৪.৬ চতুর্থ কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

চতুর্থ কাণ্ড। ষষ্ঠ প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- অশ্মমুজ্জং পর্বতে শিশিয়াণাং বাতে পর্জন্যে বরুণস্য শুষ্মে! অদ্ভ্য ওষধীভ্যো বনস্পতিভভ্যাহধি সভৃতাং তাং ইষমূৰ্জং ধত্ত মরুতঃ সং ররাণাঃ। অশ্মংস্তে ক্ষুদমুং তে শুগৃচ্ছতু যং দ্বিম্মঃ। সমুদ্রস্য ত্বাহবাকয়াহগ্নে পরি ব্যয়ামসি। পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব।। হিমস্য ত্বা জরায়ুণাহয়ে পরি ব্যয়ামসি। পাবকো অম্মুভ্যং শিবো ভব। উপ অনুপ বেতসেহত্তরং নদী। অগ্নে পিত্তমপামসি। মকি তাভিরা গহি সেমং নো যজ্ঞম। পাবকবর্ণং শিবং কৃধি। পাবক আ চিতয়ত্যা কৃপা। ক্ষামরুচ উষসোন ভানুনা। তৃৰ্বন্ন যামন্নেতশস্য নূরণ আ যো ঘূণে। ন ততৃষাণো অজরঃ। অগ্নে পাবক রোচিষা মন্দ্রয়া দেব জিহুয়া। আ দেবা বক্ষি যক্ষি চ। স নঃ পাবক দীদিবোহগ্নে দেবাং ইহাহবহ। উপ যজ্ঞং হবিশ্চ নঃ। অপামিদং ন্যয়নং সমুদ্রস্য নিবেশন। অন্যং তে অম্মত্তপন্তু হেতয়ঃ পাবকো অস্মভ্যাং শিবব ভব। নমস্তে হরসে শেচিষে নমস্তে অচিঁষে। অন্যং তে অস্মত্তপন্তু হেতয়ঃ পাবকো অস্মভ্যম শিববা ভব। নৃষদে বট অপসুষদে বড়বনসদে বহিষদে বসুবৰ্বিদে বন্টু। যে দেবা দেবানাং যজ্ঞিয়া যজ্ঞিয়ানাং সদ্বৎসরীণমুপ ভাগমাসতে। অহুতাদো হবিষ্যে যজ্ঞে অস্মিৎ স্বয়ং জুহুধ্বং মধুনো ঘৃতস্য। যে দেবা দেবেম্বধি দেবত্বয়ায়ন্যে ব্ৰহ্মণঃ পুর এতারো অস্য। যেভভ্যা নৰ্ত্তে পবতে ধাম কিং চন ন তে দিবো ন পৃথিব্যা অধি সুষু। প্রাণদাঃ অপানদা ব্যানাশ্চর্দা বর্ফোদা বরিবোদাঃ। অন্যং তে অম্মত্তপন্তু হেতঃ পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব। অগ্নিস্তিষ্মেন শোচি যং সদ্বিশ্বং ন্যত্রিণম্।। অগ্নিননা বংসতে রয়িম। সৈহনীকেন সুবিদত্রো অম্মে যষ্টা দেবাং আযজিষ্ঠঃ স্বস্তি। অদক্কো গোপা উত নঃ পৰম্মা অগ্নে দুমদুত রেবদ্দিদীহি ॥১॥

[সায়ণাচার্য বলেন–প্রথমানুবাকে পরিষেনবিকর্ষর্ণাদয়োহভিধীয়ন্তে। অর্থাৎ–এই প্রথম অনুবাকে পরিষেচন বিকর্ষণ ইত্যাদি বিষয় কথিত হয়েছে।]

মর্মার্থ- হে মরুত্বর্গ! আপনারা সম্যক্ দানশীল, আপনারা আমাদের নিমিত্ত বলকারক অন্ন সম্পাদন করুন। (কিরকম অন্ন? না,) পর্বতে (অর্থাৎ মেরু-বিন্ধ্য-হিমালয় প্রভৃতি পর্বতে), প্রচণ্ড বায়ুতে, বর্ষণক্ষম বিস্তৃত মেঘে এবং বরুণ-সম্বন্ধিনী বলে সারভূত জলে উৎপন্ন ব্রীহি-যব ইত্যাদি ওষধী ও উদুম্বর ইত্যাদি বনস্পতি হতে জাত যে অন্ন আমাদেরও বলের হেতুকারক, এমন অন্ন। হে পাষাণসদৃশ দৃঢ় অগ্নি! আপনার যে ক্ষুৎপীড়া ও আপনার যে সন্তাপ, তা উভয়ই সেই বৈরিগণকে প্রাপ্ত হোক যে বৈরিগণকে আমরা দ্বেষ করি।-হে অগ্নি! সমুদ্র-সম্বন্ধী শৈবালের দ্বারা পরিব্যাপ্ত প্রদেশের উপরিভাগে আপনাকে বিকর্ষণ করছি। আপনি আমাদের শোধক (পাবক) ও শান্তস্বরূপ (শিবঃ) হোন।–হে অগ্নি! হিমের (শৈত্যের) জরায়ুবৎ শৈবালের দ্বারা পরিব্যাপ্ত প্রদেশের উপরিভাগে আপনাকে বিকর্ষণ করছি। আপনি আমাদের শোধক ও শান্তস্বরূপ হোন।

হে অগ্নি! আপনি পৃথিবীর উপরে উপগত হয়ে, বেতসবৃক্ষে (বঙুলক) উপগত হয়ে এবং নদীজলেও উপগত হয়ে তাদের রক্ষক রূপে বর্তমান আছেন। সেই হেতু আপনি জলের তেজঃরূপী।–হে মঞ্জুকি (মণ্ডুকজাতীয় বা মুনিবিশেষ)! আপনি ঋ-মন্ত্রের সাথে আগত হোন; আপনি-আমাদের এই অনুষ্ঠীয়মান যজ্ঞকে অগ্নির ন্যায় সমান তেজস্ব ও ফলপ্রদানের দ্বারা শান্ত (বা মঙ্গলময়) করুন।–হে মকি! পাবক অগ্নির বিষয়ভূতা হয়ে এই চিতিতে তার সামর্থ্যে যুক্ত হয়ে আপনি এখানে আগত হোন। আপনার আগমনে এই অগ্নি পৃথিবীতে দীপ্তবান হবেন। (তার দৃষ্টান্ত কি? না,) উষাকালের প্রকাশের দ্বারা যেমন পদার্থসমূহ দীপ্যমান হয়, তেমন। শীঘ্র গমনকুশল অশ্বের নিয়ামক যেমন যুদ্ধে কখনও শত্রুবলের দ্বারা নির্জিত না হয়ে থাকে, এই অগ্নি তেমনই প্রজ্বলিত হয়ে অবধি সর্বতো জরারহিত হয়ে দীপ্যমান থাকেন; (অর্থাৎ রণে প্রবৃত্ত অশ্বারোহী পুরুষ শীঘ্র গমনশীল অশ্বের লাগাম বাম হস্তে সংযমিত করে যেমন শত্রুসেনাগণকে অবিরত হিংসা করে থাকে, সেই রকমে এই অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে কখনও জীর্ণ হন না বা তৃষ্ণাযুক্ত হন না, বরং তৃপ্ত হয়ে থাকেন।–হে শোধক দ্যোতনাত্মক অগ্নিদেব! আপনার দীপ্তিমন্ত জিহ্বায় দেবগণকে আহ্বান করুন এবং যাগ করুন।-হে শোধক দীপ্যমান অগ্নি! আমাদের নিমিত্ত দেবতাগণকে এই যজ্ঞকর্মে আহ্বান করুন এবং আমাদের এই যজ্ঞ ও হবিঃ দেবতাগণের সমীপে উপনীত করুন (দেবসমীপে প্রাপয়)।–এই চিত্যাগ্নি-স্থান জলের প্রাপ্য; অতএব এই জল বহুলত্বের কারণে সমুদ্রের গৃহস্থানীয়। সেই রকম, হে অগ্নি! আপনার হেতি বা অস্ত্রগুলি আমাদের ব্যতীত অন্য বিরোধী পুরুষকে ক্লেশ প্রদান করুক; আমাদের নিমিত্ত বা পক্ষে আপনি শুদ্ধ ও শান্ত হোন।–হে অগ্নি! আপনার শোষণকারক তেজঃকে নমস্কার করি। অধিকন্তু, আপনার যে তেজঃ পদার্থসমূহকে প্রকাশ করে, সেই তেজঃকে নমস্কার করি। আপনি আমাদের নিমিত্ত শুদ্ধ ও শান্ত হোন।–যে অগ্নি মনুষ্যের মধ্যে জঠরাগ্নিরূপে অবস্থান করছেন, সেই নৃষৎ অগ্নিকে হবিঃ প্রদান করা হচ্ছে; যে অগ্নি বড়বানলরূপে অবস্থান করছেন, সেই অঙ্গুষৎ অগ্নিকে হবিঃ প্রদান করা হচ্ছে; যে অগ্নি দাবাগ্নিরূপে বনে অবস্থান করছেন, সেই বনসৎ অগ্নিকে হবিঃ প্রদান করা হচ্ছে; যে অগ্নি আহবনীয় ইত্যাদিরূপে যজ্ঞে অবস্থান করছেন, সেই বহিষৎ অগ্নিকে হবিঃ প্রদান করা হচ্ছে; যে অগ্নি আদিত্যরূপে স্বর্গে অবস্থান করছেন, সেই সুবর্বিৎ অগ্নিকে হবিঃ প্রদান করা হচ্ছে।–দেবতা দুরকমের (দ্বিবিধা দেবা)–হবির্ভুজ অর্থাৎ হবিঃ-ভক্ষক ইন্দ্ৰ বরুণ ইত্যাদি ও শরীর-নির্বাহক (প্রাণাত্মক) প্রাণ অপান ইত্যাদি। এই উভয়ই যজ্ঞিয় (অর্থাৎ যজ্ঞকর্মের যোগ্য); যেমন–ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতা যজ্ঞের দ্বারা পূজিত হওয়ার কারণে যজ্ঞিয় এবং প্রাণ ইত্যাদি দেবতা যজ্ঞের পূজক হওয়ার কারণে যজ্ঞিয়। এই ভাবে ইন্দ্র ইত্যাদি যজ্ঞিয় দেবতাগণ সম্বৎসর-সাধ্য চিতিরূপ অগ্নিতে স্বাহাকারের দ্বারা সমর্পিত যজ্ঞের ভাগ ভক্ষণ (সেবন্তে) করে থাকেন; প্রাণ ইত্যাদি আহুত না হয়েও (অহুতাদঃ) তা ভক্ষণ করেন। এই হেন হে প্রাণসমূহ! এই যজ্ঞে আমাদের আহূত হবির মধুর ভাগ আপনারা স্বাহাকার মন্ত্রে সমর্পন বিনাই স্বয়ং স্বীকার (গ্রহণ) করুন। যে প্রাণসমূহ ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতার অধিষ্ঠতৃত্বের দ্বারা (অধিষ্ঠতৃত্বেন) দেবত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন, অধিকন্তু যে প্রাণসমূহ চীয়মান অগ্নির সম্মুখে যজ্ঞকর্মের নির্বাহক, যাঁরা ব্যাতিরেকে চীয়মান অগ্নি-স্থান শুদ্ধ হয়।, সেই প্রাণরূপ দেবগণ স্বর্গেও অবস্থান করেন না (দিব্যপি ন তিষ্ঠন্তি), পৃথিবীতেও অর্থাৎ ভূমিতেও অবস্থান করেন না (ভূমাবপি না তিষ্ঠন্তি); পরন্তু পর্বতের সানু-সদৃশ (অর্থাৎ উপরিস্থ সমতল ভূমির ন্যায়) শরীরগত চক্ষু ইত্যাদির গোলকে আশ্রয়ান্বিত হয়ে বর্তমান থাকে (বর্তন্তে)। হে অগ্নি! আপনি যজমানের প্রাণকে সুস্থির করুন, অপানকে সুস্থির করুন, ব্যাকে সুস্থির করুন, চক্ষুকে সুস্থির করুন, বর্চো বা বলকে সুস্থির করুন, ববিবো অর্থাৎ প্রজাগণকে বা পুত্র ইত্যাদি অপত্যদের সুস্থির করুন; আপনার হেতি বা অস্ত্রগুলি আমাদের ব্যতীত অন্য পুরুষকে ক্লেশ বা তাপ প্রদান করুক; আমাদের নিমিত্ত আপনি শুদ্ধ ও শান্ত থাকুন।–এই চীয়মান অগ্নি তার তীক্ষ্ম জ্বালামালায় রাক্ষস ইত্যাদি সকল বিরোধীগণকে বিনাশ করুন, এবং সেইভাবেই আমাদের অনিষ্টকারীগণকে বিনাশে ইচ্ছুক হোন।-হে অগ্নি! আপনি দীপ্যমান (দ্যুমদ্দীপ্যমান), অধিকন্তু বহুধনযুক্ত গৃহ ক্ষেত্র ইত্যাদি প্রকাশ করেন। (আপনি কিরকম? না,) আপনি সকল জ্বালামালার দ্বারা সুষ্ঠু জ্ঞাপিত (বেদিত), অর্থাৎ আপনার প্রজ্বলন্ত শিখা-সমূহের দ্বারা সম্যক সাক্ষাৎকৃত; আমাদের নিমিত্ত দেবগণের উদ্দেশে যাগের নিম্পাদক; আপনি বিঘুরহিত হয়ে অতিশয়ভাবে যাগসমাপ্তকারী; আপনি অদঃ অর্থাৎ কারও দ্বারা হিংসিত নন, অর্থাৎ কেউই আপনাকে হিংসা করতে পারে না; আপনি মন্ত্রের গোপ্তা বা রক্ষক; এবং আমাদের পরস্প অর্থাৎ অতিশয়রূপে পালয়িতা। [পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৪র্থ ও ৫ম অনুবাকের মন্ত্রগুলির সাথে এই মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ॥১॥ :

[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয়ানুবাকে সূক্তাভ্যাং হোমা উচ্যেতে। অর্থাৎ–এই দ্বিতীয় অনুবাকে (দুটি) সুক্তের দ্বারা অনুষ্ঠেয় হোমের বিবয় কথিত হয়েছে।]

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- য ইমা বিশ্বা ভুবনানি জুহুদৃষিহোতা নিষসাদা পিতা নঃ। স আশিষ দ্রবিণমিচ্ছমানঃ পরমচ্ছদো বর আ বিবেশ। বিশ্বকর্মা মনসা যদিহায়া ধাতা বিধাতা পরমোত সংক। তেষামিষ্টানি সমিষা মদন্তি যত্র সপ্তর্ষী পর একমাহঃ। যো মঃ পিতা জনিতা যো বিধাতা যো নঃ সততা অভ্যা সজ্জজান। যো দেবানাং নামধা এক এৰ তং সংপ্রশ্নং ভুবনা যন্ত্যন্যা। ত আহযজন্ত দ্রবিণং সমম্মা ঋষয়ঃ পূর্বে জরিতারো ন ভুনা। অসুৰ্ত্তা সূর্তা রজসো বিমানে যে ভূতানি সমকৃম্বনুিমানি। ন তং বিদাথ য ইদং জজানান্যদযুকম্যুরং ভবতি।। নীহারেণ প্রাবৃতা জ্যা চালুপ উথশাসশ্চন্তি। পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যা পরো দেবেতিরসুরৈগুহা যৎ। কং স্বিদগর্ভং প্রথমং খ্র আপো যত্র দেবাঃ সমগছত্ত বিশ্বে। তমিগর্ভং প্রথমং দআপো যত্র দেবাঃ সমগন্ত বিশ্বে। অজস্য নাভাৰধ্যেকর্মর্পিতং যস্মিমিদং বিশ্বং ভুবনমধি শ্রিত। বিশ্বকর্মা হ্যজনিষ্ট দেব আদিৰ্গন্ধর্বো অভবদদ্বিতীয়ঃ। তৃতীয়ঃ পিতা জনিতৌষধীনাম অপাং গর্ভং ব্যদধাৎ পুরুত্ৰা। চক্ষুষঃ পিতা মনসা হি ধীরো ঘৃতমেনে অজনম্নমানে। যদেদন্তা অদৃং হস্ত পূর্ব আদ্যিাবাপৃথিবী অপ্রথেম।। বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো বিশ্বতোহস্ত উভ বিশ্বতপাৎ। সৎ বাহুভ্যা নমতি সং পত্ৰৰ্দাবাপৃথিবী জয়দেব একঃ। কিম স্বিদাসীদধিষ্ঠানমারণং কমৎ স্বিৎ কিমাসীৎ।। যদী ভূমি জনয় বিশ্বকর্মা বি দ্যামৌর্ণোহিনা বিশ্বচক্ষাঃ। কিম্ স্বিদ্ধনং ক উ স বৃক্ষ আসীদ্যতো দ্যাবাপৃথিবী নিষ্টতঃ। মনীষিণে মনসা পৃচ্ছতেদু তদ্যদধ্যতিষ্ঠভুবনানি ধারয়। যা তে ধামানি পরমাণি যাহবমা যা মধ্যমা বিশ্বকৰ্ম্মম্নতেমা। শিক্ষা সখিভ্যো হবিষি স্বধাবঃ স্বয়ং যজস্ব তনুবং জুষাণঃ। বাচস্পতিং বিশ্বকৰ্মাণমূতয়ে।। মনোজং বাজে অদ্যা হুবেম। স নো নেদিষ্ঠা হবনানি জোষতে বিশ্বশং ভূরবসে সাধুকৰ্ম্মা। বিশ্বকৰ্ম্ম হবিষা বাবৃধানঃ স্বয়ং যজস্ব তনুবং জুষাণঃ। মুহ্যন্যে অভিতঃ সপত্না ইহাস্মাকং মঘবা সূরিরস্তু। বিশ্বকৰ্ম্ম হবিষা বর্ধনেন ত্রাতারমিন্দ্রমণোরবধ্যম। তস্মৈ বিশঃ সুমনমন্ত পূৰ্ব্বীরয়মুগ্রো বিহবব্যা যথাহসৎ। সমুদ্রায় বয়ুনায় সিন্ধুগাং পতয়ে নমঃ। নদীনাং সৰ্বাং পিত্রে জুহুতা বিশ্বকৰ্ম্মণে বিশ্বাহহাহমৎ হবিঃ ॥ ২॥

 মর্মার্থ- [এই অনুবাকে দুটি সূক্ত আছে। প্রতিটিতে ঋংখ্যা আট। প্রথমে প্রথম সুক্তের যে আটটি ঋকের দ্বারা বৈশ্বকর্ম হোমের অনুষ্ঠান বিধি, তা কথিত হচ্ছে। যে বিশ্বকর্মা পরমেশ্বর প্রলয়কালে পৃথিবী ইত্যাদি সর্ব লোককে স্বাত্মনে অর্থাৎ আপনাতে আহুতি প্রক্ষেপের ন্যায় সংহরণ বা বিনাশ করেছিলেন, সেই অতীন্দ্রিয় দ্রষ্টা সর্বজ্ঞ পরমেশ্বর পুনরায় স্রষ্টারূপে নিজে, এক এবং অদ্বিতীয় হয়েই অবস্থিত ছিলেন। সেই এক হতে বহু হবার ইচ্ছায় নিজের অদ্বিতীয় পরমার্থ রূপ বিস্তার বা সৃষ্টি পূর্বক শরীর মধ্যবর্তিনী পুণ্ডরীকস্থানে (হৃদয়রূপ গুহায়) জীবরূপে প্রবিষ্ট হয়েছিলেন। (আপনতে আহুতি প্রক্ষেপ কথাটির তাৎপর্য এই যে, সর্বষ্টা ঈশ্বর যেন সর্বজ্ঞ হোতা বা সংসারহোমকর্তা, আমাদের পিতা বা জনক। আবার তিনি নিজেই যেন সেই হোমাগ্নি। সুতরাং প্রলয়কালে সব কিছু যখন তিনি আত্মলীন করে নেন, তখন সবকিছুই তার স্বরূপ হোমাগ্নিতেই আহুতি রূপে প্রক্ষিপ্তমান বলে বর্ণনা করা হয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য–জনক থেকেই যেমন সন্তানদের জন্ম, তেমনই পুনরায় সৃষ্টিকালে তার থেকেই সব কিছুর সৃষ্টি হয় বলে তার মধ্যে সব কিছু লীন হয়ে থাকে)।–বিশ্ববিষয় সম্পর্কিত সকল কর্ম অর্থাৎ সৃষ্টি-স্থিতি-সংহারূপ কর্মত্রয়ের কর্তা যিনি, তিনি বিশ্বকর্মা বা পরমেশ্বর। সঙ্কল্পমাত্রেই তিনি ঐ তিন কর্মের কারক বলে তিনি ধাতা (উৎপাদক), বিধাতা (পোষক) ও সংহর্তা (সংহারকর্তা) নামে অভিহিত। অধিকন্তু, তিনি পরম অর্থাৎ সকল অপেক্ষা উৎকৃষ্ট বা শ্রেষ্ঠ (সম্যক দর্শক, সম্যক জ্ঞাতা ইত্যাদি)। সেই পরম ঈশ্বরের সাথে সপ্ত ঋষিকে একরূপ বলা হয়, অর্থাৎ মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ঠ নামক ঋষিসপ্তক বিবিধ নামে ও রূপে প্রতীয়মান হলেও সৃষ্টির পূর্বে একীভূত ছিলেন–এই কথা বেদান্তপরাগ ব্যক্তিগণ বলে থাকেন (আঃ)। এবং সেই পরমেশ্বর আপন ইচ্ছামাত্র সেই সপ্তর্ষিগণের নিমিত্ত তাদের ইষ্ট বা অভিলষিত স্থান (সপ্তর্ষিমণ্ডল বা সপ্তর্ষিােক) সৃষ্টি করেন। তাতে মহর্ষিগণ হৃষ্ট হন (হৃষ্যন্তি)। (তাৎপর্য এই যে, পূর্ববর্তী কল্পের প্রলয়কালে সবকিছুর সাথে সপ্তর্ষিগণও ঈশ্বরে লীন হয়ে একীভূত হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তী কল্পের সৃষ্টিকালে পুনরায় তারা সেই ঈশ্বর হতে মরীচি ইত্যাদি নামে ও রূপে পৃথক পৃথক সৃষ্ট হয়ে সপ্তর্ষিন্মেকে স্থান প্রাপ্ত হন)।–যে বিশ্বকর্মা পরমেশ্বর আমাদের কেবল পিতা বা পালকই নন, উৎপাদকও বটেন; সেই সর্বজগতের স্রষ্টা আমাদের নিমিত্ত এই ভোগ্যজাত দ্রব্যসমূহও উৎপাদন করেছেন। সেই বিশ্বকর্মা নিজেই সকল দেবগণের নাম ধারণ পূর্বক সর্বদেবরূপে আবির্ভূত হয়েছেন, যথা–তিনিই ইন্দ্র, তিনিই মিত্র ইত্যাদি। অতএব বহু দেবতার নাম ধারণ করলেও বস্তুতঃ তিনি স্বয়ং একই। প্রলয়কালে যখন সকল ভূবন সেই পরমেশ্বরে লীন হয়ে একত্ব প্রাপ্ত হয়ে যায়, তখন তাদের বিভাগ করা যায় না; তখন শ্রুতিতে অনভিজ্ঞ জনগণ ক ঈশ্বরঃ কানি ভুবনানী অর্থাৎ কে ঈশ্বর, কিই বা সৃষ্ট ভুবন এইরকম প্রশ্ন প্রবর্তন করে থাকেন, অর্থাৎ তারা তা জানতে সমর্থ হন না (জ্ঞাতুমশকত্বৎ)। (তাৎপর্য এই যে, পরমেশ্বর আমাদের শুধু পালনই করেন তাই নয়, তিনি আমাদের স্রষ্টাও। প্রকৃতপক্ষে তিনি এক ও অদ্বিতীয়। ইন্দ্র, মিত্র, চন্দ্র, বরুণ, অগ্নি ইত্যাদি নাম ও রূপধারী দেবতাগণ সবই তারই বিভিন্ন রূপ ও নাম। সৃষ্টির পর এই যে সব কিছুর পৃথক পৃথক অস্তিত্ব, সে সবই প্রলয়কালে তার মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে একীভূত হয়ে যায়। এই কথা শ্রুতিতে পরিব্যক্ত; কিন্তু যাঁরা শ্রুতি-বিষয়ে অভিজ্ঞতাশূন্য তাঁরা তা জানতে না পেরে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন)। পরমেশ্বর প্রথম যে সৃষ্টিকর্তাগণকে সৃষ্টি করেছেন তারাই এই জগতের ধনরূপ ভোগ্যজাতের স্রষ্টা; তাঁরা অতীন্দ্রিয়দ্রষ্টা সর্বজ্ঞ ঋষি; সেই ঋষিরূপ সৃষ্ট প্রাণীগণ আপন মহত্বের সৌজন্যে কখনও জীর্ণতা প্রাপ্ত হন না। (কিরকম ঋষিরূপ প্রাণীগণঃ না,তারা প্রাণযুক্ত হয়ে সুষ্ঠুভাবে আপন আপন কর্ম সাধনের নিমিত্ত প্রেরিত হয়েছেন। (তাৎপর্য এই যে, ভগবান সৃষ্টির মানসে নিজেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও নামে কশ্যপ, মরীচি ইত্যাদি প্রজাপতিরূপে প্রথমে সৃষ্ট হয়েছেন। তারা যা সৃষ্টি করেছেন, তা প্রকৃতপক্ষে তাঁরই সৃষ্টি বা তারই দ্বারা সৃষ্ট স্রষ্টাগণের সৃষ্টি)।হে জীব! যে বিশ্বকর্মা এই বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তাঁকে জ্ঞাত নও (ন জানীথ)। সেই বিশ্বকর্মা তোমাদের অহংপ্রত্যয়গম্য জীবরূপ বিশ্বকর্মা পরমেশ্বর নন; কিন্তু তোমাদের সেই অহংপ্রত্যয়গম্যের অতিরিক্ত সর্ববেদান্তবেদ্য ইশ্বরতত্ত্বরূপে বিদ্যমান (সর্ববেদান্তবেদ্যমীশ্বরতত্ত্বং ভবাতি বিদ্যতে)। নীহারের ন্যায় (অর্থাৎ ঘনীভূত শিশিরের মতো) অত্যন্ত দৃষ্টি আবরক অজ্ঞানতায় আবৃত তোমরা জান না তা-ই নয়, তাকে কাষ্ঠ পাষাণ ইত্যাদির যোগ্য বলি চিন্তা করে থাক; এইরকম অজ্ঞানতায় ঈশ্বরতত্ত্ব অবগত হওয়া যায় না। অথচ এইরকম অজ্ঞানতায় সর্বজীব প্রবৃত্ত। কেবল তত্ত্ব অবগত হওয়া যায় তা-ই নয়, কিন্তু দোর্বোহহং মনুষ্যোহহং ইত্যাদি অর্থাৎ আমি দেবতা, আমি মনুষ্য, এই আমার ক্ষেত্র ইত্যাদি মিথ্যা জল্পনাপরায়ণ হয়ে (অনৃতজল্পনপরাশ্চ) কোনও রকমে প্রাণ ধারণ করে তৃপ্ত হয়ে থাকে; কিন্তু পরমেশ্বরতত্ত্বের বিচারে প্রবৃত্ত হও না (ন তু পরমেশ্বরতত্ত্বং বিচারয়িতুং প্রবর্তন্তে); কেবল তাই নয়, ইহলোকের ভোগমাত্রে তৃপ্ত হয়ে পরলোকেও সেই ভোগ সম্পাদনের নিমিত্ত নানারকম যজ্ঞে উথ শস্ত্রসমূহ উচ্চারণ করে থাক (শংসন্তীত্যুথশাসঃ)। সেইভাবে তোমরা ঐহিক (ইহলৌকিক) ও আমুষ্মিক (পরালৌকিক) ভোগে সর্বদা প্রবৃত্ত হয়ে থাকছে। তাতে তোমরা অজ্ঞান ও মিথ্যাজ্ঞানের অধীন হচ্ছ, কিন্তু তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে পারছ না। (তাৎপর্য এই যে, সাধারণ মানুষ সেই পরাৎপর ঈশ্বরকে অহংবুদ্ধির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিচার করে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ জানতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ তিনি যে, কেবল কাঠ, পাথর ইত্যাদি নন, তা জানতে পারে না। তিনি যে এই আমি, এটি আমার এইরকম অহংবুদ্ধির অতীত এক মহাসত্তা, তা পৃথিবীর স্কুল ভোগে লিপ্ত মানুষ কিভাবেই বা জানবে? তারা যে যজ্ঞ করে, মন্ত্র পাঠ করে, তা-ও তাদের পরলোকে এইরকমই স্থূল ভোগ প্রাপ্তির উদ্দেশেই করে, ঈশ্বরতত্ব অবগতির জন্য নয়। আসলে তারা অজ্ঞান বা মিথ্যাজ্ঞানের দ্বারা আচ্ছন্ন। বেদ-বেদান্তের অনুশীলন ব্যতীত এই অজ্ঞানতার অপসারণ সম্ভব নয় এবং ঈশ্বরতত্ত্ব সম্যক অবগত হওয়া যায় না)।–যে ঈশ্বরতত্ত্ব হৃদয়-পুণ্ডরীকে গূঢ়ভাবে অবস্থিত, তা দিবা পরো অর্থাৎ দুলোক অপেক্ষাও দূরে অবস্থিত; পৃথিবী হতেও দুরে অবস্থিত; এমন কি দেবতা ও অসুরগণ হতেও দূরে অবস্থিত। অধিকন্তু যে গর্ভে সকল দেবতা সঙ্গত (মিলিত) হয়ে থাকেন, সেই গর্ভ প্রথমে জল ধারণ করেছিল। পূর্বধৃত সেই গর্ভে দেবতা মনুষ্য ইত্যাদি প্রাণী বর্তমান ছিল–এই কথা শাস্ত্রপ্রসিদ্ধ। কিন্তু সেই গর্ভ কোথায়, তা কেউই জ্ঞাত নয়, (সোহপি গর্ভঃ ক ইতি ন জ্ঞায়তে)। এই স্থূল জগতের আধার যখন অজ্ঞাত (ন জ্ঞাতঃ) তখন অত্যন্ত সূক্ষ্মতত্ত্ব যে অজ্ঞাত থাকবে, তাতে আর বক্তব্য কি আছে? (তাৎপর্য এই যে, ঈশ্বরতত্ত্ব হৃদয়ের অভ্যন্তরে অত্যন্ত গূঢ়ভাবে অবস্থিত। তা দেবতা মনুষ্য ইত্যাদি সকলেরই সাধারণ বোধবুদ্ধির অতীত। যেমন, সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বরের গর্ভস্থায়ী জলে দেবতা মনুষ্য পশু-পক্ষী অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সবকিছু যে বর্তমান ছিল, সেই সূক্ষ্ম তত্ত্ব কেউই জানে না; এমন কি সেই গর্ভই বা কোথায় তা-ও কেউ জানে না)।যে ব্রহ্মাণ্ডগর্ভে সকল দেবতা একত্রে মিলিত হয়েছিলেন, সেই গর্ভই প্রথম জল ধারণ করেছিল, এই কথা ইদানীং গুরুমুখে বা শাস্ত্র ইত্যাদি অনুশাসন হতে জ্ঞাত হওয়া যায়। সেই ধারণ-প্রকার স্পষ্টীকৃত হয়েছে এইভাবে–অজস্য জন্মরহিতস্য পরমেশ্বরতত্ত্বস্য…, অর্থাৎ জন্মরহিত পরমেশ্বর তত্ত্বের নাভিস্থানীয় স্বরূপের মধ্যে এক বীজ অতিরিক্ত ভাবে স্থাপিত হয়েছিল; যে বীজের মধ্যে এই সর্ব ভুবন অধিশ্রিত বা অর্পিত ছিল। সেই অণ্ড কোটিসূর্যসমান প্রভাবিশিষ্ট। (পূর্ববর্তী মন্ত্রে যে গর্ভের কথা বলা হয়েছে, তা ব্রহ্মাণ্ডরূপ গর্ভ। সেই গর্ভেই প্রথমে যে জল ধারণ করেছিল তাতেই সবকিছু বীজাকারে স্থাপিত ছিল। সৃষ্টিকালে ঈশ্বরের নাভিপদ্ম হতে সেই ব্রহ্মাণ্ডরূপ গর্ভস্থায়ী বীজ হতে সবকিছুর উদ্ভব হয়। সেই ব্রহ্মাণ্ডগর্ভ কোটি কোটি সূর্যের সমান দীপ্তিবিশিষ্ট)।–ব্রহ্মাণ্ডমধ্যগত উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হচ্ছে-সেই অণ্ডের মধ্যে প্রথম চতুর্মুখ দেবতা বিশ্বকর্মা (ব্রহ্মা) উৎপন্ন হয়েছিলেন, যিনি দেব তির্যক ইত্যাদি বিশ্বভেদের কর্তা এবং স্বয়ং সত্যলোকবাসী; সেই আদি সৃষ্টির পরে দ্বিতীয় সৃষ্টিরূপে গন্ধর্বগণের উদ্ভব। তারপর অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় সৃষ্টির পর তৃতীয়ে ওষধির উৎপাদক ও পালক সোম উৎপন্ন হন। এই ভাবে পরমেশ্বর জলের গৰ্ভরূপ ব্রহ্মাণ্ডকে বহুভাবে ব্যক্ত করেছেন (বহুধা ব্যক্তং কৃতবা)। (তাৎপর্য এই যে, কোটিসূর্য সমপ্রভ সেই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে প্রথম সৃষ্ট হয়েছিলেন সত্যলোকবাসী সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্ম; তিনি দেবতা ও দেবভিন্ন অপরাপর প্রাণীসমূহের বিভাজন করেন। দ্বিতীয়ে সৃষ্ট হয়েছিলেন গন্ধর্বগণ, যাঁরা দেবযোনিবিশেষরূপে পরিচিহ্নিত। তৃতীয়ে সৃষ্ট হয়েছিলেন সোম, যিনি ওষধিসমূহের উৎপাদক ও পালকরূপে পরিগণিত হন। এইভাবেই পরমেশ্বর পরপর আপন সৃষ্টিসমূহকে প্রকাশ করেছিলেন)।–[এই পর্যন্ত প্রথম সূক্তটি সমাপ্ত। এরপর দ্বিতীয় সূক্তের আটটি ঋক্ কথিত হচ্ছে– চক্ষু ইত্যাদি প্রাণসমুদায়ের পিতা বা উৎপাদক ধৈর্যবান্ বিধাতা স্বেচ্ছায় ঘৃতবৎ প্রাণীবর্গের উপভোগের সাধনভূত এই দ্যাবাপৃথিবীকে (দ্যুলোক ও ভূলোককে) পরস্পরের আনুকূল্যে নমনীয় করে উৎপাদিত করেছেন। যখন পূর্বে চক্ষু ইত্যাদি প্রাণসমূহ দৃঢ় হয়েছিল, তখন দ্যাবাপৃথিবী বিস্তৃত হয়েছিল। (চক্ষু, মুখ, হস্ত, পদ ইত্যাদি প্রাণসমূহকে উৎপন্ন করে বিধাতা আপন ইচ্ছাক্রমে সেগুলিকে দ্যুলোক ও পৃথিবীর একে অপরের অনুকূলতায় নমনসাধ্য করে দিয়েছিলেন; কারণ পূর্বে এইগুলি যখন দৃঢ় হয়েছিল তখন দ্যাবাপৃথিবী বিস্তৃতি লাভ করেছিল)।–চক্ষু ইত্যাদি প্রাণসমূহ ও দ্যাবাপৃথিবীর উৎপত্তির পরে বিশ্বরূপধারী পরমেশ্বর এইভাবে প্রকাশিত হয়েছেন–তিনি বিশ্বতশ্চক্ষু, অর্থাৎ সর্বতঃ চক্ষুম্মান হওয়ায় তার সৃষ্ট প্রাণীদের দুটি করে চক্ষু প্রদান করেন; ফলে সর্বপ্রাণাত্মক পরমেশ্বরের বিশ্বতশ্চক্ষু উপাধি সম্পন্ন হয়। এইভাবে তিনি সকল প্রাণীকে একটি করে মুখ, দুটি করে হস্ত ও দুটি করে পদ প্রদান করে যথাক্রমে আপন বিশ্বতোমুখ, বিশ্বহেস্ত ও বিশ্বতস্পাৎ নামের সার্থকতা প্রতিপাদিত করেন। সেইরকম সেই একই দেব দ্যাবাপৃথিবীকে সৃষ্টি করে আপন বাহুস্থানীয় ধর্ম ও অধর্মের কারণে সকল জগৎকে আপন অধীন করেছেন। সেইরকম সেই একই দেব পতনশীল অনিত্য পঞ্চভূতরূপ উপাদানের কারণে সকল জগৎকে আপন অধীন করেছেন। (তাৎপর্য এই যে, পরমেশ্বর বিশ্বতশ্চক্ষু, বিশ্বতোমুখ, বিশ্বতোহস্ত ও বিশ্বতৎ হওয়ার কারণেই আপন সৃষ্টি সকল প্রাণীকে চক্ষু, মুখ, হস্ত ও পদ প্রদান করেছেন। তিনিই ধর্ম ও অধর্মকে আপন হাত দুটিতে ধারণ করে সর্ব জগৎকে আপন অধীন করেছেন। ক্ষিতি-অ-তেজঃ-মরুৎ-ব্যোম এই পঞ্চভূতাত্মক যা কিছু, তা সবই কালক্রমে পতিত হওয়ার কারণে অনিত্য বস্তুরূপে সৃষ্টি করে পরমেশ্বর তার অধীনে আনয়ন করেছেন)। –এই লোকজগতে কুম্ভকার (কুলাল) ঘট নির্মাণের উদ্দেশে গৃহের কোন স্থান অধিষ্ঠিত মৃত্তিকা-দ্রব্যের দ্বারা চক্র ইত্যাদি উপকরণের সাহায্যে ঘট-নির্মাণ কার্য নিম্পাদন করে। এইরকমে দ্যাবাপৃথিবীর উৎপাদন বেলায় ঈশ্বরের কি কোন নিবাসস্থান ছিল? কিছুই ছিল না। বিশ্বচক্ষা অর্থাৎ সর্বদ্রষ্টা বিশ্বকর্মা যে কালে ভূলোকের সৃষ্টি করেন, সেই কালে তিনি তাঁর নিজ মহিমায় সাধনান্তর বিনাই (ছাড়াই) বিশেষভাবে দুলোক সৃষ্টি পূর্বক দ্যাবাপৃথিবীকে আচ্ছাদিত করেন। কারণ এই পরমেশ্বর অচিন্ত্যশক্তিধর। (তাৎপর্য এই যে, সাধারণের সাথে সেই পরমেশ্বরের পার্থক্য আছে। যেমন, ঘট ইত্যাদির নির্মাণের ক্ষেত্রে কুম্ভকারের পক্ষে বসবার স্থান, মাটি ইত্যাদি উপকরণ ও চক্র ইত্যাদি সহায়ক সামগ্রীর প্রয়োজন হলেও, পরমেশ্বরের পক্ষে ভূলোক ইত্যাদি সৃষ্টির সময়ে সেইরকম কিছু সাধনীয় সামগ্রীর প্রয়োজন হয়নি। সকলের পক্ষে চিন্তার অতীত শক্তিধর সেই মহাস্রষ্টা আপন নিরপেক্ষ মহিমাবলেই সবকিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম)।–এই নোকজগতে দেখা যা বিশাল প্রসাদ নির্মাণ করবার উদ্দেশে বিশাল বন হতে বিশাল উচ্চ বৃক্ষ ছিন্ন পুর্বক সূত্ৰধারের অস্ত্রের সাহায্যে সেই কাষ্ঠকে, মসৃণ ইত্যাদি করে অট্টালিকা-নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। জগৎ সৃষ্টি করতে সেই পরমেশ্বর কোন্ বন হতে বৃক্ষ ছিন্ন করে কোন্ সূত্ৰধারের অস্ত্রে সেই কাষ্ঠকে মসৃণ করে দ্যাবা পৃথিবীর নির্মাণ সম্পন্ন করেছিলেন? সেই প্রৌঢ় বৃক্ষ ও বনের নাম কি? বস্তুত এমন কোন বৃক্ষ বা বন সম্ভব নয়। হে বিদ্বান মনীষিগণ নিজেদের মনে বিচারপূর্বক চিন্তা করে জিজ্ঞাসা করুন–এই ভুবনসমূহ সৃষ্টি করবার কালে সেই ঈশ্বর কোন্ স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন? (এতস্য প্রশ্নস্য সর্বস্যাত্তরং ব্রাহ্মণগ্রন্থে সুক্ত প্রপাঠকে আশ্নাত..–অর্থাৎ ব্রহ্মই সেই বন, ব্রহ্মই সেই বৃক্ষ ইত্যাদি)। স্বরূপ ব্যতিরিক্ত বস্তু ইত্যাদির নিরপেক্ষত্বই এই প্রশ্নের উত্তর। (তাৎপর্য এই যে, সকলের পক্ষে চিন্তার অতীত শক্তিধর সেই মহাস্রষ্টার-সৃষ্টির নিমিত্ত তার মহিমা ব্যতীত অপর কিছুর প্রয়োজন হয় না। সেই মহিমা কোন কিছুর নিমিত্ত অপেক্ষিত নয়)।–হে বিশ্বকর্মা! আপনার যে উৎকৃষ্ট বা পরম স্থানসমূহ আছে, যে মধ্যম স্থানসমূহ আছে ও যে অধম স্থানসমূহ আছে, সেই সকল স্থানসমূহ সখিবৎ প্রিয়জনের নিকট হবিঃ প্রদানের নিমিত্ত উপদেশ করুন (শিক্ষোপদিশ)। হে স্বরূপ অর্থাৎ স্বধা-উপলক্ষিত অন্নরূপ হবিঃ-লক্ষণযুক্ত বিশ্বকর্মা! আপনি যজমানের শরীর অবলম্বন পূর্বক (যজমানশরীরং সেবমানঃ) স্বয়ং যাগ করুন; কারণ আপনার অনুগ্রহ ব্যতিরেকে কে যজ্ঞ করতে সমর্থ? (তাৎপর্য এই যে, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান হলেও কখন কোন স্থানে তাকে আরাধনা করা কর্তব্য সেই সম্পর্কে সখ্যতাসম্পন্ন যজমানদের জানাবার নিমিত্ত প্রার্থনা করা হয়েছে। আরও প্রার্থনা এই যে, ঈশ্বর যেন যজমানের শরীরে স্বয়ং আবির্ভূত হয়ে যাগ নিষ্পন্ন করেন, অর্থাৎ যজমান কর্তৃক অনুষ্ঠিত যাগ যেন ঈশ্বরের অনুগ্রহে অনুষ্ঠিত যাগরপে সুষ্ঠু নিষ্পন্ন হয়)।–এই দিনে (অস্মিন্দিনে) অন্ন-ভক্ষণের নিমিত্ত বিশ্বকর্মা পরমেশ্বরকে আহ্বান করছি (আহ্বায়া। (কিরকম বিশ্বকর্মা? না,) তিনি বাচস্পতি; অর্থাৎ তিনি মন্ত্ররূপ বাক্যসমূহের পালক; এবং তিনি কর্মণ্যমুতয়ে মনোযুজং, অর্থাৎ, এই যজ্ঞকর্মে আমাদের মনের সংযোজনকারী। সেই বিশ্বকর্মা আমাদের অত্যন্ত সমীপবর্তী হবিঃ গ্রহণ ও আহ্বান শ্রবণ করে থাকেন। (কি নিমিত্ত? না, আমাদের রক্ষার নিমিত্ত। (তিনি কেমন? না,) তিনি সকল জগতে সুখের ভাবয়িতা অর্থাৎ সর্বজগতে সুখ দান করেন এবং আমাদের সাধু কর্মের অনুকূলে ক্রিয়ামান (ব্যাপারবান)। (তাৎপর্য এই যে, এই যজ্ঞে সেই বিশ্বকর্মাকে আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আমাদের মন্ত্রগুলিকে যথাযথ প্রয়োগসম্পন্ন করুন, আমাদের আহ্বান শ্রবণপূর্বক আগত হয়ে হবিঃ ভক্ষণ করুন, আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করুন, সর্বজগতের সাথে আমাদেরও সুখ বিধান করুন, এবং আমাদের সৎ-কর্মের সহায়ক হোন)।–হে বিশ্বকর্মা! আমাদের হবির দ্বারা আপনি অতিশয় বর্ধনযুক্ত হয়ে শরীর স্বীকার পূর্বক স্বয়ং এই যজ্ঞ সম্পন্ন করুন; আমাদের শত্রুগণ (সপত্না) এই যজ্ঞকর্মে মুহ্যমান বা ভ্রান্তিযুক্ত, (ভ্রান্ত) হোক। আমাদের অন্নযুক্ত (মঘবা) বিদ্বান (সূরি) পুত্র হোক। (তাৎপর্য এই যে, যজমান যে যজ্ঞ করছেন, তা যেন স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারাই অনুষ্ঠিত তথা ত্রুটিহীন হয়। ঈশ্বর স্বয়ং যেন এই যজ্ঞে নিবপিত হবিঃ গ্রহণ করেন এবং আমাদের শত্রুগণকে পরাভূত করেন। ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা–তিনি যেন আমাদের অন্নাভাবহীন বিদ্বান পুত্র দান করেন)।–হে বিশ্বকর্মা! আপনি আমাদের হবির দ্বারা বৃদ্ধিযুক্ত হয়ে এই যজমানকে এমন করুন, যাতে তিনি অপরের ত্রাতা বা রক্ষক হতে পারেন; তাঁদের ইন্দ্রের ন্যায় পরম ঐশ্বর্যবান্ করুন; অন্য কেউই যেন তাকে হিংসা করতে সমর্থ না হয়। (তাৎপর্য এই যে, ঈশ্বর যেন হবির দ্বারা প্রীত হন এবং এই যজমানের প্রতি তাঁর প্রীতি যেন বর্ধিত হয়। যজমানকে তিনি যেন অপরের রক্ষার যোগ্যতাসম্পন্ন করেন, পরম ঐশ্বর্যযুক্ত করেন এবং অপরের দ্বারা অহিংসিত হবার সামর্থ্য দান করেন)। [এই পর্যন্ত দ্বিতীয় সূক্তের আটটি ঋক্ সমাপ্ত। অতঃপর শেষ কল্পঃ]–যে বিশ্বকর্মা সমুদ্ররূপে অবতীর্ণ, সেই সমুদ্রকে নমস্কার (তস্মৈ সমুদ্রায় নমোহস্তু)। (কিরকম সেই সমুদ্র? না,) বয়ুনায় বা কান্তায়, অর্থাৎ সিন্ধু বা নদীসমূহের কান্ত বা পতি, আবার বিশ্বকর্মারূপে তিনি সকল নদীর পিতা বা উৎপাদক। সেই কান্ত সিন্ধুপতির ও পিতা বিশ্বকর্মার উদ্দেশে নমস্কার। সে হেন বিশ্বকর্মার উদ্দেশে, হে ঋত্বিক ও যজমানবৃন্দ! আপনারা নিরন্তর (বিশ্বাহহা অর্থাৎ সর্বাণ্যহানি) অবিনশ্বর (অমর্ত্যম) হবিঃ সমর্পণ করুন বা হবির্যজ্ঞ সম্পাদন করুন। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৫ম অনুবাকের কিছু মন্ত্র সংশ্লিষ্ট ] ॥ ২॥

[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়েহগ্নিপ্রণয়মুচ্যতে। অর্থাৎ—এই তৃতীয় অনুবাকে অগ্নিপ্রণয়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে]।

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- উদেমুত্তরাং নয়াগে ধৃতেনাহহুতে। রায়ম্পোষেণ সং সৃজ প্রজয়া চ ধনেন চ। ইন্দ্রেমং প্রতরাং কৃধি সজাতানাম সদ্বশী। সমেনং বচ্চসা সৃজ দেবেভ্যো ভাগধা অসৎ। যস্য কুৰ্ম্মো হবিগৃহে তমগ্নে বর্ধয়া ত্ব। তস্মৈ দেবা অধি ব্ৰবয়ং চ ব্ৰহ্মণস্পতিঃ। উদু ত্বা বিশ্বে দেবাঃ অগ্নে ভরন্তু চিত্তিভিঃ। স নো ভব শিবতমঃ সুপ্রতীকো বিভাবসু। পঞ্চ দিশো দৈবীর্যজ্ঞমবস্তু দেবীরপামতিং দুৰ্ম্মতিং বাধমানাঃ। রায়স্পেষে যজ্ঞপতিমাভজন্তী। রায়পোষে অধি যজ্ঞো অস্থাৎ সমিদ্ধে অগ্নাবধি মামহানঃ। উথপত্র ঈড্যো গৃভীতপ্তং ঘর্মং পরিগৃহ্যায়যন্ত। উৰ্জ্জা যদ্যমশমন্ত দে দৈব্যায় ধর্তে জোষ্ট্রে। দেবশ্রী শ্রীমণাঃ শতপয়াঃ পরিগৃহ্য দেবা যজ্ঞমায়।। সূর্যরশ্মিহরিকেশঃ পুরস্তাৎ সবিতা জ্যোতিরুদয়াং অজস্র। তস্য পুষা প্রসবং যাতি দেবঃ সংপশ্যন্বিশ্ব ভুবনানি গোপাঃ। দেবা দেবেভ্যো অধ্বর্যন্তে অস্তুৰ্ব্বীতম্ শমিত্রে শমিতা যজধ্যৈ। তুরীয়ো যজ্ঞো যত্র হব্যমতি ততঃ পাবকা আশিযো নো জুষস্তাম্। বিমান এষ দিবো মধ্য আস্ত আপপ্রিবন রোদসী অন্তরিক্ষম। স বিশ্বাচীরভি চষ্টে ঘৃতাচীরন্তরা পূর্বপরং চ কেতু। উক্ষা সমুদ্রে অরুণঃ সুপর্ণঃ পূৰ্ব্বস্য যোনিং পিতুরা বিবেশ। মধ্যে দিবো নিহিতঃ পৃশিরম্মা বি চক্রমে রজঃ পাত্যন্তেী। ইন্দ্রং বিশ্বা অভীবৃধৎ সমুদ্রব্যচসং গিরঃ। রথীতমং রথীনাং বাজানাং সৎপতিং পতিম্। সুম্মযজ্ঞো দেবান্ আ চ বক্ষ্যক্ষদগ্নিৰ্দেবো দেবাং আ চ বক্ষৎ। বাজস্য মা প্রসবে নোগ্রাভেণোদ গ্রভীৎ অথা সপত্নাং ইন্দ্রো মে নিগ্রাভেণাধরান অকঃ। উদগ্রাভং চ নিগ্রাভং চ ব্ৰহ্ম দেবা অধীবৃধন অথা সপত্ননিদ্রাগ্নী মে বিমূচীনা ব্যস্যতাম্ ॥৩৷৷

মর্মার্থ- ঘৃত দ্রব্যের দ্বারা সর্বতো আহুত (হুয়মান) হে অগ্নি! এই যজমানের উৎকৃষ্ট ঐশ্বর্য উত্তর্ষের সাথে শীঘ্র সম্পন্ন করুন। উৎকৃষ্ট ঐশ্বর্য অর্থে–এই যজমানকে ধনপুষ্টির দ্বারা বা ধনসমৃদ্ধির সাথে সংযযাজিত করুন, তথা পুত্রপৌত্র ইত্যাদি ও গো-অশ্ব ইত্যাদিরূপ ধনের সাথে সংযোজিত করুন।–হে ইন্দ্রসম পরম ঐশ্বর্যযুক্ত অগ্নি! আপনি এই যজমানকে অতিশয়রূপে শ্রেষ্ঠ (প্রকৃষ্ট) করুন। প্রকৃষ্ট অর্থে–এই যজমান তাঁর সহোৎপন্ন জ্ঞাতীবর্গের নিয়মনে (অর্থাৎ শাসনে) সমর্থ হোন, এঁকে বলের দ্বারা সংযোজিত (অর্থাৎ বলসম্পন্ন) করুন, ইনি যেন যজ্ঞে দেবতাগণকে তাঁদের ভাগপ্রদ (অর্থাৎ যজ্ঞসম্পন্ন) হোন।–আমরা ঋত্বিকগণ যে যজমানের গৃহে হবিঃ নিবৰ্পণ করব, হে অগ্নি! আপনি সেই যজমানকে বর্ধিত করুন (বৃদ্ধি ঘটান)। দেবগণ বলুন যে, এই যজমান সকলের অপেক্ষা অধিক (শ্রেষ্ঠ)। এই যজমান ব্ৰহ্মণস্পতি অর্থাৎ বৈদিক কর্মকাণ্ডের পালক হোন।–হে অগ্নি! সকল দেবতা প্রাণরূপ ইন্দ্রিয়বৃত্তির দ্বারা আপনাকে ধারণ করুন। আপনি আমাদের পক্ষে শিবতম বা শান্ততম এবং সুমুখ (হৃষ্টমুখশালী) ও প্রভাব বাসয়িতা (প্রভা-প্রকাশক) হোন। পূর্ব ইত্যাদি পঞ্চদিবর্তী দেব-সম্বন্ধি দেবীগণ আমাদের পাপবিষয়ক দুর্মতিসমূহ বিনাশ করে ধনসমৃদ্ধির দ্বারা যজমানের সেবাপুর্বক এই যজ্ঞ রক্ষা করুন।–এই যজ্ঞ অধিক ধনসমৃদ্ধিতে অবস্থিত হয়ে সর্বদা ধনপুষ্টি প্রদান করুক। (কিরকম যজ্ঞ? না,) সমিধের দ্বারা অগ্নি সম্যক্ প্রজ্বালিত হওয়া অবধি এই যজ্ঞ পুনঃ পুনঃ পূজ্যমান হয় এবং উথ শস্ত্র সমূহের বাহক রূপে ঋত্বিক ও যজমানগণের দ্বারা পরিগৃহীত হয়। তারা সেই অগ্নি পরিগ্রহ পূর্বক সর্বদা যাগ করেন।–ঋত্বিক ও যজমানগণ যে সময়ে অগ্নির উদ্দেশে হবিঃ-স্বরূপ অন্নের দ্বারা যজ্ঞের তুষ্টির হেতুকারক হন, সেই সময়ে অগ্নি এইরকম হন। (কিরকম অগ্নি? না, তিনি দেবতাগণের হিতের নিমিত্ত যজ্ঞের দ্বারা জগতের ধারয়িতা। (কিরকম হন? না, তিনি দেবশ্রী হন, অর্থাৎ দেবগণের উদ্দেশে প্রদত্ত হবির বহনকারী হন; তিনি শ্রীমণা হন, অর্থাৎ যজমানের প্রতি অনুগ্রহবুদ্ধিসম্পন্ন হন; তিনি শতপয়া হন, অর্থাৎ শতসংখ্যক পয়ঃ প্রভৃতি যুক্ত হবিঃস্বরূপ হন। এই হেন অগ্নিকে পরিগৃহীত করে ঋত্বিক ও যজমানবৃন্দ যজ্ঞমায় হন, অর্থাৎ যজ্ঞকে প্রাপ্ত হয়ে অবস্থান করে থাকেন। দারিদ্র্য-হরণকারী হিরণ্যবর্ণ কেশস্থানীয় শিখাবিশিষ্ট সূর্যরশ্মিরূপে প্রাণীগণের প্রেরক জ্যোতির্মগুলরূপ অগ্নি পূর্বদিকে প্রতিদিন উদিত হন; যাঁর উদয়ে পূষাদের জগতের প্রেরণা লাভ করে থাকেন। (কিরকম দেব? না) গোপা অর্থাৎ রক্ষক। (কিসের প্রেরণা? না,) সকল ভুবনকে অবলোকন করার।–পশুবন্ধরূপ যজ্ঞের চারটি বিভাগ; তার মধ্যে উপকরণ প্রথম, শামিত্রদেশে অর্থাৎ পশুবধস্থানে স্থিতি দ্বিতীয়, যাগের নিমিত্ত সংস্কার তৃতীয় এবং হবিঃ-প্রদান চতুর্থ। এই চারটি ভাগ ক্রমে প্রতিপাদিত হচ্ছে–দেবতাগণের দ্বারা হবিঃ-স্বীকারের উদ্দেশে ঋত্বিক ও যজমানগণ যে অভিলাষ করেন, তা-ই উপকরণ। যে স্থানে পশুবধ হবে, সেই স্থানে পশুরূপ হবিকে আনয়ন দ্বিতীয়। তারপর যাগে নিমিত্ত পশুর সংস্কার হলো তৃতীয় এবং চতুর্থে যজ্ঞভাগ অর্থাৎ দেবতার উদ্দেশে সেই হবিঃরূপ পশুকে সমর্পণ ইত্যাদি। চারটি ভাগসমন্বিত যে যজ্ঞে দেবতা হবিঃ প্রাপ্ত হন, সেই ভাগচতুষ্টয়োপেত যজ্ঞ হতে পাবকগণ অর্থাৎ আহবনীয় ইত্যাদি অগ্নিগণ আমাদেমাশিষরূপ যজ্ঞফলবিশেষ সম্পাদন (প্ৰদান) করুন।–এই অশ্মা বা প্রস্তরসমূহ বিবিধ জগৎ নির্মাণের নিমিত্ত আগ্নীপ্রস্থানীয় আকাশের মধ্যে অবস্থিত। (কিরকম প্রস্তর? না,) দ্যাবাপৃথিবী ও অন্তরিক্ষ লোককে সর্বতো পূর্ণকারী প্রস্তর। (যদ্যপ্যেবশ্ম ন কিঞ্চিজ্জগনির্মিমীতে নাপি লোকয়মাপুৰ্য তিষ্ঠতি তথাপি পরমেশ্বরগুণৈরস্য স্বয়মানত্বান্ন কোহপি বিরোধঃ–অর্থাৎ এই স্থানে সায়ণাচার্য বলেছেন যে, জগৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে যদিও প্রস্তরের কোন প্রয়োজন হয়নি, কিংবা প্রস্তরের দ্বারা তিনটি লোক পূর্ণ হয়নি, তথাপি পরমেশ্বরের গুণস্তুতি করণের কারণে এই বর্ণনায় কোন বিরোধ বা বৈপরীত্য হয়নি)। এই প্রস্তর স্তয়মান হয়ে বিশ্বাচী অর্থাৎ বিশ্বব্যাপিনী দিমূহকে প্রকাশ করছে, তথা ঘৃতাচী অর্থাৎ ঘৃত প্রাপ্তির হেতুভূত ধেনুগণকে প্রকাশ করছে, এবং অন্তরা ও পূর্বপরং অর্থাৎ উদয়-অস্তের দ্বারা ব্রহ্মাণ্ডলোকের পূর্বাপর দিকসমূহকে চিহ্নিত (কেতু) করবার নিমিত্ত সূর্যকে প্রকাশ করছে। এই প্রস্তর মেঘরূপ (উক্ষা), অর্থাৎ যাগের দ্বারা ফলের (যজ্ঞফলের) অভিবষক; সমুদ্ররূপ, অর্থাৎ সমুদ্রসদৃশ বহুফল প্রদানকারী; অরুণরূপ, অর্থাৎ পূর্ববর্তী মন্ত্রের উক্তি অনুযায়ী সূর্যসদৃশ সর্বপ্রকাশক; সুপর্ণ, অর্থাৎ স্বর্গের প্রতি গমণের হেতু বা কারণ হওয়ায় শোভন পক্ষশালী পক্ষীসদৃশ। এই হেন প্রস্তরসমূহ পালক পূর্বদিবর্তী আহবনীয়ের কারণভূত আগীর্ধে প্রবিষ্ট হচ্ছে। এই শ্বেতবর্ণ প্রস্তর দুলোকে স্থাপিত হয়ে পরমেশ্বর রূপে সংখ্যাতীত জগতের উৎপত্তিপ্রলয়রূপ কার্যসমূহ পালন করছে।–সকল সুতি ইন্দ্রবৎ পরম ঐশ্বর্যসমন্বিত অগ্নির বৃদ্ধিসাধন করছে। (কিরকম ইন্দ্ৰবৎ অগ্নি? না, সমুদ্রব্যচসং অর্থাৎ সমুদ্রের ন্যায় ব্যাপ্ত, রথীনাং রথীতমং অর্থাৎ রাজ-অমাত্যগণের মধ্যে অতিশয় রথী, বাজানাং পতিং অর্থাৎ অন্নের পালক ও সৎপতিং অর্থাৎ সৎ-পথাবলম্বী যজমানগণের পালক। প্রজা ও পশুগণের সুখ-সম্পাদক (সুখস্যাহহ্রাতা) যজ্ঞ ও অগ্নিদেব দেবগণকে আহ্বান করুন।পরম ঐশ্বর্যমুক্ত অগ্নি অন্নে নিমিত্ত আপন গ্রহণ-সামর্থ্যের দ্বারা আমাদের যজমানবৃন্দের উৎকর্ষ গ্রাহিত (অর্থাৎ প্রাপ্ত) করুন। অনন্তর ইন্দ্রবৎ পরমৈশ্বর্যযুক্ত অগ্নি আপন নিগ্রহ-সামর্থ্যের দ্বারা আমাদের আমাদের শত্রুগণকে নিগৃহীত করুন।-সকল দেবতা ব্রহ্ম-পরিবৃত সামথ্যের দ্বারা আমাদের উৎকর্ষ ও শত্রুগণের নিকর্ষ বা অবপর্ষ বর্ধন করেছেন। অনন্তর এই ইন্দ্র ও অগ্নি (ইন্দ্রাগ্নেী) সর্বতো পলায়মান আমাদের শত্রুগণকে বিনাশ করুন (মদীয়ান্বৈরিণো ব্যস্যতাং)। [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৬ষ্ঠ অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশ্লিষ্ট] ৷৩৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন-অথাপ্রতিরথসূক্তমুচ্যতে। অর্থাৎ–অতঃপর এই চতুর্থ অনুবাকে অপ্রতিরথ-সূক্ত কথিত হয়েছে]।

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- আশুঃ শিশানো বৃষভো ন যুগো ঘনাঘনঃ ক্ষোভণশ্চর্যণীনা। সংক্রন্দনোহনিমিষ একবীরঃ শতং সেনা অজয়ৎ সাকমিঃ । সংক্রন্দনেনানিমিষেণ জিষ্ণুনা। যুকারেণ দুশ্চ্যনেন পৃষ্ণুনা। তদিণে জয়ত তৎ সহধ্বং যুথোনর ইহস্তেন বৃষ্ণা। স ইমুহশুৈঃ স নিষঙ্গিভির্বশী সংস্রষ্টা স যুধ ইন্দ্রো গণেন। সংসৃষ্টজিৎ সোপা বাহুশধ্বধা প্রতিহিতাভিরা। বৃহস্পতে পরি দীয় রথেন রক্ষোহাইমিত্ৰাং অপবাধমানঃ। প্রভঞ্জৎ সেনাঃ প্রমৃণো যুধা জয়নুস্মাকমেধ্যবিতা রখানা। গোত্রভিদং গোবিদং বজ্ৰবাহুং জয়স্তম প্রমৃণমোজসা ইমং সজাতা ভনু বীরয়ধ্বমিং সখায়োহনু সং রভম্। বলবিজ্ঞায়ঃ স্থবিরঃ প্রবীরঃ সহস্রন বাজী সহমান উগ্রঃ। অভিবীরো অভিসত্বা সহোজা জৈত্রমিন্দ্র রথমা তিষ্ঠ গোবিৎ। অভি গোত্রাণি সহসা গাহমানোহদায়ঃ বীরঃ শতমরিন্দ্রঃ। দুশ্চ্যবনঃ পৃতনাষাডযুধ্যোইস্মাকং সেনা অবতু প্র যুৎসু। ইন্দ্র আসাং নেতা বৃহস্পতিক্ষিণা যজ্ঞঃ পুর এতু সোমঃ। দেবসেনানামভিভঞ্জতীনাং জয়ন্তীনাং মরুতো যন্ত্রগ্র। ইন্দ্রস্য বৃষ্ণো বরুণস্য রাজ্ঞ আদিত্যানাং মরুতাং শৰ্দ্ধ উগ্র। মহামনসাং ভুবনচ্যবানাং ঘোযো দেবানাং জয়মুদস্থা। অস্মাকমিন্দ্রঃ সমৃতেষু জেম্বকং যা ইষবস্তা জয়ন্তু। অস্মাকং বীরা উত্তরে ভবস্তুশানু দেবা অবতা হবে। উদ্ধয় মঘবন্নায়ুধানৎ সত্বনাং মামকানাং মহাংসি। উদ্ধৃহজিনাং বাজিনান্যদ্ৰথানাং জয়তামেতু ঘোষঃ। উপ প্রেত জয়তা মরঃ স্থিরা বঃ সন্তু বাহবঃ। ইন্দ্রো বঃ শৰ্ম্ম যচ্ছত্বনাধৃষ্যা যথাহসথ। অবসৃষ্ট পরা পত শরব্যে ব্ৰহ্মসংশিতা। গচ্ছামিত্ৰা প্ৰ বিশ মৈষাং কং নোচ্ছিঃ। মর্মাণ তে বৰ্মভিচ্ছাদয়মি সোমা রাজাহতেনাভি বস্তাম্।। উনোর্বরীয়ো বরিবন্তে অস্তু জয়ন্তং ত্বমনু মদন্তু দেবাঃ। যত্র বাণাঃ সম্পত্তি কুমারা বিশিখা ইব। ইন্দ্রো নস্তত্র বৃত্ৰহা বিশ্বাহা শৰ্ম যচ্ছতু ॥৪॥

মর্মার্থ– এই পরম ঐশ্বর্যযুক্ত ইন্দ্র একবারের চেষ্টায় (একপ্রযত্নেনা) শতসংখ্যক পরকীয় সেনাকে (শত্রুসৈন্যকে) জয় করেছেন। (কিরকম ইন্দ্র? না,) ইনি আশুঃ অর্থাৎ শীঘ্নকারী ও শিশানঃ অর্থাৎ অতি উগ্র। (তার দৃষ্টান্ত কি? না,) বৃষ যেমন অপর বৃষের সাথে যুদ্ধ করতে উৎসুক, সেইরকম। সেই হেন ইন্দ্র অতিশয় শত্রুগণের হিংসক বা ঘাতক, শত্রুসেনাগত মনুষ্যগণের ক্ষোভের কারক, বিপক্ষগণের ভয়ের হেতুকারক সমীচীন বা বিশেষ ধ্বনি উৎসারক, নিমেষমাত্র অসতর্ক হন না অর্থাৎ অত্যন্ত সাবধান, ও অপরের উপর নির্ভর না করে স্বয়ং একাকী যুদ্ধজয়ে সমর্থ–হে যুদ্ধার্থী মনুষ্যগণ। ইন্দ্রের দ্বারা অনুগৃহীত হয়ে তোমরা পরসৈন্যকে জয় করে বশীভূত করো, এবং বশীভূত করে তাদের বিনাশ করো। (কিরকম ইন্দ্র? না,) সংক্রন্দনেনিমিষেণ অর্থাৎ বিপক্ষগণের ভয়ের হেতুকারক সমীচীন বা বিশেষ ধ্বনি উৎসারক ও নিমেষমাত্ৰ অসতর্ক না হয়ে অত্যন্ত সাবধানী, জিষ্ণুনা অর্থাৎ জয়শীল, যুকারেণ অর্থাৎ যুদ্ধকারী, দুশ্চ্যবনেন অর্থাৎ অবিচলিত, ধৃষ্ণুনা অর্থাৎ ভীতিরহিত, ইযুহস্তেন অর্থাৎ হস্তে বাণ ইত্যাদি অস্ত্রধারী ও বৃষ্ণা অর্থাৎ কামসমূহের বর্ষণকারী।-ধনুঃ ও খঙ্গধারী আপন সৈন্যবর্গের সাথে সেই ইন্দ্ৰ ধনুঃ ও খঙ্গধারী শত্রুসৈন্যগণকে বশীভূত করে থাকেন। যোদ্ধা ইন্দ্র সহসা শত্রুসৈন্যগণের মধ্যে সম্যক মিশ্রিত বা মিলিত হয়ে তাদের জয় করে থাকেন। তিনি যজমানের যজ্ঞে সোমপান করেন। তার পর সেই বাহুবলসমম্বিত ইন্দ্র উদ্যতধনুঃ হয়ে বাণনিক্ষেপ পূর্ব শত্রুগণকে বিনাশ করে থাকেন।–হে বাক্যের পালক বা বাপতিস্বরূপ ইন্দ্র (বৃহস্পতিরিন্দ্র)! আপনি রথে আরোহিত হয়ে। সর্ব দিকে গমন করুন। (কিরকম ইন্দ্র? না, আপনি রাক্ষসগণের হন্তা, শত্রুসেনাকে অবরুদ্ধকারী, সেই শত্রুসেনাকে প্রকর্ষের সাথে ভগ্নকারী ও সর্বত্র বিজয়মান। আপনি আমাদের রথের রক্ষক হোন।-হে আমাদের জ্ঞাতিবর্গ! আপনারা এই ইন্দ্রের বীরত্ব অনুসরণ করুন; পুরত অর্থাৎ অগ্রে এই ইন্দ্ৰ বীর হোন (অর্থাৎ বীরত্ব প্রদর্শন করুন), তার পশ্চাৎ অর্থাৎ পরে আপনার বীর হবেন (অর্থাৎ বীরত্ব প্রদর্শন করুন), হে সখাগণ! ইন্দ্র অগ্রে যুদ্ধ সমারম্ভ করুন, তার পশ্চাৎ আপনারা যুদ্ধ আরম্ভ করবেন। (কিরকম ইন্দ্র? না,) এই ইন্দ্র পর্বতসমুহে পক্ষছেদনকারী (গোত্রভিং ), গাভীগণকে ভূমিতে আনয়নকারী (গোবিদং), বভ্রুবাহু (অর্থাৎ বজ্র যাঁর দুটি বাহু), শবর্গকে ভূমিরহিত করে বিজয় লাভ করেন (অজ প্রবৃণম), ও তিনি বলের দ্বারা শত্রুদের প্রকর্যের সাথে হিংসা করেন (ওজসা)।–হে ইন্দ্রদেব! আপনি জয়শীল রথে আরোহণ করুন। (আপনি কিরকম? না, আপনি বলবিজ্ঞায়, অর্থাৎ শত্রুপক্ষীয় সেনাগণের সামর্থ্য সম্পর্কে জ্ঞাত; আপনি স্থবিরঃ অর্থাৎ পুরাতন; আপনি প্রবীরঃ, অর্থাৎ বীর অপেক্ষাও বীর; আপনি সহস্বান, অর্থাৎ বলবান; আপনি বাজী, অর্থাৎ অন্নবান; আপনি সহমান, অর্থাৎ পরকে বা শত্রুকে পরাভবকারী; আপনি উগ্র, অর্থাৎ যুদ্ধে স্বভাবী; আপনি অভিতো বীরাঃ, অর্থাৎ আপনি বীরগণের দ্বারা বেষ্টিত; আপনি অভিতঃ সত্বানঃ, অর্থাৎ পরিচারক ও প্রাণীবৃন্দ সমন্বিত; আপনি সহোজা, অধিক বলশালী; আপনি রথে অধিষ্ঠিত; এবং আপনি গোবিৎ, অর্থাৎ গাভীগণকে ভূমিতে আনয়নকারী। –এই ইন্দ্র যুদ্ধে প্রকৃষ্টরূপে আমাদের সৈন্যগণকে রক্ষা করুন। (কিরকম ইন্দ্র? না,) ইনি শীঘ্র (সহসা) যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশকারী, অদায়ো অর্থাৎ দয়ারহিত বা বিপদহীন, বীর, বহুবিধ ক্রোধযুক্ত, অবিচলিত, পরকীয় সৈন্যগণের অভিভবিতা, ও কেউই তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমর্থ হয় না (কেনাপি যুন্ধুমশকঃ)–যে সেনাগণ আমাদের অনুগ্রহের নিমিত্ত শত্রুগণের প্রতি গমন করছে, ইন্দ্র সেই সেনাগণের নেতা হোন। যে বৃহস্পতি ও দক্ষিণাদেবী, যে যজ্ঞ ও সোম, তারা একে একে এদের পুরোভাগে গমন করুন। এদের সম্বন্ধি দেবসেনাগণ শত্ৰুবলকে জয় করার নিমিত্ত মরুৎগণ সহ গমন করুক।-ইন্দ্রের রাজ্যকারক (ইন্দ্রস্য রাজ্যং কুর্বতে) কামাভিক বরুণের বল যুদ্ধে অতি তীব্র হয়ে উঠুক। যুদ্ধে স্থিরচিত্তশালী শত্ৰুবর্গকে ভূমিচ্যুত করতে সমর্থ, বিজয়শালী দেবতাবর্গের ধ্বনি সর্বতো উখিত হোক।-যুদ্ধার্থে শত্রুসেনা আগমন করলে ইন্দ্রদেব আমাদের রক্ষা করুন। সেইকালে (তদানী) আমাদের বাণগুলি মুক্ত হয়ে (অর্থাৎ নিক্ষিপ্ত হয়ে) শত্রুসেনাগণকে বিদ্ধ করুক। আমাদের যে বীরগণ আছে, তারা শত্রুসেনাগণ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হোক। দেবগণ যুদ্ধে আমাদের রক্ষা করুন। [ইখং দশৰ্চমপ্রতিরথসূক্তং সমাপ্ত। অথ তত্রৈব বিকল্পিতাঃ পঞ্চর্চ উচ্যন্তে–অর্থাৎ এই পর্যন্ত এই দশটি ঋক্ অপ্রতিরথ সুক্ত সমাপ্ত হয়েছে। অতঃপর সেগুলির বিকল্পিত পাঁচটি ঋক্ কথিত হচ্ছে)–হে মঘবন্ ইন্দ্র! শত্রুসেনা অপেক্ষা আমাদের উৎকৃষ্ট করে আমাদের হর্ষান্বিত করুন। আমাদের প্রাণীগণকে উস্কৃষ্ট করে আমাদের হর্ষান্বিত করুন। হে বৃহ! আমাদের অশ্বগুলিকে শীঘ্রগমনের পক্ষে উৎকৃষ্টতা দান করে তাদের হর্ষান্বিত করুন; বিজয়প্রাপ্ত আমাদের রথগুলির মহাধ্বনি উদ্যত হোক (মহাধ্বনিরুগচ্ছতু)।–হে আমাদের পুরুষগণ! তোমরা শত্রুসৈন্যের প্রতি প্রকর্ষের সাথে গমন করো; তারপর বিজয়প্রাপ্ত হও;তোমাদের স্বকীয় প্রহরণগুলি (অস্ত্রগুলি) স্থির হোক। তোমরা যাতে কারও দ্বারা তিরস্কৃত না হও, সেইভাবে ইন্দ্র তোমাদের সুখ প্রদান করুন।–হে শরব্য (হিংসিকা হেতিঃ শরব্যা–অর্থাৎ হেতি নামক হিংসক অস্ত্র)! মন্ত্রের দ্বারা (ব্ৰহ্মণা সংশিতা) তীক্ষ্ণীকৃত হয়ে তুমি আমাদের দ্বারা মুক্ত (অর্থাৎ নিক্ষিপ্ত) হয়ে শত্রুসেনার মধ্যে পতিত হও; পতিত হয়ে শত্রুকে প্রাপ্ত হও; প্রাপ্ত হয়ে শত্রুর শরীরের মধ্যে প্রবেশ করো; এবং প্রবেশ করে এমনভাবে তাদের বিনাশ করো, যাতে তাদের কোন পুরুষ না অবশিষ্ট (বা জীবিত) থাকে।–হে যজমান! তোমার মর্মসমূহ কবচের দ্বারা আচ্ছাদিত করছি। সোম রাজা দেহের মধ্যে ১০৭টি মর্ম বা মর্মস্থান থাকে। মর্মের মধ্যে প্রাণ বিশেষভাবে অবস্থিতি করে। মাংসে ১১, অস্থিতে ৮, সন্ধিতে ২০, স্নায়ুতে ২৭, এবং শিরায় ৪১ টি মর্ম থাকে।মর্ম পাঁচ প্রকার; যথা-(১) সদ্যঃ প্রাণহর (এতে আঘাত লাগলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু ঘটে; এর সংখ্যা ১৯); (২) কালান্তর-প্রাণহর (এটা আহত হলে কিছুদিন পরে মৃত্যু ঘটে; এর সংখ্যা-৩৩); (৩) বৈকল্যকর (এতে আঘাত লাগলে অঙ্গ বিকল হয়ে যায়; এর সংখ্যা-৪৪); (৪) পীড়াকর (এটি আহত হলে পীড়া জন্মে; এর সংখ্যা-৮); (৫) বিশল্যপ্ন (এতে শল্য ইত্যাদি বিদ্ধ হলে তা উৎপাটনমাত্র মৃত্যু হয়; এর সংখ্যা-৩)। তোমাকে অমৃত বা মরণনিবারক কোনও কবচের দ্বারা আচ্ছাদিত করুন। তোমার ধনসমূহ অন্য সকল অপেক্ষা অধিক হোক। বিজয়প্রাপ্ত দেববর্গ অনুকুল হয়ে তোমাকে হর্ষান্বিত করুন। মুণ্ডিতমস্তক বা বিশীর্ণকেশ (শুষ্ককেশবিশিষ্ট) অত্যন্ত চঞ্চল বালকের মতো (বালাশ্চপলাঃ) ইতস্ততঃ ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বাণগুলি পতিত হচ্ছে, সেই যুদ্ধে শত্রুপক্ষের সকল প্রাণীর ঘাতক (পরকীয়সৰ্বপ্ৰাণিঘাতী) বিশেষতঃ বৈরিঘাতী হয়ে এই ইন্দ্রদেব শত্রু বিনাশপূর্বক আমাদের সুখ প্রদান করুন। (এই মন্ত্রগুলি পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ প্রপাঠকের ৬ অনুবাকের কিছু মন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট] ॥৪৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন-পঞ্চমেহগ্নিস্থাপনমুচ্যতে। অর্থাৎ–এই পঞ্চম অনুৰাকে অগ্নিস্থাপনের বিষয় উক্ত হয়েছে]

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- প্রাচীমনু প্রশিং প্রেহি বিদ্বানগ্নেরগ্নে পুরো অগ্নিৰ্ভবেহ। বিশ্বা আশা দীদ্যাননা বি ভার্জং নো দেহি দ্বিপদে চতুম্পদে। ক্ৰমমগ্নিনা নাকমুখ্যং হতেষু বিভ্রতা। দিবঃ পৃষ্ঠম সুবর্গা মিশ্রা দেবেভিরাম। পৃথিব্যা অহমুদন্তরিক্ষামাহরুহমন্তরিক্ষাদ্দিমাহরুহ। দিবো নাকস্য পৃষ্ঠাৎ সুবজ্যোতিরগাম অহম। সুবন্তো নাপেক্ষ আ হ্যাং রোহতি নোদলী। যজ্ঞং যে বিশ্বােধরং সুবিদ্বাংসো বিতেনিরে। অগ্নে প্রেহি প্রথমো দেবয়ং চকুৰ্দেবানামুত মানা। ইয়ক্ষমাণা ভৃগুভিঃ সজোষাঃ সুবর্যন্ত যজমানাঃ স্বস্তি। নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকং সমীচী। দ্যাবা ক্ষামা রুঝো অন্তর্ষি ভাতি দেবা অগ্নিং ধারয়ন্ত্রবিদোদাঃ। অগ্নে সহস্রাক্ষ শতমূৰ্জনহতং তে প্রাণাঃ সহসমপানাঃ। ত্বং সাহস রায় ঈশিষে তস্মৈ তে বিধেম বাজায় স্বাহা। সুপর্ণাহসি গরুত্মান্ পৃথিব্যাং সীদ পৃষ্ঠে পৃথিব্যাঃ সীদ ভাসাহস্তরিক্ষমা পৃণ জ্যোতিষা দিবমুত্তভান তেজসা দিশ উংহ। আজুহ্বান সুপ্রতীকঃ পুরস্তাদগ্নে স্বাং যোনিমা সীদ সাধ্যা। অস্মিনসধস্থে অধ্যরম্মিন্বিশ্বে দেবাঃ যজমানশ্চ সীদত। প্রেহ্মো অগ্নে দীদিহি পুরো নোহজয়া সূৰ্য্যা যবিষ্ঠ। ত্বং শশ্বস্ত উপস্তি বাজাঃ। বিধেম তে পরমে জন্মগ্নগ্নে বিধেম স্তোমৈরবরে সধস্থে। যম্মাদ্যোনেরুদারিথা যজে তং এ ত্বে হবীংষি জুহুরে সমিদ্ধে। তাং সবিতুর্বরেণ্যস্য চিত্রামাহহং বৃণে সুমতিং বিশ্বজন্যা। যামস্য কন্বো অদুহৎ প্রণীণাং সহস্রধারা পয়সা মহীং গাম্।। সপ্ত তে অগ্নে সমিধঃ সপ্ত জিহ্বাঃ সপ্তর্ষয়ঃ সপ্ত ধাম প্রিয়াণি। সপ্ত ছোত্রাঃ সপ্তধা ত্বা যজতি সপ্ত যোনীরা পৃণস্বা ঘৃতেন। ঈদচান্যাদৃঙুচৈতাদৃঙ চ প্রতিদ্বন্দ্ব চ মিশ্চ সম্মিত সভরাঃ। শুক্ৰজ্যোতিশ্চ চিত্ৰজ্যোতিশ্চ সত্যজ্যোতিশ্চ জ্যেতিয়াংশ্চ সত্যশ্চর্তপাশ্চ্যত্যংহাঃ। ঋতজিচ্চ সত্যজিচ্চ সেনজিচ্চ সুষেণশ্চাত্যমিশ্চ দূরে অমিত্রশ্চ গণঃ। ঋতশ্চ সত্য ধ্ৰুশ্চ ধরুণশ্চ ধৰ্ত্তা চ বিধৰ্তা চ বিধারয়ঃ।। ঈদৃক্ষাস এতাদৃক্ষাস উ যুণঃ সদৃক্ষাসঃ প্রতিসদৃক্ষাস এতন। মিত্যসস্ট সম্মিতাস ন উতয়ে সভরসো মরুততা যজ্ঞে অম্মিন্দ্রিং দৈবীৰ্ব্বিশে মরুতোহনুবৰ্মানো যথেন্দ্ৰং দৈবীৰ্বিশো মরুতোহনুবঙ্খান এবমিমং যজমানং দৈবীশ বিশশা মানুষীশ্চানুবৰ্মননা ভবন্তু ॥৫॥

 মর্মার্থ- হে অগ্নিদেব! প্রকৃষ্টভাবে পূর্বদিক সম্পর্কে বিদিত হয়ে আপনি অনুক্রমে (পরপর প্রতিটি দিকে) প্রবেশ করুন। ইষ্টকা-নিম্পাদিত চিতিরূপ বহ্নির মধ্যে আপনি মুখ্য; (যেহেতু আপনি পূর্ব দিকে স্থাপিত)। সকল দিকেও বিশেষভাবে প্রকাশিত করে আপনিও প্রকাশিত হোন। আমাদের দ্বিপদ মনুষ্য ও চতুষ্পদ প্রাণীগণকে অন্ন দান করুন।–হে ঋত্বিক ও যজমানগণ! স্বর্গসাধন (অর্থাৎ স্বর্গপ্রাপ্তির সাধনভূত) উখায় পূর্বে সম্পাদিত এই অগ্নি হস্তের দ্বারা ধারণ করে পদের দ্বারা বিক্ষিপ্ত করুন (পাদান বিক্ষিপত)। তারপর আকাশের উপরে বর্তমান স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়ে দেবতাগণের সাথে একীভূত হয়ে উপবেশন করুন। আমি, অর্থাৎ এই যজমান, পৃথিবী হতে উত হয়ে অন্তরিক্ষে আরূঢ় হচ্ছি, তারপর সেই অন্তরিক্ষলোক হতে উগত হচ্ছি। তারপর দুঃখরহিত যে প্রদেশ সেই দুলোক-সম্বন্ধি প্রদেশের উর্ধ্বে স্বর্গলোকে আদিত্যরূপ জ্যোতির্মণ্ডল আমি প্রাপ্ত হবো।যে যজমানগণ সুষ্ঠুভাবে কর্মের অনুষ্ঠান প্রকার জ্ঞাত হয়ে (জানস্তো) সর্ব জগতের ধারণের হেতুকর যে অগ্নির বিস্তার করে থাকেন, সেই যজমানগণ দ্যুলোকে আরোহণ করেন; তারপর দ্যাবাপৃথিবীর ঊর্ধ্বে স্বর্গনিবাস আদিত্যমণ্ডল প্রাপ্ত হন, তাদের আর কোনও স্থানের অপেক্ষা থাকে না, (অর্থাৎ শেষপর্যন্ত যখন তারা আদিত্যমণ্ডলে স্থাপিত হন, তখন আর কোন লোক প্রাপ্তির প্রয়োজন থাকে না)।–হে অগ্নি! আপনি দেবতাগণের কৃপাকাঙ্ক্ষী যজমানবৃন্দের উপকারের নিমিত্ত অগ্রভাগে গমন করুন। আপনি দেবতা ও মনুষ্যগণের চক্ষুস্থানীয়। ইহাজগতে (লোকে) গমনকারী পুরুষের দৃষ্টি পুরোভাগে গমন করে। যাগ করতে ইচ্ছুক (যমিচ্ছন্তো) যজমানগণ যজ্ঞানুষ্ঠানরত ভৃগুনামক মুনিগণের সমান প্রিয় হয়ে কর্মক্ষমরূপে (অর্থাৎ যজ্ঞকর্ম অনুষ্ঠান করে) স্বর্গে গমন করুন। রাত্রি ও দিবস (নক্তষাসা) যথাক্রমে কৃষ্ণবর্ণা ও শুক্লবর্ণ হয়ে (বিরুপে) পরস্পর ঐক্যমত্যযুক্ত হয়ে সমীচীনভাবে শিশুরূপ অগ্নিকে ধারণ করে যজমান কর্ক অগ্নিধারণকর্ম সম্পন্ন করছে। দ্যুলোক ও ভূলোকের মধ্যবর্তী অন্তরিক্ষলোক আলোকিত করে (রোমান) অগ্নি বিশেষভাবে প্রকাশ পাচ্ছেন। ক্রীড়াপরায়ণ দেবগণ ও প্রাণসমূহ যেমন যাগের দ্বারা ধনরূপ ফল প্রদান করেন, সেইরকমে যজমানের প্রাণ এই অগ্নিকে ধারণ করেছে (যজমানস্য প্রাণা অগ্নিমেতং ধৃতবন্ত)। হে অগ্নিদেব! আপনার সহস্র (অপরিমিত) চক্ষু, শত (অপরিমিত) মস্তক, অপরিমিত প্রাণ, অপান আছে। আপনি অপরিমিত ধনের প্রভু; সেইরকম আপনাকে অন্নসিদ্ধির নিমিত্ত পরিচর‍্যা করছি, স্বাহা মন্ত্রে আপনাকে হবিঃ সমর্পণ করছি।–হে অগ্নিদেব! আপনি পক্ষীর আকার সম্পন্ন গরুড়ের সমান, আপনি এই চিতিরূপা পৃথিবীতে বা পৃথিবীর উপরে উপবেশন করুন। আপনি আপনার আপন প্রকাশের (দীপ্তির) দ্বারা অন্তরিক্ষলোককে সর্বত পূর্ণ করুন, আপন সামর্থ্যে (জ্যোতিষা) দুলোককে স্তম্ভিত করুন, তারপর আপন তেজে বা সামর্থ্যে পূর্ব ইত্যাদি দিক সমূহকে উৎকর্ষের সাথে দৃঢ় করুন।–হে অগ্নিদেব! আপনি যজ্ঞে আহূত হয়ে সুমুখে বা শোভন মুখসম্পন্ন হয়ে পূর্ব দিকে আপনার স্বীকার স্থান প্রাপ্ত হয়ে উপবেশন করুন।–হে বিশ্বদেবগণ ও যজমানবৃন্দ! আপনারা এই পুরোবর্তী উৎকৃষ্ট স্থানে অগ্নির সাথে উপবেশন করুন।–হে অগ্নিদেব! পূর্বেরই মতো আপনি দীপ্ত হয়ে পুনরায় আমাদের সম্মুখে (পুরোদেশে) নিরন্তর সূর্মিসমান (অর্থাৎ জ্বলন্ত লৌহময়ী স্কুণা বা প্রতিমার ন্যায়) জ্বালার সাথে দীপ্ত হোক। হে যুবতম অগ্নিদেব! অন্নসমূহ আপনাকে নিকটে প্রাপ্ত হচ্ছে।–হে অগ্নিদেব! আপনার পরম উৎপত্তিস্থান সমূহকে (অর্থাৎ যে উৎকৃষ্ট ভূমি সমুহে আপনার উৎপত্তি, সেই ভূমিকে) আমরা জ্ঞানের দ্বারা পরিচর‍্যা করছি; আপনার যে নিকৃষ্ট ভূমিতে জন্ম, সেই ভূমিকে আমরা স্তোত্রের দ্বারা পরিচর‍্যা করছি; ইষ্টকায় বা চিতিরূপ যে স্থানে আপনার আবির্ভাব হয়, সেই স্থানকে আমরা পূজা করছি। সমিধের দ্বারা সম্যক প্রজ্বলিত আপনার উদ্দেশে ঋত্বিকগণ হবিঃ দ্বারা প্রকর্ষের সাথে যজ্ঞ করেন।–পুরাকালে কোন সময়ে কথ নামক মহর্ষি যেমন এই অগ্নির শোভন বুদ্ধির (কৃপার) সৌজন্যে অভীষ্ট ফল প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেইরকম শোভন বুদ্ধি আমি প্রার্থনা করছি। (কিরকম শোভন বুদ্ধি? না, স্বাপেক্ষিত বহুবিধ ফল প্ৰাদনে এবং জগতের উৎপাদনে সমর্থ সুমতি বা শোভন বুদ্ধি।–হে অগ্নিদেব! আপনার প্রিয় সমিধ সপ্ত প্রকার (যথা–অশ্বত্থ, উদুম্বর, পলাশ, শমী, বিকঙ্কত বা বৈঁচি, অশনিহত বা বজ্রাহত বৃক্ষ ও পুষ্করপর্ণ বা পদ্মপত্র); আপনার প্রিয় জ্বালামালারূপ সপ্ত জিহ্বা (যথা-কালী, করালী, মনোজবা, সুলোহিতা, সুধুম্রবর্ণা, ফুলিঙ্গিনী ও বিশ্বরুচী); আপনার প্রিয় সপ্ত মহর্ষি (যথা–বশিষ্ঠ, ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত্য, অঙ্গিরাঃ, অত্রি ও মরীচি); আপনার প্রিয় সপ্ত ধাম বা স্থান (যথা–আহবনীয়, গার্হপত্য, দক্ষিণাগ্নি, সভ্যা, অবসথ্য, জহিত ও আগ্নী)। সেই রকম আপনার প্রিয় সপ্ত হোতা বা হোমকর্তা (যথা–বষকর্তা, হোতা, প্রশাস্তা, ব্রাহ্মণাচ্ছংসী, পোতা, নেষ্টা ও অচ্ছাবাক) আপনার উদ্দেশে আপনার প্রিয় সপ্ত স্থানে যজ্ঞানুষ্ঠান করছেন; আপনি আপনার প্রিয় সপ্ত উৎপত্তিস্থানগুলি (অর্থাৎ আহবনীয় গার্হপত্য ইত্যাদি প্রিয় ধাম বা স্থানগুলিকে) ঘৃতের দ্বারা পূর্ণ করে দিন। [ঈঙচান্যাদৃঙচৈতাদৃঙ চ ইত্যাদি অবশিষ্ট মন্ত্রসমূহ মরুগণের পঞ্চগণের নামোল্লেখিত হয়েছে। এগুলি পূর্বে ব্যাখ্যাত ] [এই মন্ত্রগুলির সাথে পরবর্তী কাণ্ডের ৪র্থ অনুবাকের ৭ম অনুবাকের মন্ত্রগুলি সংশিষ্ট] ॥৫॥

[সায়ণাচার্য বলেন-ষষ্ঠেহনুবাকেহশ্বমেধক রথসজ্জাকরণভাবিনী কবচস্বীকারাদীন্যঙ্গানুচ্যন্তে। অর্থাৎ এই ষষ্ঠ অনুবাকে অশ্বমেধ যজ্ঞকর্তার কবচ স্বীকার (গ্রহণ) ইত্যাদি অঙ্গগুলি উক্ত হয়েছে ]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- জীমূতস্যেৰ ভবতি প্রতীকং যদ্বৰ্মী যাতি সমদামুপন্থে। অনাবিদ্ধয়া তনুবা জয় ত্বংস ত্বা বর্মণো মহিমা পিপর্তু। ধন্বনা গা ধন্বনাইজিং জয়েম ধন্বনা তীব্রাঃ সমদো জয়েম। ধনুঃ শত্রারপকামং কৃণোতি ধম্বনা সৰ্বাঃ প্রদিপশা জয়েম। বক্ষ্যতীবেদা গনীগতি কর্ণং প্রিয়ং সখায়ং পরিষজানা। যোষে শিক্তে বিততাধি ধম্বন্ জ্যা ইয়ৎ সমনে পারয়ন্তী। তে আচরন্তী সমনেব যোষ মাতেব পুত্রং বিভূতামুপন্থে। অপ শকুন বিদ্যুতাং সম্বিদানে আত্মী ইমে বিক্ষুরতী অমিত্রা। বহীনাং পিতা বহুরস্য পুত্ৰশ্চিক্ষা কৃপোতি সমনাহবগত্য। ইষুধিঃ সকাঃ পৃতনাশ্চ সৰ্বাঃ পৃষ্ঠে নিনদ্ধো জয়তি প্রসূতঃ। রথে তিন্নয়তি বাজিনঃ পুরো যত্রযত্র কাময়েতে সুষারথিঃ। অভীশূনাং মহিমান পনায়ত মনঃ পশ্চাদনু যচ্ছন্তি রশ্ময়। তীব্ৰান্ ঘোষান্ কৃতে বৃষপাণয়োহশ্রী রথেভিঃ সহ বাজয়ন্তঃ। অবক্ৰামতঃ প্রপদৈমিত্রা ক্ষিণন্তি শত্রুরনপব্যয়ঃ। রথবাহনং হবিরস্য নাম যাইয়ুধং নিহিতমস্য বৰ্ম্ম। তত্রা রথমুপ শগ্মং সদেম বিশ্বাহা বয়ং সুমনস্যমানাঃ। স্বাদুষংসদঃ পিতরো বয়োধাঃ কৃচ্ছেতিঃ শক্তীবন্তো গভীরাঃ। চিত্রসেনা ইযুবলা অমৃর্ধাঃ সততাবীরা উরবো ব্রাতসাহাঃ। ব্রাহ্মণাসঃ পিতরঃ সোম্যাসঃ শিবে নো দ্যাবাপৃথিবী অনেহসা। পূষা নঃ পাতু দুরিতা দৃবৃধ্যে রক্ষা মাকিণো অঘশংস ঈশত। সুপর্ণং বন্তে মৃগো অস্যা দস্তো গোভিঃ সম্নদ্ধা পততি প্রসূতা। যত্রা নরঃ সং চ বি দ্রবন্তি তত্ৰাস্মভ্যমিষবঃ শৰ্ম্ম যংস। ঋজীতে পরি বৃদ্ধি নোহশ্মা ভবতু নস্তনু। সোমা অধি ব্রবীতু নোহদিতিঃ শৰ্ম্ম যচ্ছতু। আ জঘন্তি সান্বেষা জঘনাং উপ জিতে। অশ্বাজনি প্রচেতসোহাৎ সমসুচোদ্দয়। অহিরিব ভোগৈঃ পৰ্য্যেতি বাহুং জ্যায়া হেতিং পরিবাধমানঃ। হস্তেয়ো বিশ্বা বয়ুনানি বিদ্বান পুমা পুমাংসং পরি পাতু বিশ্বতঃ। বনস্পতে বীড়ঙ্গো হি ভুয়া অম্মৎসখা প্রতরণঃ সুবীরঃ।। গোভিঃ সম্নদ্ধো অসি বীভূয়স্বহস্থাতা তে জয়তু জেনি। ধর্ণ দিবঃ পৃথিব্যাঃ পরি ওজ উভৃতং বনস্পতিভ্যঃ পৰ্য্যাভৃতং সহঃ। অপমোন্মানং পরি গোভিরাবৃতমিন্দ্রস্য বজ্রং হবিষা রথং যজ।। ইন্দ্রস্য বজ্রো মরুতামনীকং মিত্রস্যা গর্ভা বরুণস্য নাভিঃ।। সেমাং নো হব্যদাতিং জুষাণো দেষ রথ প্রতি হব্যা গৃভায়। উপ শ্বাসয় পৃথিবীমুত দ্যাং পুরুত্ৰা তে মনুতাং বিষ্ঠিতং জগৎ। স দুন্দুভে সরিণে দেবৈদূরাৎ দবীয়ো অপ সেধ শত্রু। আ ক্ৰন্দ্ৰয় বলমোজো ন আ ধা নিষ্টনিহি দুরি বাধমানঃ। অপ খোথ দুন্দুভে দুচ্ছুনাং ইত ইন্দ্রস্য মুষ্টিসি বীড়য়। আহমুরজ প্রত্যাবর্তয়েমাঃ কেতুমদুন্দুভিৰ্বাবদীতি।। সমপর্ণাশ্চরন্তি নো নবোস্মাকমিন্দ্র রথিনো জয়ন্তু ॥৬॥

মর্মার্থ– যখন (যদ্যদা) বর্মী অর্থাৎ কবচযুক্ত (অর্থাৎ বর্মধারী) রাজা যুদ্ধের উদ্দেশে শত্রুগণের সম্মুখে উপস্থিত হন, তখন মাসবশতঃ তাঁর মুখ মেঘের মতো (অন্ধকার) দেখায়। উভয়পক্ষের সৈন্যগণ যুদ্ধের নিমিত্ত মিলিত হলে বিপুল মেঘ যেমন অন্তরিক্ষলোককে ব্যাপ্ত করে, সেই রকম ভূমি ব্যাপ্ত হয়। সেই কালে, হে রাজন! শত্রুর প্রহার রহিত (পরকীয়প্রহাররহিতয়া) আপন শরীরের দ্বারা আপনি বিজয় প্রাপ্ত হোন, এই কবচের সেই মহিমা আপনি পালন করুন। আমরা ধনুর দ্বারা শত্রুর গো-ইত্যাদি আহরণ করব; আমরা ধনুর দ্বারা যুদ্ধ জয় করব; সেইভাবে আমরা ধনুর দ্বারা মদমত্ত (মদসহিতাঃ) শত্রুসেনাগণকে জয় করব। এই ধনু আমাদের বৈরিগণের কামনা (অর্থাৎ আমাদের বিনাশ করার আকাঙ্ক্ষা) শূন্য (বা ব্যর্থ করে দিক, এই ধনুর দ্বারা আমরা সর্বদিক্বর্তী শত্রুগণকে জয় করব। [পরবর্তী মন্ত্রগুলি শুক্লযজুর্বেদের ২৯শ অধ্যায় ব্যাখ্যাত। যেমন ব্যতীবেদা মন্ত্রটি ৪০শ মন্ত্রে, তে আচরন্তী মন্ত্রের ৪১শ মন্ত্রে এবং বীনাং পিতা থেকে আহমুরজ প্রত্যাবর্তয়েমাঃ মন্ত্রের ব্যাখ্যা যথাক্রমে ৪২শ থেকে ৫৭শ পর্যন্ত মন্ত্রসমূহে প্রাপ্তব্য॥৬৷৷

 [সায়ণাচার্য বলেন–সপ্তমাদ্যনুবাকত্রয়ে হোমোহভিধীয়তে। অর্থাৎ–এই সপ্তম ইত্যাদি (অষ্টম ও নবম) অনুবাকে হোমমন্ত্র উক্ত হয়েছে। এই হোমমন্ত্রগুলি অশ্বস্তোমীয় মন্ত্র নামে অভিহিত। এই অনুবাকে সেই অশ্বস্তোম প্রতিপাদক কতকগুলি মন্ত্র উক্ত হয়েছে ]

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- যদক্রঃ প্রথমং জায়মান উদ্যৎ সমুদ্ৰাদুত বা পুরীষাৎ। শ্যেনস্য পক্ষা হরিণস্য বাহু উপত্যং মহি জাতং তে অর্ব। যমেন দত্তং ত্ৰিত এনমায়ুনগি এণং প্রথমো অধ্যতিষ্ঠৎ। গন্ধর্বো অস্য রশনামগভণাৎ সুরাদশ্বং বসবো নিরতষ্ট। অসি যমো অস্যাদিত্যো অৰ্ব্বসি ত্রিতো গুহ্যেন ব্ৰতেন। অসি সোমেন সময় বিপৃক্তঃ আহুস্তে শ্ৰীণি দিবি বন্ধনানি। ত্ৰীণি ত আহুর্দিবি বন্ধনানি ত্ৰীণ্য ত্ৰীণ্যন্তঃ সমুদ্রে। উতেব মে বরুণচ্ছুৎস্যবন্যা ত অ হুঃ পরমং জনি। ইমা তে বাজিন্নবমার্জনানীমা শফানাং সনিতুর্নিধানা। অত্রা তে ভদ্রা রশনা অপশ্যমৃতস্য যা অভিরক্ষন্তি গোপাঃ। আত্মানং তে মনসাহরাদ জানামবো দিবা পতয়ন্তং পতঙ্গম শিরো অপশ্যং পথিভিঃ সুগেভিররেণুভিজেঁহমানং পতত্রি। অত্রা তে, রূপমুত্তমমপশ্যং জিগীষমাণমিষ আ পদে গোঃ। যদা তে মর্তো অনু ভোগমিনড়াদিদ গ্রসিষ্ঠ ওষধীরজীগঃ। অনু ত্বা রথো অনু মৰ্যো অৰ্বৰ্মনু গাবোহনু ভগঃ কনীনাম্। অনু ব্ৰাতাসম্ভব সখ্যমীয়ুরনু দেবা মমিরে বীৰ্য্যম তে।। হিরণ্যশৃঙ্গোহয়ো অস্য পাদা মনোজবা অবর ইন্দ্র আসীৎ। দেবা ইদস্য হবিদ্যমায়নন্যা অৰ্ব্বং প্রথমো অধ্যতিষ্ঠৎ। ঈৰ্মান্তাস সিলিকমধ্যমাসঃ সংশূরণাসসা দিব্যাসো অত্যাঃ। হংসা ইব শ্রেণিশো যতন্তে যদাক্ষিযুৰ্দিব্যমত্মমশ্বাঃ। তব শরীরং পতয়িম্বৰ্বৰ্তব চিত্তং বাত ইৰ প্ৰজীমান্। তব শৃঙ্গাণি বিষ্ঠিতা পুরুত্ৰাহরণ্যে জঙুরাণা চরন্তি। উপ প্রাগাচ্ছনং বাজ্যৰ্ব্বা দেবীচা মনসা দীধ্যানঃ। অজঃ পুরো নীয়তে নাভিরস্যানু পশ্চাৎ কবয়ো যন্তি রেভাঃ। উপ প্রাগাৎ পরমং যৎসধহুমৰ্বাম অচ্ছা পিতরং মাতরং চ। অদ্যা দেবা জুতমো হি গম্যা অথাহশাস্তে দাশুষে বাৰ্য্যাণি৷৭৷৷

মর্মার্থ- হে অর্ব অর্থাৎ অশ্ব! যে স্থান হতে উৎপাদিত হয়ে তুমি প্রথম ক্রন্দনাকুল (ক্রন্দিতবা) হয়েছিলে, অর্থাৎ আমি অগ্নির সাধন বলে মহতী শব্দ করেছিলে, সেই কারণে তোমার জন্মস্থান মহৎ, সেই কারণে তুমি সকলের দ্বারা স্তোতব্য (স্ততির যোগ্য হয়েছিলে। (উৎপদ্যমানতা বিশদীকৃত হচ্ছে)–সমুদ্র হতে বা সমুদ্র-উপলক্ষিত জল হতে তোমার উৎপত্তি; (শ্রুতিতে বলা হয়েছে-অঙ্গুযযানিৰ্বা অশ্ব); অথবা লৌকিক দৃষ্টিতে পুরীষাৎ অর্থাৎ পুরুষশক্তিসম্পন্ন মহান্ অশ্ব হতে তুমি উৎপাদিত হয়েছে। (জন্মের উপস্তুতি)-শ্যেনস্য পক্ষা হরিণস্য বাহু অর্থাৎ শ্যেনপক্ষীর দুটি পক্ষ যেমন শীঘ্র উড্ডীয়মান হওয়ার কারণে সকলের স্তুতিযোগ্য, কিংবা হরিণের দুটি বাহু ও দুটি পদ (মোট চতুষ্পদ) যেমন শীঘ্র গমনের নিমিত্ত সকলের স্তুতিযোগ্য, সেই রকমই হে অশ্ব! তুমি সকলের দ্বারা স্তুতিযোগ্য হয়েছি। [পরবর্তী মন্ত্রগুলি; যথা–যমেন দত্তং ত্রিত থেকে উপ প্রাগাৎপরমং পর্যন্ত মোট বারোটি ঋকের ব্যাখ্যা শুক্লযজুর্বেদের ২৯শ অধ্যায়ের ১৩শ থেকে ২৪শ মন্ত্রে বিধৃত] ॥৭॥

[সায়ণাচার্য  বলেন–সপ্তমেইনুবাকেহশ্বস্তোমীয়মন্ত্ৰা কেচিদুক্তাঃ অগাষ্টমে ত এবান্যে কেচিদ্যুচ্যন্তে। অর্থাৎ-সপ্তম অনুবাকে যেমন কতকগুলি অশ্বস্তোমীয় মন্ত্র উক্ত হয়েছিল, এই অষ্টম অনুবাকে তেমনই আরও কতকগুলি উক্ত হয়েছে ]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- মা নো মিত্রো বরুণো অৰ্য্যমাহমুরিং ঋভুক্ষা মরুতঃ পরি খ্য। যদ্বাজিনো দেবজাতস্য সপ্তেঃ প্রবক্ষ্যামো বিদথে বীৰ্য্যাণি। যন্নিৰ্ণিজা রেণসা প্রাবৃতস্য রাতিং গৃভীতাং মুখতো নয়ন্তি। সুপ্রাঙুজো মেমবিশ্বরূপ ইন্দ্রপুষ্ণোঃ প্রিয়মপ্যেতি পাথঃ। এষ ছাগঃ পুরো অশ্বেন বাজিনো পূষ্ণো ভাগো নীয়তে বিশ্বদেব্যঃ। অভিপ্রিয়ং যৎপুরোডাশমৰ্বৰ্ত ত্বষ্টেৎ এনং সৌবসায় জিম্বতি। যুদ্ধবিষ্যমৃতুশশা দেবযানং ত্রিৰ্ম্মানুষাঃ পৰ্য্যশ্বং নয়ন্তি। অত্রা পূষ্ণঃ প্রথমো ভাগ এতি যজ্ঞং দেবেতভ্যঃ প্রতিবেদয়জঃ। হোতাহধর্য্যরাবয়া অগ্নিমিন্ধো গ্রাবগ্রাভ উত শংস্তা সুবিপ্রঃ। তেন যজ্ঞেন স্বরংকৃতেন স্বিষ্টেন বক্ষণা আ পৃণধ্বম্। যুপব্ৰস্কা উত যে যুপবাহালং যে অশ্বপায় তক্ষতি। যে চাৰ্বতে পচনং সম্ভরস্তুতো তেমভিগুৰ্ত্তিন ইতু।। উপ প্রাগাৎ সুমন্মেহধায়ি মন্ম দেবানামাশা উপ বীতপৃষ্ঠঃ। অন্বেনং বি ঋষয়ো মদন্তি দেবানাং পুষ্টে চকৃমা সুবন্ধু। যাজিনো দাম সানমতো যা শীর্ষণ্যা শনা রজুরস্য। যদ্বা ঘাস্য প্রভৃতমাস্যো তৃণং সৰ্বা তা তে অপি দেবে। যদশস্য বিষঃ মক্ষিকাহশ যদ্বা স্বরৌ সুধিতৌ রিপ্তমস্তি। যদ্ধওয়ো শমিতুর্যন্নখে সব্বা তা তে অপি দেবেম্ব। যদূৰধ্যমুদরস্যাপৰাতি য আমস্য বিষো গন্ধো অস্তি। সুকৃতা তচ্ছমিতারঃ কৃথত মেধং শৃতপাকং পচক্র। যত্তে গাত্রাদগ্নিনা পচ্যমানদভি শূলং নিহতস্যাবধাবতি। মা ততুমামা শ্ৰিষন্ন তৃণেষু দেবেভ্যস্তদুশভ্যো রাতমন্তু ॥৮॥

মর্মার্থ– এই যজ্ঞে অন্নসাধনের উদ্দেশে আমরা অশ্বের সামর্থ্য প্রকর্ষের সাথে কীর্তন করছি, তার জন্য মিত্রদেব, বরুণদেব, অর্যমা বা সূর্যদেব, ইন্দ্রদেব, প্রজাপতিদেব, মরুৎদেব আমাদের যেন নিন্দা না করেন, কারণ সেই অশ্ব দেবতাগণের নিমিত্ত উৎপন্ন। [পরবর্তী দশটি মন্ত্র অর্থাৎ যনির্নির্জা রেসা থেকে যত্তে গাত্ৰাদগ্নিনা পর্যন্ত ঋক্ শুক্লযজুর্বেদের ২৫শ অধ্যায়ের ২৫শ থেকে ৩৪শ মন্ত্রে ব্যাখ্যাত ] ৮

 [সায়ণাচার্য বলেন-অথ নবমেহবশিষ্টা অশ্বস্তোত্রমন্ত্ৰা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই নবম অনুবাকে অবশিষ্ট অশ্বস্তোমীয় মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে।

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- যে বাজিনং পরিপশ্যন্তি পকৃং য ঈমাহুঃ সুরভিনিৰ্হরেতি। যে চার্বতো মাংসভিক্ষামুপাসত উতো তেমভিগুৰ্ত্তিন ইন্বতু। যীক্ষণং মাংস্পচন্যা উখায়া যা পাত্রাণি যুষ্ণ আসেচনানি। উষ্মণ্যাহপিধানা চরণামকাঃ সুনাঃ পরি ভূষ্যম। নিক্রমণং নিষদনং বিবর্তনং যচ্চ পীশমৰ্বতঃ। যচ্চ পপৌ যচ্চ ঘাসিম জঘাস সব্বা তা তে অপি দেবেম্ব। মা ত্বাইগ্নিপময়িধুমগন্ধিৰ্ম্মোখা ভ্রাজ্যভি বিক্ত জখ্রিঃ। ইষ্টং বীতমভিগুৰ্তং বষট্‌কৃতং তং দেবাসঃ প্রতি গৃভণষ্য। যদশায় বাস উপণ্যধীবাসং যা হিরণ্যান্যশ্মৈ। সন্দানমন্তং পড়বীশং প্রিয়া দেবে যাময়ন্তি। যত্তে সাদে মহসা শুকৃতস্য পার্ফিয়া বা কশয়া বা তুতোদ। সুচেব তা হবিষো অধ্বরেষু সৰ্বা তা তে ব্ৰহ্মণা সূদয়ামি। চতুস্ত্রিংশদ্বাজিনো দেববন্ধোবীরশ্বস্য স্বধিতিঃ সমেতি। অচ্ছিদ্রা গাত্ৰা বয়ুনা কৃপোত পুরস্পরুরনুঘুষ্যা বি শস্ত। একঞ্জুরশ্বস্যা বিশস্তা দ্বা যারা ভবতন্তখণ্ডুঃ। যা তে গাত্ৰাণামৃতুথা কৃগামি তাতা পিণ্ডানাং প্র জুহোম্যগ্নেী। মা ত্বা তপৎ প্রিয় আত্মাহপিয়ং মা স্বধিতিশুনুব আ তিষ্ঠিপত্তে। মা তে গৃধ্রুরবিশস্তাতিহায় ছিদ্রা গাত্ৰাণ্যসিন্য মিথু কষ্ট। ন বা উবেতম্বিয়সে। ন রিষ্যসি দেবাং ইদেমি পথিভিঃ সুগেভিঃ। হরী তে যুঞ্জা পৃষতী অভূতামুপাস্থাদ্বাজী ধুরি রাসভস্য। সুগব্যং নো বাজী স্বশ্বিয়ং পুংসঃ পুত্ৰান্ উত বিশ্বাপূষং রয়িম্।। অনাগাস্তাং নো অদিতিঃ কৃপোতু ক্ষং নো অশ্বে বনতাং হবিষ্মন্ ॥৯৷৷

মর্মার্থ যিনি এই অশ্বের (অর্থাৎ অমাংসের) পাক (রন্ধন) সাদরে দর্শন করেছেন, যিনি এই পক্কমান অশ্বের (অর্থাৎ রন্ধিত অশ্বমাংসের) সৌরভ প্রাপ্ত হয়েছেন, অধিকন্তু অপর যাঁরা এই অশ্বমাংস প্রাপ্তির নিমিত্ত প্রার্থনা করেছেন, তাঁদের সকলের সংকল্প আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত হোক। [পরবর্তী দশটি মন্ত্র অর্থাৎ যন্নীক্ষণং মাংস্পচন্যা থেকে সুগব্যং নো বাজী পর্যন্ত ঋক্‌ শুক্লযজুর্বেদের ২৫শ অধ্যায়ের ৩৬শ থেকে ৪৫শ মন্ত্রে ব্যাখ্যাত] ॥৯॥ 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *