২.১ দ্বিতীয় কাণ্ড। প্রথম প্রপাঠক

দ্বিতীয় কাণ্ড। প্রথম প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- বায়ব্যং শ্বেতমা লভে ভূতিকামো বায়ুৰ্ব্বৈ ক্ষেপিষ্ঠা দেবতা বায়ুমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবিত স এবৈনং ভূতিং গময়তি ভবত্যেবাতিক্ষিপ্রা দেবতেত্যাহুঃ সৈনমীশ্বরা প্রদহ ইত্যেমেব সন্তং বায়বে নিযুত্বত আ লভেত নিযুদ্বা অস্য ধৃতিধৃত এব ভূতিমুপৈত্যপ্ৰদাহায় ভবত্যেব বায়বে নিযুত্বত আ লভেত গ্রামকামো বায়ুৰ্ব্বা ইমাঃ প্রজা নস্যো নেনীয়তে বায়ুমেব নিযুহুম যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ প্রজা নস্যো নি যচ্ছতি গ্রাম্যে ভবতি নিযুত্বতে ভবতি ধ্ৰুবা এবাশ্ম অনপগাঃ করোতি বয়বে নিযুত্বত আ লতে প্ৰজাকামঃ প্রাণো বৈ বায়ুরপানো নিযুপ্রাণাপানৌ খলু বা এতস্য প্রজায়া অপ ক্রামতো যোহল প্রজায়ৈ সম্প্রজাং ন বিন্দুতে বায়ুমেব নিযুত্বন্তং স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবান্মৈ প্রাণাপানাভ্যাং প্রজাং প্র জনয়তি বিন্দতে প্রজাং বায়বে নিযুত্বত আ লভেত জোগাময়াবী প্রাণো বৈ বায়ুরপানো নিযুৎ প্রাণাপানৌ খলু বা এতস্মাদপ ক্রামতো জ্যোগাময়তি বায়ুমেব নিযুত্বং যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মিন্ প্রাণাপানৌ দত্যুত যদীতাসুর্ভবতি জীবত্যেব প্ৰজাপতিৰ্বা ইমেক আসীৎ সোহকাময়ত প্রজাঃ পশূনং সৃজয়েতি স আত্মনো বপামুদখিদত্তামগ্নী গৃহ্বাত্ততোহজপরঃ সমভবং স্বায়ৈ দেবতায়া আহলভত ততো বৈ স প্রজাঃ পশূনসৃজত, যঃ প্রজাকামঃ পশুকামঃ স্যাৎ স এতং প্রাজাপত্যমজং পরমা সভেত প্রজাপতিমেব যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ প্রজাং পশূ প্র জনয়তি, স্বচ্ছমণশুৎ পুরুষাণাং রূপং যতূপরস্তদানাং যদন্যতোদস্তবাং যদব্যা ইব শান্তদবীনাং যদজস্তদজানামেতাবন্তো বৈ গ্রাম্যাঃ পশবস্তা রুপেণৈবাব রুন্ধে, সোমাপৌষ্ণং ত্রৈমা সভেত পশুকামো ছৌ বা অজায়ৈ শুনৌ নানৈব ঘাবভি জায়েতে উজ্জং পুষ্টিং তৃতীয়ঃ সোমাপূষণাবেক স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাস্মৈ পশূ প্র জনয়তঃ সোমো বৈ রেতোপাঃ পূষা পশুনাং প্রজনয়িতা সোম এবাস্মৈ রেতোদধাতি পূষা পশূ প্র জনয়তৌদুম্বরে যুগো ভবৰ্থা। উদুম্বর উপশব উজ্জৈাম্মা উজ্জ্বং পশুনব রুন্ধে ॥১॥

[সায়ণাচার্য বলেন–প্রথমানুবাক্যস্যাহদাবৈশ্বর্যকামিনঃ পশুং বিধত্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে ঐশ্বর্যকামী যজমানের যাগের যোগ্য পশুর বিষয় কথিত হয়েছে।]

মর্মার্থ- ভূতিকামী ব্যক্তি (অর্থাৎ যিনি অণিমা ইত্যাদি অষ্ট ঐশ্বর্য কামনা করেন, তিনি) বায়ুদেবতার নিমিত্ত বায়ব্য অর্থাৎ শ্বেতবর্ণ পশু সংগ্রহ করবেন। বায়ু অতি ক্ষিপ্রগামী (ক্ষেপিষ্ট) দেবতা। শ্বেত পশু তার অতি প্রিয় বলে তা তার আপন ভাগ (স্বকীয়ে ভাগঃ)। যে যজমান বায়ুর ভাগের দ্বারা তার সেবা করেন, তাতে বায়ু তুষ্ট হয়ে তাকে ঐশ্বর্য প্রদান করেন, (যজমানমৈশ্বর্যং গময়তি…)। তাঁর অনুগ্রহে তিনি ঐশ্বর্য প্রাপ্ত হন (তদনুগ্রহাদয়ং ভবত্যেবৈশ্বং প্রাগোত্যেব)। এই বিষয়ে অভিজ্ঞ জন বায়ুর পূর্বোক্ত বিশেষণ অর্থাৎ বায়ুর অত্যন্ত ক্ষিপ্রকারিত্ব গুণের কথা বলে থাকেন। সেই উগ্র দেবতা যজমানকে প্রদগ্ধ করতেও সমর্থ। (এই) লোকে দেখা যায়, বায়ু ক্ষিপ্রভাবে বাহিত হলে জাজ্বল্যমান অগ্নি গৃহ ইত্যাদি দগ্ধ করেন, এই জন্যই অগ্নির দ্বারা বায়ুর দাহকত্ব কথিত হয় (অতোহগ্নিদ্বারা বায়োদাহকত্ব)। তা পরিহারের জন্য (অর্থাৎ বায়ু দ্বারা দগ্ধ হওয়া হতে রক্ষা পাওয়ার নিমিত্ত) নিযুৎ বিশেষণ যুক্ত অশ্ব দ্বারা বায়ুর সেবা করণীয়। অতএব রথে নিযুক্ত নিযুৎ নামক অশ্বসমূহ বায়ুর ধারক হওয়ায়, তারা ধীর গতিতে চলমান হয়ে বায়ুকে সংযত করতে পারে। এইভাবে নিযুৎ-সহ বায়ুকে হরিনের দ্বারা যজমানও ধৃতি অর্থাৎ ধৈর্য ধারণ পূর্বক অবিনাশী (এবাবিনষ্ট) হয়ে ঐশ্বর্য প্ৰা সেই ঐশ্বর্য তাঁকে প্রদাহিত করতে পারে (অপ্রদাহায় ভবত্যেব)। নিযুৎ-যুক্ত বায়ুর অনুগ্রহে-ধেযুক্ত জমান স্বকীয় পুরুষগণকে নিয়ন্ত্রিত করতে এবং স্বকীয় দ্রব্য ইত্যাদি অবিনাশভাবে পালন করতে সমর্থ হন এবং সেই কারণে তাঁর মনে কখনও সন্তাপরূপ প্রহাদ হয় না (সন্তাপরূপঃ প্রদাহঃ সর্বথা না ভবত্যেব)। গ্রামকামী (অর্থাৎ গ্রাম লাভের কামনা পূর্বক) নিযুৎ-মুক্ত বায়ুর সেবা করবেন। বায়ু প্রজাগণকে অর্থাৎ গ্রামবাসীদের নাসিকায় রঞ্জু বন্ধন করে ঘূর্ণন করিয়ে থাকেন (যেমন লোকে বলীবদের নাসিকাছিদ্রে রজ্জ্ব বন্ধন করে সুখে নিয়ে যাওয়া হয়)। যাঁরা নিযুৎ-যুক্ত বায়ুকে তার ভাগের (অর্থাৎ তার প্রিয় শ্বেতবর্ণ পশুর) দ্বারা সেবা করেন, বায়ু তুষ্ট হয়ে সেই প্রজাগণকে অর্থাৎ গ্রামবাসীগণকে যজমানের অধীন করে দিয়ে থাকেন (যজমানাধীনা করোতি)। এর ফলে যজমান গ্রামস্বামী (গ্রামের অধিপতি) হন। নিযুৎ-বৎ গুণযুক্ত পশু সহযোগে বায়ুকে তার ভাগ প্রদান করলে গ্রামস্থিত সকল প্রজা বা গ্রামবাসী এই যজমানের অনুরক্ত হয়ে থাকে, কখনও কেউ (তার প্রতি) অনুরাগশূন্য হয় না (ন তু তাঃ কদাচিদপৗপরক্তা ভবতি)। প্রজা বা অপত্য কামনায় নিযুৎ-যুক্ত বায়ুর সেবা কর্তব্য। প্রাণ বায়ু হৃদয়ে ও আপন বায়ু গুহ্যে অবস্থান করে। নিযুবায়ু প্রজার নিকট হতে প্রাণ ও আপন বায়ুকে অপসৃত করে নেন, সেই কারণে অনুকূল পত্নীযুক্ত হওয়া সত্বেও সেই ব্যক্তি অপত্য লাভ করতে পারেন না। নিযুৎ-যুক্ত বায়ুর ভাগ প্রদান করে যে যজমান তাকে তুষ্ট করেন, তিনি (অর্থাৎ সেই বায়ু) যজমানের রেতে (তদীয়রেতসি) প্রাণ ও অপান যুক্ত করে অপত্য প্রজনন করেন। তখন যজমান পুত্রলাভ করেন (ততো যজমানঃ পুত্রং লভতে)। দীর্ঘরোগযুক্ত পুরুষ নিযুৎ-যুক্ত বায়ুর সেবা করবেন। যে পুরুষ দীর্ঘরোগযুক্ত হন, তার হতে প্রাণ ও অপান বায়ু নিষ্ক্রান্ত হতে উদ্যত হয়। সেইরকম ব্যক্তি নিযুৎ-যুক্ত বায়ুর ভাগ প্রদান পূর্বক তাঁর নিকট গমন করেন, বায়ু তাতে প্রাণ ও অপান বায়ু চিরকালের জন্য স্থাপন করেন (চিরং স্থাপয়তি); যদি মুহূর্তমাত্র তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন, তথাপিও বায়ুর অনুগ্রহে তিনি জীবিত হন। সৃষ্টির পূর্বে প্রজাপতি একাই ছিলেন; তিনি প্রজা ও পশুর সৃষ্টি কামনায় আপন শরীর হতে পটসদৃশীব (মেদ, চর্বি) উদ্ধৃত করে সেই বপা অগ্নিতে প্রক্ষিপ্ত করলেন। তখন সেই দগ্ধ বলা হত শৃঙ্গরহিত অজ সমুৎপন্ন হলো। সেই অজকে তার অনুরূপ (স্বাত্মরূপাং) দেবতার উদ্দেশ্যে অর্পণ করেন। সেই কর্মের সামর্থ্যে তিনি প্রজা ও পশু লাভ করেন। যিনি প্রজা ও প কামনা করবেন, তিনি প্রজাপতির উদ্দেশে শৃঙ্গরহিত অজু অর্পণ করলো প্রজাপতিকে তার ভাগ প্রদান পূর্বক সেবা করলে তিনি প্রজা ও পশু উৎপন্ন করে থাকেন। যাদের শ্মশ্রু থাকে, তারা পুরুষের রূপ; যারা শৃঙ্গহীন, তারা অশ্ব ইত্যাদির রূপ; যারা নিম্ন দন্তপাটিযুক্ত, তারা গো ইত্যাদির রূপ; যারা মেষের খুরের ন্যায় খুরবিশিষ্ট, তারা অজ জাতির রূপ–এইগুলি গ্রাম্য পশু; এইভাবে প্রজাপতি সকল প্রজা ও পশু লাভ করেন। যিনি ত্ৰৈতমা অর্থাৎ তিনটি পশু একত্রে লাভ করতে কামনা করেন, তিনি সোমদেব ও পূষাদেবতার উদ্দেশে এইরকম তিনটি পশু প্রদান করবেন। অজার দুটি স্তন প্রসিদ্ধ, সেইজন্য তার দুটি বস জাত হয় এবং তারা দুটি স্তন পান করে; তৃতীয় বৎস জাত হলে লক্ষ করতে হবে যে তার (সেই অজার) শরীরে উর্জ অর্থাৎ বলের ও পুষ্টির অধিক্য আছে। সোমদেব রেতের ধারক, পুষা পশুগণের পোষক বা প্রজনয়িতা; সোম রেতঃ দান করে ও পূষা পশুগণের প্রজনন করেন। ফলের মধ্যে উদুম্বর যেমন বহুফলযুক্ত, তা ক্ষীররূপ; ক্ষীরের দরা পশুলাভ ও সেইরকম (ক্ষীরদ্বারণে পশুরপি তথাবিধঃ)। অতএব যজমানের নিমিত্ত উদুম্বররূপ (উদুম্বররূপয়া) ক্ষীরের দ্বারা পশুলাভ সম্পাদন করতে হয় (সম্পাদয়তি) ॥১।

[সায়ণাচার্য বলেন-তানেতান পশুন প্রথমানুবাকে বিধায় দ্বিতীয়ে বরুণগৃহীতাদীনাং পশব উচ্যন্তে। প্রথম অনুবাকে যাগযোগ্য পশুর কথা উক্ত হয়েছে; দ্বিতীয়ে বরুণ ইত্যাদি কর্তৃক গৃহীত পশুর কথা বলা হয়েছে।]

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতি প্রজা অসৃজত তা অস্মাৎ সৃষ্টাঃ পরাচীরায়ত্তা বরুণমগচ্ছন্তা অদ্বৈত্তাঃ পুনরযাচত তা অম্মৈ ন পুনরদদাৎ সোহব্রবীদ্বরং বৃণীঘাথ মে পুনর্দেহীতি তাসাং বরমাহলভ স কৃষ্ণ একশিতিপাদভবদ্যো বরুণগৃহীতঃ স্যাৎ স এত বারুণং কৃমেকশিতিপাদমা লভে বরুণ এব যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈং বরুণপাশামুঞ্চতি, কৃষ্ণ একশিতিপাদ্ভবতি বারুণো হেষ দেবতয়া সমৃদ্ধ্যৈ সুবর্ভানুরাসুরঃ সূৰ্য্যং তমসাংবিধ্যত্তস্মৈ দেবাঃ প্রায়শ্চিত্তিমৈচ্ছস্য যৎ প্রথমং তোহোয়ৎসা কৃষ্ণাহবিরভদ্যদদ্বিতীয়ং স্বা ফনী যক্তৃতীয়ং সা বলক্ষী যদধ্যস্থাদপাকৃৎ সাহৰিৰ্ব্বশা সমভবত্তে দেবা অব্ৰুবন্দেপশুব্বা অয়ং সমভূৎ কম্মা ইমমা ল্যামহ ইত্যথ বৈ তহল্পা পৃথিব্যাসীদজাতা ওষধয়স্তামৰিং বশামাদিত্যেভ্যঃ কামায়াহলভ ততো বা অপ্ৰথত পৃথিব্যজায়তৌষধয়ো, যঃ কাময়ে প্রথেয় পশুভিঃ প্র প্রজয়া জায়েয়েতি স এমবিং বশামাদিত্যেভ্যঃ কামায় আ লভেহদিত্যানেব কামং স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতিত এবৈনং প্ৰথয়ন্তি পশুভিঃ প্ৰ প্ৰজয়া জনয়ন্ত্যসারাদিত্যো ন ব্যয়রাচত তস্মৈ দেবাঃ প্রায়শ্চিত্তমৈচ্ছম্মা এতা মহা আহলাহগ্নেয়ীম কৃষ্ণগ্রীবীং সংহিতামৈন্দ্রীং শ্বেতাং বাম্পত্যাং তাভিরেবাম্মিন রুমদধুর্যো ব্রহ্মবর্ডসকামঃ স্যাত্ত এতা মহলা আ লভে অন্বেয়ং কৃষ্ণগ্রীবীং সংহিতামৈত্রীং শ্বেতাং বাম্পত্যামেতা এব দেবতাঃ যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তা এবামি ব্ৰহ্মবর্ডসং দধতি ব্রহ্মবর্জস্যের ভবতি, বসন্ত প্রাতরাগ্নেয়ীং কৃষ্ণগ্রীবামা সভেত গ্রীষ্মে মধ্যদিনে সংহিতা-মৈন্দ্রীং শারদ্যপরাহ্নে শ্বেতাং বাম্পত্যাং ব্রীণি বা আদিত্যস্যতেজাংসিসস্তা প্রাতগ্ৰীয়ে মধ্যন্দিনে শরদ্যপরাহ্নে যাবস্ত্যেব তেজাংসি তান্যেবাব রুন্ধে, সম্বৎসরং পৰ্য্যালভ্যন্তে সম্বৎসরো বৈ ব্ৰহ্মবর্পসস্য প্ৰদাতা সম্বৎসর এবাস্মৈ ব্ৰহ্মবর্ডসম প্ৰ যচ্ছতি ব্ৰহ্মবর্ডস্যে ভবতি গর্ভিণয়য়া ভবন্তীন্দ্রিয়ং বৈ গর্ভ ইন্দ্রিয়মেবাম্মিন্দধতি, সরস্বতীং মেষীমা লভে য ঈশ্বররা বাচো বদিতোঃ সচং ন বদেদ্বাথৈ সরস্বতী সরস্বতীমের সেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি সৈবাস্মিন্ বাচং দধাতি প্রবৃদিতা বাচো ভবতি, অপন্নদতী ভবতি তম্মাম্মনুষ্যাঃ সৰ্বাং বাচং বদত্যাগ্নেয়ং কৃষ্ণাগ্রীবমা লভেত সৌম্যং বং জ্যেগাময়াব্যগ্নিম বা এতস্য শরীরং গচ্ছতি সোমং রসো যস্য জ্যোগাময়ত্যগেরবাসা শরীরং নিষ্ক্রীণতি সোমাসমুত যদীতাসুৰ্ভবতি জীবত্যেক, সৌম্যৎ বমা লভেংগ্নেয়ং কৃষ্ণগ্রীবং প্রজাকামঃ সোমঃ বৈ রেতোধা অগ্নিঃ প্রজানাং প্রজনয়িতা সোম এবান্মৈ রেতোদধাত্যগ্নিঃ প্রজাং প্রজনয়তি বিন্দতে প্রজা, আগ্নেয়ং কৃষ্ণগ্রীমা সভেত সৌমাং বং যো ব্রাহ্মণো বিদ্যামনুচ্য ন বিরোচেত যদাগ্নেয়ো ভবতি তেজ এবাম্মিন্তেন দধাতি যৎ সৌম্যো ব্রহ্মবর্ডসং তেন কৃষ্ণগ্রীব আগ্নেয়ো ভবতি তম এবাম্মাদপ হস্তি শ্বেততা ভবতি রুচমে স্মিন্দধাতি বঃ সৌম্যো ভবতি ব্ৰহ্মবéসমেবাম্মিন্তিষিং দধাতি,. আগ্নেয়ং কৃষ্ণগ্রীমা সভেত সৌম্যং বমাগেয়ং কৃষ্ণগ্রীবং পুরোধ্যয়াং স্পর্ধমান আগ্নেয়ো বৈ ব্রাহ্মণঃ সৌম্যো রাজন্যোভিতঃ সৌম্যমাগ্নেয়ৌ ভবতস্তেজসৈব ব্ৰহ্মণোভয়তে রাষ্ট্রং পরি গৃত্যেকধা সমাবৃঙক্তে পুর এনং দধতে ॥২॥

মর্মার্থ- প্রজাপতি প্রজাগণকে সৃষ্টি করলেন। তারা পরায়ুখ হয়ে তার নিকট গমন না করে বরুণের নিকট গমন করল। সেই প্রজাপতি বিরুণের নিকট যাচ্ঞা করলেন, যে প্রজাগণ তোমার অনুগ্রামী হয়েছে তাদের পুনরায় আমাকে প্রদান করো। কিন্তু তিনি তা দিলেন না (বরুণস্তু ন দদৌ)। অতঃপর প্রজাপতি বরুণকে বললেন, এই প্রজাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটি গ্রহণ করে, অবশিষ্টগুলি আমাকে দাও (দেহীতি)। তখন বরুণ প্রজাদের মধ্যে হতে কোনও একটি শ্রেষ্ঠ পশুকে নিজের নিমিত্ত হস্তের দ্বারা স্পর্শ করলেন। পরীক্ষা করে দেখা গেল (পরীক্ষ্যমাণঃ) সেটি কৃষ্ণবর্ণ এবং তার একটি পদ শ্বেতবর্ণ যুক্ত। যে ব্যক্তি ভীষণ (মহা) উদরব্যাধি দ্বারা গৃহীত (বা আক্রান্ত), সে বরুণের উদ্দেশে এইরকম পশু (অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণ-সর্বাঙ্গ এবং একটি পদমাত্র শ্বেতবর্ণ, এমন পশু) দান করবে। বরুণদেবকে তাঁর আগধেয় প্রদান করার নিমিত্ত সে বরুণ-পাশ হতে মুক্ত হয়। এই রকম বরুণ-দেবতাক পশু (কৃষ্ণবর্ণ এবং এক পদ শ্বেত পশু) বরুণের উদ্দেশে দান করলে যজমানের আরোগ্য ও সমৃদ্ধি (যজমানস্যাহবোগ্যসমৃদ্ব্যৈ) সম্পাদিত হয়। স্বর্গলোক হতে আগত প্রভাকে ম্লানকারী সুবর্ণভানু নামধারী কোনও তমঃপুঞ্জরূপ অসুর আপন তমসায় সূর্যকে আচ্ছাদিত করে জগৎকে অন্ধকার করে দিয়েছিল (জগদান্ধ্যং কৃতবা)। সেই সূর্যের প্রভাকে আচ্ছাদনকারী তমসার পরিহারের নিমিত্ত দেববর্গ নানারকম প্রকাশরূপ মণি ইত্যাদি দ্রব্যের দ্বারা চারটি পর্যায়ে তা অপসারিত করেছিলেন। প্রথম পর্যায়ে অপসৃত তমসা কোনও কৃষ্ণবর্ণা অবি বা মেষ বা ছাগ (কাচিদবিরভৃৎ) হলো; দ্বিতীয় পর্যায়ে কোন লোহিতবর্ণা অবি হলো; তৃতীয় পর্যায়ে কোনও শ্বেতবর্ণ অবি হলো; চতুর্থ পর্যায়ে কোনও মৃতদেহের দীপ্যমান অস্থি দ্বারা তমসা অপাকৃত করা হলে, তা হতে কোন এক বন্ধ্যা অবি হলো। তখন দেবগণ পরস্পর বিচারপূর্বক বললেন, দৈব অস্থি হতে জাত হওয়ায় এটি উত্তম দেব-পশু (জাতত্বাদয়মুত্তমো); এর দ্বারা কোন উত্তম প্রয়োজনীয় কর্ম অধিগত করব। এইরকম বিচার করে তারা পৃথিবীর অল্পত্ব ও ওষদির অনুৎপন্নত্ব, এই দোষদুটি নিরীক্ষণ করে সেই দুটিকে পরিহার করার কামনায় তা (অর্থাৎ সেই অবি) আদিত্যকে অর্পণ করে পৃথিবীর বিস্তার ও ওষধির উৎপত্তি সম্পাদিত করেছিলেন। যিনি পশু ও পুত্রপৌত্র ইত্যাদি কামনা করবেন, তিনি এইরকম বন্ধ্যা অবি আদিত্যকে অর্পণ করবেন; আদিত্য তার পশু ও পুত্রপৌত্র ইত্যাদির বর্ধন করবেন। কখনও প্রকাশের মান্দ্য বশত আদিত্য দীপ্তবান্ হননি (প্রকাশমান্দ্যাদ্বিশেষেণ ন দীপ্তবান); তখন দেবগণ তার প্রতিকারের নিমিত্ত গল-লম্বিত শুনান্বিতা তিনটি অজা অর্পণ করেন। অগ্নির উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবী অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণ গ্রীবাযুক্তা অজা অর্পণ। করেছিলেন, ইন্দ্রের উদ্দেশে লোহিত-শুক্ল-কৃষ্ণবর্ণযুক্ত অজা অর্পণ করেছিলেন এবং বৃহস্পতির উদ্দেশে শ্বেতবর্ণা অজা অর্পণ করেছিলেন। এর ফলে সূর্য পুনরায় তার দীপ্তি লাভ করেন। যিনি ব্রহ্মবর্চ অর্থাৎ ব্রহ্মতেজ কামনা করেন, তিনি এই রকম গল-লম্বিত স্তন সম্পন্না অজা অর্পণ করবেন। অগ্নির নিমিত্ত কৃষ্ণগ্ৰীবী, ইন্দ্রের নিমিত্ত লোহিত- শুক্ল-কৃষ্ণবর্ণ সম্পন্ন ও বৃহস্পতির উদ্দেশে শ্বেতবর্ণ সম্পন্না অজা অর্পণ করা কর্তব্য। উক্ত পশু তিনটি লাভ করে অর্থাৎ তিন দেবতা তাদের নিজ নিজ ভাগ প্রাপ্ত হয়ে শাস্ত্র-অধ্যয়ন সম্পতিরূপ (শ্ৰধ্যয়নসম্পত্তিরূপং) ব্রহ্মতেজ সম তেজ প্রদান করে থাকেন। সেই ব্যক্তি ব্ৰহ্মতেজসম্পন্ন হন। উক্ত পশু তিনটির প্রয়োগের নিমিত্ত কালবিশেষ নির্ণীত হচ্ছে–বসন্তকালের প্রাতে অগ্নির উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবী, গ্রীষ্মকালের মধ্যাহ্নে (মধ্যন্দিনে) ইন্দ্রের উদ্দেশে লোহিত-শুকু-কৃষ্ণবর্ণা এবং শরৎকালের অপরাহ্নে বৃহস্পতির উদ্দেশে শ্বেতবর্ণ–এই তিন প্রকারের অজা অর্পণীয়। বসন্ত ঋতুর প্রাতঃকালে বর্ষার ন্যায় তীব্র মেঘের আবরণের অভাবের কারণে এবং হেমন্ত ও শীতকালের ন্যায় নীহারের আবরণের অভাবের কারণে আদিত্যের তেজঃ স্পষ্ট প্রকাশিত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নে সেই (তেজঃ) প্রকাশের অধিক্য অতি স্পষ্টভাবে অনুভূত হয় (প্রকাশাধিক্যমতিস্পষ্ট)। শরৎঋতুর অপরাহ্নে সূর্যতেজ সেব্য হয়ে থাকে; (কিন্তু) প্রাতেঃ ও মধ্যাহ্নের তীব্র তেজঃ জ্বর ইত্যাদির কারণ হওয়ায় তা অসেবনীয় (অসেবত্ব)। এই নিমিত্ত আদিত্যের যথোক্ত তিনটি তেজঃ প্রশংসনীয় বা উৎকৃষ্ট (প্রশস্তানি); অতএব সেই কালে (ব্রত) অনুষ্ঠানের দ্বারা উৎকৃষ্ট তেজঃ-সম্পত্তি লাভ করা যায়। ব্রত আরম্ভ হতে সম্বৎসর পর্যন্ত ব্রহ্মচর্য ইত্যাদি নিয়মবিধি কথিত হচ্ছে–উপনয়ন-সম্পন্ন (উপনীত) ব্ৰহ্মণ-কুমারের (মাণবকস্য) সম্ববৎসর ব্যেপে সন্ধ্যাবন্দনা ইত্যাদি আচার-শিক্ষা সম্যকভাবে সম্পাদন করতে হয়, এই কারণে সংবৎসরের ব্ৰহ্মতেজ-প্রদাতৃত্ব স্বীকার্য। যিনি বিদ্বৎসভায় অর্থাৎ পণ্ডিতবর্গের সভায় জয় কামনা করেন (বিদ্বৎসভায়ার্থিত্বকামিনঃ), তাঁর পক্ষে সরস্বতী উদ্দেশে গর্ভযুক্তা মেষী অর্পণ কর্তব্য। বেদ ও শাস্ত্র ইত্যাদি পাঠাভ্যাসে নৈপুণ্য থাকলেও যিনি সভায় কথা বলতে সমর্থ হন না, সেই ব্যক্তি সরস্বতীর উদ্দেশে এই পশুই দান করবেন। সরস্বতীই বাক্য, তাকে তাঁর ভাগ অর্পণ করে উপাসনা করলে, তিনি সেই ব্যক্তিকে বাক্য দান করেন, এবং তিনি (অর্থাৎ সেই ব্যক্তি) বাক্য বলতে পারেন (বাচং বদন্তি)। লোকে অর্থাৎ এই জগতে সদন্ত পুরুষ বর্ণলোপ বিনা (অন্তরেণ) সম্পূর্ণ বাক্য বলতে পারে। যাঁরা তীব্ররোগে আক্রান্ত, তাদের নিমিত্ত দুটি পশুসম্পন্ন কর্মের বিষয় কথিত হচ্ছে। তাঁরা অগ্নির উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণ গ্রীবাযুক্ত (কৃষ্ণগ্রীবমা) ও সোমের নিমিত্ত পিঙ্গল (ব) বর্ণের অজা দান করবেন। শরীরে প্রাণের বন্ধক, যে সূক্ষ্ম অন্নরস তা সোমদেব প্রাপ্ত হন। ব্যাধিতে অভিভূত জনের ভুক্ত অন্নরস (ভুক্তান্নরসঃ) শরীরে প্রবেশ করে না; কিন্তু সোমাধিষ্ঠিত ঔষধির, কার্য এই অন্নে অবস্থান করে (সোমাধিষ্টিতৌষধিকাৰ্য এবান্নেহবতিষ্ঠতে)। এই জন্য সেই রস সোম প্রাপ্ত হন। অগ্নি মাংস ইত্যাদিকে শোষণ করেন, এইজন্য অগ্নি শরীর প্রাপ্ত হন। দীর্ঘকালব্যাপী রোগগ্রস্ত জন সোম ও অগ্নিদেবের উদ্দেশে উক্ত বিধান অনুসারে সেবা করলে তারা তাকে জীবন দান করেন। যিনি প্রজা কামনা করবেন, তিনি অগ্নিদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবা বিশিষ্ট অজা অর্পণ করবেন এবং সোমদেবের উদ্দেশে পিঙ্গলবর্ণ বিশিষ্ট অজা অর্পণ করবেন। সোম রেতের ধারক এবং অগ্নি প্রজাগণের প্রজননকারী; সোম এই ব্যক্তিকে রেতঃ এবং অগ্নি প্রজা প্রজনিত করেন; তখনসেই ব্যক্তি পুত্র লাভ করেন। (বিদ্বৎসভায় মূকীভূত ব্যক্তির কর্ম পূর্বে উক্ত হয়েছে), এখন বিদ্বান ব্যক্তির জন-অনুরাগের বিষয়ে দুইটি পশু সম্পর্কিত কর্ম বলা হচ্ছে। যে ব্রাহ্মণ বিদ্যা লাভ করেও সাধারণের অনুরাগভাজন হতে পারেন না, তিনি অগ্নিদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবা বিশিষ্ট অজা অর্পণ করবেন এবং সোমদেবের উদ্দেশে পিঙ্গল বর্ণ বিশিষ্ট অজা অর্পণ করবেন। তাহলে অগ্নির প্রতিবাদী অর্থাৎ যারা বিদ্বান ব্যক্তিতে অননুরাগী থাকেন, তাঁদের পক্ষে অসহনীয় তেজঃ যজমানে স্থাপিত হয় এবং সোমদেবতা সম্পর্কিত ব্ৰহ্মতেজে বেদশাস্ত্রবচনের স্ফুর্তি হয় (বেদশাস্ত্রবচনস্ফুর্তি-রূপমস্মিন্দধাতি)। অগ্নির উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবা দানের নিমিত্ত বুদ্ধিমান্দ্যরূপ অন্ধকার (অর্থাৎ বুদ্ধির অল্পতারূপ অজ্ঞানতা) অপহত অর্থাৎ বিনষ্ট হয়। গ্রীবা ব্যতীত অন্য স্থানে (গ্রীবাতিরিক্তপ্রদেশে) শ্বেতবর্ণের প্রভার ন্যায় সভার পক্ষে উচিত অনুরঞ্জনরূপ প্রভা এই যজমানে স্থাপিত হয় (সভোচিতানুরঞ্জনরূপাং প্রভামেবাস্মিন্ধধাতি)। সোমের উদ্দেশে পিঙ্গলবর্ণ অজা প্রদানের ফলস্বরূপ ব্রহ্মতেজ প্রাপ্ত যজমানের জনানুরাগ অধিক হয়ে থাকে। এবার পৌরোহিত্যের স্পর্ধা বিষয়ে পশু সম্পর্কিত কর্ম কথিত হচ্ছে। যিনি পৌরোহিত্যের স্পর্ধা করেন, তিনি অগ্নিদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবা অজা এবং সোমদেবতার উদ্দেশে পিঙ্গলবর্ণের অজা প্রদান করবেন। ব্রাহ্মণ অগ্নিরূপ ও সোমদেব রাজন্যরূপ। সোমদেবের রাজত্বের ব্যবহারের নিমিত্ত রাজন্য সৌম্য (সোমস্য রাজত্বের ব্যবহারাদ্ৰাজন্যঃ সৌম্যং)। সোমদেবের সম্মুখে ও পশ্চাতে আগ্নেয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে রাষ্ট্র উভয় দিক হতেই ব্রহ্মতেজ লাভ করে (রাষ্ট্রমুভয়তে ব্ৰহ্মণা তেজসৈব পরিগৃহূতি)। সেই বেদশাস্ত্রপ্রযুক্ত পৌরোহিত্যলক্ষণসম্পন্ন ব্রাহ্মণোচিত তেজের দ্বারা রাষ্ট্র সর্বতোভাবে বশীকৃত হয়। অতঃপর রাজা অমাত্য ইত্যাদি সকলে এই ব্রাহ্মণকে পৌরোহিত্য পদে স্থাপন করেন ॥২॥

[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়ানুবাকে জয়াদিহেতুন পশূনম্বিধিৎসন্নাদৌ লোকয়জয়হেতুং পশুং বিধাতুং প্রস্তেীতি–। অর্থাৎ–এই অনুবাকে তিন লোক জয়ের নিমিত্ত পশুর বিধান প্রদত্ত হয়েছে।]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- দেবাসুরা এষু লোকেম্পৰ্দ্ধন্ত স এতং বিষ্ণুৰ্ব্বামনমপশ্যত্ত স্বায়ৈ দেবতায়া . আহলভত ততো বৈ স ইমা ল্লোঁকানভ্যজয়দ্বৈষ্ণবং বামমা সভেত স্পর্ধমাননা। বিষ্ণুরেব ভূমোল্লোঁকানভি জয়তি বিষম আ লভেত বিষমা ই হীমে লোকাঃ সমৃদ্ধ্যা ইন্দ্রায় মনমতে মনস্বতে ললামং প্রাঙ্গমা সভেত সগ্রামে সংযত্ত ইন্দ্রিয়েণ বৈ মোনা মনসা সংগ্রাম জয়তীন্দ্রমেব মনমন্তং মনস্বন্তং যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাম্মিন্নিন্দ্রিয়ং মনং মনো দধাতি জয়তি তং সংগ্রামমিল্লায় মরুত্বতে পৃশ্নিসঙ্গমা লভেত গ্রামকাম ইন্দ্রমেব মরুত্বং স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবান্মৈ সজাতা প্রযচ্ছতি গ্রাম্যেব ভবতি যদৃষভস্তেন ঐন্দ্রো যৎপৃশ্নিস্তেন মারুতঃ সমৃদধ্যৈ পশ্চাৎ পৃসিকথো ভবতি পশ্চাদম্ববসায়িনী মেবাস্মৈ বিশং করোতি সৌম্যং বভুমা লভেন্নাকামঃ সৌম্যং বা অন্নং সোমমে স্বে ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাশ্ম অন্নং প্র যচ্ছত্যন্নাদ এব, ভবতি বর্ভবত্যেতদ্বা অন্নস্য রূপং সমৃদ্ধ্যৈ সৌম্যং বভুমা লভে যমল রাজ্যায় সন্তং রাজ্যং নোপনমেৎসৌম্যং বৈ রাজ্যংসোমমেব ষেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ রাজ্যং প্র যচ্ছত্যুপৈনং রাজ্যং নমতি বড়ুৰ্ভবত্যেতদ্বৈ সোমস্য রূপং সমৃদ্ধ্যা ইন্দ্রায় বৃত্ৰতুরে ললামং প্রাঙ্গমা সভেত গতশ্ৰীঃ প্রতিষ্ঠাকামঃ পাআনমেব বৃত্ৰং তীৰ্বা প্রতিষ্ঠাং গচ্ছতীন্দ্ৰায়াভিমাতিয়ে ললামং প্রাঙ্গমা লভে যঃ পাস্পনা গৃহীতঃ স্যাৎ পা বা অভিমাতিরিন্দ্রমেবাভিমাতিহনং ষেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাম্মাৎ পাম্মানমভিমাতিং প্র গুদত ইন্দ্রায় বজ্বিণে ললামং প্র শৃঙ্গমা লডভত যমলং রাজ্যায় সম্ভং রাজ্যং নোপনমেদিন্দ্রমেব বণিং যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবিত স এবাস্মৈ বজ্রং প্র যচ্ছতি স এনং বজো ভূত্যা ইন্ধ উপৈনং রাজ্যং নমতি ললামঃ শৃঙ্গো ভবতোতদ্বৈ বর্জস্য রূপং সমৃদ্ধ্যৈ ॥৩॥

মর্মার্থ- দেবতা ও অসুরগণের মধ্যে বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব হয় (লোকেষু বিষয়ভূতেষু)। সেই বিষ্ণু বামন অর্থাৎ হ্রস্ব বা খর্বাকৃতি পশু দর্শন করেছিল। তা (অর্থাৎ খর্বাকৃতি পশু) বিষ্ণুরূপী দেবতার উদ্দেশে অর্পণ করা হয়। অতঃপর সেই বিষ্ণু তিনটি লোক জয় করেন। গৃহ ক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে বিবাদবান যে লোক বিষ্ণুর উদ্দেশে তার প্রয়ি খর্বাকৃতি পশু (বা অবি) প্রদান করবে, সে বিষ্ণুত্ব প্রাপ্ত হয়ে এই লোকসমূহ জয় করবে। পৃথিবী ইত্যাদি লোকের মধ্যে উত্তরোত্তর বিস্তৃতি ও ভোগ ইত্যাদি সম্পর্কে বৈষম্য আছে; এই বিষম দেশ সমৃদ্ধির জন্য কল্পিত হয়ে থাকে। এখন সংগ্রামার্থীর নিমিত্ত পশুর বিধান করা হচ্ছে। সংগ্রাম উপস্থিত হলে (সংগ্রামে) ক্রোধযুক্ত ধৈর্যবান্ ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে শ্বেতপুণ্ডকেশাঙ্কিত ললাটপ্রাপ্ত এমন (শ্বেতপুণ্ডবালাঙ্কিতললাটোপেতং) ও মুখের দিকে সন্নিহিত শৃঙ্গবান এমন (মুখং প্রত্যাসন্নশৃঙ্গঃ) বলীবর্দ (পুঙ্গবঃ) অর্পণ কর্তব্য। তাহলে ইন্দ্রিয় অর্থাৎ শারীরিক বল, শত্ৰুবিষয়ে কোপ ও ধৈর্যের দ্বারা সংগ্রামে জয় প্রাপ্ত হবে। ধৈর্যশালী ক্রোধযুক্ত ইন্দ্রের নিকটে যিনি তার ভাগধেয় নিয়ে যান, ইন্দ্র তাকে শরীরে বল এবং মনে কোপ ও ধৈর্য প্রদান করেন এবং তিনি (অর্থাৎ সেই বাহক) সংগ্রামে জয়যুক্ত হয়ে থাকেন। যিনি গ্রাম কামনা করেন, তিনি মরুৎ-যুক্ত ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে শ্বেত-উরুযুক্ত (বৃশ্নিসকথ) বলীবর্দ প্রদান করবেন। মরুত্বর্গের সাথে ইন্দ্রের ভাগ নিয়ে যিনি তাঁর নিকট গমন করেন, সেই ইন্দ্র তাকে সহোৎপন্ন ভ্রাতা ইত্যাদি ও সহবাসী ভৃত্য ইত্যাদি প্রদান করেন এবং সেই ব্যক্তি গ্রাম প্রাপ্ত হন। এর মধ্যে ইন্দ্রের বৃষ কৃ-যজুর্বেদ। এবং মরুত্বর্গের শ্বেতবর্ণের (পৃশ্নিবর্ণস্য) পশু, এই উভয়ই সমৃদ্ধির কারণ (সমৃদ্ধ্যৈ ভবতি)। পশ্চাতের উরু শ্বেতবর্ণ হবে (এমন পশু দানের ফলে) গ্রামস্বামী যজমান প্রথম যে কার্য করবেন, সেই গ্রামনিবাসী প্রজাগণ তার (সেই যজমানের) পশ্চাতে অনুসরণ করবে এবং কেউই তাঁর প্রতিকূল (বিরুদ্ধ) চিন্তা করবে না। যিনি অন্ন কামনা করবেন তিনি সোমদেবের উদ্দেশে পিঙ্গলবর্ণের অজা অর্পণ করবেন। সোম ওষধির রাজা, এই নিমিত্ত অন্নকে সৌম্য বলা হয়ে তাকে। যিনি সোমের ভাগ নিয়ে তাঁর নিকট গমন করেন, সোম তাকে সেই অন্ন প্রদান করেন, যা তাঁকে (সেই বহনকারীকে) ব্যাধিরহিত করে অগ্নিবৎ দীপ্ত করে। পিঙ্গল বর্ণ হলো অন্নের রূপ, তা সমৃদ্ধির কারণ। বিদলিত ছোলা প্রিয়ংগু ইত্যাদি অন্ত্রের রূপ পিঙ্গল বর্ণ। যিনি রাজ্যপ্রাপ্তির কামনা করবেন, তিনি সোমদেবের উদ্দেশে পিঙ্গল বর্ণের পশু অর্পণ করবেন। রাজার জ্যেষ্ঠপুত্র যদি শৌর্য ইত্যাদি গুণসম্পন্ন হয়েও রাজ্য লাভ করতে না পারেন, সেই জন্য এই পশু অৰ্পণ বিহিত হয়েছে। রাজ্য সোমন্ধীয়। সুতরাং যিনি রাজ্য কামনা করেন, তিনি সোমদেবে ভাগ সহ তার নিকট গমন করলে সোমদেব তাকে রাজ্য দান করে থাকেন। চন্দ্রমণ্ডলের সুবর্ণ-বর্ণেত্বের কারণে পিঙ্গল বর্ণ হলো সোমের রূপ, এবং তা সমৃদ্ধির কারণ (চন্দ্রমণ্ডলস্য সুবর্ণবর্ণাদ্বত্বং সোমস্য রূপ। শত্রুগণের দ্বারা ভ্রষ্টশী (অর্থাৎ রাজ্যহারা) হয়ে পুনরায় তার প্রতিষ্ঠাকামী (অর্থাৎ রাজ্য লাভ করতে ইচ্ছুক রাজ) বৈরিহিংসক ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে লোম (লালটের ভূষণস্বরূপ) প্রাশৃঙ্গ (তীক্ষশৃঙ্গশালী) বৃষ অর্পণ করবেন, তা হলে তিনি পাপরূপ বৈরিকে পরাজয় পূর্বক প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হবেন (অর্থাৎ রাজ্য পুনঃ প্রাপ্ত হবেন)। যিনি গোবধ ইত্যাদি উপপাতকে লিপ্ত, তিনি পাপক্ষালনের নিমিত্ত ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে লোম ও শৃঙ্গ বৃষ অর্পণ করবেন। ইন্দ্র বৈরিবিনাশক, তার ভাগধেয় সহ তাঁর নিকট গমন করলে, ইন্দ্র তার (অর্থাৎ সেই ভাগপ্রদানকারীর) শত্রুবর্গকে বিনাশ করে থাকেন। যিনি রাজ্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য লাভে সমর্থ হন না, তিনি রাজ্যের কামনায় বজ্রধারী ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে লোম ও শৃঙ্গ বৃষ অর্পণ করবেন। যিনি বজ্রধারী ইন্দ্রের নিকট তার ভাগধেয় সহ গমন করেন, ইন্দ্র তাঁকে বজ্রসদৃশ অস্ত্র প্রদান করে থাকেন। সেই বজ্রবৎ প্রহরণসমত আয়ুধ যজমানকে বৈরিসন্তাপের নিমিত্ত প্রদীপ্ত করে (বৈরিসন্তাপায় প্রদীপ্তং করোতি)। সেই কুটিল শৃঙ্গের অগ্রভাগ তীক্ষ্ণধারযুক্ত বজ্রের রূপ; তা সমৃদ্ধির কারণভূত (নতস্য শৃঙ্গস্য তীক্ষাগ্ৰত্বাত্তীক্ষ্ণধারাযুক্ত বজ্ররূপত্ব ॥৩॥

[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থে ব্ৰহ্মবসকামাদীনাং পশূন্নিধিৎসুরাদৌ ব্রহ্মবচসকামায় বিধাতুং প্রস্তৌতি–। অর্থাৎ–এই চতুর্থ অনুবাকে ব্রহ্মতেজঃকামীগণের পক্ষে পশুদানের বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

 চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- অসাবাদিত্যো ন ব্যায়োচতে তস্মৈ দেবাঃ প্রায়শ্চিত্তিমৈচ্ছম্মা এতাং দশৰ্ষভামাহলভ তয়েবাম্মি রুচমদধুর্যো ব্ৰহ্মবর্ডসকামঃ স্যাত্ত এতাং দশভামা লভেমুমেবাহদিত্যাং যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবিত স এস্মিন্ ব্ৰহ্মবৰ্চসং দধাতি ব্ৰহ্মবর্জস্যে ভবতি। বসন্ত প্রাতস্ত্রীলামানা সভেত গ্রীষ্মে মধ্যন্দিনে ত্রীথ্রিতিপৃষ্ঠা রদ্যপরাহ্নে ব্রীঞ্ছিতিবারান্দ্ৰীণি বা আদিত্যস্য তেজাংসি বসন্তা প্রাতগ্রীষ্মে মধ্যন্দিনে শরদ্যপরাহে যাবস্ত্যেব তেজাংসি তান্যেবাব রুন্ধে এয়স্ত্রয় আ লভ্যন্তেহভিপূৰ্বমেবাম্মিন্তেজো দধাতি সম্বৎসরং পৰ্য্যালভ্যন্তে সম্বৎসরো বৈ ব্ৰহ্মবéসস্য প্রদাতা সম্বৎসর এবাশ্মৈ ব্ৰহ্মবর্ডসং প্র যচ্ছতি ব্রহ্মবéস্যে ভবতি। সম্বৎসরস্য পারস্তাৎ প্রাজাপত্যং কদ্রুমাল ভত প্রজাপতিঃ সৰ্ব্বা দেবতা দেবতাবে প্রতি তিষ্ঠতি। যদি বিভীয়াদুশ্চৰ্মা ভবিষ্যামীতি সোমাপৌষ্ণং শ্যামমা লভেত সৌম্যো বৈ দেবতয়া পুরুষঃ পৌষ্ণাঃ পশবঃ স্বয়ৈবাস্মৈ দেবতয়া পশুভিচং করোতি ন দুশ্চৰ্ম্মা ভবতি। দেবাশ্চ বৈ যমশ্চা স্মল্লাঁকেহস্পৰ্দ্ধন্ত স যমো দেবানামিয়িং বীৰ্য্যমযুবত তদ্যমস্য যমত্ব। তে দেবা অন্যন্ত যমমা বা ইমভূদ্যদ্বয়ং স্ম ইতি তে প্রজাপতি মুপাষাবৎস এতৌ প্রজাপতিরাত্মন উচ্চবশেী নিরমিমীত তে দেবা বৈষ্ণাবরুণীং বশামাহলভন্তৈমুক্ষাণং তং বরুণেনৈব গ্রাহয়িত্বা বিষ্ণুনা যজ্ঞেন প্রাণুদস্তৈন্দ্রেণৈবাস্যোয়মবৃঞ্জত। যো ভ্রাতৃব্যবানৎস্যাৎ স স্পর্ধমানো বৈষ্ণাবরুণীং বশামা লভেতৈন্দ্র মুক্ষাণাং বরুণেনৈব ভ্রাতৃব্যাং গ্রাহয়িত্বা বিষ্ণুনা যজ্ঞেন প্ৰ দত ঐন্দ্রেণৈবাস্যেন্দ্রিয়ং বৃঙক্তে ভবত্যাত্ননা পরাহস্য ভ্রাতৃব্যো ভবতীন্দ্রো বৃত্রমহন্তং বৃত্ৰো হতঃ যোড়শভিভোগৈরসিনাত্তস্য বৃত্রস্য শীর্ষতো গাব উদায়ন্তা বৈদেহ্যোহভবন্তাসামৃষভো জঘনেহনুদৈত্তমিঃ অচাযং সোহমন্যত যো বা ইমমালভেত মুচ্যেস্মাৎ পান ইতি স আগ্নেয়ং কৃষ্ণগ্রীবমাহলভতৈমৃষভং তস্যাগ্নিরেব স্বেনভাগধেয়েনোপৃসতঃ যোড়শধা বৃত্রস্য ভোগাপ্যদহদৈন্দ্রেণেন্দ্রিয়মাত্মন্নধত্ত যঃ পানা গৃহীতঃ সাৎ স আগ্নেয়ম কৃষ্ণগ্রীবমা লভেতৈমৃষভমগ্নিরেবাস্য স্বেন ভাগধেয়েনোপসৃতঃ পাম্মানমপি দহত্যৈন্দ্রেণেন্দ্রিয়মাত্মন্ধত্তে মুচ্যতে পাশ্মনো ভবত্যেব দ্যাবাপৃথিব্যাং ধেনুমা নভেত জ্যোগপরুদ্ধো হনয়োৰ্হি বা এষোহপ্রতিষ্ঠিতোহথৈষ জ্যোগপরুদ্ধো দ্যাবাপৃথিবী এব স্পেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তে এবৈনং প্রতিষ্ঠাং গময়তঃ প্রত্যেব তিষ্ঠতি পৰ্য্যারিণী ভবতি পৰ্য্যারীব হেতস্য রাষ্ট্রং যো জ্যোগপরুদ্ধঃ সদ্ধ্যৈ বায়ব্য বৎসমা লভেত বায়ুৰ্ব্বা অনয়োৰ্ব্বৎস ইমে বা এত্যস্মৈ লোকা অপশুষ্কা বিড়পশুষ্কাহথৈষ জ্যোগপরুদ্ধো বায়ুমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাম্মা ইমাল্লোঁকাশিং প্র দাপয়তি প্ৰাম্মা ইমেলোকাঃ মুবন্তি ভুঞ্জত্যেন বিডুপ তিষ্ঠতে ॥৪॥

মর্মার্থ- পূর্বকালে কোনও এক সময়ে আদিত্যের দীপ্তির অভাব ঘটায় দেবতাগণ তার প্রতিকারের উদ্দেশে দশটি বৃষ প্রদান করেন। এর ফলে আদিত্য পুনরায় তাঁর দীপ্তি লাভ করেন। সুতরাং যিনি ব্রহ্মতেজঃ কামনা করবেন, তিনি আদিত্যের উদ্দেশে দশটি বৃষ অর্পণ করবেন। আদিত্যের ভাগ বহন করে যিনি তাঁর সমীপে গমন করেন, আদিত্য তাঁকে ব্রহ্মতেজঃ প্রদান করেন; তিনি ব্রহ্মবৰ্চসী (অর্থাৎ বেদাধ্যয়নজনিত ব্রাহ্মণের তেজঃ) সম্পন্ন হন। বসন্তের প্রাতঃকালে তিনটি লোম বৃষ, গ্রীষ্মকালের মধ্যাহ্নে তিনটি সেত-পৃষ্ঠ যুক্ত বৃষ এবং শরঙ্কালে অপরাহ্নে তিনটি শ্বেত-পুচ্ছ যুক্ত বৃষ আদিত্যের উদ্দেশে প্রদান কর্তব্য। উক্ত তিন কালবিশেষে আদিত্যের তেজঃ প্রশংসনীয়, যথা–বসন্তকালের প্রাতঃ, গ্রীষ্মের মধ্যন্দিন ও শরৎকালের অপরাহ্ন। এই তিন কালে যেমন আদিত্যের তেজঃ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তেমনই উত্তরোত্তর কালেও এই যজমানের তেজঃ বৃদ্ধিলাভ। করে, কখনও কমে না (ন হীয়ত)। সম্বৎসর ব্যাপী আদিত্যের সেবা কর্তব্য, (কারণ) সম্বৎসর ব্ৰহ্মবসের প্রদাতা, উপনয়ন-সম্পন্ন ব্রাহ্মণ-কুমার (যদি) সম্বৎসরব্যাপী সন্ধ্যা বন্দনা ইত্যাদি আচরণ করে, তাহলে সম্বৎসর তাকে ব্ৰহ্মতেজঃ প্রদান করেন, সে ব্রহ্মচঁসী হয়।–দশটি বৃষের দেবতা, কাল ও বর্ণবিশেষ কথিত হচ্ছে। সম্বৎসরের পরে প্রজাপতির উদ্দেশে কদ্রু অর্থাৎ পিঙ্গল বর্ণের বৃষ প্রদান কর্তব্য; প্রজাপতি সকল দেবতার স্বরূপ হওয়ায় সকল দেবতার মধ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠিত (প্রতিষ্ঠিতি)। ভবিষ্যকালীন কুষ্ঠরোগ অনুমান করে ভীতিগ্রস্ত হলে সোমদেব ও পূষাদেবের উদ্দেশে শ্যামবর্ণশালী বৃষ দান কর্তব্য। পুরুষ সোমদেবতাক ও পশু পূষাদেক (পুরুষস্য সোমদেবতাকত্বং পশূণাং পৌষ্ণত্বং চ)। এই দুই দেবতা (এমন কি) পশুরও ত্বক নির্মল করেন; (সুতরাং) যজমানের কুষ্ঠ ইত্যাদি চর্মরোগ নিবারণ করেন। (একদা) এই লোকে দেবগণ ও যম পরস্পর স্পর্ধান্বিত হয়েছিলেন; যম দেবগণের বীর্যসামর্থ্য পৃথক করে দিয়েছিলেন, এটিতে যমেরই প্রভুত্ব। বীর্য অপগত হওয়ায় দেবগণ পরস্পর বলাবলি করলেন–আমরা পূর্বে, (বীর্যসামর্থ্যে) ভূলোকের যে অধিপত্য প্রাপ্ত হয়েছিলাম, এখন তা যমই প্রাপ্ত হবে। (সুতরাং) তারা প্রজাপতির নিকট গমন করেছিলেন। সেই প্রজাপতি এক বৎস উৎপাদনক্ষম বৃষ এবং এক বন্ধ্যা অজা সৃষ্টি করলেন। তখন দেবগণ বিষ্ণুদেবতার উদ্দেশে বন্ধ্যা অজা ও ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে বৃষ উৎসর্গ করলেন, অতএব দেবগণ যমকে বরুণের পাশাস্ত্রে গ্রহণপূর্বক যজ্ঞরূপ বিষ্ণুদেবের দ্বারা নিষ্কাষিত করলেন (নিষ্কাসিতবন্তঃ) এবং ইন্দ্রের কৃপায় (প্রসাদেনাস্য) যমের বীর্য বা সামর্থ্য নাশ করেছিলেন। (অতএব যিনি অর্থাৎ যে যজমান শত্রুগণকে বিনাশ করতে কামনা করবেন, তিনি বিষ্ণুদেবের উদ্দেশে বন্ধ্যা অজা ও ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে বৎসউৎপাদনক্ষম বৃষ দান করবেন। অতঃপর বরুণের পাশের দ্বারা শত্রুকে গ্রহণ পূর্বক যজ্ঞরূপ বিষ্ণুর দ্বারা তাকে দূরীভূত করে দেবেন এবং ইন্দ্রের দ্বারা শত্রুর ইন্দ্রয়-সামর্থ্য বিনষ্ট করবেন; এতে যজমান বিজয়ী হবেন।–পাপবিমুক্তর কামনায় দ্বিপশু দান বিষয়ক বিধির কথা বলা হচ্ছে। (একদা) ইন্দ্রদেব বৃত্রকে আঘাত করেছিলেন। বৃত্র আহত হয়ে তার দেহ হতে উৎপন্ন ক্রোধাবিষ্ট সর্পাকার যোড়শ সংখ্যক শরীরের দ্বারা রঞ্জু-বন্ধনের ন্যায় ইন্দ্রকে বদ্ধ করেছিল (রজ্জ্বভিরির ববন্ধ)। সেই বৃত্রের মস্তক হতে কতিপয় বিশিষ্ট দেহধারিণী গাভী উৎপন্না হয়েছিল; সেই গাভীগণের পশ্চাতে (জঘনে পৃষ্ঠভাগে) একটি বৃষ অনুগমন করেছিল (অনুগমোদগচ্ছৎ)। ইন্দ্রদেব সেই বৃষের উদ্দেশে পূজা করেছিলেন। অহো আমার কার্য সম্পন্ন হয়েছে, ইন্দ্র মনে মনে বলেছিলেন। যে কেউ দেবতার উদ্দেশে এইরকম বৃষ অর্পণ করবে, সে এইরকম বন্ধন ইত্যাদি রূপ পাপ হতে মুক্ত হবে (ঈশাদ্বন্ধনাদিরূপাৎ পাশ্মনো মুচ্যেতেতি)। এই বিচারপূর্বক ইন্দ্রদেব অগ্নির উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবা পশু ও ইন্দ্র-সম্বন্ধি বৃষ অর্পণ করেছিলেন। ইন্দ্র-সম্বন্ধি আপন ভাগ প্রাপ্ত হয়ে তুষ্ঠ অগ্নিদেব বৃত্রে সর্পাকার যোড়শ সংখ্যক শরীর দগ্ধ করেছিলেন। তাতে ইন্দ্র যাগ-সামর্থ্য লাভ করেছিলেন। যিনি বা যে যজমান পাপলিপ্ত হয়ে অগ্নিদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণগ্রীবা পশু ও ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে ইন্দ্র-সম্বন্ধি বৃর্য দান করেন, তাতে অগ্নিদেব আপন ভাগধেয় লাভ করে তার পাপ দগ্ধ করেন এবং ইন্দ্রদেব তাঁকে সামর্থ্য প্রদান করেন। এতে যজমান পাপ হতে মুক্ত হয়। যিনি দীর্ঘকালব্যাপী (চিরং) রাজ্যভ্রষ্ট হয়েছেন, তিনি দ্যাবাপৃথিবীর উদ্দেশে ধেনু দান করবেন। যিনি প্রজাপিলনের অভাবে এই লোকে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হননি এবং বৈদিক কর্মানুষ্ঠানের অভাবে স্বর্গেও প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত হননি তিনিই হলেন জ্যোগপরুদ্ধ অর্থাৎ রাজ্যভ্রষ্ট। তার পক্ষে দ্যাবাপৃথিবীর পরিতোষের দ্বারা উভয় লোকে (ভুবনে ও স্বর্গে) প্রতিষ্ঠা লব্ধ হয়। যে গর্ভিনী গাভী প্রসবকাল অতিক্রম করে (প্রসবকালং পরিত্যজ্য) দীর্ঘকাল গর্ভ ধারণ করে থাকে, তাকে বলা হয় প্যারিণী। যিনি রাজ্যভ্রষ্ট, তিনি এই প্যারিণীর ন্যায় দীর্ঘকাল (কষ্টভোগের) পরে (চিরমতীত্য) পুনরায় ভোগকাল প্রাপ্ত হয়ে সমৃদ্ধ হন। রাজ্যভ্রষ্ট ব্যক্তির পক্ষে বায়ুদেবতার উদ্দেশে গো-বৎস দান কর্তব্য। বায়ু দ্যাবাপৃথিবীর বৎসস্বরূপ। (যেমন বৎস ধেনুর নিকটে সঞ্চরণ করে, বায়ুও তেমনই দ্যাবাপৃথিবীতে সঞ্চরণ করে)। যখন রাজ্যের মুখ্যপুরুষগণ ও সাধারণ জনবর্গ বিরাগভাজন হন, তখনই রাজা রাজ্যভ্রষ্ট হন। বৎসের দ্বারা তুষ্ট হয়ে বায়ু মুখ্য ও সাধারণ প্রজাবর্গকে তাঁর অনুরক্ত করেন। তাতে সকলে তাকে প্রচুর মণিমুক্তা ইত্যাদি ধন প্রদান করে এবং তিনি পুনরায় প্রজাগণকে পালন করেন (প্ৰজা চৈনং ভুঞ্জতী পালয়ন্তী সেবতে)। ৪

[সায়ণাচার্য বলেন–অথ পঞ্চমে পশুকামাদীনাং পশবো বক্তব্যাঃ। অর্থাৎ এই পঞ্চম অনুবাকে পশুকামীগণের পক্ষে পশুদানের বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- ইন্দ্রো বলস্য বিলমপৌর্ণোৎ স য উত্তমঃ পশুরাসীত্তং পৃষ্ঠং প্রতি সংগৃহ্যোটখিদত্তং সহস্রং পশবোহদায়স উন্নতোহভবদ্যঃ পশুকামঃ স্যাৎ স এতমৈন্দ্রমুন্নতমা লভেতেমেব স্কেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ পশু প্র যচ্ছতি পশুমানেব ভব্যুন্নতঃ ভবতি সাহী বা এষা লক্ষ্মী যদুন্নততা লক্ষ্মিয়ৈব পশূনব রুদ্ধে। যদা সহস্রং পশন প্রাপুয়াদথ বৈষ্ণবং বামনমা লভেতৈতস্মিন্থৈ তৎসহস্ৰমধ্য তিষ্ঠত্তম্মাদেষ বামনঃ সমীষিতঃ পশুব্য এব প্রজাতেভ্যঃ প্রতিষ্ঠাং দধাতি। কোহতি সহস্ৰংপশু প্রাপ্তমিত্যাহুরহোরাত্ৰাণ্যেব সহস্রং সম্পাদ্যালতে পশবঃ বা আহোরাত্রিণি পশুনেব প্রজাতা প্রতিষ্ঠাং গময়তোষধীভ্যো বেহতমা লভেত প্রজাকাম ওষধয়ো বা এতং প্রজায়ৈ পরি বাধন্তে। যোহল প্রজায়ৈ সন্ প্রজাং ন বিন্দত ওষধয়ঃ খলু বা এতস্যৈ সূতুমপি মুন্তি যা বেহদ্ভবতোষধীরে স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তা এবাস্মৈ স্বাদ্যোনেঃ প্রজাং প্র জনয়ন্তি বিন্দুতে প্রজামাপো বা ওষধয়োহসৎপুরুষ আপ এবাশ্ম অসতঃ সদ্দদতি তস্মাদাহুৰ্ষশ্চৈব বেদ যশ্চ নাহপাবাসতঃ সদ্দদতীতি ঐন্দ্রীং সূতশামা লভেত। ভূতিকামোহজাতো বা এষ যোহলং ভূত্যৈ সন্ ভূতিং ন প্রাপ্নোতীন্দ্রং খলু বা এষা সূত্বা বশাহভবৎ ইন্দ্রমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনং ভূতিং গময়তি ভবত্যেব যং সুত্ব বিশা স্যাত্তমৈন্দমেবাইলভেতৈতদ্বাব তদিন্দ্ৰিয়ং সাক্ষাদেবেন্দ্ৰিয়মব ৰুন্ধ। ঐন্দ্রাপ্তং পুনরুৎসুষ্টমা লভে য আ তৃতীয়াৎ পুরুষ্যৎ সোমং ন পিবেদিচ্ছিন্নে বা এতস্য সোমপীথো যো ব্রাহ্মণঃ সন্না তৃতীয়াৎ পুরুষাৎ সোমং ন পিবতীন্দ্ৰাগ্নী এব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাস্মৈ সোমপীথং প্র যচ্ছত উপৈনং সোমপীথো নমতি যদৈন্দ্রো ভবতীন্দ্রিয়ং বৈ সোমপীথ ইন্দ্রিয়মেব সোমপীথমব রুন্ধে। যদাগ্নেয়ো ভবত্যাগ্নেয়ো বৈ ব্রাহ্মণঃ স্বামেব দেবতামনু সং তনোতি পুনরুৎস্পৃষ্টো ভবতি পুনরুৎস্পৃষ্ট ইব হেতস্য সোমপীথঃ সদ্ধ্যৈ ব্রাহ্মণত্যাং তুপরমা লভেভি চর ব্ৰহ্মণম্পতিমের স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তম্মা এবৈনমা বৃশ্চতি তাজগার্তিচ্ছতি তুপরো ভবতি ক্ষুরপবিৰ্বা এষা লক্ষ্মী যত্তপরঃ সমৃদ্ধ্যৈ স্ফো যুলো ভবতি বজ্যে বৈ স্ফ্যো বজ্রমেবাস্মৈ প্র হরতি শরময়ং বহিঃ শৃণাত্যেবৈনং বৈভীদক ইগ্নে ভিনত্তেবৈনম্ ॥৫॥

মর্মার্থ- বল নামক কোন এক তস্কর অসুর যেখান-সেখান হতে (যতস্ততত) বহু পশু অপহরণ করে কোনও একটি পর্বতগুহায় স্থাপন করে রাখত। ইন্দ্রদেব এই বৃত্তান্ত অবগত হয়ে সেই গুহাদ্বার আবৃতকারী পাষাণটি অপণীত করেন। অতঃপর সেই পশুগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ (যূথপতি) পশুটিকে পশ্চাৎ ধরে উপরে উৎক্ষিপ্ত করেন। সেই যুথপতির সাথে সাথে সহস্র পশুও উপরে নীত হয় (উচ্চতবন্তঃ)। সেই মুখ্য পশুটি উত্তম হওয়ার কারণে পূর্ব হতেই যুথপতি ছিল, পরে ইন্দ্র কর্তৃক উৎক্ষিপ্ত হওয়ায় আরও উন্নত হলো (অত্যন্তমুন্নতোহভবৎ)। যিনি পশু কামনা করেন, তিনি ইন্দ্রের উদ্দেশে উত্তম পশু প্রদান করবেন। যিনি ইন্দ্রের নিকট তার ভাগধেয় নিয়ে গমন করেন, ইন্দ্র তাঁকে বহু পশু প্রদান করেন; এইভাবে তিনি পশুমান্ হন। উত্তম পশু লাভ হলো সহস্র পশুলাভের নিমিত্তভূতা বা সম্পদরূপা। এর দ্বারা সেই ব্যক্তি পশুসমৃদ্ধিরূপ লক্ষ্মীযুক্ত হয়ে পশু লাভ করেন (লক্ষ্মা যুক্তস্থান পশুনবরুন্ধে)। যখন পশুকামী জন সহস্র পশু প্রাপ্ত হন, তখন বিষ্ণুর উদ্দেশে একটি খর্বকায় পশু প্রদান কর্তব্য। এর ফলে তিনি সহস্র পশুর নিমিত্ত তৃণ জল ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিবাসস্থান প্রাপ্ত হবেন (নিবাসস্থানং কৃতবান্ ভবতি)। সহস্র পশুপ্রাপ্তি প্রায় দুর্লভ; কারণ চোর, ব্যাঘ্র ইত্যাদি বহু বিঘ্ন আছে (বিঘ্ননাং…বহুত্বাৎ)। অতএব সহস্র পশু লব্ধ হলে তার সহস্র দিন পরে বিষ্ণুর উদ্দেশে বামনাকৃতি পশু প্রদান কর্তব্য। এর ফলে সেই ব্যক্তি পশুসম্পদের দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। প্রজাকামী জন ওষধির উদ্দেশে গর্ভবিনাশিনী গাভী দান করবেন (বেহুতং গর্ভবিনাশিনী)। যিনি সন্তান উৎপাদনে সমর্থ হয়েও সন্তান লাভ করতে পারেন না, ওষধিদেবতা তার প্রতিবন্ধক। ওষধিগণ গর্ভবিনাশিনী গাভীরও গর্ভ বিনাশ করেন। যিনি ওষধিগণের নিকট তাদের ভাগ সহ গমন করেন, ওষধিগণ তাদের সন্তান দান করেন। যারা এটি অবগত নয়, তারা ভাবে অসৎপুরুষ হতে সৎপুরুষ উৎপাদিত হচ্ছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যজমান ওষধিগণের কৃপাতেই আপন বীর্যেই সন্ততি লাভ করেন, ক্ষেত্রজ পুত্র-কন্যা ইত্যাদি নয় (ন তু ক্ষেত্ৰজপুত্রিকাসুদিক)। উন্নতিকামী বা ঐশ্বর্যকামী (ভূতিকামী) জন, ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে সূতবশা গাভী (অর্থাৎ একবার বৎস উৎপাদন বা প্রসব করার পর বন্ধ্যা হয়েছে, এমন গাভী) প্রদান করবেন। যিনি উৎকর্ষ বা ঐশ্বর্যলাভের যোগ্য হয়েও তা প্রাপ্ত হননি, তিনি ইন্দ্ৰে ভাগধেয় (ঐ সূতবশা গাভী) সহ তার নিকট গমন করলে ইন্দ্র তাকে উৎকর্ষ বা ঐশ্বর্য প্রাপ্ত করান। সূতবশা প্রদানের পূর্বে ইন্দ্রের উদ্দেশে একটি বৎসও প্রধান কর্তব্য। এই সূতবশা গাভী প্রথমে ইন্দ্রের সমান বৎস উৎপাদন করে বন্ধ্যা হয়, এই কারণে এর লাভে (অর্থাৎ বৎস ও সূতবশা গাভী প্রাপ্ত হয়ে) ইন্দ্র তার ইন্দ্রিয়-সামর্থ্য প্রত্যর্পণ করেন। যে ব্রাহ্মণ (পিতামহ, পিতা ও স্বয়ং ক্রমে) তিন পুরুষ সোম না পান করার নিমিত্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন, তিনি ইন্দ্র ও অগ্নিদেবের উদ্দেশে ত্যক্ত (উৎসৃষ্ট) জীর্ণ বলদ অর্পণ করবেন। ইন্দ্র ও অগ্নিদেবের উদ্দেশে তাদের ভাগধেয় বহন করে যিনি তাঁদের নিকট গমন করেন, তাঁরা তাঁকে পুনরায় সোমপায়ী করেন। সোমপানে ইন্দ্রিয়বৃদ্ধি হওয়ার কারণে তিনি ইন্দ্রিয়সামর্থ্য লাভ করেন (সোমপানস্যেন্দ্রিয়বৃদ্ধিহেতুত্বাদিন্দ্রিয়রূপত্ব)। এবং অগ্নিদেবের সেবা করার নিমিত্ত সেই ব্রাহ্মণ আপন দেবতার সাথে মিলিত হন। ত্যক্ত (উৎসৃষ্ট) পশু দানের ন্যায় ত্যক্ত সোমপায়ী (পিতামহ, পিতা ও স্বয়ং) পুনরায় সমৃদ্ধি লাভ করেন (প্রথমং পিতামহেন সোমপীথ উৎসৃষ্টঃ, পুনঃ পিতা, পুনরপি স্বেন তত উক্তপশুসাদৃশ্যাত্তদালম্ভঃ সমৃদ্ধ্যৈ সম্পদ্যতে)। শত্রুবিনাশের নিমিত্ত অভিচার কর্মের উদ্দেশে ব্ৰহ্মণস্পতিদেবকে শৃঙ্গরহিত বলদ অর্পণ কর্তব্য। যিনি ব্ৰহ্মণস্পতি দেবতার নিকট তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করেন, ব্ৰহ্মণস্পতি দেবতা তাঁর শত্রুকে ছিন্ন করে থাকেন এবং সেই শত্রু মরণ প্রাপ্ত হয় (তাদানীমেব বৈরী মরণং প্রাপ্লেতি)। শৃঙ্গরহিত বলদ ক্ষুরের তীক্ষ্ণধারের ন্যায় বজ্রসদৃশ (ভীষণ), বৈরিকে মারণে তা সম্পাদনযোগ্য। স্ক্যা নামক যজ্ঞীয় অস্ত্রবিশেষ যুপের (যজ্ঞীয় পশুবন্ধনের স্তম্ভের) আকৃতিবিশিষ্ট, তা বজ্রসদৃশ। তার দ্বারা শত্রু প্রহৃত হয়। শরময় কুশতৃণের (বহির) দ্বারা শত্রুকে হিংসা করা হয়ে থাকে। সেই কুশতৃণের শীর্ষভাগ বজ্রের অবয়ব হতে উৎপন্ন হওয়ার নিমিত্ত তা হিংসাত্মক (তেষাং চ তৃণানাং শীষ্ণৌৰ্বৰ্জাবয়বৈরুৎপন্নত্বাদ্ধিংসকত্বম)। অক্ষ নামক বৃক্ষবিশেষ হতে উৎপন্ন বৈভীদক কাষ্ঠের দ্বারা বিশেষভাবে শত্রুকে বিদারণ করা হয় (স চ বিশেষেণ ভেং শক্ত ইতি কৃত্বা বৈরিণং ভিনত্ত্যেব) ॥৫॥

[সায়ণাচার্য বলেন–ষষ্ঠে গ্রামকামাদীনাং পশ্বম্ভরানি বক্তব্যানি। অর্থাৎ এই ষষ্ঠ অনুবাকে গ্রামকামীগণের পক্ষে স্বতন্ত্র পশুদানের বিষয় কথিত হয়েছে]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- বাম্পত্যং শিতিপৃষ্ঠমা লভে গ্রামকামো যঃ কাময়েত পৃষ্ঠম সমানানাং স্যামিতি বৃহস্পতিমেব স্পেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনং পৃষ্ঠং সমানানাং করোতি গ্রাম্যেব ভবতি শিতিপৃষ্ঠো ভবতি বাহঁম্পত্যো হেষ দেবতয়া সদ্ধ্যৈ পৌষ্ণম্ ।। শ্যামমা লভেন্নামোহন্নং বৈ পূষা পূষণমেব সেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এহাস্মৈ অনুং প্র যচ্ছন্নদ এব ভবতি শ্যামো ভবত্যেতদ্বা অন্নস্য রূপং সমৃদ্ধ। মারুতং পৃণিমা লভেকামোহন্ন বৈ মরুতে মরুত এব যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবাশ্ম অন্নং যচ্ছত্যন্নাদ এব ভবতি পৃশ্নিৰ্ভৰ্বত্যেতা অন্নস্য রূপং সমৃদ্ধ্যৈ। ঐন্দ্রমরুণমা লভেতেন্দ্রিয়কাম ইন্দ্রমেব স্বেন বাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মিনি ন্দ্ৰিয়ং দধাতীন্দ্রিয়াব্যে ভবত্যরুণো মান্ ভবত্যেতদ্বা ইন্দ্রস্য রূপং সমৃদ্ধ্যৈ। সাৰিত্ৰমুপধ্বস্তমা সভেত সনিকামঃ সবিতা বৈ প্রসবানামীশে সর্তিারমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ সনিং প্র সুবতি দানকামা অস্মৈ প্রজা ভবন্তু্যপধ্বস্তো ভবতি সাবিত্রো হ্যেষঃ দেবতয়া সমৃদ্ধ্যৈ বৈশ্বদেবং বহুরূপমা লভেন্নামো বৈশ্বদেবং বা অন্ন বিশ্বানেব দেবাৎনে ভাগধেয়েনোপ ধাবিত ত এবাশ্ম অন্নং প্র যচ্ছত্যন্নাদ এব ভবতি বহুরূপো ভবতি বহুরূপং হ্যং সমৃদ্ধ্যৈ। বৈশ্বদেবং বহুরূপমা লভেত গ্রামকামো বৈশ্বদেবা বৈ সজাতা বিশ্বানে দেবাৎনে ভাগধেয়েনোপ ধাবত্রি ত এবাস্মৈ সজাতা প্র যচ্ছন্তি গ্রাম্যেব ভবতি বহুরূপো ভবতি বহুদেবতত্যা হ্যে সমৃদ্ধে। প্রাজাপত্যং পরমা লভে যস্যানাজ্ঞাতমিব জ্যোগাময়েৎ প্রাজাপত্যো বৈ পুরুষঃ প্রজাপতিঃ খলু বৈ তস্য বেদ যস্যানাজ্ঞাতমিব জ্যেগাময়তি প্রজাপতিমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনং তস্মাৎ স্রামান্মুঞ্চতি ভূপরো ভবতি প্রাজাপত্যো হেষ দেবতয়া সমৃদ্ধ্যৈ ॥৬।

মর্মার্থ- গ্রামস্বামীগণের মধ্যে আমি শ্রেষ্ঠ হবো–যিনি এরকম কামনা করেন, তিনি বৃহস্পতি দেবের উদ্দেশে শ্বেতপৃষ্ঠ (পশ্চাদ্ভাগ শ্বেত এমন) বৃষ প্রদান করবেন। বৃহস্পতি দেবতার নিকটে তার ভাগধেয় সহ যিনি গমন করেন, বৃহস্পতি দেবতা তাঁকে সমাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, তিনি শ্রেষ্ঠ গ্রামস্বামী হন। শ্বেতপৃষ্ঠ বৃষ বৃহস্পতি-সম্বন্ধি দেবরূপ (বাম্পত্যো হেষ দেবতয়া), এবং তা সমৃদ্ধির কারণভূত। অন্নকামী জন পূষাদেবতার উদ্দেশে শ্যামবর্ণ পশু অর্পণ করবেন। যিনি পূষাদেবের নিকট তার ভাগধেয় সহ গমন করেন, পুষাদেব তাকে অন্ন প্রদান করেন; তিনি অন্নের ভোগকারী হয়ে থাকেন। (তিনি) অন্নের দ্বারা পোষণ করেন বলে তাকে পূষা বলা হয় (অন্নস্য পোশকত্বাৎ পুষত্বম)। পত্র, শাক ইত্যাদি অন্নের রূপ শ্যামবর্ণ, এবং তা সমৃদ্ধির কারণভূত। অন্নকামী ব্যক্তির মরুৎগণের উদ্দেশে শ্বেতবর্ণ পশু প্রদান কর্তব্য। যিনি মরুৎগণের উদ্দেশে তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করেন, মরুৎদেবগণ তাঁকে অন্ন প্রদান করেন; তিনি অন্নের ভক্ষণকারী হয়ে থাকেন। শ্বেত বর্ণ হল শালি-অন্নের রূপ, এবং তা সমৃদ্ধির কারণভূত। ইন্দ্রিয়ের সামর্থকামী জন ইন্দ্রিয়-সামর্থ্য লাভের নিমিত্ত ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে অরুণ বর্ণের পশু প্রদান করবেন। ইন্দ্রের নিকট যিনি তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করেন, ইন্দ্র তাঁকে ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য প্রদান করে থাকেন। অরুণবর্ণের পশু মহতী-সম্পন্ন হয়, এটি সহস্রাক্ষ ইন্দ্রের বাহুল্যের স্বরূপ, এবং তা সমৃদ্ধির কারণভূত। পরকর্তৃক দানকামী জন সবিতাদেবের উদ্দেশে মিশ্রবণশালী পশু অর্পণ করবেন। সবিতা হলেন প্রেরণাদানকারী দেবতা। যিনি সবিতাদেবের নিকট তার ভাগ সহ উপস্থিত হন, সবিতাদেব তাঁর নিকট দানী জনকে প্রেরণ করেন, তিনি (অর্থাৎ পরের নিকট হতে দান আকাঙ্ক্ষী জন) দাতাকে প্রাপ্ত হন। সঙ্কীর্ণবর্ণ (উপধ্বস্তঃ) অর্থাৎ মিশ্রবণশালী পশু হলো সবিতাদেবের সম্বন্ধি, এবং তা সমৃদ্ধির হেতুভূত। অন্নকামী জন বৈশ্বদেবতার উদ্দেশে বহুরূপ পশু অর্পণ করবেন। সকল (বিশ্বনেব) দেবতার নিকট তাদের ভাগধেয় সহ গমন করলে বৈশ্বদেব তাঁকে অন্ন প্রদান করে থাকেন; সেই জন অন্নের ভক্ষণকারী হয়ে থাকেন। বহুরূপ হলো ভোজ্য (ভক্ষণ করার যোগ্য), লেহ্য (আস্বাদ করার যোগ্য) ও চোষ্য (চোষণের যোগ্য) ভেদে অন্নের বহুরূপত্ব, এবং তা সমৃদ্ধির কারণভূত। যিনি গ্রামকামী, তিনি বৈশ্যদেবের উদ্দেশে বহুরূপ (বহুবর্ণশালী) পশু প্রদান করবেন। ভ্রাতা ভৃত্য ইত্যাদির (সজাতা) সাথে সকল দেবতার নিকট তাঁদের ভাগধেয় সহ উপস্থিত হলে তারা তাঁকে ভ্রাতা ভৃত্য ইত্যাদি প্রদান করে থাকেন; সেই জন গ্রামাধিপত্য লাভ করেন। সকল দেবতা বহুবর্ণশালী পশুর অধিপতি (স্বামিত্বাৎ পশোহুদেবত্যত্ব), তাতে (অর্থাৎ বহুবর্ণত্বের নিমিত্ত) সমৃদ্ধি লাভ হয়। যাঁর রোগবিশেষের লক্ষণ দেখা যায় না, (অথচ) বলক্ষয় ও ক্ষীণ (কৃশ) দেখা যাচ্ছে, সেই অজ্ঞাত রোগে আগ্রস্ত ব্যক্তি প্রজাপতির উদ্দেশে শৃঙ্গরহিত বৃষ অর্পণ করবেন। সকল পুরুষ প্রজাপতি হতে উৎপন্ন হওয়ার নিমিত্ত সেই রোগবিশেষ চিকিৎসকের অজ্ঞাত হলেও প্রজাপতির জ্ঞাত (প্রজাপতিনা জ্ঞায়তে)। এইরকম ব্যাধিগ্রস্থ জন প্রজাপতির নিকট তার ভাগধেয় সহ গমন করলে, প্রজাপতি তাকে দীর্ঘকালব্যাপী সেই অজ্ঞাত রোগ হতে মুক্ত করেন (অর্থাৎ নিরাময় করেন)। শৃঙ্গহীন পশুর অধিপতি বা দেবতা প্রজাপতি, এই নিমিত্ত এতে সমৃদ্ধি লব্ধ হয় ॥৬

 [সায়ণাচার্য বলেন–অথ, সপ্তমে ব্রহ্মবচসকামাদীনাং যথাযোগং পশ্বম্ভরানি বিধাতুং প্রস্তেীতি। অর্থাৎ–এই অনুবাকে ব্রহ্মতেজঃকামী ইত্যাদির পক্ষে স্বতন্ত্র পশুদানের বিষয় কথিত হয়েছে]

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- বষট্‌কারো বৈ গায়ত্রিয়ৈ শিরোহচ্ছিনত্তস্যৈ রসঃ পরাহপতত্তম বৃহস্পতিরূপাগৃহাৎ সা শিতিপৃষ্ঠা শাহভবদ্যো দ্বিতীয়ঃ পরাপতত্তম মিত্রাবারুণবুপাগৃহীতাং সা দ্বিরূপা বশাহভব যস্তৃতীয়ঃ পরাপতত্তং বিশ্বে দেবা উপাগৃহুৎ সা বহুরূপা বশাহভবঘশ্চতুর্থঃ পর পতৎ স পৃথিবীং প্রাবিশত্তং বৃহস্পতিরভি অগ্রহাদবোয়ং ভোগায়েতি স উক্ষবশঃ সমভবতল্লাহিতং পরাপতত্তদ্রুদ্র উপাত্মাৎ সা রৌদ্রী রোহিণী বশাহভযদ্বাৰ্হম্পত্যাং শিতিপৃষ্ঠামা লভে ব্ৰহ্মবর্ডসকামো বৃহস্পতিমেব ঋেন ভাগদেয়েনোপ ধাবতি স এস্মিন্ ব্ৰহ্মবéসং দধাতি ব্রহ্মবর্জস্যে ভবতি। ছন্দসাং বা এষ রসো যশা রস ইব খলু বৈ ব্রহ্মবéসং ছন্দসামেব রসেন রসং ব্ৰহ্মবৰ্চমব রুন্ধে। মৈত্রাবরুণীং দ্বিরূপামা সভেত বৃষ্টিকামো মৈত্রং বা অহৰ্বারুণী রাত্রিরহো রাত্রাভ্যাং খলু বৈ পর্জনন্যা বৰ্ষতি মিত্রাবরুণাবেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধবতি তাবেবাশ্ম অহোরাত্ৰাভ্যাং পর্জন্যং বর্ষয়তচ্ছন্দসাং বা এষ রসো যশা রস ইব খলু বৈ বৃষ্টিচ্ছন্দসামেব রসেন রসং বৃষ্টিমব রুন্ধে। মৈত্রাবরুণীং দ্বিরূপামা লভে প্রজাকামো মৈত্রং বা অহৰ্ব্বারুণী রাত্রিরহো রাত্রাভ্যাং খলু বৈ প্রজাঃ প্র জায়ন্তে মিত্রাবরুণাবেব স্বেন বাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাশ্ম অহোরাত্রাব্যাং প্রজাং এ জনয়তচ্ছন্দসাং বা এষ রসো যশা রস ইব খলু বৈ প্রজা ছন্দসামেব রসেন রসং প্রজামব রুন্ধে। বৈশ্বদেবীং বহুরূপামা লভেন্নকামো বৈশ্বদেবং বা অন্নং বিশ্বানেব দেবাৎস্বেন ভাগদেয়েনোপ ধাবতি ত এবাম্মা অন্নং প্র যচ্ছত্যন্নদ এব ভবতি ছন্দসাং বা এস রসো যদ্বশা রস ইব খলু বা অন্নং ছন্দসামেব রসেন রসমন্নমব রুন্ধে। বৈশ্বদেবীং বহুরূপামা লভেত গ্রামকামো বৈশ্বদেবা বৈ সজাতা বিশ্বানেব দেবাৎনে ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবাস্মৈ সজান প্র যচ্ছস্তি গ্রাম্যেব ভবতি ছন্দসাম বা এস রস্যে যদ্বশা রস ইব খলু বৈ সজাতাচ্ছন্দসামেব রসেন রসং সজাতানব রুদ্ধে। বাম্পত্যমুক্ষবশমা লভে ব্রহ্মবসকামো বৃহস্পতিমে স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মিন্ ব্ৰহ্মবéসম্ দধাতি ব্ৰহ্মবéস্যে ভবতি বশং বা এষ চরতি যদুক্ষা বশ ইব খলু বৈ ব্রহ্মবéসং বশেনৈব বশং ব্রহ্মবর্ডসম রুন্ধে। রোদ্রীং রাহিণীমা লভেভিচরন রুদ্রমেব স্কেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তস্মা এবৈনমা বৃশ্চতি তাজগার্তিচ্ছতি রোহিণী ভবতি রৌদ্রী হ্যে দেবতয়া সমৃদ্ধ স্ফ্যো ফুপো ভবতি বজ্রো বৈ স্ক্যো বজ্ৰমেবাস্মৈ প্র হরতি শরময়ং বহিঃ শৃণাত্যেবৈন বৈভীদক ইস্নো ভিনত্তেবৈনম্ ॥৭॥

মর্মার্থ- বৌষড় নামক মন্ত্রের অভিমানী দেব বষট্‌কার, গায়ত্রীর সাথে তার বিরোধ ছিল। সেই বষকার দেব (একদা) গায়ত্রীর মুণ্ডচ্ছেদ করলে গায়ত্রীর সেই ছিন্ন মুণ্ড হতে জল ও রক্ত নির্গত হয়; সেই জল ও রক্ত হতে অনেক রকম বন্ধ্যা গাভী উৎপন্ন হয় (অনেকাবধা বশা উৎপন্নাঃ)। প্রথমে বৃহস্পতিদেবতা যা গ্রহণ করেন, তা তাঁর প্রিয় শ্বেতপৃষ্ঠা গাভী হয়; দ্বিতীয় বারে মিত্র ও বরুণদেবতাদ্বয় যা গ্রহণ করেন, তা দ্বিরূপা অর্থাৎ দুই বর্ণশালিনী বন্ধ্যা গাভী হয়; তৃতীয় বারে বিশ্বদেব যা গ্রহণ করেন, তা বহুরূপা অর্থাৎ বহুবর্ণযুক্তা বন্ধ্যা গাভী হয়। চতুর্থ পর্যায়ে ভূমিতে পতিত রস বৃহস্পতিদেব তাঁর ভোগের নিমিত্ত গ্রহণ করেন, এবং তা বিনষ্টবীর্ষ বৃষ হয়। যে রক্ত পতিত হয়েছিল, তা রুদ্রদেব গ্রহণ করেন; তা হতে রোহিণী অর্থাৎ রক্তবর্ণশালিনী বন্ধ্যা গাভী হয়। যিনি ব্রহ্মবৰ্চ অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞানজনিত তেজঃ কামনা করেন, তিনি বৃহস্পতি দেবতার নিকট তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করলে বৃহস্পতিদেব তাকে ব্রহ্মতেজঃ প্রদান করেন এবং তিনি ব্রহ্মবচসী হয়ে থাকেন। গায়ত্রীছন্দের রসরূপ হলো বন্ধ্যা গাভী। সোম আহরণের পক্ষে অন্য ছন্দ অপেক্ষা গায়ত্রী প্রশস্তা। এই নিমিত্ত বশা অর্থাৎ বন্ধ্যা গাড়ী সকল ছন্দের সারস্বরূপ (তস্মাদ্বশা সবেষাং ছন্দসাং সারঃ)। বন্ধ্যা গাভীরূপ ছন্দরসের দ্বারা ইহলোক ও পরলোকসম্বন্ধীয় পূজাহেতু রসরূপ ব্ৰহ্মতেজঃ লব্ধ হয়। বৃষ্টির কামনা পূর্বক মিত্র ও বরুণদেবতার উদ্দেশে দুই বর্ণশালিনী বন্ধ্যা গাভী অর্পণ কর্তব্য। মিত্রদেবের সূর্যত্ব অর্থাৎ আলোকত্ব হেতু তিনি দিবাভাগে এবং বরুণদেবের অন্ধকাররূপ আবরণত্ব হেতু তিনি রাত্রে–এইরকম ভাবে দিবারাত্র মেঘ বৃষ্টি দান করে। মিত্র ও বরুণদেবের নিকট তাঁদের ভাগধেয় সহ উপস্থিত হলে তারা অহোরাত্ৰব্যাপী মেঘ হতে বৃষ্টি দান করেন। বন্ধ্যা গাভীরূপ ছন্দরসের দ্বারা বৃষ্টির উৎপত্তি। সেই কারণে ছন্দের রসে বৃষ্টি লব্ধ হয়ে থাকে। এইরকম প্রজাকামনায় মিত্রদেব ও বরুণদেবের উদ্দেশে দুই বর্ণযুক্ত বন্ধ্যা গাভী প্রদান করলে মিত্রদেব ও বরুণদেব পুত্র প্রদান করেন। মিত্র ও বরুণদেবতার নিকট তাঁদের ভাগধেয় সহ উপস্থিত হলে তারা অপত্যের উৎপত্তি সাধিত বা সম্পাদিত করে থাকেন। অন্নকামী জন বৈশ্বদেবীর উদ্দেশে বহুবর্ণযুক্তা বন্ধ্যা গাভী অর্পণ কর্তব্য। সর্ব দেবতার ভোজ্যত্বের কারণে অন্নের বৈশ্বদেবত্ব এবং জীবনহেতুত্বের কারণে অন্নের সারত্ব বা রসসাম্য (সারত্বসসাম্য। সর্বেদেবের নিকট তাদের ভাগধেয় সহ যিনি গমন করেন, তাকে সেই দেবগণ অন্ন প্রদান করে থাকেন; সেই ব্যক্তি অন্নের ভোক্তা হন। ছন্দের রসের দ্বারা অন্ন লব্ধ হয়ে থাকে। এইরকম গ্রামকামী জন বৈশ্বদেবীর উদ্দেশে বহুবর্ণযুক্তা বন্ধ্যা গাভী প্রদান করলে, সকল দেবতা তাঁকে ভ্রাতা ভৃত্য ইত্যাদি প্রদান করেন; সেই ব্যক্তি গ্রাম লাভ করেন। যিনি বৈশ্বদেবীর নিকট তার ভাগধেয় সহ গমন করেন, বৈশ্বদেবী তাকে ভ্রাতা ভৃত্য ইত্যাদি ও গ্রাম প্রদান করে থাকেন; সেই গ্রামকামী জন গ্রাম লাভ করে থাকেন। ব্রহ্মতেজঃ কামনা পূর্বক বৃহস্পতি দেবতার ভাগধেয়রূপ ব্যর্থবীর্য (বশত্বসম্পন্ন) বৃষ অর্পণ কর্তব্য। যিনি বৃহস্পতিদেবের ভাগধেয় সহ তার নিকট গমন করেন, বৃহস্পতি দেব তাঁকে ব্ৰহ্মতেজঃ প্রদান করে থাকেন, তিনি ব্রহ্মজ্ঞানজনিত তেজঃসম্পন্ন হন। এইরকম বৃষ যেমন ধেনুর সাথে বনে চরতে যায় এবং পুনরায় তাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গৃহে প্রত্যাবর্তন করে তাদের অধীন হয়, সেইরকম ব্রহ্মতেজঃ প্রাপ্ত জনও নিয়মের অধীন হয়, অধীন হয়ে চলেন। শত্রুর বিনাশের নিমিত্ত অভিচার ক্রিয়া সাধনের ইচ্ছায় রুদ্রদেবের উদ্দেশে রুদ্রদেবতাকে রক্তবর্ণ পশু প্রদান করলে রুদ্রদেব তাঁর (অর্থাৎ সেই প্রদাতার) শত্রুগণকে বিনাশ করেন। স্ক্যা নামক যজ্ঞীয় অস্ত্রবিশেষ যুপের (যজ্ঞীয় পশুবন্ধন-স্তম্ভের) আকৃতিবিশিষ্ট, তা বজ্রসদৃশ। তার দ্বারা শত্রুকে প্রহার করা হয়। শরময় কুশতৃণের (বহির) দ্বারা শত্রুকে হিংসা করা হয়ে থাকে। শরময় কুশতৃণের শীর্ষভাগ বজ্রের অবয়ব হতে উৎপন্ন হওয়ার কারণে তা হিংসাত্মক। অক্ষ নামক বৃক্ষবিশেষ হতে উৎপন্ন বৈভীদক কাষ্ঠের দ্বারা শত্রুকে বিশেষভাবে বিদারণ করা হয় ॥৭॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমে পুনব্রহ্মবৰ্চসকামাদীনাং পশ্বম্ভরানি বিধাস্যন্নাদৌ কস্যচিৎ পশোবিধানায় প্রস্তৌতি–। এই অনুবাকে পুনরায় ব্রহ্মতেজঃকামী ইত্যাদি গণের পক্ষে স্বতন্ত্র পশুদানের বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- অসাবাদিত্যো ন ব্যরোত তস্মৈ দেবাঃ প্রায়শ্চিত্তিমৈচ্ছতম্মা এতাম সৌরীং শ্বেতাং বশামালভ তয়ৈবাম্মি রুচমদধুর্যো ব্ৰহ্মবসকামঃ স্যাত্তম্মা এতাং সৌরীং শ্বেতাং বশামা লভেমুমেবাহদিত্যং স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাশ্মি ব্ৰহ্মবéসং দধাতি ব্ৰহ্মবর্জস্যে ভবতি। বৈদো যুপো ভবতসৌ বা আদিত্যো যতোহজায়ত ততো বিহু উদতিষ্ঠৎ সযোনন্যব ব্ৰহ্মবৰ্চমব রুন্ধে ব্রাহ্মণত্যাং বকর্ণীমা লভেভিচরন বারুণ দশকপালং পুরস্তান্নিপেরুণেনৈব ভ্রাতৃব্যং গ্রাহয়িত্বা ব্ৰহ্মণা তৃণুতে বকর্ণী ভবত্যেতদ্বৈ ব্রহ্মাণো রূপং সমৃদ্ধ্যৈ স্ফো যুপো ভবতি বজ্রো বৈ ক্ষ্যো বজ্রমেৰাস্মৈ হরতি শরময়ম বর্হিঃ শৃণাতি এবং বৈভীদিক ইগো ভিনত্ত্যেবৈং বৈষ্ণব বামনমা নভেত। যং যজ্ঞো নোপনমেদ্বিষ্ণুৰৈ যজ্ঞো বিষ্ণুমেব নে ভাগধেয়েনোপ দাবতি স এবাস্মৈ যজ্ঞং প্র যচ্ছত্যপৈনম যজ্ঞো নমতি বামনো ভবতি বৈষ্ণববা হ্যেষ দেবতয়া সদ্ধ্যৈ । ত্বাং বড়বমা লভে পশুকাম বৈ পশুনাং মিথুনানাং প্রজনয়িতা ত্বষ্টারমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ পশুস্মিথুনান প্র জনয়তি প্রজা হি বা এতস্মিন্ পশবঃ প্রবিষ্টা অথৈ পুমাৎসরড়বঃ সাদেব প্রজাং পশূনব রুন্ধে। মৈত্র শ্বেতমা সভেত সংগ্রামে সংযত্তে সময়কামো মিত্ৰমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনং মিত্ৰেণ সংনয়তি বিশালো ভবতি ব্যবসায়য়ত্যেনৈং প্রজাপতং কৃষ্ণমা লভে বৃষ্টিকামঃ প্রজাপতির্বৈ বৃষ্টা ঈশে প্রজাপতিমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মৈ পৰ্জন্যং বয়তি কৃষ্ণো ভবত্যেতদ্বৈ বৃষ্ট্যে রূপম রুপেণৈব বৃষ্টিমব রুন্ধে শবলো ভবতি বিতমেবাস্মৈ জনয়িত্বা বর্ষয়ত্যবাশূঙ্গো ভবতি বৃষ্টিমেবাস্মৈ নি যচ্ছতি ॥৮॥

মর্মার্থ- কোনও এক সময়ে আদিত্যদেব দীপ্তিরহিত হয়ে পড়েন। দেবগণ এর প্রতিকারের ইচ্ছা করে সূর্যদেবের উদ্দেশে শ্বেতবর্ণযুক্তা বন্ধ্যা গাভী অর্পণ করলে আদিত্যদেব পুনরায় দীপ্তি প্রাপ্ত হন। যিনি ব্রহ্মতেজঃকামী, তিনি সূর্যের উদ্দেশে শ্বেতবর্ণযুক্তা বন্ধ্যা গাভী অর্পণ করবেন। যিনি আদিত্যের নিকটে তার ভাগধেয় সহ গমন করেন, তিনি তাকে ব্রহ্মতেজঃ দান করেন; সেই ব্যক্তি ব্রহ্মবৰ্চসী (অর্থাৎ ব্রহ্মতেজঃসম্পন্ন) হন (ব্রহ্মবéস্যের ভবতি)। বিশ্ব কাষ্ঠ দ্বারা ঘূপ হবে; সূর্য ও বিশ্ব সহোদর হওয়ায় সমযোনিজ (সূৰ্য্যবিয়োঃ সহোদরাত্বাৎ সযযানিত্ব)। এইরকম ব্ৰহ্মতেজঃও সমযোনিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আপন পিতা ইত্যাদির যে বেদশাখায় অধ্যয়ন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে প্রবৃত্তি, নিজেরও তাতে প্রবৃত্তি জন্মে; এই কারণেই ব্ৰহ্মতেজঃ সমান যোনিতে নিজেরও তাতে প্রবৃত্তি জন্মে; এই কারণেই ব্রহ্মতেজঃ সমান যোনিতে লব্ধ বলে কথিত হয়েছে। যিনি অভিচার কর্ম সম্পাদনে ইচ্ছুক, তিনি ব্রহ্মণস্পতি দেবের উদ্দেশে পিঙ্গলবর্ণযুক্তা (বকর্ণী) গাভী প্রদান করবেন। বরুণদেবের উদ্দেশে দশ কপাল নির্বপণ পূর্বক তার দ্বারা প্রথমে শত্রুর (ভ্রাতৃবস্য) রোগ উৎপাদিত করে পরে ব্রহ্মণস্পতি দেবতার দ্বারা শত্রুর হনন সাধিত করতে হবে। পিঙ্গলবর্ণযুক্তা গাভী ব্রহ্মার রূপ, এবং তা সমৃদ্ধির হেতুভূত হয়। স্ক্যা নামক যজ্ঞীয় অস্ত্রবিশেষের আকৃতি যুপের (অর্থাৎ যজ্ঞীয় পশু বন্ধনের স্তম্ভের) ন্যায় বজ্রতুল্য। এর দ্বারা শত্রুকে প্রহার করা হয়। শরময় কুশতৃণের দ্বারা শত্রুকে হিংসা করা হয়। সেই কুশতৃণের শীর্ষভাগ বজ্রের অবয়ব হতে উৎপন্ন হওয়ার নিমিত্ত তা হিংসাত্মক। অক্ষ নামক বৃক্ষবিশেষ হতে উৎপন্ন বৈভীক কাষ্ঠের দ্বারা বিশেষভাবে শত্রুকে বিদারণ করা হয়। অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি মহাযজ্ঞ যিনি অনুষ্ঠিত করতে ইচ্ছুক, তিনি বিষ্ণুদেবতার উদ্দেশে হ্রস্বকায় পশু অর্পণ করবেন। যজ্ঞ যাঁর নিকট আগত হন না, যজ্ঞরূপ বিষ্ণুর নিকট তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করলে বিষ্ণু তাকে যজ্ঞ প্রদান করেন, যজ্ঞ তার নিকট আগমন করেন। হ্রস্বকায় পশুর দেবতা বিষ্ণু, এর দ্বারা সমৃদ্ধি লব্ধ হয়ে থাকে। যিনি পশু কামনা করেন, তিনি ত্বষ্টার উদ্দেশে বড়বা নামক অশ্ব প্রদান করবে। ত্বষ্টুদেব পশুমিথুনের প্রজনয়িতা; যিনি তাঁর ভাগধেয় সহ তার নিকটে গমন করেন, ত্বদেব তার নিমিত্ত মিথুন পশু উৎপন্ন করে থাকেন। সেই জন শীঘ্র পশু ও প্রজা লাভ করেন। পরের অর্থাৎ বিপক্ষের সেনাকে যিনি জয় করতে প্রতিজ্ঞা করবেন কিংবা শত্রুর সাথে যিনি সন্ধিস্থাপনে ইচ্ছুক হন, তিনি সংগ্রামের সূচনায় মিত্রদেবতার উদ্দেশে শ্বেত পশু অর্পণ করবেন। সন্ধি করণের ইচ্ছা পূর্বক মিত্রদেবতার ভাগধেয় সহ তার নিকট গমন করলে, মিত্রদেবতা তাকে (অর্থাৎ সেই ভাগধেয় প্রদানকারীকে) কার্যসাধনের উপযুক্ত সহকারীর সাথে যুক্ত করেন অথবা শত্রুকে মিত্রভাবাপন্ন করে তার সাথে যোজিত বা মিলিত করে (যদ্ধা বৈরিণো মিত্রত্বমাপাদ্য তেন মিত্রেণ যোজয়তি)। এই প্রতিজ্ঞাকারী জনের ধৈর্য উৎপাদন করে আপন কার্য-সাধনের নিশ্চয়তা আনয়ন করেন। বৃষ্টির কামনায় প্রজাপতিদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণযুক্ত পশু অর্পণ কর্তব্য। প্রজাপতি বৃষ্টির নিয়ামক; যিনি প্রজাপতির নিকটে তার ভাগধেয় সহ উপস্থিত হন, প্রজাপতি তার জন্য মেঘ হতে বারি বর্ষণ করে থাকেন। কৃষ্ণবর্ণ, হলো বৃষ্টির রূপ, তার দ্বারা বৃষ্টি লব্ধ হয়। সর্বশরীরে কৃষ্ণবর্ণ, শুধু উদর হতে স্তনপ্রদেশ পর্যন্ত যে পশুর শ্বেতবর্ণ-মিশ্রিত (বুদুরাদ্যধস্তনপ্রদেশবিশেষেষু শৈত্যমিশ্রণং), সেই রকম পশু অর্পণ করলে বিদ্যুৎসহ বৃষ্টির উৎপত্তি হয়। সেই পশুর শৃঙ্গ নিম্নের দিকে হলে (অধোমুখত্বেন) নিম্নভিমুখী বৃষ্টির ধারা দেখা যায় ॥৮॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অথ নবমেহন্নাদ্যকামাদীনাং পশূন্বিধিৎসুরাদৌ ক্কচিৎ পশুং বিধাতুং।–এই নবম অনুবাকে অন্ন, রোগারাগ্য, পুষ্টি ইত্যাদি কামীগণের পক্ষে পশুদানের বিষয় কথিত হয়েছে]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- বরুণং সুষুবাণমন্নাদ্যং নোপানমৎ স এং বারুণীং কৃষ্ণাং বোপশ্যত্তাং স্বায়ৈ দেবতায়া আহলভত তততা বৈ তমন্নাদ্যমুপানমদ্যমলমন্নাদ্যায় সন্তমন্নাদ্যং নোপনমেৎ স এতাং বারুণীং কৃষ্ণাম বশামা লভেত বরুণমেব স্বেন ভাগদেয়েনোপ ধাবতি স এবাশ্ম অন্নং প্র যছত্যন্নাদ এব ভততি কৃষ্ণা ভবতি বারুণী হ্যে দেবতয়া সমৃদ্ধ্যৈ মৈত্রং শ্বেতমা সভেত বারুণং কৃষ্ণমপাম চৌষধীনাং চ সন্ধাবনুকামো মৈত্ৰীৰ্বা ওষধয়ো বারুণীরোপোহপাম চ খলু বা ওষধীনাং চ রসমুপ জীবামো তিত্রাবরুণাবেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাশ্ম অন্নং প্র যচ্ছতোহন্নাদ এব ভবতি অপাং চৌষধীনাং চ সন্ধাবা লভত উভয়স্যাবরুদ্ধ্যৈ বিশাখো ফুপো ভবতি দে হ্যেতে দেবতে সমৃদ্ধ্যৈ মৈত্রম শ্বেতমা সভেত বারুণং কৃষ্ণং জ্যোগাময়াবী যন্মৈত্রো ভবতি মিত্রেণৈবান্মৈ বরুণং শময়তি যদ্বারুণঃ সাক্ষাদেবৈনং বরুণপাশাঞ্চ্যুত যদীতাসুর্ভবতি জীবত্যেব দেবা বৈ পুষ্টিং নাবিন্দ তাং মিথুনেহপশ্যন্তস্যাং ন সমরাধয়স্তা বশ্বিনাবক্রমাবয়ে বৈষ মৈতস্যাং বদধ্বমিতি সাহখিনোরেভবদ্যঃ পুষ্টিকামঃ স্যাৎ স এতামাশ্বিনীং যমীং বশামা লভেশিনাবেব স্পেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাস্মিন পুষ্টিং ধত্তঃ পূষ্যতি প্রজয়া পশুভিঃ ॥৯॥

মর্মার্থ- সোমের অভিষবকারী ও অন্নের প্রদানকারী বরুণদেবতাকে যিনি লাভ করতে পারেননি, তিনি (একদা) বরুণ-সম্বন্ধি কৃষ্ণবর্ণযুক্তা বন্ধ্যা গাভী দর্শন করেছিলেন; সেই গাভীটিকে তার দেবতার উদ্দেশে অর্পণপূর্বক তিনি (সেই দানকারী) অন্নের ভক্ষণকারক হয়েছিলেন। শালি অন্ন পায়স ইত্যাদি ভোজনে সমর্থ হয়েও মনুষ্যজনের অভাব ইত্যাদির কারণে যিনি তা প্রাপ্ত হন না, তিনি বরুণ দেবতার উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণা বন্ধ্যা গাভী প্রদান করবেন। বরুণ দেবতার সমীপে তার ভাগধেয় সহ গমন করলে তিনি তাকে অল্পের ভক্ষণকারী করেন। বরুণদেবতা মেঘের দ্বারা আবরণ সৃষ্টি পূর্বক কৃষ্ণবর্ণ (অন্ধকার) সম্পন্ন করে থাকেন। এই কারণে বরুণ কৃষ্ণবর্ণযুক্ত পশুর দেবতা; এর দ্বারা সমৃদ্ধি লব্ধ হয়ে থাকে। অন্নকামী জন বর্ষা ও শরঙ্কালের সন্ধিক্ষণে নদী ও ক্ষেত্রের মধ্যে (ঋতত্বাৰ্ম্মধ্যে নদীক্ষেত্ৰয়োৰ্ম্মধ্য ইতি) মিত্ৰদেবের উদ্দেশে শ্বেতবর্ণযুক্ত পশু ও বরুণদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণযুক্ত পশু অৰ্পণ কর্তব্য। মিত্রদেব ওষধির দেবতা এবং বরুণদেব জলের দেবতা; ওষধি ও জলের দ্বারা জীব নিশ্চিতভাবে জীবন ধারণ করে। মিত্রদেব ও বরুণদেবের উদ্দেশে তাদের ভাগধেয় সহ গমন করলে তারা সেই জনকে অন্ন প্রদান করেন এবং তিনি অর্থাৎ (সেই গমনকারী) অন্নের ভোজনাধিকারী হন। জল ও ওষধির সন্ধিকালের প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে উভয়ের রসে জীবন ধারণের প্রশস্তির নিমিত্ত (সন্ধৌ প্রয়োগ উভয়রসোপজীবনেন প্রশস্তঃ)। বিবিধ শাখাযুক্ত বৃক্ষ বিশাখা (বিবিধে শাখে যস্যাসৌ বিশাখঃ)। এই রকম বিশাখায় যুপ হয়। এই দুই দেবতা (মিত্র ও বরুণ) সমৃদ্ধির কারণ। দীর্ঘকালের রোগীর পক্ষে দ্বি-পশু সম্পৰ্কীয় কর্মের কথা বলা হচ্ছে। তিনি (অর্থাৎ দীর্ঘকালব্যাপী রোগভোগী জন) মিত্রদেবের উদ্দেশে শ্বেতবর্ণযুক্ত এবং বরুণদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণশালী পশু অর্পণ করবেন। মিত্রদেবতা ক্রুর বরুণদেবকে শান্ত করেন, তিনি (অর্থাৎ মিত্রদেব) তাকে (অর্থাৎ সেই পশুদাতা রোগভোগী জনকে) বরুণপাশ হতে মুক্ত করেন (বরুণপাশাম্মোচয়তি); সেই জন বিগতপ্রাগ হলেও জীবিত হন। দেবগণ প্রজা ও পশুর সমৃদ্ধিরূপ পুষ্টি (প্রজাপশুসমৃদ্ধিং পুষ্টিঃ) দর্শন করতে পারেননি, তা মনুষ্যমিথুনে সম্ভবের উপায় দর্শন করেছিলেন, কিন্তু তা সাধন করতে অপারাগ হয়েছিলেন। তখন তারা অশ্বিদেবদ্বয়কে বলেছিলেন, এই পুষ্টির সাধন বিনা তোমরা আমাদের সম্ভাষণ করো না (পুষ্টাবাবাভ্যাং বিনা মা বদধ্বং)।তখন সেই পুষ্টি অশ্বিযুগলের অধীন হয়েছিল। যিনি পুষ্টি কামনা করেন, তিনি অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের উদ্দেশে যমীং বশামা পশু অর্পণ করবেন। যিনি পুষ্টিকামী হয়ে অশ্বিদ্বয়ের নিকট তাদের ভাগধেয় সহ উপস্থিত হন, অশ্বিযুগল তাকে পুষ্টি প্রদান করেন; সেই পুষ্টিকামী জন প্রজা ও পশুর পুষ্টি লাভ করে থাকেন। (এখানে অশ্বিদ্বয়ের ভাগধেয় পশু হলো যমীং বশামা। একই গর্ভে সহজাত যমজের মধ্যে যেটি স্ত্রী, সে যমী এবং যে যমী বন্ধ্যা, সে বশামা) ॥৯॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অথ দশমেনুবাকে নৈমিত্তিকাঃ পশবো বিধাতব্যাঃ। তত্র দুব্রাক্ষণস্য সোমপানেচ্ছাং নিমীত্তীকৃত্য পশুং বিধত্তে। অর্থাৎ–এই দশম অনুবাকে সোম-পানেচ্ছুক দুব্রাহ্মণের নিমিত্ত পশুদানের বিধি কথিত হয়েছে]

.

দশম অনুবাক

মন্ত্র- আশ্বিনং ধূষলোমমা লভে যো দুব্রাহ্মণঃ সোমং পিপাসেদশ্বিনৌ বৈ দেবানামসোমোবাস্তাং তৌ পশ্চা সোমপীথং প্ৰাহপুতামস্বিনাবেতস্য দেবতা যো দুব্রাহ্মণঃ সোমং পিপাসত্যশ্বিনাবেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাস্মৈ সোমপীথং প্র যচ্ছত উপৈনং সোমপীথো নমতি যন্ধুম্রো ভবতি ধূৰ্ষিমাণমেবাশ্মদপহস্তি ললামঃ ভবতি মুখত এবাস্মিন্তেজো দধাতি বায়ব্যং গোমৃগমা লভতে যমজঘ্নিবাংসমভিশংসেয়ুরপূতা বা এতং বাগৃচ্ছতি যমজগ্নিবাংসমভিশংসন্তি নৈষ গ্রাম্যঃ পশুৰ্নাহরণ্যে যগোমৃগো নেবৈষ গ্রামে। নারণ্যে যমজঘ্নিবাংসমভিশংসন্তি বায়ুৰ্বৈ দেবানাং পবিত্রং বায়ুমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এব এনং পবয়তি পরাচী বা এতস্মৈ ব্যুচ্ছত্তী ব্যুচ্ছতি তমঃ পাপ্পানম প্ৰ বিশতি যস্যাহশ্বিনে শস্যমানে সূৰ্য্যো নাহবির্ভবতি সৌৰ্য্যম বহুরূপমা লভেমুমেবাহদিত্যং স্কেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাশ্বাত্তমঃ পাআনমপ হস্তি প্রতীচ্যস্মৈ বুচ্ছত্যপ তমঃ পাম্মানং হতে ১০

মর্মার্থ- তিনপুরুষ ক্রমে যার বেদ (বেদাধ্যয়ন) ও বেদী (এখানে যজ্ঞসাধন অর্থে) বিচ্ছিন্নতাপ্রাপ্ত হয়েছে, তিনি শুদ্রতুল্য দুব্রাহ্মণ; সেই ব্যক্তি যদি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সোম পানের আকাঙ্ক্ষা করেন, তবে অশ্বিদেবদ্বয়ের উদ্দেশে ললাটে শ্বেতচিহ্ন লাঞ্ছিত ও শরীরের অবশিষ্টে ধূ (অর্থাৎ ধূসর বা মলিনশ্বেত) বর্ণশালী পশু অর্পণ করবেন। দেববর্গের মধ্যে চিকিৎসক (ভিষজ) হওয়ায় অশ্বিযুগল পূর্বে সোমপায়ী ছিলেন না (সোমপাতৃত্বং নাস্তি), পরে যজ্ঞের ছিন্ন শির যুক্ত করার নিমিত্ত দেববর্গ তাঁদের সোমগ্রহণ লব্ধ করান (দেবেভ্যঃ সোমগ্রহং লবন্তেী)। কোনও দুব্রাহ্মণ শ্রদ্ধালু হয়ে সোম পানের ইচ্ছায় অশ্বিদ্বয়ের নিকট তাদের ভাগধেয় সহ গমন করেন, তাহলে তারা তাকে সোমপায়ী করে দেন; এবং তার কলঙ্ক দূরীভূত পূর্বক ব্রহ্মতেজঃ প্রদান করেন। ব্রহ্মহত্যাকারী বলে মিথ্যাপবাদগ্রস্ত জন তাঁর সেই অপবাদ ক্ষালনের নিমিত্ত বায়ুর উদ্দেশে তার ভাগধেয় গোমৃগ সহ গমন করলে বায়ু তাকে পবিত্র করেন। দেবগণের মধ্যে বায়ু হলেন পবিত্রকারী। সেই জন অভিজ্ঞ শিষ্টজনের দ্বারা আদৃত হলেও সাধারণ্যের নিকট তাঁর অপবাদ রয়ে যায়। তা দূরীভূত করার নিমিত্ত সূর্যদেবতার উদ্দেশে বহুরূপমা অর্থাৎ বহুবর্ণশালী পশু প্রদান, কর্তব্য। সোমযাগের মধ্যে অগ্নি হোতা, গৃহপতি, রাজা ইত্যাদি আশ্বিন-শস্ত্র (শস্ত্র অর্থে প্রণীত মন্ত্র) উচ্চারণ করার সময়ে যদি সূর্য মেঘ ইত্যাদির দ্বারা আবৃত থাকেন (মেঘাদ্যাবরণমন্তরেণ…) তাহলে সেই দোষ ক্ষালনের নিমিত্ত সূর্যের উদ্দেশে বহুবর্ণযুক্ত পশু প্রদান করলে সূর্য অন্ধকার দূর করেন (অর্থাৎ যজমান রাত্রির ন্যায় অন্ধকারের অবসানে প্রভাত প্রাপ্ত হন)। সেইরকম মিথ্যাপবাদ দূর করার নিমিত্ত যে জন সূর্যের নিকটে তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করেন, আদিত্য তার পাপ-কালিমা অপননাদিত করেন ॥১০

[সায়ণাচার্য বলেন-অথৈকাদশেহনুবাকে কামেষ্টিযাজ্যা পুরোনুবাক্যা উচ্যস্তে। অর্থাৎ-এই একাদশ অনুবাকে কামেষ্টির যাজ্যা ও পুরোনুবাক্যা কথিত হয়েছে।]

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- ইন্দ্রং বো বিশ্বম্পরীং নরো মরুততা যদ্ধ বো দিবো যা বঃ শৰ্ম্ম। ভরেম্বিন্দ্ৰ সুহবং হবামহেহংহোমুচং সুকৃত দৈব্যং জন।। অগ্নিং মিত্রং বরুণং সাতয়ে ভগং দ্যাবাপৃথিবী মরুতঃ স্বস্তয়ে। মম নং পরিজমা বসহা মমতু বাতো অপাং বৃথা। শিশীতমিনাপৰ্বতা যুবং নস্তন্নো বিশ্বে বরিবস্যন্তু দেবাঃ। প্রিয়া বো নাম হুবে তুরাণাম। আ যতূপসন্মরুততা বাবশানা। শিয়সে কং ভানুভিঃ সং মিমিক্ষিরে তে রশ্মিভিস্ত ঋকৃভিঃ সুখাদয়ঃ। তে বাশীমন্ত ইম্মিগো অভীরবো বিদ্রে প্রিয়স্য মারুতস্য ধামঃ। অগ্নি প্রথমো বসুভির্মো অব্যাৎ সোমো রুদ্রেভিরভি রক্ষতু অনা। ইন্দ্রো মরুদ্ভিঋতুধা কৃপোত্বাদিত্যের্ণো বরুণঃ সং শিশাতু। সং নো দেবো বসুভিরগ্নিঃ সং সোমস্তভী রুদ্রিয়াভিঃ। সমিন্দ্রো মরুঙির্যজ্ঞিয়ৈঃ সমাদিত্যৈর্নো বরুণো অজিজ্ঞিপৎ। যথাহদিত্য বসুভিঃ সম্বভূবুৰ্ম্মরুঙী রুদ্রাঃ সমজানতাভি। এবা ত্ৰিণামন্নণীয়মানা বিশ্বে দেবাঃ সমনসো ভবন্তু। কুত্ৰা চিদ্যস্য মসৃতৌ রথা নরো নৃদনে। অন্তশ্চিদ্যমিন্ধতে সংজনয়িন্তি জন্তবঃ। সং যদিষো বনামহে সং হব্যা মানুষাণা। উত দ্যুম্নস্য শবস ঋতস্য রশ্মিমা দে। যজ্ঞো দেবানাং প্রত্যেতি সুমমাদিত্যাসো ভবতা মৃড়য়ন্তঃ। আ বোহবাচী সুমতী বৃত্যাদংহোশ্চিদ্যা বরিবোবিত্তরাহসৎ। শুচিরপঃ সূযবসা অদব্ধ উপ ক্ষেতি বৃদ্ধবয়াঃ সুবীরঃ। নকিষ্টং ঘুষ্যন্তিতো ন দূরাদ্য আদিত্যানাং ভবতি প্রণীতে। ধারয়ন্ত আদিত্যাসো জগস্থা দেবা বিশ্বস্য ভুবনস্য গোপাঃ। দীর্ঘাধিয়ো রক্ষমাণাঃ অসূর্যমৃতাবানশ্চয়মানা ঋণানি। তিম্রো ভূমীধারয়ন্ত্ৰীংরুত দুস্ত্রীণি ব্ৰতা বিদথে অন্তরে। ঋতেনাহদিত্যা মহি বো মহিং তদৰ্য্যমন্বরুণ মিত্র চারু। ত্যানু ক্ষত্রিয়াং অব আদিত্যানাচিমহে৷ সুমৃড়ীকাং অভিষ্টয়ে। ন দক্ষিণা বি চিকিতে। ন সব্যা ন প্রাচীনমাদিত্যা নোত পশ্চা। পাক্যা চিদ্বসবো ধীর্ষা চিদ যুম্মানীত অভয়ং জ্যোতিরশ্যাম। আদিত্যানামবসা নূতনেন সক্ষীমহি শৰ্ম্মণা শম্ভমেন। অনাগাদ্ভু অদিতিত্বে তুর স ইমং যজ্ঞং দধতু শ্রোষমাণাঃ। ইমং মে বরুণ শ্রুধী হবদ্যা চ মৃড়য়। ত্বমবস্যুরা চকে। তত্ত্বা যামি ব্ৰহ্মণা বন্দমানস্তদা শাস্তে যজমানো হবিভিঃ। অহেডুমানো বরুণেহ বোধরূশংস মা ন আয়ুঃ প্র মোযীঃ ॥১১৷  

মর্মার্থ- সকল জগতের উপরিভাগে সুষ্ঠুরূপে অবস্থানকারী ইন্দ্রদেবকে পুত্র ইত্যাদি (অপত্য) লাভের নিমিত্ত আমরা আহ্বান করছি। হে মরুত্বর্গ! যেহেতু আমরা সুখলাভের কামনায় আপনাদের আহ্বান করছি, সেই হেতু আপনারা দ্যুলোক হতে আগমন করে আমাদের সুখ প্রদান করুন। সপ্ত দেবতার উদ্দেশে হবিঃ প্রদানের নিমিত্ত ও যজমানের মঙ্গলের নিমিত্ত (দেবেভ্যো হবিদানায়, স্বস্তয়ে যজমানস্য শ্রেয়সে চ) ইন্দ্র, অগ্নি, মিত্র, বরুণ, ভাগ, দ্যাবাপৃথিবী, ও মরুৎগণের যজ্ঞ আরম্ভের কালে আমরা আহ্বান করছি (আহ্বায়ামঃ)। ইন্দ্র হলেন সুখে আহ্বান-সাধ্য (শক), পাপ- উন্মোচনকারী, হিতকরী, দিবি (দৈব্যং) ও জনের নিমিত্ত বৃষ্টিধারণপূর্বক শস্য ইত্যাদির উৎপাদনকারী। অগ্নি সর্বৰ্ভক্ষণকারী, সূর্য দিবা-কারক, বায়ুবর্গ ও পর্জন্যদেবতা বর্ষণকারী–তাঁরা আমাদের আনন্দ দান করুন। হে ইন্দ্র ও পর্বত! আপনারা আমাদের শরীরের পাপ ক্ষয় করুন। সকল দেবগণ পরিচর্যাসময়ে আমাদের কৃপাপূর্বক অবলোকন করুন। হে মরুৎ-বর্গ! হবিঃ-স্বীকারের নিমিত্ত ত্বরান্বিত-গতিমান আপনাদের প্রিয় নামসমূহে আহ্বান করছি। যে মরুত্বর্গ প্রাণীগণকে সুখ প্রদানের নিমিত্ত সূর্যরশ্মির সাথে বৃষ্টির দ্বারা ভূমি সিক্ত করার ইচ্ছা করেন, সেই মরুৎগণ ঋক্‌-মন্ত্রের দ্বারা স্তুত হয়ে হবিঃ ভক্ষণ করছেন। অতঃপর তারা উৎসাহজনিত বহুরকম শব্দ করতে করতে আপন গৃহের প্রতি অসুর হতে ভয়-রহিত হয়ে তাদের প্রিয় স্থান লাভ করছেন (লব্ধবন্তঃ)। যখন দেবতা ও অসুরগণ যুদ্ধের নিমিত্ত উদ্যত হয়েছিল, তখন পরস্পর প্রীতিরহিত হয়ে সকল সেনা চতুধা বিভক্ত হয়েছিল। সেইমতো বসুগণের সাথে প্রথম সঙ্ঘের অধিপতি অগ্নিদেব আমাদের রক্ষা করুন; রুদ্রবর্গের সাথে দ্বিতীয় সঙ্রে অধিপতি স্বয়ং প্রীতি পূর্বক আমাদের রক্ষা করুন; মরুত্বর্গের সাথে তৃতীয় সঙ্ঘের অধিপতি ইন্দ্রদেব ঋতু অনুযায়ী ভোগ দান করে আমাদের রক্ষা করুন (ঋতুচিতভোগধারিণোস্মন্ করোতু); আদিত্যগণের সাথে চতুর্থ সঙ্ঘের অধিপতি বরুণ আমাদের সম্যকভাবে ব্রতপরায়ণ করুন। পুর্বোক্ত সঙ্ঘ চারটির মধ্যবর্তী দেবগণ, যথা–অগ্নি সমীপবর্তী বসুগণ, সোম সমীপবর্তী রুদ্রগণ, ইন্দ্রের সমীপবর্তী মরুৎগণ, বরুণের সমীপবর্তী আদিত্যগণ আমাদের সমীপবর্তী হয়ে আমাদের এই অনুষ্ঠান অনুমোদন করুন। আদিত্যগণ যেমন বসুগণের সমীপবর্তী হয়ে এবং বসুগণ যেমন অগ্নির সমীপবর্তী হয়ে প্রীতিযুক্ত হয়েছিলেন, যেমন মরুঙ্গণ ইন্দ্রের সমীপবর্তী হয়ে এবং রুদ্রগণ যেমন সোমের সমীপবতী হয়ে সম্যভাবে জ্যেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছিলেন, হে ত্রিনামযুক্ত অগ্নি (অর্থাৎ হে আহবনীয় অগ্নি, হে গার্হপত্য অগ্নি ও হে দক্ষিণাগ্নিরূপ হব্যকব্য বহনকারী অগ্নি)! সকল দেববর্গ সেইরকম পরস্পর সমানমনস্ক হয়ে আমাদের প্রতি প্রীতিযুক্ত হোন। যাঁর সাথে সঙ্গত বা মিলিত হয়ে মনুষ্যগণ আপন গৃহে (মনুষ্যস্থানে, অর্থাৎ গ্রাম গৃহ ইত্যাদি স্থানে) সানন্দে অবস্থান করে, চিন্মন্ত্রে যাঁর পূজা করবার মানসে বহ্নি প্রজ্বলিত করে যজমানগণ সমীচীন ফল লাভ করেন, সেই স্বিষ্টকৃৎ দেব প্রসন্ন হোন। যার কারণে আমরা অন্ন, যজমানগণের (প্রয়োজনীয়) হোমযোগ্য দ্রব্যসকল প্রাপ্ত হই, এবং ধনের বলের ও যজ্ঞের রশ্মির ন্যায় উৎকর্ষ স্বীকার করি (রশিবপ্রকাশমুৎকর্ষমাদদে স্বী কুৰ্ম্মঃ), সেই স্বিষ্টকৃৎ দেবের ভজনা করছি (ভজাম)। এই যজ্ঞ দেবগণের সুখ প্রবর্তন করুন। হে আদিত্যগণ! আপনারা আমাদের সুখপ্রদ (সুখয়ন্তো) হোন। অর্বাচীন আমাদের প্রতি আপনাদের অনুগ্রহ-বুদ্ধি প্রবৃত্ত হোক (অনুগ্রহবুদ্ধিরর্বাচীনেশ্বাসু প্রবৃত্তা সতী), চা আমাদের পাপ বিনাশ করুক এবং আমাদের পরিচর‍্যা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হোক (পরিচৰ্য্যাভিজ্ঞা ভবতু)। অন্নযুক্ত, অন্যের এমন কি শত্রু কর্তৃকও অতিরস্কৃত, চিরজীবী (বৃদ্ধবয়াশ্চিরজীবীত্যর্থঃ), সুবীর অর্থাৎ পুত্র-ভৃত্য ইত্যাদি যুক্ত, এমন যজমান পবিত্র হয়ে কর্মাভিমুখে গমন করছেন। আদিত্যের প্রতি কর্মকারী (আদিত্যানাং প্রণয়নে কর্মানি ভবতি) এই যজমানকে শত্রুগণ নিকট হতে (অর্থাৎ অস্ত্রের দ্বারা) বা দূর হতে (অর্থাৎ অভিচার ক্রিয়ার সাহায্যে) বিনাশ করতে পারে না। জগতের ধারক (জগদ্ধারয়ন্ত), ভুবনের পালক (ভুবনস্য পালয়িতারঃ) স্থিরবুদ্ধি, যজমানের রক্ষক, তাদের (যজমানদের) স্বরাষ্ট্র বা সত্যে স্থাপনকারী এবং শত্রুগণের (বহু ঋণগ্রস্ততার দ্বারা) দারিদ্র্যসম্পাদনকারী আদিত্যগণ আমাদের অভিমত কার্য করুন (অস্মৃদভিমতং কুবন্তিবতি)। হে অর্যমা, বরুন, মিত্র ইত্যাদি (দ্বাদশ) আদিত্যবর্গ! আপনাদের রমণীয় মাহাত্ম্য অধিক। আপনারা স্বর্গ, মত ও পাতালরূপ তিন ভূমি (লোক) ধারণ করে আছেন; সূর্য, ছন্দ ও বহ্নিকে প্রকাশ করেছেন (প্রকাশান্ধারিতবঃ); এবং যজমানদের যজ্ঞে মন-বাক্য-কায় দ্বারা নিম্পাদ্য নিম্পাদ্য তিনটি ব্রত সত্যবচনের দ্বারা ধারণ করেছেন (সত্যবচনেন ধারিতবন্তঃ)। ক্ষত্রিয়ের ন্যায় প্রবল, সুখদায়ক সেই আদিত্যগণকে আমাদের কর্তব্যসিদ্ধির নিমিত্ত প্রার্থনা করছি (কর্তব্যেষ্টিসিদ্ধ্যর্থমাদিত্যান….প্রার্থয়ামহে)। হে আদিত্যগণ! বৈরিগণ কর্তৃক উৎপীড়িত হয়ে বিমূঢ়চিত্ত আমি অপরিপক্ক কাতর (অস্থির) বালকের ন্যায় দক্ষিণ (ডান) সব্য (বাম) সম্মুখ পশ্চাৎ কিছুই অনুভব করতে পারছি না। আমি যেন আনাদের প্রিয়জনরূপে শত্রুভয়রিতে বিবেকজ্ঞানরূপ জ্যোতি প্রাপ্ত হই। আমরা যজমানগণ আদিত্য সম্বন্ধী নূতন রক্ষণের দ্বারা যুক্ত হয়ে সর্ব উপদ্রবরহিত শান্তিতে ও সুখে থাকব। হে আদিত্যগণ! নিরপরাধী আমাদের স্তুতি শ্রবণের নিমিত্ত আপনারা এই যজ্ঞ শীঘ্র ধারণ করুন (ত্বরমাণা ইমং যজ্ঞং ধারয়ন্তু)। হে বরুণ! আমাদের এই যজ্ঞাহ্বান শ্রবণ করে আমাদের সুখী করুন। আমরা মন্ত্রের দ্বারা বন্দনা করে আপনাকে প্রাপ্ত হবো। হে ক্রোধরহিত বরুণ! এই কর্মে আমাদের নিবেদন জ্ঞাত হোন (অস্মদ্বিজ্ঞাপনাং বুধ্যস্ব)। হে উরুশংস! প্রভূত স্তুতিকারক আমাদের আয়ুর বিনাশ করবেন না ॥১১৷৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *