পত্র-৫
০৬.০৫.৮৪
জসীমউদ্দীন হল
বউ(১০)
তোকে মিনিবাসে তুলে দিয়ে ক্যাম্পাসে এলাম— হাতে কোন আইসক্রীমের স্মৃতি। হাতে তোর রেখে যাওয়া স্পর্শের কষ্ট।
‘বিকল্পে’র(১১) বিস্তারিত আলাপ সেরে ‘লেখক ইউনিয়নে’র মিটিং-এ এলাম নাচঘরে(১৩)। বেশ কিছু কাজের সিদ্ধান্ত হলো। তারপর একটু বৈকালিক হাঁটাহাঁটি। সন্ধায় আর্ট কলেজ। ছবিগুলো নিয়ে ওদের সাথে অনেক আলাপ হলো। ‘সময়ে’র চিন্তা ভাবনা আর কাজ ভালো লাগছে।
নাজিমুদ্দিন রোডের নীরব-এ পরোটা আর গোরুর মাংশ খেয়ে হলে ফিরেছি। সকালে মার্কসীট তুলতে হবে, প্রকাশকের কাছে যেতে হবে। কাছাকাছি থাকাই ভালো। প্রচন্ড উদ্যম, সাহস আর সততার আগুন জ্বেলে যুদ্ধের পরে যে তরুনেরা এসেছিলো— আমরা সেই প্রতারিত জেনারেশন।
সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের নষ্ট করা হয়েছে। আমাদের সুন্দর স্বপ্নগুলো তছনছ করা হয়েছে। আমাদের নির্বিরোধ ভালোলাগাগুলোকে আক্রমন করা হয়েছে। ভুল রক্তপাতে আমরা রক্তাক্ত করেছি আমাদের মানচিত্র।
প্রয়োজন ছিলো। এরও প্রয়োজন ছিলো। কাউকে না কাউকে তো ঘর ছাড়তে হয়। কাউকে না কাউকে তো হাতে নিতে হয় আগুনের বিভীষিকা। কাউকে না কাউকে তো রক্ত দিতে হয়।
জীবনের প্রচন্ড অন্ধকারের ক্লেদ পার হয়ে আমরা যারা এখনো স্বপ্নের পক্ষে লড়াই করছি— আমরা জানি, আমরাই জিতবো। অকপট মানুষেরা পরাজিত হয় না কখনো। ভালো থাকিস।
ভালো থাকার জন্যেই আমাদের যতো মন্দ থাকা। আদোর। আদোর। আদোর।
তোর
রোদ
—
১০. বউ— তসলিমা নাসরিন।
১১. বিকল্প— বিশ্ববিদ্যালয় কর্মসংস্থান প্রকল্প।
১২. লেখক ইউনিয়ন— আফ্রো-এশীয় লেখক ইউনিয়ন।
১৩. নাচঘর— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনের পার্শ্বস্থ ছোট ঘরটি এ নামে পরিচিত।