3 of 8

রমণী সমাজে

রমণী সমাজে

পুরো কথাটা হল ‘সুত-মিত-রমণী সমাজে।’ সুত মানে হল পুত্র, মিত মনে হল মিত্র এবং সেইসঙ্গে রমণী সমাজ। বিষয়টা খুব বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই শুধু রমণী-সমাজই থাক এবারের বিষয়।

প্রথমে একটা মেয়েদের ক্লাব দিয়ে আরম্ভ করি। সেখানে এক পুরুষ-বক্তা কঠোর ভাষায় আধুনিকা রমণীদের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রার ঘোর নিন্দা করছিলেন। কতক্ষণ আর মহিলা শ্রোতারা সহ্য করবেন; সভাকক্ষ থেকে কয়েকজন রেগে বেরিয়ে গেলেন। কয়েকজন টেবিল চাপড়াতে লাগলেন।

তাতেও কিন্তু ভদ্রলোক নিরস্ত হলেন না। অবশেষে একজন অতি-মুখরা রমণী উঠে সরাসরি তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, মশায়, আপনি যে ধরনের উচ্ছৃঙ্খল মেয়ের নিন্দে করছেন, জীবনে সে রকম একটি মেয়েও কি আপনি দেখেছেন?

প্রশ্নকারিণীর দিকে শীতল হিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বক্তা অতি ঠান্ডা গলায় জানালেন, ‘একটি মানে? সে ধরনের একটিকে তো আমি নিজেই বিয়ে করেছি।’

এর পরে অবশ্য আর কথা চলে না।

মহিলাদের সম্পর্কে কটূক্তি, নিন্দা চিরকালই পুরুষমানুষেরা করেছে— এ তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। আমরা ছোট বয়সে গ্রামাঞ্চলে শুনেছি, মহিলাদের মানুষ বলে গণ্য করা হয় না। সেই ধুতি-শাড়ির পৃথিবীতে প্রচলিত কথাই ছিল বারো হাত কাপড়ে কাছা দেয় না যারা, অর্থাৎ মহিলারা, তারা আবার মনুষ্য পদবাচ্য কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।

দুঃখের বিষয়, আমাদের বঙ্গদেশীয় পূর্বপুরুষেরা তখনও দক্ষিণী রমণীদের দেখেননি, যারা সত্যিই কাছা দিয়ে শাড়ি পরে। তখনও ভারতবর্ষের নানা প্রদেশ, নানা অঞ্চল এত কাছাকাছি হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে বাংলার অভ্যন্তরে, এমনকী ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের মতো শহরেও দক্ষিণ ভারতীয় খুব কম দেখা যেত, বলা উচিত দেখা যেত না।

এই প্রসঙ্গে আর-একটা কথাও খেয়াল রাখা উচিত— কাছা দিয়ে শাড়ি পরার চল যাদের মধ্যে ছিল, তারাও কিন্তু আর কাছা দিয়ে শাড়ি পরছে না। কিছু কিছু সাবেকি পরিবারে হয়তো এখনও কাছা দেওয়ার চল আছে, তবে সারা ভারতে এখন শাড়ি পরার একটাই রীতি, তবে হিন্দুস্থানি ঢঙে অনেকে আঁচলটা বুকের ডানদিকে না দিয়ে বাঁয়ে দেয়।

রম্যরচনার বিষয়বস্তু থেকে একটু দূরে সরে গেলাম। তা ছাড়া শাড়ির ব্যাপারটা আমার বিষয়বস্তু হতে পারে না।

সুতরাং আবার মহিলাদের কথায় যাই।

মহিলাদের সঙ্গে পুরুষদের পার্থক্য বোঝাতে এক মহাপুরুষ একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কোনও পুরুষমানুষকে যদি কোনও কথা বলো তা হলে সে এক কান দিয়ে শুনবে আর অন্য কান দিয়ে সেই কথা বেরিয়ে যাবে।

আর যদি কোনও মহিলাকে কোনও কথা বলো তা হলে সে দু’ কান দিয়ে শুনবে, তারপর আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলেই সেই কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে।

শিল্পী পিকাসো একদা একটি বিপজ্জনক রসিকতা করেছিলেন মেয়েদের সম্পর্কে। কে যেন তাঁকে এমনি এমনিই কথাচ্ছলে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আচ্ছা, বিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় ক্রমশ বেশি বুড়োটে দেখায় কেন?’

এই প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চিন্তা করেছিলেন বিখ্যাত চিত্রকর। তারপর একটু ঠোঁট টিপে হেসে উত্তর দিলেন, ‘মেয়েদের ছেলেদের থেকে বেশি বুড়োটে দেখায়, তার কারণটা সম্ভবত এই যে, একজন পঁচিশ বছর বয়সি মহিলা, তার বয়সটা হয়তো সত্যিই পঁচিশ নয়, তিরিশ কিংবা হয়তো চল্লিশও হতে পারে।’

সত্যিই মেয়েদের বয়স ব্যাপারটা খুব গোলমেলে— এ নিয়ে জগৎসংসারে কতরকম ঠাট্টাই না প্রচলিত আছে।

সেই গল্পটা তো সবাই জানে।

ঘোড়দৌড়ের মাঠে এক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে বলেছিল, ‘তোমার বয়সটা বলো?’ প্রেমিকা হঠাৎ এই প্রশ্নে অবাক হয়ে বলেছিল, ‘কেন? হঠাৎ ঘোড়দৌড়ের মাঠে আমার বয়স দিয়ে কী হবে?’

প্রেমিক বলেছিল, ‘তোমার যত বয়স, তত নম্বর ঘোড়ার ওপর বাজি রাখব। দেখি তুমি কীরকম লাকি।’

প্রেমিকা সলজ্জ হেসে বলেছিল, ‘চব্বিশ’ এবং দুরুদুরু হৃদয়ে ঘোড়দৌড়ের বাজির পরিণতি লক্ষ করছিল। ঘোড়দৌড় শেষ হল, বাজি জিতল বত্রিশ নম্বর ঘোড়া এবং প্রেমিকা সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।

কারণ নিশ্চয় একটাই, সে যদি তার সঠিক বয়েসটা বলত, বাজিটা তারাই জিতত।

অনেক গোলমেলে লোক আছেন, যাঁরা বলেন, মেয়েরা সত্যি সত্যি মোট বয়সটা কমান না কখনও। গড়ে ঠিকই থাকে, শুধু নিজের বয়সটা যতটুকু কমান ততটাই যোগ দিয়ে দেন ননদের কিংবা বান্ধবীর বয়সের সঙ্গে।

মেয়েদের শাড়ি হল, বয়স হল এবার অন্য কিছু বলি, বুদ্ধির কথা বলি।

গল্পটি বিদেশি। এক মহিলা এক বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে— মানে যেসব বিশাল দোকানে জামা-জুতো, বই-খাতা, খেলনা স্টেশনারি— যাবতীয় জিনিস বিক্রি হয়, সেখানে গিয়ে দোকানের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেন।

ম্যানেজার ভদ্রমহিলার সাক্ষাতের কারণ জানতে চাইলে ভদ্রমহিলা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি কোনও জিনিস পছন্দ না-হলে সে-জিনিস কেনার পরে ফেরত নেন?’

কঠিন প্রশ্ন। ম্যানেজার সাহেব বেশ একটু চিন্তা করে বললেন, ‘জিনিসটা কী, সেটা দেখতে হবে।’

ভদ্রমহিলা তাঁর ব্যাগ থেকে একটা বই বার করে বললেন, ‘জিনিসটা হল একটা বই।’

ম্যানেজার বইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে বললেন, ‘কেন, বইটা কী দোষ করল? খুব নাম করা লেখকের বই।’

মহিলা বললেন, ‘বইটা আমার মোটেই পছন্দ হয়নি। শেষটা ভাল হয়নি। তাই ফেরত দিতে চাই।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *