পিঙ্গল আকাশ – ১

আমার সম্মুখে সাদা কাগজ। একটু আগে আমি বই পড়ছিলাম। সোফোক্লিসের রাজা ঈডিপাস-এর কাহিনী। ঈডিপাসের মৃত্যুপথে সেই ভয়ঙ্কর রাত্রির দৃশ্যটা অনুবাদ করব ভাবছিলাম। একটা কবিতা লেখার কথাও মনে এসেছিলো। কিন্তু আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার টেবিলে মেলে রাখা কাগজের ওপর অযথা কটা কাটাকুটি দাগ পড়লো। প্রকাশ করতে পারলাম না সেই ভয়ঙ্কর দুর্যোগের অন্ধকারকে! আকাশের গর্জন, অন্ধকার দিন, আকাশ থেকে উল্কা ছুটে আসা, বজ্রপাত —আর সেই না-অন্ধকার, না-আলোকিত বন্ধুর পথ ধরে নিয়তিলাঞ্ছিত অন্ধ একটি বৃদ্ধের মৃত্যুস্থানের দিকে এগিয়ে যাওয়া, তারপর পেছনে স্নেহময়ী কন্যার অসহায় কান্না। আর তারও পেছনে দুই অভিশপ্ত পুত্রের বিবাদ।

আমি চেষ্টা করেও পারলাম না সেই দৃশ্যটা ভাষা দিয়ে ধরতে।

একটুপর আমার ঘুম আসছিল। হঠাৎ, কি আশ্চর্য, মেঘ ডাকলো। জেগে উঠলাম আমি। ঈডিপাসের কাহিনী পড়তে পড়তে আমার ভুল হচ্ছে না তো! স্বপ্ন দেখছি না তো!

এবং ঠিক তখনই আমার ঘরের খোলা দরজার পাল্লা দুটো আছাড় খেলো সশব্দে। তারপর নামলো বৃষ্টি। টেবিলের ওপরকার একখানা কাগজ উড়ে গেল। মনে পড়লো, আনিসের চিঠি ওঠা। আজকের ডাকে চিঠিটা এসেছে। লাহোর থেকে লেখা। লিখেছে, আমি বাড়ির কোনো খবরাখবর পাই না। একটু খোঁজ নিয়ে জানাও তো, কী অবস্থা ওখানকার। আমি ক’দিন পরই যাচ্ছি। সেই চিঠি উড়ে গেলো। আমি উঠলাম। দ্রুত বন্ধ করলাম জানালাগুলো। জানালার কাঁচের ভেতর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম ঝড়ের প্রথম ঝাপটা এসে পড়েছে ডান দিকের বকুল গাছের ওপর! বাঁ দিকের হাসু-হেনার ঝাড়টা প্রবল বেগে দুলতে লাগলো। আর সেই সঙ্গে শুনলাম একটা ক্রুদ্ধ গোঙানি। কোনো ক্ষিপ্ত দৈত্য যেন রাগে গোঁ গোঁ করে উঠছে। বিদ্যুৎ চমকে উঠছে একেক সময়, অনেক সময় বাজ পড়ার শব্দ আসছে আর তার সঙ্গে মেঘের ক্রুদ্ধ গর্জন।

বন্ধ ঘরের ভেতর তখন হাওয়া নেই। কাঁচের ওপারে দেখলাম সমস্ত গাছপালাগুলোকে কোনো অদৃশ্য শক্তি এসে যেন প্রবলভাবে ঝাঁকি দিচ্ছে। আমি সেই উন্মত্ত ঝাঁকুনি দেখতে পাচ্ছি বিদ্যুতের আলোকে।

কিছুক্ষণ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে ঝড়ের ঐ ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপ দেখলাম। তারপর আবার এসে বসলাম চেয়ারে!

ও নিজেই বললো, থাক, আপনি ব্যস্ত হবেন না। কতোক্ষণ আর ঝড় থাকবে। একটু থামলেই চলে যাবো।

অনেক চেষ্টা করে মোম জ্বালালাম। দেয়ালের পাশে বই ঢেকে আড়াল করলাম মোমটা। আর সেই আলোয় দেখলাম, একটি সুন্দর মেয়ে ভিজে একাকার হয়ে আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

ও বোধ হয় ভয় পেয়েছিলো। কেঁদেছে হয়তো বা ভয়ে। মুখটা ভেজা, চোখ দুটো লাল। ভেজা কাপড়ের আড়াল থেকেও যৌবনের রক্তিম উল্লাস চোখে পড়ে। ও নিজের শরীরটা নিয়ে লজ্জিত যেন। নিজেকে আড়াল করবার জন্য দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালো। আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। আমার সম্বন্ধে হয়তো খারাপ কিছু সন্দেহ করে বসতে পারে।

কোথায় গিয়েছিলে, বললে না তো? আমি পরিবেশটাকে সহজ করবার জন্য বললাম।

বললাম তো, বন্ধুর বাড়ি!

কেমন বন্ধু তোমার, এই ঝড়-বৃষ্টির মুখে এতরাতে ছেড়ে দিলো তোমাকে।

ওর কি দোষ, ভেবেছিলাম ঝড়ের আগেই বাড়িতে পৌঁছতে পারবো।

দেখলে তো! আমি আরও সহজ হলাম। বললাম, মেয়েরা কত কম জানে।

কী?

সব কিছু। কোনো কিছু সম্বন্ধে ওদের ধারণা ঠিক হয় না।

ও এবার হাসলো। না, ঠিক হাসলো না, হাসতে চেষ্টা করলো যেন। বললো, ছেলেদের ধারণাই বুঝি ঠিক হয় সব সময়?

সব সময় হয় না। সময় সময় হয়, মেয়েদের কোনো সময়েই হয় না।

হ্যাঁ, বলেছে আপনাকে হয় না। বাচ্চা মেয়ের মতো উত্তর দিল ও। বুঝলাম এতক্ষণে যেন কিছুটা সহজ আর আন্তরিক হয়ে উঠতে পারছে।

আনিস এসেছে? একটু পর জিজ্ঞেস করলাম আমি।

আমার কথায় চমকে উঠলো। একটু চুপ করে বললো, না, আসে নি, কেন?

ওর আসবার কথা আছে দু’এক দিনের মধ্যে।

হয়তো আসবে দু’এক দিনেই, খুব ধীরে ধীরে জবাব দিলো মঞ্জু।

লক্ষ্য করে দেখলাম ওকে। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠতে চাইছে, সহজ হবার জন্য। কিন্তু পারছে না। কোথায় যেন একটা আড়াল তুলেছে। আর সেই আড়ালে নিজেকে লুকোতে চাইছে।

বাইরের দিকে তাকালাম। শিলাবৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু বৃষ্টি পড়ছেই। ঘরের ভেতরে মোমের আলোর মৃদু আভা। মঞ্জুর বিষণ্ন মুখে সে আলোর আভা পড়েছে। তার দু’চোখে অনেক দিনের ক্লান্তি। তবু সেই ক্লান্তির মধ্যেই যেন কোথায় একটা তীক্ষ্ণতা রয়েছে, যা হঠাৎ এক সময় তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

বৃষ্টি থামবার লক্ষণ দেখছি না। মেয়েটা ঘরের এক কোণে বসে। উঠবার কোনো লক্ষণ নেই। এদিকে আমার ঘুম পাচ্ছে। বললাম, চলো, তোমাকে রেখে আসি বাসায়।

চকিতে মঞ্জু আমার চোখের দিকে তাকালো। বলল, দেখি আর একটু অপেক্ষা করে, যদি বৃষ্টিটা ধরে।

আমি উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। আবার আমাকে বসতে হলো নিজের জায়গায়। একটু পর ও বললো, আপনার খুব অসুবিধা হচ্ছে, তাই না? হয়তো ঘুম পাচ্ছে আপনার।

কি বিশ্রী গরম গিয়েছে ক’টা দিন। তারপর আজ এই ঝড়, এই বৃষ্টি। একবার ইচ্ছে হলো, বাইরে গিয়ে দাঁড়াই ঝড়ের মাঝখানে। বৃষ্টিতে ভিজি কিছুক্ষণ। একটু পর এই ছেলেমানুষী ইচ্ছের জন্য নিজেরই হাসি পেল।

তারপর এক সময় টিনে ছাওয়া বারান্দার ওপর থেকে অন্যতর শব্দ শুনতে পেলাম। এতোক্ষণ ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিলো, সেই শব্দে মনে হচ্ছিলো, কোনো নট তার সঙ্গিনী নটিনীদের নিয়ে জলদ তালে সমবেত নৃত্যে মেতে উঠেছে। সেই তরল শব্দের বিপুল ঝঙ্কারে ঘুমের আবেশ আছে যেন। সেই শব্দের মাঝখানে হঠাৎ অন্য শব্দ শুনতে পেলাম। পরিচিত অজস্র ধাতব শব্দ বেজে উঠলো চারপাশে। বুঝলাম, শিলাবৃষ্টি হচ্ছে।

ঠিক সেই সময় একটা শিলা আমার কাঁচের জানালার ওপর এসে পড়লো। কাঁচ ভেঙে ঝনঝন করে মেঝেময় ছড়িয়ে পড়লো।

তারপর একের পর এক শিলার আঘাত আসতে লাগলো। জানালার আরো কয়েকটা চৌকো কাঁচ ভাঙ্গলো। আর সেই সঙ্গে হাওয়া এলো, বাইরে এখন প্রবল তাণ্ডব। ঘরময় হাওয়া। বৃষ্টির ছাঁট ঘরের ভেতরে ঢুকছে। ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার বিছানার চাদর আর টেবিলের ওপরকার যতো কাগজপত্র।

এক সময় শুনলাম পাশের বকুল গাছটা শব্দ করে ভেঙ্গে পড়লো। এবং সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘরটা অন্ধকার। ঘরের সবগুলো বাতি গেলো নিভে। বুঝলাম, গাছ পড়ে লাইনের তার ছিঁড়লো। এ বাতি আর আজ রাতে জ্বলছে না।

ঘরটা অন্ধকার। অন্ধকার ঝড়ো হাওয়া ঘরের ভেতরে ঢুকছে। আমি ইচ্ছে করলে মোম জ্বালাতে পারি। টেবিলে দেশলাই রয়েছে। ড্রয়ার হাতড়ালে কয়েক টুকরো মোমবাতি পাবো।

কিন্তু কি রাভ। আমি তো পড়াশুনা করতে যাচ্ছি না আর। এখন বিছানায় শুয়ে পড়া। সে তো অন্ধকারেই পারা যায়।

হঠাৎ মনে হলো, কেউ যেন আমাকে ডাকছে। দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে অসহিষ্ণু হাতে। একবার মনে হলো, অনেক্ষণ ধরেই শব্দটা শুনতে পাচ্ছি। হয়তো ওটা হাওয়ার ঝাপটা। কান পাতলাম, আর তক্ষুণি শুনলাম, ব্যাকুলকণ্ঠে কোনো মেয়ে ডাকছে, দরজাটা খুলুন।

এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম। ঝড়ের ঝাপটার সঙ্গে সঙ্গে একটি মেয়ে ভেতরে এসে ঢুকলো। অন্ধকারেই বুঝলাম, অনেকক্ষণ ধরে ভিজছে, নিশ্চয়ই ঠাণ্ডায় কাঁপুনি ধরেছে। দরজা বন্ধ করে অন্ধকারেই ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনি?

আমি মঞ্জু।

মঞ্জু? ঠিক চিনতে পারলাম না যেন।

চৌধুরী বাড়ির মঞ্জু।

বুঝলাম চৌধুরী বাড়ি, অর্থাৎ আনিসদের বাড়ি। মেয়েটি আনিসের কি রকম যেন বোন হয়।

হঠাৎ এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলে? জিজ্ঞাসা করতে হলো আমাকে।

বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলাম, মাঝখানে এই দুর্যোগ।

বসো তুমি, একখানা কাপড় দি, গা মুছে কাপড় বদলাও।

বললাম বটে, কিন্তু কোন কাপড় দেব তাই ভেবে পাই না। বাড়ির ভেতরে এখন মা’কে ডাকলে সাড়া পাবো না। আমার ডাক কেউ শুনতে পাবে না।

না, না। সে কথা নয়, আমি বিব্রত হই একটু। বলি, আমি তোমার কথা ভাবছি। তোমাদের বাড়ির লোকেরাও হয়তো ভাবছেন।

না, কেউ ভাবছেন না।

না ভাবুন, তবু তোমার যাওয়া দরকার।

কেন? ধরুন আমি আজ রাতটা এখানেই থেকে খুব ভোরে উঠে চলে গেলাম। সেটা কেমন হয়? আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মঞ্জু।

আমি অবাক। একি ভয়ঙ্কর কথা বললো মেয়েটা। অমন শান্ত মেয়ে এমন কথা বলবে, এ-যে স্বপ্নেও ভাবা যায় না।

না, আপনাকে বিব্রত করবো না। ও হেসে ফেললো, আমি আপনাকে খুব সাহসী ভাবতাম। আপনার গল্পের মধ্যে যে সব সাহস ও সততার কথা লেখা থাকে, সেই লেখা পড়েই আপনার সম্বন্ধে অমন ধারণা হয়েছিলো আমার। এখন দেখছি, লেখক আর আসল মানুষের মধ্যে পার্থক্য অনেক।

আমার অবাক লাগে। এ মেয়ে কেমন করে এত মুখরা হলো। অমন শান্ত যে, অমন স্নিগ্ধ যার ব্যবহার, অমন সুন্দর যে, তার মুখ দিয়ে এ-সব কথা কেমন করে বেরুচ্ছে!

ও তখনও বলছে, ভাববেন না, বৃষ্টি থেমে গেলেই আমি চলে যাবো। ঘুম পেয়ে থাকলে ঘুমোন আপনি।

কিন্তু যদি বৃষ্টি না থামে? আর অতো রাতে কেমন করে একা একা যাবে? চলো, তোমাকে পৌছে দি।

না, না। আমি একাই যেতে পারবো। এই ঝড়-বৃষ্টির দিনে আপনি কেন কষ্ট করবেন মিছিমিছি। বৃষ্টিটা ধরে এলেই চলে যাবো। আপনি ঘুমোন।

ও আমার কাছাকাছি উঠে এলো। বললো, আমি আপনাকে ভাই বলে ডাকি নি?

হ্যাঁ, স্বীকার করলাম।

তবে সঙ্কোচ করছেন কেন?

না বাপু তুমি বাড়ি যাও। সঙ্কোচ আমার জন্য নয়, তোমার জন্য।

বাহ্, একদিনের পাতানো বোনের জন্য ভারি দরদ দেখছি! হেসে ফেললো মঞ্জু। কিন্তু এই কি হাসি নাকি? দেখলাম, এ যে কান্নারও বেশি।

একটু পর মঞ্জু আবার বললো, আমি বাসায় ফিরছি না আর চন্দন ভাই।

কোথায় যাবে?

দেখি তো। পৃথিবীটা মস্ত বড়ো।

ওকে ঐ মুহূর্তে অন্যমনষ্ক মনে হলো।

কী বাজে কথা বলছো! কী হয়েছে, ঝগড়া হয়েছে কারুর সঙ্গে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

না, ঝগড়া নয়! তা যদি হতো, তা’হলে তো বেঁচে যেতাম? দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মঞ্জু। একটু থেমে আবার বলে, এ জায়গাটা আমার ভালো লাগছে না, এমনকি আমাদের নিজের বাড়ি অথবা, বাড়ির চারপাশের লোকদেরও ভালো লাগে না। একেক সময় মনে হয়, অন্য কোথাও যেতে পারলে বোধ হয় আমার ভালো লাগবে।

ওর কথায় কী যেন ছিলো, আমি প্রশ্ন করতে চাইলাম না। কেননা আমার কাহিনী-পিপাসু মন তখন সজাগ হয়ে উঠেছে।

জীবনের কোনো নতুন দিক হয়তো আমার চোখের সামনে ফুঠে উঠবে।

আমি লক্ষ্য করলাম, ও চেয়ারের পিঠে হাত রেখে দাঁড়িয়েছে।

তারপর হঠাৎ বললো, কি সব আজেবাজে কথা বলছি, আপনার তো শরীর খারাপ শুনেছি, আপনি ঘুমোন। তারপর হেসে ফেললো, না ভয় নেই, আমি সত্যি সত্যি পালাচ্ছি না। বৃষ্টিটা থামলে তারপর যাবো।

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। ও এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, শোন, শুয়ে পড়ুন। যেন নিজের ছোট ভাইকে ধমকে শুতে বলছে।

আমি হাসলাম। শুয়ে চাদর টেনে নিলাম গায়ে। মঞ্জু আবার চেয়ারে গিয়ে চুপ করে বসলো।

মোমটা নিভে গেল খানিকপর।

আমি উঠতে চাইলাম, একটা মোম জ্বালিয়ে রাখি।

আমাকে উঠতে দেখে ও ভাবলো, ওকি, আবার উঠছেন কেন?

বাতিটা জ্বালাই।

কী দরকার! এখন ঘুমোবেন তো আপনি।

তোমার কোনো অসুবিধা …….

না, কিছু অসুবিধা হবে না আমার, আপনি ঘুমোন।

কিন্তু তাই বলে কি অতো সহজেই ঘুম আসে আর। বিশেষতঃ এমনি অদ্ভুত একটা পরিবেশে। একটি স্বল্প পরিচিতা মেয়ে রয়েছে ঘরে। কেমন করে ঘুম আসে! এপাশ ওপাশ ফিরে একটু পর বললাম, তোমার কথা বলো শুনি।

ও তাড়া দিলো, উঁহু। আপনি ঘুমোচ্ছেন, আপনার সঙ্গে কথা বলছি না আমি।

তারপর ওর সম্বন্ধে ভাবতে ভাবতে অনেক কথা ভাবলাম। একবার ভাবলাম, ক’টা বাজে, কখন বৃষ্টি থামবে। একবার আনিসের কথা মনে পড়লো। আগামী কাল আমি কী কী কাজ করবো তার কথা। তারপর মশারির চাঁদোয়ার চৌকো রেখাগুলো গুণতে চেষ্টা করলাম। তারপর, তারপর আর জানি না।

.

কতোক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা। হঠাৎ দড়াম করে দরজায় ধাক্কা লাগার শব্দ শুনলাম। সেই শব্দে জেগে উঠলাম। দেখলাম রাত ভোর হয়ে এসেছে। এবং আবার ঝড় এসেছে। সেই মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের চাবুক। বৃষ্টির ঝমঝম গান।

আমি উঠে দরজা বন্ধ করলাম। আর দরজা বন্ধ করতেই মনে পড়লো মঞ্জুর কথা। আবার দরজা খুলে বারান্দায় এসে ওর নাম ধরে ডাকলাম। কোনো সাড়া এলো না। ভাবলাম, বোধ হয় ঘরের মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘরে এসে মোম জ্বালালাম। হাতের আড়ালে মোমের শিখা বাঁচিয়ে ঘরখানা খুঁজলাম। না, মঞ্জু নেই। হয়তো বৃষ্টি এক সময় থেমেছিলো। আর ও একাকী চলে গিয়েছে। এতোক্ষণে হয়তো বাসায় পৌঁছে থাকবে।

.

বাইরে এখন ঝড়ের মাতামাতি। সন্ধের পর ঝড় এসেছিল। এখন আবার এই শেষ রাতে।

তবু আজকের রাতটা কি অদ্ভুত। হঠাৎ ঝড় এলো। আবার ঘরের বাতি নিভলো, জানালার কাঁচ ভাঙল, আর সেই সঙ্গে এলো একটি মেয়ে।

সেই মেয়ে আশ্চর্য রহস্যের ইশারা দিয়ে এক সময় আবার চলে গেলো। তারপর আবার এই ঝড়। এক ঝড়ের মুখে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো, আর এক ঝড়ের মুখে চলে গেলো। এমন ঘটনা কি হয়?

ঝড়ের মুখে পড়ে যে কোনো লোকই তো আশ্রয় নিতে পারে, এবং কাউকে বিরক্ত না করে এক সময় আবার চলেও যেতে পারে। ঘটনাটা তুচ্ছ আর স্বাভাবিক। কিন্তু তবু যেন রহস্যের মতো মনে হয়। ঘরের কোণে দাঁড়িয়েছিলো, সুন্দর বৃষ্টিসিক্ত দেহ নিয়ে। তারপর এক সময় কী সহজ ভাবে কথা বললো। ওর কথায় কী রকম যেন একটা বেদনা ছিলো, চলে যাওয়ার পর এখন ওর কথা আমার বার বার মনে পড়ছে।

ঘরে মোমের আলো কাঁপছে। সেই আলোয় টেবিলের ওপর কালোরঙের একটা মোটা বাঁধানো খাতা চোখে পড়লো। এগিয়ে গেলাম। এ খাতা আমার নয়। খুললাম, আলোর কাছে এসে। আর দেখলাম, মেয়েলি হাতের গোলগোল গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, ডায়েরির মত। হ্যাঁ, একখানা ডায়েরি।

মঞ্জুর লেখা নিশ্চয়ই। ও ফেলে গিয়েছে। এ ঘর থেকে বেরুবার সময় হয়তো খেয়াল ছিলো না। ওর নাম কি মনিরা? কে জানে? হয়তো ওর। হয়তো ওর নয়, অন্য কারুর, ওর সাথে ছিলো। সে যাক, সকাল হলেই এটা ফেরত দিয়ে আসতে হবে।

সকাল হলে বেরুলাম। ঝড় বৃষ্টির পর কি সুন্দর ঝকঝকে সকাল!

ওদের বাড়ির কোনো ক্ষতি হয় নি। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ডাকলাম, কেউ বাড়ি আছেন?

দু’ তিনবার ডাকাডাকির পর একটি ছোট ছেলে বেরুলো। তার পেছনে এক মহিলা।

জিজ্ঞেস করলাম, আনিস এসেছে?

না, আসে নি, জবাব এলো মহিলার কাছ থেকে।

মঞ্জুকে ডেকে দিন তো।

মঞ্জু বাড়িতে নেই। ভদ্রমহিলার কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিক মনে হলো।

নেই? আমি আবার প্রশ্ন করলাম।

হ্যাঁ, কাল থেকে ওকে পাওয়া যাচ্ছে না।

সেকি! খোঁজ নিয়েছেন?

হ্যাঁ, বেনুকে থানায় পাঠিয়েছি। আকরাম সাহেব ওর চাচাদের ওখানে খোঁজ নিতে গিয়েছেন। মহিলার গলা বেশ ভারি। বোধহয় কেঁদেছেন সারা রাত।

জানানো উচিত ছিলো যে আমার ঘরে কাল রাতে ঝড়ের সময় মঞ্জু আশ্ৰয় নিয়েছিলো। অথচ জানালাম না! কতকটা পুলিশের ঝামেলা এড়াবার জন্যে, আর কতকটা মঞ্জুর কথা স্মরণ করে। কেননা সেই সময় মনে হচ্ছিলো, হয়তো মঞ্জু এবাড়ি থেকে এমনি এমনি চলে যায় নি। নিশ্চয়ই কোনো কারণ ঘটেছিলো।

তবে এ-চিন্তাও ছিলো আমার অস্ফুট, অনেকটা যান্ত্রিক ক্রিয়ার মতো। আসলে আমি বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম তখন। একটি মেয়ে সত্যি সত্যি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, আর সেই মেয়ে দুর্যোগের রাতে আশ্রয় নিয়েছিলো আমারই ঘরে। এবং সে জানিয়েছিলো যে সে চলে যাবে। তা সত্ত্বেও তার দিকে নজর রাখিনি।

বাসায় ফিরে এসে আমার ক্ষোভ হলো। কেন ওকে জোর করে ওদের বাড়িতে রেখে যাই নি। আর যদিও বা আমার এখানে থাকলো, কেন বাড়ির ভেতরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম না।

যদি তাও না পারতাম, তবু কেন ওর সব কথা শুনলাম না।

আমার মনে পড়লো গত রাতের কথা। একটি মেয়ে কি সুন্দর আর শান্ত। হঠাৎ সে অস্বাভাবিক মুখরা হয়ে উঠলো। তার পরই শোনা গেলো ওর কণ্ঠে বিষণ্ন স্বর। কী যেন গভীর দুঃখ ওর জীবনে, যা ওর কথার মধ্য দিয়ে আভাসে ফুটে উঠেছিলো, আমি বুঝতে পারি নি। বাসায় ফিরে এসে সেই ডায়েরিটা নেড়েচেড়ে দেখলাম। তারিখ লেখা রয়েছে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে ওর দিনলিপি। পর পর তারিখে লেখে নি। মাঝখানে এক সপ্তাহ কি দু’তিন দিন ফাঁকা, কোথাও বা মাস খানেক। তারপর আবার পর পর। কোনো কোনো অংশ সুদীর্ঘ। তখন নেড়েচেড়েই শুধু দেখলাম। পড়তে পারলাম না। কারণ তখন পর্যন্ত উদ্বেগে কষ্ট পাচ্ছি, কোথায় গেল মঞ্জু!

দু’ একজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো। ওরা খবরটা শুনে হেসে উঠলো। বললো, বোধহয় সুইসাইড ফাইড করে বসেছে, খুঁজলেই পাওয়া যাবে।

কেন, সুইসাইড করবে কেন?

বাহ্, কিছুই জানেন না দেখছি, মেয়েটা তো খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। গরিবের মেয়ে, বাপু তোর কি সামর্থ্যে কুলায় যে আহমদ সাহেবের মেয়ের সঙ্গে ঘোরাফেরা করবি! নিশ্চয়ই কিছু করতো। তাজিনার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা তো কম ছিলো না আর। হয়ত বাচ্চা-টাচ্চা এসেছিলো পেটে।

আমি স্তম্ভিত। অমন সুন্দর, অমন শান্ত আর অমন ব্যক্তিত্বের মেয়ে যে এতোখানি খারাপ ছিলো, ভাবতেও কষ্ট লাগে।

একজন তো বললো, আরে সাহেব, ছেড়ে দিন ওসব ব্যাপার। যতো ভালোই বলুন, ঐ শুধু বাইরেই। কোন মেয়েটা আর সতী আজকাল? ওরও স্বভাব খারাপ হয়েছিলো ছোটবেলা থেকেই। যেমন মা, তেমনই তো মেয়ে হবে। মেয়েটার স্বাস্থ্য দেখেছেন তো? চৌধুরী সাহেব থাকতে কড়াকড়ির ভেতরে কিছু করতে পারতো না ইচ্ছেমত। এবার ইচ্ছেমত ফুর্তি করবার জন্যে ভেগেছে কারুর সঙ্গে। হয় ফিরে আসবে, নইলে, শুনবেন কোনো শহরে নিজের ব্যবসা খুলেছে।

ওদের কথা বলার সময় আমি কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু শুনে গেলাম। কেন না ওদের কথার তো কোনো মানে হয় না। আর প্রতিবাদ করেই বা লাভটা কোথায়!

তবু আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। কোনো মতেই ভুলতে পারছিলাম না, আতঙ্কিত বিষণ্ণ আর সুন্দর একখানি মুখ। যে অমন সুন্দর হলো, সহজ হলো, একেবারে নিজের বোনের মতো আমাকে শাসন করলো একটুখানি, যার বুকে কোথাও গভীর কষ্ট ছিলো—সেই মেয়ের সম্বন্ধে ওদের একটা কথাও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো না।

কিন্তু যদি পুরোপুরি অবিশ্বাসও করতে পারতাম, তাহলে যেন স্বস্তি পেতাম। কিন্তু তাও যে পারি না। কেবলি মনে হয়, হতেও তো পারে। মানুষ কোন অবস্থায় কী করে, তাতো বাইরে দেখে বোঝা যায় না।

এদিকে একে একে দিন কাটলো। আমি ডায়েরিটা পড়লাম। একদিনে পড়তে পারি নি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রত্যেকটা ঘটনা, আর সেই ঘটনাগুলি কী ভাবে মঞ্জুকে ভাবিয়েছে, সব পড়তে হলো আমাকে। যতোই পড়লাম, ততোই দুঃখ হলো। আনিসকে চিঠি লিখলাম। মঞ্জুকে খুঁজলাম কিন্তু লাভ হল না। জানি না, ওর সঙ্গে আবার আমার দেখা হবে কিনা।

আনিসকে ফেরত দিই নি ডায়েরিটা। ওকে এই ডায়েরি সম্বন্ধে জানাইও নি। কেনো না জানতাম, এই ডায়েরির কথা জানতে পারলে আনিস ভয়ানক কষ্ট পাবে। হয়তো শেষ পর্যন্ত নিজেকেও অপরাধী ভাবতে পারে। তার চেয়ে ওটা আমার নিজেরই কাছে থাকা ভালো।

আমি ভুলতে পারি না সে মেয়েটিকে। যে এক ঝড়ের রাতে এসেছিলো ঝড়ের মুখে পাখির মতো। একটুখানি আশ্রয় নিয়েছিলো। তারপর আবার আরেক ঝড়ের মুখে চলে গেলো। যাওয়ার সময় ফেলে গেলো দু’ এক টুকরো কুটো। ওর জীবন দিয়ে সঞ্চিত কুটোগুলোকে সাজাতে বসেছি। দোষ করছি কি না জানি না। করলে, মঞ্জু, আমাকে তুমি ক্ষমা করো।

আবার ঝড় আসবে। শিলাবৃষ্টি হবে, আমার ঘরের বাতি নিভে যাবে, একাকী অন্ধকারে থাকবো। কিন্তু আর দরজায় ব্যাকুল কণ্ঠের ডাক শুনবো না। সেই একটি মেয়ে আর এখানে আশ্রয় নিতে আসবে না। আর এসেই বা লাভ কি? আমরা কেউ তো আশ্রয় দিতে পারি না।

বড় জোর ওর কথা শুনতে পারি অথবা ডায়েরি ফেলে গেলে সেটা পড়তে পারি।

.

কেন যে লিখছি আমার কথা, নিজেই জানি না। শুধু জানি যে, লিখতে ইচ্ছে করছে আমার। সব কথা তো কাউকে খুলে বলতে পারি না। এ বাড়িতে আসার পর চার বছর হয়ে গেলো। আমার গেঁয়ো পোষাক বদলালো, লোকের সঙ্গে সহজ ভাবে কথা বলতে শিখলাম। ক’দিন স্কুলে গিয়ে স্কুল ছেড়ে দিলাম, (আমার বয়সের মেয়ে কেউ স্কুলে পড়ে নাকি, ছিঃ!) কিন্তু কোনোদিন মনে হয় নি, আমার লিখে রাখবার মতো কোনো কথা আছে, আর সেগুলো একবার হারিয়ে গেলে আমার ভয়ানক কষ্ট হবে। আর রাতে, অনেক রাতে লিখছি। দিনে পারবো না, রোজ রাতে এ সময়ে লিখতে হবে আমাকে।

আজ আনিস ভাই এলো ঢাকা থেকে। দু’বছর ছিলো না ও বাড়িতে। সেই যে বার আমি এখানে এলাম, তার দিন কয়েক পরই চলে গিয়েছিলো পড়তে। যাবার সময় বলেছিলো, তুই চলে যাস না, থাকিস্ এবাড়িতে, পড়াশোনা করিস্ মনোযোগ দিয়ে।

আনিস ভাইয়ের সে কথা আজই আবার নতুন করে মনে পড়লো। আনিস ভাই যেন কেমন ধরনের লোক। হ্যাঁ, কেমন যেন। যে ক’টা দিন ও ছুটিতে এসে বাড়িতে থাকতো, তখন দেখতাম সারাটা দিন যেন কোথায় কোথায় কাটাতো। মাথায় তেল নেই, জামাকাপড় নোঙরা, বিশ্রী গন্ধ করতো। কতদিন বলেছি, ঘরটা খুলে রেখে যাবেন, জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখবো। আনিস ভাই ধমকে উঠতো। বলতো, না, আমার ঘরে ঢুকতে হবে না কাউকে। সকলে বলে, আনিস ভাই ভালো ছেলে, কিন্তু ওর কোথায় যে ভালো, আমি কিচ্ছু বুঝতাম না। শুধু মনে হয়েছে, আনিস ভাই অমন কেন?

না, ও ঢাকা থেকে গত দু’বছরে একবারও বাড়িতে আসে নি। বাবা চিঠি লিখেছেন, ছোট আপা কতো অনুরোধ করেছে – কিন্তু বাড়ির কথা যেন ও ভুলে ছিলো। আমার মনে হয়েছে, ও অমন ধরনেরই লোক। যখন যেখানে থাকে, সেখানেই ডুবে থাকতে পারে। পেছনে কী ফেলে এলো না এলো সেদিকে ওর লক্ষ্য থাকে না।

আজ এলো। দরজা খুলে দিলাম আমিই। সেই পুরানো চেহারা। কতোদিন যে চুল কাটে নি, গায়ে বিচ্ছিরি ঘামের গন্ধ। আমাকে দেখেই অপ্রস্তুত হয়ে সরে দাঁড়ালো। মুখ দিয়ে বোধহয় একটা বিস্ময়ের প্রশ্নও উঠে এসেছিলো, আপনি?

হেসেছি তখন, হ্যাঁ, আমি মঞ্জু।

ও মঞ্জু! আশ্বস্ত হলো যেন আনিস ভাই। তারপর বললো, তোকে চিনতেই পারি নি।

না, আনিস ভাই চিনতে পারে নি আমাকে। হয়তো দু’বছর আগে আমি সবে শাড়ি পরতে শিখেছিলাম। আজ দু’বছর ধরে আমি শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরি না। লম্বাও হয়েছিলাম অনেক হয়তো। তাই বোধ হয় চিনতে পেরেও যেন কিছুটা সঙ্কোচ হচ্ছিল ওর দেখলাম। দেখলাম, আর খারাপ লাগলো আমার। মানুষ এতো সহজেই ভুলে যেতে পারে!

খানিক পর আমি ভেবেছি। সত্যি তো, আমাকে মনেই বা রাখবে কেন? আমি তো এ-বাড়ির কেউ নই। না, কেউ নই। মার তখন কষ্ট হচ্ছিলো, মার পেটে মম, কাজকর্মে ভারি অসুবিধা, ছোট আপার আই-এ পরীক্ষা—ঠিক এমন সময় এলাম আমি। কাজকর্মে মাকে সাহায্য করতে। সেই যে এলাম আর গেলাম না। আমার এখন ভালো লাগে এ বাড়িতে থাকতে। মম পুতুল আমার জন্যে কাঁদে। তাছাড়া মার কাজে কতো সাহায্য হয়। ছোট আপা কলেজের পড়াশোনা করে বাড়ির কাজকর্ম দেখাশোনা করতে পারে না। আমাকেই দেখতে হয় সব। বাবার গোসলের পানি তুলে রাখা, পুতুল মম ওদের খাওয়ানো, গোসল করানো, জামা-কাপড় পরিয়ে দে’য়া—এসব মা পারে না। কেন যেন পারে না, আমি বুঝতে পারি না। যখন মম্ পেটে ছিলো তখনও পারতো না, কিন্তু তারপর মম্ হয়ে গেলেও আর ওসব কাজ নিজের হাতে নিলো না। কোনো রকমে উনুনের পাশে বসে রান্নাটুকু করে শুধু। আমি এমনভাবে রয়েছি এ-বাড়িতে, তবু একথা ভুলতে পারি না যে, আমার কথা কেউ ভাবে না ওরা। না, কেউ না। বাবা ভাবেন না। কেন না জানেন, আমাকে চলে যেতে হবে। রাহুল, ছোট আপা, এরাও শুধু কথাটুকুই বলে। তাও দরকার পড়লে।

না, এরা আমার কথা ভাবে না। তবু মনের ভেতরে কেউ যেন বলেছিলো, আনিস ভাই হয়তো আমার কথা ভাববে। কিন্তু আজ আনিস ভাই এলো, অথচ আমার সঙ্গে কথাই বললো না। জিজ্ঞেস করল না, কেমন আছি। সেই চার বছর আগে, দেখা হলেই, কিছু না কিছু বলতো। হয়তো বলতো, আজ বৃষ্টি হবে কি না জানিস? কিংবা বলতো, মেয়েরা সবাই পাগল।

আজ কিচ্ছু বললো না। ব্যাগটা বারান্দায় ছুঁড়ে ফেলে মম আর পুতুলকে কাঁধে তুলে নিয়ে চলে গেল মা আর ছোট আপার কাছে। আমি দেখলাম থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কে জানে কেন, আমার তখন কান্না পাচ্ছিলো ভীষণ।

.

আজ সুন্দর একটা বই পড়লাম। ইংরেজি বই। বইটা ভালো বুঝতে পারি না, তবু পড়লাম। কতক বুঝলাম, কতক বুঝলাম না। কিন্তু যেটুকু বুঝলাম ভারি সুন্দর লাগলো। আরেকবার পড়তে ইচ্ছে করছিলো। ঠিক এমনি সময় ছোট খালা বেড়াতে এলো। বইটা লুকোতে হলো। বাইরের কেউ জানে না, আমি ইংরেজি পড়তে পারি। যদি ছোট খালা জানতে পারে, তাহলে হেনস্থার একশেষ করবে। টিটকারিতে পাড়া মাত করে দেবে।

ওরা সবাই বলে, ইংরেজি নাকি খুব কঠিন। কিন্তু কই! খুব তো কঠিন মনে হয় নি আমার কাছে। এমন কঠিন তো বাংলাও। বাংলা পড়ার সময় ছেলেবেলার বন্ধুরা বলতো, কি কঠিন! কিন্তু আমার কাছে তখন বাংলাও সোজা লাগতো।

ইংরেজি পড়তে বলেছিলো আনিস ভাই। সেও চার বছর আগে, যখন ইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। সেই থেকে রোজ একটু করে পড়তাম। ছোট আপার কাছে রাহুল যখন পড়তো, শুনতাম। আর নিজে নিজে পড়তাম একাকী।

যাক সেকথা। সে জন্যে আজ ডায়েরি লিখতে বসা। ছোট খালা আমাকে কী চোখে যে দেখে! মাকে বললো, তুই মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করছিস না কেন?

মা কিছু বললো না। আমার ভারি রাগ হ’ল। কেনরে বাপু, তোর অতো মাথাব্যথা কিসের।

কানাঘুষোয় শোনা পুরনো একটা কথা তুললো। দাদু নাকি আমার বিয়ে ঠিক করছেন। ছেলে কোথায় কোন অফিসের কেরাণী, বাড়ির অবস্থা ভালো, দেখতে শুনতে চমৎকার—এই সব।

মনে মনে আমি খোদাকে কৃতজ্ঞতা জানালাম। খোদা যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। এখানে যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমি এদিক দিয়ে অন্ততঃ নিশ্চিন্ত আছি। আমি যদি দাদুর বাড়িতে থাকতাম, হয়তো ঘরে বন্ধ করে রাখতো, কাপড় আর জামার পুটুলি হ’য়ে চলাফেরা করতা হয়তো একের পর এক বরপক্ষ থেকে দেখতে আসতো, জিজ্ঞেস করতো নাম কি, হাঁটিয়ে পরখ করতো খোঁড়া কিনা, চুল মাপতো কেউ, মাগো, কি বিচ্ছিরি কাণ্ড! খোদা তুমি রহমানুর রহিম। আমাকে তুমি বাঁচিয়েছো।

ছোট খালাকে চটিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো। জানি তো ছোট খালার দুর্বলতা। ওঁর বড় মেয়ে সিনেমায় নামবে এই ভরসায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলো—সিনেমা হলের এক দারোয়ানের সঙ্গে। সেই কথা বললে ক্ষেপে যায়। যা তা বলতে আরম্ভ করে!

বললাম, খালা, মীনা কি গান শেখা ছেড়ে দিয়েছে?

তাতে তোর কি দরকার! ছোট খালা বিরক্ত হয়।

না, এমনি বলছিলাম। ওর মতো ভালো গান গাইতে পারলে আজকাল সিনেমায় নাম করা যায়।

এই মঞ্জু! মা শাসন করে আমাকে। ততক্ষণে আমি সরে গিয়েছি। আর ছোটখালা আমাকে বকতে শুরু করেছে অনর্গল। চলেই যেতাম। কিন্তু একটা কথা কানে গেল আমার। বারান্দায় দাঁড়ালাম, আর শুনতে হলো আমাকে।

নিজের বাপের মাথা তো খেয়েছিস, পরের বাড়িতে এসে তোর আবার এতো তেজ হলো কোত্থেকে! দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে তো দাঁড়াবার জায়গা পাবি না। তুই কেন আমার মেয়ের চরিত্র দেখতে আসিস?

মা কিছু বললো না।

সেইখানে দাঁড়িয়ে ক্ষোভে দুঃখে মনে মনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম একেবারে। বাবা কেমন দেখি নি। কিন্তু শুনেছি, বাবা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। মা’র দ্বিতীয় বার বিয়ে হলো তবু বাবার কথা কোনোদিন ভাবি নি। এ বাড়িতে এসে পুতুলের বাবাকে বাবা বলে ডাকতে হলো। এই বাবাকে দেখলাম। কিন্তু তবু আমার বাবার কথা উঠলেই কান্না পায়। আমি নিজেকে কোনো মতেই সামলাতে পারি না। আমি বাবার মাথা খেয়েছি, একথা কেন বলে ওরা? মা কাছে থেকেও কোনো কথা বললো না? মা এমন চুপ হয়ে কেমন করে থাকতে পারলো? তাহলে কি মা’কেও আমি হারিয়েছি?

বারবার আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আমার মা কেন অন্যের মা হয়ে গেলো!

আমি নিজের ঘরে এসে মুখ গুঁজে পড়ে ছিলাম বিছানায়। ছোট খালা চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত। ছোটখালা চলে গেলে, আমি বাইরে এলাম। তখনও বুকের ভেতরে একটা কান্না ফুলে ফুলে উঠছিলো। মা আমাকে দেখে বললো, যা ঘর ঝাঁট দিয়ে বিছানা পাত গে। শুধু এই একটা কাজের কথা! আর কিছু না! আমার আরও কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো। বিছানা পাততে গিয়ে আবার কান্না ছেয়ে এলো দু’ চোখে। যদি তখন ডুকরে কেঁদে উঠতে পারতাম!

কেন মা চলে এলো দাদুর বাড়ি থেকে! যদি বা ওদের খারাপ ব্যবহারে চলে এলো, কেন নানার কাছে থাকলো না। কেন মা আবার বিয়েতে রাজি হলো। যদি না হতো, তাহলে যে মায়ের ওপর আমার অধিকার থাকতো। মা’র বুকে মাথা রেখে আমি প্রাণ ভরে কেঁদে শান্ত হতে পারতাম।

মা এমন করলো কেন? কোন অভাব ছিলো মার সেখানে? নানা সব সংসারটাই তো মা’র হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ঘর সংসারেরই যদি সাধ ছিলো মা’র, নানার কাছে থাকলেও তো পারতো!

এমনি ভাবনার সময় মম এসে আমার কাঁধে চেপে বসলো। ওকে সরিয়ে দিতেই ও থমকে দাঁড়ালো। দেখলো আমাকে চুপ করে, তারপর ধীরে ধীরে ধোরের দিকে পা ফেলে ফেলে এগোতে লাগলো। হয়তো ভয়ে। ওর শুকনো মুখ দেখে ওকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার কান্না ফেটে পড়লো বুকের ভেতরে। ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে শান্তি পেলাম যেন।

মম মা’র কাছে চলে যাওয়ার পর, আমার কাজ শেষ হলো। এমন সময় আনিস ভাই এলো। এসেই জিজ্ঞেস করলো, তোর মা কোথায়?

রান্না ঘরে, জবাব দিলাম।

চলে যাচ্ছিলো ও। দোরের কাছে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। তার পরই আমার পেছনে এসে দাঁড়ালো। বললো, তুই কাঁদছিস?

অনেকক্ষণ তারপর। কথা নেই। দু’জনে স্থির দাঁড়িয়ে। এক সময় আমার কাঁধে আনিস ভাইর হাত পড়লো আস্তে করে। আমার কাঁধে হাত রেখে আস্তে করে বললো, খুব কষ্ট হয় তোর এখানে না?

না, না, কষ্ট কেন হবে, আমি ওর কথায় বাধা দিয়ে বলেছি।

হয়, আমি বুঝি। তারপর একটু থেমে বললো, তোর সব কথা বলবি আমাকে। একটু পড়াশোনা কর। কাঁদিস না, কথা দে, আর কাঁদবি না।

ভারি আশ্চর্য তো! আমি হেসে উঠতে চেষ্টা করেছি, একদিন হয়তো এসে বলবে তোর হাসাও বারণ, হাসতে পারবি না।

আনিস ভাই আমার হাসি দেখে কেমন যেন নিশ্চিন্ত হলো বলে মনে হলো। আমার কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে রাখার আগে কাঁধে একটু মৃদু চাপ অনুভব করলাম। বললো, এই, আমার ঘরটা একটু গুছিয়ে দিবি?

ওর ঘর গোছানোর কাজ পেয়ে আমার ভালো লাগল। কোনোদিন কাউকে আনিস ভাই ওর ঘরে ঢুকতে দেয় না। কেবল ভয়, কোনো দরকারি কাগজপত্র হারিয়ে যাবে। আমাকেই বললো প্রথম। আমার ভালো লাগলো। ওর বিছানা ঝেড়ে, টেবিল গুছিয়ে, কলমে কালি ভরে, লেখার প্যাড সাজিয়ে তবে এলাম। আমার সারা মন হঠাৎ যেন স্বচ্ছ আর সুন্দর হয়ে গেলো। ভারি ভালো লাগলো। আর সেই ভালোলাগা এখন পর্যন্ত আমার মনোময় গানের সুরের মত ছড়িয়ে রয়েছে।

আনিস ভাইয়ের ঘরে আজ বিকেলে একটা কাণ্ড ঘটে গেলো। ঠিক বুঝলাম না, কেন এমন হলো। এখন কেবল লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।

আনিস ভাইয়ের হাত থেকে বইটা আনতে গিয়ে ওর হাত আমার হাত ধরলো। ওর হাত কী অদ্ভূত ঠাণ্ডা আর নরম। সেই মুহূর্তে আমার হঠাৎ ইচ্ছে করছিলো, ওর হাত নেড়েচেড়ে দেখি ভালো করে। ওর হাত ধরতেই আনিস ভাই আমার দিকে তাকালো। এ যেন অন্য লোক, হ্যাঁ, অন্য কেউ! যাকে আমি চিনি না, যাকে আমি কোনোদিন দেখি নি ওর চোখের ভেতরে কোথায় যেন একটা থমথমে কান্না। কেন যে! আনিস ভাইয়েরও মনে তাহলে কান্না! আমি অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কতোক্ষণ যে, কে জানে। এক সময় আনিস ভাই বললো, তুমি আমার কথা খুব ভাবো, তাই না?

আনিস ভাই নয় যেন, অন্য কেউ। নইলে ও কেন আমাকে তুমি বলবে। আমাকে এক মুহূর্ত ওর কথার জবাবের জন্যে ভাবতে হলো। তখনও ওর হাত ধরে রেখেছি। তারপর মুখ নিচু করে ফেললাম। বললাম, সেও মুখ দিয়ে কথা ফুটে বেরুলো কি বেরুলো না, হ্যাঁ, তোমার কথা ভাবি। তারপর আর দাঁড়ালাম না। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মনের ভেতরে কে যেন প্রচণ্ড ধমকে উঠেছিলো তখন।

আমারই দোষ, যতো দোষ আমারই। আমারই মনের ভেতরে যেন কোথায় একটা কুটিল আবর্ত রয়েছে। সহজ কথাকেই আমি জটিল করে ফেলি। আনিস ভাই আমার কথা ভাবে। পৃথিবীতে অন্ততঃ একজনও আমার কথা ভাবে। এই একটা ভাবনা আমাকে বিশ্রী রকমের একটা গ্লানি থেকে মুক্তি দিলো। রাহুলকে যেমন ভালোবাসে আনিস ভাই, যেমন মম্ পুতুল ওদেরকে ভালোবাসে, তেমনি আমাকেও ভালোবাসে। আমার মনের ভেতরে গতকালের সেই মিষ্টি অনুভূতিটা আবার নতুন করে ছেয়ে গেল। আমি যেন একটা পাখি, আজ বিকেলে অগাধ নীল আকাশে মুক্তি পেয়েছি। অনেক রাত এখন, আমার এখনও ঘুম পাচ্ছে না। আনিস ভাইয়ের হাত দুটো কী স্নিগ্ধ আর নরম। এই গভীর রাতে ওরই দুহাতের ভেতরে আমার মুখ ঢাকতে ইচ্ছে করছে।

.

ঘটনা আর ঘটনা। মরণই যেন ছিলো আমার ভালো। নইলে এমন কেন হবে! খোদা এ কোন যন্ত্রণা দিলে আমার বুকে।

আনিস ভাই কেন তুমি এমন করলে! এতে যে তোমারও কষ্ট, আমারও কষ্ট।

তোমার ঘরে যেতে আমার সঙ্কোচ হয় আজকাল। তুমি বই পড় না আর। পড়তে পড়তে শুধু অবাক হয়ে দেখো। তোমার দু’চোখে যে কী যাদু আছে! আমারও মনের ভেতরে কে যেন বলে, চলো, দেখে আসি। ও পড়ছে কি না। না, এখনও তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। যতোবার যায় ঘরের পাশ দিয়ে, ততোবারই শুধু আমাকে দেখে আর দেখে। এ দেখা সে ধরণের নয়, যে চোখে বেনুদা লুকিয়ে দেখে আমাকে। বরং মম যেমন রাতের তারা ভরা বিরাট আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে অবাক হয়, মুগ্ধ হয়, শুধু তাকিয়ে দেখার ইচ্ছেটা ফোটে ওর দু’চোখের তারায় তারায়, এ দেখা যেন তেমনি করে দেখা।

কিন্তু আজ এ কী করলে তুমি। আমাকে কি মরে যেতে বলো! আমি যে মরে গেলেও একথা আর কাউকে বলতে পারবো না।

আজ ঘরে টেবিলের ধারে দাঁড়িয়ে ওর বই গুছিয়ে রাখছিলাম। এমন সময় আনিস ভাই ঘরে এলো। বোধ হয় বাইরে বেরিয়েছিলো কোথাও। এসেই আমার এলোচুল মাথায় হাত রেখে চমকে দিলো। তারপর কাঁধে হাত রেখে বললো, আজ একটা সুন্দর বই পড়লাম, পড়বে?

আমি বুঝি না যে ওসব বই, কি ছাই শক্ত শক্ত বই পড়ো তুমি! আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম। আর ধীরে ধীরে মুখ নিচু করে দাঁড়ালাম।

তারপর আর কথা নেই। ও পেছনে থেকে দু’ হাত দিয়ে ঘিরে ধরলো আমাকে নিঃশব্দে ওর হাতের ঘের ছোট হয়ে এলো। বুকের ওপর দিয়ে দু’বাহুর বাঁধন পড়লো। আমি তখনও স্থির দাঁড়িয়ে। কথা বলারও যেন কোনো ক্ষমতা নেই। সব শক্তি যেন অনুভূতির কোনো গহন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। আর ঠিক সেই সময়। হ্যাঁ, সেই সময়।

কাঁধের কাছে ওর নিঃশ্বাস এসে পড়লো তারপরই এক টুকরো নরম আগুন। কাঁধের কাছে এক টুকরো চামড়া যেন জ্বলে গেলো। জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলাম। সারা শরীরে কী যেন ওলট-পালট হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে একটি ছোট্ট শব্দ বেরিয়ে এলো, ছি!

কে যেন বলে উঠলো মনের ভেতরে অন্যায়, এটা ভয়ানক অন্যায় তোমাদের। বার বার নিজেরই মন ধমকে উঠল, এ কী করছো তোমরা!

ভাবলাম, আর কান্না পেলো আমার। কেন এমন করলাম আমরা? এমন কিছু করবার অধিকার তো তোমারও নেই, আমারও নেই। তবু কেন এমন হয়ে গেলো আমাদের মন। আনিস, এ কোন যন্ত্রণার আগুন ছুইয়ে দিলে শরীরে? মনে যে শুধু গ্লানি জমে উঠছে প্রতিটি প্রহরে। ভাবছি আর ভাবছি। তুমিও তো কষ্ট পাবে এরপর! কেমন করে তোমান। ঘরে যাবো আমি আর! কেউ যদি জানতে পারে, তাহলে যে মরণ ছাড়া অন্য কোনো পতি থাকবে না আমার। খোদা, আমি কেন জন্মের পরই মরে গেলাম না। দুনিয়া থেকে একটা জঞ্জাল অন্ততঃ কমতো। বারবার আমার মনের ভেতরে কেউ যেন প্রার্থনা করলো, হে বিধাতা, আনিস যেন কষ্ট না পায়। আমি তো জানি, এ ঘটনার পর ওর নিজেরই মনে গ্লানির অন্ত থাকবে না।

.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *