1 of 2

পাটাই ষষ্ঠীর কথা

পাটাই ষষ্ঠীর কথা

এক বিধবা ব্রাহ্মণীর একটি বউ; বউটির বড়ো নোলা, ঠাকুর-দেবতা মানে না, বার-ব্রত কিছুই করে না। ঠাকুরঘরে নৈবেদ্য করা থাকলেও সে নৈবেদ্যের কলা-সন্দেশ চুরি করে খেত। সেই পাপে বউটির যত ছেলে হয় সব মরে যায়, তবুও তার নোলার দোষ গেল না। শাশুড়ি মনে করলেন, বউমাকে এবার পাটাই ব্রত করাতে হবে; এ মনে করে পৌষ মাসে শুক্লা চতুর্দশীর দিন সকালবেলা তিনি বউকে কতকগুলি কালো কাপড় দিয়ে বললেন, ‘দেখ বউমা! এগুলি বেশ করে কেচে আন।’ বউ সেই কাপড়গুলি নিয়ে ঘাটে চলে গেল। শাশুড়ি পাটাই ব্রত্যের আয়োজন করলেন। উঠানে ছোটো একটি পুকুর কেটে বেনা গাছের পাটাই সেই পুকুর ধারে পুঁতলেন। তারপর পুরুতঠাকুরকে সেখানে আসনে বসিয়ে বউয়ের জন্য তিনি ঘর-বার করতে লাগলেন।

এমন সময়ে পাড়ায় পাড়ায় শাঁখ ঘণ্টা বেজে উঠল, ঝি বউয়েরা সব উলুধ্বনি দিতে লাগল। ওখানে বউ কাপড় কাচতে কাচতে তাই শুনতে পেয়ে ভাবলে, ‘ওমা! আজ যে পাটাই ব্রত, ঘরে কত কী খাবার তৈরি হয়েছে, আর আমি কিছুই খেতে পেলুম না।’ বউ তাড়াতাড়ি কাপড় ফেলে রেখে খাবার জন্য বাড়ির দিকে ছুটল। একে বেলা হয়েছে, তাতে কিছু না খাওয়াতে বউয়ের মাথা ঘুরতে লাগল। পথে আসতে আসতে বেনা গাছের মূলে পা জড়িয়ে পড়ে গিয়ে পথের ধারে বউ মূর্ছা গেল। পাটাই ব্রতের যে কয়খানি নৈবেদ্য হয়, তার মধ্যে একখানি ধোপা বউ পায়, সে তাই নিতে আসছিল। বউয়ের দুর্দশা দেখে তাড়াতাড়ি গিন্নীকে এসে বললে, ‘ও বামুন মা! তোমার বউ কেন ওখানে পড়ে গোঁ-গোঁ করছে গো!’ এই কথা শুনে ব্রাহ্মণী তাড়াতাড়ি গিয়ে বউয়ের মুখে-চোখে জল দিয়ে তুলে বসিয়ে বললেন, ‘নানা কারণে বার বার নাটা-পাটা হচ্ছিস মা! আজ থেকে পাটাই ব্রত করো, ভালো হবে।’ গিন্নি বউকে নাইয়ে ধুইয়ে পাটাই ব্রতের কাছে এনে বসালেন। ব্রত শেষ হলে তিনি বউকে বললেন, ‘পাটাই ঠাকুরকে প্রণাম করে বর চেয়ে নাও।’ বউ প্রণাম করে বর চেয়ে নিলে। সেই থেকে বউ প্রতি বৎসর পাটাই ব্রত করতে লাগল। ক্রমে তার অনেকগুলি ছেলে মেয়ে হল। এবার সব বেঁচে রইল। তাই দেখে পাড়ার সকলে পাটাই ব্রত আরম্ভ করলে। ক্রমে পাটাই ষষ্ঠীর মাহাত্ম্য চারিদিকে প্রচার হল।

পাটাই ষষ্ঠীর কথা সমাপ্ত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *