২.৫ দ্বিতীয় কাণ্ড। পঞ্চম প্রপাঠক

দ্বিতীয় কাণ্ড। পঞ্চম প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- বিশ্বরূপো বৈ হৃাষ্ট্রঃ পুরোহিত দেবানামাসীৎ স্বশ্রীয়োহসুরাণাং তস্য ত্রণি শীর্ষাণ্যাস সোমপানাং সুরাপানমন্নাদনং স প্রত্যক্ষং দেবেভ্যো ভাগমবদৎ পরোক্ষমসুরেভ্যঃ সস্মৈ বৈ প্রতাক্ষং ভাগং বদন্তি যম্মা এব পরোক্ষং বদন্তি তস্য ভাগ উদিতস্তম্মাদিন্দ্রাহবিভেদীদৃঙবৈ রাষ্ট্র বি পৰ্য্যাবর্তয়তীতি তস্য বজ্ৰমাদায় শীর্ষাণ্যচ্ছিনদ্যৎ সোমপানমাসীৎ স কপিঞ্জলোহভবদ্যৎ সুরাপানং স কলবিকো যদন্নাদনং স তিত্তিরিস্তস্যাঞ্জলিনা ব্ৰহ্মহত্যামুপাগৃহ্নাত্তাং সম্বসুরমবিভস্তং ভূন্যভ্যক্রোশন ব্রহ্মহন্নিতি স পৃথিবীমুপাসীদদস্যৈ ব্ৰহ্মহত্যায়ৈ তৃতীয়ং প্রতি গৃহাণেতি সাহব্রবীদ্বরং বৃণৈ খাতাৎ পরাভবিষ্যস্তী মন্যে ততো মা পরা ভূমিতি পুরা তে সম্বৎসরাদপি রোহাদিত্যব্রবীত্তস্মাৎ পুরা সম্বৎসরাৎ পৃথিব্যৈ খাতমপি রোহতি বারেবৃতং হাস্যৈ তৃতীয়ং ব্রহ্মহত্যায়ৈ প্রত্যগৃহাত্তৎ স্বকৃতমিরিণমভবত্তস্মাদাহিতাগ্নিঃ শ্ৰদ্ধাদেবঃ স্বকৃত ইরিণে নাব সোব্রহ্মহত্যায়ৈ হেষ বর্ণঃ স বনস্পতীনুপাসীদদস্যৈ ব্ৰহ্মত্যায়ৈ তৃতীয়ং প্রতি গৃহীতেতি তেহরুবরং বৃণামহৈ বৃকণাৎ পরাভবিষ্যভোদত দমন্যামহে তততা মা পরা ভুমেত্যারশ্চনাদো ভূয়াংস উক্তিষ্ঠানিত্যব্রবীত্তস্মাদাব্ৰশ্চনাদ বৃক্ষাণাং ভুয়াংস উত্তিষ্ঠন্তি বারেবৃতং হ্যেং তৃতীয়ং ব্রহ্মহত্যায় প্রত্যগনস নিৰ্যাসোহভবত্ত- স্মান্ন্যিাসস্য নাইশ্যাং ব্রহ্মহত্যায়ৈ হেষ বর্ণোহথো খলু য এব লোহিতো যো বাহব্ৰশ্চনান্নিৰ্য্যেষতি তস্য নাইশ্যাং কামমন্যস্য স খ্রীষং সাদমুপসীদদস্যৈ ব্রহ্মহত্যায়ৈ তৃতীয় প্রতি গৃহীতেতি তা অব্ৰুবরং বৃণামহা ঋত্বিয়াৎ প্রজাং বিন্দামহৈ কামমা বিজনিততঃ সং ভবামেতি তস্মাদৃত্বিয়াৎ খ্রিয়ঃ প্রজাং বিন্তে কামমা বিজনিততঃ সং ভবন্তি বারেবৃতং হ্যাঁসাং তৃতীয়ং ব্ৰহ্মহত্যায়ৈ প্রত্যগৎসা মলদ্বাসা অভবও মলদ্বাসসা ন সং বদেত ন সহাহসীত নাস্যা অনুমদ্যাম্বুহ্মহত্যায়ৈ হ্যে বর্ণং প্রতিমুচ্যাহস্তেহথো খাহুরভ্যঞ্জনং বাব স্ক্রিয়া অনুমভ্যঞ্জনমেব ন প্রতিগৃহ্যং কামম্ভন্যদিতি যাং মলদ্বাসসং সম্ভবন্তিযস্ততো জায়তে সোহভিশন্তো যামরণ্যে তস্যৈ স্তেনো যাং পরাচীং তস্যৈ হ্রীতমুখ্যপগভো যা স্নাতি তস্যা অশ্রু মারুকো যা অভ্যক্তে তস্যৈ দুশ্চৰ্ম্মা যা লিখতে তস্যৈ খলতিরপামারী যাহঙক্তে তস্যৈ কানো যা দতো ধাবতে তস্যৈ শ্যাবদন্যা নখানি নিকৃন্ততে তস্যৈ কুনখী যা কৃণত্তি তস্যৈ ক্লীবো যা রজ্জং সৃজতি তস্যা উদ্বন্ধুকে যা পর্ণেন পিবতি তস্যা উন্মাদুকো যা খর্বেণ পিবতি তস্যৈ খৰ্বস্তিম্রো রাত্রীৰ্ব্বতং চরেঞ্জলিনা বা পিবেদকৰ্বেণ বা পাত্রেণ প্রজায়ৈ গোপীথায় ॥১॥

 [সায়ণাচার্য বলেন–তত্র দ্বিতীয়ানুবাকে পৌর্ণমাসীগতমগ্নীযোমীয়পুরোশং বিধিৎসুস্তদুপোদ্যাতত্বেন প্রথমানুবাকে কাঞ্চিদাখ্যায়িকামাহ। অর্থাৎ-পরবর্তী অনুবাকে পৌর্ণমাসীগত অগ্নি ও সোমের উদ্দেশে পুরোডাশ নির্বপণের বিষয় বর্ণিত হয়েছে, এই অনুবাকে সেই সম্পর্কে ইন্দ্র কর্তৃক বিশ্বরূপ বধের এক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে]

মর্মার্থ- বিশ্বরূপ ছিলেন ত্বষ্টার পুত্র। তিনি দেবগণের পুরোহিত ছিলেন এবং সম্পর্কে ছিলেন অসুরদের ভাগিনেয়। তিনটি মস্তকধারী সেই বিশ্বরূপ সত্ত্বিক মুখের দ্বারা সোমপান করতেন, তামসিক মুখে দ্বারা সুরাপান করতেন এবং রাজসিক মুখটির দ্বারা অন্ন গ্রহণ করতেন। তিনি দেবতাগণের উদ্দেশে প্রত্যক্ষভাবে হবির ভাগ প্রদান করতে বলতেন এবং অসুরগণকে পরোক্ষভাবে হবির ভাগ প্রদানের নির্দেশ দিতেন। ভুবনলোকে প্রত্যক্ষ অপেক্ষা পরোক্ষবাদে অর্থাৎ রহস্যময়তার কারণে লোকে অধিক আকৃষ্ট বা বিশ্বাসী হয়ে থাকে। ইন্দ্রদেব এই বৃত্তান্ত শ্রবণ পূর্বক ভীত হয়েছিলেন, কারণ এর ফলে রাষ্ট্রে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা। এই নিমিত্ত ইন্দ্রদেব তার বজ্রের দ্বারা বিশ্বরূপের মস্তক ছেদন করলেন। এই ছিন্ন মস্তক তিনটি হতে তিনটি পক্ষীর উদ্ভব হলো; যথা– সোমপানকারী মুখ হতে কপিঞ্জল (চাতক) পক্ষী, সুরাপানকারী মুখ হতে কলবিঙ্ক (চড়ুই) এবং অনুগ্রহণকারী মুখ হতে তিত্তির পক্ষী। এই অসুরবধজনিত ব্ৰহ্মহত্যা ইন্দ্র তাঁর অঞ্জলির দ্বারা গ্রহণ করলেন, কিন্তু আত্মতত্ত্ব-জ্ঞানের জন্য পাপ তাকে স্পর্শ করল না; কিন্তু লোকে তাকে ব্রহ্মহত্যাকারী বলে অপবাদ প্রদান করতে লাগল। অতঃপর এই জনাপবাদ পরিহারের নিমিত্ত ইন্দ্র তার পাপকে তিন ভাগে বিভক্ত করে পৃথিবীর নিকট গমন পূর্বক বললেন, আমার ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপের তৃতীয় ভাগ গ্রহণ করো। পৃথিবী বললেন, আমার ভূমি খননজনিত খাত যাতে পূর্ণ হয়, তেমন করুন, তাহলে আমি আপনার পাপের তৃতীয় ভাগ গ্রহণ করতে পারি। ইন্দ্র বললেন, সম্বৎসরের মধ্যে তোমার খাত পূর্ণ হবে। এই বর প্রাপ্ত হয়ে পৃথিবী সেই ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপের তৃতীয় অংশ গ্রহণ করলেন। স্বতঃসিদ্ধ উষরক্ষেত্র হলো সেই ব্রহ্মহত্যা পাপের স্বরূপ, যেস্থানে শ্রাদ্ধদেব অগ্নি কখনও অবস্থান করেন না (কদাচিদপি ন তিষ্ঠেৎ)। অর্থাৎ সেই স্থানে দেবতাগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান হয় না। অতঃপর ইন্দ্র তার পাপের অপর তৃতীয় ভাগের নিমিত্ত বনস্পতিকে (বৃক্ষকে) বললেন, তুমি আমার পাপের একতৃতীয়াংশ গ্রহণ করো। বৃক্ষ বলল, আমার ত্বক ইত্যাদি ছিন্ন হলে যে খাত সৃষ্টি হয়, আপনি তা পূরণ করলে আমি আপনার পাপভাগ গ্রহণ করতে পারি। ইন্দ্র তাকে তার মনোমতো বর প্রদান করলে সে ব্রহ্মহত্যা পাপের তৃতীয় অংশ গ্রহণ করল। বৃক্ষের ত্বক ইত্যাদি ছিন্ন হলে সেখানে যে লোহিত বর্ণ দেখা যায়, সেই স্থান হতে নিঃসৃত নির্যাসই (রস বা আঠাই) ব্রহ্মহত্যা পাপের স্বরূপ; তা ভোজ্য (ভক্ষণীয়) নয় (ন ভোজ্যং ভবতি)। এরপর ইন্দ্র তার পাপের অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশের নিমিত্ত স্ত্রীলোকগণকে বললে তারা তাকে বললেন, গর্ভের উপদ্রব ব্যতিরেকে যদি আমরা পুরুষসঙ্গ লাভ করতে পারি, তাহলে আমরা আপনার পাপ গ্রহণে সম্মত আছি। ইন্দ্র সেইমতো বর প্রদান করলে তাঁরা সেই অবশিষ্ট পাপ গ্রহণ করলেন। রজঃস্বলা অবস্থায় স্ত্রীলোকবর্গের শরীরে কধুকবৎ (খোলসের ন্যায়) সেই ব্রহ্মহত্যা পাপ লিপ্ত হয়ে থাকে, সেই কালে তাদের সাথে সম্ভাষণ অকর্তব্য। সেই কালে তাঁদের সাথে গৃহবাসও অকর্তব্য।

সেই কালে স্ত্রীগণ আপন অঙ্গে তৈল ইত্যাদি লেপন করেন না, কিংবা শরীরে শৃঙ্গারের উপযোগী কোন অভঞ্জন হতে বিরত থাকেন। সেই কালে তাদের সৃষ্ট অন্ন ইত্যাদিও কেউ ভোজন করেন। প্রসঙ্গক্রমে রজঃস্বলা নারীর ব্রত কথিত হচ্ছে–যে মলবৎ বাসযুক্ত (রজঃ-আপ্লত বসনযুক্ত) নারীর সাথে সম্ভাষণ করবে, সে মিথ্যা অপবাদের দ্বারা অভিশপ্ত হয়, সভাস্থলে লজ্জিত বা পরাঙ্মুখী হয়, মরণশীল হয় (অর্থাৎ অল্পায়ু হয়), কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হয়। সেই অবস্থায় (অর্থাৎ রজঃস্বলা-কালে) যে নারী ভিত্তি (দেওয়ালে) ইত্যাদি স্থানে চিত্র ইত্যাদি অঙ্কন করে, সে কেশশূন্যা, দুর্মরণযুক্তা, কুণ্ঠিতাক্ষী (কাণা) ও মলিন দন্তশালিনী হয়। এইকালে যে নারী তৃণ ইত্যাদি ছেদন করে, সে কুনখযুক্তা হয়, যে রঙ্কু প্রস্তুত করে সে উদ্বন্ধনে (গলায় দড়ি দ্বারা) মৃত্যুপ্রাপ্ত হয়, যে পর্ণে (পাতার ঠোঙায়) পান করে সে উন্মাদ হয় ও যে বহ্নিপ (আগুনে পোড়া) শরাব (সরা, মাটির পাত্র) ইত্যাদিতে পান করে সে খর্ব (বামন) হয়। ঐসব উক্ত দোষাবলি পরিহারের নিমিত্ত সম্ভবপর ইত্যাদি বর্জনরূপ নিয়মসমূহ আচরণ করা কর্তব্য (সম্ভবাদিবর্জনরূপং নিয়মমাচরেৎ)। তিন রাত্রি এই ব্রত আচরণের দ্বারা সন্তানের রক্ষা হয় (প্রজায়া রক্ষাণার্থং ভবতি) ॥১॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অর্থ দ্বিতীয়ানুবাকেহগ্নিযোমীয় পুরোডাশং বিধিৎসুবাদৌ তস্যোপোদঘাতস্য বিধুপযোগং দর্শয়তি। অর্থাৎ প্রথম অনুবাকে পূর্ণিমা তিথিতে যে অগ্নি-সোমীয় পুরোডাশের প্রস্তাবনায় বৃত্রবধের উপাখ্যান বর্ণনা করা হয়েছে, এই অনুবাকে সেই যাগের কথা বলা হয়েছে।]

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- ত্বষ্টা হতপুত্রো বীন্দ্রং সোমমাইহরত্তস্মিনিন্দ্র উপহবমৈচ্ছত তং নোপাহয়ত পুত্ৰং মেহবধীরিতি স যজ্ঞবেশসং কৃত্বা প্রসাহা সোমমপিবত্তস্য যদত্যশিষ্যত তত্ত্বষ্টাহহবনীয়মুপ প্রাবৰ্ত্তয়ৎ স্বাহেন্দ্ৰশক্ৰবৰ্ধশ্বেতি যদবৰ্ত্তয়ত্ত বৃত্রস্য বৃত্ৰত্বং যদব্রবীৎ স্বাহেন্দ্ৰশত্ৰুৰ্বৰ্ধশ্বেতি তস্মাদস্য ইন্দ্ৰঃ শত্রুরভবৎ স সম্ভবন্নগ্নীষো মাভি সমভবৎ স ইযুমাত্রমিযুমাত্রং বিম্বঙবর্ধত স ইমাল্লোঁকানবৃণোদ্যদি মাল্লোঁকানবৃণোত্তদস্য বৃত্ৰত্বং তম্মাদিদ্রোহবিভেৎস প্রজাপতিমুপাধাবচ্ছ ক্ৰৰ্ম্মের্তুজনীতি তস্মৈ বজ্রং সিত্ত্বা প্রাচ্ছদেতেন জহীতি তেনাভ্যায়ত তাবতামগ্নীষ্যেমৌ মা প্ৰ হারাবমন্তঃ স্ব ইতি ষৈ যুবং ইত্যব্রবী মভ্যেতমিতি তৌ ভাগধেয়মৈচ্ছেতাং তাভ্যামেতমগ্নীষোমীয়মেকাদশকপালং পূর্ণমাসে প্রাযচ্ছত্তাবব্রতামভি সন্দষ্টো বৈ স্বাে ন শকুব ঐতুমিতি স ইন্দ্র আত্ননঃ শীতরূরাবজনয়ত্তচ্ছীতরুরয়োর্জন্ম। য এবং শীতরূরয়োজ্জম্ম বেদ নৈনং শীতরূরৌ হতস্তাভ্যামেনমভ্যনয়ত্তস্মা জ্জঞ্জভ্যমানাদষ্মীযোমৌ নিরক্ৰামতাং প্রাণ্যপানৌ বা এনং তদজহিতাং প্রাণে বৈ দক্ষোইপানঃ ক্রতুস্তম্মাজ্জঞ্জভ্যামানো য়াম্ময়ি দক্ষতু ইতি প্রাণাপানাবেবাহত্মন্ধত্তে সৰ্বমায়ুরেতি স দেবতা বৃত্ৰানিয় ব্যত্রয়ং হবিঃ পূর্ণমাসে নিরবপদগ্নন্তি বা এনং পূর্ণমাস আহমাবস্যায়াং প্যায়য়ন্তি তম্মঘাত্রয়ী পূর্ণমাসেহনুচ্যেতে বৃধন্বতী অমাস্যায়াং তৎসংস্থাপ্য বায়ুং হবিৰ্বৰ্জমাদায় পুনরভ্যায়ত তে অক্ৰতাং দ্যাবাপৃথিবী মা প্ৰ হারাবয়োর্ঘৈ শ্রিত ইতি তে অব্ৰুতাং বরং বৃণাবহৈ নক্ষত্রবিহিহ হমসানীত্যসাবীচ্চিত্রবিহিহহমিতীয়ং তম্মানক্ষত্রবিহিতাহসৌ চিত্রবিহিতেয়ৎ য এবং দ্যাবাপৃথিব্যার্বরং বেদৈনং বয়রা গচ্ছতি স আভ্যামেব প্রসূত ইন্দ্রো বৃত্রমহন্তে দেবা বৃত্রং হত্বাহগ্নীযো মাবব্ৰুব হব্যং নো বহতমিতি তাবক্রমপতেজসৌ বৈ তৌ বৃত্রে বৈ ত্যয়োস্তেজ ইতি তেহব্রুবন্ ক ইমচ্ছৈতীতি গৌরিত্যব্রুবন্ গৌৰ্ব্বাব সর্বস্য মিত্রমিতি সাহব্রবীৎ বরং বৃণে ময্যেব সততাভয়েন ভুনজাব্বা ইতি । তষ্মৌরাহহরত্তস্মাদ্দাবি সততাভয়েন ভুঞ্জত এত অগ্নেস্তেজা যতমেতৎ সোমস্য যৎ পয়ো য এবমগ্নীযোময়োস্তেজো বেদ তেজষ্যেব ভবতি ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্তি কিং দেবত্যং পৌর্ণমাসমিতি প্রজাপত্যমিতি ক্ৰয়াত্তেনেং জ্যেষ্ঠং পুত্রং নিরবাসায়য়দিতি তম্মজ্যেষ্ঠং পুত্র ধনেন নিরবসায়য়ন্তি ॥২৷৷

মর্মার্থপুত্র হত হওয়ায় ত্বষ্টা ইন্দ্রহীন সোম্যগ অনুষ্ঠিত করতে আরম্ভ করলেন। ইন্দ্র এই যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে সোমাহুতি প্রার্থনা করলে ত্বষ্টা পুত্রহত্যার কারণে তাকে আহুতি প্রদান করেন নি। ইন্দ্র বলপ্রয়োগ পূর্বক সোম পান করলেন। ত্বষ্টা তখন অবশিষ্ট সোম গ্রহণ করে স্বাহেন্দ্রোশত্ৰুবর্ধস্ব (ইন্দ্রের শত্রু বর্ধিত হোক)–এই মন্ত্রে অগ্নির উদ্দেশে আহুতি প্রদান করলেন। কিন্তু ষষ্ঠীসমাসের স্থলে বহুব্রীহিস্বর উচ্চারিত হওয়ায় (অর্থাৎ উচ্চারণের পার্থক্যে) ইন্দ্র যার ঘাতক এমন অর্থ প্রকটিত হওয়ায় তা হতে এক পুরুষের উদ্ভব হলো। সে জাতমাত্রই অগ্নিদেব ও সোমদেবকে আপন দন্তপংক্তিতে গ্রহণ পূর্বক প্রতিদিন ইষুপাতন স্থান পর্যন্ত বর্ধিত হতে লাগল। এইভাবে তার অবয়বে সকল দিক অন্ধকারবৎ আচ্ছান্ন হলে সে যথার্থ বৃত্র নামে অভিহিত হলো। (বৃত্র শব্দের অর্থ অন্ধকার)। এর ফলে ইন্দ্রদেব ভীতিগ্রস্ত হয়ে প্রজাপতির নিকট গমন করে তাকে বললেন,মম কিশ্চৎ শত্ৰুৰ্জাত (আমার কোনও শত্রু জন্মগ্রহণ করেছে)। প্রজাপতি তখন ইন্দ্রদেবের বজ্রটিকে অভিমন্ত্রিত করে (কুতাভিমন্ত্রিতজলেন…) বৃত্ৰবধের নিমিত্ত গমন করতে বলেন। ইন্দ্র বৃত্রবধে উদ্যত হলে অগ্নিদেব ও সোমদেব বলে উঠলেন,হে ইন্দ্র! আপনি বৃত্রকে প্রহার করবেন না, আমরা উভয়ে এর মুখে অবস্থিত আছি। সেই কথা জ্ঞাত হয়ে সেই ইন্দ্রদেব বললেন, যুবাং মম স্থা বৈ খল্বিতি তস্মাম্মামভ্যেতং মামভিলক্ষ্যাগচ্ছতম্ (আপনারা তো আমার ছিলেন, অতএব আমার অভিলক্ষ্যে আগত হোন)। তারা ইন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সকাশে গমন করলে আমাদের কি ভাগ প্রদান করবেন? (কিং ভাগধেয়মিতি পপ্রচ্ছতুঃ)। ইন্দ্র পূর্ণমাসীতে নির্বপণীয় পুরোডাশ তাদের ভাগধেয়স্বরূপ প্রদান করেন। এই কারণে পূর্ণিমা তিথিতে অগ্নি ও সোমের উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। তারপর অগ্নি ও সোমদেব বললেন, আমরা বৃত্রের মুখে দন্তপংক্তির দ্বারা সম্যকরকমে বদ্ধ হয়ে থাকার নিমিত্ত নিষ্ক্রান্ত হতে পারছি না। এর প্রতিকারের নিমিত্ত ইন্দ্রদেব শীতজ্বর ও সন্তাপ সৃষ্টি করলেন। (যাঁরা শীতজ্বর ও সন্তাপের এই জন্মকথা জ্ঞাত হন, তাঁরা শীতে ও তাপে মারা যান না)। অতঃপর ইন্দ্রদেব অস্ত্রসদৃশ শীতজ্বর ও সন্তাপকে বৃত্রের অভিলক্ষ্যে নিক্ষেপ করলেন। এর ফলে বৃত্র মুখ বিদারণ করলে অগ্নিদেব ও সোমদেব বিনির্গত হলেন। অগ্নিদেব ও সোমদেবের নিষ্ক্রমণ হলে প্রাণ ও অপান বৃত্রকে ত্যাগ করল। তখন হতে প্রাণ ও অপান যথাক্রমে দক্ষ ও ক্রতু এই দুই নামে অভিহিত হলো। এই কারণে যজ্ঞ সম্পাদন কালে যজমান মুখ বিদারণ করলে আমাতে দক্ষত্ৰুতু ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করেন (ময়ি দক্ষত ইতি মন্ত্রং ক্ৰয়াৎ); সেই মন্ত্রপাঠে প্রাণ ও অপান তার আত্মায় স্থির হয়ে থাকে (স্থিরৌ ধারিতবান্ ভবতি); এবং অপমৃত্যু পরিহার পূর্বক দীর্ঘ আয়ু (সর্বমায়ুঃ) প্রাপ্ত হন। ইন্দ্রদেব অগ্নি সোম প্রমুখ সর্ব দেবতাকে বৃত্রের মুখ হতে নিঃসারিত করে বৃত্ৰহননের হেতু ভূত পূর্ণমাসীতে আজ্যভাগদ্ৰব্যরূপ হবিঃ নির্বপণ করলেন। এই লোকেও বৃত্রের আবরণাত্মক অন্ধকারের অবস্থিত শত্রুকে পূর্ণিমাদিনে জ্যোৎস্নায় বিনাশ করে থাকে। অমাবস্যায় জ্যোৎস্নার অভাবে অন্ধকার সর্বতো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এই নিমিত্ত বৃত্রহনন শব্দযুক্ত (শব্দলাঞ্ছিতে) ঋক মন্ত্রের সাথে (পুরোনুবাক্যে), আজ্যভাগ পূর্ণিমায় নির্বপণ করতে হয় এবং বৃধিধাতুযুক্ত (অর্থাৎ বৃধ শব্দযুক্ত) ঋকের সাথে অমাবস্যায় পুরোনুবাক্যে হবিঃ নির্বপণ করতে হয়। এর পরে বৃত্রহনন হেতুভূত আজ্যভাগরূপ হবিঃ নির্বপণ সম্পূর্ণ করে ইন্দ্রদেব পুনরায় বজ্র গ্রহণ পূর্বক বৃত্রের অভিমুখে আগত হলেন। তখন দ্যাবাপৃথিবী ইন্দ্রদেবকে বললেন, এই বৃত্র ভূমি হতে আরম্ভ করে দ্যুলোক পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়ে আছে, অতএব একে প্রহার করবেন না। (কারণ তাহলে সব কিছুই বিনষ্ট হয়ে যাবে)। ইন্দ্রদেব এই অনুরোধ স্বীকার না করে প্রহারে উদ্যত হলে ভূমি (পৃথিবী) ও দুলোক (স্বর্গ) তার নিকট বর প্রার্থনা করলেন। সেই অনুসারে দ্যুলোক বর প্রাপ্ত হলেন–আকাশে নক্ষত্ররূপে বিহিত অলঙ্কারে মণ্ডিত হয়ে থাকবেন এবং পৃথিবী বর প্রাপ্ত হলেন–মনুষ্য, পশু, বৃক্ষ, পর্বত (নগ), নদী, সমুদ্র ইত্যাদি বিচিত্র (বিহিত) অলঙ্কারে মণ্ডিত হয়ে থাকবেন। ইন্দ্র কর্তৃক প্রদত্ত বরের প্রভাবে তারা তেমনই হলেন। এই বর সম্পর্কে যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁরাও আপন আপন বর লাভ করে থাকেন। অতঃপর দ্যাবাপৃথিবীর অনুজ্ঞাক্রমে ইন্দ্রদেব বৃত্রকে নিহত করলেন। বৃত্রবধের পরে ইন্দ্র সহ পার্শ্ববর্তী সর্ব দেবতা অগ্নিদেব ও সোমদেবকে উদ্দেশ করে বললেন, আপনারা আমাদের নিমিত্ত হব্য বহন করুন (হব্যমস্মদর্থে বহতম)। তারা বললেন,বৃত্র দীর্ঘকাল (চিরং) দন্তে ধারণ করায় (দংশনের কারণে) আমাদের তেজঃ অপগত হয়ে গেছে, সেই সামর্থ্য এখন বৃত্রে স্থিত হয়েছে। সুতরাং বৃত্রের নিকট হতে সেই তেজঃ কে আনয়নে সমর্থ,পরস্পর সেই চিন্তা পূর্বক তারা (অর্থাৎ দেবগণ) স্থির করলেন, বুদ্ধিমন্ত গাভী (গোঃ) সকলের মিত্র, অতএব সেই গাভীই গমন করুক এবং বৃত্রের নিকট হতে তেজঃ আনয়ন করুক। গাভী উৎকোচস্বরূপ বর প্রার্থনা করল, আমাতে যদি সেই তেজঃকে প্রদান করো, (অর্থাৎ সেই তেজঃ যদি আমাতেই স্থিত হবার বর প্রদান করো), তাহলে আমি সেই তেজঃ আনয়ন করব এবং তোমরা তা ভক্ষণ করতে পারবে। গাভী এই বর যথাযথ প্রাপ্ত হয়ে সেই তেজঃ আনয়ন করেছিল (এবং তা গাভীতেই নিরন্তর স্থিত হয়েছিল)। সেই নিমিত্ত এই লোকে গাভীর তেজঃরূপ ঘৃত ও দুগ্ধে সকলের ভোজন নিষ্পন্ন হয়। ঘৃত হলো অগ্নির তেজঃ ও দুগ্ধ হলো সোমের তেজঃ। যাঁরা এই তথ্য অবগত হন, তারা তেজস্বী হয়ে থাকেন (তেজস্বী ভবতি)। ব্রহ্মবাদী ব্যক্তিগণ বলে থাকেন–পৌর্ণমাসী যজ্ঞের দেবতা হলেন প্রজাপতি; তিনি তার আপন জ্যেষ্ঠ পুত্র ইন্দ্রকে পৌর্ণমাস যজ্ঞের কর্মের দ্বারা নিঃশেষে বিত্ত দান পূর্বক স্থিত করেছেন। যেমন প্রজাপতি যজ্ঞ সৃষ্টি করেছেন (যথা প্রজাপতির্যজ্ঞান সসৰ্জ) তেমনই ইন্দ্রদেবও বৃত্র হতে (অগ্নি ও সোমদেবকে) নিঃসৃত করে তাদের পুরোডাশ দান করেছেন, এইটাই প্রজাপতি ও ইন্দ্রদেবের সম্বন্ধ (প্রজাপতেরিরেন্দদরস্যাপি সম্বন্ধঃ)। যেভাবে প্রজাপতি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইন্দ্রকে ধন প্রদান করেছিলেন, এই লোকেও মনুষ্যগণ সেইভাবেই তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে নিঃশেষে ধন প্রদান করে যান (ধনেন যুক্তো যথা প্রাপ্নোতি তথা কুন্তী) ॥২॥

[সায়ণাচার্য বলেন-তৃতীয়েহমাবা্যায়াং সান্নায্যযাগো বক্তব্যঃ। অর্থাৎ এই তৃতীয় অনুবাকে অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠেয় সান্নায্য যাগের বিষয় কথিত হয়েছে। ]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- ইন্দ্ৰং বৃত্ৰং জগ্নিবাংসং মৃধোহভি বেপন্ত স এতং বৈমৃধং পূর্ণমাসেহনুনি ব্ৰাপ্যমপশ্যত্তং নিরবপত্তেন বৈ স মৃধোহপাহত যদ্বৈমৃধঃ পূর্ণমাসেহনি ব্রাপ্যো ভবতি মৃধ এব তেন যজমানোহপ হত ইন্দ্রো বৃত্ৰং হত্বা দেবতা ভিশ্চেন্দ্রিয়েণ চ ব্যাৰ্দ্ধত স এতমাগ্নেয়মষ্টাকোলমমাবস্যায়ামপশ্যদৈং দধি তং নিরবপত্তেন বৈ স দেবতাশ্চেন্দ্রিয়ং চাবারুন্ধ যদাগ্নেয়োহষ্টাকাঁপালোহমা বাস্যায়াং ভবত্যৈন্দ্ৰং দধি দেবতাশ্চৈব তেনেন্দ্রিয়ং চ যজমানোহব রুগ্ধ ইন্দ্রস্য বৃত্ৰং জঘুষ ইন্দ্রিয়ং বীৰ্য্যং পৃখিবীমনু ব্যাৰ্ছৰ্ত্তদোষধয়ো বীরুঘোহভবৎস প্রজাপতিমুপাষাবং মে জঘুষ ইন্দ্রিয়ং বীৰ্য্যং পৃথিবীমনু ব্যারত্তদোষধয়ো বীরুঘোহভূবন্নিতি স প্রজাপতিঃ পশুনবীদেতদস্মৈ সং নয়তেভি তৎ পশব ওষধীভ্যোহধ্যাত্মৎসমনয়ন্তৎ প্রত্যদুন্যৎ সমনয়ন্তৎ সান্নায্যস্য সান্নায্যত্বং যৎ প্রত্যদুহৎ প্রতিষ্ঠুষঃ প্রতিধুক্তং সমনৈ্যুঃ প্রত্যধুক্ষন্ন তু ময়ি শয়ত ইত্যব্রবীদেতদস্মৈ শৃতং কুরুতেত্যব্রবীত্তস্মৈ শূতমকুৰ্ব্বন্নিন্দ্ৰিয়ং বাবাস্মিন বীৰ্য্যং তদশ্রয়ন্তচ্ছুতস্য শৃতত্বং সমনৈযুঃ প্রত্যধুঞ্ছতমন্ন তু মা ধিনোতীত্যব্রীদেতদস্মৈ দধি কুরুতেত্যব্রবীত্তস্মৈ দধ্যকুব্বন্তদেনমধিনোত্তদ্দপ্লে দধিত্বং ব্রহ্মবাদিনো বদন্তি দধঃ পূর্বস্যাবদেয়ং দধি হি পূৰ্ব্বং ক্রিয়ত ইত্যনাত্য তচ্ছুতস্যৈব পূৰ্ব্বস্যাব দ্যেদিন্দ্রিয়মেবামি বীর্যং শ্রিতা দয়োপরিষ্টাদ্ধিনোতি যথাপূর্ধ্বমুপৈতি যৎ পূতীকৈব্বা পর্ণবল্কৈহঁতঞ্চ্যাৎ সৌম্যং তদ্যৎ কলৈ রাক্ষসং তদ্যত্তলৈর্বৈশ্বদেবং তদ্যদাতঞ্চনেন মানুষং তদ্যদ্দরী তৎ সেন্ট্রং দধাহতনক্তি সেত্বায়াগ্নিহোত্রাচ্ছেষণমভ্যানক্তি যজ্ঞস্য সত্যা। ইন্দ্রো বৃত্ৰং হত্বা পরাং পরাবতমগচ্ছদপারাধমিতি মন্যমানস্তং দেবতাঃ প্রৈষমৈচ্ছনৎ সোহব্রবীৎ প্রজাপতিঃ প্রথমোহনুবিন্দতি তস্য প্রথম ভাগধেয়মিতি তং পিতরোহব্ববিদন্তস্মাৎ পিতৃভ্যঃ পূৰ্বেদ্যুঃ ক্ৰিয়তে সোহমা বাস্যাং প্রত্যাহগচ্ছত্তং দেবা অভি সমগচ্ছন্তামা বৈ নঃ অদ্য বসু বসতীতীন্দ্রো হি দেবানাং বসু তদমাবস্যায় অমাবস্যত্বং ব্রহ্মবাদিনো বদন্তি কিং দেবতাং সান্নায্যমিতি বৈশ্বদেবমিতি ব্রয়াদ্বিশ্বে হি তবো ভাগধেয়মভি সমগচ্ছন্তে ত্যা খম্বৈন্দ্ৰমিত্যব ব্রুয়াদিং বাব তে তদ্ভিষজ্যন্তোহভি সমগচ্ছন্তেতি৷ ৩৷৷

মর্মার্থ- পূর্ণিমা তিথিতে বৈধ যাগ সম্বন্ধে বলা হচ্ছে। ইন্দ্রদেব বৃত্রকে বধ করলে বৃত্রের পক্ষপাতী শত্রুবর্গ সমাগত হয়ে প্রকর্ষের সাথে ইন্দ্রকে ভীত ও কম্পিত করে তুলেছিল (ভয়মুৎপাদ্যাকম্পয়ন্ত)। যিনি শত্রুকে বিনাশ করেন তিনি বিমৃৎ নামে অভিহিত হন; তাঁর যিনি দেবতা তিনি বৈমৃধ; এই বৈমৃধ যাগে (অর্থাৎ বিমৃৎ-এর দেবতার উদ্দেশে) একাদশ কপাল পুরোড়াশ পূর্ণমাস যাগের প্রধান কর্মানুষ্ঠানের পরে নির্বপণ করতে হয় (পশ্চান্নির্বাপযোগ্য মপশ্যৎ)। যে যজমান এইরকম করেন, তিনি কখনও বিনাশপ্রাপ্ত হন না। ইন্দ্রদেব বৃত্রবধের নিমিত্ত ভীত হয়ে দূরে পলায়ন করার ফলে তার আপন সামর্থ্যরূপ দেববর্গের নিকট হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন (বিযুক্তোহভূৎ)। তখন অগ্নিদেবের উদ্দেশে অমাবস্যায় অষ্টকপাল পুরোডাশ নির্বপণ করে ও ইন্দ্রের উদ্দেশে দধি অর্পণ করে পুনরায় দেববর্গের সাথে তিনি (ইন্দ্রদেব) সংযুক্ত হন। এইভাবে অগ্নিদেবতার উদ্দেশে অষ্টকপাল হবিঃ ও ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে দধি নির্বপণ করে সান্নায্য যাগ নিষ্পন্ন করলে যজমান তার অপহৃত সামর্থ্য পুনরায় লাভ করেন। বৃঘাতী ইন্দ্রদেব পৃথিবীর নিকট হতে দুই রকমে বীর্য বা সামর্থ্য লাভ করেন। তাঁর ইন্দ্রিয়সামর্থ্য ওষধি ও লতাগুল্মে অবস্থিত–এই কথা ইন্দ্র প্রজাপতিকে বলেছিলেন (প্রজাপতেরগ্রে কথিতবা)। প্রজাপতি ইন্দ্রের এই ইন্দ্রিয়সামর্থ্য আনয়নের নিমিত্ত পশুদের আদেশ করলেন। পশুগণ ইন্দ্রে নিমিত্ত সেই সামর্থ্য ওষধি ও লতাগুল্মের নিকট হতে আনয়ন করে আপন শরীরে সম্যক স্থাপন করল এবং তারপর দুগ্ধ ইত্যাদি রূপে তা ইন্দ্রকে প্রদান করল। পশুগণ কর্তৃক আনীত ও সম্পাদিত হওয়ার নিমিত্ত এর নাম হয় সান্নার্য (সান্নায্যনাম ভবতি); ইন্দ্রের প্রতি (অর্থাৎ উদ্দেশ্যে) প্রতিদিন (প্রতিধুষঃ) দোহন করার (দুহ্যমানস্য) নিমিত্ত তার নাম হয় প্রতিষ্ঠুক। অতঃপর ইন্দ্রদেব প্রজাপতিকে জ্ঞাত করলেন, আপনার আদেশে পশুগণ কর্তৃক আনীত ক্ষীররূপ সামর্থ্য পাকাভাবের কারণে অর্থাৎ হজমশক্তির অভাবে আমার উদরে জীর্ণ হচ্ছে না। অতঃপর প্রজাপতি পশুগণের প্রতি তা পাক করে দিতে বললেন। সেই মতো করা হলে ইন্দ্রিয় সামর্থ্য দুগ্ধ ইত্যাদি পক্ক বা পরিণত (অর্থাৎ হজমের উপযোগী) অবস্থায় ইন্দ্রদেবের উদরে সম্যভাবে আশ্রিত হলো। পাক করা হয়েছে বলে এর নাম হয় শৃত (শৃতমিতি নাম নিষ্পন্ন)। ঐ ক্ষীররূপ সামর্থ্য আনয়নকৃত হলেও, দুগ্ধরূপে দোহনকৃত হলেও, অগ্নিস্পর্শে জ্বলিত (জ্বাল দেওয়া) হলেও তা ইন্দ্রের প্রীতিসম্পাদক হলো না। তখন প্রজাপতি সেই ক্ষীরকে দধি করতে বললেন। সেই দধি ইন্দ্রের প্রীতিকারক হলো। এই ভাবে দধি নাম সম্পন্ন হলো এবং ইন্দ্রদেবকে দধি প্রদানের বিধি নির্ধারিত হয়েছে। ব্রহ্মবাদী ব্যক্তিগণ বলে থাকেন–যেহেতু পূর্বিদিনের রাত্রে দধি প্রস্তুত (পাততে) করতে হয়, সেই হেতু পুর্বে দধি প্রদান কর্তব্য। কিন্তু এর উত্তরস্বরূপ বলা হয়েছে, অগ্রে দধি দান উচিত হয় না, দুগ্ধই দান করা উচিত এমন করলে, যজমান ক্ষীররূপ ইন্দ্রিয়সামর্থ্য লাভ করেন এবং তারপরে দধি দ্বারা প্রীত হন। অগ্রে ক্ষীর (দুগ্ধ) ও পরে দধি প্রদান কর্তব্য–এটাই বিধি (ক্ষীরং পূর্বভাবি দধি পশ্চাদ্ভাবী…)। সোমবল্লীর লতাখণ্ড পূতিকা ও পলাশ বৃক্ষের অংশ পর্ণবল্কা–এই দুটির সাথে যুক্তকৃত দধি সোমদেবের প্রিয় হয়ে থাকে (সোমাদীনাং প্রিয়)। এইভাবে সুপরিণত বদর বা কুলের সাথে যুক্তকৃত (মিশ্রিত) দধি রাক্ষসগণের প্রিয় হয়, তণ্ডুলের সাথে যুক্তকৃত (মিশ্রিত) দধি বিশ্বদেববর্গের প্রিয় হয়, দধ্য বা দম্বলের সাথে বিমিশ্রিত দধি (অর্থাৎ ঘোল) মনুষ্যগণের প্রিয় হয় এবং (শুদ্ধ অর্থাৎ কোনকিছুর সাথে অযুক্ত) দধি ইন্দ্রদেবের প্রিয় হয়। সেই কারণে ইন্দ্রদেবের প্রীতির নিমিত্ত দধি প্রদান করতে হয় (ইন্দ্রপ্রীত্যৈ দর্ধাহতঞ্চ্যাৎ)। দ্যাগের অগ্নিহোত্রের সাথে যাতে বিচ্ছেদ না ঘটে, সেই নিমিত্ত দধি প্রদান কর্তব্য। ইন্দ্রদেব বৃত্রকে বধ করায় অসুরগণের নিকট অপরাধ করেছেন, এমন ধারণা করে দূরে পলায়ন করেছিলেন। দেবগণ ইন্দ্রের প্রতি আহ্বান করতে ইচ্ছা করেছিলেন। প্রজাপতি উক্তি করেছিলেন যে, দেববর্গের মধ্যে যিনি প্রথমে ইন্দ্রকে প্রাপ্ত হবেন তাঁকে যজ্ঞীয় হবির প্রথম ভাগ প্রদান করা হবে। দেখা গেল, ইন্দ্রের প্রথম সন্ধান পেলেন পিতৃগণ; এই নিমিত্ত দর্শর্যাগের পূর্বদিনে পিতৃগণের উদ্দেশে পিণ্ডপিতৃযজ্ঞের অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। দর্শর্যাগ দেবগণের অমাবস্যায় আরম্ভ এবং প্রতিপদে তার যাগ। কিন্তু পিতৃগণের উদ্দেশে পিণ্ডদান অমাবস্যায় করতে হয়। পিতৃগণ পলায়িত ইন্দ্রদেবকে অন্বেষণ করে অমাবস্যায় তাকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ইন্দ্রদেব সেই অমাবস্যাঁতেই প্রত্যাগত হয়েছিলেন। এর ফলে ইন্দ্রদেবকে সম্প্রপ্ত দেবগণ বলেছিলেন, অদ্য নোস্মাকং বসুং শ্রেষ্ঠং ধননমা বসতি সহ তিষ্ঠতি,.. অর্থাৎ অদ্য আমরা শ্রেষ্ঠ ধনের সাথে বসতি করছি।-ইন্দ্ৰ হলেন সব দেবগণের শ্রেষ্ঠ ধন। তিনি বর্তমান থাকলে দেবগণ প্রভুকে লাভ করেন (স্বামিলাভা)। সাথে বসতি করার ব্যুৎপত্তিগত অর্থে অমাবস্যা নামটি সম্পন্ন হয়েছে। অতঃপর পিতৃগণ কর্তৃক আনীয়মান ইন্দ্রের সম্মুখে সর্ব দেবতা সমাগত হলেন। ব্রহ্মবাদিগণ জানতে চাইলেন, কোন দেবতা সান্নায্য যাগের দেবতারূপে বৃত হবেন? এর উত্তরে কোন কোন জন বিশ্বদেবের পক্ষ গ্রহণ করলেন, অর্থাৎ বিশ্বদেবকেই সান্নায্য যাগের দেবতারূপে চিহ্নিত করলেন। পক্ষান্তের অপর জনেরা বললেন যে, ভীত হয়ে দূরদেশে গত ইন্দ্রদেবের ভয় নিবারণ করে দেবগণ এই স্থানে তাকে আনয়ন পূর্বক মিলিত হয়েছে, অতএব এই ইন্দ্রদেবই সান্নায্য যাগের দেবতা। এইজন্যই বুদ্ধিমানগণ সান্নায্য আগের দেবতারূপে ইন্দ্রকেই নির্দেশ করেন (তস্মাৎ সান্নায্যমৈন্দ্ৰমিত্যেব বুদ্ধিমান্ ক্ৰয়াৎ) ॥৩॥

[সায়ণাচার্য  বলেন–অথ চতুর্থে আগ্নাবৈষ্ণবাদয়ো বক্তব্যাঃ। অর্থাৎ–এই অনুবাকে অগ্নি ও বিষ্ণুর উদ্দেশে অনুষ্ঠেয় যাগের বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

চতুর্থ অনুবাক

 মন্ত্র- ব্ৰহ্মবাদিনো বদন্তি স ত্বৈ দর্শপূর্ণমাসৌ যজেত য এনৌ সেন্ট্রেী যজেতেতি বৈমৃধঃ পূর্ণমাসেইনুনিৰ্ব্বাপ্যো ভবতি তেন পূর্ণমাসঃ সেন্দ্র ঐন্দ্রং দধ্যমাবস্যায়াং তেনামাবস্যা সেন্দ্রা য এবং বিদ্বান্দর্শপূর্ণমাসৌজতে সেন্দ্রাবেবৈনৌ যজতে শঃ শ্বেহস্মা ঈজানায় বসীয়ো ভবতি দেবা বৈ দদ্যজ্ঞেহকুব্বত তদসুরা অকুব্বত তে দেবা এম ইষ্টিমপশ্যন্নাগ্নাবৈষ্ণবমেকাদশকপালং সরস্বত্যৈ চরুং সরস্বতে চরুং তাং পৌর্ণমাসং সংস্থাপ্যানুনিরবপন্ততো দেবা অভবন পরাহসুরা যো ভ্রাতৃব্যবাৎস্যাৎ স পৌৰ্ণমাসং সংস্থাপ্যৈতামিষ্টিমনু নিৰ্বপেৎ পৌৰ্ণমাসেনৈব বজ্রম ভাতৃব্যায় প্রহৃত্যাহগ্নাবৈষ্ণবেন দেবতাশ্চ যজ্ঞং চ ভ্রাতৃব্যস্য বৃক্তে মিথুনান্ পশূৎসারস্বতাভ্যাং যাবদেবাস্যাস্তি তৎ সৰ্ব্ব বৃক্তে পৌর্ণমাসীমের যজেত ভ্রাতৃব্যবান্নামবাস্যাং হত্বা ভ্রাতৃব্যং নাইপ্যায়য়তি সাম্প্রস্থায়ীয়েন যজেত পশুকমো যস্মৈ বা অল্পেনাহহরন্তি নাহত্মানা তৃপ্যতি নান্যস্মৈ দদাতি যশ্মৈ মহতা তৃপ্যত্যাত্মনা দদাত্যন্যস্মৈ মহতা পূর্ণং হোতব্যং তৃপ্ত এবৈমিঃ প্রজয়া পশুভিন্তপয়তি দারুপাত্রেণ জুহোতি ন হি মৃন্ময়মাহুতিমানশ ঔদুম্বর ভবৰ্থা উদুম্বর ঊর্ক পশব উর্জৈবাশ্ম উজ্জং পশুনব রুন্ধে। নাগতশ্ৰীৰ্ম্মহেন্দ্রং যজেত ত্ৰয়ো বৈ গতশ্রিয়ঃ শুক্রবান গ্রামণী রাজন্যস্তেষাং মহেন্দ্রো দেবতা যো বৈ স্বাং দেবতামতিযজতে প্র স্বায়ৈ দেবতায়ে চ্যবতে ন পরাং প্রাপপাতি পাপীয়ান ভবতি সম্বৎসরমিং যজেত সম্বৎসরং হি ব্ৰতং নাতি স্বা এবৈনং দেবতেজ্যমানা ভূত্যা ইন্ধে বসীয়া ভবতি সস্বত্সরস্য পরস্তাদষ্ময়ে ব্রতপতয়ে পুরোডাশমষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপেৎ সম্বৎসরমেবৈনং বৃত্ৰং জাঘ্নিবাং সমগ্নিৰ্ব্বতপতিব্বতমা লঙয়তি ততোহধি কামং যজেত ॥৪॥

মর্মার্থ- ব্রহ্মবাদী ব্যক্তিগণ বলে থাকেন, যিনি ইন্দ্রদেবের সাথে (অমাবস্যায়) দর্শযাগ ও (পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠেয়) পূর্ণমাস যাগ করেন, তিনিই দর্শপূর্ণমাসযাজী হয়ে থাকেন, অন্য কেউ নয় (ন বন্যঃ)। সেই দুটি যাগ ইন্দ্রসহ (অর্তাৎ ইন্দ্রকে যাগ-দেবতারূপে বরণ করে) বৈমৃধ ও সান্নায্য যাগের দ্বারা সম্পাদন করতে হয়। যাঁরা এই সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন, ইন্দ্রদেবের সাথে যাগানুষ্ঠানের ফলস্বরূপ তাদের উত্তরোত্তর ধনাধিক্য ঘটে থাকে। দেবতাগণের যজ্ঞানুষ্ঠান দর্শন করে তাদের অনুচর অসুরগণ সেইভাবেই যজ্ঞানুষ্ঠান করত। এর ফলে তারা দেবতাগণের সমান বিজয় লাভ করত। এইটি লক্ষ্য করে দেবগণ বঞ্চনা করবার নিমিত্ত একটি যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। সেখানে অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ ও সরস্বতীর উদ্দেশে চরু নির্বপণ করা হয়। সরস্বতীর চরু পৌৰ্ণমাসীতে সংস্থাপন করে দেবতাগণ বিজয়লাভ করলেন এবং অসুরগণ পরাভূত হলেন (অসুরাশ্চা পরাভূতাঃ)। যিনি শত্রুগণকে জয় করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, তিনি পৌর্ণমাসীতে এই যজ্ঞানুষ্ঠান করবেন। পৌর্ণমাসীর এই প্রধান যজ্ঞে বজ্রপ্রহার হয়। অগ্নি সর্ব দেবতার স্বরূপ এবং বিষ্ণু যজ্ঞের স্বরূপ (অগ্নি সর্বা দেবতা বিষ্ণুৰ্যজ্ঞ), এই নিমিত্ত তাঁদের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত যাগের ফলে শত্রুগণের দেবতা ও যজ্ঞ বিনাশপ্রাপ্ত হয়; এর দ্বারা (এতাবতা) শত্রুগণের যা কিছু তাকে তার সবই নাশপ্রাপ্ত হয়। শত্রুঘাতী এই যুগ পূর্ণিমা তিথিযগেই করণীয়; অমাবস্যা তিথিতে পিতৃযজ্ঞ পরিত্যক্ত হওয়ার নিমিত্ত, তাতে শত্রুর বিনাশ সাধিত হয় না। অতঃপর দর্শপূর্ণমাসের গুণবিকৃতিরূপ যাগের বিষয় কথিত হচ্ছে। পশুকামনায় সাম্প্রস্থায়ী যাগানুষ্ঠান কর্তব্য। ব্রাহ্মণ কর্তৃক আহৃত দধিক্ষীরপূর্ণ চারটি কুম্ভ সহ অধ্বর্য হোমের স্থানে প্রস্থান করে থাকে যে যাগে, সেই যাগকে সাম্প্রখ্রীয় যুগ বলা হয় (সোহয়ং সাকন্দ্রস্থায়ীয়ো যাগস্তেন….)। সেই যাগে প্রভূত ক্ষীরদ্রব্যের দ্বারা পূর্ণ হবিঃ প্রদান করতে হয় (মহতা ক্ষীরদ্রব্যেণ পূর্ণং হবিহোতব্যম)।

এই লোকে যেমন রাজাকে অল্প কর প্রদান করলে রাজা তুষ্ট হন না, কিংবা সেই অল্প পরিমিত ধন আহরণ করে অপরকে স্বয়ং দান করতে পারেন না; আবার যেমন প্রভূত পরিমাণে ধন আহরণ করলে রাজা স্বয়ং তৃপ্ত হন, তেমনই অপরকে তা দানও করতে পারেন; সেই রকমই যজ্ঞে প্রভূত পরিমিত পূর্ণ দ্রব্যের দ্বারা হোম করলে ইন্দ্ৰং স্বয়ং তৃপ্তি লাভ করেন এবং হোমকারী যজমানকে পশুদান পূর্বক তৃপ্তিসম্পাদন করেন (তপয়তি)। এই যজ্ঞের আহুতিদ্রব্য দারুপাত্রে (কাষ্ঠনির্মিত আধারে) ধারণীয়, মৃন্ময় অর্থাৎ মাটির পাত্রে নয়। (প্রথম প্রপাঠকে ঔদুম্বরো যুপো ভবতি ইত্যাদি মন্ত্রে এই সম্পর্কে ব্যাখ্যাত হয়েছে)। এইবার অধিকারী ভেদে সান্নায্য যজ্ঞের দেবতাব্যবস্থা সম্পর্কে কথিত হচ্ছে (দেবতাব্যবস্থাং বিধত্তে)। ঋকু সাম ও যজুর্বেদে অভিজ্ঞ ব্যক্তি গ্রামাধ্যক্ষ ও রাজার পুত্র (রাজন্য) এই তিন জন শ্ৰী বা ঐশ্বর্যপ্রাপ্ত বলে প্রসিদ্ধ; এঁদের অনুষ্ঠিতব্য সান্নায্য যাগের দেবতা মহেন্দ্র (তেষামেব এয়াণাং মহেন্দ্রো দেবতা)। এঁরা ব্যতীত অপর যে পুরুষ আপন দেবতাকে অতিক্রম করে অপর দেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করেন, এমন কি মহেন্দ্রের উদ্দেশেও যাগ করেন, তাহলে তাঁর স্বকীয় দেবতা হতে প্রচ্যুত হন এবং পরকীয় দেবতাকেও প্রাপ্ত হন না, অধিকন্তু সেই দেবতার অভিশাপে পাপী ও দরিদ্র হয়ে থাকেন (তদ্দেবতাশাপেন পাপীয়ারিশ্চ ভবতি)। যাঁরা গতশ্রী অর্থাৎ ঐশ্বর্যলাভে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা সম্বৎসরব্যাপী ব্ৰতানুষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করবেন। তাতে তিনি ধনবান হতে পারবেন। সম্বৎসর অতিক্রান্ত হলে ব্রতপালনকারী যজমান অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্টকপাল পুরোডাশ নির্বাপণ করবেন। এর ফলে ব্রতপতি অগ্নিদেব সেই যজমানকে মহেন্দ্রের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত সান্নায্য যাগের ফল প্রদান করে থাকেন। তারপর যজমান তাঁর ইচ্ছামতো মহেন্দ্র বা ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানে রত হতে পারবেন। গতশ্রী ব্যক্তির পক্ষে ইন্দ্র বা মহেন্দ্রের উদ্দেশে যাগ বিষয়ে এই বিধিই কথিত হলো (ইন্দ্রমহেন্দ্ৰয়োরৈচ্ছিকত্বং বিধত্তে) ॥৪॥

[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমেহভদয়েষ্ট্যাদয়ো বক্তব্যাঃ। অর্থাৎ–পঞ্চম অনুবাকের বক্তব্য–অভ্যুদয়-ইষ্টি]

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- নাসোমযাজী সং নয়েদনাগতং বা এতস্য পয়ো যোহসোমযাজী যদসোমষাজী সং নয়েৎ পরিমোষ এব সোহনৃতং করোত্যথো পরৈব সিচ্যতে সোমযাজ্যেব সং নয়েৎ পয়ো বৈ সোমঃ পয়ঃ সান্নাষ্যং পরসৈব পয় আত্মন্ধত্তে বি বা এতং প্রজয়া পশুভিরদ্ধায়তি বৰ্দ্ধয়ত্যস্য ভাতৃব্যং যস্য হবির্নিরুপ্তং পুরস্কাচ্চামাঃ অভদেতি ত্রেধা তণ্ডুলাম্বি ভজেদ্যে মধ্যমাঃ সুস্তানগ্নয়ে দাত্রে পুরোডাশমষ্টা কপালং কুৰ্য্যাদ্যে স্থবিষ্ঠাস্তানিন্দ্রায় প্রদাত্রে দুধংশ্চরুং যেহণিষ্ঠাস্তান্বিষ্ণবে শিপিবিষ্টায় শৃতে চরুমগ্নিরেবাস্মৈ প্রজাং প্রজনয়তি বৃদ্ধামিন্দ্রঃ প্র যচ্ছতি যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ পশবঃ শিপিৰ্যজ্ঞ এব পশু প্রতি তিষ্ঠতি ন দে যজেত যৎপূৰ্ব্বায়া সম্প্রতি যজেতোত্তরয়া ছম্ব কুৰ্য্যাদ্যদুত্তরয়া সম্প্রতি যজেত পূৰ্ব্বয়া ছট কুৰ্য্যান্বেষ্টিৰ্ভবতি ন যজ্ঞস্তদনু হ্রীতমুখ্যপগতভা জায়ত একমেব যজেত প্রগল্ভাহস্য জায়তেনাদৃত্য তদন্দ্বে এব যজেত যজ্ঞমুখমেব পূৰ্ব্বরাহলভতে যজত উত্তরয়া দেবতা এব পূর্বাহবরুদ্ধ ইন্দ্রিয়মুত্তরয়া দেবলোকমে পূৰ্ব্বরাইভিজয়তি মনুষ্যলোকমুত্তরয়া ভূয়সো যজ্ঞক্রতুনুপৈত্যেষা বৈ সুমনা নামেষ্টিমদ্যেজানং পশ্চাচ্চমা অভদেত্যস্মিবোন্মৈ লোকেহéকং ভবতি । দাক্ষায়ণ যজ্ঞেন সুবৰ্গকামো যজেত পূর্ণমাসে সং নয়েন্মৈত্রাবরুণ্যাহ মিয়াহমাবস্যায়াং যজেত পূর্ণমাসে বৈ দেবানাং সুতস্তেমেতমমাসং প্রসুতস্তেষাং মৈত্রাবরুণী বশাহমাবস্যায়ামনুবন্ধ্যা যৎ পূৰ্বের্যজতে বেদিমেব যৎ করোতি যৎসানপাকরোতি সদোহবির্ধানে এব সং মিনোতি যদ্যজতে দেবৈরেব সুত্যাং সং পাদয়তি স এতমৰ্দ্ধমাসং সধমাদং দেবৈঃ সোমং পিবতি যন্মৈত্রাবরুণ্যাহমিক্ষয়াহমাবস্যায়াং যজতে যৈবাসৌ দেবানাং শাহনুবন্ধ্যা সো এবৈষৈতস্য সাক্ষাদ্বা এয দেবানভ্যায়রাহতি য এষাং যজ্ঞ অভ্যারোহতি যথা খলু বৈ শ্রেয়ানভ্যারূঢ়ঃ কাময়তে তথা কয়রাতি যদ্যববিধ্যতি পাপীয়ান ভবতি যদি নাববিধ্যতি সদৃব্যাবৃকাম এতেন যজ্ঞেন ক্ষুরপবিহেষ যজ্ঞস্তাজ পুণ্যো বা ভবতি প্র বা, মীয়তে তস্যৈততং নামৃতং বদেশ্ন মাংসমীয়ান্ন স্রিয়মুপে আন্নস্য পঙ্গুলনেন বাসঃ পপুলয়েয়ুরেতদ্ধি দেবাঃ সৰ্ব্বং ন কুৰ্ব্বতি ॥ ৫৷

মর্মার্থ- সান্নায্য যাগের অধিকারী বিষয়ে কথিত হচ্ছে।–প্রথমে সোমযাগের অনুষ্ঠান কর্তব্য, তার পরে দর্শযাগী সান্নায্য যাগের অনুষ্ঠান করবেন; অর্থাৎ সোমযাগের পূর্বে দর্শর্যাগী সান্নায্য যাগের অনুষ্ঠান করবেন না (সোম যাগাৎ পুরা দর্শযাগী সান্নায্যং নানুতিষ্ঠেৎ)। যদি সোমগানুষ্ঠান না করে সান্নায্য যাগের অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে সেই অনুষ্ঠানকারী তস্কর (চোর) হয় ও মিথ্যাচারী বা অন্যায্যকৰ্মকারী হয়; এবং অগ্নিতে সিচ্যমান সেই সান্নায্য যাগ অন্যায্য বলে বিনাশ প্রাপ্ত হয়। অতএব সোম্যজীই (অর্থাৎ প্রথমে সোম যাগানুষ্ঠানকারী যজমানই) পরে সান্নায্য যাগ করবেন (তস্মাৎ সোম্যজ্যেব সন্নয়েৎ)। সোম ঔষধিসত্বের নিমিত্ত পয়োরূপ, সান্নায্য ও তথাবিধ; এই নিমিত্ত সোমযাগকারী যজমান সোমরূপ রসের দ্বারা সান্নায্যরূপ রস আপনাতে ধারণ করেন (আত্মনি ধারয়তি)। এ যজমানের যজ্ঞীয় হবিঃ রাত্রিকালে ফলীকৃত তণ্ডুল পর্যন্ত সম্পাদিত হয়, এবং তার পরে প্রতীক্ষমাণ চন্দ্রমা পূর্বদিকে অভদিত হয়, তবে চন্দ্রদেব এই যজমানের প্রজা (সন্তানসন্ততি) ও পশুগণের বর্ধন করেন। অতএব অভ্যুদয়ের নিমিত্ত তণ্ডুলকে সুষ্ঠুভাবে তিনভাগে বিভাজিত করতে হবে (ষ্ঠানিষ্ঠরূপৈস্ত্রিধা…বিভজেৎ)। বিভাজনের পরে মধ্যম ভাগ দাতা (দাত্রে) অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্টাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ কর্তব্য, স্থলভাগ (স্থবিষ্ঠ) প্রদাতা ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে দধির চরু প্রদান কর্তব্য এবং কনিষ্ঠভাগ শিপিবিষ্ট বিষ্ণুর উদ্দেশে রন্ধিত (শৃতু) চরু নির্বপণ কর্তব্য। অর্থাৎ দাত্রাদিগুণযুক্ত অগ্নি ইত্যাদি দেবতাগণের উদ্দেশে হবিঃ প্রদান করবে (হবিঃ কুর্যাৎ)। যজ্ঞ হলো বিষ্ণুস্বরূপ এবং পশুগণের দ্বারা যজ্ঞ প্রতিষ্ঠিত হয়। দুটি পৌর্ণমাসী ও দুটি অমাবস্যা সম্বন্ধী যাগ কর্তব্য, এই রকম উক্তি যাঁরা করেন, তাদের উত্তরস্বরূপ বলা হয়–না, দুটি করে যাগের অনুষ্ঠান বিধিসম্মত নয়; কারণ পূর্বে অনুষ্ঠিতব্য পৌৰ্ণমাসীর যাগ যদি বর্তমানে (সম্প্রতি) করা হয়, তবে সম্যকভাবে অনুষ্ঠিত পরেরটি ব্যর্থ হয়; আর যদি পরে অনুষ্ঠিতব্য যাগটি বর্তমানে (সম্পতি) করা হয়, তবে সম্যক্ অনুষ্ঠিত পূর্বেরটির বৈয়র্থ ঘটে। দুইবার অনুষ্ঠিত হলে ইষ্টি হতে পারে না, কারণ ইষ্টিতে অধিক আবৃত্তি বিহিত নয়  (ইষ্টাবধিকাবৃত্তেরবিহিতত্বাৎ); কিংবা অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞও সম্ভব নয় কারণ অধিক প্রয়োগের কারণে তাতে প্রাতঃসবন ইত্যাদি হয় না। (প্রাতঃসবনাদীনামভাবাৎ)। অতএব উভয়ভ্রষ্ট (দুইটি যাগই বিনষ্ট) হওয়ার নিমিত্ত যজমান সভার মধ্যে লজ্জিত (খ্রীতমুখী) হন। তিনি সদুত্তর দিতে পারে না, প্রগলভ অর্থাৎ অসংকোচে কথাও বলতে পারেন না। অতএব সমৃদ্ধি কামনায় আবৃত্তি পরিত্যাগ পূর্বক একটি পৌর্ণমাসী ও একটি অমাবস্যা যাগ কর্তব্য। তাহলে সেই যজমানের পুত্রও সভার মধ্যে অসংকোচে কথা বলতে সক্ষম হন (প্রগলভো জায়তে), যজমান আর কি কথা (অর্থাৎ যজমান তো প্রগম্ভ হবেই)। পূর্বপক্ষ (অর্থাৎ দুটি দুটি যাগের নির্দেশকারী পক্ষীয়গণ) এই পক্ষের (অর্থাৎ একটি করে যাগের নির্দেশকারী পক্ষীয়গণের) বাক্যকে তাচ্ছল্য (অনাদর) করে বলছেন, না, দুটি দুটি যাগই সম্পন্ন করা কর্তব্য। কারণ পূর্বের ইষ্টি সম্যক অনুষ্ঠিত হলে যজ্ঞের উপক্রম (যজ্ঞসুখরূপ) লব্ধ হয়, দেবতাগণের অবরোধ হয় ও দেবলোক জয়রূপ তিনটি প্রয়োজন সম্পাদিত হয় (প্রয়োজনত্রয়ং সম্পাদ্যতে)। পরের যাগটি অনুষ্ঠিত হলে প্রকৃত যজ্ঞের সম্পূর্তি, ইন্দ্রিয়াবরোধ (ইন্দ্রিয় সংযমের দ্বারা সামর্থ্য লাভ) ও মনুষ্যলোক জয় এই তিন প্রয়োজন সম্পাদিত হয়। তাহলে কোন একটিরও বৈরর্থ্য হয় না (নৈকস্য অপি বৈয়র্থম)। এই ক্ষেত্রে ইষ্টি ও যজ্ঞের অভাব ঘটে না, প্রত্যেকটি ইষ্টিই সমুহিতভাবে (একত্রিত হয়ে) প্রৌঢ়যজ্ঞ হয়ে ওঠে। এই অনুষ্ঠানের দ্বারা অনেক সত্ররূপ যজ্ঞ ও ক্রতু লব্ধ হয়। কিন্তু দ্বিতীয়াতে ইষ্টমন্ত (যাগানুষ্ঠাতা) যজমানের অভিলক্ষ্যে চন্দ্রমা পরে অভূদিত হয়; তাঁর এই ইষ্টিকে সুমনা নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে (তস্যেয়মিষ্টিনাম্না সুমনা ইত্যুচ্যতে)। বর্ধিষ্ণু চন্দ্রোদয় সৌমনস্যের (প্রসন্নতার) হেতুভূত। সেই নিমিত্ত এই লোকে তাঁর (অর্থাৎ যজমানের) সমৃদ্ধি বর্ধিত হয়। স্বর্গলোক প্রাপ্তির কামনায় দাক্ষায়ণ যজ্ঞের দ্বারা যাগ কর্তব্য। এই যজ্ঞের স্বরূপ সূত্রকার কর্তৃক স্পষ্টীকৃত হয়েছে। পূর্ববৎ দুটি পৌর্ণমাসী ও দুটি অমাবস্যা যাগের সাথে ইন্দ্রের উদ্দেশে দধি সমর্পণ কর্তব্য। এর দ্বারা পৌর্ণমাসীতে দেবগণের নিমিত্ত সোম অভিযুত হয়। সেই দেববর্গের পৌর্ণমাসী হতে আরম্ভ করে অমাবস্যা পর্যন্ত অর্ধমাস নিরন্তর সোম প্রকর্ষতা প্রাপ্ত হয়। এইবার অমাবস্যার পর বিহিত আমিক্ষার প্রশংসা প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে। অমাবস্যায় অনুষ্ঠিত যাগে মিত্র ও বরুণদেবের উদ্দেশে যে আমিক্ষা (দুগ্ধবিকার বা ছানা) প্রদত্ত হয়, তা দেবগণের বশানুবন্ধ্যা সম্পাদিত করে। পূর্বদিন শুক্লপ্রতিপদে যাগ করার বিধি অনুসারে বেদি নির্মাণ করা হয়ে থাকে। যে দিনে বৎসগণকে মুক্ত করার যে বিধি, সেই অনুসারে দুটি মণ্ডপ নির্মাণ করা হয়ে থাকে (সদোহর্বিধানে ঘৌ মণ্ডপৌ সম্পাদিতবান্ ভবতি)। দ্বিতীয়া তিথির প্রাতঃকালে অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল পুরোডাশ নির্বাপণের দ্বারা যেমন যাগ সম্পাদিত হয়, সেইভাবে যজমান শুক্লপক্ষের অর্ধমাসব্যাপী দেববর্গের সাথে সহর্ষে সোমপান করে থাকেন। অতঃপর অমাবস্যার দ্বিতীয়ায় মিত্রদেব ও বরুণদেবের উদ্দেশে আমিক্ষা নির্বপণের দ্বারা যাগানুষ্ঠান কর্তব্য; এই নিমিত্ত এই আমিক্ষা যজমানের বশার (বন্ধ্যাগাভীর) কার্য করে (অর্থাৎ যজমান বন্ধ্যাগাভী দানের ফল প্রাপ্ত হন)। সোমযাগের অবসানে দেবগণের নিমিত্ত যে বশার কথা বলা হয়েছে, তা হলো এই আমিক্ষা (সৈবেয়মামিক্ষেত্যর্থঃ)। যে যজমান এই বিধিবাক্যে উক্ত অগ্নি ইত্যাদি দেবগণের নিমিত্ত সম্যভাবে যজ্ঞানুষ্ঠান করেন তিনি সাক্ষাৎ সেই অগ্নি ইত্যাদি দেবগণকে প্রাপ্ত হন (অর্থাৎ বহুকাল ব্যবধানেও দেবসদৃশ ভোগ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন)। এই লোকে যেমন কোন ব্যক্তি রাজা অমাত্য ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ পদে আরূঢ় হয়ে স্বকীয় ভৃত্যগণের দ্বারা আনীত তার ভোগসাধনের উপযোগী দ্রব্য পুনঃ পুনঃ কামনা করে, সেইরকম আবৃত্তজী (পুনঃ পুনঃ যাগকারী) যজমান পুনঃ পুনঃ ফলসম্পাদন করে থাকেন। যজ্ঞে যদি অন্য কোন রকম সামান্য বৈকল্য (অঙ্গহানি) ঘটে বা করা হয়ে যায়, তাহলে সেই যজমান পাপীয়া হয় এবং অপর যজমান অপেক্ষা অতি নিকৃষ্ট হন। যদি বৈকল্য না ঘটে, তবে তাদের (অন্য যজমানের) সমান হন, কিন্তু তাঁদের অপেক্ষা অধিক হন না (ন তু তেভ্য আধিক্যলক্ষণা সিধ্যতি)। অতএব তার নিবৃত্তির নিমিত্ত (অর্থাৎ নিকৃষ্ট বা সমান না হয়ে উৎকর্ষসম্পন্ন হওয়ার নিমিত্ত) কামনাকারী হলে এই দাক্ষায়ণ যজ্ঞের দ্বারা যাগ কর্তব্য। যেহেতু এই (যস্মদেষ) ক্ষুরের ন্যায় কিংবা বজ্রের মতো অতি তীক্ষ্ণ, সেই হেতু এর সম্যক অনুষ্ঠান-জনিত (তদনুষ্ঠায়ী তাজ) পুণ্য অর্জনের দ্বারা যজমান উত্তম স্থানাধিকারী হন, এবং বৈকল্যজনিত অপুণ্য হতে মুক্ত হন (বৈকল্যং প্ৰমীয়তে বা)। বৈকল্য পরিহারের নিমিত্ত পালনীয় ব্রতবিশেষের বিধি কথিত হচ্ছে।বস্ত্রশুদ্ধি সাধনের দ্বারা যজমান আপন পরিধেয়কে শুদ্ধ করে নেবেন, ক্ষার ব্যবহার করবেন না; যেহেতু পূজ্য দেববর্গ কোন মিথ্যা কথা বলেন না, সেই হেতু যজমানও মিথ্যা কথা বলবেন না; মাংস ভক্ষণ করবেন না; স্ত্রী-সংসর্গ পরিহার করবেন ॥৫॥

[সায়ণাচার্য  বলেন–ষষ্ঠে দর্শপূর্ণমাসয়োঃ সোমযাগেন সহ পৌর্বাপর্যং বিধত্তে। অর্থাৎ–এই ষষ্ঠ অনুবাকে দর্শপূর্ণমাস যাগের সাথে সোম যাগের পৌর্বাপর্য বিধান করা হয়েছে।]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- এষ বৈ দেবরথো যদ্দর্শপূর্ণমাসৌ যো দর্শপূর্ণমাসাবিষ্টা সোমেন যজতে। রথষ্ট এবাবসানে বরে দেবানামব সাত্যেতানি বা অঙ্গাপরূংযি সম্বসরস্য যদর্শপূর্ণমাসৌ য এবং বিদ্বান্দর্শপূর্ণমাসৌ যজতেইঙ্গাপরূংয্যেব সম্বৎসরস্য প্রতি দত্যেতে বৈ সম্বৎসরস্য চক্ষুষী যদর্শপূর্ণমাসৌ য এবম বিদ্বান্দর্শ পূর্ণমাসৌ যজতে ভ্যামের সুবর্গং লোকমনু পশ্যতি। এষা বৈ দেবানাংবিক্ৰান্তিপূর্ণমাসৌ য এবং বিদ্বান্দর্শপূর্ণমাসৌ যজতে দেনামেব বিক্রান্তিমনু বি ক্রমত, এষ বৈ দেবযানঃ পন্থা যদ্দর্শপূর্ণমাসৌ য এবং বিদ্বান্দপূর্ণমাসৌ যজতে য এব দেবযানঃ পন্থাস্তং সমারোহত্যেতৌ বৈ দেবানাং হরী যদ্দর্শপূর্ণমাসৌ য এবং বিদ্বান্দর্শপূর্ণমাসৌ যজতে যাবে দেবানাং হরীতাভ্যাম এবৈভ্যো হব্যাং বহত্যেতদ্বৈ দেবানামাস্যং যদর্শপূর্ণমাসৌ য এবং বিদ্বান্দপূর্ণমাসৌ যজতে সাক্ষাদেব দেবানামাস্যৈ জুহোত্যেষ বৈ হবির্ধানী যো দর্শপূর্ণমাসযাজী সায়তরগ্নিহোত্রং জুহোতি যজতে দর্শপূর্ণমাসাবহরবহবিৰ্দ্ধানিনাং সুতো য এবং বিদ্বান্দর্শপূর্ণমাসৌ যজতে হবিৰ্দ্ধান্যস্ফীতি সর্বমেবাস্য বহিষ্যং দত্তং ভবতি দেবা বা অহঃ যজ্ঞিয়ং নাবিন্তে দর্শপূর্ণমাসাবপুনন্তৌ বা এতৌ পুতৌ মেধ্যৌ যদ্দর্শপূর্ণমাসৌ য। এবং বিদ্বান্দর্শপূর্ণমাসৌ যজতে পূতাবেবৈনৌ মেধ্যৌ যজতে নামাবাস্যায়াং চ পৌর্ণমাস্যাং চ স্ক্রিয়মুপেয়াদ্যদুপেয়ান্নিরিন্দ্রিয়ঃ স্যাৎ সোমস্য বৈ রাজ্ঞোহৰ্দ্ধমাসস্য রায়ঃ পত্নয় আসন্তাসামমাবস্যাং চ পৌর্ণমাসীং চ নোপৈৎ তে এমভি মনহ্যেতাং তং যক্ষ্ম আচ্ছদ্রাজানং যক্ষ্ম আরদিতি তদ্রাজস্য জন্ম যৎ পাপীয়ানভবৎ পাপবক্ষ্মস্য যজ্জায়াভ্যামবিত্তজ্জায়েন্যস্য য এতমেতেষাং যক্ষ্মাণাং জন্ম বেদ দৈনমেতে যক্ষ্মা বিন্দন্তি স তে এব নমস্যপাধাবত্তে অব্ৰুতাং বরং বৃণাবহা আবং দেবানাং ভাগধে অসাব। আবদধি দেবা ইজ্যান্তা ইতি তস্মাৎ সদৃশীনাং রাত্রীণামমাবস্যায়াং চ পৌর্ণমাস্যাং চ দেবা ইজ্যন্ত এতে হি দেবানাং ভাগধে ভাগধা অম্মৈ মনুষ্যা ভবন্তি য এবং বেদ ভূতানি ক্ষুধমগ্নৎ সদ্যো মনুষ্যা অর্ধমাসে দেবা মাসি পিতরঃ সংবৎসরে বনস্পতয়স্তম্মাদহরহর্মনুষ্যা অশনমিচ্ছন্তের্ধমাসে দেবা ইজ্যন্তে মাসি পিতৃভঃ ক্ৰিয়তে সম্বৎসরে বনস্পতয়ঃ ফলং গৃহুন্তি য এবং বেদ হন্তি ক্ষুধং ভাতৃব্যম্ ॥৬৷৷

মর্মার্থ- দর্শপূর্ণমাস হলো দেবগণের রথসদৃশ (দেবানাং রথসদৃশঃ)। এই নিমিত্ত প্রথমতঃ দর্শপূর্ণমাস যাগ সম্পন্ন করে সোমযাগের অনুষ্ঠানে মহৎ সৌকর্য অর্থাৎ সুবিধা হয়ে থাকে। যেমন লোকে রথ সঞ্চরণের দ্বারা মহামার্গের (প্রশস্ত পথের) কণ্টক পাষাণ ইত্যাদি চূর্ণ হওয়ায় গ্রামের পথে বিচরণ সুখসাধ্য হয়, অর্থাৎ কন্টক ইত্যাদি না থাকায় মনুষ্যগণ অনায়াসে গমনাগমন করতে পারে, তেমনই দেবগণ-সম্বন্ধি দর্শপূর্ণমাসরূপ রথের দ্বারা সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ (বাধাহীন) পথে যজমান সুখে (বা সহজে) সোমের দ্বারা যাগ সম্পন্ন করতে পারেন। দর্শপূর্ণমাস হলো সম্বৎসরের অঙ্গস্বরূপ। মনুষ্যের যেমন হস্ত, পদ ইত্যাদি অঙ্গ (বা প্রত্যঙ্গ) ও মণিবন্ধ, কনুইয়ের জোড়, কক্ষ (বগল, ঝাঁকাল) ইত্যাদি দেহসন্ধিস্থলরূপ পর্বসমুহ থাকে, সেইরকম সম্বৎসরের দ্বাদশটি অঙ্গ অর্থাৎ দ্বাদশটি পৌর্ণমাসী (পূর্ণিমা) হলো পর্বসদৃশ। এই কথা বিদিত হয়ে দর্শপূর্ণমাসের যাগানুষ্ঠান করলে তার উভয়তঃ যাগের সম অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে (তদুভয়ং সম্যগনুষ্ঠাপয়তি)। দর্শ ও পূর্ণমাস হলো সম্বৎসরের দুটি চক্ষুস্বরূপ, এই কথা জ্ঞাত হয়ে যিনি যুগানুষ্ঠান করেন, তিনি স্বর্গলোক দর্শন করে থাকেন (সুবর্গং লোকমনু পশ্যতি)। এই হলো দেবগণের বিক্রমস্বরূপ, এই কথা বিদিত হয়ে যিনি দর্শপূর্ণমাসের যাগানুষ্ঠান করেন তিনি দেবগণসদৃশ পরাক্রম প্রাপ্ত হন। এই হলো স্বৰ্গমার্গ অর্থাৎ দেবানের পথ, এই পথ বিজ্ঞাত হয়ে যিনি দর্শপূর্ণমাস যাগের অনুষ্ঠান করেন, তিনি দেবযান-পথে অর্থাৎ দেবতাগণের গমনাগমনের পথে সম্যক রূপে আরূঢ় হতে পারেন। এই হলো দেবতাগণের অশ্বস্বরূপ, এই কথা জ্ঞাত হয়ে যে যজমান দর্শপূর্ণমাসের যাগানুষ্ঠান করেন, তিনি অগ্নি ইত্যাদি দেবগণের উদ্দেশে যজ্ঞের পুরোডাশ বহন করে থাকেন। এই হলো দেবগণের (আহার গ্রহণের) মুখস্বরূপ, এই কথা জ্ঞাত হয়ে যিনি দর্শপূর্ণমাস যাগের অনুষ্ঠান করেন, তিনি সাক্ষাৎ ব্রাহ্মণগণের হস্ত দ্বারা প্রদত্ত হবিঃ দেবগণের মুখ প্রদান করে থাকেন। যে যজ্ঞমণ্ডপে সোমগ্রহরূপ হবিঃ রক্ষিত হয়, তার নাম হবিধান, তা যাঁর আছে তিনি হলেন হবির্ধানী বা সোমযাজী (তদস্যাস্তীতি হবির্ধানী সোমযাজী)। দর্শপূর্ণমাসের যাগগারী যজমান সোমযাজীর স্বরূপ বলা হয়ে থাকে;-কারণ এই যুগে আধানের পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় ও প্রাতে অগ্নিহোত্র যুগানুষ্ঠান হয়ে থাকে এবং পর্বে পর্বে অর্থাৎ অমাবস্যায় ও পূর্ণিমাতে দর্শ ও পূর্ণমাস যাগ দুটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই উভয় যাগেই সোমদেবের নিমিত্ত প্রতিদিন সোম অভিযুত হয় (সোমদেবানাং প্রতিদিনং সোমোহভিযুতো ভবতি)। সোমের অভিষবণে (সোমপানে) দেবগণের যে প্রীতি, তা এস্থলে (অত্র) সম্পাদিত হয়। এইরকম যে যজমান দেবগণের ভবিষ্যৎ সোমযাগ বিষয়ে প্রীতির কথা জ্ঞাত হয়ে আমি সোমযাজী হবো এই বুদ্ধিতে (বুদ্ধা) দর্শপূর্ণমাস যাগের অনুষ্ঠান করেন, তাঁর সোমযাগে বহিতে দাঁতব্য যা যা করণীয় থাকে, তার সবই প্রদত্ত হয়ে যায় (দত্তং ভবতি)। দৰ্শ ও পূর্ণমাস যাগ তিথির দ্বারা বিচার্য, কর্মের দ্বারা নয়। দেবগণের দ্বারা দৰ্শ (অমাবস্যা) ও পূর্ণমাস (পূর্ণিমা) তিথি দুটির শুদ্ধিকরণ হয়েছে, এই কথা বিচার করে যে যজমান এই দুটির অনুষ্ঠান করেন, যাগানুষ্ঠানের যোগ্য, তিথি বিশেষের দ্বারা তিনি শোধিত হয়ে চরিতার্থতা লাভ করেন। প্রসঙ্গক্রমে পুরুষার্থ লাভের বিষয়ে কিছু বিধি উক্ত হচ্ছে।–অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় স্ত্রী-সহবাস অকর্তব্য, অন্যথায় (অর্থাৎ স্ত্রী-সহবাস করলে) ইন্দ্রিয়সামর্থ্য বিনষ্ট হবে। এর প্রমাণস্বরূপ পৌরাণিক আখ্যায়িকায় দেখান হয়েছে–রাজা সোম অতিরিক্ত স্ত্রী-সঙ্গমের নিমিত্ত যেমন পাপযক্ষ্মা-রোগে আগ্রস্ত হয়েছিলেন, তেমনই অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় স্ত্রী-সঙ্গমকারী ব্যক্তির পরিণতি হয়। (২য় কাণ্ডের ৩য় প্রপাঠকে ষষ্ঠ অনুবাকে প্রজাপতয়েস্ত্রয়স্ত্রিংশদুহিতর ইত্যাদি মন্ত্রে এই আখ্যায়িকার মর্মার্থ দ্রষ্টব্য)। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা–দুটি তিথিই দেবগণের ভাগ, সুতরাং এই দুই তিথিতেই দেবগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান কর্তব্য। এই কথা যে মনুষ্য জ্ঞাত হন, তিনি সকল ভাগই (যজ্ঞফল) প্রাপ্ত হন (মনুষ্যা সর্বেহবি ভাগং ধারায়ত্ব প্রথচ্ছন্তি)। মনুষ্য ইত্যাদি প্রাণিবর্গ প্রতি দিবসে ক্ষুধার নিবৃত্তি সাধিত করেন, দেবগণ ক্ষুধার নিবৃত্তি সাধিত করেন অর্ধ মাসে, পিতৃগণ ক্ষুধার নিবৃত্তি সাধিত করেন এক মাসে এবং বনস্পতিগণ ক্ষুধার নিবৃত্তি সাধিত করে একটি সম্বৎসরে। বনস্পতিগণের ক্ষুধা-নিবৃত্তি হলো তাদের ফলধারণ (বনস্পতয়ঃ ফলং গৃহুতি)। যিনি এই কথা বিদিত হন, তিনি অন্নের দ্বারা সমৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষুধারূপ শত্রুকে বিনাশ করে থাকেন (য এবং বেদ হন্তি ক্ষুধং ভ্রাতৃব্যম) ॥৬৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–অথোত্তরৈরনুবাকৈহোত্রং বিবক্ষুরস্মিন্সপ্তমেহনুবাকে তদনন্তরভাব্যষ্টমে চ সামিধেনীমা ব্যাখ্যায়ন্তে। অর্থাৎ–এই সপ্তম অনুবাকে সামিধেনী মন্ত্রের কতকগুলি ব্যাখ্যাত হয়েছে]

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- দেবা বৈ নর্চি ন যজুষ্যশ্রয়ন্ত তে সামন্নেবাশ্রয়ন্ত হিং করোতি সামৈবাকহিং করোতি যত্রৈব দেবা অশ্রয়ন্ত তত এবৈনা প্র যুঙক্তে হিং করোতি বাচ এবৈষ যোগো হিং করোতি প্রজা এব ত্যজমানঃ সৃজতে। ত্রিঃ প্রথমামাহ ত্রিরুত্তমাং যজ্ঞস্যৈব তদ্বসম নহ্যত্যপ্রস্রংসায় সন্ততমন্বাহ প্রাণানামন্নাদ্যস্য সন্তত্যা অথো রক্ষসামপহত্যৈ রাথন্তরীং প্রথমামম্বাহ রাথরো বা অয়ং লোক ইমমেব লোকমভি জয়তি ত্রি গতি ত্ৰয় ইমে লোকা ইমানেব নোকানভি জয়তি বাহঁতীমুত্তমমন্বাহ বাহঁততা বা অসৌ লোকোহমুমেব লোকমভি জয়তি বঃ রাজা ইত্যনিরুক্তাং প্রাজাপত্যামহ যজ্ঞো বৈ প্রজাপতির্যজ্ঞমেব প্রজাপতিমারভতে প্ৰ বো বাজা ইত্যম্বাহান্নং বৈ বাজোহন্নমেবাব রুন্ধে প্ৰ বো বাজা ইত্যহ তস্মাৎ প্রাচীনং রেলতা ধীয়তেইগ্ন আ যাহি বীতয় ইত্যাহ তস্মাৎ প্রতীচীঃ প্রজা জায়ন্তে প্ৰ বো বাজাঃ ইত্যহ মাসা বৈ বাজা অৰ্দমাসা অভিদ্যবো দেবা হবিষ্মন্তো গৌঘৃতাচী যজ্ঞো দেবাঞ্জিগাতি যজমানঃ সুয়ুরিদমসীদমসীত্যেব যজ্ঞস্য প্রিয়ং ধামাব রুন্ধে যং কাময়েত সৰ্বমায়ুরিয়াদিতি প্ৰ বো বাজা ইতি তস্যাচ্যাগ্ন আ যাহি বীতয় ইতি সন্ততমুত্তরমৰ্ধৰ্চমা সভেত প্রাণেনৈস্যা পানং দাধার সৰ্বমারুরেতি যযা বা অরত্নিং সামিধেনীনাং বেদারত্নাবে ভ্রাতৃব্যম কুরুতেহর্দ্বচ্চে সং দধাত্যেষ বা অরত্নিঃ সামিধেনীনাং য এবং বেদারত্নবেব ভ্রাতৃব্যং কুরুত ঋষেঋযেৰ্বা এতা নিৰ্মিতা যৎ সামিধেন্যস্তা যদসংযুক্তাঃ সঃ প্ৰজয়া পশুভির্যজমানস্য বি তিষ্ঠেরন্নৰ্দ্ধচ্চে সং দধাতি সং যুনক্ত্যেবৈনাস্তা অম্মৈ সংযুক্তা অবরুদ্ধাঃ সৰ্বামাশিষং দুহ্রে ॥৭॥

মর্মার্থ- দেবতাগণ পূর্বকালে ঋক্‌-মন্ত্রে কিংবা যজুর্মন্ত্রের দ্বারা তুষ্ট হতে পারেননি; কিন্তু সামমন্ত্রে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন (কিংতু সামনেব সন্তুষ্টাঃ)। অতঃপর হিং-শব্দ উচ্চরিত হলে সামের দ্বারা তাঁরা কৃতকৃত্য হন (কৃতং ভবতি)। হিং-শব্দে সামমন্ত্র বিদ্যমান থাকে। সামের দ্বারা দেবগণ তুষ্ট হন অর্থাৎ আশ্রিত হন বলে হোতা হিং-শব্দ উচ্চারণ পূর্বক তাদের সন্তোষ সাধিত করে। এই হিং-শব্দ প্রথম উচ্চারণের দ্বারা সাম চরিতার্থতা লাভ করে, দ্বিতীয়বার উচ্চারণের দ্বারা সামের আশ্রয়ভূত ঋরূপ বাক্যের সম্বন্ধ সম্পাদিত হয়, তৃতীয়বার উচ্চারণের দ্বারা যজমান প্রজা (সন্তান-সন্ততি) সৃষ্টি করে থাকেন। লোকে ধান্য ইত্যাদি বন্ধনের নিমিত্ত যেমন কম্বল বা বস্ত্রের দুটি অংশ (দুই প্রান্ত) বন্ধন করে নেয়, সেইরকম ভাবেই প্রথম উত্তম হিং-শব্দের তিনবার অভ্যাসের (উচ্চারণের দ্বারা) যজ্ঞের অন্তভাগের বন্ধন করা হয় অর্থাৎ যজ্ঞকে বিচ্যুতি-রহিত করা হয় (স্বংসনরাহিত্যায় ভবতি)। এইরকম নিরন্তর ভাবে উচ্চারণের ফলস্বরূপ যজমানের প্রাণ ও ভোজ্যসামগ্রীর নিরন্তর যোগান সম্পাদিত হয়ে থাকে, এমন কি রাক্ষসগণ শাসনিরোধ হয়ে অপহত (মৃত্যুপ্রাপ্ত) হয়ে যায়। প্রথমে রাথন্তর সাম-গান করা হয়ে থাকে; এর ফলে লোকে এই লোক (ভুবন) জয় করতে পারেন। কোনও সামশাখাবিশেষে প্র বো বাজাঃ এই ঋমন্ত্র গীত হলে তাকে রাথন্তরী বলে। তৃতীয় সামধেনীর প্রথম পাদ উচ্চারণ একবার সকৃৎ (যার অর্থে এক শব্দের পরে স প্রত্যয় করে নিপাতনে সিদ্ধ) বিগ্রহ প্রদান করতে হয়; অর্ধ ঋক্‌ উচ্চারণ করে দ্বিতীয় বিগ্রহ প্রদান করতে হয় এবং তারপর উত্তরার্ধে উপরিতন মন্ত্রের পূর্বার্ধ সংযোজিত পূর্বক তৃতীয় বিগ্রহ প্রদানকার্য সম্পন্ন করতে হয়। এর দ্বারা অর্থাৎ এই তিন বিগ্রহের দ্বারা স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করা যায় (এতেন বিগ্রহত্রয়েণ লোকত্রয়োজয়ো ভবতি)। যে ঋকে বৃহৎ যবিষ্ট–এইরকম শব্দ শায়মাণ হয়, তাকে বাহঁতী বলে; তৃতীয়ে কৃত এই মন্ত্র প্রথম ও মধ্যম অপেক্ষা উত্তম; এই মন্ত্রের দ্বারা স্বর্গলোক জয় করা যায় এবং এই মন্ত্রের দ্বারা সাধিত হয় বলে স্বর্গলোকের বাহতত্ব অর্থাৎ স্বর্গলোক বাহঁত নামে অভিহিত (স্বর্গলোকস্য বাহঁতত্ব)। কোনও দেববিশেষের বিশেষ নাম যেস্থানে উক্ত হয়নি, সেই ঋকে অনিরুক্তা বলা হয় (সেয়মনিরুক্তা)। সৃষ্টির প্রাক্কালে রূপবিশেষের অভাবজনিত কারণে প্রজাপতিও অনিরুক্ত নামে অবিহিত ছিলেন (প্রাগরূপবিশেষা ভাবাদানিরুক্তঃ)। অতএব এইটি (এই ঋক) প্রাজাপত্য। প্রজাপতির দ্বারা সৃষ্টত্বের কারণে যজ্ঞকে প্রজাপতির স্বরূপ বলা হয়। সেই নিমিত্ত প্রথমে প্রজাপতি-সম্পর্কিত মন্ত্র পাঠের দ্বারা যজ্ঞরূপ-সদৃশ প্রজাপতির (প্রাজাপত্য-যজ্ঞের) আরম্ভ করা হয়। প্র বো বাজা মন্ত্রের প্র শব্দ উচ্চারণের দ্বারা তথাবিধ প্রাচীন রেতঃ গর্ভাশয়ে স্থাপিত হয়; বাজ শব্দ উচ্চারণের দ্বারা অনুপ্রাপ্তি ঘটে। অগ্ন আ যাহি বীতয় অর্থাৎ হে অগ্নিদেব! আপনি এই স্থানে আগমন করুন ইত্যাদি মন্ত্রের উচ্চারণের দ্বারা পশ্চিমামুখ সদৃশ (অর্থাৎ সূর্যাস্তকালে সন্ধ্যাবন্ধনাপরায়ণ) প্রজা (সন্তান-সন্ততি) লাভ করা যায়। এই মন্ত্রে যায় (গচ্ছন্তি) ক্ৰমের দ্বারা প্রবর্তন হয়, বাজ শব্দে চৈত্র ইত্যাদি মাসকে বোঝানো হয়। এই ব্রাহ্মণবাক্যের (বা মন্ত্রের) দ্বারা যজমান সুখকামী হয়ে থাকেন। হে অগ্নে! ত্বমিদং…. অর্থাৎ হে অগ্নিদেব! আপনি মাস-স্বরূপ (মাসানাং স্বরূপমসি), আপনি অধর্মাস-স্বরূপ, আপনি দেব-স্বরূপ- এই মন্ত্রের তাৎপর্যের দ্বারা যজ্ঞের প্রিয় ধাম অর্থাৎ আহুতি-স্থানে প্রজ্বলন্ত অগ্নির স্বরূপ সম্পাদিত হয়। যে যজমানকে উদ্দেশ্যে করে হোতা কামনা করেন যে, এই যজমান মৃত্যরহিত হয়ে সর্ব-আয়ু প্রাপ্ত হোন, সেই যজমানের আয়ুপ্রাপ্তির নিমিত্ত প্রথমে সামিধেনী মন্ত্র অবিচ্ছেদে উচ্চারণ কর্তব্য; অতঃপর উত্তর-মন্ত্রের প্রথম অর্ধ ঋক উচ্চারণ করতে হয় (প্রথমমধুচমুপক্ৰমেত)। এতে সেই যজমানের বাহিরে নির্গমন-প্রয়াসী প্ৰাণবায়ুর সাথে অপানবায়ুকে পুনরায় গমন-প্রয়াস হতে ধারণ বা নিবৃত্ত করা হয়। সেই ধারণের দ্বারা যজমান সকল আয়ু প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। উভয় সামধেনীর মধ্যে কনুই হতে কনিষ্ঠ অঙ্গুলি পর্যন্ত প্রসারিত অরত্নি নামক হস্তভাগের ন্যায় অবিচ্ছেদ ভাব থাকে। যে হোতা এই অবিচ্ছিন্নতার কথা জ্ঞাত হয়ে অনুষ্ঠান করেন, তিনি শত্রুকে যজমানের ঐ অরঙ্গির মধ্যে স্থাপন করতে পারেন। যে ঋষি চক্ষু কর্ণ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ের অগোচর সামগ্রীকে দর্শন করতে সক্ষম, তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহে একটি সামিধেনী মন্ত্র দর্শন করে তার সম্প্রদায় পরম্পরায় রচিত করে দেন (নির্মিতবা)। এই ভাবে ভিন্ন ভিন্ন ঋষিগণের দ্বারা প্রবাৰ্তিত সামিধেনী মন্ত্র অসংযুক্তা হওয়ার কারণে যজমানের প্রজা (সন্তান-সন্ততি) ও পশু এর দ্বারা যুক্ত হয় না, অর্থাৎ প্রজা ও পশুর সমৃদ্ধি ঘটে না। এর পরিহার কল্পে পূর্বের সামিধেনীর সাথে উত্তর-অর্ধের এবং উত্তর সামিধেনীর সাথে পূর্ববর্তী সামিধেনীর অর্ধের যোগ স্থাপন করতে হয়। এইরকম ভাবে সংযুক্ত সামিধৈনীর মন্ত্রসমূহ যজমানের সকল শুভ-কামনার পূর্তি সম্পাদিত করে থাকে ॥৭॥

[এই অনুবাকে সামিধেনীর অবশিষ্ট মন্ত্রগুলির ব্যাখ্যা করা হয়েছে]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- অযজ্ঞো বা এষ যোহমাহগ্ন যহি বীতয় ইত্যাহ রথস্তস্যৈষ বর্ণন্তং ত্ব সমিদ্ভিঙ্গির ইত্যাহ বামদেব্যস্যৈষ বর্ণো বৃহদগ্নে সুবীৰ্য্যমিত্যাহ বৃহত এষ বর্ণো যদেতং তৃচমম্বাহ যজ্ঞমের তৎ সামন্বন্তং করোত্যগ্নিরমুষ্মিল্লোঁক আশীদাদিত্যোহস্মিন্তাবিমৌ লোকাবশান্তৌ আস্তাং তে দেবা অব্ৰুবন্নেতেমৌ বি পৰ্যহামেত্যগ্ন আ যাহি বীতয় ইত্যস্মিল্লোঁকেহগ্নিমধুবৃহদগ্নে সুবীৰ্যমিত্য মুস্মিল্লোঁক আদিত্যং তততা বা ইমৌ লোকাবশাম্যতাং যদেবমম্বাহানয়ো লোকয়োঃ শাস্ত্যৈ শাম্যতোহম্মা ইমৌ লোকৌ য এবং বেদ পঞ্চদশ সামিধেনীরাহ পঞ্চদশ বা অৰ্দ্ধমাসস্য রায়োহৰ্দ্ধমাসশঃ সম্বৎসর আপ্যতে তাসাং ব্রীণি চ শতানি যষ্টিশ্চাক্ষরাণি তাবতীঃ সম্বৎসরস্য রাত্ৰয়োহরশ এব সম্বৎসরমাপ্নোতি নৃমেধশ্চ পরুচ্ছপশ্চ ব্ৰহ্মবাদ্যমবদেতামস্মিন্দারাবাদ্ৰেগিং জনয়ার যতররা নৌ ব্ৰহ্মীয়ানিতি নৃমেঘোহভ্যবদৎ স ধূমমজনয়ৎ পরুচ্ছে পোহভ্যবদৎ সোহগ্নিমজনয়দৃষ ইত্যব্রবীৎ যৎ সমাবদ্বিদ্ব কথা ত্বমগ্রিমজীজনো নাহমিতি সামিধেনীনামেৰাহং বর্ণং বেদেত্যব্রবীদ যমৃতবৎ পদমনুচ্যতে স আসাং বর্ণস্তং ত্বা সমিত্তিরঙিগির ইত্যাহ সামিধেনীষেব তজ্জ্যোতির্জনয়তি স্ত্রিয়স্তেন যদৃচঃ স্ত্রিয়স্তেন যুগাত্রিয়ঃ স্ত্রিয়স্তেন যৎসামিথেন্যো বৃষন্বতীমাহ তেন পুংস্বতীস্তেন সেন্দ্রান্তে মিথুনা অগ্নিৰ্দেবানাং দূত আসীদুশনা কাব্যোহসুরাণাং তৌ প্রজাপতি প্রশ্নমৈত্যং স প্রজাপতিরগ্নিং দূতং বৃণীমহ ইত্যভি পৰ্য্যাবৰ্ত্তত ততো দেবা অভবন পরাহসুরা ষস্যৈবং বিদুষোহল্পিং দূতং বৃণীমহ ইত্যহ ভবত্যাত্মনা পৰ্বহস্য ভ্রাতৃব্যো ভবত্যধ্বরবতীমাহ ভ্রাতৃব্য মেবৈতয়া ধ্বরতি শশাচিঙ্কেশত্তমীমহ ইত্যাহ পবিত্ৰমেবৈভদ যজমানমেবৈতয়া পবয়তি সমিছদা অগ্ন আহুতেতাহ পরিধিমেবৈতং পরি দত্যন্দায় যত উৰ্দ্ধমভ্যাদধ্যাদ্যথা বহিঃপরিধি স্কন্দতি তাদৃগে তত্রয়ো অগ্নয়ে হ্যবাহনে দেবানাং কব্যবাহনঃ পিতৃণাং সহরক্ষা অসুরাণাং ত এতা শংসন্তে মাং বরিষ্যতে মা ইতি ঘৃণীধ্বং হ্যবাহনমিত্যাহ য এব দেবানাং তং বৃণীত আর্ষেয়ং বৃণীতে বন্ধোরের নৈত্যথো সন্তত্যৈ পরস্তাদৰ্ব্বাচো বৃণীতে তৎ পরস্তাদৰ্ব্বাঞ্চো মনুষ্যা পিতরোহনু প্র পিপতে ॥৮৷৷

মর্মার্থ– সামিধেনী মন্ত্রের প্রথমটি পূর্বের অনুবাকে ব্যাখ্যাত হয়েছে। এইবার, এই অনুবাকে, অবশিষ্ট সামিধেনী মন্ত্রগুলি ব্যাখ্যাত হচ্ছে। সামিধেনী মন্ত্রের দ্বিতীয়টি হলো–হে অগ্নে হব্যদাতয়ে….অর্থাৎ হে অগ্নিদেব! যজমানের হবিঃ দানের নিমিত্ত, দেববর্গের দ্বারা হবিঃ ভক্ষণের নিমিত্ত–যজমান দেবগণকে হবিঃ দান করবেন, আপনারা তা ভক্ষণ করুন–এই রকম কথা ঘোষণা করতে করতে আপনি আগমন করুন এবং আগমনের পর আপনি হোতা বা আহ্বাতা হয়ে এই যজ্ঞে দীপ্যমান হয়ে উপবেশন করুন। তৃতীয় সামধেনী মন্ত্রটিতে বলা হচ্ছে–হেহঙ্গিবোহগ্নে তং… অর্থাৎ হে সমিধের দ্বারা প্রজ্বলিতাঙ্গধারী অগ্নিদেব! আমরা সেইভাবেই দেবগণের আহ্বতা আপনাকে সমিধ ও ঘৃতের দ্বারা বর্ধিত করছি। হে যুবতম অগ্নি! জ্বালামালায় যেমন দীপ্তির আধিক্য দেখা যায়, আপনি তেমনই দীপ্যমান হোন। চতুর্থ সামিধেনী মন্ত্র হলো–হে অগ্নে দেব স ত্বং…. অর্থাৎ হে দেব অগ্নি! আপনি আমাদের নিমিত্ত দেবগণের উদ্দেশে বিস্তীর্ণ শ্রবণযোগ্য কর্ম-ইচ্ছার অভিমুখে বৃহৎ (জ্বলাধিক্য) ও সুবীর্য (হয়মান হবিঃকে সম্যকভাবে দহন-সমর্থ) হয়ে বিভাত হোন অর্থাৎ প্রকাশিত হোন। পঞ্চম সামিধেনী মন্ত্রের পাঠ–এই অগ্নি সম্যভাবে দীপ্ত হচ্ছেন; তিনি স্তুতির যোগ্য, তিনি নমস্কারের যোগ্য, তিনি অন্ধকারকে তিরস্কৃত বা বিদূরিত করে সকল পদার্থকে দর্শনকার ও সকল কামনার বর্ষণকারী হয়ে থাকেন। ষষ্ঠ সামিধেনী মন্ত্রের পাঠে আছে-অয়মগ্নিঃ সম্যগিধ্যতে.. অর্থাৎ এই অগ্নি সম্যভাবে দীপ্যমান হচ্ছেন। কীরকম অগ্নি? যে অগ্নি কামনাসমূহের বর্ষক, দেবগণের বাহনস্বরূপ অশ্বের ন্যায় দেবগণের উদ্দেশে নিবেদিত হবিঃর বাহক। এমনই এই অগ্নিকে হবিষ্মন্ত (হবিঃ প্রদানকারী) যজমানগণ স্তুতি করে থাকেন। সপ্তম সামিধেনী মন্ত্রের বক্তব্য–হে বৃষন্ কামানাং বর্ষকাগ্নে… অর্থাৎ হে কামবৰ্ষক অগ্নি! আমাদের সকল আকাঙ্ক্ষার বর্ষণকারী বা পূরণকারী আপনাকে আমরা আহুতিরূপ বৃষ্টির দ্বারা সাম্যভাবে প্রকাশ করব। কীরকম ভাবে আপনার সেই প্রকাশ ঘটবে? না, প্রভূত জ্বালাবিশিষ্ট হয়ে (প্রজ্বলন্ত সামগ্রীর আলোক-দানের ন্যায়) দীপ্যামান হোন। সামিধেনীর অষ্টম মন্ত্রের পাঠ–অগ্নিং দুতং বৃণীমহে… অর্থাৎ এই অগ্নিকে আমরা প্রার্থনা করছি। কীরকম অগ্নি? যিনি দেবগণের দূত, দেবগণের আহ্বানকারী, সর্ব দেববর্গের বিজ্ঞাতা, এবং এই যজ্ঞ-সম্বন্ধি শোভনকর্মা (সুক্ৰতুং)। নবম সামধেনী মন্ত্রের পাঠসামিধ্যমানো অধ্বরে… অর্থাৎ যে অগ্নি এই কর্মে (যজ্ঞে) সমিদ্ধমান অর্থাৎ দীপ্তিমান শুদ্ধিহেতু পাবক (অর্থাৎ পবিত্র), স্তবের যোগ্য, সেই দীপ্ত বা প্রজ্বলিত শিখাধারী অর্থাৎ শোচিষ্কেশ (শিখাযুক্ত কেশস্থানীয়) অগ্নিদেবতার (কৃপাপ্রাপ্তির নিমিত্ত) আমরা প্রার্থনা করছি। দশম সামিধেনী মন্ত্র হলো–সমিদ্ধো অগ্ন আহুত… অর্থাৎ হে আহুতির দ্বারা আহুত বা আরধিত অগ্নিদেব! আপনি দীপ্তিমান হয়ে দেববর্গের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করুন। হে সুষ্ঠু যাগ-নিপাদনকারী, আপনি হব্যবাহক হয়ে যাগ করুন (যজেত্যন্বয়ঃ)। একাদশ সামিধেনীর পাঠ–হে যজমানা… অর্থাৎ হে যজমানগণ! আপনারা আহুতির দ্বারা এই অগ্নিদেবতাকে প্রীত করুন, প্রযত্নের সাথে এঁর পরিচর‍্যা করুন। এই অধ্বরে (যাগে) বর্তমান হব্যবাহক অগ্নির (কৃপা) প্রার্থনা করুন। এই মন্ত্র সামধেনীর পরিসমাপ্যমানত্বের নিমিত্ত পরিধানীয়া নামে অভিহিত। এ ছাড়া পুরুষভেদেও অন্য পরিধানীয়া বিকল্পিত হয়ে থাকে। এর বিকল্প মন্ত্র হলো–হে অগ্নিদেব! আপনি অনিষ্টের নিবারণ কারক (নিবারক) হওয়ার নিমিত্ত বরুণ নামে এবং ইষ্টের প্রাপণ-কারক (প্রাপক) হওয়ার নিমিত্ত মিত্র নামে অভিহিত। আমরা বশিষ্ঠগোত্রীয়গণ আপনাকে স্তুতির দ্বারা বর্ধন করছি (বর্ধয়ন্তি স্বাম)। আপনাতে ধন ও সুষ্ঠুভাবে দাঁতব্য হবিঃ অবস্থিতি করুক। আপনারা আমাদের মঙ্গলের সাথে সর্বদা রক্ষা করুন।–দর্শপূর্ণমাসে সাম না থাকার নিমিত্ত এটি মুখ্যষজ্ঞরহিত অর্থাৎ প্রধান যোগ্যরূপে গণ্য হয় না। তথাপি (অতোহয়ং) সাম-তিনটির স্বরূপ এই স্তুতি পাঠের দ্বারা দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞ সামবন্ত হয়। পুরাকালে স্বর্গলোকে অগ্নিদেব এবং ভূলোকে আদিত্যদেব অবস্থিত ছিলেন। তখন ঐ দুই লোক অশান্ত ও ক্ষুদ্ধ ছিল। স্বর্গে দেবগণের পাকের কোন প্রয়োজন ছিল না, তাদের প্রয়োজন ছিল কেবল প্রকাশের (প্রকাশায়)। কিন্তু ভূলোকবাসীগণের মুখ্য প্রয়োজন ছিল পাকের। এই নিমিত্তই ছিল উভয় লোকবাসীদের ক্ষোভ। এই ক্ষোভ দর্শন করে দেবতাগণ পরস্পর এমন বললেন,অগ্নি ও আদিত্যঘটিত এই বিপর্যয়ের পরিবর্তন সাধিত করব। এই নিমিত্তই অগ্ন আয়াহী… অর্থাৎ হে অগ্নিদেব! আপনি আগমন করুন, এই বৰ্হিতে (যজ্ঞে) উপবেশন করুন– ইত্যাদি ঋমন্ত্রে প্রথম লোকে অর্থাৎ আদিত্যের প্রকাশক উপরিলোকে স্থাপন-কর্ম সম্পাদিত করা হলো। এইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঋমন্ত্রের উচ্চারণও আদিত্যমণ্ডলস্থায়ী দেবতার শ্ৰয়মান হলে (অর্থাৎ এই বিপর্যয়ের দ্বারা) উভয় লোক (অর্থাৎ স্বর্গ ও ভূলোক) আপন আপন কার্যসিদ্ধিযুক্ত হয়ে শান্তি (প্ৰদায়ক) হয়েছে। অতএব এই ঋক-মন্ত্রের ক্রমপাঠ নোক দুটির শান্তির কারক হলো। যাঁরা এই কথা বিদিত হন, তারা উভয় লোকেই শান্তি লাভ করেন (তদ্বেদিতৃশ্চ তদুভয়শান্তিৰ্ভবতি)। সামিধেনী মন্ত্র পদশ; কিন্তু এর মধ্যে একাদশ মন্ত্র বলে অভিহিত একটি বিকল্প মন্ত্র থাকায় মোট দ্বাদশটি বলা হয়। অধিকন্তু প্রথম ও উত্তম মন্ত্র তিনবার আবৃত্তির দ্বারা সামিধেনীর পঞ্চদশত্ব সম্পূর্ণ করা হয়। এক একটি করে অধর্মাস ধরে রাত্রিসমূহের চতুবিংশতিবার আবৃত্তির মাধ্যমে সম্বৎসর-প্রাপ্তি হয়। পঞ্চদশ সংখ্যাবিশিষ্ট গায়ত্রী ছন্দের এক একটি হিসাবে চতুবিংশতি অক্ষর হয়। সেইরকম এর অক্ষরসংখ্যা মিলিত হয়ে সম্বৎসরের রাতির সংখ্যার সমান হয়। কোনও সময়ে নৃমেধ ও পরুচ্ছেপ নামে দুজন ব্রহ্মবাদী ঋত্বিক আপন আপন মন্ত্রের সামর্থ্য-বিষয়ে পরস্পর বাদানুবাদে লিপ্ত হন। তারা প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তাদের মধ্যে যিনি ব্রহ্মীয়ান (ব্রহ্মবাদী) এবং সামিধেনীমন্ত্রে অধিক কুশল তিনি তা নিশ্চিত রূপে প্রতিপন্ন করতে আর্দু কাষ্ঠে ঘর্ষণের (মথনের) দ্বারা অগ্নির সৃষ্টি করবেন। তখন প্রথমে নৃমেধ ঋষি আদ্রকাষ্ঠের অভিক্ষ্যে মন্ত্র পাঠ করলেন (মন্ত্রমবৎ)। কিন্তু তার সেই মন্ত্ৰসামর্থ্যে কেবল ধূমই উৎপাদিত হলো। অতঃপর পরচ্ছেপ ঋষি মন্ত্র পাঠ পূর্বক অগ্নির সৃষ্টি করলেন। তখন নৃমেধ ঋষি পরুচ্ছেপ ঋষিকে অতীন্দ্রিয়দ্রষ্টা বলে সম্বোধিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা দুজনেই সামিধেনী মন্ত্রের বিষয়ে সমান পারদর্শী, তথাপি আপনি কি রকমে অগ্নি উৎপাদনে সক্ষম হলেন? এর উত্তরে পরুচ্ছেপ বললেন, যদিও সামিধেনী মন্ত্রের পাঠ ও তার অর্থজ্ঞানে আমরা সমান, তথাপি আমি সেই সামিধেনীসমূহের বর্ণরহস্য ও সেই বর্ণসমূহের তেজঃ সম্পর্কে জ্ঞাত আছি, কিন্তু আপনি তা বিদিত নন। সেই বর্ণরহস্য ও তেজঃ কি?–তা হলো ঘৃতশব্দোপেত (অর্থাৎ ঘৃত-শব্দের দ্বারা সংযুক্ত) অনুচ্যমান (অনুচ্চারিত) পাদ, যা সামিধেনীর বর্ণ ও সারভূত তেজঃ। তং ত্বা সমিত্তিরঙ্গিরঃ অর্থাৎ হে সমিধের দ্বারা প্রজ্বলিতাঙ্গী অগ্নি! ইত্যাদি ঋক-মন্ত্র পাঠের মধ্যে ঘাতেন বর্ধয়ামসি ইত্যাদি পাদও বর্তমান। সুতরাং সেই পাঠের দ্বারা জ্যোতিঃ উৎপাদিত হয়। সেই একক মন্ত্র আপনিও পাঠ করেছেন, কিন্তু তার মহিমা অবগত নন; কিন্তু তা আমি অবগত আছি বলেই সৃষ্ট জ্যোতির দ্বারা আদ্ৰ কাষ্ঠেও অগ্নি উপাদানে সমর্থ হয়েছি। ঋক্, গায়ত্রী ও সামিধেনী শব্দ স্ত্রীলিঙ্গবাচক হওয়ার কারণে পুংলিঙ্গবাচক বৃষ-শব্দযুক্ত ঋক্‌-মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে (বৃষঞশব্দবতীচং ক্ৰয়াৎ)। তা পাঠের মাধ্যমে পুরুষবৎ ইন্দ্রিয়যুক্ত স্ত্রীপুরুষ মিথুনরূপ সম্পাদিত হয়। দেববর্গ আপনি কার্যসাধনের নিমিত্ত অগ্নিদেবকে দৌত্যে (দূতের কর্তব্য কার্যে প্রেরণ করেছিলেন; এবং অসুরগণ প্রেরণ করেছিলেন কবিপুত্ৰ উশনাকে (অসুরগুরু শুক্রাচার্যকে)। তারা উভয়ে প্রজাপতির নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তিনি তাদের মধ্যে সন্ধি-বিগ্রহ ইত্যাদি কর্মে কার দৌত্য উচিত (অর্থাৎ যাথাযযাগ্য) বলে মনে করেন। তখন প্রজাপতি যোগ্য দূতরূপে অগ্নিদেবকেই বরণ করলেন। এর ফলস্বরূপ দেবগণের বিজয় ও অসুরগণের পরাজয় সংঘটিত হলো। এই কথা যিনি জ্ঞাত থাকেন, সেই যজমান এই মন্ত্রের দ্বারা আপনার বিজয় ও শত্রুর পরাজয় সংঘটনে সমর্থ হন। সমিঘে অগ্ন আহুত…অর্থাৎ হে সমিমান অগ্নিদেব! আপনি এই যজ্ঞে আগত হোনইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা শত্রুবিনাশের জন্য বিশেষত প্রার্থনা করা হয়েছে। শোচিম্বেশস্তমামহ…ইত্যাদি মন্ত্রের মধ্যপাদে পাবক শব্দের দ্বারা পবিত্রের কথা এবং শোচি-শব্দে শুচির হেতুভূত রশ্মিসমূহের উক্তির অভিপ্রেতও পবিত্র বাক্যটির অভিধা সূচিত হয়েছে (পবিত্ৰমেতদ্বাক্যামিত্যতিধীয়তে)। এর দ্বারা অর্থাৎ এই ঋমন্ত্রের দ্বারা যজমানের শোধন সম্পন্ন হয়ে থাকে। সমিদ্ধ অগ্ন আহুত… ইত্যাদি মন্ত্র পরিসমাপ্তি সূচক পরিধিস্বরূপ স্থাপিত হয়েছে। (পরিসমাপ্তিতে প্রক্ষিপ্যমান কাষ্ঠবিশেষকে পরিধি বলে)। এই মন্ত্র পাঠের উদ্দেশ আর কিছুই নয়, যাতে আজ্য পুরোডাশ ইত্যাদি হবিঃ পরিধি বাইরে পাতিত হয়ে বিনাশ না পায় তারই জন্য এই সম্পাদন। আজুহোত ইত্যাদি মন্ত্রের তিনবার আবৃত্তির দ্বারা তিনবার (তিনটি) সমিধ প্রক্ষেপণ (প্রাপ্ত) করতে হয়। অতঃপর চতুর্থ সমিধের দ্বারা দেবগণের হব্যবাহন, পিতৃগণের কব্যবাহন, অসুরবর্গের সহরক্ষক অগ্নি আমাকে বরণ করুক এমন প্রার্থনা ব্যক্ত হয়। হে দেবগণ, ঐ রকম গুণসম্পন্ন হব্যবাহন অগ্নির প্রার্থনা করুন। ঋষি-সম্পর্কিত অগ্নির বরণের দ্বারা অপত্য আত্মীয় ইত্যদির বৃদ্ধি সাধিত হয়ে থাকে। যেমন হোতা যা পূর্বভাবী পিতৃপুরুষগণ অর্থাৎ ভৃগু, চ্যবন, জমদগ্নি (ভৃগুর পুত্র চ্যবন, ভৃগুপুত্র ঋচীকের তনয় জমদগ্নি) ইত্যাদি ক্রমে বর্তমান পুত্র ইত্যাদির বরণ করেন, সেইভাবে এই লোকে পূর্বপূর্বভাবী পিতৃপুরুষগণ হতে উত্তরোত্তর পুত্র ইত্যাদি অনুক্রমে পালন করা হয় (পুত্রাননুক্রমেণ পালয়ন্তি)। (পরবর্তী অনুবাকে ভৃগু প্রভৃতি ঋষিগণের নামোল্লেখের মাধ্যমে এই অনুক্রোম স্পষ্ট পরিব্যক্ত হয়েছে) ॥৮॥

[সায়ণাচার্য বলেন-নবমে প্রবরমন্ত্রস্য নিগদস্য সুগাদাপননিগদস্য চ ব্যাখ্যানং প্রবর্ততে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে প্রবর মন্ত্রের ও সুগাদান রূপ নিগদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নে মহান অসীত্যাহ মহান হেষ যদগ্নিব্রাহ্মণেত্যাহ ব্রাহ্মণো হ্যেষ ভারতেত্যাহৈষ হি দেবেভ্যো হ্যং ভরতি দেবেদ্ধ ইত্যাহ দেবা হ্যেতমৈন্ধত মষিদ্ধ ইত্যাহ মনুৰ্হেতমুত্তরো দেবেভ্য ঐন্ধষিত ইত্যাহৰ্যয়ো হ্যেতমস্তু বম্বিস্বানুমদিত ইত্যাহ বিপ্ৰা হ্যেতে যঞ্জুবাসেঃ কবিশস্ত ইত্যাহ কবয়ো হ্যেতে যঞ্জুশ্রুবাংলো ব্রহ্মসংশিত ইত্যাহ ব্ৰহ্মসংশিত হেষ ঘৃতাহবন ইত্যাহ গৃতাহুতিৰ্হস্য প্রিয়তমা প্ৰণীৰ্যজ্ঞানামিত্যাহ প্ৰণীহেষ যজ্ঞানাং রথীরধ্বরাণা মিত্যাহৈষ হি দেবরথোহৰ্তো হোতেত্যাহ ন হেতং কশ্চন তরতি তুর্ণিহববাড়িত্যাহ সৰ্ব্বং হেষ তরত্যাম্পাত্রং জুহুর্বেমিত্যাহ জুহুর্য্যেষ দেবানাং চমসো দেবপান ইত্যাহ চমসো হেষ দেবপানোহরাং ইবাগ্নে নেমির্পেবাংস্তুং পরিভূরসীত্যাহ দেবান হেষ পরিভূর্যক্ৰয়াদা বহ দেবাবেয়তে যজমানায়েতি ভ্রাতৃব্যমদ্রৈ জনয়েদা বহু দেবা যজমানায়েত্যাহ যজমানমে বৈতেন বদ্ধয়ত্যগ্নিমগ্ন আ বহ সোমমা হেত্যাহ দেবতা এব তদথাপুৰ্ব্বমুপ হয়ত আ চাগ্নে দেবাহ সুজা চ যজ জাতবেদ ইত্যাহাগ্নিমেব তৎ সংশ্যতি সোহস্য সংশিতো দেবেভ্যো হব্যং বহত্যগ্নিহোতা ইত্যাহগ্নিব্বৈ দেবানাং হোতা য এব দেবানাং হোতা তং বৃণীতে স্মো বয়মিত্যাহাহত্মানমেব সত্ত্বং গময়তি সাধু তে যজমান দেবতত্যাহাহশিষমেবৈমা শাস্তে যক্ৰয়াদ্যোগ্নিং হোরমবৃথা ইত্যগ্নিনোভয়তো যজমানং পরি গৃহীয়াৎ প্রমায়ুকঃ স্যাদ যজমানদেবত্যা বৈ । জুহুভ্রাতৃব্যদেবত্যোপভৃৎ যদদে ইবরূয়াদ ভ্রাতৃব্যমস্মৈ জনয়ে ঘৃতবতীমধ্বৰ্য্যে সুচমাহস্যস্বেত্যাহ যজমানমেবৈতেন বর্ধয়তি দেবায়ুবমিত্যাহ দেবান হেষাহবতি বিশ্ববারামিত্যাহ বিশ্বং হ্যেংবভিড়ামহৈ দেবাং ঈডেন্যান্নমস্যাম নমস্যা যজাম যজ্ঞিয়ানিত্যাহ মনুষ্যা বা ঈডেন্যাঃ পিতরো নমস্যা দেবা যজ্ঞিয়া দেবতা এব তদ্যথাভাগং যজতি ॥৯॥

মর্মার্থ- অগ্নে মহা অসি… অর্থাৎ হে অগ্নিদেব! আপনি মহান্ হন, আপনি ব্রাহ্মণ হন, আপনি ভারত হন; আপনি দেবগণের উদ্দেশে নিবেদিত হব্য বহন করে থাকেন-ইত্যাদি প্রবরমন্ত্রে সকল আহুতির আধারত্বের নিমিত্ত অগ্নিদেবকে মহান বলা হয়েছে (মহানসীত্যুচ্যতে)। ব্রাহ্মণ বর্ণাভিমানী হওয়ার কারণে অগ্নিদেবকে ব্রাহ্মণ বলে সম্বোধন করা হয়েছে (ব্রাহ্মণেতিসম্বোধ্যতে)। দেবগণের নিমিত্ত হব্য ধারণ করেন (ভরতি অর্থাৎ ভরণ করেন) বলে তাঁকে ভরত বলে সম্বোধন করা হয়েছে (তস্মাভারতেতি সম্বোধ্যতে)। মন্ত্রের মধ্যে ভৃগু চ্যবন ইত্যাদি ঋষিগণের নাম উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ পূর্বানুবাকের ক্ষেত্রেও যেমন, এখানেও তেমনই উদাহরণের দ্বারা ঋষিগণের নাম নির্দেশ অভিপ্রেত। যেহেতু দেবতাগণ আপন আপন যাগে এই অগ্নিকে ইন্ধনিত (প্রজ্বলিত) করেন, সেই হেতু তাকে দেবেদ্ধ বলা হয়েছে। শ্রুতি-অধ্যয়ন-সম্পন্ন বিদ্বান বিপ্র বা ব্রাহ্মণগণ তাদের সৃষ্ট স্তবের দ্বারা এই অগ্নির স্তুতি করেন; ব্রহ্মমন্ত্রের দ্বারা সম্পূর্ণ তীক্ষ্ণ করেন (সংশিতস্তীক্ষ্ণীকৃতঃ), এবং ধৃতরূপ হবনের দ্বারা আহুতি প্রদান করে থাকেন। যজ্ঞসমূহের নেতৃত্বের নিমিত্ত অগ্নি প্রসিদ্ধ। দেবতাগণের উদ্দেশে নিবেদিত হবিঃ-বহন সম্বন্ধী কর্মের নিমিত্ত এই অগ্নি যজ্ঞের রথস্বরূপ। যেহেতু এই অগ্নি যজ্ঞসমূহের আহ্বতা, সেই কারণে কোনও দেবতা এই অগ্নিকে অতিক্রম করতে পারেন না (ন তরতি), সেই নিমিত্ত এঁকে অনতিক্রম্য হোতা বলা হয়ে থাকে (তস্মাদয়মতুর্তো হোতেত্যুচ্যতে)। এই অগ্নি দেবগণের লৌহপাবৎ দৃঢ় জুহু-সদৃশ (যজ্ঞীয় কাষ্ঠপাত্রবিশেষ)। এই অগ্নি মনুষ্যগণের সোমপানের নিমিত্ত চমসের (হাতার) ন্যায় দেবগণের পানসাধনের নিমিত্ত চমচ-স্থানীয়। হে অগ্নিদেব! আপনি শকটচক্রস্থিত নেমির ন্যায় দেবতাগণের পক্ষে ব্যাপ্তবান (অর্থাৎ চক্রের বেড় যেমন ঘূর্ণনের ফলে যত পথ অতিক্রম করে, তত পথ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়, তেমনই অগ্নিও দীর্ঘস্থানব্যাপী পরিব্যাপ্ত।–আপনি এই যজমানের নিমিত্ত দেবতাগণের আহ্বান করুন… ইত্যাদি মন্ত্রে যজমানের বৃদ্ধিপ্রাপ্তি সাধিত হয় (বৃদ্ধিং প্রাপয়তি)। হে আহুতির আধারভূত অগ্নিদেব! প্রথম আজ্যভাগটি দেবতা অগ্নির উদ্দেশে বহন করুন। দ্বিতীয় আজ্যভাগটি দেবতা সোমের উদ্দেশে বহন করুন। পৌর্ণমাসী ও অমাবস্যায় নির্বপিত প্রথম পুরোডাশটি দেবতা অগ্নির উদ্দেশে বহন করুন। পৌর্ণমাসীতে উপাংশুযাগের দেবতা প্রজাপতির উদ্দেশে (পুরোডাশ) বহন করুন। পৌর্ণমাসীতে দ্বিতীয় পুরোডাশটি দেবতা অগ্নি ও সোমের নিমিত্ত বহন করুন। অমাবস্যায় নির্বপিত পুরোডাশটি সান্নায্য যাগের দেবতা ইন্দ্রের নিমিত্ত বহন করুন। ….ইত্যাদি। হে অগ্নিদেব! আপনি সর্বদেবতার মহিমা বিষয়ে অভিজ্ঞ। আপনি দেবতাগণকে এই স্থানে বহন করে আনয়ন করুন এবং শোড়ন যজ্ঞের দ্বারা যজন (পূজা) করুন। কেবল বহনই নয়, হবিঃ-প্রাপণ-লক্ষণযুক্ত যাগও অগ্নির কর্তব্য। (অর্থাৎ সেই অগ্নি তীক্ষ্ণীকৃত বা অপ্রমত্ত হয়ে যজমানের নির্বপিত হব্য দেবতাগণের নিকট ক্রমে যজমানের নির্বপিত হব্য দেবতাগণের নিকট ক্রমে বহন করেন। এই অগ্নি হোতা অর্থাৎ হোমের কর্তা; অতএব তিনি হোমক্রম জ্ঞাত হোন (হোমক্রমং জানাতু)। যাতে ফলদানরূপ আমাদের রক্ষণ আছে, সেইরকম হোমের অনুষ্ঠান জ্ঞাত হোন। মনুষ্য হোতা আমরাও হোমক্রমে জ্ঞানবন্ত হবো।-হে যজমান! আপনার হবিঃ-স্বীকারকারী দেবতা উত্তম ফল প্রদান করুন।-হে অধ্বর্য! ঘৃতপূর্ণ সুছ (যজ্ঞপাত্রবিশেষ) গ্রহণ করুন। কীরকম সু? যা দেবতাগণের যুক্তকারী সুশ (দেবায়ুস্তাদৃশী); সকল রাক্ষসকৃত বিঘ্নের নিবারণকারী। স্ততিপ্রিয় মনুষ্যগণকে আমরা স্তুতি কছি; নমস্কারপ্রিয় পিতৃগণকে আমরা নমস্কার করছি। যজ্ঞপ্রিয় দেবতাগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছি (যজ্ঞিয়ান্যজ্ঞপ্রিয়ান্দেবানজাম)। দেবতার হোতা অগ্নিদেবের সাহায্যের নিমিত্ত মনুষ্যের নিজের সৎ-ভাব। হে যজমান! যেহেতু আপনি হোতা অগ্নিকে হেতৃত্বে বরণ করেছেন, সেই হেতু অগ্নিদেব আপনাকে উত্তম ফল প্রদান করুন। এই স্থলে যজমানকে শাখার-পাঠের দোষ প্রদর্শনপূর্বক তা পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (তমিমং শাখান্তরপাঠং দূষয়তি)। যদিও জুহু (যজ্ঞীয় কাষ্ঠপাত্রবিশেষ ও উপভৃৎ (বট-কাষ্ঠে নির্মিত গোলাকার যজ্ঞপাত্রবিশেষ)–এই দুটিই যজ্ঞকর্মে গৃহীত হয়ে থাকে, তথাপি জুহুর প্রাধান্য প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে সুচম্ এই একবচনান্ত পাঠের কারণ দেখানো হয়েছে। যদি জুহু ও উপভূতের সম-প্রাধান্য বলা হয়, তবে যজমানের সমান তাঁর শত্রুগণেরও বর্ধন করা হবে। সেই নিমিত্তই উপভৃৎ-কে উপেক্ষিত করে জুহুর প্রাধান্যবাচক শব্দের দ্বারা যজমানের বর্ধন করা হয়ে থাকে (যজমানং বর্ধিতবান্ ভবতি)। জুহুর ন্যায় কখনও কোথাও উপভৃৎ-এর সাক্ষাৎ হোমসাধনত্ব নেই। সেইজন্যই উপসর্জনে (সমাসঘটিত পদে প্রথমান্ত নির্দিষ্ট পদে অর্থাৎ এক বিভক্তি অন্ত পদে) এটি (উপভৃৎ) যুক্ত। দেব-মিশ্রণের দ্বারা দেবতার রক্ষণ এবং বিঘ্ন-নিবারণের দ্বারা সর্ব-রক্ষণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়েছে। মনুষ্যগণের স্তুতি, পিতৃগণের নমস্কার ও দেববর্গের যজ্ঞের লক্ষণ বিষয় কথিত হওয়ায় যাঁর যা ভাগ তার দ্বারা তার অনুষ্ঠান করা কর্তব্য–এটাই বোধিত হয়েছে (ভাগমনতিক্রম্যানুষ্ঠিতবান্ ভবতি) ॥৯॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অথ দশমে নৈমিত্তিকঃ কাম্যাশ্চ সামিধেন্য উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে নৈমিত্তিক ও কাম্য সামিধেনী মন্ত্র উক্ত হয়েছে]।

.

দশম অনুবাক

মন্ত্র- ত্ৰীংচাননু ব্রুয়াদ্রাজন্যস্য এয়ো বা অন্যে রাজন্যাৎ পুরুষা ব্ৰহ্মণো বৈশাঃ শূদ্ৰস্তানেবাশ্ম অনুকান্ করোতি পঞ্চদশানু ব্রুয়াদ্রাজন্যস্য পঞ্চদশো বৈ রাজন্যঃ স্ব এবৈনং স্তোমে প্রতি ষ্ঠাপয়তি ত্রিষ্ঠুভা পরি দধ্যাদিয়িং বৈ ত্রিষ্টুগিন্দ্রিয়কামঃ খলু বৈ রাজনন্যা যজতে ত্রিষ্টুভৈবাস্মা ইন্দ্রিয়ং পরি গৃতি যদি কাময়েত ব্ৰহ্মবéসমস্তৃতি গায়ত্রিয়া পরি দধ্যাঘ্ৰহ্মবর্ডসং বৈ গায়ত্রী ব্রহ্মবéসমেব ভবতি সপ্তদশানু ক্ৰয়াদৈশ্যস্য সপ্তদশশা বৈ বৈশ্যঃ স্ব এবৈনং স্তোমে প্রতিষ্ঠাপয়তি জগত্যা পরি দধ্যাজ্জাগতা বৈ পশবঃ পশুকামঃ খলু বৈ বৈশ্যো যজতে জগত্যৈবাস্মৈ পশূন, পরি গৃহ্নাত্যেকবিংশতিমনু ব্রুয়াৎ প্রতিষ্ঠাকামস্যৈকবিংশঃ স্তোমানাং প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত্যৈ : চতুর্বিংশতিমনু ব্রুয়াঘ্ৰহ্মব…সকামস্য চতুর্বিংশত্যক্ষরা গায়ত্রী গায়েত্রী ব্ৰহ্মবর্ডসং গায়ত্রিয়ৈবাস্মৈ ব্ৰহ্মবéসমব রূন্ধে ত্রিংশতমনু ক্ৰয়াদন্নকামস্য ত্রিংশদক্ষরা বিরাডম্নং বিরাড় বিরাজৈবাশ্ম অন্নাদ্যমব রুন্ধে দ্বাত্রিংশতমনু ক্বয়াৎ প্রতিষ্ঠাকামস্য দ্বাত্রিংশদক্ষরাহনুগনুষ্টুপছন্দসাং প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত্যৈ ষটত্রিংশ তমনু ক্ৰয়াৎ পশুকামস্য ষট্‌ত্রিংশদক্ষরা বৃহতী বাহর্তাঃ পশবো বৃহত্যৈবান্মৈ পশূন অব রূন্ধে চতুশ্চত্বারিংশমনু ক্ৰয়াদিন্দ্রিয়কামস্য চতুশ্চত্বারিংশদক্ষরা ত্রিষ্টুগিন্দ্ৰিয়ং ত্রিষ্টুপ ত্রিষ্টুভৈবাস্মা ইন্দ্রিয়মব রন্ধেহষ্টাচত্বারিংশতমনু ক্বয়াৎ পশুকামস্যাষ্টাচত্বারিংশদক্ষরা জাতী জাগতাঃ পশবো জগত্যৈবাস্মৈ পশূনব রুন্ধে সৰ্বাণি ছন্দাৎস্যনু ক্ৰয়াদ্বন্বষাজিনঃ সৰ্বাণি বা এতস্য ছন্দাংস্যবরুদ্ধানি যো বহুযাজ্যপরিমিতমনু ক্ৰয়াদপূরিমিতস্যাবরুৰ্দ্ধৈ ॥১০৷

মর্মার্থ- অগ্ন আয়াহী ইত্যাদি তিনটি ঋকের আবৃত্তির দ্বারা রাজন্য ব্যতিরিক্ত ব্রাহ্মণ, বৈশ্য ও শূদ্র এই তিন বর্ণ রাজন্যের আনুকূল্য করবেন (আনুকূলান্ করোতি)। প্রজাপতির ঊরু ও বাহু দ্বারা উৎপন্ন পঞ্চদশ স্তোম; এবং রাজন্যের উৎপন্নের নিমিত্ত সেই স্তোম রাজন্যের নিজস্ব (স্বকীয়ঃ)। ত্রিষ্ঠুভ ছন্দ ইন্দ্রের সহোৎপন্ন অর্থাৎ ইন্দ্রের সাথে সৃষ্ট হওয়ায় তার সম্বন্ধ ইন্দ্রিয়রূপ। সমরাভিলাষী রাজন্য ইন্দ্রিয়সামর্থ্যের নিমিত্ত ত্রিষ্টুভের দ্বারা যজন করবেন। যদি ব্রহ্মতেজঃ-সমন্বিত হবার কামনা থাকে, তবে তৎসবিতুঃ ইত্যাদি গায়ত্রী মন্ত্রে গ্রহণ কর্তব্য এবং গায়ত্রীর উপদেশের দ্বারা ব্ৰহ্মতেজঃ নিষ্পন্ন হওয়ার নিমিত্ত গায়ত্রীর রূপত্ব কথিত হয়েছে। প্রজাপতির মধ্যদেশ দ্বারা উৎপন্ন সপ্তদশ স্তোম; এবং বৈশ্যের উৎপন্নের নিমিত্ত সেই স্তোম বৈশ্যের নিজস্ব। ক্ষীর দধি ইত্যাদি বিক্রয়ের নিমিত্ত বৈশ্যগণের পশুকামনা প্রসিদ্ধ। পশুকামনার উদ্দেশে বৈশ্যগণের জগতী ছন্দের দ্বারা অনুষ্ঠান কর্তব্য। যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা কামনা করবেন, তার পক্ষে একবিংশতি স্তোম উচ্চারণ কর্তব্য; কারণ একবিংশতি স্তোমে সকল স্তোমের প্রতিষ্ঠা (ত্রিবৃৎপঞ্চদশসপ্তদশানাং সংখ্যা চতুর্থ একবিংশস্তোমেহন্তৰ্ভূতেতি স স্তোম ইতরেষাং স্তোমানাং প্রতিষ্ঠা)। পুনরায় ফলান্তরায় কথিত হচ্ছে।–ব্রহ্মতেজঃকামী ব্যক্তির পক্ষে যে গায়ত্রীর উপদেশ ইত্যাদির কথা উল্লিখিত হয়েছে সেই প্রসঙ্গে বলা যাচ্ছে–তিনি (অর্থাৎ ব্রহ্মকেজঃ-সম্পন্ন হতে কামনাকারী জন) চতুর্বিংশতি অর্থাৎ চব্বিশ অক্ষরযুক্ত গায়ত্রীর উচ্চারণ করবেন। (তৎসবিতু ইত্যাদি চব্বিশ অক্ষরযুক্ত গায়ত্রী মন্ত্র)। গায়ত্রীর দ্বারা ব্রহ্মবর্চ লব্দ হয়ে থাকে (ব্রহ্মবৰ্চসমব রুন্ধে)। যিনি অন্ন কামনা করেন, তিনি ত্রিশ অক্ষরসমন্বিত বিরাট ছন্দের দ্বারা অনুষ্ঠান করবেন। (দশাক্ষরের তিনবার পাঠে ত্রিশ অক্ষরযুক্ত এই ছন্দানুষ্ঠানে অন্নত্ব লব্ধ হয়ে থাকে)। প্রতিষ্ঠাকামী ব্যক্তি বত্রিশ অক্ষরযুক্ত অনুষ্ঠুভ ছন্দের অনুষ্ঠান করলে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হবেন (অনুষ্ঠুবিতরচ্ছন্দসাং প্রতিষ্ঠা)। যিনি পশু কামনা করেন, তিনি ষট্‌ত্রিংশৎ অর্থাৎ ছত্রিশ অক্ষরসমন্বিত বৃহতী ছন্দের অনুষ্ঠান করবেন। বৃহতী ছন্দের অনুষ্ঠানে পশু লব্দ হয়ে থাকে (লভ্যত্বাদ্বাহতত্বম)। ইন্দ্রিয়শক্তির কামনাকারী ব্যক্তির পক্ষে চতুশ্চত্বারিংশৎ অর্থাৎ চুয়াল্লিশ অক্ষরসমন্বিত ত্রিষ্ঠুভ ছন্দের অনুষ্ঠান করবেন। ত্রিষ্ঠুভ ছন্দের দ্বারা ইন্দ্রিয়-সামর্থ্য লব্ধ হয়ে থাকে। পশুকামী ব্যক্তি (বৃহতী ছন্দ ব্যতীতও) অষ্টচত্বারিংশৎ অর্থাৎ আটচল্লিশ অক্ষরসমন্বিত জগতী ছন্দের দ্বারা অনুষ্ঠান করবেন। জগতী ছন্দের দ্বারাও পশু লাভ করা যায় (জগত্যৈবাস্মৈ পশুনব রুন্ধে)। যিনি বহু যাগের অনুষ্ঠান করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, তাঁর পক্ষে সকল ছন্দের অনুষ্ঠান কর্তব্য। এই বহুজির অনুষ্ঠেয় তিনটি যজ্ঞে (সবনত্রয়ে) গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্ঠুভ ও জগতীরূপ সকল ছন্দই অবরুদ্ধ হয়ে থাকে (সর্বাণিচ্ছন্দাংস্যবরুদ্ধানি ভবন্তি)। (অগ্নি, সোম, ইন্দ্র, বায়ু ইত্যাদি সকলের উদ্দেশে যাগকারী ব্যক্তি বহুযাজী নামে অভিহিত)। অপরিমিতের অধিক ফল লাভের আকাঙ্ক্ষাকারীর অপরিমিত ছন্দের অনুষ্ঠান কর্তব্য; এতে সংখ্যাবিশেষের যেমন নির্দেশ নেই, বাচনেরও কোন নিয়ম নেই ॥১০৷৷

[অথৈকাদশে সামিধেনীষু হোতুর্নিয়মবিশেষোহধ্বর্যোরাঘারবিশেষশ্চাভিধীয়তে। অর্থাৎ এই অনুবাকে সামিধেনীর হোতা, অধ্বর্য, হোম ইত্যাদির নিয়মবিশেষ কথিত হয়েছে]

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- নিবীং মনুষ্যাণাং প্রাচীনাবীতং পিতৃণমুপবীতং দেবানামুপ ব্যয়তে দেবলক্ষ্মমেব তৎ কুরুতে তিঠদাহ তিষ্ঠ হ্যাঁশ্রুততরং বদতি তিষ্ঠন্নাহ সুবৰ্গস্য লোস্যাভিজিত্যা আসীনো যজত্যস্মিন্নেব লোকে প্রতি তিষ্ঠতি ষৎ ক্রৌঞ্চমন্বাহাহসুরং তদন্মন্দ্রং মানুষং তদ্যদন্তরা তৎসদেবমন্তরাহনুচ্যং সদেবত্বায় বিদ্বাংসো বৈ পুরা হোতারোহভূবন্তদ্বিধৃতা অধ্বানোহভূবন্ন পন্থানঃ সমরুক্ষন্নন্তৰ্বেদ্যন্যঃ পাদ্যে ভবতি বহিৰ্বেদ্যন্যোহথাম্বাহাধ্বনাং বিত্যৈ পথামসংসোহায়াথো ভূতং চৈব ভবিষ্যচ্চাব রূন্ধেহথো পরিমিত চৈবাপরিমিতং চাব রুন্ধেহথো গ্রাম্যাংশ্চৈব পশূনারণ্যাংশ্চাব রুন্ধেহথো দেবলোকং চৈব মনুষ্যলোকং চাভি জয়তি। দেবা বৈ সামিধেনীরনুচ্য যজ্ঞং নান্থপশ্যৎস প্রজাপতিস্তৃষ্ণীমাগারমাহ ঘারয়ত্ততো বৈ দেবা যজ্ঞমন্বপশ্যন্যক্তৃষ্ণীমাঘারমাঘারয়তি যজ্ঞস্যানুখ্যাত্যা অথো সামিধেনীরেভ্যনক্ত্যক্ষো ভবতি য এবং বেদাথো তৰ্পয়ত্যে বৈনাস্তৃপ্যতি প্রজয়া পশুভিঃ য এবং বেদ যদেকায়াইঘারয়েদেকাং প্ৰণীয়াদ্যদ্বাভ্যাং দ্বে প্ৰণীয়াদ্যত্তিসৃভিরতি তদ্রেচয়েনসাইঘারয়তি মনসা হ্যনাপ্তমাপ্যতে তিঞ্চমা ঘরয়ত্যছকারং বা চ মনশ্চাহৰ্তীয়েতামহং দেবেভ্যো হব্যং বহামতি বাগব্ৰবীদহং দেবেভ্য ইতি মনস্তৌ প্রজাপতিং প্রশ্নমৈতাং সোহব্রবীৎ  প্রজাপতিতীরেব ত্বং মনসোহসি যদ্ধি মনসা ধ্যায়তি তদাচা বদভীতি তৎ খলু তুভ্যং ন বাঁচা জুহবন্নিত্যব্রবীত্তস্মান্মনসা প্রজাপতয়ে জুহুতি মন ইব হি প্রজাপতি প্রজাপতেরাস্ত্যৈ পরিধীসং মাৰ্তি পুনাত্যেবৈনান ত্ৰিৰ্ম্মধ্যমং এয়ো বৈ প্রাণাঃ প্রাণানেভি জয়তি দ্দিক্ষিণার্ফং এয়ঃ ইমে লোকা ইমানেব লোকানভি জয়তি ত্রিরূত্তরার্ফং এয়ো বৈ দেবযানাঃ পন্থনস্তানেবাভি জয়তি ত্রিরূপ বাজয়তি এয়ো বৈ দেবলোকা দেবলোকানেবাভি জয়তি দ্বাদশ সং পদ্যন্তে দ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরঃ সম্বৎসরমেব প্রীণাত্যাহো সম্বৎসরমেবাশ্ম উপ দধাতি সুবর্গস্য লোকস্য সমষ্টা আঘারমা ঘরয়াতি তির ইব বৈ সুবগো লোকঃ সুবৰ্গমেবাস্মৈ লোকং প্র নোচয়ত্জুমা ঘারয়তৃজুরিব হি প্রাণঃ সতমা ঘারয়তি প্রাণানামন্নাদ্যস্য সন্ত্যা অথো রক্ষসামপহত্যৈ যৎ কাময়েত প্রমায়ুকঃ স্যাদিতি জিহ্ম তস্যাহয়ারয়েৎ প্রাণমেবাশ্মজ্জিহ্মং নয়তি তাজ প্র মীয়তে শিরো বা এতদ্যজ্ঞস্য যদাঘার আত্মা বা আঘামাঘাৰ্যং বাং সমনক্ত্যাত্মন্নেব যজ্ঞস্য শিরঃ প্রতি দধাত্যগ্নিৰ্দেবানাং দূত আসীর্দৈবব্যাহ সুরাণাং তৌ প্রজাপতিং প্রশ্নমৈতাং স প্রজাপতিব্রাহ্মণমব্রবীদেতদি ব্রহীত্যা শ্রাবয়েতীদং দেবাঃ শৃণুতেতি বাব তদবীদগ্নিৰ্দেবো হোতেতি য এব দেবানাং তমবৃণীত ততো দেবাঃ অভব পরাহসুরা যস্যৈবং বিদুষঃ প্রবরং প্রবৃণতে ভবত্যাত্মনা পরাহস্য ভ্রাতৃব্যো ভবতি যদ্রাহ্মণশ্চাব্রাহ্মণশ্চ প্রশ্নমেয়াতাং ব্রাহ্মণায়াধি ক্ৰয়াদ্যদ্রাহ্মণায়াধ্যাহাত্মনেহধ্যাহ যদ্রাহ্মণং পরাহাত্মানং পরাইহ তস্মাদ্রাক্ষণো ন পরোচ্যঃ ॥১১৷৷

 মর্মার্থ- এখানে অগ্রে যাগকর্তার উপবীত ধারণের বিধি কথিত হচ্ছে (উপবীতং বিধাতুং প্রস্তৌতি)। মনুষ্যগণের কার্যে নিবীত (উড়ানি বা আচ্ছাদন বস্ত্র) প্রশস্ত, এই কারণে পুরুষগণের পক্ষে নিবীতযুক্ত হয়ে ঋষিতর্পণ-অনুষ্ঠান কর্তব্য। প্রাচীনবীতী হয়ে অর্থাৎ বামহস্ত বাহির করে দক্ষিণ স্কন্ধে অর্পিত যজ্ঞোপবীত ধারণ করে পিতৃগণের উদ্দেশে কর্মসমূহের সাধন প্রশস্ত; এই নিমিত্তই প্রাচীনাবীতযুক্ত হয়ে শিষ্টগণ পিণ্ডার্পণ করে থাকেন। বামস্কন্ধে যজ্ঞোপবীত ধারণ করে দেবগণের উদ্দেশে কর্মসমূহ সাধন করতে হয়। এই রকম ভাবেই শিষ্টগণের পক্ষে স্বাধ্যায় ইত্যাদি কর্মসমূহও সাধন কর্তব্য। উপবীতের দ্বারা দেবচিহ্ন করা হয় (দেবচিহ্নমেব কৃতং ভবতি)। আসনাসীন হয়ে মন্ত্রোচ্চারণ অকরণীয়; সেই নিমিত্ত দণ্ডায়মান হয়ে সকলে যাতে সম্পূর্ণ শ্রবণ করতে পারেন, তেমনভাবেই মন্ত্র ইত্যাদির উচ্চারণ কর্তব্য। আসন হতে উত্থিত হয়ে স্বর্গলাভের জন্য মন্ত্রোচ্চারণ কর্তব্য। যাগ ইত্যাদি কর্ম আসনাসীন হয়ে করণীয়, তাতে লোকে প্রতিষ্ঠা হয় (চলনাভাবাদ প্রতিষ্ঠা)। উচ্চৈঃস্বরে ও অতি নিম্নস্বরের পরিবর্তে মধ্যম স্বরে মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয়; ক্রৌঞ্চ নামক পক্ষীবিশেষের মতো (কেঁচবকের মতো) উচ্চধ্বনি করলে তা নিন্দিত বা অপবিত্র হয় (আসুরং ভবেৎ)। মনুষ্যগণ যেমন উপবিষ্ট হয়ে মন্দ্রস্বরে (গম্ভীর স্বরে) সম্ভাষণ করে থাকে, তাও বর্জন করতে হবে। মধ্বমধ্বনি না উচ্চ, না নিম্ন, এমন ধ্বনি) দেবগণের প্রিয়ত্ব প্রাপ্ত হওয়ার নিমিত্ত সেই ধ্বনি অনুসরণেই দেবতাগণের উদ্দেশে মন্ত্রোচ্চারণ বিহিত। পুরাতন বিদ্বান হোতার ন্যায় দক্ষিণ পদ বেদির মধ্যে প্রক্ষিপ্ত কর্তব্য (বেদেরন্তঃ প্রক্ষিপেৎ) এবং বাম পদ বাহিরে বিন্যস্ত কর্তব্য। অতঃপর মন্ত্র ইত্যাদি উচ্চারণ করণীয়। তা হলে সেই ধ্বনির দ্বারা পথ বিস্তীর্ণ হয় এবং পথবিষয়ে কোন সম্মোহ ঘটে না। পরস্পর বিলক্ষণ পাদবিন্যাসের বহুধা প্রশংসা করা! হয়েছে। অর্থো ভূতং চৈব ভবিষ্যচ্চ ইত্যাদি মন্ত্রে চারটি পর্যায়ের মধ্যে প্রথমে অন্তঃপাদের প্রশংসা করা হয়েছে এবং দ্বিতীয়ে বহিষ্পদের প্রশংসা দৃষ্ট হয়।–অনন্তর অধ্বর্যর আচার-বিধি কথিত হচ্ছে।–কেবল পরবর্তী অর্থাৎ ভাবী যজ্ঞের কর্তব্য প্রতিভা সম্পর্কিত আচারের প্রয়োজন, তা-ই নয়, কিন্তু বহ্নিতে প্রক্ষিপ্ত সামিধেনী কাষ্ঠের অভ্যঞ্জন (ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা আপ্লুত) করাও প্রয়োজন। এই অভ্যঞ্জনে যিনি অভিজ্ঞ, প্রশংসাস্বরূপ তাকে স্বয়ং পারুষ্যরহিত বা স্নেহোপেত বলা হয় (অর্থাৎ তিনি রুক্ষতাহীন হয়ে থাকেন)। এরই দ্বারা সামিধেনী অভিমানী দেবতার তর্পণ করা হয়। যিনি এইটি পিদিত হন, তিনি প্রজা ও পশুর দ্বারা তৃপ্ত হন। অতঃপর মনের দ্বারা প্রজাপতির ধ্যানের বিষয় কথিত হচ্ছে।–যখন একটি ঋন্ত্র পাঠ পূর্বক আচার সম্পন্ন করা হয়, তখন একটি সামধেনী তৃপ্ত হয়ে থাকে। দুটি ঋন্ত্র পাঠ করলে দুটি সামধেনী তৃপ্ত হয়ে থাকে। তিন বা ততোধিক ঋন্ত্রের দ্বারা আঘার (হোম) করলে সর্ব কর্মেরই অতিরিক্ত হয়ে যায়। একটি কর্মের জন্য একটি ঋই প্রাপ্তি-বিধান। সুতরাং বহু অনুষ্ঠান অতিরিক্ততা দোষে দুষ্ট। সেইকারণে সর্ব দোষ পরিহারের নিমিত্ত মনের দ্বারা আধার (হোম) করতে বিধান দেওয়া হয়েছে। মনের অপ্রতিহতগতিত্বের কারণে সেই সকলই প্রাপ্ত হওয়া যায়, যা যাগ ইত্যাদির দ্বারা প্রাপ্ত হওয়া যায় না। দক্ষিণ দিক হতে আরম্ভ করে উত্তর দিকে সমাপ্ত করা হলে তাকে তির্যক বলা হয়। এইরকম তির্যক ভাবে সকল সমিধের সংস্পর্শের ব্যর্থতা হয় না (বৈয়ং ন ভবতি)। অহং দেবেভ্যো হব্যং বহামি (আমি দেবগণের উদ্দেশে হব্য বহন করব)–এইরকম বাক্যের দ্বারা প্রণোদিত হয়ে বাক্ ও মন, এই দুজন হবিঃ-বহনের অধিকার নির্ণয় করতে প্রজাপতির নিকট গমন করেছিল। প্রজাপতি বাকে উদ্দেশ করে বললেন, হে বাক্‌! তুমি মনের দুতী বা দাসীভূতা, স্বতন্ত্ৰা নও। এই লোকে যেহেতু পুরুষ পূর্বে মনে মনে চিন্তা করে, তারপর তা বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করে; সেই হেতু বাক্ হলো মনের দূতীসদৃশ। প্রজাপতির এই কথায় বাক্ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, হে প্রজাপতি! যদি আমি বাকের দূতীই হই, তাহলে কেউ যেন বাকের দ্বারা আপনাকে হোম না করে। সেই কারণে মনের দ্বারা অর্থাৎ মনে মনে মন্ত্র-স্মরণ পূর্বক প্রজাপতির উদ্দেশে হোমানুষ্ঠান কর্তব্য। মনের সঙ্কল্পের দ্বারা যেমন কার্যসাধন হয়, তেমনই মনের দ্বারা প্রজাপতিকে লাভ করা যায়।ক্রমে এক একটি পরিধির সংমার্জনবৃত্তি বিহিত হচ্ছে।–তিন প্রাণ, অর্থাৎ প্রাণ-আপন-ব্যান; তিন লোক, অর্থাৎ দ্যুলোক-ভূলোক-অন্তরিক্ষলোক; তিন পথ, অর্থাৎ স্বর্গগমনের পথ, যমলোক-গমনের পথ ও ব্ৰহ্মলোক-গমনের পথ–এই প্রাণ, লোক ও পন্থারূপ ত্রিত্বকে জয় করা কর্তব্য। (সাধনার নিমিত্ত প্রাণ বা বায়ু তিনটিকে সংযত করাই জয়)। (সাধনার দ্বারা এই ত্রিলোক-প্রাপ্তির ঊর্ধ্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠাই ত্রিলোক-জয়)। যমলোক-বিষয়ের সবরকম পরিহারই যমমার্গের জয় এবং স্বর্গ ও ব্রহ্মলোক প্রাপ্তির পন্থাবলম্বনই এই দুই পথের জয়, অর্থাৎ এই ভাবেই এই তিন দেবযান জয় করতে হয়। যজমান সম্বৎসরব্যাপী যাগ ইত্যাদি কর্মের অনুষ্ঠান করলে কেবল যে সম্বৎসর-অভিমানী দেবতাই প্রীত হন, তাই নয়; এর ফলে যজমানের স্বর্গলোক প্রাপ্তিও হয়ে থাকে। যজমান প্রাঙমুখে অর্থাৎ পূর্বদিকে মুখ করে দৃশ্যমান হলে স্বর্গলোক তির্যকভাবে প্রতীয়মান হয়। এই কারণে তির্যক ভাবে আঘারের দ্বারা যজমানের স্বর্গগমন ঘটে (স্বৰ্গমুৎপাদিতবান্ ভবতি)। দক্ষিণ দিক হতে উত্তদিকের শেষ পর্যন্ত আঘারের ধারা (হোমের বা ঘৃতের ধারা) যাতে বক্তৃত্ব না পায়, এবং যাতে বিচ্ছেদ প্রাপ্ত না হয় (অর্থাৎ থেমে থেমে না যায়), তেমন করা কর্তব্য। প্রাণবায়ু হৃদয় হতে আরম্ভ করে মুখের মধ্যে দিয়ে নিঃসরিত (বহির্গত) হবার কালে বাম বা দক্ষিণ পার্শ্বে প্রবিষ্ট না হয়ে ঋজুভাবে (সোজা) নিরন্তর (অবিচ্ছিন্নভাবে) বাহিত হয়। তার ফলে প্রাণের ও অন্নের নিরন্তর সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু সেই নিরন্তরতার দ্বারা রাক্ষসগণ কোন অবকাশ না পাওয়ায় তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় (অপহতির্ভবতি)। যে যজমানের উদ্দেশে মরণ কামনা করা হয়, তার আঘার বক্র (বা মন্দগতিযুক্তভাবে) প্রয়োগ করণীয়; সেই বক্ৰত্বের দ্বারা যজমানের প্রাণ বাম ইত্যাদি পার্শ্ববর্তী নাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করে বক্তৃত্ব প্রাপ্ত হয় এবং শ্বাস অবরুদ্ধ হয়ে তৎক্ষণাৎ তার (সেই যজমানের) মরণ ঘটে। আত্মস্থানীয় (স্বাত্মস্থানীয়) ধ্রুবাতে (যজ্ঞপাত্রবিশেষে) যজ্ঞশির-স্থানীয় আঘারের (ঘৃতাহুতির) প্রক্ষেপ করা হলে আপনাতে যজ্ঞশির স্থাপন করা হয়। পরিধি-সংমার্জন ইত্যাদি পৌরডাশিক কাণ্ডেতে কথিত হলেও এই স্থলে তার ব্যাখার দ্বারা ঋজুত্ব ইত্যাদি গুণের বিধান বিবৃত হয়েছে। যজমানের যেমন যেমন ঋষি-প্রবর, তেমন তেমন নাম পুরঃসর অধ্বর্য কর্তৃক হোতার বরণ কর্তব্য (হোতৃবিষয়ং বরণ)। সামিধেনী প্রস্তাবে ঋষিগণের বরণ সম্পর্কে উক্ত হয়েছিল হোতা কর্তৃক অগ্নির বরণ (অগ্নিবিষয়ং বরণমুক্তম)। সেগুলির মধ্যে বিশেষ হলো (তরোরয়ং বিশেষঃ) অধ্বর্য নিম্ন হতে ক্রম অনুসারে ঊর্ধের বরণ করবেন। মনুষ্য ও দেবতা ভেদে অগ্নি দুরকম। ভুলোকে বর্তমান হোমসাধনভূত মনুষ্য অগ্নি, তিনি হলেন দেবতাগণের উদ্দেশে হবিঃ-বহনের নিমিত্ত তাঁদের দূত। এবং দ্যুলোকে বর্তমান দেবতা-সম্পর্কিত অগ্নি অসুরগণের হিত আচরণ করেন বলে তিনি তাদের দূত। মনুষ্য ও দৈব এই অগ্নি দুজনেই প্রজাপতির নিকট উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন যে, তাঁদের মধ্যে কার দৌত্যকর্ম উচিত। এই উভয়ের মধ্যে যিনি মনুষ্য অগ্নি, তিনি হলেন ব্রাহ্মণ; কারণ তিনি বেদবিহিত কর্ম সাধনে প্রবৃত্ত। কিন্তু দৈব-অগ্নি অসুরবর্গের কর্ম সাধনে প্রবৃত্ত হওয়ার কারণে তিনি আসুর নামে অভিহিত, ব্রাহ্মণ নন। তাঁদের মধ্যে ব্রাহ্মণ অগ্নিকে উদ্দেশ করে প্রজাপতি বললেন–হে মানুষাগ্নে! তুমিই দূতকর্মের উপযুক্ত। অতএব তুমি যাগে যা কিছু বক্তব্য আছে, তা সবই ব্যক্ত করো। বক্তব্য হলো–হোতাকে অধ্বর্য শ্রবণ করাবেন–হে দেবগণ! এই যজমান সম্বন্ধি হবিঃ-দান-কথা আপনারা শ্রবণ করুন।–অতএব তুমি যাজ্যপাঠ মুখের দ্বারা দেবতাগণের পক্ষে সহজে যাতে শ্রবণযোগ্য হয় তেমন ভাবে হোতার ঐ সব কথা বলো (অর্থাৎ দূতরূপে ঐ সব কথা দেবতাগণের নিকটে বহন করে নিয়ে যাও)। সেই থেকে, যেহেতু মনুষ্য অগ্নি তথা ব্রাহ্মণ-অগ্নিকেই প্রজাপতি বরণ করে নিয়েছিলেন বা দৌত্যকর্মে তারই অধিকার স্বীকার করে নিয়েছিলেন, সেই জন্য দেবগণ উকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং অসুরগণ পরাভূত হয়েছিল (দেবা উৎকৃষ্ট অভব। পরাভূতা অসুরাঃ)।–এই লোকে যদি কখনও ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ে কোন বিবাদ উপস্থিত হয়, এবং তার মীমাংসার নিমিত্ত কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট গমন করা হলে, তখন সেই অভিজ্ঞ জন কি বলবেন? সেই অভিজ্ঞ ব্যক্তি যদি ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন, তবে তার নিজের আধিক্য হবে। ব্রাহ্মণের পরাভব অর্থে তার নিজেরও পরাভব। সেই নিমিত্ত কখনও ব্রাহ্মণের পরাভব, বিষয়ে কোন উক্তি অকর্তব্য।–এইস্থলে প্রাসঙ্গিকভাবে পুরুষার্থ সম্পর্কিত বিধির বিষয় কথিত হচ্ছে ॥১১।

 [সায়ণাচার্য বলেন–অর্থ দ্বাদশে কামেষ্টিযাজ্যানুবাক্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে কাম্য ইষ্টির মন্ত্রগুলির যাজ্যা ও অনুবাক্যাগুলি কথিত হয়েছে]

.

দ্বাদশ অনুবাক

মন্ত্র- আয়ুষ্ট রায়ুৰ্দা অগ্ন আ প্যায়স্ব সং তেহব তে হেড় উদত্তমম প্র পো দেব্যা নো দিবোহগ্নাবিষ্ণু অগ্নাবিষ্ণু ইমং মে বরুণ তত্ত্বা যাদু ত্যং চিত্র। অপাং নোদা হ্যস্থাদুপস্থং জিহ্মানামূৰ্ধো বিদ্যুতং বসানঃ। তস্য জ্যেষ্ঠমহিমানং বহস্তীহিরণ্যবর্ণাঃ পরি যন্তি যীঃ। সম্ অন্যা যন্তুপ য ত্যন্যাঃ সমানমূৰ্ব্বং নদ্যঃ পৃণন্তি। তমু শুচিং শচেয়ো দীদিবাংসমপাং নপাতং পরি তস্তুরাপঃ। তমস্মেরা যুবতয়ো যুবানং মৰ্ম্মর্জ্যমানাঃ পরি যন্ত্যাপঃ। স শুক্রেণ শিকূনা রেবদগ্নিৰ্দদায়ানিধ্যো ঘৃতনিৰ্ণিগ। ইন্দ্রাবরুণয়োরহং সম্রাজোরব আ বৃণে। তা নো মৃত ঈদৃশে। ইন্দ্রাবরুণা যুবমধ্বরায় নঃ বিশে জনায় মহি শৰ্ম্ম যচ্ছতম। দীর্ঘপ্রযজুমতি যো বনুষ্যতি বয়ং জয়েম পৃতনাসু দূঢ্যঃ। নো মিত্রাবরুণা প্র বাহবা।। ত্বং নো অগ্নে বরুণস্য বিদ্বান্দেবস্য হাোহব যাসিসীষ্ঠাঃ। যজিষ্ঠো বহ্নিতমঃ শশাশুচানন বিশ্বা দ্বেষাংসি প্র মুমুক্ষ্যৎ। স ত্বং নো অগ্নেহবমো ভবোতী নেদিষ্ঠো অস্যা উষসসা ব্যুষ্টো। অব যক্ষ্ণ নো বরুণং ররাণো বীহি মৃড়ীকং সুহবোন এধি। প্রপায়গ্নির্ভরতস্য শৃন্থে বি যৎ সূৰ্য্যো ন রোচতে বৃহত্তাঃ। অভি যঃ পুরুং পৃতনাসু তন্থেী দীদায় দৈব্যে অতিথিঃ শিববা নঃ। প্র তে যক্ষি প্র ত ইয়র্মি মন্ম ভুবো যতা বন্ধ্যো নো হবে। ধন্নিব প্রপা অসি ত্বমগ্ন ইয়বে পুরবে প্রত্ন রাজ। বি পাজলা বি জ্যোতিষা। স ত্বমগ্নে প্রতাঁকেন প্রত্যাষ যাতুধান্যঃ। উরুক্ষয়েষু দীদ্যৎ। তং সুপ্রতীকং সুদৃশং স্বঞ্চমবিদ্বাংসো বিদুষ্টং সপেম। স যক্ষদ্বিশ্বা বয়ুনানি বিদ্বান্ প্র হব্যমগ্নিরমৃতেষু বোচৎ। অংহোমুচে বিবেষ যন্মা বিন ইন্দ্ৰেন্দ্ৰ ক্ষত্রমিন্দ্রিয়াণি শতক্রতোহনু তে দায়ি ॥১২৷৷

মর্মার্থ- আয়ুঃ-দানকারী হে অগ্নিদেব। আমাদের আয়ু প্রদান করুন। হে অগ্নিদেব! আপনি আমাদের নিবেদিত হবিঃ গ্রহণ করুন। হে সকলের দ্বারা স্তুত অগ্নিদেব! আপনি আমাদের দ্যুলোকে বহন করে নিয়ে যান। হে অগ্নি ও বিষ্ণুদেব! আপনারা অজ্ঞানতার অন্ধকার রূপ বরুণের পাশ (অর্থাৎ পাপের বন্ধন) হতে আমাদের মোচিত করুন। (এখানে প্রথমেই সপ্ত হবিঃ-সমর্পণের ক্রমের দ্বারা যাজ্যানুব্যক্যা সমূহের প্রতিরূপগুলি দর্শন করা হয়েছে। ইতিপূর্বে তাহগ্নেয়স্যাহযুষ্টে বশ্বতোহদধিৎ এই পুরোনুবাক্য ও আয়ুদা অগ্নে হবিষো জুষাণ এই যাজ্যা–এই দুটিই মগ্নে রুদ্র (১ম কাণ্ড, ৩য় প্রপাঠ, ১৪শ অনুবাকে)-এ ব্যাখ্যাত। সৌম্যস্য ত্বা পায়স্ব সমেতু ত এই পুরোনুবাক্যা ও সং তে পয়াংসি সমু যন্তু বাজা এই যাজ্যা–এই উভয়ই ৪র্থ কাণ্ডের ২য় প্রপাঠকে মা নো হিংসীজ্জনিতা (৬ষ্ঠ অনুবাক)-এ ব্যাখ্যা করা হবে। বারুণদশকপালস্যাব তে হেড় এই পুরোনুবাক্যা ও উদুত্তম এই যাজ্যা–এই দুটিই বৈশ্বনরো ন (১৫।১১) এই অনুবাকে ব্যাখ্যাত। সারস্বতস্য প্রণো দেবী এই অনুবাক্যা, আ নো দিবো বৃহত এই যাজ্যা, আগ্নাবৈষ্ণবস্যাগ্নাবিষ্ণু মহি তদ্বাম এই পুরোনুবাক্য ও অগ্নাবিষ্ণু মহি ধাম এই যাজ্যা–এই চারটিই ১ম কাণ্ডের ৮ম প্রপাঠেকের শেষ অনুবাকে ব্যাখ্যাত। বরুণচতুষ্কপালস্যেমং মে বরুণ এই পুরো বাক্য, তত্ত্বা যামি এই যাজ্যা–এই উভয়ই এই কাণ্ডের ১ম প্রপাঠকের শেষ অনুবাকে ব্যাখ্যাত সৌৰ্য্যস্যোদু ত্যং জাতবেদসম এই পুরোনুবাক্য ও চিং দেবনাম এই যাজ্যা–এই উভয়ই পাকাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকে ব্যাখ্যাত। জলের অবিনাশয়িতা অপাং নপাৎ নামক কোন দেবতা আপন উপবেশন স্থান প্রাপ্ত হয়েছেন। সেই দেবতা কুটিলগতিযুক্ত (অর্থাৎ আবর্তময়) জলের উপর বর্তমান; মেঘমণ্ডলের মধ্যস্থ অর্থাৎ উপরভাগে ঝলকিত বিদ্যুৎ হলো তার আচ্ছাদক বস্ত্র। বিদ্যুতের মধ্যে বর্তমান হিরণ্যবর্ণা বহু বৃষ্টিরূপা জলদেবী আঁর প্রশস্ত্র মাহাত্ম্য ঘোষণা করে তাঁকে ঝেপে আছেন। অপর জলদেবীগণ সংযত হয়ে পরস্পর সঙ্গত হয়ে প্রবাহরূপে গমন করছেন। কোন কোন জলদেবী আবার প্রবাহের অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে সেই প্রবাহের সাথে বড়বাগ্নির আধারস্বরূপ সেই সমুদ্রে মিলিত হচ্ছেন, যে সমুদ্র নদীর জলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ যে সমুদ্র কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত (জলভাব) হয় না, এবং নদীগণ প্রবিষ্ট হয়ে যে সমুদ্রকে প্রীত করছে। সেই সমুদ্রকে শুচিত্মতী জলদেবীগণ চারদিক হতে ব্যাপ্ত করে রেখেছেন। সেই সমুদ্র হলো শোধনকারী, বড়বাগ্নির সৃষ্টিকারী হওয়ার কারণে দীপ্যমান এবং অপাং নপাৎ-কে রক্ষাকারী (অপাং নপাতম বিনাশয়িতার)। সর্বদা যৌবনোপেত সেই অপাং নপাৎ-কে জলদেবীগণ বেষ্টন করে আছেন। সেই জলদেবীগণও সর্বদা যৌবনোপেতা (অর্থাৎ যুবতী) এবং অপাং নাপৎ-এর সংসর্গে শোধমানা (পবিত্র)। সেই অপাং নপাৎ হলেন অগ্নি, যিনি কাষ্ঠহিত হয়েও দীপ্যমান হয়ে থাকেন। সেটি কি রকম? না,-শুদ্ধ প্রকাশের দ্বারা যুক্ত, ধনবান, নিঃশেষে ঘৃতের শোধনকারক (নিঃশেষেন শোধয়তীতি ঘৃতনিৰ্ণিক)। সম্যক দীপ্যমান ইন্দ্রদেব ও বরুণদেবতার রক্ষণ আমরা সর্বতোভাবে প্রার্থনা করছি। কি রকম রক্ষণ?–তাঁরা আমাদের দ্বারা বৃত হয়ে সর্বদা আমাদের যজ্ঞানুষ্ঠানের সুসম্পাদন প্রজাবর্গের সমৃদ্ধি ও পরিবারকজনের নিমিত্ত সুখপ্রদান করুন। হে ইন্দ্র : বরুণদেব? আপনারা আমাদের আপদ-বিপদ নিবারণরূপ মহৎ সুখ প্রদান করুন। যেসকল পাপ আমাদের দীর্ঘকালব্যাপী যাগপ্রয়োগ লঙ্ঘন করে পীড়ন করছে, আমরা আপনাদের অনুগ্রহবশে দৃঢ়তরভাবে অপীড়িত হয়ে সেই পাপকে জয় করব। হে অগ্নিদেব! আপনি আমাদের ভক্তি বিদিত হয়ে আমাদের প্রতি বরুণদেবের ক্রোধ অপনোদন করুন (অপনয়)। আপনি অতিশয়ভাবে যাগনিম্পাদক, দেবগণের উদ্দেশে নিবেদিত হবিঃ-র বহনকর্তা, অত্যন্ত দীপ্যমান। আপনি আমাদের নিকট হতে বিরোধিকৃত সকল দ্বেষ (বা বৈরিতা) প্রমোচিত করুন (প্রমোচয়)। হে অগ্নিদেব! আপনি আমাদের রক্ষক হোন। (সেটি কি রকম?)–এই (অদ্যতন) ঊষাকালে (প্রাতঃকালে) আমাদের নিকটে আগত হয়ে বরুণের দ্বারা কৃত অভীষ্ট-নিবারক পাপ ইত্যাদি বিনাশ করুন। পরিতৃপ্ত হয়ে আমাদের নিবেদিত সুখসাধন হবিঃ ভক্ষণ করুন। অতঃপর আমাদের সুখের দ্বারা আহ্বানযোগ্য হোন। এই হবিঃ-ভক্ষণসমর্থ অগ্নিদেব যজমানের আহ্বান প্রকৃষ্টভাবে শ্রবণ করুন। এই অগ্নিদেব সূর্যের ন্যায় অত্যন্ত দীপ্তি পাচ্ছেন। যে অগ্নিদেব সংগ্রামে সর্বতঃ জয় পূর্ণ করেন (জয়পুর্তিমভিতস্থেী….), দেবগণেরে পরমমঙ্গলভূত সেই অগ্নিদেব অতিথির ন্যায় আমাদের নিকট সমাগত হোন। হে অগ্নিদেব! আপনার নিমিত্তই আমরা প্রকর্ষের সাথে যাগানুষ্ঠানে ব্যাপৃত আছি, মানসিকভাবে আপনার অনুগ্রহ যেন আমরা লাভ করতে সমর্থ হই। হে পুরাতন! হে দীপ্যমান যজ্ঞাগ্নি (রাজন্দীপ্যমান)! আপনার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানে ইচ্ছাকারী অর্থাৎ হবিঃ-প্রদানকারী যজমানকে প্রিয় সামগ্রী (ধন) প্রদানের নিমিত্ত মরুভূমিতে শীতলপানীয়-পূর্ণশালীস্বরূপ হোন। হে অগ্নিদেব! আপনি কর্মের প্রারম্ভমাত্রেই রাক্ষসজাতির প্রত্যেককে দগ্ধ করুন। কি রকমভাবে?–না, আপনি বিস্তীর্ণ যাগগৃহে (যেখানে রাক্ষসেরা উপদ্রব করে থাকে, সেখানে) দীপ্যমান হয়ে অবস্থান করুন। আমরা সেই অগ্নির সমীপে সমবেত হবে। যে অগ্নিদেব অনুগ্রহরূপ শোভন-উপক্রমশালী, আমাদের প্রতি শোভন কটাক্ষের দ্বারা দৃষ্টিপাতকারী, আমাদের কর্মসমূহে সুষ্ঠভাবে আগমনকারী ও যে অগ্নি অতিশয়ভাবে ভক্তচিত্ত সম্বন্ধে বিদিত। যদিও অবিদ্বান (মূর্খ) আমরা তার মহিমা জ্ঞাত নই, তথাপি আমরা তাকে প্রাপ্ত হবো। সেই অগ্নিদেব যাগানুষ্ঠানে ইচ্ছাকারী পুরুষগণের সর্ব অভিপ্রায় বিশেষকে বিদিত হয়েই অবস্থান করে থাকেন। এতএব সেই অগ্নিদেব আমাদের হব্য-বিষয়ে প্রকৃষ্টরূপে প্রবোচন দান করুন (হব্যং প্রবোচৎ প্রকর্ষেণ ব্রবীতু)।[তং সুপ্রতীকং….থেকে শতক্রতোহনু তে দায়ি পর্যন্ত মন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রথম কাণ্ডে ষষ্ঠ প্রপাঠকের দ্বাদশ অনুবাকে ব্যাখ্যাত হয়েছে ॥১২৷৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *