তৃতীয় কাণ্ড। প্রথম প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- প্রজাপতিরকাময়ত প্রজাঃ সৃজেয়েতি স তপোহতপাত স সর্পনাসৃজত সোহকাময়ত প্রজাঃ সৃজেয়েতি স দ্বিতীয়মতপ্যত স বয়াংস্যসৃজত সোহকাময়ত প্ৰজাঃ সৃজেয়েতি স তৃতীয়মতপ্যত স এতং দীক্ষিতবাদমপশ্য ওমবদত্ততো বৈ স প্রজা অসৃজত যত্তপস্তত্ত্বা দীক্ষিতবাদং বদতি প্রজা এব তদ্যজমানঃ সৃজতে যদ্বৈ দীক্ষিতোহমেধ্যং পশ্যত্যপাম্মাদ্দীক্ষা ক্ৰামতি নীলমস্য হয়রা ব্যেত্যবদ্ধং মনো দরিদ্রং চক্ষুঃ সূৰ্য্যো জ্যোতিষাং শ্রেষ্ঠো দীক্ষে মা মা হাসীরিত্যাহ নাম্মাদ্দীক্ষাইপ ক্ৰামতি নাস্য নীলং ন হয়রা ব্যেতি যদ্বৈ দীক্ষিতমভিবতি দিব্যা আপোহশান্তা ওজো বলং দীক্ষা। তপোহস্য নিম্নদতীৰ্বলং ধর্তেীজো ধত্ত বলং ধ মা মে দীক্ষাং মা তপো নিধিষ্টেত্যাহৈতদেব সৰ্বমাত্মত্তে নাসৌজো বলং ন দীক্ষাম ন তপো নির্ঘন্ত্যগ্নির্বৈ দীক্ষিতস্য দেবতা সোহম্মদেতৰ্হি তির ই যহিঁ যাতি তমীশ্বরং রক্ষাংসি হতোঃ ভদ্রাদভি শ্রেয়ঃ প্রেহি বৃহস্পতিঃ পুর এতা তে অস্থিত্যাহ ব্ৰহ্ম বৈ দেবানাং বৃহম্পতিস্তমেম্বারতে স এনং সং পিরয়ত্যেমগন্ম দেব্যজনং পৃথিব্যা ইত্যাহ দেবযজনং হ্যেষ পৃথিব্যা আগচ্ছতি যো যজতে বিশ্বে দেবা যদজুযন্ত পূর্ব ইত্যাহ বিশ্বে হ্যেৰা জোষয়ন্তে যঘ্রাহ্মণা ঋমাভ্যাং যজুষা সন্তরন্ত ইত্যাহামাভাং হেষ যজুষা সরতি যো যজতে রায়পোষেণ সমিষা মদেমেত্যাহংশিষমেবৈতামা শাস্তে ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অত্র দীক্ষায়ঃ প্রথমভাবিত্বাদ্দীক্ষিতেন বক্তব্যা মন্ত্ৰাস্তদ্বিধয়শ্চাস্য প্রথমপ্রপাঠ্য পরথমানুবাকে প্রতিপাদ্যন্তে। অর্থাৎ–এই প্রথম অনুবাকে দীক্ষার প্রথমভাবিত্ব প্রতিপাদিত হয়েছে।]
মর্মার্থ- পুরাকালে প্রজাপতি প্রজাসৃষ্টির নিমিত্ত কাময়মান হয়ে নিয়মবিশেষরূপ তপস্যা করেছিলেন। তিনি দীক্ষিতবান না হওয়ায় অর্থাৎ তার বিকলতার কারণে প্রথমে তিনি নীচশ্রেণীর সর্প এবং পক্ষি সৃষ্টি করলেন। তিনি মনুষ্য ইত্যাদি সৃষ্টি করতে না পেরে দীক্ষিত দর্শন করলেন। অতঃপর তিনি অগ্নিষ্টোমের দ্বারা তপস্যা করেন। অগ্নিষ্টোম হলো প্রজাপতির তপস্যা। তার ফলে অর্থাৎ দীক্ষিতবাদের বৈকল্যের অভাবে তিনি মনুষ্য ইত্যাদি উত্তম সৃষ্টিসাধন সম্পন্ন করেন। যিনি নিয়মবিশেষযুক্ত হয়ে দীক্ষিতবাদ বলেন, সেই যজমান প্রজাসৃষ্টি করে থাকেন। তপস্যা শব্দের দ্বারা এখানে স্নান ইত্যাদি অভিহিত হয়েছে। স্নান ইত্যাদি শব্দের দ্বারা দান, অনশন ও বৈদিক মন্ত্রপাঠ এই তিন বিবক্ষিত অর্থাৎ বলবার ইচ্ছার বিষয়ীভূত। দীক্ষিতের দ্বারা পঠিতব্য মন্ত্রই হলো দীক্ষিতবাদ। যিনি দীক্ষিত হয়ে অমেধ্য অর্থাৎ অপবিত্র বস্তু দর্শন করেন, তিনি দীক্ষার ফল লাভ করতে পারেন না (ফলরাহিতত্য); তিনি পাপে লিপ্ত হন; তাঁর তেজঃ তিরোহিত হয়ে যায় ও তার শরীর বিকৃতি প্রাপ্ত হয়। তখন সেই প্রমাদকারী মনে মনে ধ্যান করেন–আমার মন অসংযত এবং চক্ষুও কৃপণ। দর্শনের হেতু ভূত জ্যোতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ হে সূর্য! আপনি আমার চক্ষুর দোষের নিষ্পত্তি করবেন। অতএব হে দীক্ষা! আমি প্রমাদকারী, আমাকে আপনি পরিত্যাগ করবেন না।
এই মন্ত্র পাঠ করলে দীক্ষাও তাকে পরিত্যাগ করেন না (দীক্ষাইপ্যস্মান্নাপামতি), তিনি পাপে লিপ্ত হন না কিংবা তার শরীরস্থ তেজঃ অপগত হয় না। যে দিব্যোদক (বৃষ্টির জল) অন্তরীক্ষে বর্তমান, তা ভূমিস্পর্শরহিত হওয়ার নিমিত্ত দুরদৃষ্টের হেতু; সুতরাং এর দ্বারা অর্থাৎ বৃষ্টির জলে ওজঃ (তেজ), বল, দীক্ষা, তপস্যা বিনষ্ট হয়ে থাকে। অতএব এর নিমিত্ত উতী ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ কর্তব্য (উন্নতীরিত্যাদিকো মন্ত্রঃ)–হে আপো (জল) তোমরা আমার শরীরে বল স্থাপন করো, তার নিমিত্তই আমাতে তেজও স্থাপন করো; পুনর্বার আমার ইন্দ্রিয়গত বলও স্থাপন করো। আমার দীক্ষা এবং তপস্যাও বিনাশ করো না। এই মন্ত্র পাঠ করলে ওজঃ, বল, দীক্ষা ও তপস্যা বৃষ্টিতে বিনষ্ট হয় না। অগ্নি হলেন দীক্ষিত ব্যক্তির দেবতা (অগ্নির্বৈ দীক্ষিতস্য দেবতা)। দীক্ষিত ব্যক্তি যখন গৃহ হতে প্রস্থান করে, তখন সে তার পালক বা রক্ষক বহ্নিদেবতার কোপে পতিত হয়, অর্থাৎ বহ্নি অন্তর্হিত হন। সেই জন্য রক্ষকহীন (স্বামিরহিতং) সেই দীক্ষিত ব্যক্তিকে পথের মধ্যে রাক্ষসগণ হনন করতে সমর্থ হতে পারে। সেই আশঙ্কা বা সম্ভাবনা পরিহারের নিমিত্ত ভদ্রাদভি ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করা কর্তব্য (ভদ্রাদভীত্যাদিমন্ত্রং পঠেৎ)-হে রথ! আমার গৃহ হতে অত্যন্ত প্রশস্ত স্থানের অভিমুখে গমন করো। তোমার অগ্রভাগে বৃহস্পতি গমন করছেন। দেবগণের মধ্যে বৃহস্পতির ব্রাহ্মণত্ব থাকায় তিনি রাক্ষসগণকে অভিশাপ প্রদানে সমর্থ। এমন যে বৃহস্পতি, তিনি যজমানের অনুগমন করছেন; সুতরাং তিনি যজমানকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবেন। অতঃপর যিনি যাগ করবেন তিনি এতদসগন্ম দেবাজনং ইত্যদি মন্ত্রটি পাঠ করবেন, তার প্রথম ভাগের অর্থ–আমি পৃথিবী সম্বন্ধী যে দেবযজন স্থান আছে, সেখানে আগমন করেছি। দ্বিতীয় ভাগের অর্থ–সকল দেবতা পূর্বে যেমন তুষ্ট হয়েছিলেন, তেমনই তুষ্ট হয়েছেন। তৃতীয় ভগের অর্থ–আমি ঋক, সাম ও যজুঃ মন্ত্রের দ্বারা সন্তরণপূর্বক (অর্থাৎ এই মন্ত্র পাঠের দ্বারা) সম্যক্রপে যাগের তীর (পারং) প্রাপ্ত হবো। (অর্থাৎ যাগরূপ সমুদ্র উত্তীর্ণ হবো)। চতুর্থ ভাগের অর্থআমি ধনপুষ্টি লাভে হৃষ্ট হবার আশীর্বাদ লাভ করব। (অর্থাৎ ধন ও অন্ন ইত্যাদির দ্বারা সংবর্ধিত হবো) ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–এই অনুবাকে সোম উপস্থাপনের মন্ত্রসমূহ কথিত হয়েছে] ।
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- এষ তে গায়ত্রো ভাগ ইতি মে সোমায় তাদেষ তে ত্ৰৈষ্ঠুভো জাগতো ভাগ ইতি মে সোমায় ব্রুচ্চন্দোমানাং সাম্রাজ্যং গচ্ছতি মে সোমায় তাদো বৈ সোম রাজানং সাম্রাজ্যং লোকং গময়িত্ব ক্রীণাতি গচ্ছতি স্বানাং সাম্রাজ্যং ছন্দাংসি খলুবৈ সোমস্য রাজ্ঞঃ সাম্রাজ্যে লোকঃ পূরস্তাৎ সোমস্য ক্রয়াদেবমভি মন্ত্ৰয়েত সাম্রাজ্যমেব এনং লোকং গময়িত্ব ক্রীণাতি গচ্ছতি স্বানাং সাম্রাজ্যং যো বৈ তানুনস্য প্রতিষ্ঠাং বেদ প্রত্যেব তিষ্ঠতি ব্ৰহ্মবাদিননা বদন্তি ন প্রান্তি ন জুহুত্যথ কৃতানুনত্ৰম প্রতি তিষ্ঠতীতি প্রজাপতৌ মনসীতি ক্ৰয়ালিরব জিঘ্ৰেৎ প্রজাপতৌ ত্বা মনসি জুহোমীত্যেষা বৈ তান্নস্য প্রতিষ্ঠা য এবং বেদ প্রত্যেব তিষ্ঠতি যঃ বা অধ্বৰ্যোঃ প্রতিষ্ঠাৎ বেদ প্রত্যেব তিষ্ঠতি যতো মনন্যতানভিক্রম্য হোষ্যামীটি তত্তিন্না শ্রাবয়েদেষা বা অধ্বৰ্যোঃ প্রতিষ্ঠা য এবং বেদ প্রত্যেক তিষ্ঠতি যদভিক্রম্য জুহুয়াৎ প্রতিষ্ঠায়া ইয়াত্তস্মাৎ সমান। তিষ্ঠতা হোতব্যং প্রতিষ্ঠিত্যৈ যো বা অধ্বৰ্যোঃ স্বং বেদ স্ববানেব ভবতি সুথা অস্য স্বম্ বায়ব্যমস্য স্বং চমসোহস্য স্বং যদ্বায়ব্যং বা চমসং বাহনদারভ্যাহশ্রাবয়েৎ স্বাদিয়াম্মাদারভ্যাহশ্রাব্যং স্বাদের নৈতি যো বৈ সোমমপ্রতিষ্ঠাপ্য স্তোত্রমুপাকরোত্যপ্রতিষ্ঠিতঃ সোমো ভবত্যপ্রতিষ্ঠিত স্তোমোহপ্রতিষ্ঠিতানথান্যপ্রতিষ্ঠিত যজমানোহপ্রতিষ্ঠিতোহধ্বর্য্যৰ্বায়ব্যং বৈ সোমস্য প্রতিষ্ঠা চমসোহস্য প্রতিষ্ঠা সোমঃ স্তোমস স্তোম উথানাং গ্রহং বা গৃহীত্ব চমসং বোন্নীয় স্তোত্রমুপাকুৰ্য্যাৎ প্রত্যেব সোমং স্থাপয়তি প্রতি স্তোমং প্রত্যুত্থানি প্রতি যজমানস্তিষ্ঠতি প্রত্যধ্বর্য্যঃ ॥২॥
মর্মার্থ- যজমানরূপী আমার গায়ত্রী দেবতা সোমদেবকে এই বক্তব্য বলুন (জ্ঞাপন করুন) হে দেবতাত্মক রাজা সোম! সম্মুখে দৃশ্যমান ক্রেতব্য (ক্রয়ের যোগ্য) বল্লীরূপ (লতারূপ) আপনার ভাগ (সোম) প্রাতঃসবনে (প্রাতঃকালীন সোমযাগে) গায়ত্রীছন্দের দ্বারা কৃতসংস্কার (সংস্কাৰ্য) হয়েছে। এইরকমে এই বক্তব্য বলুন যে, তাঁর এই ভাগ (সোম) মাধ্যন্দিন সবনে (মধ্যাহ্নকালীন সোমযাগে) ত্রিষ্টুপ ছন্দের দ্বারা এবং তৃতীয় সনে (সন্ধ্যার পূর্বকালীন সোমযাগে) জগতী ছন্দের দ্বারা কৃতসংস্কার হয়েছে। যে যজমান সোমরাজের সাম্রাজ্যরূপ স্থান দিয়ে গমন পূর্বক পরে বল্লীরূপ সোম ক্রয় করেন, তিনি নিজেদের মধ্যে সাম্রাজ্য প্রাপ্ত হন। গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ ও জগতীরূপ ছন্দসমূহে উপলক্ষিত লোকই হলো সোমরাজের সাম্রাজ্য-সম্পর্কিত তোক (সাম্রাজ্যযুক্তা লোক)। সোমের অভিমন্ত্রণে পূর্বে কথিত মন্ত্র পাঠ কর্তব্য। অতঃপর, হে তন! তোমাকে গ্রহণ করছি ইত্যাদি মন্ত্রে চমসে (চামচসদৃশ যজ্ঞপাত্র বিশেষে) যে আজ্য গ্রহণ করা হয়, তাতে তার প্রতিষ্ঠা হয় না। সোমরস বহ্নিতে আহুত হলে, ঋত্বিকগণ পান করলে তবেই তার প্রতিষ্ঠা হয়। তানূনপত্রের প্রতিষ্ঠা কোথায়, এই প্রশ্ন ব্রহ্মবাদীগণ কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হলে, বুদ্ধিমান জন উত্তরে বলবেন–মনের দ্বারা প্রজাপতিতে স্থাপনা করলে তবেই তার প্রতিষ্ঠা হয়। প্রজাপতৌ ত্ব ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা অবঘ্রাণ করা বিধি। হে নূনপত্র! ত্বং প্রজাপতৈ… অর্থাৎ হে তান! তোমাকে প্রজাপতির উদ্দেশে অর্পণ করছি ইত্যাদি মন্ত্র মনে মনে চিন্তা করছি (স্মরামি)। [এই মন্ত্রের মর্মার্থ ১ম কাণ্ডের ২য় প্রপাঠকের ১০ম অনুবাকের শেষে দ্রষ্টব্য]। আশ্রাবণ হতে আরম্ভ করে (আশ্রাবণমারভ্য) হোম পর্যন্ত একত্রে অবস্থান হলো অধ্বর্যর প্রতিষ্ঠা। আহবনীয়ের সমীপস্থ হোম স্থান হতে অন্য কোথাও গমন না করে আমি হোম সাধন করব (হোষ্যাম)–এইরকম মনে করে সেই স্থানে অবস্থান করাই হলো আশ্রাবণ। যে অধ্বর্য নিজে এই কথা বিদিত থাকেন তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন; হোমের স্থান মহতে অন্য কোথাও গমন করলে হোমের নিন্দা হয়। আশ্রাবণকালে হোমসাধন দ্রব্যসমূহ অধ্বর্য আপন হস্তে ধারণ করে অবস্থিত থাকবেন, এটাই বিধি। সুক, জুব্বা ইত্যাদি পাত্রগুলি ইন্দ্র বায়ু ইত্যাদি দেবগণের সোমরস গ্রহণের আধারভূত হওয়ায় এগুলি বায়ব্য অর্থাৎ বায়ু কর্তৃক বৃত হয়ে থাকে। এইবার প্রতিঃসবন ইত্যাদি স্তোত্রসমূহের কালবিশিষ্ট উপকরণ কথিত হচ্ছে।–যিনি সোম প্রতিষ্ঠা ব্যতিরেকে স্তোত্র পাঠ করেন, তার সোম, স্তোম (স্তুতিবিশেষ), উথ (সামবেদের গেয় অংশবিশেষ), যজমান, অধ্বর্য সকলেই প্রতিষ্ঠাহীন হয়ে থাকে। বায়ব্য চমসে সোমের প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে; এই নিমিত্ত বায়ব্য পাত্রগুলি গ্রহণ করে চমসে সোমরস পূর্ণ করে সূত্রানুসারে স্তোত্র পাঠ কর্তব্য। এতে যজমান, অধ্বর্য সকলেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ॥২॥
[সায়ণাচার্য বলেন–এই অনুবাকে সোমক্রয়ণীর পদাঞ্জন ইত্যাদির বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- যজ্ঞং বা এতৎ সং ভরন্তি যৎ সোমক্রয়ণ্যৈ পদং যজ্ঞমুখং হবির্ধানে যৰ্হি হবির্ধানে প্রাচী প্ৰবৰ্তয়েয়ুস্তৰ্হি তেনামুপাঞ্জ্যাদ্যজ্ঞমুখ এব যজ্ঞমনু সং তনোতি প্রাঞ্চমগ্নিং প্র হরত্যুৎ পত্নীমা নয়ন্ত্যম্বনাংসি প্ৰ বৰ্ত্তয়্যথ বা অস্যৈষ ধিফিয়ো হীয়তে সোহনু ধ্যায়তি স ঈশ্বররা রূদ্রো ভূত্ব প্রজাং পশূন্যজমানস্য শময়িতোহ পশুমপ্রীতমুদঞ্চং নয়ন্তি তহি তস্য পশুশ্ৰপণং হরেত্তেনৈবৈনং ভাগিনং কোতি যজমানো বা আহবনীয়ো যজমানং বা এতদ্বি কর্ষন্তে যদাহবনীয়াৎ পশুপণং হরন্তি স বৈব স্যামিৰ্ম্মস্থাং বা কুৰ্য্যাদ্যজমানস্য সাত্মত্বায় যদি পশোরবদানং নশ্যেদাজ্যস্য প্রত্যাখ্যায়মব দ্যেৎ সৈব ততঃ প্রায়শ্চিত্তিৰ্যে পশুং বিমী রন্যস্তান্ কাময়েতাহৰ্ত্তিমাচ্ছেয়ুরিতি কুবিদঙ্গেগতি নমোবৃক্তিবত্য চাঁহয়ীঘ্ৰে জুহুয়াম্নমোবৃক্তিমেবৈষাং বৃক্তে তাজগার্তিচ্ছন্তি৷৷৩৷৷
মর্মার্থ- যজ্ঞ সোমক্রয়ণীর পদ পূরণ করে (সং ভরন্তি)। যখন গাৰ্হপত্য অগ্নির সমীপে দুটি (উভে) শক পূর্বমুখী করে (প্রাঙমুখে) প্রবর্তিত করে রক্ষিত হয়, তখন সেই শকট দুটির অগ্রভাগ (ধুর) ঘৃতের দ্বারা লিপ্ত কর্তব্য। তাতে হবির্ধানত্মক (হবির্ধনাত্মন্যেব) যজ্ঞমুখে পদপাংসুরূপে (পাদস্পৃষ্ট ধূলিরূপে) অর্থাৎ বিস্তীর্ণ ধূলিকণার ন্যায় যজ্ঞ বিস্তীর্ণকৃত হয়ে থাকে (সন্ততং কৃতবান্ ভবতি)।-অনন্তর প্রাচীনবংশের পশ্চিম-দেশস্থিত পুরাতন গার্হপত্য হতে (গার্হপত্যাৎ) অগ্নিকে সোমীয় পশু শ্ৰপণের (পাক করবার নিমিত্ত) আনয়ন কর্তব্য। (শ্ৰপণদেশং প্রতি) আনয়নের বিধি-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পত্নীশালা হতে পত্নীকেও পুরাতন আহবনীয় স্থানে (অগ্নিশালামুখী করে) আনয়ন করা কর্তব্য (প্রত্যুদানয়ন্তি)। পূর্বেকার পশ্চিম গার্হপত্য-সমীপে অবস্থিত শকট দুটিকেও পূর্বদিকে অনুক্রমানুসারে প্রবর্তিত (আনীত) করতে হয়। যখন এইসকল কর্ম সম্পন্ন হবে তখন পুরাতন গার্যপত্যের স্থানবিশেষ (ধিষ্ণিয়ঃ) শূন্য হয়ে যাওয়ায় অগ্নি পুনরায় মনে মনে চিন্তিত হয়ে উঠবেন। এই চিন্তার ফলস্বরূপ তিনি ক্রুর হয়ে যজমানের প্রজা ও পশুসমূহের বিনাশক হয়ে উঠতে পারেন। তার প্রতিকারের নিমিত্ত অস্ত্রীসংজ্ঞক প্রযাজ যাজ্যার দ্বারা তোষিত পশুকে উত্তর দিকে আনয়ন কালে পশুপণকারী পশ্চিমস্থ গার্হপত্য অগ্নিকে ভাগপ্রদান করলে তিনি আর প্রজা ইত্যাদির বিনাশ করেন না (ততঃ প্রজাদ্যবিনাশ)। আহবনীয় অগ্নির বিকৃষ্টের (বিশেষরূপে আকৃষ্টের অর্থাৎ হরণের ফলে) যজমানের বিকর্ষ (অপকর্ষ অর্থাৎ নিম্নে আকর্ষণ) হয়। এই নিমিত্ত অন্য কোন জাগতিক অগ্নিকে শ্ৰপণার্থে উৎপাদিত করলে যজমান বিকর্ষরহিত অর্থাৎ সম্পূর্ণতা, (স্বরূপতা) লাভ করেন। অনন্তর পশু প্রসঙ্গে কিছু প্রায়শ্চিত্তের বিধি উক্ত হচ্ছে। প্রত্যেকটি গণনা পূর্বক যতগুলি পশু অবদানের দ্বারা নষ্ট হয়েছে দেখা যায়, ততটা আজ্য প্রদান (অবদান) করা কর্তব্য (তাবকৃত আজ্যমবদ্যেৎ)। সেই অবদান ক্রিয়ার দ্বারা দোষ-বিমোচনের ফলেই প্রায়শ্চিত সম্পন্ন হয়ে থাকে। যদি শত্রুগণ আমাদের পশু বলে দাবী পূর্বক কলহ সংঘটিত পূর্বক পশু হরণ করে, তাহলে যজমান সেই বিপত্তি নিবারণকল্পে কুবিদঙ্গ ইত্যাদি ঋকমন্ত্র পাঠ পূর্বক হোম করবেন (কুবিদঙ্গেচাহগ্নীধিফিয়স্থবঙ্কৌ জুহুয়াৎ) ॥৩॥
[সায়ণাচার্য বলেন–এই অনুবাকে পশুর উপকরণ মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে।]
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- প্রজাপতেৰ্জায়মানাঃ প্রজা জাতাশ্চ যা ইমাঃ। তস্মৈ প্রতি প্র বেদয় চিকিত্বাং অনু মন্যতা। ইমং পশুং পশুপতে তে অদ্যবধাম্যগ্নে সুকৃতস্য মধ্যে। অনু মন্যস্ব সুজা যজাম জুষ্টং দেবানামিদমন্তু হব্য। প্রজানন্তঃ প্রতি গৃহ্নন্তি পূর্বে প্রাণমঙ্গেভঃ পৰ্য্যাচরন্তম। সুবৰ্গং যাহি পথিভিযোনৈরোষধীষু প্রতি তিষ্ঠা শরীরৈঃ। যেষামীশে পশুপতিঃ পশুনাং চতুশম্পদামুত চ দ্বিপদাম। নিষ্ক্রীতোবয়ং যজ্ঞিয়ং ভাগমেতু রায়ম্পোষা যজমানস্য সন্তু। যে বধ্যমানমনু বধ্যমানা অভৈক্ষন্ত মনসা চক্ষু চ। অগ্নিস্তাং অগ্রে প্র মুমোতূ দেবঃ প্রজাপতিঃ প্ৰজয়া সংবিদানঃ। য আরণ্যাঃ পশবো বিশ্বরূপা বিরূপাঃ সন্তো বহুধৈকরূপা। বায়ুস্তাং অগ্রে প্র মুমোতূ দেবঃ প্রজাপতিঃ প্ৰজয়া সংবিদানঃ। প্রমুঞ্চমানাঃ ভুবনস্য রেতো গাতুং ধত্ত যজমানায় দেবাঃ। উপাকৃতং শশমানং যদস্থাজ্জীব দেবানামপ্যেতু পাথঃ। নানা প্রাণো যজমানস্য পশুনা যজ্ঞো দেবেভিঃ সহ দেবযানঃ। জীবং দেবানামপ্যেতু পাথঃ সত্যাঃ সন্তু যজমানস্য কামাঃ। যৎ পশুৰ্ম্মায়ুমকৃতোনরা বা পড়িরাহতে। অগ্নিৰ্মা তম্মদেনসো বিশ্বাঞ্চত্বংহসঃ। পেতন যজ্ঞং দেবেভিরিম্বিত। পাশাৎ পশুং প্র মুঞ্চত বন্ধাদ্যজ্ঞপতিং পরি। অদিতিঃ পাশং প্র মুমোক্তেতং নমঃ পশুভ্যঃ পশুপতনেয় করোমি। অরাতীয়মধরং কৃণোমি যং দ্বিম্মস্তস্মিন্ প্রতি মুঞ্চামি পাশ। ত্বমু তে দধিরে হ্যবাহং শৃতঙ্কৰ্ত্তারমুত যজ্ঞিয়ং চ। অগ্নে সদক্ষঃ সতনুৰ্হি ভূত্বাহথ হব্যা জাতবেদো জুষস্ব। জাতবেদো বপয়া গচ্ছ দেবাং হি হোতা প্রথমে বভূখ। ঘৃতেন ত্বং তনুবো বৰ্দ্ধয়স্ব স্বাহাকৃতং হরিদত্ত দেবাঃ স্বাহা দেবেভ্যঃ স্বাহা ॥৪৷৷
মর্মার্থ- যে সকল প্রজা ইদানীং জাত হচ্ছে এবং পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছে, তারা সকলেই প্রজাপতির দ্বারা সৃষ্ট। এই নিমিত্ত প্রত্যেক পশুর নিকট গমন পূর্বক বলতে হবে (প্রবেদয়)–হে পশু! তোমার বৃত্তান্ত বলো; প্রজাপতি তোমার স্বর্গপ্রাপ্তি অনুমোদন করুন। হে পশুপতি অগ্নিদেব! অদ্য এই দিনে সুকৃতি সহ সম্যক অনুষ্ঠিত জ্যোতিষ্টোম কর্মের অন্তর্বতী এই পশুকে বন্ধন করছি, আপনি তা অনুমোদন করুন। আমরা শোভন যাগের অনুষ্ঠান করব (শোভনেন যজাম)। এই হব্য দেবতাগণের প্রতিদায়ক হোক (প্রিয়মস্তু)। হে পশু! পূর্বে দেবগণ তোমার বৃত্তান্ত জেনে তোমার প্রাণ প্রতিগ্রহ করেছেন; এক্ষণে তুমি আমাদের অধীন–এটা তারা স্বীকার করে নিয়েছেন। এইবার দেবগণ যে পথে গমন করে থাকেন, তুমি সেই পথ ধরে স্বর্গে গমন করো। প্রাণরূপে স্বর্গে গমন পূর্বক অবশিষ্ট অবয়বের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হও, অর্থাৎ পুরোডাশ ইত্যাদির মতো হবিঃ-রূপ হও (পুরোশাদিবন্ধবির্ভবেত্যর্থঃ)। পশুস্বামী রুদ্রদেব দ্বিপদ ও চতুষ্পদ যে পশুসমূহের স্বামিত্বে বা প্রভুত্বে বর্তমান, সেই পশুর মধ্যে আমাদের দ্বারা ক্রীত এই পশু যাগযোগ্য হোক; যজমানের ধনপুষ্টি হোক। এই পশুর পিতা-মাতা-ভ্রাতা ও সগর্ভ-সম্পর্কিত যে পশুগণ একে অর্থাৎ এই বধ্যমান পশুকে মন ও চক্ষুর দ্বারা লক্ষ্য করছে, অগ্নি তাদের অগ্রেই প্রকর্ষের সাথে মুক্ত করুন। তারপর প্রজাপতি দেবতা আপন প্রজাগণের সাথে ঐকমত্য হয়ে সেই পশুগণকে মুক্ত করুন (পশু ন মোচয়তু)। আরণ্য পশুগণ সকলে জাতিভেদে, বর্ণভেদে, উচ্চ-নীচত্ব ভেদে বিবিধরূপসম্পন্ন হলেও পশুত্বের দিক থেকে একই রকম (পশুত্বেনৈকরূপাঃ)। বায়ুদেবতা অগ্রে তাদের মুক্ত করুন, দেব প্রজাপতিও তাঁর স্বকীয় প্রজাগণের সাথে ঐকমত্য হয়ে তাদের মুক্ত করুন। হে দেবগণ! যাগের দ্বারা উৎপন্নের হেতুভূত এই পশুকে প্রকর্ষের সাথে মুক্ত করে যজমানের স্বর্গলোকপ্রাপ্তি সংঘটিত করুন (স্বর্গলোকপ্রাপ্তিং ধত্ত)। উপকরণ (সংস্কারপূর্বক পশুবধ) ক্রিয়ার দ্বারা সংস্কৃত এই পশুর অঙ্গজাত হবিঃ হবিঃ-ভোজী দেবগণের জীবিকা হোক (জীবনার্থমুপাকরোতু); যজমানেরও স্বর্গলাভ ঘটুক। যজমানের প্রাণ পশুর প্রাণের সাথে পৃথক্ হোক। এই অনুষ্ঠীয়মান যজ্ঞ দেবনশীল পশু-প্রাণের সাথে হবিঃ-ভোজী দেবগণের প্রতি গমন করুক। পশুরূপ অন্ন দেবতাগণের জীবনহেতুত্ব প্রাপ্ত হোক। তাতে যজমানের কামনা সত্য হোক। এই পশু মরণকালে যে দুঃখজনক (দুঃখহেতুকং) শব্দ করেছে অথবা হস্ত-পদ তাড়না করেছে, তার পাপ হতে অগ্নিদেব আমাকে মুক্ত করুন; কিংবা এর বন্ধন ইত্যাদি উপদ্রবের দ্বারা যা কিছু পাপ উৎপন্ন হয়েছে তার সব হতে আমাকে আমাকে মুক্ত করুন। (সর্বস্মদংহসো মাং মোচয়তু)। হে খঙ্গধারীগণ (বিশসনের অর্থাৎ খঙ্গের দ্বারা ছেদনের বা মারণের কর্তাগণ)! দেবগণের দ্বারা ব্যাপ্ত যজ্ঞ প্রবর্তন (আরম্ভ) করো। এই পশুকে রজ্জ্বরূপ পাশবন্ধন হতে মুক্ত করো এবং এই বন্ধনজনিত দোষ হতে যজ্ঞপতিকে মুক্ত করো। এই মন্ত্রের দ্বারা অধ্বর্য ও যজমান বাপাপণের (মেদঃ পাকের) কারণে কাষ্ঠনির্মিত এক শূলযুক্ত হয়ে শামিত্রদেশে (সূনায় অর্থাৎ পশুবধের স্থানে) সমাগত হবেন। অদিতি (পৃথিবী) এই পশুর পাশ মুক্ত করুন (প্রমুঞ্চতু)। এবং আমি পশু ও পশুপতির উদ্দেশে আমার অপরাধ নিবৃত্তির নিমিত্ত নমস্কার করছি। যে পুরুষ (অর্থাৎ ব্যক্তি) আমাদের অরাতিত্ব অর্থাৎ শত্রুতা করতে ইচ্ছা করে তাদের আমরা সাবধান (অধ্বরং) করে দিচ্ছি। যারা ইদানীন্তন কালে শত্রুতার ইচ্ছা করছে না, তথাপি কালান্তরে (ভবিষ্যতে) যাদের দ্বারা সেই শত্রুতার সম্ভাবনা আছে তাদের আমরা দ্বেষ করি। সেই পুরুষে এই পাশ বদ্ধ হোক, এই রঞ্জুর দ্বারা (রশনয়া) তাকে বদ্ধ করছি। হে অগ্নিদেব! দেবগণ আপনার কার্যকরত্বের নিমিত্ত নিশ্চিত বোধ করেন। আপনি হব্যবাহ অর্থাৎ দেবতাগণের প্রতি প্রদত্ত হবির বহনকর্তা, আর্দ্র হবির পাককর্তা; অধিকন্তু আপনি যজ্ঞ-সম্পাদনের যোগ্য। হে জাতবেদা! আপনি দৃঢ় শরীরধারী ও দক্ষতাসম্পন্ন; অতএব উৎসাহের সাথে আমাদের হবিঃ বহন করতে প্রীতিযুক্ত হোন। হে জাতবেদা অগ্নি! বপা সহ (অর্থাৎ বপা বহন করে) দেবতাগণের নিকট গমন করুন। যেহেতু আপনি প্রথম হোতা (অর্থাৎ মনুষ্য-হোতার পূর্বভাবী), অতএব আপনি ঘৃতের দ্বারা দেবগণের তনু বর্ধন করুন। সেই দেবগণ স্বাহাকারের (দেবোদ্দেশে হবিদানের মন্ত্রের) দ্বারা সমর্পিত এই হবিঃ ভক্ষণ করুন। যে দেবতাগণ পূর্বে স্বাহাকারের দ্বারা আহুত হয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে এই আজ বপাহোমের পূর্বে স্বাহাকৃত হোক। এবং সেই হোমের বপাহোমাঙ্গত্ব সাধিত হোক। যে দেবতাগণ পরে (উপরিষ্টাৎ) স্বাহাকারের দ্বারা আহুত হবেন, তাদের উদ্দেশে বপাহোমের পরে এই আজ্য আহুত হোক। পাহামের পূর্বে ও পরে স্বাহাকারের প্রয়োগ হয়ে থাকে ॥৪॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অথ পঞ্চমে তেষাং মন্ত্রাণাং ব্রাহ্মণভিধীয়তে। এই পঞ্চম অনুবাকে পূর্ববর্তী মন্ত্ৰসমূহের ব্রাহ্মণগুলির অভিধা বা শব্দগুলির অর্থবোধক শক্তির কথা বলা হয়েছে]।
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- প্রাজাপত্যা বৈ পশবস্তেষাং রুদ্ৰোহধিপতিদেভ্যামুপাকররাতি তাভ্যামেবৈনং প্রতিপোচ্যহলভত আত্মনোহনাস্কায় দ্বাভ্যমূপাকয়োতি দ্বিপাদ্যজমানঃ প্রতিষ্ঠিত্যা উপকৃত্য পঞ্চ জুহোতি পাক্তাঃ পশবঃ পশুনেবায় রুন্ধে মৃত্যবে বা এষ নীয়তে। যৎ পশুস্তং যদম্বারতে প্রমায়ুকো যজমানঃ স্যান্নানা প্রাণো যজমানস্য পশুনেত্যাহ ব্যাবৃত্ত যৎ পশুমায়ুমকৃতেতি জুহোতি শাস্ত্যৈ শমিতার উপেতনে ত্যাহ যদাযজুরেবৈতদ্বপায়াং বা আহ্রিয়মাণায়ামগ্নেৰ্ম্মেধোপ ক্ৰামতি কামু তে দধিরে হ্যবাহমিতি বপামভি জুহোত্যগ্নেরে মেধমব রুদ্ধেহথো তত্বার পুরস্তাৎ স্বাহাকৃতয়ো বা অন্য দেবা উপরিষ্টাৎ স্বাহাকৃতয়োহন্যে স্বাহা দেবেন্ডভ্যা দেবেভ্যঃ স্বাহেত্যভিত বপাং জুলহাতি তানেবোভয়া প্রীতি ॥৫॥
মর্মার্থ- প্রজাপতি পশুগণের জনক অর্থাৎ স্রষ্টা, এবং রুদ্র শব্দের দ্বারা অভিধেয় অগ্নি হলেন তাদের স্বামী অর্থাৎ অধিপতি। প্রজাপতের্জায়মানা ইমং পশুম… অর্থাৎ প্রজাপতির দ্বারা জায়মান এই পশুকে… ইত্যাদি মন্ত্রে সেই পশুকে যজ্ঞের নিমিত্ত বধ করলে তা দেবগণের লব্ধ হয়। সুতরাং এই মন্ত্রের কথনে যজমানের অপরাধ হয় না। অতঃপর সংস্কারপূর্বক পশুবধ বা বলিদানের পর প্রজানন্তঃ ইত্যাদি পাঁচটি মন্ত্রে হোম কর্তব্য। পুচ্ছের সাথে চারিটি পদ, এই পঞ্চসংখ্যার যোগের নিমিত্ত পশুকে পাক্ত বলা হয় (পশূনাং পঙিক্তত্ব)। সংজ্ঞপন অর্থাৎ বলিপ্রদানের জন্য যখন পশুকে আনয়ন করা হয়, তখন অধ্বর্য তার পৃষ্ঠে হস্তের দ্বারা স্পর্শ করে নানা মন্ত্র পাঠ করে থাকেন। (এই হস্তস্পর্শ হতেই হনন আরম্ভ হয়)। ব্যাবৃত্তিবাচক নানা শব্দের প্রয়োগের ফলে যজমানের প্রাণ ম্রিয়ম্রাণ পশু হতে ব্যাবৃত্ত হয়। পাপ হতে মুক্ত করুন ইত্যাদি মন্ত্রগত প্রার্থনার দ্বারা পাপের শান্তি হয় (অর্থাৎ পাপজনিত মানসিক জ্বালা দুর হয়)।হে খঙ্গের দ্বারা ছেদনের বা মারণের কর্তাগণ! তোমরা যজ্ঞ প্রবর্তন করো ইত্যাদি মন্ত্রে অধ্বর্য ও যজমান বপাশপণীর ব্যবধানে পশু লাভ করে থাকেন। হোমের নিমিত্ত যখন পা আনীত হয়, তখন অগ্নির নিকট হতে যজ্ঞ উপক্রমিত হয় অর্থাৎ চলে যায় (অগ্নেঃ সকাশাদ্যজ্ঞোহপক্ৰামতি)। এই নিমিত্ত বপার উপর হোমের বিধান করা হয়েছে। সেই হোমের দ্বারা যজ্ঞের উপক্রমণ নিবারিত হয়ে থাকে। অগ্নিং যজ্ঞস্য ধারকং কৃতবন্ত ইত্যাদি মন্ত্রে বপা-পাক সম্পন্নের নিমিত্ত হোম করা হয় (বপায়াঃ পায় সম্পদ্যতে)। বপা হোম সাধনের কালে স্বাহা দেবেভ্য ইত্যাদি মন্ত্রে যাঁরা বোর সামীপ্য বাঞ্ছা করেন এবং যাঁরা স্বাহাকারের ব্যবধান হতে ভয় প্রাপ্ত হন–এই উভয় রকম দেবতাগণের প্রীতির নিমিত্ত মন্ত্রের পূর্বে ও শেষে স্বাহা শব্দের প্রয়োগ হয়েছে (স্বাহাশব্দস্য মন্ত্ৰয়োৰ্যত্যাসেন প্রয়োগ ইত্যর্থঃ) ॥৫॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অথ ষষ্ঠেহভিমৰ্শনবিধয়ো মন্ত্রবিশেষাশ্চ কেচিদাম্নায়ন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে অভিমর্শনের বিধি ও কতিপয় মন্ত্রবিশেষ কথিত হয়েছে।]
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- যো বা অযথাদেবতং যজ্ঞমুপচরত্যা দেবতাভ্যো বৃশ্চ্যতে পাপীয়া ভবতি যো যথাদেবতং ন দেবতাভ্য আ বৃশ্চ্যতে বসীয়ান ভবত্যাগ্নেয্য…হয়ী মভি মৃশেদ্বৈষ্ণব্যা হবির্ধানমাগেষ্যা সুচো বায়ব্যয়া বায়ব্যান্যৈন্দ্রিয়া সদো যথাদেবতমেব যজ্ঞমুপ চরতি ন দেবতাভ আ বৃশ্চ্যতে বসীয়ান ভবতি যুনজমি তে পৃথিবীং জ্যোতিষা সহ যুনজ্জিা বায়ুমন্তরিক্ষেণ তে সহ যুনজ্ঞি বাচং সহ সুর্যেণ তে যুনজ্ঞি তিম্রো বিপৃঃ সূৰ্য্যস্য তে। অগ্নিৰ্দেবতা গায়ত্রী ছন্দ উপাংশোঃ পাত্ৰমসি সোমো দেবতা ত্রিষ্টুপ ছন্দোহন্তৰ্য্যামস্য পাত্ৰমসীন্দ্রো দেবতা জগতী ছন্দ ইন্দ্ৰবায়ুবোঃ পাত্ৰমসি বৃহম্পতিৰ্দেবতাইনুষ্ঠুছন্দো মিত্রাবরুণয়োঃ পাত্রমস্যশ্বিনৌ দেবতা পঙক্তিচ্ছন্দোশ্বিনোঃ পাত্রমসি সূৰ্য্যো দেবতা বৃহতী ছন্দঃ শুক্রস্য পাত্ৰমসি চন্দ্রমা দেবতা সততা বৃহতী ছন্দো মন্থিনঃ পাত্ৰমসি বিশ্বে দেবা দেবতোষ্ণিহা ছন্দ আগ্রয়ণস্য পিত্রমসীন্দ্রো দেবতা ককুচ্ছ উথানাং পাত্ৰমসি পৃথিবী দেবতা বিরাছুলো ধ্রুবস্য পাত্রমসি ॥৬৷৷
মর্মার্থ- আগ্নী (অগ্নির আধান অর্থাৎ স্থাপন) হবির্ধান (হোমদ্রব্যের আধার) ইত্যাদির মধ্যে যার যে দেবতা সেই দেবতাকে অভিক্ৰম (আক্রমণ অর্থাৎ উল্লঙ্ঘন করে) তার উপচারে যাগ করলে যজমান দেবতা হতে বিচ্ছিন্ন হন এবং সেই যজমান দরিদ্র হয়ে থাকেন। এই নিমিত্ত সেই সেই দেবতার প্রতিপাদক মন্ত্রের দ্বারাই তাদের অভিমৰ্শন (অভক্ষণ) করতে হবে; তাহলে উক্ত দোষ হবে না (নোক্তদোষো ভবতি)। তাদের মন্ত্রবিশেষ উদাহৃত হচ্ছে।–অগ্নে নয় ইত্যাদি মন্ত্রে আগ্নী, বিষ্ণুর্বিচক্রম ইত্যাদি মন্ত্রে হবিধান, অগ্ন আযুংসি পবস ইতি সুচ আ বায়ো ভূষ শুচিপা ইত্যাদি মন্ত্রে বায়ুদেবতার এবং ঐন্দ্রিয়া সদঃ (অন্যাঘা যে অগ্নিমিন্থত ইতি সদঃ) ইত্যাদি মন্ত্রে যথাযোগ্য দেবগণের যাগ কর্তব্য। [ তেষু চত্বারো মন্ত্রা…অর্থাৎ এই চারটি মন্ত্রের মর্মার্থ প্রথম কাণ্ডে উল্লেখিত হয়েছে]। হে দ্রোণকলস (মময় অর্থাৎ কাষ্ঠনির্মিত কলস-সদৃশ যজ্ঞপাত্রবিশেষ)! তোমার স্বরূপভূতা পৃথিবীকে জ্যোতির্ময় অগ্নির সাথে যুক্ত করে এই স্থানে স্থাপন করছি। হে আধবনীয় (যজ্ঞপাত্রবিশেষ)! তোমার স্বরূপভূত বায়ুকে তার আধার অন্তরীক্ষ সহ এই স্থানে যুক্ত করছি (যুনজ্ঞি)। হে পূতভৃৎ (যজ্ঞীয় সামগ্রীকে পূতকারী পাত্রবিশেষ)! তোমার স্বরূপভুত বাক্যকে (নানাপ্রকার মন্ত্রকে) দ্যুলোকস্থিত সূর্যের সাথে এই স্থানে যুক্ত করছি। জুহু, উপভৃৎ ও ধ্রুব নামক তিনটি সুক (যজ্ঞে ঘৃত প্রক্ষেপণের নিমিত্ত পাত্রবিশেষ) যাতে পরস্পর সম্পর্করহিত হয় (অর্থাৎ মিশে না যায়, সেই নিমিত্ত সূর্যের প্রকাশের দ্বারা তা পরীক্ষা করে যুক্ত করছি। (অর্থাৎ–হে সুত্রয়! তোমরা যাতে পরস্পর সম্পর্করহিত থাকো, সেই জন্য সূর্যের প্রকাশের দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা পূর্বক যুক্ত করছি)। অতঃপর অগ্নিদেবতা গায়ত্রী ছন্দ উপাংশো পাত্ৰমসি ইত্যাদি দশটি মন্ত্রে যাগ করণীয়। হে ঊধ্বপাত্র (যজ্ঞীয় পাত্রবিশেষ)! অগ্নি দেবতা তোমাকে রক্ষা করুন, গায়ত্রী ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে উপাংশু নামক সোমরস গ্রহণের পাত্র। এই প্রকারে পরে নয়টি মন্ত্র যোজনা কর্তব্য। যথা–সোম দেবতা ও ত্রিষ্টুপ ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে অন্তর্যামের (অর্থাৎ অন্তর্যাম নামক) পাত্র; ইন্দ্র দেবতা ও জগতী ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি ইন্দ্র ও বায়ুদেবতার (সোমরস গ্রহণের) পাত্র; বৃহস্পতি দেবতা ও অনুষ্টুপ ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে মিত্র ও বরুণদেবতার (সোমরস গ্রহণের) পাত্র; অশ্বিদ্বয় দেবতা ও পংক্তি ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে অশ্বিনীকুমার যুগলের (সোমরস গ্রহণের) পাত্র; সূর্য দেবতা ও বৃহতী ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে শুক্রের (সোমরস গ্রহণের) পাত্র। চন্দ্র দেবতা ও সতোবৃহতী ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে মস্থিনের (সোমরস মন্থনের) পাত্র (মহিনঃ পাত্ৰমসি); বিশ্বদেবগণ তোমাকে রক্ষা করুন, উষণিহ ছন্দ (সপ্তাক্ষর ছন্দোবিশেষ) তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে আগ্রয়ণের (স্থালীরূপ) পাত্র; ইন্দ্র দেবতা ও ককু ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন; তুমি হলে উথের (অর্থাৎ যজ্ঞবিশেষ-সম্বন্ধী সোমরস গ্রহণের) পাত্র; পৃথিবী দেবতা ও বিরাট ছন্দ তোমাকে রক্ষা করুন, তুমি হলে ধ্রুবের পাত্র ॥ ৬৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন-সপ্তমে পরস্পরমাৎসর্যেন প্রবৃত্তয়োর্যজমানয়োঃ কশ্চিন্নৈমিত্তিকঃ প্রয়োগো বক্তব্যঃ। অর্থাৎ–সপ্তম অনুবাকে পরস্পর মাৎসর্যযুক্ত দুই যজমানের কোন নৈমিত্তিক প্রয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে।]
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- ইষ্টর্গো বা অধ্বর্য্যৰ্যজমানস্যেষ্টর্গঃ খলু বৈ পূৰ্বোহঃ ক্ষীয়ত আসন্যান্মা মন্ত্রাৎ পাহি ক্যাশ্চিদভিশস্ত্যা ইতি পুরা প্রাতরনুবাকাজুহুয়াদাত্মন এব তদধ্বর্য্যঃ পুরস্তাচ্ছৰ্ম্ম নহতেইনাৰ্ত্তৈ সম্বেশায় ত্বা গায়ত্রিয়াস্ত্রিভো জগত্যা অভিভূত্যৈ স্বাহা প্রাণাপানৌ মৃত্যোৰ্মা পাতং প্রাণাপানৌ মা মা হাসিষ্টং দেবতাসু বা এতে প্রাণাপানয়োঃ ব্যাযচ্ছন্তে যেষাং সোমঃ সমৃচ্ছতে সম্বেশায় দোপবেশায় ত্বেত্যাহ ছন্দাংসি বৈ সম্বেশ উপবেশচ্ছন্দোভিরেবাস্য ছন্দাংসি বৃঙক্তে প্ৰেতিবন্ত্যাজ্যানি ভবনভ্যভিজিত্যৈ মরুত্বতীঃ প্রতিপদো বিজিত্যা উভে বৃহদ্রথন্তরে ভবত ইয়ং বাব রথন্তরমসৌ বৃহদাভ্যামেবৈনমন্তরেত্যদ্য বাব রথন্তরং শো বৃহদদ্যাশ্বা দেবৈনন্তরেতি ভূত বা রথন্তরং ভবিষ্যদ বৃহদভূতাচ্চৈবৈনমপরিমিতা চান্তরেতি বিশ্বামিত্রজমদগ্নী বসিষ্ঠেনাম্পৰ্দ্ধেতাং স এতজ্জমদগ্নিহি ব্যমপশ্যত্তেন বৈ স বসিষ্ঠস্যেন্দ্রিয়ং বীৰ্য্যমবৃক্ত যদ্বিহব্যং শস্যত ইন্দ্রিয়মের তদ্বীৰ্য্যম যজমানো ভ্রাতৃব্যস্য বৃক্তে যস্য ভূয়াংসো যজ্ঞক্রতব ইত্যাহুঃ স দেবতা বৃক্ত ইতি যদ্যগ্নিষ্টোমঃ সোমঃ পরস্তাৎ স্যাদুকথ্যং কুব্বীত যদ্যুথ্যঃ স্যাদতিরাং কুব্বীত যজ্ঞক্রতুভিরেবাস্য দেবতা বৃক্তে বসীয়া ভবতি ॥৭॥
মর্মার্থ- ইষ্টপূর্তির নিমিত্ত যাগানুষ্ঠানের বিধানে প্রমাদ আলস্য ইত্যাদির দ্বারা যজ্ঞ বিনষ্টি লাভ করে, সুতরাং যজ্ঞকর্তা যজমানের আর্তির পূর্বে অধ্বর্য নিজের বিনাশ পরিহারের নিমিত্ত হোতা-সম্বন্ধী প্রাতরনুবাক পাঠ করার পূর্বে আসন্যাদ ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা যাগ করবেন (প্রাতরনুবাকপাঠাৎ পুরাইজ্যমধ্বমুরাগীঘ্ৰে জুহুয়াৎ)। তার ফলে হোমের দ্বারা অধ্বর্য প্রথমে আত্মসুখ লাভ করবেন এবং তার পরে যজমানের আর্তি সম্পন্ন হবে। মন্ত্রের অর্থ হলো– আসন্যাদ্বৈরিনামাস্যে.. অর্থাৎ হে দেব! শত্রুর মুখে উচ্চারিত অভিচার-রূপ মন্ত্রের অমঙ্গল হতে আমাকে রক্ষা করুন। সকল অপবাদ-রূপ মন্ত্রের অমঙ্গল হতে আমাকে রক্ষা করুন। সকল অপবাদ-রূপ অভিশাপ হতে আমাকে রক্ষা করুন। মাৎসর্যে অন্বিত হয়ে সোম যাগানুষ্ঠানকারী দুই যজমানের নিমিত্ত অন্য পাঁচটি মন্ত্রে যাগ কর্তব্য। হে অগ্নিদেব! আমার শয়ন (সম্বেশঃ) ও আসন (উপবেশ) এই উভয় প্রকার সিদ্ধির কামনায় এবং গায়ত্রী কর্তৃক বৈরির অভিভবের (পরাভবের) নিমিত্ত স্বাহা মন্ত্রের অনুষঙ্গে আপনার উদ্দেশে আহুতি প্রদান করছি। এই রকমেই ত্রিষ্ঠুভ ও জগতী কর্তৃক বৈরির পরাভবের নিমিত্ত আপনাকে শয়ন ইত্যাদির পূর্বানুষঙ্গে আপনার উদ্দেশে আহুতি প্রদান করছি।–এই হলো তিনটি মন্ত্র। চতুর্থ ও পঞ্চম মন্ত্র–হে প্রাণ ও অপান! মৃত্যুর সকাশে আমাকে পাতিত করো না-তোমরা কখনও আমাকে পরিত্যাগ করো না।–এই উভয় ক্ষেত্রেই স্বাহা মন্ত্রের সাথে আহুতি প্রদান কর্তব্য। যে যজমানবর্গ মাৎসর্যে অন্বিত হয়ে সোমযাগ অনুষ্ঠানের প্রবর্তন করেন, তাদের দেবতা-বিষয়ে ও প্রাণ-অপান-বিষয়ে বিপ্রতিপত্তি (বিরোধ বা সংশয়) ঘটে। একজন মনে করেন এই দেবতা ইত্যাদি আমার থাকুন, অন্যের নিকট যেন না গমন করেন; অপরজনেও সেইরকমই সংশয়ান্বিত হন। এই বিরোধ বা সংশয়ের মীমাংসার নিমিত্ত সম্বেশায় তত্বাপবেশায়… ইত্যাদি (পূর্বে উল্লেখিত) পাঁচটি মন্ত্রের দ্বারা প্রাতরনুবাক পাঠের পূর্বে অগ্নীর্ধে যাগ কর্তব্য (অগ্নীঘ্ৰে জুহুয়াৎ)। তাতে দেবগণ এবং প্রাণ ও অপান তার অধীনে থাকবে এবং তিনি স্বয়ং নিরুপদ্রবে ও সুখের দ্বারা শয়ন ও আসনের প্রভু হয়ে থাকেন (অর্থাৎ সিদ্ধি প্রাপ্ত হন)। অতঃপর উদ্গাতার কর্তব্যবিশেষ উক্ত হয়েছে।–যে সকল আজ্য-স্তোত্রের প্রকৃষ্টা গতি আছে, উদ্গতার সেইরকম আজ্য-স্তোত্রের অনুষ্ঠান কর্তব্য; এবং তার দ্বারা অভিজয় সম্পাদিত হয়। নিত্যপ্রয়োগে অগ্ন আয়াহি বীতয় ইত্যাদি মন্ত্র পঠনীয়, কিন্তু মাৎসর্যপ্রবৃত্ত-রূপে অস্মিন্ সংসবে প্র বো বাজা ইত্যাদি আজ্যাস্তাত্ৰসমূহ পাঠ করা কর্তব্য। এই কর্মে অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োগে (পৃষ্ঠস্তোত্রে) বৃহৎসাম ও রথন্তরসাম এই উভয় সামের প্রয়োগ কর্তব্য। এই উভয় মন্ত্রের প্রয়োগে পাঠকারীর ভুলোক ইত্যাদি প্রাপ্তি হেতু এই লোকসমূহ হতে তার প্রতিস্পর্ধী (বিদ্বেষী) জনের বিচ্যুতি ঘটে। বিশ্বামিত্র যেমন প্রজ্বলিত অগ্নির ন্যায় (জমদগ্নি) বশিষ্ঠের সামর্থ্য হরণ করেছিলেন, সেইভাবে বিদ্বেষী জনের স্পর্ধা (ইন্দ্রিয়সামর্থ্য) বিনাশ করতে হলে মোগ্নে বর্চো বিহবে ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করা কর্তব্য। দুই স্পর্ধমান যজমানের মধ্যে যাঁর যজ্ঞ (দেবতার উদ্দেশে যজন) ও ক্রতু (স্তুতি ইত্যাদি) অঙ্গ ও উপাঙ্গের সাথে অধিক হবে (ভূয়ান ভবতি) তিনি অপর প্রতিস্পর্ধীর দেবতাকে (দেবার্চনাকে) বিনাশ পূর্বক নিজে অধিক ধনশালী হবেন (স্বয়ং বসুমত্তমো ভবতি) ॥৭॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমেহনুবাক উপাংশুগ্ৰহাৰ্থস্যাভিষবস্যাপেক্ষিতা মন্ত্র উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অষ্টম অনুবাকে উপাংশু গ্রহের, অপেক্ষিত মন্ত্ৰসমূহ উক্ত হয়েছে ]
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- নিগ্রাভ্যাঃ স্থ দেবশ্রুত আয়ুৰ্ম্মে তপয়ত প্রাণং মে তর্পায়তাপিনং মে তৰ্পয়ত ব্যানং মে তৰ্পয়ত চক্ষুৰ্ম্মে তৰ্পয়ত শ্ৰোত্ৰং মে তৰ্পয়ত মনো মে তৰ্পয়ত বাচং মে তৰ্পয়তাহত্মানং মে তৰ্পয়তাঙ্গানি মে তৰ্পয়ত প্রজাং মে তৰ্পয়ত পশু মে তপয়ত গৃহান্মে তৰ্পয়ত গণান্নে তৰ্পয়ত সৰ্ব্বগণং মা তৰ্পয়ত মা গণা মে মা বি তৃষরোষধয়ো বৈ সোমস্য বিশশা বিশঃ খলু বৈ রাজ্ঞঃ প্ৰদাতোরীশ্বরা ঐন্দ্রঃ সোমোহবীবৃধং বো মনসা সুজাতা ঋতপ্রজাতা ভগ ইদ্বঃ স্যাম।। ইন্দ্ৰেণ দেবীৰ্ব্বীরুধঃ সম্বিদানা অনু মন্যাং সবনায় সোমমিত্যাহৌষধীভ্য এবৈনং স্বায়ৈ বিশঃ স্বায়ৈ দেবতায়ৈ নিৰ্য্যচ্যাভি যুণোতি যো বৈ সোমস্যা ভিমূয়মাণস্য প্রথমোহংশু স্কতি স ঈস্বর ইন্দ্রিয়ং বীর্যে প্রজাং পশূন্য জমানস্য নিহঁন্তোস্তমভি মন্ত্রয়েতাহমাহস্কাৎ সহ প্রজয়া সহ রায়ম্পোষেণে য়িং মে বীর্যং মা নিৰ্ব্বধীরিত্যাশিষমেদৈতামা শান্ত ইন্দ্রিয়স্য বীৰ্য্যস্য প্রজায়ৈ পশূনামনির্ঘাতায় দ্রশ্চস্কন্দ পৃথিবীমনু দামিমং চ যোনিমনু যশ্চ পূৰ্ব্বঃ। তৃতীয়ং যোনিমনু সঞ্চরন্তুং দ্রং জুহোম্যনু সপ্ত ছোত্রাঃ ॥৮॥
মর্মার্থ- হবিষ্মতীরিমা আপ ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা কুম্ভে অবশ্যই যে জল গ্রহীতব্য হয়, তা নিগ্রাভ্য নামে অভিহিত। হে আপো (জলরাশি)! তোমরা দেবশ্রুত অর্থাৎ দেবগণের দ্বারা শ্রুত হও (দেবৈঃ শায়ন্ত)। তোমরা আমাদের আয়ুর রক্ষণ (অথবা তৃপ্তি বিধান) করো (তপয়ত)। এই প্রকারে আমার প্রাণের, অপানের, ব্যানের, চক্ষুর, শ্রোত্রের (কর্ণের), মনের, বাক্যের (বাচং), আত্মার (আত্মাং জীবম), অঙ্গসমূহের (হস্তপদ ইত্যাদি অবয়বসমূহের), প্রজার (সন্ততির), পশুর, গণের (ভৃত্যসমূহের) ও সকলের (অর্থাৎ আমার পুত্র-ভৃত্য-আত্মীয়-স্বজন সকলের রক্ষণ (অথবা তৃপ্তি সাধন) করো। তোমাদের তর্পণের দ্বারা (তৃপ্তির দ্বারা) আমাদের সর্বজনের তৃষ্ণা ইত্যাদি রহিত হোক। ওষধিসমূহ সোমরাজের প্রজাস্থানীয় (বিশঃ খলু), তারা আমাদের নিমিত্ত সোমরাজকে দানে সমর্থ। সোম হলেন চন্দ্রদেবতা-সম্বন্ধীয় (সোমশ্চেন্দ্রদেবত্যঃ)। সেই নিমিত্ত ওষধীন্দ্র বিষয়েনাবীবৃধম ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা সোমের অভিমন্ত্রণ করা উচিত। মন্ত্রের অর্থ হলো–হে সুজাতা (সর্বজনের উপকারকারী)! শোভনজন্মা ও বিশেষভাবে ঋতপ্রজাতা অর্থাৎ যজ্ঞের নিমিত্ত উৎকর্ষের সাথে উৎপন্ন, হে ওষধিসকল! আমরা মনে মনে তোমাদের বর্ধন করছি (অর্থাৎ তোমাদের বৃদ্ধি কামনা করছি)। আমরা সর্বদা তোমাদের ভজন অর্থাৎ সেবা বা পূজা করব। সোমবল্লীরূপা দৈব বীরুধগুলি (শাখাপত্ৰচয়বিশিষ্টা লতাসমূহ) ইন্দ্রের সাথে ঐকমত্য হয়ে প্রাতঃসবন কর্মে সোমের অনুমোদন করুক। ওষধি হলো সোমের স্বকীয় প্রজা, এবং ইন্দ্র হলেন সোমের স্বকীয় দেবতা; এই মন্ত্র পাঠের দ্বারা ওষধিরূপা সোমের প্রজা ও ইন্দ্ররূপা সোমের দেবতার নিকট হতে সোমকে বিশেষভাবে যাচ্ঞা করে নিয়ে অভিষব করণীয়। সোমের অভিষবণ কালে (ক্ষরিত হওয়ার সময়ে) প্রস্তর হতে সোমের লেশমাত্র অংশ ভূমিতে পতিত হলে, সেই লেশ যজমানের ইন্দ্রিয় ইত্যাদির নিঃশেষে বিনাশে সমর্থ হয়। এই বিনাশ পরিহারের নিমিত্ত আ মাহস্ক ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা সেই লেশকে অভিমন্ত্রিত করতে হয়। সেই মন্ত্রের অর্থ-হে ভূমিতে পতিত অংশ! তুমি প্রজাবর্গ ও ধনসমৃদ্ধির সাথে আমার প্রতি আস্কান্ অর্থাৎ পুনরায় আগত হয়েছ। অতএব আমার ইন্দ্রিয়সামর্থ্য (বীর্য) বিনাশ করো না। এই অভিমন্ত্রণের দ্বারা প্রজা ইত্যাদির বিনাশ হবে না, এমনই প্রার্থনা করা হয়েছে। দুষ্প অর্থাৎ সোমরস-বিন্দু পৃথিবীতে স্কন্দিত অর্থাৎ ক্ষরিত বা পতিত হলে, সেই বিন্দু আহুত হয়ে দ্যুলোক, অন্তরিক্ষলোক ও ভূলোক–এই তিনটি স্থানে সঞ্চারিত হয়ে যায়। যে দিকে ঐ দুষ্প পতিত হয়, সেই দিক ব্যতিরিক্ত হোমযোগ্য সপ্তদিকে অনুক্রমে তার যাগ কর্তব্য (করছি), যাতে এই দ্রঙ্গ আদিত্য ইত্যাদি তিন স্থানে সঞ্চারিত হয়ে উপকার করে ॥৮৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–নবমে সবনাহুত্যাদি মন্ত্রা বক্তব্যাঃ। অর্থাৎ–নবম অনুবাকে সবন-আহুতির মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে।]
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- যো বৈ দেবাবেয়শসেনাপয়তি মনুষ্যান্মনুষ্যযশসেন দেবযশস্যেব দেবে। ভবতি মনুষ্যযশসী মনুষ্যেষু যা প্রাচীনমায়ণাদ গ্রহান্ গৃহ্নীয়াত্তানুপাংশু গৃহ্নীয়াদ্যানুর্দ্ধাস্তানুপমিতো দেবানেব তদ্দ্যেশসেনাপয়তি মনুষ্যান্ম নুষ্যয়শসেন দেব্যশস্যেব দেবেষু ভবতি মনুষ্যষশসী মনুষ্যোন্থগ্নিঃ প্রাতঃসবনে পাত্বম্মান্বৈশ্বানররা মহিনা বিশ্বশস্তৃঃ। স নঃ পাবকো দ্রবিণং দধাতু আয়ুষ্মন্তঃ সহভক্ষাঃ স্যাম। বিশ্বে দেবা মরুত ইন্দ্রো অম্মানস্মিন্দ্বিতীয়ে সবনে ন জস্থ্যঃ। আয়ুষ্মন্ত প্রিয়মোং বন্তো বায়ং দেবানাং সুমতৌ স্যাম। ইদং তৃতীয়ং সবনং কবীনামৃতেন যে চমসমৈরয়ন্ত। তে সৌধন্বনাঃ সুবরানশানাঃ খ্রিষ্টিং নো অভি বসীয়ো নয়ন্তু। আয়তনবর্তীৰ্বা অন্যা আহুতয়ো হয়হেনায়তনা অন্যা যা আঘারবতীস্তা আয়তনবতীযাঃ সৌম্যাস্তা অনায়তনা ঐন্দ্ৰবায়বমাদায়াহঘারামা ঘরয়েধ্বনরা যজ্ঞোয়মস্ত দেবা ওষধীভ্যঃ পশবে নো জনায় বিশ্বস্মৈ ভূতায়াধ্বরোহসি স পিন্বস্ব ধৃতবদেব সোমেতি সৌম্য এব তদাহুতীরায়তনবতীঃ করোত্যায় তনবান্ ভবতি য এবং বেদাবো দ্যাবাপৃথিবী এব ঘৃতেন ব্যুনত্তি তে ঝত্তে উপজীবনীয়ে ভবত উপজীবনীয়ো ভবতি য এবং বেদৈষ তে রুদ্র ভাগোযং নিরযাথাস্তং জুষ বিদেগোপত্যং রায়ম্পোষং সুবীৰ্যং সম্বৎসরীণাং স্বস্তি। মনুঃ পুত্রেভ্যো দায়ং ব্যভজৎ স নাভানেদিষ্ঠম ব্রহ্মচর্য্যং বসন্তং নিরভজৎ স আহগচ্ছৎ সোহব্রবীৎ কথা মা নিরভাগিতি ন ত্বা নিরভাক্ষমিত্যব্রবীদঙ্গিরস ইমে সত্রমাসতে তে সুবর্গং লোকং ন প্র জানন্তি তেভ্য ইদং ব্রাহ্মণং ব্রহি তে সুবৰ্গং লোকং যন্তো য এষাং পশবস্তাংস্তে দাস্যম্ভীতি দেভ্যোহব্রবীত্তে সুবৰ্গং লোকং যন্তে য এষাং পশৰ আসন্তানৰ্ম্ম অদদুস্তং পশুভিশ্চরন্তং যজ্ঞবাস্তৌ রুদ্র আহগচ্ছৎ সোহব্ৰৰীষ্মম বা ইমে পশব ইত্যদুৰ্ব্বৈ মহমিমা নিত্যব্রবীন্ন বৈ তস্য ত ঈশত ইত্যব্রবীদ্যদ্যজ্ঞবাস্তৌ হীয়তে মম বৈ তদিতি তস্মাদ্যজ্ঞবাস্তু নাভ্যবেত্যং সোহবীদ্যজ্ঞে মাহভজাথ তে পশুন্নাভি মংস্য ইতি তম্মা এতং মনিঃ সংস্ৰামজুহোত্ততো বৈ তস্য রুদ্রঃ পশূন্নাভ্যমন্যত যতৈ মেবং বিদ্বান্থিনঃ সংশ্রাবং জুহাতি ন তত্র রুদ্রঃ পশুনভি মন্যতে ॥৯॥
মর্মার্থ- যিনি অর্থাৎ যে যজমান দেবতাগণকে যশ বা কীর্তি অর্পণ করেন, তিনি দেবলোকে অর্থাৎ স্বর্গে দেবগণের মধ্যে যশস্বী হন এবং ভূলোকে মনুষ্যগণের মধ্যে মনুষ্য-যশবান্ হন (অর্থাৎ দেবলোকে দেব্যশস্বী ও মনুষ্যলোকে মনুষ্য-যশস্বী হয়ে থাকেন)। এই দুটির সিদ্ধির উপায় কথিত হচ্ছে।–আগ্রয়ণ গ্রহের (সাগ্নিকের কর্তব্য যজ্ঞ বিশেষের) পূর্বে অন্তর্যামী, ইন্দ্র, বায়ু ইত্যাদির উদ্দেশে যে উপাংশু (অপরের শ্রবণের অযোগ্য জপ সমন্বিত) যাগ করা হয় (গ্রহানংশু পাংশ্বন্তর্যামৈন্দ্ৰবায়বাদী গৃহূতি), তাতে দেবলোকে অর্থাৎ দেবতাগণের মধ্যে কীর্তিপ্রাপ্তি ঘটে এবং ঈষৎ উচ্চ মন্ত্র-ধ্বনির দ্বারা যাগ করলে মনুষ্যগণের মধ্যে কীর্তিপ্রাপ্তি হয়। এর ফলে যজমান দুটি লোকেই কীর্তি প্রাপ্ত হন (লোকদ্বয়ে কীর্তির্ভবতি)। আমাদের অনুষ্ঠিত প্রাতঃসবনে এই অগ্নি আমাদের রক্ষা করুন। স্বকীয় মহিমার দ্বারা বিশ্বের বা সকলের সুখপ্রাপক বৈশ্বানর (বিশ্বের সকল মানুষের পালক) অগ্নিদেব আমাদের ধন প্রদান করুন (ধনং দদ্যাৎ); সেই পাবক অগ্নি আমাদের শোধন অর্থাৎ পাপক্ষয় করুন, আমরা সহভক্ষগণের (অর্থাৎ সকলের) সাথে অবস্থান করব।–এই হলো প্রাতঃ-সবন সমাপ্তির (প্রাতঃসবনসমাপ্তেী) হোমমন্ত্র। মরুত্বর্গ, ইন্দ্র ও সকল দেবতা (সর্বে দেবা) এই দ্বিতীয় মাধ্যন্দিন সবনে আমাদের যেন পরিত্যাগ না করেন (মা পরিত্যজেয়ুঃ)। আমরা সুদীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত হয়ে যে দেবগণের উদ্দেশে স্তোত্র ইত্যাদি বলব, তাদের অনুগ্রহবুদ্ধিতে যেন অবস্থান করতে পারি।–এই হলো মাধ্যন্দিন সবন সমাপ্তির (মধ্যন্দিনসবনসমাপ্তেী) হোমমন্ত্র। বিদ্বান ঋত্বিকগণের সাথে সম্বন্ধযুক্ত (অর্থাৎ তাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত) আমাদের এই তৃতীয় সবনে অর্থাৎ শোভন যাগে আমাদের ধনযুক্ত করে সেই দেবগণ আগত হোন, যে দেবগণ চমসগণের প্রেরণকারী (অর্থাৎ বিশেষ যজ্ঞপাত্রসমূহের প্রেরক), ইন্দ্র-সম্বন্ধী যে দেবগণ ঋভু-নামে অভিহিত হয়ে স্বর্গপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এই হলো তৃতীয় সবন সমাপ্তির (তৃতীয়সবনসমাপ্তেী) হোমমন্ত্র। অতঃপর আঘারমন্ত্র পাঠ করা কর্তব্য।–আঘার মন্ত্রের অর্থ-হে দেবগণ! আমাদের এই অধ্বর অর্থাৎ যজ্ঞ হিংসকরহিত হোক। হে সোম! আপনি এই যজ্ঞকে হিংসারহিত ও ঘৃতবৎ সিঞ্চিত করুন; কারণ আমাদের এই যজ্ঞ ওষধি, পশু ও সর্বজন সহ সকল প্রাণীর (মঙ্গলের) নিমিত্ত অনুষ্ঠিত। এতে সৌম্য ঐন্দ্র ও বায়ু ইত্যাদি গ্রহের বিস্তৃতি হবে। যিনি এমন বিষয় জ্ঞাত হন, তিনিও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আরও, দ্যাবা পৃথিবী ঘৃতের দ্বারা সিক্ত হলে, তা সকল প্রাণীর উপজীব্য হবে। যিনি এমন বিষয় জ্ঞাত হন, তিনিও উপজীব্য (আশ্রয়) লাভ করেন। হে রুদ্র! ক্রুর দেবগণের নিকট হতে যাচিত এই সংস্রাব আপনার ভাগ, আপনি তা সেবন (ভোগ) করুন। গাভীসমূহের পালন, ধনের সাধন, শোভন পুত্র ও সম্বৎসরব্যাপীনিম্পাদ্য ওষধিসমূহের রক্ষা (অবিনাশং) আপনি জানেন। সেই হেতু এগুলি সবই আমাদের নিমিত্ত সম্পন্ন করুন।–সংস্রাব হোমের বিধান বিষয়ে একটি আখ্যায়িকা সম্যক রচিত হয়েছে (পীঠিকামারচয়তি)।–মনুর বহু পুত্রের মধ্যে নাভানেদিষ্ঠ নামক কনিষ্ঠ বালক পুত্রটি ব্রহ্মচর্য-পালনের দ্বারা বেদাধ্যয়ন করতে অন্যত্র গমন করেছিলেন। ইতিমধ্যে (তদানীং) মনু তার জ্যেষ্ঠ পুত্রগণের মধ্যে স্বকীয় সকল ধন বিভাগ করে দিয়েছিলেন, অর্থাৎ অধ্যয়নরত বালক পুত্রটিকে ভাগরহিত করে দিয়েছিলেন। পরে (অধ্যয়নশেষে) সেই বালক পুত্র (নাভানেদিষ্ঠ) গৃহে প্রত্যাগত হয়ে পিতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ হেতুতে আমাকে ভাগ হতে বঞ্চিত করলেন? তখন মনু তাকে জানালেন যে, তিনি তাকে ভাগরহিত করেননি এবং সেই ভাগপ্রাপ্তির উপায়ের নিমিত্ত পুত্রকে উপদেশ দান করলেন। তিনি বললেন, এই যে অঙ্গিরা নামক মহর্ষিগণ স্বর্গপ্রাপ্তি-সাধনের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করছেন, এঁরা নাভানেদিষ্ঠ-নামক শস্ত্র (প্ৰগীত মন্ত্রবিশেষ) ইত্যাদি অপরিজ্ঞাত আছেন; এবং সেই জন্য এঁরা স্বর্গে গমন করতে সমর্ত হবেন না। তুমি তাদের যজ্ঞে গমন পূর্বক শস্ত্র ইত্যাদি প্রতিপাদক (নিম্পাদক) ব্রাহ্মণ (বেদের অংশবিশেষ) পাঠ করো। তাহলে যজ্ঞের পরিসমাপ্তিতে তারা স্বর্গে গমনকালে যাগের উপযুক্ত আপন আপন অবশিষ্ট সকল পশু তোমাকে প্রদান করবেন। এই হলো ভাগপ্রাপ্তির উপায়। সেইমতো করে (অর্থাৎ পিতার কথামতো যজ্ঞে গমন পূর্বক ব্রাহ্মণ-মন্ত্র পাঠ করে যজ্ঞবশিষ্ট পশুসমূহ লাভের পর) নাভানেদিষ্ঠ যখন পশুগুলিকে সঞ্চারিত করে গৃহে প্রত্যাগমন করছিলেন, সেই সময়ে রুদ্র আগত হয়ে বললেন, যজ্ঞশেষে অবশিষ্ট দ্রব্যসমূহে আর যজ্ঞকারীর স্বামিত্ব থাকে না, সুতরাং যজ্ঞকারীর দানের অধিকার নেই। যজ্ঞশেষের এই অবশিষ্ট সব কিছুই আমার। তুমি আমার বিনা অনুমতিতে এগুলি নিয়ে গমন করছ কেন? তাতে নাভানেদিষ্ঠ বললেন, এই পশুগুলি অঙ্গিরা ঋষিগণ আমাকে দান করে গেছেন। রুদ্র বললেন, এই যজ্ঞাবশিষ্ট পশুসমূহে তাদেরই যখন অধিকার নেই, তারা তা তোমাকে কেমন করে দান করতে পারেন? এগুলিতে তোমার কোন অধিকার নেই; কারণ যজ্ঞ সমাপ্তির পরে যজ্ঞভূমিতে যা কিছু অবশিষ্ট থাকে, তার সবই আমার অধিকারভুক্ত। সেইজন্য আমার অনুজ্ঞা ব্যতিরেকে কেউই যজ্ঞভূমিতে প্রবেশে সমর্থ হয় না। অবশ্য যদি তোমার পশুর প্রয়োজন থাকে, তবে আমাকেও যজ্ঞ-ভাগ অর্পণ করে। এর ফলে আমি এই পশুগুলির বিনাশ সাধন করব না। অতঃপর নাভানেদিষ্ঠ সেই রুদ্রের উদ্দেশে মন্থি সংস্রাব যাগের অনুষ্ঠান করলেন (মন্থিনঃ সংস্ৰাবমজুহোৎ)। তাতে তুষ্ট হয়ে রুদ্র নাভানেদিষ্ঠের পশুগুলির প্রতি হিংসা পরিত্যাগ করে তাকে সমস্ত পশু দান করলেন।-এই কথা জ্ঞাত হয়ে যিনি মন্থি সংস্রব যাগ করেন, রুদ্র তার পশু হনন করেন না (তত্র রুদ্রঃ পশুনভি মন্যতে)।–এটাই এই আখ্যানের পরিসমাপ্তির বিধান ॥৯॥
[সায়ণাচার্য বলেন–দশমে প্রবৃতহোমাদিমা উচ্যন্তে। অর্থাৎ-দশম অনুবাকে প্রবৃত-হোম ইত্যাদির মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে]
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- জুষ্টো বাচ্যে ভূয়াসং জুষ্টো বাচস্পতয়ে দেবি বা। যদ্বাচো মধুমত্তস্মিন্ম ধাঃ স্বাহা সরস্বত্যৈ। ঋচা স্তোমং সমৰ্দ্ধয় গায়ত্রণ রথন্তর। বৃহদগায়ত্ৰবৰ্ত্তনি। যন্তে দ্রঃ স্কতি যন্তে অংশুব্বাতো ধিষণয়োরুপস্থা। অধ্বর্যোব্বা পরি যন্তে পবিত্রাৎ স্বাহাকৃতমিল্লায় তং জুহোমি। যো দ্রগো অংশুঃ পতিতঃ পৃথিব্যাং পরিবাপাৎ পুরোডাশাৎ করম্ভা। ধানাসোমান্মনি ইন্দ্র শুক্রাং স্বাহাকৃতমিন্দ্রায় তং জুহোমি। যন্তে দ্রন্সে মধুমাং ইন্দ্রিয়াবাৎ স্বাহাকৃতঃ পুনরপ্যেতি দেবা। দিবঃ পৃথিব্যাঃ পৰ্য্যন্তরিক্ষাং স্বাহাকৃতমিন্দ্রায় তং জুহেমি।। অধ্বর্য্যৰ্বা ঋত্বিজাং প্রথমো যুজ্যতে তেন স্তোমো যোক্তব্য ইত্যাহু ৰ্বাগগ্রেগা অগ্র এতৃজুগা দেবেভ্যো যশো ময়ি দধতী প্রাণান পশুধু প্রজাং ময়ি চ যজমানে চেতাহ বাচমেব তর্দ্যজ্ঞমুখে যুক্তি বাস্তু বা এতদ্যজ্ঞস্য ক্রিয়তে যগ্রহান গৃহীত্ব বহিষ্পবমানং সর্পন্তি পরাঞ্চো হি যন্তি পরাচীভিঃ স্তুবতে বৈষ্ণব্যচ্চা পুনরেত্যোপ তিষ্ঠতে যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুৰ্যজ্ঞমেবাৰ্ব্বষ্ণো ত্বং নো অন্তমঃ শৰ্ম্ম যচ্ছ সহস্ত্য। প্র তে ধারা মধুচুত উৎসং দুহুতে অক্ষিতমিত্যাহ যদেবাস্য শয়ানস্যোপশুষ্যতি তদেবাস্যৈতেনাহপ্যায়য়তি। ১০
মর্মার্থ– আমি বাগদেবতার (বাগবাদিনী দেবী সরস্বতীর) প্রিয় হবো (প্রিয় ভূয়াসং); সেইরকমে অর্থাৎ সেই কারণে যিনি বাক্যের পালক, সেই দেবতার প্রিয় হবো। হে বাকের অধীশ্বরী দেবি! শব্দরূপ বাক্যের সম্বন্ধযুক্ত যে মধুর তা আমাতে স্থাপন করুন। আমি সেই সরস্বতীর উদ্দেশে আহুতি প্রদান করছি (তুভ্যমেতদ্রুতমস্তু)। হে বাগদেবি! আপনি ঋকের যোনিভূত (সৃষ্টি) স্তোত্রের (সামাবৃত্তির) সমৃদ্ধি সাধন করুন; সেই ভাবে গায়ত্রীর সাথে রথস্তর সামের বর্ধন করুন এবং গায়ত্রীর বর্তনীর বা মার্গের দ্বারা বৃহৎসামের বর্ধন করুন [তাৎপর্য এই যে, এই কর্মানুষ্ঠানে (যজ্ঞে) বৃত ঋত্বিকগণের ঋক-সাম ইত্যাদি সম্পর্কিত (ঋক্সামাদিগতং) যে বৈকল্য, তা পরিহার করে এই যজ্ঞের সমৃদ্ধি সাধন করুন]। হে সোম! আপনার সম্বন্ধী যে দুষ্প (সরবিন্দু) অভিষবণের প্রস্তর-ফলক হতে ভূমিতে পতিত হয়েছে, অথবা অধ্বর্যর বাহুচ্যুত হয়ে ক্ষরিত হয়েছে, অথবা পবিত্র (আজ্যসংস্কারক কুশদ্বয় অথবা অনামিকাস্থ কুশাঙ্গুরীয়) হতে ভূমিতে নিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে, সেই বিন্দু গ্রহণ করে আমি স্বাহাকারের দ্বারা ইন্দ্রের উদ্দেশে সমর্পিত করে যাগ করছি। হে ইন্দ্র। যে রসবিন্দু সবনীয় পুরোডাশ-দ্রব্যসমূহ, লাজসমূহ (আর্দ্র তণ্ডুল বা ভৃষ্টধান্য), সোম (সোমলতা ) ও মন্থী (শুক্রশ্চ গ্রহৌ) হতে ভূমিতে পতিত হয়েছে, সেই রসবিন্দু আপনার উদ্দেশে স্বাহাকারের দ্বারা সমর্পিত করে যাগ করছি। হে সোম! আপনার যে রসবিন্দু মধুময় ও ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধিকারী, যা আমার দ্বারা স্বাহামন্ত্ৰকৃত হয়ে দিব্যলোকে, বা পৃথিবীলোক, বা অন্তরীক্ষলোকে পতিত হয়ে পুনরায় দেবতাগণের প্রাপ্ত হচ্ছে, সেই বিন্দু আমি স্বাহাকারের দ্বারা ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে সমর্পিত করে যাগ করছি। বহিষ্পবমানের নিমিত্ত গমনকারী ঋত্বিকবৃন্দের মধ্যে অধ্বর্য প্রথমে গমন করেন, সেই অধ্বর্য স্তোমযুক্ত করবেন (স্তোমো যোক্তব্য)। বহিষ্পবমান-স্তোত্র প্রস্তোতা ইত্যাদিতে যুক্ত হয়ে থাকে–অভিজ্ঞ জনেরা এই কথা বলে থাকেন (ইত্যভিজ্ঞা আহুঃ)। তা যোজনা করার নিমিত্ত বাগগ্রেগা ইত্যাদি মন্ত্র পাঠ করা কর্তব্য। অগ্রে গমনে সমর্থ যিনি, তিনি অগ্রেগা।–সেই রকম, বাগদেবতা ঋত্বিকগণের অগ্রে গমন করুন; সেই কথংভূতা বা দেবগণের প্রাপ্তির নিমিত্ত ঋজু-মার্গে (সহজ বা সোজা পথে) গমন করে থাকেন; তিনি আমারূপী অধ্বর্যকে যশ দান করে থাকেন; তিনি গো-ইত্যাদি পশুর প্রাণকে সুস্থিরতা দান করেন, এবং তিনি আমার ও যজমানের পুত্র ইত্যাদি রূপ প্রজাগণকে দান করে থাকেন। এই মন্ত্র পাঠ পূর্বক অধ্বর্য যজ্ঞমুখে বহিষ্পবমানের আরম্ভে বাক্যকে যযাজিত করেন। বহিষ্পবমানের গতির কাল নির্দেশ করা হচ্ছে। ইন্দ্র, বায়ু ইত্যাদির পূর্বভাবী সকল গ্রহগুলিকে (অর্থাৎ পূর্বেই প্রস্তুত যজ্ঞীয় পাত্রগুলিকে) গ্রহণ পূর্বক ঋত্বির্গ বহিষ্পবমানে গমন করেন। এর দ্বারা যজ্ঞের বাস্তু অর্থাৎ গৃহরূপ স্থান করা হলো। সেই হেতু সেই গ্রহের উর্ধ্বে ঋত্বিকগণ গমন করবেন। পুনরাবৃত্তিরহিত ঋত্বিকগণ বহিষ্পবমানে গমন করেন, এবং সামগানকারীগণ ঋমন্ত্রে স্তব করে যাতে যজ্ঞবিঘ্ন না হয়, সেই নিমিত্ত পুনরায় সোমের সমীপে আগমন পূর্বক যজমানের নিকট অবস্থান করে থাকেন। বিষ্ণু ব্যাপ্তত্বের নিমিত্ত যজ্ঞস্বরূপ, এই কারণে বৈষ্ণব মন্ত্রে পুনরায় প্রবর্তন (অর্থাৎ আরম্ভ বা প্রচলিত করা) হয়। এইস্থলে মন্ত্র পাঠের তাৎপর্য কথিত হচ্ছে।–হে বিষ্ণু! আপনি আমার অস্তিকতম (নিকটবর্তীতম) হোন। হে আমাদের অপরাধসমূহ সহকারি (সহত্যাস্মদপরাধং সহিষ্ণো)! আপনি আমাদের সুখ প্রদান করুন। আপনার সম্বন্ধী সোমরসের ধারা মধুর রস ক্ষরণ পূর্বক ক্ষয়রহিত হয়ে প্রকর্ষের সাথে প্রবাহিত হোক। এই মন্ত্র পাঠের দ্বারা পাত্রের মধ্যে পুর্বে গৃহীত সোম চির-অবস্থানেও স্বরূপেই বিদ্যমান থাকে, কখনও শুষ্ক হয় না, বরং সর্বতোভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বা প্রীতিকর সদৃশ হয় (তৎসমাপ্যায়িতমেব ভবতি) ॥১০।
[সায়ণাচার্য বলেন–অথৈকাদশে কাশ্চিৎ পুরোনুবাক্যা উচ্যন্তে-এই একাদশ অনুবাকে কতিপয় পুরোনুবাক্যা কথিত হয়েছে।]
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নিনা বয়িমশ্নবৎ পোষমেব দিবে দিবে। যশসং বীরবত্তমম্। গোমা অগ্নেহবিমান অশ্বী যজ্ঞো নৃবসখা সদমিদপ্ৰমৃষ্যঃ। ইড়াবান্ এযো অসুর প্রজাবান্দীর্ঘো রয়িঃ পৃথুবুধঃ সভাবা। আ প্যায়স্ব সং তে। ইহ তারমগ্ৰিয়ং বিশ্বরূপমুপ হয়ে। অম্মাকমস্তু কেবলঃ।। তন্নস্তুরীপমধ পোশষয়িত্ব দেব তষ্টৰ্বি বরাণঃ স্য। যতো বীরঃ কৰ্ম্মণ্যঃ সুদক্ষো যুক্তগ্রাবা জায়তে দেবকামঃ। শিবস্তুষ্টরিহাহগহি বিভুঃ পোষ উত অনা যজ্ঞেযজ্ঞে ন উদব।। পিশঙ্গরূপঃ সুভরো বয়োধাঃ ষ্টি বীরো জায়তে দেবকামঃ। প্রজাং ত্বষ্টা বি য্যতু নাভিমম্মে অথা দেবানামপ্যেতু পাথঃ। প্রণো দেব্যা নো দিবঃ। পীপিবাংসং সরস্বতঃ স্তনং যো বিশ্বদৰ্শতঃ। ধুক্ষীমহি প্ৰজা মিষ। যে তে সরস্ব উৰ্ম্ময়ো মধুমন্তো ঘৃতশ্রুতঃ। তেষাং তে সুম্নমীমহে।। যস্য ব্রতং পশবো যন্তি সৰ্ব্বে যস্য ব্ৰতমুপতিষ্টন্ত আপঃ। যস্য ব্রতে পুষ্টিপতির্নিবিষ্টং সরস্বতমবসে হুবেম। দিব্যাং সুপর্ণং বয়সং বৃহত্তমপাং গর্ভং বৃষভমোষধীনাম। অভীপততা বৃষ্টা তৰ্পয়ন্তং তং সরস্বমবসে হুবেম। সিনীবালি পৃথুকে যা দেবানামসি স্বসা। জুষস্ব হব্য আহুতং প্রজাং দেবি দিদিড়টি নঃ। যা সুপাণিঃ স্বগুরিঃ সুষুমা বহুসূবরী। তস্যৈ বিপত্নিয়ৈ হবিঃ সিনাবাল্যৈ জুহোতন। ইন্দ্রং বো বিশ্বতস্পরীং নরঃ। অসিতবর্ণা হয়ঃ সুপর্ণা মিহে বসানা দিবমুৎপন্তি। ত আহববৃত্র সদনানি কৃত্বাইদিৎ পৃথিবী ঘৃতৈদ্যতে। হিরণ্যকেশো রজসো বিসারেহহির্ধনিৰ্বাত ই প্ৰজীমান। শুচিত্ৰাজা উষসঃ নবেদা যশস্বতীরপস্যুবো ন সত্যাঃ। আ তে সুপর্ণা অমিনন্ত এবৈঃ কৃষ্ণো নোনাব বৃষভো যদীদ। শিবাভির্ন স্ময়মানাভিরাহগাৎ পন্তি মিহঃ শুনয়ন্ত্যভ্রা। বাবে বিদ্যুম্মিমাতি বৎসং ন মাতা সিষক্তি। যদেষাং বৃষ্টিরসর্জি। পৰ্বতশ্চিন্মহি বৃদ্ধো বিভায় দিবশ্চিৎ সানু রেজত স্বনে বঃ। যৎ ক্রীড়থ মরুতঃ ঋষ্টিমন্ত আপ ইব সখ্রিয়ঞ্চো ধবধ্ব। অভি ক্ৰন্দ নয় গর্ভ ধা উদম্বতা পরি দীয়া রথেন। দূতিং সু কৰ্ষ বিষিতং ন্যঞ্চং সমা ভবন্তুদ্বতা নিপাদাঃ। ত্বং ত্যা চিদচ্যুতাগ্রে পশু যবসে। ধামা হ যত্তে অজর বনা বৃশ্চন্তি শিকৃসঃ। অগ্নে ভূরীণি তব জাতবেদো দেব স্বাদাবোহমৃতস্য ধাম। যাশ্চ মায়া মায়িনাং বিশ্বমি ত্বে পূৰ্বীঃ সন্দধুঃ পৃষ্টবন্ধো। দিবো নো বৃষ্টিং মরুতো রবীধ্বং প্র পিন্বত বৃষ্ণো অশ্বস্য ধারাঃ। অৰ্ব্বাঙেতেন শুনয়িতুনেহ্যপো নিষিঞ্চমসুরঃ পিতা নঃ।। পিন্বন্ত্যপো মরুতঃ সুদানবঃ পয়ো ঘৃতবদ্বিদথেভুবঃ। অত্যং ন মিহে বি নয়ন্তি বাজিমুসং দুহস্তি স্তনয়ন্তমক্ষিত। উদপ্রতো মরুতস্তাং ইয়ত্ত বৃষ্টি যে বিশ্বে মরুতো জুনন্তি। ক্রোশাতি গর্দা কন্যে তুন্না পেরুং তুঞ্জানা পত্যেব জায়া। ঘৃতেন দ্যাবাপৃথিবী মধুনা সমুক্ষত পয়স্বতীঃ কৃণুতাপ ওষধীঃ। উজ্জং চ তত্র সুমতিং চ পিন্বথ যত্ৰা নরো মরুতুঃ সিঞ্চথা মধু। উদু ত্যং চিত্র। ঔৰ্ব্বভৃগুবচ্ছুচিমগ্নবানবদা হুবে। অগ্নিঃ সমুদ্রবাসস। আ সবং সবিতুর্থ ভগস্যেব ভুজিং হুবে। অগ্নিং সমুদ্রবাসস। হুবে বাতস্বনং কবিং পর্জন্যক্রন্দ্যং সহঃ। অগ্নিং সমুদ্রবাসসম্ ॥১১৷
মর্মার্থ– এই অগ্নি হতে সর্বজন উপভোগরূপ ধন প্রাপ্ত হন এবং শুধুমাত্র ধনের স্বরূপমাত্র নয়, কিন্তু দিনে দিনে (উত্তরোত্তর) সেই ধনের পুষ্টিও প্রাপ্ত হয়, কখনও তার হ্রাস হয় না, সেই পুষ্টি কীর্তিকর ও আমাদের পুত্রগণের প্রাপ্য। হে অগ্নি! পুনঃ পুনঃ আবর্তনের কারণে আমাদের প্রার্থিত যজ্ঞ বহু গাভীযুক্ত, ছাগ ইত্যাদি সংযুক্ত, ঋত্বিকবর্গের সাথে দেবগণের সংযোজক, অনভিভবনীয় (পরাভবহীন), অন্নবান, অপত্যপ্রদ, দীর্ঘ অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ অনুষ্ঠানের দ্বারা অবিচ্ছিন্ন (বিচ্ছিন্নতাহীন), বহু ধনোপেত, মূলভূত মন্ত্রের প্রয়োগে বৈকল্যরহিত ও বিদ্বানগণের সমাবেশাকীর্ণ (বিদ্বৎসভায়া যুক্তঃ) হোক। হে শত্রুগণের নিরসিতা (বা প্রাণবান বা বলবা) অগ্নি! পুনঃ পুনঃ প্রামান (অর্থাৎ প্রার্থনা করা হচ্ছে, এমন) আমাদের যজ্ঞ উক্ত বিশেষণবিশিষ্ট হোক (অর্থাৎ যা প্রার্থনা করা হলো, তেমন হোক)। আপনি আমাদের যজ্ঞের বৃদ্ধি সাধন করুন। আমি এই যজ্ঞকর্মে ত্বষ্টাদেবকে আহ্বান করছি, তিনি সকলের মুখ্য বিশ্বরূপ। তিনি আমাদের অসাধারণ পালক হোন। হে ত্বষ্টাদেব! আপনি আমাদের শীঘ্রপ্ৰপাক (তুৰ্ণং প্রাগ্নেতীতি), পুষ্টিকারক (পোষয়িতৃ) ও দানশীল (অর্থাৎ দানযোগ্য) সেই ধন দান করুন, যে ধন হতে আমরা লৌকিক ও বৈদিক কর্মসমূহে কুশল, সম্যক উৎসাহী (শীঘ্নকারী), সর্বদা সোমযাগের অনুষ্ঠানকারী ও দেবগণের সেবাকারী পুত্র লাভ করতে পারি। হে ত্বষ্টা! আপনি সুখকর হয়ে এই যজ্ঞকর্মে আগমন করুন। আপনি আমাদের পালন বিষয়ে স্বয়ং সমর্থ, অতএব (সেই কারণে) এই যজ্ঞে উল্কর্ষের সাথে আমাদের পালন করুন। যে ত্বষ্টার প্রসাদে আমাদের ত্রিবর্গের সেবক, সুষ্ঠু পোষক, চিরজীবী, ক্ষিপ্রকারী বা সত্যবাদী, দেবকামী (দেবগণের সেবক) পুত্ৰ জাত হয়, সেই ত্বষ্টা নাভিচক্রের ন্যায় প্রশস্ত পুত্রপৌত্র ইত্যাদিরূপ প্রজা সমর্পণ (দান) করুন। তারপর দেবতাগণকেও প্রাপ্ত করান (প্রাপ্নোতু)। দেবী সরস্বতী দ্যুলোক হতে আমাদের নিকট আগত হোন। (এখানে প্র নো দেবী সরস্বতী পুরোনুবাক্যা এবং আ নো দিব বৃহত আজ্যা)। সরস্বতঃ অর্থাৎ সরস্বন্ নামক দেবতার যে স্তন বিশ্ববিষয়ক (দর্শনোপেত) ক্ষুধিত বালকেরও পালকরূপে জ্ঞাত, সেইরূপ স্তন হতে আমরা যজ্ঞলক্ষণ বর্ধিতবন্ত পুত্র ইত্যাদি ও অন্নের দোহন করছি (ধুক্ষীমহি)। যেমন গাভী হতে দুগ্ধ দোহন করা হয় (দুহন্তি), সেইভাবে সেই দেবতাগণের (দেবতাকং) যাগঅনুষ্ঠান করে আমরা পুত্রপৌত্র ইত্যাদি (প্রজাদিকং) প্রাপ্ত হয়েছি। হে সরস্বন্ (সমুদ্র)! আপনার যে তরঙ্গসমূহ মাধুর্যযুক্ত ঘৃতসমান জল ক্ষরণ করে বর্তমান আছে, সেই তরঙ্গের সম্বন্ধীযুক্ত সুখ আমরা প্রাপ্ত হবো। যে সরস্বন দেবের সম্বন্ধী কর্ম (ব্রতং) দ্বিপাদ ও চতুষ্পদ সকল পশুসমূহ লাভ করে, বৃষ্টিরূপ জলরাশি যাঁর কর্ম সাধন করে, যাঁর কর্মের দ্বারা যজমানের পক্ষে ধনপুষ্টি সুলভ হয়ে থাকে, আমাদের রক্ষণের নিমিত্ত সেই হেন (তাদৃশং) সরস্ব দেবের আমরা আহ্বান করছি (হ্রয়েম)। সেই যে সরস্বন দেবের আমরা আহ্বান করছি, তিনি দিব্য (দিবমহর্তি), শোভন পক্ষযুক্ত (অর্থাৎ পক্ষীরূপ ধারণ করে অন্তরীক্ষে গমনকারীর মতো দ্রষ্টব্য), মহান, জলবর্ষণকারী, ব্রীহি ইত্যাদি মঞ্জরীরূপ ওষধির গর্ভসঞ্চারক, পুনশ্চ বৃষ্টিরূপে পতনের নিমিত্ত সকলের তৃপ্তিদায়। হে সিনীবালি (অমাবস্যা-তি-অভিমানিনী দেবতা)! আপনি দেবগণের ভগিনী (অর্থাৎ ভগিনীর ন্যায় হিতাকারিণী); হে পৃথু,ক (বিস্তৃত স্তোত্ৰশালিনী)! আপনি আমাদের দ্বারা সমর্পিত হবিঃ ভক্ষণ করুন। হে দেবি! আপনি আমাদের প্রজাবৰ্গকে প্রভূত করুন (অর্থাৎ আমাদের প্রভূত প্রজা প্রদান করুন)। হে ঋত্বিক ও যজমানগণ! আপনারা সেই শোভনহস্তা, শোভনঅঙ্গুলী-সম্পন্না, বহু যজ্ঞের প্রসবিত্রী (জনয়িত্রী) ও প্রজাগণের পালয়িত্রী দেবী সিনীবালির উদ্দেশে হবিঃ প্রদান করুন (হবিজুহোতন)। হে নরগণ (মনুষ্যবর্গ)! সকলের মধ্যে উত্তম ইন্দ্রের আহ্বান করো। (ইন্দ্রং বো বিশ্বতস্পরীং নরঃ-১কাণ্ড, ৬ষ্ঠ প্রপাঠকের ১২শ ইত্যাদি অনুবাকে ব্যাখ্যাত)। অগ্নির দ্বারা দহ্যমান করীরের সপিণ্ডী হতে নির্গত যে ধুমগুলি অন্তরীক্ষে উখিত হচ্ছে (দিবমুৎপত্তি),–সেগুলি কৃষ্ণবর্ণা, মেঘনিষ্পদনের নিমিত্ত রসহরণশীলা, সুপর্ণা অর্থাৎ প্রসারিত পক্ষসদৃশা, মেঘের ন্যায় সূর্য মণ্ডলের আচ্ছাদক (আচ্ছাদয়স্তে)। সেই ধূমরাশি আপন উদরে জল গ্রহণপূর্বক বর্ষণের নিমিত্ত প্রবৃত্ত হয়ে মৃতবৎ জলের ক্ষরণের দ্বারা পৃথিবীকে বিশেষভাবে আর্দ্র করছে (ক্লিদ্যতে) হিরণ্যবর্ণা অগ্নিকেশাস্থানীয়া সেই ধূমরাশি মেঘরূপে আকাশে প্রসারিত হচ্ছে। বায়ু যেমন শীঘ্রগতিযুক্ত, সেইরকমভাবে নির্মলদীপ্তিশালী মেঘরূপে পরিণত হয়ে সেই ধূম বিদ্যুঞ্জপ দীপ্তির সাথে যুক্ত হচ্ছে। এইরকম দৃশ্যমান ধূম আমাদের নিমিত্ত বৃষ্টি উৎপাদন করুক। প্রভাতকালের সূর্যের উদয় যাতে না জানা যায় (অর্থাৎ প্রভাতের সূর্য যাতে না দেখা যায়), সেইভাবে মেঘ সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক (অর্থাৎ আকাশ মেঘে আবৃত হয়ে থাকুক),জল ইচ্ছাকারী (ইচ্ছন্তীত্যপসুবঃ) ভূমি শস্য উৎপাদন করে সুক্ষেত্ররূপে কীর্তিমতী হোক। এদের অনুগ্রহে পুনরায় নূতন ধূম বৃষ্টি উৎপাদন করুক (পুনর্নর্বধূমো বৃষ্টিং জনয়ত্বিতি শেষঃ)। দুগ্ধস্রাবণকারিণী গাভী যেমন বৎসের উদ্দেশে হম্বারব করে (হম্ভারবং কুর্বাণা) বলে মনুষ্যগণ অবলোকন করে থাকে, সেইরকম এই বিদ্যুৎ বায়ুর উদ্দেশে গর্জন করছে। হে মরুত্বর্গ! আপনারা বজ্ৰায়ুধধারী হয়ে যখন ক্রীড়া করেন, তখন আপনাদের গর্জনে উচ্চতায় গগনেরও উধ্বস্থায়ী (উন্নতত্বেন দিবোহন্দুপরিবর্তমানঃ) পর্বতও ভীত হয়ে থাকে, (বিভেতি)। আপনাদের গর্জনে প্রবৃদ্ধ অর্থাৎ বৃদ্ধিযুক্ত (প্রৌঢ়) পর্বতের সানুদেশও (পর্বতস্থ সমভূমিও) কম্পিত হয়। আপনারা জলের ন্যায় ব্যাপক হয়ে এবং ক্রীড়া-পরায়ণ হয়ে ধাবিত হচ্ছেন (ধাবধ্ব)। এইরকম মরুৎ-গণের সাথে যুক্ত হয়ে পুনরায় নূতন ধূম (পুনর্নবধূমঃ) বৃষ্টি উৎপাদন করুক–মন্ত্রের এটাই তাৎপর্য। হে অশ্ব (জল)! তুমি মেঘগর্জনের মতো উচ্চধ্বনি করো; মেঘের উদরে জলরূপ গর্ভধারণ করো (গর্ভমাধেহি) এবং রথের ন্যায় মেঘের সাথে সর্বদিকে গমন করো; চর্মময় জলাধারসদৃশ মেঘকে সুখের নিমিত্ত আকর্ষণ করো এবং নিম্নদেশ জলপূর্ণ হয়ে উন্নত (অর্থাৎ উচ্চ) স্থলের সমান হোক। হে অজর (অর্থাৎ বিনাশরহিত) অগ্নি! যেমন গো-ইত্যাদি পশু তৃণ ভক্ষণ পূর্বক ক্ষীর ইত্যাদি অবিনাশী করে (অচ্যুতং করোতি), সেইরকম যে জলসমূহ আপনার স্থান বিনাশ করেছে, আপনি সেই জলরাশির বিনাশ-সামথ্য রহিত করুন। হে জাতবেদা (জাতমাত্রাই সর্বজ্ঞ) অগ্নি! আপনার মরণ রহিত, অন্নময় (স্বধাবা) বহু স্থান আছে। আপনি মায়াযুক্ত হয়ে অর্থাৎ ঐন্দ্রজালিকের ন্যায় প্রভূত বৃষ্টি সম্পাদিত করুন। হে মরুৎ-গণ! আপনারা আমাদের নিমিত্ত দুলোক হতে (অর্থাৎ আকাশ হতে) বৃষ্টি ক্ষরিত করুন, ব্যাপকভাবে বর্ষণশীল ইন্দ্রের জলধারা নিরন্তর সেচন করুন। হে বৰ্ষণশীল! আপনারা গর্জনরতা মেঘের সাথে আমাদের অভিমুখে আগত হোন। আপনারা আমাদের প্রাণদাতা পিতা বা পালক। সুষ্ঠু জলদানপর আপনারা (মরুৎ-গণ) সেইভাবেই জলসিঞ্চন করছেন, যেভাবে যজ্ঞভূমিতে আগত ঋত্বিক ও যজমানগণ যজ্ঞে ঘৃত সিঞ্চন করেন। হে ঋত্বিক-যজমানগণ। আপনারা মরুৎ-গণের নিকট সেইভাবেই বৃষ্টি প্রার্থনা করুন, যেভাবে বুভুক্ষিতা অর্থাৎ অন্নপীড়িতা কন্যা মাতা-পিতার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করে। মাতা-পিতা যেভাবে কন্যার অভিলাষ পূর্ণ করেন, সেইভাবে মরুৎ-গণ ঋত্বিক-যজমানকে অনুগ্রহীত করুন। হে মরুৎ-গণ! আপনারা ঘৃতসদৃশ মধুর জলের দ্বারা দ্যাবা-পৃথিবী লোকদ্বয়কে সিক্ত করুন; যে জল ভূমিতে পতিত হয়েছে, তার দ্বারা ওষধিগুলিকে সারবতী (পয়স্বতীঃ) করুন। (হে নর! জলের পরিচালক মরুৎ-গণ যে দেশে মধুর জল সিঞ্চন করেন, সেই দেশ সারযুক্ত অন্ন ও শোভনবুদ্ধিযুক্ত প্রজাসম্পন্ন হয়ে থাকে–এটাই অর্থ)। অবশিষ্ট মন্ত্র অর্থাৎ উদু ত্যং চিত্র ইত্যাদি ১ম কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকে ব্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন, উদু তং জাতবেদসম ইত্যাদি পুরোনুবাক্যা এবং চিত্রং দেবনা ইত্যাদি যাজ্য ॥১১৷৷