মহাকাল – ১৮

আঠারো 

চা পানের পর পাঁচটার সময় অভ্যাগতেরা বিদায় নিলেন। বিদায়কালে গৃহস্বামী ও অতিথিদের মধ্যে যে সমস্ত ভালো ভালো বিনয়-বাক্য ব্যবহৃত হয়, তার একটাও বাদ গেল না। শুধু ওরই মধ্যে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল, যা কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করলো না। 

সে হচ্ছে এই যে, ওরই মধ্যে এক সময় মিসেস জনসন তাঁর স্বামীকে এক পাশে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পেনিলোপীর শাড়ীখানার দিকে অপাঙ্গে চেয়ে বললেন, অমনি একখানা শাড়ী আমার চাই। 

—পরবে? 

—হাঁ। শাড়ীতে মেয়েদের কি সুন্দর মানায়! 

মিঃ জনসন হেসে বলেছিলেন, আচ্ছা। 

তারপরে সবাই চলে গেলে বাগানবাড়ীর দোতলার বারান্দায় পেনিলোপী আর মহেন্দ্র দু’খানা বেতের চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। 

তখনও সূর্য অস্ত যায় নি। কিন্তু রোদের একেবারেই তেজ নেই। কমলালেবু-রঙের সেই সোনালি রোদ ওদের মুখে এসে পড়েছে। 

পেনিলোপী বললে, মহেন্দ্র এইবার? 

—কি এইবার? 

—তোমার সেই মেয়েটিকে যে দেখাবে বলেছিলে। 

—তাকে দেখবার কিছু নেই পেনিলোপী। দেখে সুনিশ্চিত তুমি হতাশ হবে।

—বাজে কথা বলে আমাকে ভোলাতে পারবে না। 

—বেশ দেখো। কিন্তু তার আগে তার সমস্ত কথা তোমার জানা দরকার। 

বলে একে একে মহেন্দ্ৰ সমস্ত কথা বলতে লাগলো : সেই করবী গাছের অন্তরালে হৃদয়-বিনিময় থেকে আরম্ভ করে বিবাহের ব্যর্থ চেষ্টা, বৃদ্ধের সঙ্গে বিবাহ ও বৈধব্য এবং মহেন্দ্র যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পরে যা যা ঘটেছে সমস্ত বিবৃত করে শেষে বললে, এখন সে কোথায় আছে জানো? আমাদেরই বাড়ীতে রাঁধে। 

পেনিলোপী চমকে উঠলো : 

—বলো কি? রাঁধে কেন? 

—পেট তো চালাতে হবে। ভায়েরা খেতে দিতে নারাজ। যার সঙ্গে তার নামমাত্র বিয়ে হয়েছিল তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি প্রাণ গেলেও সে ছোঁবে না। 

পেনিলোপী শুধু বললে, আশ্চর্য মেয়ে! 

তারপর বললে, তোমার বাড়ী গেলেই তো তাহলে তাকে দেখা যাবে।

—তা যাবে। 

—মহিন, ওঠো। আমি এখনই তোমাদের বাড়ী যাব। এখনও সন্ধ্যা হয়নি। তোমার অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিছুই করতে হবে না তোমাকে। শুধু তোমার বৌদির সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েই চলে আসবে। 

মহেন্দ্র হাসলে। বললে, তারপরে অত বড় বাড়ীতে তাকে খুঁজে বার করবে কি করে?

—তা জানি না। কিন্তু এইটুকু জানি যে, তাজমহলের মতো বাড়ীও তাকে ঢেকে রাখতে পারে না। 

—কিন্তু তার নামটাও যে জানোনা তুমি? 

পেনিলোপী অসহিষ্ণুভাবে মহেন্দ্রকে একটা ঠেলা দিয়ে বললে, কেন মিথ্যে সময় নষ্ট করছ মহিন, সে মেয়ের নাম জানার দরকার করে না। নাম তার লেখা আছে চোখের আগুনে, লেখা আছে উজ্জ্বল ললাটে। সে লেখা পড়বার মত বিদ্যে আমার না থাকলে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে তোমাদের দেশে এসে পৌঁছুতে পারতাম না। এখন একটু দয়া করে ওঠো দিকি। 

বলে একপ্রকার ঠেলতে ঠেলতেই পেনিলোপী মহেন্দ্রকে নিয়ে চলে গেল। 

.

পথে চলতে চলতেই মহেন্দ্ৰ পেনিলোপীকে তাদের বাড়ীর গোঁড়ামির কথাটা শুনিয়ে দিলে। বিধবা মায়ের জন্যে দোতলা অবধি যে জুতা চলে না, তাও জানিয়ে দিলে। এবং আরও টুকিটাকি কয়েকটা পরামর্শ দেওয়ার পর বৌদির কাছে নিয়ে গিয়ে হাজির করলে 

—ভাঁড়ার থেকে একবার বেরিয়ে এসো বৌদি, সঙ্গে একজন নতুন মানুষ এনেছি।

উপর থেকে সাড়া এল : আমি দোতালায় ঠাকুরপো। একটু কষ্ট করে ওপরে এস।

নিচে জুতা খুলে উপরে যেতে যেতে মহেন্দ্র বললে, তোমারও প্রমোশন হয়েছে দেখছি বৌদি। নিচে না থেকে ওপরে থাকো। 

—চিরকালই নিচে ফেলে রাখবে? তা কি হয়? 

বলে হাসতে হাসতে পেনিলোপীকে নমস্কার করে বললে, আসুন আসুন। একজন দাসী বারান্দায় একখানা কম্বল বিছিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল পেনিলোপী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে একেবারে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটি নিঃশব্দে চলে যাচ্ছিল, পথ অবরুদ্ধ দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। 

পরনে তার একখানি মলিন ধুতি। জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া। তাই দিয়ে কোনো প্রকারে দেহ ঢেকে লজ্জা নিবারণ করেছে। 

পেনিলোপী তাকে জিজ্ঞাসা করলে, তুমি এখানে কি কর ভাই? রাঁধো?

মেয়েটি থতমত খেয়ে ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’ জানালে। 

পেনিলোপী বাঁ হাত বাড়িয়ে তাকে বুকের কাছে টেনে এনে বললে, তা পালাচ্ছিলে কেন ভাই? ছোঁয়া যাবে? 

লজ্জিতভাবে গায়ত্রী বললে, না-না। ছোঁয়া যাবার কিছু নেই। আমার গা-ধোয়া এখনও হয়নি। 

—তবে আমাদের সঙ্গে বসে একটু গল্প করবে না ভাই? আমি কত দূর দেশের মেয়ে। তোমাদের সঙ্গে পরিচয় করবার জন্যেই আমি মহিনের সঙ্গে এসেছি। পরিচয় না করেই কলকাতায় ফিরে যাব? 

এমন আকুতির সঙ্গে পেনিলোপী কথা ক’টি বললে যে, সুবর্ণ পর্যন্ত ব্যস্ত হয়ে বললে, বোস্ না গায়ত্রী। একটু পরেই না হয় গা ধুতে যাবি? ওমা, ঠাকুরপো চলে গেল কখন? 

সেকথা শুধু গায়ত্রী জানে। ঘর থেকে কম্বলটা নিয়ে সে বার হতেই মহেন্দ্র সরে পড়ে। কিন্তু কিছুই সে বললে না। 

পেনিলোপী সুবর্ণর দিকে চেয়ে বললে, কাল দুপুরে তোমার বাড়ীতে যে আমার নিমন্ত্রণ দিদি। আমি তোমাদের রান্না কখনও খাইনি। আসনে বসে কলাপাতায় খেতে ভারী লোভ হচ্ছে। 

সুবর্ণ বললে, বেশ তো। তোমার আর ঠাকুরপোর দু’জনেরই কাল দুপুরে এখানে নিমন্ত্রণ রইলো। ঠাকুরপো তো চলে গেছে, তাকেও জানিয়ে দিও। 

—দোব। কিন্তু কি কি রাঁধবে ভাই গায়ত্রী? দু’একটি নাম আগে থেকে শুনিয়ে দাও, সারারাত্রি জপ করব। 

সুবর্ণ এবং গায়ত্রী উভয়েই হেসে ফেললে। 

গায়ত্রী বললে, কি খেতে চান বলুন। তাই রাঁধব। 

পেনিলোপী বললে, তোমাদের রান্নার কিছুই তো আমি জানিনে ভাই। যা ইচ্ছা হবে, তাই রেঁধে খাইও। আমি খুশি হয়ে ফিরব। কিন্তু তুমি আমাকে আপনি বলছ কেন ভাই? ওতে আমি লজ্জা পাই। আমি তো তোমাকে বন্ধু বলেছি। 

—সে আপনার উদারতা। কিন্তু আমি যে কত সামান্য সে তো আমি জানি। 

—তুমি সামান্য মেয়ে! তাহলে ওই ছেঁড়া ময়লা কাপড়েও প্রথম দেখাতেই তোমাকে চিনলাম কি করে? অত ভুল- দেখবার চোখ তো আমার নয়। 

বিব্রতভাবে গায়ত্রী বললে, কিন্তু আপনি তো আমার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না মেমসাহেব। আমি এঁদের দাসী। 

—তা হবে। কিন্তু সেইটেই কি তোমার সব পরিচয়? 

—বলতে পারি না। কিন্তু আর যদি কিছু থাকেও তাও তো আপনি জানেন না।

—জানবার দরকার তো করে না ভাই। তুমি কি শোননি মানুষের সত্যিকার পরিচয় লেখা থাকে তার মুখে? 

—সকলের হয়তো থাকে না মেমসাহেব। কিন্তু আজকে আমি উঠি। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আমার অনেক কাজ বাকি। 

বলে সবিনয়ে নমস্কার জানিয়ে গায়ত্রী উঠে গেল। 

সুবর্ণ বললে, তুমি ঠিকই ধরেছ ভাই। মেয়েটি বড় ভালো। পরের বাড়ী খেটে খাবার কোনো দরকারই ওর ছিল না। তবু কেন যে তাই করছে, ওই জানে। 

পেনিলোপী বললে, খেটে খাওয়া তো দোষের কিছু নয় দিদি। 

সুবর্ণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললে, তোমাদের দেশে হয়তো নয় ভাই, কিন্তু এদেশে দোষের যদি-বা নাও হয়, ভয়ানক দুর্ভাগ্যের। সে দুর্ভাগ্যের সীমা নেই। 

একটু থেমে বললে, মেয়েটি এত ভাল যে বলবার নয়। কী আত্মসম্মান জ্ঞান, অথচ কী নম্ৰ! ছেঁড়া কাপড়খানা দেখে একখানা নতুন কাপড় এনে দিয়েছিলাম। হেসে ফিরিয়ে দিয়ে বললে, কাপড় তো আমার এখনও পাওনা হয়নি বৌদি! এখন রেখে দিন, দরকার হলেই চেয়ে নোব। 

তারপর আবার বললে, অন্যদের সঙ্গে ওর একটু ইতর-বিশেষ করলে ও যেন লজ্জায় মরে যায়। বলে, অত প্রশ্রয় দেবেন না বৌদি, তাহলে আমার একূলও যাবে ওকূলও যাবে। তবু পারি না ভাই। থালা সাজিয়ে ও যে আমার সামনে থালা ধরে দেবে, এ আমি কিছুতেই পারি না। ওকে টেনে নিয়ে সকলের শেষে একসঙ্গে দু’জনে বসে খাই। 

সুবর্ণ আঁচলে চোখ মুছলে। 

পেনিলোপী বললে, কালকে আমিও একপাশে বসব দিদি। সঙ্গে নিয়ে তো খাবেন না জানি। দূরে বসেই খাব। তবু একসঙ্গে খাব তো। 

বলে হাসলে। 

একটু পরে বললে, অন্ধকার হয়ে আসছে, এইবার উঠি। আবার কাল দুপুরে দেখা হবে। 

সুবর্ণ উঠে বললে, হ্যাঁ। দাঁড়াও ভাই, তোমার সঙ্গে একজন লোক দিই।

—লোক?-পেনিলোপী হেসে বললে,—লোক কি হবে? আমি কি তোমাদের মতো যে, একলা যেতে ভয় করবে? 

সুবর্ণও হেসে ফেললে বললে, তা বটে। ভয় তোমাদের কাছে ঘেঁষে না। 

.

পেনিলোপীকে পৌঁছে দিয়ে মহেন্দ্র ফিরে এসে দেখে, নিচে বারান্দায় গোলক উবু হয়ে বসে আছে। মহেন্দ্রকে দেখে সেইখান থেকেই সে গড় হয়ে প্রণাম করলে। 

মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করলে, ভালো আছ গোলকদাদা? এস, এস, ওপরে এস।

উপরে এসে মহেন্দ্র একটা চেয়ারে বসলে। অদূরে মেঝের উপরে বসলো গোলক। জিজ্ঞাসা করলে, ওবাড়ী থেকে আসছেন ছোটবাবু? 

—হ্যাঁ। 

—দেখে এলেন আমার দিদিমণিকে? – বলে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।

জবাব দিতে গিয়ে মহেন্দ্রর গলার স্বর যেন বন্ধ হয়ে এল। কোনক্রমে ঘাড় নেড়ে জানালে, হ্যাঁ। 

গোলক বললে, আপনি তো অনেক বই পড়েছ ছোটবাবু। কোন্ পাপে আমার সতী-সাবিত্রী দিদিমণি এত কষ্ট পাচ্ছে বলতে পারেন? 

—বলতে পারি না গোলকদাদা। 

—তাহলে ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্ম শাস্তর-টাস্তর সব মিথ্যে? 

—কি জানি ভাই। তবু সীতার কথা একবার ভাব। স্বামী স্বয়ং ভগবান, নিজে লক্ষ্মীর অংশ। তিনি কেন কষ্ট পেলেন? গোলকদাদা, যাকে আমরা কষ্ট ভাবি, সত্যিসত্যি হয়তো তা কষ্ট নয়। আগুনে পুড়লে সোনার তো কষ্ট হয় না, বরং জৌলুস বাড়ে। 

সোৎসাহে গোলক বললে, ঠিক বলেছেন, ছোটবাবু। ওরা সতীসাবিত্রী, মা-লক্ষ্মীর অংশ। ওদের কষ্ট হয় না। কিন্তু আমি তো পারি না ছোটবাবু, আমার বিহিত করুন। 

—কী হয়েছে তোমার? 

বলেছিলাম, বৌছেলে সব তো মরে ভূত হয়ে গেল। থাকবার মধ্যে আছে একটি বুন। তা এই মরা-হাড়েও একটা বুনকে খেতে দিতে খুব পারব। তুমি খাটতে কোথাও যেও না দিদিমণি, তুমি খাটতে যেও না। তা শুনলে না তো আমার কথা। 

—কী আর করবে বলো। 

—না, করবার কিছু নাই। কাল একবার উঁকি মেরে দেখলাম, ছোটবাবু, শতচ্ছিন্ন ময়লা কাপড়ে সোনার অঙ্গ ঢেকে দিদি আমার ঝি-চাকরকে ভাত দিচ্ছে। বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো ছোটবাবু। মনে হল মাথা ঘুরে পড়ব বুঝি। বাড়ী এসে ভাবলাম, আর কেন? ষোলো আনা সুখ তো মিটলো, এইবার গাঁ ছেড়ে যেদিকে দুই চোখ যায় পালাই। কিন্তু পালাতেও তো পারি না। পা দুটোকে কে যেন মাটির ভেতর টানে। আমি কি করি বলো তো ছোটবাবু? 

পরামর্শ দেবার কিছুই ছিল না। মহেন্দ্র ঘাড় হেঁট করে চুপ করে রইল। 

গোলক বললে, আপনার কথা সে শোনে ছোটবাবু। আপনি তাকে বুঝিয়ে কিছু বলতে পারো না? 

মহেন্দ্র বললে, আমার কথা সে শুনবে না গোলক দাদা। শুনবে বুঝলে নিশ্চয়ই বলতাম। 

—একবার বলে দেখবেন? 

—না। 

গোলক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললে। 

ঠিক সেই সময় সিঁড়িতে চটি জুতার শব্দ পাওয়া গেল, এবং পরক্ষণেই পেনিলোপী এসে বললে, সু-খবর মহিন! 

তার পরে গোলকের দিকে দৃষ্টি পড়তেই জিজ্ঞাসা করলে, এ কে? 

মহেন্দ্র বললে, ও একটি হতভাগা। সংসারে যে ক’জন তাকে ভালোবেসে কষ্ট পাচ্ছে, ও তাদেরই একজন। নাম গোলক। 

—I see. 

মেমসাহেব দেখে গোলক ভয়ানক অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো। 

বললে, আজ তাহলে উঠি ছোটবাবু। একটু কাজ আছে। কাল সকালে বরং আসব।

বলে মেম সাহেবের দিকে দৃকপাত মাত্র না করে চলে গেল। 

মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করলে, সু-খবরটা কি? 

—কাল দুপুরে তোমার এবং আমার দুজনেরই ওবাড়ীতে নিমন্ত্রণ। অতি অবশ্য যেতে হবে।

—সর্বনাশ! এমন তো হবার কথা নয়! 

—কেন? 

—আমরা ওবাড়ীতে খেলে দাদা মেঝের সিমেন্ট থেকে দেওয়ালের প্ল্যাস্টার পর্যন্ত তুলে ফেলবেন। 

—বলো কি! এত গোঁড়ামি? 

—হ্যাঁ! আমি ফিরে পর্যন্ত ওবাড়ীতে একদিনও নিমন্ত্রণ পাই নি। আমার জায়গা হয়েছে এই বাগান-বাড়ীতে। তা ওঁরা নিজেই নিমন্ত্রণ করলেন, না তুমি যেচে নিলে? 

—যেচেই নিলাম। 

—তাই বলো। তবু তুমি ভাগ্যবতী। তাকে দেখলে? 

—দেখলাম বই কি? কত গল্প হল। 

—দেখে চিনতে পেরেছিলে? 

—তৎক্ষণাৎ। জিজ্ঞেস কোরো বৌদিকে। 

ইব্রাহিম দরজার গোড়া থেকে সেলাম করে জানালে, ডিনার তৈরি। টেবিল সাজাবো কি?

সেদিকে কর্ণপাত না করে মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করলে, গায়ত্রীকে কেমন দেখলে বলো তো?

—সে উত্তর আর একদিন দোব। ডিনার তৈরি। চল এখন। 

বলে পেনিলোপী মহেন্দ্রকে খাবার টেবিলে নিয়ে এল। 

খেতে বসে হঠাৎ মহেন্দ্র বললে, তুমি একটা কাজ করতে পারো পেনিলোপী? তাহলে চিরজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। 

পেনিলোপী হেসে বললে, সে একটা মস্ত প্রলোভন। বলো কি করতে হবে। 

—এই রান্নার কাজটা ছেড়ে দিতে তুমি কোনো রকমে তাকে রাজি করাতে পারো? নবদ্বীপ, কাশী, বৃন্দাবন, যেখানে খুশি সে যাক, আমি মাসে-মাসে তাকে খরচ দোব। আমার নিজের জন্যে একথা বলছি না পেনিলোপী। কিন্তু ও যদি আরও কিছুদিন এমন কষ্ট করে, তাহলে ওই যে গোলক লোকটিকে দেখলে, ও মরে যাবে। 

পেনিলোপী এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে দৃঢ়ভাবে মাথা নেড়ে বললে, আমাকে মাফ কোরো মহিন, ও অনুরোধ গায়ত্রীকে আমি কিছুতেই করতে পারব না। 

—পারবে না কেন? 

—অন্যায় বলেই পারব না। বর্তমান অবস্থায় ওঁর পক্ষে এর চেয়ে সম্মানজনক জীবন আমি ভাবতেই পারি না। 

মহেন্দ্র আর অনুরোধ করলে না। শুধু জড়িতকণ্ঠে গজ গজ করে বললে, আমার নিজের জন্যে বলি নি, ওই গোলকটার জন্যেই কষ্ট হয়। লোকটা যেন একেবারে ভেঙে পড়েছে। 

পেনিলোপী উত্তর দিলে না। কিন্তু মহেন্দ্র ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখলে টের পেতো, মহেন্দ্রর কথায় ওর ঈষৎ-উদ্ভিন্ন ঠোঁটের ফাঁকে হাসির রেখা খেলে গেল। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *