১৫. গণিকাবৃত্তি নানা রূপে

১৫. গণিকাবৃত্তি নানা রূপে

প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং ব্রিটিশ-ভারতে গণিকাবৃত্তির ধরনধারণ তো আমরা কিছুটা ধারণা নিতে পারলাম। কিন্তু বর্তমান তথা আধুনিক যুগে গণিকাবৃত্তির ধরনধারণ কোন্ পথে, আমরা এবার সেটা জানার চেষ্টা করব। বর্তমান সময়ে গণিকাবৃত্তির ধরনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। যৌনব্যাবসা এখন শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক। প্রযুক্তিকে যথাযথ ব্যবহারে যৌনপেশা তরতর করে এগিয়ে চলেছে। কমেছে শরীর নিয়ে ছুঁৎমার্গ। সর্বস্তরের ক্লায়েন্টদের টানত যৌনপেশা ক্রমশ উন্নত থেকে উন্নত হচ্ছে। সেইসঙ্গে আসছে নতুন নতুন বিভাজন। আসুন, এবার বিভাজনগুলি দেখে নেওয়া যাক।

(১) stree Protitute : শব্দটার বাংলা পাইনি। তাই ইংরেজিতেই লিখলাম। এইভাবেই শব্দটি সবাই জানে। যাই হোক, এই গণিকারা ক্লায়েট (গণিকাজগতে এখন আর বাবু, খরিদ্দার বলে না। সবাই ক্লায়েট।) ধরার জন্য বিভিন্ন রাস্তার পাশে, রাজপথে, পার্ক বা অন্যান্য পাবলিক প্লেস, যানবাহনে বা সংকীর্ণ কোনো ঘুপচিতে কম পয়সার বিনিময়ে এঁরা যৌনক্রিয়া সম্পন্ন করে। এঁরা স্বাধীন গণিকা। রোজগারের জন্য এই পেশা নেয় তাঁরাই, যাঁদের অন্য কোনো কাজ করার স্কিলড নেই। শুধু পুলিশকে প্রাপ্য মিটিয়ে দিলেই হল। না মেটালে সারাদিন পুলিশের তাড়া খেয়ে বেড়াতে হবে।

(২) গণিকালয় : গণিকালয়, পতিতালয়, বেশ্যালয়, নিষিদ্ধপল্লি, ব্রোথেল (Brothel), Red light area বা কোঠি–এগুলি সমার্থক শব্দ। এখানে ঘর ভাড়া দিয়ে বা ঘর ভাড়া নিয়ে ঘোষিতভাবে যৌনকর্ম চালানো হয়। তবে খোলা রাস্তার থেকে অনেক বেশি নিরাপদ। রোজগার নিশ্চয়তা কিছুটা বেশি। এখানে ক্লায়েট খুঁজে বেড়াতে হয় না, ক্লায়েন্টই খুঁজে নেয় যৌনকর্মী নিজের পছন্দমতো।

তবে নিষিদ্ধপল্লি বা লালবাতি এলাকা বা Red light area শব্দটির অর্থ আরও বিস্তারে ভাবা হয়েছে।এই অঞ্চল বলতে বোঝায় যৌনশিল্প সংক্রান্ত বাণিজ্যের অস্তিত্ব, যেমন–সেক্স শপ, স্ট্রিপ ক্লাব বা অ্যাডাল্ট থিয়েটার। কোনো কোনো নিষিদ্ধপল্লিতে যৌনকর্মীরা বৈধভাবে ব্যাবসা চালায়, কিন্তু বেশ কিছু অঞ্চল তাঁদের বেআইনি কার্যকলাপের জন্য কুখ্যাত। ১৮৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিলওয়াউঁকির সংবাদপত্র ‘দ্য সেন্টিনাল’ এ একটি নিবন্ধে ‘Red-light distric’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। ১৮৯০-র দশকে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল। অনেক মনে করেন ‘রেড লাইট’ বা ‘লালবাতি’ কথাটির উৎস রেলওয়ে কর্মচারীদের লাল লণ্ঠন। এই লণ্ঠন তাঁরা গণিকালয়ে প্রবেশের আগে বাইরে রেখে যেত, যাতে ট্রেন চলাচল সংক্রান্ত যে-কোনো প্রয়োজনে তাঁদের সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যমতে, প্রাচীন চিনে গণিকালয়ের বাইরে ঝুলিয়ে রাখা যৌনোদ্দীপক লাল রঙের কাগুঁজে লণ্ঠন থেকে এই শব্দের উৎপত্তি।

বাইবেলের একটি কাহিনিতে দেখা যায়, জেরিকো অঞ্চলে রাহাব নামে এক গণিকা জোশুয়ার গুপ্তচরদের মদত দিয়েছিল এবং নগর দখলের পর লুণ্ঠনের সময় তাঁরা যাতে সহজেই রাহাবের বাড়ি চিনতে পারে এবং সেই বাড়িটিকে রেহাই দেয় সেইজন্যে সে একটি লাল দড়ি দিয়ে তাঁর বাড়ি চিহ্নিত করে রাখত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের বহু গণিকালয়ে নীল ও লাল রঙ দিয়ে যথাক্রমে অফিসারদের ও অন্যান্য পদের লোকেদের ব্যবহৃত গণিকালয় চিহ্নিত করা হত।

লালবাতি এলাকার জাপানি নাম ‘আকাসেন’, বাংলা তর্জমায় অর্থ হল–লাল রেখা। জাপান পুলিশ মানচিত্রে লাল রেখা দিয়ে দিয়ে নিষিদ্ধপল্লির সীমা নির্ধারণ করত। সেই থেকে এই নামের উৎপত্তি। তাঁরা ‘আওসেন’ বলেও একটি শব্দ ব্যবহার করত, যাঁর বাংলা ভাষায় অর্থ ‘নীল রেখা। নীল রেখা দিয়ে তাঁরা বেআইনি কার্যকলাপপ্রবণ অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করত। যাই হোক, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে লালবাতি অঞ্চলকে বিভিন্ন রূপে দেখা যায়, কিন্তু আদতে এগুলি গণিকালয়েরই বিভিন্ন রূপ।

(৩) সেক্সডল গণিকালয় : না, এখানে কোনো হিউম্যান বডি গণিকাবৃত্তি করে না। সেক্সডল কোনো রক্তমাংসের উষ্ণ শরীর নয়। সেক্সডল কৃত্রিম প্রযুক্তিতে তৈরি সিলিকনের নারীশরীর। পৃথিবীর বেশ কিছু উন্নত দেশে সেক্সডলের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। নিরাপদ যৌনকর্মী বা জীবনসঙ্গীর অভাব পূরণ করতেই সেক্সডলের আবির্ভাব। আমেরিকা, জার্মানি, চিন সহ বিশ্বের একাধিক দেশেই কথা বলতে পারে এমন সেক্সডলের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হচ্ছে। এই সেক্সডলগুলি রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভারতীয় মুদ্রায় এক একটি কথা বলতে পারা’ সেক্সডলের দাম আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা। সবচেয়ে বেশি সেক্সডল প্রস্তুত হয় চিনেই। চিনের কারখানায় ভিন্ন ধরনের সেক্সডলের নির্মাণ হয়ে থাকে। এমনই এক কারখানার নাম WMDOLL। সেক্সডলের চাহিদায় এই সংস্থা প্রায় ৮০ শতাংশ সেক্সডল প্রস্তুত করে থাকে। এই সংস্থার ৫০ শতাংশ অংশীদারী আমেরিকার। বলে রাখি, এইসব কারখানায় শুধু যে নারীশরীরের সেক্সডল তৈরি হয় তা কিন্তু নয়, যথেষ্ট পরিমাণে চাহিদা অনুযায়ী পুরুষশরীরের সেক্সডলও তৈরি করা হয়।

সেক্সডলের সঙ্গে সেক্স করলে তাঁকে গণিকা বলা হবে কি না, সেক্সডল খাঁটিয়ে কেউ কোথাও যৌনব্যাবসা হলে সেটাকে গণিকালয় বলা হবে কি না, ঘরওয়ালিকে মক্ষীরানি’ বলা যাবে কি না, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হতে পারে। তবে সেক্সডল নিয়ে গণিকালয় তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে। সাধারণভাবে পুরুষরা যেমন বাড়তি যৌন মনোরঞ্জনের জন্য গণিকালয়ে গিয়ে থাকে বা বাগানবাড়িতে গণিকা নিয়ে এসে মনোরঞ্জন করে থাকে। তারপর সময়ের বিবর্তনে মানুষ যৌনতার একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য সেক্সরোবট ব্যবহারও করতে থাকে। থেমে থাকে না স্বপ্ন। আমেরিকার এক শহরে এমন এক গণিকালয় খোলার কথা ভেবেছিল, যেখানে অর্থের বিনিময়ে সার্ভিস দেবে সেক্সডল। সেক্সডল তো সেই অর্থ রোজগার করবে না, রোজগার করবে সেক্সডলের মালকিন। তবে সেই সেক্সডল গণিকালয়ের অনুমোদন মঞ্জুর হয়নি। অনুমোদন করা হয়নি এই কারণে যে, এই ধরনের গণিকালয় জনপ্রিয় হয়ে উঠলে হিউম্যান বডি গণিকালয়ের জনপ্রিয়তা হারাবে। ফলে বহু মেয়েরা যেমন জীবিকা হারাবে, পেশায় সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। অর্থনীতিও ভেঙে পড়বে। কানাডার এক প্রতিষ্ঠান Kinkysdolls সেক্সডল নিয়ে একটি গণিকালয় খোলার প্রস্তাব দিয়েছিল। এ বিষয়ে একটি অনলাইন মতামত নেওয়া হয়েছিল, যেখানে ১২,০০০ মানুষের সমর্থন পাওয়া গিয়েছিল। তবে অনেকেই মনে করেন, এমন গণিকালয় হলে মহিলারা শুধুই পণ্যভোগ্য সামগ্রীতে পরিণত হবে। কেউ কেউ মনে করেন এর ফলে সমাজে আসবে বৈষম্য, বাড়বে হিংসা। তবে টরেন্টো ও প্যারিসে এরকম সেক্সডল গণিকালয় অনেক আগে থেকেই ছিল। এছাড়া অস্ট্রিয়া, সাউথ কোরিয়া, চিন, ইউনাইটেড স্টেট ছাড়াও অন্যত্র এই ধরনের।

(৪) এসকর্ট (Esort) : এসকর্ট সার্ভিস সাধারণত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই জানানো হয়। এই বিজ্ঞাপনে কোনো ঠিকানা থাকে না, থাকে ফোন নম্বর। গুগল সার্চ করলে এরকম অসংখ্য এসকর্টের খবর পাওয়া যাবে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারও দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ভাষায় পত্রপত্রিকাতে বিজ্ঞাপনও দেখতে পাওয়া যায়। ফোন নম্বরে ফোন করলে ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ অথবা পুরুষকণ্ঠে ভেসে আসবে–ওয়েলকাম স্যর।

–এখানে মেয়ে পাওয়া যাবে?

–পাওয়া যাবে স্যার। সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের পাওয়া যাবে।

–রেট কীরকম?

–আমাদের সেন্টারে এলে অবিবাহিতা কলেজ গার্ল প্রতি ঘণ্টায় ৩০০০ টাকা, বিবাহিতা ঘরোয়া মহিলা ২৫০০ টাকা, বিধবা বা ডিভোর্সি ২০০০ টাকা। এটা নন-এসির রেট, এসি নিলে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা। আপনার নিজস্ব জায়গাতে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে হবে। ট্রান্সপোর্টেশন খরচও আপনার।

–কোনো ঝুটঝামেলা নেই তো?

–একদম ঝুটঝামেলা নেই। ১০০ % নিরাপদ ও সুরক্ষিত। কবে আসবেন স্যার? আজই আসবেন?

–না, আজকেই যাচ্ছি না। সময় সুযোগ পেলে ফোন করে নেব।

–ঠিক আছে স্যার। এটা আপনার হোয়াটস অ্যাপ নম্বর? কিছু মেয়েদের ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি পছন্দ করতে পারেন। আপনি যখন আসবেন আমাদের জানালে আপনাকে সম্পূর্ণ ঠিকানা আর পথনির্দেশ দিয়ে দেব।

‘এসকর্ট গার্ল’ বলতেই একঝাঁক স্মার্ট শিক্ষিত মেয়েদের ছবি ভেসে ওঠে। বাস্তবিকই। আপনি ঠিকানা পেয়ে গেলেন একটি নির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্ট ফ্লাটে। দরজা বন্ধই থাকে। কলিং বেল টিপলেই দরজা খুলে যাবে। ভিতরটা শুনশান ফাঁকা। আপনাকে একটি ঘরে বসানো হবে। দুজন বা তিনজন ধোপদুরস্ত জিনস টি-শার্ট পরিহিতা স্মার্ট মেয়ে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আপনাকে বলবে–“আমরা তিনজন আছি। কাকে পছন্দ?” প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই তিনজনের মধ্যে থেকে একজনকেও যদি আপনার পছন্দ না হয়, তখন আপনাকে হোয়াটস অ্যাপ খুলে অন্য মেয়েদের ছবি দেখানো হবে। হোয়াটস অ্যাপের কোনো মেয়ে পছন্দ হলে সেই মেয়েকে সেদিন আপনি পাবেন না। আপনাকে বলা হবে, একটি নির্দিষ্ট দিনে আপনি পাবেন। তারিখ-সময় ফাইনাল হলে সেই মেয়েকে ডাকিয়ে আনা হবে আপনার জন্য।

উপরের সংলাপটি কাল্পনিক নয়, একটি ফাইন্ড ফ্যাক্ট। সার্ভিস পরিস্থিতি অনুযায়ী সংলাপ অন্যরকমও হতে পারে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, যেই মূহুর্তে আপনি সার্ভিস জোনে ঢুকে পড়লেন, আপনাকে নজরে রাখতে পারে কোনো গোপন ক্যামেরা। কিন্তু আপনার কাছে থাকা কোনো গোপন ক্যামেরার কার্যকারিতা থাকবে না।

কলেজ ছাত্রী থেকে গৃহবধূ, বিমানসেবিকা থেকে কলসেন্টার কর্মী, এমনকি মডেল গার্ল, টিভি বা সিনেমার অভিনেত্রীদের তালিকাও এই এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত। উপযুক্ত টাকা খরচ করতে পারলেই যেমন বাঘের দুধ মেলে, তেমনি শয্যাসঙ্গিনীও মেলে। সবচেয়ে কম খরচ কলেজ পড়ুয়া বা ঘরোয়া গৃহবধূদের ক্ষেত্রে। সবচেয়ে বেশি খরচ হবে স্ট্রাগলিং অ্যাক্ট্রেস বা ভিআইপি মডেল গার্লদের ক্ষেত্রে। ঘণ্টায় এক লাখ টাকাও হতে পারে। গোটা রাতের জন্য হলে আরও বেশি। আবার এই টাকার অঙ্কের পরিমাণ নির্ভর করবে ওই সময়ের মধ্যে তাঁর সঙ্গে কতবার যৌনমিলন করবেন তার উপর। তবে কোথাও প্যাকেজ সিস্টেম চালু আছে। যেমন ধরুন এক ঘণ্টায় চুক্তিতে ২০০০ টাকার বিনিময়ে আপনি সর্বাধিক চারবার যৌনমিলন করতে পারবেন। আপনি চুক্তিবদ্ধ হলে আপনার সঙ্গে যে মেয়েটি যাবে সে তাঁর সঙ্গে চারটি কন্ডোম নিয়ে নেবে। মনে রাখবেন, কন্ডোম ছাড়া আপনি কোনো মেয়ের সঙ্গেই যৌনমিলন করতে পারবেন না। কোনো কোনো এসকর্ট সেন্টারে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে যৌনমিলন করার আগে টাকা নেওয়া হয়, কোথাও-বা যৌনমিলন করার পর টাকা নেওয়া হয়।

এই সার্ভিসে কোনো দালাল বা মধ্যস্থতাকারী নেই। কোনো দালালের মাধ্যমে এসকর্ট সার্ভিস আপনি পাবেন না। এই সার্ভিস সম্পূর্ণভাবে অনলাইন-নির্ভর। এসকর্ট সার্ভিসগুলি ছড়িয়ে শহর বা শহরের বাইরে ছড়িয়ে আছে। সল্টলেক, লেক টাউন, রাজারহাট, মধ্যমগ্রাম, এয়ারপোর্ট এলাকা, পার্কস্ট্রিট, ধর্মতলা, বড়োবাজার, যাদবপুর, ভবানীপুর, বারাকপুর, নৈহাটি, দুর্গাপুর—কোথায় এই সার্ভিস পাওয়া যায় না! ওয়েবসাইটগুলি ঘাঁটলে আপনি কোনো কোনো সাইটে পেয়ে যেতে পারেন সংশ্লিষ্ট মেয়েটির ছবি সহ শারীরিক বিবরণ। যেমন–বয়স, চুলের রং, চোখের রং, গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন, স্তনের সাইজ, কোমরের সাইজ, নিতম্বের সাইজ, মদ্যপান করে কি না, ধূমপান করে কি না ইত্যাদি সমস্ত তথ্য। আজকাল ফেসবুকেও এসকর্ট সার্ভিসের পেজ খোলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার আগে এগিয়ে।

এসকর্ট হল ছকভাঙা যৌনযাপন। এখানকার মেয়েরা কেউ কেউ আর পাঁচটা পেশার মতো করে পেশাকে বেছে নিয়েছে। আর পাঁচজন অফিস-কর্মীর মতো সকালে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ধরে চলে আসে সেন্টারে, আবার সন্ধ্যায়। বাড়ি ফিরে যায় আর পাঁচজন অফিস-কর্মীর মতোই। বাড়ির মা-বাবা-সন্তান-স্বামী জানেন তাঁদের মেয়ে-মা-স্ত্রী চাকরি করতে যাচ্ছেন, আর চাকরি করে বাড়ি ফিরছেন। এমন চাকরি, যাতে মাঝেমধ্যে নাইট ডিউটিও করতে হয়। এসকর্ট গার্লদের একটা অংশ শুধুমাত্র হোটেল-রিসোর্টে গিয়ে সার্ভিস দেয়। এক্ষেত্রে আপনি এঁদের সার্ভিস পেতে কোনো সাইট থেকে যোগাযোগ করলে এঁরা আপনার কাছ থেকে জানতে চাইবে আপনি কোন্ হোটেলে আছেন সেই হোটেলের নাম, ঠিকানা ও রুম নম্বর। আপনার এসব তথ্য নিয়ে ঠিক সময়মতো পৌঁছে যাবে রুমের কাছে, আপনার পছন্দের হার্টথ্রব গার্ল। এঁরা সাইটগুলিতে নিজেদের ছবি ও শরীরের বিস্তারিত বিবরণ সহ বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।

তবে সাধু সাবধান! এতক্ষণ বিবরণ পড়ে আপনি যদি খুব উৎসাহিত হয়ে পড়েন, তাহলে এবার নিরাশ করব। আসলের পাশাপাশি প্রচুর ফেক সাইটও আছে। আসল বেছে নেওয়া সহজ কাজ নয়। না-বাছতে পারলে মারাত্মক বিপদে পড়ে যেতে পারেন। পুরুষদের বিপদের কথা পড়ে বলছি। তার আগে মেয়েদের বিপদের কথা বলে নিই। প্রচুর অর্থ রোজগায়ের আশায় যেসব মেয়েরা এসকর্টে যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁরাও সাবধান। চরম মূল্য দিতে হতে পারে। এই এসকর্ট সার্ভিস কতকগুলি ক্ষেত্রে কীরকম বিপজ্জনক হতে পারে, তা একটি এসকর্ট সাইটে গেলেই কিছুটা আভাস পাওয়া যেতে পারে। যাঁরা ভাবছেন এসকর্টে যুক্ত হয়ে শরীর বেচে উপার্জন করবেন, সাইটিতে ক্লিক করলে আমি নিশ্চিত আপনারও হাড় হিম হয়ে যাবে। মেয়েদের ছবি-সর্বস্ব এই সাইটটির একজন এসকর্ট মেয়েও বেঁচে নেই। কারণ সাইটটি আদতেই ফেক, জাল। এসকর্ট জীবনের কী চরম পরিণতি হতে পারে, তা প্রচার করতেই ফরাসি দাঁতব্য সংস্থা ‘মুভমে দ্যু নি’ নামে সাইটটি তৈরি করেছে। যৌনকর্মীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্যেই এই সাইটটি। এই এসকর্টরা তাঁদের ক্লায়েন্টের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে এবং মুখ খুলে শেষপর্যন্ত খুন হয়েছে। ভুয়ো এই এসকর্ট সাইটটি ১০ ঘণ্টা লাইভ থাকে। মুভমে দ্যু নি’-র কর্মীরাই মৃত যৌনকর্মীদের হয়ে ক্লায়েন্টের সঙ্গে চ্যাট করে যায়। দিনে কমপক্ষে ৬০০ ক্লায়েন্টের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়। চ্যাটের একটা সময় যখন ক্লায়েন্টরা সার্ভিস চায়, তখন জানিয়ে দেওয়া হয় এতক্ষণ যাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন সে মৃত। তাই সার্ভিস সম্ভব নয়। এঁরা প্রত্যেকেই ক্লায়েন্টের হাতে খুন হয়েছে।

এবার আসি পুরুষের বিপদ নিয়ে কথায়। পুরুষ যৌনকর্মীদের নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। পুরুষদের ‘গণিকা’ বা ‘পতিতা’, ‘বেশ্যা’ বলা যায় না। এগুলি স্ত্রীবাচক শব্দ। পুরুষরা শরীর বিক্রি করে রোজগার করলেও পুংবাচক কোনো শব্দ এখনও তৈরি হয়নি। তাই ‘যৌনকর্মী’ শব্দেই আটকে থাকতে হচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই পুরুষ-যৌনকর্মীদেরও ব্যাপক চাহিদা আছে। আর পাঁচটা পেশার মতো এই পেশাও পুরুষদের কছে কম আকর্ষণীয় নয়। রোজগার মেয়েদের মত না-হলেও নেহাৎ কম নয়। চাকরির বাজার যতই সংকুচিত হচ্ছে, ততই এই পেশায় আসার ঝোঁক বাড়ছে পুরুষদের। অটোমেশনের যুগে এখন প্রায় সব কাজ মেশিনই করে দিচ্ছে। ফলে হিউম্যান বডি আর তেমন প্রয়োজন হচ্ছে না। কম্পিউটার আর রোবট-মেশিন ১০০ জনের কাজ একাই করে দিতে সক্ষম। নিয়োগ বলতে গেলে একেবারেই বন্ধ। কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগ হলেও সেখানে প্রতিযোগিতা তীব্র। ২০০ পদের শূন্যপদের জন্য ২ কোটি চাকুরিপ্রার্থীর লাইন। ২০০ জনের চাকরি না-হয় হল, বাকিরা কী করবে! হাতে রইল যৌনতার বাজার বা অন্য কিছু। পুরুষদের বাজার মেয়েদের বাজারের মতো ততটা বড়ো না-হলেও বাজার ক্রমশ বাড়ছে। অনেক পুরুষই এই পেশায় আসছে, কাজ করছে। অনেক আগ্রহী পুরুষই আগ্রহ প্রকাশ করেছে এই কাজ করার জন্য। সম্প্রতি সমীক্ষার জন্য ‘পুরুষ যৌনকর্মী চাই’ বলে ফেসবুকে একটি ফেক পেজ খুলেছিলাম। লিখলাম ‘Add me 30+ handsome male for income with real fun’। প্রতিদিন শোয়ে শোয়ে রিকোয়েস্ট আসতে থাকল। অনেককেই অ্যাকসেপ্ট করলাম। সবাই পাগলের মতো জানাতে থাকল এই কাজ করতে চায় বলে। জানতে চায় কীভাবে করতে হবে, কোথায় করতে হবে। অনেকেই আগাম নিজের ফোন নম্বর দিয়ে জানাল সে খুবই আগ্রহী, তাঁর সঙ্গে যেন যোগাযোগ করে নিই। যাঁদের রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে পারিনি বা করিনি, তাঁরাও আকুতি নিয়ে রিকোয়েস্ট মেসেঞ্জারে তাঁদের ফোন নম্বর রেখে গেল। পুরুষদের কতটা যৌনপেশায় আসতে আগ্রহী সেটা জানতেই এই ফেক পেজ খুলেছিলাম। কাজ মিটে যেতে যেতেই পেজটি ফেসবুক থেকে ডিঅ্যাক্টিভেট সহ ডিলিট করে দিই। যাই হোক, চিত্রটা খানিকটা হয়তো বোঝা গেল। বিপদ ও প্রতারণার সুযোগটা তো এখান থেকেই। একশ্রেণির মানুষ এই সুযোগটা নিতে শুরু দিল। ট্রেনে, বাসে, পথে-ঘাটে, সোসাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপিত হতে থাকল–“প্লেবয় চাই। দারুণ মজার কাজ। রথ দেখা কলা বেচা দুইই হবে। সক্ষম পুরুষরা যোগাযোগ করুন। স্মার্ট জব স্মার্ট মানি। সার্ভিস সপ্তাহে দু-দিন পাবেন। এই কাজ শুরু করতে কোনো রেজিস্ট্রেশন চার্জ লাগে না। শুধুমাত্র আপনার মেডিকেল করাতে ২০০০ টাকা লাগে।” সঙ্গে অবশ্যই ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বর। কী ভাবছেন? ভাববেন পড়ে। এখন শুনেনি এক যুবকের অভিজ্ঞতার কাহিনি। অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি তাঁকে। এটা ওটা বলার পর সে জানাল তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। জানাল বলা ভুল হল, বরং বলা ভালো শোনাল। তাঁদের ফোনে কনভারসানের রেকর্ড আমাকে পাঠিয়ে দিল। যুবকটি এমনই এক ফোন নম্বরে কল করেছিল। কল রিসিভ করল একজন মেয়ে। যুবকটি তাঁর আগ্রহের কথা জানালে ওরা যা বলল, সেটার হুবহু অনুলিখন করলাম।

–নমস্কার স্যার। আপনার বয়সটা বলবেন স্যার?

–থার্টি ফাইভ।

–বাঃ, আপনি যৌন-সক্ষম তো?

–হ্যাঁ।

–আপনি কাজ করতে চান?

–হ্যাঁ। কীভাবে কাজ পাব? কাজ কোথায় হবে? রোজগার কেমন হবে?

–আপনাকে ডিটেইলস বলে দিচ্ছি। আমাদের কাছে প্রচুর মহিলাদের ফোন নম্বর ঠিকানা আছে, যাঁরা সেক্সের ক্ষেত্রে আনসাটিসফায়েড। আপনাকে তাঁদের সেক্স সাটিসফায়েড করতে হবে। সবাই হাই প্রোফাইলের মহিলা। ওরাই আপনার ক্লায়েন্ট। সপ্তাহে দু-দিন কাজ পাবেন। ক্লায়েন্ট পিছু দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার পাবেন। আমরা আপনার রোজগার থেকে ক্লায়েন্ট পিছু ২০% নেব।

–আমাকে কী করতে হবে? মানে কীভাবে আমি ক্লায়েন্ট পেতে পারি?

–আপনাকে প্রথমে আপনার নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যে নম্বরে আপনি ফোন করেছেন সেই নম্বরে আপনার ডিটেইলসটা পাঠিয়ে দেবেন।

–ডিটেইলস বলতে আপনার নাম, আপনার বাবার নাম, আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা, আপনার ফোন নম্বর যে নম্বরে আপনাকে এসকর্ট করা হবে, আপনার ওজন, গায়ের রং, চোখের রং, অবশ্যই জানাতে হবে আপনার লিঙ্গের দৈর্ঘ্য ইঞ্চির মাপে কতটা, আপনি পেশায় নতুন না পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে ইত্যাদি। আমরা পিডিএফ ফর্ম পাঠিয়ে দেব। আপনাকে শুধু পূরণ করে পাঠাতে হবে।

–রেজিস্ট্রেশন কি আগে করতে হবে? নাকি বায়োডেটা পাঠানোর পরে করতে হবে?

–না, রেজিস্ট্রেশনটা আপনাকে আগে করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ফিজ ৩০০০ টাকা দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট হলে আপনার কাছ থেকে আপনার ডিটেইলস নেব এবং পরদিনই ক্লায়েন্টের ফোন নম্বর দেব। আপনি তাঁকে ফোন করে কাজ করার সময় জেনে নেবেন।

–টাকাটা কীভাবে পাঠাতে হবে?

–নেট ব্যাংকিং করে অথবা পেটিএমের মাধ্যমে পাঠাতে পারেন।

–আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনাদের ব্যাংক ডিটেইলসটা পাঠিয়ে দিন।

–ওকে। হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

দু-দিন পর হোয়াটস অ্যাপে ওরা ব্যাংক ডিটেইলস পাঠিয়ে দিলে যুবকটি ৩০০০ টাকা ব্যাংক ট্রান্সফার করে দেয়। টাকাটা ট্রান্সফার হওয়ার পর একটা ফর্ম হোয়াটস অ্যাপে চলে আসে। সেটাকে ফিল-আপ করে সঙ্গে সঙ্গে যুবকটি পাঠিয়ে দেয়। পরের দিন সকাল ৯ টা নাগাদ ওখান থেকে একটা আসে।

–আপনি কি আজকে কাজ করতে পারবেন?

–কটার সময়?

–বেলা বারোটা নাগাদ।

–হ্যাঁ, পারব।

–ঠিক আছে। আপনাকে ক্লায়েন্টের ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছি। আপনি তাঁকে ফোন করে জেনে নেবেন কখন সে সার্ভিস পেতে চায়। আপনার বিষয়ে সমস্ত বলা আছে ম্যাডামের কাছে। কোনো অসুবিধা হবে না। হ্যাপি জার্নি।

কিছুক্ষণ বাদে যুবকটির হোয়াটস অ্যাপে একটি ফোন নম্বর চলে আসে। ফোন নম্বরে কল করল যুবকটি। ও প্রান্তে নারী কণ্ঠ।

–আপনি কখন আসতে পারবেন?

–আপনি যখন বলবেন?

–ঠিক আছে। আপনি দুপুর নাগাদ চলে আসুন। আমি একা থাকব।

–ঠিক আছে। আপনার ঠিকানা দিন। কোথায় কীভাবে যাব একটু বলে দিন ম্যাডাম।

–অবশ্যই বলব। ঠিকানা না বললে আমাকে সার্ভিস দেবেন কীভাবে? তার আগে আমাকে একটা কাজ করে দেবেন প্লিজ?

–কী কাজ, বলুন?

–আমার ড্রাইভারটা বিহারে গিয়ে খুব বিপদে পড়ে গিয়েছে। ওকে ৫০০০ টাকা পাঠাতে হবে। আপনি একটু ওর অ্যাকাউন্টে আপনার কাছ থেকে দিয়ে ফেলে দেবেন? আপনি আমার কাছে এলে আপনার সার্ভিসের পনেরো হাজার টাকা উইথ পাঁচ হাজার মোট কুড়ি হাজার টাকা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেব। আমি আসলে ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যাংকে যেতে পারছি না। একটু অসুবিধা আছে। তাই আপনাকে বলতে বাধ্য হচ্ছি। আপনি আসার সঙ্গে সঙ্গে পুরো টাকাটাই পেয়ে যাবেন।

–এমন কথা তো ছিল না। দেখছি কী করা যায়। ওদের সঙ্গে এবার একবার কথা বলেনি, যাঁরা আমাকে আপনার কাছে পাঠাচ্ছে।

–ঠিক আছে। আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছি।

যুবকটি কল সেন্টারে ফোন করে সব ঘটনা বিস্তারিত বলতেই ওরা হতবাক হয়ে গেল। বলল–

–সেকি! এমন তো হওয়ার কথা নয়। সে আপনার কাছ থেকে টাকা চাইবে কেন? বরং আপনি সার্ভিস দিলে আপনাকে তিনি টাকা দেবেন। আপনি তো টাকা দিতে যাবেন না, টাকা কামাতে যাবেন। আপনি একটু লাইনে থাকুন। কনফারেন্স কলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি। আপনিও শুনবেন।

–হ্যালো, ম্যডাম বলছেন?

–হ্যাঁ, বলছি। বলুন।

–ম্যাডাম, আমরা যে ক্লায়েন্টকে আপনাকে সার্ভিস দিতে পাঠিয়েছি, আপনি তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছেন। এটা তো ঠিক নয়। এর ফলে আপনাকে পরবর্তীতে সার্ভিস পাবেন কি না আমাদের ভাবতে হবে।

–প্লিজ, রাগ করবেন না। আমি বিপদে না পড়লে টাকাটা ওনার কাছে চাইতাম না। আমি বলেছি উনি এলেই ওনাকে পুরো টাকাটাই দিয়ে দেব। ভয় নেই।

–স্যার, শুনলেন তো ওনার কথা। আমিও যেটা বললাম সেটাও নিশ্চয় শুনেছেন?

–হ্যাঁ, শুনলাম।

–আপনি টাকাটা পাঠিয়ে দিন। উনি তো বললেন আপনি যাওয়ার পরই আপনাকে টাকাটা দিয়ে দেবে। ভয় নেই। কোনো অসুবিধা হলে আমরা তো আছি। উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেব।

–বেশ। তাহলে আপনি একটা কাজ করুন। ওনাকে বলুন ওনার সম্পূর্ণ ঠিকানা আর ব্যাংক ডিটেইলসটা আমাকে দিতে। আমি ওই ঠিকানায় পৌঁছে টাকাটা আমার মোবাইল থেকেই ব্যাংক ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।

–ওকে। বলে দিচ্ছি।

তারপর আর কোনোদিন ওখান থেকে ফোন আসেনি। যুবকটি বুঝলেন সে প্রতারিত হয়েছেন। তিন হাজার টাকার উপর দিয়ে গেছে। লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে আরও পাঁচ হাজার গচ্ছা যেত। এরকম প্রতিদিন কত যুবক যে প্রতারিত হচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই। চারিদিকে জাল বিছিয়ে রেখেছে প্রতারকরা। সেই ফাঁদে ফেঁসে যাচ্ছে যুবকরা। পুলিশ-প্রশাসনকে জানালে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন ঠিকই। গ্রেফতারও করছে। কিন্তু প্রতারণা বন্ধ হচ্ছে না। নতুন নতুন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা করেই চলেছে। ফেসবুকে হাজার হাজার পেজ খুলে রেখেছে এই প্রতারকরা।

(৫) Private : এঁরা গণিকালয় বা কোনো সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত নয়। এঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ক্লায়েন্ট খুঁজে নেয়। তবে যাকে-তাকে নয়, ঝাড়াইবাছাই পরীক্ষানিরীক্ষা করেই ক্লায়েন্ট ধরে। বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ক্লায়েন্টই তাঁদের পছন্দ। অবশ্য শাঁসালো হতেই হবে ক্লায়েন্টকে। ক্লায়েন্টকে নিয়ে এঁরা কোনো বিলাসবহুল হোটেল বা রিসোর্টে সময় কাটায় মোটা টাকার বিনিময়ে। এছাড়া এঁরা ক্লায়েন্টের ভ্রমণসঙ্গীও হয়। সেইভাবে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেয়। ক্লায়েন্টের ঘাড় ভেঙে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে এবং মনের আশ মিটিয়ে কেনাকাটা করে নেয়। বিনিময়ে সে কয়েক রাতের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে যায় ক্লায়েন্টের।

(৬) window or Doorway : জানালা বা প্রবেশপথের মাধ্যমে গণিকালয়ের গণিকারা সম্ভাব্য ক্লায়েন্টকে আহ্বান করে। উইন্ডো’ গণিকারা সাধারণত উষ্ণ জায়গা পছন্দ করে। অপরদিকে ‘ডোরওয়ে’ গণিকারা সাধারণত ঠান্ডা জায়গা পছন্দ করে। উইন্ডো গণিকাদের সাধারণত নেদারল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড দেশগুলিতে দেখা যায়। এইসব গণিকারা দিনের বা দিনের কিছুটা অংশ কাজের জন্য উইন্ডো ভাড়া দেয়। গণিকারা স্বাধীন ও নিজেদের পরিচিত ক্লায়েন্টদেরই প্রোভাইড করে এবং তাঁর সঙ্গে সার্ভিস বিষয়ক ও পারিশ্রমিকের বিষয়ে কথাবার্তা বলে নেয়। উইন্ডো গণিকাবৃত্তি মূলত একটি ডাচ ফর্ম (Dutch form)। এই ফর্ম পুরোনো গির্জার আশেপাশে আমস্টারডামের পুরোনো রেড-লাইট এরিয়ায় রাস্তার পাশে শুরু হয়েছিল। শুরুতে জানালাগুলিতে পর্দা লাগানো ছিল। পরে যৌন-নৈতিকতার (Sexual morality) কঠোরতা কম হওয়ায় জানালাগুলি থেকে পর্দা পুরোপুরিভাবে সরে যায়। তখন গণিকারা গণিকাদের পোশাক বা পোশাকের টুকরো ঝুলিয়ে রাখত। বর্তমানে গণিকারা তখনই জানালা বন্ধ রাখে যখন ঘরের ভিতরে ক্লায়েন্ট থাকে। নেদারল্যান্ডের গণিকারা প্রায় ১২০০ উইন্ডো ব্যবহার করে থাকে। নেদারল্যান্ডের ত্রিশ শতাংশ গণিকা উইন্ডোর পিছনে যৌনকর্ম করে। নেদারল্যান্ডের আল্কমার, আমস্টারডাম, হেগ, ডিভেনটার, ডোয়েটিচেম, এইনধোভেন, গ্রোনিনজেন, হারলিম, হিরেনভিন, লাউওয়াডেন, নিমেজেন, রটারডাম শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে উইন্ডো গণিকাবৃত্তি হয়। বেলজিয়ামের অন্টউইপ, ব্রাসেলস, ঘেন্ট, ওসটেন্ড, চারলিওরই, ডেইনজ, লিগ, সিন্ট টুইডেন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে উইন্ডো গণিকাবৃত্তি হয় এবং জার্মানিতে অ্যাচেন, বোচাম, ব্রাউনচেউইগ, ডর্টমুনড়, ডুইসবার্গ, এসেন, ফ্রাংকফুর্ট, হামবার্গ, কার্লফ্রহে, কলোনি, মনহেইম, ওবারহাউসেন শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে উইন্ডো গণিকাবৃত্তি হয়।

(৭) club, Pub, Bar, Karaoke Bar, Dancehall : এইসব গণিকারা ক্লাব, পাব, বার, মদ ও অন্যান্য টুকিটাকি জিনিস খুচরো বিক্রির স্থানগুলিতে ক্লায়েন্টের কাছে যৌন-আবেদন রাখেন। ক্লায়েন্ট পটে গেলে সংশ্লিষ্ট গণিকার সঙ্গে নির্দিষ্ট ঘরে সময় কাটায়। এই ধরনের গণিকা থাইল্যান্ড, লাস ভেগাস, চিনের ক্যাসিনোগুলিতে দেখা যায়।

(৮) other all-male venues : এইসব গণিকারা যেখানে নিয়মিত পুরুষের জমায়েত থাকে, সেখানেই হাজির হয়ে ছুকছুকে পুরুষদের কাছে ঘেঁষে এসে যৌনমিলনের জন্য প্ররোচিত দেয়। সেনাছাউনি, বাজার-ঘাট, ব্যস্ত রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাস, খনি-ক্যাম্প ইত্যাদি জায়গায় এঁদের দেখা যায়।

(৯) Door knock or hotel : এই গণিকারা সাধারণত আবাসিক হোটেলে বসবাসরত পুরুষ বর্ডারদের যৌনকর্মে আহ্বান জানায়। হোটেলের দরজায় কড়া নাড়ায়। হোটেলের ম্যানেজারের মাধ্যমেও এঁরা হোটেলের রুমে পৌঁছে যায়। ক্লায়েন্ট রাজি হলে হোটেলের ম্যানেজারও কমিশন পায়।

(১০) Transport : এই গণিকারা সাধারণত চলমান বাস, চলমান ট্রেন, চলমান জাহাজে উঠে ভ্রমণরত যাত্রীদের যৌনকর্মে আহ্বান জানায়।

(১১) CB Radio : এই গণিকারা সম্ভাব্য ট্র্যাক ড্রাইভার ক্লায়েন্টদের সঙ্গে একচেঞ্জ বার্তা (অপভাষা) CB Redio ব্যবহার করে হাইওয়ে বরাবর ড্রাইভ করে ট্রাকস্টপ বা পার্কিং এলাকায় যৌন-পরিসেবা দেয়।

(১২) other methods of Solicitation : এইসব গণিকারা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে–যেমন নোটিশ বোর্ড ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন, মোবাইল নম্বর সহ ‘যৌনকর্মীর ক্যাটালগ’, ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে ভার্চুয়াল গণিকালয় এবং অন্যান্য অন্তরঙ্গ স্থানগুলিতে যৌন-পরিসেবা বিতরণ করে থাকে।

(১৩) Phone Sex : এটি একটি নতুন ধরনের ট্রেন্ড। এই ফোন সেক্সের দুটো শ্রেণি। একটি হল–“তুমি আমার ফোনে ২০০ টাকা রিচার্জ করে দাও, তাহলে তোমার সঙ্গে চ্যাটে সেক্স করব। তারপর তোমাকে ভালো লেগে গেলে রিয়েল সেক্সও করতে পারি।” এদের সাধারণত প্রতারক গণিকাও বলা যায়। শরীর ও সেক্সের লোভ দেখিয়ে নিজের ফোন রিচার্জ করিয়ে নেয়। তারপর গ্রাহকের ফোন নম্বরটি ব্ল্যাকলিস্টে পাঠিয়ে দেয়। একই সঙ্গে ফেসবুক থেকেও তাঁকে ব্লক করে দেওয়া। কারণ ফেসবুকে একটা আইডি খুলে এঁরা ফেসবুকেই এমন অফার দিয়ে থাকে। অন্যটি হল–এঁরা বলে “তুমি আমার ফোনে এত টাকা রিচার্জ করে দাও, তাহলে তোমাকে আমি আমার ন্যুড ছবি দেখাব, ভিডিও কল করে আমাকে ন্যুড দেখাব।” কতটা ন্যুড সে দেখাবে তা নির্ভর করবে আপনি কত টাকার রিচার্জ করে দিচ্ছেন তার উপর। এঁরাও প্রতারক গণিকা। আর শ্রেণির গণিকা আছেন যাঁরা সেক্স ভিডিও করবে বলে কোনো সাইটে বিজ্ঞাপন দেয়। সঙ্গে থাকে হোয়াটস অ্যাপ নম্বর। হোয়াটস অ্যাপ করলে মেয়েটি জানায় পেটিএমে ৫০০ টাকা পাঠালে ন্যাকেড হয়ে ভিডিও কল করব। যত বেশি টাকা পাঠাবে তত বেশিক্ষণ ভিডিওতে থাকব। ৫০০ টাকায় পাঁচ মিনিট। এঁদের কেউ কেউ প্রতারক হলেও সবাই প্রতারক নয়। তাঁরা ভিডিও কলের মাধ্যমে নিজের শরীর নগ্ন করে উপস্থাপন করে। প্রযুক্তির কল্যাণে সেইসব ভিডিও ‘ওয়েবক্যাম ভিডিও’ নামে বিভিন্ন পর্নো সাইটে পাওয়া যায়।

(১৪) Massage Parlour : ম্যাসাজ পার্লারের বাজার এই মুহূর্তে বেশ রমরমা। বিদেশে থাইল্যান্ড, লাস ভেগাস, চিন প্রভৃতি দেশের ক্যাসিনোগুলোতে বহু আগে থেকেই মেসেজ পার্লারগুলিতে যৌনতা বিক্রি হয়ে আসছে। ভারত তথা কলকাতাতেও এখন মেসেজ পার্লারগুলি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মেসেজ পার্লারগুলি কিছুদিন আগে পর্যন্ত ধনীদের কুক্ষিগত ছিল। এখন মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্তদের নাগালের মধ্যেও চলে এসেছে। বিভিন্ন ম্যাসাজ পার্লার, বিলাসহুল ফ্ল্যাট, নামী-দামি বিউটি পার্লারে ‘মেল টু মেল’, ‘ফিমেল টু ফিমেল’, ‘মেল টু ফিমেল’, ফিমেল টু মেল’ ম্যাসাজ করা হয়।

ম্যাসাজ শব্দটির বাংলা অর্থ করলে যা দাঁড়ায় তা হল শরীর মর্দন করা। বর্তমানে ম্যাসাজ পার্লার’ শব্দটি একটি গণিকালয় হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। গোড়ার দিকে শুধুমাত্র শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য একপ্রকার থেরাপি হিসাবে ব্যবহৃত হলেও ধীরে ধীরে এটা যৌনকর্মের আখড়া হয়ে উঠতে থাকল। সামনের গ্লোসাইন বোর্ডে ম্যাসাজ পার্লার লেখা থাকলেও পিছনে যৌনকর্ম চলে। এ ক্ষেত্রে ১৮৯৪ সালে প্রথম বিষয়টি মানুষের নজরে আসে, যা ম্যাসাজ কেলেংকারী’ নামে পরিচিত হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ম্যাসেজ প্র্যাকটিশনারদের শিক্ষা ও অনুশীলনের অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁরা দেখে অদক্ষ গণিকাদের আনাগোনা। প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাঁরা বৈধ ম্যাসাজ কর্মীদের পৃথকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে উচ্চতর একাডেমিক মানসম্পন্ন করে ম্যাসিউসেস সোসাইটি’ গঠন করে। সওনাস, স্পা বা অনুরূপ যা কিছু ম্যাসাজ পার্লারের ছদ্মবেশে গণিকাবৃত্তির প্রসার চলতে থাকল। নির্দিষ্ট ম্যাসেজ পার্লারে একটি শুভ সমাপ্তি (Happy Ending) থাকতে পারে, যেখানে ম্যাসাজ আসলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে যৌনমুক্তি। যৌনতামূলক হ্যাপি এন্ডিং ছাড়াও ক্লায়েন্টের সঙ্গে যৌন-উত্তেজক ম্যাসাজও করা হয়। এমনকি স্ট্রিপেইজ সঞ্চালনের সময় ক্লায়েন্ট তাঁকে বা নিজেকে হস্তমৈথুন করাতে বা করতে পারে। ইটালি, মালয়েশিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ব্রিটেন হল এই ধরনের ম্যাসাজ পথপ্রদর্শক।

আমরা নানা ধরনের ম্যাসাজের নাম দেখতে বা শুনতে পাই। যেমন–সুইডিশ ম্যাসাজ, ডিপ টিস্যু ম্যাসাজ, হট-স্টোন ম্যাসাজ, স্পোর্টস ম্যাসাজ, সিয়াৎসু ম্যাসাজ, ট্রিগার পয়েন্ট, কাপলস ম্যাসাজ, প্রেরেন্টাল ম্যাসাজ, রিফ্লেক্সোলজি ম্যাসাজ, থাই ম্যাসাজ, ফুট ম্যাসাজ, অ্যারোমাথেরাপি, স্পা, চেয়ার ম্যাসাজ ইত্যাদি। এই ম্যাসাজ করলে নানা রকমের টেনশন থেকে মুক্তি, শরীরের নানারকম ব্যথা থেকে মুক্তি, ডিপ্রেসন, ইনসোমেনিয়া, হাড়ের জয়েন্ট বা পেশির আড়ষ্টতা কেটে যায় বলে দাবি করা হয়। তবে কোন্ প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ম্যাসাজ হয়, আর কোন্ অন্য কিছু হয় সেটা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। মাঝেমধ্যেই এই ধরনের ম্যাসাজ পার্লারগুলি থেকে যৌনকর্মরত মহিলা ও ক্লায়েন্টদের পুলিশ গ্রেফতার করে, সেই খবর আমরা পাই। তবে কোনো কোনো ম্যাসাজ পার্লার সাইটের মাধ্যমে ম্যাসাজের জন্য ক্লায়েন্টের আকর্ষিত করে। ইন্টারনেট ঘাঁটলে এরকম অসংখ্য সাইটে দেখা মিলবে, যেখানে সরাসরি যৌনকর্মের কথাই বলা হয়ে থকে। এঁদের ম্যাসাজের নামও একটু ভিন্ন। যেমন—স্যান্ডউইচ ম্যাসাজ। খুব জনপ্রিয় ম্যাসাজ। এই ম্যাসাজে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। একজন নারী নীচে থেকে ক্রিয়া করবে, অন্য নারী উপর থেকে ক্রিয়া করবে। মাঝে থাকবে পুরুষটি। অথবা দুজন পুরুষ ও একজন নারী। অনুরূপ একজন পুরুষ নীচ থেকে ক্রিয়া করবে, অন্য পুরুষ উপর থেকে ক্রিয়া করবে। মাঝে থাকবে নারী। কোনো ঢাকাঢাক গুড়গুড় নেই। এঁরা স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিজ্ঞাপিত করে–“We are provide full body massage with full satisfaction by hot expert beautiful female like body to body massage, sextual service, nude massage etc. Full body massage spa with full satisfaction enjoyment and unlimited short with two girls.”

উল্লেখ থাকে রেট, ফোন নম্বর ও ঠিকানা। রেটগুলি এরকম–

Body to body massage — 1500

 Sandwich body massage with 2 girls — 2500

Sex massage — 1500

Full body massage — 2000

Erotic massage — 1500

Dry massage — 1500

4 hands massage with sex — 2500

Oil massage — 1500

Powder massage — 1500

(তথ্যসূত্র : Sonia Spa Center)

আজকাল কলকাতা, বড়ো শহর শহরতলিতে অনেকেই নিশ্চয় পোস্টার দেখতে পান, যেখানে মেয়েদের ছবি সহ ‘বডি ম্যাসাজ’ লেখা থাকে অনেকগুলো ফোন নম্বর সহ। এঁরা মূলত প্রতিষ্ঠিত গণিকাপল্লির আধুনিক সংস্করণ। আর-একটু মোডিফায়েড। এখানকার মেয়েরা কেউ গণিকাপল্লির স্থায়ী বাসিন্দা নয়। এঁরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন শহর বা গ্রাম থেকে এসে ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করে। কায়েন্ট সংগ্রহ হয় ফোনের মাধ্যমে। ক্লায়েন্ট কবে কখন আসবে সেইমতো ক্লায়েন্টকে একজন সাহায্য করতে এগিয়ে যাবে এবং ক্লায়েন্টকে সঙ্গে নিয়ে সোজা নিজেদের অফিসে চলে আসবে। একটি করে মেয়ে দেখাবে। সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে মেয়ে পছন্দ হলে তো ভালোই, নাহলে অন্য অফিসগুলো থেকেও মেয়ে দেখানো হয়। যেহেতু বিজ্ঞাপনে বডি ম্যাসাজ লেখা থাকে, তাই নামকাওয়াস্তে মিনিট দশেক ম্যাসাজ করলেও আসল কাজ যৌনকর্ম চালু হয়ে যায়।

স্ব-ইচ্ছায় যাঁরা যৌনপেশায় আসে, তাঁদের কথায় পরে আসছি। অনিচ্ছাকৃতভাবে যাঁরা যৌনপেশায় আসতে বাধ্য হয়, তাঁদের কথা দিয়েই শুরু করি।

(১) প্রতারক কর্তৃক পাচারকৃত গণিকা : প্রায় গোটা পৃথিবী জুড়েই নারী পাচারের চক্র সক্রিয় আছে। তবে তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলি থেকেই বেশি নারী পাচার হয়ে থাকে। ২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে ভারতে ৩ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ পাচার হয়ে যায়। এর মধ্যে ১০ লক্ষ ৮ হাজার জন নারী পাচার হয়ে যেতে হয়েছে বিভিন্ন গণিকাপল্লিতে। তবে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আন্তর্জাতিক সীমানা থাকায় পাচারকারীদের জন্য অনুকূল। প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রতারকদের দ্বারাই পাচার সম্পন্ন হয়। প্রতারক যে কেউ হতে পারে। সৎ বাবা, সৎ মা হতে পারে, স্বামী হতে পারে, প্রেমিক হতে পারে, প্রতিবেশী হতে পারে, বান্ধবীও হতে পারে। এরা মানুষের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে ছেলেদের সর্বস্বান্ত করে দেয়, তেমনি মেয়েদের যৌবনও বেচে খায়। কখনো কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কখনো বিয়ে করে গণিকালয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসে। অত্যন্ত সংঘবদ্ধ এই নারীদেহ পাচারের ব্যাবসা। গুণ্ডা, দালাল থেকে শুরু করে বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মানুষ মিলে এই জাল বিস্তার করেছে।  

পণ্যসর্বস্ব আগ্রাসী দুনিয়ায় সবচেয়ে লোভনীয় হল মানুষ, আর লোভনীয় মানুষের চেয়ে সবচেয়ে লোভনীয় হল মেয়েমানুষ। মেয়েমানুষের ব্যাবসা বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক ব্যাবসা। প্রায় বিনিয়োগবিহীন ব্যাবসা। তাই এই দেহব্যাবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দরিদ্র থেকে ধনী, নেতা-মন্ত্রী পর্যন্ত। গণিকাপল্লির সমৃদ্ধ হবে কীভাবে? ক্লায়েন্ট যে নতুন নতুন চিড়িয়া’ চায়। সিল’ না-কাটা মেয়েদের যে কদর বেশি, রেটও বেশি। অতএব নারীপাচার জারি আছে এবং থাকবে। এই পাচারযজ্ঞ আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, এখন মাতৃগর্ভে থাকা কন্যাভ্রণটিও পাচার হয়ে যেতে পারে।

বিগত কয়েক দশকে সমগ্র বিশ্বজুড়ে নারী ও শিশু পাচারের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ নারী ও শিশু পাচারের একটি উৎস এবং ট্রানজিট রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত। প্রতিদিন এদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে অথবা বিমান যোগে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচারকৃত নারী ও শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে পতিতালয়ে বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়।

নারী ও শিশু পাচারের বিষয়টা আসলে কেমন? বিশ্বায়নের যুগে পুঁজি, পণ্য ও প্রযুক্তির মতো পৃথিবী জুড়ে শ্রমের চলাচলও সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু জটিল ইমিগ্রেশন নীতির কারণে গত শতাব্দীগুলোর তুলনায় বর্তমান সময়ে বৈধ পথে শ্রম অভিবাসন অনেক কম ঘটেছে। তবে পৃথিবী জুড়ে মানুষের চলাচল থেমে থাকেনি। নানা অবৈধ উপায়ে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসা-যাওয়া চলছে। নানা ধরনের চলাচলের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল নারী ও শিশু পাচার। আন্তর্জাতিকভাবে নারী ও শিশু পাচারকে আধুনিক যুগের দাসপ্রথা হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। পাচার কাকে বলে? এ বিষয়ে বড়ো ধরনের বিভ্রান্তি আছে। অবশ্য পাচারের উদ্দেশ্য, প্রকৃতি, পদ্ধতি সবই আগের তুলনায় অনেক জটিল হয়ে গেছে। সাধারণত যে-কোনো ধরনের শোষণের উদ্দেশ্যে জোড় খাঁটিয়ে, ছল চাতুরি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে অথবা যাকে পাচার করতে চায় তার উপর কর্তৃত্ব আছে এমন ব্যক্তিকে আইন বহির্ভূত উপায়ে টাকা লেনদেন করার মাধ্যমে লোক সংগ্রহ, স্থানান্তর, আশ্রয়দান ও অর্থ-বিনিময়ে গ্রহণ ইত্যাদি যে-কোনো কর্মকাণ্ডই হল পাচার।

আইওএম, অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের ব্যাখ্য অনুযায়ী মানুষ পাচার তখনই ঘটে, যখন একজন অভিবাসী জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে (যেমন—চাকুরি প্রাপ্তির নিমিত্তে, অপহৃত হয়ে, বিক্রিত হয়ে) কোনো কাজে নিযুক্ত হন। পাচারকারী এই কর্মকাণ্ডের যে-কোনো পর্যায়ে উক্ত অভিবাসীকে প্রতারণা, পীড়ন বা অন্য যে-কোনো শোষণের মাধ্যমে তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অথনৈতিক বা অন্য যে-কোনো প্রকার মুনাফা অর্জন করে।

যে সমস্ত পরিবারের অধিকাংশ দুঃস্থ, নিঃস্ব ও অসহায়, সেই পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আন্তর্জাতিকভাবে সংঘবদ্ধ এক শ্রেণির প্রতারক। তাঁরা প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় পিতামাতার মেয়েদের শহরে চাকরি বা যৌতুকবিহীন বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাচার করে দিচ্ছে অন্ধকার জগতে। পাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছে দেশের ছিন্নমূল, ভবঘুরে নারী ও তাঁদের অভিভাবকরা এবং দারিদ্র্যের নিষ্পেষনে জর্জরিত অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বিচ্ছেদপ্রাপ্ত ও বিধবা নারীরা। অসহায় নারীরা সুন্দরভাবে বাঁচার আশায় নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পাচারকারীদের পাতা জালে জড়িয়ে পড়ছে। পিতামাতারা অর্থ উপার্জনের আশায় বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভনে পড়ে বা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় না-জেনে শিশু-সন্তানদের তুলে দিচ্ছে। পাচারকারীদের হাতে। এভাবে শিশুরাও প্রতারণার শিকার হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই পাচারের পিছনে প্রায় সবক্ষেত্রেই অন্যতম কারণ হিসেবে নিহিত রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, নারীর নিম্নমানের পেশা, চাকরির সুযোগের অভাব, মাথাপিছু নিম্ন আয়, সম্পদে নারীর অধিকার, চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগের অভাব ইত্যাদি। দারিদ্র্য ও বেকারত্বের চরম পরিস্থিতিতে দরিদ্র নারী এবং তাঁদের পরিবার বিয়ে ও চাকরির প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হয়। এই পরিস্থিতিতে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এমন কারও কাছ থেকে পরিবারের নারী ও শিশুদের জন্য বিবাহ বা চাকরির প্রস্তাব পেলে এসব এলাকার পিতামাতারা তা গ্রহণ করতে দেরি করে না। অন্যদিকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং ভোগ্যপণ্য পাওয়ার লোভে পাচারকারীরা নিজেদের নিপুণভাবে পরিচালনা করে থাকে।

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় ১৯৪৭ সালে এবং পুনরায় ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক বিভাজন এই এলাকায় পরিবারগুলোকে বিভক্ত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। দেশবিভাগের কারণে এই বিভক্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা একে অন্যকে সীমান্তের একপার হতে অন্য পারে আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত। সীমান্ত অতিক্রম করে এক পরিবারের সদস্যরা অন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বাসনা অনেক সময় নারী ও শিশু পাচারকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়া নারী ও শিশু পাচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কারণ হলে পরিবারে নারীর অধস্তন অবস্থান, যা সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন মূল্যবোধ, আচার-আচরণ ও সামাজিক রীতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আমাদের সমাজে নারীর সামাজিক অবস্থান তাঁর বৈবাহিক অবস্থা দ্বারা নির্ধারিত। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের পিতামাতারা মেয়েদের জন্য আইন দ্বারা নির্ধারিত বিয়ের উপযুক্ত বয়স ১৮ বছরের কম হওয়া সত্ত্বেও মেয়েদের বিয়ে দেওয়া দায়িত্ব বলে মনে করে, যার দুটি খারাপ পরিণতি আছে। যেসব ছেলে বিয়েতে যৌতুক চায় না কন্যাদায়গ্রস্ত দরিদ্র পিতামাতারা তাঁদের সঙ্গে খোঁজখবর ছাড়াই কম বয়সি মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করে। অনেক পাচারকারী এই দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তাঁরা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে গিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়। দ্বিতীয় পরিণতি হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে সহায়সম্বলহীন পিতামাতা বিয়ের সময় যৌতুকের দাবি মেনে নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করে। কিন্তু পরবর্তীকালে আর শোধ করতে পারে না। তখন মেয়েটি তাঁর স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়। একদিকে মেয়েটি বাবার বাড়িতেও ফিরে যেতে পারে না, অন্যদিকে নির্যাতনের নির্মমতা সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এরকম অসহায় অবস্থার সুযোগ নেয় পাচারকারী চক্র। বিয়ের পর স্ত্রী রেখে পালিয়ে যাওয়া এবং বৈবাহিক সন্ত্রাস পাচারের কারণ হিসাবে কাজ করে। যুবতী, অবিবাহিত অথবা স্বামী পরিত্যক্তা এবং বিধবা নারী সমাজ ও পরিবারের কাছে বোঝাস্বরূপ। এই শ্রেণির নারীর কাছে বিকল্প কর্ম অথবা বিবাহের প্রস্তাব আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। তাঁরা পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিবাহ বা লোভনীয় চাকুরির প্রস্তাবে সহজেই সাড়া দেয় আর শেষপর্যন্ত পাচারকারীদের ফাঁদা জালে আটকা পড়ে।

পাচারের উদ্দেশ্য কী আর একটু স্পষ্ট করে বলা যাক—(১) পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা। (২) পর্নোগ্রাফি সিনেমায় ব্যবহার করা। (৩) মধ্যপ্রাচ্যে উটের জকি হিসাবে ব্যবহার করা। (৪) ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা। (৫) শরীরের রক্ত বিক্রি করা। (৬) অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে ব্যাবসা। (৭) মাথার খুলি, কঙ্কাল রপ্তানি করা ইত্যাদি।

এশিয়ার মধ্যে নারী পাচারের প্রথম বৃহৎ দেশ হল নেপাল এবং দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪,২২২ কিলোমিটার এবং মায়ানমারের সাথে ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা আছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তরবঙ্গ সীমানা দিয়েই পাচার বেশি হয়। বাংলাদেশের পাচারকারীরা ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত ব্যবহার করে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করে। দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে পণ্য সামগ্রী পাচারের পাশাপাশি নারী ও শিশু পাচার হয়ে থাকে। এসব অঞ্চলের ১১টি রুট পাচারের উদ্দ্যেশে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার জন্য যশোরের বেনাপোল একটি অত্যন্ত সহজ ও সুপরিচিত রুট। এখান থেকে বাস ও ট্রেনের যোগাযোগ খুব ভালো হওয়ায় পাচারকারীরা খুব সহজেই কলকাতা পৌঁছে যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ শহরটি বেনাপোল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে, যেখানে গোটা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা নারী ও শিশুদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। বৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের মাধ্যমেই হোক আর অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমেই হোক পাচারের উদ্দেশ্যে বড়ো ধরনের কোনো কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য তাঁদেরকে বনগাঁয় নিয়ে আসা হয়। বেনাপোল ছাড়া যশোর থেকে পাচারকারীরা সাধারণত ভোমরা, কলারোয়া, দর্শনা, জীবননগর ও ঝাউডাঙ্গা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নারী ও শিশু পাচার করে থাকে। এছাড়াও কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন বর্ডার এলাকা দিয়েও পাচার করা হয়। যশোর থেকে নাভারন চৌরাস্তা দিয়ে ভারতে যাওয়া খুবই সহজ। বৈধভাবে ভারতে যাওয়া বেশ ঝামেলাপূর্ণ হওয়ায় পাচারকারী চক্র বিডিআর প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে এই পথে অবৈধভাবে ভারতে যায়। ভারতীয় পাচারকারী, হস্তান্তরিত নারী ও শিশুকে কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাইয়ের গণিকালয়ে বিক্রি করে কিংবা সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করে। দীর্ঘকাল ধরে দেহব্যাবসা এবং নারী ও শিশু বিক্রয়ের জন্য কলকাতা নিরাপদ স্থান হিসাবে পরিচিত। আর মুম্বাই নগরীকে পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যশোরের অধিকাংশ ট্রানজিট পয়েন্টের সঙ্গে ভারতের বিশেষ করে চব্বিশ পরগনার পয়েন্টগুলোর সূক্ষ্ম যোগাযোগ আছে।

কীভাবে পাচার হয় নারী ও শিশু? (১) মূল হোতা : যে ব্যক্তি পাচারের মূল ব্যাবসা পরিকল্পনা, পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তাকে পাচারকারী চক্রের মূল হোতা হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। পাচার সংক্রান্ত অর্থের লেনদেন এবং পাচার প্রক্রিয়ার প্রশাসনিক কার্যাবলি এই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে। মূল হোতা যে দেশের নাগরিক সে দেশে তাঁর কর্মক্ষেত্র বা দপ্তর থাকতে পারে। আবার তাঁর কর্মস্থল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে অন্য দেশের পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে সে পাচারকার্য সম্পন্ন করে থাকে। (২) দালাল : দালাল হল সেই মধ্যস্বত্বভোগী, যাঁর দেশের ভিতরে বিভিন্ন এলাকায় নেটওয়ার্ক আছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী ও শিশু সংগ্রহ করে এবং পাচারকারী চক্রের প্রতিনিধি অথবা পাচারকৃতদের ব্যবহারকারী সংগঠনের হাতে তুলে দেয়। (৩) সংগ্রহকারী : দালালের নেটওয়ার্কের অভ্যন্তরে যেসব ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে লোক সংগ্রহ করে দেয়, তাঁদেরকে বলা যেতে পারে সংগ্রহকারী। আরও ব্যাখ্যা করলে সংগ্রহকারী বলতে বোঝায় পাচারের কাজে নিয়োজিত সেইসব লোক, যাঁরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী ও শিশু সংগ্রহের কাজকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছে। সংগ্রহকারী সাধারণত নিজ গ্রাম থেকে নারী ও শিশু সংগ্রহ করে না, অন্যান্য গ্রাম থেকে তাঁদের সংগ্রহ করে থাকে। অপেক্ষাকৃত ছোটো দালাল আবার নিজেই সংগ্রহকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সংগ্রহকারী একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সক্রিয় থাকতে পারে। (৪) সহযোগী : পাচার একটি সংগঠিত চক্রের কাজ। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন অংশ যেমন পরিবার, স্থানীয় নেতা, ব্যবসায়ী, পরিবহন শিল্পে কর্মরত লোক, স্থানীয় মস্তান—এরা বুঝে অথবা না বুঝে কিছু অর্থনৈতিক লাভের জন্য পাচারের কাজে সহায়তা করে। এই শ্রেণিকে নারী ও শিশু পাচারের সহযোগী বলা যায়। পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা নারী ও শিশুর পরিবার থেকে শুরু করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী পর্যন্ত এ ধরনের সহযোগী ব্যক্তিদের পাওয়া যায়। (৫) পরিবার : একজন দালাল যখন সংগ্রহের কাজ করে তখন পরিবারের সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে জেনেশুনেও নারী বা শিশুকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। জামাইবাবু শালীকে অথবা মামা ভাগ্নিকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটে থাকে। (৬) পরিবহন চালক এবং মালিক : পাচারের উদ্দেশ্যে সংগৃহীত নারী ও শিশুদেরকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের পরিবহন ব্যবহার করা হয়। যেমন—রিক্সা, ভ্যান, বাস, নৌকা, ট্রাক ইত্যাদি। এ সকল যানবাহনের চালকরা জেনে বা না-জেনে স্থানান্তরের কাজটি করে থাকেন। এরাও পাচারের সহযোগী। (৭) ঘাট মালিক : নারী ও শিশুদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করার পর সীমান্তবর্তী এলাকায় এনে জড়ো করা হয়। এই এলাকাগুলো ঘাট নামে পরিচিত। ঘাট একটি মাঠ হতে পারে, নদীর তীর হতে পারে, এমনকি একটি বাড়িও হতে পারে। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন অবৈধ উপায়ে মানুষ পারাপারের লক্ষ্যে সহায়তা করার জন্য এই ঘাটগুলো ইজারা নেয়। নারী ও শিশু পাচারের জন্য এই ঘাটগুলো ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঘাট মালিকরা পাচারের সহযোগী হিসাবে কাজ করে। (৮) সীমান্তরক্ষী বাহিনী : মানুষ পাচারের ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা সর্বজনবিদিত। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া পাচারকারীদের পক্ষে নিয়মিত এক দেশ থেকে অন্য দেশের সীমান্ত পারাপার করা সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পাচারের কাজে সরাসরি যুক্ত না হলেও অর্থের বিনিময়ে তাঁরা সীমান্ত পারাপারে পাচারকারীদের সহযোগিতা করে থাকে।

বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ নারী পাচার হয়ে বিদেশে যাচ্ছে, তার সিংহভাগ অংশকে জোরপূর্বক গণিকাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়। গণিকাবৃত্তিতে পাচারকৃত মেয়েদের নিয়োগ নির্ভর করে তাঁদের বয়স ও দৈহিক সৌন্দর্যের উপর। এক পরিসংখ্যানে পাওয়া যায় কলকাতার বিভিন্ন পতিতালয়ে বাংলাদেশী প্রায় ২০ হাজার মেয়ে আছে। বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে পাচারকারীরা একেকজন নারীকে গণিকালয়ে বিক্রি করে দেয়। এদের মধ্যে অনেক কিশোরীও থাকে। গণিকালয়ে প্রথম থেকেই নারীরা মানসিক ও দৈহিক উভয় প্রকার নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। গণিকাবৃত্তিতে অস্বীকৃতি জানালে সর্দারনি বা গণিকালয়ের মালিকদের হাতে তাঁদের নির্যাতিত হতে হয়। তাঁদেরকে বদ্ধ ঘরে আটকে রাখা হয়। এমনকি অ্যাসিড দিয়ে শরীরের অংশ বিশেষ পুড়িয়ে দেওরার মতো ঘটনাও ঘটে। স্বাস্থ্যগত ও মানসিক দিক বিবেচনায় গণিকালয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া নারী অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় থাকে। সঠিকভাবে নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ না-করার বিভিন্ন যৌনরোগে তাঁরা আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এইডসের মতো ভয়াবহ ব্যাধিরও সংক্রমণ ঘটে থাকে, যার অবধারিত ফল মৃত্যু। অনেকে অনাকাঙ্খিতভাবে গর্ভধারণ করে। আর এই অবস্থায় জোরপূর্বক তাঁদের গর্ভপাত ঘটানো হয়, যা তাঁদের স্বাস্থ্যহানি থেকে শুরু করে মৃত্যুরও কারণ হয়। গণিকালয়ে বিক্রি করা ছাড়াও অন্য ধরনের যৌন-ব্যাবসায়ও পাচারকৃত নারী ও মেয়ে শিশুদের কাজে লাগানো হয়। যৌন-পর্যটনের জন্য পাচারকৃত নারীকে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রয় করা হয়। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য এ সব নারী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অনেক সময় ধনী ব্যক্তিরা রক্ষিতা বা সেবাদাসী হিসাবে ব্যবহারের জন্যেও পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের কিনে নেয়। সেখানে তাঁদের মুক্তভাবে চলাচল, মত প্রকাশ বা নিজের ব্যপারে কথা বলারও কোনো অধিকার থাকে না। পকিস্তানে পাচার হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ নারীই শিকার হয় বাধ্যতামূলক শ্রমের। বিশেষ করে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের লোকেরা তাঁদের কিনে নিয়ে যায় এবং বিয়ে করে। এইসব নারী তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম স্ত্রী হিসাবে শস্য উৎপাদন ও অন্যান্য কাজে শ্রম দিতে বাধ্য হয়। মানুষের বসবাসের অনুপযোগী মরুভূমি অঞ্চলে প্রখর রোদে ভেড়া চড়ানো, জল টানা ইত্যাদি কষ্টদায়ক কাজ করতে বাধ্য হয়। ক্রয় করে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করা হয় বলে সামাজিকভাবেও এঁরা নিগৃহীত হয়। প্রয়োজনবোধে স্বামী আবারও তাঁকে বিক্রি করে দিতে পারে। বাংলাদেশ থেকে নারী প্রতারিত হয়ে সৌদি আরবে যৌনদাসীতে পরিণত হয়ে থাকে। রাজি না-হলে তাঁদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়।

নারী ও শিশু পাচারে পশ্চিমবঙ্গের স্থান সারা ভারতে প্রথম। এই হিসাব জাতীয় অপরাধ তথ্য-পরিসংখ্যান দপ্তরের, যা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকার ও এনজিওগুলো ভুল বলে দাবি করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী কৃষ্ণা রাজ সংসদে জানিয়েছেন, বাল্য বিবাহ এবং নারী ও শিশু পাচারে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। প্রতি বছরই নারী পাচারের সংখ্যাটা বাড়ছে। রাজ্যসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণা রাজ জানান, ২০১৫-১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ নারী ও শিশু পাচারে পয়লা নম্বরে ছিল। ২০১৫ সালে ২০৬৪ জন নারী পাচার হয়েছে। পরের বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৫৯ জন। শিশু পাচার ২০১৫ সালে ছিল ১৭৯২ জন, ২০১৬ সালে সেটা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১১৩ জনে। নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এই হিসাব দাখিল করেছেন ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য উদ্ধৃত করে। রাজ্য সচিবালয়ের দাবি, আগের সরকারের আমলে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটলেও তা পুলিসের খাতায় নথিভুক্ত হত না। রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা নিজে অবশ্য এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে দলীয় সাংসদ কাকলী ঘোষ দস্তিদার দাবি করেছেন, কেন্দ্র সরকারের দেওয়া এই রিপোর্ট ভুল। রাজ্যে শিশু পাচারের দায়ে অভিযুক্ত খোদ বিজেপি নেতা-নেত্রীরা। তাই এখন ভুল পরিসংখ্যান দিয়ে অন্য দিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চলছে।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর এই তথ্য-পরিসংখ্যানকে ভুল না-বললেও অন্য একটি অসংগতির দিকে নির্দেশ করেছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির দায়িত্বে থাকা ডাঃ স্মরজিৎ জানা। সোনাগাছির গণিকাপল্লিতে বহু বছর ধরেই যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে লড়ছে দুর্বার, যার মধ্যে এক বড়ো কাজ অনিচ্ছুক যৌনকর্মীদের উদ্ধার করা। অর্থাৎ জোর করে, ইচ্ছের বিরুদ্ধে, কিংবা ভুলিয়ে-ভালিয়ে যৌনপেশায় আনা হয়েছে যে মেয়েদের, যাঁরা পাচার হয়ে এসেছে, দুর্বার তাঁদের চিহ্নিত করে হয় বাড়িতে ফেরত পাঠায়, অথবা বিকল্প কর্মসংস্থান করে। ডঃ জানার বক্তব্য, যারা যৌনপেশায় আসছে প্রতি বছর, তাঁদের সবাইকেই পাচার হওয়া মেয়ে হিসাবে দেখানো হয় ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্যে। কিন্তু অনেক মেয়েই স্বেচ্ছায়, জীবিকার তাগিদে যৌনপেশায় আসে।

দুর্বারের নিজের কাছে এ সংক্রান্ত যা তথ্য আছে, তাতে দেখা যায় অর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মেয়েরা সাধারণত তিন ধরনের কাজে মূলত শহরে আসে। গৃহ পরিচারিকার কাজ, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ এবং যৌনপেশা। প্রথম দুটি কাজ যেহেতু পরিশ্রম-সাপেক্ষ এবং সেই তুলনায় মজুরি যথেষ্ট নয়, তাই সবাই ওই পরিশ্রমের কাজ করতে চায় না। এমতাবস্থায় নিজেরাই অপেক্ষাকৃত কম শারীরিক পরিশ্রমের, কিন্তু বেশি উপার্জনের পেশা যৌনপেশা বেছে নেন। ডাঃ স্মরজিৎ জানার বক্তব্য, এটা একটা বাস্তব প্রবণতা, যাকে উপেক্ষা করা যায় না। বরং অগ্রাহ্য করা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সংসদে দেওয়া ওই তথ্যকে, যা সমস্যার পুরোটা দেখছে না।

একদা যেটা সম্রাট বা রাজা বা জমিদাররা নিজস্ব লেঠেল বাহিনীদের কাজে লাগিয়ে মেয়েদের তুলে আনত বাইজি বা গণিকা বা রক্ষিতা বানানোর জন্য। আজও মেয়েদের ফুসলিয়ে আনা হয় নানারকম প্রলোভন দেখিয়ে। ভারতে ব্রিটিশ আমলে খ্রিস্টান শাসকদের এবং সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য নতুন নতুন গণিকাপল্লি গড়ে ওঠে। সেই গণিকাপল্লি ফলেফুলে ভরিয়ে তুলতে খ্রিস্টান শাসকদের (ব্রিটিশ) পা-চাটা কতিপয় নারী ও পুরুষ উভয়েই প্রত্যন্ত গ্রামে ঢুকে পড়ত মেয়ে সংগ্রহ করতে। মেয়ে তুলে আনার বিনিময়ে প্রাপ্তি হত প্রচুর অর্থ ও উপঢৌকন। এমনকি অতি লোভে মন্দির থেকে দেবদাসীদের পর্যন্ত গণিকালয়ে তুলে আনা হত।

গণিকালয়গুলিতে ‘আড়কাঠি’ শব্দটি খুব শোনা যায়। আড়কাঠি হাল আমলের কোনো নতুন ব্যবস্থা নয়। প্রাচীন যুগেও আড়কাঠি ছিল, যাঁরা ‘বিট’ নামে পরিচিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে রাজা শূদ্রক রচিত সংস্কৃত নাটক ‘মৃচ্ছকটিকম’ নাটকে বিট চরিত্রের উল্লেখ আছে। তবে আজকের আড়কাঠিদের সঙ্গে প্রাচীনযুগের বিটদের মূলগত পার্থক্য আছে। নাট্যশাস্ত্রে বিটের লক্ষণে বলা হয়েছে–বিট হবেন গণিকাগণের সঙ্গে ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ, মধুরভাষী, পক্ষপাতহীন, কবিভাবাপন্ন, শাস্ত্রাৰ্থ ও গণিকা সম্বন্ধে জ্ঞানসম্পন্ন, ইতি ও নেতিবাচক যুক্তিসম্পন্ন বাগী ও চতুর। বিট ব্রাহ্মণ, শিক্ষিত, সংস্কৃতভাষী ও প্রাকৃতভাষী দুই-ই হতে পারে। মৃচ্ছকটিক প্রকরণে দুজন বিট চরিত্র পাওয়া যায়। একজন বসন্তসেনার, অপরজন শকারের। ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন (IJM) বহু বছর ধরে পাচারকৃত যৌনকর্মীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজ করে চলেছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ হাজার মেয়ে কিডন্যাপিং হয়, যার বেশিরভাগরেই জায়গা হয় যৌনপল্লিতে।

(২) যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতা ও দেশভাগের ফলে গণিকা : আদিমকাল থেকে যুদ্ধের ময়দানে পুরুষের বর্বরতার শিকার হয় নারী। এটা সর্বত্র সত্য, সব দেশেই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চার লক্ষ নারী ধর্ষিত হয়েছিল। ধর্ষক পাকিস্তানি সেনা ও পাকপন্থী রাজাকার। বিশ্বের ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে দেখা যায় যে-কোনো জাতিকে দমন করার জন্য, নির্মূল করা জন্য দুটি অস্ত্র এক সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। তার একটি গণহত্যা, অপরটি ধর্ষণ। মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর একটি বড়ো ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ছিল নারী ধর্ষণ। এই যুদ্ধকালীন সময়ে নারী ধর্ষণ ছিল পাকবাহিনীর একটি অস্ত্র। একাত্তরে বাংলাদেশের নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ব্যাপকতা, নৃশংসতা এ যাবৎকালে বিশ্বে সংগঠিত সকল যৌন-নির্যাতনের শীর্ষে এবং তা মানব ইতিহাসে বিরল। এটি ছিল পাকিস্থানের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ, অত্যন্ত সুকৌশলে এ দেশের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে নিজেদের উত্তরসূরি’ রেখে যাওয়া, যাতে এরা ভবিষ্যতে মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারে। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী ও তাঁদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সাহায্যে এ-কাজটি করে। তাঁদের আক্রোশ থেকে দেশের কোনো অঞ্চলই বাদ পড়েনি, তাঁরা সারা দেশে যত্রতত্র এই অত্যাচার চালায়। জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হত ক্যাম্পে। যাতে পালাতে না পারে, তাই বিবস্ত্র করে রাখা হত মেয়েদের। মাথায় চুল পেঁচিয়ে যাতে আত্মহত্যা করতে না-পারে, তাই তাঁদের মাথার চুল কেটে ফেলা হত। তাঁদের ধর্ষণ করা হত দিনের পর দিন। এর ফলশ্রুতিতে এই বিশাল সংখ্যক ধর্ষিতা নারীদের একটি বড় অংশ গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০০০। সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন অংশে ডঃ ডেভিস বলেন—“সবচেয়ে সুন্দরী ও বিত্তশালী পরিবারের মেয়েদেরকে অফিসারদের জন্য রেখে বাকিদের সৈন্যদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হত।”

“ওরা আমার বাবা-মাকে মেরে ফেলে, দুজনকেই বন্দুকের বাট দিয়ে পেটাতে পেটাতে মেরেছে। এরপর মেঝেতে আমাকে চিৎ করে শুইয়ে তিনজন মিলে ধর্ষণ করেছে।” এমনটা বলেছে বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেট্রাপোলের উদ্বাস্তু শিবিরের এক ষোড়শী। একই প্রতিবেদনের ভাষ্য, “ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণভয়ে পালাতে থাকা পরিবারগুলোর মেয়েদেরও হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এরপর বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে পাকবাহিনীর কাছে। অবশ্য পরিবারগুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছুটিয়ে নিয়েছে অনেককে। যাঁরা পারেনি, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে রাজাকারদের খোলা বেশ্যালয়ে। (টাইমস—২১ জুন ১৯৭১)

সরকারি তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানে ধরে নিয়ে যাওয়া কমফোর্ট’ নারীদের মধ্যে ২৫,০০০ নারী ফোর্সড প্রেগনেন্সির শিকার হয়। তবে ‘ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস কমিটির সভাপতি ডা. এম এ হাসান বলেন—সংখ্যাটা ৮৮,২০০ জন। ২০০৯ সালে ‘ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিংস কমিটি’ একটি জরিপে উল্লেখ করে–১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের কালো রাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর মাধ্যমে নিরপরাধ বাঙালি নারীদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মার্চে ১৮,৫২৭ জন, এপ্রিলে ৩৫,০০০ জন, মে মাসে ৩২,০০০ জন, জুন মাসে ২৫,০০০ জন, জুলাই মাসে ২১,০০০ জন, আগস্ট মাসে ১২,০০০ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১৫,০০০ জন, অক্টোবর মাসে ১৯,০০০ জন, নভেম্বর মাসে ১৪,০০০ জন, ডিসেম্বর মাসে ১১,০০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর শেখ মুজিবর রহমান এইসব ধর্ষিতা নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি দেন। কিন্তু ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধিটি সামাজিকভাবে নেতিবাচক হয়ে গেছে। এইসব নারীরা সম্মানের বদলে পেয়েছে কটুক্তি, বঞ্চনা ও গঞ্জনা। এ উপাধি যেন লজ্জার। বাংলাদেশের ইতিহাসে ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সিনেমাগুলিতে ‘বীরাঙ্গনা বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, বীরাঙ্গনার অর্থ দাঁড়িয়ে গেল ধর্ষিতা। ধর্ষিতা? অর্থাৎ বেশ্যা, কুলটা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এইসব নারীদের নিয়ে বিপাকে পড়ে তাঁদের পরিবারগুলি। তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে সবচেয়ে বড়ো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজব্যবস্থা এবং বিবাহিত নারীদের মধ্যে অনেককেই তাঁদের এমন কি অনেক মুক্তিযোদ্ধা স্বামীরাও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ঐ পরিস্থিতিতে অনেককেই বেছে নিতে বাধ্য করে আত্মহত্যার পথ। আবার অনেকেরই জায়গা হয় গণিকালয়ে।

যে দেশের স্বপ্ন চোখে নিয়ে নারীর সম্ভ্রম হারাল, যে মানুষদের জন্য যেসব নারীরা আত্মত্যাগ করল, সেইসব নারীদেরই পরিবার সমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল। সেইসব বীরাঙ্গনাদের ঠাঁই হল গণিকাপল্লিতে। দেশ স্বাধীন হয়, মর্যাদা পায় না ধর্ষিতা নারীরা। তাঁদের মনে রাখতে চায় না কেউ। সমাজ ‘বেশ্যা’ বলে ঘৃণা করে। অবশ্য পরবর্তী সময়ে বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হল। বর্তমানে এইসব ধর্ষিত বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশ্যে ‘বেশ্যা’ বললে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয়।

১৯৪৬ থেকে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কারণে এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয় ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেই। লাখো লাখ মানুষ যেমন হত্যা হয়েছিল, তেমনি লাখো লাখো নারীকে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। একসময় শান্ত হল দুই যুযুধান সম্প্রদায়। কিন্তু সেই ধর্ষিতা নারীদের কেউ মনে রাখেনি। সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছিল। অবশেষে ঠাঁই হল গণিকালয়ে। এটাই শেষ আশ্রয়। গণিকালয় ভরে উঠল। যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগের পরিণতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেয়েরা। প্রতিপক্ষ ছিঁড়েখুঁড়ে খায় নারীশরীর। মেয়েদের দিকেই নেমে আসে আক্রমণের প্রথম বুলডোজারটা। মেয়েরা পতিত হয়।

(৩) উপনিবেশের ফলে গণিকা : শুধু ভারতবর্ষেই নয়, গোটা বিশ্বে এমন কোনো দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে বিদেশি রাষ্ট্রের উপনিবেশ ঘটেনি। ভারতের কথাই যদি ধরি, তাহলে বলাই যায়, বিদেশি উপনিবেশ ব্যাপকভাবে হয়েছে। কারা উপনিবেশ করেনি–ফরাসি, পোর্তুগিজ, ডাচ, ব্রিটিশ ইত্যাদি। এঁরা নেটিভদের ঘৃণা করত। মেয়েদেরকে কেবলমাত্র ভোগের বস্তু মনে করত। ব্রিটিশ কর্তৃক ভারতীয় মেয়েরা কম ধর্ষিতা হয়নি। লুষ্ঠিত হয়েছে নারী। ব্রিটিশ উপনিবেশকালে ব্রিটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজারে হাজার গণিকা আর গণিকালয় সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি করেছিল নিজেদের ও তাঁদের উপোসী সেনাদের কাম চরিতার্থ করার জন্য। এইভাবে বিদেশিদের দ্বারা স্বদেশি নারীরা বারবার লালসার শিকার হয়েছে। লালসা মেটার পর গণিকালয়ের আস্তাকুড়ে ঠেলে দিয়েছে।

(৪) পর্নোগ্রাফির গণিকা : পর্নো-গণিকাবৃত্তি ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল? চলমান ছবি আবিষ্কারের পরে পরেই যৌন উত্তেজক চলচ্চিত্রের উৎপাদন শুরু হয়। প্রথমদিকের দুই ফরাসি ইউজেন পিরো (Eugene Pirou) এবং আলবার্ট কারচনার (Albert Kirchner) ছিলেন যৌন উত্তেজক চলচ্চিত্রের অগ্রণী। আলবার্ট কারচেনার বন্ধু পিরোর জন্য প্রথম লাইভ যৌন উত্তেজক ফিল্ম পরিচালিত। তিনি ১৮৯৬ সালে ৭ মিনিটের Le Coucher de la Mariee’ শিরোনামে লুইস উইলি একটি বাথরুম স্ট্রিপটিজ চলচ্চিত্র সম্পাদন ও পরিচালনা করেছিলেন। অভিনয় করেছিলেন লুইস উইলি (Louise willy)। এছাড়াও ১৮৯৬ সালে ফাতিমার ‘Coochie Coochie Dance’ নামক এই ধরনের একটি বেলি ডান্সারের চলচ্চিত্র হিসাবে মুক্তি পায়। ১৯১০ সালে জার্মান ফিল্ম ‘আম অ্যাবেড’ (Am Abend) দশ মিনিট ফিল্ম, যা একজন মহিলা তাঁর শোবার ঘরে একা হস্তমৈথুন করা শুরু করে এবং Straight Sex ও পায়ুমৈথুনরত (Penetration) একজন ব্যক্তিকে সেই দৃশ্যে দেখা যায়। পর্নোগ্রাফিক সিনেমা ১৯২০ সালে নির্বাক চলচ্চিত্র যুগেও বিস্তৃত ছিল এবং প্রায়শই গণিকালয়গুলিতে প্রদর্শিত হত।

নারী ও শিশুদেহের বাণিজ্যিক ব্যবহারের আর-একটি ভয়াবহ দিক হল সেলুলয়েডে যৌনকর্ম করা, অর্থাৎ পর্নোপেশায় যুক্ত হওয়া। এর চর্চা আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে গোটা পৃথিবীব্যাপী মহামারীর রূপ নিয়েছে। এই খাতটিরও অর্থনৈতিক বাজার বিশাল বড়ো। বিলিয়ান ট্রিলিয়ন ডলারের। তবে এক্ষেত্রে নীল চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণকারী নারী ও পুরুষ উভয়কেই গণিকা বলতে হয়। এই পেশায় সবাইকেই যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তা কিন্তু বলা যায় না। বহু মেয়েরা স্বেচ্ছায় মোটা টাকা রোজগারের তাগিদে এ পেশায় আসে।

বিশ্বখ্যাত নারীবাদী নেত্রী ও আইনজীবী ক্যাথরিন ম্যাককিননের মতে, পর্নোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি হিসাবে হলিউডের চেয়ে অনেক অনেক বিশাল। স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যার দ্রুত বিস্তার ঘটেছে। উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরে ঘরে ইন্টারনেট কানেকশন এখন আর বিস্ময়ের কিছু না। চাইলেই তাঁরা যখন খুশি সেক্স সাইট ব্রাউজ করতে পারছে, ডাউনলোড করে নিতে পারছে যে-কোনো পরিমাণ পর্নো ফুটেজ। যাঁদের ঘরে সে সুবিধা নেই তাদের জন্য আছে অলিতে-গলিতে গজিয়ে ওঠা সাইবার ক্যাফে। এক ঘণ্টা ব্রাউজ করার জন্য ক্যাফেগুলোতে চার্জ নেওয়া হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বিনিময়ে একটিমাত্র ক্লিকেই পৌঁছে যাওয়া যায় ভার্চুয়াল যৌনমিলনের জগতে। গুগলের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সার্চ হয় পর্নোর সাইটগুলিতে। যাঁরা গণিকালয়ে গিয়ে নারীভোগ করার বুকের পাটা নেই, তারাই সেলুলয়েডে যৌনমিলন দেখে কামপ্রবৃত্তি নিবৃত্তি করে। মানসদর্শনে যৌনমিলন করেন। পুরুষরা সেলুলয়েডের নারীকে ভার্চুয়াল সেক্স করে, নারীরা সেলুলয়েডের পুরুষের সঙ্গে ভার্চুয়াল সেক্স করে। ক্যামেরার সামনে কোটি কোটি যৌনউন্মাদদের কামপ্রবৃত্তি নিবৃত্ত করতে যাঁরা অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম করে তাঁরা গণিকা না-হলে কারা গণিকা? এ ধরনের গণিকাবৃত্তি ভারত-বাংলাদেশে সহ প্রায় সব বিশ্বেই নির্মাণ হয়ে থাকে। কোথাও গোপনে, কোথাও ওপেনে। সারা বিশ্বে কত রেভিনিউ আদায় হয় এই সেক্স-অ্যাডভেঞ্চার থেকে?

Alex Helmy (founder and publisher of adult-entertainment trade publication) 501629, “পর্নোশিল্পের রাজস্ব অনুমান ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে শিল্প বছরেও ৬ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে, কেউ বলবে এটি ১০ বিলিয়ন ডলার, ১৫ বিলিয়ন ডলার বা এমনকি ৯৭ বিলিয়ন ডলার করে। কারণ বেশিরভাগ পর্নো সংস্থাগুলি ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত তথ্য গোপন রাখে, তাই সম্পূর্ণরূপে সঠিক অনুমান পাওয়া অসম্ভব।” অন্য এক সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী পর্নোগ্রাফি প্রায় 100 বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে, এটি একটি বড় স্কেল ব্যাবসা। ২০০৬ সালে চিন ২৭.৪০ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার, জাপান ১৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার এবং মার্কিন ১৩.৩৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এটা মাইক্রোসফট, গুগল, আমাজন, ইবে, ইয়াহু, অ্যাপল এবং নেটফ্লিক্সের তুলনায় বড়ো আয়। পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে, ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির সর্বাধিক দর্শকরা উচ্চ আয়ের সঙ্গে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেট পর্নো ভিউয়ার থেকে ৩৫ শতাংশ, অর্থাৎ বছরে ৭৫,০০০ ডলার বা তার বেশি উপার্জন করে। পরের সর্বোচ্চ, ২৬ শতাংশ, অর্থাৎ যাঁরা বছরে ৫০,০০০ ডলার থেকে ৭৫,০০০ ডলার উপার্জন করে। পর্নো ইন্ডাস্ট্রি বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রধান উপাদান, বৃহদায়তন আয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। toptenreviews.com-র মতে, পর্নোগ্রাফিতে বিশ্বের প্রতি সেকেন্ডে ৩,০০০ ডলারেরও বেশি খরচ হয়।

চিন — $ ২৭.৪০

দক্ষিণ কোরিয়া — $ ২৫.৭৩

জাপান — $ ১৯.৯৮

আমেরিকা — $ ১৩.৩৩

অস্ট্রেলিয়া — $ ২.০০

ব্রিটেন — $ ১.৯৭

ইতালি — $ ১.৪০

কানাডা — $ ১.০০

ফিলিপিনস — $ ১.০০

তাইওয়ান — $ ১.০০

জার্মানি –- $ .৬৪

ফিনল্যান্ড — $ .৬০

চেক প্রজাতন্ত্র –-$ ৪৬

রাশিয়া — $ .২৫

নেদারল্যান্ড –- $ .২০

ব্রাজিল — $ ১০

মোটা টাকার হাতছানি এড়ানো যে খুব শক্ত কাজ, সেটা বিশ্বের পয়লা নম্বর পর্ন-গণিকা সানি লিওনি একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছে–তাঁর সেক্স করাটা প্যাশন। তিনি স্ব-ইচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছেন। স্টেইট, লেসবো – সব ধরনের সেক্স তিনি স্বচ্ছন্দ ছিলেন। আবার একটা সময় ইচ্ছা হল এই পেশা ছেড়ে দিয়ে বলিউডে পাড়ি জমালো ফ্লিমে অভিনয় করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই বলে নিজস্ব পর্নোফ্লিমের সাইট কিন্তু বন্ধ করে দেননি। সেই সাইটে শুধু তাঁরই করা পর্নোমুভি সঞ্চিত আছে। কারণ তাঁর সেলুলয়েড সেক্স বিক্রি করে নিয়মিত মোটা টাকার আমদানি হয়। পর্নো-বাজারে সানি লিওনি মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী। কোটি ডলার তাঁর দাম। অভিনেত্রী হিসাবে এক-আধটা সিনেমায় কাজ পেলেও তিনি সুযোগ পেলেই দেহব্যাবসার ডাক লঘন করতে পারে না। বছর কয়েক আগে বলিউডের মূলস্রোতে আসার পরেও তিনি ৪৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক হিরে ব্যবসায়ীর পার্টিতে নগ্ননৃত্য ইত্যাদি করে এসেছেন। সেই নাচের ভিডিও দৃশ্য সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। ডাক্তার স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবর সঙ্গে নিয়ে সানি লিওনি প্রায় ৫৬ টি যৌনসঙ্গম ক্যামেরাবন্দি করেছে। ৫৯ টি পর্নোমুভি নিজে পরিচালনা করেছে। অনুরূপ আর-এক দামি পর্নো-গণিকা মিয়া খলিফাও স্বেচ্ছায় ক্যামেরার সামনে সেক্স করতে এসেছিলেন মোটা টাকা কামানোর জন্য। আবার তিনিও স্বেচ্ছায় এই পেশা ছেড়ে দিলেও পূর্বের করা পর্নো থেকে আসা রোজগার নিতে ছাড়েননি। এছাড়া প্রিয়া অঞ্জলি রাই, দেবিকা, রেশমা, শাকিলা, পিটা জেনসেন, লিজা আন, হিটোমি তানাকা, ক্রিস্টি ম্যাক, নাতাশা ডালাস, ক্রিস্টিনা রোজ, হোলি সুইট, অ্যালেক্সা লোরেন, অলিভিয়া লাভলি প্রমুখ পর্ন-গণিকারা মোটা টাকা রোজগারের জন্যেই ক্যামেরার সামনে যৌনকর্ম বেছে নিয়েছে। অন্তত এদের অকপট স্বীকারোক্তি সেটাই প্রমাণ করে।

গণিকাপল্লির মেয়েদের সঙ্গে মূলগত পার্থক্য হল পল্লির গণিকারা চার দেয়ালের ভিতরে গোপনীয়তা রক্ষা করে হাজার হাজার পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন করে ন্যায্য অর্থের বিনিময়ে। পর্নোস্টাররা ক্যামেরার সামনে অর্থের বিনিময়ে হাজার হাজার পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন করে এবং সেই ক্যামেরাবন্দি যৌনমিলন সারা পৃথিবীর কোটি কোটি দেখে। আর-একটি পার্থক্য হল পর্নো-গণিকাদের পরিচালকের নির্দেশে বিভিন্ন কায়দায় যৌনমিলন করতে হয় এবং সাধারণ গণিকারা কোনো তৃতীয় পক্ষের নির্দেশ ছাড়াই স্বাধীনভাবে যৌনমিলন করে। পার্থক্য যাই-ই থাক, উভয়ে গণিকাবৃত্তিই করে।

ধনী সাধারণ গণিকা যেমন আছে, তেমনি ধনী পর্নো-গণিকাও আছে। তবে পর্নো-গণিকাদের মতো উচ্চহারে উপার্জন বোধহয় সাধারণ গণিকাদের হয় না। সাধারণ গণিকাদের উপার্জনে যেমন বিভিন্নতা আছে, ঠিক তেমনি পর্নো-গণিকাদের উপার্জনেও রকমফের আছে। সকলেই চোখ কপালে তোলা উপার্জন করার সৌভাগ্য অর্জন না-করলেও মোটামুটি যে ১০ জন পর্নো-গণিকার উপার্জনের কথা উল্লেখ করব, তাতে চোখ কপালে উঠবেই। পর্নো-গণিকাদের প্রথম ১০ জনের সম্পত্তির পরিমাণে শীর্ষে জেনা জ্যাকসন।

সেরা ১০ জন পর্নো-গণিকার সম্পত্তির পরিমাণ–

কিন্তু ক্যামেরার সামনে যৌনপেশায় এইসব গণিকাদের রোজগারই তো শেষ কথা নয়। আছে আরও অনেকেই। আলো যেমন আছে, অন্ধকার আছে তেমন পাশাপাশি। অসংখ্য যে পর্নো-গণিকারা যে কাজ করেন, তাঁদের সকলের পারিশ্রমিক কিন্তু আশাব্যঞ্জক নয়। (১) নারী, যাঁরা কেবল বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন করবে। এঁদের গড় আয় ৩০০ থেকে ১৫০০ মার্কিন ডলার। (২) যে নারী একজন নারীর সঙ্গে যৌনমিলন করবে, সেই নারীদ্বয়ের পরিশ্রমিক ৭০০ থেকে ১২০০ মার্কিন ডলার। (৩) পুরুষ, যে পুরুষরা নারীর সঙ্গে যৌনমিলন করবে, তাঁর পারিশ্রমিক ৫০০ থেকে ১৫০০ মার্কিন ডলার। (৪) পরিচালকের গড় আয় ১০০০ থেকে ৩০০০ মার্কিন ডলার। (৫) ক্যামেরাম্যানের পারিশ্রমিক ৫০০ থেকে ৭০০ মার্কিন ডলার। (৬) সাউন্ড টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক ৩০০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার। (৭) প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্টের গড় আয় ১০০ থেকে ২৫০ মার্কিন ডলার। (৮) স্টিল ফোটোগ্রাফারের গড় পারিশ্রমিক ৫০০ মার্কিন ডলার। (৯) মেক আপ আর্টিস্টের পারিশ্রমিক ৫০০ মার্কিন ডলার।

যাঁরা নিয়মিত পর্নোমুভি বা তথাকথিত নীল ছবির দুনিয়ার সামান্যতম খোঁজখবর রাখেন, এক ডাকে থ্রি অলসনকে চিনে থাকবেন। কী বলছেন অলসন? তিনি বলছেন–“পর্নো করলে তুমি সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে। তোমার মানবাধিকার কেড়ে নিতে উদ্যত হবে।” থ্রি অলসন বলছেন–“পর্নো খারাপ, এ কথা আমি বলছি না। কিন্তু বাকিরা তোমার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করছে, সেটাই তোমার জীবনের প্রধান বিষয়। যদি মনে করো, মেয়েদের কোনো আড্ডায় যোগদান করবে, তাহলে স্রেফ পেশার জন্যেই তুমি সেখানে ঠাঁই পাবে না। … একবার যখন পর্নো-গণিকার তকমা তোমার গায়ে লেগেছে, তখন তুমি বাড়িতেও সবসময় যৌনতার হাট খুলে বসেছে। অপরদিকে রক্ষণশীল দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাখী সাওয়ান্ত সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে সটান ঘোষণা দিতে পারেন–“আমি আপনাদের সকলকে আজ একটা ভালো খবর দিতে চাই। আমি একজন পর্নোস্টার হতে চাই।” এই ঘোষণা শুনে যাঁরা সেলুলয়েডে রাখী সাওয়ান্তের যৌনক্রিয়া দেখার জন্য উশখুশ করছিলেন, শেষপর্যন্ত তাঁদের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে কি না আমার জানা নেই। হায়, গণিকা হওয়া কি এতই সুখের!

একটি ঘটনার উল্লেখ করি। ঘটনাটা ঘটেছে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ভারতের বেঙ্গালুরুতে। পর্নো ছবি দেখে তো স্বামীর মাথায় হাত। ডেক্সটপের পর্দায় যে মহিলাটি যৌনসঙ্গম করছেন, তিনি আর কেউ নয়, তাঁর নিজের স্ত্রী। পর্নোগ্রাফি দেখতে দেখতে প্রায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম স্বামীর। পর্নোগ্রাফি দেখা শিকেয় উঠল তাঁর, বসে পড়লেন মাথায় হাত দিয়ে। ২০১৮ সালে বিয়ে হয় কলকাতার বাসিন্দা এক মহিলা ও উত্তরপ্রদেশের এক যুবকের। বিয়ের পর তাঁরা থিতু হন বেঙ্গালুরুতে! বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রী স্বামীকে জানিয়েছিলেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের বিষয়ে। এও বলেছিলেন, সেই ব্যাক্তির সঙ্গে বর্তমানে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ নেই। স্ত্রীর সততায় বেশ খুশিই হয়েছিলেন স্বামী। স্বামী লক্ষ করলেন পর্নোগ্রাফির প্রতি স্ত্রীর চূড়ান্ত আসক্তিতে। একদিন স্ত্রী স্বামীকেও একটি পর্নোগ্রাফির ভিডিও দেখতে বললেন। সঙ্গেও এও দাবি রাখলেন, ছবির মতো করেই তাঁকে ‘আদর করতে হবে। স্ত্রীর আবদার মানতে পর্নোগ্রাফি দেখা শুরু করলেন স্বামী, এরপরই ঘটল বিপত্তি। স্ত্রীর মোবাইলে পর্নোমুভি দেখতে গিয়েই ভিরমি খেলেন। দেখলেন পর্নোমুভির নায়িকা খোদ তাঁর স্ত্রী। ধরা পড়ে গিয়ে মহিলা বলেন, ছবিতে তাঁর বিপরীত থাকা পুরুষটিই তাঁর প্রাক্তন প্রেমিক। বাধ্য হয়েই ভিডিওটি স্যুট করেছিলেন। এই ভিডিওটি দেখিয়ে রীতিমত তাঁকে ব্ল্যাকমেলও করত প্রাক্তন প্রেমিক। স্ত্রীর কথা বিশ্বাসও করে নেন স্বামী। কিন্তু দিনকয়েক বাদে ফের পর্নোসাইটে স্ত্রীর আরেকটি ভিডিও দেখতে পান স্বামী। সেখানে সঙ্গী আবার অন্য পুরুষ। অবশেষে হাতেনাতে ধরা পরতেই সত্যিটা স্বীকার করেন মহিলা। জানান, এক নয়, একাধিক পুরুষের সঙ্গে তিনি যৌন মিলন করেছেন এবং এটা ওর খুব ভালো লাগে। নতুন নতুন পুরুষসঙ্গে নতুন নতুন কায়দায় যৌনমিলনে সে সম্পূর্ণ তৃপ্ত, ব্যাংক ব্যালান্সও মন্দ হচ্ছে না।

(৫) রূপোলি পর্দায় গণিকা : মুভিমোগল শেখর কাপুর, রাজকাপুর প্রমুখ কতিপয় চলচ্চিত্র নির্মাতা খুব কায়দা করে সেলুলয়েডে নারী-শরীর বিক্রি করতেন মুনশিয়ানার সঙ্গে। এইসব নির্মাতারা বিলক্ষণ জানেন নারীর খোলা বুক, নগ্ন পা, খোলা পিঠ, স্বচ্ছ সাদা কাপড়ে জলে-ভেজা নগ্ন শরীর ভালো বিকোয়। তাই কোনো না কোনো ছুতোনাতায় নারী-শরীরের গোপন সেলুলয়েড বন্দি করে ফেলবে। কখনো-বা অভিনেত্রীর উপর প্রভাব খাঁটিয়ে, কখনো যথেষ্ট পারিশ্রমিক দিয়ে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একদম আনকোরা মেয়েদের ব্যবহার করা হয়। সেইসব মেয়েরাও ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখে রাজিও হয়ে যায়। অভিনেত্রীদের বোঝাতে সক্ষম হয় যে তারা কত মহান কাজ করতে চলেছে, ইতিহাস রচনা করতে চলেছে। সত্যি কথা বলতে কি সেইসব অভিনেত্রীরা বেশিদূর আর এগোতে পারে না। সব হারিয়ে যায় অকালেই। কারণ দর্শকরাও সেই অভিনেত্রীর কাছ থেকে কেবলমাত্র নগ্নতাই প্রত্যাশা করে। অল্পস্বল্প নারী-অঙ্গ দেখাতে দেখাতে নির্মাতারা এতটাই সাহসী হয়ে ওঠে যে নগ্নতা তথা যৌনমিলনের দৃশ্যও টেক করতে শুরু করে দেয়। ভারতীয় চলচ্চিত্রে এইসব দৃশ্য সেন্সর বোর্ড আটকে দিলেও হলিউডের চলচ্চিত্রগুলিতে সেইসব নগ্নতা তথা যৌনমিলনের দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়। চলচ্চিত্র উৎসবে সেইসব আন-সেন্সর্ড সিনেমা দেখার জন্য দর্শকরা পাগলের মতো ছুটে গিয়ে প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল করে দেয়। নারীর নগ্ন শরীর দেখিয়ে প্রযোজকরা ফুলেফেঁপে ওঠে। তবে ভারতীয় চলচ্চিত্রে খুল্লামখুল্লা দৃশ্যায়ন হলে সেন্সর পায় না বটে, কিন্তু এ ধরনের সিনেমা তৈরি তাতে থেমে থাকে না। প্রচুর রগরগে যৌনদৃশ্য তৈরি করা হয়। খুব কম পয়সা বিনিয়োগ করে প্রচুর মুনাফা অর্জনের লোভ ছাড়বে কে? কসমিক সেক্স, দি ডিভাইন সেক্স, গাণ্ডু, মাশরুম (ছত্রাক), রঙ রসিয়া, কামসূত্র, কামসূত্র থ্রিডি, সিদ্ধার্থ, মচালতা জওয়ানি, রেশমি কি জওয়ানি, গোলাবি রাতে, হর রাত নই খিলাড়ি ইত্যাদি মুভি নারী-শরীর নির্ভর করেই। এইসব চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীদের ‘গণিকা’ বই অন্য কিছু বলে না মানুষ।

মেইন স্ট্রিমের এইসব মুভিতে যৌনদৃশ্য কেন সেলুলয়েডে বন্দি করা হয়? নির্মাতারা বলেন–“চিত্রনাট্যের ডিমান্ড”। চিত্রনাট্যের ডিমান্ড কীভাবে তৈরি হয়? ঈশ্বর-প্রেরিত পূর্বনির্ধারিত ব্যাপার নাকি? আসলে কোনো মুভিতে কোথায় কতটা নগ্ন যৌনতা রাখা হবে, তা পরিকল্পিতভাবেই করা হয়। এটাই ব্যাবসায়িক কৌশল। প্রোডিউসারদের নির্দেশ। ব্যাবসা ভালো হয়। সেভাবেই ছক কষা হয়। কারণ ওই রগরগে যৌনদৃশ্যই মুনাফা আনবে। চিত্রনাট্যের ডিমান্ড একটা ভাঁওতা। সংশ্লিষ্ট মুভি যৌনদৃশ্যগুলি বাদ দিয়ে দেখানো হলে আপনি বুঝতেই পারবেন না, সেখানে কোনো যৌনদৃশ্যের প্রয়োজন আছে। একটা উদাহরণ দিই। আপনারা নিশ্চয় ‘মাশরুম’ বা ‘ছত্রাক’ মুভির নাম শুনেছেন? এই মুভির কোনো একটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছে অভিনেত্রী পাওলি দাম নীচে পা ঝুলিয়ে খাটের উপর সম্পূর্ণ উলঙ্গ চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। অভিনেতা অনুব্রত মণ্ডল পাওলির দু-পা ফাঁক করে উপরদিকে তুলে ধরে যৌনাঙ্গ চাটছে। পাওলির সংলাপ–“উফ উফ, চাট চাট”। এই দৃশ্য মুভি রিলিজের আগে ইন্টারনেটে লিক হয়ে মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে। মাশরুম বা ছত্রাক মুভি কজন দেখেছেন সেটা বলা মুশকিল, পাওলি-অনুব্রতর যৌনদৃশ্যের ভিডিও ক্লিপিংটি দেখতে বোধহয় কেউ বাকি নেই। এখনও নেট সার্চ করলে এই ভিডিও ক্লিপিংটা পাওয়া যায়। যারা ‘মাশরুম’ বা ‘ছত্রাক’ মুভিটি দেখেছেন, তারা কি বলতে পারবেন মুভিতে ওই দৃশ্যটি কোথায় ছিল? বলতে পারবেন না। কারণ ওই দৃশ্যটি মুভিতে রাখাই যায়নি। এমনকি কান ও টরেন্টের চলচ্চিত্র উৎসবেও ওই দৃশ্যটি দেখানো যায়নি। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মুভি জগতের সঙ্গে জড়িত আছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন সেন্সর বোর্ড কী ছাড় দেবেন আর কী ছাড় দেবেন না। সেন্সর নির্দিষ্ট গাইড লাইন আছে। সেই গাইড লাইন কী নির্দেশ আছে সে বিষয়ে সকলেই অবগত। তা সত্ত্বে এই যৌনদৃশ্য বা যৌনমিলনের দৃশ্যগুলো সেলুলয়েডে বন্দি করা হয় কেন? উদ্দেশ্য দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। শুধু ভারতেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই এক শ্রেণির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সেলুলয়েডে যৌনমিলনের দৃশ্য সেলুলয়েড বন্দি করে। এক একটা মুভি এমন তৈরি করা হয়, সেগুলি পর্নোমুভি বলাই যায়। সেলুলয়েডে সেক্স করা অভিনেত্রী (‘গাণ্ডু’ ও ‘কসমিক সেক্স’ খ্যাত) ঋতুপর্ণা ওরফে ঋ এক সাক্ষাৎকারে কী বলছে, পড়ুন – “আমার শরীরের মালিকানা আমার। দোকান সাজিয়ে বসেছি। বেচতে লজ্জা কীসের! আমার বাবু আর আমার দালাল আমি নিজেই। যারা আমার শরীর দেখে লজ্জা পান, উত্তেজিত হয়ে পড়েন, তাঁরা হোন। কিন্তু এই যে প্রতিনিয়ত তাঁদের আদিম সত্তাকে ‘ট্রিগার’ করি, এটাই কানেকশন উইথ মাই অডিয়েন্স।” কী বুঝলেন? গণিকা!

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সারা বিশ্বে করোনা প্যানডেমিকের প্যানিকে লক ডাউন ঘোষণা হল। বলা হল মুখে মাস্ক এবং অবশ্যই সোস্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলতে হবে। স্তব্ধ হয়ে রুজিরোজগার। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারাল। সেই ভয়ংকর প্রভাব থেকে যৌনপল্লিও রেহাই পেল না। কোনো ক্লায়েন্ট আর যৌনকর্মীদের সংস্পর্শে আসতে চাইলেন করোনার ভয়ে। যৌনকর্মীরা ভাতে মারা গেল। রোজগার বন্ধ হয়ে গেল। মাসের পর মাস। লক ডাউন উঠে গেলেও যৌনবাজার স্বাভাবিক হল না। এমতাবস্থায় যৌনপল্লির যৌনকর্মীরা যেমন সংকটে পড়ে গেল, তেমনি যৌনপল্লির বাইরে স্বাধীন যৌনকর্মীরাও সংকটের মধ্যে পড়ে গেল। ঠিক এমন সময়ে এক শ্রেণির শর্টফ্লিম নির্মাতারা আসরে নেমে পড়ল। শর্টফ্লিমের নামে যৌনমিলনের মুভি তৈরি করতে থাকল। এইসব মুভিতে সুযোগ পেতে থাকল যৌনকর্মীরা। নতুন মেয়েরাও এই মুভিতে কাজ করতে শুরু করে দিল যাঁরা অনেকেই লক ডাউনে কাজ হারিয়েছে। এইসব মুভি বিশেষ কিছু অ্যাপ ইনস্টল করে দেখতে হয়। নির্ধারিত সাবস্ক্রিপশন দিয়ে। তেমনই কিছু অ্যাপের নাম Hothit, 11Up Movies, Unseen, Uncutmasala, Eightshots, Fliz Movies ইত্যাদি। শর্ট ফ্লিমের এই নব সংস্করণের বাজারি নাম ওয়েব সিরিজ। এই মুভিগুলি আসলে সেলুলয়েডে বন্দি অবাধ যৌনকর্ম। রমরমা বাজার। সেন্সর বোর্ডের নজরদারি নেই। এইসব মুভিতে বহু পরিচিত অংশগ্রহণকারী মুখগুলি হল–টিনা নন্দী, জোয়া রাঠোর, কাজল গুপ্তা, সোনিয়া মাহেশ্বরী, কবিতা রাধেশ্যাম, আলিশা, জারা, সীমা, সুচরিতা, দোলন, রিংকি চোপড়া, এলিজা প্রমুখ। এঁদের অভিনেত্রী বললে অভিনেত্রীদের অপমান করা হবে। এঁরা গণিকাই, যাঁরা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে যৌনকর্ম করে। পুরুষ যৌনকর্মীরাও এই ট্রেন্ডে কাজ করছে। বিশ্বকে দেখানোর যৌনকর্ম এবং মোটা অঙ্কের রোজগার।

মুভির অভিনেত্রীরা কেন গণিকা বা যৌনকর্মী নয়? এ প্রশ্ন আমার নয়, এ প্রশ্ন কলকাতার খোদ যৌনকর্মীদের পক্ষ থেকেই উঠেছে। ‘অল ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক অব সেক্স ওয়ার্কার্স’-এর পক্ষ থেকে যৌনকর্মীদের এমনই প্রশ্ন বিশ্বের কাছে। যৌনকর্মীদের স্পষ্ট প্রশ্ন সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্যেও তো বিক্রি করতে হয় শরীর। সেক্ষেত্রে যিনি শরীর বিক্রি করলেন, তাঁকে তো যৌনকর্মী বা গণিকা বলা হয় না। তাঁদের পরিচয় প্রদানেও কোনো অসম্মানজনক শব্দ বা রুচিহীন শব্দ ব্যবহার করা হয় না। তাহলে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য শরীরের বিনিময়ে উপার্জনের ক্ষেত্রে আমাদের কেন যৌনকর্মী পরিচয় পেতে হবে? শরীরের বিনিময়ে নায়িকা হওয়া বা নায়িকা হয়ে শরীর বিক্রি করার বিষয়টি খুব প্রচলন একটি গোপন সত্য হিসাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। গুঞ্জন আছে, অধিকাংশ নায়িকাই শরীর উপটৌকন দিয়ে থাকেন পরিচালক কিংবা প্রযোজক কিংবা প্রভাবশালীদের কাছে। অনেক নায়িকাই বিদ্রোহ করে কাজ হারান, আবার অনেকেই আপোস করে টিকে থাকেন। শরীরকে বিনিয়োগ করে কেরিয়ারের সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে পিছ-পা হন না অনেকেই। শরীরের বিনিময়ে তাঁরা সিনেমায়, নাটক ইত্যাদিতে কাজের সুযোগ পান। বাংলাদেশে এক ধরনের মুভি বা মিউজিক ভিডিও করা হয়, যেখানে নায়িকারা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে সম্পূর্ণ জামাকাপড় পরিহিত নায়কের সঙ্গে চটুল বাংলা গান সহ নাচ করেন। অত্যন্ত জঘন্য সেই নৃত্যদৃশ্য। বুঝতে অসুবিধা হয় না এইসব নায়িকাদের একমাত্র মূলধন নগ্ন শরীর। নগ্ন শরীর প্রদর্শন করেই অর্থ রোজগার করেন। শরীর বিক্রিই তো করে এঁরা। গণিকা নয়? তাহলে সেক্ষেত্রে যৌনকর্মীদের প্রশ্নটিকে উড়িয়ে দেওয়া হবে কেন? ক্যামেরার সামনে শরীর দান করে, শরীর প্রদর্শন করে তামাম পুরুষদের ট্রিগার করে তাঁরা নায়িকা পরিচয় নিয়ে থাকবেন, আর শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য শরীর বিক্রি করে যাঁরা অর্থ রোজগার করে ক্যামেরা ছাড়া, তাঁরা যৌনকর্মী? তাই সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার তাগিদে শরীর বিক্রি করা যৌনকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছে যৌনতার জন্য যেসব অভিনেত্রীরা শরীরকে অর্থ রোজগারের মাধ্যম করে, তাঁরা কেন যৌনকর্মী নয়?

বদল ঘটেছে যৌনতায়, সেটা সমাজের বিভিন্ন অংশের যৌনকর্মীদের বিভিন্ন মনোভাব ও কাজকর্মের ধরনেই প্রকাশ পায়। এআইএনএসডব্লিউ (AINSW)-এর নতুন কমিটি যুগ্ম সচিব তথা বিহারের পূর্ণিয়ার যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘আম্রপালি কল্যাণ সমিতি’-র সচিব রেখা রানি বলেন–“ফিল্মের নায়িকা হওয়ার জন্যেও তো শরীর বিক্রি করতে হয়। যাঁরা শরীর বিক্রি করে নায়িকা হন, তাঁদের কেন সেক্স ওয়ার্কার বলা হবে না?” তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন–“যৌনকর্মীদের পরিচয় দেওয়ার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়, সেই শব্দ কেন ওই নায়িকাদের জন্য ব্যবহার হয় না?” রেখা রানি বলেন–“শরীরের বিনিময়ে নায়িকা হওয়া তো সেক্স ওয়ার্কারের মতো কাজ। আমরাও তো সেক্স করেই উপার্জন করি। দিই যৌনসুখ। তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে কেন অন্য রকমের আচরণ করা হবে? ওদের নায়িকা হওয়ার জন্যে সেক্স করতে হয়, আর আমরাও রোজগারের জন্য সেক্স করি। নায়িকারা গ্ল্যামার সেইসঙ্গে রোজগারের জন্য সেক্স, আর আমাদের গ্ল্যামারহীন রোজগারের জন্য সেক্স করি–পার্থক্য শুধু এইটুকুই।” যৌনকর্মীদের সংগঠন দিশা মহিলা বহু-উদ্দেশীয় সংগঠনের সচিব তথা এআইএনডব্লিউ-র অপর যুগ্ম সচিব লতা কাপসের মতে, “শরীর বিক্রি করে নায়িকা হলেও সেক্ষেত্রে সেক্স ওয়ার্কার বলা হয় না। আর আমরা শরীরের বিনিময়ে বেঁচে থাকলেও আমাদের সেক্স ওয়ার্কার বলা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসন্মানিত করা হয়।”

(৬) ক্যানভাসে গণিকা : ‘রং রসিয়া’ নামে হিন্দি মুভিতে দেখানো হয়েছে চিত্রশিল্পী রবি ভার্মার চিত্রশিল্পের মডেলার সুগন্ধি, যিনি চিত্রশিল্পীর চিত্রশিল্পের জন্য নগ্ন হতেন এবং কখনো-সখনো সুযোগ-সুবিধা মতো। চিত্রশিল্পীর সঙ্গে যৌনমিলনও করতেন। সুগন্ধি বিলক্ষণ বুঝেছিলেন তিনি শিল্প এবং প্রেমের জন্য নগ্ন হলেও রবি ভার্মা, রক্ষণশীল সমাজ ও রাষ্ট্র তাঁকে ‘বেশ্যা’ হিসাবেই দেখত। স্বীকৃতিহীন এক নারী সুগন্ধির পরিণতি হল গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহনন। এটাই বাস্তব। প্রদীপের নীচে অন্ধকারকে আড়ালে রেখে চিত্রশিল্পীরা বিখ্যাত হয়ে যায়। মডেল নারীদের কেউ মনে রাখে না। যে সলতে হয়ে শিল্পীর শিল্পসত্তাকে জাগিয়ে তুলে পুড়ে মরল, তাঁদের খবর কেউ রাখি না। চিত্রশিল্পীরা চিত্র অঙ্কন করবেন, ভাস্কররা ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন, সে তো ভালো কথা। শিল্প মনের বিকাশ ঘটায়, চেতনার মুক্তি দেয়। তার জন্য কেন নারীকে নগ্ন হতে হবে? কেন নারী-শরীরকে ব্যবহার করতে হবে? যে নারী শিল্পীর ক্যানভাসের নগ্ন হয়ে বসেন, সে কী সমাজে পরিবারে বলতে পারে, সে শিল্পীর সামনে শিল্পের জন্য নগ্ন হয়? না, বলতে পারে না। কারণ এই নগ্ন হওয়াটা সমাজ মহৎ হিসাবে দেখে না। গণিকারা যেভাবে বাড়িতে তাঁর কাজের ধরন লুকিয়ে রেখে গণিকাবৃত্তি চালিয়ে যায়, ঠিক তেমনিভাবেই মডেল নারীরা পরিবার ও সমাজকে তাঁর পেশা লুকিয়ে নগ্ন হতে আসে। সমাজ ও পরিবারে সেই নারী বলতে পারেন না যে, সে চিত্রশিল্পীর সামনে নগ্ন হয়ে রোজগার করেন। কারণ পেশাটি সমাজে নিষিদ্ধ। ন্যুড স্টাডির নামে নারীকে শুধু নগ্ন করা হয় তা তো নয়, অনেক ক্ষেত্রে শিল্পীর যৌনলালসার শিকার হন। কিন্তু এই মডেলরা কোনো স্বীকৃতি পায় না। আসলে ছলে-বলে-কৌশলে শিল্প মাধুর্যে নারীকে নগ্ন করে দেওয়াই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরোনো অভ্যাস। বলা হচ্ছে–The nude’ figure is mainly a tradition in Western art, and has been used to express ideals of male and female beauty and other human qualities. It was a central preoccupation of ancient Greek art, and after a semi-dormant period in the Middle Ages returned to a central position in Western art with the Renaissance. Athletes, dancers, and warriors are depicted to express human energy and life, and nudes in various poses may express basic or complex emotions such as pathos. In one sence, a nude is a nude is a work of fine are that has as its primary subject the unclothed human body, forming a subject genre of art, in the same way as landscapes and still life. Unclothed figures often also play a part in other types of art, portraiture, or the decorative art. While there is no single definition or fine art, there are certain generally accepted features of most definitions. In the fine arts, the subject is not merely copied from nature, but transformed by theb artist into an aesyhetic object, usually without significant utilitarian, commercial (advertision, illustration), or purely decorative purposes.

একটা গল্প বলি, গল্প নয় সত্য ঘটনা। আমার মেজো ভাইরা ভাই বিখ্যাত মডেল ফোটোগ্রাফার। তিনি তাঁর এক অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করলেন। বললেন–“আমাকে একটা মডেল সেশনের জন্য মধ্যপ্রদেশ যেতে হয়েছিল কয়েকদিনের জন্য। খাজুরাহের মন্দিরকে বিষয় করে মডেল-নারীরা বিভিন্ন রকমের পোজ দেবেন। সেই ছবি তুলে ফোটোগ্রাফার হিসাবে আমাকে মডেল-নারীদের প্রোফাইল তৈরি করে দিতে হবে। সেই প্রোফাইলের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে ফোটোগ্রাফারদের উপর। সব মডেল-নারীই চাইবে তাঁর প্রোফাইলই শ্রেষ্ঠ হবে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চাইলেই তো শ্রেষ্ঠ হওয়া যায় না। তা নির্ভর করে একজন ফোটোগ্রাফার কতটা তাঁকে এক্সপোজ দেবে, কীভাবে দেখবে তার উপর। বিশেষ কোনো মডেল-নারীকে সে এক্সপোজ কেন দেবে? সেই প্রশ্নটাই বড়ো হয়ে দাঁড়ায়। অতএব ফোটোগ্রাফারকে বশে আনতে হবে। সেটা কীভাবে? মাঝরাতে হোটলে ফোটোগ্রাফারের ঘরের দরজায় কড়া নাড়তে হবে এবং শরীর নিবেদন করার সুযোগ নিতে হবে। সুযোগ নিতে পারলেই কেল্লা ফতে। এটাও মনে রাখতে হবে সব ফোটোগ্রাফারকে যেমন শরীর নিবেদন করে বশ করা যায় না, তেমনি সব মডেল-নারীও শ্রেষ্ঠ প্রোফাইলের জন্য শরীর বিক্রি করে না। তা সত্ত্বেও সমাজে মডেল-নারী ও মডেল-ফোটোগ্রাফারদের সুনজরে দেখা হয় না। ধরেই নেওয়া হয় মডেল-নারী ও মডেল ফোটোগ্রাফারের চরিত্রের ঠিক নেই। এঁরা এর সঙ্গে তাঁর সঙ্গে শোয়। মডেল ফোটোগ্রাফারের কাজ করি শুনলেই মেয়ের বাবারা তাঁদের মেয়ে দিতে চায় না এই কারণেই।”

নগ্ন আলোকচিত্রশিল্প বলতে নগ্ন বা অর্ধ-নগ্ন ব্যক্তির চিত্র ধারণকারী যে-কোনো ধরনের আলোকচিত্র বা নগ্নতার ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্রসমূহ নির্দেশ করে। নগ্ন আলোকচিত্র বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যার মধ্যে শিক্ষাগত ব্যবহার, বাণিজ্যিক প্রয়োগ এবং শিল্পকর্মের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহার, নির্দিষ্ট বিষয় বা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট সঙ্গীর উপভোগের উদ্দেশ্যেও নগ্ন আলোকচিত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে। প্রদর্শনী বা নগ্ন আলোকচিত্রের প্রকাশ বিভিন্ন সংস্কৃতি বা দেশে বিতর্কিত হতে পারে, বিশেষত যদি আলোকচিত্রের বিষয়টি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। অধিকাংশ নগ্ন আলোকচিত্র সাধারণত নারী বিষয়ক বৈশিষ্ট্য সংবলিত হতে দেখা যায়।

নগ্ন আলোকচিত্র সাধারণত বৈজ্ঞানিক এবং শিক্ষাবিষয়ক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যেমন জাতিগত গবেষণা, মানবদেহতত্ত্ব বা যৌনশিক্ষা ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে আলোকচিত্র গ্রহণে এর বিষয় বা আলোকচিত্রটির সৌন্দর্য বা যৌনকামনা সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া হয় না, বরং শিক্ষাগত বা প্রদর্শনমূলক উদ্দেশ্যে আলোকচিত্র তৈরি করা হয়।

Edouard-Henri Avril একজন ফরাসি চিত্রশিল্পী ছিলেন, যিনি তাঁর অঙ্কিত নগ্ন এবং যৌন উত্তেজক শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ‘পল আভ্রিল’ ছদ্মনামে ছবি প্রকাশ করতেন। তেওপিল গাউটিয়েরের (ফরাসি লেখক) লেখা উপন্যাস ‘ফরচুনিও’-তে ছবি আঁকতে গিয়ে তিনি সর্বপ্রথম ‘পল আভিল’ নাম গ্রহণ করেন। তাঁর আঁকা ছবি দেখে বহু লেখক তাদের গল্প বা উপন্যাসে নগ্ন ছবি আঁকার জন্য পলকে নিতেন। পল নগ্ন ছবি এঁকে রাতারাতি খ্যাতিমান হয়ে যান অল্প দিনের মধ্যেই। প্রায় প্রতিদিনই ফ্রান্সে তাঁর আঁকা ছবি সংবলিত বই বিক্রি হত এবং কমপক্ষে একশোটার নীচে বিক্রি হত না। তিনি নিজেও বহু ছবি এঁকে বেচেন এবং ভালো আয় করেন। শিল্পী নারীকে নগ্ন করেন সামান্য অর্থের বিনিময়ে। সেই চিত্র বিক্রি করে শিল্পী খ্যাতি লাভ করেন, প্রচুর অর্থ রাজগার করেন। আর যে নারী নগ্ন হয়ে শরীরী বিভঙ্গ বিক্রি করলেন, তাঁর প্রাপ্তি কতটুকু? সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।

নগ্ন শরীর প্রদর্শন করাও এক শ্রেণির নারীদের মধ্যে এক জনপ্রিয় পেশা। স্ট্রিপটিজ, অর্থাৎ পরনের কাপড় খোলা হচ্ছে মানুষের মধ্যে যৌন-উত্তেজনা জাগানোর জন্য এক প্রকারের আয়োজন, যেটাতে একজন সুন্দরী নারী একে একে তাঁর সব কাপড় খোলা শুরু করে ধীরে ধীরে এবং সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যায় একটা সময়ে। এরূপ কর্মে নিয়োজিত নারীকে স্ট্রিপার বা ইক্সোটিক ড্যান্সার বলা হয়। এই ধরনের অনুষ্ঠান বা আয়োজন সাধারণত কোনো বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল বা স্ট্রিপ ক্লাবে হয়। স্ট্রিপটিজের মূল উদ্দেশ্য মানুষের শরীর দেখিয়ে অন্য মানুষকে যৌন-উত্তেজনা দেওয়া, যৌনমিলন করতে দেওয়া নয়। অর্থাৎ যৌনমিলন না-করেও শরীর বিক্রির ব্যবসা। চিনে এক ধরনের সংগীত গোষ্ঠী আছে, সেই গোষ্ঠীর সব সদস্যরাই নারী। অর্থাৎ ভোকালিস্ট থেকে কনসার্ট শিল্পীরা। এঁরা তিনদিক ভোলা মঞ্চে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে হাজার হাজার দর্শকদের সামনে সংগীত পরিবেশন করে থাকে। শুধু চিন কেন, আমাদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তিনদিক খোলা মঞ্চে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে হাজার হাজার দর্শকদের সামনে চটুল গানের সঙ্গে খ্যামটা নাচে। এমনকি খোলা মঞ্চে সব বয়সের হাজার হাজার দর্শকদের সামনে যৌনমিলনও করে থাকে। এই ধরনের যৌনব্যাবসা সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে।

ঠিক কবে থেকে শিল্পীদের মধ্যে নারীকে নগ্ন করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল? ঠিকঠাক সাল-তারিখ জানা না গেলেও একথা বলাই যায় সমাজে পুরুষ আধিপত্য কায়েম হওয়ার পর থেকেই নারীকে নগ্ন করা শুরু হয়। প্রাচীন তৈলচিত্ৰতেও আমরা নগ্ন নারীদের দেখতে পাই। মুসলিম যুগেও নগ্ন নারীর তৈলচিত্র পাওয়া যায়। নারীকে নগ্ন করা হত তা নয়, নারীদের নগ্ন রাখা হত। ক্রীতদাসী ও হারেমে রক্ষিত নারীদের নগ্নভাবে থাকতে হত। তাঁদের যেমন খুশি ব্যবহার করা হত। নিজ শরীরের উপর নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দাপটে নিন্মবর্ণের নারীদের ঊধ্বাঙ্গ অনাবৃত রাখতে হত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রে পুরুষরা নারীদের নগ্ন করতে নগ্ন দেখতে নানা অছিলায় লালায়িত। শরীরী বিভঙ্গের প্রশংসায় নারীও সজ্ঞানে-অজ্ঞানে পুরুষদের পাতা ফাঁদে নিজেদের পা গলিয়ে ফেলল। শরীরী-সৌন্দর্য প্রদর্শনে নারীরাও উদগ্রীব হয়ে উঠল।

সম্ভবত নগ্নচর্চা শুরু হয়েছে রাজাদের ইচ্ছাপূরণ ও মনোরঞ্জনের কারণে। অনুরূপ রাজাদের মনোরঞ্জনের শিল্পীরা চিত্র অঙ্কন করত, তেমনি নগ্ন তথা আদিরসাত্মক যৌনসাহিত্যও রচনা করত কবিরা। রাজারা নগ্নতা খুব পছন্দ করতেন। তাই রাজাদের খুশি করতে পারলে দামি উপটৌকন, সেইসঙ্গে সভাকবি বা রাজকবির পদ। চিত্রশিল্পীরাও পেতেন। সেকালে কবি-চিত্রশিল্পীরা রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতেন। হাতুড়ি-ছেনি-তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হত নারীর নগ্নতা। অশ্লীলতার সমালোচনার ঝড় এড়াতে সুপরিকল্পিতভাবে শিল্পের নামে মাহাত্ম বা মহিমা জুড়ে দেওয়া হল। নগ্নতাই হয়ে উঠল ‘শিল্প’। নারীকে যত খুশি যেমন খুশি নগ্ন করো, সামনে বসাও, শোয়াও, দাঁড় করাও এবং সুযোগ পেলে ভোগ করো। বিনিময়ে সামান্য পারিশ্রমিক দাও। সামান্য রোজগারের আশায় মফঃস্বল থেকে নিন্মবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে মেয়েরা আসছে নগ্ন হতে। বেশিরভাগ মেয়েরা দারিদ্রতার কারণে সংসারে অভাব মেটানোর তাগিদে গোপনে এই পেশা বেছে নিচ্ছে। নগ্ন নারীদের চিত্র-ভাস্কর্য খুব চড়া দামেই বিকোয়। শিল্পীরা ‘দ্যুড আর্ট’ যতই মাহাত্ম্য আরোপ করুক না কেন, সমাজে এইসব মেয়েরা কুলটা’ বলেই ঘৃণিত।

(৭) আকর্ষণীয় পেশা হিসাবে গণিকা : সব মেয়েরাই যে পাচারকৃত হয়ে বা প্রতারিত হয়ে গণিকা পেশায় নিযুক্ত হচ্ছেন এ কথা বলা যায় না। প্রচুর মেয়েরা এ পেশায় আসছেন স্ব-ইচ্ছায়, কায়িক পরিশ্রমহীন মোটা টাকা রোজগারের হাতছানিতে। অন্য রোজগার থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত রোজগারের আশায় যেমন আসে, তেমনি অভাবি মেয়ে-বউরাও গণিকাপেশায় আসে। আর পাঁচটা স্বাভাবিক পেশার মতোই এই পেশাকেও গ্রহণ করে।

তবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ড এই চারটি দেশে জরিপ তথ্য সাক্ষ্য দেয় যে, নিরক্ষর ও অদক্ষ মেয়েদের পক্ষে যেসব কাজ করা সম্ভব তার মধ্যে গণিকাবৃত্তিই সবচেয়ে বেশি অর্থাগম ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, মালয়েশিয়ার ম্যানুফাঁকচারিং কোম্পানিতে কাজ করে ১৯৯০ সালে একজন দক্ষ শ্রমিক বছরে উপার্জন করত ২৮৫২ মার্কিন ডলার এবং একজন অদক্ষ শ্রমিক উপার্জন করত ১৭১১ মার্কিন ডলার। বিপরীতে সেই সময়ের হিসাবে কোনো নিন্মমানের হোটেলে যৌন-পরিসেবা বা শরীর বিক্রি করে একজন মহিলা সপ্তাহে মাত্র একদিন বারো ঘণ্টা কাজ করে বছরে ২০৮০ মার্কিন ডলার উপার্জন করতে পারত। স্কুল কলেজের ছাত্রীরা এবং গৃহবধূরা আজকাল স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসছেন প্রচুর পরিমাণে। বাড়তি চাহিদা মেটাতেও এই পেশায় আসছে কাঁচা পয়সার হাতছানিতে। এই ভারতে তথা এই বাংলায় খুব গোপনে প্রচুর অর্থ রোজগারের আশায় মেয়েরা আসছে। এখন যৌনমিলনে কন্ডোম বাধ্যতামূলক। কন্ডোম ছাড়া কোনো মেয়েই যৌনকর্ম করে না। এর ফলে যেমন মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার ভয় নেই, তেমনি যৌনরোগেরও ভয় নেই। ফলে উদ্যাম যৌনকর্মে কোনোরকম ভয় কাজ করছে না। কন্ডোমের ব্যবহারের ফলে যৌনরোগেরও ভয় থাকছে না। এইসব মেয়েরা অনেকেই শিক্ষিত। ফলে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ঘৃণা নয়, সমীহ আদায় করে নেয় অনেকক্ষেত্রেই। এঁরা ট্রিপিকাল গণিকাদের মতো সারাক্ষণ পান চিবোয় না। ক্লায়েন্টের অনুরোধ না-থাকলে পারতপক্ষে মদ্যপান করে না, ধূমপান করে না। এইসব ধোপদুরস্ত মেয়ে-বউদের কাছে যৌনকর্মে ক্লায়েন্টরা স্বস্তি পায়। যৌনরোগের আশঙ্কায় ভোগে না ক্লায়েন্টরাও। এই শ্রেণির গণিকাদের রেটও যথেষট চড়া। যৌনপল্লির মতো ঘুপচি সিঙ্গেল খাটে যৌনক্রিয়া নয়। রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভেও অনেক মেয়ে-বউরা শাঁসালো পুরুষকে ক্লায়েন্ট হিসাবে বেছে নেয়। সমাজের আনাচে-কানাচে চলছে এহেন নিরন্তর যৌনকর্ম।

বছর কয়েক আগে সংবাদপত্রে একটি সংবাদ হয়তো সবাই পড়েছেন। যাঁরা পড়েননি, তাঁদের জন্য সংবাদটা উল্লেখ করলাম–ভারতের একটি শহর। থানায় এসে এক মহিলা সটান এসে বলল, “আমি বাজারের মেয়েছেলে নই। আমি যৌনকর্মী। এটাই আমার পেশা।” ডিউটি অফিসারের তো ভড়কে যাওয়ার দশা। মুম্বাইয়ের এক কলগার্ল উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে মহিলা থানায় অভিযোগ লেখাতে গিয়েছিলেন। শহরের কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তি এক পাঁচতারা হোটেলে এই মহিলার কাছ থেকে যৌন-পরিসেবা নিয়েছে। এরপর এই কলগার্লকে ন্যায্য পারিশ্রমিক তো দূরের কথা, উল্টে তাঁর কাছে থাকা প্রচুর পরিমাণে টাকাপয়সা ও অন্যান্য সামগ্রী যা ছিল, সব লুঠ করে ক্লায়েন্টরা পালিয়ে গেছে। মুখে তাঁর ইংরেজির ফুলঝুরি। মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ আধিকারিকদের তো বিমূঢ় অবস্থা। নিজের পুরো কাহিনি শুনিয়ে বলল–“এই পেশা থেকে দুই কোটি টাকা আমাকে উপার্জন করতে হবে। সেই উপার্জনের অর্থে আমি একটা আধুনিক বিউটি পার্লার খুলব। এরপর এই পেশা ছেড়ে বিউটি পার্লার চালাব বাকি জীবন।” মেয়েটি পুলিশ আধিকারিককে জানায়, শরীরের জৌলুস ও বাঁধুনি ঠিক রাখতে একজন পেশাদার প্রশিক্ষকের কাছে তিনি যান। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে তিনি খুব সচেতন। মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বি জমে গেলে কদর থাকবে না। তাই সে ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ মেনে চলে। শুধু তাই নয়, তিনি প্রতি ছয় মাস অন্তর মেডিকেল চেক আপও করিয়ে নেয়।

গিয়েছিলাম বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের কাছাকাছি একটি ফ্ল্যাটে। আগে থেকেই কথা ছিল আমি যাব। ফোনেই সময়-দিন জানিয়েছিলাম। সে মোতাবেক একজন যুবক এসে আমাকে কোয়ার্টারের ভিতরে নিয়ে গেল। তিনতলায় গেলাম। আমাকে বলল, কেমন মেয়ে চান? বিবাহিত, না অবিবাহিত?

আমার পাঁচজন মেয়ে চাই একসঙ্গে–আমি বললাম।

–হয়ে যাবে। ডাকি মেয়েদের? পছন্দ করুন মেয়েদের।

–রেট বলুন।

–এক ঘণ্টার জন্য ২০০০ টাকা। নন-এসি। এসি হলে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা। একবার শট। দু-ঘণ্টার জন্য নিলে ৩০০০ টাকা নন-এসি। এসি অতিরিক্ত ৬০০ টাকা। চারবার শট নিতে পারবেন। টাকা কাজ করার পর দেবেন।

–এক ঘণ্টা হলেই হবে। পছন্দ করার কিছু নেই। ডাকুন যে-কোনো পাঁচজন মেয়ে।

পাঁচজন নানা বয়সের মেয়ে এসে আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে ঢুকিয়ে দরজায় ছিটকিনি তুলে একজন মেয়ে আমাকে বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করল–“মাত্র এক ঘণ্টার পাঁচজন মেয়ে দিয়ে কী করবেন?” মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম–কী নাম তোমার? নাম বলল–“কাজল”। আমি বললাম–“তোমরা সবাই খাটের উপর উপর গোল হয়ে বসো। আমিও বসছি।” খাটের উপর গোল হয়ে বসে প্রত্যেকে নিজের নিজের টি-শার্ট খোলার জন্য উদ্যত হতে দেখে আমি বললাম–“খোলার দরকার নেই। তোমাদের সঙ্গে গল্প করার জন্য এসেছি। অন্য কোনো কারণে নয়। গল্প করা যাবে?” একটি মেয়ে বলল–কত ঘণ্টার জন্য নিয়েছ আমাদের?

–এক ঘণ্টা।

এই এক ঘণ্টা তোমার। তোমার যা মনে হয় করতে পারো।

শুধু গল্প করব, সবার সঙ্গে। প্রথমে তোমাদের নামগুলো বলো।

আমি পায়েল।

–আমি রীতা।

–আমি তপতী

–আমি নূরজাহান।

–আর তুমি কাজল।—আমি বললাম।

–কী গল্প করবেন?

—ব্যক্তিগত। তোমাদের কাজকর্ম নিয়ে।

–বলুন, কী জানতে চান?

–তোমরা এই কাজে কীভাবে এলে? প্রতারণার শিকার হয়ে?

–না। মেয়েরা সমস্বরে বলল।

–তাই নাকি? তাহলে কীভাবে এই কাজ বেছে নিলে শুনি সেই গল্প।

–আমি এখানে আসার আগে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতাম। বনগাঁ থেকে সল্টলেক আসতাম। করেছিলাম বেশ কয়েক বছর। একদিন কাজ শেষ হতে অনেকটা রাত হয়ে গেল। অফিস থেকে রাস্তায় বেরিয়েছি। হঠাৎ দেখি একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়াল। গাড়ির ভিতরে কোম্পানির মালিক। আমাকে উঠতে বলল। আমি বললাম–“প্রয়োজন নেই। আমি একাই যেতে পারব।” উনি নাছোড়। বাধ্য হয়েই গাড়িতে উঠে পড়তে হল। দশ মিনিটের রাস্তায় উনি বললেন–“চলো, একদিন দীঘা থেকে বেরিয়ে আসি তুমি আর আমি। খুব মজা হবে।” আমি বললাম–“তা কী করে হয়?” উনি বললেন–“কেন হবে না? তোমার কোনো খরচা নেই। সব খরচা আমার। এছাড়াও তোমাকে দশ হাজার টাকা দেব। ক্যাশ।” আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। উল্টোডাঙা স্টেশন এসে গেছে। আমি বললাম–“ব্যাস, এখানেই নামিয়ে দিন।” “কিছু বললে না”–উনি বললেন। আমি বললাম–“ভেবে দেখি। কাল জানিয়ে দেব।” না, কাল আর কাজে গেলাম না। আসলে কাজটাই ছেড়ে দিলাম। আর ভাবতে থাকলাম, উনি কেন আমাকে নিজের খরচে বেড়াতে নিয়ে যাবেন? কেনই-বা এমনি এমনি দশ হাজার টাকা দেবেন? নিশ্চয় এমনি এমনি নয়। আমাকে ভোগ করবে। দশ হাজার টাকায় আমাকে ভোগ করার মূল্য দিতে চায়। আমাকে ভোগ করতে দিলে কেউ দশ হাজার টাকা দেবে তাহলে? মন্দ নয় তো ব্যাপারটা! পাকাপাকিভাবেই তো এ কাজ করা যেতে পারে। রোজগার আর সেক্স দুটোই মিটবে। এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমি ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতাম। তাঁকে বললাম–“এরকম একটা কাজ দেখে দাও না। খুব ইচ্ছা।” উনি বললেন–“আচ্ছা, ঠিক আছে।” কয়েকদিন বাদে উনি জানালেন, “কালকে চলে এসো, তোমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে আলাপ করিয়ে দেব।” আমি চলে এলাম এখানে। বাড়ির মালিক বলল–“তুমি নাবালিকা। তোমাকে কাজে নেওয়া যাবে না।” আমি বললাম–এই দেখুন আমার পেট। আমি দুই সন্তানের মা। আমার পেটে দাগ দেখুন। আমার বয়স তিরিশ।” মালিক বলল–“এসব কথা বোর্ডে বলবে। বোর্ডে বলতে পারবে তো? বোর্ডে পাশ করলে আমাদের কাজে নিতে কোনো অসুবিধা নেই।” বোর্ডে উঠলাম এবং পাশ করলাম। আজ প্রায় বছর খানেক হল এখানে কাজ করছি। সকাল সাতটার মধ্যে এখানে ঢুকি, আর রাত সাতটায় এখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরি। রোজ। তবে যেদিন হোল নাইট ক্লায়েন্ট আসে, সেদিন রাতে তো থাকতেই হয়।”–এ কাহিনি শোনাল কাজল।

–পায়েলের কথা বলল এবার। পায়েল, তোমারও কী এখানে আসার কাহিনি একরমই?

–একদম না।—ঘাড় ঝাঁকিয়ে পায়েল বলল।

–বলল, তোমার এখানে আসার গল্প।

–আমার স্বামী আছে। এক সন্তানও আছে। এই দেখুন ছেলের ছবি। ক্লাস সেভেনে পড়ে। ইংলিশ মিডিয়াম পড়ে। আমার স্বামীর যা রোজগার, তাতে আমার ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়ানো সম্ভব নয়। আমাকেও কোনো কিছু করা দরকার। কিন্তু কী করব? কে কাজ দেবে? আমি তো কোনো কাজ জানি না। কাজ না-জানলে কায়িক পরিশ্রমের কাজ করতে হবে, যেখানে শরীরের শক্তি প্রয়োজন। রোজগারও তেমন হবে না। শরীরই যখন খাটাতে হবে, তবে শরীর খাঁটিয়ে অনেক বেশি রোজগার করা যায় তেমন পেশাই বাছতে হবে। চলে এলাম এখানে, শুরু করলাম কাজ। এ পেশায় টানা পাঁচ বছর। ডেলি কম করে ১০০০ টাকা রোজগার করা মোটেই কঠিন নয় এখানে। ধনী ক্লায়েন্টের কাছ থেকে বখশিস পাওয়া যায়। যদিও বকশিস ধনী-অধনী সবাই দেয় খুশি হয়ে।—এ হল পায়েলের এ পেশা বেছে নেওয়া কাহিনি।

–বেশ। রীতা, এবার তুমি বলো তোমার কথা।

–আমি ডিভোর্সি। এক বছর হল ডিভোর্স হয়েছে। স্বামী নপুংসক ছিল। ডিভোর্স তো হল, কিন্তু আমার বাকি জীবন চলবে কী করে? আবার বিয়ে করব? আবার বিয়ে মানে তো পুরুষ বদল। তিনি হবে দ্বিতীয় স্বামী। ডিভোর্সী মেয়ে মানে এঁটো মেয়ে। সে কী আমাকে ভালো চোখে দেখবে? মোহ ভেঙে দু-দিন বাদে সেও যদি আমাকে ছেড়ে দেয়? আমি কি তৃতীয় বিয়ে করব? তৃতীয়বার পুরুষ বদল? পুরুষ যদি বদল করতেই হয়, তবে এভাবে কেন? লাভ কী? বিগ জিরো। সিদ্ধান্ত নিলাম এ পেশায় আসব। এ পেশায় অর্থ যেমন আছে, তেমনি সক্ষম পুরুষের যৌনতা আছে, আছে প্রতিদিন নতুন নতুন পুরুষে সঙ্গ। চলে এলাম। কাজ শুরু দিলাম। বিন্দাস আছি। ব্যাংক ব্যালান্সও মন্দ নয়। অনেকেই আমাকে বিয়ের অফার দিয়েছে। আমি সেই প্রত্যাখ্যান করেছি। করার বিয়ের করার সঙ্গে সঙ্গে আমার আর্থিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলব। তা ছাড়া ওইসব পুরুষরা ভালোবেসে বিয়ের অফার দেয় না। অফার দেয় আমাদের ব্যাংক ব্যালান্স হাতানোর লোভে। আমাদের লাইনের বেশকিছু মেয়ে প্রতারিত হয়েছে সর্বস্ব খুঁইয়ে। আবার এখানেই ফিরে আসতে হয়েছে ‘সংসার’ হারিয়ে।

–না, তোমার ব্যাংক ব্যালান্স কত জানতে চাইব না। জানতে চাইব তপতীর কথা। তপতী কীভাবে এলেন?

–বিজ্ঞাপন দেখে। সাইট থেকে জানতে পারলাম যৌন-পরিসেবা দিয়ে প্রচুর রোজগার করা যায়। বিজ্ঞাপনে ফোন নম্বর দেখে যোগাযোগ করলাম। কাজ হয়ে গেল। আমি খুশি। রোজগারও বেশ ভালো। স্ব-ইচ্ছায় এসেছি, স্ব-ইচ্ছায় ছেড়ে চলে যাব।

–স্ব-ইচ্ছায় ছেড়ে যাওয়া যায়! আচ্ছা, এ ব্যাপারে পরে জানব। তার আগে নুরজাহান বলুক তাঁর কথা। কীভাবে এলে এই পেশায়?

–কোটিপতি না হলে কীসের বেঁচে থাকা! অনেক টাকায় মালিক হতে চেয়েছিলাম। এ পৃথিবীতে টাকাই সব। কলেজে পড়তে পড়তেই একদম স্বাধীনভাবে যৌনপেশা করতাম। তবে লুকিয়ে। একটা সাইট আছে এরকম। যাঁরা এ পেশায় আসতে চায় তাঁরা নিজেদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে প্রতি রাতে বা প্রতি ঘণ্টার কত পারিশ্রমিক নেব সেটাও জানাতে হয়। আমিও জানালাম। ক্লায়েন্ট পেতে থাকলাম। মোটা টাকা আসতে থাকল। কিন্তু ভয় পেয়ে বসল। নিজ দায়িত্বে কাজটি করতে হত। কোনো প্রোটেকশন নেই বিপদে পড়লে রক্ষা করার। কে কেমন জানতে পারি না। সন্দেহ নিয়ে কাজ করা মুশকিল। তখন ভাবলাম এখানে নাম লেখাই। নাম লেখালাম। মাথার উপর সবরকমের সার্পোট আছে। নিশ্চিন্তে কাজ করছি। রোজগারও বেশ ভালো। এ পেশায় কন্ডোম বাধ্যতামূলক। তাই যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়টাও নেই।

–যদি কখনো মনে হয় এ কাজ আর করবে না, তখন ছেড়ে দিতে পারবে?

–ছাড়ব কেন? ছেড়ে রোজগার হারাব কেন? দু-হাতে টাকা ঘাটি এখন, পেশা ছেড়ে দিলে খুব খারাপ লাগবে। অতএব ছাড়ার কোনো প্রশ্নই নেই।—বলল কাজল।

–তর্কের খাতিরে যদি ভাবি পেশা ছেড়ে দেব, যখন খুশি ছেড়ে দিতে পারি। বাড়ির মালিককে বললে, সে একবারের জন্যেও যারণ করবে না। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আমরা স্বাধীন। কারও ক্রীতদাসী নই। মালিকের কাছে কিছু পাওনা বকেয়া থাকলে হিসাব বুঝে নিয়ে চলে যেতে পারি।—বলল নুরজাহান।

–রোজগার কীভাবে হয়? ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে যা পাও সব তোমাদের?

–তা কখনো হতে পারে? আমাদের সঙ্গে এই কাজের সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত নানাভাবে। তাঁরাও ওই টাকার অংশ পাবে। যে ছেলেটি তোমাকে উপরে নিয়ে এসেছে, সেও পায়। আমাদের রেট দু-ঘণ্টার ৩০০০ টাকা। ২০০ টাকা আমাদের। বাকিটা মালিকের কাছে থাকে। অন্যান্যদের পেমেন্ট করে। এই কোয়ার্টারে অসংখ্য মালিক আছে। সেই মালিকের অধীনে কারো দশজন, কারো পনেরজন, আবার কারো পঁচিশজন বা তারও বেশি আছে। মনে করো ক্লায়েন্ট এলো আমার মালিকের কাছে। মালিক তাঁর নিজের ঘরের মেয়েদের আগে দেখাবে। যদি মালিকের ঘর থেকে মেয়ে পছন্দ না-হয়, তখন অন্য মালিকের ঘর থেকে মেয়ে দেখানো হয়। অন্য মালিকের ঘরের মেয়ে যদি আমার মালিকের ক্লায়েন্ট পছন্দ করে, তখন মেয়েটি পাবে ২০০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা। বাকি ১০০ টাকা পাবে আমার মালিক। তবে ক্লায়েন্টের দেওয়া বকশিসের টাকায় মালিক ভাগ বসায় না।—রীতা বলল।

–তাহলে বলছ যে-কোনো মেয়ে চাইলে এই পেশায় আসতে পারে?

–ইন্ডিভিজুয়াল যে-কোনো মেয়েই এই পেশায় আসতে পারে। কিন্তু এখানে সবাই আসতে পারে না। মালিক সরাসরি কোনো মেয়েকে কাজে লাগাতে পারে না। কোনো মেয়ে যদি আসে তখন তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংগঠনের কাছে। আমাদের সংগঠন দুর্বার কমিটি। সেখানে গেলে তাঁকে বোর্ডে বসতে হবে। সে কেন এ পেশায় আসতে চায়, কেউ বাধ্য করাচ্ছে কি না ইত্যাদি প্রশ্ন জানতে চায়। বয়সের প্রমাণপত্র চাওয়া হয়। প্রমাণপত্র না-থাকলে বা বয়স নিয়ে কমিটির সন্দেহ হলে বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক বয়স জেনে নেওয়া হয়। কোনো যৌনরোগ আছে কি না, সেটাও পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া হয়। একটা সময়ান্তরে আমাদেরও নিয়ম করে মেডিকেল টেস্ট করতে হয়। সব পরীক্ষায় পাশ হলে তবেই কমিটি একজন মেয়েকে কাজ করার অনুমতি দেয়। কমিটিকে এড়িয়ে কোনো মালিক গোপনে কোনো মেয়েকে কাজ করাতে পারবে না।—বলল কাজল।

–খারাপ লাগে না এরকম পেশার যুক্ত থাকতে? লোকে বাঁকা চোখে দেখে, ভর্ৎসনা করে, ঘৃণাও করে। খারাপ লাগে না?

তপতী ঝাঁঝিয়ে জবাব দিল–“খারাপ লাগবে কেন? চুরি-ডাকাতি করছি কি? পরিশ্রম করি, রোজগার করি। শরীর আমাদের পুঁজি ঠিকই। শরীর খাঁটিয়ে আর পাঁচজনের মতো আমরাও রোজগার করি। এ পৃথিবীতে এমন কোনো পেশা আছে, যেখানে শরীরের প্রয়োজন হয় না। কেউ শরীরের হাত ব্যবহার করে রোজগার করে, কেউ শরীরের পা ব্যবহার করে রোজগার করে, কেউ শরীরের চোখ ব্যবহার করে রোজগার করে, কেউ শরীরের নাক ব্যবহার করে রোজগার করে, কেউ শরীরের জিভ ব্যবহার করে রোজগার করে, আর আমরা শরীরের যোনি ব্যবহার করে রোজগার করি। তফাৎ কোথায়? এইভাবে ভাবতে পারেন না কেন? আমরা সেভাবেই ভাবি। তাই খারাপ লাগে না। খারাপ লাগলে দিনের পর দিন এভাবে কাজ করতে পারতাম? পেশাকে তো জেনেই এসেছি। সবচেয়ে বড়ো কথা, আপনি যে পেশাতেই আসুন-না কেন স্বেচ্ছায় হোক বা বাধ্য হয়ে, সেই পেশাকে মন থেকে ভালোবাসতে না-পারলে আপনি কাজটি ঠিকঠাক করে উঠতে পারবেন না। শ্রমিক হিসাবেও আপনি ব্যর্থ।”

আর পাঁচটা ব্যবসার মতো শরীর বিক্রির ব্যবসারও এখন বেশ চাহিদা। শুধু শরীর কেন, অনেক মানুষকেই অনেক সময় অনেক অপছন্দের কাজ করতে হয়, বেঁচে-বর্তে থাকার জন্যে। এমএ পাশ বনগাঁর এক যুবককে জানি যিনি যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান করতে না পেরে পাথরপ্রতিমায় গিয়ে রিক্সা চালাত। পাড়া-প্রতিবেশী কেউ সেটা জানত না। বাড়ি থেকে ভালো শু্যট-বুট পরে হাতে ব্যাগ নিয়ে বেরত। এরকম খুঁজলে প্রচুর যুবকদের পাওয়া যাবে। এমএ পাশ পিএইডি করা কোনো যুবক যদি ডোমের চাকরি পেয়ে যেত, সেটা কী কেউ জানতে পারত যে, সে ডোমের কাজ করে? আমার বাড়ির পাশে এক ভদ্রলোক রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সুইপারের কাজ করত। কিন্তু সারাজীবন সে পেশা লুকিয়ে রেখেছে। লুকিয়ে রাখা পেশা অনেককেই করতে হয়। আজকাল ছেলেরাও গোপনে যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এদের পুরুষ যৌনকর্মী বা জিগোলো বলে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।

শরীর বিক্রির ব্যাবসা যে বিনাপুঁজির লাভজনক ব্যাবসা, সেটা এই ভোগবাদী রাষ্ট্রনাগরিকরা বিলক্ষণ বুঝে গেছে। দেহোপজীবিনীরাও বুঝে গেছে একাধারে সীমাহীন যৌনসুখ ও অর্থসুখ দুইই ভোগ করা সম্ভব এই গণিকাবৃত্তিতে। বস্তুত যেসব মেয়েরা গণিকাবৃত্তি গ্রহণ করেন, তাঁরা কোনো না-কোনো ভাবে এই বৃত্তিতে আসছে বাধ্য হয়, এ ধারণা সবক্ষেক্ষেই সত্য নয়। মেয়েরা যে বাধ্য হয়েই গণিকাবৃত্তিতে আসে, তা প্রমাণ হয় কীসে? এ পেশায় বাধ্য এসেছে এ বয়ান কার? যিনি গণিকা তাঁর। গণিকা যে সত্য বলছেন না মিথ্যা বলছেন, তা সহসা প্রমাণ করা যায় না। কারণ যিনি বাদী, তিনিই বিবাদী, তিনিই সাক্ষী। গোপনে যৌনকর্ম করতে গিয়ে কত ‘ভদ্রঘরের’ (‘ভদ্রঘরের মহিলা’ বলতে যাঁর পিঠে গণিকার স্ট্যাম্প পড়েনি) মহিলাদের বলতে শুনেছি ‘পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এ লাইনে এসেছি’। যৌনকর্ম করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর সব মেয়েদেরই এই একটাই গৎ—‘পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে এ লাইনে এসেছি’। এতে চরম সহানুভূতি মেলে। যৌনকর্ম আদিরস থেকে করুণ রসে ভেসে যেতে থাকে। পশ্চাৎপটে প্যাথোজ বাজতে থাকে। পেটের দায়’ ব্যাপারটা কেমন যেন অভাব অভাব দারিদ্র্য দারিদ্র্য ভাব। বস্তুত আমরা সকল কর্মজীবীরাই পেটে দায়ে কর্মযজ্ঞে আসি। পরের সেবা করি অর্থের বিনিময়ে। নিজেদের উৎকৃষ্ট পণ্য করে তোলার চেষ্টা করি। পেট আমাদের সকলের আছে। পেট আছে, তাই ক্ষুধাও আছে। পেট না থাকলে কেউ কোনো কর্ম করত না। তা সে যৌনকর্মই হোক কিংবা ক্ষৌরকর্ম। একটু ভাবুন, শরীর আমরা সবাই বেচি। সব পেশাতেই শরীর বেচতে হয়। যতক্ষণ শরীর, ততক্ষণ পেশা। অবশ্য রোজগারের জন্য কেউ কেউ বুদ্ধিও বেচে। অতএব বলা যায়, পেটের দায়’ কথাটা অত্যন্ত নিন্মমানের অজুহাত।

দারিদ্র্যতা থেকে অভাব, অভাব থেকেই যদি মেয়েরা গণিকাবৃত্তি বেছে নেয়, সেটা কতটা বাস্তবানুগ? চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি সবই কি অভাবের তাড়নায়? খেটে খেতে চাইলে কি এ পৃথিবীতে কাজের অভাব? তাহলে গণিকাবৃত্তি বা যৌনপেশায় কেন? অভাব, না স্বভাব? প্রতিটি যৌন-সক্ষম সুস্থ মানুষ জিনগতভাবে বহুগামী। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। বহুগামিতা পুরুষের একচেটিয়া নয়। নারী-পুরুষ সমান আগ্রহী। সামাজিক কারণেই বেশিরভাগ মানুষ সেটা নিয়ন্ত্রণ করে, আবার পাপ বা অপরাধবোধ থেকেও ও-পথে পা বাড়াতে সাহস পায় না। সামাজিক জীবনযাপনের তোয়াক্কা না করে অনেকেই আবার ‘নিষিদ্ধ’ কাজে এসে পড়ে। এরা বেশ সাহসী মানসিকতার হয়। সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে হলে সাহসী তো হতেই হয়।

দারিদ্রতা বা অভাবই যদি মেয়েদের যৌনপেশায় আসার একমাত্র কারণ হত, ভারত তথা গোটা পৃথিবীতে যে বিপুল সংখ্যক দারীদ্রসীমার নীচে থাকা মেয়ে-বউ, তাঁরা সকলেই গণিকাবৃত্তিকেই বেছে নিত। বাস্তবিকই তা হয় না। তাহলে অসংখ্য দরিদ্র মহিলারা কলে-কারখানায়, মাঠে-ময়দানে, খনিতে-নদীতে সেলাই-ফোঁড়াই করে, ঠোঙা বেঁধে, বিড়ি বেঁধে সর্বত্র হাড়খাটুনি পরিশ্রম করে জীবনধারণ করত না। সীমাবদ্ধ রোজগারে জীবনধারণ করত না। এমনকি চরম দারিদ্রতায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তবুও যৌনপেশায় আসে না। কোটি কোটি মহিলা দারিদ্র্যের যন্ত্রণায় ছটফট করে মরলেও তাঁরা যৌনপেশায় আসে না। প্রচুর অর্থলোভ ও সীমাহীন যৌনতার আনন্দ নিতেই বহুবল্লভা হয় এক শ্রেণির মহিলা। উপ জনজাতিদের মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থা দারিদ্র্যসীমার একেবারেই নীচে। পিঁপড়ে ডিম, ঝলসানো ছুঁচো, গাছের কন্দ ইত্যাদি খেয়ে যাঁদের জীবনধারণ করতে হয়, সেই আদিবাসীরা কখনো যৌনপেশায় এসেছে বলে শুনিনি।

মানুন বা না-মানুন, বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন যৌনকর্মীদের পর্যবেক্ষণ করে, যে চিত্র উঠে আসে, তা হল চটজলদি মোটা অঙ্ক রোজগারের হাতছানিতে এই পেশা বেছে নেয়। লঙ আইল্যান্ড ও ওয়েস্টার থেকে গৃহবধূ হাতেগরম রোজগারের জন্য ১৯৭৩ সালে নিউইয়র্কে পেশাদার গণিকাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে। এঁরা কারোরই আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল না। ভারতেও বহু মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত মহিলাদের মধ্য থেকেও অনেকে যৌনপেশায় আসে। প্রোফাইল যেমন ‘হাই’ হবে, সেই মহিলাকে বিছানায় পেতেও তেমন ‘হাই’ মূল্য গুণতে হবে। সিরিয়াল করতে করতে, সিনেমা করতে করতেও অনেক অভিনেত্রী যৌনপেশা চালিয়ে যায়। ধনবান ক্লায়েন্টরা সিনেমা-সিরিয়ালের মহিলাদের ও মডেল-কন্যাদের সঙ্গ পেতে চড়া মূল্য পর্যন্ত দিতে রাজি থাকে। অনেক কম পরিশ্রমে, অনেক কম সময়ে এককালীন নগদ মোটা অঙ্কের রোজগারের হাতছানি এড়ানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। একটা সময়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অর্থনেশা ও যৌননেশা উভয়ই। ধনীর দুলালি থেকে শুরু করে ধনী গৃহবধূ, আইপিএস অফিসারের স্ত্রী থেকে কর্নেলের স্ত্রী, স্বামী পরিত্যক্তা ও স্বামীহারা বিধবা বা বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলা সহ সমাজের উঁচুতলার মহিলাদেরও এই পেশায় দেখা যায়। এঁরা গণিকাপল্লিতে ঘর নিয়ে কারবার নিশ্চয় করে না। কলগার্ল হিসাবে কাজ করে লোকচক্ষুর আড়ালে। কলগার্লের ফোন নম্বর রাখা থাকে হোটেল বা রিসোর্ট বা অন্য কোনো মধ্যস্থতাকারীর কাছে। কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী ফোন করলেই সময়মতো চলে আসে কলগার্লেরা। এঁরা বেশিরভাগ অবদমিত যৌনতাড়নায় আসে এবং অবশ্যই মোটা টাকারও দাবি করে। সানি লিওন যৌনপেশায় এসেছিল অভাবের তাড়নায় নয়, এসেছিল শখে। একথা সানি লিওন নিজেই বলেছে এক সাক্ষাৎকারে। দেশের আর্থিক উন্নতি যত হচ্ছে যৌনকর্মীর সংখ্যা তত বাড়ছে। তার কারণ ভোগবাদী সমাজ বিস্তার লাভ করছে। আগে নির্দিষ্ট এলাকায় যৌনকর্মীদের দেখা মিলত, আজকাল শহরে-গ্রামে লোক সমাগম হয় এমন জায়গাতেও যৌনকর্মীদের দেখতে পাবেন। সম্ভ্রান্ত এলাকায় সম্ভ্রান্ত মহিলাদেরও যৌন-পরিসেবা দিতে দেখা যাচ্ছে। যথাযথ পয়সা ফেললে ‘অ-গণিকা’ কলেজ পড়ুয়া থেকে ঘরোয়া বধূদের পেতে পারেন কয়েক ঘণ্টার জন্য শয্যাসঙ্গিনী হিসাবে।

এই আদি পেশাটি বর্তমান সময়ে কোনো পল্লিতে বা কোনো মহল্লায় বা কোনো রেড লাইট এলাকায় আটকে নেই। গণিকাঁচর্চা এখন ভুবনজুড়েই। ২৪ ঘণ্টাই। ৩৬৫ দিনই। প্রযুক্তি খুলে দিয়েছে নতুন নতুন জানালা ও দরজা। যে খুশি সেখানে আসতে পারে, যেতেও পারে। ক্লায়েন্ট হিসাবে আপনাকেও কোনো গণিকাপল্লিতে মুখ লুকিয়ে ঢুকতে হবে না। সেক্স অ্যাডভেঞ্চার পাওয়ার জন্য গুগলে গিয়ে সার্চ করলেই হল। যৌনসঙ্গী আর যৌনসঙ্গিনীর বিশাল বাজার খুলে যাবে আপনার চোখের সামনে। অসংখ্য সাইট আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে ১০০% সুরক্ষা নিয়ে। আড়ালে-আবডালে অন্ধকারের অন্ধগলিতে এক চিলতে ঘরের দেড় হাত চওড়া সিঙ্গেল চৌকি নয়, ঝাঁ চকচকে বেডরুমে। যৌনবাজার এখন খোলা বাজার। এখান থেকেই পাওয়া যায় নিরাপদ কোনো নির্জন নিরাপদ ফ্ল্যাটের ঠিকানা।

আসুন, একটু অন্তর্জাল যৌনবাজার ঘুরে দেখে আসি। তার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা সেরে নেব। আমেরিকার যৌনকর্মীরা চিন্তিত অনলাইন গণিকাবৃত্তির অধিকার খর্ব করা নিয়ে একটি নতুন আইন। এই আইনবলে আমেরিকার অনলাইন দেহব্যাবসার সাইটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় নামজাদা গণিকা জনৈকা মলি স্মিথ তাঁর মতামত জানিয়ে বললেন –”শরীর নিয়ে ব্যাবসায়িক চুক্তি অনলাইনেই হলে গণিকাদের আর রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হয় না। তাতে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না, বিশেষ করে নতুনদের। তা ছাড়া গণিকারা প্রকাশ্যে এলে পুলিশ কর্তৃক ধরা পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সরকার ভাত মারছেন আমাদের। যৌনপেশাকে ক্রিমিনালাইজ করলে তা কখনোই বন্ধ করা সম্ভব নয়। কোনো না-কোনোভাবে টিকে থাকবেই। অথচ তার খেসারত গুণতে থাকে এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা।”

একেবারে শুরুর দিকে এই ধরনের ব্যাবসার সাইটগুলি কিছু দেশে বন্ধ করে দেওয়ার হিড়িক পড়লেও কিছু বাদে সাইটগুলি রমরমাভাবে চালু আছে সারা বিশ্বে। আইনগতভাবে আর বন্ধ করতে পারছে না। কারণ ওইসব দেহব্যাবসার সাইটগুলিতে দেহব্যাবসার নামগন্ধ পর্যন্ত থাকে না। সরাসরি দেহবিক্রির কোনোরূপ ঘোষণা থাকে না। মেসেজ পার্লারের পরিসেবা দেওয়ার ঘোষণা থাকে মাত্র। মেসেজ শরীর ও মন চর্চার অংশ। তাই মেসেজ পার্লার নিষিদ্ধ নয় কোনো দেশেই। এই মেসেজ পার্লারের বিজ্ঞাপন দেখে যাঁরা খাদ্য খোঁজার তাঁরা খুঁজে নেয়। নির্দিষ্ট সান্ধ্যভাষা, চিহ্ন, ছবি বা কিছু নমুনা দেখে ক্ষুধার্ত ক্লায়েন্ট বুঝে নেয়। অভিজ্ঞদের কোনোরূপ বেগ পেতে হয় না। তবে আজকাল অবশ্য সাইটের গণিকারা সরাসরিই উল্লেখ করে দেয় তাঁরা কোন্ ধরনের যৌন পরিসেবায় কত মূল্যে নেবেন।

শিকাগোর লোয়োলা ইউনিভার্সিটি এবং মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির মেরি ফিন, অ্যান্ট্রি হিনিয়ন প্রমুখ ক্রিমিনোলজিস্টরা এই ধরনের অনলাইন গণিকাবৃত্তির উপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে হাতে যে তথ্য আসে, তা হল–মোট ৭১ জন গণিকা-মধ্যস্থতাকারী (Pimp) জানিয়েছেন তাঁরা নতুন টেকনোলজি অর্থাৎ অনলাইনেই বেশি আগ্রহী। অনলাইনের গণিকাদের রোজগার গড় ৭৫ হাজার ডলারের (বার্ষিক) কাছাকাছি। বর্তমানে আমেরিকার ৮০% যৌনপেশা অনলাইনের মাধ্যমেই হয়। কম-বেশি সব দেশেই এখন অনলাইন যৌনব্যাবসা বেছে নিয়েছে। শুধু অনলাইনে সাইটের মাধ্যমেই নয়, ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ইত্যাদি সোস্যাল মিডিয়াকেও ব্যাপকভাবে যৌনপেশা প্রসারে ব্যবহার করা হচ্ছে। সমকামী থেকে বিষমকামী সকলেই সোস্যাল মিডিয়ায় ভিড় করছে। ফ্রান্সে তো যৌনব্যাবসার মূল মাধ্যমই টিল্ডার আর ফেসবুক। ইজরায়েলেও টিন্ডার নির্ভর যৌনব্যাবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে। জাম্বিয়াতে আবার হোয়াটস অ্যাপ ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে, ফেসবুকও পিছিয়ে নেই। কলকাতায় বহুদিন হোয়াটস অ্যাপ যৌনব্যাবসা চালু আছে। নির্দিষ্ট নম্বরে হোয়াটস অ্যাপ নক করলেই একগুচ্ছ মেয়েদের ছবি চলে আসবে কাছে। তারপর নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে। চিন, জাপানের মতো দেশে যতই কড়া বিধিনিষেধ থাকুক না-কেন, বা জার্মানের মত উদারপন্থী দেশেও একই অবতার। সবসময়ই যে মধ্যস্থতাকারী যৌনকর্মীদের জন্য ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করেন, তা কিন্তু নয়। অনেকক্ষেত্রেই গণিকারা মধ্যস্থতাকারীদের সযত্নে এড়িয়ে নিজেরাই ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করে নিচ্ছে। যিনি যৌনতা বা শরীর বিক্রি করতে ইচ্ছুক, তিনি নিজেই সরাসরি বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা নিষিদ্ধপল্লিতে অবস্থান করে যৌনবৃত্তি করার দিন শেষ হতে চলেছে। হাতের মুঠোয় অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল থাকলে হাতের মুঠোয় ক্লায়েন্ট পৌঁছে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থায় মধ্যস্থতাকারীরা বা দালালরা অনুপস্থিত থাকায় ক্লায়েন্টদের থেকে প্রাপ্য পুরো পারিশ্রমিকটাই গণিকাদের। গণিকারা বাঁদরের ভাগ করা পিঠে খেতে চায় না। নিজের পিঠে নিজে বানাবে, নিজেই খাবে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক মেরি ফিনের মতে–সব মেয়েদেরই যে বলপ্রয়োগ করে যৌনপেশায় আনা হয়, তা কিন্তু মোটেই নয়। যেসব মেয়েদের শিক্ষাগত বা কারিগরি দক্ষতা নেই অথচ সহজেই রোজগারের প্রয়োজন, তাঁদের ক্ষেত্রে যৌনপেশার বিকল্প নেই। অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য তেমন রোজগার নেই। যদি থাকত, তাহলে হয়তো এই পেশায় অনেকেই আসত না।

আসুন, আমরা জেনে নিতে পারি অনলাইন এসকর্ট সার্ভিস সংস্থাগুলি কী বলছে সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের টানতে। কলকাতায় এক এসকর্টের কর্ণধার অঞ্জলি খান্না বলছে, তাঁদের প্রতিষ্ঠান বাঙালি কল গার্লস এবং হাই প্রোফাইল এসকর্ট অফার করে। তাঁদের সদর্প ঘোষণা–“কলকাতায় অনেক এসকর্ট এজেন্সি রয়েছে। কিন্তু যখন আসল এবং সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানে প্রশ্ন ওঠে, তখন কেউই আমাদের সঙ্গে কেউ টক্কর দিতে পারে না। আমরাই শীর্ষ মহিলা এসকর্ট, যাঁরা কলকাতায় বাঙালি কল গার্লদের পরিসেবা প্রদানকারী। আপনি যদি আমাদের মহিলা এসকর্ট পরিসেবাটি পছন্দ করেন, তবে অবশ্যই আপনার সিদ্ধান্তটি সঠিক। অঞ্জলি খান্না ২০১০ সাল থেকে কলকাতায় নিজস্ব এসকর্ট এজেন্সি চালাচ্ছেন এবং কল গার্ল পরিসেবা এবং ক্লায়েন্টদের জন্য এসকর্ট পরিসেবা সরবরাহ করেন। কলকাতায় এসকর্ট ভাড়া দেওয়ার জন্য আমাদের শর্টস অফ শর্টস কেবলমাত্র সমস্ত ভিআইপি হোটেল ইনকল বা আউটকল এসকর্ট পরিসেবা সরবরাহ করুন। আপনি যদি ইতিমধ্যে কলকাতায় যে-কোনো হোটেলে থাকেন এবং আউটকল পরিসেবা চান, তবে অবশ্যই আপনার হোটেল থেকে আলাদা হওয়া উচিত। তাঁদের বর্ডারদের কোনো মহিলা সাহচর্যে থাকার অনুমতি আছে কি না। আমাদের মহিলা এসকর্টগুলি আপনার জন্য ২৪/৭ লভ্য। আপনি যদি আমাদের কলকাতা কল গার্লদের ভাড়া করেন, তবে আপনার সর্বোচ্চ শারীরিক তৃপ্তির নিশ্চয়তা রয়েছে।

ক্লায়েন্টদের এসকর্ট পরিসেবাগুলি সরবরাহ করার জন্য আমাদের কলকাতায় বিভিন্ন ধরনের কল গার্ল আছে। আমরা বুঝতে পারি আমাদের ক্লায়েন্টদের কী দরকার। এসকর্ট ম্যানেজার এমন একটি মেয়েকে উপস্থাপন করে, যা আমাদের ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে মেলে। আরও ভালো অভিজ্ঞতার জন্য আপনি আমাদের বাঙালি কল গার্লদের ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কলকাতায় আমাদের ভিআইপি এসকর্ট কখনও এসকর্ট পরিসেবার মানের সঙ্গে কোনো আপস করেন না। কারণ আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দৃঢ় এবং দীর্ঘ সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাস করি। একটি আকর্ষণীয় এবং আশ্চর্য প্যাকেজ বোনাস পেতে এখনই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমাদের কলকাতায় কলেজ কল গার্লস, গৃহবধূ এসকর্টস, রাশিয়ান এসকর্টের মতো বিস্তৃত পরিসরে মেয়ে এবং মহিলা এসকর্ট আছে। আমাদের সমস্ত এসকর্ট মেয়েরা সুন্দর এবং সেক্সি। তাঁরা কীভাবে উদ্বেগ বজায় রাখতে, গোপনীয়তা রক্ষা করতে এবং পরিস্থিতি পরিচালনা করতে হয় জানে। আমরা আমাদের এসকর্ট পরিসেবার জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষা এবং সাবধানতা গ্রহণ করি এবং গর্ভাবস্থা এড়াতে উচ্চমানের কন্ডোম এবং গর্ভনিরোধক বড়ি সরবরাহ করি। আপনার নিজের পছন্দমতো আমাদের এসকর্ট মেয়েদের আসল ছবি পেতে আপনি এখনই কল করতে পারেন বা হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারেন এবং আমরা আপনার জন্য সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করব। যদি আনন্দ করতে চান, তবে অবশ্যই আপনাকে কলকাতায় হাই প্রোফাইল এসকর্টের সঙ্গে দেখা করতে হবে। কলকাতায় নির্দিষ্ট কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে সমস্ত বিলাসবহুল হোটেল এবং রেস্তোঁরা রয়েছে। আপনি দক্ষিণ কলকাতা বা উত্তরে থাকতে পারেন। আনন্দের এই শহরে বেশ কয়েকটি নামী হোটেল আছে, আপনি যদি দুর্গাপুজো বা ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে কলকাতায় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তবে একা একা আসুন। একটি হোস্ট হিসাবে আমরা আপনাকে একটি বাঙালি মেয়ে উপহার দেব, তিনি আপনাকে কিছু অবিস্মরণীয় স্মৃতি সরবরাহ করবেন। সতেজ মনের জন্য আপনার অভ্যন্তরীণ বাসনা পূর্ণ করুন। আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বাঙালি কল গার্ল কাজ করছে। বাঙালি মেয়েরা মিষ্টি এবং সেক্সি পাশাপাশি। তাঁরা সুশিক্ষিত এবং তাঁদের একটি ভালো রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য ব্যক্তিত্ব আছে। তারা বাংলা হিন্দি বা ইংরেজির যে-কোনো ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে। সুতরাং, আপনি যদি ব্যবসায়ের মালিক হন এবং আপনার সংস্থার জন্য একটি মিষ্টি এবং সেক্সি মেয়ে খুঁজছেন, কেবল আমাদের এখনই কল করুন! আপনার হোটেলে স্বাধীন ও সুন্দরীর সঙ্গে উপভোগ করুন।

একবার যদি আপনি কলকাতায় বাঙালি কল গার্লস পরিসেবাগুলি বেছে নেন, তাহলে আপনি যার যার তাঁদের পছন্দ করবেন। কলকাতা তার খাবার এবং সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় মেয়েকে ভাড়া দেওয়ার আরেকটি সুবিধা হ’ল, তিনি আপনাকে কলকাতা শহরটি অনায়াসে আবিষ্কার করতে সহায়তা করবেন। আপনি প্রতি মুহূর্তে তার সাথে নিজেকে উপভোগ করবেন। একটি রেস্তোঁরা বা সুইমিং পুল বা কিছু অন্যে কিছু গুণমানের সময় ব্যয় করুন। আনন্দ সহ সুখী একজন এসকর্ট মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করুন। আপনার জীবন থেকে সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে যান এবং কিছু মুহূর্ত উপভোগ করুন। কিছু মুহূর্ত যা অবিস্মরণীয় এবং যা আপনি কখনোই ভুলে যাবেন না। সর্বদা মনে রাখবেন, আমরা সবাই অর্থের জন্য কাজ করছি। আপনার যদি টাকা না থাকে তবে আপনি কোনো কিছু উপভোগ করতে পারছেন না। কারণ অর্থ যে-কোনো কিছু কিনতে পারে! হ্যাঁ, এটা সত্য, আপনি যদি প্রতিশ্রুতি ছাড়াই কোনো সম্পর্ক উপভোগ করতে চান, তবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করুন। আমরা আপনাকে বাঙালি কল গার্লস সরবরাহ করব, যাঁরা আপনাকে নিঃশর্ত ভালোবাসা এবং যত্ন দেবে, যা আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকেও পেতে পারেন না। কলকাতায় এখন সেরা এসকর্ট এজেন্সি ভাড়া। তিনি কখনো কোনো উপহারের দাবি করবে না এবং আপনার কাছ থেকে কখনো কোনো প্রত্যাশা করবেন না। এসকর্টগুলি উচ্চ প্রশিক্ষিত এবং তারা কীভাবে আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করাবে, তা তারা জানে। তিনি আপনার পুরো অন্তঃকরণের কথা শুনবেন এবং আপনাকে আনন্দিত করবেন। আপনি যখনই যা বলেছেন সে শুনবে।”

এ তো গেল প্রতিষ্ঠানগুলির সোচ্চার ঘোষণা। এবার আসি ব্যক্তিগত (Individual) ঘোষণায়। পাঠকরা এতক্ষণে হয়তো উশখুশ করছেন যে, অনলাইনের গণিকাদের বিজ্ঞাপনগুলি ঠিক কেমন। কেমন সেই বিজ্ঞাপনের ভাষা ও বয়ান? আগ্রহী পাঠকদের জন্য কয়েকটি বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করেছি। তবে ফোন নম্বরগুলি বিকৃত করা হল সংগত কারণেই।

বিজ্ঞাপন—১

Pooja Jain Beautiful Independent Call Girl

Hello Guys, I am Pooja Jain, a beautiful air hostess. I’ve been dating several individuals on a regular basis and having endless pleasure with them. It simply makes me feel great. The dating experience that I get with the matured guys is simply astonishing. To enjoy some astonishing moments with the paid professionals, I get in touch with them. The reliable call girl services in Park Street that I provide are simply astonishing. I ensure to put a big smile on the face of my lovers and make them feel better than ever. Simply get in touch with me, if you want to get some astonishing experiences. I have maintained my curvy figure (36-26-34) by doing all types of workouts and eating the healthy diet. It simply makes me feel better than ever.

I feel like provide social services to my clients. If you think that I can serve you well, ensure to hire me once. I would be happy to assist you by doing all types of lovemaking positions in bed. I have an expertise in dealing with men having diverse physical abilities. Being a beautiful Kolkata escorts, I ensure to do all types of naughty activities to make my clients feel better than ever.

Personal Details :

Age : 22

Location : Kolkata

Fig : 34-26-32

Hair and Eye : Black

Height : 5’3”

Body Weight : 58 Kgs

Language : English, Hindi

Occupation : (Housewife)

Hobbies : Music and Dancing

বিজ্ঞাপন—২

Radhika Arora Young College Girl for Ultimate Romancena

Thank for viewing my profile. I am grateful to see you here. I am a beautiful Radhika Arora, a college girl. I always want to have endless pleasure with hot and sensational females and cherish my mood with them. It simply gives me erotic experiences to cherish my love life. I have become a call girl because I have extreme sensuous needs. I want to have endless pleasure in my life and enjoy a lavish lifestyle. It gives me immense pleasure to serve as one of the demanding Kolkata escorts. My lovers just want to have endless pleasure with me. To fulfill the extreme physical needs of individuals, I ensure to do stunning activities with them. Dating hot and sensational females is something that could be erotic for you to cherish unique memories.

I just enjoy providing my call girl services. I maintain my figure in an appropriate manner and fulfill the sensuous desires of my clients. I feel like doing a great work by putting a smile on the face of tensed and depressed men. Lovemaking experiences that I get with different individuals have always given me confidence. I feel like a strong lady with high intention to have fun with different individuals.

Personal Details :

Age : 22

Location : Kolkata

Fig : 34-26-32

Hair and Eyes : Black

Height : 5’3”

Body Weight : 58 Kgs

Language : English, Hindi

Occupation : (Housewife)

Hobbies : Music and Dancing

বিজ্ঞাপন—৩

Sonalika Hot Charming Call Girl Perfect for Delightful Experience

Being an incredibly hot adult entertainer, I offer the stunning physical services to my lovers and make them feel delightful. The hotness of my body arouses the intimacy of men and I easily satisfy my clients by giving my best efforts. I can do all types of erotic positions in bed and make individuals feel delightful. As one of the gorgeous escortss in Kolkata, I spread jovial feelings around and make my lovers feel better than ever. The extreme pleasure that you can expect of getting from me would give you the immense happiness. I ensure to do the tremendous sexual moves and make my lovers feel better than ever. Hire me once and spend some quality experiences. I can do the erotic sexual positions in an incredible way and cherish the love life of individuals.

I ensure to do every adult activity in an erotic manner and fulfill the intimate desires of people. My clients are so many and they come back to me time and again. I never disappoint anyone and try to fulfill the extreme intimacy of different companions. I have dated so many dazzling females and enjoyed great memories with them. It has boosted my confidence and filled my love life with the immense sensual satisfaction. Building a close relationship with me can satisfy your intimate desires. Hire me once, if you really want to experience the heat of the sexual relationship. I assure you to satisfy your hot feelings and cherish your mood like never before.

Personal Details :

Age : 22

Location : Kolkata

Fig : 34-26-32

Hair and Eyes : Black

Height : 5’3”

Body Weight : 58 Kgs

Language : English, Hindi

Occupation : (Model)

Hobbies : Music and Dancing

বিজ্ঞাপন—৩

NO BROKER, IT’S MY PERSONAL SERVICE. PAID SEX. ARPITA SEN HERE..–21

Here is arpita frm your service.. I am 21 years. If you want girlfriend type experience in bed then contact me. No anal sex. People from kolkata only who want SEX service. No any online advance payment required for booking. Payment by cash only in hand after meet in room face to face.

**Do not contact me fake person for time pass or don’t tell me about sexual talking. I don’t do phone sex. I do sex in bed only..so why r u waiting?? Hurry up! Whatsapp me.. 824059**18

বিজ্ঞাপন—৪

I AM MS BHATTACHARIYA 22 YEAR COLLEGE GIRL–22

I Am Student Girl Study Purpose I Am In 1Bhk Flat Located ~ Baguihati Teghoria. My Personal Independent Relation 3 Hour 2 Shot–7000 Rs. If You Want To Spend A Good Time Then You Must Contact. I Am Available Today. Call And Final Your Time. Mob–987430**95 Shreya Bhattachariya.

বিজ্ঞাপন—৫

2 SHOT GET 3 HOUR TIME DURATION / SHREYA HERE–22

I m College Girl My Personal Service’ Single Liveing In Independent 1Bhk Flat’ LOCATED : VIP Road Baguohati, Teghoria. I CHARGE: 7000 RS FOR 3 HOUR 1 SHOT ALLOWED. If You Looking For Unprofessional Homely College Student Girl Then. You Must Contact : Mob–987430**95

বিজ্ঞাপন—৬

BENGALI GIRL I AM SHREYA–22

Shreya Here I Am College Girl My Personal Independent Relation. I Am Single Liveing In 2Bhk Flat. I Am Single Liveing Here. If You Want To Spend A Good Time Then You Must Contact : Shreya–987430**95. Call Me Directly.

বিজ্ঞাপন—৭

I DO PROVIDE SELF SERVICE SECRATELY–22

I Do Provide Personal Service I Am Single Liveing In Kolkata 2Bhk Rented Residencial

Flat.–Welcome In My Flat ~ I Charge Following Amount 1 Shot 1 Hour Duration–4000 Rs., 2 shot 3 Hour Duration–7000 Rs., One Night Stand 10,000 Rs. I Live In Baguihati, Teghoria. Come Direct In My Flat. Mob–987430**95. No Extra Charge / No Hidden Coast.

বিজ্ঞাপন—৮

SHREYA HERE BENGALI GIRL PERSONAL SERVICE–22

Not An Escort Not A Massage Centre, Personal Independent Service. I Am Shreya Live Single In 1Bhk Flat Location—Baguihati. I Am College Student. Provide Personal Service. No Broker. No Middlemen. No Agent. No Third Person. Contact Me : 987430**95. I Charge 7000 Rs For 2 Shot, 3 Hour Duration. Fixed Charge (Bargainer Are Stay Away).

বিজ্ঞাপন—৯

HI AM MOU–25

Hi I’m mou housewife. 26 years old. I give personal service at my place for satisfaction. no broker—direct contact. Call/WhatsApp no _704437**27. Dumdum metro.

1 hour—1 sot 2000

2 hour—2 sot 3000

2 hour–3 sot 4500

বিজ্ঞাপন–১০

MY HUSBAND IS ABROAD

I am Rupa, 29 years Independent Housewife. My husband is abroad. I stay here in south Kolkata alone. I am 5’4”, extremely fair, very good looking chubby and very sportive. Looking for som extra income and ready to share a great companionship. I am expecting a short time. Full night just call 799830**84.

বিজ্ঞাপন—১১

WHO CAN SATISFIED ME

My fugure is so good, but my husband can’t satisfied me. I need good looking man who can satisfied me. My real picture here. So, plz contact 86974**76. Only 1600 per shot.

বিজ্ঞাপন–১২

MY HUSBAND CAN’T SATISFIED ME

Hi, my self Shima Sen, 25 years old, I am married house wife. My figure is so good. But my husband can’t satisfied me. I need good looking man who can satisfied me. So please contact 799877**51. JODI AMAR HUSBAND PHONE RECEIVE KORE BOLBE AMAR FRIEND.

না, আর তালিকা লম্বা করব না। এই কয়েকটা নমুনাতেই পরিস্থিতির চিত্রটা বুঝে নিতে অসুবিধা হবে না। পাঠকদের। বিজ্ঞাপনগুলি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, তা হল–মানুষ ক্রমশ সাবালক হয়ে উঠছে। ঘোমটার নীচে খেমটা নাচার দিন শেষ। খেমটাই এখন ঘোমটাকে পিষ্ট করে নিচ্ছে। ভাবের ঘরে চুরি করার দিন আর যৌনকর্মীরা চায় না। সেক্স এখন চড়া দামে বিক্রি হয়। তাই বাজারে পণ্যের অভাব নেই। বিজ্ঞাপিত হয় বিজ্ঞাপনের ভাষায়।

(৮) মধুচক্র : হাজার হাজার রিসর্ট, আবাসিক হোটেল, লজ, ফাঁকা ফ্ল্যাট, নির্জন বাড়ি সর্বত্র এখন যৌনমস্তির ক্ষেত্ৰভূমি। গোপনে চলছে মধুচক্র। আধ-আধটা প্রকাশ্যে এসে পড়লেও একটা বড়ো অংশই আড়ালে থেকে যায়। ধনী ক্লায়েন্টদের খুব পছন্দের জায়গা। কারণ ভালো বিছানা, সাফসুতরো পরিবেশ, অ্যাচাট বাথরুম, ঘরোয়া পরিবেশ, সহজগম্য, গায়ে চট করে কাদা লাগে না ইত্যাদি। অপরদিকে মেয়েদের গায়ে ‘বেশ্যা’ তকমা লাগে না এবং বেশ্যালয়ের গন্ধও নেই। তদুপরি গুপছুপ কাজটা সেরে নেওয়া যায়। মধুচক্রে দু-রকমভাবে চালানো হয়। এক, কোনো মালিক বা মালকিন মেয়ে মজুত রাখে। ক্লায়েন্ট মেয়ে পছন্দ করে মালিক বা মালকিনের নিজস্ব ঘর বা রিসর্টে যৌনমিলনের সাহায্য করে। দুই, মালিক বা মালকিনের ঘর বা ফ্ল্যাট কয়েক ঘণ্টার বাইরে কোনো কাপল এলে তাঁদের নির্দিষ্ট ভাড়ায় অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে সাহায্য করে। এই কাপলরা সাধারণত সভ্রান্ত পরিবার থেকে আসে। এই ধরনের কাজ আজকাল গণিকাপল্লিগুলিতেও হচ্ছে। গণিকাপল্লিতে হলে অবশ্য মধুচক্র বলা হয় না। তবে এখানে সভ্রান্ত পরিবারের কাপলরা ঘেঁষে না।

কারা চালায় মধুচক্রের আসর? বরং প্রশ্ন করুন কারা থাকেন না? সমাজের উঁচুতলার মহিলা ও পুরুষরা এই আসর চালায়। কে নেই? রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী থেকে শিক্ষকের স্ত্রী, আইনজীবীর স্ত্রী কর্পোরেট কর্মীর স্ত্রী, ডাকসাইটের অভিনেত্রী থেকে বড়ো ব্যবসায়ী—সবাই। খুব গোপনে কাজ সম্পন্ন হলেও মাঝেমধ্যেই পুলিশের জালে ফেঁসে যায় এঁরা। ফেঁসে গেলেও লেনদেনের মাধ্যমে দু-দিন পর আবার রমরম করে কাজ শুরু হয়ে যায়। কয়েকটা ঘটনার উল্লেখ করি।

ঘটনা–১

তারিখ : ১৫ আগস্ট, ২০১৫

রোজগার বাড়াতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে মধুচক্র চালাচ্ছিলেন এক তৃণমূল নেত্রী। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে গ্রেফতার করে ওই নেত্রীকে। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর সঙ্গী এক যুবককেও। মালদহের ইংরেজবাজারের সিঙ্গাতলা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ললিতা মণ্ডল নামে এক মহিলা মধুচক্রটি চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। গাজোলের ললিতা ওই ব্লকেরই তৃণমূল নেত্রী। ইংরেজবাজার থানার অদূরেই সিঙ্গাতলা। সেখানেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি দিব্যি ব্যাবসা ফেঁদেছিলেন বলে অভিযোগ। সিঙ্গাতলার ওই বাড়িতে মালিক থাকতেন না। তিনি থাকতেন অন্যত্র। অভিযোগ, সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছিলেন ললিতা। মোটা মাইনের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হত মহিলাদের। পরে নামানো হত দেহব্যাবসায়। বেশ কিছু দিন ধরে বাড়িটিতে অচেনা যুবক-যুবতীদের আনাগোনা দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ গিয়ে দুই তরুণী ও এক যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। ললিতা নিজেও সেই সময় বাড়িতে ছিলেন। সবাইকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় ললিতা ও এক যুবককে। ঘটনায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা। তৃণমূল নেতা সুশীল রায় বলেন, ললিতাকে মহিলা সংগঠনের নেত্রী বলেই জানি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রথমে ললিতা গাজোলে একটি পার্লার চালাতেন। পরে মোটা টাকা রোজগারের লোভে মধুচক্রের ব্যাবসা ফাঁদেন। ইংরেজবাজারের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে পার্লার। এগুলির সিংহভাগেই অনৈতিক কাজ হয় বলে অভিযোগ। বেকার যুবক-যুবতীদের মোটা মাইনের চাকরির টোপ দিয়ে নিয়ে আসা হয় পার্লারে। পরে মগজ ধোলাই করে নামিয়ে দেওয়া হয় দেহব্যাবসায়। আর একবার ব্যাবসায় নেমে যাওয়ার পর আর ফিরতে পারেন না অধিকাংশ তরুণ-তরুণী। কারণ কম খাটুনিতে প্রচুর পয়সা রোজগার করা যায় এই পেশায়। তাতে বজায় থাকে ঠাঁট-বাট। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ সক্রিয় না হওয়াতেই এসব ‘অনৈতিক কারবার চলছে রমরমিয়ে। জেলার প্রায় সর্বত্রই পার্লারের আড়ালে মধুচক্রের ব্যাবসা চলছে রমরমিয়ে। পুলিশ মাঝেমধ্যে হানাও দেয়। ধরাও পরে। তারপরেও দিব্যি চলতে থাকে মধুচক্র। মোটা টাকার বিনিময়ে বিকিয়ে যায় নারী শরীর। বিকায় পুলিশ-প্রশাসনও।

ঘটনা–২

তারিখ : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯

নৈহাটিতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের একটি হোটেলে মধুচক্রের আসরে হানা দিয়ে সাত যুবককে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নৈহাটি থানার পুলিশ রাজেন্দ্রপুরের কাছে ওই হোটেলে হানা দেয়। হাতেনাতে ধরা হয় সাত জনকে। জনা কুড়ি যুবতীকেও ওই হোটেল থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। নৈহাটি থানার পুলিশের কাছে গত কয়েকদিন ধরে খবর আসছিল কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে থাকা ওই হোটেলে অবাধে চলছে মধুচক্র।

ঘটনা–৩

তারিখ : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯

স্পা ও কলসেন্টারের আড়ালে মধুচক্র। চার জায়গায় যৌথ অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের এসটিএফ, গোয়েন্দা বিভাগ ও গুদমন শাখা। শহরের ৪ জায়গা থেকে ধৃত ৬৫। শহরে মধুচক্রের হদিশ। কোথাও স্পায়ের আড়ালে কোথাও বা কলসেন্টারের আড়ালে চলছিল মধুচক্র। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ, গোয়েন্দা বিভাগ ও গুন্ডাদমন শাখা অভিযান চালায় গড়িয়াহাটের রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, ভবানীপুর, নিউ মার্কেট ও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে। গড়িয়াহাটের রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের এই বাড়ির তিনতলায় আগেও মধুচক্রের হদিশ মিলেছিল। এই বাড়িরই একতলায় ঘর ভাড়া নিয়ে স্পায়ের আড়লে মধুচক্র চালাত দেবব্রত বৈদ্য। ভবানীপুরের শ্রীপল্লি এলাকায় সুন্দর সাজানো গোছানো একটি স্পা সেন্টার। সাইনবোর্ডে ‘ফ্যামিলি স্যালোঁ’ লেখা থাকলেও আদপে এখানে মধুচক্রের আসর বসত। পুলিশি অভিযানে স্পায়ের দুই কর্মীসহ ৯ যুবককে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে দুজন ভিনরাজ্যের যুবকও ছিল। আটক করা হয় ৯ মহিলাকে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মোবাইল ও ৩টি বাইক। নিউমার্কেট ও প্রিন্স আনোয়ার শা রোডেও অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা। হয় ৪৪ জনকে।

ঘটনা–৪

তারিখ : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বেসরকারি একটি লজে মধুচক্রের আসরে হানা দিয়ে ৭ মহিলা ও ১৩ পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। ভারতের ছত্তিশগড়ের মহাসমুন্ডের তোগভে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই বেসরকারি লজে দীর্ঘদিন ধরে এই মধুচক্র নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করার পর পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ জানান, ওই বেসরকারি লজ থেকে পুরুষ ও মহিলাসহ মোট ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগেও মধুচক্র নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় আসে ছত্তিশগড়ের নাম। অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ছত্তিশগড়ের নগরজীবনে লাগাতার চলছে লড়াই। কখন শরীর বিক্রি করে, অথবা কখনও নাবালিকাকে হোটেলে পাঠিয়ে অর্থ উপার্জনের কাজ চলছে। জোর করে নাবালিকাদের আটকে রেখে প্রতি রাতে হোটেলে মধুচক্রের আসর বসানোর অভিযোগও আছে।

ঘটনা–৫

তারিখ : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধাননগরের একটি হোটেল। সেখানেই গোপনে চলছিল মধুচক্রের আসর। দীর্ঘদিন ধরেই ওই হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন বয়েসি ছেলে-মেয়েরা নিজেদের যৌন-চাহিদা মেটাচ্ছিল। জানা গিয়েছে, ওই বার-কাম-রেস্টুরেন্টের উপর তলায় অবৈধভাবে কয়েকটি ঘর তৈরি করেই এই কাজ চলছিল। সেখানে ঘণ্টা হিসেবে রুম ভাড়া দেওয়া হত। গোপন সূত্রে খবর পেয়েই সেখানে হানা দেয় পুলিশ। হোটেলের বিভিন্ন ঘর থেকে হাতে নাতে ধরা হয় পাঁচ জোড়া স্কুল পড়য়াকে। এদের মধ্যে অনেকেই নাবালিকা বলে জানা গিয়েছে। প্রত্যেককেই আটক করে থানার নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশি অভিযানের খবর পেয়েই ওই হোটেলের সামনে জড়ো হয় এলাকাবাসী। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা, তাঁরা ওই স্কুল পড়ুয়াদের দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এলাকাবাসীর দাবি, বহুদিন ধরেই এই হোটেলে অল্প বয়সি ছেলেমেয়েদের যাতায়াত চোখে পড়ছে। অথচ পুলিশ এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না-নেওয়ার ফলেই এখানে দেহ ব্যাবসার রমরমা বেড়ে গিয়েছিল।

ঘটনা–৫

তারিখ : ২৮ জানুয়ারি, ২০২০

খবরের কাগজে ‘বন্ধুত্ব করুন’-এর বিজ্ঞাপন। আর তার আড়ালে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ। বারাসতে গ্রেফতার এক সাইবার কাফের মালিক প্রভাস হালদার। মধুচক্র চালানোর পাশাপাশি বারাসত ও নিউটাউন থানায় কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার মামলা রয়েছে ধৃত প্রভাস হালদারের বিরুদ্ধে। কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল প্রভাস হালদারের বিরুদ্ধে। সেই তদন্তে নেমেই এই কীর্তির পর্দাফাঁস পুলিশের। কয়েক সপ্তাহ আগে মধ্যমগ্রামের একটি বাড়িতে ভুয়ো অফিসের সন্ধান পায় পুলিশ। সেখান থেকেই অপারেশন চালাত প্রভাস হালদার। ‘পত্রমিতালি’ নাম দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয় খবরের কাগজে। বন্ধুত্ব করুন’ সংস্থার আড়ালে রমরমিয়ে চলত মধুচক্র। এরপর বিভিন্ন অন্তরঙ্গ ভিডিও জোগাড় করে ক্রেতাদের ক্রমাগত ব্ল্যাকমেলিং করা হত। তাদের কাছ থেকে মোটা টাকার চেক নিয়ে রাখা হত বিভিন্ন বেনামি অ্যাকাউন্টে। সেই টাকাতেই মাইনে দেওয়া হত অফিসের কর্মচারীদের। বেনামি অ্যাকাউন্টগুলি বেশিরভাগই বিভিন্ন দুঃস্থ পড়ুয়াদের নামে। পরে সেখান থেকে চেক ভাঙিয়ে ক্যাশ তোলা হত।

কল্যাণী থানায় প্রতারিত এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামে সিআইডি। সন্ধান পায় মধ্যমগ্রামের ভুয়ো অফিসের। জানা গিয়েছে, বাড়ির মালিককে মোটা ভাড়ার লোভ দেখিয়ে ভাড়া নেয় প্রধান অভিযুক্ত ঘনশ্যাম হালদার। তল্লাশিতে নেমে সেই বাড়ি থেকে ১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় নাম উঠে আসে ঘনশ্যামের। ফোনের মাধ্যমে আলাপ ও পরে কাজ না হলে হুমকি। এভাবেই অপারেশন চালাত অভিযুক্ত। বারাসত থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রাতে তল্লাশি চালায় সিআইডি। বারাসতের অশ্বিনীপল্লি থেকে অভিযুক্তের দাদা প্রভাস হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ঘটনা–৬

তারিখ : ২ জানুয়ারি, ২০১৯

শহরে দেহব্যাবসা এখন আর নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। অভিজাত এলাকাতেও রমরমিয়ে মধুচক্রের কারবার চলছে বলে অভিযোগ। প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে অসৎ পথে পা বাড়াচ্ছেন তরুণীরা। কাজে লাগানো হচ্ছে নাবালিকাদেরও। সেক্টর টু-এর গ্রিন শেল্টার গেস্ট হাউসে মধুচক্রের সন্ধান পেলেন সিআইডি আধিকারিকরা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই গেস্ট হাউসে অভিযান চালান গোয়েন্দারা। হাতেনাতে ধরা পড়ে যান গেস্ট হাউসের ম্যানেজার, এক মহিলা নারী পাচারকারীসহ ছয় জন। উদ্ধার করা হয়েছে দুজন নাবালিকাসহ ছয় জনকে। গেস্ট হাউসের ম্যানেজার ও এক মহিলাসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। দিন কয়েক আগেই কলকাতা ও বাগুইআটির পাঁচটি ম্যাসাজ পার্লারে মধুচক্রের পর্দাফাঁস করেন লালবাজারে গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে ৫৪ জন। ধৃতদের মধ্যে ৩৬ জন মহিলা। তাদের কেউ যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করত, কেউ আবার ছিল মধুচক্র বা ম্যাসাজ পার্লারের মালিক বা মালকিন। বিভিন্ন বয়সের এইসব যৌনকর্মীরা মূলত শহর ও শহরতলির বাসিন্দা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সল্টেলেকের গ্রিন শেল্টার গেস্ট হাউসের ম্যানেজার সন্দীপ মিশ্র। তাঁর বাড়ি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে। অপর দুই অভিযুক্ত রাজু দাস ও তুহিন বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ার বাসিন্দা। বাকি তিনজন উত্তর চব্বিশ পরগনার দমদম, বারাসত ও পূর্ব বর্ধমানের।

ঘটনা–৭

তারিখ : ১০ জানুয়ারি, ২০২০

মধুচক্র (Sex Racket) চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল বিগ বস ১৩-র প্রাক্তন প্রতিযোগী আরহান খানের বান্ধবী অমৃতা ধানোয়াকে। গোরেগাঁওয়ের একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয় অমৃতাকে। গোরেগাঁওয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে পার্টি চলাকালীন গ্রেফতার করা হয় আরহান খানের প্রাক্তন বান্ধবী অমৃতা ধানোয়াকে। মধুচক্র চালানোর অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। অমৃতার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অমৃতার পাশাপাশি রিচা সিং নামে আরও এক অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। রূপোলি জগতে খাতা খোলার চেষ্টায় ছিলেন রিচা সিং নামে ওই অভিনেত্রী। আচমকাই গোরেগাঁওয়ের ওই পাঁচতারা হোটেল থেকে অমৃতার সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। গোরেগাঁওয়ের ওই পাঁচতারা হোটেলে পুলিসের হানাদারি চলতে পারে। এই খবর শোনার পর সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন অমৃতা। কিন্তু সফল হননি। চম্পট দেওয়ার আগেই ওই পাঁচতারা হোটেলের পার্টি থেকে গ্রেফতার করা হয় আরহান খানের প্রাক্তন বান্ধবীকে।

ঘটনা–৮

তারিখ : ১৯ অক্টোবর, ২০১৯

দিনে দুপুর জনবহুল এলাকায় মধুচক্র চালানোর অভিযোগ এক গৃহবধুর বিরুদ্ধে। প্রতিবেশীরা হাতেনাতে মধুচক্র ধরে তুলে দিল পুলিশের হাতে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের সাহেব কাছারি এলাকায়। জানা গেছে সাহেব কাছারি এলাকায় বাসিন্দা পূরবী সরকারের স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এর পর থেকেই তিনি দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে বাড়িতে মধুচক্রের আসর বসাতেন। এর আগেও একই অভিযোগে তাঁদের জেলও হয় বলে জানা গেছে। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই তাঁরা আবার বালুরঘাট সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার মহিলাদের নিয়ে মধুচক্রের আসর শুরু করেন। প্রতিবেশীরা বেশ কিছু দিন ওই বাড়িতে অপরিচিত নারী পুরুষের আনাগোনা লক্ষ করছিলেন এবং এই মধুচক্রের আসর হাতে নাতে ধরার লক্ষ্যে ছিলেন। আজ আবার কিছু অপরিচিত নারী পুরুষকে ওই বাড়িতে যেতে দেখলে তাঁরা হাতেনাতে তিনজন মহিলা ও দুই পুরুষকে ধরে ফেলে। এছাড়াও একজন পুরুষ পালিয়ে গেছে বলেও জানা গেছে। এরপর এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।

ঘটনা–৯

তারিখ : ৮ আগস্ট, ২০১৭

অভিযোগ আগেই ছিল। এবার একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ল। খোদ সিনেমা হলের ভিতরে দেহব্যাবসা চালানোর অভিযোগে ওই হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালালেন স্থানীয় মানুষজন। ভরদুপুরে হঠাৎ ওই সিনেমা হলের দোতলার ঘর থেকে এক মহিলাকণ্ঠের আর্ত চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে যান। সেখানে গিয়ে ওই যুবতীর কাছ থেকেই তাঁরা মধুচক্রের কথা জানতে পারেন। ঘটনাস্থল থেকেই দুই যুবক ও এক যুবতীকে হাতেনাতে ধরে বেধড়ক মারধর করেন তাঁরা। এর পরই উত্তেজিত স্থানীয় মানুষ হামলা চালান ওই সিনেমা হলে। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিস ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গুসকরা ২ নম্বর ওয়ার্ডের নদীপটি এলাকায় ওই হলে দিনের পর দিন সিনেমা দেখানোর নামে রমরমিয়ে চলছে মধুচক্র। সিনেমা হলটির ভিতরে বেশ কয়েকটি ঘর আছে। সেগুলিকে দেহব্যাবসায় কাজে লাগিয়ে ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। ফলে এই সিনেমা হলে সকাল থেকেই গুসকরা শহর ও আশপাশের গ্রামগঞ্জের মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। সিনেমা হলে ছবি দেখানোর নামে মধুচক্রের অভিযোগ নিয়ে দিনের পর দিন বিভিন্ন মহলে জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিন দুপুর নাগাদ সিনেমা হলের ভিতরে এক যুবক এক যুবতীকে মারধর করলে সেই যুবতী আর্ত চিৎকার করে ছুটতে ছুটতে বাইরের দিকে আসছিল। সেই সময় স্থানীয় মানুষ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সে দেহব্যাবসায় কথা জানায়। এর পরই সেখান থেকে দুই যুবককে টেনে বার করে মারধর দিয়ে স্থানীয়রা চড়াও হন সিনেমা হলে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এই সিনেমা হলে অনৈতিক কাজকারবারের পিছনে অদৃশ্য হাত রয়েছে। তাই হলের ভিতরে ঘর ভাড়া দিয়ে চলছে মধুচক্র। এতে এলাকার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাঁরা লজ্জায় তাঁদের পাড়ার নাম কাউকে বলতে পারেন না। বিষয়টি তাঁরা পুলিস থেকে শুরু করে স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকেও বারবার জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ শেষ শো ভাঙার পরেও সারা রাত অনেককেই এই সিনেমা হল থেকে বেরতে দেখা যায়।

ঘটনা–১০

তারিখ : ৪ জুন, ২০১৮

বিভিন্ন রাজ্যের মেয়েদের নিয়ে এসে চেন্নাইতে মধুচক্র চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হল জনপ্রিয় তামিল অভিনেত্রী সঙ্গীতা বালানকে। অভিযোগ, সিনেমা বা টিভিতে সুযোগ করে দেওয়ার টোপ দিয়ে অভিনয়কে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তরুণীদের চেন্নাই ডেকে আনত সঙ্গীতা ও তাঁর সহযোগী সতীশ। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে চেন্নাই হাজির হওয়া সেসব তরুণীদের অবশেষে স্থান হত সঙ্গীতার রমরমা মধুচক্রে। তাঁদের গণিকাবৃত্তি করতে বাধ্য করা হত বলে অভিযোগ। পুলিশ সঙ্গীতা বালানকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি তার সাগরেদ সতীশকেও গ্রেফতার করেছে। মধুচক্র থেকে তরুণীদের উদ্ধার করে তাঁদের চিকিৎসার জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তামিল ছবি ‘কারুঞ্জু রোজা’-য় অভিনয় দিয়ে তামিল চলচ্চিত্র জগতে পা দেয় সঙ্গীতা বালান। তারপরও অনেক জনপ্রিয় সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছে সে।

স্কুল-কলেজ থেকে গৃহবধূ–অবাধ যৌনতার জন্য এবং মোটা অর্থ রোজগারের মধুচক্রই বেশি পছন্দ। গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকে এখানে। এখানকার ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়পক্ষই মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার থেকেই আসে। এখানকার শরীর-বিক্রেতারা আসেন মূলত অতৃপ্ত যৌনবাসনা মেটাতে। কেউ আসে শুধুই যৌনবাসনা মেটাতে, কেউ আসে অধিক অর্থ-লালসায়। শুধুই যৌনবাসনা মেটাতে আসে, তাঁরা পছন্দের পুরুষ বা নারীর সঙ্গে বা অনেকের সঙ্গে গ্রুপ সেক্স করে। অনেকে আসেন বিবাহ-বহির্ভূত বা পরকীয় যৌন সম্পর্ক করতে। এছাড়া এক শ্রেণির মানুষ আসেন, যাঁরা নিজেদের স্বামী ও স্ত্রী বদল (Swap) করে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এইসব মধুচক্রে তাঁরাই আসে যাঁদের জীবনসঙ্গিনীর বা সঙ্গীদের সঙ্গে শরীরী সম্পর্ক করার আড়াল বা নিরাপদ জায়গা নেই। এঁরা অবশ্য নিজেদের অর্থ লেনদেন করে শরীরের বিনিময়ে। শুধু হোটেল বা রিসর্টের ভাড়া মিটিয়ে দিলেই হল। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ না-করলে বা খুনের মতো কোনো ঘটনা না-ঘটলে নির্বিঘ্নেই কাজ চলে। যেহেতু মধুচক্রের স্পট, স্পটের কর্তা ও স্পটের ব্যক্তিরা উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং হোমড়াচোমড়া দুনিয়ার হয়, তাই কেউ সাহস করে কাঠি দিতে যায় না। মাসোহারা পায় বলে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। মাসোহারা বন্ধ হলে হঠাৎ করে জেগে উঠলেও বকেয়া মিটিয়ে দিলেই সব সমস্যার সমাধান। তাই কোথায় কী হয় দুনিয়ার সবাই জানলেও শুধু পুলিশই কিছু জানে না।

(৯) যৌন পর্যটন বা সেক্স ট্যুরিজম : বিশ্বায়নের ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে যৌন-বাণিজ্যের আরও নানা রূপ, নানা চরিত্রে, নানা চেহারায় প্রসার ঘটছে। তার বড়ো ক্ষেত্র হল সেক্স ট্যুরিজম। যৌন ক্রিয়াকলাপের জন্য বিশেষত গণিকাদের সঙ্গে যৌন পর্যটন হল বিভিন্ন পাবলিক প্লেস বা লোকালয়ে ভ্রমণ। হ্যাঁ, পর্যটন খাতের অভ্যন্তরে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাণিজ্যিক যৌন-সম্পর্ক কার্যকর করাই হল প্রাথমিক উদ্দেশ্য। যৌন পর্যটন হল বহু বিলিয়ন ডলারের শিল্প। এয়ারলাইনস, ট্যাক্সি, রেস্টুরেন্ট, হোটেলে সুবিধা প্রদান করে এই যৌন পর্যটন। এই শিল্প বিদেশে অর্থনীতিকে বৃদ্ধি করে। যৌন পর্যটন শুধু সেক্সের জন্য অর্থ নয়। যৌন পর্যটনের মূল কারণ হল গণিকা খোঁজা আর গণিকার জন্য জীবিকা তৈরি করাই মূল লক্ষ্য। যৌন পর্যটন হল আইনি বহিরাগত। নেভেদা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাস্তব সম্মত নয়। ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ড আইনের আওতায় গণিকাবৃত্তি যুক্ত হয়েছে। এখানে সংযুক্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, কলোমরিয়া, ডেনমার্ক, ইকিয়েড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ডস।

প্রতিদিনই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অপরিণত ও পরিণত বয়সি নারী পাচার হয়ে আন্তর্জাতিক এইসব যৌন-বাণিজ্যের কবলে পড়ছে। পাচারকারী ও যৌন-বাণিজ্যের সবচেয়ে বড়ো বড়ো মাথাওয়ালা হর্তাকর্তা শ্রেণির ব্যক্তিদের নেটওয়ার্ক এতটাই বিস্তৃত ও শক্তিশালী যে, তাঁদের শক্তিমত্তার সঙ্গে পেরে ওঠার চেষ্টা বেশিরভাগ রাষ্ট্রগুলি করে না। না-করার বড় কারণ হল রাজস্ব। অনেক রাষ্ট্রের মোটা অঙ্কের আয়ই নির্ভর করে এই ধরনের পেশার উপর। বিশেষ করে, সেক্স ট্যুরিজম বা যৌন পর্যটন যেসব রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস, সেসব রাষ্ট্র যৌন পর্যটন ব্যাপারটা প্রশ্রয়ই দেয়।

জাতি সঙ্ঘের বিশেষ এজেন্সি বিশ্ব পর্যটন সংস্থা’-র মতে, পর্যটন ট্রিপ কর্তৃক আয়োজিত অথবা ট্রিপের বাইরের কারও আয়োজনে পর্যটন ট্রিপের কাঠামো ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গন্তব্যস্থানের বসবাস স্থলে পর্যটক কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে যৌন-সম্পর্ক স্থাপনকেই যৌন পর্যটন বলে। জাতি সঙ্ঘ যৌন পর্যটন সমর্থন করে না এই কারণে যে, এর মাধ্যমে পর্যটকের নিজের দেশ ও গন্তব্য দেশ উভয়েই স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে পর্যটকের নিজের দেশের চেয়ে গন্তব্যদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা এবং পর্যটকের নিজের সঙ্গে ওখানকার মানুষের লৈঙ্গিক-বায়সিক অবস্থায় বৈচিত্র্যই এর জন্য দায়ী। যৌন পর্যটকদের জন্য কখনো-কখনো গন্তব্যদেশে স্বল্পমূল্যে যৌন-পরিসেবা পাওয়ার আকর্ষণ থাকে। এমনকি সেসব দেশের থাকে যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আইনগত শৈথিল্য এবং শিশু যৌনকর্মী পাওয়ার আকর্ষণও।

যৌন পর্যটনের জন্য পর্যটকদের প্রথম পছন্দের দেশগুলি হল থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ডমিনিকান রিপাবলিক, কোস্টারিকা, কিউবা, জার্মানি, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস এবং কম্বোডিয়া। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর রাশিয়া, হাঙ্গেরি, ইউক্রেন, পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিকের নামও ওই তালিকায় সংযুক্ত এবং যৌন-পরিসেবা দিয়ে থাকে। ওসব দেশের মোট যৌনকর্মীর সিংহভাগই স্থানীয় পুরুষকুলের চাহিদা মেটায়। নির্দিষ্ট কোনো দেশের কেবল এক বা একাধিক নির্দিষ্ট স্থানই কেবল যৌন পর্যটকদের গন্তব্য হয়। যেমন নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম; থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, পাট্টায়া ও পুকেট; আমেরিকায় নেভাদা ইত্যাদি। ভারতেও বিদেশি পর্যটকরা যৌন পর্যটন উপভোগ করেন। নির্দিষ্ট সাইটে কল করলেই যৌনকর্মী চলে আসবে সংশ্লিষ্ট হোটেলে। এইসব যৌনকর্মীরা হোটেলে বসবাসকারী পর্যটক ছাড়া শরীরসঙ্গ দেন না। যদিও এটা আইনসম্মত নয়।

এছাড়াও অন্যান্য কিছু শহরে স্থানীয় পর্যটকরা বিশেষ আইনগত অনুমোদন নিয়ে যৌন পর্যটনে বেরয়। এসব পর্যটকদের অধিকাংশেরই তীব্র ঝোঁক থাকে শিশু যৌনকর্মীর প্রতি, যদিও অধিকাংশ দেশেই শিশুদের যৌনকর্মে ব্যবহার আইনসম্মত নয়, দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যৌন পর্যটন ও শিশু যৌন পর্যটনকে আলাদা করে দেখে। সংস্থার মতে, যেসব পর্যটক শিশুদেরকে যৌনকাজে ব্যবহার করে তাঁরা ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড’ এবং ‘অপশনাল প্রটোকল অন দ্য সেল দ্য চিলড্রেন’, এবং চাইল্ড প্রস্টটিউশন অ্যান্ড চাইল্ড পর্নোগ্রাফি আইন লঙ্ঘন করে। অনেক দেশই ‘ওরস্ট ফর্ম অব চাইল্ড লেবর কনভেনশন, ১৯৯৯’-এ স্বাক্ষর করেছে এবং নিজেদের দেশে সেটা বাস্তবায়ন করেছে। সিঙ্গাপুরের এরকম কোনো আইন নেই বলে তাঁরা ইতোমধ্যে অনেক নিন্দা করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বাটামও এইরকম একটি গন্তব্য (Destination), যেখানে প্রচুর কমবয়সি শিশুকে যৌনকাজে ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায়।

‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক’-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ১৯৯৮ ইস্যুতে মুদ্রিত একটি প্রবন্ধে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডের যৌন-বাণিজ্যে কী পরিমাণে অর্থাগম ঘটে তার কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। ওই প্রবন্ধে স্বীকার করা হয় যে, সেক্স ট্রিপ বা যৌনখাতকে একটি অর্থনৈতিক খাত হিসাবে অফিসিয়াল পরিসংখ্যান উন্নয়ন পরিকল্পনা বা সরকারের বাজেটে এখনও স্বীকৃত নয়। কিন্তু এ খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন ঘটে। বলা হয়, যৌনখাতে এই চারটি দেশে প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ নারী যুক্ত আছেন, তা পেশাটি অনৈতিক ও গোপন হওয়ার কারণে বলা একেবারেই মুশকিল। তবে ধরে নেওয়া যায় দেশগুলির মোট নারী জনগোষ্ঠীর ০.২৫ থেকে ১.৫ শতাংশ এ পেশায় যুক্ত। ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে তৈরি একটি হিসাব অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় যৌনকর্মীর সংখ্যা দেখানো হয় ১,৪০,০০০ থেকে ২,৩০,০০০ জন। মালয়েশিয়ায় এই সংখ্যা ৪৩,০০০ থেকে ১,৪২,০০০ জন। তবে আইএলও-র মতে সংখ্যাটা আরও কয়েক গুণ বেশি। ফিলিপাইনে যৌনকর্মীর সংখ্যা জানানো হয় ১,০০,০০০ থেকে ৬,০০,০০০ জন। তবে ৫,০০,০০০ হওয়ার ব্যাপারে অনেকেই একমত বলে জানানো হয়েছে। থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৭ সালে হিসাব করা জরিপ অনুযায়ী যৌনকর্মীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬৫,০০০ জন। কিন্তু আন-অফিসিয়াল সূত্র দাবি করে এই সংখ্যা হবে ২,০০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ জন। এর বাইরে থাই এবং ফিলিপিনো আরও ১০,০০০ নারী, শিশু এবং হিজড়া যৌনকর্মী বিদেশে কর্মরত আছে।

বলা হয়, যৌনতাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলি, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান এবং যৌন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মালিক, ব্যবস্থাপক, দালাল, সহযোগী, ক্যাশিয়ার, নিরাপত্তা রক্ষী এবং অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারী ইত্যাদি মিলে আরও কয়েক মিলিয়ন শ্রমজীবী মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ধরনের পেশার মাধ্যমে জীবনধারণ করে। প্রতিবেদনটি বলছে, এই চারটি দেশের জিডিপি-র ২ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশই আসে সেক্সস্ট্রিপ থেকে। সরকারি কর্তৃপক্ষ বৈধ ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণে করও আদায় করে থাকে। থাইল্যান্ডের শহরে গণিকাবৃত্তিতে নিবিষ্ট গ্রামীণ নারীরা বছরে তাঁদের উপার্জন থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গ্রামে তাঁদের পরিবারের কাছে পাঠান। ১৯৯৩-১৯৯৪ সময়কালে দেশগুলি গণিকাবৃত্তি থেকে বছরে ২২.৫ বিলিয়ন থেকে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উপার্জন করে। ইউনিসেফের (UNICEF) তত্ত্বাবধানে হওয়া সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ায় শিশু গণিকাবৃত্তির এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশটির উপকূলীয় এলাকায় যৌন পর্যটন চালু থাকায় সেখানকার অজস্র শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রায় ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ মেয়েশিশু দেশটির মালিন্দি, মোম্বাসা, কালিফি এবং দিয়ানি উপকূলীয় এলাকায় বাস করে, যাঁরা মাঝেমধ্যেই অর্থেই বিনিময়ে যৌনকর্ম করে। এছাড়াও ২০০০ থেকে ৩০০০ শিশু ছেলেমেয়ে অর্থের বিনিময়ে সার্বক্ষণিক যৌন-পরিসেবা দিয়ে থাকে। উপকূলীয় যৌনপেশায় কর্মরতদের ৪৫ শতাংশই আসে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে, যাঁরা পূর্বেই এ কাজে হাতেখড়ি নিয়ে নেয়। অধিকাংশই আগে নিজেদের এলাকার বাইরে এ কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, সাজগোজ করার কসমেটিক গার্মেন্টস ও চুলের স্টাইল আধুনিককরণ করার জন্য অর্থ উপার্জন করে, তারপর পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য আসে। এখানে শিশুদের মধ্যে যৌনকর্মের প্রাদুর্ভাব এতটাই বেড়ে গেছে যে, প্রতি দশজন শিশুর একজন এ কাজে যুক্ত হয়, যাঁদের বয়স বারোতে পৌঁছোয়নি। চরম দারিদ্র্যের কারণে কেনিয়ায় এখন এটি সামাজিকভাবেও অনেকাংশে স্বীকৃতি পাচ্ছে। শিশুদের একটা অংশ সাধারণত সেসব পরিবার থেকে আসে যেসব পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই, অথবা কম উপার্জন করে, কিংবা সেসব শিশু যাঁদের মা-বাবা উভয়েই মারা গেছে। তবে আগতদের ৫০ শতাংশের মা-বাবাই কর্মজীবী এবং তাঁদের সন্তানরা স্কুলেও যায়। তবে তাঁরা চায় হাতখরচের জন্য বাড়তি কিছু টাকা। অবশ্য এঁরা সতর্ক থাকে যাতে সমাজের বেশি বয়সি কেউ যেন বিষয়টি টের না-পেয়ে যায়। সূত্র জানায়, কেনিয়ার সৈকতে শিশু যৌন পর্যটনে আগতদের ১৮ শতাংশ সুইস। এরপয়েই আসে উগান্ডান, তাঞ্জানিয়ান, ব্রিটিশ এবং সৌদি আরবীয়রা। তবে দেশের ভিতরেও এই শিশুদের ক্লায়েন্ট প্রচুর। পর্যটকদের আগমন যে সময়ে কম হয় বা একেবারেই হয় না, তখনও এই শিশুরা একেবারে কর্মহীন থাকে না।

যৌন পর্যটনে শুধু যে পুরুষরা পর্যটকরাই যৌনকর্মীদের আকর্ষণে যায়, তা নয়। মহিলা পর্যটকরাও পুরুষ যৌনকর্মীদের আকর্ষণে যায়। মহিলা যৌন ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় দেশগুলির মধ্যে আছে দক্ষিণ ইউরোপ (মূলত গ্রিস, ইতালি, সাইপ্রাস, স্পেন এবং পর্তুগাল); ক্যারিবিয়ান (জামাইকা, বার্বাডোস এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বে); ব্রাজিল, মিশর, তুরস্ক এবং থাইল্যান্ডের ফুকেট) এবং আফ্রিকার গাম্বিয়া, সেনেগাল এবং কেনিয়া। অন্যান্য জনপ্রিয় Destinations বা গন্তব্যগুলির মধ্যে আছে বুলগেরিয়া, তিউনিসিয়া, লেবানন, মরোক্কো, জর্ডান, আজারবাইজান, ফিজি, কলম্বিয়া এবং কোস্টারিকা। সেক্স ট্যুরিজম সবচেয়ে সাধারণ ধরনের পুরুষদের মধ্যে মহিলাদের সন্ধান করা seeking কম, সাধারণ ফর্মগুলির মধ্যে মহিলা যৌন পর্যটন (পুরুষদের সন্ধানকারী মহিলা), পুরুষদের খোঁজ পুরুষ এবং শিশু প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তর্ভুক্ত আছে। যৌন পর্যটকরা সাধারণত ইউরোপের পাশাপাশি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত দেশ থেকে আসে। এশীয় দেশগুলি, বিশেষত থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া এবং নেপাল যৌন পর্যটকদের পাশাপাশি মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকায় দেশগুলির সাধারণ গন্তব্য।

প্রোকন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা (একটি অলাভজনক, নিরপেক্ষ জনসাধারণের স্বেচ্ছাসেবক, যা বিতর্কিত ইস্যুতে বিভিন্ন মতামত দেয়) তাঁদের জীবনে কমপক্ষে একবার যৌন-সম্পর্কের জন্য পুরুষদের শতকরা হার অনুমান করে এবং কম্বোডিয়ায় সর্বোচ্চ হার খুঁজে পেয়েছে (৫৯ শতাংশ এবং ৮০ শতাংশের মধ্যে), পুরুষদের মধ্যে কমপক্ষে একবার যৌনতার জন্য অর্থ প্রদান করেছিলেন। থাইল্যান্ড (আনুমানিক ৭৫ শতাংশ), ইতালি (১৬.৭ থেকে ৪৫ শতাংশ), স্পেন (২৭ থেকে ৩৯ শতাংশ), জাপান (৩৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (১৩.৫ থেকে ২১.৬ শতাংশ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৫.০ থেকে ২০.০শতাংশ) পরিসংখ্যানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যিক যৌন-সম্পর্কে জড়িত পুরুষদের শতাংশ সাম্প্রতিক দশকগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশে গণিকাদের সঙ্গে যৌনমিলনকে সাধারণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং যে পুরুষরা বাণিজ্যিক যৌনতায় লিপ্ত হন না, তাঁরা তাঁদের সহকর্মীদের তরফ থেকে অস্বাভাবিক হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

মহিলা যৌন পর্যটন সম্পর্কিত পরিভাষা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। প্রুয়েট (Pruitt) এবং লাফন্ট (Lafont) যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মহিলা যৌন পর্যটন’ শব্দটি স্থানীয় পুরুষদের সঙ্গে মহিলা পর্যটকদের সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাঁদের যুক্তি ছিল যে, মহিলা যৌন পর্যটন এই মহিলাদের উদ্দেশ্যকে আরও প্রশস্ত করে এবং ‘রোম্যান্স ট্যুরিজম’ এই মহিলারা রোম্যান্স ট্যুরের সঙ্গে জড়িত থাকাকালীন কীভাবে নিজেকে নিযুক্ত করছে, তার জটিল প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়। ক্লাউস ডি আলবার্কের্কের (Klaus de Alburquerque) মতো বিদ্বানরা মনে করেন যে, রোম্যান্স ট্যুরিজম’ শব্দটি যৌন ভ্রমণকারীদের উদ্দেশ্য কী বোঝায় না। ডি আলবুকার্ক বলেছিলেন যে ‘রোম্যান্স ট্যুরিজম’-এর মতো ধারণাগুলি কেবল জ্যামাইকা এবং এর সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের মতো ছোটো ছোটো কুলুঙ্গিগুলির প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর গবেষণার মাধ্যমে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বেশিরভাগ মহিলা যৌন পর্যটক কেবলমাত্র শারীরিক লড়াইয়ের (Physical Encounters) জন্য পর্যটন করেন, রোম্যান্সের জন্য নয়।

গবেষক জ্যাকলিন সানচেজ-টেলর (Jacqueline Sanchez-Taylor) যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মহিলা যৌন পর্যটন এবং এমনকি ‘রোম্যান্স ট্যুরিজম’ শব্দটি আসলে যে পরিস্থিতিতে ঘটছে, তা হীন করে তোলে। তিনি মহিলা এবং পুরুষ যৌন পর্যটনকে তুলনা করে দেখান যে, প্রতিটি সম্পর্ক কীভাবে যৌন-অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তিনি নারী যৌন পর্যটন বা রোম্যান্সের ভিত্তিতে মনে করেন এবং যদি উভয়পক্ষের মধ্যে একরকম যৌন-অর্থনৈতিক সম্পর্ক দেখা দেয়, তবে অনুসন্ধান করে আরও যোগ করেছেন—-“পুরুষ ও মহিলা যৌন পর্যটনের মধ্যে যে সমান্তরালতা রয়েছে তা ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা হয় এবং লিঙ্গ ক্ষমতার (Gender Power) বিদ্যমান তাত্ত্বিক ও সাধারণ ধারণা বোঝার ক্ষেত্রে দুর্বলতাগুলি প্রতিফলিত করে এবং পুনরুৎপাদন করে যৌন পর্যটন।”

দক্ষিণ ইউরোপ (প্রধানত গ্রিস, ইতালি, স্পেন এবং ক্রোয়েশিয়াতে) সহ বেশ কয়েকটি দেশ মহিলা যৌন পর্যটনের ডেস্টিনেশনে পরিণত হয়েছে। ক্যারিবিয়ান (বার্বাডোস, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, কিউবা এবং জামাইকা); ইকুয়েডর, কোস্টারিকা, মরক্কো, তুরস্ক, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিজি; এবং আফ্রিকার গাম্বিয়া এবং কেনিয়া ছাড়াও অন্যান্য গন্তব্য সহ বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, পর্তুগাল এবং হাইতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বালির এমন একটি ডেস্টিনেশন, যেখানে পশ্চিম ইউরোপ, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা মহিলারা স্থানীয় পুরুষদের সঙ্গে যৌন পর্যটনে লিপ্ত হন। ২০০৯ সালে আফ্রিকার সেক্স ট্যুরিজম বইয়ে ওয়াঞ্জোহি কিবিচো (Wanjohi Kibicho) দ্বারা পরিচালিত কেনিয়ায় মালিন্দিতে একটি জরিপে করে বলেছেন—কেনিয়ার বুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা গেছে যে, জরিপ করা যৌন পর্যটকদের মধ্যে ৬১ শতাংশ ছিলেন ৪৬ থেকে ৫০ এবং ৩১ এবং ৩৫ (তিন শতাংশ) বয়সের মধ্যে কনিষ্ঠ বয়সিরা নিবন্ধিত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের মধ্যে ২২ শতাংশ জার্মানি, ১৯ শতাংশ ইতালি এবং ১৫ শতাংশ নেদারল্যান্ডের ছিল। যৌন পর্যটনের যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে কিবিচো সংক্ষেপে জানিয়েছিলেন যে, যে মহিলারা “বেশি ওজন এবং বয়স্ক” (overweight and older) বলে উন্নত দেশগুলির পুরুষদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত বোধ করেন, তাঁরাই কেনিয়ায় এসে হঠাৎ বিপরীত (Reversed) হয়ে পড়েছেন। সেখানে তাঁরা পুরুষদের দ্বারা ‘রোম্যান্সড’ (Romanced) এবং ‘প্রিয়’ (Loved) হয়ে উঠছেন।

পুরুষ যৌন পর্যটন ও মহিলা যৌন পর্যটনের পাশাপাশি গে বা সমকামীদের যৌন পর্যটনেরও ব্যবস্থা আছে। গে সেক্স ট্যুরিজম এমন এক যৌন পর্যটন শিল্প, যা সমকামী, উভকামী এবং দ্বি-দলীয় পর্যটকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ উপ-বাজার সরবরাহ করে। বিদ্যমান পরিসংখ্যানগুলি থেকে বোঝা যায় যে, সমকামী যৌন ভ্রমণে সমকামীদের অ-সমকামী সেক্স ট্যুরিজমের মতোই অনুপ্রেরণা রয়েছে, যার সঙ্গে যুক্ত করা যায় যে কারও সমকামী যৌন পরিচয়ের সঙ্গে সংযোগ রাখতে সক্ষম হওয়াও যুক্ত আছে। সমকামী-বন্ধুত্বপূর্ণ অন্যান্য ভ্রমণ। গন্তব্য যেমন হতে পারে, তাই তাঁদের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় অন্বেষণ করার জন্য অন্যান্য সমকামী সনাক্তকারীদের সুযোগ দেয়। গ্রান ক্যানেরিয়া, ইবিজা, সার্ডিনিয়া, সিসিলি এবং ফায়ার আইল্যান্ডের জনপ্রিয় সমকামী যৌন পর্যটন বাজারগুলি সমকামী যৌন ক্রিয়াকলাপ ব্যাপকভাবে সম্ভব হয়েছে। ঠিক ভিন্ন ভিন্ন যৌন পর্যটন বাজারের মতো কিছু ব্যবস্থা আর্থিক হতে পারে এবং কিছু নাও হতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ব্যবস্থায় তাদের আগ্রহ চিহ্নিত করার বিভিন্ন উপায় আছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে, সমকামী যৌন পর্যটন জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় বাজারের হোস্টিং একটি জনপ্রিয় কুলুঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার যৌন-শ্রমিকদের ‘মিশিগস’ বলা হয় এবং উজ্জ্বল নীল রঙের তোয়ালে পরে তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকে এবং প্রায়শ সোনাস (Bath House) এ কাজ করেন। ধর্মীয় এবং সমকামী বিরোধী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা বিক্ষোভের মাধ্যমে সমকামী সেক্স ট্যুরিজম বহুবার আক্রান্ত হয়েছে।

মহিলা সেক্স ট্যুরিজম হল যৌন পর্যটন, যা মহিলারা এক বা একাধিক স্থানীয়, সাধারণত পুরুষ যৌনকর্মীর সঙ্গে যৌনক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে। মহিলা যৌন পর্যটকরা যৌন সম্পর্কের এমন দিকগুলি খুঁজতে পান, যা সাধারণত পুরুষ যৌন পর্যটকদের দ্বারা ভাগ করা হয় না, যেমন—অনুভূত রোম্যান্স এবং ঘনিষ্ঠতা। যে মহিলারা এই প্রোফাইলটি প্রস্তুত করে, বিশেষত ধনী, একক, বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ মহিলারা, তাঁদের ছুটির পরিকল্পনা করে এমন কোনো সঙ্গীর সঙ্গে রোম্যান্স এবং যৌনমিলনের জন্য, যা তাদের কীভাবে বিশেষ উপলব্ধি করতে এবং তাদের মনোযোগ দিতে জানে। তবে মহিলা সেক্স ট্যুরিজমের প্রচলন পুরুষ সেক্স ট্যুরিজমের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মহিলা যৌন পর্যটন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে। মহিলা সেক্স ট্যুরিজমের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান গন্তব্য অনুসারে পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণত মহিলা যৌন পর্যটকদের সাধারণত উন্নত দেশের মহিলাদের শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যারা রোম্যান্স বা যৌন আউটলেটের সন্ধানে স্বল্প উন্নত দেশে ভ্রমণ করে। সেক্স ট্যুরিজমের সঙ্গে জড়িত মহিলারা তাঁদের বেশিরভাগই সুরক্ষিত যৌনসঙ্গী পুরুষদের সঙ্গে যৌনমিলনের সময় গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে না।

যৌন পর্যটন প্রসারিত যে সমস্ত জায়গাগুলি সর্বাধিক জনপ্রিয়, তেমন ১৩ টি স্থান একটু দেখে নিতে পারি। যেমন—

(১) ডোমেনিকান রিপাবলিক : যৌন পর্যটনের প্রথম নাম ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র। যদিও গণিকাবৃত্তি বৈধ, যদিও অর্থ বন্ধ করা যায় না, তবে তাঁরা কেবল নিজেদের জন্য উপার্জন করতে সক্ষম হয়। সেক্স ট্যুরিজম সাইটগুলিতে ডোমেনিকানরা হায়াতিয়ানদের ঘৃণা পোষণ করে। যাঁরা রাস্তায় কাজ করতে বাধ্য হয় তাঁদের প্রতি ঘৃণাই বর্তমান।

(২) থাইল্যান্ড : থাইল্যান্ডের পাট্যায়া শহর, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যৌন রাজধানী। এটা নাকি যৌনকর্মের ‘জান্নাত হিসাবে পরিচিত।

(৩) কোস্টা রিকা : কোস্টা রিকা যৌন পর্যটনে উচ্চতায় পৌঁছেছে। ১০ শতাংশ পর্যটক সেক্সের জন্য কোস্টা রিকায় আসেন। কিন্তু কোস্টা রিকা এত স্পেশাল কী করে? কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণিকাবৃত্তি অবৈধ। কোস্টা রিকার ৮০ শতাংশ যৌনকর্মী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী।

(৪) কেনিয়া : কেনিয়ায় গণিকাবৃত্তি আইনি। কিন্তু পার্থক্য হল যে, নারীরা নারীদের জন্য এই গন্তব্যস্থলে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের মানুষদের থেকে পেতে ইচ্ছুক। এটি একটি আকর্ষণীয় টার্ম সেখানে একটি নামও আছে, মিজু। যে মহিলারা স্থানীয়দের সঙ্গে যৌন-সম্পর্কের জন্য আসে।

(৫) জাপান : জাপান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মানুষের জন্য শীর্ষ পর্যটকদের মধ্যে একটি। যাই হোক, জাপানে বিদেশি পুরুষরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাগত জানায় না। কারণ নারীরা অনাকাক্ষিত হয়। বিদেশিদের মধ্যে আছে ভিন্ন গন্ধ, আর ভাষার প্রতিবন্ধকতাকে নারীরা ভয় পায়।

(৬) আমস্টারডাম : আমস্টারডাম কুখ্যাত হয়েছে যৌনবৃত্তির মরুদ্যানের জন্যে। অ্যামস্টারডাম সম্ভবত গণিকাবৃত্তি আইনি সম্পর্কে মনে করার সময় মানুষের মনে সবচেয়ে সাধারণ জায়গা। কেবলমাত্র আইনি ও নিরাপদ পছন্দ নয়, তবে পার্টির পরে দেখা করার জন্য একটি যৌনমিলনেরও ব্যবস্থা থাকে।

(৭) কম্বোডিয়া : কম্বোডিয়ার ফনম পেন (Phnom Penh) নারী যৌনকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট। নানাবিধ কারণের মধ্যে দারিদ্যতাই প্রধান কারণ। উদ্বাস্তুদের অনেকেই দারিদ্রতার কারণে গণিকাবৃত্তি গ্রহণ করে থাকে।

(৮) ফিলিপাইন : এই পেশা এখানে অবৈধ। তবে এটি এখনও ম্যাসেজ পার্লারসের আড়ালে গণিকাবৃত্তিতে এবং আরও অনেক কিছু ঘটে। চাহিদা আছে, আছে সরবরাহ। লোকেরা যৌনতা বিক্রি করার উপায় খুঁজে বের করে। কারণ তাঁরা জানে যে, এটি চড়া দরে বিক্রি হয়। এটি দুর্ভাগ্যজনক যৌন পর্যটন ভাবে। ফিলিপাইনে আসার জন্য মানুষকে প্রধান আকর্ষণ করা হল যৌন পর্যটন প্রচারণা এবং যৌনকর্মীদের সঙ্গে আনন্দের একটি জগৎ।

(৯) ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়ায় গণিকাবৃত্তি অবৈধ হলেও পতিতাবৃত্তির সব পথই খোলা থাকে। তবে ইন্দোনেশিয়া অনলাইন যৌন ফোরাম এবং গণিকাবৃত্তি রিংগুলির জন্যও বেশি খ্যাত। কেউ যৌন সফর করার সিদ্ধান্ত নিলে এটাও মেনে নিতে হবে চরম মুহূর্ত পর্যন্ত নাও পৌঁছোতে পারে। অতএব সবসময় সতর্ক থাকতে হয়।

(১০) স্পেন : স্পেন কেবলমাত্র সেরা মদ আর ষাঁড়ের লড়াইয়ের জন্য প্রসিদ্ধ নয়, এই দেশ সেরা গণিকাবৃত্তির জন্যেও প্রসিদ্ধ। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। স্পেনের রেড লাইট এরিয়াগুলিতে খুব উচ্চগ্রামের ও উৎসবের মেজাজে নারী-পুরুষ উভয়ই যৌনঘটিত ঘটনাগুলি ঘটাতে পারেন। লাল আলো জেলার একটি খুব উঁচু এবং উৎসাহী অংশ যেখানে অনেক পুরুষ এবং মহিলারা অবশ্যই মূল্যের জন্য যৌন-উদ্দীপক জিনিসগুলি করতে পারেন।

(১১) ব্রাজিল : ব্রাজিলে ফুটবলের জন্য অবশ্যই যাবেন। কিন্তু সেক্স করার জন্যেও অবশ্যই যাবেন। ব্রাজিলে গণিকাবৃত্তি বৈধ। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই যৌন পরিসেবা নিতে ও দিতে পারে স্বচ্ছন্দে। এখানে উঁচুতলার মহিলারাও স্বচ্ছন্দে যৌনকর্ম করে থাকে। রিও ডি জেনিরো ও ফোর্টালেজা শহর দুটি রেড লাইট এরিয়ার জন্য প্রসিদ্ধ।

(১২) জ্যামাইকা : কেনিয়ার নারীদের মতোই পুরুষ যৌনকর্মীও সম্মানিত হয়। তবে এখানে গুজবের গুরুত্ব খুব বেশি।

(১৩) হাইতি : হাইতি হল দরিদ্রদের দেশ। এখানে যৌনকর্মীরা যথেষ্ট মজুরি পায়। দারিদ্রতাই নারীকে গণিকাবৃত্তিতে নামায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *