সপ্তম অধ্যায়
১২৭৪ [1867-68] ১৭৮৯ শক ॥ রবীন্দ্রজীবনের সপ্তম বৎসর
১২৭৩ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসের দ্বিতীয়ার্ধ [Jan 1867] থেকে রবীন্দ্রনাথের গবর্মেন্ট পাঠশালা-পর্বের দ্বিতীয় বর্ষ আরম্ভ হয়েছে, বলা যেতে পারে। মাঘ মাস থেকে তিনি ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথকেও এই স্কুলে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন, এ কথা আমরা আগেই জানিয়েছি। ক্যাশবহি-তে সেইজন্য প্রতি মাসে মাথা-পিছু বারো আনা হিসেবে মোট তিন টাকা বেতন শোধ করার হিসাব দেখতে পাওয়া যায়। নীলকমল ঘোষাল এ বৎসরও তাঁদের গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, বেতন পেয়েছেন আগের মতোই মাসিক দশ টাকা। কিন্তু 1867 শিক্ষাবর্ষে কোনো পুস্তক-খরিদের হিসাব না পাওয়ায় বোঝা শক্ত তাঁরা কী ধরনের পড়াশোনা এই বছরে করেছিলেন। মনে হয়, বর্ণপরিচয়ের পালা সাঙ্গ করে বোধোদয়, ভূগোল-ইতিহাস-স্বাস্থ্যের প্রথম পাঠ, অঙ্কের প্রাথমিক সূত্র ইত্যাদি এই বৎসর তাঁদের পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আগের মতোই রবীন্দ্রনাথ এ-বৎসরেও ভৃত্যশাসনের অধীন, কিন্তু ১২৭৪ বঙ্গাব্দের বিস্তৃত হিসাব-সংবলিত ক্যাশবহি-টি পাওয়া যায়নি বলে ঠিক কোন্ ভৃত্যের হাতে তিনি সমর্পিত ছিলেন তা জানা যায় না। কিন্তু মনে হয় জীবনস্মৃতির ‘ভৃত্যরাজক তন্ত্র’ অধ্যায়ের কোনো কোনো বর্ণনা—যেমন, সন্ধ্যাবেলায় রামায়ণ-মহাভারত পাঠের যে আসরের কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—সম্ভবত এই বৎসরের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পরের বৎসর থেকেই সন্ধ্যাবেলায় গৃহশিক্ষকের কাছে ইংরেজি শেখার পালা আরম্ভ হয়, সুতরাং ছুটির দিন ছাড়া এ-ধরনের আসর বসার সম্ভাবনা ছিল না—সেইজন্য এটিকে বর্তমান বৎসরের কালসীমায় আলোচনা করাই যুক্তিযুক্ত। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বর নামক ভৃত্যটিকে তোশাখানার দক্ষিণে বড়ো একটা ঘরের ‘মাদুর-পাতা আসরে’-র সর্দার বলে যে সম্মান দিয়েছেন, সেটি তার প্রাপ্য নয়—কারণ ওই ভৃত্যটি কাজে লেগেছিল অনেক পরে ১২৭৬ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে, রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ন’বছর, সন্ধ্যাবেলাটি তখন অঘোর মাস্টারের দখলে। যাই হোক, কিছু লেখাপড়া-জানা কোনো এক ভৃত্য বালকদের সংযত রাখবার উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় রেড়ির তেলের ভাঙা সেজের চার দিকে তাঁদের বসিয়ে রামায়ণ-মহাভারত পড়ে শোনাত। চাকরদের মধ্যে আরো দু-চারটি শ্রোতা জুটে যেত—বালকেরা স্থির হয়ে বসে কৃত্তিবাসের রামায়ণ শুনতেন প্রবল আগ্রহের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘যেদিন কুশলবের কথা আসিল, বীর বালকেরা তাঁদের বাপখুড়াকে একেবারে মাটি করিয়া দিতে প্রবৃত্ত হইল, সেদিনকার সন্ধ্যাবেলাকার সেই অস্পষ্ট আলোকের সভা নিস্তব্ধ ঔৎসুক্যের নিবিড়তায় যে কিরূপ পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা এখনো মনে পড়ে।’১ কিন্তু এদিকে রাত গভীর হচ্ছে, বালকদের জাগরণ কালের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে, অথচ কাহিনীর অনেকটাই বাকি : ‘এহেন সংকটের সময় হঠাৎ আমাদের পিতার অনুচর কিশোরী চাটুজ্যে* আসিয়া দাশুরায়ের পাঁচালি২ গাহিয়া অতি দ্রুত গতিতে বাকি অংশটুকু পূরণ করিয়া গেল;—কৃত্তিবাসের সরল পয়ারের মৃদুমন্দ কলধ্বনি কোথায় বিলুপ্ত হইল—অনুপ্রাসের ঝক্মকি ও ঝংকারে আমরা একেবারে হতবুদ্ধি হইয়া গেলাম।’৩ ছেলেবেলা-য় একই বর্ণনা-প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘তার মুখে হাসি, মাথায় টাক ঝক ঝক করছে, গলা দিয়ে ছড়া-কাটা লাইনের ঝরনা সুর বাজিয়ে চলছে, পদে পদে শব্দের মিলগুলো বেজে ওঠে যেন জলের নিচেকার নুড়ির আওয়াজ। সেই সঙ্গে চলত তার হাত পা নেড়ে ভাব-বাৎলানো।’৪
রামায়ণের সঙ্গে এইটিই রবীন্দ্রনাথের প্রথম পরিচয়। এই সময়েই বা আরও কিছু পরে, যখন তিনি নিজেই পড়তে শিখেছেন—সেই সময়কার একদিন কৃত্তিবাসের রামায়ণ পড়ার বর্ণনা দিয়েছেন জীবনস্মৃতি-তে। এক মেঘলা দিনে বাহিরবাড়িতে রাস্তার ধারের লম্বা বারান্দাটাতে খেলার সময় ভাগিনেয় সত্যপ্রসাদ হঠাৎ তাঁর ক্ষুদ্রতম মাতুলটিকে ভয় দেখানোর জন্য ‘পুলিসম্যান’ ‘পুলিসম্যান’ বলে ডাকতে লাগলেন। পুলিসম্যানের নির্মম শাসনবিধি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রবীন্দ্রনাথের ছিল। স্পষ্ট ধারণাও কিছু থাকা সম্ভব, কেননা শ্যামাচরণ মল্লিকের যে বিরাট প্রাসাদতুল্য বাড়ির একাংশ নর্মাল স্কুল ও গবর্মেন্ট পাঠশালার জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, তারই অন্য অংশে একটি পুলিশ-থানা অবস্থিত ছিল। সুতরাং ভীত বালক অন্তঃপুরে পালিয়ে গিয়ে মাকে এই বিপদের আশঙ্কা জানালেন, কিন্তু পুত্রের এই সংকট তাঁকে বিন্দুমাত্র উৎকণ্ঠিত করেছে এমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পেল না। কিন্তু বাইরে যাওয়াও যথেষ্ট নিরাপদ নয়, সুতরাং সারদা দেবীর সম্পর্কিত খুড়ি* শুভঙ্করী দেবী যে কৃত্তিবাসের রামায়ণখানা পড়তেন সেই ‘মার্বেলকাগজ-মণ্ডিত কোণছেঁড়া-মলাটওয়ালা মলিন’ বইটি কোলে নিয়ে মায়ের ঘরের দরজার কাছে বসে পড়তে আরম্ভ করলেন : ‘সম্মুখে অন্তঃপুরের আঙিনা ঘেরিয়া চৌকোণ বারান্দা; সেই বারান্দায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ হইতে অপরাহ্নের ম্লান আলো আসিয়া পড়িয়াছে। রামায়ণের কোনো-একটা করুণ বর্ণনায় আমার চোখ দিয়া জল পড়িতেছে দেখিয়া দিদিমা জোর করিয়া আমার হাত হইতে বইটা কাড়িয়া লইয়া গেলেন।’৫ কোথায় পুলিসম্যানের ভয়ে অন্তঃপুরে পলায়ন, আর কোথায় রামায়ণ-কাহিনীর মধ্যে নিঃশেষে নিমজ্জন, যার করুণ বর্ণনা দুই চক্ষুকে অশ্রুভারাক্রান্ত করে তোলে—এই আত্মনিমগ্নতা রবীন্দ্র-চরিত্রের একটি প্রধান লক্ষণ বলে মনে করি, যা বারবার পারিপার্শ্বিক দুঃখ-বেদনা অতিক্রম করতে তাঁকে সাহায্য করেছে।!
আমরা আগেই বলেছি, এই বৎসরই সম্ভবত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-রচিত ‘বোধোদয়’ [প্রথম প্রকাশ : Apr 1851] রবীন্দ্রনাথের পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্গত ছিল। বাড়িতে গৃহশিক্ষক নীলকমল ঘোষালের কাছে এই গ্রন্থটি পাঠের একটি অভিজ্ঞতা তিনি বর্ণনা করেছেন জীবনস্মৃতি-তে—‘যেদিন বোধোদয় পড়াইবার উপলক্ষে পণ্ডিতমহাশয় বলিলেন, আকাশের ওই নীল গোলকটি কোনো-একটা বাধামাত্রই নহে, †তখন সেটা কী অসম্ভব আশ্চর্যই মনে হইয়াছিল। তিনি বলিলেন, “সিঁড়ির উপর সিঁড়ি লাগাইয়া উপরে উঠিয়া যাও-না, কোথাও মাথা ঠেকিবে না।” আমি ভাবিলাম, সিঁড়ি সম্বন্ধে বুঝি তিনি অনাবশ্যক কার্পণ্য করিতেছেন। আমি কেবলই সুর চড়াইয়া বলিতে লাগিলাম, “আরো সিঁড়ি, আরো সিঁড়ি, আরো সিঁড়ি;” শেষকালে যখন বুঝা গেল সিঁড়ির সংখ্যা বাড়াইয়া কোনো লাভ নাই তখন স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম এবং মনে করিলাম, এটা এমন একটা আশ্চর্য খবর যে পৃথিবীতে যাঁহারা মাস্টারমশায় তাঁহারাই কেবল এটা জানেন, আর কেহ নয়।’৬ আশ্চর্য হবার এই ক্ষমতা ও কল্পনাপ্রবণতা রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভা-বিকাশের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল, এ কথা বলাই বাহুল্য।
প্রাসঙ্গিক তথ্য : ১
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির এ-বৎসরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে প্রথমেই যেটির কথা বলতে হয়, সেটি হল ২৪ শ্রাবণ [বৃহ 8 Aug 1867] শুক্ল নবমীর দিনে দেবেন্দ্রনাথ কর্তৃক সাংবৎসরিক পিতৃ-শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান। ‘অনুষ্ঠান পদ্ধতি’ প্রণয়নের পর থেকেই তিনি কয়েক বৎসর এটি করে আসছিলেন। বর্তমান বৎসরে একটু ঘটা করেই অনুষ্ঠানটি নিষ্পন্ন হয় এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-র ভাদ্র সংখ্যায় ১০৮-১২ পৃষ্ঠায় এর বিস্তৃত বর্ণনা প্রকাশিত হয়। সকাল ন-টায় শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আরম্ভ হয় ও দেবেন্দ্রনাথ ১০২টি ভোজ্য উৎসর্গ করেন। তিনটি ব্ৰহ্মসংগীত গীত হয়—১। বলিহারি তোমারি চরিত মনোহর, ২। তাঁহারি শরণ লয়ে রহিও এবং ৩। জননী সমান করেন পালন—এর মধ্যে প্রথম ও তৃতীয়টি সত্যেন্দ্রনাথের রচনা। The National Paper-এর [Vol. III, No, 34, Aug 14] বিবরণ অনুসারে অনেক ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গটি সাধারণভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও ব্রাহ্মসমাজের তৎকালীন মতবিরোধের আবহাওয়ায় এটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আমরা আগেই বলেছি, কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজের একটি তরুণগোষ্ঠী মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ নামে একটি স্বতন্ত্র সমাজ গঠন করেন। তাঁরা তাঁদের ধর্মমতে, প্রচারে ও আচরণে খ্রিস্টানুরক্তি, পাপবোধের আতিশয্য ও হিন্দুত্বের অত্যুগ্র বিরোধিতা ইত্যাদি আরম্ভ করেন, যা দেবেন্দ্রনাথের একেবারেই মনঃপূত ছিল না। তিনি চাইতেন পৌত্তলিকতা ও বিভিন্ন কুসংস্কারপূর্ণ আচার-বর্জিত বিশুদ্ধ হিন্দুধর্মের পুনরুদ্ধার, মোটামুটিভাবে ব্রাহ্মধর্ম বলতে তিনি এইরকমই বুঝতেন। উপরের বর্ণিত অনুষ্ঠানটির জাঁকজমক ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-য় তার প্রচার এই মনোভাব থেকেই করা হয়েছিল বলে মনে হয়। অথচ ২৩ বৈশাখ [রবি 5 May 1867] কেশবচন্দ্র যখন ব্রহ্মবিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, তখন দেবেন্দ্রনাথ সেখানে কয়েকদিন বাংলাভাষায় উপদেশ প্রদান করেন, জ্যৈষ্ঠ মাসে [Jun 1867] বরাহনগর ব্রাহ্মসমাজের সাংবৎসরিকে দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্র একত্রে বেদীর কার্য করেন, আদি ব্রাহ্মসমাজগৃহে কেশবচন্দ্র ও তাঁর অনুগামীরা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মদর্শন-বিষয়ে তাঁর উপদেশ শোনেন এবং তাঁরই উপদেশে আরাধনায় ‘সত্যং জ্ঞানমনন্তং’ এই বেদান্ত বাক্যটির সঙ্গে ‘শুদ্ধমপাপবিদ্ধম্’ বাক্যটি যুক্ত করেন। পরস্পরের সঙ্গে আদানপ্রদানের পথ খোলা রেখে দুটি বিরোধী গোষ্ঠীতে পরিণত হওয়ার এ এক আশ্চর্য নিদর্শন।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গত বৎসর ফাল্গুন মাস নাগাদ সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর সঙ্গে আমেদাবাদে চলে যান। সেখানে তিনি ফরাসি ভাষা, চিত্রাঙ্কন ও সেতার-বাদন শিক্ষা করেন। সত্যেন্দ্রনাথ 4Sep [বুধ ২০ ভাদ্র] তারিখে আমেদাবাদ থেকে গণেন্দ্রনাথকে একটি পত্রে লেখেন, ‘Jotee is learning “sitar” this is the only amusement I can provide for him here.’ এর কিছুদিন পরেই 16 Oct [বুধ ৩১ আশ্বিন] থেকে 15 Jun 1868 [৩ আষাঢ় ১২৭৫] বাত-ব্যাধির চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ আট মাসের ছুটি নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতায় আসেন, জ্যোতিরিন্দ্রনাথও তাঁর সঙ্গেই প্রত্যাবর্তন করেন। কয়েকদিন আগে 11 Oct থেকে কলকাতা-বোম্বাই রেলপথ খোলা হয় [পাঁচ দিন সময় লাগত, দ্র বামাবোধিনী, কার্তিক। ৬২৩], সম্ভবত রেলপথেই তাঁরা কলকাতায় ফিরে আসেন।
২ অগ্রহায়ণ [রবি 17 Nov 1867] স্বর্ণকুমারী দেবীর সঙ্গে জানকীনাথ ঘোষালের বিবাহ হয়। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-য় পৌষ সংখ্যায় বিবাহ-সংবাদটি প্রকাশিত হয় : ‘ব্রাহ্মবিবাহ। গত ২ অগ্রহায়ণ রবিবার ব্রাহ্মসমাজের প্রধান আচার্য্য শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থা কন্যার সহিত কৃষ্ণনগরের অন্তঃপাতী জয়রামপুর নিবাসী বাবু জানকীনাথ ঘোষালের ব্রাহ্মবিধানানুসারে শুভ বিবাহ হইয়া গিয়াছে। বরের বয়ঃক্রম ২৭ বৎসর। কন্যার বয়ঃক্রম ১৩ বৎসর। এই বিবাহ উপলক্ষে দেশবিদেশ হইতে বহুসংখ্য ভাদ্রলোক ও ব্রাহ্মণ পণ্ডিত উপস্থিত হইয়াছিলেন। উক্ত দিবস রাত্রি ৮ ঘটিকার সময় এই শুভকাৰ্য্য আরম্ভ হইল।’ 20 Nov-এর The National Paper-এর [Vol. III, No. 47, p. 554] বিবরণে একটু অতিরিক্ত সংবাদ পাওয়া যায় : ‘We have much pleasure to record a Brahmo marriage which took place with great eclat on the night of Sunday last the 17th November. The bridegroom, Baboo Janoky Nauth Ghosal is an intelligent young gentleman holding the post of an Assessor in Beerbhom district and the bride an accomplished girl of good attainments is a daughter of Baboo Debendro Nauth Tagore, Prodhan Acharya Brahmo Somaj. Every one who witnessed the ceremony, even orthodox Hindoos returned home with a most favourable inpression on their minds.’ জানকীনাথের জন্ম হয় 1840-তে, সুতরাং বিবাহের সময় তাঁর বয়স ২৭/২৮ বৎসর। তাঁর পিতা জয়চন্দ্র ঘোষালের অনুমতি ছাড়াই এই বিবাহ হয়, সেইজন্যই উপরের বিবরণে তাঁর নাম প্রকাশিত হয়নি। জানকীনাথ স্বাধীনচেতা পুরুষ ছিলেন। ফলে ঠাকুরবাড়ির দুটি নীতি—বিবাহের পূর্বে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ ও গৃহজামাতার জীবনযাপন—তিনি মানতে অস্বীকৃত হন। জানকীনাথের দুই কন্যা হিরণ্ময়ী ও সরলা দুজনেই লিখেছেন, কয়েক বৎসর পূর্বে দেবেন্দ্রনাথ যখন কৃষ্ণনগরে যান তখনই তিনি এই ‘সুদর্শন উৎসাহী সমাজ-সংস্কারক যুবক’কে দেখে মুগ্ধ হন এবং তারই পরিণতি এই বিবাহ। বিবাহ অবশ্য খুব সহজে স্থির হয়নি, কয়েক মাস পূর্বে ১২ ভাদ্র [27 Aug] তিনি শান্তিনিকেতন থেকে এক পত্রে গণেন্দ্রনাথকে লেখেন : ‘তোমার যে প্রকার হৃদয়ের সদ্ভাব ও মমতা, ইহাতে স্বর্ণকুমারীর বিবাহ বিষয়ে তোমার যে পরামর্শ দেওয়া তাহা তোমার পক্ষে কখনই অনধিকার চর্চ্চা নহে। … অনেক বিষয়ে আমি তোমার বুদ্ধি ও পরামর্শের উপর নির্ভর করি। আমি স্বর্ণকুমারীর যোগ্যপাত্র এখনো স্থির করিতে পারি নাই। তোমার সহিত পরামর্শ না করিয়াও ইহার কিছুই স্থির করিতে পারিব না।’৭ যাই হোক, জানকীনাথের শর্ত মেনে নিয়েই দেবেন্দ্রনাথ কন্যার বিবাহ দেন। স্বর্ণকুমারী কোনো স্কুলে না পড়লেও বাড়িতে যথেষ্ট শিক্ষা লাভ করেছিলেন, সহৃদয় উচ্চশিক্ষিত স্বামীর কাছে সেই শিক্ষা আরও পরিণতি লাভ করে। জ্যেষ্ঠ জামাতা সারদাপ্রসাদ ও জানকীনাথ দেবেন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ও বিশ্বাসভাজন ছিলেন। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির জীবনযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের আধুনিকতা তিনিই প্রবর্তন করেন। বিবাহের পরে বিলাত যাত্রার কথা হওয়ায় তিনি সরকারী কর্ম ত্যাগ করেন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় ‘তিনি স্বাধীন জীবিকার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য আরম্ভ করেন’। এই সময়ে তাঁকে অবশ্য গৃহজামাতার জীবনই যাপন করতে হয়েছে।
এই বিবাহের কয়েকদিন পরে ১৫ অগ্রহায়ণ [শনি 30 Nov] হেমেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও দ্বিতীয় সন্তান হিতেন্দ্রনাথের এবং পরের দিন ১৬ অগ্রহায়ণ [রবি 1 Dec] দ্বিজেন্দ্রনাথের তৃতীয় পুত্র ও চতুর্থ সন্তান নীতীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। এর আগে সম্ভবত জ্যৈষ্ঠ/আষাঢ় মাসে হেমেন্দ্রনাথের প্রথমা কন্যা প্রতিভা দেবীর অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠিত হয়—তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-র শ্রাবণ সংখ্যায় ব্রাহ্মসমাজের জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসের ‘আয় ব্যয়’ বিবরণে ‘আনুষ্ঠানিক দান’ শিরোনামায় হেমেন্দ্রনাথের ৪ টাকা দানের হিসাব এই অনুমানের কারণ।
এর মধ্যে ৩ আশ্বিন [বুধ 18 Sep] তারিখে গুণেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র গগনেন্দ্রনাথের জন্ম হয়। তাঁর নাম প্রথমে ‘গৌরীন্দ্র’ রাখার কথা ভাবা হয়েছিল, হয়তো দেবেন্দ্রনাথই তাঁর ‘গগনেন্দ্র’ নামকরণ করেন। ২৬ ফাল্গুন [8 Mar 1868] অমৃতসর থেকে গণেন্দ্রনাথকে তিনি একটি পত্রে লেখেন : ‘গুণেন্দ্রের পুত্রের নাম গৌরীন্দ্র অপেক্ষা গগনেন্দ্র আমার ভাল বোধ হইতেছে।’৮ অবশ্য প্রস্তাবিত দুটি নামের মধ্যে তিনি একটি বেছে নিয়েছেন, এমনও হতে পারে।
স্বর্ণকুমারী দেবীর বিবাহের পর কিছুদিন উত্তরবঙ্গে জমিদারি পরিদর্শন করে তিনি পশ্চিমে যাত্রা করেন। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস অমৃতসর, লাহোর প্রভৃতি জায়গায় কাটিয়ে তিনি দীর্ঘদিনের জন্য হিমালয়ে মূরী পর্বতে [‘Willow Banks/Muree Hills’] গিয়ে বাস করেন।
ঠাকুর-পরিবারের অন্তঃপুর-শিক্ষার বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হল, জনৈকা ‘সবুরান বিবি’-র জন্য সত্যেন্দ্রনাথের খাতে সারা বছর আট টাকা করে বেতন দিয়ে যাওয়া হয়েছে; তা ছাড়া ‘বাটীর ভিতর পড়াইবার বিবির বেতন’ ত্রিশ টাকা প্রতি মাসে ‘W. Robson Esq.’-কে দেওয়া হয়। এর থেকে বোঝা যায়, বাড়ির মেয়েদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার এক ধরনের ব্যবস্থা এখানে অব্যাহত রাখা হয়েছিল। বিশেষ করে স্বর্ণকুমারী দেবীর ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা সর্বাধিক সুফল প্রসব করেছে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য : ২
১৭৮৯ শকে কলকাতা ব্রাহ্মসমাজের কার্যনির্বাহের জন্য নিম্নলিখিত কর্মচারীগণ নিযুক্ত হন : অধ্যক্ষ—কাশীশ্বর মিত্র, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর [পাথুরিয়াঘাটা], শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়, অযোধ্যানাথ পাকড়াশী, বেচারাম চট্টোপাধ্যায়, নবগোপাল মিত্র ও ত্রৈলোক্যনাথ রায়; সম্পাদক—দ্বিজেন্দ্রনাথ; সহকারী সম্পাদক—আনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ; তত্ত্ববোধিনী-সম্পাদক —হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য [দ্র তত্ত্ববোধিনী, বৈশাখ। ১৯]। শ্রাবণ মাসে উক্ত পত্রিকায় একটি ‘বিজ্ঞাপন’-এর মাধ্যমে নবগোপাল মিত্রকে অন্যতর সহকারী সম্পাদক করা হয় এবং অধ্যক্ষ-সভায় তাঁর শূন্যপদে কালীকৃষ্ণ দত্ত নিয়োজিত হন। ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর যেভাবে নতুন উৎসাহে তাদের প্রচারকার্য ও কর্মধারা বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত করছিল, তার সঙ্গে তাল মেলাবার জন্যই সম্ভবত অধ্যক্ষ-সভার বিস্তার ও পরবর্তী পরিবর্তনটি করা হয়েছিল। অক্লান্ত কর্মী ও সংগঠক নবগোপাল মিত্রের নিয়োগ থেকে এরূপ ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।
৫ কার্তিক [সোম 21 Oct 1867] তারিখে* কেশবচন্দ্র প্রমুখ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের ১২ জন সভ্য দেবেন্দ্রনাথের কাছে গিয়ে তাঁকে একটি অভিনন্দন পত্র প্রদান করেন। প্রায় এক বছর আগে ২৬ কার্তিক ১২৭৩ তারিখে যে সভায় অনুষ্ঠানিকভাবে এই সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয় তাতেই প্রস্তাব গৃহীত হয় : ‘এত দিন কলিকাতা সমাজের প্রধান আচার্য্য ভক্তিভাজন বাবু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় যেরূপ যত্ন, একাগ্রতা ও ধর্ম্মানুরাগ সহকারে ব্রাহ্মধৰ্ম্ম-প্রচার ও ব্রাহ্মমণ্ডলীর উন্নতি সাধন করিয়াছেন, তজ্জন্য তাঁহাকে কৃতজ্ঞতাসূচক একখানি অভিনন্দন পত্র প্রদত্ত হয়।’৯ এই প্রস্তাবানুসারেই অভিনন্দনপত্রটি প্রদত্ত হয়। পত্রটির শীর্ষে লেখা হয় : ‘ভক্তিভাজন মহর্ষি শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের প্রধান আচার্য্য মহাশয় শ্রীচরণেষু।’—সম্ভবত দেবেন্দ্রনাথকে ‘মহর্ষি’ বিশেষণে এই প্রথম অভিহিত করা হল, তত্ত্ববোধিনী অগ্রহায়ণ সংখ্যায় [পৃ ১৫৫] সংগত কারণেই শব্দটির পরিবর্তে ‘* * *’ চিহ্ন দিয়ে অভিনন্দনপত্রটি মুদ্রিত হয়। দেবেন্দ্রনাথ এর উত্তরে যে প্রত্যভিনন্দনপত্র রচনা করেন [দ্র, ঐ। ১৫৭-৬১]; তাতে তাঁর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে ভারতবর্ষীয় সমাজের সাফল্য কামনা করেন। দেবেন্দ্রনাথের ধর্মজীবনের ক্রমবিকাশের সংক্ষিপ্ত অথচ ভাবগর্ভ বর্ণনার দিক দিয়ে পত্রটির মূল্য অসামান্য। কিন্তু তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ এই অভিনন্দনপত্র প্রদানের উদ্দেশ্যটি। যদিও স্পষ্ট করে কোথাও উল্লিখিত হয়নি, তবু অত্যগ্রসর দলের মনোভাবটি ছিল, ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাসে দেবেন্দ্রনাথের জন্য যে ভূমিকাটি নির্দিষ্ট ছিল সেটি সমাপ্ত হয়েছে—এর পরের কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব গ্রহণ করছে কেশবচন্দ্রের নির্দেশে চালিত ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ। উদ্দেশ্যটি যে আদি সমাজের বোধগম্য হয়নি তা নয়, সেইজন্যই ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের ৪ কার্তিকের সভায় ‘বাবু নবগোপাল মিত্র সভাপতিকে এই অভিনন্দনপত্রী দেওয়ার উদ্দেশ্য কি, বিবৃত করিতে অনুরোধ করিলেন এবং বলিলেন, ব্রাহ্মসমাজ এক ঈশ্বরের পূজা করিবার জন্য স্থাপিত হইয়াছে, কোন ব্যক্তিবিশেষকে প্রশংসা করিবার জন্য নহে। আজ বাবু দেরেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অভিনন্দনপত্র দেওয়া হইতেছে; কে জানে যে, আর এক দিন বাবু রাজনারায়ণ বসু এবং শিবচন্দ্র দেবকে অভিনন্দনপত্র দেওয়া হইবে না? যদি এই প্রণালীতে সমাজের কাৰ্য্য চলিতে থাকে, তাহা হইলে অতি অল্পদিনের মধ্যে পৌত্তলিকতা ব্রাহ্মধর্ম্মের অঙ্গীভূত হইয়া যাইবে।’১০ সভাপতি অবশ্য এই প্রশ্নের বিচার পূর্বের অধিবেশনেই নিষ্পন্ন হয়ে গেছে [প্রকৃতপক্ষে সেখানে এ-বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি] এই বলে তাঁর আপত্তি খণ্ডন করেন। এর পরে মহেন্দ্রনাথ বসু প্রস্তাব করেন দেবেন্দ্রনাথের অনুমতি নিয়ে তাঁকে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের সভ্যশ্রেণীভুক্ত করা হোক, কারণ তাঁর প্রদর্শিত পথ অনুসরণেই এই সমাজের উদ্ভব।১১ আমরা এই প্রসঙ্গ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলাম ব্রাহ্মসমাজের ভিতরকার গোষ্ঠীতান্ত্রিক রাজনীতির স্বরূপটি পাঠকদের সামনে তুলে ধরার জন্য। এরই ফলে পারস্পরিক দোষারোপ, চরিত্রহননের চেষ্টা ইত্যাদি নানা ধরনের মালিন্য বিভিন্ন পর্বে ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে প্রবেশ করেছে, দ্বিধাবিভক্ত সমাজ ত্রিধা হয়েছে এবং একসময়ে ইংরেজি-শিক্ষিত যে হিন্দু বাঙালি নিজেদের আচারে প্রতিষ্ঠিত থেকেও ব্রাহ্মধর্মকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে, তাদের মনোভাবও ব্যঙ্গাত্মক হয়ে ওঠে, যা শেষ পর্যন্ত শশধর তর্কচূড়ামণি, কৃষ্ণানন্দ স্বামী প্রভৃতির চরম প্রতিক্রিয়াশীলতাকেও স্বাগত জানায় যার হাত থেকে বঙ্কিমচন্দ্র, চন্দ্রনাথ বসু প্রভৃতি মনীষীরাও আত্মরক্ষা করতে পারেননি।
উপরোক্ত সভায় আর-একটি প্রস্তাব আলোচিত ও গৃহীত হয়, যা পরবর্তীকালে বহু অনর্থের কারণ হয়েছে। ‘হিন্দুবিবাহসম্বন্ধে যে সকল রাজনিয়ম প্রচলিত আছে, তাহা ব্রাহ্মবিবাহে বৰ্ত্তিতে পারে কি না? যদি না পারে তবে ব্রাহ্মবিবাহ বিধিবদ্ধ করিবার উৎকৃষ্ট উপায় অবধারণ করিবার ভার’ দেবেন্দ্রনাথ, কেশবচন্দ্র, দুর্গামোহন দাস, দীননাথ সেন প্রভৃতি সাত জনের একটি কমিটির উপর অর্পণ করা হোক এবং ব্রাহ্মবিবাহ কী তারও সংজ্ঞা নিধাররিত করা হোক১২, এই ছিল প্রস্তাবটির মর্ম। এই প্রস্তাবের পরিণতি কী ঘটেছিল, তা আমরা যথাস্থানে আলোচনা করব।
৯ অগ্রহায়ণ [রবি 24 Nov] কেশবচন্দ্রের কলুটোলার ভবনে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের প্রথম ব্রহ্মোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় দেবেন্দ্রনাথ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সায়ংকালীন উপাসনাকার্য সম্পন্ন করেন।
১১ মাঘ [ শুক্র 24 Jan 1868] ব্রাহ্মসমাজের অষ্টত্রিংশ সাংবৎসরিক উৎসবের দিনে মেছুয়াবাজার স্ট্রীটে [বর্তমান কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রীট] ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজসংক্রান্ত উপাসনা-মন্দির’-এর ভিত্তি সংস্থাপিত হয়। এই উপলক্ষে সারাদিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল।
এই দিন কলকাতা ব্রাহ্মসমাজের সাংবৎসরিক অনুষ্ঠানে প্রাতে অযোধ্যানাথ পাকড়াশী ও বেচারাম চট্টোপাধ্যায় বক্তৃতা করেন ও ৪টি ব্রহ্মসংগীত হয় এবং সায়ংকালীন উপাসনায় হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, বেচারাম চট্টোপাধ্যায় ও অযোধ্যানাথ পাকড়াশীর বক্তৃতার পর ৪টি ব্রহ্মসংগীত হয়ে সভা ভঙ্গ হয়। এই অনুষ্ঠানের বর্ণনা পাঠ করে ২৭ মাঘ দেবেন্দ্রনাথ সাহেবগঞ্জ থেকে গণেন্দ্রনাথকে লেখেন : ‘১১ মাঘে তোমরা সকলে একত্রে ভোজনাদি করিয়া মনকে তৃপ্ত করিয়াছিলে এ সংবাদে আমার মন পরিতৃপ্ত হইল এবং সন্ধ্যার সময়ে উপাসনা কালীন পাকড়াশীর ব্যাখ্যান যে তোমারদের হৃদয়কে স্পর্শ করিয়াছিল ইহাতেও অতিশয় সন্তুষ্ট হইলাম।’১৩
৯ কার্তিক [শুক্র 25 Oct 1867] সন্ধ্যায় চিৎপুর রোড়ে ব্রাহ্মসমাজগৃহে পুস্তকালয়ের হলে রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে Brahmo Union Society প্রতিষ্ঠিত হয়। ১১ কার্তিক দেবেন্দ্রনাথ এই সমিতির সভায় ‘ব্রাহ্মদিগের ঐক্যস্থান’ বিষয়ে উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন। এই ভাষণে তিনি ব্রাহ্মসমাজের সেই সংকটের মুহূর্তেও তাঁর পুরোনো বিশ্বাসের কথাই জোর দিয়ে বলেন :
পৌত্তলিকতা পরিত্যাগ করিয়া অথচ হিন্দুসমাজের যোগ রক্ষা করিয়া ব্রাহ্মধর্ম্মের অনুষ্ঠানে এইক্ষণে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। এমন সময় এখন উপস্থিত হইয়াছে, ইহাতে আর কালবিলম্ব সহ্য হয় না। সন্তান হইলে পৌত্তলিক মতে ষষ্ঠীপূজা হয়, তাহার স্থানে ব্রাহ্মধৰ্ম্মের মতে ব্রহ্মপূজা হয় ইহাতে হিন্দুসমাজের বড় আপত্তি নাই। ঈশ্বরের উপাসনা করিয়া পুত্রের নামকরণ ও অন্নপ্রাশন দিলেও হিন্দুসমাজের তত বিরক্তি নাই। … পৌত্তলিক ভাগ পরিত্যাগ করিয়া প্রাচীন ব্যবস্থানুগত ব্রাহ্ম-বিবাহ-পদ্ধতি প্রচলিত করিলে তাহাতে হিন্দুসমাজের বড় অমত হইতে পারে না। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হিন্দুধর্ম্মে দাহের বিধান, ব্রাহ্মধর্ম্মেও দাহের বিধান আছে, বরং পুরাণের মন্ত্র পরিত্যাগ করিয়া বেদের মন্ত্র তাহাতে যুক্ত করিয়া দেওয়াতে সাধারণের আরো মনঃপূত হইয়াছে। এমন শুনা গিয়াছে, কোন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বলিয়াছেন যে, যদিও আর কোন অনুষ্ঠান ব্রাহ্মধৰ্ম্ম-মতে না হউক, আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যেন ব্রাহ্মধর্ম্মমতে হয়। তেমনি শ্রাদ্ধের সময় পিণ্ডদানের পরিবর্ত্তে পিতামাতার আত্মার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করিয়া দেখিয়াছি যে কোন কোন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত সেই প্রার্থনা শুনিয়া অশ্রুপাত করিয়াছেন। ব্রাহ্মেরা এই প্রকার দৃষ্টান্ত দেখাইতে পারিলে অপৌত্তলিক ব্রাহ্মধর্ম্মের অনুষ্ঠান হিন্দুসমাজে ক্রমে যুক্ত হইতে পারিবে—তবে কেন তাহা হইতে বিযুক্ত হইবে।১৪
এই মনোভাব থেকেই দেবেন্দ্রনাথ বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদেরও আমন্ত্রণ জানাতেন, কিন্তু সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে ধর্ম্মতত্ত্ব, Indian Mirror প্রভৃতি পত্রিকায় এসম্পর্কে বহু নিন্দাবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-য় প্রকাশিত দুটি মন্তব্য থেকে। ৯ চৈত্র ১২৭৩ [শুক্র 22 Mar 1867] তারিখে রাজনারায়ণ বসুর দ্বিতীয়া কন্যা হেমলতার সঙ্গে অপৌত্তলিক ব্রাহ্ম পদ্ধতি অনুসারে দীননাথ দত্তের বিবাহ হয়। তত্ত্ববোধিনী, বৈশাখ ১৭৮৯ শক সংখ্যায় [পৃ ১৯] সংবাদটি দিয়ে মন্তব্য করা হয় : ‘এই বিবাহোপলক্ষে বর-পক্ষ ও কন্যা-পক্ষ, কাহাকেই হিন্দুসমাজের বিশেষ আক্রোশে নিপতিত হইতে হয় নাই। এক্ষণে বোধ হইতেছে হিন্দু সমাজের মধ্যে থাকিয়া ব্রাহ্মধর্ম্মের অপৌত্তলিক অনুষ্ঠান সহজ হইয়া আসিতেছে। কিন্তু যদি এইটি অসবর্ণ বিবাহ হইত, তাহা হইলে কোন প্রকারেই হিন্দু সমাজের সহনীয় হইত না।’ আবার ২৯ আশ্বিন ১২৭৪ [সোম 14 Oct 1867] তারিখে ঠাকুরবাড়ির সেরেস্তার কর্মচারী প্রসন্নকুমার বিশ্বাসের সঙ্গে ব্রজসুন্দর মিত্রের তৃতীয়া কন্যার বিবাহ ব্রাহ্মমতে নিষ্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে বর দক্ষিণরাঢ়ী শ্রেণীর ও কন্যা বঙ্গজ-কায়স্থ শ্রেণীর, বল্লাল সেন-প্রবর্তিত কৌলীন্য প্রথা অনুযায়ী যেক্ষেত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। তত্ত্ববোধিনী-র অগ্রহায়ণ সংখ্যায় [পৃ ১৬৩] এই সংবাদ দিয়ে লেখা হয়েছে : ‘এই উভয় শ্রেণীর আদানপ্রদান প্রাচীন নিয়মানুসারে নিষিদ্ধ না থাকিলেও আধুনিক বল্লালী প্রথা রক্ষা করা অনাবশ্যক ও অনিষ্টকর বোধে ব্রজসুন্দর বাবু ও প্রসন্নবাবু তাহা রক্ষা করেন নাই। এক্ষণে ব্রাহ্মণদিগের মধ্য হইতেও এই রূপ শ্রেণী তিরোহিত হয় তদ্বিষয়েও সকলের যত্ন করা কর্ত্তব্য।’ সেই জন্যই বারেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ আশুতোষ চৌধুরীর সঙ্গে যখন রাঢ়ী শ্রেণীর দেবেন্দ্রনাথের পৌত্রী প্রতিভা দেবীর বিবাহ হয় [৩০ শ্রাবণ ১২৯৩], তখন এটিকে উক্ত পত্রিকায় ‘সমাজ সংস্কার’ নামে অভিহিত করা হয়েছিল।
আদি [কলকাতা] ও ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ প্রসঙ্গে এই দীর্ঘ আলোচনার জন্য পাঠকদের কাছে আমাদের কিছু কৈফিয়ৎ দেওয়া প্রয়োজন। যদিও এইসব ঘটনার সঙ্গে আপাতত রবীন্দ্রজীবনের কোনো প্রত্যক্ষ যোগ নেই, কিন্তু মনে রাখা দরকার পরবর্তীকালে দীর্ঘদিনের জন্য [১২৯১-১৩১৮] আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে ঐ বিষয়ে বিভিন্ন বিতর্ক ও নীতি-নির্ধারণের ব্যাপারে যুক্ত থাকতে হয়েছিল এবং অন্তত দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত [৬ মাঘ ১৩১১] তাঁর প্রবর্তিত অনুষ্ঠান-পদ্ধতি তিনি প্রায় বিনা প্রতিবাদেই মেনে চলেছিলেন। রবীন্দ্রজীবনের সেই অধ্যায়টির যথার্থ পরিপ্রেক্ষিতটি বুঝতে গেলে বর্তমান আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা স্বীকার করতেই হয়। অথচ সেই সময়ে রবীন্দ্রজীবনের ব্যক্তিগত বিবরণের আধিক্য থাকায়, এই ধরনের আলোচনার সুযোগ অল্প। সেই কারণেই আমরা এখানেই বিষয়টির বিভিন্ন দিক দেখে নেবার প্রয়াস করেছি। তাছাড়া এই যুগটিকেও বর্তমান আলোচনার সাহায্যে খানিকটা বুঝে নেওয়া সম্ভব বলে আমরা আশা করি।
প্রাসঙ্গিক তথ্য : ৩
চৈত্র মেলা বা জাতীয় মেলার দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশন চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ৩০ চৈত্র ১২৭৪ শনি 11 Apr 1868 তারিখে আশুতোষ দেবের বেলগাছিয়ার বাগানে অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত অল্প সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে প্রথম বার্ষিক অধিবেশনটির আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বৎসরের গোড়া থেকেই এটিকে সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়। The National Paper-এর 19 Jan 1867 সংখ্যায় [Vol. III. No. 25] মেলার উদ্দেশ্য ও ছ-টি সাধনোপায় নির্দিষ্ট করা হয়। পরের সংখ্যাতেই একটি ব্যায়ামাগার [gymnasium] স্থাপনের প্রস্তাব করা হয় ও পুজোর ছুটির পরে সার্কুলার রোডের ৬৪ নং ফরিদ পুকুর লেনে শিবচন্দ্র গুহের বাগানবাড়িতে ব্যায়াম-শিক্ষালয় খোলা হয়। 7 Dec চোরবাগানে গোপালচন্দ্র সরকারের প্রিপারেটরি ইনস্টিটিউশন ভবনে আর একটি ব্যায়ামশিক্ষা-কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়। স্বনির্ভরতার যে আদর্শ মেলা-কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছিলেন, এগুলি তারই গঠনমূলক নিদর্শন।
পূর্ব বৎসরে মেলাটিকে ‘National Gathering’ নামে অভিহিত করা হয়েছিল, বর্তমান বর্ষে সেই নামটি বহাল থাকলেও The National Paperএর 11 Mar 1868 সংখ্যায় [Vol. IV, No. 11, p. 132] ‘চৈত্রমেলা’ নামেই অনুষ্ঠান-পত্র [Prospectus] প্রকাশিত হয়। গণেন্দ্রনাথ সম্পাদক ও নবগোপাল মিত্র সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাধারণ বিভাগ, প্রগতি বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, প্রদর্শনী বিভাগ, সংগীত বিভাগ এবং ব্যায়ামশিক্ষা বিভাগের সদস্য ও হিসাবপরীক্ষকদের নামেও ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানের দিন বেলা প্রায় দশটার সময় ভবশঙ্কর বিদ্যারত্ন সভার উদ্বোধন করলে সত্যেন্দ্রনাথ-রচিত বিখ্যাত জাতীয় সংগীত ‘মিলে সবে ভারত সন্তান’ [খাম্বাজ-একতালা] দিয়ে সভার কার্য আরম্ভ হয়। উল্লেখযোগ্য, অসুস্থতার ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসে সত্যেন্দ্রনাথও মেলার কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন, উক্ত সংগীতটি মেলার জন্যই লেখা। বলা যেতে পারে, এই সংগীতটি দিয়ে বাংলা সাহিত্যের জাতীয়-সংগীত শাখার সূত্রপাত। এই মেলাতেই গণেন্দ্রনাথ রচিত ‘লজ্জায় ভারত যশ গাহিব কি করে’ [বাহার—যৎ] জাতীয়-সংগীতটিও গীত হয়। এই উপলক্ষে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ‘জন্মভূমি জননী, স্বর্গের গরীয়সী”-শীর্ষক কবিতাটি লেখেন। এসম্পর্কে তাঁর জীবনস্মৃতি-তে আছে : ‘নবগোপালবাবু দেখা হইলেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় ভাবের কবিতা লিখিতে অনুরোধ করিতেন। জ্যোতিবাবু এ সময়ে কবিতা লিখিতেন না, বা ইহার পূর্ব্বেও কখন লেখেন নাই। কিন্তু ক্রমাগত অনুরুদ্ধ হওয়ায়, তিনি একটি কবিতা লিখিয়াছিলেন। … সেবারকার মেলায় শিবনাথ ভট্টাচার্য (পরে শাস্ত্রী), অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ও জ্যোতিবাবু—এই তিন জনের তিনটি কবিতা পঠিত হয়। জ্যোতিবাবুর কণ্ঠস্বর খুব ক্ষীণ, অত ভিড়ের মধ্যে ঠিক শোনা যাইবে না বলিয়া হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেটি বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে পাঠ করিয়াছিলেন।’১৫ গণেন্দ্রনাথ মেলার উদ্দেশ্যে বর্ণনা করার পর নবগোপাল মিত্র ১৭৮৯ শকে ‘দেশ মধ্যে বা দেশ সম্পর্কে কি কি প্রধান ঘটনা’ ঘটেছে তার বিবরণ পাঠ করেন। পূর্বোক্ত তিনটি কবিতা পাঠ, মনোমোহন বসুর বক্তৃতা, সংস্কৃত কবিতা ও রচনা পাঠ, সংগীত, প্রদর্শনী, ব্যায়াম, রাসায়নিক পরীক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৬টায় সভা ভঙ্গ হয়। এই উপলক্ষে যে কার্যবিবরণীটি পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়, সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা-র ৬৭ বর্ষ ২য় সংখ্যায় [পৃ ১০৬-১৬০] সেটি সম্পূর্ণ আকারে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক তথ্য : ৪
এই বৎসর দ্বিজেন্দ্রনাথের ‘তত্ত্ববিদ্যা ২য় খণ্ড—কর্মকাণ্ড’ [১২ ফাল্গুন 23 Feb 1868] ও সত্যেন্দ্রনাথের শেকস্পীয়রের Cymbeline নাটক অবলম্বনে লিখিত ‘সুশীলা-বীরসিংহ নাটক’ [২০ ফাল্গুন 2 Mar] প্রকাশিত হয়। নাটকটির ভাষা ও প্রকাশের বন্দোবস্ত নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বৎসরের শুরু থেকেই গণেন্দ্রনাথের সঙ্গে যে দীর্ঘ পত্রালাপ করেছিলেন, শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনে তার অনেকগুলিই রক্ষিত আছে; সত্যেন্দ্রনাথের মনের একটি স্বল্পজ্ঞাত দিক এই পত্রগুলিতে উদঘাটিত। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের গ্রন্থাগারে বিভিন্ন সংশোধন যুক্ত নাটকটির একটি স্টেজ-কপি দেখে মনে হয়, কোনো-এক সময়ে এটি অভিনয়ের আয়োজনও করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রচেষ্টাটি সার্থক হয়েছিল কিনা জানা যায় না।
উল্লেখপঞ্জি
১ জীবনস্মৃতি ১৭। ২৭৮-৭৯
২ দাশরথি রায় [1803-57], বিখ্যাত পাঁচালীকার
৩ জীবনস্মৃতি ১৭। ২৭৯
৪ ছেলেবেলা ২৬। ৫৯৭
৫ জীবনস্মৃতি ১৭। ২৬৭
৬ ঐ ১৭। ২৭৬
৭ বি. ভা প., বৈশাখ-আষাঢ় ১৩৭৫। ২৫১-৫২, পত্র ১৩
৮ ঐ। ২৫৪, পত্র ১৭
৯ আচার্য্য কেশবচন্দ্র ১। ৩৩১
১০ ঐ ১। ৪০৪-০৫
১১ দ্ৰ ঐ ১। ৪০৫
১২ দ্ৰ ঐ ১। ৪০৯
১৩ বি. ভা. প., বৈশাখ-আষাঢ় ১৩৭৫। ২৫২, পত্র ১৪
১৪ তত্ত্ব, চৈত্র। ২৩৪-৩৫
১৫ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবন-স্মৃতি। ১২৮
* কিশোরীনাথ চট্টোপাধ্যায় 1856-এর পূর্ব থেকেই দেবেন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত অনুচর, সুবৃদ্ধ অবস্থায় অবসর নেওয়ার পরও ঠাকুরবাড়ি থেকে আমৃত্যু পেন্সন পেয়েছেন।
* ‘… মায়ের খুড়ী, কাকার দ্বিতীয় পক্ষের বিধবা স্ত্রী…তিনি প্রায় মায়েরই সমবয়সী ছিলেন’—পুরাতনী। ২৪
† বস্তুত বোধোদয়-এ এ-ধরনের কোনো প্রসঙ্গ নেই; সম্ভবত ‘বর্ণ’ শীর্ষক অনুচ্ছেদটি পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে গৃহশিক্ষক এই আলোচনা করেছিলেন।
* অভিনন্দনপত্রে এই তারিখটি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একমাস পরে দেবেন্দ্রনাথের হাতে দেওয়া হয়—‘সভার নিৰ্দ্ধারণানুসারে অভিনন্দনপত্র (৫ই কার্ত্তিক না দিয়া) এক মাসের পর প্রদত্ত হয়। ব্রাহ্মগণের নাম স্বাক্ষরাৰ্থ এই এক মাসকাল প্রতীক্ষিত হইয়াছিল।’—আচাৰ্য কেশবচন্দ্র ১। ৪১২