পত্র-০৩

পত্র-৩

৪. আশ্বিন, ৮৫
ঢাকা

তসলিমা নাসরিন

সন্ধার পর। মুহূর্তটি ছিলো আমার জন্যে অত্যন্ত প্রিয়। কারনটি অবশ্য ব্যক্তিগত। আপনার ‘হলুদ সেঁজুতি’(৬) পেলাম তখন। হলুদ বলছি এ জন্যে যে, পত্রিকার সমস্ত লেখাগুলো আমার হলুদ মনে হলো। একজন শব্দ-শ্রমিকের হৃদয় যে-বেদনায়, যে- বিশ্বাসে, যে-ভালোবাসায়, ব্যর্থতায়, ক্রোধে, ক্ষমায়, ঘৃনায় রক্তাক্ত হয়ে ওঠে, প্লাবিত হয়ে ওঠে সেঁজুতি-তে তা নেই কেন? কেন বাংলা কবিতায় ত্রিশোত্তর রুগ্ন, পান্ডুর সঙ্গীতহীন ধারার অনুসারি সবাই? যে-বিচ্ছিন্নতার জন্যে তিরিশের কবিরা ক্ষমার অযোগ্য, সেই বিচ্ছিন্নতাবোধ, সেই ব্যক্তিক বিবর-যাপন কেন আজ এই পূর্ববাংলার রক্তিম তরুনদের পথনির্দেশক হবে? পূর্ববাংলার মাটির গন্ধ আলাদা, এ-মাটির মানুষের হাড়ে লবনের ঘ্রান— তামাটে চামড়ার এই মানুষ প্রকৃতির সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে থাকে। বাংলা কবিতা কি সেই বিশাল জনগোষ্ঠির সাথে কোনোই সম্পর্ক রাখবে না? ক্ষনিকপত্র (লিট্ল ম্যাগাজিন) এখন প্রায়ই আর চোখে পড়ে না। আপনাদের প্রচেষ্টার জন্যে আমার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।

সেঁজুতির সব কবিকেই ব্যক্তিগতভাবে জানতে ইচ্ছে করছে। সম্পাদককেও। সেঁজুতিতে লেখা দিতে চাই। দেবো কিনা জানাবেন।

বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে— সেঁজুতি সবুজ হবে, রক্তাক্ত হবে, ফসলিম হবে, হবে বেদনা ও বিশ্বাসের ধারক। শুভেচ্ছান্তে-

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
২১, সিদ্ধেশ্বরী শড়ক
ঢাকা-১৭

——

৬. সেঁজুতি— তসলিমা নাসরিন সম্পাদিত সাহিত্যপত্র। ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত হতো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *