২.৩ দ্বিতীয় কাণ্ড। তৃতীয় প্রপাঠক

দ্বিতীয় কাণ্ড। তৃতীয় প্রপাঠক

প্রথম অনুবাক

মন্ত্র- আদিত্যেভ্যো ভূবদ্ব্যশ্চরুং নিৰ্ব্বপেস্তুতিকাম আদিত্যা বা এতং ভূত্যৈ প্রতি নুদন্তে যোহলং ভূত্যৈ সন্ ভূতিং ন পোত্যাদিতানের ভুবতঃ স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবৈন ভূতিং গময়ন্তি ভবত্যোবহদিত্যোভ্যো দারয়দ্বম্ভ্যশ্চরুং নিৰ্বপেপরুদ্ধো বাহপরুধ্যমাননা বাহদিতা বা অপরোদ্ধার আদিত্য অবগময়িতার আদিত্যানেব ধারয়দ্বতঃ স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবৈনং বিশি দাপ্রত্যনপরুধ্যো ভবত্যদিতেইনু মন্য স্বেতপরুধ্যমানোহস্য পদমা দদীতেয়ং বা অদিতিরিয়মেবাস্মৈ রাজ্যমনু মন্যতে সত্যাহশীরিত্যাহ সত্যমেবাহশিষং কুরুত ইহ মন ইত্যাহ প্রজা এবাস্মৈ সমনসঃ করোত্যুপ প্রেত মরুতঃ সুদানব এনা বিপতিনাহভ্যমুং রাজানমিত্যাহ মারুতী বৈ বিড়জ্যেষ্ঠো বিতির্বিশৈবৈনং রাষ্টেণ সমৰ্দ্ধয়তি যঃ পরস্তাদ গ্রাম্যবাদী সাত্তস্য গৃহীহীনা হরেছুক্লাংশ্চ কৃষ্ণাংশ্চ বি চিনুয়াদ্যে শুক্লাঃ সুস্তমাদিত্যং চরুং নিৰ্ব্বপেদাদিত্য বৈ দেবতয়া বিড়িশমেবাবা গচ্ছতি অবগহস্য বিডনবগতং রাষ্ট্র মিত্যাহুর্যে কৃষ্ণাঃ সস্তং বারুণং চরুং নিৰ্বপেদারুণং বৈ রাষ্টমুভে এব বিশং চ রাষ্ট্রং চাব গচ্ছতি যদি নাবগচ্ছেদিমমহমাদিত্যেভ্যো ভাগং নিৰ্ব্বামাহনুম্মামুষ্যৈ বিাহবগন্ত্যোরিথি নিৰ্বপেদাদিত্যা এবৈনং ভাগধেযং প্রেন্সন্তো বিশমব গময়ন্তি যদি নাবগচ্ছেদাশ্বত্থাময়ুখাৎ সপ্ত মধ্যমেয়ামুপ হন্যাদিদমহমাদিত্যান্থধামাহমুম্মাদমুষ্যৈ বিশোহবগন্ত্যে রিত্যাদিত্যা এবৈনং বদ্ধবীরা বিশমব গময়ন্তি যদি নাবগচ্ছেদেতয়েবাহদিত্যং চরুং নিৰ্বপেদিস্নেহপি ময়ুখাসং নহ্যেদনপরুধ্যমেবাব গচ্ছত্যাশ্বত্থা ভবন্তি মরুতাং বা এতদোজো যদশ্বখ ওজসৈব বিশমব গচ্ছতি সপ্ত ভবন্তি সপ্তগণা বৈ মরুতো গণশ এব বিশমব গচ্ছতি ॥১॥

মর্মার্থ- যিনি ঐশ্বর্য কামনা করেন, তিনি আদিত্যদেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ করবেন। বন্ধনদশাগ্রস্ত ব্যক্তি, বন্ধনমুক্তির নিমিত্ত বরুণদেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ করবেন। আদিত্যের নিমিত্ত শুক্ল (শ্বেতবর্ণের) ধান্যের দ্বারা গৃহীত চরু নির্বপণ করতে হয়। বরুণ দেবতার নিমিত্ত কৃষ্ণবর্ণের ধান্যের দ্বারা গৃহীত চরু নির্বপণ করতে হয়। বন্ধনোন্মুখ জনের পক্ষে (বদ্ধবীরা বিশমব গময়ন্তি যদি) ময়ূখ স্তোত্র পঠনীয় এবং বন্ধনপ্রাপ্ত হলে আদিত্যের উদ্দেশে চরু নির্বপণ কর্তব্য। এই অনুবাকে এই সম্পর্কেই বিশেষভাবে উক্ত হয়েছে ॥১॥

.

দ্বিতীয় অনুবাক

মন্ত্র- দেবা বৈ মৃত্যোরবিভয়ুস্তে প্রজাপতিমুপাধাবন্তেভ্য এতাং প্রাজাপত্যাং শতকৃষ্ণং নিরপত্তয়ৈবৈষমৃতমদধাদ্যো মৃত্যো ৰ্বিতীয়াত্তম্মা এতাং প্রাজাপত্যাং শতকৃষ্ণলং নিৰ্বপেৎ প্রজাপতিমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাম্মিন্নায়ুর্দধাতি সৰ্বমায়ুরেতি শতকৃষ্ণলা ভবতি শতায়ুঃ পুরুষঃ শতেন্দ্রিয় আয়ুয্যেবেন্দ্রিয়ে প্রতি তিষ্ঠতি।। ঘৃতে ভবত্যাযুর্বৈ মৃতমমৃতং হিরণ্যমায়ুশ্চৈবাম্মা অমৃতং চ সমীচী দধাতি চত্বারি চত্বারি কৃষ্ণন্যব দ্যতি চতুরবস্যাহপ্তা একধা ব্ৰহ্মণ উপ হরত্যেকধৈ যজমান আয়ুধাত্যবাদিতত্যা ন ব্যচোত তস্মৈ দেবাঃ প্রায়শ্চিত্তিমৈচ্ছন্তস্ম এতং সৌৰ্যাং চরুং নিরবপন্তেনৈস্মিন্ রুচন্দধুর্যো ব্ৰহ্মবর্ডসকামঃ স্যত্তস্ম এতং সৌং চরুং নিৰ্ব্বপেদমুমেবাহদিত্যং স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এস্মিন্ ব্ৰহ্মবéসং দধাতি ব্ৰহ্মবর্জস্যেব ভবদ্যুভয়তো রুকৌ ভবত উভয়ত এবাস্মি রুচং প্রজেপ্রযাজে কৃষ্ণলং জহোতি দিগভ্য এবাস্মৈ ব্ৰহ্মবৰ্চমব রুন্ধ আগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপেৎ সাবিত্রং দ্বাদশকপালং ভূম্যৈ চরুং যঃ কাময়েত হিরণ্যং বিন্দের হিরণ্যং মোপ নমেদিতি যদাগ্নেয়ো ভবত্যাগেরং বৈ হিরণ্যং যস্যৈ হিরণ্যং তেনেবৈদিন্দতে সাবিত্রো ভবতি সবিতৃপ্রসূত এবৈন্দিতে ভূম্যে চরুৰ্ভবত্যস্যামেবৈনন্দিত উপৈনং হিরণ্যং নমতি বি বা এষ ইন্দ্রিয়েণ বীর্যেণৰ্দ্ধতে যো হিরণ্যং বিন্দত এতাম এব নিৰ্ব্বপেদ্ধিরণ্যং বিত্ত্বানেন্দ্রিয়েণ বীর্যেণ বধ্যত এমেব নিৰ্ব্বপেদ্যসা হিরণ্যং নশ্যেদ্যদাগ্নেয়ো ভবত্যাগেয়ং বৈ হিরণ্যং যস্যে হিরণ্যং তেনেবৈদিতি সাবিত্রো ভবতি সবিতৃপ্রসূত এবৈনদ্বিতি ভূম্যে চর্ভবত্যস্যাং বা এতন্নশ্যতি যশ্যত্যস্যামেবৈদ্বিতীন্দ্রঃ ত্বঃ সোমমভীষহাহপিবৎ স বিম্বব্যাচ্ছৎ স ইন্দ্রিয়েণ সোমপীথেন ব্যাৰ্দ্ধত স যদূর্ধমুদবমীত্তে শ্যামাকা অভবনৎস প্রজাপতিমুপাধবত্ত এতং সোমেন্দ্রং শ্যামাকং চরু নিরবপত্তে নৈবাম্মিন্নিন্দ্রিয়ং সোমপীথমদধাদি বা এষ ইন্দ্রিয়েণ সোমপীথেনৰ্দ্ধতে যঃ সোমং যমিতি যঃ সোমরামী স্যাত্তস্মৈ এতং সসামেন্দ্রং শ্যামাকং চরুং নিৰ্বপেৎ সোমং চৈবেন্দ্রং চ স্কেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাম্মিল্লিয়িং সোমপীথং এত্তো ন্যেন্দ্রয়েণ সোমপীথেন বধ্যতে যৎ সোমম্যা ভবতি সোমপীথমেবার রুম্বে যদৈন্দ্রো ভবতীন্দ্রিয়ং ভবতীন্দ্রিয়ং বৈ সোমপীথ ইন্দ্রিয়মেব সোমপীথমব রুন্ধে শ্যামাকো ভবতোষ বাব স সোমঃ সাক্ষাদেব সোমপীথমব রুন্ধেহয়ে দাত্রে পুরোডাশমষ্টাকপালং বিৰ্বপে দিদ্রায় প্রদাত্রে পুরোডাশমেকাদশকপালং পশুকামোহগ্নিরেবাস্মৈ পশূন প্রজনয়তি বৃদ্ধানিঃ প্র যচ্ছতি দধি মধু ঘৃতমাপো ধানা ভবন্ত্যেতদ্বৈ পশূন রূপং রূপেণৈব পশূনব রুন্ধে পঞ্চ গৃহীতং ভবতি পিঙক্তা হি পশবো বহুরুপং ভবতি বহুরূপা হি পশবঃ সদ্ধ্যৈ প্রাজাপত্যং ভবতি প্রাজাপত্যা বৈ পশবঃ প্রজাপতিবেরাস্মৈ পশূন্ প্র জনয়্যাত্ম বৈ পুরুষস্য মধু যন্মধ্বগ্নেী জুহোত্যা আনমেব দ্যজমানোহগ্নৌ প্ৰ দধাতি পঙুক্তৌ যাজনুবাক্যে ভবনঃ পাঙুক্তঃ পুরুষঃ পাঙক্তাঃ পশব আত্মনমেব মৃত্যোনিষ্ক্রীয় পশূনব রুন্ধে ॥২॥

মর্মার্থ- [উপরোক্ত অনুবাকে বিষয় বক্তব্য দ্রষ্টব্য]। মৃত্যুভীত জনের পক্ষে শত বৎসরব্যাপী আয়ুলাভের নিমিত্ত শতকৃষ্ণলা যাগানুষ্ঠান কর্তব্য (যো মৃত্যুর্বিভীয়াত্তস্ম এতাৎ..শতকৃষ্ণলাং নিবপেৎ..)। যিনি ব্রহ্মবর্চ বা ব্রহ্মতেজঃ কামনা করেন, তিনি সূর্যের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করবেন। যিনি হিরণ্য কামনা করেন, তিনি অগ্নিদেবের উদ্দেশে তিনবার হবিঃ নির্বপণ করবেন। সোমপান কামনাকারী জন সোমদেব ও ইন্দ্রদেবরে উদ্দেশে শ্যামাক ধান্যের চরু নির্বপণ করবেন। পশুকামী জন পশু-প্রদাতা অগ্নিদেবের উদ্দেশে তিনবার হবিঃ নির্বপণ করবেন। হিরণ্যগর্ভ আপো হ যৎ ইত্যাদি মন্ত্রে এগুলির ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে। ২৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়েইনুবাকে যজ্ঞবিভ্রষ্টাদীনামিষ্টয়া বিধাতব্যাঃ। অর্থাৎ–এই অনুবাকে যজ্ঞবিভ্রষ্ট জনগণের পক্ষে যজ্ঞবিভ্রষ্ট-ইষ্টির বিধান প্রদত্ত হয়েছে ]

.

তৃতীয় অনুবাক

মন্ত্র- দেবা বৈ সমাসতর্ধিপরিমিতং যশস্কামান্তেষাং সোমং রাজানং যশ আচ্ছৎ স গিরিমুদৈত্তমগ্নিরনুদৈত্তাবগ্নাযোমৌ সমভবতাং বিদ্রো যজ্ঞবিষ্টোইনু পরৈত্তারব্ৰবীদ্যাজয়তং মেতি তস্মা এতামিষ্টং নৈববপতমাগ্নেয়মষ্টাকপালমৈন্দ্রমে কাদশকপালং সৌম্যং চরুম তয়ৈবাশ্মিন্তেজঃ ইন্দ্রিয়ং ব্রহ্মবৰ্চ্চমধত্তাং যো যজ্ঞবিভ্রষ্টঃ স্যাত্তম্মা এমিষ্টিং নিৰ্বপেদাগ্নেয়মষ্টাকপালমোমকাদশকপালং সৌম্যং চরুং যদাগ্নেয়ো ভবতি তেজ এবাম্মিন্তেন দধাতি যদৈন্দ্রো ভবতীন্দ্রিয়মেবাম্মিন্তেন দধাতি যৎ সৌম্যো ব্রহ্মবর্ডসং তেনাহগ্নেয়স্য চ সৌমস্য চৈন্দ্রে সমাশ্লেষয়েত্তেজশ্চৈবাস্মিন্ ব্ৰহ্মবৰ্চ্চ সং চ সমীচী দত্যানীষোমীয় মেকাদশকপাল নিৰ্বপেদ্যং কামো নোপনমোগ্নেষো বৈ ব্রাহ্মণঃ স সোমম পিবতি স্বামেব দেবতাং স্বেন ভাগধেয়েন্যেপ ধাবতি সৈয়ৈনম কামেন সমৰ্দ্ধয়ত্যুপৈনং কামো নমত্যগ্নীষোমীয়ষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপেদব্রহ্মবর্ডসকামোহল্পী যোমাবেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাম্মিন ব্রহ্মবৰ্চসং ধত্তো ব্রহ্মবéস্যে ভবতি যদষ্টাকপালস্তেনাহগ্নেয়ো যচ্ছয়ামাকস্তেন সৌমাঃ সমৃদ্যধ্যে। সোমায় বাজিনে শ্যামাকং চরুং নিৰ্ব্বপেদ্য ক্লৈব্যাদ্বিতীয়দ্রেতো হি বা এতস্মাদ্বা জিনমপক্রামত্যধৈষ ক্লৈব্যাদ্বিয় সামমেব বাজিনং স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাস্মিন্ রেতো বাজিনং দধাতি ন ক্লীবো ভবতি ব্রাহ্মণম্পত্যমেকাদশকপালং নিৰ্ব্বপেগ্রাম কামঃ ব্ৰহ্মণস্পতিমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবাম্মৈ সজাতা প্রায়চ্ছতি গ্রাম্যেব ভবতি গণবতী যাজ্যানুবাক্যে ভবতঃ সজাতৈরেবৈনং। গণবন্তং করোত্যমেব নিৰ্বপেদাঃ কাময়েত ব্ৰহ্মশিং বি নাশয়েয়মিতি মারুতী । যাজ্যানুবাক্যে কুৰ্য্যাদব্রহ্মন্নেব বিশ বি নাশয়তি ॥৩॥

মর্মার্থ- (একদা) দেবগণ যশপ্রাপ্তির নিমিত্ত সহস্ৰ সংখ্যক যজ্ঞ অনুষ্ঠিত করেছিলেন (সহস্রং সত্ৰাণি…তদন্বতিষ্ঠ)। তার ফলস্বরূপ দেবগণের মধ্যে সোমদেব যশ প্রাপ্ত হয়। অন্যে যশ প্রাপ্ত না হোক–এমন মনস্থ করে সোমদেব কোনও দুর্গম (কঞ্চিদুর্গং) পর্বতে আরোহণ করেন। অগ্নিদেবও সহসা তাঁর পশ্চাতে পশ্চাতে সেখানে আরোহণ করেন। তখন অগ্নিদেব ও সোম পরস্পর একমত (ঐকমত্যাং) হন। অতঃপর ফলরহিত ইন্দ্রদেব অনেক পরে সেখানে গমন করে যজ্ঞপলের অংশ প্রদান করতে বলেন (অবোচৎ)। তারা ইন্দ্রের নিমিত্ত তিনটি হবিষ্কাম যাগ নির্বপণ করেন। সেই তিনটি যাগের দ্বারা, অর্থাৎ অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল ও ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ এবং সোমদেবের উদ্দেশে চরুনির্বপণ পূর্বক তিনি পরাক্রম (তেজঃ), ইন্দ্রিয়শক্তি ও ব্রহ্মতেজ লাভ করেন। যে যজমান যজ্ঞবিভ্রষ্ট তিনি এইভাবে অগ্নির উদ্দেশে অষ্ট কপাল ও ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ এবং সোমের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করলে অগ্নি তাকে তার তেজ, ইন্দ্র তাঁকে তাঁর ইন্দ্রিয়শক্তি এবং সোম তাঁকে তাঁর ব্রহ্মতেজ দান করে থাকেন। অগ্নিদেবতার, সোমদেবতার ও ইন্দ্রদেবতার তেজের একীভবনে (সমাশ্লেষে) যজমানের মধ্যে তেজ (আজ্ঞা করার পক্ষে উপযুক্ত পরাক্রম), শক্তি (ইন্দ্রিয়ের সামর্থ্য) ও শ্রুতি-অধ্যয়ন (অর্থাৎ ব্রহ্মবৰ্চস বা বেদাদ্যয়নজনিত ব্রাহ্মণের তেজঃ)-রূপ সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে স্থাপিত হয়। কামনা পূর্তির নিমিত্ত অগ্নিদেব ও সোমদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ কর্তব্য। অগ্নিদেব মুখ হতে সহজাত হওয়ার কারণে (অগ্নিনা সহ মুখে জাতত্বাৎ) ও (মুখের দ্বারা) সোমপান করার কারণে–এই উভয়ই ব্রাহ্মণের দেবতা (তদুভয়ং ব্রাহ্মণস্য দেবতা)। যিনি তাঁদের ভাগধেয় সহ তাদের নিকটে গমন করেন, তারা তার কামনা পূর্ণ করে থাকেন। ব্রহ্মবৰ্চসকামী জন অগ্নিদেব ও সোমদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করবেন। অগ্নিদেব ও সোমদেবের ভাগধেয় সহ তাদের নিকট গমন করলে তাঁরা তাঁকে ব্রহ্মবর্চ প্রদান করেন; তিনি ব্রহ্মবৰ্চসী হন। কপালগত এই অষ্টসংখ্যক হবি অগ্নিদেবের এবং শ্যামাক ধান্যের পুরোডাশ সোমের নিমিত্ত নির্বপণ করলে তা সমৃদ্ধির কারণ হয়। ক্লীবত্ব (প্রজননে অসামর্থ্য) পরিহারের নিমিত্ত সোমদেবতার উদ্দেশে শ্যামাক ধান্যের চরু নির্বপণ কর্তব্য। যে জন ক্লীবত্ব হতে ভীত হয়ে প্রজনন-সমর্থ অন্নরসরূপ ভাগধেয় সহ সোমদেবের নিকট গমন করেন, তিনি সেই জনকে রেত-রূপ অন্নরস প্রদান করেন; সেই ব্যক্তি আর ক্লীব হন না। গ্রামকামী জন ব্ৰহ্মণস্পতি দেবতার উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করবেন। যিনি ব্ৰহ্মণস্পতি দেবতার উদ্দেশে তার ভাগধেয় সহ গমন করেন, তিনি তাকে সজাতবর্গ অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন প্রদান করেন; সেই জন গ্রামের অধিপতি হন। গন-গণের তুমি অধিপতি ইত্যাদি দুই ঋক-মন্ত্রের (ঋচোরস্তি) দ্বারা যাগানুষ্ঠান করলে তিনি তাঁকে (যাগকারীকে) গণবন্ত (গণের অধিপতি) করেন। কোন বৈশ্যজাতি যদি ধনের গর্বে কোনও ব্রাহ্মণকে অতিক্রম করে, তাহলে হে মরুৎ-গণ! আপনারা দুলোক হতে আমাদের আহ্বান শ্রবণ করুন ইত্যাদি (মরুতো যদ্ধবো দিবো যা বঃ শম্মেত্যেতে) দুই ঋক্‌-মন্ত্রে যাগানুষ্ঠান করলে ঐ বৈশ্যজাতিকে তার (অর্থাৎ ঐ ব্রাহ্মণের) অধীন করা যায় ॥৩॥

[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থে স্বৰ্গকামাদীনামিষ্টয়ো বিধাতব্যাঃ। অর্থাৎ–চতুর্থ অনুবাকে স্বৰ্গকামী ইত্যাদি জনের পক্ষে অনুষ্ঠেয় যজ্ঞ বর্ণিত হয়েছে]

.

চতুর্থ অনুবাক

মন্ত্র- অৰ্যমণে চরুং নিৰ্বপেং সবর্গকামোহসৌ বা আদিত্যোহৰ্যমাৰ্য্যমণমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনং সুবর্গং লোক গময়ত্যয্যমণে চরুং নিৰ্বপেদ্যঃ কাময়েত দানকামা মে প্রজাঃ স্মরিত্যসৌ বা আদিত্যোহৰ্য্যমা যঃ খলু বৈ দদাতি সোহমাহৰ্য্যমণমেব যেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এব অম্মৈ দানকামাঃ প্রজাঃ করোতি দানকামা অস্মৈ প্ৰজা ভবন্ত্যৰ্য্যমণে চরুং নিৰ্বপেদ্যঃ কাময়েত স্বস্তি জনতামিয়ামিত্যসৌ বা আদিত্যোহমাহমণমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈন তদময়তি যত্র জিগমিষতীন্দ্রো বৈ দেবামামানু জাবর আসীৎ স প্রজাপতি মুপধাবম্মা এতমৈন্দ্ৰমানুষুকামেকাদশকপালং নিঃ অবপত্তেনৈবৈনমগ্রং দেবতানাং পৰ্য্যণয়বুধবতী অগ্রবতী যাজ্যানুবাক্যে অকোদরীদেবৈনমগ্ৰং পৰ্য্যণয়দ্যো রাজন্য আনুজাবরঃ স্যাত্তস্ম এতমৈন্দ্ৰমানুষুকমেকাদশকপালং নিৰ্ব্বপেদিমে স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনমগ্ৰং সমানানা পরি নয়তি বুধবতী অগ্রবর্তী যাজ্যানুবাক্যে ভবতো বুদেবৈনসমগ্র পরিণয়ত্যানুষুকো ভবত্যে হোতস্য দেবতা য আনুজাবরঃ সদ্ধ্যৈ যো ব্রাহ্মণ আনুজাবরঃ স্যাত্তম্মা এতং বাম্পত্য মানুষুকং চরুং নিৰ্বপেদ বৃহস্পতিমেব স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনমগ্ৰং সামানানাং পরিণয়তি বুধবতী অগ্রবতী যাজ্যানুবাক্যে ভবতো বুধাদেবৈনমগ্ৰং পরিণয়ত্যানুষুকো ভবত্যেষা হেতস্য দেবতা য আনুজাবরঃ সমৃদ্ধ্যৈ ॥ ৪৷৷

মর্মার্থ- স্বর্গপ্রাপ্তির কামনাপূর্বক অর্যমা আদিত্যের উদ্দেশে চরু নির্বপণ কর্তব্য। যিনি অর্যমা আদিত্যদেবের নিকটে তার ভাগধেয় সহ গমন করেন, তিনি তাকে স্বর্গে প্রেরণ করেন। আমার প্রজা (সন্ততিবর্গ) দানকামী হোক–এমন ইচ্ছা পূর্বক অর্মদেবের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করলে তিনি সেই চরু-অর্পণকারীর সন্ততিবর্গকে দানকামী করে থাকেন। এই (পার্থিব) লোকে কেউ যদি কিছু দান করেন, তবে তিনি সূর্যবৎ কীর্তিশালী (অর্থাৎ দীপ্তিমান হন। এই নিমিত্ত অর্যমা আদিত্যের নিকট তার ভাগধেয় সহ গমন করলে তিনি (অর্থাৎ আদিত্যদেব) সেই গমনকারীর সন্ততিগণকে দান-গ্রহণের উপযুক্ত করে দেন। যিনি নির্বিঘ্নে (স্বস্তির সাথে) জনসমূহকে জয় করতে (সমান সমান জনগণের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করতে) কামনা করেন, তিনি আমার নিকট তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করলে, তিনি তাকে জনজয়ী করে দেন। (একদা) দেববর্গের মধ্যে ইন্দ্রদেব অত্যন্ত নিকৃষ্ট ছিলেন; তিনি প্রজাপতির উদ্দেশে একাদশ কপাল দ্বিফলরূপ ব্রীহির (দ্বিতীয়ফলরূপা ব্রীহয়োহনুযুকাঃ) হবি বুধ শব্দযুক্ত (বুধশব্দোহস্তি) ও অগ্র শব্দযুক্ত (অগ্রশব্দোহস্তি) দুই ঋক্‌ মন্ত্রে নির্বপণ করেছিলেন। এর ফলে প্রজাপতি তাঁকে (ইন্দ্রদেবকে) দেববর্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেন। যে রাজন্য অত্যন্ত নিকৃষ্ট হন, তিনি ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে ঐরকম যাগানুষ্ঠান করলে, ইন্দ্রদেব তাঁতে শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেন। যে ব্রাহ্মণ অত্যন্ত নিকৃষ্ট হন, তিনি বৃহস্পতি দেবতার উদ্দেশে ঐরকম ভাবে যাগানুষ্ঠানের মাধ্যমে চরু নির্বপণ করে তার ভাগধেয় সহ গমন করলে, ইন্দ্রদেব তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেন ॥৪॥

[পঞ্চম রাজ্যক্ষ্মগৃহীতস্যেষ্টিং বিধাতুং প্রস্তেীতি–অর্থাৎ–এই পঞ্চম অনুবাকে রাজ্যক্ষ্মাগ্রস্থ জনের পক্ষে অনুষ্ঠেয় ইষ্টির বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

পঞ্চম অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতয়েস্ত্রয়স্ত্রিংশদুহিতর আসন্তাঃ সোমা রাহেদদাত্তাসা রোহিণী মুপৈত্তা ঈর্ষন্তীঃ পুনরগচ্ছন্তা অন্বৈত্তাঃ পুনরচত তা অম্মৈ ন পুনরদদাৎ সাহব্রবীতমমী যথা সমাচ্ছ উপৈষামথৈ তে পুনৰ্দ্দাস্যামীতি স ঋতমামীত্তা অস্মৈ পুনরদদাত্তাসাং রোহিণীমেবোপৈত্তং যক্ষ্ম আচ্ছদ্রাজানং যক্ষ্ম আরদিতি তদ্ৰাজযক্ষ্মসা জন্ম যৎপাপীয়ানভবত্তৎ পাপযক্ষ্মস্য যজ্জায়াডভ্যাহবিন্দজ্জা য়েন্যস্য য এবমেতেষাং যক্ষ্মাণাং জন্ম বেদ নৈনমেতে যক্ষ্মা বিন্দন্তি স এতা এব নমস্যপাধবত্তা অব্ৰুবরং বৃণামহৈ সমাবচ্ছ এব ন উপায় ইতি তস্ম এতম আদিত্যং চরুম নিরবপন্তেবৈবৈনং পাপাৎ স্রামাদমুঞ্চনাঃ পাপযক্ষ্মগৃহীতঃ সত্ত্যাশ্ম এতমাদিত্যং চরুং নিৰ্ব্বাপেদাদিত্যানেব স্পেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবৈনং পাপাৎ স্রামান্মুঞ্চতি আমাবস্যায়াং নিৰ্ব্বপেদমুমে বৈনমাপ্যায়মানমন্ব প্যায়য়তি নবোনবো ভবতি জায়মান ইতি পুরোনুবাক্য ভবপআয়ুরেবাস্মিন্তয়া দধাতি যমাদিন্যা অংশুমাপ্যায়য়ন্ত্ৰীতি যাজ্যৈবৈনমেতয়া প্যায়য়তি ॥৫৷৷

মর্মার্থ- প্রজাপতির ত্রয়স্ত্রিংশৎ (তেত্রিশটি) দুহিতা ছিলেন। (অম্বা দুলা ইত্যাদি সপ্ত কৃত্তিকা। এবং অশ্বিনী, রোহিণী ইত্যাদি ষড়বিংশতি তারকা)। প্রজাপতি রাজা সোমের হস্তে তাদের সমর্পণ করেছিলেন। এই কন্যাগণের মধ্যে সোমদেব রোহিণীর প্রতিই অধিক অনুরাগ পোষণ করার কারণে অপর কন্যাগণ (অর্থাৎ রোহিণী ব্যতিরিক্তা অপর সোমপত্নীগণ) ঈর্ষাপরান্বিতা হয়ে পিতার নিকট আগমন করেন। সোম তাঁদের অনুগমন পূর্বক প্রজাপতির নিকট উপস্থিত হয়ে তাদের যাচ্ঞা করলেন। প্রজাপতি তাকে সকলের প্রতি সমান ব্যবহার করার জন্য শপথ করতে বলেন। সোম সেই শপথ স্বীকার করলে প্রজাপতি সেই কন্যাগণকে পুনর্দান করেন। কিন্তু সোম পূর্ববৎ তাদের প্রতি অবহেলা পূর্বক রোহিণীর প্রতি অধিক অনুরক্তি প্রকাশ করায়, কন্যাগণ পুনরায় পিতার নিকট গমন করেন। অতঃপর প্রজাপতির কোপে সোম যক্ষ্মাব্যাধিতে আক্রান্ত হন। প্রথম রাজা সোমকে আক্রমণ করার কারণে যক্ষ্মার নাম হয় রাজযক্ষ্মা; সোমরূপ পাপীকে আক্রমণ করার কারণে তার নাম হয় পাপযক্ষ্মা এবং জায়ার নিমিত্ত এই ব্যাধির উৎপত্তির কারণে জায়েন্য নামে–মোট তিন রকম নাম হয় (ত এতে এয়ো যক্ষ্মব্যাধেরবান্তরবিশেষাঃ)। যাঁরা যক্ষ্মারোগের এই জন্মকথা বিদিত হন, যক্ষ্মা তাদের নিকট হতে বিদূরিত হয়। সোম কর্তৃক উপভুক্ত (সেবিত) এই ব্যাধি পরিহারের নিমিত্ত সোমের উদ্দেশে যিনি চরু নির্বপণ করবেন, তিনি এই প্রবল রোগ হতে মুক্ত হবেন। যিনি পাপযক্ষ্মার দ্বারা গৃহীত (আক্রান্ত) হয়েছেন, তিনি আদিত্য দেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ করবেন। যিনি আদিত্য দেবতার নিকটে তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করেন, আদিত্য দেবতা তাঁকে এই প্রবল ব্যাধি হতে মুক্ত করেন। এই যাগ অমাবস্যায় অনুষ্ঠিতব্য। কারণ অমাবস্যার পর শুক্লা প্রতিপদ হতে চন্দ্রের কলা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ব্যাধির বৃদ্ধি ঘটে। জন্মানোমাত্রই নব নব হয়–ইত্যাদি ঋক্‌-মন্ত্রের শেষে (ঋচ্যন্তে) দীর্ঘ আয়ু প্রার্থনা করা হয়েছে, তা পাঠ করলে আয়ু-প্রাপ্তি হয় ॥৫৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–ষষ্ঠে তন্নাদনশক্তিকামস্যেষ্টিং বিধাতুং প্রস্তেীতি। অর্থাৎ–এই অনুবাকে অন্নভক্ষণকামীর পক্ষে অনুষ্ঠেয় যজ্ঞের কথা উক্ত হয়েছে।]

.

ষষ্ঠ অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতিৰ্দেবেড়ভাইন্নাদ্যং ব্যাদিশৎ সোহব্ৰবীদ্যাদিমাল্লোঁকানভ্যতিরিচ্যাতৈ তন্মমাসদিতি তদিমাল্লোঁকানভ্যত্যরিচ্যতেন্দ্রং রাজামিন্দ্রমধিরাজমিং স্বরাজানং তততা বৈ স ইমাল্লোঁকাংস্ত্রেধাইদুত্তত্রিধাতোস্ত্রিধাতুত্বং যং কাময়েতান্নাদঃ স্যাদিতি তম্মা এতং ত্রিধাতুং নিৰ্ব্বপেদিন্দ্রায় রাজ্ঞে পুরোশমেকাদশকপালমিায়াধি রাজায়েন্দ্রায় স্বরাজ্ঞেহয়ং বা ইন্দ্রো রাজাহয়মিন্দ্রোহধিরাজোহসাবিবি। স্বরাডিমানে লোকাম্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবাম্মা অন্নং প্র যচ্ছত্যন্নাদ এব ভবতি যথা বৎসেন প্রত্তাং গ্যাং দুহ এবমেবেমাল্লোঁকান্ প্রত্তান কামমন্নাদ্যং দুহ উত্তানেষু কপালেধি শ্ৰয়ত্যযাতয়ামত্বায় ত্রয়ঃ পুরোডাশা ভবন্তি এয় ইমে লোকা এষাং লোকানামাপ্ত্যা উত্তরউত্তরো জায়ান্ ভবত্যেবমিব হীমে লোকাঃ সমৃদ্ধ্যৈ সর্বেষামভিগময়ন্নব দ্যত্যচ্ছম্বারং ব্যত্যাসমন্বহানিৰ্দায় ॥৬॥

মর্মার্থ- (একদা) প্রজাপতি দেবগণের মধ্যে অন্ন বিভাগ করে দিয়ে বললেন–এই তিন লোকে বিভাজন পূর্বক যা অতিরিক্ত হবে, তা তাঁর ভাগধেয়। তিন লোকে বিভাজন করার পর অতিরিক্ত ছিল। এই তিন লোক বলা হয়েছে–ইন্দ্ররাজ ইত্যাদি শব্দে অভিধেয় লোক, অর্থাৎ ইন্দ্ররাজ, ইন্দ্রাধিরাজ ও ইন্দ্র স্বরাট, শব্দ সমন্বিত যে লোক, অর্থাৎ পৃথিবী অন্তরীক্ষ ও দুলোক। এই কথা বলে প্রজাপতি ইন্দ্ররাজ ইত্যাদি তিন লোক হতে দোহন করে তিন রকম সার গ্রহণ করলেন (ত্রিবিধং সারং গৃহীতবা)। এই সার প্রজাপতি আপন ভাগ বলে স্বীকার করলেন (স্বপ্রিয়ত্বেন….)। যে যাগে তিন লোক হতে তিন ভাগ সার গ্রহণ করা হয়েছে, তা ত্রিধাতু যাগ নামে অভিহিত। অধ্বর্য যে যজমানের উদ্দেশে কামনা করেন–এই যজমান অন্ন ভক্ষণকারী হোন, তার নিমিত্ত এই ত্ৰিধাতু যাগের অনুষ্ঠান করবেন (যং যজমানমুদ্দিশ্যধ্বর্যঃ কাময়েতায়ং যজমানোহন্নাদঃ স্যাদিতি তস্মৈ যজমানায়েয়মিষ্টিঃ)। রাজা ইন্দ্র এই ভূলোকের অধিপতি, অধিরাজ ইন্দ্র এই অন্তরিক্ষ লোকের অধিপতি এবং স্বরাট ইন্দ্র স্বর্গলোকের অধিপতি বলে অভিহিত। এই তিন লোকাধিপতির উদ্দেশে যে যজমান তাঁদের ভাগধেয়স্বরূপ একাদশ কপাল পুরোড়াশ সহ গমন করেন, তাঁরা সেই যজমানেকে অন্ন প্রদান করেন; তার ফলে সেই যজমান অন্নের ভক্ষক হন। এই জগতে যেমন বৎস কর্তৃক (গো-স্তন) চোষণের পর লোকে (জনো) গাভী দোহন করে, তেমনই দেবগণ কর্তৃক বর্ধনপ্রাপ্ত এই তিন লোকে আপন অভীষ্ট অন্ন লাভ করা যায় (স্বাভীষ্টমন্নাদ্যং লভতে)। উত্তানিত (অর্থাৎ চিৎ করে রক্ষিত) কপালে পুরোডাশ অর্পণ করতে হয়। তিন লোক প্রাপ্তির উদ্দেশে তিনটি পুরোডাশ হবে। এইগুলির উত্তরোত্তর শ্রেষ্ঠত্ব (জ্যায়া), যথা–ভূলোক অপেক্ষা অন্তরিক্ষ লোকের শ্রেষ্ঠত্ব, অন্তরিক্ষ লোক অপেক্ষা স্বর্গলোকের শ্রেষ্ঠত্ব; এই লোকসকল সমৃদ্ধির হেতু ভূত। একটিও পুরোডাশের যেন বৈয়র্থ (নিষ্ফলতা বা ব্যর্থতা না হয় (একস্যাপি পুরোডাশস্য বৈয়ং ন ভবতি) ॥৬॥

[সায়ণাচার্য বলেন–ইন্দ্রিয়সামর্থং শরীরসামর্থং চ কাময়ামানস্যেষ্টিং বিধাতু প্রস্তেীতি–। অর্থাৎ এই অনুবাকে ইন্দ্রিয়সামর্থ্য শারীরিক বলকামী জনের পক্ষে অনুষ্ঠিতব্য যজ্ঞের বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

সপ্তম অনুবাক

মন্ত্র- দেবাসুরাঃ সংযত্তা আসন্তান্দেবানসুরা- অজয়ন্তে দেবাঃ পরাজিগ্যানা অসুরাণাং বৈশ্যমুপাহযন্তেভ্য ইন্দ্রিয়ং বীৰ্য্যমপাক্রামত্তদিদ্রোহচায়ত্তাদদ্বপা ক্রামত্তদবরুধং নাশক্লোম্মাভৰ্ধোহচরৎ স প্রজাপতিমুপাষাবমেতয়া সর্বপৃষ্ঠায়াহযাজয়ত্তয়ৈবাম্মিমিক্রিয়ং বীৰ্য্যমদধাদ্য ইন্দ্রিয়কামঃ বীর্যকামঃ স্যাত্তমেতয়া সৰ্বপৃষ্ঠয়া যাজয়েদেতা এব দেবতাঃ স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধবিতি তা এবাম্মিন্নিন্দ্রিয়ম বীৰ্য্যং দধিত যদিন্দ্রায় রাথন্তরায় নির্বপতি যদেবাগ্নেস্তেজস্তদেবাব রুন্ধে যদিায় বাহতায় যদেবেন্দ্রস্য তেজস্তদেবাব রুন্ধে যদিায় বৈরূপায় যদেব সবিতুস্তেজৎ এবা রুন্ধে যদিন্দ্রায় বৈরাজায় যদেব ধাতু ভেজওদের রুন্ধে যদিন্দ্রায় শারায় যদের মরুতাং তেজস্তদেবাব রুন্ধে যদিন্দ্রায় রৈবতায় যদেব বৃহম্পতেজেন্তদেবাব রুন্ধে এতাবন্তি বৈ তেজাংসি তান্যেৰাব রুদ্ধ উত্তানেষু কপালেধি শ্ৰয়ত্যযা তয়ামত্বায় শ্বাদশকপালঃ পুরোশো ভবতি বৈশ্বদেবত্বায় সমস্তং পৰ্য্যবদ্যতি সমস্তমেবেয়িং বীৰ্য্যম যজমানে দধাতি ব্যত্যাসমৰাহানিৰ্দাহায়াশ্ব ঋষভো বৃষ্ণিঃ সা দক্ষিণা বৃষত্বায়ৈতয়ৈব যজ্ঞেতাভিশস্যামান এতাশ্চেদ্বা অস্য দেবতা অমদত্যদত্তাবেবাস্য মনুষ্যাঃ ॥৭॥

মর্মার্থ- (একদা) দেবতা ও অসুরগণের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাতে অসুরগণ দেবতাগণকে পরাজিত করে। পরাজয়প্রাপ্ত দেবগণ অসুরবর্গের অধীনস্থ হয়ে তাঁদের সেবকের ন্যায় কর্ম সম্পাদন করতে থাকেন। এর ফলে দেবতাগণের ইন্দ্রিয়সামথ্য এবং শরীরের সামর্থ্য উভয়ই অপগত হয়ে যায়। ইন্দ্রদেব তা বিদিত হয়ে সেই সামর্থ্য দুটি পুনপ্রাপ্তির নিমিত্ত চেষ্টা করেও তা পারলেন না। অবশেষে তিনি সামর্থ্যদ্বয়ের অর্ধাংশ প্রাপ্ত হলেন এবং অপর অর্ধাংশ প্রাপ্তির উদ্দেশে প্রজাপতির নিকট গমন পূর্বক সর্বপৃষ্ঠ যুগানুষ্ঠান করেন। এতে তিনি সামর্থদ্বয়ের সম্পূর্ণাংশ প্রাপ্ত হন। (সর্বপৃষ্ঠ যাগের পরিচয়, যথা–রথান্তর, বৃহৎ, বৈরূপ, বৈরাজ, শাকর ও রৈবত নামক সর্ব পৃষ্ঠস্তোত্র; এই সর্ব পৃষ্ঠস্তোত্রযুক্ত ইন্দ্র এখানকার দেবতা (ত্যৈক্ত ইন্দ্ৰহত্র দেবতা)। এই কারণে এই যাগ সর্বপৃষ্ঠা নামে অভিহিত। এতে স্তোত্রপাঠ প্রযুক্ত হয় না (না স্তোত্রপাঠঃ প্রয়োক্তব্যঃ), কিন্তু দেবতার বিশেষণরূপে স্তোত্রাভিজ্ঞত্বং কথাটির উল্লেখ রয়েছে। যিনি ইন্দ্রিয়সামর্থ্য ও বীর্যসামর্থ্য কামনা করেন, তিনি এই সর্বপৃষ্ঠের দ্বারা যাগ করবেন। এই দেবগণের নিকট তাদের ভাগধেয় সহ গমন করলে তারা তাঁকে এইরকম ইন্দ্রিয় ও বীর্য প্রদান করেন। রাথন্তরায় অর্থাৎ রথান্তর সামে অভিজ্ঞ ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে, অগ্নির যেমন তেজঃ সেইরকম তেজঃ লাভ করা যায় (যাদেবাগ্নেস্তেজস্তদেবাব রুন্ধে)। বার্তায় অর্থাৎ বৃহৎসামে অভিজ্ঞ ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে দেবেন্দ্রের যেমন তেজঃ সেইরকম তেজঃ লাভ করা যায়। বৈরূপায় অর্থাৎ বৈরূপ সামে অভিজ্ঞ ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে সবিতাদেবের যেমন তেজঃ সেইরকম তেজঃ লাভ করা যায়। বৈরাজায় অর্থাৎ বৈরাজ সামে অভিজ্ঞ ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে ধাতার (অর্থাৎ আদিত্যবিশেষের) যেমন তেজঃ সেইরকম তেজঃ লাভ করা যায়, শারায় অর্থাৎ শাকর সামে অভিজ্ঞ ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে মরুৎ-দেবগণের যেমন তেজঃ সেইরকম তেজঃ লাভ করা যায়। রৈবতায় অর্থাৎ রৈবত সামে অভিজ্ঞ ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠান করলে বৃহস্পতিদেবতার যেমন তেজঃ সেইরকম তেজঃ লাভ করা যায়। সর্বপৃষ্ঠ যাগকারী এই সবগুলির তেজই লাভ করেন। উত্তানিত (অর্থাৎ চিৎ করে বা উপর দিকে মুখ করে স্থাপিত) কপালে পুরোভাশ অর্পণ করতে হয়। বৈশ্বাদেবের উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ কর্তব্য। সর্বদিক হতে ইন্দ্রিয় ও বীর্য (সামর্থ্য) যজমানে ধৃত (ধারণকৃত) হয়। অশ্ব, বৃষ, অবি (পুরুষ মেষ) অজ (পুরুষ ছাগ) দক্ষিণা প্রদান করতে হয়। রাথন্তর ইত্যাদি সম্বন্ধি ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ যে যে পুরোডাশরূপ অন্ন গ্রহণ করেন, মনুষ্যগণও সেইরকম ভক্ষণ করে থাকেন। মিথ্যাপবাদযুক্ত হওয়ায় ব্যবহার সম্পর্কে সন্দেহ হলে যেমন শিষ্টাচারসম্পন্ন জনের নির্ণয় কথিত হয়, সেইরকমে দেবগণের আচরণও শিক্ষার যোগ্য বা নিয়ামক হয় ॥৭॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমে চক্ষুষ্কামস্য ত্রিহবিষ্কামিষ্টিং বিধাতুং প্রস্তেীতি–। অর্থাৎ–চক্ষুরোগ নিরাময়কামী ব্যক্তির পক্ষে অনুষ্ঠেয় ত্রিহবিষ্ক যাগের কথা উক্ত হয়েছে]

.

অষ্টম অনুবাক

মন্ত্র- রজনন বৈ কৌণেয়ঃ তুজিতং জানকিং চক্ষুন্যময়াত্ত এমিষ্টিং নিরবপদগ্নয়ে ভ্রাজস্বতে পুরোডাশমষ্টাকপালং সৌৰ্য্যম চরুমগ্নয়ে ভ্রাজস্বতে পুরোডাশমষ্টাকপালং তয়ৈস্মিঞ্চক্ষুরদ্ধদ্যশ্চক্ষুষ্কামঃ স্যাত্ত এমিষ্টিং নিৰ্ব্বপেদয়ে ভাজতে পুরোডাশমষ্টাকপালং সৌৰ্য্যং চরুমগ্নয়ে ভ্রাজস্বতে পুরোডাশমষ্টকপালমগ্নেব্বৈ চক্ষু মনুষ্যা বিপশ্যন্তি সূৰ্য্যস্য দেবা অগ্নিং চৈ সূৰ্য্যং চ স্বেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি তাবেবাম্মিঞ্চক্ষুধৰ্তশ্চক্ষুম্মানের। ভবতি যদাগ্নেয়ৌ ভবতশ্চক্ষুষী এবাম্মিৎ প্রতি দধাতি যৎ সৌৰ্য্যো নাসিকাং তেনাভিতঃ শৌর্য মাগ্নেয়ৌ ভবতস্তস্মাদভিতো নাসিকাং চক্ষুষী তস্মান্নাসিকয়া চক্ষুসী বিধতে সামনী যাজ্যানুবাক্যে ভবতঃ সম্যনং হি। ক্ষুঃ সমৃদ্ধ্যা উদু ত্যাং জাতবেদসং সপ্ত ত্বা হরিততা রথে চিত্রং দেবানামুদগা দনীকমিতি পিণ্ডা প্র যচ্ছতি চক্ষুরেবাস্বৈ প্র যচ্ছতি যদেব তস্য তৎ ॥৮

মর্মার্থ- রজন নামক কোন পুরুষ তুজিৎ নামক এক পুরুষের নিকট গমন করেছিল। রজন ছিলেন কুণির পুত্র (কুণেরপত্যং) এবং ক্রতুজিৎ ছিলেন জনকের পুত্র (ক্রতুজিজ্জনকস্যাপত্যং)। তুজিৎ চক্ষুরোগ নিরাময় করতে পারত। এই নিমিত্ত রজন চক্ষুর দৃষ্টিশক্তির আরোগ্য কামনায় (দৃষ্টিপাটবায়) তুজিতের নিকটে গমনপূর্বক ত্রিহবিষ্ক যাগানুষ্ঠানের দ্বারা দৃষ্টিশক্তির দক্ষতা প্রাপ্ত হয়েছিল (তৎপাটবং প্রাপ্তবা)। যে জন চক্ষুর আরোগ্য কামনা করেন, তিনি এই যুগানুষ্ঠান করবেন। দীপ্তিশালী (ভ্রাজস্বতে) অগ্নিদেবের উদ্দেশে দুটি করে অষ্টাদশ কপাল পুরোডাশ এবং সূর্যের উদ্দেশে চরু নির্বপণ কর্তব্য। মনুষ্যগণ অগ্নির চক্ষে দর্শন করে, এবং দেবগণ দর্শন করেন সূর্যের চক্ষে। উন্মেষ ও নিমেষযুক্ত মনুষ্যের দৃষ্টি অনিত্য (উন্মেষনিমেষসম্ভাবান্মনুষ্যদৃষ্টিবনিত্যা), এবং অগ্নি কখনও জ্বলেন কখনও উপশমপ্রাপ্ত হন (উপশাভ্যতি, নিভে যান), এই কারণে মনুষ্যের দৃষ্টির সাথে অগ্নির সম্বন্ধ। দেবগণের চক্ষু অনিমেষ হওয়ায় তা সূর্যপ্রকাশের ন্যায় নিত্য, এই কারণে দেবগণের দৃষ্টির সাথে সূর্যের সম্বন্ধ। অগ্নিদেব ও সূর্যদেবের নিকট যিনি তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করেন, তারা উভয়ে তাতে চক্ষু স্থাপন করেন এবং তিনি চক্ষুম্মান হয় (চক্ষুম্মানের ভবতি)। অগ্নির প্রতিষ্ঠা যজমানের দুটি চক্ষে, সূর্যের প্রতিষ্ঠা নাসিকায়। নাসিকার দ্বারা চক্ষুদ্বয় বিধৃত; দুই চক্ষের মধ্যবর্তী নাসিকা, যাতে, চক্ষুদ্বয়ের পরস্পরের মিশ্রণ না হয়। সমান চক্ষু সমৃদ্ধির হেতুভূত। এই স্থলে উদুত্যং জাতবেদসং-ইত্যদি তিন মন্ত্র পঠিতব্য। প্রথম কাণ্ডের চতুর্থ প্রপাঠকে এগুলি ব্যাখ্যাত হয়েছে। (প্রথম কাণ্ডস্য চতুর্থ প্রপাঠকে ব্যাখ্যাত)। এর ফলে যজমানের রোগ-উৎপত্তির পূর্বে যেমন চক্ষুর দক্ষতা, ছিল, পিণ্ডদানের দ্বারা তেমনই হয় ॥৮॥

[সায়ণাচার্য বলেন–নবমে সাংগ্ৰহণীষ্টিং…। অর্থাৎ এই অনুবাকে সাংগ্ৰহণী ইষ্টির বিষয় কথিত হয়েছে।]

.

নবম অনুবাক

মন্ত্র- ধ্রুবোহসি ধ্রুবোহহং সজাতে ভুয়াসং ধীরশ্চেত্তা বসুবিদ ধ্ৰুবোহসি ধ্রুবোহহং সজাতেষু ভূয়াসমুশ্চেত্তা বসুবিদ ধ্ৰুবোহসি ধ্ৰুবোহহং সজাতে ভূয়াসমভিভূত্তো বসুবিদামনমস্যামনস্য দেবা যে সজাতাঃ কুমারাঃ সমন সস্তানহং কাময়ে হৃদা তে মা কাময়ঙাং হৃদা তান্ম আমনসঃ কৃধি স্বাহাইয নমস্যামনস্য দেবা যাঃ স্ত্রিয়ঃ সমনসস্তা অহং কাময়ে হৃদা তা মাং কাময়াং হৃদা তা ম আমনসঃ কৃধি স্বাহা বৈশ্বদেবীং সাংগ্ৰহণীং নিৰ্বপেদ গ্রামকামো বৈশ্বদেবা বৈ সজাতা বিশ্বানেব দেবাস্তষেন ভাগধেয়েনোপ ধাবতি ত এবাস্মৈ সজাতা প্র যচ্ছন্তি গ্রাম্যেব ভবতি সাংগ্ৰহণী ভদতি মনোগ্ৰহণং বৈ সংগ্ৰহণং মন এব সজাতানাম গৃহ্নাতি ধ্ৰুবোহসি ধ্ৰুবোহহম সজাতে ভূয়াসমিতি পরিধী পরিদধাত্যাশিষমেবৈতামা শাস্তেহথো এতদেব সৰ্ব্বং সজাতেধি ভবতি যস্যৈবং বিদুষ এতে পরিধয়ঃ পরিধীয়ন্ত আমনমস্যামনস্য দেবা ইতি তিস্র আহুতীৰ্জ্জুহোত্যেতাবন্তো বৈ সজাতা যে মহান্তো যে ক্ষুল্লকা ঘাঃ স্ত্রিয়স্তানেবাব রুন্ধে ত এনমবদ্ধা উপ তিষ্ঠন্তে ॥৯॥

মর্মার্থ- হে মধ্যম পরিধি (পারিধে)! তুমি স্থির (হও) (স্তিয়োহসি), তোমার স্থাপনে আমিও জ্ঞাতিগণের মধ্যে স্থির হবো। তুমি ধীর, অভিজ্ঞ ও ধনবান; আমিও ধীর, অভিজ্ঞ ও ধনবান হবে। তুমি উগ্র, ধীর, অভিজ্ঞ ও ধনবান; আমিও উগ্র, ধীর, অভিজ্ঞ ও ধনবান হবো। জ্ঞাতিবর্গের মধ্যে প্রতিবাদী ও আজ্ঞালঙ্ঘনকারীগণকে আমি উগ্রত্বের দ্বারা তিরস্কৃত করব। হে হুয়মান আজ্য! তুমি তেমনই হও। হে দেবগণ! জ্ঞাতিগণের মধ্যে যারা আমার অনুকুল, সেই স্ত্রী ও পুরুষগণেকে আমি কামনা করি, তারাও আমাকে কামনা করুক, তাদের মন আমার প্রতি অনুকূল (কামনান্বিত) করে দিন; স্বাহা মন্ত্রে এই আজ্যে আহুতি প্রদান করছি (ইদমাজ্যং স্বাহুত। কুমার-মন্ত্ৰস্ত্রীমন্ত্রো ব্যাখ্যায়ৌ-পরস্পর ঐকমত্যের দ্বারা মনে মনে সম্যক স্বীকারকে সংগ্রহ বলে; এই সংগ্রহ যে ইষ্টিতে (যজ্ঞে) আছে, সেই ইষ্টিকে সাংগ্ৰহণী বলা হয় (তদ্যস্যামিষ্টাবস্তি সা সাংগ্ৰহণী)। গ্রামের অধিপতি হবার কামনায় বৈশ্যদেবের উদ্দেশে সাংগ্ৰহণী যাগানুষ্ঠান কর্তব্য। বৈশ্যদেব হলেন সজাতা অর্থাৎ সর্বদেবতার সজাতীয়; সকল দেবতার নিকট তাদের ভাগধেয় সহ গমন করলে, তারা যজমানকে সজাতীয় মনঃসম্পন্ন জনগণকে প্রদান করেন; ফলে সেই যজমান গ্রামের আধিপত্য লাভ করেন। জ্ঞাতিগণের মনকে আপন অধীনতায় গ্রহণ করাকে সংগ্রহণ বলা হয়; যে যাগের দ্বারা এই সংগ্রহণ কর্ম সাধিত হয়, তা সাংগ্ৰহণী। তুমি স্থির, জ্ঞাতিদের মধ্যে আমিও স্থির হবো ইত্যাদি মন্ত্রের মধ্যে আশা জ্ঞাপন করা হয়েছে। এইটি বিদিত হয়ে তিনটি মন্ত্রে প্রার্থনা জ্ঞাপন করলে সর্বাধিক ফল হয় (সর্বমধিকং সম্পদ্যতে)। আপন বংশে (স্বকুলে), আপন. জ্ঞাতিগণের মধ্যে (স্বজাতি মধ্যে) ও আপন গ্রামে (স্বগ্রামে) যাঁরা মহান (মহান্তঃ) পুরুষ, যাঁরা প্রৌঢ়, যারা ক্ষুদ্র বালিকা (ক্ষুল্লকা বালা), যাঁরা পত্নী ভগ্নী ও মাতৃস্থানীয়া, তাঁরা সজাতি। এই ইষ্টির দ্বারা তাদের আপন অধীন করা হয়। তারা অধীন হয়ে (যজমানকে) সেবা করে থাকেন ॥৯॥

[সায়ণাচার্য বলেন–অথ….আয়ুষ্কামেষ্টিং..। বক্তব্য এই যে, পরবর্তী অনুবাকে যে আয়ুষ্কাম যজ্ঞের কথা বলা হয়েছে, এই অনুবাকে তার মন্ত্রগুলি উক্ত হচ্ছে।]

.

দশম অনুবাক

মন্ত্র- যন্নবমৈত্তন্নবনীতমভব যদসপৎসর্পিরভবদ যদপ্ৰিয়ত তদতমভবদখিনোঃ প্রাণোহসি তস্য তে দত্তাং যয়োঃ প্রাণোহসি স্বাহেন্দ্রস্য প্রাণোহসি তস্য তে দদাতু যস্য প্রাণোহসি স্বাহা মিত্রাবরুণয়োঃ প্রাণোহসি তস্য তে দত্তাং যয়োঃ প্রাণোহসি স্বাহা বিশ্বেষাং দেবানাং প্রাণোহসি তস্য তে দদাতু যেষাং প্রাণোহসি স্বাহা ঘৃতস্য ধারামমৃতস্য পন্থামিণে দত্তাং প্রযতাং মরুদ্ভিঃ। তত্ত্বা বিষ্ণুঃ পৰ্য্যপশ্যত্তত্ত্বেড়া গব্যৈয়ৎ। পাবমানেন ত্বা স্তোমেন গায়ত্রস্য বৰ্ত্তন্যোপাং শোৰীৰ্য্যেণ দেবস্তুা সবিতোস জতু জীবাতবে জীবনস্যায়ৈ বৃহদ্রখস্তরয়োস্তাব স্তোমেন ত্রিষ্ঠুভো বন্যা শুক্ৰস্য বীর্যেণ দেবস্তা সবিতোৎ সৃজতু জীবাতবে জীবনস্যায় অগ্নেস্ত্রা মাত্রায় জগত্যৈ বৰ্ত্তনাহগ্রয়ণস্য বীর্যেণ দেবস্থা সবিতোৎসৃজতু। জীবাতবে জীবনস্যায় ইমমগ্ন আয়ুষে বৰ্চ্চষে কৃধি প্রিয়ং রেতো বরুণ সোম রাজ। মাতেবাশ্ম অদিতে শৰ্ম্ম যচ্ছ বিশ্বে দেবা জরদষ্টিযথাহসৎ। অগ্নিরায়ুম্মাস বনস্পতিভিরায়ুম্মানে ত্বাইয়ুষাইয়ুষ্মন্তং করোমি সোম আয়ুষ্মৎস ওষধীভিজ্ঞ আয়ুস্মাৎস দক্ষিণাভিব্রহ্মইয়ুম্মত্তদব্রাহ্মণে রায়ুষ্মবো আয়ুষ্মন্তম্ভেমৃতেন পিতর আয়ুষ্মন্তস্তে স্বধয়াইয়ুষ্মন্তন্তেন ত্বাইয়ুষাইয়ুষ্মন্তং করোমি ॥১০৷৷

 মর্মার্থ- যা দধি হতে নব নব রূপ প্রাপ্ত হয়ে সারপিণ্ড হয়, তার নাম নবণীত; যে নবণীত অগ্নির সংস্পর্শে বিগলিত হয়ে, তার নাম সর্পি; এবং যে সর্পি শীতল পাত্রে রক্ষা করলে পুনরায় ঘণীভূত হয়ে যায়, তার নাম ঘৃত। হে যজমান! তুমি অশ্বিযুগলের প্রাণবৎ প্রিয় (হও), এই নিমিত্ত তারা তাদের প্রিয় তোমাকে প্রাণ দান করেছেন (প্রাণং দত্তা), সেই অশ্বিনীদ্বয়ের উদ্দেশে এই আজ্যাতি প্রদান করা হোক। তুমি ইন্দ্রদেবের প্রাণবৎ প্রিয়, এই কারণে ইন্দ্রদেব তার প্রিয় তোমাকে আয়ু প্রদান করছেন, তার উদ্দেশে এই আজ্যাহতি প্রদান করা হচ্ছে। তুমি মিত্রদেব ও বরুণদেবের প্রাণবৎ প্রিয়, সেই নিমিত্ত তারা উভয়ে তাদের প্রিয় তোমাকে প্রাণ প্রদান করেছেন; তাদের উদ্দেশে এই আজাহুতি প্রদান করা হয়েছে। সর্ব দেবতার তুমি প্রাণবৎ প্রিয়, এই নিমিত্ত তারা সকলে তাদের প্রিয় তোমাকে আয়ু প্রদান করুন; তাদের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রের দ্বারা এই আজাহুতি প্রদান করা হচ্ছে। ঘৃতের ধারা অবেক্ষণ (দর্শন) করো। কিরকম ধারা? যা অমৃতের পথ–অর্থাৎ কর্মফলের সাধনরূপ মার্গভূত ইন্দ্রের দ্বারা বৃষ্টি তৃণোৎপত্তি ইত্যাদি পরম্পরাগতভাবে সম্পাদিত এবং মরুত্বর্গরূপ বৈশাধিপগণের দ্বারা সযত্নে ধৃত। হে ধৃত! সেইরকম তোমাকে বিষ্ণুসদৃশ যজমান পরিদর্শন করছেন (পরিপশ্যতি)। পশু-অভিমানিনী দেবতা ইড়া সেইরকম তোমাকে গো-গণে স্থাপন করেছেন। হে যজমান! পবমান ত্রিবৃৎ ইত্যাদি স্তোত্রসমূহের দ্বারা, গায়ত্রী ছন্দ্রের যে পথ (গায়ত্ৰচ্ছন্দসসা যো মার্গস্তন), (সেই পথে) সোম আহরণরূপ যজ্ঞাঙ্গ সম্পাদন করে এবং উপাংশু-গ্রহ-হোমসাধ্য সামর্থ্যের দ্বারা (বীর্যের্ণ) সবিতা দেব আপনাকে দীর্ঘরোগ হতে মুক্ত করে দীর্ঘ জীবন দান করুন। বৃহৎ রথান্তর স্তোমের দ্বারা, ত্রিষ্টুপছন্দের পথে যজ্ঞ সম্পাদন করে এবং শুক্রের সামর্থ্যের দ্বারা তোমাকে দীর্ঘরোগ হতে মুক্ত করে সবিতা দেব আপনাকে দীর্ঘজীবন দান করুন। অগ্নিদেবতার গীতির দ্বারা, জগতীছন্দের পথে যজ্ঞ সম্পাদিত করে এবং অগ্রয়ণের সামর্থ্যের দ্বারা সবিতা দেব আপনাকে দীর্ঘরোগ হতে মুক্ত করে দীর্ঘজীবন দান করুন। হে অগ্নিদেব! এই যজমানকে দীর্ঘ আয়ু ও সামর্থ্য দান করুন (দীর্ঘায়ুষে বলায় চ কৃষি সমর্থং কুরু)। হে বরুণদেব! হে রাজন্য সোমদেব! এই যজমানের পুত্র-উৎপাদন সম্পাদন করুন। হে পৃথিবী (অদিতে)! আপনি মাতৃবৎ এঁকে (অর্থাৎ এই যজমানকে) সুখ প্রদান করুন। হে বিশ্বদেবগণ (অর্থ সকল দেবতা)! এই যজমান যাতে জরাগ্রস্ত কাল পর্যন্ত আয়ু লাভ করতে পারেন, তেমন করুন। কাষ্ঠের (ইন্ধনের) প্রক্ষেপণে যেমন অগ্নি আয়ুস্মান হয়, সেইরকম বর্ধমান অগ্নির আয়ুর দ্বারা আপনাকে আয়ুষ্মন্ত করছি। এইরকম ওষধির দ্বারা যেমন সোমরস বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, দক্ষিণার দ্বারা বশীকৃত ঋত্বিকগণের দ্বারা যেমন যজ্ঞ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, ব্রাহ্মণ অধ্যাপকের দ্বারা বেদ অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় (বেদশ্চ ব্রাহ্মণেষধ্যাপকে অবিচ্ছেদেন বর্ধতে); হবিঃ-রূপ অমৃতের দ্বারা যেমন দেবগণ জীবন লাভ করেন এবং স্বাধাকার পূর্বক পিণ্ড ইত্যাদির দ্বারা যেমন পিতৃগণ জীবন লাভ করেন (জীবন্তি), তেমনই তাদের আয়ুর দ্বারা আপনাকে আয়ুষ্মন্ত করছি৷৷ ১০৷

[এই অনুবাকে আয়ুঃকামী জনের পক্ষে অনুষ্ঠেয় আয়ুষ্কাম-যজের বিধান কথিত হচ্ছে। মন্ত্রগুলি পূর্ববর্তী অনুবাকে উক্ত হয়েছে]

.

একাদশ অনুবাক

মন্ত্র- অগ্নিং বা এতস্য শরীরং গচ্ছতি সোমং রসো বরুণ এনং বরুণ পাশেন গৃহুতি সরস্বতীং বাগগ্নাবিষ্ণু আত্মা যস্য জ্যোগাময়তি যো জ্যোগাময়াবী স্যাদ্যো কাময়েত সৰ্বমায়ুবিয়ামিতি তম্মা এমিষ্টিং নিপেদাগ্নেয়মষ্টাকপালং সৌম্যং চরুং বারুণ দশকপালং সারস্বতং চরুমাগ্নাবৈষ্ণবমেকাদশকপালময়েরোবাস্য শরীরং নিষ্ক্রীণতি সোমাদ্রস বারুণেনৈবৈনং বরুণপাশামুঞ্চতি সারস্বতেন বাচং দধাত্যগ্নিঃ সৰ্ব্বা দেবতা বিষ্ণুৰ্যজ্ঞো দেবতাভিশ্চৈবৈনং যজ্ঞেন চ ভিষজ্যত্যুত যদীতাসুর্ভবতি জীবত্যেব ষন্নবমৈত্তন্নবনীতমভদিত্যাজ্যমক্ষেতে রূপমেবাস্যৈতম্মহিমানং ব্যাচষ্টেহশ্বিনোঃ প্রাণোহরীত্যাহাশ্বিনৌ বৈ দেবানাং ভিষজৌ ত্যভ্যামেবাস্মৈ ভেষজং করোতীন্দ্রস্য প্রাণোহসীত্যাহেন্দ্রিয়মেবা স্মিম্নেতেন দধাতি মিত্রাবরুণয়োঃ প্রাণোহসীত্যাহ প্রাণাপানাবেবাস্মিম্নেতেন দধাতি বিশ্বেষাং দেবানাং প্রাণোহলীত্যাহ বীৰ্য্যমেবাশ্মিন্নেতেন দধাতি ঘৃতস্য ধারামমৃতস্য পন্থমিত্যাহ যথাযজুরেবৈতৎ পাবমানেন বা স্তোমেনেত্যাহ প্রাণমেবাস্মিম্নেতেন দধাতি বৃহদ্রথন্তরযোস্ত্রা স্তোমেনেত্যাহৌজ এবাস্মিম্নেতেন দধাত্যগ্নেত্ত্বা মায়েত্যাহাহনামবাস্মিন্নেতেন দধাতৃত্বিজঃ পৰ্যাহুর্যাস্ত এবৰ্বিজন্ত এনং ভিষজ্যন্তি ব্ৰহ্মণো হস্তমম্বারভ্য পৰ্যাহুরেকধৈব যজমান আয়ুৰ্দধাতি যদে তস্য তদ্ধিরণ্যাৎ ঘৃতং নিবিত্যায়ুৰ্ব্বৈ ধৃতমমৃতং হিরণ্য মমৃতাদেবায়ুর্নিপিবতি শতমানং ভবতি শতায়ুঃ পুরুষঃ শতেন্দ্রিয় আয়ুষ্যে বেন্দ্রিয়ে প্রতিষ্ঠিত্যথো খলু যাতীঃ সমা এষ্যম্মন্যেত বন্মানং স্যাসমৃদ্ধ্যা ইমমগ্ন আয়ুষে বর্ডসে কৃধীতাহাইয়ুরেবান্বিচ্চো দধাতি বিশ্বে দেবা জরদষ্টিযথাহসদিত্যাহ জরদষ্টিমৌবনং করোত্যগ্নিরাযুনিতি হস্তং গৃত্যেতে বৈ দেবা আয়ুষ্মন্তস্ত এবাস্মিন্নায়ুদ্ধতি সৰ্বমায়ুরেতি ॥১১৷৷

মর্মার্থ- যে জন দীর্ঘ ব্যাধিতে পীড়িত, অগ্নিদেব এমন ব্যক্তির শরীরে প্রবিষ্ট হয়ে মাংস ভক্ষণের দ্বারা তাকে কৃশ করেন, সোম তার শরীরের রস গ্রহণ (স্বীকার) করে, তার বক্ষয় করেন। বরুণদেব সেই জনকে পাশে গ্রহণ (বদ্ধ) করে তার উদর ইত্যাদিতে ব্যথা সৃষ্টি করেন। দেবী সরস্বতী তার বাক (ভাষা) গ্রহণ করায় সে কথা বলতে অসক্ষম হয়। অগ্নিদেব ও বিষ্ণুদেব তার জীবাত্মা গ্রহণ (প্রাপ্ত)করার নিমিত্ত সে মুমূর্ষ হয়ে যায়। যে জন দীর্ঘ রোগ পরিহার করতে কামনা করে এবং যে অপমৃত্যু পরিহার করে জীবিত থাকতে কামনা করে, সে এই পঞ্চ দেবতার উদ্দেশে এই (পঞ্চহবিষ্ক) যাগ নির্বপণ করবে। (অর্থাৎ) অগ্নিদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ, সোমদেবের উদ্দেশে চরু, বরুণদেবতার উদ্দেশে দশ কপাল হবিঃ, সরস্বতীর উদ্দেশে চরু এবং অগ্নি-বিষ্ণুর উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ করলে অগ্নিদেব তার শরীর হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে যান, সোম আর রসগ্রহণ করেন না, বরুণ তাকে পাশ হতে মুক্তি প্রদান করেন, সরস্বতী তাকে তার বাকশক্তি পুনঃপ্রদান করেন, অগ্নিদেব ও যজ্ঞরূপ বিষ্ণুদেব সর্ব দেবতার সাথে এই যজ্ঞের মাধ্যমে চিকিৎসা করেন, সেই জন (যজ্ঞকারী যজমান) মরণাপন্ন হলেও জীবিত হয় (যজ্ঞেন চ ভিষজ্যত্যুত যদীতাসুর্ভবতি জীবত্যেব)। এই যুগে পঠিত মন্ত্রের মধ্যে (মন্ত্রোক্ত) নবনীত, সর্পি ও ঘৃত শব্দের নির্বচনের দ্বারা ঘৃতের (আজ্যের) মহিমা খ্যাপন করা হয়েছে। অশ্বিযুগলের প্রাণবৎ প্রিয় তুমি, তাঁরা দেবগণের চিকিৎসক (ভিষজৌ), তারা তোমার চিকিৎসা (ভেষজং) করছেন। ইন্দ্রের প্রাণবৎপ্রিয় তুমি, সেই ইন্দ্র তোমাকে সামথ্য প্রাদন করছেন। মিত্র ও বরুণদেবের প্রাণবৎ প্রিয় তুমি, সেই দেবদ্বয় যজমানরূপী তোমাতে প্রাণ ও আপন বায়ু স্থাপন করছেন। সর্ব দেবতার প্রাণবৎ প্রিয় তুমি, সেই দেবগণ এই মন্ত্রের দ্বারা যজমানরূপীতোমাতে বীর্য প্রদান করছেন। ঘৃতস্য ধারামমৃতস্য পন্থা (ঘৃতের ধারা অমৃতের পথ) ইত্যাদি মন্ত্রে যজমান আজ অবেক্ষণ (দর্শন) করবে। ঋতিগণ পাবমানেন ত্বা স্তোমেনেত্যাহ. (পবমান বৃহৎ স্তোত্রের দ্বারা) ইত্যাদি মন্ত্রে যজমানে প্রাণ স্থাপন করবেন; বৃহৎ রথান্তর স্তোত্রের দ্বারা তোমাকে ইত্যাদি মন্ত্রে যজমানে বল স্থাপন কর্তব্য; অগ্নির মাত্রা দ্বারা ইত্যাদি মন্ত্রে যজমানে আত্মা স্থাপন কর্তব্য। এইভাবে সর্ব ঋত্বিকগণ একমত হয়ে (একধৈব) যজমানের শত বৎসর পূর্ণ হতে যত সম্বৎসর পরিমাণ আয়ু প্রয়োজন, তা স্থাপন করে থাকেন। হে অগ্নিদেব! এই যজমানে আয়ু ও বল প্রদান করুন; হে বিশ্বদেববর্গ! আপনারা এই যজমানে তার জরা ব্যাপ্তি অবধি অর্থাৎ আয়ুর চরম ভাগ পর্যন্ত আয়ু প্রদান করুন (আয়ুষশ্চরমভাগস্থয়া জরায়া অষ্টিৰ্য্যাপ্তিস্য)। অগ্নিরায়ুম্মান (অগ্নি আয়ুস্মান) ইত্যাদি মন্ত্রে অধ্বর্য যজমানের দক্ষিণ হস্ত ধারণ পূর্বক দেবা আয়ুষ্মন্তস্ত … (দেবগণ আয়ুষ্মন্ত, তারা এই যজমানে আয়ু প্রদান করুন) ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা যজমানের আয়ুলাভ সম্পাদন করেন ॥১১৷

[সায়ণাচার্য বলেন-একাদশ অনুবাকে দীর্ঘরোগ নিরাময়ের দ্বারা আয়ু লাভের নিমিত্ত ইষ্টির বিষয় কথিত হয়েছে। অথ দ্বাদশেহানবত ইষ্টিং বিধাস্য প্রস্তেীতি–। অর্থাৎ এই দ্বাদশ অনুবাকে নশ্ব দানকারীর পক্ষে অনুষ্ঠেয় যজ্ঞের বিধান কথিত হচ্ছে।]

.

দ্বাদশ অনুবাক

মন্ত্র- প্রজাপতিরুণায়াশ্বমনয়ৎ স স্বাং দেবতামাৰ্ছ স পৰ্য্যদীর্যত স এতং বারুণং চতুপালমপশ্যত্তং নিরপত্ততো বৈ স বরুণপাশাদমুচ্যত বরুণো বা এতং গৃহাতি যোহশ্বং প্রতিগৃহ্নতি যাবতোহশ্বান প্রতিগৃহ্নীয়াত্তাবতো বারুণাঞ্চ তুপালান্নিপেরুণমেব নে ভাগধেয়েনোপ ধাবতি স এবৈনং বারুণপাশাম্মুঞ্চতি চতুষ্ণপালা ভবন্তি চতুষ্পদ্ধ্যশ্বঃ সমৃদ্ধ্যা একমতিরিক্তং নিৰ্বপেদ্যমের প্রতি গ্রাহী ভবতি যং বা নাধ্যেতি তম্মদেব বরুণ পাশাচ্যতে যদ্যপরং প্রতিগ্রাহী স্যাৎ সেৰ্যৈমেককপালমনু নিৰ্বপেদমুমে বাহদিত্যমুচ্চারং কুরুতেহপোহবyথমবৈত্য বৈ বরুণঃ সাক্ষাদেব বরুণমব যজতেহপোনন্দ্রীয়ং চরুং পুনরেত্য নিৰ্বপেদযোনিব্বা অশ্বঃ স্বামেবৈনং যোনিং গময়তি স এনং শান্ত উপতিষ্ঠতে৷। ১২

মর্মার্থ- (একদা) প্রজাপতি দেবতা বরুণদেবকে অশ্ব প্রদান করেছিলেন। প্রজাপতি পূর্বে অশ্বের দেবতা ছিলেন। বরুণদেবকে অশ্ব প্রদান করার কারণে দুঃখিত প্রজাপতি দেখলেন যে, তার (স্ব) শরীর দীর্ঘরোগে আগ্রস্ত হয়েছে। তখন তিনি বরুণদেবের উদ্দেশে চতুষ্কপাল যাগ নিষ্পন্ন করে বরুণপাশ হতে মুক্ত হন। যে অশ্ব প্রদান করে, বরুণ তা প্রতিগ্রহ করেন। যতগুলি অশ্ব প্রতিগৃহীত হয়, বরুণদেবের উদ্দেশে তত পরিমিত চতুষ্কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয়। বরুণদেবের নিকট যে তাঁর ভাগধেয় সহ গমন করে, বরুণদেব তাকে তার পাশ হতে মুক্ত করেন। চারটি অশ্বের নিমিত্ত চতুষ্কপাল পুরোডাশ নির্বপণ কর্তব্য; এবং তা সমৃদ্ধির কারণভূত হয়। (সর্বদা) প্রদত্ত অশ্বসংখ্যার অধিক একটি পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। কারণ যখন তা প্রদান করা হয় তার অধিক অশ্ব প্রদান করতে হলে কিংবা কোনওটি প্রদান করতে বিস্মৃত হলে একটি অধিক পুরোশ নির্বপণ কর্তব্য। এইরকম করলে বরুণদেবের পাশ হতে মুক্তিলাভ করা যায়। যদি দানান্তরেও (দানের পরেও) যাগ অনুষ্ঠিত হতে থাকে, তাহলে কিছুকাল অতিক্রম করে পুনরায় অতিরিক্ত অশ্ব প্রদান করা কর্তব্য। অশ্বসংখ্যা অনুসারে পুরোডাশ নির্বপণ পূর্বক সূর্যদেবতার উদ্দেশে এক কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। এতে সূর্যের বিলম্বজনিত যে দোষ হয়েছে, তা পরিহার করা যাবে। যজ্ঞের অবসানে অবভৃত স্নান (যজ্ঞান্তে স্নান) কর্তব্য; তাতে বরুণদেব নিরাকৃত হন (তেন বরুণ্যে নিরাকৃতো ভবতি)। অবভৃত স্নানান্তে যজ্ঞস্থলে প্রত্যাবর্তন পূর্বক জলের পৌত্রের উদ্দেশে পুনরায় চরু নির্বপণ কর্তব্য। অসুযোনি, অর্থাৎ জলের উৎপত্তি যার, এমন অশ্বকে (মন্ত্রের দ্বারা) জলে প্রেরণ করলে সেই অশ্ব শান্ত হয়ে রোগ-অনুৎপন্ন পূর্বক যজমানে সেবা করে থাকে। (উচ্চৈঃশ্রবা অশ্বের উৎপত্তি সমুদ্রে–এই কথা পুরাণে প্রসিদ্ধ) ॥১২৷৷

[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বাদশ অনুবাকে অশ্বদান সম্পর্কিত চতুষ্কপাল হবির বিষয় কথিত হয়েছে। অর্থ ত্রয়োদশে পাস্নানা গৃহীতস্যেষ্টিং বিধিৎসুরাদৌ মন্ত্রান্ পঠিত। অর্থাৎ–এই ত্রয়োদশ অনুবাকে পাপ হতে মুক্তির নিমিত্ত অনুষ্ঠেয় যাগে পঠিত্যব্য মন্ত্রগুলি উক্ত হচ্ছে।]

.

ত্রয়োদশ অনুবাক

মন্ত্র- যা বামিন্দ্রাবরুণা যতব্যা তনুশুয়েমমংহসো মুঞ্চতং বা বামিন্দ্রাবরুণা সহস্যা রক্ষ্যা তনুস্তরেমমংহংসা মুঞ্চতং যো ৰামিন্দ্রাবরুণাবগ্নৌ ভ্রামস্তং বামেতেনাব যজে যো রামিন্দ্রাবরুণা দ্বিপাসু পশুষু চতুষ্পৎসু গোষ্ঠে গৃহেষেধীষু বনস্পতিষু শ্ৰামন্তং বামেতেনাব ফজ ইন্দ্রো বা এতস্য ইন্দ্রিয়েনোপ ক্রামতি বরুণ এনং বরুণপাশেন গৃহাতি যঃ পানা গৃহীত ভবতি যঃ পাগনা. গৃহীতঃ স্যাত্তস্ম এবৈন্দ্রাবরুণ পয়সাং নিৰ্বপেদিন্দ্র এবাম্মিন্নিয়িং দধাতি বরুণ এনং বরুণপাশাত্মঞ্চতি পয়্যা ভবতি পয়ো হি বা এতস্মাদপক্রামত্যথৈষ পাগনা গৃহীতো যং পয়স্যা ভবতি পয় এবাম্মিস্তয়া দধাতি পয়স্যায়াম পুরোডাশমব ধধাত্যাত্মন্বন্তমেবৈনং করোত্যথো আয়তনবস্তমেব চতুর্জা ব্যহতি দিবে প্রতি তিষ্ঠতি পুনঃ সমূহতি দিভ্য এবাস্মৈ ভেষজম করোতি সমূহ্যাব দ্যতি যথাহবিদ্ধং নিষ্কৃতি আদৃগেব তদ্যো বামিত্রাবরুণাবগ্নৌ ভ্রামস্তং বামেতেনাব যজ ইত্যাহ দুরিষ্টা এবৈনং পাতি যো বামিন্দ্রাবরুণা দ্বিপাসু পশুষু মস্তম বামেতেনাব যজ ইত্যাহৈতাবতীৰ্বা আপ ওষধয়ো বনস্পয়ঃ প্রজাঃ পশব উপজীবনীয়াস্তা এব্যস্মৈ বরুণপাশাম্মুঞ্চতি ॥১৩৷

 মর্মার্থ- হে ইন্দ্রদেব ও বরুণদেব! আপনাদের পাপমুক্ত শরীর আছে, তার দ্বারা আপনারা এই যজমানকে পাপমুক্ত করুন (পাপানন্মাচয়ত)। আপনাদের বলদায়ক (সহস্যা), রক্ষাদায়ক ও তেজঃদায়ক শরীর আছে, তার দ্বারা এই যজমানকে পাপ হতে মুক্ত করুন। হে ইন্দ্রদেব ও বরুণদেব! আপনাদের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানে রত হয়ে যজমান যে অপরাধ করেছেন (কৃতস্তমপরাধং), তা আমি আপনাদের উদ্দেশে যাগ নির্বপণের দ্বারা বিনাশ করছি। হে ইন্দ্রদেব ও বরুণদেব! আপনাদের সম্বন্ধী যে যজমান মনুষ্য ইত্যাদির নিকট (দ্বিপাসু পশুষু মনুষ্যাদিরূপেষু), পশুর নিকট (চতুষ্পসু), গোষ্ঠ, গৃহ, ওষধি ও বনস্পতির নিকট যে পাপ করেছেন, আমি এই যজ্ঞের দ্বারা সেই পাপবিশেষকে বিনষ্ট করছি। যিনি পাপ কর্তৃক গৃহীত হয়েছেন (যঃ পাপগৃহীত), ইন্দ্র যার সামর্থ্য অপহরণ করেছেন (অপগচ্ছতি), বরুণদেব যাঁকে পাশবদ্ধ করেছেন (অর্থাৎ ব্যাধিরূপ পাশে বদ্ধ করেছেন, সেই জন ইন্দ্রদেব ও বরুণদেবের উদ্দেশে পয়সি (আমিক্ষা, অর্থাৎ দুগ্ধবিকার বা ছানা) নির্বপণ করলে, সেই পয়সি আহার করে ইন্দ্র তাঁকে সামর্থ্য দান করেন এবং বরুণদেব তাঁকে তাঁর পাশ হতে মুক্ত করেন। ক্ষীর ইত্যাদি সাত্ত্বিক আহাররূপ পুণ্যজনিত শ্রদ্ধা হতে যিনি বিচ্যুত হন, তিনি পাপের দ্বারা গৃহীত হয়ে থাকেন; এই হবিঃ নির্বপণের দ্বারা তার পুণ্য স্থাপিত (আহিত) হয়। শরীর সদৃশ কঠিন পুরোডাশ প্রক্ষেপণের দ্বারা যজমানের শরীর দৃঢ় হয়; এবং এই পয়সি নির্বপণের ফলে তিনি পুনরায় গৃহ, গ্রাম ইত্যাদি প্রাপ্ত হন (গৃহগ্রামাদিরূপাধারবন্তং করোতি)। প্রথম মন্ত্রের দ্বারা হবির চার ভাগে বিভাগ সম্পন্ন করতে হয়, পুনরায় সেই চারটি ভাগ মিশ্রিত দিক সমুহের উদ্দেশে নির্বপণ করলে আরোগ্য লব্ধ হয়। লোকে যেমন শত্রুর দ্বারা নিক্ষিপ্ত এবং আপন শরীরে বিদ্ধ বাণগুলি চিমটা ইত্যাদির সাহায্যে নিষ্কাশন করে, সেইরকম মিশ্রিত পুরোডাশ ও পয়সি পৃথক করে দান কর্তব্য। হোমের আধারে অগ্নিদেবের নিকট যে অপরাধ করা হয়, হে ইন্দ্র ও বরুণ! আপনাদের যাগানুষ্ঠানের দ্বারা এই যজমানের সেই অপরাধ বিনাশ করছি। হে ইন্দ্র ও বরুণ! মনুষ্য ইত্যাদির নিকট, পশুর নিকট যে অপরাধ, তা আপনাদের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত এই যাগের দ্বারা বিনাশ করছি ইত্যাদি মন্ত্রের দ্বারা প্রাণীর উপজীবনযোগ্য পঞ্চ পদার্থ, যথা–জল, ওষধি, বনস্পতি, মনুষ্যাদি দ্বিপাদ ও পশু ইত্যাদি চতুষ্পদ, সকলে যজমানকে বরুণদেবের পাপ হতে মুক্ত করে (বরুণপাশাদুপদ্রবান্মোচয়তি) ॥১৩।

[সায়ণাচার্য  বলেন–চতুর্দশেহনুবাকে কাম্যাযাজ্যা পুরোনুবাক্যা উচ্যন্তে। অর্থাৎ এই অনুবাকে কাম্য যাজ্যা ও পুরোনুবাক্যা কথিত হয়েছে।]

.

চতুর্দশ অনুবাক

মন্ত্র- স প্রত্নবন্নি কাব্যেন্দ্রং বো বিশ্বতশ্বরীন্দ্রং নরঃ। ত্বং নঃ সোম বিশ্বততা রক্ষা রাজঘায়তঃ। ন রিষ্যেত্ত্বাবতঃ সখা। যা তে ধামানি দিবি যা পৃথিব্যাং যা পৰ্বতেঘোষধীষন্দু। তেভির্নো বিশ্বৈঃ সুমনা অহেড় রাজসোম প্রতি হব্যা গৃভায়। অগ্নীষোমা সবেদসা সহুতী বনতং গিরঃ। সংদেবত্ৰা বভূবথুঃ। যুবমেনি দিবি নোচনান্যগ্নিশ্চ সোম সত্ অধত্তম। যুব সিন্ধুং রভিশস্তেরবদ্যাদষ্মীযোমাবমুঞ্চতং গৃভীতা। অগ্নীযোমামিং সুমে শৃণুতং বৃষণা হব। প্রতি সূক্তানি হৰ্য্যতম ভবত দাশুষে ময়ঃ। আহনাং দিবো মারিশ্যা জরামাদন্যং পরি শোনো অদ্রেঃ। অগ্নীষোমা ব্ৰহ্মণা বাবাধানোরুং যজ্ঞায় চক্রগুরু লোক। অগ্নীষোমা হবিষঃ প্ৰস্থিতস্য বীতম হৰ্য্যতম বৃষণা জুষেখাম। সুশৰ্ম্মণা স্বাবসা হি ভূতমথা ধং যজমানায় শং মোঃ। আ প্যায়স্ব সং তে।। গণানাং ত্বা গণপতিং হবামহে কবিং কবীনামুপমশ্রবস্তমম্।। জ্যেষ্ঠরাজং ব্ৰহ্মণাং ব্ৰহ্মণম্পতি আ নঃ শৃথতিভিঃ সীদ সাদন। স ইজ্জনেন স বিশা স জম্মনা স পুত্ৰৈৰ্ব্বাজং ভরতে ধনা নৃভিঃ। দেবানাং যঃ পিতরমাবিসতি শ্রদ্ধামনা হবিষা ব্ৰহ্মণস্পতিম্।। স সুষ্ঠুভা স ঋকৃতা গণেন লং রুরোজ ফলিগং রবেণ। বৃহস্পতিরুস্রিয়া হব্যসূদঃ কনিক্ৰদাবশতীরুদাজৎ। মরুতো যদ্ধ বো দিবো যা বঃ শৰ্ম্ম।। অৰ্য্যমিহয়াতি বৃষভস্তুবিন্দাতা বনাম পুরুহুতো অহন। সহস্রাক্ষ্যে গোত্রভিজ্রবাহুরমাসু দেব দ্রবিণং দধাতু। যে তেহ্যমন্বহবো দেবাযানাঃ পন্থানঃ রাজন্দির আচরন্তি। তেভিননা দেব মহি শৰ্ম্ম যচ্ছ শং ন এধি দ্বিপদে শং চতুষ্পদে। বুধাদগ্রমঙ্গিবোভিঘূর্ণানো বি পৰ্বতস্য দৃংহিতান্যৈরৎ। রুজদ্রোধাংসি কৃত্রিমাণ্যেং সোমস্য তা মদ ইন্দ্ৰশ্চকার। বুগ্নদগ্ৰেণ বি মিমায় মানৈৰ্ব্বজ্রেণ খান্যতৃণদীনা। বৃথাহসৃজৎ পথিভিদীর্ঘয়াথৈ সোমস্য তা মদ ইন্দ্ৰশ্চকার প্র যো জজ্ঞে বিদ্বান অস্য বন্ধুং বিশ্বানি দেবো জনিমা বিবক্তে। ব্ৰহ্ম ব্ৰহ্মণ উজ্জভার মধ্যান্নীচাদুচ্চা স্বধয়াহভি প্র তন্থেী। মহান্মহী অস্তভয়দ্বি জাতো দ্যাং সদ্ম পার্থিবং চ রজঃ। স বুধাদাষ্ট জনুযাহভ্যগ্রং বৃষ্পতিৰ্দেতা যস্য সম্রাট। বুধাদ্যো অগ্রমভ্যত্তোজ বৃহস্পতিমা বিবাসন্তি দেবাঃ। ভিনদ্বলং বি পুরো দৰ্দরীতি কনিক্ৰদৎ সুবরপো জিগায়। আদিত্যেভ্যে দেবা বৈ মৃত্যোন্দো বৈ সমাসতাৰ্যমণে প্রজাপতেস্ত্রয়স্ত্রিংশৎ প্রজাপতিৰ্দেবেডভ্যাহন্নাদ্যং দেবাসুরাস্তানজনো ধ্ৰুবোহসি যন্নবমৈদগ্নিং বৈ প্রজাপতিৰ্বরুণায় যা বামিন্দ্রাবরুণা স প্রত্নবচ্চতুর্দশ। আদিত্যেভ্যরস্মৈ দানকামা এবার রুন্ধেহগ্নিং বৈ স প্রত্নবৎ ষট্‌পঞ্চাশৎ ॥১৪৷

মর্মার্থ- সবাকার মঙ্গলের নিমিত্ত বিশ্বের উপরে ইন্দ্রদেবতাকে আমরা আহ্বান করি, তিনি প্রাচীন ধনবানের ন্যায় আমাদের ঐশ্বর্য প্রদান করুন। হে রাজা সোম! আপনি আমাদের প্রতি উপদ্রব ইচ্ছাকারী পাপরূপ শবর্গ হতে রক্ষা করুন। হে রাজা সোম! দিবি অর্থাৎ দুলোক, পৃথিবী ইত্যাদি প্রদেশ, পর্বত, ওষধি, জল ইত্যাদিতে আপনার যে স্থান আছে, সেগুলির সাথে যুক্ত হয়ে (সবৈঃ স্থানৈযুক্তঃ) ক্রোধরহিত (শোভনমনস্কঃ) হয়ে আমাদের নির্বপিত এই হব্য প্রতিগ্রহ করুন। অর্থাৎ আপনি যেস্থানেই স্থিত হোন না কেন, সেই স্থান হতে আগত হয়ে আমাদের প্রদত্ত হবিঃ স্বীকার করুন (এটাই অর্থ)। হে অগ্নিদেব ও সোমদেব! আপনারা আমাদের স্তুতি শ্রবণ করুন। কিরকম? আপনারা সমান জ্ঞানযুক্ত, সমান আহ্বানযুক্ত, দেবগণের মধ্যে আপনারা দুজন পরস্পর কখনও বিযুক্ত হন না। হে সোম! আপনি ও অগ্নিদেব, দুজনই সমান সংকল্প পূর্বক আকাশে এই প্রভাময় নক্ষত্র ইত্যাদিকে স্থাপন করেছেন; নদীগুলিকে পঙ্ক ইত্যাদি দৃষ্টিদোষরূপ অপবাদ হতে মুক্ত করেছেন (নদীরভিশস্তেস্তস্মাদপবাদাদবদ্যাৎ পঙ্কাদিদৃষ্টদোষাচ্ছাঞ্চতং মোচিতবস্তেী)। হে অগ্নিদেব ও সোমদেব! আপনারা কামবর্ষণকারী (কামানাং বর্ষয়িতারৌ); আপনারা আমাদের হবিঃ-আহ্বান সুষ্ঠুভাবে শ্রবণ করুন, আমাদের উচ্চারিত বেদমন্ত্ৰসমূহ মনঃসংযোগ পূর্বক গ্রহণ করুন, হবিঃ-প্রদানকারী (হবিদর্ভবতে) যজমানরূপী আমাদের সুখ সম্পাদন করুন। মাতরিশ্বা বায়ু দ্যুলোক হতে অগ্নিদেবকে আপনাদের মধ্যে আহরণ করেছেন এবং পক্ষীরূপা গায়ত্রী (শ্যেনো গায়ত্রাঃ) পর্বতবৎ উন্নত দ্যলোকের উপর হতে রাক্ষসগণকে পরাজিত ও ক্ষুভিত (ক্ষোভপ্রাপ্ত) করে সোমকে আনয়ন করেছেন। হে অগ্নিদেব ও সোমেদেব! কামনাসমুহের বর্ষণকারী (কামানাং বর্ষায়িতারে) আপনারা আমাদের সমর্পিত হবির সার প্রাপ্ত হোন, সানন্দে তা সেবা করুন এবং শোভন সুখযুক্ত ও শোভন রক্ষক (সুরক্ষক) হোন। তারপর যজমানের পুত্র ইত্যাদির সাথে সুখের মিলন করিয়ে দিন। হে সকল মন্ত্রের অধিপতি ব্রহ্মণস্পতি দেবতা! আপনি সকল দেবগণের স্বামী (কৃৎস্নদেবগণস্বামিনং), আপনাকে আমরা আহ্বান করছি। আপনি পণ্ডিতগণের পণ্ডিত (কবিং কবীনাং), সকল গুণসম্পন্ন উপমান-সদৃশ আপনার কীর্তি (কীর্তির্যস্যাসাবুপমবাঃ), রাজগণের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ঠ রাজা; আপনি আমাদের পালনের নিমিত্তভূত এই কর্মে উপবেশন করুন। যে যজমান ভৃত্য ইত্যাদির সাথে অন্নযুক্ত হন (কঙ্কিরাদিনা যুক্তং বাজমন্নং ভরতে দধাতি), তিনি করদাতা প্রজাগণের সাথে অন্ন লাভ করেন। তিনি ব্রাহ্মণগণের সাথে অন্ন লাভ করেন। তিনি পুত্রগণের সাথে অন্ন লাভ করেন। তিনি বন্ধুজনের সাথে দ্রব্যসমূহ লাভ করেন (ধনা দ্রব্যাণি ভরতে)। যে যজমান শ্রদ্ধামনস্ক হয়ে দেবগণের পালক ব্ৰহ্মণস্পতি দেবতাকে তার (স্বকীয়) হবির দ্বারা পরিচর‍্যা করেন, সেই দেবতাগণ সাম ও ঋক-মন্ত্রের দ্বারা স্ততিপ্রাপ্ত হয়ে তার (অর্থাৎ সেই যজমানের) প্রবল প্রতিবন্ধকতা বিদূরিত করেন (প্রবলং প্রতিবন্ধং রুবরাজ)। হাম্বারব শ্রবণ করে গাভী যেমন তার বৎসের প্রতি ধাবিত হয়, সেই ভাবে হবির্ভোক্তা বৃহস্পতিদেবতা স্বাদুতম হবির আহ্বান শ্রুত হয়ে যজমানের গৃহের প্রতি ধাবিত হয়। মরুত্বর্গ দুলোক হতে আপনাদের মঙ্গল বিধান করুন। (প্রথম কাণ্ডের ৫ম প্রপাঠকের ১১শ অনুবাকে ব্যাখ্যাত)। কামবর্ষণকারী, মহবলধারী, ধনদানকারী, বহু যজ্ঞে আহুত-পুরুষ, স্বর্গদানের যোগ্য, সহস্র চক্ষুধারী, গোত্রাভিৎ (পর্বতধারী), বজ্রসদৃশ বাহুধারী সূর্য বা অর্যমাদেব (তথা ইন্দ্রদেব) আমাদের ধন প্রদান করুন। হে রাজা অর্যমা! দেবগণের পক্ষে স্বর্গ অবধি গমনের যে বহু পথ আছে (দেবযানাঃ পন্থাননা রাজবি), সেই পথে আমাদের মহৎ সুখ (মহি শর্ম) প্রদান করুন। হে দেব! দ্বিপদ মনুষ্যক্সপী আমাদের ও গো ইত্যাদি চতুষ্পদযুক্ত পশুদের পক্ষে সুখ-সম্পদক হোন। কর্মের আরম্ভ হতে সমাপ্ত পর্যন্ত অঙ্গিরা নাম্ন মুনিসদৃশ ঋত্বিকবর্গের দ্বারা স্কুয়মান ইন্দ্র সোমপানে মত্ত হয়ে অন্যের দ্বারা কৃত শ্রেষ্ঠ প্রতিবন্ধক বা অবরোধ সমূহ স্তব্ধীভূত করে পর্বতবৎ সকলের ধারক রাজার প্রতি অন্যের দ্বারা কৃত হিংসা (দ্রোহ) নিবারণ করেছিলেন (দ্রোহনিবারণাদীনি কৃতবা)। ইন্দ্রদেব মূল হতে অগ্র পর্যন্ত, বিশেষভাবে নিশ্চিত করে জলপ্রবাহ নিরোধক পর্বতসমুহকে বজ্রের দ্বারা ছিন্ন করেছিলেন (জলপ্রবাহনিরোধক-পর্বতন্বজ্রেণ হিংসিতবা)। লোকে যেমন নখের দ্বারা তৃণ ইত্যাদি আয়াসের সাথে ছিন্ন করে, সেইরকম সোমপানে মত্ত ইন্দ্রের পক্ষে কিন্তু এই কর্ম (পর্বত-বিদারণ বা ছিন্নকরণ) অনায়াসে সাধিত। সর্বজ্ঞ বৃহস্পতিদেবতা এই ব্রাহ্মণ যজমানের (ব্রাহ্মণস্য যজমানস্য) অনুকূল বন্ধুগণকে প্রকর্ষের সাথে জ্ঞাত আছেন। সেই দেবতা সর্ব প্রাণীর সর্ব জন্মের কথা পুনঃ পুনঃ বলে থাকেন, এ হতেই তার অভিজ্ঞতা নিশ্চিতরূপে বোধগম্য হয় (তস্মাদভিজ্ঞত্বং নিশ্চীয়তে)। অভিজ্ঞ বৃহস্পতিদেবতা বেদের প্রথম ভাগ (বা উত্তমভাগ) ও মধ্যম ভাগ হতে ব্রহ্ম পরিবৃত কর্মসমূহ উদ্ধার পূর্বক অমৃতের সাথে এই যজমানের অভিলক্ষ্যে আগত হয়েছেন। মহান বৃহস্পতিদেবতা উৎপত্তিমাত্র পৃথিবী, অন্তরিক্ষ, দ্যুলোক, মনুষ্যের গৃহ, পার্থিব ধূলি সমস্ত কিছুকেই আপন আপন ব্যাপারক্ষম করে দিয়েছেন (স্বস্বব্যাপারক্ষমমকররাৎ)। যে যজমানের সাম্রাজ্য বৃহস্পতিদেবতা প্রাপ্ত হন, সেই যজমান জামাত্র অনুষ্ঠীয়মান কর্মের শুরু হতে (মূল হতে) সমাপ্তি পর্যন্ত (আয়ুর শেষ মুহূর্ত অবধি) বিস্তার লাভ করেন (ব্যাপ্ত। (এই রকমে বৃহস্পতি দেবতার অনুগ্রহের দ্বারা যুক্ত যজমান সর্বৰ্থা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন–এটাই বক্তব্যের অভিপ্রায়)। যে বৃহস্পতি আপন সামর্থ্যে কর্মসমূহের আদি হতে অন্ত পর্যন্ত (অধিকার) লাভ করেন, অপর দেববর্গ আগত হয়ে সাদরে তাঁর সেবা করেন। বৃহস্পতিদেবতার বল যজমান-সম্বন্ধি সকল প্রতিকুলতা নিবারণ করে (প্রতিকূল্যান্নিবারয়তি) এবং তাঁদের নিমিত্ত সর্ব জল ক্ষেত্র ইত্যাদি সম্পাদিত করে থাকে (সর্বং জলক্ষেত্রাদিকং…সম্পাদিতবা) ॥ ১৪।

[পূর্ববর্তী, অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রপাঠকের মন্ত্রগুলির মতো এই প্রপাঠকের এই অনুবাক ও এর পরবর্তী, অর্থাৎ দ্বিতীয় অনুবাকের মন্ত্রগুলির বিস্তৃত ব্যাখ্যা সায়ণাচার্য করেননি; কারণ পূর্ব পুর্ব অনুবাকগুলির মধ্যে এগুলি ব্যাখ্যাত হয়েছে। অগত্যা ভাষ্যকারকৃত বিষয়বস্তুর পরিচয় প্রদত্ত হলো]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *