগণকে আপনি বিনাশ করুন। যারা যজমানরূপী আমাদের বধের নিমিত্ত সৈন্য প্রাপ্তির জন্য ইচ্ছা করে, তাদের আপনি নির্দয়ভাবে প্রহার করুন, যারা আমাদের ক্ষয় করতে আকাঙ্ক্ষা করে (অর্থাৎ দাসত্বে পরিণত করতে চায়) তাদের আপনি আমাদের পদে প্রণতিশির করে দিন (প্ৰণতশিরস্কং কুরু)। হে ইন্দ্র, আর্তের রক্ষা ও আমাদের বল এইসব সম্পাদনের জন্য আপনি জাত হয়েছেন। মানুষের অভীষ্টবর্ধক হে দেব! অমিত্রগণকে (শত্রুভাবান্বিত জনবর্গকে) আপনি তিরস্কৃত করুন, দেবতাদের হবিঃ প্রদান ইত্যাদি ব্যবহারী যজমানগণকে বিস্তীর্ণ ভোগস্থান দান করুন। হে ইন্দ্র! প্রাণিভক্ষণ ইত্যাদিরূপ কুৎসিত আচরণশীল, মৃগের প্রতি পর্বতনিবাসী সিংহ ব্যাঘ্র ইত্যাদির মতো আমাদের বিরোধিগণের দূর হতে আপনি আগমন করেছেন, শত্রুদেহে সরণশীল (অর্থাৎ গমনশীল) আপনার বজ্ৰ তীক্ষ্ণ করে শত্রুগণকে বিতাড়িত করে দিন, শত্রুদের যোদ্ধাগণকে নিরাকৃত করুন। বৃত্রের হনু ভগ্ন করুন (বৃত্রস্য হনু বিরুজ), আপনি ক্রদ্ধ হয়ে আমাদের বৈরিগণের ক্রোধ ভগ্ন করুন। ত্রাতা, রক্ষক, তিরস্কারক্ষম শূর, সকল যজ্ঞে (হবে হবে সুহবং সর্বস্মিনহোমে) সুখে আহ্বান-যোগ, সকল কর্মে শক্তিযুক্ত পুরুহুত অর্থাৎ বহু যজমান কর্তৃক আহূত এই ইন্দ্রকে আমরা আহ্বান করি। ধনবান্ ইন্দ্র আমাদের অবিনাশী স্বস্তি (মঙ্গল) দান করুন। হে বলবান ইন্দ্র। আমাদের ক্রিয়মাণ এই যজ্ঞে যেন কোন বৈকল্য না ঘটে। হে অশ্বদ্বয়যুক্ত ইন্দ্র! আমরা যেন কখনও আপনাকে অবজ্ঞা না করি। আপনি আমাদের হিংসকরহিত গৃহ দান করুন। বিদ্বান্ যজমানবর্গের মধ্যে আমরা যেন আপনার প্রিয় হই (বয়ং তব প্রিয়া ভবেম)। হে পুরুহুত! বহু যজমান কর্তৃক আহূত আপনার রথ সংস্কৃত করা হোক; দেবশিল্পী ত্বষ্টা আপনার দীপ্তিমন্ত বজ্র মসৃণ (বা তীক্ষ্ণ) করুন (বজ্রং ততু)। ব্রাহ্মণ ঋত্বিকগণ মহাযজ্ঞপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধক পাপকে বিনাশের নিমিত্ত মন্ত্রের দ্বারা পূজা, সম্পাদন করে আপনার বর্ধন করুন (পূজয়ন্ত ইন্দ্রমবর্ধয়ন্যশসা বর্ধয়)। হে ইন্দ্র! কাম-অভিবৰ্ষক আপনার আদেশ যেমন মেঘগণ বর্ষণের দ্বারা পালন করে, তেমনই পৃথিবীও তাদের অনুকূলতায় শস্য ইত্যাদি উৎপন্নপূর্বক আপনার প্রীতি সম্পাদন করে থাকেন। আপনা কর্তৃক প্রেরিত হয়ে রথ ও অশ্বরহিত (রথাশ্বানিরপেক্ষা) আপনার বজ্র মহাযজ্ঞ প্রাপ্তির প্রতিবন্ধক দস্যুবৰ্গকে পরাভূত করবার লক্ষ্যে প্রবৃত্ত হোক (প্রবর্তিা ) ॥১২।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *