২. ইসরাইল

২. ইসরাইল 

ইসরাইলি ছিল কারা? বাইবেল আমাদের জানায় যে তারা শুরুতে এসেছিল মেসোপোটেমিয়া থেকে। একসময় তারা কেনানে বসতি স্থাপন করে। তারপর খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ সালের দিকে দুর্ভিক্ষের সময় ইসরাইলের ১২টি গোত্র মিসরে অভিবাসন করে। প্রথমে তারা মিসরে সমৃদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে, তারা ক্রীতদাসে পরিণত হয়। সবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ সালের দিকে তারা মুসার নেতৃত্বে মিসর থেকে পালিয়ে গিয়ে সিনাই উপদ্বীপে যাযাবর জীবনযাপন করতে থাকে। তবে তারা একে তাদের স্থায়ী সমাধান মনে করেনি। কারণ তারা নিশ্চিত ছিল, তাদের ঈশ্বর যিহোবা তাদেরকে কেনানের উর্বরা ভূমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইসরাইলিরা প্রতিশ্রুত ভূমিতে পৌঁছার আগেই মুসা মারা যান। তবে যশুয়ার অধীনে গোত্রগুলো বলপূর্বক কেনানে ঢুকে পড়ে, তাদের ঈশ্বরের নামে তরবারির সাহায্যে দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সালের দিকে ঘটনাটি ঘটেছিল। বাইবেল ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের কথা বলে। যশুয়া জয় করেছিলেন ‘পার্বত্যাঞ্চল, নেগেভ, নিম্নভূমি, পাহাড়ি এলাকা এবং তাদের সব রাজাকে। তিনি একজনকেও জীবিত রাখেননি। ১২টি গোত্রের সবাইকে কেনানের একটি করে অংশ বরাদ্দ করা হয়। তবে জুদা ও বেনিয়ামিনের ভূখণ্ডের মধ্যে একটি নগরী প্রতিরোধ ছিল : ‘জুদার ছেলেরা জেরুসালেমে বসবাসকারী জেবুসিতদের তাড়িয়ে দিতে পারেনি’ বলে স্বীকার করে নিয়েছে বাইবেল। ‘জেবুসিতেরা জুদার সন্তানদের পাশাপাশি জেরুসালেমে বাস করতে থাকে, ঠিক এখন তারা যেভাবে বাস করছে।২ শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের ধর্মের মূল বিষয়ে পরিণত হয় জেরুসালেম। তবে বাইবেলে স্পষ্টভাবে এই নগরীর নাম প্রথমবার উল্লেখ করার সময় এটিকে শত্রু ভূখণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছিল। 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষজ্ঞরা বাইবেলের ভাষ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। প্রত্নতাত্ত্ববিদেরা কেনানি কিছু এলাকায় ধ্বংসের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন। তবে এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কিত নয়। ইসরাইলিদের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হওয়া পাহাড়ি এলাকায় বিদেশি আক্রমণের কোনো চিহ্ন নেই। এমনকি বাইবেল লেখকেরা স্বীকার করেছেন, যশুয়ার বিজয় সামগ্রিক ছিল না। তারা বলছেন, তিনি কেনানি নগর-রাষ্ট্রগুলোকে পরাজিত করতে পারেননি, তিনি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কোনো সাফল্য পাননি। যওয়ার গ্রন্থটির প্রথম ১২টি অধ্যায় সতর্কভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে বেশির ভাগ পদক্ষেপ বেনিয়ামিন ভূখণ্ডের খুবই ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। বস্তুত বাইবেল আমাদের মধ্যে বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে যে যশুয়ার বিজয় বড় ধরনের কিছু ছিল না। অবশ্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক বিশেষজ্ঞ এখনো আছেন যারা মনে করেন, এই প্রক্রিয়ায় ইসরাইলিরা দেশটি জয় করেছিল। তবে অন্যরা এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছেন যে বাইরে থেকে হঠাৎ করে সহিংসভাবে প্রবেশ করার বদলে কেনানি সমাজের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে ও ধীরে ধীরে আবির্ভূত হয়েছিল ইসরাইল। 

ইসরাইল যে ত্রয়োদশ শতকের শেষ দিকে কেনানে পৌঁছেছিল তা নিয়ে সন্দেহ নেই। খ্রিস্টপূর্ব ১২০৭ সালে ফারাও মারনেপতাহর সফল অভিযানের কেন্দ্রস্তম্ভ স্মারকে আমরা অন্য বিজয়ীদের মধ্যে এই আগমন দেখতে পাই : ‘ইসরাইল খুবই ক্ষতিকারক, কিন্তু এর বীজের নয়।’ তবে এই সময় বাইবেলের বাইরের এর উল্লেখ এই একটিই পাওয়া যায়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, চতুর্দশ শতকে বিভিন্ন খোদাইলিপি ও নথিপত্রে উল্লেখিত হ্যাপির বা অ্যাপিরু ছিল যওয়ার ‘হিব্রু’ গোত্রগুলোর পূর্বসূরী। তবে মনে হয়, হ্যাপির কোনো জাতিগত গ্রুপ ছিল না, বরং কেনানি সমাজের কোনো শ্রেণি ছিল। তারা সামাজিক অচ্ছ্যুতে পরিণত হয়ে অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কারণে নগর-রাষ্ট্রগুলো থেকে নির্বাসিত হয়ে গিয়েছিল। অনেক সময় তারা লুটতরাজকারীতে পরিণত হয়, অনেক সময় ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিল। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কেনানে তারা ধ্বংস সৃষ্টিকারী বাহিনী হিসেবে বিবেচিত হতো। হ্যাপিরুদের ব্যাপারে আবদি হেপা নিজেও উদ্বেগে ছিলেন। মিসরে দলচ্যুত হয়ে ইসরাইলিরা প্রথমে নিজেদের ‘হিব্রু’ হিসেবে অভিহিত করেছিল। তবে ওই এলাকায় একমাত্র তারাই হ্যাপির ছিল না। 

এর বদলে বর্তমান সময়ের বিশেষজ্ঞরা কেনানের মধ্য পাহাড়ি এলাকায় নতুন বসতি স্থাপনের প্রবল উদ্যোগের সাথে ইসরাইলের জন্মকে সম্পৃক্ত করেছেন। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জেরুসালেমের উত্তরে পার্বত এলাকায় খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সালের অরক্ষিত নতুন প্রায় ১০০ গ্রামের সন্ধান পেয়েছেন। এই বিরানভূমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব ছিল না। তারা সম্ভবত ওই সময়ের সর্বশেষ কোনো প্রযুক্তি করায়ত্ত করে সেখানে বসতি স্থাপন সম্ভব করেছিল। নতুন বসতি স্থাপনকারীরা ভেড়া, ছাগল ও ষাঁড়ের শঙ্করকরণের কষ্টকর কাজের মাধ্যমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। বসতি স্থাপনকারীরা যে বিদেশি ছিল- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। এসব গ্রামের 

বস্তুগত সংস্কৃতি উপকূলীয় সমভূমির মতোই একই ধরনের দেখা যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এ কারণে উপসংহার টেনেছেন, বসতি স্থাপনকারীরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল স্থানীয় কেনানি।’ তখন ছিল বিশেষ করে নগর-রাষ্ট্রগুলোতে অস্থিরতার সময়। অনেকে পাহাড়ি এলাকাকেই বাস করার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিল। সেখানে তাদের কঠোর জীবনযাপন করতে হলেও যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত ছিল, এ দুটি তখন উপকূলের ক্ষয়িষ্ণু নগর-রাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল। বসতি স্থাপনকারীদের অনেকে হ্যাপির হলেও অন্যরা ছিল যাযাবর। এই বিক্ষুব্ধ সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে তারা এই অবস্থা গ্রহণ করেছিল। কেনানি শহরগুলো থেকে আলাদা হওয়ার এই অভিবাসনই কি ইসরাইলের কেন্দ্রবিন্দু ছিল? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতকে এ এলাকাতেই ইসরাইল রাজ্যের আবির্ভাব ঘটেছিল। এই তত্ত্ব ঠিক হলে ‘ইসরাইলিরা’ সম্ভভত কেনানের স্থানীয় বাসিন্দা ছিল, তারা পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপন করে ধীরে ধীরে আলাদা পরিচিতি অর্জন করেছিল। অনিবার্যভাবেই তারা মাঝে মাঝে অন্যান্য নগরীর সাথে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ত, এসব সংঘর্ষের কাহিনীই যওয়া ও জাজের বর্ণনার ভিত্তি। 

কিন্তু ইসরাইলিরা যদি কেনানিই হয়ে থাকে, তবে কেন বাইবেলে এত জোর দিয়ে বলা হলো যে তারা বহিরাগত? ইসরাইলি পরিচিতিতে তাদের বহিরাগত উৎস নিরঙ্কুশভাবে মূল বিষয়। বস্তুত, পেন্টাটেয়ুচের, বাইবেলের প্রথম পাঁচটি গ্রন্থে, গল্পে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে ইসরাইলের আবাসভূমি অনুসন্ধানের কাহিনী। বহিষ্কারের পুরো গল্পই বানোয়াট, এমনটি বিশ্বাস করা অচিন্তনীয় ব্যাপার। সম্ভবত কিছু হ্যাপিরু ফারাওয়ের করভি (বাধ্যতাপূর্ণ শ্রমিক) পালিয়ে পরে পাহাড়ি দেশের কেনানি বসতিগুলোতে যোগ দিয়েছিল। এমনকি বাইবেলেও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরাইলের সব মানুষ এক্সডাসে অংশ নেয়নি।’ শেষ পর্যন্ত মিসর থেকে নবাগত এসব লোকের ধর্ম ও পুরাণতত্ত্বই ইসরাইলের প্রধান মতাদর্শে পরিণত হয়। দাসত্ব থেকে ঐশী মুক্তির গল্প ও ঈশ্বর যিহোবার বিশেষ সুরক্ষা হয়তো কেনানিদের কাছে বিশেষ আবেদনময় হয়েছিল। কারণ তারাও নির্যাতনকারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছিল। তারা সচেতন ছিল যে তারা তাদের পাহাড়ি এলাকায় বসতি স্থাপনে উত্তেজনাকর নতুন পরীক্ষা চালাচ্ছে। 

ইসরাইলিরা দেশে প্রধান শক্তিতে পরিণত হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজেদের ইতিহাস লিখতে শুরু করেনি। বিশেষজ্ঞরা ঐতিহ্যগতভাবে পেন্টাটেয়াচের গ্রন্থে থাকা চারটি উৎস দেখতে পেয়েছেন। প্রথম দুই লেখক পরিচিত ‘জে’ ও ‘ই’ নামে। কারণ, তারা ইসরাইলের ঈশ্বরের পদবি হিসেবে যথাক্রমে ‘যিহোবা’ ও ‘ইলোহিম’ ব্যবহার করেছিলেন। তারা সম্ভবত দশম শতকে লিখেছিলেন, অবশ্য কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এগুলো লেখা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে। ডিউটারোনোমিস্ট (‘ডি’) ও প্রিস্টলি (‘পি’) নামের দুই লেখক ষষ্ট শতকের সময় সক্রিয় ছিলেন। এই সময় বা এর আগেই ইসরাইলিদের বেবিলনে নির্বাসন ঘটেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ব্যাখ্যা পরিতৃপ্ত করতে পারছে না। অনেক বিশেষজ্ঞ আরো চরম তত্ত্ব প্রকাশ করছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাদের অনেকে বলছেন, পুরো পেন্টাটেউচই রচিত হয়েছিল ষষ্ট শতকের শেষ দিকে, তা লিখেছিলেন মাত্র একজন লেখক। তবে এখন পর্যন্ত প্রথাগতভাবে চার উৎস তত্ত্বের আলোকে বাইবেলের প্রাথমিক গ্রন্থগুলো বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ইসরাইল ও জুদার- যশুয়া, জাজেজ, স্যামুয়েল ও রাজাদের গ্রন্থরাজি- পরবর্তী ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলো লেখা হয়েছিল প্রবাসকালে ডিউটারোনোমিস্ট অনুসারী (‘ডি’) ইতিহাসবিদদের হাতে। তাদের আদর্শগুলো আমরা চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচনা করব। তারা অনেক সময় আগের উৎস ও ইতিহাস ধারা নিয়ে কাজ করলেও নিজেদের ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার দিকেই ধাবিত হতেন। দি ক্রোনিক্লেয়ার সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি সময়ে লিখেছিলেন। তিনি তার সূত্রগুলোর প্রতি বেশ উদ্ধত্য ছিলেন। আমাদের লেখকদের কেউই আজকের মানদণ্ড অনুযায়ী বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস লেখেননি। তাদের নিজেদের সময়ে জনগণ অতীতকে কিভাবে দেখেছে তাই তারা তুলে ধরেছেন। 

ইসরাইলের তিন গোষ্ঠীপতি (প্যাট্রিয়াক) ইব্রাহিম (আব্রাহাম), ইসহাক (আইজ্যাক) ও ইয়াকুব (জ্যাকব) সম্পর্কে এসব কাহিনী বিশেষভাবে প্রযোজ্য। যেসব ঘটনার বর্ণনা তারা দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন, সেগুলো ঘটেছিল তাদের লেখা শুরু করার হাজার বছর আগে। তারা কিংবদন্তি, আমাদের দৃষ্টিতে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন। বাইবেলের লেখকেরা ঊনিশ ও আঠারো শতকের কেনানের জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দেশটিতে ওই সময় মিসরীয়দের শক্তিশালী উপস্থিতি সম্পর্কে তারা কিছুই উল্লেখ করেননি। কিন্তু তার পরও গোষ্ঠীপতিদের এসব কাহিনী গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ, জে ও ই যখন লিখছিলেন, তখন ইসরাইলিরা কিভাবে নিজেদের আলাদা পরিচিতি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তা তারা দেখেছেন। এই সময় ইসরাইলিরা বিশ্বাস করত, তারা সবাই অভিন্ন পূর্বপুরুষ ইয়াকুবের বংশধর। এই ইয়াকুবই দেবতার সাথে তার বিশেষ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে নতুন নাম ইসরাইল (‘আল্লাহ তার শক্তি প্রদর্শন করুন!’ কিংবা বিকল্পভাবে বলা যায়, ‘আল্লাহর জন্য যে সংগ্রাম করে’) দিয়েছিলেন। ইয়াকুব/ইসরাইলের ১২টি ছেলে ছিল। তাদের প্রত্যেকে একটি করে গোত্রের জনক। এরপর ইসরাইলিরা যার দিকে তাকাত, তিনি হলেন ইয়াকুবের দাদা ইব্রাহিম। তাকে ঈশ্বর নতুন জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। তাদের বিশ্বাস এতই প্রবল ছিল যে তারা তাদের মূল কেনানে নিজেদের সীমিত না রেখে পূর্বপুরুষদের সন্ধানে মেসোপোটেমিয়ায় ফিরে গিয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫০ সাল নাগাদ তারা বিশ্বাস করত, ঈশ্বর হারানে ইব্রাহিমের কাছে এসে তাকে বলেছিলেন : ‘আমি তোমাকে যে ভূমি দেখিয়ে দেব, তার জন্য তুমি তোমার দেশ, তোমার পরিবার ও তোমার বাবার গৃহ ত্যাগ করো। ওই দেশটি হলো কেনান। ইব্রাহিম কথামতো মেসোপোটেমিয়া ত্যাগ করেছিলেন, তবে কেনানে বসবাস করছিলেন অভিবাসী হিসেবে। হেবরনের ম্যাচপেলাহ গুহায় স্ত্রীর কবরের জন্য এক টুকরা জমি কেনার আগে তার কোনো ভূমি ছিল না। 

একটি আবাসভূমির সন্ধান করার জন্য গোষ্ঠীপতির ভাষ্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুব সবাই কেনানে তাদের বিদেশি পরিচিতি সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।’ ইব্রাহিমের পৌছার ঘটনা বর্ণনা করার সময় ‘জে’ পাঠককে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন : ‘ওই সময় ওই ভূমিতে ছিল কেনানিরা।’ এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জেরুসালেমের ও পবিত্র ভূমির ইতিহাসে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম- সবাইকে এই সত্যের সাথে মানিয়ে নিতে হয়েছিল যে নগরী ও ভূমিটি তাদের আগে অন্য জাতির কাছে ঐশী শক্তিসম্পন্ন ছিল এবং তাদের অধিকারের সত্যতা অনেকাংশে নির্ভর করতে তাদের পূর্বসূরীদের প্রতি তারা কেমন আচরণ করছে তার ওপর। 

মনোনীতি জাতির আগে কেনানে অন্য জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ধারণাটিকে দেখা যেতে পারে প্রথম ছেলের বদলে দ্বিতীয় ছেলেকে গ্রহণ করার ঈশ্বরের দৃঢ় ইচ্ছায়। এ কারণে ইব্রাহিমের ছিল দুই ছেলে। প্রথমজন ছিলেন ইসমাইল। তিনি উপপত্নী হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ইব্রাহিমের বৃদ্ধ বয়সে ও বন্ধ্যা স্ত্রী সারাহর গর্ভে অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইসহাক। তখন ঈশ্বর বড় ছেলেকে কোরবানি করতে ইব্রাহিমকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইসমাইলও একটি মহান জাতির পিতা হয়েছিলেন। তবে ইব্রাহিমের নাম অবশ্যই বয়ে চলেছিল ইসহাকের মাধ্যমে। গোষ্ঠীপতি এরপরপরই হাজেরা ও ইসমাইলকে কেনানের পূর্ব দিকের মরুভূমিতে নির্বাসন দিলেন। এখানে তারা নিশ্চিতভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে, ঈশ্বর তাদেরকে সুরক্ষা না দিলে। তাদের প্রতি বাইবেল লেখকদের আর তেমন আগ্রহ দেখা যায় না। তবে আমরা ১১তম অধ্যায়ে দেখা যাবে, কয়েক শত বছর পর ইসমাইলের বংশধর দাবিদার একটি জনগোষ্ঠী জেরুসালেমে এসে পড়েছে। পরবর্তী প্রজন্মেও ঈশ্বর দ্বিতীয় ছেলেকেই মনোনীত করেছেন। ইসহাকের স্ত্রী রেবেকার মনে হয়েছিল, গর্ভে তার যমজ শিশু লড়াই করছে, ঈশ্বর তাকে বললেন, তার দেহে দুটি জাতি লড়াই করছে। যমজ দুজনের জন্মের সময় দ্বিতীয়টি তার ভাই ইসাউর গোঁড়ালি ধরে বাইরে আসে। এর পরপরই তাকে বলা হলো ইয়াকুব : গোঁড়ালি ধারক বা সাপ্লান্টার। যমজ দুজন বড় হলে ইয়াকুব বৃদ্ধ ইসহাককে কৌশলে কব্জা করে তাকেই তার বড় ভাইয়ের জন্য নির্ধারিত অধিকারটি দিতে রাজি করিয়ে নেন। এরপর ইসাউকে পূর্বাঞ্চলীয় ভূমিতে পরিত্যক্ত করা হয়। জে কিংবা ই প্রত্যাখ্যাত বড় ছেলের দাবির গুরুত্ব হ্রাস করেননি। হাজেরা ও ইসমাইলের কাহিনীতে করুণ রস রয়েছে, ইসাউর মর্মপীড়ার প্রতি পাঠক সহানুভূতিসম্পন্ন হয়। জে ও ই যখন লিখছিলেন, তখন ইসরাইলিরা প্রতিশ্রুত ভূমিতে উগ্র স্বাদেশিকতার যুক্তি হিসেবে তাদের মালিকানার বিষয়টি উপলব্ধি করেনি : তাদের নিজেদের ভূমিতে জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াটি ছিল অন্যদের জন্য বেদনাদায়ক ও নৈতিকভাবে হতবুদ্ধিকর। 

যশুয়ার মতো উগ্র উদ্দীপনা অন্য কারো ছিল না। তাকে ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন কেনানের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সব বেদী ও ধর্মীয় প্রতীক সমূলে উচ্ছেদ করার। পরে এটিই হয়ে পড়ে ইসরাইলি আদর্শ। জে ও ই উভয়েই দেখিয়েছেন, বেশির ভাগ সময়েই গোষ্ঠীপতিরা কেনানিদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন, তাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। তাদের মতে, গোষ্ঠীপতিরা দেশের ওপর তাদের নিজেদের ঈশ্বরকে চাপিয়ে দিতে চাননি, এমনকি স্থানীয় লোকজনের বেদীতে তারা মন্দিরও বানাননি। ইব্রাহিম দৃশ্যত ওই দেশের পরাক্রমশালী ঈশ্বর আলের উপাসনা করতেন। 

পরে আলই কল্পনাপ্রসূতভাবে যিহোবা তথা মুসার ঈশ্বরের সাথে মিশে যায়। জ্বলন্ত ঝোপ থেকে মুসাকে ঈশ্বর নিজেই বলেছেন, ‘আমি হলাম প্রভু। আমি ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতাম। তারা আমায় এলসদাই (সর্বশক্তিমান ঈশ্বর) বলে ডাকত। আমি যিহোবা নামে তাদের কাছে আমাকে পরিচিতি করিনি। এদিকে কেনান ভূমিকে গোষ্ঠীপতিদের কাছে নিজের পবিত্রতাকে প্ৰকাশ করতে হয়েছিল। এসব গোষ্ঠীপতি স্বাভাবিক স্থানগুলোতে আল তাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন- এ অপেক্ষায় ছিলেন। 

ফলে ইয়াকুব অপ্রত্যাশিতভাবে বেথ-আলের পবিত্রতার ব্যাপারে অসচেতন ছিলেন। তিনি অনুল্লেখযোগ্য মনে হওয়া একটি স্থানে একটি পাথরকে বালিশ বানিয়ে ঘুমানোর উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু আসলে ওটা ছিল একটি মাকুম (‘স্থান’), শব্দটি কালটিক দ্যেতনাযুক্ত। ওই রাতে স্বপ্নে ইয়াকুব তার পাশে ভূমি থেকে স্বৰ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি মই দেখলেন। এটি একটি চিরায়ত স্বপ্নাবিভাব, এটি আমাদেরকে মেসোপোটেমিয়ার মিনারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মইয়ের শীর্ষে ছিলেন ইব্রাহিমের ঈশ্বর, তিনি এখন ইয়াকুবকে তার সুরক্ষা ও আনুকূল্য প্রদান করার আশ্বাস দিলেন। ঘুম ভাঙার পর ইয়াকুব ঐশী সত্তার মুখোমুখি হওয়ার পর প্রায়ই দেখতে পাওয়া আতঙ্ক দূর করলেন। তিনি সম্ভ্রামে বললেন : ‘আমি জানি, প্রভূ এই জায়গায় রয়েছেন। কিন্তু আমি না ঘুমানো র্যন্ত জানতাম না যে তিনি এখানে রয়েছেন!’ সাদামাটা মনে হওয়া একটি স্থান একটি আধ্যাত্মিক স্থান হিসেবে আবির্ভূত হলো, যেটি মানুষকে ঐশী দুনিয়ায় প্রবেশের সুযোগ দেয়। ‘এ এক মহান জায়গা! এ হলো ঈশ্বরের গৃহ [বেথ-আল]; এটি স্বর্গের দ্বার!’ চলে যাওয়ার আগে ইয়াকুব যে পাথরে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন, সেটি উল্টিয়ে দিলেন; আশপাশের অন্যান্য কিছু থেকে এটিকে পুরোপুরি আলাদা করার জন্য এটিকে তেল লেপন করে পবিত্র করলেন। 

ইসরাইলিদের পরবর্তী প্রজন্মগুলো প্রবলভাবে কেনানি ঐশী প্রতীক হিসেবে বিবেচিত পবিত্র পাথর-স্তম্ভ ধারণার নিন্দা করেছে। কিন্তু জে ও ই এখানে ইয়াকুবের ধর্মীয় কাজের মধ্যে খারাপ কিছু দেখেননি। আমাদের মনে হয়, তারা যখন লিখছিলেন, তখন ইসরাইলিরা এখনকার ধারণায় একেশ্বরবাদী ছিল না। মুসার ঈশ্বর যিহোবা ছিলেন তাদের ঈশ্বর, অনেকে বিশ্বাস করত যে ইসরাইলিদের কেবল তারই উপসনা করা উচিত। তবে তারা বিশ্বাস করত, অন্যন্য ঈশ্বরের অস্তিত্বও আছে। কারণ আমরা নবী ও ইতিহাসবিদদের লেখালেখি থেকে জানতে পারি যে অনেক ইসরাইলি অন্য দেব-দেবতাদের উপাসনা করা অব্যাহত রেখেছিল। মনে হয়, দীর্ঘ দিন ধরে কেনানের উর্বরতা নিশ্চিতকারী ঈশ্বরদের অবহেলা করা মূর্খতা বিবেচনা করে এর ঐশী সত্তা-সম্পর্কিত ‘স্থানগুলোর’ (বামথ) সামনে আসতে পারত। আমরা জানি, খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে নেবুচাদনেজারের হাতে জেরুসালেম ধ্বংস হওয়ার আগে ইসরাইলিরা অন্যান্য দেব-দেবীর উপাসনা করত। আমরা দেখতে পাবো, জেরুসালেমে আলের উপপত্নী উর্বরতার দেবী আশেরাহকে সম্মান জানাত ইসরাইলিরা। তারা একইসাথে জেরুসালেমে তাদের মন্দিরে সিরিয়ার নাক্ষত্রিক দেব-দেবীকেও গ্রহণ করেছিল, তারা বালের উর্বরতার শাস্ত্রাচারেও অংশ নিত। বেবিলনে প্রবাস জীবনের (৫৯৭-৩৯) আগে পর্যন্ত ইসরাইলিরা যিহোবাকে একমাত্র ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করেনি। ওই সময়ই তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে যিহোবা ছাড়া অন্য কোনো দেব-দেবীর অস্তিত্ব নেই। তখন তারা সব ‘পৌত্তলিক’ উপাসনার প্রতি খুবই বৈরী হয়ে ওঠে। তবে প্রাথমিক বাইবেল লেখক জে ও ই তাদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম কল্পনা করার সময় তারা ইয়াকুবের একটি পৌত্তলিক ধর্মীয় স্থানে ঈশ্বরকে দেখতে পাওয়া এবং পাথর-স্তম্ভ দিয়ে স্থানটি চিহ্নিত করে রাখার মধ্যে অন্যায় কিছু দেখেননি। 

ফলে অনেক সময় গোষ্ঠীপতিদের ধর্মীয় অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে জে-এর বর্ণিতদের- পরবর্তী প্রজন্মের ইসরাইলিদের কাছে সন্দেহজনক মনে হতে পারে। এ কারণে, ইহুদিরা এই বিশ্বাসে উপনীত হয়েছে যে মানবীয় আকারে তাদের ঈশ্বরকে প্রতিনিধিত্ব করাটি ধর্মের অবমাননা। কিন্তু জে তাকে মানুষ হিসেবে ইব্রাহিমের মানে হাজির করেছেন। ইব্রাহিম হেবরনের কাছে মামরেতে তার তাঁবুর বাইরে বসেছিলেন, ওই সময় তিন আগন্তুক এলেন। নিকট প্রাচ্যের চিরায়ত প্রথা অনুসরণ করে গোষ্ঠীপতি জোর দিয়ে বললেন, তাদের সবাইকে বসতে হবে, তিনি তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করছেন। তারপর তারা চারজন একসাথে খাবার খেলেন, কথোপকথনের ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশিত হলো, এই তিন মুসাফিরের একজন হলেন ঈশ্বর ও অপর দুজন হলেন তার দুই ফেরেশতা।’ ইহুদিরা এই গল্প তাদের হৃদয়ে লালন করে, খ্রিস্টানদের কাছেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তারা এটিকে ত্রিত্ব হিসেবে ঈশ্বরের প্রাথমিক প্রকাশ বলে বিবেচনা করে। মামরেতে ঈশ্বরের এই আবির্ভাব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার একটি কারণ হলো এই যে এটি একেশ্বরবাদের মূল বিষয় বিবেচিত একটি সত্য প্রকাশ করেছে। ঐশী সত্তা কেবল পবিত্র স্থানগুলোতেই নিজেকে প্রকাশ করেন না। আমরা অন্যান্য মানবীয় অবয়বেও ঐশীর মুখোমুখি হতে পারি। ফলে এটি অপরিহার্য যে আমরা নারী ও পুরুষ যাদের মুখোমুখি হই, এমনকি পুরোপুরি আগন্তুক হিসেবেও- তাদের প্রতি পুরোদস্তুর সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। কারণ তারাও ঐশী রহস্য প্রকাশ করতে পারে। এই তিন মুসাফিরের সাথে সাক্ষাতকালেও ইব্রাহিম এটি আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি তাদেরকে সব ধরনের হালকা খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই সহানুভূতি ও সৌজন্যই ঐশী সত্তার সামনে আসার ব্যবস্থা করেছিল। 

আমরা দেখতে পাই যে সামাজিক ন্যায়বিচার ও গরিব ও দুর্বলদের প্রতি উদ্বেগ নিকট প্রাচ্যের পবিত্রতার ধারণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শান্তির পবিত্র নগরীর আদর্শে এটি অপরিহার্য। ইসরাইলি ঐতিহ্যের একেবারে প্রাথমিক সময়েই আমরা মানুষের অপরিহার্য ঐশী সত্তার আরো গভীর উপলব্ধি পাই। আমরা সম্ভবত ঈশ্বরের ইব্রাহিমকে প্রলুব্ধ করার অদম্য ও ভীতিকর কাহিনীতে এটি দেখতে পাই। তিনি গোষ্ঠীপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসহাককে তথা ‘তোমার ছেলে, তোমার একমাত্র ছেলেকে, যাকে তুমি ভালোবাসো’ তাকে ‘মরিয়াহর ভূমিতে’ নিয়ে মানব কোরবানি হিসেবে নিবেদন করো। ১৬ ইব্রাহিম মাত্র অল্প কিছু দিন আগে তার বড় ছেলে ইসমাইলকে হারিয়েছিলেন। ফলে এই নির্দেশ ইব্রাহিমকে একটি মহান জাতির পিতা বানানোর ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির সমাপ্তি বলে মনে হয়েছিল। এটি তার বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতিপূর্ণ জীবনের প্রতি বিদ্রুপে পরিণত হলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইব্রাহিম নির্দেশটি পালন করলেন, ঈশ্বরের নির্দেশিত পর্বত-শীর্ষে ইসহাককে নিয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যে মুহূর্তে ইসহাকের বুকে ছুরি চালাতে যাবেন, ঠিক তখনই ঈশ্বরের এক ফেরেশতা এসে এই কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বললেন। ইব্রাহিমকে তার সন্তানকে কোরবানি না দিয়ে কাছের ঝোপ থেকে শিং ধরে টেনে এনে একটি ছাগল কোরবানি দিতে হবে। এই পাঠে জেরুসালেমের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু পরবর্তীকালে, অন্তত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক নাগাদ ‘মোরিয়াহ ভূমি’ সম্পৃক্ত হয়ে গেল মাউন্ট জায়নের সাথে।’ ইব্রাহিম যেখানে ইসহাককে কোরবানি দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই ইহুদি টেম্পল নির্মাণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মুসলিমদের ডোম অব দি রকও ইব্রাহিমের তার ছেলেকে কোরবানি দেওয়ার স্মারক। এই শনাক্তকরণের প্রতীকি কারণ রয়েছে। কারণ এই ঘটনায় যিহোবা জানিয়েছেন, মানুষ কোরবানি করা তার মতাদর্শে স্থান পাবে না। অথচ প্রাচীন বিশ্বে এই নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই সার্বজনীনই ছিল না। কিন্তু যিহোবা জানালেন, তার মতাদর্শে উৎসর্গ করা যাবে কেবল প্রাণিদেরই। বর্তমানে আমরা পশু কোরবানির প্রতিও বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠছি। তবে আমাদের বুঝতে হবে যে এ প্রথাটি অনাদিকাল থেকে ধর্মের মূল বিষয় হিসেবে রয়েছে। এতে পশুদের প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করা হয় না। কোরবানির মাধ্যমে এই বেদনাযুক্ত বাস্তবতা তুলে ধরা হয় যে মানুষের জীবন নির্ভর করছে অন্যান্য সৃষ্টির হত্যার ওপর। এটি এমন এক অন্তর্দৃষ্টি যা মারদুক ও বাল-সম্পর্কিত যুদ্ধ মিথের কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে। টিকে থাকার জন্য মাংশাসী মানুষ শিকার করে উদ্ভিদ ও প্রাণি। এই পন্থায় যেসব পশুকে কোরবানি দেওয়া হয় তাদের প্রতি থাকে অপরাধবোধ, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা। এই জটিল আবেগই হয়তো ল্যাসকাক্সের গুহাগুলোতে প্রাগৈতিহাসিক চিত্রগুলো আঁকতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। কসাইয়ের দোকান থেকে পরিপাটি করে প্যাকেটজাত গোশত পেতে থাকায় আমরা সতর্কভাবে নিজেদেরকে এই সত্য থেকে আড়াল করে রেখেছি যে পশুরা আমাদের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করছে। কিন্তু প্রাচীন দুনিয়ায় বিষয়টি তেমন ছিল না। অবশ্য এটিও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় যে পরবর্তী বছরগুলোতে এই ধারণা দিয়েছিল যে জেরুসালেন মতাদর্শ একেবারে শুরু থেকেই উদ্দীপনা যতই থাকুক না কেন, কখনো আরেকটি মানুষকে কোরবানি দেওয়া অনুমোদন করেনি। 

এই অগ্নিপরীক্ষার পর ইব্রাহিম যেখানে ইসহাককে বেঁধেছিলেন সেই জায়গাটিকে ‘যিহোবা দর্শন স্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। আর ই স্থানীয় একটি প্রবাদবাক্যের উদ্ধৃতি দিয়ে উপসংহার টেনেছে এভাবে যে : ‘যিহোবার পর্বতে এটি দেখা গেছে।’ ঐশী পর্বতে, পৃথিবী ও স্বর্গের মধ্যবর্তী স্থানে, মানুষ ঈশ্বরদের দেখতে পায়, ঈশ্বরেরাও তাদের দেখতে পান। এটি হলো স্বপ্নাবিভাবের স্থান, এখানে লোকজন ভিন্নভাবে তাকাতে শিখতে পারে। তারা তাদের নশ্বর দুনিয়ার ঊর্ধ্বে ওঠে তাদের চোখ মেলে তাদের অস্তিত্বের কেন্দ্রে থাকা শ্বাশত রহস্য দেখতে পারে। আমরা দেখতে পাব, জেরুসালেমের মাউন্ট জায়ন ইসরাইলি জনগণের স্বপ্নাবিভাবের স্থানে পরিণত হয়েছে, যদিও তাদের ইতিহাসের প্রাথমিক পর্যায়ে এটিই তাদের একমাত্র পবিত্র স্থান ছিল না। 

প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের কফিন। তিনি ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর নিহত হন। এক ইহুদি ঈশ্বরের হয়ে তাকে হত্যা করেছেন বলে দাবি করেন। এটা যেকোনো আধ্যাত্মিকতার বিপদের ভয়ঙ্কর উদাহরণ। এই স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে যে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যেই রয়েছে ঐশী সত্তা। 

ইসরাইলের নতুন জাতির তার আত্মাকে দেখতে পাওয়ার গঠনাত্মক ঘটনাগুলোতে জেরুসালেম কোনো ভূমিকা পালন করেনি। আমরা দেখেছি, এমনকি যখন যশুয়া ও জাজেজ গ্রন্থগুলো লেখা হয়েছে, তখনো অনেক ইসরাইলি নগরীটিকে অনিবার্যভাবে বিদেশী স্থান হিসেবে দেখেছে, তাদের কাছে একে জেবুসিত প্রাধান্যপূর্ণ নগরী মনে হয়েছে। গোষ্ঠীপতিরা বেথেল, হেবরন, শেচেম ও বিরসোর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের সফরকালে তারা জেরুসালেমকে দৃশ্যত লক্ষ্য করেননি। তবে একটি সামরিক অভিযান থেকে ফিরে ইব্রাহিম ‘সালেমের’ রাজা ও পুরোহিত মেলচিজেদেকের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন। রাজা তাকে রুটি ও মদ উপহার দিয়েছিলেন, তাকে সালেমের দেবতা আল ইলিয়নের নামে আশীর্বাদ করেছিলেন।’ ইহুদি ঐতিহ্যে জেরুসালেমকে ‘সালেম’ হিসেবে অভিহিত করা হয়, যদিও বিষয়টি নিশ্চিত নয়। সাক্ষাতটি কিদরন ও হিম উপত্যকার সন্ধিক্ষণে এন রোগেলে (বর্তমানে বির আইয়ুব : জবস ওয়েল) ঝরনার কাছে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এন রোগেল নিশ্চিতভাবেই প্রাচীন জেরুসালেমের কোনো কান্টিক স্থান ছিল। সম্ভবত নগরীর রাজাদের অভিষেকের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল এর। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী মেলসিজেদেক ছিলেন জেরুসালেমের প্রতিষ্ঠাতা। জেরুসালেমের পরবর্তী রাজারা তার বংশধর বলে বিবেচনা করা হসো।২২ পরে আমরা হিব্রু সামে দেখতে পাবো, জুদার দাউদীয় রাজারা তাদের অভিষেকে বলেছেন : ‘আপনি মেলচিজেদেকের নিয়মের পুরোহিত এবং তা চিরদিনের জন্য।২৩ অর্থাৎ তারা মাউন্ট জায়ন-সম্পর্কিত জেবুসিত ঐতিহ্যসহ আরো অনেক কিছুর সাথে এই প্রাচীন পদবির উত্তরসূরি হয়েছিলেন। ইব্রাহিমের সাথে মেলচিজেদেকের সাক্ষাতের কাহিনীটি হয়তো তার পদবির বৈধতা দিতে নগরীতে রাজা দাউদের জয়ের সময় প্রথমবারের মতো বলা হয়েছিল। এতে দেখা যায়, তার পূর্বপুরুষ জেরুসালেমের প্রতিষ্ঠার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছেন ও সম্মানিত হচ্ছেন। ২৪ তবে কাহিনীটিতে আরো দেখা যায়, নগরীর বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সৌজন্যের প্রতি সাড়া দিচ্ছেন ইব্রাহিম, মেলচিজেদেককে শ্রদ্ধার নির্দশন হিসেবে যুদ্ধলব্ধ সামগ্রীর এক দশমাংশ দিচ্ছেন এবং একটি বিদেশী ঈশ্বরের আশীর্বাদ গ্রহণ করছেন। কাহিনীটিতে জেরুসালেমের আগের অধিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে ও তাদের ঐতিহ্যের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করতেও দেখা যায়। 

মেলচিজেদেকের দেবতাকে বলা হতো আল ইলিয়ন তথা ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বর’। পরে যিহোবা যখন জেরুসালেমের শক্তিমান ঈশ্বরে পরিণত হয়েছিলেন, তখন এই পদবিটি তাকে দেওয়া হয়েছিল। মাউন্ট জাফোনের বালের অন্যতম পদবিও ছিল আল ইলিয়ন। ২৫ প্রাচীন বিশ্বে দেব-দেবতাদের প্রায়ই একটিকে অপরটির সাথে গুলিয়ে ফেলা হতো। একে বিশ্বাসঘাতকতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত আপস বিবেচনা করা যায় না। দেবতাদের সারাবাহিকতাহীন ও অবিভেদ্যসম্পন্ন কঠিন ব্যক্তি বিবেচনা করা হতো না। বরং তাদের ঐশী সত্তার প্রতীক মনে করা হতো। লোকজন যখন নতুন স্থানে যেত, তখন তারা প্রায়ই স্থানীয় দেব-দেবতাদের সাথে তাদের নিজস্ব ঈশ্বরকে মিশিয়ে দিত। নতুন দেবতা তার পূর্বসূরিদের অনেক বৈশিষ্ট্য ও কার্যক্রম গ্রহণ করে নিতেন। আমরা দেখতে পাই যে ইসরাইলের কল্পনায় মুসার দেবতা যিহোবা হয়ে গেছেন ইব্রাহিমের দেবতা আল শাদ্দাই। ইসরাইলিরা জেরুসালেমে পৌঁছামাত্র প্রায় নিশ্চিতভাবে মাউন্ট জায়নে উপাসনা লাভকারী বাল আল ইলিয়নের সাথেও সম্পর্কযুক্ত হয়ে যান যিহোবা। 

ইসরাইলিদের মিসর থেকে এক্সোডাসের কাহিনীগুলো তাদের ধর্মের নিরঙ্কুশভাবে কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হলেও এসবের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয় জেরুসালেম। এসব ঘটনার বাইবেলীয় ভাষ্য সেগুলোকে পৌরাণিক কাহিনীতে পরিণত করে সেগুলোতে আধ্যাত্মিকতা আরোপ করে সময়াতীত অর্থ প্রদান করেছিল। আধুনিক ইতিহাসবিদদের সন্তুষ্ট করতে পারে, এমন কোনো পন্থায় সেগুলো পুনঃনির্মিত করার কোনো চেষ্টা হয়নি। এটি অনিবার্যভাবেই মুক্তি ও বাড়ি ফেরার এমন কাহিনী যা ইহুদিদের মধ্যে লালিত দীর্ঘ ও করুণ ইতিহাসের অন্ধকারময় অনেক মুহূর্তকে ধারণ করে আছে। অবিচারের শিকার ও নির্যাতিত খ্রিস্টানদেরও বহির্গমনের বর্তা উদ্দীপ্ত করে। এক্সোডাসের কাহিনীতে জেরুসালেম কোনো ভূমিকা না রাখলেও এর ঐতিহ্য মাউন্ট জায়নের ওপর ইসরাইলিদের আধ্যাত্মিকতার বড় অংশ জুড়ে আছে। ঘটনাগুলো নিকট প্রাচ্যের সৃষ্টি ও সংগ্রামমুখর মিথের সংস্করণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। অবশ্য ভিন্নতা হলো, সেগুলো আদিম সময়ে ঘটার বদলে নশ্বর দুনিয়ায় ঘটেছে এবং মহাজাগতিক ব্যাপারে না হয়ে জনগণের মধ্যে ঘটেছিল। ২৬ বাল ও মারদুকের যুদ্ধের পুরান কাহিনী একটি নগরী ও একটি মন্দির নির্মাণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। এক্সোডস মিথটি একটি আবাসভূমি নির্মাণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই বছরগুলোতে ইসরাইল বিশৃঙ্খল ও অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে ঐশীভাবে প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতায় পৌঁছেছে। মারদুকের মতো দুনিয়া সৃষ্টির জন্য সাগর-দানবের মৃতদেহ ছিন্নভিন্ন করার বদলে ফারাও ও তার ধাবমান সেনাবাহিনী থেকে তার জাতিকে পালানোর সুযোগ দিতে রিডস সাগরকে বিভক্ত করেছিলেন যিহোবা। মারদুকের মতো দানবীয় বাহিনীকে হত্যা না করে যিহোবা মিসরীয়দের ডুবিয়ে মেরেছিলেন। নতুন সৃষ্টি সবসময়ই অন্যদের ধ্বংসের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় জেরুসালেমের ভবিষ্যত ইতিহাসে এ বৈশিষ্ট্যটি বারবার ঘটতে দেখা যাবে। সবশেষে ইসরাইলের জনগণ বিভক্ত পানিরাশি অতিক্রম করে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা লাভ করেছিল। সব সংস্কৃতিতেই অবগাহন আদিম পানি তথা মূল উপাদানে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপক তাৎপর্য বহন করে, যা বিবেচনা করা হয় অতীতকে ফেলে দিয়ে নতুন জন্মকে সম্ভব করে তোলার প্রয়াস।২৭ অর্থাৎ পানির রয়েছে পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতীক। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও এটিই সূচনার আদি বিশুদ্ধতা। রিডস সাগর দিয়ে তাদের গমন ইসরাইলকে যিহোবার নতুন সৃষ্টিতে পরিণত করেছিল। 

ইসরাইলিরা পরে যেখানে সফর করেছিল তা হলো সিনাই। সেখানেই গায়োত্তীর্ণ ঘটনা হিসেবে মুসা তার ঈশ্বরের সাথে সাক্ষাত করতে পর্বত চূড়ায় উঠেছিলেন, যিহোবা প্রবল ঝড় ও আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের মধ্যে নেমে এসেছিলেন। নির্দেশমতো লোকজন দূরত্ব বজায় রেখেছিল : ঐশী সত্তা বিশেষ জ্ঞান না-থাকা লোকজনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে অন্তত ইসাইলি ঐতিহ্যে মনে করা হতো। এ কারণে ঐশী সত্তার কাছাকাছি হতে পারত কেবল সতর্কভাবে নির্দেশিত এলিটরাই। মাউন্ট সিনাইয়ে যিহোবা ইসরাইলকে তার নিজের জাতিতে পরিণত করেন, তার অঙ্গীকারের নিশ্চয়তা হিসেবে মুসাকে তাওরাত বা বিধিবিধান দেন, যার মধ্যে টেন কমান্ডমেন্টসও অন্তর্ভুক্ত ছিল। অবশ্য আমরা পরে দেখতে পাবো, বেবিলনে নির্বাসনের আগে পর্যন্ত তাওরাত ইসরাইলের ধর্মীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না। 

সবশেষে তাদেকে প্রতিশ্রুত ভূখণ্ডে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আগে ইসরাইলিদেরকে মরুভূমিতে ৪০ বছরের অগ্নিপরীক্ষার মুখে পড়তে হয়েছিল। এটি কোনো রোমান্টিক অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা ছিল না। বাইবেল পরিষ্কার করে জানাচ্ছে, এই বছরগুলোতে লোকজন অব্যাহতভাবে যিহোবার কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, বিদ্রোহ করেছে। মনে হয়েছে, তারা মিসরে তাদের সহজতর জীবনের স্মৃতিতে কাতর হয়ে সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে। নিকট প্রাচ্যে মরুভূমির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে মৃত্যু ও আদিম বিশৃঙ্খলা। আমরা দেখেছি, সিরিয়ার মরু দেবতা মত ছিলেন নরকের বুভুক্ষু ঈশ্বর, তথা মৃত্যু ও নশ্বরতার অন্ধকার শূন্যতা। মরুভূমি তাই এমন ঐশী এলাকা, যা কুটিল হয়ে পিশাচে পরিণত হয়েছে।২৮ এটি ইসরাইলি অভিবাসনের চরম বিচ্ছিন্ন স্থান হিসেবে বিরাজ করতে থাকে। অনেক বাইবেল পণ্ডিত যেভাবে দেখেন তেমন ধরনের এক্সোডাসে ঊষর প্রান্তরে অবস্থানের বছরগুলোর প্রতি কোনো নস্টালজিয়া ছিল না। এর বদলে নবী ও বাইবেল লেখকেরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে ‘ঊষর প্রান্তরে আর্তনাদ করার সময় ইসরাইলকে ঈশ্বর তার মনোনীত জাতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন; আর ওই মরুভূমি হলো ‘এমন বিরান ভূমি যেখানে ‘কেউ বাঁচে না’, এটি বসবাসের অনুপযোগী, কোনো রাজ্য নেই সেখানে। এটি অব্যাহতভাবে বসতি ভূমির অস্তিত্ব বিনাশ ও আদি অস্তিত্বহীনতার ফিরিয়ে নেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করে। কোনো নগরীর ধ্বংসের কল্পনা করার সময় সম্পূর্ণভাবে মানুষ-বর্জিত ওই স্থানে পেলিক্যান, সজারু অপদেবতার আবাস দেখতে পায়।৩১  ৪০ বছর ধরে – এটি এমন এক পরিভাষা যা দিয়ে বাস্তবিকই সুদীর্ঘ সময় বোঝাতে ব্যবহৃত হয় – ইসরাইলিরা বৈরী এলাকায় সংগ্রাম করেছিল, সবশেষে ঈশ্বর তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার আগে তারা প্রতীকীভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। 

মুসার আমলে জনমানবহীন প্রান্তরে ঐশী সত্তার কাছে যাওয়ার সুযোগ ইসরাইলিদের করে দিয়েছিল বিধান। ১৯৬৭ সালে দখলের পর থেকে বর্তমান ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরে প্রার্থনায় অংশ নেয়, তওরাত অধ্যায়ন করে। তারা বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমে তারা মনোনীত জাতি ও এর ঈশ্বরের মধ্যে আবারো পবিত্র সংযোগ সাধন করবে। 

অবশ্য ঈশ্বর তার জাতিকে বুনো এলাকায় একেবারে পুরোপুরি পরিত্যাগ করেননি। অন্যান্য যাযাবর জনগোষ্ঠীর মতো ইসরাইলিরাও ঐশী এলাকার সাথে তাদের প্রতীকী সংযোগ সাথে নিয়ে বয়ে বেড়াত। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের পবিত্র লাঠি বহন করার মতো ইসরাইলিরা ‘আর্ক অব কোভেন্যান্ট’ বহন করত। এই উপাসনালয় পরবর্তী সময়ে জেরুসালেমে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছিল। বাইবেলে আর্ক সম্পর্কে যেসব ভাষ্য এসেছে, সেগুলোর বেশির ভাগের উৎসই পরবর্তী সময়ে। ফলে গোড়াতে এগুলো কেমন ছিল, তা অনুধাবন করা কঠিন। সম্ভবত এটি ছিল একটি বাক্স, যেখানে বিধানের ট্যাবলেটগুলো ছিল। এর উপরে ছিল দুটি সোনালি মূর্তি। তাদের বিস্তৃত পাখা যিহোবার সিংহাসনের পেছনের অংশ গ্রহণ করেছিল।৩২ আমরা জানি, ঐশী প্রতীক হিসেবে প্রায়ই ফাঁকা সিংহাসন ব্যবহার করা হয়। এটি ঈশ্বরকে তার উপাসনাকারীদের মধ্যে বসার জন্য আমন্ত্ৰণ জানায়। এ কারণে ইহুদি ঐতিহ্যে ঐশী উপস্থিতির প্রতীক হিসেবে সিংহাসনের অবস্থান দেখা যায়। ফলে আর্ক ছিল যিহোবার উপস্থিতির সুস্পষ্ট চিহ্ন। এটি বহন করত লেভি গোত্রের সদস্যরা। তারা ছিল ইসরাইলের পুরোহিত বর্ণ হিসেবে তারা এ কাজে নিযুক্ত হয়েছিল। মুসার ভাই হারুন ছিলেন প্রধান পুরোহিত। আদিতে আর্ক সম্ভবত ছিল একটি সামরিক রক্ষাকবচ, কারণ এর ঐশী শক্তি ছিল যা প্রাণঘাতী হতে পারত। ফলে তা ইসরাইলের শত্রুদের থেকে তাদেরকে রক্ষা করত। জে আমাদেরকে বলেন, ইসরাইলিরা তাদের দিনের যাত্রা শুরুর সময় যিহোবার উপস্থিতির প্রতিনিধিত্বকারী মেঘ আর্কের ওপর নেমে আসত এবং মুসা চিৎকার করে বলতেন : ‘ওঠুন, যিহোবা, আপনার শত্রুরা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাক!’ রাতে তাঁবু ফেলার সময় তিনি চিৎকার করে বলতেন : ‘ফিরে আসুন যিহোবা, ইসরাইলের মেজবান হন!৩৩ ইসরাইলিরা আর্ককে নিরাপদে রাখতে একটি ক্যাপসুলে রেখে দিত, এটি এভাবেই ছিল। আর তা মরুভূমিতে নরকে বাস করার কথা স্মরণ করিয়ে দিত, কারণ এটি তাদেরকে ঐশী বাস্তবতার সংস্পর্শে রাখত। 

আমরা কেনানে ইসরাইলের প্রাথমিক সময় সম্পর্কে সামান্যই জানি। পি মনে করেন, পাহাড়ি দেশে তারা বসতি স্থাপন করা মাত্র ইসরাইলিরা আর্কের জন্য শিলোহে একটি তাঁবু স্থাপন করে। পি কল্পনা করেছেন, মাউন্ট সিনাইয়ের উপর মুসাকে এই পূণ্যমণ্ডল সম্পর্কে খুবই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন যিহোবা। যদি আর্ক সত্যিই কোনো তাঁবুকে আলোকিত থাকে, তবে যিহোবা ছিলেন একেবারেই আলের মতো। তিনিও তাঁবু-মন্দিরে বাস করতেন, ছিলেন বিধানের উৎস এবং আল সাবোথে (‘আল আরমিস) আবির্ভূত হওয়ার সময় পাখার ডানায় সিংহাসন বসিয়েছিলেন। স্যামুয়েল গ্রন্থে অবশ্য মনে হয় শিলোহের আরো বেশি প্রচলিত মন্দিরের হেখালে (বা কাল্ট হল) আর্ককে স্থাপন করা হয়েছিল। ৩৪ তবে ইসরাইলিরা সম্ভবত আরো অনেক প্রচলিত মন্দিরে উপাসনা করত। এগুলোর মধ্যে ছিল দান, বেথেল, মিজপাহ, ওপরাহ ও গিবেয়ন, সেইসাথে উন্মুক্ত ব্যামথে। অনেক ইসরাইলি যিহোবার পাশাপাশি অন্য দেবতাদেরও উপাসনা করতেন। তাদের কাছে যিহোবাকে এখনো কেনানে যথাযথভাবে স্থায়ী হতে না-পারা বিদেশী দেবতা মনে হতো। তিনি তখনো সিনাই, পারান ও সেইয়ের মতো দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তারা ভাবত, লোকজন ঝামেলায় পড়লে তিনি তাদের সহায়তার জন্য মেঘে চড়ে নেমে আসেন। বাইবেলের প্রথম দিকের কয়েকটি বাক্যে বিষয়টিকে এমনই মনে হয়।৩৫ ইসরাইলিরা সম্ভবত প্রার্থনাবিধি তৈরি করেছিল, যা ঢাকের শব্দকে বজ্রপাতের এবং ধূপের ধোঁয়াকে পাহাড়ের শীর্ষে মেঘ হিসেবে মাউন্ট সিনাইয়ে কথা নতুন করে মনে করিয়ে দিত। এসব উপাদান পরে জেরুসালেম কাল্টেও আবির্ভূত হয়েছিল। ফলে অনুষ্ঠানটি সিনাইয়ে যিহোবার চূড়ান্ত আবির্ভাবের অনুকরণ করা হতো। এই প্রতীকী অনুসরণ তার জাতির মধ্যে আবারো যিহোবার উপস্থিতির অনুভূতি প্রকাশ করত।৩৬ নিকট প্রাচ্যের প্রায় সব ঈশ্বরের বিপরীতে যিহোবা প্রথমে চলমান দেবতা বিবেচিত হতেন, তিনি কোনো নির্দিষ্ট মন্দিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। অবশ্য ইসরাইলিরা মিসর থেকে তাদের স্বাধীনতার কথাও স্মরণ করত। অনেক বছর ধরে প্রাচীন বসন্ত উৎসব ইসরাইলিদের মিসরে শেষ খাবার অনুষ্ঠানের স্মরণে অনুষ্ঠিত হতো। এ সময় মৃত্যুর ফেরেশতা তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেও মিসরীয়দের নবজাতক ছেলেদের সবাইকে মেরে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত এই পারিবারিক উৎসবটি পাসওভার (পেসাহ) নামে পরিচিত হয়। 

খ্রিস্টপূর্ব ১০৩০ সাল নাগাদ উত্তর পাহাড়ি দেশের লোকজন রাজত্ব ও সংহতির প্রবল ধারণার অধিকারী হয়। তারা নিজেদেরকে অভিন্ন পূর্বপুরুষের স্বতন্ত্র জাতি মনে করতে থাকে। তখন পর্যন্ত তারা কয়েকজন ‘বিচারক’ বা গোষ্ঠীপতির মাধ্যমে শাসিত হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ওই অঞ্চলের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো একটি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। বাইবেল লেখকেরা এই পদক্ষেপ সম্পর্কে মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তারা দেখেছেন, শেষ বিচারক স্যামুয়েল এই ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের ওপর রাজা বসানো হলে তিনি নির্যাতন ও নৃশংসতা চালাবেন বলে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ৩৭ অবশ্য বাস্তবতা হলো, ইসরাইলে একটি রাজত্ব সৃষ্টি ছিল সহজাত বিষয় ও অনিবার্য ঘটনা।৩৮ ওই সময়ে আসিরিয়া, মেসোপোটেমিয়া ও মিসরের পরাশক্তিগুলো ঝিমিয়ে পড়েছিল, অন্য দিকে আম্মন, মোয়াব, ইদোম নামে ছোট ছোট রাষ্ট্র ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আবির্ভূত হচ্ছিল। ইসরাইলিরা নিজেদেরকে কেনানের পাহাড়ি এলাকা জয় করতে অধীর হয়ে ওঠা আগ্রাসী প্রতিযোগীদের ঘিরে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল। আম্মোনি ও মোয়াবিয়ারা পূর্ব দিক থেকে তাদের ভূখণ্ডে হানা দিচ্ছিল, পশ্চিম দিক থেকে আসছিল ফিলিস্তিনিরা। একবার ফিলিস্তিনিরা শিলোহ নগরী লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে দেয়, যুদ্ধলব্ধ সামগ্রী হিসেবে আর্ক অব কোভেন্যান্ট নিয়ে যায়। অবশ্য এ রক্ষাকবচটির মৃত্যুঘাতী শক্তি উপলব্ধি করতে পেরে তারা এটিকে ফিরিয়েও দেয়। এখন এটি কোনো মন্দিরে সুরক্ষিত ছিল না। ইসরাইলিরাও আর্কের পবিত্রতায় ভীত হয়ে পড়েছিল। ফলে তারা তাদের সীমান্ত এলাকায় কিরেথ-জেরিমে একটি বেসরকারি বাড়িতে এটিকে স্থান দেয়। এসব গোলযোগপূর্ণ ঘটনাার কারণেই সম্ভবত ইসরাইলিরা বুঝতে পারে যে তাদের একজন রাজার শক্ত নেতৃত্ব প্রয়োজন। এর ফলে অনিচ্ছুকভাবে স্যামুয়েল বেঞ্জামিন গোত্রের সলকে ইসরাইলের প্রথম রাজা হিসেবে বরণ করে নেন। 

কেনানের আগের যেকোনো রাজার চেয়ে অনেক বড় ভূখণ্ড শাসন করেছিলেন সল। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল মধ্য পাহাড়ি এলাকার পুরোটা, জর্দানের উভয় এলাকা, নগর-রাষ্ট্র জেরুসালেমের উত্তরাংশ। জেরুসালেম তখনো জেবুসিতরা শাসন করত। (মানচিত্র দেখুন)। বাইবেলে সল হলেন ট্রাজিক ব্যক্তিত্ব : একটি কাল্টিক বিষয় সূচনা করতে চাওয়ায় তার ঈশ্বরের তাকে পরিত্যক্ত করা, হতাশার আক্রান্ত হওয়া এবং ধীরে ধীরে ক্ষমতা হারানো প্রত্যক্ষ করেন তিনি। এমনকি এই তীব্র সমালোচনাপূর্ণ ভাষ্যেও আমরা সলের অর্জনকে ব্যাপক অবস্থায় দেখতে পাই। গিবেয়ন (এখানে ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যিহোবাবাদী মন্দিরটি ছিল) থেকে শাসনকাজ পরিচালনা করে সল ধীরে ধীরে তার এলাকা সম্প্রসারিত করেন, পাহাড়ি এলাকার লোকজন স্বেচ্ছায় তার সাথে যোগ দিয়েছিল। ২০ বছর পর্যন্ত তিনি তার রাজত্বকে শত্রুদের বিরুদ্ধে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে খ্রিস্টপূর্ব ১০১০ সালের দিকে মাউন্ট গিলবোয়ার যুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা তাকে ও তার ছেলে জোনাথনকে হত্যা করে। তার মৃত্যুর পর বাইবেলের সবচেয়ে উচ্ছ্বাসপূর্ণ কবিতার স্থান পায় তাকে নিয়ে করা স্তুতি 

সল ও জোনাথন একে অপরকে ভালোবাসতেন
এবং জীবনভর একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করেছিলেন।
মৃত্যুও তাদের আলাদা করতে পারেনি।
তারা ছিলেন ঈগলের চেয়েও ক্ষিপ্র,
তারা ছিলেন সিংহের চেয়েও শক্তিশালী।

এই হাহাকার সলের কোনো অনুগত অনুসারী আউড়াননি, বরং তার রাজদরবার থেকে পালিয়ে যাওয়া এক বিদ্রোহীর মুখে শোনা যায়। সলের রাজত্বে দাউদ ছিলেন অত্যন্ত সুবিধাভোগী যোদ্ধা। তিনি ছিলেন জোনাথনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সলের মেয়ে মিচেলকে তার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একমাত্র তিনিই সলের বিষণ্নতার মধ্যেও তাকে কিছু স্বস্তি দিতে পারতেন, গান ও কবিতা দিয়ে তার হতাশা কিছুটা দূর করতে পারতেন। কিন্তু বাইবেলের ইতিহাসবিদেরা আমাদের বলেন, দাউদের জনপ্রিয়তা ও মর্যাদায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলেন সল। ফলে দাউদকে জীবন নিয়ে পালাতে হয়েছিল। প্রথম তিনি জেরুসালেমের দক্ষিণে জনশূন্য পাহাড়গুলোতে হ্যাপিরু (বিদ্রোহী) হিসেবে একদল অনুসারীকে নিয়ে বাস করতে থাকেন। সবশেষে তিনি ইসরাইলের প্রাণঘাতী শত্রু ফিলিস্তিনিদের সাথে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হন। সলের মৃত্যুর খবর দাউদ শুনেছিলেন জিগ-লাগের নেগেভ শহরে জুদা গোত্রের সাথে বাস করার সময়। তার নতুন প্রভু গথের রাজা অচিশ তাকে এই ভূখণ্ডটি দিয়েছিলেন। বাইবেলের সবচেয়ে জটিল চরিত্রগুলোর অন্যতম হলেন দাউদ। কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, যোদ্ধা, বিদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক, ব্যাভিচারী, সন্ত্রাসী ইত্যাদি অনেক বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তার মধ্যে (তবে নিশ্চিতভাবে তিনি পৌত্তলিক ছিলেন না), কিন্তু তবুও তাকে ইসরাইলের আদর্শ রাজা হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয়। সলের মৃত্যুর পর সলের জীবিত ছেলে ইশবাল ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য শাসন করেন। আর দাউদ দক্ষিণের স্বল্প বসতিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় নিজের জন্য একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর রাজধানী ছিল হেবরন। ফিলিস্তিনিরা সম্ভবত এই উদ্যোগে উৎসাহিত করেছিল। কারণ তারা তাদের সামন্তদের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় পা রাখার জায়গা সৃষ্টি করেছিল। তবে দাউদ দু’মুখী নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার ছিল অনেক বড় উচ্চাভিলাষ। ফলে জেরুসালেমে জেবুসিতরা দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্য দিয়ে নিজেদের ঘেরাও দেখতে পেল। উত্তরে ছিল ইশবালের শাসনে থাকা ইসরাইল রাজ্য, আর দক্ষিণে ছিল দাউদের শাসনে থাকা জুদা রাজ্য। তবে ইশবাল ছিলেন দুর্বল শাসক। তার রাজ্য সম্ভবত সলের রাজ্যের চেয়ে অনেক ছোট ছিল, তিনি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারকে ক্ষুব্ধ করেছিলেন। এই কমান্ডার সম্ভবত দল ত্যাগ করে দাউদের শিবিরে যোগ দিয়েছিল। অবশেষে সাড়ে সাত বছর পর হেবরনের রাজা হিসেবে দাউদ মুকুট পরেন, ইশবাল খুন হন, হত্যাকারী দাউদের রাজদরবারে পালিয়ে যান। দাউদের চূড়ান্ত সময় এসে পড়েছিল। ইশবালের হত্যাকারীকে হত্যার মাধ্যমে তিনি ওই মৃত্যুর সাথে নিজেকে সম্পর্কহীন করেন। সলের মেয়ে মিচেলের স্বামী হিসেবে তিনি ক্ষীণভাবে ইসরাইল রাজ্যের সিংহাসনের দাবি করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যের উপজাতীদের প্রতিনিধিরা দাউদের কাছে আসে, তারা হেবরনে যিহোবার মন্দিরে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, তাকে ইসরাইলের রাজা হিসেবে তেলে সিক্ত করে। দাউদ এখন ইসরাইল ও জুদার ঐক্যবদ্ধ শাসক। তবে তার রাজ্যের মাঝখানে ছিল জেবুসিত নগর-রাষ্ট্র জেরুসালেম। তিনি এই নগরীকে তার রাজধানী করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *