3 of 8

ডাক্তারবাবু নমস্কার

ডাক্তারবাবু নমস্কার

ডাক্তারবাবুদের কথা বলতে গেলে সাতকাহন। ছয়কাহন আগেই বলা হয়ে গেছে, এবার শেষকাহন। এরপরেও যদি কিছু বাকি থাকে থাকবে, আমার কিছু করার নেই।

ডাক্তার নিয়ে এবারের প্রথম গল্পটা নিতান্তই গোলমেলে কিন্তু এটা যে সত্যি গল্প সেটা নিশ্চয় হলফ করে বলতে হবে না।

এক রোগী গেছেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারবাবু তাঁকে খুবই যত্ন করে দেখলেন। অনেক দেখেশুনে ডাক্তারবাবুর কেমন খটকা লাগল, রোগীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তা হলে আপনি বলছেন যে রাতের দিকে কানটা কেমন ভোঁ ভোঁ করে?’

রোগী ঘাড় নত করে স্বীকার করলেন, ‘আজ্ঞে হ্যাঁ।

ডাক্তারবাবুর আবার জিজ্ঞাসা, ‘সকালে ঘুম থেকে প্রত্যেকদিনই খুব মাথা ব্যথা নিয়ে ওঠেন ?’

রোগী এবারও হ্যাঁ বললেন।

‘ঘাড়ের পিছনে একটা টনটনে ব্যথা হয়?’ ডাক্তারবাবু পুনরায় প্রশ্ন করতে রোগী জানালেন যে সত্যিই বাঁ ঘাড়ের পিছন দিকে প্রায় সব সময়েই খুবই টনটনে ব্যথা।

এবার ডাক্তারবাবু খুব হতাশ হয়ে পড়লেন। শেষ প্রশ্ন করলেন, ‘রাতে ঘুম হয় না, বুক ধড়ফড় করে?’ রোগী বললেন, ‘ঠিক তাই। কিন্তু ডাক্তারবাবু আমার কী হয়েছে বলুন না?’

ডাক্তারবাবু বললেন, ‘বলতে পারলে তো ভালই হত, আমাও তো ওইসব উপসর্গ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কিছুতে ধরতে পারছি না কী অসুখটা হয়েছে। কত বড় বড় ডাক্তার দেখালুম, চিকিৎসা করলুম, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে সবকিছু—কিছুই ধরা পড়ছে না।’

অসুখ ধরতে না পারার অন্য একটা গল্প আছে এরই পাশাপাশি।

গল্পের প্রথম অংশটুকু প্রায় একইরকম। রোগী গেছেন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাতে, কিন্তু কী হয়েছে কিছুই তিনি ভাল করে বলছেন না। ডাক্তার যত জিজ্ঞাসা করেন, আপনার অসুবিধেটা কী? রোগী জবাব দেন, ‘সেটা তো আপনি বার করবেন। সে জন্যেই আপনাকে ভিজিট দিয়ে দেখাতে এসেছি।’

অতঃপর ডাক্তারবাবু গম্ভীর হতে বাধ্য হলেন। ভুরু কুঁচকিয়ে দৃষ্টি তীক্ষ করে বললেন, ‘আপনার উচিত ছিল কোনও পশু চিকিৎসককে ডাকা, আপনার প্রয়োজন গোরুর বা ঘোড়ার ডাক্তার।’

এই কথায় রোগী ভয়ংকর উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, ডাক্তারকে চেঁচিয়ে বললেন, ‘এসব কথার মানে কী? আমি কি পশু? আমি কি গোরু না ঘোড়া? আমার কেন পশুচিকিৎসক, গোরুর ডাক্তার লাগবে?’

ডাক্তারবাবু শান্তভাবে জবাব দিলেন, ‘আপনি পশু কি না, আপনি গোরু কি না, আপনি ঘোড়া কি না সে আপনি জানেন, আমি জানি না। কিন্তু কোনও রোগীকে কী তার কষ্ট, কী হয়েছে জিজ্ঞাসা না করে তার চিকিৎসা করতে পারে একমাত্র পশুচিকিৎসকরা। আপনার প্রয়োজন একজন অবোলা জীবের ডাক্তার, আমাকে কেন ডেকেছেন বুঝতে পারলাম না।’

খেলাচ্ছলে চা খেতে খেতে দুটো খেলো গল্প লিখে ফেললাম।

পুনরায় ডাক্তারবাবুর কাছে যাচ্ছি।

ডাক্তারবাবু রোগীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ফলের খোসা ফেলে দেবেন না। খোসাসুদ্ধ ফল খাবেন, ওটাই পুষ্টিকর, ওর মধ্যেই যত খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন।

ডাক্তারবাবু আপেল, নাসপাতি, পেয়ারা বা সফেদার কথাই বোধহয় বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরের দিন রোগী এসে বললেন, ‘না ডাক্তারবাবু অসম্ভব। ফলের খোসা খাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।’

ডাক্তারবাবু খুবই বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন? কেন?’ রোগী উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘আমি খাই বাতাবি লেবু আর নারকেল। তার খোসা খাই কী করে? আজ সারা সকাল চেষ্টা করেও পারিনি। নারকেলের ছোবড়ায় জিভ ছড়ে গেছে। আপনি আমাকে মাফ করুন।’

ডাক্তারবাবু নিশ্চয়ই এই রোগীকে মাফ করেছিলেন এবং অন্য কোনও গ্রহণযোগ্য পথ্য দিয়েছিলেন।

চিকিৎসা এবং পথ্যের পর এবার আসল ব্যাপারে যাচ্ছি, ব্যাপারটা হল ডাক্তারবাবুর ভিজিট।

রোগীর মরণাপন্ন অবস্থা। বহুদিন শয্যাশায়ী থেকে আর্থিক অবস্থাও অতি শোচনীয়।

ডাক্তারবাবু এইমাত্র রোগীকে দেখে গেছেন। ডাক্তারবাবু চলে যাওয়ার পর ক্ষীণকণ্ঠে রোগী তাঁর স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, ‘ওগো, তুমি যে ডাক্তারবাবুকে এখন ভিজিট দিতে পারছ না, সে কথা বলায় ডাক্তারবাবু কিছু বললেন?’ স্ত্রী বললেন, ‘ডাক্তারবাবু ভাল লোক। আমার কথা শুনে বললেন, চিন্তার কিছু নেই, তোমার জীবনবিমার টাকা পেয়ে মিটিয়ে দিলেই হবে।’

অতঃপর সেই অতিশয় দুঃখজনক গল্পটা আরেকবার বলি। গল্পটা যতই পুরনো হোক এ গল্পটার তুলনা হয় না।

রোগীকে দেখে ডাক্তারবাবু গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছেন। রোগী ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘ডাক্তারবাবু কী দেখলেন?’ ডাক্তারবাবু বললেন, ‘কী আর দেখব? আপনাকে দেখলে আমার বারবার নেপালবাবুর কথা মনে পড়ে।’

এ কথা শুনে আতঙ্কিত রোগী ডুকরিয়ে উঠলেন, ‘ডাক্তারবাবু কোন নেপালবাবুর কথা বলছেন, ওই যিনি ওই মোড়ের সামনে হলদে দোতলা বাড়িটায় থাকতেন।’

ডাক্তারবাবু বললেন, ‘ঠিকই ধরেছেন। আমি ওই নেপালবাবুর কথাই বলছি।’

‘কিন্তু ডাক্তারবাবু’, রোগী আর্তকণ্ঠে বললেন, ‘ওই নেপালবাবু যে গত সপ্তাহে ক্যানসারে মারা গেলেন। আমারও কি ক্যানসার হল?’

ডাক্তারবাবু বললেন, ‘তা নয়। তবে নেপালবাবুও আপনার মতো ভিজিট দিতেন না কিনা, তাই আপনি যখনই আসেন আপনাকে চেম্বারে ঢুকতে দেখলেই নেপালবাবুর কথা মনে পড়ে।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *