3 of 8

তৃতীয় কোকিল

তৃতীয় কোকিল

প্রথম এবং দ্বিতীয় কোকিলের পরে, মাননীয় পাঠক, মাননীয়া পাঠিকা, তৃতীয় কোকিল অনিবার্য।

কিন্তু কথা দিচ্ছি, এসব রচনা আপনাদের যত ভালই লাগুক, (অথবা মতান্তরে, অথবা মনান্তরে)

যত খারাপই লাগুক এই শেষ, এ-সম্পর্কে, এ-বিষয়ে শেষ কিস্তি।

সাহেবদের টাইমস কাগজের চিঠিপত্রে যাই ছাপা হোক কোকিল বিষয়ে সাহেব কবিরা যা-কিছু লিখে থাকুন কোকিল নিয়ে, আমরা অনেককাল ধরে কোকিল সম্পর্কে অনেক কিছু জানি।

কোকিল বসন্তের পাখি, কোকিল কাকের বাসায় ডিম পেড়ে যায়, কোকিল চাঁদিনী রাতে মর্মস্পর্শী বিলাপ করে। গল্পে, গানে, গাথায় গ্রাম্য কবির ‘ও কোয়েল, ও কোয়েল’ থেকে মধুসূদন, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ কে না কোকিলের কথা ছত্রে-ছত্রে লিখেছেন।

সে যা হোক, এখনও আমাদের আলোচ্য টাইমস কাগজের কোকিল।

১৯৮৩ সালের চৌদ্দই জুন শ্রীমতী রোজমেরি স্যামসন টাইমস সম্পাদককে লিখেছিলেন,

মহোদয়,

গতকাল রাতে, প্রায় মধ্যযামে ঝড় আসার একটু আগে আমি, আমার স্বামী এবং আমাদের এক প্রতিবেশী বন্ধু স্পষ্ট কোকিলের ডাক শুনেছি। বেশ কয়েকবার শোনা গেছে সেই ডাক এবং মনে হয়েছে পাখিটা উড়তে উড়তে ডাকছে।

আমি এর আগে কখনও রাতেরবেলায় কোকিলের ডাক শুনিনি। পাখিটা কি আসন্ন ঝড়ের ভয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছিল? কিন্তু তা হলে অন্য কোকিলগুলো ওই সময়ে ডাকল না কেন?

ইতি

ভবদীয়

রোজমেরি স্যামসন

শ্রীমতী স্যামসনের এই চিঠি প্রকাশের চার দিন পরে ১৮ জুন তারিখে ডাঃ পামেলা প্রিয়েস্ট নান্মী এক ভদ্রমহিলা প্রসঙ্গক্রমে লিখেছিলেন,

মহোদয়,

শ্ৰীমতী রোজমেরি স্যামসনের ঝড়ের রাতের কোকিল ডাকার বিষয়ে চিঠি পড়ে আমার মনে পড়ছে আমার ছোটবেলার কথা। যুদ্ধাক্রান্ত সমারসেটে একদিন যখন অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট কামানগুলো রাতেরবেলায় গর্জে উঠেছে সঙ্গে সঙ্গে একদিক থেকে একটা বুলবুলি আর অন্যদিক থেকে একটা কোকিল একসঙ্গে গান জুড়ে দিল।

ইতি

ভবদীয়

পামেলা প্রিয়েস্ট

কিন্তু এখানেই শেষ নয় এবং পরেও শ্রীমতী স্যামসনের চিঠির প্রসঙ্গে টাইমস কাগজের এক কৌতুকপরায়ণ পাঠক, ভদ্রলোকের নাম মিস্টার ডগলাস ভারনন। এক মজার চিঠি লিখেছেন,

মহাশয়,

শ্রীমতী রোজমেরি স্যামসন সম্ভবত জানে না যে কোকিলদের স্বভাবে একটা বিচিত্র দিক হল যে সে যদি কোনও মতে টের পায় যে আশপাশের কাছাকাছি কোথাও টাইমস পত্রিকার কোনও সম্ভাব্য পত্রদাতা রয়েছে তা হলে আর মাথা খারাপ হয়ে যায়, সে উলটো-পালটা আচরণ করতে থাকে।

ইতি

ভবদীয়

ডগলাস ভারনন।

রাতেরবেলায় কোকিল ডাকা আমাদের দেশে কিন্তু খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। জ্যোৎস্না রাতে যখন চাঁদের আলোয় ছেয়ে যায় চরাচর, যখন গ্রীষ্মনিশীথে বাতাস চঞ্চল হয়ে ওঠে, তখন আমবাগানের লিচুবাগানের গভীর থেকে কোকিলের ডাক ভেসে আসা স্বাভাবিক, খুবই স্বাভাবিক, সে ডাক আমরা সবাই শুনেছি, সেই স্বর্গীয় সংগীত শুধু কবিদেরই নয় সাধারণ মানুষকেও মুগ্ধ করে, মোহিত করে, আপ্লুত করে।

কোকিলের প্রসঙ্গ কিঞ্চিৎ বেশি হয়ে গেল। এবার কোকিল সিরিজের শেষে টাইমস কাগজের আর-একটি চিত্তাকর্ষক চিঠির উল্লেখ করি।

এ চিঠিটা লিখেছিলেন বহুযুগ আগে, সেই জন ককবার্ন। বিষয় হল ঘড়ির ভুল সময়।

লন্ডন শহরের রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে বড় বড় ঘড়ি লাগানো আছে বাড়ির গায়ে, বাড়ির চুড়ায়। যেমন আমাদের কলকাতা শহরেও কিছু কিছু আছে।

এইসব পথের ঘড়ির সময় বিষয়ে ককবার্ন সাহেব লিখেছিলেন,

মহোদয়,

লন্ডনের বিভিন্ন রাস্তায় যেসব দেওয়াল ঘড়ি জনসাধারণকে সময় জানানোর জন্যে লাগানো আছে তাদের সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে অবিলম্বে একটা কিছু করা দরকার।

রাজপথে একশো গজের মধ্যে এমন কয়েকটা ঘড়ি পাওয়া যাবে যার একেকটার কাঁটা একেকরকম সময় দিচ্ছে।

ঘড়িগুলোর নিজস্বতা আছে স্বীকার করতে হবে। একটা ঘড়ির সঙ্গে অন্য ঘড়ির বেশ দু’-চার মিনিট ফারাক।

কিন্তু এতে বৈচিত্র্য যাই ঘটুক না কেন, ভুল সময় দেখানো একটা অপরাধ।

অবিলম্বে একটা আইন প্রণয়ন করা উচিত, যে আইন বলে ঘড়ির মালিকদের বাধ্য করা হবে সঠিক সময় প্রদর্শন করতে অন্যথায় ঘড়ির ডায়াল খুলে ফেলা হবে যতদিন না ঘড়ি ঠিকমতো সারানো হয়।

ইতি

ভবদীয়

জন ককবার্ন

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *