প্রস্তুতি পর্বের রচনা (নাটিকা)

প্রস্তুতি পর্বের রচনা (নাটিকা)

নিধু মাস্টার

মধু— মাস্টারের ছেলে, বয়স ৮

মা— মধুর মা, বয়স ৪০

নিধু মাস্টার— মধুর বাবা, বয়স ৬০

বঙ্কিম— নিধু মাস্টারের ছাত্র, বয়স ২৪

রথিন— নিধু মাস্টারের ছাত্র, বয়স ২৫

বিজয়— নিধু মাস্টারের ভাই পো, বয়স ১৭

[মা ঘরে ঢুকলো। পেছনে ৮ বছরের ছেলে মধু। মাস্টারের ছেলে ও স্ত্রী। পোশাক নিতান্তই সামান্য। মায়ের আঁচল ধ’রে টানছে বায়না ধরা সুরে।]

মধু : মা, ও মা!

মা : কি হয়েছে?

মধু : মা, ঘোষদের বাড়ি বায়োস্কোপ এসেছে, কতো সুন্দর! ওরা সবাই দেখছে। মা, ওমা [মা খড় কুড়াচ্ছে ঝাঁটা দিয়ে] শুনছো ও মা? মা, ও মা।

মা : শুনছি, বল!

মধু : মা বায়োস্কোপ এসেছে।

মা : তা আমি কি করবো?

মধু : আমায় চার আনা পয়সা দাও না মা।

মা : [হঠাৎ রেগে উঠলো] পয়সা কোথায় পাবো?

মধু : তা আমি জানি না! আমায় পয়সা দাও। বেনুদের বাবা রোজ ওদের পয়সা দেয়। তুমি তো আমায় পয়সা দাও না।

মা : পয়সা থাকলে তো দেবো।

মধু : পয়সা নেই কেন?

মা : তোর বাবাকে বল পয়সা নেই কেন।

মধু : মা, ও মা, পয়সা দাও।

[নেপথ্যে কাশির শব্দ। মাস্টার-এর প্রবেশ

মাস্টার : মধু, মধু, ও মধুর মা।

[মধু অন্য দিকে তাকিয়ে মুখ ভার কোরে দাঁড়িয়ে র’লো। মধুর মা ঘোমটা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।]

জানো মধুর মা, আর দিন দশেকের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের বিলটা পাবো। [হাসি খুশি ভাবে ছেঁড়া জামাটা আস্তে আস্তে খোলে] ভাবছি এবারের বিলের অর্ধেক টাকা আমি আমার নিজের কাজে ব্যয় করবো।

মা : তুমি থাকো তোমার শিক্ষা বোর্ডের বিল নিয়ে— কতোবার বল্লাম আমার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে একটা মুদির দোকান করো তা তো হবার নয়। উনি আছে উনার পাঠশালা নিয়ে! কি হবে শুনি বনের মোষ তাড়িয়ে। ওদের তো পড়িয়ে পড়িয়ে এক এক জনকে জজ ব্যারিস্টার বানাও অথচ নিজের ছেলে মেয়ের ভাগ্যে খাবার জোটে না। তাদের হাল চাষ করতে হয়, পরের বাড়ি খাটতে হয়। [মাস্টারের মনটা বেদনার্ত হয়]

মাস্টার : সত্যি বলেছো মধুর মা। শিক্ষকের কাজ তো তা-ই। বনের বাঁশ কেটে বাঁশের বাঁশিতে সুর তোলা। আমাদের সমাজে শুধু শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষাটাই আশা করে— কিন্তু তারও যে জীবন আছে সংসার আছে- ছেলে আছে, মেয়ে আছে, স্ত্রী আছে সেটা তারা ভাবতে পারে না। ওরা ভাবে মাস্টার মানুষ তার আবার সংসার। ওদের আবার বেতন দেবো কিসের! ওদের কাজ তো ঐ, কুকুরের মত ঐ কাজই করবে। জানো মধুর মা, আমরাই সমাজের মাঝে আলো জ্বালি অথচ, অথচ আমাদের ঘরেই আলো জ্বলে না। আমরা মানুষ তৈরি করি কিন্তু আমরা মানুষ হতে পারি না। চিরন্তন এ অভিশাপ আমাদের যুগ যুগ ধরে বয়ে যেতে হবে।

মা : ওসব বলে আর কি হবে! [দীর্ঘশ্বাস] এদ্দিন যা করবার তা করেছো। এখন ওসব ছাই ভস্ম ছেড়ে দিয়ে দ্যাখো সদরে গিয়ে কোনো একটা কাজ ধরতে পারো কিনা।

মাস্টার : [দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে] তাতে কোনো লাভ নেই মধুর মা, এখন যা-ও পুরান দু একটা ছাত্রের সাথে দেখা হলে সালাম দেয়, দু চারটা কুশল কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু এ কাজ ছাড়লে তা-ও আর কপালে জুটবে না। ভেবেছিলাম কিছুটা লেখাপড়া শিখে মানুষ হবো কিন্তু বিধাতা, তার ছলনা বড় নিদারুন। হলো না, হলো না। (বসলো)।

[মার প্রস্থান]

কি সাধ ছিলো কত রং ছিলো
কত ছবি ছিলো আঁকা,
দুঃস্বপনের অতল তলে
সবি পড়িয়াছে ঢাকা।

মধু : বাবা!

মাস্টার : কি হয়েছে রে মধু

মধু : আমায় চার আনা পয়সা দাও না বাবা।

মাস্টার : কি করবি রে?

মধু : ঘোষদের বাড়ি বায়োস্কোপ দেখবো।

মাস্টার : ওসব দেখতে নেই বাবা, ছোট ছেলেরা ওসব দ্যাখে না। তার চেয়ে তুমি সামনের মাসে আমার সাথে সদরে গিয়ে রেডিও দেখে এসো কেমন!

মধু : আমি সদরে যাবো না, রেডিও তো আমি দেখেছি।

মাস্টার : ঠিক আছে রেডিও না দ্যাখো অন্য কিছু দেখো। তাছাড়া বায়োস্কোপ ছোটদের দেখতে নেই।

মধু : তা হলে বেনু গেল কেন?

মাস্টার : বেনু গিয়েছে নাকি! [অপ্রস্তুত] ও-ও-ওরা যে বড় লোক, তাই ওরা দেখলে কিছু হয় না। আমাদের যে পয়সা নেই তাই ওসবও দেখতে নেই।

মধু : না বাবা আমি দেখবো, আমি দেখবো।

মাস্টার : না দেখে তবে ছাড়বিনে। দাঁড়াও দেখি পয়সা আছে কিনা। [পকেট হাতড়ে দশটা পাই পেল।] দ্যাখ তো এতে হবে কিনা?

[মধু নিলো। গুনলো]

মধু : না বাবা এ কয়টা পয়সায় হবে না, বায়োস্কোপঅলা বলেছে চার আনা পয়সা লাগবে।

মাস্টার : আর তো নেই বাবা, এই দিয়ে দেখে এসো কেমন [কাছে টেনে নিলো, একটু আদর করলো] যাও বাবা এ দিয়েই দেখে এসো।

[মধু পয়সা গুনতে গুনতে বেরিয়ে গেল]

ভগবান, সামর্থ দাওনি অথচ কতকগুলো বুভুক্ষু আত্মা দিয়েছো। বিধাতা তোমার বা দোষ দেই কেন। দোষ তো আমাদের, আমাদের সমাজের নাক-উঁচুদের। কেন তারা কি ইচ্ছে করলে পারে না সমাজে আমাদের দাম দিতে, আমাদের সম্মান দিতে! কিন্তু কৈ! তারা ভাবে আমরা সমাজের নই, আমাদের মান নেই সম্মান নেই। অথচ আমাদের না হলে তাদের চলে না। হু, হু, হু, বিচিত্র এই সৃষ্টি তোমার। [মা-এর প্রবেশ]

মধু : ওগো, বিধুর তো কোনো খবর পাচ্ছি না।

মাস্টার : আমিও তাই ভাবছি। সদরে গিয়েই ওর চিঠি দেবার কথা ছিলো। অথচ আজ প্রায় মাস খানেক হতে চল্লো কিন্তু কোনো খবর নেই। কাজ পেলো কি পেলো না! সেখানে আবার আরেক ব্যাপার— পেছনে লোক না থাকলে কাজ পাওয়া যায় না। কিন্তু কোনো একটা খবর পাঠানো তো অন্তত ওর উচিত ছিলো।

মা : এভাবে কদিন চলবে! ঘরে চাল বাড়ন্ত, বাজার করার পয়সা নেই। এই শেষ বয়সে তো আর আগের মতো খাটতে পারো না। বিধু যদি একটা কাজ পেতো তাহলে তুমি একটু বিশ্রাম নিতে পারতে। আর তাছাড়া এ শরীর দিয়ে তোমার তো আর ছাত্র পড়ানো চলে না।

মাস্টার : তুমি জানো না মধুর মা মাস্টারদের অবসর নেই, বিশ্রাম নেই, তারা তো শুধু খাটবার জন্য। তারা অবসর নিলে এ সমাজ সংসার যে অচল হয়ে পড়বে। তুমি জানো না, হাঃ হাঃ তুমি জানো না! আমরা এভাবে পরিশ্রম করি বোলেই তো সমাজে সৃষ্টি হয় বড় বড় পন্ডিত। কিন্তু শিশির ঝরা ভোরে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে যেমন মনে হয় না যে এ শিশির বিষন্ন রাতেরই অবদান, ঠিক তেমনি ব্যারিস্টার প্রশান্ত বাবুকে দেখে কেউই বলবে না যে সে নিধু মাস্টারের বানানো বুনো বাঁশের বাঁশি। মধুর মা আমাদের জীবনে সান্ত্বনা নেই, আমরা শুধু দিয়েই যাই প্রতিদান কি পেলাম তা কখনোই ভাবি না।

মা : কিন্তু এ দেওয়া তো বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে না।

মাস্টার : হাঃ হাঃ হাঃ সেটাই যে মাস্টার জীবনের ট্রাজেডি। আমার পাঠশালায় যারা পড়েছে তার ক’জনেই বা মনে করে ঐ দরিদ্র নিধু মাস্টারের কথা!

মা : তবুও তো তোমার তাই না করলে চলবে না।

[মাস্টার অন্যমনস্ক হয়]

মাস্টার : জীবনের স্বাদ কিছুই উপলব্ধি করতে পারলাম না— শুধু পরিশ্রমই কোরে গেলাম। সেটাই যে আমাদের জীবন। [বাইরে অপরিচিত কণ্ঠ]

বঙ্কিম : স্যার, স্যার, বাড়ি আছেন, বাড়ি আছেন স্যার?

মাস্টার : তুমি ভেতরে যাও তো। কে? কে, ভেতরে এসো— [মার প্রস্থান] [দু’জনের প্রবেশ]

বঙ্কিম : কেমন আছেন স্যার—[দুজনে পায় ধুলা নিতে গেল। মাস্টার দ্বিধাগ্রস্ত]

মাস্টার : তোমাদের তো চিনতে পারলাম না।

বঙ্কিম : স্যার আমি বঙ্কিম, পরান মন্ডলের ছেলে। আর ও পনালপুরে বন্ধু বাবুর ছেলে রথিন।

মাস্টার : [আনন্দে] আরে বঙ্কিম, এই রথু তোরা কত বড় হয়েছিস! তোদের চিনবো কেমন কোরে আমার কাছে যখন পড়তিস তখন ছিলি এতোটুকু। মিষ্টি মিষ্টি চোখে তাকাতিস। ছোট ছোট কচি কচি হাতগুলোয় বইশ্লেট নিয়ে গুড়ি গুড়ি হেঁটে আসতিস। আর আজ কতো বড় হয়েছিস—আমাকেও ছাড়িয়ে গেছিস। তাই না, হেঃ হেঃ হেঃ। তোদের তো বসতে দেবার মতো জায়গা নেই বাবা।

দুজনে : না, না, স্যার আমরা এখানেই বসবো।

মাস্টার : বঙ্কিম এবার কি পড়াশুনা করছো?

বঙ্কিম : স্যার এবার বি.এ পরীক্ষা দেবো।

মাস্টার : আর রথু?

রথিন : আমি বি. এস. সি পাশ করেছি। Now এই ডিসিশান নিচ্ছি That I go to ইংল্যান্ড। There I মেকানিক্যাল ইনজিনিয়ারিং পড়বো।

মাস্টার : বাঃ বাঃ ভালো। তোমরাই আমার মনের আশা পূর্ন করবে। আমার ছেলের মাঝে আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম কিন্তু অভাবে তা তো বাস্তবায়িত হলো না। তোমরাই করবে তার বাস্তবায়ন।

রথিন : অফকোর্স— অবশ্যই তাই। your ইনকারেজই আমাদেরকে প্রোসপার করবে।

বঙ্কিম : আজ্ঞে স্যার- আমরাই তো আপনার সন্তান। আমাদেরকে অন্ধকার থেকে হাতে ধ’রে মুক্ত আলোর প্রাঙ্গনে তুলে ধরেছেন। আমাদের পথকে নির্দেশ করেছেন স্যার। আপনি আমাদের সব।

মাস্টার : দেখেছো মধুর মা, ওরা কি বলছে। বাঃ বাঃ! আজ আমি সত্যিই সার্থক। আমার এই অক্লান্ত পরিশ্রম, আমার নিরাভরন সাধনা আজ অলংকারে সেজে উঠেছে। সত্যিই আজ আমি সার্থক শিক্ষক।

রথিন : স্যার আমি ফরেন থেকে back করলে এই পাঠশালার ডেভালপ্ করবো। একে I make a High school.

মাস্টার : তোমার স্বপ্ন যেন সার্থক হয় বাবা, জানি না ততো দিন এই বৃদ্ধ নিধু মাস্টার বাঁচবে কি না। সেদিন আমার কথা কি মনে থাকবে তোদের?

বঙ্কিম : চিরন্তন সৃষ্টির নিতি টানে সকলই হারিয়ে যাবে, সব স্মৃতি বিলুপ্ত হবে। যদিও বাস্তবের মৌলিকতাকে অস্বীকার করা যায় না, তবুও এ কথা বলবো যতদিন বাঁচবো আপনার বানী, আপনার উপদেশ আমাদের জীবনে নিয়তই জাগ্রত রবির মতো হয়ে থাকবে।

মাস্টার : [দূর পানে চেয়ে রলো] বঙ্কিম রথু তোরা জানিস না। ঐ পাঠশালাই আমার জীবন, ঐ আমার প্রেম, ঐ-ই আমার সৃষ্টি। ঐ-ই আমার বেদনা, ঐ-ই আমার রিক্ততা, আমার সার্থকতা।

[চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো] কত সাধ ছিলো বিধুকে আমার মতোই একজন ভালো মাস্টার করবো কিন্তু পারলাম না। বাস্তবের নিদারুন কষাঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে আমার স্বপ্নমালা, আমার আশার নীড়। বঙ্কিম-রথু, তোরা ভুলিস না, ভুলিস না এই নিধু মাস্টারকে।

বঙ্কিম : স্যার শান্ত হোন। আপনার সংসারের এই অবস্থা আগে জানলে প্রথম থেকেই একটা ব্যবস্থা করতে পারতাম। আমি আজই একটা ব্যবস্থা করবো।

রথিন : Yes, it should to be do. যে কোরেই হোক এর একটা ব্যবস্থা করবোই ‘বাই হুক অর ক্রুক’।

মাস্টার : ওরে পাগলা আমার জন্যে ভাবিস নে, আমার দিন যাবে— কিন্তু আমার মত আরো শত শত নিধু মাস্টার ছড়িয়ে আছে দেশের অবহেলিত পল্লীর আনাচে কানাচে। যদি পারো সমাজের সংস্কারে পথে নেমে এসো। যারা জ্ঞানের সূচনা করছে, যারা ফুলের কুঁড়ি সৃষ্টি করছে তাদেরকে এভাবে শেষ হতে দিও না। তোমরা আরো অনেক দিন বাঁচবে, আরো অনেক জ্ঞানের স্পর্শ পাবে। আমি আর কদিন! আমার সাধনাকে আমি রোপন কোরে গেলাম, তোমরা তাকে বড় কোরে তুলো। এ নিধু মাস্টার সুযোগ প্রত্যাশী নয়। বন্ধু, রথু এ সুখ শান্তি চায় না। নিজেকে নিঃশেষ কোরে দিয়ে যদি একটা সুন্দর পথ রচনা কোরে দিয়ে যেতে পারে সে-ই নিধু মাস্টারের অনেক তৃপ্তি, অনেক শান্তি।

বঙ্কিম : স্যার আপনার এ অবস্থায় আমরা যদি আপনার কোনো উপকারে না আসি তবে কেন মিছামিছি আপনি আমাদের অরন্য থেকে কুড়িয়ে গৃহে এনেছিলেন!

রথিন : Yes sir, we are your sons. Dear father, you are our father and you are also the father of our society.

মাস্টার : তোরাই আমার সাধনার প্রস্ফুটিত ফুল। তোদের আমি যে কোথায় রাখি! দাঁড়া দাঁড়া দেখি। আমি এলাম— এই এলাম বোলে। তোরাই আমার সব, তোরাই আমার সব। মধুর মা, মধুর মা ও মধু [ডাকতে ডাকতে প্রস্থান]

বঙ্কিম : আরে তুই ওভাবে স্যারের সামনে ইংরেজি বলা শুরু করলি কেন!

রথিন : So what? তবে কি তোমার মতো ঐ সব ডিকশোনারি খোঁজা দাঁতমুখ খিচানি বাংলা বলবো নাকি? স্টেঞ্জ। I am ফার্স্ট going to foreign so I am trying to কন্ট্রোল to say ফ্লুয়েন্ট ইংলিশ।

বঙ্কিম : তা বুঝলাম। তা সেটা স্যারের সামনে না কোরে অন্যত্র করলে তো পারতিস।

রথিন : কি করবো ভাই মুখ দিয়ে গটাগট বের হয়ে আসে—আর ইচ্ছে কোরেই কি এই ইংলিশ word use করি। আমার boyhood থেকেই আমার স্পষ্টই একটা Thought আছে What I will he a good English man.

বঙ্কিম : যা হোক by the by তোর কাব্যের খবর কি? প্রকাশের কতো দূর? আপাতত হচ্ছে না। আরে তোর প্যান্টের ওপাশে কাদা এলো কোত্থেকে?

রথিন : : এ্যা, তাই তো, আরে স্ট্রেঞ্জ, from where this middy come.

[রুমাল বের কোরে ঢাকতে গেল]

আরে স্যার দেখেনি তো। মহা মুশকিল হলো। How could I go? রাস্তার লোকেরা হাসবে না? তারা ভাববে What a desty man I am! ছিঃ ছিঃ আমার লজ্জা করছে। What a fool I am. কখন এটি Touch করলো একটুও টের পেলাম না।

বঙ্কিম : আরে ভাই ইংলন্ডের গায়ে বাংলার মাটির ছোপ লেগে গেছে নইলে তুমি যে বাঙালি তা ইংলন্ডে গেলে ভুলে যাবে। বুঝতে পারছো। হাঃ হাঃ। [বাইরে কাশির শব্দ শোনা গেল।]

রথিন : হায়-হায় স্যার বোধহয় আসছে। [কাদা ঢাকতে ব্যস্ততা দেখা দিলো।] হায় হায় what a fool what a fool I am! [বঙ্কিম এবং রথিনের এই অপ্রস্তুত মুহূর্তে নেপথ্যে ডাক শোনা গেল।]

বিজয় : নিধু কাকা—নিধু কাকা [ডাকতে ডাকতে প্রবেশ] আরে আপনারা কারা? [রথিন আরো ব্যস্ততা সহকারে প্যান্টের কাদা ঝাড়তে লাগলো। ]

বঙ্কিম : আমরা মাস্টার সাহেবের ছাত্র।

বিজয় : ওহো। নিধু কাকার ছাত্র। ও নিধু কাকা— নিধু কাকা। [মাস্টারের প্রবেশ]

মাস্টার : আরে বিজু কোত্থেকে এলি?

বিজয় : আজ্ঞে কাকাবাবু থানা থেকে এলাম।

মাস্টার : তা আমাদের বিধুর কোনো খবর টবর জানিস?

বিজয় : আজ্ঞে সেই খবর নিয়েই এলাম। হেঃ হেঃ হেঃ বিধু একটা কাজ পেয়েছে। বেতনও ভালো। ৬০ টাকা। হেঃ হেঃ।

মাস্টার : আরে বিধু কাজ পেয়েছে! সত্যি বলছিস?

বিজয় : আজ্ঞে কাকাবাবু দারুন সত্যি।

মাস্টার : মধুর মা, মধুর মা, ও মধুর মা। [মধুর মা প্রবেশ কোরে আবার ফিরে গেল] শুনছ মধুর মা, বিধু কাজ পেয়েছে। ষাট টাকা বেতন। রথি বঙ্কিম সত্যিই আজ আমার যে কেমন ঠেকছে তোদের বোঝাতে পারবো না।

রথিন : What a joyfull কথা, হিপ্ হিপ্ হুররা।

বঙ্কিম : আরে থাম তো। [হাত ধরলো]

রথিন : What a you are?

বিজয় : আজ্ঞে কাকাবাবু। আমি আসি, আসি।

মাস্টার : আরে কোথায় যাস্। ও তুই তো যাবি তা শোন— যাবার সময় মোহন ময়রাকে বোলে আয় সের দুয়েক মিষ্টি বানাতে। আমি আসছি।

বিজয় : আজ্ঞে জ্বি। হাঃ হাঃ। [প্রস্থান]

মাস্টার : তোমরা আর একটু দাঁড়াও আমি দেখি একটু মিষ্টি নিয়ে আসি। (মাস্টারের প্রস্থান)

রথিন : I am not yet দেরি হেয়ার আমার so many কাজ have. আমি going.

বঙ্কিম : (গম্ভীর হয়ে) থাম্ রথিন। স্যারের বাড়ি থেকে এভাবে স্যারকে না বোলে চ’লে গেলে স্যার মনে কষ্ট পাবেন। একটু কষ্ট কর না।

রথিন : নো নো, (ঘড়ির দিকে তাকালো) আমার টাইম over. I am not বাঙালি Now I am got going to a like a ইংরেজি ম্যান।

বঙ্কিম : এই রথু। (হাত ধরলো।)

রথিন : না, নো, আমি going.

বঙ্কিম : (হাত ধ’রে টানতে লাগলো) তোকে আমি যেতে দিতে পারি না। [নেপথ্যে ডাকতে ডাকতে মাস্টারের প্রবেশ]

মাস্টার : বঙ্কিম, এই যে, তোদের কত কষ্ট দিলাম—হাঃ হাঃ, এই যে মিষ্টি নিয়ে এসেছি। [মাস্টার ঢুকতে রথিন তার পূর্বের স্থানে ফিরলো। পর্দা।]

১৬ জুলাই, ১৯৭২

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *