বিশ্বমামার হায় হায়
এবার অনেক দিন পর দেশে ফিরছেন বিশ্বমামা। পাঁচ মাস তো হবেই। সাধারণত এত বেশিদিন তিনি বাইরে থাকেন না। পৃথিবীর নানা দেশে বক্তৃতা করতে যান, ফিরে আসেন এক-দেড় মাসের মধ্যে। অন্য দেশে বিশ্বমামা বেশিদিন থাকতে চান না, তার কারণ বাঙালি রান্না ছাড়া অন্য কোনও খাবার তার পছন্দ হয় না। কুমড়ো আর কুচো চিংড়ি দিয়ে পুঁই শাকের চচ্চড়ি তো আর কোনও দেশে পাওয়া যাবে না। পটলের দোরমাই বা অন্য দেশে কে তাঁকে তৈরি করে দেবে? বিশ্বমামা মাংস খান না একেবারেই।
দমদম এয়ারপোর্টে আমরা কয়েকজন বিশ্বমামাকে আনতে গেছি। ওপরের ভিজিটার্স গ্যালারি থেকে দেখলাম, বিশাল বিমানটা আকাশ থেকে নেমে মাটি ছুঁল। একটু বাদে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল যাত্রীরা। কিন্তু বিশ্বমামা কই? কয়েকশো লোক নামল, তবু বিশ্বমামাকে দেখা যাচ্ছে না।
সবাই নেমে যাওয়ার পর সিঁড়ির মাথায় দেখা গেল একজন লম্বা লোককে।
আমার মাসতুতো দাদা বিলু বলল, ওই দেখ নাকেশ্বর ধপধপে!
বিশ্বমামার আড়ালে আমরা তাকে ওই নামে ডাকি। তার সারা শরীরের মধ্যে নাকটাই প্রথম দেখা যায়। এত বড় নাক-ওয়ালা মানুষ বোধহয় আর কেউ দেখেনি। আর ওঁর গায়ের রংটা সাহেবদের মতন।
অন্য যাত্রীদের কাঁধে ঝোলানো মোটোসোটা ব্যাগ, হাতে কতরকম জিনিসপত্র। আর বিশ্বমামার সঙ্গে কিছুই প্রায় নেই। শুধু একহাতে একটা ছোট্ট প্যাকেট। নাকি একটা কার্ড বোর্ডের বাক্স? দশ টাকার সন্দেশ কিনলে যেরকম বাক্স দেয়, সেইরকম।
সেই বাক্সটাকে উঁচু করে ধরে খুব সাবধানে আসছেন বিশ্বমামা।
অন্যবার বিদেশ থেকে তিনি আমাদের জন্য নানারকম চকলেট নিয়ে আসেন আর বড়-বড় প্যাকেট ভর্তি ক্যান্ডি। এবার সেসব কিছু নেই? অন্য কোনও খাবার এনেছেন? ওইটুকু বাক্সে কী আর খাবার থাকতে পারে?
কাস্টমসের জায়গা পার হতে বিশ্বমামার অনেকটা সময় লাগবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। শেষ পর্যন্ত বিশ্বমামা একটা ট্রলিতে সুটকেস নিয়ে বেরুলেন, একহাতে সেই প্যাকেটটা উঁচু করে ধরা।
আমাদের দেখে বিশ্বমামা একগাল হেসে বললেন, কী রে নীলু, বিলু, পিলু তোরা সব কেমন আছিস?
বিলুদা সুটকেসটা তুলে নিয়ে নিজের গাড়িতে রাখল। আমাদের দিকে একবার চোখ টিপে মাথা নাড়ল। অর্থাৎ সুটকেসটা বিশেষ ভারী নয়। এর আগে একবার কানাডা থেকে বিশ্বমামা এক সুটকেস ভর্তি পাথর এনেছিলেন। সেই সুটকেস বইতে বিলুদার জিভ বেরিয়ে গিয়েছিল।
আমার তক্ষুনি জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছিল যে বিশ্বমামার হাতের ওই প্যাকেটটায় কী আছে। কিন্তু মা বলে দিয়েছিল, হ্যাংলামি করবি না। বিশ্বকে দেখেই চকলেট চাইবি না। তোরা বড় হয়েছিস, এখন একটু ভদ্রতা সভ্যতা শেখ।
ভদ্রতা রক্ষা করবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বাড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত।
কিন্তু গাড়ি চলতে শুরু করতেই পিলু ফস করে বলে উঠল, বিশ্বমামা, তোমার হাতের ওই বাক্সটায় কী আছে?
পিলু এখনও অনেক ছোট, ওর এখনও ভদ্রতা মানবার বয়স হয়নি।
বিশ্বমামা বললেন, আগে বল তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ফসিলের কী সম্পর্ক?
পিলুর মুখ শুকিয়ে গেল, আমি তাকালাম জানলার বাইরে।
বিশ্বমামার স্বভাবই এই, কোনও প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবেন না। তার বদলে উলটে অন্য একটা প্রশ্ন করে বসবেন। বিদঘুঁটে প্রশ্ন। হ্যাঁ, বিদঘুঁটেই তো। ফসিল কাকে বলে তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কী সম্পর্ক থাকতে পারে?
বিলুদা জিগ্যেস করল, বিশ্বমামা, তুমি তো এবারে সাহারা মরুভূমিতে ঘুরে আসবে বলেছিলে?
বিশ্বমামা বললেন, আমাদের কাছাকাছি এই পশ্চিম বাংলার মধ্যে কী কী জঙ্গল আছে রে?
এ প্রশ্নের উত্তর গেল।
আমি বললুম, সবচেয়ে কাছে সুন্দরবন।
বিশ্বমামা বললেন, না, ওটা চলবে না। ওখানে অনেক মানুষ থাকে। আর?
আমি বললুম, মেদিনীপুরে আছে কাঁকড়াঝোড়। উত্তরবঙ্গে অনেকগুলি জঙ্গল আছে। চাপরামারি, গরুমারা, হলং।
বিশ্বমামা বললেন, হ্যাঁরে বিলু, তোর পিসেমশাই বেঁচে আছেন?
বিলু বলল, না, তিনি স্বর্গে গেছেন।
বিশ্বমামা আবার জিগ্যেস করলেন, তার বাড়িটায় এখন কে থাকে?
বিলু বলল, সেটা এখন এমনিই খালি পড়ে আছে। অনেকে বলে ওই বাড়িতে নাকি ভূত আছে।
বিশ্বমামা বললেন, গুড। ওইরকমই চাইছিলাম। চল, ওখানে যাব।
বিলু বলল, এক্ষুনি?
বিশ্বমামা বললেন, না, এক্ষুনি তো যাওয়া যাবে না। আজকের দিনটা বাড়িতে থেকে কাল সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে।
একথা শুনে আমি খুশি হয়ে উঠলুম। কলকাতায় বেশিদিন থাকতে আমার ভালো লাগে না। কাল বাইরে যাওয়া যাবে, একটা কিছু অ্যাডভেঞ্চার হবে।
বিলুদার পিসেমশাই ছিলেন পাগলাটে ধরনের মানুষ। ওঁর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর উনি বর্ধমানের জঙ্গল মহলে কীসব নাকি তন্ত্রসাধনা করতেন। একেবারে গভীর জঙ্গলের মধ্যে বাড়ি, কাছাকাছি কোনও মানুষ নেই। তবে ওই বাড়িতে নাকি ভূত ছিল।
বিশ্বমামা বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছেড়ে হঠাৎ ভূত ধরতে চান নাকি? বিদেশ থেকে এসেই অমনি যেতে চান জঙ্গলে!
বাড়িতে এসে বিশ্বমামা প্রথমেই তার হাতের প্যাকেটটা সাবধানে রাখলেন আলমারির মাথায়।
তার স্যুটকেসের মধ্যে আমাদের জন্য কিছু টফি আর ক্যান্ডি এনেছেন বটে। বেশি না।
ছোট্ট প্যাকেটটায় কী আছে তা যে জিগ্যেস করে তাকেই বিশ্বমামা হেসে বলেন, মনে করো ঘোড়ার ডিম!
পরদিন ভোরবেলা আমরা বেরিয়ে পড়লাম। বিশ্বমামা অনেক কী যন্ত্রপাতি সঙ্গে নিলেন। পৌঁছতে লাগল তিন ঘণ্টা। বর্ধমানের এই জঙ্গলটা তত বড় নয়, কিন্তু এক-এক জায়গায় খুব নিবিড়। বিলুদার পিসেমশাইয়ের বাড়িটা প্রায় ভাঙাচুরো অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরগুলো ধুলো ভর্তি। আমরা তালা খুলে-খুলে ঢুকতে লাগলুম। এইরকম খালি ফেলে-রাখা বাড়ির দরজা-জানলাও খুলে নিয়ে যায় চোরেরা। কিন্তু ভূতের ভয়েই বোধহয় চোরেরা এদিকে আসে না।
বিশ্বমামা বললেন, বাঃ! কাছাকাছি অনেক গাছ আছে, তাতেই আমার সুবিধে হবে!
দুটো ঘর সাফ করে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাল ডাল আরও সব রান্নার জিনিসপত্র সঙ্গে আনা হয়েছে। বিলুদা রান্না করতে পারে। আর আনা হয়েছে কয়েকটা কাঁচা আম। কাঁচা আম পাতলা করে কেটে নুন দিয়ে খেতে খুব ভালোবাসেন বিশ্বমামা।
সেইরকম একপ্লেট কাঁচা আম কেটে সাজিয়ে দিয়ে বিলুদা জিগ্যেস করল, বিশ্বমামা, এবার দয়া করে বলবে, তোমার ওই প্যাকেটটাতে কী আছে?
বিশ্বমামা বললেন, ভূতেরা এখানে থাকলেও কোনও ক্ষতি নেই। ভূতদের দাঁত থাকে না, তারা কামড়াতে পারবে না। ভূতেরা সব নিরামিষাশী।
বিলুদা বলল, কথা ঘোরাতে পারবে না। আমরা কেউ ভূত-টুত মানি না। তুমিও ভূত ধরতে আসোনি তা জানি। ওটাতে কী আছে আমাদের বলতেই হবে।
কেন, ঘোড়ার ডিমটা বুঝি পছন্দ হল না?
আমাদের কি ছেলেমানুষ পেয়েছ বিশ্বমামা?
তোরা কেউ ক্যামেরা এনেছিস?
আবার কথা ঘোরাচ্ছ, ঘোড়ার আবার ডিম হয় নাকি?
হয় না। তাই না? সেইজন্যই কিছু নেই’ বোঝাতে বাংলায় বলে ঘোড়ার ডিম। আচ্ছা, হাতি ডিম হয়?
সবাই জানে হাতির বাচ্চা হয়!
বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, হাতির এদের কারুরই ডিম হয় না!
এবার আমি বিদ্যে ফলাবার জন্য কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীর ডিম হয় না, বাচ্চা জন্মায়। বললুম।
বিশ্বমামা বললেন, আমি যদি বলি, হাতির চেয়েও বড় কোনও প্রাণীর বাচ্চা হয় । ডিম হয়?
আমি মাথা চুলকে বললুম, হাতির চেয়ে বড় প্রাণী? তাহলে কি তিমি মাছ?
বিশ্বমামা বললেন, বাগানে চল। আমার যন্ত্রপাতিগুলো সঙ্গে নে।
বিলুদা বলল, সেগুলো গাড়িতে আছে। নামানো হয়নি।
সবাই গেলাম গাড়ির কাছে। সেখান থেকে নামানো হয়নি।
সবাই গেলাম গাড়ির কাছে। সেখান থেকে নামানো হল অনেক জিনিসপত্র। একটা বেশ বড় ধরনের কাঁচের বাক্স দুহাতে তুলে বিশ্বমামা বললেন, এটা আমার বিশেষ আবিষ্কার, জানিস তো?
একটা কাঁচের বাক্সকে আবার আবিষ্কার করার কী আছে কে জানে! সেটাকে নিয়ে বিশ্বমামা বাগানের এক জায়গায় বসলেন। বাক্সটার সঙ্গে জুড়ে দিলেন কয়েকটা মোটর, আরও সব কী যেন।
সেই কাঁচের বাক্সটার একটা দরজা আছে। সেটাকে খুলে বিশ্বমামা রাখলেন তার সেই বহু মূল্যবান প্যাকেটটা।
আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এবারে আমি গোবি আর সাহারা মরুভূমিতে কতকগুলি ফসিল দেখতে গিয়েছিলাম জানিস তো।
তারপর পিলুর দিকে ফিরে বললেন, বরাসপোরাস টাগারোই’ কী জানিস না? এক ধরনের ফসিল। ডাইনোসরের ফসিল। পাওয়া গিয়েছিল গোদাবরী নদীর কাছে। ডাইনোসররা যেমন অতিকায় প্রাণী, সেরকম লেখক-কবিদের মধ্যে অতিকায় মানে সবচেয়ে বড় কে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইংরিজিতে বলে রবীন্দ্রনাথ টেগোর, তার থেকে টাগোরাই! রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে ওই ডাইনোসরের ফসিলের নাম রাখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের নামে।
এবার বিশ্বমামা খুব সাবধানে প্যাকেটটা খুললেন। আমরা হুমড়ি খেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখে কিছুই বোঝা গেল না। অনেকটা লম্বাটে চমচমের মতন একটা জিনিস। শক্তিগড়ের ল্যাংচার মতন। কিন্তু সেটা যে খাওয়ার জিনিস নয়, তা নিশ্চিত।
আমি জিগ্যেস করলাম, এটা কী?
বিশ্বমামা বললেন, এখনও বুঝলি না, নীলু? এটা একটা ডিম—
ডিম? যাঃ কী বলছ। ডিম কখনো লম্বা হয়?
কেন হবে না? এটা যে প্রাণীর ডিম, সেটাও যে খুব লম্বা।
কোন প্রাণীর ডিম!
গোবি মরুভূমিতে ডাইনোসরের ফসিল, অর্থাৎ জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল। সেটা দেখে বোঝা গিয়েছিল ওদের ডিম কেমন হয়। তারপর হঠাৎ এবারে সুইজারল্যান্ডে ম্যাটারহর্ন পাহাড়ের বরফের মধ্যে এই ডিমটা আমি আবিষ্কার করেছি! বরফের অনেক নিচে ছিল, তাই এটা নষ্ট হয়নি। খুব সম্ভবত একটা ফুটিয়ে বাচ্চা বের করা যেতে পারে। এই কাঁচের বাক্সটা হচ্ছে একটা নতুন ধরনের ইনকিউবেটর। এটার মধ্যে থাকলে শুধু যে ডিম ফোঁটানো যাবে তাইই না, বাচ্চাটাকে অনেক তাড়াতাড়ি বড় করা যাবে।
আমি চোখ বড়-বড় করে বললাম, এটা থেকে ডাইনোসর জন্মাবে? ওরে সর্বনাশ!
বিশ্বমামা বললেন, ভয়ের কী আছে? ডাইনোসর আসলে কী বল তো? খুব বড় সাইজের টিকটিকি! একটা টিকটিকিকে এক হাজার গুণ বড় করে মনে ভাব! টিকটিকি কি মানুষকে কামড়ায়? বেশিরভাগ ডাইনোসরই ঘাসপাতা এইসব নিরামিষ খেত। যেসব জন্তু নিরামিষ খায়, তারা চট করে মানুষকে কামড়ায় না। হাতির কথা ধর, হাতি মানুষকে কক্ষনো কামড়ায় না। মানুষ বেশি বিরক্ত করলে হাতি তাকে খুঁড়ে জড়িয়ে আছাড় মারে।
আমি বললাম, এখনকার পৃথিবীতে একটা বিরাট ডাইনোসর জন্মাবে, তা কি সম্ভব?
বিশ্বমামা বললেন, সম্ভব কি অসম্ভব তা একটু পরেই বোঝা যাবে।
বিশ্বমামা একবার ইনকিউবেটরটা চালু করে দিলেন। তারপর অবিশ্বাস্য সব কাণ্ড ঘটতে লাগল।
দশ মিনিট বাদেই ফট করে ডিমটা ফেটে গেল। ফাটার শব্দ হল রীতিমতন। আমরা ঝুঁকে দেখলুম, তার মধ্যে কী একটা কিলবিল করছে।
বিশ্বমামা আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠলেন, বেঁচে আছে, বেঁচে আছে।
আধঘণ্টার মধ্যেই সেই জিনিসটা মাথা তুলল। ঠিক টিকটিকির মতনই মাথা।
আরও আধঘণ্টার মধ্যে সেটা আরেকটু বড় হতে টিকটিকির বদলে মনে হল গিরগিটি!
বিশ্বমামা ফিসফিস করে বললেন, ব্রন্টোসরাস। এরা খুব নিরীহ! সারা পৃথিবী চমকে যাবে। এটার জন্য হাওড়া স্টেশনের সাইজের একটা খাঁচা বানাতে হবে।
বিলুদা বলল, আমরা কি চোখের সামনে বিবর্তন দেখব!
বিশ্বমামা বললেন, দেখ না কী হয়!
সেই গিরগিটিটা ক্রমশ বড় হতে লাগল। পিঠের দিকটা উঁচু হয়ে গেল আর লেজটা লম্বা হল অনেকখানি!
এক সময় সেই প্রাণীটার মাথা ঠেকে গেল কাঁচের বাক্সটা ফাটিয়ে ফেলবে।
পিলু ভয় পেয়ে বলল, ওরে বাবা, আমি পালাচ্ছি!
এরপরই অদ্ভুত একটা ব্যাপার হতে লাগল। সেই প্রাণীটা আর বড় হওয়ার বদলে ছটফট করতে লাগল কাঁচের বাক্সের মধ্যে। যেন ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। গায়ে যেন কিছু ফুটছে। যন্ত্রণায় গড়াগড়ি দিল কয়েকবার।
বিশ্বমামা ইনকিউবেটরের ইলেকট্রনিক চার্জ বন্ধ করে দিলেন।
প্রাণীটা তবু গড়াগড়ি দিতে দিতে কুঁকড়ে যেতে লাগল।
পিলু বলল, ছোট হয়ে যাচ্ছে। আবার ছোট হয়ে গেল!
সত্যিই তাই, কুঁকড়ে-মুকড়ে ছোট হতে হতে সেটা আবার একটা টিকটিকির মতন হয়ে গেল।
বিশ্বমামা হতাশ হয়ে বললেন, বিবর্তনবাদ! বিবর্তনবাদ। এখনকার পৃথিবীতে আর ডাইনোসর জন্মাতে পারবে না! সব ডাইনোসর টিকটিকি হয়ে গেছে।
আমরা এত অবাক হয়ে গেছি যে কেউ আর কথা বলতে পারছি না।
বিশ্বমামা আবার আর্তনাদ করে বললেন, ক্যামেরা আনলি না? ছবি তুলে রাখবি না? অনেকটা বড় হয়েছিল। সবাইকে ছবি তুলে দেখাতাম! হায়, হায়, হায়!
ক্যামেরা ছিল বিলুদার গাড়িতে। কিন্তু আমার সে কথা মনেই পড়েনি। সত্যি একটা টিকটিকির মতন প্রাণী বড় হতে হতে ডাইনোসরের মতন চেহারা নিচ্ছিল। কেউ কি একথা বিশ্বাস করবে?
ছবি তোলা হল না বলে বিশ্বমামা মাথা চাপড়ে হায়-হায় করতে লাগলেন।