3 of 8

ফুটবল

ফুটবল

ফুটবল খেলার অ আ ক খ জানে না এ রকম লোক বা স্ত্রীলোক এদেশে আজকাল বিরল। এমনকী আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি বাড়ির কাজের মেয়ে সে হয়তো গহন পাড়াগাঁ থেকে এসেছে, সেও জানে গোল হওয়া কাকে বলে, গোল খেলে হারতে হয় এবং গোল দিলে জেতা যায়। ফুটবলের এই মূলসূত্রটি সে ভালভাবেই জানে।

অথচ ফুটবল খেলার বয়েস এদেশে, শুধু এদেশে কেন প্রায় সারা পৃথিবীতেই এক শতাব্দীর সামান্য কিছু বেশিকাল এবং ধীরে ধীরে ফুটবল জনপ্রিয় হয়েছে এই শতকেরই গোড়ায়।

ফুটবলের সবচেয়ে বড় কথা এ খেলার মোটামুটি নিয়মকানুন একেবারেই কঠিন নয়, নিতান্ত শিশুও বুঝতে পারে। এক অফসাইড এবং কিঞ্চিৎ পেনাল্টি ব্যাপারটা ছাড়া হ্যান্ডবল, ফাউল, কর্নার, থ্রো সকলেরই বোধগম্য। গোল তো বটেই।

আর তা ছাড়া সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বকাপের কল্যাণে এবং রেডিয়ো, ভিডিয়ো এবং দুরদর্শনের দৌলতে এখন ফুটবল সর্বজনের ঘরের মধ্যে এসে গেছে।

আমাদের মতো গরিব দেশের পক্ষে হাডুডু বা কবাডির মতোই ফুটবল খুবই গ্রহণযোগ্য ক্রীড়া। একটা চামড়ার বল আর একটু ঠান্ডা জায়গা, ঘাসে-ঢাকা মাঠ হোক কিংবা গলির মোড় হোক পেলেই হল। একটা বলে একটা সিজন চলে যায়, একসঙ্গে বাইশজন খেলতে পারে। মাথাপ্রতি দৈনিক খরচ পড়ে পাঁচ থেকে দশ পয়সা।

একটা বল নিয়ে বাইশজন খেলে, একটা পুরনো রসরচনায় বিষয়টাকে একটু অন্যদিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।

এ হল অনেকদিন আগের গল্প। তখনও কিন্তু ফুটবল খেলার রীতিনীতি, আইনকানুন সবাই জানে না ।

সেই আদ্যিযুগে এক নটবর জমিদারবাবু তাঁর মহালে গিয়েছেন তদারকি করতে। বিকেলে ভ্রমণে বেরিয়েছেন তিনি, দেখলেন রাস্তার পাশে মাঠে তাঁর প্রজানন্দনেরা একটা গোলমতো চামড়ার জিনিসে লাথি মেরে কী যেন খেলছে পরম উৎসাহে।

জমিদারবাবু এর আগে ফুটবল খেলা কখনও দেখেননি, এ সম্পর্কে জানেন নাও কিছু।

তিনি বয়স্যদের মারফত গ্রামবাসীদের এবং ফুটবল খেলোয়াড়দের কাছ থেকে জেনে নিলেন এই মজাদার ব্যাপারটা কী এবং তারপর মাঠের ছেলেদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা আমার প্রজাদের ছেলে, আমি খুব দুঃখ পেলাম তোমরা বাইশজনে মাত্র একটা বলে খেলছ। আমি নায়েবমশায়কে বলছি তোমাদের প্রত্যেকের জন্যে একটা করে আলাদা বল কিনে দেবেন’

জায়গাটা ছিল নিম্ন পূর্ববঙ্গের নাবা অঞ্চল। সেখানকার গ্রাম্য কথ্য ভাষা একটু অন্যরকম, জমিদারবাবুর বক্তব্য না বুঝতে পেরে ছেলেরা হাঁ করে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইল। পরে যখন হৃদয়ঙ্গম হল ব্যাপারটা, বাইশটা বল পাওয়ার আনন্দে অবশ্যই ‘হিপ হিপ হুর রে’ করে উঠেছিল।

জমিদারবাবু ‘হির হিপ হুর রে’—কথাটাও আগে শোনেনি…, তবে সে অন্য গল্প।

ঠিক এই জাতীয় আরেকটি গল্প আছে অনেক পরবর্তীকালের, বলা যায় এই আধুনিক সময়ের। এ গল্প এক কাল্পনিক মন্ত্রীকে নিয়ে, সেই তিনি যাঁর নামে অনেক মাথামোটা হাসিঠাট্টার গল্প একদা প্রচলিত ছিল বাজারে।

মাননীয় মন্ত্রীর একটি ফুটবল খেলার ফাইনাল ম্যাচে গিয়েছেন সভাপতি হিসেবে পুরস্কার প্রদান করতে।

খেলার শেষে পুরস্কার প্রদানান্তে তাঁর ভাষণে তিনি বললেন, ‘আমার খুব দুঃখ হচ্ছে এই দেখে যে এ বছর মাত্র দুটি টিম ফাইনালে উঠতে পেরেছে। আমাদের দেশে হাজার হাজার ফুটবল ক্লাব রয়েছে এরপর থেকে আমাদের সচেতন হতে হবে, নজর রাখতে হবে, চেষ্টা করতে হবে যাতে আগামী মরশুম থেকে যতগুলি সম্ভব টিম ফাইনালে উঠতে পারে, ফাইনালে উঠে খেলতে পারে।’

অবশ্য এটি একটি অত্যন্ত হাস্যকর গল্প। শুধু মাননীয় মন্ত্রীর বিচারবুদ্ধির ওপর কটাক্ষপাত করা ছাড়া, তাঁকে হেয় করা ছাড়া এই গল্পের, এই জাতীয় সমস্ত গল্পেরই অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।

অনেকদিন আগে এই জাতীয় হাস্যকর ইন্টারভিউ দেখেছিলাম একটি ইংরেজি হালকা ম্যাগাজিনে। শুনেছি পরবর্তীকালে সেটা ব্রিটিশ দূরদর্শনেও চিত্রান্তরিত হয়।

পরে জেনেছি ওই মজার সাক্ষাৎকার এবং দরদর্শনে রূপান্তর যাঁদের করা তাঁরা ব্রিটিশ দূরদর্শনের অনতি সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌতুকজুটি। এই কৌতুকজুটি, যাঁদের নাম এরিক মোরকাম্বে এবং আরনি ওয়াইজ, তাঁরা পূর্বকালের চলচ্চিত্রের লরেল হার্ডি কিংবা মার্কস ব্রাদার্সের মতোই সর্বজনপ্রিয়।

এরিক মোরকাম্বের ফুটবলের ওপরে সাক্ষাৎকার থেকে কিছু কিছু প্রক্ষিপ্ত অংশ উপহার দিচ্ছি: —

প্রশ্ন: আচ্ছা,আপনি কখনও নিজে ফুটবল খেলছেন?

উত্তর: না। নিজে একা কখনও খেলিনি। অন্যদের নিয়ে একসঙ্গে খেলেছি।

প্রশ্ন: কোথায় খেলতেন?

উত্তর: কেন? ফুটবল খেলার মাঠে।

প্রশ্ন: কী পজিশনে খেলতেন?

উত্তর: অধিকাংশ সময়েই দাঁড়িয়ে খেলতাম, তবে কখনও কখনও পড়ে গেলে শুয়ে বা বসে।

পুনশ্চ:

গল্পটা কার ঘাড়ে চাপাব—পি কে, নাকি অমল দত্ত নাকি সুভাষ ভৌমিক নাকি হাবিবসাহেব? অথবা মিস্টার এক্স ওয়াই জেড?।

এঁদের কেউ কেউ আমার আবার বাল্যবন্ধু, কিংবা কিঞ্চিৎ ঘনিষ্ঠ।

তবু গল্পটা বলি।

কোচসাহেব খেলার আগে তাঁবুতে খেলোয়াড়দের বললেন, ‘তোমরা খুব মনের জোরে সাহসের সঙ্গে খেলে যাও। এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও খেলায় হারিনি, ড্র করিনি, গোল খাইনি।’

একটি নতুন ছেলে, সে এবারই স্ট্যান্ডবাই হিসেবে সুযোগ পেয়েছে হঠাৎ কিছু না বুঝে বলে ফেলল, ‘কিন্তু, স্যার এই তো আমাদের প্রথম খেলা এ মরশুমের।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *