৩. নিওলিথিক পর্ব : কৃষাণের পুরাণ কথা

৩. নিওলিথিক পর্ব : কৃষাণের পুরাণ কথা

(অষ্টম সহস্রাব্দ থেকে চতুর্থ সহস্রাব্দ)

আনুমানিক দশ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজ রপ্ত করে। শিকার এখন আর খাদ্যের প্রধান উৎস না কারণ তারা আবিষ্কার করেছে পৃথিবী নিজেই খাদ্যের আপাত অফুরন্ত উৎস। কৃষিভিত্তিক নিওলিথিক বিবর্তনের চেয়েও মানবজাতির জন্য কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অগ্রবর্তী এসব কৃষকদের সম্ভ্রমমিশ্রিত ভয়, আনন্দ আর আতঙ্ক আমরা অনুভব করি, নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেবার সময়ে তাঁরা যে পুরাণের নির্মাণ করেছিল, পরবর্তীকালের সংস্কৃতির পৌরাণিক আখ্যানে তা খণ্ডিতভাবে রক্ষিত আছে। লোগোসের ফসল হলো কৃষিকাজ কিন্তু আমাদের আজকের প্রযুক্তিগত বিবর্তনের মতো, একে সম্পূর্ণ লোকায়ত উদ্যোগ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। এর দায় বর্তায় একটা মহান আধ্যত্মিক জাগরণের উপরে যা মানুষকে তাদের পৃথিবী এবং নিজেদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন ধারণা দেয়।

ধর্মীয় শ্রদ্ধাবোধের সাথে কৃষিকাজের এই নতুন জ্ঞান।[২৮] প্যালিওলিথিক পর্বের লোকেরা শিকারকে পবিত্র কাজের মর্যাদা দিত এবং এখন কৃষিকাজও একটা পবিত্র সংস্কারে পরিণত হয়। জমি চাষ করার সময়ে বা শস্য কাটবার সময়ে কৃষকদের রীতিমতো আচার অনুষ্ঠান পালন করে পবিত্র থাকতে হতো। ফসলের বীজকে তারা মাটির গভীরে প্রবেশ করতে দেখে এবং অনুধাবন করে যে অন্ধকারে খোলস ছেড়ে বীজ জীবনের ভিন্নমাত্রার চমকপ্রদ রূপ সামনে নিয়ে আসে, রোপয়িতা তখন অন্তরালে কর্মরত গোপন শক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। শস্য আমাদের কাছে একটা বার্তা নিয়ে আসে, দিব্যশক্তির প্রকাশ ঘটায় এবং কৃষকরা জমি চাষ করে যখন গোষ্ঠীর লোকদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করে, তারা অনুভব করে একটা পবিত্র পরিবেশে তারা প্রবেশ করেছে এবং এক অলৌকিক প্রাচুর্যের ভাগীদার হয়েছে।[২৯] সব প্রাণীকেই পৃথিবী ধারণ করার ক্ষমতা রাখে- গাছপালা, মানুষ এবং জীবজন্তু- অনেকটা জীবন্ত মাতৃজঠরের মমতায়।

কৃত্যানুষ্ঠানগুলো পরিকল্পিত হয়েছিল এই ক্ষমতা যাতে নিঃশেষ না হয়ে নিজেকে পুনরায় ঋতুমতী করতে পারে। প্রথম শস্যদানা ‘পরিত্যাগ’ করা হতো উৎসর্গ হিসাবে, বাগানের প্রথম ফলটা ছোঁয়া হতো না, এসবই করা হতো পবিত্র শক্তিকে পুনরায় খাদ্য উৎপাদনক্ষম রাখতে। এমন নজিরও পাওয়া গেছে যে মধ্য আমেরিকায়, আফ্রিকার কিছু অংশে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলসমূহে এবং দ্রাবিড় ভারতবর্ষে নরবলি পর্যন্ত উৎসর্গ করা হতো। এসব কৃত্যানুষ্ঠানের মূলে ছিল দুটো মূলনীতি। প্রথম, কোনো কিছু উৎসর্গ না করে কিছু পাবার আশা তুমি করতে পার না; কিছু পেতে হলে তাই তোমাকেও কিছু দিতে হবে। দ্বিতীয়টা বাস্তবতার পবিত্র অন্তজ্ঞান। প্রাকৃতিক জগতের ঊর্ধ্বে কোনো বিমূর্ত বাস্তবতা হিসাবে পবিত্রতাকে অনুভব করা হতো না। পৃথিবী এবং তার অনুসঙ্গে কেবল তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা নিজেরাই পবিত্রতার স্মারকখচিত। মানুষ, দেবতা, পশুপাখি এবং গাছপালা একই প্রকৃতির মাঝে বিরাজমান এবং সেজন্য একে অন্যকে পূর্ণ প্রদীপ্ত পুষ্ট করতে পারবে।

মানুষের যৌনতার কথাই ধরা যাক, পৃথিবীকে ফলবতী উর্বরা করে যে দিব্য শক্তি তার সাথেই মূলত একে এক করে দেখা হতো। নিওলিথিক পুরাণ শুরুর দিকে, নবান্নকে দেখা হতো এই দিব্য বন্ধনের ফসল হিসাবে, একটা পবিত্র বিয়ে : মাটি হলো নারী; বীজগুলো পবিত্র বীর্য; এবং বৃষ্টি হলো স্বর্গ আর মর্ত্যের মহামিলন। ফসল বোনার সময়ে নারী পুরুষের শারীরিক মিলনে নিয়োজিত হওয়া ছিল একটা সাধারণ আচার অনুষ্ঠান। তাদের নিজস্ব মিলন নিজেই একটা পবিত্র কর্ম, মাটির উৎপাদনী শক্তিকে যা জাগিয়ে তুলবে, কৃষকের কোদাল বা লাঙল ঠিক যেন একটা সমুত্তেজিত পুরুষাঙ্গের প্রতীক যা পৃথিবীর উদর উন্মুক্ত করবে এবং বীজ দিয়ে, একে বড় করে তুলবে। বাইবেলে আমরা দেখতে পাই খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রাচীন ইসরাইলীদের পালনীয় রীতি রেওয়াজ হিসাবে বন্য যৌনোৎসব পালন করতে, যা হোসা আর এজিকিয়েলের মতো নবীদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে। জেরুজালেমের মন্দিরে পর্যন্ত আশেরাহ্ এর সম্মানে পূজার আয়োজন করা হতো, কানানের উর্বরতার দেবী এবং আম্রপালিদের বাসস্থান।[৩০]

নিওলিথিক বিবর্তনের শুরুর দিকে, অবশ্য পৃথিবীকে সব সময়ে রমণী হিসাবে গণ্য করা হতো না।[৩১] চীন এবং জাপানে ভূমির সত্তাকে ক্লীব হিসাবে গণ্য করা হতো এবং পরবর্তীকালে সম্ভবত সংসারে নারীর মমতাময়ী রূপ দেখে পৃথিবীকে নারীর রূপ আরোপিত করে মমতাময়ী রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৃথিবীর উপরে কোনো মানবিক চরিত্র আরোপ করা হয়নি কিন্তু পবিত্র হিসাবে তাকে সম্মান করা হতো। নারীর শিশু জন্ম দেবার মতো সে তার উদর থেকে সবকিছুর জন্ম দিত। ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকায় প্রথম সৃষ্ট কিছু পুরাণ কল্পনা করেছে যে মানুষ গাছলতার মতোই প্রথমবার পৃথিবীর বুক চিরে আলোয় এসেছিল : গাছের মতোই, তাদের জীবন পাতালগর্ভে শুরু হয়েছিল যতক্ষণ না নতুন মানুষ পৃথিবী পৃষ্ঠে আবির্ভূত হয় বা ফুলের মতো প্রস্ফুটিত এবং মানব মা তাদের সংগ্রহ করে।[৩২] মানুষ এক সময় দিব্যের সাথে সাযুজ্য বিধান করতে

নিজেদের উচ্চতায় তোলার কথা কল্পনা করেছে সেই তারাই এখন পৃথিবীর পবিত্রতার সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য নানা আচার অনুষ্ঠান নির্মাণ করে। লাসাউক্সের প্যালিওলিথিক গুহার মতো নিওলিথিক গোলক ধাঁধা আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু পার্থক্য হলো পাতালে পবিত্র জন্তুর সাথে সাক্ষাৎকারের বদলে উপাসনাকারীরা কল্পনা করত তারা ধরিত্রী মায়ের গর্ভে প্রবেশ করছে এবং সমস্ত প্রাণের উৎসে এক ধরনের মরমী প্রত্যাবর্তন ঘটাচ্ছে।[৩৩]

এই সমস্ত সৃষ্টি পুরাণ মানুষকে শিক্ষা দেয় পাথর, নদী আর গাছগাছালীর মতো তারাও একইভাবে পৃথিবীর অঙ্গীভূত। পৃথিবীর প্রাকৃতিক উত্থানপতনকে সম্মান জানানো তাই তাদের উচিত। অন্যেরা কোনো একটা স্থানের সাথে একটা গভীর একাত্মতা প্রকাশ করে, পরিবার বা পিতৃত্বের চাইতে গভীর কোনো বন্ধন। প্রাচীন গ্রীসে এই ধরনের পুরাণ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ইরেকথোনিয়াস এথেন্সের পঞ্চম পৌরাণিক সম্রাট, আর্কোপলিসের পবিত্র ভূমি থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল, একটা বিশেষ মন্দিরে বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই পবিত্র ঘটনাটা উদ্‌যাপিত হয়েছে।

নিওলিথিক বিবর্তন সৃষ্টিকারী শক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলে যা পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। প্রথমে এটা ছিল পার্থক্যরহিত একটা পবিত্র শক্তি, যা পৃথিবীকে দিব্যের প্রকাশে বাধ্য করেছিল। কিন্তু পৌরাণিক কল্পনা সবসময়ে ধীরে ধীরে, নিরেট এবং পূর্ণ তথ্যজ্ঞাপক হয়ে উঠে; শুরুতে যা ছিল নিরাকার তার সংজ্ঞা নির্ণীত হয় এবং সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। আকাশের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে ঠিক যেভাবে আকাশ দেবতার মানবিককরণ সম্পন্ন হয়েছে মাতৃপ্রতিম প্রতিপালনকারী পৃথিবী ঠিক একইভাবে ধরিত্রী মাতার রূপ গ্রহণ করেছে। সিরিয়াতে তাকে বলা হয় আশেরাহ্, এল এর সঙ্গী, ঊর্ধ্ব দেবতা বা আনাট্, এল এর কন্যা; পারস্যের সুমের অঞ্চলে একে বলা হয় ইনাননা; মিশরে, আইসিস, গ্রীসে সে পরিণত হয় হেরা, ডিমিতির এবং অ্যাফ্রোডাইটে। শিকারী সমাজের মহান মাতার সাথে ধরিত্রী মাতা অঙ্গীভূত হয়ে তার ভয়ংকর গুণাবলী অনেকাংশে অক্ষুণ্ণ রাখেন। আনাট, যেমন এক নির্মম যোদ্ধা, প্রায়ই রক্তের সমুদ্রের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে এমনভাবে তাকে চিত্রিত করা হয়; ডিমিতিরকে বলা হয়েছে প্রতিশোধপরায়ণ এবং চণ্ড এমনকি অ্যাফ্রোডাইটে ভালবাসার দেবী তিনিও ভয়ংকর প্রতিশোধ নিয়ে থাকেন।

আবার অন্যদিকে পুরাণ পলায়নী প্রবৃত্তিসম্পন্ন না। নতুন নিওলিথিক পুরাণ মৃত্যুর বাস্তবতা স্বীকার করার জন্য মানুষকে বাধ্য করে। এগুলো কেবল পল্লীজীবনের সহজ সরল দৃশ্যপট ব্যাখ্যাকারী না। এবং ধরিত্রী মাতাও নমনীয় উপশমকারী দেবী নন, কারণ কৃষিকাজকে শান্তিপূর্ণ ধ্যানমগ্ন পেশা হিসাবে বিবেচনা করা হতো না। এটা ছিল একটা চলমান যুদ্ধ প্রক্রিয়া, মরিয়া সংগ্রাম, খরা, বন্ধ্যাত্ব, দুর্ভিক্ষ আর প্রকৃতির প্রলয়ংকরী শক্তির বিরুদ্ধে, যা কিনা আবার দিব্য শক্তি হিসাবেও প্রতিভাত।[৩৪] ফসল রোপণের কল্পিত যৌনতার মানে অবশ্য এই না যে মানুষও কৃষিকাজের অভিজ্ঞতাকে প্রণয়াভিসার হিসাবে দেখতো। মানুষের বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া মা এবং নবজাতকের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একইভাবে, কঠিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরেই কেবল ভূমি কর্ষণের কাজ সমাপ্ত হয়। জেনেসিসে, আদিম স্বর্গীয় দশার বিলুপ্তিকে কৃষিকাজে নিয়োজিত হওয়া হিসাবে বিবেচিত হয়। ইডেনে, প্রথম মানবসন্তানেরা অনায়াসে ঈশ্বরের বাগানের যত্ন নিত। পতনের পরে, নারী তার সন্তানকে দুঃখের মাঝে নিয়ে আসে, এবং পুরুষকে কপালের ঘাম ঝরিয়ে মাটির কাছ থেকে আহার্য আহরণ করতে হয়।[৩৫]

প্রাচীন পুরাণে, কৃষিকাজকে সহিংসতা হিসাবে বিবেচনা করা হতো এবং মৃত্যু আর ধ্বংসের দিব্য শক্তির বিরুদ্ধে একটা ক্রমাগত যুদ্ধ প্রক্রিয়া। পৃথিবীর অভ্যন্তরে বীজকে যেতে হবে– এবং ফসল উৎপাদনের নিমিত্তে নিজেকে আত্মত্যাগ করতে হবে এবং এই মৃত্যু কষ্টকর এবং অভিজ্ঞতাবহুল। চাষাবাদের অনুষঙ্গসমূহকে আয়ুধের মতো দেখতে লাগতো, শস্যদানাকে অবশ্যই গুঁড়ো করে ফেলতে হবে, এবং আঙ্গুর থেকে ওয়াইন উৎপাদনের আগে তাকে বিকৃত মণ্ডে পরিণত করতে হবে। ধরিত্রী দেবী সম্পর্কিত পুরাণে আমরা এসব দেখতে পাই, তার সব সহচরদের নির্মমভাবে ছিঁড়ে টুকরা করা হয়, অঙ্গহানি ঘটে এবং নিষ্ঠুরভাবে কেটে ফেলে হত্যা করা হয়, নতুন জীবন নতুন শস্যের সাথে পুনরায় মাথা তোলার আগে। মৃত্যু পর্যন্ত সংগ্রামের কথাই ধ্বনিত হয় এসব পুরাণে। প্যালিওলিথিক যুগ থেকে শুরু হওয়া বীরোচিত পুরাণে, প্রায়শই এক বীর পুরুষ বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে তার লোকদের জন্য সাহায্য নিয়ে আসততা। নিওলিথিক বিবর্তনের পরে, পুরুষদের প্রায়শই অসহায় এবং জড় হিসাবে দেখা যায়। এখানে আমরা এক নারী ঈশ্বরীকে খাদ্যের সন্ধানে পথিবীব্যাপী ঘুরে বেড়াতে দেখি, মৃত্যুর সাথে সংগ্রাম করে সে মানবজাতির জন্য পুষ্টি বয়ে আনে। ধরিত্রী মাতা নারীর বীরত্বের প্রতাঁকে পরিণত হয় পুরাণে যা শেষ পর্যন্ত ভারসাম্য এবং সম্প্রীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথাই বলে।

ঝড়ের দেবী, বাআলের বোন এবং স্ত্রী, আনাটের পুরাণে একটা বিষয় পরিষ্কার যা কেবল কৃষিকাজের কষ্টের কথাই রূপায়িত করে না সাথে সম্প্রীতি এবং পরিপূর্ণতা অর্জনের শ্রমসাধ্যতার কথাও বলে। বাআল, রোদে বিদীর্ণ হয়ে যাওয়া পৃথিবীর বুকে যে বৃষ্টি ঝরায়, সে নিজে বিশৃঙ্খলা আর বিচ্ছিন্নতার দানবদের সাথে সৃষ্টিশীল সংঘাতে সতত লিপ্ত থাকে। একদিন, মৃত্যু, খরা আর বন্ধ্যাত্বের দেবতা তাকে আক্রমণ করে, যে পৃথিবীকে বিচ্ছিন্ন প্রান্তরে পরিণত করার হুমকি ক্ৰমাগত দিতে থাকে। মটের হুমকির মুখে, বাআল একবার ভয় দমন করে কোনো ধরনের প্রতিরোধ না গড়ে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। মট তাকে উপাদেয় ভেড়ার মাংসের মতো চিবিয়ে খায় এবং তাকে জোর করে পাতালে মৃতদের রাজ্যে পাঠিয়ে দেয়। বাআল আর পৃথিবীতে বর্ষা আনতে পারে না, গাছগাছালি পানির অভাবে শুকিয়ে মারা যেতে শুরু করে, চারপাশ থেকে বিলাপের সুর ভেসে আসে। এল বাআলের বাবা- এক আদর্শ আকাশ দেবতা- অসহায়। তিনি যখন বাআলের মৃত্যুর খবর জানতে পারলেন, উঁচু সিংহাসন থেকে নেমে এসে ছেঁড়া কাপড় পরিধান করেন, এবং শোকের সনাতন কৃত্য অনুযায়ী নিজের গালে ক্ষত সৃষ্টি করেন, কিন্তু তারপরেও ছেলেকে বাঁচাতে পারেন না। আনাট্ একমাত্র কার্যকর দেবী। দুঃখ আর ক্ষোভে ভারাক্রান্ত, সে সমগ্র পৃথিবী, ক্ষ্যাপার মতো নিজের অল্টার ইগো, তার বাকী অর্ধাংশের খোঁজে দাপিয়ে বেড়ায়। যে সিরিয়ান পুঁথিতে এই পুরাণটা সংরক্ষিত আছে সেখানে বলা হয়েছে যে সে বাআলের জন্য ব্যাকুল হয়েছে ‘গাভী যেমন বাছুরের জন্য ভেড়ী যেমন তার শাবকের জন্য’ হয়ে থাকে।[৩৬] সন্তানেরা যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন ধরিত্রী দেবী জন্তুর মতোই হিংস্র এবং নিয়ন্ত্রণের অতীত হয়ে পড়েন। আনাট বাআলের দেহাবশেষ খুঁজে পেলে তার সম্মানে সে এক যজ্ঞের আয়োজন করে এবং এলের উদ্দেশে একটা আবেগময় অভিযোগ উচ্চারণ করে, কিন্তু মটকে খোঁজা থেকে সে বিরত থাকে না। সে যখন তাঁকে খুঁজে পায়, পূজোয় ব্যবহৃত কাস্তে দিয়ে চিরে তাকে সে দু’টুকরো করে ফেলে, ঝাঁঝরি দিয়ে শস্যদানা চালার মতো করে তাকে চালে, আগুনে পোড়ায়, জাঁতায় ফেলে পেষে এবং তার মাংস সারা প্রান্তরে ছড়িয়ে দেয় ঠিক যেমন একজন কৃষক তার শস্যের সাথে ব্যবহার করে।

আমাদের তথ্য ভাণ্ডার এখনও সমৃদ্ধ হয়নি তাই আমরা এখনও জানি না আনাট কিভাবে বাআলকে পুনরায় জীবিত করেছিল। বাআল আর মট দু’জনেই ঐশ্বরিক, সেজন্যই কাউকে পুরোপুরি নাশ করা সম্ভব না। দু’জনের ভিতরে সংঘর্ষ চলতেই থাকবে, এবং মৃত্যুর থাবা বাঁচিয়ে প্রতি বছর শস্য ঘরে তোলা হবে। পুরাণের একটা ভাষ্যে আছে, আনাট বাআলকে এতটাই পরিপূর্ণভাবে একত্রিত করে যে মট পরবর্তীকালে তাকে আক্রমণ করলে সে পূর্বাপেক্ষা তেজোদীপ্ত ভঙ্গিতে তার জবাব দিতে সক্ষম হয়। বৃষ্টি পৃথিবীতে ফিরে আসে, উপত্যকায় মধুর নহর বইতে আরম্ভ করে এবং স্বর্গের মূল্যবান তেল বৃষ্টির আকারে বর্ষিত করে। বাআল আর আনাটের শারীরিক মিলন দিয়ে গল্পটা শেষ হয়, পরিপূর্ণতা এবং সমাপ্তির একটা ছবি, প্রতি বছর নবান্নের সময় ধর্মীয় প্রার্থনার ভঙ্গিতে বার বার যা অভিনীত হয়।

মিশরে আমরা একই ধরনের পুরাণ দেখতে পাই তবে আনাটের চেয়ে আইসিস অনেক দুর্বল। ওসিরিস, মিশরের প্রথম সম্রাট, তার লোকদের চাষাবাদের জ্ঞান দান করেন। তার ভাই সেথ ছিল, সিংহাসনপ্রত্যাশী, সে তাকে হত্যা করে এবং আইসিস তার বোন এবং স্ত্রী সারা পৃথিবী তার দেহের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। সে যখন মৃতদেহ খুঁজে পায়, সে তাকে সামান্য সময়ের জন্যেই পুনর্জীবিত করতে পারে যখন সে তার এক পুত্র হোরাসকে তার বংশ রক্ষার জন্য রাজি করায় তার পরেই সে আবার মারা যায়। তারপরে ওসিরিসের শরীর টুকরো টুকরো করে কাটা হয় এবং প্রতিটা খণ্ড বীজের ন্যায়, মিশরের বিভিন্ন অংশে রোপণ করা হয়। সে মৃতদের পৃথিবী দোয়াতের শাসনকর্তা হয় এবং প্রতি বছর নবান্ন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব তারই, তার মৃত্যু এবং অঙ্গহানি, শস্য কাটা এবং ঝারাইয়ের মাধ্যমে ধর্মীয় আচারের ভঙ্গিতে অভিনীত হয়। মৃতের দেবতা প্রায়শই ফসলেরও দেবতা, জীবন আর মৃত্যু অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত সেটাই দেখায়। একটাকে ছাড়া আরেকটাকে পাওয়া সম্ভব না। দেবতা মারা গিয়ে আবার প্রাণ ফিরে পাওয়া একটা বিশ্বজনীন প্রক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে অনেকটা ঋতুর আগমন আর বিদায় নেবার মতো। নূতন প্রাণের আবাহন হয়তো হবে কিন্তু এসব পুরাণের মূল বৈশিষ্ট্য এবং শস্যদায়ী দেবতার মৃত্যুর এই প্রথা সবসময়েই বিপর্যয় আর রক্তপাতে মেদুর এবং প্রাণের শক্তির বিজয় কখনও সমাপ্ত হয় না।

পারস্যের দেবী ইনানার পাতাল প্রবেশের ঘটনা যে পুরাণে বিবৃত হয়েছে সেখানে এটা পরিষ্কার বোঝা যায়। দিকশূন্যপুরে আরেকটা অভিমন্ত্রণের যজ্ঞ হিসাবে এটাকে দেখা যেতে পারে, মৃত্যুর অভিজ্ঞতা যা নতুন জীবনের সূচনা করবে। পৃথিবীর গর্ভে ইনানার এই বিপদসঙ্কুল যাত্রার পেছনে তার কোনো শুভ উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের সূত্র ঘেঁটে, যা অসম্পূর্ণ, আমরা যতদূর বলতে পারি, তার উদ্দেশ্য ছিল তার বোন এরেসকিগাল, নরকের রানী, যে আবার অন্যদিকে প্রাণের সঙ্গী, তার রাজ্য অন্যায়ভাবে দখল করা। এরেসকিগালের লাপিস লাজুলি প্রাসাদে প্রবেশের আগে বোনের শহরের সাতটা দেয়ালের সাতটা দরজা তাকে অতিক্রম করতে হবে। প্রতিবার দ্বাররক্ষী ইনানাকে থামার নির্দেশ দিয়ে পরিচয় জানতে চায় এবং তাকে বাধ্য করে তার পরিধেয় বস্ত্রের একটা অংশ ত্যাগ করতে, এভাবে অবশেষে বোনের সামনে হাজির হলে দেখা যায়, ইনানা তার সব রক্ষাকবচ খুইয়ে ফেলেছে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পাতালের সাত বিচারক ইনানাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় এবং তার শবদেহ একটা শূলে গেঁথে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেয়া হয়।

ইনানাকে অবশ্য অন্য দেবতারা উদ্ধার করে এবং এক দঙ্গল শয়তানের সাথে পৃথিবীতে তার প্রত্যাবর্তন ভয়ংকর এবং উল্লাসপূর্ণ। সে যখন প্রাসাদে ফিরে আসে, দেখে তার সুদর্শন তরুণ মেষপালক স্বামী দুমুজি, তার সিংহাসনে বসার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। ক্রোধে কুপিত হয়ে, ইনানা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে, দুমুজি পালায়, শয়তানের প্ররোচনা তাকে বাধ্য করে পাতালে গিয়ে ইনানার স্থান নিতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতা হয়, সেখানে দুমুজি আর তার বোন জেসটিনানার মাঝে বছরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়, প্রত্যেকেই এরেসকিগালের সাথে পাতালে ছয়মাস পর্যায়ক্রমে কাটাবে। কিন্তু ইনানার অভিযানের ফলে পৃথিবীর চিত্র চিরকালের মতো বদলে যায়, দুমুজি অনুপস্থিত বিধায়, এখন শস্যের নতুন দেবতা ঋতু পরিবর্তন ঘটাতে থাকেন। সে যখন ইনানার কাছে ফিরে আসে, মেষশাবকের জন্মের মধ্য দিয়ে পৃথিবী প্রাণবন্ত হয়ে উঠে, এবং শস্যে ফুল ফুটতে শুরু করে, দ্রুত নবান্ন এসে হাজির হয়। সে যখন পাতালে চলে যায় তখন পৃথিবীতে গ্রীষ্মের দাবদাহ লম্বা খরা বয়ে আনে। মৃত্যুর উপরে কেউ চূড়ান্তভাবে জয়ী হতে পারে না। যে সুমেরীয় কবিতায় এই পুরাণটা বিধৃত হয়েছে সেটা শেষ হয়েছে একটা আর্তির মধ্য দিয়ে : এরিসকিগাল! তোমার প্রশংসা মহান![৩৭] যেটকু মনে থাকে তা নারীর মর্মান্তিক বিলাপ, বিশেষ করে, দুমুজির মা, যখন নিজের সন্তান হারাবার জন্য শোক প্রকাশ করে, ‘একটা নিঃসঙ্গ স্থানে একাকী; যেখানে সে এক সময় জীবিত ছিল, এখন ভূমিশয্যা নিয়েছে যুবা ষাড়ের মতো’।[৩৮]

আমাদের এই ধরিত্রী দেবী ত্রাণকর্তা নন, বরং মৃত্যু আর কষ্টের কারণ। তার যাত্রা একটা, পরিবর্তনের আচার যা আমাদের প্রত্যেকের জন্যই প্রয়োজনীয়। ইনানা পাতালে যায় তার বোনের সাথে দেখা করতে, তার নিজের সত্তার একটা চাপা পড়া অশঙ্কিত রূপ। এরেসকিগাল চূড়ান্ত বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করে। মূলত এসময় থেকেই, অনেক পুরাণে, ধরিত্রী দেবীর সাথে দেখা হওয়াটাকেই নায়কের চূড়ান্ত অভিযান হিসাবে দেখানো হয়, চরম উদ্ভাসন। জীবন ও মৃত্যুর দয়িতা এরেসকিগালও একজন ধরিত্রী দেবী, যিনি ক্রমাগত জন্ম দিয়ে চলেছেন। তার নিকটে পৌঁছাতে চাইলে, এবং সত্যিকারের অন্তর্দৃষ্টি লাভ করতে হলে, ইনানাকে তার কাপড় সরিয়ে রেখে যা তার ঘাতোপযোগিতাকে রক্ষা করে, আত্মপ্রচার জলাঞ্জলি দিয়ে, নিজের পুরাতন সত্তাকে হত্যা করে, যা আপাতদৃষ্টিতে তার বিপরীত আর বৈরী তাকে আত্তীকৃত করে, এবং অসহ্যকে গ্রহণ করে : যথা, মৃত্যু অনুকার এবং বঞ্চনা ব্যতীত কোনো জীবন থাকতে পারে না।[৩৯]

ইনানার সাথে সম্পৃক্ত আচার অনুষ্ঠান তার কাহিনীর শোকাবহতার উপরে আধারিত এবং বসন্ত কালে দুমুজির সাথে তার একত্রিত হওয়াটা কখনও উদ্‌যাপন করা হয় না। কারণ এটা খুব শক্তিশালীভাবে উপস্থাপিত যা অস্তিত্বের মূলনীতি হিসাবে অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়, ধর্মীয় প্রথা বেশ ব্যাপক বিস্তৃত। ব্যাবিলনে ইনানাকে ইশতার নামে অভিহিত করা হয়, সিরিয়াতে আশতারতে (আশেরাহ্ ); নিকট প্রাচ্যে দুমুজি, তামুজ নামে পরিচিত এবং এই অঞ্চলের রমণীরা তার মৃত্যুতে শোক পালন করে থাকে।[৪০] গ্রীসে তাকে ডাকা হয় এডনিস নামে, কারণ সেমিটিক দুনিয়ার মেয়েরা তাদের ‘লর্ড’ (এডন) এর জন্য শোক পালন করে। এডনিসের কাহিনী সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু এর মূল আখ্যানে, সুমেরীয় পুরাণের সাথে এর মৌলিক বিন্যাসে মিল রয়েছে, সেখানে দেখানো হয় যে দেবী মৃত্যুর কাছে তার তরুণ প্রেমিককে হস্তান্তর করছে। [৪১] শিকারীদের মহান দেবীর ন্যায়, নিওলিথিক ধরিত্রী দেবী আমাদের দেখায় যে, যদিও পুরুষকে অনেক শক্তিশালী বলে মনে হয় তবে মেয়েরাই অধিক শক্তিশালী এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তাদেরই হাতে।

ডিমিতির আর তার কন্যা পার্সিফোনের পুরাণে এটা আপাতভাবে ফুটে উঠেছে, যা নিশ্চিতভাবেই নিওলিথিক পর্বের।[৪২] শস্যমাতা ডিমিতির দায়িত্ব ছিল পৃথিবীর উর্বরতা শক্তি আর শস্য রক্ষা করা। পাতালের শাসক হেডেস পার্সিফোনকে অপহরণ করলে ডিমিতির মাউন্ট আলিম্পাসের আবাস পরিত্যাগ করে বেদনাবিধুর চিত্তে পৃথিবীময় ঘুরে বেড়ায়। কুপিত হৃদয়ে সে নবান্ন আটকে দিয়ে মানুষকে অনাহারে রাখার হুমকি দেয় যদি না তাকে তার কন্যা কোরে (মেয়ে) ফেরত দেয়া না হয়। শঙ্কিত হয়ে দেবরাজ জিউস, দিব্য বার্তাবাহক হামেসকে পাঠান কোরেকে উদ্ধার করতে কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দিকশূন্যপুরে অবস্থানকালে সে কিছু ডালিমের বীচি খেয়ে ফেলে এবং সে কারণে বছরের চারমাস হেডেসের সাথে কাটাতে বাধ্য হয় এখন যে তার পতিদেব। মায়ের সাথে পুনরায় তার মিলন ঘটলে ডিমিতির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং পৃথিবী আবারও শস্যশ্যামল হয়ে উঠে।

এটা প্রকৃতির কোনো মামুলি রূপক নয়। ডিমিতির কৃত্যানুষ্ঠান শস্য রোপণ বা কাটার সাথে কখনও মিলে না। পৃথিবীর অভ্যন্তরে বীজের ন্যায় পার্সিফোনই হয়তো অবতরণ করে কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একটা বীজ থেকে কয়েক সপ্তাহে অঙ্কুরোদ্গম ঘটে, সেজন্য চারমাস অপেক্ষা করতে হয় না। ইনানার পুরাণের ন্যায়, এটা আরেকটা দেবীর উধাও হয়ে ফিরে আসবার গল্প। এটা মৃত্যু সম্পর্কীয় পুরাণ। প্রাচীন গ্রীসে, ডিমিতির, শস্য দেবী, আবার মৃত্যুর সহচরী এবং এথেন্সের কাছে অ্যালুসিসে অবস্থিত রহস্যময় প্রার্থনা সভার সভাপতিত্বকারী। এগুলো সব গোপন কৃত্য কিন্তু মনে হয় যে এসব মিসটাই (দীক্ষা) কৃত্য মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা মেনে নেয়ার লক্ষ্যে সূচিত যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এভাবেই মৃত্যু সম্পর্কিত ভীতি কাটানো হয়। এই দীর্ঘ দীক্ষাদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের মনমানসিকতার উপরে এইসব শক্তিশালী কৃত্যানুষ্ঠান পুরাণের অর্থ অনপনেয়ভাবে মুদ্রিত করে দেয়। মৃত্যুর উপর চূড়ান্ত বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। কোরেকে অনন্তকাল ধরে মর্ত্য আর পাতালে ঘুরে বেড়াতে হবে। কুমারীর প্রতীকী মৃত্যু ব্যতীত কোনো জীবন খাদ্য বা শস্যকণা বেঁচে থাকতে পারবে না।

অ্যালুসিনিয়ান রহস্য সম্পর্কে আমরা খুব অল্পই জানি, কিন্তু যারা এসব কৃত্যে অংশ নিত তারা বিভ্রান্তবোধ করত যদি তাদের জিজ্ঞেস করা হতো সত্যিই কি তারা বিশ্বাস করে যে পার্সিফোন আসলেই পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল, পুরাণে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরাণটা সত্যি, কারণ যেদিকেই তুমি তাকাবে দেখবে জীবন আর মৃত্যু অচ্ছেদ্য এবং পৃথিবী মারা গিয়ে পুনরায় প্রাণের স্পন্দনে ফিরে আসে। মৃত্যু, ভীতিকর, আতঙ্কময় এবং অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সেটাই শেষ কথা না। একটা গাছ কেটে তার মৃত শাখা ছুঁড়ে ফেলে দিলে সেখান থেকে একটা চারা গাছ জন্মায়। কৃষিকাজ একটা নতুন, যদিও সীমিত অর্থে, সম্ভাবনার কথা বলে।[৪৩] শস্য জন্ম দেবার জন্য বীজকে মারা যেতে হবে; ডালপালা ছাঁটা গাছের জন্য আক্ষরিক অর্থে মঙ্গলময় এবং নতুন প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানায়। অ্যালুসিসে দীক্ষানুষ্ঠান দেখায় যে মৃত্যুর সাথে মোকাবেলা আধ্যাত্মিক জাগরণের দিকে নিয়ে যায় এবং মানুষের ক্ষেত্রে সেটা নিড়ানির কাজ করে। এটা অমরত্ব বয়ে আনবে না- সেটা কেবল দেবতাদের জন্য নির্দিষ্ট- কিন্তু এটা আমাদের নির্ভীকভাবে আর পরিপূর্ণভাবে বাঁচতে সাহায্য করে এবং মৃত্যুর মুখের দিকে এখন অনেক শান্তভাবে আমরা তাকাতে পারি। বাস্তবিক প্রতিদিন আমরা আমাদের অর্জিত সত্তাকে মৃত্যুর হাতে সমৰ্পণ করতে বাধ্য হই। নিওলিথিক সময়েও শেষকৃত্যের পুরাণ এবং আচারাদি মানুষকে তাদের মরণশীলতা মেনে নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে সাহায্য করেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *