স্ট্রেঞ্জার – ৫৫

পঞ্চান্ন

ধুপ-গুড়-গুড় আওয়াজ তুলছে অফ করে দেয়া হামভির উত্তপ্ত ডিসেল মোটর। বনেটের তলা থেকে আসছে নিয়মিত টিক- টিক আওয়াজ। ভাল করেই বুঝেছে রানা, এটা এখন আর রেসকিউ মিশন নয়। আর কখনও জীবিত দেখবে না এলিসা আর বাচ্চাদেরকে বিপদের সময় যারা ওকে আশ্রয় দিয়েছিল। ওর একমাত্র কাজ এখন চরম প্রতিশোধ নেয়া।

আহত পুলিশদেরকে খুঁজছে নোভাকরা। কাউকে পেলেই মাথায় গুলি করছে। তবে কমে গেছে পিস্তলের গুলির আওয়াজ। নিজেদের কাজে ব্যস্ত দানবের মত লোকগুলো। সেই সুযোগে নিঃশব্দে, গোপনে হামভির ক্যাবে উঠল রানা। জটিল কোনও পরিকল্পনা নেই। চালু করবে গাড়িটা, একে একে পিষে মারবে কুকুরগুলোকে। যদি মরতেও হয়, আপত্তি নেই ওর।

কিন্তু কামানের ওপর চোখ পড়তেই প্ল্যান বদলে গেল রানার। রোটারি ক্যাননের রিসিভারে রয়েছে গুটিয়ে রাখা অ্যামিউনিশন বেল্ট। ওটার ভেতর প্রচুর শেল। যে কারণেই হোক বিকল হয়েছে কামান। প্রাক্তন আর্মি অফিসার হিসেবে কৌতূহল বোধ করছে রানা। অস্ত্র সবসময় সাধারণ মেশিন। ওটা যখন নষ্ট হয়, তার কোনও না কোনও কারণ থাকে। গুলি বা শেল অনেক কারণেই ফেঁসে যেতে পারে। এমনিতেই আটকা পড়ে ব্রিচ। অকেজো ইঞ্জিনের মত নষ্ট হয় অটোমেটিক অস্ত্র। তবে রাউণ্ড মিসফায়ার হলেও এম৬১ ভালক্যান রোটারি ক্যানন এমনভাবেই তৈরি, এক্সটার্নাল ইলেকট্রিক পাওয়ার ড্রাইভের ফলে প্রায় কোনভাবেই গোলাবর্ষণ বন্ধ হয় না।

কথাটা ভাবতেই কামানের ওপর চোখ বোলাতে শুরু করেছে রানা। চট্ করে দেখল, হামভির পেছনে মস্ত ইলেকট্রিক মোটরের হাই ক্যাপাসিটি মেরিন ব্যাটারি থেকে খুলে গেছে ইলেকট্রিকের একটা তার। এমনটা হয়েছে গোলাবর্ষণের সময় জোর কাঁপুনির জন্যে। ক্রোকোডাইল ক্লিপ আটকে নিলেই চালু হবে ভালক্যান রোটারি ক্যানন।

উঠানে থেমেছে পিস্তলের পটকার মত আওয়াজ। চুরমার হওয়া গাছগুলোর কাছে জড় হচ্ছে নোভাকদের দলবল। আলাপ করছে নিজেদের ভেতর। হাসছে কেউ কেউ। কে যেন জ্বেলে নিল সিগারেট। স্পটল্যাম্পের আলোর শেষ সীমায় আবছাভাবে লোকগুলোকে দেখল রানা। একে একে গুনল। দলে তারা এগারোজন। তবে তাদের সঙ্গে এখন নেই রিচি ও হ্যাঙ্ক। অন্য কোথাও গেছে পশু দুটো। –

তাদেরকে এখন পাবে না রানা। পরে খুঁজে নিতে হবে।

হাঁচড়েপাঁচড়ে হামভির পেছনে গেল রানা। তারের শেষমাথার ক্রোকোডাইল ক্লিপ খুলে আটকে দিল ব্যাটারির টার্মিনালে। একবার ফুলকি উঠল ওটা থেকে। বৈদ্যুতিক শক্তি ফিরে পেয়েছে গ্যাটলিং গান।

খোলা ককপিটে ফিরে ড্যাশবোর্ডে ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইমার্জেন্সি স্টপ বাটনের মত জ্বলজ্বলে লাল ফায়ার বাটন দেখল রানা। বৈদ্যুতিক কাজে দক্ষ রিচি নোভাক। তবে ভাল কাজে কখনও ব্যয় করেনি নিজের সময়। এবার তারই কামান নিভিয়ে দেবে তার দলের এগারোজনের প্রাণবাতি।

কামানের নল ঠিক দিকে তাক করে হাতের তালু দিয়ে লাল বাটনে চাপ দিল রানা। চারপাশ ভরে গেল অকল্পনীয় কর্কশ, বিকট আওয়াজে। চালু হয়েছে অটো ক্যানন। ওটার গর্জন ছাপিয়ে একটা আর্তনাদও কানে এল না রানার।

সাইটে ছিল এগারোজন। কচু কাটা হলো তাদের বেশ ক’জন। হামভির স্পটলাইটের উজ্জ্বল আলোয় রানা দেখল, রক্তিম মিহি কণা হয়ে গেল সাতজন। ডিরেক্ট হিট। অন্য চারজন ডাইভ দিয়ে পড়েছে রাইনো গাড়ির ওদিকে। হয়তো ভাবছে ২০এমএম ক্যানন শেল ছুঁতে পারবে না তাদেরকে। কিন্তু মস্ত ভুল ভেবেছে তারা। কামানের নল সরিয়ে রাইনো গাড়ির দিকে তাক করল রানা।

সংক্ষিপ্ত হলেও দেখার মত হলো গাড়িটার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা। স্রেফ ওটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল কামানের গোলা। মোম দিয়ে তৈরি জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠির মত উবে গেল মোটা চেসিস। আগুন ধরতেই বিস্ফোরিত হলো গাড়িটা। কামানের নল সরাল না রানা। মাত্র কয়েক সেকেণ্ডে ওখানে থাকল শুধু বিধ্বস্ত লোহার জঞ্জাল। গাড়ির ওদিকে যারা ছিল, কুচি-কুচি হয়েছে কাটা টমেটোর মত।

আবারও থেমেছে গ্যাটলিং গান। এবার সত্যিই বেল্টে অ্যামিউনিশন আর নেই। তীক্ষ্ণ আওয়াজে বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে রানার কানের বারোটা বাজাচ্ছে কামানের ছয় ব্যারেল। শেরিফ স্যাম শেরিড্যানের বন্দুক হাতে লাফিয়ে হামভি থেকে নামল রানা। এবার খুঁজবে রিচি ও হ্যাঙ্ক নোভাককে। এখন তাদেরকে সাহায্য করার জন্যে জঙ্গলে দলের কেউ নেই।

ছায়ার ভেতর কয়েক পা যেতেই রানার পায়ে বাধল নরম কী যেন। নিচে চেয়ে দেখল কামানের গোলার আঘাতে দু’টুকরো হয়েছে পল নিউম্যান। তার মাথায় গুলি করা হয়নি। রক্তাক্ত লাশের হাতের কাছেই কাদার ভেতর নাক গুঁজে পড়ে আছে ওর গ্লক।

তুলে নিয়ে প্যান্টের পকেটে পিস্তলটা ঢুকিয়ে রেখে এগোতে গিয়েও থামল রানা। আলোর সীমানায় ধরা পড়েছে কারও নড়াচড়া। ঝোপঝাড়ের মাঝ দিয়ে শেরিফ স্যাম শেরিড্যান আর জেনি লরেন্সের দিকে চলেছে সে।

চট্‌ করে লোকটার দিকে বন্দুক তাক করল রানা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *