ভালোবাসা নাও, হারিয়ে যেও না – ৬

সত্যি কথা বলতে কী, একটা দিবাস্বপ্নকে খুব একটা গুরুত্ব আমি দিই না। কিন্তু কলকাতায় ফিরে পর পর কয়েকদিন বাজার করতে গিয়ে সেই বুড়িকে না দেখে আমি একটু চিন্তিত বোধ করলুম। সেই হাসিখুশি টুসটুসে বুড়িটির সঙ্গে রঙ্গ– রসিকতা করা আমার অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সে আর আসে না কেন? রোজার মাসে তার শরীর খারাপ হয়েছিল…।

তিন চারদিন তাকে না দেখতে পেয়ে সেই হিলহিলে চেহারার কিশোরীটিকে জিজ্ঞেস করলুম, তোমার পাশে যে ডিমওয়ালী বসত, তার কী হয়েছে?

মেয়েটি আজ নিয়ে বসেছে একগাদা রাঙালু। ওটা ঠিক আমার কেনার সামগ্রী নয়। আমি তার খদ্দের নই বলেই মেয়েটি আমার কথায় বেশি মনোযোগ না দিয়ে বলল, ও আর আসছে না!

–কেন, কী হয়েছে?

—আমি তার কী জানি?

প্রকৃতি শূন্যস্থান সব সময় পুরণ করে দেয়। একটু দূরেই আর একজন মধ্যবয়স্কা স্ত্রীলোক ডিমের ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। সে বলল, ও বাবু ডিম নেবে? আমার কাছ থেকে নাও—

বাজার থেকে আমি ডিম কেনা শুরু করেছিলুম তো ঐ বুড়ির জন্যই। এখন আর আমার ডিমের প্রয়োজন নেই। অন্যদিন শুধু সারা বাজারটা টহল দিই, আজ আর সে রকম উৎসাহ বোধ করলুম না, দায়সারা কেনাকাটি করে ফিরে এলুম।

বাড়ি ফিরেই চম্পকের লেখা একটা চিরকুট পেলাম “তোর সঙ্গে ভীষণ জরুরি কথা আছে। সাড়ে দশটার মধ্যে দেখা করবি আমার সঙ্গে। উইদাউট ফেইল। আমি অপেক্ষা করব তোর জন্য।”

থাক চম্পক অপেক্ষা করে। এমনও তো হতে পারত আমি এই সময় বাড়িও ফিরলুম না, চম্পকের চিঠিও পেলুম না।

দিনের বেলা আত্মগোপন করার অতি প্রশস্ত জায়গা হলো ন্যাশনাল লাইব্রেরি। একটা এনসাইক্লোপিডিয়া জাতীয় বই মুখে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও সবাই ভাববে দারুণ ব্যস্ত। তাড়াতাড়ি ভাত–ডাল–বেগুন–ভাজা–মাছ ভাজা খেয়ে চম্পট দিলুম সেদিকে

জীবনে কোনোই কাজে লাগছে না, ঘণ্টা তিনেক ধরে এমন কিছু জ্ঞান আহরণ করবার পর সিগারেট টানার জন্য বাইরে এসেছি, দেখা হয়ে গেল অরিন্দম আর টিপুর সঙ্গে। আমায় যেমন সবাই নীলু বলে ডাকে, তেমনি টিপুর ভালো নামটাও অনেকেরই মনে থাকে না। অরিন্দম যেমন রোগা পাতলা, টিপু তেমনি গাঁট্টাগোট্টা।

আমাকে দেখেই দু’জন বেশ অবাক ভাব করে থমকে দাঁড়াল। যেন ন্যাশনাল লাইব্রেরির মতন পবিত্র স্থানে আমি একেবারেই অবাঞ্ছিত।

টিপু ভুরু তুলে শ্লেষের সঙ্গে বলল, বাঃ বেশ! গুরু, যা দেখালে না! হ্যাটস অফ!

আমি আবার কী করেছি? এইসব ক্ষেত্রে বিস্ময় প্রকাশ না করে চালিয়াতির ভাব করে থাকতে হয়।

অরিন্দম আমার কাঁধ চাপড়ে বলল, সত্যি নীলে, তুই একখানা জিনিস বটে! কী করে বাগালি? চল খাওয়াবি চল!

টিপু আমার পকেট বাজিয়ে জিজ্ঞেস করল, মালকড়ি আছে তো? নাকি আমাদের কাছেও ধার চাইবি!

এবারে আমি মুখ খুললুম।

—তোরা দুটিতে এখানে কী করছিস? এই দুপুরবেলা? মেট্রো সিনেমা যে তোদের জন্য কাঁদছে! বো ডেরেক তিনবার জামা খুলেছে!

টিপু বলল, সত্যি? তোর দেখা হয়ে গেছে? চল, আমাদের দেখাবি চল!

—আমি একটা দরকারি নোট নিচ্ছি। আজ ছ’টা সাতটার আগে বেরুতে পারব না।

—পড়াশুনো? তুই পিলে চমকে দিলি যে রে! তুই কি রিসার্চ করছিস নাকি?

অরিন্দম বলল, পড়াশুনো লোকে কেন করে ভাই? চাকরির জন্য। তোর তো হয়ে গেছে।

আর আমি বিস্ময় লুকোতে পারলুম না। চাকরি? আমার?

—ন্যাকা সাজছিস? চম্পক গেল হলদিয়ায় ইন্টারভিউ দিতে, তার চাকরি হলো না। আর তুই বাগিয়ে ফেললি?

—কী যা তা বলছিস, টিপু!

—আজ সকালেই তো চম্পক বলে গেল। চম্পক ভালো ইন্টারভিউ দিয়েছিল, কিন্তু ওর হলো না। আর তুই ইন্টারভিউ না দিয়েই পেয়ে গেলি। মামা আছে বুঝি?

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললুম। চম্পকটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এর মধ্যেই সারা কলকাতা রটিয়ে বেড়িয়েছে। তাও চম্পক যা বলেছে, এরা তা ভুল বুঝেছে।

চোয়াল কঠিন করে বললুম, চম্পকটাকে আমি এবার মারব।

টিপু বলল, কেন তুই ওর চাকরি কেড়ে নিলি!

–যা জানিস না, তা নিয়ে কেন কথা বলতে যাস। চম্পক আমাকে ইনসাল্ট করেছে।

– তুই ওর চাকরি কেড়ে নিয়েছিস বলে চম্পক মোটেই রেগে যায়নি, বেশ খুশি মনেই তো বলল।

–কে বলল আমি চম্পকের চাকরি কেড়ে নিয়েছি? চম্পক গিয়েছিল অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভের পোস্টে ইন্টারভিউ দিতে। দুটো কোয়েশ্চেনে ফাল করেছে, তাই ওর চাকরি হয়নি। আর চম্পক আমার জন্য কোন্ চাকরির উমেদারি করেছিল জানিস? দারোয়ানের।

অরিন্দম বলল, যাঃ, আমাদের ব্লাফ দিচ্ছিস তুই। চম্পক বলল, তোর পোস্ট হলো স্টাফ ওয়েলফেয়ার ম্যানেজার।

—বাজে কথা! ঐ গালভরা নামটা চম্পক নিজে বানিয়েছে। আমাকে দিয়ে যে জন্য দরখাস্ত করিয়েছে, সেটা হলো ঐ কোম্পানির সেকেণ্ড গ্রেড গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকারের পোস্ট। অর্থাৎ বাজার সরকার কাম দারোয়ান। আমাকে এরকম বাজে কাজের উপযুক্ত মনে করে। চম্পকের কী অডাসিটি। আমি ওর সঙ্গে আর কোনো কানেকশন রাখব না।

আমার কথায় গুরুত্ব দিল না ওরা দুজন

টিপু হাসতে হাসতে বলল, গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার, তাই বা মন্দ কী। এ বাজারে যা পাওয়া যায়। তুই নিয়ে নে, নিয়ে নে। আমরা হলদিয়া বেড়াতে যাব, আমাদের খায়িং থাকিং ফ্রি হয়ে যাবে তো!

—তোরা কেউ ঐ চাকরিটা নিতে চাস তো নে না। কিংবা চম্পক নিজেও তো নিতে পারে। চম্পকের জামাইবাবুর বন্ধু রয়েছেন।

—তিনি চম্পকের চাকরিটা করে দিতে পারলেন না? চম্পকের মতন চাকরি– পাগল ছেলে আমরা কেউ দেখিনি। প্রত্যেক মাসে দশ পনেরোটা অ্যাপ্লিকেশান পাঠায়।

অরিন্দম বলল, নীলু, সিরিয়াসলি বলছি—তুই কিন্তু ঐ চাকরি নিয়ে নিলে পারিস। তুই এর চেয়ে ভালো আর কী পাবি বল?

কয়েক পলক আমি অরিন্দমের দিকে চেয়ে রইলুম। ও এরকম আঁতে ঘা দিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। হাসিমুখে মানুষকে অপমান করতেই ওর আনন্দ পৃথিবীতে কে যে কোন্ উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচে।

আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলুম ক্যান্টিনের দিকে। জানি ওরা আমাকে ছাড়বে না, একটু বাদে এখানে এসে ধরবে। মাঝে মাঝে আমাকে খোঁচা মারলেও ওরা দুজনেই আমাকে ভালোবাসে।

আমার মাথায় একটা অন্য চিন্তা ঢুকে গেছে। চম্পক আমার বাড়িতেও খবরটা জানায়নি তো? বেশ কয়েক বছর আমি গায়ে ফুঁ দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, মাঝে মাঝে টিউশানি করা ছাড়া আমার কোনো উপার্জন নেই। চাকরির জন্য একটা প্রতিনিয়ত চাপ অনুভব করছি বাড়ির দিক থেকে। অভাব তো আছেই।

কিন্তু দশটা পাঁচটার জাঁতাকলে কিছুতেই আমার ইচ্ছে হয় না শরীরের তেল পিষতে। অথচ পালিয়ে পালিয়েই বা কতদিন বেড়াব? আমি বাড়িঘর ছেড়ে একেবারে সন্ন্যাসী হয়েও চলে যেতে পারব না, পারিবারিক জীবনের ওপরে আমার বড় মায়া। সকালবেলা দেরি করে ঘুম ভাঙার জন্য মা বকুনি দিতে দিতেই গরম চায়ের কাপ এগিয়ে দিল, এটাও যে কত মধুর।

বাড়িতে যদি জানতে পারে যে আমি হলদিয়ায় একটা চাকরির জন্য সিলেকটেড হয়ে গেছি, তাহলে আত্মীয়স্বজন উঠে পড়ে লাগবে। সবাই চায় আমার একটা কিছু হিল্লে হোক। এমন সুযোগ হাতে পেয়েও কি কেউ ছেড়ে দেয়?…একদম বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করাও ভালো। এর থেকে ভালো চান্স অন্য কোথাও পেলে এটা তখন ছেড়ে দিস, নীলু!…এই বাজারে চাকরি পাওয়াটাই একটা ভাগ্যের কথা, বুঝলি নীলু? অন্তত দুটো মাস করে দ্যাখ না, যদি মন লেগে যায়। শোন নীলু, আমি বলছি এতে তোর ভালোই হবে। হলদিয়াতে থাকলে তুই আরো ভালো জায়গায় সুযোগ পেয়ে যাবি, ওখানে কতরকম ইণ্ডাস্ট্রি হচ্ছে, কত লোকের সঙ্গে চেনা হবে। আরে শোন, আমার বড় পিসেমশাই রেলে মাত্র পঁয়তিরিশ টাকা মাইনেতে ঢুকেছিলেন, রিটায়ার করলেন সাড়ে তিন হাজারে। আজকাল কত ভালো ভালো ছেলে হোটেল ম্যানেজমেন্টের ট্রেনিং নিচ্ছে। আমার মত যদি শুনিস ছোট কোম্পানিতে বড় চাকরির চেয়ে বড় কোম্পানিতে ছোট চাকরিও ভালো। পর পর প্রমোশন হয়ে যাবে ঠিক।

মামা–কাকা–দাদাদের উপদেশগুলো আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আমার চোখ জ্বালা করছে। কেউ আমাকে আমার খুশি মতন বাঁচতে দেবে না। রফিক ভাগ্যবান। একমাত্র সেই অন্যের ইচ্ছের পরোয়া করে না।

অরিন্দম আর টিপু এসে বসল আমার দুপাশে। টিপু বলল, কী রে তোর অভিমান হয়েছে, হঠাৎ পালিয়ে চলে এলি?

অরিন্দম বলল, ঠিক আছে, তোকে ক্যান্টিনের ম্যানেজারের চাকরি নিতে হবে না। তুই বেকারই থেকে যা। আমরা সবাই চাকরি পেয়ে গেলে তোর জন্য চাঁদা তুলে একটা ফাণ্ড করব। তুই সারা ভারত বেকারশ্রী হবি।

খানিক বাদে ওরা দুজন ফিরে গেল লাইব্রেরিতে, আমি হাঁটতে লাগলুম চিড়িয়াখানার পাশ দিয়ে।

চোখটা জ্বালা জ্বালা করছে। সমস্ত পৃথিবীর ওপর একটা যেন প্রবল অভিমানের ভাব। বিকেলবেলার আকাশ মাথার ওপরে সমুদ্র হয়ে আছে। খাঁ খাঁ করছে শূন্য রেসকোর্স। রাস্তায় প্রায় একটাও মানুষ নেই কেন?’ এক একদিন সব কিছুই ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

ভিক্টোরিয়ার সামনে অবশ্য অনেক গাড়ি, প্রচুর লাল–নীল–হলুদ পোশাক। পাওভাজি, ফুচকা, আলুকাবলির দোকানগুলি সরগরম। প্রত্যেক দিনই বিকেলের পর এই জায়গাটায় বেশ একটা অবাঙালি উৎসব মতন হয়।

পাঁচ ছটি যুবতী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রফিক। ফুচকা পৰ্ব চলছে। সেদিকে চোখ পড়া মাত্র আমি মুখটা ফিরিয়ে নিলুম।

রাস্তা পার হতে হতে শুনতে পেলুম রফিকের গলা, ঝাল হয়নি, আউর ঝাল লাগাও।

ঝাল খেতে পারে বটে রফিক। আমিও ঝালের ব্যাপারে কম যাই না। কিন্তু রফিক একেবারে আগুন খেয়ে ফেলতে পারে। ওর সঙ্গের মেয়েরা খুব হাসছে। রক্ষণশীল বনেদি পরিবারের মেয়েরা আজ রফিকের অভিভাবকত্বে ময়দানে অ্যাডভেঞ্চারে এসেছে বোঝা যাচ্ছে।

এপারে আসতেই রফিকের বাড়ির ড্রাইভার আবদুলের সঙ্গে দেখা। রফিকদের গাড়িতে আমি অনেক ঘুরেছি, তাই আবদুল আমায় চেনে। একখানা লম্বা সেলাম দিয়ে সে বলল, সাব উধার হায়। আপ যাইয়ে।

আমি যে ওর সাহেবকে এড়াবার চেষ্টা করছি, তা তো বলা যায় না। ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক দেখে নিয়ে বললুম, ও, তোমার সাহেব এদিকে এসেছেন বুঝি? আচ্ছা। হামারা জরুরি কাম হায় আভি।

কিন্তু ঐ একবার ঘাড় ঘোরাতেই রফিক দেখে ফেলেছে। হাতছানি দিয়ে ডাকল, এই নীলু। নীলু। এদিকে চলে আয়।

ঐ মেয়েগুলির মধ্যে কি রোমি আছে? আমি যে রোমির সঙ্গে দেখা করতে চাই না। কে আর অকারণে বুক কাঁপাতে চায়?

চোখাচোখি যখন হয়েছে তখন আর রফিকের হাত ছাড়ানো যাবে না। রফিক আজ বেশ ফুর্তির মেজাজে আছে। শাদা ট্রাউজার্সের ওপরে একটা টকটকে লাল রঙের হাওয়াই সার্ট পরেছে। সঙ্গের পাঁচজন যুবতীর মধ্যে দুজন পরেছে শালওয়ার কামিজ, দুজন শাড়ি আর একজন জিনসের ওপর কুর্তা। শাড়ি পরা দুজনের মধ্যে একজন রোমি।

রফিক জিজ্ঞেস করল, এদিকে কোথায় যাচ্ছিলি?

ফুচকাওয়ালার মুখের দিকে তাকিয়ে বললুম, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে। একটা ছবির এক্সিবিশান দেখতে।

–আয় তোর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই, সায়েদা, মিতুন, তাহমিনা আর শর্মিষ্ঠা। রোমিকে তো তুই চিনিস।

প্রায় আকাশের দিকে চোখ তুলে নমস্কার করলুম। প্রত্যেকের গা থেকে ভালো ভালো পারফিউমের গন্ধ আসছে। এরা অনেক উচ্চস্তরের মহিলা। তাছাড়া একসঙ্গে এতগুলি সুন্দরী দেখলে আমার মুখ দিয়ে কথা ফোটে না।

রফিক বলল, মেয়েরা, তোমরা, এবার দ্যাখো, নীলুর সঙ্গে আমার কমপিটিশান হবে ঝাল খাওয়ার। ফুচকাওয়ালা, লাগাও তোমার শুকনা মরিচ যত আছে।

আমি সঙ্কুচিতভাবে বললুম, নারে, আমি আজ খাব না।

–কেন? হঠাৎ সাহেব হয়েছিস নাকি যে ফুচকা খাবি না?

– নারে, আজ ঠিক ইচ্ছে নেই।

—পেট খারাপ হয়েছে? বোকা, জানিস না মেয়েদের সামনে এ কথা বলতে নেই। একটু আগে আমি তোর কথাই বলছিলুম। এরা আমার ঝাল খাওয়া দেখে অবাক হচ্ছিল, আমি বললুম তোমরা তো তাও নীলুর ঝাল খাওয়া দ্যাখোনি। মিতুন, বলিনি?

শালওয়ার কামিজ পরা একটি মেয়ে বলল, জী। ইনিই হঠাৎ এসে পড়লেন এখানে।

রফিক বলল, হঠাৎ নয়, তোমাদের মধ্যে একজনকে দেখতে পেয়ে ও এখানে ঘুরঘুর করছিল। হা–হা–হা। নে নীলু পাতা নে।

যে মেয়েটির নাম শর্মিষ্ঠা সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি নিয়মিত আর্ট এক্সিবিশান দেখতে যান?

—নিয়মিত নয়, মাঝে মাঝে।

–আমার এক দাদা ছবি আঁকেন। এখন ফ্রান্সে আছেন। আপনি হয়তো নাম শুনলে চিনবেন।

নামটি শুনলুম, চিনতে পারলুম না, তবু বললুম, হ্যাঁ–হ্যাঁ নিশ্চয়ই, উনি তো বেশ বিখ্যাত। ওঁর ছবি দেখেছি।

সমাজের একটা স্তরে এটাই নিয়ম। দেখিনি শুনিনি বা পড়িনি বলতে নেই কক্ষনো, তাহলেই তুমি ছোট হয়ে গেলে। তোমাকে সব সময় প্রমাণ করতে হবে তুমি আপ টু ডেট।

শর্মিষ্ঠা আবার জিজ্ঞেস করল, আপনি নিজেও বুঝি আঁকেন?

আমার উত্তরের আগেই রফিক বলল, হ্যাঁ, নীলু খুব ভালো আঁকে। প্রচুর ছবি এঁকে এঁকে ফেলে দেয়। একদিন ওর বাড়িতে গিয়ে দেখি কি জানো, নিজের আঁকা ছবি ছাদ থেকে উড়িয়ে দিচ্ছে। হা–হা–হা—।

রফিকের হাসির কোনো ঠিক–ঠিকানা নেই। একদিন দারুণ গম্ভীর, আবার এক একদিন ওকে যেন হাসিতে পেয়ে বসে। আমি একটা সোজা দাগ পর্যন্ত টানতে জানি না, অথচ আমাকে আর্টিস্ট বানাবার যে ওর কী উদ্দেশ্য কে জানে।

রফিক বলল, এখানে আর একজন আর্টিস্ট আছে। নীলু তুই জানিস, রোমি ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকে। ওয়াটার কালারে ওর দারুণ হাত ছিল।

সেই দু–এক পলক ছাড়া আমি আর রোমির দিকে তাকাইনি। এবারে আবার চোখাচোখি হলো। আজ আর সাদা সিল্ক নয়। একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরেছে রোমি, গলায় কিছু একটা পাথরের মালা। আমি হিরে–মুক্তো ঝুটো গয়না কিছু‍ই চিনি না।

ছবি আঁকা বিষয়ে রোমি ভদ্রতা করেও কোনো প্রতিবাদ জানাল না।

মিতুন মেয়েটিই এখানে সবচেয়ে বয়েসে ছোট, আঠেরো–উনিশ হবে। সে বলল, রফিকভাই তুমি আর খেয়ো না, করছো কী? তোমার বন্ধু তো হেরে গেছে।

আমি তৎক্ষণাৎ বললুম, হ্যাঁ, আমি হেরে গেছি।

রফিক হাতের পাতাটা ফেলে দিয়ে বলল, ধুৎ, আজকাল মরিচে সেরকম ঝালই নেই। নীলু তুই এক কাজ কর, তুই একাডেমিতে যাচ্ছিস তো, রোমিকে সঙ্গে নিয়ে যা। ও ছবি ভালোবাসে, ও দেখে আসুক। আমরা ভিক্টোরিয়ার মাঠে বসছি ততক্ষণ।

আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি আর রোমি আলাদা চলে যাব? এ কখনো সম্ভব? রোমি আর আমি পাশাপাশি হাঁটব? ও আমার সঙ্গে কথা বলবে!

রোমি কোনো আপত্তি করছে না তো।

কয়েক মুহূর্তের নীরবতা, তারপর শর্মিষ্ঠা বলল, আমরা সবাই মিলেই তো যেতে পারি। কাছেই তো!

রফিক বলল, আমার যেতে ইচ্ছা করছে না।

মিতুন বলল, আর দেরি করা যাবে না। আমাদের এবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। রোমি আবার আমাদের বাড়িতে যাবার নাম করে এসেছে, শেষে যদি ওর খোঁজ করে।

তাহমিনা বলল, আমিও দেরি করতে পারব না।

শর্মিষ্ঠা বলল, না ভাই, দেরি করলে বাড়িতে আবার মুস্কিল আছে।

রোমি বলল, আমি কোনোদিন এখানে মাঠে বসিনি। আজ একটু বসি? দশ মিনিট? আকাশটা বড় সুন্দর হয়েছে।

আমার মনে মনে একটা আশঙ্কা ছিল রোমি বোধহয় ভালো বাংলা জানে না। হয়তো ওরা উর্দুভাষী। এই প্রথম সামনাসামনি রোমির কথা শুনলুম আমি। ওর উচ্চারণে কোনো টান নেই।

ফুচকাওয়ালাকে দাম চুকিয়ে দিয়ে মাঠের দিকে এগোতে এগোতে রফিক বলল, রোমি যে ছবি আঁকতো, তাতে ওর বাবার খুব আপত্তি ছিল। উনি এসব পছন্দ করেন না। তারপর রোমি কী করল জানিস? ছবি আঁকা ছেড়ে মূর্তি গড়তে আরম্ভ করল। মাটি দিয়ে এত বড় বড় সব পুতুল বানিয়েছে। তাতে ওর বাবা তো মহা খাপ্পা। মূর্তি গড়া তো স্যাক্রিলেজ। ভেঙে ফেলেন পুতুলগুলো।

আমি জিজ্ঞেস করলুম, কেন, ছবি আঁকা, মূর্তি গড়ায় এত আপত্তি কিসের?

—তুই বুঝবি না। তুই হিন্দু বাড়ির ছেলে। রোমি কিন্তু দারুণ তেজি। বাড়ির লোকের কথায় প্রায়ই রিভোল্ট করে। এর পরেও আবার মূর্তি গড়েছে। হিউম্যান ফিগার। একটা তো বেশ বড়।

তাহমিনা বলল, মাটি কাদা দিয়ে মূর্তি গড়লে হাতের আঙুল খারাপ হয়ে যায়। রফিক তাকে এক ধমক দিয়ে বলল, তুমি চুপ করো।

তারপর আমাকে আবার বলল, তোকে বলেছিলুম না, রোমি একবার রাত্তির বেলা ট্রেন থেকে একটা স্টেশনে নেমে গিয়েছিল? গত সপ্তাহে ও আবার কী করেছে জানিস?

রোমি অনুরোধের সুরে বলল, রফিকভাই ওটা থাক, ওটা বলো না, প্লীজ।

রফিক হা–হা করে হেসে উঠল।

ওরা বসতে যাচ্ছে, আমি বললুম, চলি।

একদিনে এতখানিই যথেষ্ট। এর বেশি লোভ করা ভালো নয়। রফিক কয়েকটি সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে, তাদের সঙ্গে আমার কি আঠার মতন লেগে থাকা উচিত? রোমিকে আজ আমি যতটা সময় ধরে দেখেছি, তাতে আর এক বছর না দেখলেও চলবে।

রফিক আমার হাত ধরে বলল, কোথায় যাচ্ছিস? বোস একটু আমাদের সঙ্গে–

–না রে, একাডেমিতে আমার জন্য দুজন অপেক্ষা করবে।

—দুজন? একজন নয় তো। তবে যা। শোন, আমার জন্য ফ্ল্যাট খুঁজছিস তো? আমি সিরিয়াস।

—হ্যাঁ, দেখছি।

—যা বলেছি মনে রাখিস। আমি কথায় খেলাপ করি না।

অ্যাকাডেমিতে আমার জন্য কেউ দাঁড়িয়ে থাকবে না। এই বর্ষায় সেখানে কোনো ভালো প্রদর্শনী থাকার সম্ভাবনাও খুব কম। তবু আমি সেদিকেই হাঁটতে লাগলুম।

শর্মিষ্ঠা নামের মেয়েটি যদি সবাই মিলে আসার প্রস্তাব না দিত, তাহলে রোমি একলা আসত আমার সঙ্গে? এই রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে যেতুম! রোমি শুধু রূপসী নয়, সে একজন শিল্পী। ঐ জন্যই ওর চোখের দৃষ্টি অন্যরকম। কী রকম যেন গাঢ় ভাবে তাকায়। রোমি বিদ্রোহিনী। মাঝরাতে একলা একটা অজানা স্টেশনে নেমে পড়েছিল…। কী করেছিল গত সপ্তাহে?

এরপর সারা সন্ধে রোমিকে নিয়েই কাটল। নাইট শো–তে দেখতে গেলুম একটা ফিলম্। যত দেরি করে বাড়ি ফেরা যায়। চাকরির কথাটা তুলতেই দেব না। টাকার দরকার তো? ঠিক আছে আমি টাকা বানাব। মানব জমিন পতিত থাকবে না। আবাদ করলেই সোনা ফলবে। আমার হাতে কলম আছে, সাদা কাগজই আমার কৃষিক্ষেত্র।

পরদিনটাও বেশ ভালো ভাবেই কাটল, কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়ে গেল রাত্তিরে বাড়ি ফিরে।

লোডশেডিং। বাড়ি ফিরে অভ্যেসবশত দরজার পাশের ডাক বাক্সটা একবার খুলে দেখি। হাতে ঠেকল একটা খাম। অন্ধকারে পড়া যাবে না।

দু’তিনটে সিঁড়ি টপকে উঠে এলুম ওপরে।

দরজা খুলেই মা বললেন, সারাদিন কোথায় থাকিস? আজ চম্পক এসে তোর জন্য অনেকক্ষণ বসে ছিল। বলল, খুব জরুরি দরকার আছে।

শুভ্রবসনা মা হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে, পটভূমিকায় শুধু অন্ধকার। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সঙ্গে তুলনা দেওয়া যেতে পারত, কিন্তু এই মুহূর্তে মাকে দেখে আমার রীতিমতন ভয় করতে লাগল।

মা নিশ্চয়ই চম্পককে যত্ন করেছে অনেক, ডিম ভাজা আর চা খাইয়েছে। আর চম্পক গড়গড় করে বলে গেছে সব কথা।

মায়ের মুখে যে হাসি ফুটল সেটাও আমার মনে হলো অতি নিষ্ঠুর হাসি। যেন নিজের জননী অন্যের সঙ্গে যড়যন্ত্র করে আমায় জেলে পাঠাচ্ছে।

–নীলু, তোর নাকি চাকরি হয়ে গেছে, তুই আমাদের বলিসনি!

মোমের আলোয় আমি খামখানা দেখলুম। তাতে আমারই নাম লেখা। না, এটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নয়। সুদৃশ্য চৌকো গোলাপি রঙের খাম, ওপরে কোনো ডাক টিকিট নেই। কে দিয়ে গেল এই রহস্যময় চিঠি? এরকম চিঠি মায়ের সামনে খোলা যায় না।

–হাত পা ধুয়ে নে, আমি ততক্ষণ খাবার গরম করি। খেতে খেতে সব বলিস।

–না, শোনো, এখনই বলছি।

—বাইরে যেতে হবে? চম্পক বলল, মাইনে নাকি বেশ ভালো। খাওয়া–থাকার খরচ লাগবে না।

–মা, চম্পক আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছিল ঠিকই। কিন্তু সেটা আমি নেব না।

—নিবি না? কেন?

মায়ের কণ্ঠের আর্ত হাহাকার আমি বেশ উপভোগ করলুম। অনেক সময় মা আর সন্তানের মধ্যেও হৃদয়হীন খেলা চলতে পারে। আরও খানিকক্ষণ মাকে বিস্মিত দুশ্চিন্তায় রেখে আমি জামার বোতাম খুলতে লাগলুম।

আমার খুব একটা অনিচ্ছে ছিল না, আমি নিতে রাজিই ছিলুম, শুধু তোমাদের কথা ভেবেই ও চাকরিটা নিচ্ছি না।

—তুই কী বলছিস নীলু, কিছু বুঝতে পারছি না। আমাদের কথা ভেবেই তুই চাকরি নিচ্ছিস না!

—হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমি যদি সংসারে একা হতুম গ্রাহ্য করতুম না, একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে ওটাই নিতুম। এমনিতে তো চাকরিটা সত্যিই খুব ভালো।

মা চেয়ারের ওপর বসে পড়ল। আমি তার হাত থেকে মোমবাতিটা নিয়ে টেবিলে বসালুম।

—শোনো মা, ব্যাপারটা তোমায় খুলে বলছি। আমি কোনো চাকরির দরখাস্ত করিনি। চম্পকের সঙ্গে এমনিই হলদিয়ায় গেছি। সেখানে চম্পক আমার জন্য সামান্য একটু চেষ্টা করতেই আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়ে গেল। নিজস্ব কোয়ার্টার, খাওয়ার খরচ নেই, মাইনেও হাজার টাকার ওপর। আজকালকার দিনে এরকম চাকরি মানে তো স্বর্গ, তাই না!

—চম্পক তো সেই কথাই বলল।

—চম্পক তোমায় সবটা বলেনি। এরকম চাকরি এত সহজে কেউ পায়? চম্পক নিজেও তো চাকরি খুঁজছে অনেকদিন ধরে, ও নিজে নিল না কেন?

–ও তোর ভালো চায়। ওদের বাড়ির অবস্থাও তো বেশ ভালো শুনেছি।

–তোমার তাহলে ইচ্ছে আমিই ঐ চাকরিটা নিই? এখনো পুরো না বলে দিইনি। অ্যাকসেপ্ট করতে পারি।

—তুই নিতে চাইছিস না কেন, সেটাই তো বুঝছি না।

—তুমি কান্নাকাটি করবে সেই জন্য। নইলে আমার আর কী?

–আমি কান্নাকাটি করব? কেন, কত দূরে? চম্পক যে বলল হলদিয়ায়।

—হ্যাঁ, বেশি দূর নয়। একবেলাতেই যাওয়া যায়। আমার কিছু একটা হলে তোমরা চট করে খবর পেয়ে যাবে।

—অ্যাঁ?

—যে পোস্টে ওরা আমাকে নিচ্ছে, সেই পোস্টে গত পাঁচমাসের মধ্যে দুজন খুন হয়েছে। ওখানে কিছু একটা র‍্যাকেট আছে, ওরা কিছুতেই বাইরের লোককে ঐ কাজ করতে দেবে না।

—খুন হয়েছে?

—হ্যাঁ, দুজনেই কলকাতার ছেলে। এখন ঐ পোস্টে কেউ যেতে চায় না। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে রাজি ছিলুম মা। আমাদের পয়সাকড়ির অভাব।

—চম্পক কী অদ্ভুত ছেলে, এসব কথা একবারও আমাকে বলল না। জেনেশুনে তোকে ওখানে পাঠাতে চাইছে। নীলু…

হঠাৎ মা থেমে গিয়ে একদৃষ্টে চেয়ে রইল আমার দিকে। তারপর উঠে এসে আমার পিঠে হাত বুলোতে লাগল একটুক্ষণ। তারপর ধরা গলায় বলল, নীলু, টাকার জন্য কি মানুষকে পাপ কাজ করতে হবে? যে চাকরি করতে গেলে মানুষ খুন হয়, সে চাকরিতে নিশ্চয়ই পাপ আছে। ছি ছি ছি ছি। আহা রে, যে ছেলেদুটোর প্রাণ গেছে, তাদের মায়েদের কী অবস্থা! ছি ছি ছি ছি।

মা বুকে টেনে নিল আমাকে।

এত বড় ধেড়ে ছেলে হয়েও আমি মায়ের আদর ভোগ করতে লাগলুম।

প্রথম থেকেই যদি সত্যি কথা বলতুম, তাহলে মা কি আমায় এরকম আদর করত? একটা রাগ রাগ ভাব, অভিমান, টেনশান এই সব চলত কয়েকদিন পৃথিবীতে এখন অনেক কিছুরই মূল্য বদলে গেছে।

এখন খাবার গরম ইত্যাদির জন্য মিনিট পনেরো সময় পাওয়া যাবে। আমি একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে চলে এলুম নিজের ঘরে। পাশের ঘরে দাদা ব্যাটারির আলোতে বই পড়ছে

অতি সামান্য চেষ্টাতেই মাকে বশীভূত করে যে আনন্দটা হয়েছিল, সেটা মূহূর্তে উবে গেল চিঠিটা পড়ে। রাগে জ্বলতে লাগল মাথা।

সেটা কোনো চিঠিই নয়। কোনো সম্বোধন নেই। শুধু এই কটি কথা লেখা আছে।

রোমির ঠিকানা

১৩এ পার্ল স্ট্রিট, বেকবাগান।

ফোন নং ৪৮–২৩৫৭

দুপুরবেলা ও বাড়িতে কোনো পুরুষ অভিভাবক থাকে না।

রোমি একদিন ছবি ও পুতুল দেখাতে চায়।

হাতের লেখাটা অচেনা। কিন্তু এটা যে রফিকেরই কীর্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রত্যেকটি অক্ষরে যেন আমি রফিকের হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

এরা ভেবেছে কী?

এক বন্ধু আমাকে চাকরি পাইয়ে দেবার জন্য ব্যস্ত। আর এক বন্ধু জোর করে আমাকে একটি মেয়ের প্রেমে পড়াতে চায়। আমি কি ওদের দয়ার পাত্র?

রোমিকে আমার ভালো লেগেছিল, কিন্তু এর মাঝখানে রফিকের এত বেশি সাহায্য করার চেষ্টা বিষয়টাকে তেতো করে দিচ্ছে।

রোমি আর হলদিয়ার চাকরি যেন এক হয়ে গেল।

রাগের মধ্যেও আমার একটু একটু হাসি পেল। রোমিকে আমি মনে মনে মারুমাঢ়ের নির্জন, সুশ্রী ডাকবাংলোর সঙ্গে তুলনা করে ছিলুম। তার বদলে সে এখন হলদিয়ার একটা দ্বিতীয় শ্রেণীর, হৈ–হট্টগোলে ভরা গেস্ট হাউসের সমান হয়ে গেল।

এই ধরনের বাস্তব আমার সহ্য হয় না। এবার আমাকে এইসব বন্ধুবেশী শত্রুদের কাছ থেকে দূরে পালাতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *